বশিষ্ঠ নিমগাছটা থেকে একটা কচি ডাল ভাঙল দাঁতন করার জন্য। দাঁত আর কটাই বা আছে। ছিয়াত্তর বছর বয়েস হল। হাতে পায়ে তেমন বল নেই। শুধু ঢাকের দুটো কাঠি হাতে নিলে কি যেন ভর করে হাতে পায়ে। সাত পুরুষের ঢাকির পরিবার। তিন পুরুষ আগে তার কে যেন কলকাতায় রাজা নবকৃষ্ণের শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় ঢাকের বোল তুলতে যেত। তার নাম ছিল দুর্গাচরণ। সেই অষ্টমীপুজোর সকাল সন্ধেয় আরতির সময়ে দুর্গাচরণের ঢাকের বোলে রাজবাড়ির আনাচ কানাচ দুলতে থাকত ভাবের দোলায় । এইসব শোনা কথা অবিশ্যি। ... ...
( শেষ পর্ব )নিখিল চিৎ হয়ে শুয়ে আছে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে। বিধ্বস্ত, বিভ্রান্ত, দিশাহারা। নিশ্চিতভাবে জেনে নিয়েই দিন্দা উকিল খবরটা দিয়েছে। একদম সরকারি খবর। প্রথম খবর , অনিন্দিতার স্বামী হাজতের মধ্যেই ব্লেড দিয়ে শিরা কেটে আত্মহত্যা করেছে প্রাইমা ফেসি এভিডেন্স অনুযায়ী। তদন্তের এখনও আদেশনামা আসেনি। আর, দ্বিতীয় দুর্ঘটনা হল ট্রেনের চাকার তলায় অনিন্দিতার শরীর সমর্পণ করা ।বডি পোস্ট মর্টেমে গেছে ।কেই বা অনিন্দিতার স্বামীকে ব্লেড সরবরাহ করল আর কেনই বা করল সবই তদন্তসাপেক্ষ ব্যাপার।ঘন ধূসর অবসন্নতার গভীরে ডুবে রইল নিখিল। অকারণেই অপরাধবোধের ভাবনা চেপে ধরল তার মস্তিষ্ক। সন্তাপের স্রোত ছোট ছোট ঢেউ তুলতে লাগল মনের মধ্যে। নিখিল ভাবল, সে ... ...
পিনাক আর অর্ণাশ্রী আজ সকালে তিলোত্তমা ছেড়ে দিল। এখানে আর কাজ নেই আপাতত।তাদের পাতা জালেই কৌশিক গিরি ধরা পড়েছে। শুভঙ্কর পাল আর এখানে ফিরবে না এ খবরও তারা পেয়ে গেছে। মোবাইল ট্র্যাক করে জানা গেছে সে এখন সুন্দরবন এলাকায় গোসাবার কাছাকাছি। বাপির কাছেও খবর এল । সংগঠনের কনিষ্ঠতম সদস্য। মনীষা মেচেদায় ফিরে গেছে অমিতাভকে তাদের কাজের ব্যাপারে হলদিয়ার চন্ডীবাবুর সঙ্গে কথাবার্তার সারাৎসার জানিয়ে।অমিতাভর অবশ্য নিজেকে মোটেই আত্মবিশ্বাসী লাগছে না ওইসব কনস্ট্রাকশান জব-এর লোহা লক্কড় যন্ত্রপাতি জড়িত মালপত্র আদান প্রদানে ক্রিয়াকর্মের ঘষটা ঘষটিতে। তার এক বন্ধু কিংশুক অনেক বছর ধরে এই ধরণের কাজ করছে। তার মুখে শুনে শুনে এসব ... ...
সকাল সাড়ে দশটা বাজতে চলল। শরতের ঝলমলে আকাশ।বাতাসে যেন পুজো পুজো গন্ধ। রিপন স্ট্রীটে ফর্টি টু বাই সি বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুলাল সরকার। বহু পুরনো তিনতলা বাড়ি। বাড়ির সামনের দিকের লালচে রঙ ফ্যাকাসে গোলাপী হয়ে গেছে। দু এক জায়গায় প্লাস্টার খসা ক্ষতচিহ্ন। বোঝা যাচ্ছে অনেকদিন হাত পড়েনি বাড়ির মেরামতিতে। এখানে সব গায়ে গায়ে বাড়ি। পুরণো কলকাতার পুরণো বাড়ি। পুরণো পাড়া, পুরণো মানুষ। দুলাল দরজার পাশে কলিং বেলে চাপ দিল। ঘরের দরজার বাইরে দাঁড়াতেই সূর্যকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় স্যার বললেন, ‘ আরে এস এস .... কলকাতায় কি এখনই এলে ? ‘একতলার ঘরে একটা সিঙ্গল কাউচে বসে আছেন সূর্যকান্তবাবু । একপাশে সোফায় ... ...
অন্ধ্র আর উড়িষ্যার উপকূলে নাকি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। দীঘার সমুদ্রে বড় বড় ঢেউ উঠছে কাল রাত থেকে। এখানে ঝিরঝির করে বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে সারাক্ষণ। সকাল নটা বাজে। কিন্তু এটা সকাল না সন্ধে বোঝা ভার । আকাশ বিষাদে আচ্ছন্ন ।মেদুর আঁধার ছাওয়া পথঘাট । নিখিল সকাল থেকে ঘরে বসে আছে। পাঁচটা সিগারেট খেয়ে ফেলেছে এর মধ্যে। আজ একবার অফিসে যেতে হবে। ফোন খুলে দিয়েছে কাঁথিতে এসে। কাল রাত্রে মৃদুলার ফোন এসেছিল। থানার ও সি বিপ্লব দত্ত নাকি কাল তাদের বাড়ি এসেছিল।ঐশীর সঙ্গে কিসব কথা বলে গেছে। কারা নাকি অরিত্রকে রাস্তায় তাড়া করেছিল। পুলিশের বাইক সেখানে এসে পড়ায় নাকি গা ঢাকা দিয়েছে। ... ...
অমিতাভর ফোন কিন্তু আজকে আর বেজে উঠল না। দিগ্বলয়ে সূর্যাস্তের শোভা দেখতে দেখতে একাকী বসে থাকতে থাকতে অমিতাভর মনে হল সেও তো মনীষাকে একটা কল দিতে পারে। এতে দোষের কি আছে। মনীষা পাল তো মানসিকভাবে ভীষণভাবে ভেঙে পড়ার মুহুর্তে তাকে অনেকটাই মানসিক শক্তি জুগিয়েছিল সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। সে অকারণেই নিজের মনের কাছে জবাবদিহি করতে লাগল যে, কৃতজ্ঞতা হিসেবেও তার অন্তত একটা ফোন করার কর্ত্তব্য থেকেই যায়। শুভঙ্কর পালের সঙ্গে তো সে কোন মাখামাখি করতে যাচ্ছে না। তাছাড়া তার কোম্পানিতে ভিআর এস হয়ে যাবার পর মনীষা তাকে কি ধরণের সাহায্য করতে পারে সেটাও জানা দরকার। এইভাবে গভীর অন্তর্মুখী অমিতাভ ... ...
খোয়াইয়ের ধারে একটা পাথরের ওপর বসে রইল নিখিল। এখনও কেউ এসে হাজির হয়নি এখানে। নিতল অম্বরতলে ঝুরো পাতাপত্রের সঙ্গে হাওয়ার ফিসফিস কানাকানি। দিনভর চলে অস্থির বাতাসের অবিরাম খেলা । নির্জন নীরব পরিপার্শ্ব। নিখিলের মনে হল সে অনন্তকাল ধরে বসে থাকে এখানে। এই রকম জনহীন শব্দহীন বনভূমিতে সে কাঁথি, বারাসাত, অনিন্দিতা, মৃদুলা, ঐশী .... তিলোত্তমা লজ, এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের দপ্তর ..... জীবনের জ্বলন্ত অঙ্গারগুলো ভুলে এখানে বসে থাকে । নিখিল দাস খোয়াইয়ের এই উদাস বিবাগী পরিবেশে প্রায় এক ঘন্টা ধরে বসে রইল। এই নিরালা বাতাস বেশিক্ষণ বজায় রইল না। একটা বড় মারুতি সুজুকি ভ্যান ঘ্যাঁসস্ করে ওপাশে রাস্তার ওপর দাঁড়াল। নানা বয়সের ... ...
বুধবার পড়ন্ত বেলায় মনীষা পাল হৈ হৈ করে এসে পড়ল তিলোত্তমা লজে। হোটেলে খাওয়ার দাওয়ার পাট চুকে গেছে ততক্ষণে। সুরেশ, ননীরা তাস খেলতে বসেছে চৌকির ওপর। দুলাল কাউন্টারে বসে হিসেব মেলাচ্ছে।এই সময়ে মনীষা পাল এক গাল হেসে সেখানে আবির্ভূত হল।অপ্রত্যাশিতভাবে ওকে দেখে দুলাল বলল, ‘ আরে .... বৌদি ! কি ব্যাপার ? খাবেন তো ? এ..ই ননী.... ‘— ‘ না না .... খাব না । আমি ভাত খেয়েই বেরিয়েছি। .... রুম নেব না। রাত্রেই ফিরে যাব । ‘— ‘ ও আচ্ছা .... এখানে বসুন তা’লে। চা খাবেন তো ? ‘— ‘ না এখন না । পরে খাব। ‘— ‘ ঠিক ... ...
মনীষা আবার বলল, ‘ চিনতে পারছেন তো ? লজে আপনার উল্টোদিকের ঘরে আমরা ছিলাম। আমার ছেলে বান্টি ....’এই ফোনটা অমিতাভর কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত । সে বলে, ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি, বলুন .... ‘— ‘না.... মানে, আমরা চলে যাওয়ার সময় আপনার সঙ্গে দেখা হল না তো .... তাই .... ‘— ‘ ও আচ্ছা , আপনারা কি এখন মেচেদায় ?’ অমিতাভ বেশ বিব্রত বোধ করতে থাকে। কি বলবে ভেবে পায় না।— ‘ হ্যাঁ মেচেদায়। আবার কবে দেখা হবে কে জানে। লজে বেশ ভাল লাগছিল। আপনার কথা খুব মনে পড়ছে। দেখি এর মধ্যে সময় পেলে একবার কাঁথিতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে । ‘অমিতাভ দায়সারা ... ...
মনীষা যেমন বলেছিল, তার পরদিন সকাল এগারোটা নাগাদ শুভঙ্কর পালেরা তিলোত্তমা লজ ছেড়ে মেচেদার দিকে রওয়ানা দিল। অমিতাভ আর অলোক অফিসে চলে গেছে। মনীষা বেরোবার সময় দেখল ছ নম্বর ঘরে তালা মারা। বান্টি আর শুভঙ্কর আগেই নীচে নেমে গেছে। মনীষা ছ নম্বর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েক সেকেন্ড কি ভাবল তারপর দ্রুতপায়ে নীচে নেমে গেল।দুলালের মনটা বেশ ফুরফুরে আছে । বরানগরে বাড়িতে একবার ফোন করে খবরাখবর নিল। শর্মিষ্ঠা এখন ভাল আছে। ওষুধপত্তর এখনও চলছে অবশ্য। ... ...