ডেক্সটার অ্যান্ড স্মিথের গেটের উল্টোদিকে একটা মাঝারি আকারের ধাবা। একটা পাঞ্জাবী বুড়ো আর একটা বুড়ি সেখানে বসে আছে দুপুর বারোটা থেকে। ধাবার ভিতরে অবশ্য বসে নেই তারা। ধাবা মালিকের অনুমতি নিয়ে বসে আছে ধাবার বাইরে পাতা একটা বেঞ্চে। তাদের নাকি গাঁওয়ের কোন লোক আসবে। এখানে তাদের অপেক্ষা করতে বলেছে। বুড়ো বুড়ি ঝোলা থেকে বের করে কুটকুট করে মাঝে মাঝে কি যেন খাচ্ছে, আবার ঝোলায় ঢুকিয়ে রাখছে। ... ...
কলতানের ফ্ল্যাটে কিচির মিচির পাখির ডাক ডেকে উঠল সকাল পৌনে এগারোটা নাগাদ। ঠিকানাটা কলতানই জানিয়ে দিয়েছিল। দরজা খুলে কলতান বেশ খানিকটা চমকে গেল। দেখল একজনের বদলে দুজন দাঁড়িয়ে আছে। ইরাবান আর শ্রুতি।— ‘ আরে ... এস এস একেবারে দুই ভাইবোন একসঙ্গে। তা ভালই করেছ। আমার খাটুনি বাঁচিয়ে দিলে।’ কলতান বলে।ইরাবান আর শ্রুতি সংকোচজড়িত ভঙ্গীতে ঘরে ঢুকে সোফায় বসল।— ‘ হ্যাঁ বল .... ‘ , কলতান ওদের মুখোমুখি বসে।ইরাবান একটু চুপ করে থাকার পর বলল, ‘ আমরা দুজনেই খুব ভয়ের মধ্যে আছি। ... ...
সন্ধেবেলা নীলাম্বরবাবু ফোন করে জানালেন যে উচ্চমাধ্যমিকে তার ছেলের ‘পাস আউট ইয়ার’ দু হাজার নয় এবং মেয়ের দু হাজার কুড়ি । কলতান জানাল, ‘ ঠিক আছে ধন্যবাদ। আমি দুদিন বাদে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব। এই দুদিনের মধ্যে আপনার কেসটা সলভড হয়ে যাবে বলে আশা করি। তবে আপনি কিন্তু বাড়ির মধ্যেও সাবধানে থাকবেন। সাবধানের মার নেই।ঠি ক আছে রাখছি এখন ..... গুড নাইট ।’কুলচা নতুন মামলার তীব্র রহস্যের গন্ধ পেয়ে আজ আর আর মামার বাড়ি থেকে নড়তে চাইল না। ... ...
একে ভরা শ্রাবণ, তার ওপর নিম্নচাপ অক্ষরেখা দানা বেঁধেছে গভীরভাবে। ভর দুপুরেও আকাশ অন্ধকার। আকাশ থেকে জল ঝরেই যাচ্ছে কাল রাত থেকে। বউবাজার কলেজ স্ট্রীটে জল থইথই। গোটা রাস্তায় বাসে ট্রামে এ গাড়ি সে গাড়ি ঠেলায় রিক্শায় লেবড়ি চেবড়ি একেবারে। ট্রাফিক পুলিশ নাকানি চোবানি খাচ্ছে মহাত্মা গান্ধী রোডের মোড়ে। রাস্তার হাঁটুজল ঠেলে ঠেলে আপাদমস্তক বর্ষাতিতে ঢাকা একটা লোক বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রীটের মুখে একটা পুরনো বাড়ির দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ... ...
ছড়ানো ঝিল ভর ভরন্ত। ওপারে ঝোপঝাড় জঙ্গল। এপারে কাঁচা রাস্তা আবলা খাবলা। শুক্লা রাতে চাঁদের আলো খেলা করে ঝিলের জলে। ওপারের জঙ্গল থেকে শেয়ালের দল ডাকতে শুরু করে আচমকা। এপারে শিবমন্দিরের বাইরে ল্যাম্পপোস্টের আলোর ছটা মাখা আঁধারে বসে রাত বারোটা অব্দি চার পাঁচজনে মিলে এন্তার মদ খায়। মদ গিলতে গিলতেই যে যার ঘর সংসারের জমিয়ে রাখা বিষ বাষ্প উগরে দেয়। নেশা চড়ে গেলে কেউ কাঁদে কেউ হাসে। ... ...
( শেষাংশ ) কালিপুজোর দিন সকালে শিশিরবিন্দু স্পীড পোস্টে একটা লেফাফা পেল। খামের ভেতর একটা চিঠি। কনসার্টের বিচারকদের রায়ে ‘বশিষ্ঠ’ গ্রুপ প্রথম স্থান অধিকার করেছে এবং ঢাকবাদক বশিষ্ঠ বাউরি সর্বসম্মতিক্রমে শ্রেষ্ঠ বাদকের পুরষ্কার প্রাপক মনোনীত হয়েছে। পুরষ্কার মূল্য দু লক্ষ টাকা। ... ...
বশিষ্ঠ নিমগাছটা থেকে একটা কচি ডাল ভাঙল দাঁতন করার জন্য। দাঁত আর কটাই বা আছে। ছিয়াত্তর বছর বয়েস হল। হাতে পায়ে তেমন বল নেই। শুধু ঢাকের দুটো কাঠি হাতে নিলে কি যেন ভর করে হাতে পায়ে। সাত পুরুষের ঢাকির পরিবার। তিন পুরুষ আগে তার কে যেন কলকাতায় রাজা নবকৃষ্ণের শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় ঢাকের বোল তুলতে যেত। তার নাম ছিল দুর্গাচরণ। সেই অষ্টমীপুজোর সকাল সন্ধেয় আরতির সময়ে দুর্গাচরণের ঢাকের বোলে রাজবাড়ির আনাচ কানাচ দুলতে থাকত ভাবের দোলায় । এইসব শোনা কথা অবিশ্যি। ... ...
( শেষ পর্ব )নিখিল চিৎ হয়ে শুয়ে আছে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে। বিধ্বস্ত, বিভ্রান্ত, দিশাহারা। নিশ্চিতভাবে জেনে নিয়েই দিন্দা উকিল খবরটা দিয়েছে। একদম সরকারি খবর। প্রথম খবর , অনিন্দিতার স্বামী হাজতের মধ্যেই ব্লেড দিয়ে শিরা কেটে আত্মহত্যা করেছে প্রাইমা ফেসি এভিডেন্স অনুযায়ী। তদন্তের এখনও আদেশনামা আসেনি। আর, দ্বিতীয় দুর্ঘটনা হল ট্রেনের চাকার তলায় অনিন্দিতার শরীর সমর্পণ করা ।বডি পোস্ট মর্টেমে গেছে ।কেই বা অনিন্দিতার স্বামীকে ব্লেড সরবরাহ করল আর কেনই বা করল সবই তদন্তসাপেক্ষ ব্যাপার।ঘন ধূসর অবসন্নতার গভীরে ডুবে রইল নিখিল। অকারণেই অপরাধবোধের ভাবনা চেপে ধরল তার মস্তিষ্ক। সন্তাপের স্রোত ছোট ছোট ঢেউ তুলতে লাগল মনের মধ্যে। নিখিল ভাবল, সে ... ...
পিনাক আর অর্ণাশ্রী আজ সকালে তিলোত্তমা ছেড়ে দিল। এখানে আর কাজ নেই আপাতত।তাদের পাতা জালেই কৌশিক গিরি ধরা পড়েছে। শুভঙ্কর পাল আর এখানে ফিরবে না এ খবরও তারা পেয়ে গেছে। মোবাইল ট্র্যাক করে জানা গেছে সে এখন সুন্দরবন এলাকায় গোসাবার কাছাকাছি। বাপির কাছেও খবর এল । সংগঠনের কনিষ্ঠতম সদস্য। মনীষা মেচেদায় ফিরে গেছে অমিতাভকে তাদের কাজের ব্যাপারে হলদিয়ার চন্ডীবাবুর সঙ্গে কথাবার্তার সারাৎসার জানিয়ে।অমিতাভর অবশ্য নিজেকে মোটেই আত্মবিশ্বাসী লাগছে না ওইসব কনস্ট্রাকশান জব-এর লোহা লক্কড় যন্ত্রপাতি জড়িত মালপত্র আদান প্রদানে ক্রিয়াকর্মের ঘষটা ঘষটিতে। তার এক বন্ধু কিংশুক অনেক বছর ধরে এই ধরণের কাজ করছে। তার মুখে শুনে শুনে এসব ... ...
সকাল সাড়ে দশটা বাজতে চলল। শরতের ঝলমলে আকাশ।বাতাসে যেন পুজো পুজো গন্ধ। রিপন স্ট্রীটে ফর্টি টু বাই সি বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুলাল সরকার। বহু পুরনো তিনতলা বাড়ি। বাড়ির সামনের দিকের লালচে রঙ ফ্যাকাসে গোলাপী হয়ে গেছে। দু এক জায়গায় প্লাস্টার খসা ক্ষতচিহ্ন। বোঝা যাচ্ছে অনেকদিন হাত পড়েনি বাড়ির মেরামতিতে। এখানে সব গায়ে গায়ে বাড়ি। পুরণো কলকাতার পুরণো বাড়ি। পুরণো পাড়া, পুরণো মানুষ। দুলাল দরজার পাশে কলিং বেলে চাপ দিল। ঘরের দরজার বাইরে দাঁড়াতেই সূর্যকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় স্যার বললেন, ‘ আরে এস এস .... কলকাতায় কি এখনই এলে ? ‘একতলার ঘরে একটা সিঙ্গল কাউচে বসে আছেন সূর্যকান্তবাবু । একপাশে সোফায় ... ...