বিভাগ-বিভেদ বস্তুটি ভারি সাংঘাতিক। এ যে মানুষেরই বুদ্ধি বা অবুদ্ধিপ্রসূত একান্ত নিজস্ব সৃষ্টি এ তো বলাই বাহুল্য।। বিভাগ বিভেদ কি আর একরকম, সে হাজার প্রকার। মানুষ রতন যত সভ্য হয়েছে তত তার অন্ত্রের আকার ছোট হয়েছে, মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে, আর সে তত জটিল কুটিল ভাবে মানব জাতিটিকে নিয়ে এই বিভাগ বিভেদ বিভাজন করে কাটাকুটির মজার খেলায় উল্লসিত হয়ে নেচে-কুঁদে উঠেছে।। ধর্মের বিভাগ,জাতপাতের বিভাগ, গুণের বিভাগ, মানের বিভাগ, চামড়ার রঙের বিভাগ.......বিভাগ কি আর কম আছে? খুঁজে পেতে গুণে গেঁথে দেখলে অমন হাজার হাজারটা পাবেন। এইসব বিভাগের মধ্যেও আবার কিনা মশাই লঘু গুরু, উঁচু নীচু খানা খন্দ আছে, বলার তারিকায় মানুষের অন্তরটিতে বেশ ... ...
ছড়াটির ছত্রে ছত্রে চিত্রিত গ্রাম বাংলার সাধারন মানুষের জীবন যাত্রার চিত্র। বাদশাহ বা রাজা কয়েকটি গ্রামেরখাজনা আদায়ের জন্য এর শ্রেণীর তহশিলদার নিযুক্ত করতেন এদের বলা হত "মুজলিমদার"। মজুমদার কথাটি এরই অপভ্রংশ। "ইকির মিকির চাম চিকির" কথাটি সম্ভবত সেই অত্যাচারী শাসক শ্রেণীভুক্ত কর আদায়কারীর চিত্র তুলে ধরেছে। যারা দাঁত কিড়মিড় করে পিঠের ছালচামড়া তুলে নেবার হুমকি দিচ্ছে নিরীহ কৃষককে। ... ...
সবচেয়ে প্রাচীন ছড়া বলে যেটি লিপিবদ্ধ আছে সেটা পাওয়া যাচ্ছে প্রখ্যাত ভাষাচার্য সুকুমার সেনের "বাংলার ছড়া" গ্রন্থে। এটি আগে ঠাকুমা দিদিমাদের মুখে মুখে শোনা যেতো কিন্তু এখন তেমন আর শোনা যায় না। এটি প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। গ্রাম বাংলার মানুষের মুখ থেকে এটি সংগ্রহ করেছিলেন উইলিয়াম কেরী। মাছ আনিলা ছয় গন্ডা, চিলে নিলো দুই গন্ডা, বাকি র'লো ষোলো, তাহা ধুতে আটটা জলে পলাইলো তবে থাকিলো আট, দুইটায় কিনিলাম দুইকাটি কাঠ, তবে থাকিলো ছয়, প্রতিবেশীকে চারিটা দিতে হয়, তবে থাকিলো দুই, তার মধ্যে একটা চাখিয়া দেখলাম মুই। ... ...
বাংলার লোকমুখে বহু ছড়া ও গান প্রচলিত আছে দৈনন্দিন কথাবার্তায়, মায়েদের ঘুমপাড়ানি গানে, গ্রাম শহরের হাটে বাটে ছড়ানো মানুষের মুখে মুখে। বিভিন্ন কাজের বর্ণনায়, বিভিন্ন বারব্রত, পাঁচালির মধ্যে বহুদিন ধরে এগুলি মর্মে গেঁথে রয়েছে আমাদের। এর প্রকৃত রচয়িতা কে, উৎপত্তি কোথায় সঠিকভাবে জানার উপায় আর নেই। ... ...
উনি আমাদের গেরামকে এলেন, আমাদের দাওয়ায় বসলেন, আমার ঘরে দাওয়াত খেলেন। যাবার আগে, আমার ল্যাংটা, নাকে সিকনি ঝরা ছেলেটার গাল টিপে দিলেন, ছেলেটা ঈশ্বর স্পর্শের আনন্দে যেন ফেনার মতন লেতিয়ে গেল, কারণ আমাদের চৌদ্দপুরুষের জোড়হস্ত আমার ছেলেকে অমেরুদণ্ডী প্রাণী হয়েই জন্মাতে শিখিয়েছিল।। ... ...
কানাকড়ি বলে দেগে এলেবেলে, / গোঁজামিলে তাকে দিলে কোণে ঠেলে, / আমি তো জানি, আমি থেকে যাবো, / তোমরাই যাবে চলে।। ... ...
নির্জন রাতে সমুদ্র ভয়াল নয় অতটাও যতটা ভয়াল মানুষ পশুর কাম, কেন ছেলেমেয়ে বিহারে যাও সমুদ্রসৈকতে, জানো না কি, রাষ্ট্র নেবে না দায়িত্ব সুরক্ষার। মেয়ে হলে পশু ছিঁড়ে খুঁড়ে খাবে দেহ, পুরুষ হলে পিটিয়ে করবে লাল, ভয়ে ভয়ে থাকো, মেনে নাও যত নিষেধ এবং শিকল, জানো নি কি এখনো, রাত্রি অথবা নির্জনতায় ধর্ষকদেহে পুরুষাঙ্গ কামরোগে বেসামাল। ... ...
হিম ঝরছে আখ,খেজুরে, জিভ চাখছে গুড়ের ঝোল,জরায়ুটি ফেলছে ছেঁটে, শাকিলা,হেম, ঝিল, চঞ্চল। ওই আসছে দলে দলে, হাসপাতালের খাতায় নাম,ঝরছে না আর মাসিক রজঃ, লাফিয়ে বাড়ছে গুড়ের দাম। ঘন ঘন আখের ক্ষেতে লুকিয়ে থাকে লাঁডগা (নেকড়ে)সব, "মালা লাঁডগা ডর না লাগে, নর পেক্সা অপায়কারক"। *(মারাঠি ভাষায় -নেকড়ে আমার* ডর লাগে না, পুরুষ তার চেয়ে ভয়ংকর) ... ...
সারা রামায়ণ কিংবা মহাভারত জুড়ে ভিলেন খোঁজা মানে হলো ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়। রামায়ণ মহাভারত কোনো রোমান্টিক প্রেমের কাহিনী তো নয়, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তৎকালীন সমাজ দর্পন।নায়ক ভিলেন এসব সেন্টিমেন্ট নিয়ে মাথা ঘামায় নেকু পাব্লিক। (রামায়ণ) রাজনীতিতে অত উতলা হলে গদি ছিঁড়ে ভেতরের ছোবড়া পেছনে খোঁচা দেয়। ওখানে ফেলো কড়ি মাখো তেল, সীতা তুমি কি আমার পর? কে যেতে বলেছিল আমার সাথে বনবাসে, তিন তিনজন শাউড়ি সামলে ঘর করবে না তাই স্বামীর রিমোট পোষ্টিং এ বাক্স গুছিয়ে তড়িঘড়ি রেড়ি। ... ...
গেলেই পারতাম তবুও থমকে দাঁড়িয়ে আছি গলির মুখে, শারদীয় চাঁদ লন্ঠন হাতে করে এখনো খুঁজে খুঁজে ফেরে সুখ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে নক্ষত্র পথে পথে বিন্নি ধানের খই, পাশা দান পড়েনি সঠিক। গিয়েছে কোথায় বিসর্জন শরীর, আমি তো যাবো না বিসর্জনে, ওগো বিসর্জন দিও না এখনি, বিসর্জিত হয়ে আর কিসের বিজয়? ... ...