আমার পূর্ব দিকের দেয়ালটা আগন্তুক, শহরে নতুন এসেছে, পশ্চিম দিকের দেয়ালটার নাম নিখিল, ও শৈশবে পিতৃ-মাতৃহীন, কে যে ওর নাম রেখেছিল, সেটা ও নিজেও জানে নাআর, উত্তর এবং দক্ষিণের দেয়াল দুটোর নাম যথাক্রমে অনন্ত আর অবিনাশ, ওরা কুলীন, তবে কূল হারানো, শহরের সকলেই জানে, ওদের বাবা-মা দুজনেই ছিলেন ভূতপূর্ব নবাবের খাসকামরার দেয়াল, দুর্ভাগ্যবশত অবস্থার আমূল পরিবর্তন হওয়ায় এখন এই পরিত্যক্ত ভুতুড়ে বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেআর, আমার পরিচয় যেহেতু না দিলেই নয়, তাই বলতেই হয়, আমি হচ্ছি দেয়ালের মধ্যস্থ একটা অর্ধনির্মিত অথবা অসমাপ্ত দেয়াল, এখনো যার শেকড় গজায়নিআর, এ পর্যায়ে আমি এটাও নিশ্চিত করছি যে, এটা একটা দেয়ালের শহর, গোটাকয়েক অকর্মণ্য অথর্ব ... ...
দুঃস্বপ্নের পর একটা দাড়ি দিচ্ছি, তারপর দীর্ঘশ্বাসএইবার ছোট্ট একটা কমা বসিয়ে ঢুকে পড়ছি সংলাপে, 'এই কি তবে গন্তব্য, সিনর?'না, চিত্রনাট্যে লেখা ছিল, "...আমার আর্তনাদগুলো আটকে যাচ্ছে ঠোঁটে, এবং অস্থিরতায় শুকিয়ে যাচ্ছে নদীগুলো, এবং পাতাল থেকে উঠে আসা অভিশাপগুলো উৎক্ষিপ্ত হচ্ছে উত্তপ্ত লাভার মতো, এবং আস্থার সংকটে ভোগা মানুষগুলো অবাস্তবের কাছে নতজানু হচ্ছে, এবং ক্রন্দনরত মীনগুলো বিহঙ্গের শীর্ণ ডানা আঁকড়ে বৈকুণ্ঠ খুঁজছে..."এখানেই শেষ। চিত্রনাট্যের পরবর্তী পাতাগুলো বিষধর সাপ হয়ে দংশন করেছিল আমাকে, অথবা গভীর ক্ষত হয়ে ঢুকে পড়েছিল বুকের ভেতর, আমার দৃষ্টি ব্যর্থ হয়েছিল তাকে অনুসরণ করতে'...এবং বাক্যটা অসম্পূর্ণ থাকছে সিনর, যেহেতু উপযুক্ত যতিচিহ্ন খুঁজে পাচ্ছি না আপাতত...' ... ...
আত্মহত্যার কথা ভাবছিলাম আমি, জলের রহস্য ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছিল, পুকুরের এ মাথা থেকে ও মাথা সন্তরণ, আর ঘোলাটে সবুজ শ্যাওলার ফাঁকফোকরে বিচরণ, আর ডুব, আর ডুব অহেতুক, ভুস করে ভেসে ওঠা মাঝে মাঝে...এই তো...এতো অর্থহীনতা, মনোজাগতিক পরিধির এতো সীমাবদ্ধতা আমাকে বিষণ্ন করেছিলো ক্রমাগত ... ...
(ইদের রিপোর্টিং যখন একঘেয়ে হয়ে ওঠে, ঠিক তখনই রিপোর্টংয়ে বৈচিত্র আনতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে ওঠে কোনো কোনো রিপোর্টার, একনিষ্ঠ তিনি, শক্ত চোয়াল, হাতে উদ্যত মাইক্রোফোন, তাঁর পেছনে ক্যামকর্ডার, চোখ ঈগলের মতো, মগজে তাঁর ফুটন্ত লাভার মতো প্রতিভার টগবগে প্রবাহ, খবরের ফসিল থেকে কার্বন ডেটিং করে হলেও খবর খুঁড়ে আনতে বদ্ধপরিকর যিনি ... ...
সরি ফ্রেন্ডস, আমি কারো দুঃখ হৈয়া উঠতে পারি নাই, অ্যাক্সিডেন্টালি একটা মাউসট্র্যাপে আটকাইয়া গেছে আমার ফোকেটে পাওয়া সিক্সটি ওয়াটের প্রতিভার বাত্তি, জীবনে উইড়া এসে জুইড়ে বসা শূন্যগুলারে সুপারসনিক স্পিডে ঢাকতে গিয়া টের পাইছি জীবনের আরেকপাশ উদাম হৈয়া মহাশূন্য দেখা যাইতেছে ... ...
বড়োদের মস্তিষ্ক জটিল, বড়োরাই সাধারণত ইনসমনিয়্যাক হয়, নিদ্রাহীনতায় ভোগে তাদের চোখ; ছোটদের মস্তিষ্ক সরল, নিদ্রাহীনতার নামগন্ধ নেই তাদের জীবনে, সাধারণত রাত ঘন না হতেই ঘুমে জড়িয়ে আসে তাদের চোখ ছোটবেলার কথা মনে আছে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তাম আমি, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া মানে তাড়াতাড়ি জেগে ওঠা আবার ... ...
প্রেমিক আর প্রেমিকা অবিশ্বস্ত হয়ে পড়লেই শহরে বিড়াল আর পাপোশের কদর বাড়ে একটা হলুদ মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি কুচকুচে কালো বিড়াল কোলে রাস্তা পেরোচ্ছে, ওর শাদা প্রেমিক শুনেছি প্রকৃতির প্রতি অনুরক্ত শহরে একটা বিড়ালও আর অবশিষ্ট নেই ... ...
ফেসবুক ফেসবুক ফেসবুক... অদ্ভুতভাবে পাল্টে যাচ্ছে জীবনের প্রকৃতি... দ্রুতগামী অশ্বের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বন্ধুর সংখ্যা... ফ্রেন্ডলিস্ট লম্বা হচ্ছে... রিকোয়েস্টের পর রিকোয়েস্ট... এ্যাকসেপ্ট এ্যাকসেপ্ট এ্যাকসেপ্ট... চার হাজার... পাঁচ হাজার পেরোলো বন্ধুর সংখ্যা... সংখ্যাটা কী দশ ডিজিটের হবে না একদিন! বন্ধু চাই আরো বন্ধু... ... ...
থ্রি প্লাস থ্রি ইক্যুয়েল টু সিক্স / আমি জানি, কারণ, আমি খাই হরলিক্স / আমি জানি না, কারণ, হরলিক্স আমি খাই না / খাওন দূরে থাক, এইগুলা আমি নজরে-ও পাই না / মাঝে মইধ্যে আমি খাই ইসবগুলের ভুষি / দ্যাখো কেমন শক্তি আমার / কেমন মারি ঘুষি! ... ...
অবশেষে, দীর্ঘ সাধনার পর মীনজীবন পেলাম আমি, এখন আমি মাছ, তবে যে আকার প্রকারে সচরাচর দেখতে অভ্যস্ত আপনারা, সে দৃষ্টিতে বিচার করলে বোঝা যাবে না সেটা, আর তেমনটা নয়ও ঠিক বাহ্যদৃশ্যে, কিন্তু দৃশ্যের অন্তরালে যে সব দৃশ্য লুকিয়ে থাকে, অদৃশ্যে দৃশ্যমান, সেই অতিলৌকিক দৃশ্যপটে অভূতপূর্ব পরিবর্তনটুকু ঘটে গেছে, ভাবে স্বভাবে এখন মাছ আমি, আমার শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ঘটে গেছে অবাক রূপান্তর ... ...