ঈদ আমার কাছে বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের উত্সব শুধু নয়, আমার নিজের উত্সব।সনাতন ধর্মীয় পরিবেশে যতোটা বেড়ে উঠেছি আমি, ঠিক ততোটাই বেড়ে উঠেছি ইসলাম ধর্মীয় আবহে। আমার পারিবারিক গণ্ডির বাইরে জাগ্রত যে জগত, সেটা প্রধাণত খালা খালু ফুপা ফুপু মামী মামা দাদা দাদী নানা নানী ভাইয়া আপুদের জগত।অকাতরে ভালোবাসা পাবার ঈর্ষণীয় ভাগ্য নিয়ে জন্মেছি আমি। আমার সিংহভাগ মুসলিম বন্ধুরা যতটুকু ভালোবাসা পায় ওদের পরিবারে, তারচে অনেকগুণ বেশি ভালোবাসা আমি পেয়ে এসেছি সবসময়। কতো কতো সকাল দুপুর তো বটেই, কতো কতো রাত, এমনকি মধ্যরাত ভোররাতে হুটহাট হাজির হয়ে বিশেষ করে মাতৃপ্রতিম খালাদের ঘুম ভাঙিয়েছি, ফুপুদের ঘুম ভাঙিয়েছি, মামীদের ঘুম ভাঙিয়েছি, ঘুম ভাঙিয়েছি ... ...
জানালাটার সাথে শেষ পর্যন্ত সম্পর্ক হলো আমার, এবং সেটা গড়ালো ভালোবাসা অবধিঅথচ মানুষ আমাকে বুঝেনি, যেমন আমি বুঝিনি মানুষকে, অথবা বুঝে ওঠার জন্য যে অম্লমধুর মিথস্ক্রিয়া প্রয়োজন, অথবা মনোদৈহিক জৈবিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন, অথবা আত্মিক অথবা আধ্যাত্মিক রসায়ন প্রয়োজন, তারা সব আকার গ্রহণ করার চেয়ে নিরাকারের প্রতি অনুরক্ত থাকাকে শ্রেয় মনে করেছে যে সমস্ত সম্ভাবনার সূত্র ধরে সৃষ্টি হয় মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের অঙ্কুর, উদ্গমিত হবার আগেই তারা বিনষ্ট হয়েছে অসচেতন আশঙ্কায় শুনতে অদ্ভুত শোনালেও এ ধরনের প্রায় দুর্বোধ্য এবং বিচিত্র এবং বিবর্ণ সাতপাঁচ কারণে অথবা অকারণে মানুষের সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি আমারসুতরাং সম্পর্কের বিপ্রতীপ একটা নাছোড় বলয়ে ... ...
যারা গন্তব্যের কথা ভাবছো, অবিরাম, তাদের বলছি, মূলত গন্তব্য বলে কিছু নেই, পুরোটাই মায়াপথ এক, তুমি যেখানে থামছো, ভ্রমে-বিভ্রমে তাকেই চিহ্নিত করছো গন্তব্য নামেতোমার ছায়া ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে, তোমার কায়া ক্রমশ শ্যাঁওলার মতো পিচ্ছিল, এবং তুমি ক্রমশ বিস্মৃত হচ্ছো অতীত বর্তমান ভবিষ্যত, এবং ভুলে যাচ্ছো একদিন প্রত্যেকটি মানুষ রাজহাঁসে রূপান্তরিত হবেশুভ্র এবংদীর্ঘ এবংদীর্ঘ গ্রীবা উঁচিয়ে নিজের বুকের ভেতর তাকাবে, যেখানে একটা নিঝুম আরশিনগর, যেখানে ঘুমিয়ে আছে হরপ্পা মহেঞ্জোদারোর মতো প্রাচীন সভ্যতার অপভ্রংশ, এবং ওপরে মেঘ মুক্ত নিবিড় আকাশনীলএবংঅপরিসীমএবংঅপরিসীম অদ্ভুত আলোয় ডুবে থাকা নিজেকে দেখবে, দেখবে প্রতিটি ব্যক্তি আসলে এক ও অকৃত্রিম সমষ্টিতে নিমজ্জিত, দেখবে অপার্থিব অনুভূতিরাই কেমন নিঃসংকোচে পৃথিবীর সন্তান হয়ে জন্মায়দেখবেএবংদেখবেএবংদেখবে ... ...
অনেক উঁচু রাজপ্রাসাদের জানালা পাহারা দিচ্ছে দৈত্যাকৃতির মেঘের দল। রাজকন্যা বন্দিনী কঠিন নিয়মের নিগড়ে।রাজ্যের বাতাস নীরব নিশ্চল।বহুপথ পার হয়ে হতদরিদ্র রাজপুত্র এসে দাঁড়াল প্রাসাদের নিচে। রাজকন্যাকে দেবার জন্য নিজের হৃদয় নিয়ে এসেছে সে।কিন্তু রাজকন্যার কুচবরণ দীঘল কেশ সিন্দুকে তুলে রেখে দিয়েছেন অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ রাজা। কেশের জাদুকরী কৌশলে যাতে রাজকন্যার কাছে পৌঁছাতে না পারে হতদরিদ্র রাজপুত্র।রাজপুত্রের কাছে ছিল অচিন বৃক্ষের বীজ। দ্রুত সে বৃক্ষবীজ রোপন করল মাটিতে। কিন্তু জল চাই যে বৃক্ষবীজের অঙ্কুরোদ্গমের জন্য, বেড়ে ওঠার জন্য চাই আকাশস্পর্শী স্পর্ধা।বৃক্ষ বাড়তে বাড়তে প্রাসাদের উঁচু জানালা স্পর্শ করলে তবেই রাজকন্যা খুঁজে পাবে মুক্তির পথ! কিন্তু এ কেমন রাজ্য!কাছাকছি জল নেই যে! নদী নেই, নেই কোনো সরোবর, সমুদ্র!জল ছাড়া ... ...
কিছু একটা লিখবো ভেবেছিলাম। কিন্তু কী লিখবো সেটা ঠিক করিনি আগে থেকে। কলমটা ছিলো আহত, ক্ষত বিক্ষত, রক্তাক্ত, বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোনো উপায় ছিলো না, কলমের অভ্যন্তরে উড়ছিলো একটা "চোখ গেলো'' পাখি, তীব্র বিষাদ ছিলো তার বিহ্বল ঠোঁটে, পালকের ভাঁজে ছিলো নিরব বেদনা। তবু ভেবেছিলাম কিছু একটা লিখবো। কী লিখবো! পৃথিবীর যাবতীয় লেখা অক্ষরাবদ্ধ হয়ে গেছে আগেই, হয়ে গেছে সমস্ত অনুভূতি-সূক্ষ্মানুভূতির তর্জমা, অনুদিত হয়ে গেছে সকল প্রকার মানবিক-অতিমানবিক বোধের আদ্যোপ্রান্ত, অপ্রকাশ্য বলতে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই কোথাও।তবু ভেবেছিলাম কিছু একটা লিখবো, লিখবো প্রেম, যে প্রেম মানুষের বিশুদ্ধতম অনুভূতিসমূহের অন্যতম, যে প্রেম পুনরাবর্তনে বিশ্বাসী, যে প্রেম সর্বোত্কৃষ্ট হিসেবে বিবেচিত সংসারে, যে প্রেমের ... ...
৫০৫৫ সাল। পৃথিবী ভয়াবহ বিপদে পড়লো। অন্য গ্যালাক্সির প্রাণীরা আক্রমণ করলো পৃথিবীকে।মানুষ দিশেহারা। বৈজ্ঞানিকরা ব্যতিব্যস্ত। কী উদ্দেশ্যে এই আচমকা আক্রমণ! ইন্টার-গ্যালাক্সি পিস ট্রিটি লঙ্ঘন করে এমন আক্রমণ নজিরবিহীন! কী চায় দূর গ্যালাক্সির অধিবাসীরা?চায় একজন কবি, আর একজন শিক্ষক। তাঁরা কয়েকবার দূত মারফত সবিনয়ে এই দাবী পেশ করেছে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান দপ্তরে। কিন্তু কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান দপ্তর তাদের অপারগতা প্রকাশ করেছে দূর গ্যালাক্সির অধিবাসীদের কাছে, কারণ, পৃথিবীতে কবি আর শিক্ষক আপাতত নেই।পৃথিবীর সর্বশেষ কবি চাটুকারে পরিণত হয়েছেন দীর্ঘদিন আর সর্বশেষ শিক্ষক অনেকদিন আগেই চাকুরি নিয়েছেন জুতার দোকানে। ... ...
ক্রিস্টোফার বলতো, ও রোদের কথা শুনতে পায়।আমরা হাসতাম। ক্রিস্টোফার পেরেইরা, আমাদের স্কুল ফ্রেন্ড, ব্যাপটিস্ট ক্রিশ্চিয়ান, সিল্কি লাইট ব্রাউনিশ হেয়ার, কাঁধ অবধি গড়ানো, মুখের হালকা দাড়িতে ওকে অনেকটা জর্জ হ্যারিসন যেমন অল্প বয়সে ছিলেন দেখতে, তেমনটা লাগতো।ও না পারতো গান গাইতে, না পারতো গিটার বাজাতে। তবে নিমগ্নতা ছিলো ওর, আত্মনিমগ্নতা।অন্যদিকে আমরা ছিলাম ছটফটে, অস্থির। আমাদের তাড়া ছিলো অকারণ ছুটোছুটির। আমরা যখন হুল্লোরে ব্যস্ত, তখনও ক্রিস্টোফার একা, চুপচাপ ওর পায়ের কাছে আদুরে বিড়ালের মতো গুটিশুটি শুয়ে থাকা রোদের দিকে তাকিয়ে সময় কাটাতো।আমরা জানতাম না রোদ কথা বলতে পারে কিনা, জানতাম না রোদের কোনো ভাষা আছে কিনা আদৌ, কিন্তু ক্রিস্টোফার বলতো মৌনতার নিজস্ব ... ...
পৃথিবীর তৃতীয় আশ্চর্যের কথা বলছি, সেটা আমি নিজেই, মায়াবী অনিশ্চিতি আর চতুর্থ আশ্চর্য বলতে কিছুই ছিল না, একটা আকাশের হলোগ্রাফিক ইমেজ, আর কিছু নীল বাতাস, আর রুপালি অনুভূতি, এবং ওইসব আদতে আছে কি নেই, তা নিয়েও সংশয় ছিল বিস্তরআমি যেখানে থাকতাম সেটা একটা ধূসর শহর, ওখানে বাদামী নদী ছিল, কালো বরফে আচ্ছাদিত পাহাড়, আর অবসন্ন স্টেশন একটা বয়োবৃদ্ধ শাদা দাঁড়কাক ছিল স্টেশন মাস্টার, যেদিন পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হত, সেদিন সে তার অশীতিপর পাখা নাড়তে নাড়তে উড়ে আসতো প্লাটফর্মের ছায়ায়, কালো অজানুলম্বিত ওভারকোট থাকতো সেদিন শরীরে জড়ানো, অদ্ভুত এক মাউথঅর্গানে তুলতো কী বিষণ্ন সুর, ভীষণ অন্ধকার ঘনবদ্ধ লৌহতরলে রূপান্তরিত হত, ঠিক তখনই একটা অর্ধঅদৃশ্য ... ...
"...চিঠি কিন্তু আমি লিখছি না আম্মু, আব্বু লিখছে আমি বলছি.. আমি তো লেখা শিখিনি.. মিস বলেছে কদিন পরেই আমি লেখা শিখে যাবো.. আম্মু, আব্বুটা না অনেক পচা হইছে.. সারাদিন অফিসে থাকে.. দেরি করে বাসায় আসে.. আমি বকি তো.. অনেক বকি, তবু শোনে না.. তুমি কবে আসবা.. জানো, আব্বুটা না অনেক বোকা, রান্না করতে পারে না, প্রতিদিন ভাত পুড়িয়ে ফেলে.. আমি বলি, আমি রেঁধে দেই, আব্বু বলে বড় হও মা, আমি হাসতে হাসতে মরি, ওরে! আমি কী ছোট! আমি তোমার মতো শাড়ি পড়তে পারি.. জানো আম্মু, আব্বুটা অনেক গরীব আছে, জুতা ছিঁড়ে গেছে বোঝেও না, ছেঁড়া জুতো পরে ঘুরে বেড়ায়.. নানুভাই ... ...
অনেক সকালে ঘুম ভাঙল নীলিমার। শুভ সকাল। নিজেই নিজেকে মিষ্টি করে বলল সে, মনে মনে। বিছানা থেকে নেমে হেঁটে গেল জানালার সামনে। পর্দা সরাল। সুদীর্ঘকাল অপেক্ষমাণ প্রকৃতির প্রশান্ত মুখ যেন ভেসে উঠল চোখের সামনে। দূরে পিচঢালা পথ অনেকদূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। ধুলোবালিগুলো এখনো উড়ে বেড়ানোর শক্তিরহিত অবস্থায় পড়ে আছে মাটিতে। ইলেকট্রিকের পোলে একটা দোয়েল বসে আছে চুপচাপ। নিঃশব্দ প্রকৃতিতে মগ্ন হয়ে আছে পাখিটা।বেলা বাড়ল। আজ ভীষণ পড়তে ইচ্ছে করছে নীলিমার। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে লেখা কয়েকটি নিবন্ধ পড়ে আছে টেবিলের ওপর বেশ কয়েকদিন হলো! পড়ে ফেলবে নাকি আজ? খুব গুরুগম্ভীরভাবে না পড়ার পক্ষে নীলিমা। এলোমেলোভাবে পড়া শুরু করল সে। হাতে একটা পেন্সিল। কোনো লেখার কোনো অংশ বিশেষভাবে মনে দাগ ... ...