হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে হেমন্তিকা করলো গোপন আঁচল ঘিরে। ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো - 'দীপালিকায় জ্বালাও আলো,জ্বালাও আলো, আপন আলো,সাজাও আলো ধরিত্রীরে।' রবিঠাকুর যেন শরৎ পরবর্তী সময়ের হৈমন্তীর হালকা কুয়াশা ভরা আকাশে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন দীপাবলি উৎসবের এই গানের মাধ্যমে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শরৎ নিয়ে ৩৩ টি গান লিখলেও, লিখেছেন মাত্র পাঁচটি গান হেমন্ত ঋতুকে নিয়ে। ... ...
ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত “ বাঘের মতোই জীবনযাপন করেছিলেন বুদ্ধদেব গুহ মহাশয়, সারা জীবন। কিন্তু সাহিত্য জীবনে বিপুল জনপ্রিয়তা স্বত্বেও, স্বীকৃতির দিক থেকে বঞ্চনা বোধহয় ওনাকে চারিদিক থেকে ঘিরে রেখেছিলো। “ ২০ শে সেপ্টেম্বর ভোররাতে অফিসের কাজে জামনগর যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছি। রূপালীর সাথে চা খেতে খেতে গুগুল খুলে দেখি, আমাদের একজন বাঙালি কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মহাশয়কে সাহিত্য আকাদেমির সর্বোচ্চ পুরস্কার জানানো হয়েছে 'সাহিত্য আকাদেমি ফেলোশিপ'। মনটা আনন্দে নেচে ওঠে। ... ...
“অধিবাসের কুলো মাথায় আমাদের পুত্রবধূ নেহা-র প্রবেশ যখন মন্দিরে দেবীর আমন্ত্রণের জন্য পূজারীর দ্বারা, উপলব্ধি করতে পারছিলাম - আমার দাদুভাই, ঠাম্মা, বাবা, মা, কাকুমণির আশীর্বাদ ঝরে পড়ছে ওনাদের বংশের নববধূর উপর অকাতরে।“ - লিখছেন সুপ্রিয় দেবরায় ... ...
নমঃ সূর্যায়ঃ শান্তায়ঃ সর্বরোগে নিবারণে আয়ু আরোয়োগ্য মাইশ্বর্যম দেহি দেবাহঃ জগৎপাতে। ওঁম হ্রীম হ্রাম সাঃ সূর্যায়ঃ নমঃ। সুনীল দাস দেখতে পান, উপেন্দ্র সরকার কর-জোড়ে পূর্ব দিকে সূর্যের দিকে চেয়ে একমনে সূর্যস্তব করে চলেছেন। ওনার সঙ্গের লাঠিটা পাশে সিমেন্ট বাঁধানো বসার বেঞ্চিতে হেলান দিয়ে দাঁড় করানো। এখনও অন্ধকার পুরোপুরি কাটেনি। ভোরের আলো ধীরে ধীরে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। যদিও ভোরের আলো এমনকি সকালের সূর্যের মুখ এই তপোবন আবাসন থেকে দেখতে পাওয়া যায় না। ঢেকে রাখে দুটো পাশাপাশি হাই রাইজ কুড়ি তলার বিল্ডিং, অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় - এই তপোবন আবাসনের গা ঘেসে পূর্বদিকে। সুনীল বাবুর হাতেও একটা লাঠি আছে। ... ...
গল্প আলোর সাথে আচমকাই পরিচয় হয়ে যায় রাতুলের বাসে। সেদিন রাতুল কলেজ যায়নি। কলেজ স্ট্রিট থেকে কয়েকটা পুরনো বই কিনে বাসে ওঠে শ্যামবাজার পাঁচ মাথায় আসার জন্য, সেখান থেকে তিরিশ বি অথবা এগারো এ বাস ধরে পৌঁছাবে বাড়ি। হেঁদুয়ার মোড়ে এসে দেখতে পায় বাসের জানলা দিয়ে, এগারো এ নম্বর বাস দাঁড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি হুড়োহুড়ি করে নেমে দৌড়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এগারো এ বাস। বেশি ভীড় না থাকলেও খালি নেই বসার জায়গা, লেডিস সিট প্রায় খালি। দোতালায় সিট খালি আছে কিনা দেখার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই, শুনতে পায় - "শুনছেন, রাতুল-দা। আপনি এখানে এসে বসুন।" ... ...
আমরা হারালাম আমাদের একজন প্রিয় লেখককে - বুদ্ধদেব গুহ মহাশয়কে। চার মাস আগে কোরোনাকে পরাজিত করলেও - ৮৫ বয়েসে হৃদরোগে প্রয়াত হলেন গতকাল রাতে। উনিও ছিলেন আমার অনেক প্রিয় লেখকদের মধ্যে একজন। তার সৃষ্ট 'ঋজুদা' অথবা 'ঋভুদা' কিশোর বয়সে মনকে আকৃষ্ট করে রাখতো। ... ...
এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে কিছুক্ষন আগে হঠাৎ করে। রোদের আর তেজ নেই, মৃদুমন্দ ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে। বিকেলে আমি বকুল-দির সাথে আমাদের বাড়ির বারান্দাতে দিদির জন্য অপেক্ষা করে করে অধৈর্য হয়ে পড়েছি। দিদিটা যে কী করছে না ভিতরে, কে জানে! "দিদি আমাদের দেরী হয়ে যাচ্ছে, একটু পরেই শিয়ালদহ থেকে ট্রেন এসে যাবে। আমরা যদি এখনই স্টেশনে পৌঁছতে না পারি, আমাদের ট্রেনে চড়ার মজাটাই হবে না। বকুল-দি এসে গেছে কখন, আর কেউ আসবে বলে মনে হয়না।" ... ...
পলাশ কয়েকদিন ধরে ভাবছে এবার কী লেখা যায়। এতদিন ধরে যা লিখলো, প্রায় অধিকাংশই নিজের স্মৃতির ভান্ডার উজাড় করে লেখা। পলাশ কিন্তু কোনো লেখক নয়, লেখে নিজের খুশিতে - আনন্দে - বিলিয়ে দিতে সবার মধ্যে। পলাশের স্মৃতি জুড়ে বসে আছে তার শৈশবের অমূল্য সম্পদ, যতই খরচা করে আবার যেন ভরে ওঠে। ভাবুলতা যখন আঁকড়ে ধরে পলাশকে - বারাসাতের বাগান বাড়ি, পুকুর, মণ্ডপ, গাছ-গাছালি আষ্টে-পিষ্টে জাপটিয়ে ধরে তাকে, কী করবে সে ! চোখ বুজলেই নিজেকে দেখতে পায় - মণ্ডপের সামনের প্রাঙ্গণে ক্রিকেট খেলছে শৈশবের পাড়ার বন্ধুদের সাথে, লিচু-জামরুল-টগর-ঝোপ-জঙ্গলের পিছনে খেলছে চোর-পুলিশ মশার কামড় সহ্য করে, ... ...
"যদিও তুমি আমার স্থির জলের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুমি কিছু একটা ভাবছো একাগ্রমনে; তাই কি বন্ধু?" উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি, ঢাক এবং কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ এর মধ্যে, মনে হচ্ছে আমার কানে যেন কেউ ফিসফিস করে কিছু বলার চেষ্টা করছে। ... ...