আপনি কোনো উত্তরপ্রদেশের লোককে কখনও বলেছেন, ব্যাটা পাকিস্তানের ভাষায় কিঁউ বাতচিত করতা হ্যায়? পাকিস্তানিরা কোন ভাষায় কথা বলে? যদি ইসলামাবাদের মান্য লব্জ ধরেন, তো ওরা প্রধানমন্ত্রীকে বলে উজির, সেটা হিন্দুস্তানি চালু কথা, নেহাৎই সংস্কৃত করে এদিকে 'প্রধানমন্ত্রী' করে দেওয়া হয়েছে। এরকম কিছু ফার্সি-সংস্কৃত গোলমাল ছাড়া, ও ভাষাটা পুরোদস্তুর হিন্দুস্তানি। যদি পাকিস্তানি সিরিয়াল দেখেন, দেখবেন হুবহু হিন্দি। ... ...
ধরুন আপনি দিল্লি থেকে কলকাতা আসছেন। কলকাতাগামী বিমানে উঠে দেখবেন, ঘোষণা-টোষণা সব হিন্দি আর ইংরিজিতে। এক বর্ণ বাংলা নেই। বিমানবন্দরে নেমে দেখলেন, নিরাপত্তারক্ষীরা প্রায় কেউ বাংলা বলেননা।উঠলেন ট্যাক্সিতে। চালক হইহই করে এফএম চালিয়ে দিলেন। সেখানে, শুনলেন, একটিও বাংলা গান বাজছেনা। একটিও না।যাহোক, বাড়ি তো ঢুকলেন। একটু জিরিয়ে টিরিয়ে নিয়ে ভাবলেন সিনেমা দেখবেন। কলকাতা হল সিনেমার তীর্থস্থান, সত্যজিৎ ঋত্বিক ইত্যাদি প্রভৃতি। মাল্টিপ্লেক্সে গেলেন। ও মা, একটি সিনেমাও বাংলা চলছে না। একটিও না। ... ...
এ সব বই প্রকাশে আমরা ঝোলাইনি। বইমেলার প্রথম দিক থেকেই সবকটি বই পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তার পরেও আনুষ্ঠানিকতার একটা ব্যাপার থাকে। যতই উল্টোপাল্টা প্রতিষ্ঠান হোক না কেন। অতএব এই বইগুলির প্রায় সবকটিরই আজ উদ্বোধন। ছবিতে রুহানির নামও চলে গেছে, কিন্তু রুহানির উদ্বোধন আজ নয়, পরশু। বাদবাকি সবারই একে একে মলাট উদ্বোধন হবে। বইমেলার ৯ নম্বর গেটের কাছে, শঙ্খ ঘোষ মঞ্চে। জায়গাটা আমাদের স্টলের ঠিক কোনাকুনি উল্টো দিকে। গোটা মাঠ পেরিয়ে। ফলে মাঠের দুই কোণে আজ গুরুর ঠেক। সন্ধ্যে ছটা থেকে। জাস্ট চলে আসুন। ... ...
সমকামিতা একটা সময় কার্যত নিষিদ্ধ ছিল। জেল-জরিমানা হত। ঠিক সত্তর বছর আগে, ১৯৫২ সালে বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী অ্যালান টুরিং বিলেতের আদালতে সমকামিতার অপরাধে 'অপরাধী' প্রমাণিত হন। তাঁকে কারাবাস এবং হরমোন-'চিকিৎসা'র মধ্যে, যেটা খুশি বেছে নিতে বলা হয়। টুরিং হরমোন চিকিৎসা বেছে নেন। এবং তারপর এই অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে বছর দুয়েকের মধ্যে টুক করে আত্মহত্যা সেরে নেন।এর পরে অবস্থা বদলায়, জেল-জরিমানা না হলেও, সমকামিতা অসুস্থতা হিসেবে চিহ্নিত থাকে বহুদিন। মানসিক অসুস্থতা বা ডিজঅর্ডারের তালিকায় দীর্ঘদিন ঢুকেছিল সমকামিতা। ... ...
অনেকেই গুরুর বইয়ের দত্তক নিয়েছেন, বা ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের ধন্যবাদ। তার চেয়েও বেশি এসেছে প্রশ্ন। গুরুর বইয়ের দত্তক,কী কেন ? যেহেতু অনেকগুলো প্রশ্ন এসেছে, ছোটো করে লিখেই রাখি।আমরা বইয়ের দাম কম, খুবই কম রাখি। নীতিগতভাবেই। ফলে বইয়ের বিক্রি খুবই ভালো হলেও, আমাদের মেরেকেটে টাকাটা উঠে আসে। কখনও সামান্য কিছু লসও হয়, কিন্তু সেটা অ্যাবসর্ব করে নেওয়া যায়। এগুলোর কোনোটাই কোনো সমস্যা না, কারণ আমরা প্রফিটের জন্য এই খেলায় নামিনি। সমস্যা এই, যে, এইভাবে চললে আমাদের টাইটেলের সংখ্যা প্রত্যাশিতভাবে বাড়ছেনা। ... ...
অজিত রায় আর নেই। আপামর পাঠক সমাজ, অজিত রায়ের লেখা কখনও উদযাপন করেনি। মৃত্যুতে ক্ষণিক শোকপ্রকাশ দেখেছি। সমাজমাধ্যমের পাতায়। তারপর সে পাতা উল্টে গেছে। বদলে গেছে পৃষ্ঠাসংখ্যা, ক্যালেন্ডারের তারিখ। বইমেলা আসছে, কিন্তু একশটি পুস্তকালোচনায় অজিত রায়ের কথা আর নজরে পড়েনা। না পড়ারই কথা। ভূত আর তান্ত্রিক ছেয়ে আছে বাজারে। অজিত রায়দের সেখানে প্রবেশাধিকার নেই।বাংলা ভাষার অন্যরকম গদ্যলেখকদের এই এক ট্র্যাজেডি। তাঁরা দাঁতে দাঁত চেপে লিখে যান, তারপর চুপচাপ মরে যান। কপাল ভালো থাকলে সব দাঁত-টাত পড়ে, চুল-টুল উঠে যাবার পর এক আধটা পুরষ্কার পান। সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় পেয়েছিলেন, এমন একটা বইয়ের জন্য, যা কস্মিনকালেও তাঁর শ্রেষ্ঠ লেখালিখির মধ্যে পড়েনা। উৎপল কুমার ... ...
রাজকার্য যে মূল্যহীন ব্যাপার-স্যাপার, এমন কথা লিখেছিলেন দারাশিকো, জাহানারার জ্যেষ্ঠভ্রাতা, আর এক সুফি শিষ্য। সংক্ষেপে--- '' সলতনত্ সহল অসত্ খুদ রা আশনাই ফকর কুন / কতরহ্ ই না দরিয়া তওয়ানদ শুদ চুরা গওহর শওয়াদ" --- রাজত্ব তো সহজ বস্তু বরং ফকিরি শেখো ভাই জলবিন্দু সাগর জানুক মুকুতা হয়ে লাভটি নাই !আর এঁদেরই পূর্বপুরুষ, বাবর, তুর্কি ভাষায় লেখা তাঁরই এক কবিতায় বলেছেন--- অলীক ... ...
কুলদা রায় একজন বিপজ্জনক ব্যক্তি। এই জন্য নয়, যে, তিনি বিপজ্জনক শব্দ লেখেন। নতুন করে আর বিপজ্জনক কিছু লেখা তো সম্ভব নয়, সব শব্দই এখন কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে অভিধানে জমানো আছে। সব বাক্যই ব্যাকরণে বাঁধা। রবীন্দ্রগানের সব সুরই আছে স্বরলিপিতে। সব নদীই সমুদ্রে পড়ে, আর বিপ্লব শেষ করে সব পাখিই ঘরে ফেরে। আসল বিপদ তাঁর দেখার ভঙ্গীতে। কত লোকে কত ভাবে দেখে। কেউ আড়চোখে, কেউ সোজাসুজি। কারও দৃষ্টি ঘোরালো, কেউ চোখ পাকিয়ে তাকায়। কেউ কটাক্ষ করে, কেউ রাখে নজরবন্দী। কিন্তু দেখে একই জিনিস। সামনে সুচিত্রা সেনকে পেলে, সবাই 'মহানায়িকা'ই বলবে। কিংবা মোহময়ী। কিংবা মুনমুন সেনের মা। মানে, অভিধানে যা লেখা আছে। ফিল্মফেয়ারে ... ...
যতই স্মার্ট হও 'শিট' আর 'ফাক' বলেগ্লোবাল ইংলিশে গাল দিয়েযতই 'সেন্ট্রাল' হবার ইচ্ছেয়হিন্দি চাল চষো হাল দিয়েদিনের শেষে সেই লোকাল ভাতই খাবেমাছের ঝোল আর ডাল দিয়েকারণ লোকালেই আগামী 'কাল' আছেগ্লোবাল শেষ হয় 'বাল' দিয়ে।এটা সোমনাথ রায়ের লেখা নয়, আমার লেখা। ন্যানোপুরানে এর একটা অন্য ভার্সান আছে। সোমনাথ এসব ফুক্কুড়ির ধার ধারেনা। কিন্তু মধ্যযুগ ছিল অন্ধকার, তারপর জল পড়িল, পাতা নড়িল, ফুল ফুটিল এবং সিরাজ বধ করিয়া, সগর্বে য়ুরোপ আসিয়া বাংলাকে গ্লোবাল করিয়া জ্ঞানের আলো দেখাইল, এইসব ঢপেচ্চ্পেও বিশ্বাস করেনা। সে রামপ্রসাদের ভক্ত। প্রগতি নামক লিনিয়ারিটিকে এন্তার দুচ্ছাই করে, বোধহয় একটু বেশিই করে। ইংরেজ এসে বাংলায় স্বর্গের সিঁড়ি বানিয়ে দিয়েছিল, সেই ... ...
সুভাষ বসুর জন্মদিবসের প্রাক্কালে, দেখলাম, প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আনন্দ পটবর্ধন দাবী করেছেন, সুভাষ বসুর সঙ্গে আরএসএস এবং হিন্দু মহাসভার আদর্শগত জোট ছিল। হয় সোজাসুজি, নয়তো মাঝে হিটলারকে রেখে। কোনটা, ইংরিজি ভাষার কারণে ঠিক স্পষ্ট নয়। তা, এতদিন আমরা জানতাম, কোনো কেন্দ্রীয় সরকারই সুভাষকে না পারে গিলতে, না পারে ওগরাতে। তারা একদিকে হইচই করে, ঢাকঢোল পিটিয়ে সুভাষের জন্মদিবস পালন করে, অন্যদিকে পুরোনো সোভিয়েতের রাশিয়ার কেজিবি আর্কাইভ খুলে গেলেও সুভাষের অন্তর্ধান নিয়ে অনুসন্ধান করতে সেদিকে উঁকি মেরে দেখারও প্রয়োজন মনে করেনা। আনন্দ পটবর্ধনের ফেসবুক পোস্টে সে ভুল ভেঙে গেল। ... ...