এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শিবাংশু | 127.197.235.103 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৩:০৪583058
  • ১.

    বাঙালির কাছে পুরীর গপ্পো করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ পরিসংখ্যান বলছে এই জায়গাটি সম্বন্ধে প্রত্যেক 'বাঙালি' ( যারা নিমকের প্রতি প্রতিবদ্ধ) একে অপরের থেকে 'বেশি' জানে। কারণ এরকম মনে করা হয় প্রত্যেক মধ্যবিত্ত বাঙালি জন্মের আগে থেকেই পুরী বেড়াতে আসে। প্রাথমিকভাবে ব্যাপারটা কিঞ্চিৎ হেঁয়ালি লাগতেও পারে। কিন্তু যদি আমরা দেখি শতকরা নিরানব্বই প্রতিশত হোনেওয়ালা বাবা-মা মধুচন্দ্র যাপন করতে টোপর খুলেই পুরীর ট্রেনে চড়ে। অন্তত কিছুদিন আগে পর্যন্ত চড়তো। তাই আজকের চলে ফিরে বেড়ানো অধিকাংশ বাঙালি বাবা-মা'র জন্মকাল বামফ্রন্টযুগ এবং তাদের নিপাতন সিদ্ধিতে পুরীর ভূমিকা জজেও মানে।

    যখন দূরে দূরে থাকতুম তখনও পুরী আসায় বিশেষ ছেদ পড়েনি। এখন তো নেহাৎ প্রতিবেশী। গাড়ি বার করার পর সোয়া ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া, তাই প্রায় নিত্য গতায়াত । এ রকমই একটা যাত্রা নিয়ে দুচার কাহন রইলো এখানে।
  • শিবাংশু | 127.197.235.103 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৩:০৮583069
  • ২.
    কথায় বলে শুক্কুর বারের আকাশ। বিকেলবেলা আমার চেম্বারের মস্তো কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরে দেখি আকাশ কালো। ঝিরঝিরে বৃষ্টি নেমেছে। একটু পরেই ঝমঝম। নিচের পাঁচ নং জাতীয় সড়ক প্রায় ভাসাভাসি। তবে থেমে গেলো। যেভাবে এসেছিলো, সেভাবেই বৃষ্টি ফিরে গেলো নিজের বাড়ি। যেতে যেতে হাওয়াটাকে ঠান্ডা করে গেলো। জুড়িয়ে দিলো গত দু তিন সপ্তাহ ধরে পুড়িয়ে দেওয়া সাতচল্লিশ ডিগ্রির আগুন জ্বালা। সকালে কাগজে লিখেছিলো, আজ প্রাক বর্ষার জল ঝরা শুরু হতে পারে। মিলে যাওয়াটা কাকতালীয়। তবে কে অতো ধার ধারে? বর্ষা আসছে, আর কী চাই?

    শনিবার সকালে প্রাতরাশ টেবিলে একটু কথার কথা। ব্যস, ঠিক হয়ে গেলো। আজ যাওয়া সমুদ্রের কাছে, হপ্তাশেষের ছুটির নিমন্ত্রনে। অফিস থেকে একটু তাড়া করে ফিরে আসা। খাওয়া দাওয়া। সোয়া চারটের মধ্যে বেরিয়ে পড়তে পারলে রাস্তায় গাড়ির জাম অনেকটা এড়ানো যাবে। বিকেলের আলো থাকতে থাকতে সোজা ' এই বালুকা বেলায় আমি লিখেছিলেম'.....

    সেই ছোট্টোবেলা থেকে কতো শতবার পুরী যাওয়া, হয়তো গোনাই যায়না। মায়ের নেশা ছিলো, দুতিন দিন ছুটি পাওয়া গেলো, ব্যস, চলো পুরী। রাতের ট্রেন, খুর্দা রোডে ঘুম ভাঙাতো পান্ডা। আমাদের পান্ডা আছে, ভারত সেবাশ্রম যাবো। সাক্ষীগোপাল,চন্দনপুর হয়ে ট্রেন পৌঁছে যেতো পুরী। তখন ছিলো প্রায় ঘুমন্ত এক রেলস্টেশন। নামাবলী,পৈতে আর সাইকেল রিক্শা।

    পুরী কিন্তু চিরকালই কমপ্লিট প্যাকেজ। ধর্ম,জিরাফ, বাজার, খাবার, সব নিয়ে বাঙালি যা চায়, 'সবকা উত্তম প্রবন্ধ হ্যাঁয়'.... ডাউন সাইড বলতেও তো তাই। এতো বেশি নানা মডেলের বাঙালির কিচিরমিচির,হাঁকডাক। এই মাপের শব্দদূষণ এদেশে আর কেউ সৃষ্টি করতে পারেনা।
  • শিবাংশু | 127.197.235.103 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৩:১৩583080
  • ৩.

    অযোধ্যা মথুরা মায়া কাশী কাঞ্চী অবন্তিকা ।
    পুরী দ্বারাবতী চৈব সপ্তইতা মোক্ষদায়িকা ।।

    বেরোতে বেরোতে সোয়া চারটে। যদিও এখন লর্ড জগন্নাথের জ্বর হয়েছে, তিনি প্রকাশ্যে দর্শন দিচ্ছেন না, তবু লোকের কমতি নেই। জগন্নাথের স্নানযাত্রা ছিলো জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমার দিন, চার জুন। চন্দন যাত্রার শেষে প্রচুর হইচই বাদ্যভান্ড সহকারে তাঁরা তিন ভাইবোন স্নান করলেন সোনা কুঁয়ায়, মন্দিরের পূর্বদিকে। তার পরেই বেশ জ্বর এলো তাঁদের। সাধারনের দর্শন নিষেধ হলো। বেশ কয়েকজন ব্রাহ্মণ সারাদিন বসে বসে দেবতার জন্য কবিরেজি ওষুধ বানাচ্ছেন, খবরকাগজে রোজ সেই সব ছবি।

    মোক্ষ ওরে, মোক্ষ কোথায় পাবি?

    এর মধ্যেই দুরাত্তির সমুদ্রের কাছে ঘুরে আসা।

    রসুলগড়ের মোড় পেরোলুম ঠিক সাড়ে চারটে। যদিও গাড়ির ভিতরটা ঠান্ডা, কিন্তু বাইরের রোদেও প্রতীক্ষিত স্নিগ্ধতা কিছু ছিলো। তন্বী, কৃশা মেঘেরা যেন গা ধুয়ে এদিক ওদিক আকাশে অলসগামিনী। কটক-পুরী সড়ক যেন আজ আশাতিরিক্ত সহজ মুডে আছে। সাইকেল, বাইক, ভাঙ্গা লরি, টার্বো ট্রাক, কেউই যেন তোমাকে ধাক্কা দিতে আগ্রহী নয়। তবুও মনে মনে তো সতত গাইতে থাকা, 'ওগো পথের সাথি, নমি বারম্বার'। সাধুর সাবধানতা....

    নদীর পর উত্তরা পেরিয়ে ধৌলির মোড়। তার পরেই পুরী জেলা শুরু। চার লেনের রাস্তা তৈরি হচ্ছে এখানে। মাঝে মাঝে কাজ হয়ে গেছে, তবে বেশিটাই এখনও অসমাপ্ত। এই রাস্তাটা শেষ হয়ে গেলে মিনিট পঞ্চাশের মধ্যে ভুবনেশ্বর থেকে পুরী। পিপলি একটা বড়ো গাঁট। বাই পাস তৈরি হচ্ছে। পিপলি বাজার এড়িয়ে রাস্তা বেরিয়ে যাবে একদিকে নিমাপাড়া হয়ে কোনার্ক আর ডানদিকে সাক্ষীগোপাল হয়ে পুরী। পিপলি বাজারের মোড় পথিকদের কাছে একটা দুঃস্বপ্ন। একজন রোগা পুলিশ টুপি-লাঠি নিয়ে সিটি বাজিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার উপর উপচে পড়ছে দোকানদানি। অ্যাপ্লিকের লন্ঠন, ব্যাগ আর দেওয়াল সজ্জা। বাঁদিকে কোনর্কের রাস্তা, ডানদিকে গেলে খুর্দা আর নাক বরাবর সাক্ষী গোপাল। এ জায়গাটাও আজ আশাতিরিক্ত সভ্য ব্যবহার করলো। সবার মনেই যেন আজ নবীন মেঘের রং লেগেছে।

    রঘুরাজপুর পেরোলেই রাস্তার দুধারে ছায়াঘন বৃক্ষের সারি। এই পথ দিয়ে গত তিনহাজার বছর ধরে কে যায়নি? তীর্থযাত্রী, পুণ্যার্থী, বণিক, সৈনিক, রাজা, ভিখারি, নটী, বধূ, ভারতের আত্মা আর কোটি কোটি পেটরোগা বাঙালি। সতশঙ্খ পেরিয়ে সাক্ষীগোপাল, তারপর চন্দনপুরের রেললাইনের পার, মনে হয় এইতো পুরী পৌঁছে গেলুম। রাস্তার ধারে ডাবের স্তূপ। গাছ থেকে সদ্য পাড়া। খাওয়া গেলো মন ভরে।

    বাঁদিকে বটমঙ্গলা মন্দির রেখে পুরী ঢোকার তেমাথা। ডানদিকের রাস্তা যাচ্ছে সাতপাড়া, চিলিকা আর বাঁদিকে গেলেই পুরী গ্র্যান্ড রোড, আঠারোনালা পেরিয়ে। আমি যাবো আমাদের অতিথিশালায়, চক্রতীর্থ রোডে। গ্র্যান্ড রোডের মোড় পেরিয়ে ভিআইপি রোড ধরে গন্তব্যে চলেছি, বাঁদিকে জেল, তার পর হাসপাতাল রেখে। হঠাৎ দেখি রাস্তা বন্ধ। কাজ হচ্ছে। একটি পুলিশ ওড়িয়ায় বললো স্টেশন হয়ে ঘুরে যেতে।

    বহুকাল পুরী স্টেশন আসিনি। বিশাল চক মেলানো আড়ম্বর তার এখন। উপরে গম্বুজ, গেরুয়া আর শাদা রং করা প্রাসাদ। চারদিকের ছোটো ছোটো দোকানপাট, বাড়িঘর, খর্ব আবহে , বেশ মহিমান্বিত তার দাঁড়িয়ে থাকা। তার পাশ দিয়ে জেলা ইশ্কুল পেরিয়ে সরু রাস্তা সোজা পৌঁছোচ্ছে চক্রতীর্থ রোড। সেখানেই আমাদের অতিথশালায় দুরাত্তির বাস। গাড়ি ঢুকিয়ে প্যাঁটরাটি ঘরে রেখে আমরা উধাও সমুদ্রের দিকে। রাস্তা যাচ্ছে বাঁদিকে চক্রতীর্থ বেলাভূমি রেখে, আরো এগিয়ে , যেখানে একলা পাথরের নেতাজি পশ্চিমমুখী হয়ে 'দিল্লি চলো' দাঁড়িয়ে আছেন, সেখান থেকে বাঁদিকে ফিরে বিএন আর, আহা আমাদের ছোটোবেলার স্বপ্নের বি এন আর, বাইরে থেকে দেখতুম।
    মনে পড়ে,
    '... ভিখিরিদের মতো চৌধুরিদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি রাস উৎসব, অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা, কতো আমোদে মেতেছে, তারা আমার দিকে ফিরেও দেখেনি,
    বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস আমরাও একদিন...
    বাবা আর নেই
    আমাদেরও দেখা হয়নি....'

    আজ হয়তো দেখতে যেতে পারি, কিন্তু সে আমিও আর নেই, নেই সেদিনের বি এন আর। যেখানে ঘরে বসে সমুদ্র দেখা যেতো একদিন। সবুজ খড়িদেওয়া সারি সারি ফরাসি জানালা, নারকেল বীথির ফাঁক দিয়ে ডাক দিতো। ভাবতাম সত্যজিৎ কি এখন এখানে আছেন, বা তপন সিংহ। বাঙালির শ্রেষ্ঠ মস্তিষ্কগুলিকে বিশ্রাম দিতো ঐ সরাইখানার ঘরগুলি আর আমাদের মতো ইতরজনের স্বপ্ন জাগিয়ে রাখার ছলনা...

    আজ তার নাম চাণক্য বি এন আর। বাঁদিকে রেখে এগিয়ে গেলেই ডানদিকে আমাদের অতিথশালা। এইতো পৌঁছে গেলুম....
  • শিবাংশু | 127.197.235.103 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৩:২৩583091
  • ৪.
    দেবতা হিসেবে জগন্নাথের একটা সম্পূর্ণ অন্যতর মাত্রা আছে ভারতবর্ষের কোটি কোটি দেবতার সমারোহে। অনার্য কিরাত জাতির পূজ্য একটি নিখুঁত সাররিয়ালিস্টিক বিগ্রহ, কীভাবে ব্রাহ্মণ্য স্বীকৃতি পেয়ে বিষ্ণুর মর্যাদা পেলো তিন হাজার বছরের অভিযাত্রায়, মাঝে মাঝে বুদ্ধও উঁকি মেরে যান, খুব আকর্ষণীয় বিষয়। কিন্তু আজ আমি জগন্নাথে নেই, আছি তাঁর কোল ছাপানো বেলাভূমির ম্যাজিক বাস্তবতায়।

    বলি, গাড়িটা এখানেই থাক। হেঁটেই যাই না হয় বিচে। মাতাপুত্রী রাজি, কিন্তু জানি অনেকটা রাস্তা, সবটা হেঁটে যাওয়া হয়তো হবেনা। মেফেয়ার আসতেই একটা অটো গা ঘেঁষে, স্বর্গদ্বার, স্বর্গদ্বার... চড়ে বসি।

    নামা হলো স্বর্গদ্বারের শ্মশানের পাশে, চৈতন্য যেখানে পাথর হয়ে সমুদ্রের দিকে ধেয়ে যাচ্ছেন। অসংখ্য শাড়িকাপড়ের দোকানপাট আর সারি সারি ঠেলাগাড়িতে ভেটকি, পার্শে, পমফ্রেট, চিংড়ি ভাজার দোকান। সন্ধের ঝোঁকে অগণিত ভোজনবিলাসী মত্ত হয়ে সেসবের সদ্গতি করে যাচ্ছেন। অনেকদিন আগের একটা গপ্পো মনে পড়ে গেলো। সেদিন ঐখানে বেড়াতে গিয়ে আমার স্ত্রী 'বায়না' ধরলেন মাছভাজা খাবেন। আমি খাওয়াদাওয়া নিয়ে বিশেষ স্পর্শকাতর নই, কিন্তু বাঙালি নই বলে খাওয়ার ব্যাপারের ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধির বালাই বড়ো তাড়না করে। তাঁকে তো নিরস্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়লো। তখন অদূরে একটা অগ্নিকুন্ডের দিকে আমি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করলুম। তিনি একটু বিস্মিত হয়ে বললেন, এই বাজারের মধ্যে কে অমন আগুন জ্বেলেছে। আমি বলি, ওটা হচ্ছে, 'আগুন আমার ভাই'...

    মানে?

    মানে... 'যেদিন আমার অঙ্গ তোমার অঙ্গে, এই নাচনে নাচবে রঙ্গে, সকল দাহ মিশবে দাহে, ঘুচবে সব বালাই...'

    মানে???!!!

    মানে... ওখানে কারুর বালাই ঘোচানো হচ্ছে... ওটা বিখ্যাত স্বর্গদ্বার শ্মশান...

    অ্যাঁ...

    আজ্ঞে হ্যাঁ, দেখছো না কেমন ছাই উড়ে এসে মাছভাজা গুলোকে গার্নিশ করছে, এমনি এমনি কি এতো স্বাদ হয়...?

    তিনি দৌড়োতে থাকেন, অথবা বলা যায় উড়তে থাকেন উল্টোদিকে।

    তার পর থেকে যখনই সেইখানে যাই আমি স্বতপ্রবৃত্ত হয়ে মাছভাজা খেতে অনুরোধ করি। এবারেও করলুম। কিন্তু তিনি যথারীতি ঘৃণাসহকারে প্রত্যাখ্যান করলেন।

    তারপর বড়ো রাস্তা দিয়ে নামোদিকে হাঁটতে হাঁটতে বিচের দিকে। বিশাল অক্ষরে লেখা 'মেড ইন চায়না' নামের একটা রেস্তোঁরা দেখে কন্যা 'আজ আমি চাইনিজ খাবো'।

    বেশ খাও..

    কিন্তু ঢুকতে গিয়ে দেখে এখনও রেস্তোঁরাটির উদ্বোধনই হয়নি। এবার তেনার মেজাজ খারাপ। আমি বলি, 'অনেক হলো, এবার আমি সমুদ্রের কাছে বসবো।

    বালি ভেঙে ভেঙে যতোটা জলের কাছে যাওয়া যায়। সারি সারি চেয়ার পাতা। তাকেও এগিয়ে নিই একটু। বড়ো ব্রেকার গুলোর জল ভেঙে পড়ছে পায়ের কাছে। আর সেই আওয়াজ। মানুষ আর কতোটুকু নকল করতে পারে তাকে? শ্রেষ্ঠতম ধ্রুপদশিল্পীও ভিখিরির মতো অপেক্ষা করেন সারাজীবন। যদি ঐ পুকারের এক সহস্রাংশও কখনও কণ্ঠে ধরা যায়।

    আমার মন তো শুধু ক্যামেরার লেন্সে। যদি কিছু ধরা পড়ে কোথাও। হঠাৎ মনে পড়ে যায়, দেবী মানিকেশ্বরী কিছুদিন আগে তাঁর বটুকভৈরবের সঙ্গে এই বালুকাবেলায় কিছু নাইটশোর ব্যাপারস্যাপার ঘটিত করেছিলেন। ভাবি ঠিক কোন জায়গাটায় ঘটেছিলো সেইসব। ফোন করি তাঁকে। গপ্পো হয় খানিকক্ষণ। তার পর আরেক মজলিশি বন্ধু, যিনি সমুদ্রের কাছে আসার জন্য বেশ ব্যাকুল, তাঁকেও ফোনাই। তিনি ফোনের আওয়াজ শুনে বলেন, তুমি সমুদ্রের কাছে আছো? তুমি ভয়ঙ্কর লোক, আমার মন খারাপ করে দিলে। তিনি নিজে তো তখন রাতের রেলগাড়িতে.... সিরাজের স্বপ্ন দেখতে চলেছেন।

    জীবনানন্দ মনে পড়ে যাচ্ছিলো বারবার। ' অদ্ভুত হাওয়ার রাত ছিলো সেইদিন...'

    সেই অনিমিখ অন্ধকার, অবিনীত জলোচ্ছ্বাস, জলজ লবণাক্ত উড়িয়ে দেওয়া মন জুড়োনো হিমহাওয়ার মাতামাতি, সমুদ্রের কাছে তো এই জন্যই আসা। মুখর ঊর্মিমালার কাছে উন্মুখ ছেঁড়াখোঁড়া মানুষ আমি, শুধু শুনি, বলার তো কিছু নেই।
  • | 24.99.103.251 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৩:৪৭583102
  • বাঃ বেশ লাগছে পড়তে।

    আমার বছর পাঁচেক বয়স অবধি আমরা কটকে ছিলাম। তখন প্রায় মাসকাবারি পুরী যাওয়া হত। কেউ বেড়াতে এলে তাঁকে পুরী দেখানো, বা এমনি এমনিই। কটক থেকে ট্রেনে যেতাম, চওড়া চওড়া কাঠের সীট আর অ্যাইব্বড় জানলাওয়ালা ট্রেন। সমুদ্রতীরে সন্ধ্যেবেলা ভ্রাম্যমান বিক্রেতার থেকে কিনে গরম জিলিপি আর বি এন আর হোটেলে ডিমসেদ্ধ ভাত --- ফেরার আগে আমার জন্য একটা লাল টুকতুকে লাঠি কিনতেই হবে।

    কিন্তু হায় এত ছোটবেলা থেকে দেখেও সমুদ্র আমার তেমন ভাল্লাগে না।
  • শিবাংশু | 127.197.235.103 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৪:০৭583113
  • ৫.

    দু-এক মূহুর্ত শুধু রৌদ্রের সিন্ধুর কোলে তুমি আর আমি
    হে সিন্ধু সারস....

    পুরী যাবো আর চক্রতীর্থের সমুদ্রে সূর্যোদয় দেখবো না তাতো হতে পারেনা। তাই শোবার আগে এলারাম সাড়ে চারটেতে।পৌনে পাঁচটার মধ্যে সুজ্জিমামা বাড়ি ছাড়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন এখানে। এলারাম বাজিলেন ঘোর অন্ধকারে। ধড়মড় করে উঠে বাইরে এসে দেখি আকাশে ঘন ধূসর মেঘ আর টিপটিপ বৃষ্টি।বৃষ্টির দেবতার প্রতি সেই প্রথম একটু রাগ হলো। সূর্যোদয়ের পরেই না হয় মেঘ পাঠাতি।

    সত্যি আমাদের দুমুখপনার তুলনা নেই। এই বারো ঘন্টা আগে পর্যন্ত হা মেঘ ,জো মেঘ করেছে যে লোক, সে এখন মেঘ চাইছে না। সইত্য সেলুকস....

    সাড়ে সাতটায় বিছানা ছাড়ে যে বান্দা ,তাকে যদি সাড়ে চারটেতে উঠতে হয় তবে প্রতিহিংসাপ্রবৃত্তিকে আর বাঁধ দেওয়া যায়না। বাজার স্ট্র্যাটেজি একটু পাল্টে বেশ কোলাহল সহকারে সমুদ্রের উপর সূর্যের বদলে সমুদ্রের উপর মেঘ দেখতে যাওয়ার জন্য ডাকাডাকি শুরু করে দেওয়া গেলো। পরের মেয়ে যদিও সামান্য অনিচ্ছে সহকারে উঠে পড়লো, কিন্তু নিজের মেয়েতো সেই এক রক্ত। বিস্তর নহি ছোড়নে কা... । তবে উদ্যমে কী না হয়, কী না হয় চেষ্টায়? ব্যাজারমুখে সেও উঠে পড়লো শেষ পর্যন্ত।

    আমাদের পুরোনো ট্রেক, অর্থাৎ পান্থনিবাসের গলি দিয়ে ঢুকে চক্রতীর্থের ভেজা বালির পথ ধরে সোজা দক্ষিণে স্বর্গদ্বারের দিকে খালি পায়ে হাঁটা। এই রকম ছয় সকালে আকাশে নো আল্ট্রাভায়োলেট আর বাতাসে নো কার্বন ডাই অক্সাইড। বেঞ্জামিন ফ্র্যান্কলিনের সেই ঘোর অপছন্দের বাণীটিকে কয়েক মূহুর্তের জন্য সত্যি মনে হলো। মেঘের ছায়ায় শাঁওলি আকাশ।সমুদ্রের অন্যপার থেকে ধেয়ে আসা তুখোড় হাওয়া যেন গৌতম বুদ্ধের চোখের মতো করুণা স্নিগ্ধ হয়ে গেছে জলের প্রেমে। সোনালি বালির সুদূর বিস্তার আর নোনা জলের ছলকে ওঠা প্রিয়গামিনী উচ্ছ্বাস ...., পৃথিবীর থেকে অনেক পাওয়া এখনও বাকি থেকে গেছে।

    কিন্তু দেশে সংগ্রামী জনতার কোনও অভাব তো নেই। বেশ ভাববিহ্বল হয়ে আমরা একবার জল,একবার বালি মাড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছিলুম, হঠাৎ দেখি একজায়গায় বেশ ভিড়। লোকজন ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। ভাবলুম কোনও দুর্ঘটনা হলোনাতো।কাছে গিয়ে দেখি জেলে নৌকো থেকে মাছ নেমেছে আর নানা মডেলের 'নতুনদা'র দল তারসপ্তকে মাছের দরাদরি করছেন। কী আশ্চর্য? এনারা কি পুরীতে এইজন্য এসেছেন? যদি মাছের পেটির সাইজ নিয়ে জীবনসংগ্রাম করারই ছিলো তবে কলকাতাতে করলেই হতো। এখানে কেন? পরে ভাবলুম, হয়তো আমাদেরই পদ্যটদ্য করে মাথা বিগড়ে গেছে। জীবনের সার সত্যটা মাথায় ঢোকেনা।

    আর একটু এগিয়ে পুরী হোটেলের সামনের বালিয়াড়িতে চেয়ার টেনে বসি। সমুদ্রকে অনুভব করার জন্য আমি কোনকালেই জলে নেমে হুটোপাটিতে স্বস্তি পাইনা। বিশেষত যখন দেখি শত শত নেয়াপাতি ভুঁড়ি,ডোরাকাটা অন্তর্বাস আর শুনি চীৎকৃত উপভোগের পরূষ কলরব। অথবা প্রায় বিয়েবাড়ির পোষাকে অথবা আজকের ফ্যাশন রেজ, মঙ্গলাহাটের ছাপা ছিটের 'ম্যাক্সি'তে আবৃত পৃথুলা রমণী দলের অর্গ্যাজমিক কোলাহল। বিদেশবাসী বন্ধুরা হয়তো বলতে পারবেন, সাহেব-মেমরাও কি সমুদ্রের জল ছোঁয়ার আতিশয্যে এরকম উচ্চকিত প্রতিক্রিয়া জানাতে চায়? না আমাদেরই রক্তে সমুদ্রের সঙ্গে এরকম ভুল উদযাপনের ব্যাধি রয়েছে। সমুদ্র স্নানের মতো একান্ত বিনোদন, যা শুধু নিজের সঙ্গেই উপভোগ করা যায় , তাকে এমত কার্নাল বিজ্ঞাপনে পর্যবসিত করা। কে জানে, যাদৃশী ভাবনা যস্য। হয়তো আমিই ভুল জানি। আনন্দ পেলেই হলো।
  • dd | 120.234.159.216 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৪:৩৬583124
  • বুঝলে শিবাংশু। পড়তে খুব ভাল্লাগছে।

    পুরী শুনলেই কাছাখোলা হয়ে যায় যতেক বংগো সন্তান।আম্মো।

    তবে তোমার সাথে আমার বনবে না। প্রভুত মাছ ভাজা,সাগরে বিভৎস আদেখলাপনা করে ধেই নৃত্য,শুকনো বা তরল উপাদনে দিব্বি গড়গড়ে অবস্থায় রাতের বেলায় সাগরের ঢেউএর আওয়াজ শুনে আর আকাশের তারাগোনা চিৎপাত অবস্থা এইসবই আমার প্রিয়। স্বচ্ছন্দে বাই দেবো সুর্য্যোদয়কে। ও তো রোজই ছেন্নাইতে দেখি। লাল লাল গোল গোল। বোরিং।

    তবে সিংগল ডির ফুটনোট পড়ে বিস্মিত হলাম। আল্লি শৈশব পুরীর পাশের পাড়ায় আর কৈশোর তক কোন্নোগড়ে সাগর বেলায় - তাও ও "সমুদ্র আমার ভাল্লাগে না"। ন্যাকা।
  • pi | 127.194.2.96 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৫:৪১583135
  • '..পৃথিবীর থেকে অনেক পাওয়া এখনও বাকি থেকে গেছে। ..'

    - আপনার লেখা থেকেও ঃ)
  • শিবাংশু | 127.197.235.103 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৬:২৩583136
  • ৬.

    স্বর্গদ্বার সড়ক থেকে পশ্চিমদিকে যে গলিগুলো সমান্তরাল বেরিয়ে যায়, সেগুলোতে বাঙালিদের রসনাতৃপ্তির সমূহ আয়োজন রয়েছে। এটা সবাই জানে।তবে ভোজনবিলাসীরা ঘুরে ঘুরে বাজার জরিপ করেন। সস্তায় অপুষ্টিকর বাঙালির খাবার কোথায় সবচে ভালো। যদিও সূক্ষ্মবিচার করতে যাওয়া অন্যায়,তবু বলতে পারি পুরীতে ছোটো ও মাঝারি মাপে বাঙালি মধ্যবিত্তের উপযোগী খাবার ঠেক বেশ সুলভ। যদি কারুর স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার বাতিক না থাকে তবে তো বেমিসাল প্রবন্ধ হ্যাঁয় ঐ ফুড স্ট্রিটে সবার জন্য।

    সে রকমই একটি রেস্তোঁরা আছে বাসুবাবুর, সেখানেই প্রাতরাশ সারা হলো সেদিন। এই জাতীয় ঠেকগুলিতে কদাপি ভিড়ের কমতি নেই,কিন্তু নিরাশ হতে হয়না। ওড়িশায় দেখেছি তন্দুরি রুটি বানানোর শিল্পটি কোথাও আয়ত্ব নেই,কিন্তু নান সব জায়গাতেই ভালো বানায়। জানিনা কারণটি কী। বেশ কিছুদিন আগে আমার পরিবার টিভিতে কোনও এক ভোজনরসিক জুড়ির দেশব্যাপী রসনাতোষী সন্ধানভিত্তিক অনুষ্ঠান দেখেছিলেন। সেখানে জানানো হয়েছিলো ওড়িয়া রন্ধনকলার প্রামাণ্য নমুনা পুরীর একটি ঠেকে লভ্য। তখন থেকেই তাঁদেরও সন্ধান চলেছে। কিছুদিন আগে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠান হোটেল মহোদধিতে উদযাপন করা হলো। হোটেলটির পরিবেশ ও আয়োজন অনুপম। ভোজনপরিবেশনের মান অত্যুত্তম না হলেও যথেষ্ট ভালো-ই বলা যায়। কিন্তু সেই অথেন্টিক ওড়িয়া ভোজন সন্ধান চলছিলই এতোদিন। গুগলটুগল করে পাওয়া গেলো তাকে শেষ পর্যন্ত। ঠেকটির নাম 'ওয়াইল্ড গ্রাস'।

    দ্বিপ্রাহরিক ভোজন তবে সেখানেই করা যাবে এমত সিদ্ধান্ত হলো। ঠেকটি ভি আই পি রোডে, চাঙ ওয়া'র পাশেই। দুপুরদিকে পৌঁছে দেখি বেশ জনসমাগম রয়েছে রোব্বার বলে। তবে এই জনতা স্থানীয় রসিকদের জামাত। একটু দূরেই জলকেলিক্লান্ত বাঙালি পর্যটকদের কোনও সন্ধান সেখানে নেই। রেস্তোঁরাটির রূপসজ্জা বেশ রুচিসম্মত।চারদিকে বাগানে বেশ সবুজ সাজানো ল্যান্ডস্কেপিং করা আছে। ভিতরেও অনুচ্চকিত সহজ সজ্জা, মনোরম আবহ। তাদের ভোজনসূচিটিও বিশদ ও আকর্ষক। নানা পদের বিবরন রয়েছে সেখানে। সাদাসাপ্টা বেগুনপোড়ার বর্ণনাও ইংরিজিতে কতো মিস্টিক মুডে লেখা যেতে পারে সেটা লক্ষ্যনীয়। মাতাপুত্রী মিলে বেশ খানিকটা গবেষণা করে ঠিক করলো ঘিয়-অ আরন মাটন খাওয়া যাক। সোজা বাংলায় পুরোনোদিনের ঘিভাত ( যা এখন বিশেষ বানাতে বা খেতে দেখিনা কাউকে) তার সঙ্গে বেশ পাপী মাংসের ঝোল। স্বীকার করতেই হবে রান্নাটা বেহতরিন। যদিও বহুকাল লালমাংস খাওয়া থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করেছি, কিন্তু সমূহ নরকবাসের সম্ভাবনা নিয়েও এই পদার্থ ছাড়া যায়না। ভেবেছিলুম নৈশভোজটিও সেখানে সারবো। কিন্তু রাজা রিপুদমন রাউতরায় সেজে রাতে আর ওমুখো হইনি। ও রকম গুরুভোজনের পর চাঙ ওয়ার পাতি ইন্দোচায়না ভোজই প্রশস্ত। পরের বারের জন্য সংরক্ষিত থাক আপাতত।

    ৬.

    এ পথে আমি যে গেছি বারবার ভুলিনি তো একদিনও....

    কোনও যাওয়ার গল্পই তো ভুলে যাবার জন্য নয়। বেঁচে থাকাই তো কয়েকটিমাত্র মূহুর্তের ঊর্ণনাভজাল। তার সঙ্গে জড়াজড়ি করে জীবনটা কখন ফুস হয়ে যায় টেরও পাওয়া যায়না। এই জাল ছাড়াতে গেলে ব্যথা বাজে। আহিরভৈরবের কোমলঋষভ থেকে কোমলনিষাদের আরোহ যেমন বেজে ওঠে এক অলখ নিরঞ্জন ব্যান্ডমাস্টারের দৈবী ট্রাম্পেটে, কোনও এক অনন্তযাত্রার অনিঃশেষ আবহসঙ্গীত।

    পরদিন ভোরবেলা সঙ্গিনীকে নিয়ে যাই এবারের মতো চক্রতীর্থের সূর্যোদয়কে বিদায় জানাতে। সূর্য কি জানতে পারে দুটো অপদার্থ অর্থহীন মানুষ তার জন্য দাঁড়িয়ে আছে ভেজা বালুতে খালি পা ডুবিয়ে।

    বোধ হয় জেনেছিলো। হঠাৎ ঘন ধূসর মেঘ থেকে উঁকি দিয়ে এক ঝলক আলো বলে উঠলো, আবার এসো, কথা আছে।
  • শিবাংশু | 127.197.235.103 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৬:৪৮583059
  • দ, ডিডি, পাই...

    থ্যান্কু।

    ডিডি,

    তমোগুণে নিজেকে বিভূষিত করে রাখার খেলা আপনাকে খুব মানায়। কিন্তু সন্দ একটা থেকেই যায়.... ঃ-)

    শুধু চেন্নাই কেন, তামিলনাড়ুর কোনও বেলাভূমিই পাতে দেবার মতো নয় । কিঞ্চিৎ পদের পুদুচ্চেরি অবশ্য রয়েছে, কিন্তু ঐ আর কী, চলবে। জামনগর, ভেরাবল ছাড়া এদেশের প্রায় সব সমুদ্রতট, বেলাভূমি তন্ন তন্ন ঘুরেছি, কিন্তু স্বর্গদ্বার.... জওয়াব নইখে...

    কিছু ছবি, পুরী আর আশপাশ, কারও যদি এখনও দেখার ইচ্ছে থাকে.... ঃ-)

    http://www.facebook.com/media/set/?set=a.445205895498002.104718.100000257855694&type=3>
    <http://www.facebook.com/media/set/?set=a.510962302255694.120217.100000257855694&type=3
  • siki | 24.140.82.133 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:০১583060
  • পুরী গেছি বার সাত আট। তিন বছরে। পুরীর আকর্ষণ অন্য রকম।

    লেখাটা দুর্দান্ত লাগল। অনেক পুরনো নষ্ট লজি এসে মনটা ভারাক্রান্ত করে দিল। সেই ভুবনেশ্বর ...
  • কুমু | 132.160.159.184 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:৩০583061
  • চিরপুরোনো পুরীকেও এমন করে দেখা যায়,অনুভব করা যায় ,তা কে জানত!
    " শত শত নেয়াপাতি ভুঁড়ি,ডোরাকাটা অন্তর্বাস আর শুনি চীৎকৃত উপভোগের পরূষ কলরব। অথবা প্রায় বিয়েবাড়ির পোষাকে অথবা আজকের ফ্যাশন রেজ, মঙ্গলাহাটের ছাপা ছিটের 'ম্যাক্সি'তে আবৃত পৃথুলা রমণী দলের অর্গ্যাজমিক কোলাহল।" অসাধারণ বর্ণনা।
    হৃদয় ভরে গেল।
  • শিবাংশু | 127.197.241.8 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ২২:১৩583062
  • সিকি,

    মানুষের জন্য 'নষ্ট' হওয়াই স্বাভাবিক লজিক। বাকি সব কিছু রানারা। দেশে এলে একবার আমার এখানে এসে নষ্টামির 'ভার' প্রভুকে দিয়ে পবিত্র হয়ে যেও।

    স্বাগত ...

    কুমু,

    থ্যাংকু...
  • একক | 24.99.8.160 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ২২:২৫583063
  • সমুদ্রের ধার টানেনা । সমুদ্রের দোষ নেই কোনো । ওই মানুষের হল্লা আর আলুভাজার প্যাকেট পড়ে থাকা সহ্য হয়না বলে ।ওড়িশা পছন্দের জায়গা । অঙ্গুল দিস্ত ,তিকর্পারা র জঙ্গল হেব্বি আনন্দের ।

    এই লেখাটি কিন্তু পড়ছি ও পর্ব। লেখার গুনেই । পুরি না হয়ে ঝালমুড়ি হলেও পড়তুম।
  • প্পন | 126.203.157.183 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ২২:২৬583064
  • বাহ, অনেক নস্টালজি ভিড় করে এল। দ্বিচক্রযানে করে ভুবনেশ্বর থেকে পুরী, মধ্যে ক্ষণিকের শান্তি ধবলগিরির শান্তিসৌধ, পিপলির বার্ণাঢ্য অ্যাপ্লিকের কারুকাজ, চক্রতীর্থ রোডের জানাডুতে প্রমাণসাইজের টুনা স্টেক ভাজা আর স্বর্গদ্বার পেরিয়ে এক খড়ের ছাউনি দেওয়া পার্লারে বিয়ারের মগ সামনে উদার সমুদ্র আর ব্যাকগ্রাউন্ডে কিশোরকুমারের যোগ্য সঙ্গত - সব সব।

    জীবন, হায় তুমি অমনও ছিলে কোনদিন।
  • প্পন | 126.203.157.183 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ২২:২৯583065
  • শিবাংশুদা, শহিদনগরের ওডিশা হোটেলে কাঁসার থালায় খাঁটি ওড়িয়া কুইজিন সার্ভ করত। আদতে পাইস হোটেল। না গিয়ে থাকলে টিক্কে ট্রাই করন্তু। ঃ)

    ডিঃ দশ বছর আগের অভিজ্ঞতা।
  • Binary | 208.169.6.50 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ২২:৩৩583066
  • নষ্ট লজি, নষ্ট লজি। পুরী হোটেল ১৯৮২ (বাবা-মায়ের সাথে)। পুরী হোটেল ১৯৮৮ (বন্ধুদের সাথে)। পুরী হোটেল ১৯৯৬ (বৌ-এর সাথে)।

    আমার প্রবল নাস্তিক বাবাকে দেখেছি জগন্নাথের মন্দিরে ঢুকে, তন্ময় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। চোখে জল। মন্দিরের জন্য নয়। আমার ঠাকুর্দা-র কথা মনে করে মনে হয়, তিনি বৈষ্ণব ছিলেন। মহাপ্রভু-র ভক্ত।

    শিবাংশু, খুব ভাল লাগল।
  • সিকি | 24.97.10.234 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ২২:৪৯583067
  • শহীদনগরের সেই হোটেলেই তো ওড়িয়া শেখার হাতেখড়ি। ঢুকেই কচি গলাকে যথাসম্ভব গম্ভীর করে, "ভাইনা ... ভত্তো"।

    এর বেশি ওড়িয়া শব্দ তখনো ভোক্যাবুলারিতে ছিল না।
  • Sibu | 84.125.59.177 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ০১:০৭583068
  • পুরীতে সেই হাঁড়ির ওপর হাঁড়ি বসিয়ে রান্না করা পেসাদের গপ্পো একটু হোক।
  • শিবাংশু | 127.201.162.73 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১১:১৬583070
  • একক, বাইনারি,

    থ্যান্কু।

    প্পন, সিকি,

    জীবন গিয়েছে চলে দশ দশ বছরের পার... এখন হোটেল ওড়িশা কেমন লাগবে বলা মুশকিল। উত্তরভারতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য রামভরোসে হিন্দু হোটেল চেন তো একসময় আমাদের সোর্স অফ সাসটেন্যান্স ছিলো। তিরিশ বছর পরে গিয়ে সেখানে আর বসতে পারিনা , মালিকও বসাতে দ্বিধা করে।

    বার বার 'নষ্ট' হয়ে যাই, আমায় পবিত্র করো, যদি বাঁচাটাই মুখ্য....

    তবে সারা ভারত চপ্পা চপ্পা ঘুরে একটা ব্যাপারে আমি আজ স্থির নিশ্চিত। খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে 'বঙ্গ আমার জননী আমার' সিম্পলি 'অতুলনীয়'। কোনও কথা হবেনা। ডিস্ট্যান্ট ফলোয়ার পঞ্জাবি রসো-ই।

    শিবু,

    ব্যাপারটি আমার ঠিক জানা নেই... ঃ-(
  • bb | 127.195.166.126 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১১:৩৪583071
  • পুরীর সমুদ্র ভাল লেগেছিল, কিন্তু পারিপার্শ্বিক অত্যন্ত বাজে লেগেছিল। খাওয়ার দোকান অধিকাংশ নোংরা, মাছের আঁশটে গন্ধে ভরপুর- সব মিলিয়ে পুরী আমার কাছে বিভীষিকা - নেহাত বাধ্য না হলে যেতে চাই না। আমি তাহলে বাঙালী নই ঃ(
  • bb | 127.195.166.126 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১১:৩৬583072
  • আরেকটা কথা- পুরীর সমুদ্রতটে ভুঁটোপেটের হাফপ্যান্ট পরা বাঙালী পুরুষ আর ম্যাক্সি পরে স্নান করা মহিলা - ম্যাগো।
  • প্পন | 190.215.88.219 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১১:৩৯583073
  • চক্রতীর্থ রোডে (ফরেনার সিবিচ যেখানে) গিয়ে থাকলে খারাপ লাগে না। বেশ একটা ফরেন ফরেন ভাব আছে আর বিচটাও অনেক পরিচ্ছন্ন।

    আর মন্দিরের আশেপাশের গলিতে ঘুরতে হয় নিঝুম দুপুরবেলা, ক্যামেরা কাঁধে, যখন বাঙালি ভাতঘুম দিয়ে ঘুমুচ্ছে।
  • Sibu | 118.23.96.4 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১১:৪৪583074
  • ফোটুক তুলতে পুরী আমার খুব সুবিধার লাগে নি। কেন কে জানে।
  • সিকি | 24.97.176.1 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১১:৪৬583075
  • শিবাংশুদা,

    জীবন গিয়েছে চলে দশ দশ বছরের পার ...সত্যি, তবু মনে হয় এই তো সেদিন।

    বয়েস বোধ হয় হয়েই যাচ্ছে। দশ বছর আগের আমি-টা হারিয়েই গেছি। চলে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয় পুরী বা ভুবনেশ্বর। কিন্তু সেই আমি-টাকে খুঁজে পাব না। অনেক, অনেক স্মৃতি, এখন হাজারবার ফিরে গেলেও সেইসব স্মৃতিরা আর বাস্তব হবে না ... শুধু মাথার মধ্যেই ঘুরপাক খাবে, স্মৃতি হয়ে।

    একদিন ছিলাম সেইখানে
    একদিন বেঁচে ছিলাম

    ...
  • kumu | 132.160.159.184 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১২:১১583076
  • এবার কলকাতা গেলে পুরী ঘুরে আসার চেষ্টা করব।
  • Ekak | 69.99.230.125 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১৩:১৫583077
  • যাদের পুরি ভাল্লাগে অবস্যই ঘুরুন ।তার সঙ্গে বাকি ওড়িশা তা ছেড়ে দেবেন না । নদী-জঙ্গল-হিল স্টেশন মিলিয়ে চমত্কার জায়গা !! তিকর্পারা ক্যাম্প এ সন্ধে নেবে আসা না দেখা মানে জীবনে অনেককিছু মিস ।
    একজন গুর্ঘুরিয়া হিসেবে গায়ে পরে ঘ্যান দিয়ে গেলুম ! :)
  • kiki | 69.93.196.247 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১৮:১৮583078
  • ঃ)

    এদিকে আমি পুরোটা না পড়েই আগুন জ্বেলে এলুম। কিন্তু এটার শুরু একটু আলাদা রকম মনে হলো।তাই ভাবলুম ...........ঃ(
  • cb | 99.231.111.81 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১২ ০৩:৩০583079
  • অনেককেই বলতে শুনলাম, হাফপ্যান্ট আর ম্যাক্সি ইত্যাদি ইত্যাদি, ঠিক আছে, কিন্তু আমার ভীষণ ভালো লাগে যখন এদের মুখে অনাবিল আনন্দ ফুটে উঠতে দেখি। হয়ত সামান্য ছুটি পেয়ে পরিবারের সাথে এসেছেন, আমি দেখেছি অধিকাংশ জনতার চিত্ত খুব প্রফুল্ল, মহিলারা দোকানে দাঁড়িয়ে দরদাম করছেন। জটিল জীবনের মাঝে কয়েকদিনের হাত পা ছাড়া সুখ, চমৎকার লাগে এখন ভাবতে। জানি না এখন পুরীর কি অবস্থা, আমার পুরীর স্ম্রিতি সদাহাস্যময়, ১৪ বার গেছি টোটাল :) দেশে ফিরলে অবশ্যই পুরী যাব অ্যান্ড এনজয় এগেন
  • I | 24.96.30.54 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১২ ০৯:১৬583081
  • বাঃ, শিবাংশুদার এই লেখাটা খুব ভালো লাগছে। তারিয়ে তারিয়ে পড়ব। জানেন কি, আমিই সেই একমাত্র বাঙালী, যে আজ পর্যন্ত পুরী যায় নি !
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন