এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই

  • তাজা বুলবুলভাজা...
    ইদবোশেখির লেখাপত্তর - গুরুচণ্ডা৯ | অলংকরণ: রমিত চট্টোপাধ্যায়শীতকাল বইমেলা হইচই-এর দিনকাল ফুরিয়ে এসে গেল শান্ত হয়ে বসে লেখালেখির কাল। বাইরে তাপমাত্রা বাড়ছে রোদ্দুরের জন্য, নির্বাচনের জন্য। সাথে কোথাও প্যাচপ্যাচে ঘাম তো কোথাও ঝরঝর বৃষ্টি। সন্ধ্যের আবছায়ায় দোকানে ভিড় জমায় সারাদিন রোজা রাখা ক্লান্ত মানুষ, গাজনের প্রস্তুতি নেওয়া শ্রান্ত মানুষ, চৈত্রসেলের হাতছানিতে মুগ্ধ মানুষ। টুপটাপ জমে ওঠে গল্পেরা, কবিতারা। নির্বাচনী জনসভার কোণাকাঞ্চিতে, ইফতারির থালার পাশে, গাজনের সন্ন্যাসীর ঝোলায় চুপটি করে অপেক্ষা করে তারা মানুষের জন্য। আমরা আপনাদের কাছে ডাক পাঠিয়েছিলাম তাদের খপ করে ধরে ফেলে, ঝপ করে লিখে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে। এসে গেছে তারা। আগামী কয়েকদিন ধরে রোজ দুটি-তিনটি করে তারা এসে হাজির হবে বুলবুলভাজার পাতায় - টাটকা ভাজা, গরমাগরম। পড়তে থাকুন। ভাল লাগলে বা না লাগলে দুই বা আরো অনেক লাইন মন্তব্য লিখে জানিয়ে দিন সে কথা। মন চাইলে, গ্রাহক হয়ে যান লেখকের। আর হ্যাঁ, আপনিও লেখা নিয়ে চলে আসুন গুরু আর চন্ডালের আড্ডা গুরুচন্ডা৯-র পাতায়।সূচীপত্রঃস্মৃতিচারণবর্ষশেষ, বর্ষশুরু: অমিতাভ চক্রবর্ত্তীও চাঁদ: সেমিমা হাকিমকাব্যজলের সমাধি: জগন্নাথ দেব মন্ডলগিরগিটি ও অন্যান্য কবিতা: ফরিদাসমুদ্রে সনেট: সোমনাথ রায়পাঁচটি কবিতা: অমিতরূপ চক্রবর্তীতিনটি কবিতা: অরিত্র চ্যাটার্জি উপগ্রহ: অমিত চট্টোপাধ্যায় গপ্পোখুচরো: সুমন মুখার্জীসুফি: আফতাব হোসেন রতন, দ্য ব্যাকবেঞ্চার: নরেশ জানাডাক দিয়ে যায়: এস এস অরুন্ধতীমহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ও মার্কণ্ডেয়র চিঠি: রমিত চট্টোপাধ্যায়পাখির অন্তর্ধান রহস্য: মৃণাল শতপথীএই ঘুম শারীরবৃত্তীয়: দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ওয়েথসাম: উপল মুখোপাধ্যায়কোশিশ কিজিয়ে: কিশোর ঘোষালনভেলাফকির ফয়জুল্লাহ: মুরাদুল ইসলামনিবন্ধ আজ নববর্ষের আখ্যান: সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
    ও চাঁদ - সেমিমা হাকিম | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়দ্বিতীয়ার নখের মতন চাঁদখানা শুড়িপুকুরের পাড়ের ঘন নারকোল গাছগুলোর আড়ালে যতক্ষণ না হারিয়ে যেতো পাড়ার কুঁচোকাঁচার দল আকাশের দিকে হাঁ করে পিছন পিছন চলত কিসের অমোঘ টানে। সেদিন বিকেলে বাবুজি-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে এসেছি গ্ৰামের বাড়িতে। মা আর আমি ব্যাগ পত্তর নিয়ে রিক্সায়, বাবুজি সাইকেলে। আমাদের গ্ৰামের বাড়ি বর্ধমানের মেমারীর কাছে এক গণ্ডগ্ৰামে। নাম বহরমপুর। সে আমলে ও’গ্ৰামে কোন বড় গাছ ছিল না বিধায় লোকে ডাকত নেড়া বরমপুর। বছরের কটা মাস বাদে রাস্তা জুড়ে এত কাদা যে কোন রিক্সা যেতে চাইত না গ্ৰামে। তখন গরুর গাড়ি ভরসা। কতবার গ্ৰামের বাড়ি থেকে মেমারীর ফ্ল্যাটে ফিরেছি ছত্রি দেওয়া গরুর গাড়িতে চেপে। ভিতরে যাতে বসতে অসুবিধা না হয়, তাই খড় বিছিয়ে মাদুর পেতে দিতেন গাড়োয়ান চাচু। স্কুলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ অঙ্কের দিদিমনি তখন গ্ৰামের বাড়ির ছোটবৌ। ঘোমটা দিয়ে উঠে বসতেন ছত্রির ভিতর। বড়মা বলতেন,"রওশন মাঝে বসো। নয়ত ঝাঁকানি লাগবে। সাবধানে যেও। আবার এসো বোন।” আর আমি র‌্যালা নিয়ে গিয়ে বসতুম গায়োয়ান চাচুর পিছনে। হাতে গরম অজুহাত, "ভিতরে খুব গরম।”অবশ্য সে তো ঈদের পরে ফেরার পর্ব। আমি কিন্তু বলতে বসেছি ঈদের গল্প। তাহলে ফেরা যাক চাঁদের পথ ধরে। আমরা দেশের বাড়ি যেতুম ২৯ শের রোজায়। সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলে পরদিন ঈদ নয়ত আর একদিন মানে তিরিশটি রোজা সম্পূর্ণ করে ঈদ পালন। তখন আর চাঁদ দেখার ঝামেলা নেই। হাদিস মোতাবেক তিরিশটি রোজা হয়ে গেলে অবশ্যই পরদিন ঈদ। এখন যেমন,"যাহ! সৌদিতে আগে ঈদ হয়ে গেল। আমাদের হল না কেন?” বলে বিভিন্ন বিতণ্ডার শুরু তখন সেসব কেউ ভাবতও না। চাঁদ দেখা গেলে ঈদ হবে সেই অঞ্চলে নয়ত রেডিওয় কান পেতে থাকতেন মুরুব্বিরা- নাখোদা মসজিদের ইমামসাহেব যা ঘোষণা করবেন মেনে নিতেন সবাই।অন্ধবিশ্বাস? হবেও বা। কী এসে যায়। আনন্দই তো মূলমন্ত্র।সে ছিল সাতের দশকের শেষভাগ। মানুষগুলো ছিল অন্যরকম। তখন আমরা কার কটা পোষাক হল গুণে দেখতুম না। হিসেব কষতুম না কারটা কত দামি? একটা নতুন জামা হলেই হল। আর যদি আত্মীয় স্বজন দেয় দুটো চারটে ছটা আটটা তাহলে ঈদের দিন সে পড়ত আতান্তরে, কোনটা ছেড়ে কোনটা পরবে ভাবতে ভাবতে দিন কাবার। ঈদের দিন ভোরবেলা, পছন্দের জামাটি নিয়ে আমরা সব বোনেরা মিলে যেতুম পুকুরে স্নান করতে। ওরা বাটি সাবানে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করবে এক ঢাল চুল, একটিমাত্র বাস সাবান, সেটি অতি সাবধানে সযত্নে তুলে রাখা শুকনো জায়গা,'পানি লেগে গলে নষ্ট হয় না যেন’! মাথা ধুয়ে ভিজে গায়ে চট করে মেখে নেবে সেই সুবাসিত সাবান। ভেজা চুলে গামছা জড়িয়ে বড়বুবুরা গায়ে কাপড় আলগোছে ফেলে ছুটে চলে যায় বাড়িতে। হয়ত পরের ঈদে তার বিয়ে হয়ে যাবে। এইঘাটে তার এইভাবে স্নানের কোটা শেষ। আমরা নাবালিকা অবোধ মেয়ের দল সেদিন পুকুর গাবিয়ে স্নান করতুম না। সুবোধ বালিকার মতন স্নান সেরে বাড়ি ফিরতুম গুটিগুটি পায়ে।বাড়ি ফিরলে মা চুল আঁচড়ে, নতুন জামা পরিয়ে পাঠিয়ে দিতেন ঈদগাহে। সেদিন ছেলেরা অন্য ঘাটে ছটপট স্নান সেরে ছুটছে গ্ৰামের ছোট্ট ঈদগাহে। ঈদগাহ এবং সেই অভিমুখী সবকটি রাস্তাকে পাড়ার উঠতি যুবকরা রাত্রি জেগে সাজিয়েছে রঙিন কাগজ দিয়ে। উজ্জ্বল রঙ ছড়িয়ে তারা পতপত করে উড়ছে সকালের নিষ্কলুষ হাওয়ায়। কদিন আগে ঈদগাহ রঙ করা হয়েছে। সাদা ধবধব করছে চারদিকের দেওয়াল। মিম্বারের মাথায় সবুজ নক্সা। আলাদা স্নিগ্ধতা এনে দেয় যেন। ইমাম সাহেবের পিছনে নামাজে দাঁড়াবেন পুরুষরা আর একদম পিছনে জটলা করে থাকব আমরা পাড়ার যত খুদের দল। খুতবার আগে বড়রা বারে বারে বলে যাবেন,"চিল্লাচিল্লি করো না। চুপ করে খুতবা শোন। নয়ত গুনাহ হবে।” আমরা আর গুনাহ নেকির কী বুঝি? আশেপাশে পরিচিত মুখ দেখতে না পেলে কান্না পায়, কেঁদে ফেলি, আবার কান্নার মাঝেই অন্য কারোর কোন কীর্তিকলাপ দেখে কাঁদতে ভুলে যাওয়া, এর জামার ফিতে ধরে টানা, ওর টুপি খুলে দেওয়া হতে হতে কখন যেন নামাজ শেষ হয়ে গেছে। বড়রা বাড়ির রাস্তা ধরেছেন ঘরের ছানাটিকে খুঁজে নিয়ে। পথে ভাই বেরাদর, পাড়াপড়শির সঙ্গে দেখা হলে সালাম দিচ্ছেন কোলাকুলি করছেন। নেমতন্ন করছেন সিমুই, সুজি খাওয়ার। বাবুজি, চাচু, দাদু, চাসত ভাইরা নামাজের পরে ফিরলে শুরু হত ঈদি আদায়। বড়দের পায়ে হাত রেখে সালাম করলে ঈদি দিতেই হবে- এই আমাদের দাবি। বড়রা পইপই করে বলছেন,"আচ্ছা আচ্ছা, ঈদি দেওয়া হবে কিন্তু সালাম করতে হবে না। ও জিনিস করতে নেই। বিদাত। মাথা একমাত্র নিচু হবে আল্লাহর সামনে। আর একান্তই যদি সালাম কর তাহলে সম্পূর্ণ বসে, মাথা উঁচু রেখে পায়ে হাত দিতে পারো।”তাই তো তাই সই কিন্তু ঈদি চাই। সেই আমলে পাওয়া চারানা, আটানা, দশ পয়সা জুড়ে জুড়ে কারো কারোর ঈদি জমত দুটাকা পাঁচটাকা। সেদিন সে বড়লোক। বিকেলে “আসান সইত” তলার মেলায় গিয়ে সে যে কী কিনবে আর কী কিনবে না তার হিসেব করতে করতে ভুলে যেতো পায়ে হেঁটে পেরিয়ে এসেছে কিলোমিটার আড়াই মেঠোপথ। মেলার মাঠের রঙিন ফিতে, বেলোয়ারি চুড়ি, হাতে ঘোরানো নাগরদোলা, কটকট শব্দ ঘুরতে থাকা নম্বর দেওয়া চাকা, মাটির খুদেখুদে হাঁড়িকুড়ির মাঝে ঈদ মিশে যেতো আমাদের ঝকঝকে চোখের তারার আনন্দে।এবার বাবুজির কবর জিয়ারত করতে গ্ৰামের বাড়ি গিয়েছিলুম ঈদের দিন। আসান সইত তলায় মেলা বসেছে আগের মতোই। তবে আগে মেলা বসত কেবলমাত্র মাজারের ভিতরের বাগানে। রাস্তার ধারে মস্ত মাঠখানা ফাঁকা থাকত। মেলায় ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেলে মাঠে এসে বসতুম আমরা। খানিক জিরিয়ে নিয়ে বাড়ি ফেরার পালা। এবার দেখি সেই মাঠ জুড়ে মিকি মাউস, ট্রাম্পোলিন, জায়েন্ট হুইলের গজল্লা। মনখারাপ হয়ে গেল।পৈতৃক ভিটেটি আগের মতোই আছে। নেই শুধু দাদু, দাদিবুবু, চাচু, বড়মা, বড়দা, বড়ভাবি। বাড়িতে ঢুকতেই মেজ সেজ ভাবি সালাম দিয়ে এগিয়ে এলেন,"কাকিমা এলো না? কেমন আছে?”“ভালো। বয়স হয়েছে তো। বোঝই তো আসতে পারে না এভাবে।”বড়দার বড়মেয়ে ঘরে ডেকে নিয়ে গেল। জল খেতে দিয়ে বসল খাবারের ব্যবস্থা করতে। পাশেই শ্বশুরবাড়ি ওর। আমি যাব বলে সকালে সুজি, সিমাই, লাচ্চা, হালুয়া আর কিমা কারি নিয়ে এসে গুছিয়ে রেখেছে মিটসেফে। দস্তরখানে সযত্নে সাজিয়ে দিল খাবার। সেজভাবি কাচের বাটি ভরে নিয়ে এলেন ঘুগনি,"মিষ্টি খেয়ে মুখ মরে যাবে। তাই ঘুগনি নিয়ে এলাম।” নিয়ম রক্ষার্থে যৎসামান্য মিষ্টি মুখে দিয়ে ঝাল ঝাল ঘুগনি খেলুম তৃপ্তি ভরে। ফ্ল্যাশ ব্যাকে ভাসছে ছোটবেলার সাদামাটা ঈদ। হ্যাঁ বদল অবশ্যম্ভাবী। অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ঈদের এই মানুষে মানুষে মেলামেশা, দুটো কুশল সংবাদ, শত্রুমিত্র ভুলে পরস্পরকে হার্দিকতার সঙ্গে জড়িয়ে ধরা আর সিমুই, সুজি, হালুয়ায় মেশানো খুশির বোধহয় বদল হয় না। যেমন বদলায়নি আজও ২৯ শের রোজায় আকাশের পশ্চিম কোণায় নখের মতন চাঁদ খোঁজা আগ্ৰহী চোখের …
    উপগ্রহ - অমিত চট্টোপাধ্যায় | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়সে আমাদের ভুল বানানের চিঠি,সে আমাদের মুগ্ধ চেয়ে থাকা।পাখির ডানায় শেষ বিকেলের আলোয় রাখাল সাজার পাতার বাঁশি রাখা।সে আমাদের গোপন বনলতা,সে আমাদের লুকিয়ে রাখা আলো। পিচ গড়ানো মিশকালো রাজপথে নিওন বাতির ঝলকানি জমকালো।সে আমাদের বৃষ্টি ভেজা নদী।সে আমাদের থার্মোমিটার জ্বরে।সাহস করে ডিঙানো চৌকাঠের ঠুনকো শিকল ঘর পালানোর ঘরে।সে আমাদের থমকে যাওয়া কথা।সে আমাদের সন্ধ্যাতারা দূরের।আমরা শুধুই বাতিল উপগ্রহ,চাঁদের পাশে মিথ্যে মরি ঘুরে।
  • হরিদাস পালেরা...
    বৈঠকি আড্ডায় ১২  - হীরেন সিংহরায় | ভোটাভুটি খরচাপাতি পর্ব ৬ (ভোটে)  যদি  লাগে টাকা,  দেবে ক্রুপ দেবে থুসেন ৯ নভেম্বর ১৯১৮ সালে বার্লিনে অনধের নগরী,  চৌপট রাজা ।নৌ বিদ্রোহ বন্দরে বন্দরে , ভিলহেলমসহাফেন , কীল , হামবুর্গ থেকে নৌসেনা হাঁটছেন বার্লিনের দিকে;   মিউনিক এমনকি  বার্লিনের নয় কোয়লন নিজেদের স্বাধীন রিপাবলিক বলে ঘোষণা করেছে -  পার্লামেন্টের  সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নেতৃত্ব তাদের দাবিতে অনড় , সম্রাটের পদত্যাগ চাই । ৯ নভেম্বর ১৯১৮ সকাল এগারোটায় বেলজিয়ামের স্পা থেকে টেলিফোন বার্তায়  সম্রাট ভিলহেলম তাঁর পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে ট্রেনে চড়ে  নিরপেক্ষ হল্যান্ডের ডুরণ রওয়ানা হলেন ; আর কোন দিন জার্মানিতে পা দেবেন না , বত্রিশ বছর বাদে ভগ্ন মনোরথ সম্রাট সেখানেই ধরণী থেকে  চির বিদায় নেবেন।বার্লিনে রাইখসটাগেরসামনে সমবেত জনতা উত্তাল- এবার তাহলে কি ? পার্লামেন্টের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট মন্ত্রী ফিলিপ শাইডেমান সমবেত জনতাকে বললেন“ হোহেনজোলারন সম্রাট পদত্যাগ করেছেন । এই দিনটি জার্মান ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে । জার্মান প্রজাতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক ।এগারোই নভেম্বর এগারোটা বেজে এগারো মিনিটে প্যারিসের সত্তর মাইল উত্তর পূর্বে কম্পিয়েনে এক নির্জন বনের মাঝে টেনে আনা মার্শাল ফখের নিজস্ব ট্রেনের বগিতে জার্মানি  স্বাক্ষর করলো  সন্ধিচুক্তি-  পশ্চিম রণাঙ্গন হলো নিশ্চুপ।  শুরু হলো নভেম্বর বিপ্লব , পুলিশ দফতর দখল, যুদ্ধ ফেরত ফৌজ – ফ্রাইকরপস - বনাম কমিউনিস্ট বিপ্লবী,  স্পারটাসিসট , রোজা লুকসেমবুরগ কার্ল লিবককনেখট – যারা চাইলেন রাশিয়ান স্টাইলে সোভিয়েত গড়ে তুলতে।  খুন কা বদলা খুন মুখোমুখি লড়াইয়ে জিতল সরকারি সেনা; পথে পথে রক্তাক্ত অভিযান । ইতিমধ্যে দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে থাকে পাড়া।  সরকার প্রাগে পলাতক। জানুয়ারি মাসে বার্লিন থেকে নিরাপদ দূরত্বে , ভাইমারে নতুন সংবিধান রচিত হলো , জার্মানির ইতিহাসে গণতন্ত্রের প্রথম অভিষেক – অজানা অচেনা পথে একটা দেশের প্রথম পদক্ষেপ। এতদিন দেশটা চালিয়েছেন অভিজাত সমাজ এবং বনেদী জমিদারবর্গ ( ইউঙ্কার )  সেখান থেকে এসেছেন সেনাপতি , বিচারপতি ,সমাজপতি এবং অনেক শিল্পপতি। ।এখন এই নতুন ব্যবস্থায় প্রধান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ এবারট , তাঁর বাবা ঘোড়ার জিন বানাতেন।গণতন্ত্র মানেই নির্বাচন এবং সেটি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের হিসেবে – ষাট হাজার ভোট পেলে একটি সিট।  ১৯২০ সালর নির্বাচনে ছাব্বিশটি দল , আশি শতাংশ নাগরিক ভোট দিলেন । নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা মানে ৫০.১% ভোট কোন দল পেলেন না – সবচেয়ে পুরনো প্রতিষ্ঠিত পার্টি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দল ৩৮%, আসন সংখ্যা ১০৩ ।প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় কোন জার্মান শহর গ্রামের ওপরে বোমা বর্ষণ হয় নি , শত্রু সৈন্য দেখা দেয় নি দুয়োরে। তাবৎ পরিকাঠামো,  রুর এলাকার কয়লাখনি ইস্পাত কারখানা বার্লিনের ব্যাঙ্ক মিউনিকের ব্রুয়ারি হামবুর্গ ব্রেমেনের জাহাজ কারখানা অক্ষত অটুট ।  ডুসেলডরফ কলোন ডরটমুণ্ডের শিল্পপতিরা যুদ্ধে হারান নি কোন সম্পদ কিন্তু বিজয়ী পক্ষ চাইছেন ক্ষতিপূরণ ( রেপারেশন )-সেটা আসবে তাঁদের ট্যাঁক থেকে।  ফ্রান্স বেলজিয়াম তাদের সেনা বসিয়ে রেখেছে রাইনল্যান্ডে , কারখানার দরোজায়, খনির মুখে । দেশে নিরঙ্কুশ অরাজকতা , কমিউনিস্টরা ট্রেড ইউনিয়নকে হাওয়া দিচ্ছে-  আমাদের দাবি মানতে হবে ঝাণ্ডা তুলে হেড অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন বিক্ষুদ্ধ জনতা । এবং স্ট্রাইক!   প্রাশিয়ান আমলে যা  ছিল অকল্পনীয় । দেশ চলত  একটা কঠোর ডিসিপ্লিনের শেকলে -সমাজে কারখানায় অফিসে সকলের স্থান ছিল নির্দিষ্ট।  সবাই তা মানতেন, সব্বাই করে বলে সব্বাই করে তাই !  কোন বিকল্প ছিল নাঅন্য দেশের রাষ্ট্রীয় সৈন্য বাহিনী থাকে; প্রাশিয়াতে রাষ্ট্রীয় সৈন্য বাহিনীর একটা দেশ ছিল।*জার্মান শিল্পপতিরা কখনো শ্রমিক নেতার মুখোমুখি বসেন নি , সেটা সামলাত স্থানীয় প্রশাসন -বেতনের দাবিতে কেউ অফিসের সামনে দাঁড়ায় নি , জমিদাররা ভূমিহীন কৃষকদের যেমন ইচ্ছে এমনি মজুরি দিয়েছেন। । যুদ্ধের পরে এই এলোমেলো অবস্থার সুযোগে গড়ে উঠেছে কমিউনিস্ট পার্টি যারা রাশিয়ান কায়দার সোভিয়েত বানাতে বদ্ধ পরিকর।  সেটা ব্যর্থ হল এক বছর বাদে কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি খুঁটি গেড়ে বসল , পার্লামেন্টের ভোটে প্রার্থী দিলো ।  রুর বার্লিনের বিজনেস ম্যাগনেটরা কথা বলবেন কার সঙ্গে?তাঁদের আতঙ্ক কমিউনিস্টরা এবার শ্রেণি সংগ্রাম শুরু করবে , তার মানে শিল্পে অশান্তি, খরচা বেশি , বোর্ডরুমে কমিউনিস্ট কর্মীদের অনধিকার প্রবেশ। তাদের ঠেকায় কে ?  সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকের রক্ষা করেছেন কিন্তু এই আগ্রাসী শ্রমিকদের হাত থেকে শিল্পপতিদের রক্ষা করে কে ?  তাঁরা চান রাজনৈতিক স্থিরতা এবং শ্রমিকদের দাবিয়ে রাখা-যেটা প্রাশিয়ান সরকার করে এসেছেন। তারই ছত্রছায়ায় জার্মান শিল্প, বাণিজ্য অতি দ্রুত উন্নতি করে দুনিয়ার ঈর্ষা অর্জন করেছে। আজ এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাঁরা খুঁজছেন একজন বিশ্বাসযোগ্য শক্ত রাজনৈতিক নেতা যার সঙ্গে   এই সফল  ধনী ব্যবসায়ীরা আলোচনায় বসে একটা বন্দোবস্ত করতে পারেন – সার  আপনি আমার কেসটা দেখুন আমি আপনার ব্যপারটা সামলে দেবো। নৈরাজ্য তখন এমন পর্যায়ে যে জার্মানির অন্যতম ধনী ব্যক্তি ফ্রিতস থুসেন ফ্রান্সের নরমান্দিতে তাঁর বাবার কয়লাখনির মালিকানা পাবার অভিলাষে শত্রুদেশ ফ্রান্সের নাগরিকত্ব নিতেও প্রস্তুত।নির্বাচন হয়, কোন দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় না।  কার সঙ্গে হাত মেলাবেন তাঁরা ? এলো অকল্পনীয় মুদ্রাস্ফীতি , আম জনতা হারালেন তাঁদের সঞ্চয় ; কিন্তু রুর মিউনিক বার্লিনের ধনপতিদের  সম্পদ অটুট  তাঁদের মধ্যে কিছু মানুষ গেলেন আমেরিকা- সেখানে ব্যবসা বাণিজ্যের কি হালচাল ? নতুন নতুন যন্ত্রপাতি , কর্ম মুখর কল কারখানা দেখে চমকিত হয়ে দেশে ফিরে বললেন তাঁদেরও চাই ঐ সব খেলনা ।  কিন্তু তাঁদের স্বার্থ দেখার  ও অর্থ সরবরাহের জন্য কেউ নেই ।এমন সময়ে দক্ষিণ দিক থেকে উদিত হলেন এক অস্ট্রিয়ান নাগরিক , যুদ্ধে কর্পোরাল হয়েছিলেন , দ্বিতীয় শ্রেণির আয়রন ক্রস ঝোলানো থাকে গলায় ।  মিউনিকের পাবে তাঁর বক্তিমে শুনতে ভিড় জমে যায় ( হোফব্রয় হাউসের তিনতলায় সেই হলটি দেখতে পাবেন ) ; তাঁর মতে জার্মানি একটা জেতা গেমে হেরেছে কারণ সৈন্য বাহিনীর পিছন থেকে ছুরি মারা হয় । তার জন্য দায়ী কমিউনিস্ট , ইহুদি ও কিছু চক্রান্তকারী বিদেশি । ৯ নভেম্বর ১৯২৩  শখানেক লোক যোগাড় করে ব্যাভেরিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ব্যর্থ অভ্যুথানের পরে গ্রেপ্তার হলেন সেই নেতা , আডলফ হিটলার । সশস্ত্র রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল ১৯২৩ সালে কিন্তু কোন অজানা কারণে তাঁর রেহাই হল নয়  মাস বাদে ।  তাঁর বহুল প্রচারিত ( এমনকি দুনিয়ার অনেক সংবাদ পত্রে ) বিচার পর্ব হিটলারকে রাতারাতি পরিচিত করাল সারা দেশে । তাঁর পার্টি,  জার্মান শ্রমিক দল  ( ডয়েচে আরবাইটার পারটাই ) প্রথম ইলেকশন লড়ে ১৯২৪ সালে, ব্যাভেরিয়ার বাইরে সম্পূর্ণ অচেনা এই দল পেলো ০.১২% ভোট , আসন শূন্য.  পার্টির নাম বদলাল -  হলো  নাতসিওনাল সোৎসিয়ালিস্তিশে ডয়েচে আরবাইটার পারটাই  সংক্ষেপে নাৎসি ( প্রথম দু  অক্ষর নিয়ে )।  মুদ্রাস্ফীতি ও যুদ্ধের ক্ষতিপূরণের ঝক্কি কাটিয়ে জার্মান অর্থনীতি দুর্বার বেগে ঊর্ধ্বগামী । হিটলারের অগ্নিগর্ভ বাণী বাজারে কাটে না।  ১৯২৮ সালে নাৎসি পার্টি পেলো মাত্র ১২টি  আসন।  ১৯২৯ সালের অক্টোবরে ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ার বাজারে লঙ্কা কাণ্ড লাগলে যে ডিপ্রেশন দেখা দিলো জার্মানিতে তার প্রত্যক্ষ ফল দেখা গেলো ১৯৩০ সালের নির্বাচনে - ১৮% ভোট এবং ৯৫টি আসন পেলো নাৎসি দল । কিন্তু কোন দল সরকার গঠনে অক্ষম – শাসন চলে ভাইমার সংবিধানের সেই ৪৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী – রাষ্ট্রপতির ডিক্রি দ্বারা!  পার্লামেন্ট যখন সিদ্ধান্ত  নিতে অপারগ, রাষ্ট্রপতি হিনডেনবুরগ চ্যান্সেলরের পরামর্শ অনুযায়ী অথবা তা উপেক্ষা করে আপন ডিক্রি মাফিক দেশ শাসন করেন সেই মোতাবেক ।প্রসঙ্গত , যতদূর মনে পড়ে ভারতীয় সংবিধানে এই ধরণের একটি ক্লজ আছে- রাষ্ট্রপতি যুক্তিযুক্ত মনে করলে ( মনে করাটাই যথেষ্ট ) বা প্রধানমন্ত্রীর  পরামর্শ মতন পার্লামেন্ট ভাঙতে পারেন, ছ মাস নিজের  শাসন চালাতে পারেন, নতুন নির্বাচন ফলপ্রসূ নাহলে আবার রাষ্ট্রপতির শাসন ।  এটি কেউ দেখে দিলে কৃতজ্ঞ হব ।বার্লিন হামবুর্গ মিউনিকের পথে পথে লাল পতাকা বনাম সাদা কালো স্বস্তিকার লড়াই চলে ( উৎপল দত্তের ব্যারিকেড নাটকটি স্মরণ করুন) দেওয়াল লিখন দেখে জেনে নিতে হয় কাদের  পাড়ায় আছেন । তফাৎ এই যে কমিউনিস্ট বা সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দল ছেঁড়া খোঁড়া জামা কাপড় পরে  হাতে কেবল পতাকা নিয়ে আওয়াজ তোলে - নাৎসি বাহিনী ব্রাউন ইউনিফরম পরিহিত , হরসট ওয়েসেলের ডি ফানে হোখ ( আমার পতাকা উচ্চে ) গান গেয়ে মার্চ করে লাইন দিয়ে, হাতে লাঠি , কোমরে পিস্তল , যেখানে সেখানে প্রতিপক্ষকে পেটায়, সভা ভাঙ্গে - তাদের উপস্থিতি রীতিমত উচ্চকিত ।লাইপজিগের এক সভায় (১৯৩০) নাৎসি প্রবক্তা গ্রেগর স্ত্রাসার বললেন , আমরা দশটা  আইন পাস করে এই গোলমালের সমাধা করে দিতে পারি – কেউ স্ট্রাইক করলে তাকে গুলি মারা হবে , বাকিরা কোন দেওয়ালের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে চাইবেন না “দেশের এই টালমাটাল অবস্থায় এক সবল কাণ্ডারির খোঁজে ব্যাভেরিয়ার কিছু ধনী মানুষ ইতিমধ্যেই তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন - যেমন কোবুরগের ডিউক, প্রিন্স হেঙ্কেল ভন ডোনারসমার্ক, ব্যাভেরিয়ান শিল্পসমিতির প্রধান প্রিন্স আরেনবেরগ।১৯৩১ সালে বেশ কয়েকজন জার্মান ব্যবসায়ী সোভিয়েত ইউনিয়ন ঘুরে এলেন- তাঁরা কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থার প্রচণ্ড বিরোধী কিন্তু আশ্চর্য হয়ে  দেখলেন কিভাবে শ্রমিক কৃষকের সেই সরকার শ্রমিক কৃষকদেরই   দাবিয়ে রেখেছে , সেখানে কারো  ঝাণ্ডা তুলে মাইনে বাড়ানোর দাবি করার হিম্মত নেই ।  ঠিক যেমন গ্রেগর স্ত্রাসার বললেন পার্টির নামের ভেতরে সোশ্যালিস্ট শব্দটা আছে বটে কিন্তু সেটা লোক দেখানো মাত্তর।আরও খানিকটা দূর থেকে নাৎসি জয়রথের অগ্রগতি লক্ষ করছিলেন কয়েকজন শিল্পপতি – তাঁরা চান স্টেবল গভর্নমেন্ট এবং এমন কাউকে যার সঙ্গে ইউ ক্যান ডু বিজনেস উইথ ! মহা ধনপতি ফ্রিতস থুসেন জনান্তিকে বলেছিলেন উদার উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাম্য আছে ,আমাদের ধন সম্পদ বাড়ানোর সুযোগ নেই ; কমিউনিস্টরা আয়ের সাম্য আনতে পারে কিন্তু আমাদের সম্পদের পরিমাণ শূন্যে দাঁড়াবে । ক্ষমতা  যদি কেন্দ্রীভূত হয় আমরা চাইব তার অংশীদার হতে।২৭শে জানুয়ারি ১৯৩১ ডুসেলডরফের হর্ম্য মণ্ডিত ইন্দুস্ত্রি ক্লুবের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফ্রিতস থুসেন সমবেত ধনপতিদের উদ্দেশ্যে বললেন, আমাদের দেশের ভাবি পরিত্রাতার সঙ্গে আপনাদের আলাপ করিয়ে দিই -ইনি আডলফ হিটলার ।লম্বা বক্তৃতা দেবার অভ্যেসটি ত্যাগ করে হিটলার মাত্র দশ মিনিট বললেন । তিনি শুরু করলেন  “অনেকে আমাকে বলেন আপনি  জাতীয়তাবাদী জার্মানির একক ঢোল বাদক । তাই কি ? আজ এক দেশভক্তের মতন আমি এই ঢোল আবার বাজাতে চাই , জার্মানিকে দিতে চাই এক  বিশ্বাস,  সেই  আস্থা যা জার্মানি হারিয়েছে “ ।শেষে বললেন“আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই  একটি  জাতীয়তাবাদী  সরকার । বারো বছর যাবত আমি এই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত দলের নেতৃত্ব দিচ্ছি । আমরা এ দেশের রাজনীতির বিশুদ্ধিকরণ করে এমন একটি দেশ ও সরকার গড়ব যেখানে কোন প্রকারের দেশদ্রোহীর কোন ক্ষমা নেই । যদি কেউ আমাদের এই জাতীয়তাবাদী দেশনীতির বিরোধিতা করেন তাদের কঠিনতম  শাস্তি দেওয়া হবে । বন্ধুত্বের হাত যদি কেউ বাড়ান সেটি আমরা সাগ্রহে  গ্রহণ করবো.”  তুমুল করতালি ।ভাবী একনায়কের সঙ্গে শিল্পপতি ও ধনপতিদের সেতু বন্ধনের প্রারম্ভক্রমশ*”Some states have an army, the Prussian Army has a state” Voltaire  আউগুস্ট থুসেন স্ত্রাসে ১ডুসেলডরফ  ফ্রিডরিখ থুসেন (১৮৭৩-১৯৫১ )পিতা আউগুসট থুসেনের ইস্পাত ও খনিজ সাম্রাজ্যের একমাত্র অধীশ্বর ( জার্মানির ৭৫% আকরিক লোহা, দু লক্ষ কর্মী)।  ১৯২৩ সালে হিটলারের বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হয়ে পাঁচ লক্ষ গোল্ড মার্ক দান করেন  -কমিউনিস্ট পার্টির অরাজকতা থেকে নাৎসি পার্টি জার্মান শিল্পকে বাঁচাবেন এই আস্থায় । পার্টি মেম্বারশিপ নম্বর ২, ৯১৭, ২৯২ । মোহভঙ্গ হতে দেরি হয় নি -ইহুদি এবং ক্যাথলিকদের প্রতি দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে হিটলারকে চিঠি লেখেন।  ফলং  পদচ্যুতি , দাখাউ কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে সাময়িক আবাস। সেই কারণে তাঁর নাৎসি মেম্বারশিপকে ক্ষমা ঘেন্নার চোখে দেখা হয়েছিল ।  সেই প্রতিষ্ঠান  এখন থুসেন ক্রুপ নামে পরিচিত ।  পরিবারের শেয়ার প্রায় শূন্য , ক্রুপের ২১% । স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ফ্রাঙ্কফুর্টে কাজ করার সময়ে জয়েন্ট ম্যানেজার হ্যারমান এরেনবেরগারের সঙ্গে ডুসেলডরফ অফিসে যেতাম ।  রিসেপশনের দেওয়ালে  তাঁর ছবি দেখেছি । আমার আলোচনার পার্টনার ছিলেন ফ্রিডহেলম বাবেরসকে । কোন কোম্পানীকে তিনি সবসময় "আউটফিট "বলতেন যেমন স্টেট ব্যাংক  অফ ইন্ডিয়া একটি আউটফিট ! 
    কাইজার গান্ধী   - Nabhajit | বের্নার কথা দীনেশ কে বলে আর লাভ নেই। বের্না জীবন থেকে সরে গেছে অনেক দিন। কলেজ শেষ করার পর বেশ কিছুদিন বের্না থেকে যায় ভারতে। একা একা ঘুরতে যেত বিভিন্ন শহরে। কাইজার তখন চাকরি খোঁজার জন্য মরিয়া। অনেকগুলো কম্পিটিটিভ পরীক্ষা দিতে হচ্ছিলো। ফোনে কথা হতো। তখন মোবাইল ফোন ছিল না তাই ঘন ঘন কথাও হতো না, মেসেজ নামের কোনো জিনিস তখনো আবিষ্কার হয় নি। কাইজার হিমাচল থেকে দিল্লি এসে থাকতে শুরু করেছে। আভাস গান্ধী আর কামত গান্ধী তখন দিল্লিতে চাকরি পেয়েছে। একসাথে ওদের ছোটবেলা কেটেছিলো জুবিনের আশ্রমে। কত স্মৃতি, কত ভালোবাসা, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া, অভিমান আবার ভালোবাসা। এমন দিন গেছে যখন ওরা এ ওর জাঙ্গিয়াও পড়েছে, কিছুই আলাদা ছিল না। একটাই আলমারি ছিল ঘরে, গুছিয়ে কাপড় জামা রাখার অভ্যাস ছিল না, একসাথেই সব কিছু থাকতো, নিজের বলে কিছু নেই, কিন্তু কোনো অভাব বোধ ও ছিল না। জুবিন জানতো এই আশ্রমের ছেলেরা এই ভাবেই মানুষ হচ্ছে, ছেলেদের শেখাতে চায়নি কোনো কোনো জিনিষকে নিজের বানানো দরকার। হোক না কিছু মানুষ যাদের নিজের কোনো চাহিদা থাকবে না, হোক না কিছু মানুষ নিঃস্বার্থ। স্বার্থপরতা আমাদের গণ্ডিকে ছোট করে দিচ্ছে সারা বিশ্বে। আমরা বেশির ভাগ লোক নিজের চোখ দিয়ে নিজেকে দেখি, অন্যের চোখ দিয়ে দেখতে শিখিনি, কিন্তু জুবিনের ছেলেরা অন্য ধাতুতে তৈরী হয়েছে। টাকা পয়সায় কেউ হয়তো চূড়ান্ত বড়লোক হয়নি, কিন্তু মানুষ হিসাবে অনেক বড় মাপের মানুষ তৈরী করেছে জুবিন দর্জি।আভাস আর কামাত কাইজারকেও ডেকে নেয় নিজেদের কাছে। গ্রীন পার্কে একটা ফ্ল্যাটে তিনজন থাকতো। কাইজার সারাদিন পড়াশোনা করতো কম্পিটিটিভ পরীক্ষার জন্য, দুটো ছাত্র পড়াতো বারো ক্লাসের। সেই পয়সায় হাত খরচ মিতে যেত। বাড়ি ভাড়ার টাকা আর খাওয়া দাওয়া আভাস আর কামত দিতো। কেউ কখনো এই নিয়ে কথাও বলেনি। হয়তো একেই বলে আসল আত্মীয়তা। মাঝে মাঝে কাইজার রান্না করতো আর বিয়ার বা রামের বোতল কিনে আনতো ছুটির দিনে একটু আড্ডা মারার জন্য।* * * * * *দীনেশ আর কাইজার দুজনেই পোস্টিং পেয়েছে দিল্লির পুলিশ হেডকোয়াটারে। দিল্লী পুলিশের স্পেশাল কমিশনার ইন্টেলিজেন্সের অফিসে দুজনেই অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার। ওদের কাজ ছিল দিল্লিতে যত বিদেশী লোকজন আছে তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা। সারাদিন ইন্টারপোলের সাথে যোগাযোগ, সন্দেহভাজন লোকজনের রেজিস্ট্রেশন, তারপর তাদের ওপর নজরদারি। অবশ্যই গোপনে। এই কাজের জন্য সবসময় পুলিশ মোতায়েন করা যেত না, ভরসা করতে হতো কিছু সাধারণ খবরিদের ওপর। এক কথায় একটা প্যারালাল স্পাই নেটওয়ার্ক চালাতো এই ডিপার্টমেন্ট। প্রত্যেক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের নিজস্ব নেটওয়ার্ক থাকতো। ডিপার্টমেন্টের কেউ জানতো না কারা এই নেটওয়ার্কে কাজ করছে। হয়তো ডিপার্টমেন্টের সকলকে বিশ্বাস করাও মুশকিল ছিল। কাইজারের নেটওয়ার্কে একজন ছিল মুনাবার।* * * * * * * * *কে এই মুনাবার ? এবার মুনাবারের গল্প বলি। দিল্লির দিলশাদ গার্ডেনের একটা এম আই জি ফ্ল্যাটে নিজের বৌ উষা আর তাদের মেয়েকে নিয়ে মুনাবারের ছোট সংসার। শাহাদরার কাছে একটা রেডিমেড গার্মেন্ট কোম্পানির টেলর ছিল মুনাবার। মুনাবার কলকাতার লোক, টেলরের কাজ শিখেছিল মেটেবুরুজে। তখন থেকেই বামপন্থী রাজনীতি করতো মুনাবার। নিজের আত্মীয় স্বজন কেউ তেমন ছিল না। কৃষ্ণনগর থেকে একটু দূরে তাহেরপুরে ওদের বাড়ি ছিল। ছোট চাষের জমিও ছিল। মুনাবারের বাবা মা অন্য শরিকদের সাথে সেই জমি চাষ করে কোনো রকমে সংসার চালাতো। একবার কলেরার মহামারীতে মা বাবা দুজনে চলে গেলো। মুনাবারের তখন ১৬ বছর বয়েস। মাধ্যমিক পাস্ করেছিল গ্রামের স্কুলে তারপর আর পড়াশোনার সুযোগ পায়নি। একজন জ্যেঠা ছিলেন, তিনি মেটেবুরুজে এক দর্জির কাছে মুনাবারকে রেখে এলেন। তার পর থেকে মুনাবার আর তাহেরপুর যেতে পারেনি। দিন রাত কাজ করতো ওই দর্জির দোকানে। জামিল মন্ডলের দোকান। জামিলদা তখনও অবিবাহিত, নিজের বাড়িতেই দোকান, ওপরে দুটো ঘর আর নিচে দোকানের পেছনে একটা ঘর আর একটা বাথরুম পায়খানা ছিল। মুনাবারকে ওখানেই থাকতে দিলো জামিলদা। জামিলদার সাথে মুনাবারের জেঠার কি সম্পর্ক মুনাবার জানতে পারেনি কখনো, জানতে চায় ও নি। দুবেলা খাওয়া পড়া জুটতো, কাজ ছিল কিন্তু মুনাবারের ভালোও লাগতো। জামিলদাই হাতে ধরে মুনাবারকে কাজ শিখিয়েছিলো। জামিলদা কখনো মসজিদ যেত না, নামাজও পড়তে দেখেনি মুনাবার। মুনাবার মাঝে সাথে মসজিদে যেত কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যাসটা কেটে যায়। সন্ধ্যেবেলা জামিলদা দোকান বন্ধ করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে যেত, মুনাবারও নিজের কিছু বন্ধু জুটিয়েছিলো যারা একটা স্কুল ঘরে রোজ রাতে কিছু আলোচনা করতো, বেঁচে থাকার লড়াই, সাম্যবাদ এই নিয়ে বক্তিতা দিতো কিছু ভালো চেহারার লোকজন, দেখে মনে হতো তাঁরা শিক্ষিত ভদ্রলোক। কেউ কেউ ক্লাস চালাতেন, পড়াশোনা করতে বলতেন সব ছেলেদের। মুনাবার এমন এক ক্লাসে যেতে শুরু করলো। বাদলদা বাংলা সাহিত্য পড়াতেন। অনেক বই পরে শোনাতেন, পড়তেও বলতেন। নতুন নতুন গল্প। ধীরে ধীরে গত তিন চার বছরে মুনাবার এক অন্ধকারময় অস্তিত্বের মধ্যে কোথাও যেন আলোর দেখা পাচ্ছিলো। কি ভাবে জানেনা কিন্তু, মুনাবারের ধীরে ধীরে বামপন্থী রাজনীতির ওপর আস্থা বাড়তে শুরু করে। জামিলদা জানতো সব কিন্তু কোনোদিন বাধা দেয় নি। কাজের সময় মুনাবার ছিল খুব একনিষ্ঠ। জামিলদা সম্প্রতি মুনাবারকে দিয়েই কাটটিং করাতো। কিছুদিন পর জামিলদা বিয়ে করে উষা নামের একটি মেয়েকে। হিন্দু মেয়ে, ঘরে পুজো আর্চাও করতো, জামিলদার কোনো মানা ছিল না। এক কথায় জামিলদা ছিল উদার মনের মানুষ। প্রায় একবছর জামিলদার প্রেমের সংসার চললো। ঊষা ছিল মুনাবারের বয়েসী কিন্তু মুনাবার ‘বৌদি’ ডাকতো ঊষাকে। মুনাবারকে দেওরের চোখেই দেখতো ঊষা। বৌদির দয়ায় ভালো মন্দ খাবার জুটতো মুনাবারের কপালে। একদিন সন্ধ্যের পর মুনাবার নিজের ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। ও টের পায় কেউ আছে ওই ঘরে। দরজায় কান লাগিয়ে জামিলদার গলা শুনতে পায় আর এক মহিলার গলাও। ঘন ঘন নিঃস্বাস এর শব্দ। মুনাবারের সংস্কারে বাঁধে কান লাগিয়ে শুনতে, তাই বাইরে এসে রাস্তার ধারে একটা দোকানে দাঁড়িয়ে এককাপ চায়ের অর্ডার দেয়। ভাবতে থাকে, জামিলদা আর বৌদি নিজেদের ঘর ছেড়ে ওর ঘরে কি করছে? মিনিট কুড়ি চায়ের দোকানে কাটানোর পরও নিজের ঘরে যেতে সংকোচ হচ্ছে মুনাবারের। দোকানের দরজা বন্ধ, তাই বাড়ির পাশের গলি দিয়েই নিজের ঘরে যেতে হবে, এই সব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মুনাবার দেখতে পায় বাড়ির গলি দিয়ে চুপিসারে জরিনা বেরোচ্ছে। জরিনা ওদের পাড়ার মেয়ে, ব্লাউস বানাতে ও এই দোকানেই আসে, জামিলদার পুরোনো খরিদ্দার। বৌদি কি ওপরের ঘরে ? জরিনার ব্লাউসের মাপ সবসময় জামিলদাই নেয়। কোনো মহিলা কাস্টমার এলে জামিলদা বা মুনাবার দোকানের পেছনে একটা ট্রায়াল রুম আছে সেখানে দাঁড়িয়ে মাপ নেয়, আজ তো দোকান বন্ধ, জরিনা কোথা দিয়ে ঢুকলো ? মুনাবার ঠিক এই সময়ে ঢুকতে চাইছে না নিজের ঘরে। একটু অপেক্ষা করতে চাইছে। নিজের মাথাও ঘুরছে উষা বৌদির কথা ভেবে। কি হবে যদি জানতে পারে জামিলদা আর জরিনার কোনো গোপন সম্পর্ক আছে ? কিছুক্ষন পর উষা বৌদি কে দেখতে পায় রিক্সা করে ফিরছে, হাতে অনেক বাজারের ব্যাগ। মুনাবার এগিয়ে যায় বৌদিকে সাহায্য করতে।- ব্যাগগুলো দাও বৌদি আমি নিয়ে যাচ্ছি- বাঁচালে মুনাবার, ব্যাগগুলো খুব ভারী - উষা বলে- বাজারে জামিলদা কেও নিয়ে গেলে পারতে- সারাদিন দোকানে কাজ করে তাই ভাবলাম আমি গিয়ে মাসকাবারি বাজারটা সেরে নিই - ঊষার গলায় জামিলদার জন্য সহানুভূতি দেখে মুনাবারের অবাক লাগে। এই মানুষটা ধোঁকা দিচ্ছে নিজের বৌকে। দুজন মিলে যখন বাড়ি ঢুকলো তখন জামিলদা ওপরের ঘরে। বৌদি 'শুনছো' বলে ডাকতে নিচে মেনে আসে জামিলদা। একদম স্বাভাবিক আচরণ। মুনাবার ব্যাগগুলো ওপরে তুলে দিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে। আজকাল রাতে বৌদি ওপরেই খাবার দেয় আর মুনাবার গিয়ে ওদের সাথেই এক টেবিলে খেয়ে আসে, যেন এই ঘরের ছোট ভাই। আজও খেতে গেছে, ওদের দুজনের কথায় কোনো বিবাদ নজরে পড়েনি। রাতে শুয়ে শুয়ে মুনাবারের ঘেন্না লাগছিলো নিজের বিছানায় শুতে। এর পর বেশ কিছুদিন মুনাবার বুঝতে পেরেছে যে ওর এই ঘরে আরো কেউ এসেছিলো। এভাবে বেশিদিন চললে উষা বৌদি নিশ্চই জানতে পারবে, তখন কি হবে ?মাসখানেক পরের ঘটনা, একদিন বৌদির কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় মুনাবার, জামিল বকা বকি করছে, নিজের ঘরে শুয়ে সব শুনতে পাচ্ছে মুনাবার। জামিলের কুকীর্তি ধরে ফেলেছে বৌদি, নালিশ জানাচ্ছে কিন্তু জামিলদা নিজেকে বলছে ' আমার যা ইচ্ছা হবে তাই করবো, তোমার ভালো না লাগে চলে যায় বাপের বাড়ি', বৌদি কাঁদছে। দিন কে দিন ঝগড়া বাড়তে লাগলো, জামিলদা একদিন বোধহয় বৌদিকে মারধর ও করেছে। এদিকে মুনাবার সব শুনছে, দোকানে এসে জামিলদার মন বসছে না। একদিন জামিলদা মুনাবার কে ডেকে বললো যে ও কিছুদিনের জন্য কলকাতার বাইরে যাবে, দোকানটা যেন মুনাবার ঠিকমতো সামলায়। মুনাবার জিজ্ঞাসা করেছিল- বৌদি কে নিয়ে যাচ্ছ জামিলদা ?- না, আমার নিজের কাজে যাচ্ছি, তুই খেয়াল রাখিস। বৌদির কিছু দরকার পড়লে বাজার থেকে নিয়ে আসিস।গত দু দিন মুনাবার বৌদি কে দেখে নি। জামিল ওপর থেকে মুনাবারের খাবার নিচে দিয়ে গেছে। পরদিন সকালে জামিলদা চলে গেলো ছোট একটা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে। দিনের বেলা বৌদি খেতেও ডাকে নি, মুনাবার বাজারের দোকান থেকে ভাত দল তরকারি খেয়ে এসেছে। বিকেলে সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে ডেকেছে বৌদি কে, কোনো সারা শব্দ নেই। বুকটা একটু ছ্যাৎ করে উঠেছে। কি হলো বৌদির। ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করেছে মুনাবার। দোতালার ল্যান্ডিঙে উঠে আবার ডেকেছে - বৌদি, তুমি কোথায় ?কোনো সাড়া নেই, মুনাবার বেডরুমের দরজা খোলা দেখে ঢুকেছে, সেখানেও নেই। আর একটা ঘর আছে, বসার ঘর, সেখানেই এক কোনে ডাইনিং টেবিল পাতা, এই ঘরেই ওরা খাওয়া দাওয়া করে, সেখানেও নেই। নিচেই নেমে যাচ্ছিলো মুনাবার, হঠাৎ ল্যান্ডিং কোনায় বাথরুম থেকে একটা আওয়াজ শুনতে পায়। একটা গোঁঙানির আওয়াজ। দু বার বৌদি বৌদি করে ডেকেও যখন সুবিধা হয়নি, তখন সব সংকোচ ভুলে বাথরুমের দরজা জোরে ধাক্কা দেয়। এক ধাক্কাতেই দরজার ছোট ছিটকিনি খুলে যায়। বাথরুমে বৌদি উপুড় হয়ে পরে আছে। সায়া পরনে কিন্তু গায়ে কিছুই নেই, পিঠে লাল দাগ। বৌদির নাকের কাছে হাত রেখে মুনাবার বুঝতে পেরেছে শ্বাস চলছে। কাউকে কি ডেকে আনবে। লোকজন এসে গেলে কি ভাবতে কি ভাববে এই নিয়েও মুনাবারের একটু সংকোচ হচ্ছে। বাথরুমে একটা বড় তোয়ালে ছিল, তাই দিয়ে বৌদি কে জড়িয়ে পাঁজাকোলা করে বেডরুমে নিয়ে শোয়াতে গিয়ে দেখতে পেলো যে বৌদির গালে আর কপালে আঘাতের চিহ্ন। কোনো ভাবে নিজের সম্মান বাঁচিয়ে আর বৌদির কোনো অসম্মান না করে ভেজা সায়া পাল্টে বিছানার চাদরে বৌদিকে ঢেকে দিয়েছে মুনাবার। জল খাইয়াছে। বৌদি চোখ খুলেছে, কিন্তু এখনো ভালো করে কিছু বুঝতে পারেনি। গরম চা এনে দিয়েছে মুনাবার, সাথে বিস্কুট। ধীরে ধীরে উঠে বসেছে বৌদি। লজ্জায় এখন মুনাবারের দিকে তাকাতে পারছে না। ঘরের আবহাওয়া হালকা করার জন্য মুনাবার বলে ওঠে- কদিন ধরেই দেখছি তোমাদের ঝগড়া বাড়ছে। কি হচ্ছে এসব ? আজ জামিলদা সকালে চলে গেলো কলকাতার বাইরে, বললো না কোথায় যাচ্ছে।বৌদি কান্নায় মুখ ঢেকে ফেললো। তারপর যা বললো তার সারমর্ম এই রকম -বিয়ের এক বছর পরও বৌদি প্রেগনেন্ট হয়নি, স্বভাবতই শারীরিক দোষ বৌদির। জামিল বাচ্চা চায় কিন্তু বৌদি ওকে বাচ্চা দিতে পারছে না, তাই জামিলদা জরিনাকে বিয়ে করতে চায়। বৌদি এই সংসারে সতীনের সাথে থাকতে চায় না, তাই জামিলদার হাতে রোজ মার খেতে হয়। গত কয়েকদিন ধরে মারধরের মাত্রা বাড়তে থাকে, জামিলদা তালাক দিতে চায় বৌদি কে, বৌদি বাপের বাড়ি বলে কিছু নেই। মামার বাড়িতে ছিল। মা বাবা মারা যাওয়ার পর মামার বাড়িতেই বারো হয়েছে উষা। পড়াশোনাও করেছে, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত। মামার একটা ছেলে। বাড়ির আদর সব তার জন্যই, উষা বারো হয়েছে মামীর বাড়ির কাজ করে আর গঞ্জনা শুনে। আর পাঁচটা বাড়ির মতো মামা নিজের কাজে ব্যাস্ত বা ব্যাস্ততার ভান করে উষা কে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে। মামার ছেলেটাও উষা কে নিজের দিদি ভাবতে পারেনি কখনো। মামা একদিন ঊষার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলো। মামার চেনা একটি ছেলে, একা থাকে, কেউ নেই ওর সংসারে, ছেলেটা মুসলিম কিন্তু গোঁড়া নয়, শুধু নামটাই মুসলিম। খিদিরপুরে দর্জির দোকান। একদিন মামার সাথে এই বাড়িতে এসে নাকি ও ঊষাকে দেখেছে, ভালো লেগেছে। ঊষার মনেও নেই। ছেলেটা কোনো যৌতুক চায়নি। তার ওপর কোনো ধর্মীয় বিয়ে ছেলেটা করতে চায় না, সাধারণ কোর্ট ম্যারেজ করে ঊষাকে নিজের ঘরে নিয়ে যেতে চায়। ঊষার ভালো লাগতে শুরু করে ছেলেটার মানসিকতা। কিন্তু ছেলেটা দর্জি শুনে মনে মনে একটা ছবি তৈরী করে নেয়, কানে পেন্সিল, হাতে মাপের ফিতে, ছাগল দাড়ি আর পান মসলা খেয়ে খেয়ে তেতুলবিচির মতো কালো কালো দাঁত।কিছুদিন পর মামা ছেলের ছবি দেখায় ঊষাকে। ছেলের ছবি দেখে উষার তলপেটের নিচে প্রজাপতি উড়তে থাকে। বাদামি চোখ, সুন্দর স্বাস্থ্য, একটা এক রঙের জামা পরা, হাতের পেশী দেখা যাচ্ছে, এক কথায় বলিউড না হলেও টলিউডের অনেক নায়কের চেয়ে জামিলকে দেখতে ভালো। মামা আজই ছেলেটার নাম বললো ঊষাকে। আজ মামী বাড়ি ছিল না তাই মামা অনেক দুঃখের কথা মন খুলে বলতে পারলো ঊষাকে। নিজের ইচ্ছা থাকলেও ঊষাকে আগলে রাখতে পারেনি, প্রায় জোর করেই বিয়ে দিতে হচ্ছে মামীর ইচ্ছায়। উষা মামাকে সান্তনা দেয় -তুমি অনেক করেছো মামা, আমি তোমার কথা বুঝতে পারি, আমার কোনো আপত্তি নেই এই বিয়েতে। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। ঊষার কথা শুনে মামা যেন অনেক শান্তি পেলো।ঊষার বিয়ের পর জামিল ওকে নিয়ে বাড়ি আসে, ভালোবাসা ছিল, শান্তি ছিল, কিন্তু শারীরিক মিলনের সময় জামিল খুব অস্থিরতা দেখাতো, কোথায় যেন তাল মিলতো না। অশান্ত মন নিয়ে দুজনেই অসস্থিতে ভুগতো। উষা একবার বলেছিলো জামিলকে কোনো ডাক্তার এর কাছে যাওয়ার জন্য। জামিল রাজি হয় নি। দেখতে দেখতে একবছরের বেশি কেটে গেলো কিন্তু উষা প্রেগনেন্ট হলো না। এদিকে জরিনার সাথে জামিলের ঘন ঘন মেশা বাড়তে থাকলো। উষা বুঝতে পারছিলো কিন্তু প্রথমে অত গ্রাহ্য করেনি। কিছুদিন আগে জামিল বলে বসলো জরিনা কে বিয়ে করতে চায়, সেই থেকেই ঝগড়া শুরু। জরিনার সাথে হয়তো শারীরিক মিলনের তাল মিলে গেছে।উষা কাঁদে, মুনাবারের মনে কোথায় যেন ঊষার জন্য দুঃখ হয়। মুনাবারের জীবনে কখনো কোনো মহিলা আসে নি। মুনাবার এখন ২৭ /২৮ বছরের যুবক। শরীরের চাহিদা অনুভব করে কিন্তু ঊষাকে নিয়ে কোনোদিন কোনো খারাপ চিন্তা মাথায় আসে নি। আজ ঊষা মুনাবারের হাত ধরে অনুরোধ করে 'আমাকে এখন থেকে নিয়ে যাও'। আর একজনের স্ত্রী কে ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো মানসিকতা মুনাবারের নেই, সাহসও নেই। ঊষার হাত ছাড়িয়ে সেদিন বাদল দার সাথে দেখা হয়। বাদল দা মুনাবারের বন্ধু এখন। সব কথা বলতে পারে মুনাবার বাদল দাকে। বাদল দা বলেন ' যদি ঊষাকে বাঁচাতে চাস তাহলে ওকে নিয়ে চলে যা কোথাও, দুজনের দু কূলে কেউ নেই চিন্তা করার। কে কি বললো তাতে কি আসে যায় ? নিজে কাজ জানিস কাজ পেয়ে যাবি'।- কোথায় যাবো বাদল দা ?- দিল্লি চলে যা, আমার একটা চেলা আছে দিল্লি তে, তোদের সাহায্য করবে, যাবি ?- আপনি ভরসা দিলে চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু জামিল ফিরে এসে যদি পুলিশ লাগায়?- জামিল তা করবে না, ওর তো ঝামেলা মিটে গেলো, ওকে জরিনার সাথে থাকতে দে, কিছুদিন পর ওকে সব জানিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিস্। জামিল ঝামেলা করার লোক নয়, আমি ওকে চিনি।পরদিনই কিছু করতে হবে। হাতে কিছু টাকাও আছে মুনাবারের। বাদল দার চেনা ভদ্রলোকের ঠিকানা নিয়ে আর একটা চিঠি নিয়ে বাড়ি ফেরে মুনাবার। ঊষার সাথে দেখা করে জানায় যে কাল ভোরেই বেরোতে হবে। ঊষার মুখে আনন্দের ঝলক দেখতে পায়। উষা কোনো প্রশ্ন করে নি, কোথায় যাবো কি করবো ইত্যাদি। কিছু মানুষের জীবন এতো অস্থায়ী যে প্ল্যান করার বিলাসিতা এদের সাজে না। ছোট্ট থলিতে কিছু জামা কাপড় আর মামার দেওয়া একজোড়া সোনার চুরি ছাড়া কিছুই নেয় নি ঊষা। জামিল ও কিছু কিনে দিয়েছিলো ঊষা কে, সাধারণ কিছু গয়না, সব ছেড়ে ঊষা চললো নতুন জীবনের আশায়। কি সম্পর্ক আছে ঊষার সাথে মুনাবারের, এতো কথা ভাবার সময় নেই। রাত থাকতেই বেরিয়ে পরে দুজন, দরজায় তালা দিয়ে, চাবি জানালা দিয়ে ভেতরে ফেলে দেয়। জামিলের কাছে দরজার চাবি আছে।শুরু হলো দুজনের যাত্রা। হাওড়া থেকে দিল্লি, কোনো রেজারভেশন ছাড়াই টিকিট কিনলো মুনাবার। এক দালাল বেশ কিছু পয়সা নিয়ে থ্রী টিয়েরের একটা বগিতে দুটো সিট দিয়ে দিলো, বিকেলে ট্রেন। সারাদিন হাওড়া স্টেশনে কি করবে? স্টেশন থেকে একটু দূরে একটা সাধারণ রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করলো। বেশি কথা হচ্ছে না দুজনের কিন্তু মাঝে মাঝে ঊষা মুনাবারের হাত ধরছে। গায়ে গা লাগছে, ঊষার কোনো সংকোচ নেই কিন্তু মুনাবার এখনো মানিয়ে নিতে পারেনি। দুপুরে স্টেশনে বসে উষা জিজ্ঞাসা করে- কি পরিচয় দেবে অন্য লোকেদের? আমাদের কি সম্পর্ক?মুনাবার এই কথা তা ভাবে নি এখনো। সত্যিই চিন্তার কথা। ওকি বলবে যে ঊষা জামিলের বৌ, তাকে ভাগিয়ে নিয়ে এসেছে, এখন দুজনে একসাথে থাকবে? মুনাবার জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় ঊষার দিকে। উষা নিঃসংকোচে বলে- বলবে আমরা বিবাহিত স্বামী স্ত্রী। নাম ভাঁড়ানোর দরকার নেই। পরে কখনো সুযোগ বুঝে --- বলেই ঊষার মনে হলো মুনাবারকে জিজ্ঞাসা করে হয় নি ওর জীবনে কোনো মেয়ে আছে কি না। এবার অস্বস্থি শুরু হলো ঊষার। না জেনে শুনে মুনাবারকে ওর জীবনের সাথে জড়িয়ে ফেললো !সেদিন যখন মুনাবার ঊষাকে বাথরুম থেকে ঘরে নিয়ে এসেছিলো, কাপড় বদলে দিয়েছিলো, ঊষার মনে হয়েছিল মুনাবার হয়তো ঊষার প্রতি আকর্ষিত, কিন্তু আজ মুনাবার কে দেখে মনে হচ্ছে না। তাহলে ? ঊষা এক গভীর চিন্তায় পরে যায়। মুনাবার বুঝতে পারে ঊষার মনের কথা।- আমাকে একটু সময় দাও ঊষা, এই প্রথম ঊষা কে বৌদি না বলে নাম ধরে ডাকলো মুনাবার। তারপর ঊষার হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে একটু চাপ দিলো কিছুটা আশ্বাস দেওয়ার জন্য। কথা না বলে বোঝাতে চাইলো ঘাবড়িয়োনা, ভরসা রাখো।
    দোলজ‍্যোৎস্নায় শুশুনিয়া‌য় - ৪ - সমরেশ মুখার্জী | সুবাসে উতলা মনসেল্ফ ইন্ট্রোডাকশনের পর চা এসে গেল। চায়ের গ্লাস হাতে সবাই ইতস্ততঃ ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। সুমন চা খেয়ে একটু দুরে বারান্দা‌র উল্টো‌দিকের সিঁড়িতে বসে সিগারেট ধরায়। ছেলেদের মধ‍্যে সুমন,  গৌরব আর ইনস্ট্রাক্টররা ছাড়া আর কেউ সিগারেট খায় না। গৌরব বা ইনস্ট্রাক্টরদের কোনো ব্র‍্যান্ডের বাছবিচার নেই। যা পায় তাই খায়। বলাইদার দোকানে বিড়ি ছাড়া চারমিনার, পানামা, নাম্বার টেন গোছের সস্তা সিগারেট পাওয়া যায়। গোল্ড ফ্লেক, ক‍্যাপস্টান কিং সাইজ গোছের একটু দামি সিগারেট ওখানে অমিল। ওরা চারমিনার‌ খাচ্ছে। সুমন ধরায় ওর পছন্দের উইলস ফিল্টার। ওটা ছাড়া ওর চলে না। ও জানতো এসব জায়গায় তা পাওয়াও যাবে না তাই তিনদিনের ট্রিপের জন‍্য কলকাতা থেকেই কিনে এনেছে দশ প‍্যাকেট। এসেই তিন ইনস্ট্রাক্টরকে এক প‍্যাকেট ক‍রে দিয়ে দিয়েছে। খুব খুশি তারা। বলে, "আরে বাঃ! এতো মেঘ না চাইতে‌ই জল। বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে খাবো!" সামান্য কারণে সরল আনন্দের প্রকাশ দেখে ভালো লাগে। পর্বতারোহীদের সিগারেটের নেশা না থাকলে‌ই ভালো‌। দমে টান পড়ে। তবে থাকলে, এমন জায়গায় তার যোগান না পেলে মজাই মাটি। সুমন একটু বেশি এনেছি‌ল এই জন‍্য‌ই। তাছাড়া শৈলারোহণ সুমনের নিছক শখ। এ নিয়ে বেশীদুর যাওয়ার ইচ্ছা ওর নেই। তাই ও সিগারেট খেতেই পারে।মেয়েদের মধ‍্যে ঈশিতা‌কে আগের বার কোর্সেই মাঝে মধ‍্যে খেতে দেখেছে। পরে একটা প্র‍্যাকটিসে‌ও দেখেছে। বোধহয় হালকা নেশা আছে ওর। চুনি কচিৎ কখোনো একটু আধটু টান মারে। তুলির ওসব বালাই নেই। ঈশু পাশে এসে বসে। বলে, "জেঠু, কাউন্টারটা দিস।" - "দ‍্যাখ, ওসব কাউন্টার ফাউন্টার দেওয়া নেওয়া আমার পোষায় না। তুই একটা গোটাই নে।" প‍্যাকেট খুলে একটা গোটা সিগারেট ওর দিকে বাড়ায় সুমন।- "না, না, তোর স্টক শেষ হয়ে যাবে। আমি বলাইদার কাছে খোঁজ নিয়ে‌ছি এখানে পাওয়া‌ যায় না এটা"। একটু ইতস্ততঃ করে ঈশু।- "নে, নে, ধর, বেশি ফর্মালিটি করিস না। এখনো সাত প‍্যাকেট আছে। ভুলে যাস না  আমি চাকরি করি, মাইনে যদিও সাতশো টাকা, তবু তোদের মতো নির্ভেজাল বেকার ন‌ই। তুই বরং একটা গোটা প‍্যাকেট‌ই রাখ।"সিগারেট‌টা ঠোঁটে নিয়ে ঈশুর আর দেশলাই‌য়ের তর সয় না। সুমনের ঠোঁটে জ্বলা সিগারেট থেকে‌ই ধরানোর জন‍্য ঝুঁকে আসে। শিউরে ওঠে সুমন। ধারালো কাঁচের মতো মেয়েরা কেন যে এসব করে! এমন নৈকট্যে মিষ্টি পারফিউমের সুবাসে যে মন উতলা হয়ে উঠতে পারে তা কি বোঝে না ওরা?পারফিউম ব‍্যবহার করা ঈশুর শখ। ও বলে তাতে নাকি ওর মন ভালো থাকে। কিন্তু ও জানে না, তাতে কখনো অন‍্যের‌ মন খারাপ‌ও হয়ে যেতে পারে। তখন শুশুনিয়া পাহাড়ের রেখা ছাড়িয়ে চাঁদের আভা ক্রমশ বাড়ছে। চাঁদ অবশ‍্য তখনো পাহাড়ের আড়ালে। কাল দোল পূর্ণিমা।  কয়েকটা সুখটান মেরে ঈশু বলে - "না রে, তার চেয়ে এই ভালো। যখন ইচ্ছে হবে তোর কাছে চাইবো।"-"কী?" জেনে বুঝে ন‍্যাকা সাজে সুমন।-"কী মানে? সিগারেট। আবার কী?" -"ও তাই বল, আমি ভাবলাম বুঝি ..."-"জেঠু, ইউ আর জাস্ট ইনকরিজিবল, এমন ইন্সট‍্যান্ট ফিচলেমি তোর মাথায় আসে কী করে বলতো?" বলার ভঙ্গিতে মনে হয় চোখ পাকিয়ে তাকালো। পাহাড় চোঁয়ানো হালকা জ‍্যোৎস্নার পেলব আলো পড়েছে মুখে, চোখে তখনও আলোছায়া।নারীবাদীকে নাড়িয়ে- "এই, তোরা দুজনে মিলে হুইসপারিং গেম খেলছিস নাকি রে?" তুলি এসে বসে ওদের পাশে। গৌরব কোথায় ঘুরছে কে জানে। বরুণ, চিতা আর দুটো নতুন ছেলে মোমবাতি জ্বালিয়ে বারান্দায় তাস খেলতে বসেছে। ইনস্ট্রাক্টররা নিজেদের মধ‍্যে পাহাড়ের গল্প করছেন। এক‌ই দলের মধ‍্যে তৈরী হয়েছে কয়েকটি ছোট ছোট উপদল। যেন মেঝেতে পড়া ফোঁটা ফোঁটা গুড়ের পাশে জমা হ‌ওয়া পিঁপড়ে‌। চুনিও এসে যোগ দেয় ওদের উপদলে। কিছু করার নেই বলে সুমন ভাবে ঈশুকে একটু নাড়িয়ে দেখা যাক।- "আচ্ছা ঈশু, এই যে তুই নিজেকে ফেমিনিস্ট বলিস, এটা তো একটা মতবাদ। এ বিষয়ে কিছু বল না শুনি।"- "আগে বল, তুই কী জানিস।"- "কিছুই না। তবে আন্দাজে মনে হয় ফেমিনিজম মুভমেন্টের মূলে আছে সমাজে মহিলা‌দের প্রাপ‍্য স্বীকৃতি ও অধিকার আদায়ের লড়াই। যেহেতু সারা পৃথিবীতেই সমাজের নানান একপেশে নিয়মকানুন মূলত পুরুষদের দ্বারা‌ই তৈরী ও নিয়ন্ত্রিত হয়েছে তাই আমার অনুমান প্রতিবাদ হিসেবে ফেমিনিস্ট আন্দোলনের সূত্রপাত‌‌ হয়তো হয়েছে মহিলা‌দের দ্বারা‌ই। আর কিছু বলতে পারবো না।"- "সাধে কী আর তোকে আমরা জেঠু বলি"। ট্রেনে বলা তুলির কথাটা ঈশু‌ও পুনরাবৃত্তি করে। "কিছু না জেনেও তুই আন্দাজে‌ বুলস আইতে হিট করেছিস।" ঈশু সুমনের পিঠটা একটু চাপড়ে দেয়। তুলি সুমনের কলারটা তুলে নাচিয়ে দেয় কয়েকবার। ঈশু বলে, "পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মহিলা‌রা চিরকাল পুরুষের নিয়ন্ত্রণ ও দমনের শিকার। তাই ফেমিনিস্ট আন্দোলনের মূলে আছে, যা তুই বললি, সমাজে পুরুষের সাথে মহিলা‌দের সমান অধিকারের দাবিতে লড়াই। কর্মক্ষেত্রে সুযোগ, অর্থ‌নৈতিক মুক্তি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা,  জীবনের নানান ব‍্যক্তিগত ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমানাধিকার, সামাজিক ন‍্যায়বিচার ইত‍্যাদির জন‍্য জনসচেতনতা গড়ে তোলা। এবং তা শুধু মহিলাদের মধ‍্যে নয়, পুরুষ‌দের মধ‍্যেও"। তুলি বলে, "কেন? পুরুষ যদি মেয়েদের ওপর অধিকার কায়েম রাখতে চায়, তাহলে পুরুষ‌রা মহিলা‌দের থেকে এসব কথা শুনতে চাইবে কেন?"ঈশু বলে, "কারণ প্রকৃতি‌গতভাবে দূর্বল নারী, পুরুষের বিরূদ্ধে গলাবাজি, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, প্রত‍্যাখ‍্যান, সমালোচনা করে তাদের মূল লক্ষ্যে বেশিদূর এগোতে পারবে না। সমাজে এবং ব‍্যক্তিগত পরিসরে‌ও নারী‌র উন্নতি ও সুষ্ঠু জীবনযাপনের  জন‍্য পুরুষকে তার পাশে পাওয়া জরুরি। নারী ও পুরুষ যে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, পরিপূরক, এই ধারণার সার্বিক মান‍্যতা প্রতিষ্ঠা না করে পুরুষের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে ফেমিনিস্ট‌রা কোনো বৃহত্তর সাফল‍্য পাবে বলে মনে হয় না। পুরুষদের বোঝাতে হবে যে পোষা কুকুরের মুখে ছুঁড়ে দেওয়া রুটি‌র টুকরো‌র মতো যুগ যুগান্ত ধরে মেয়েদের পুরুষের দিকে ভিক্ষের ঝুলি হাতে তাকিয়ে থাকতে বাধ‍্য করা আসলে পৌরুষের‌ই অপমান।" চুনি বলে, "ঠিক বলেছিস। শুধু‌ই পুরুষের বিরোধিতা নয়, ওদের বোঝা‌তে হবে। ওদের এটা অনুভব করতে প্রভাবিত করতে হবে"।ঈশু বলে, "সৌভাগ্যের কথা অনেক পুরুষ‌ই হীনমন্য, সঙ্কীর্ণ‌মনা, কুচুটে বা মেনীমুখো ধরণের নয়। অনেক পুরুষের মধ‍্যে‌ই কাজ করে মেল ইগো - মানে হিমালয়ের মতো চিন্তার মহানতা, সমূদ্রে‌র মতো দরাজ হৃদয় হবার প্রবণতা। এটা তাদের মেল সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স। এহেন উদারমনস্কতার ফলে তারা যদি মহিলা‌দের প্রতি অবিচার করার আগে দুবার ভাবে বা করে ফেললেও আত্মগ্লানি‌তে ভোগে তাও আখেরে মহিলা‌দের পক্ষে মঙ্গল‌জনক। তাই পুরুষ‌রা মহিলা‌দের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অবিচার করে এসেছে বলে মহিলা‌রা‌ও যদি নিয়ত পুরুষদের সর্বসমক্ষে তুলোধোনা করতে থাকে তাহলে ব‍্যাপার‌টা এক‍‌ই ভুলের অন‍্যরকম পুনরাবৃত্তি হয়ে যাবে। বরং পুরুষ‌দের সেই উচ্চমন‍্যতা বোধ জাগিয়ে তুলে তাদেরকে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যে তারা যা করছে সেটা ঠিক নয়। এটা মোটে‌ও সহজ কাজ নয়। চটজলদি সমাধান তো নয়‌ই।" মুগ্ধ হয়ে ওরা শুনছিল ঈশিতার কথা। মনে হচ্ছিল শুশুনিয়ায় কোলেবাংলোর সিঁড়িতে তিন বন্ধু‌র সাথে নয় যেন কোনো অডিটোরিয়ামের পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে কিছু মনযোগী শ্রোতা‌র সামনে বক্তব্য পেশ করছে ঈশু। সুমন বলেই ফ‍্যালে, "ঈশু, তুই কিন্তু খুব ভালো বক্তা।"- "আসলে তুই আমার একটা প‍্যাশনেট জায়গায় টাচ করেছি‌স। তোরা মন দিয়ে শুনছিস বলে আমার‌ও বলতে ইচ্ছে করছে। তোরা‌ নিজেরা  কনভিন্স‌ড হলে, হয়তো এমন কথা কখোনো অন‍্য কোথাও বলবি। তোদের কথা শুনে‌ আরো কিছু মানুষ অনুপ্রাণিত হবে, হয়তো তাদের‌ ভাবনা চিন্তা‌য় প্রভাব পড়বে, আচরণ বদলাবে। এভাবেই ধীরে ধীরে আসে সামাজিক পরিবর্তন। বহুশতাব্দী প্রাচীন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, অভ‍্যাস তো আর কয়েক দশকে বদলাতে পারে না।"- "ঠিক বলেছিস। তোর যা বলতে ইচ্ছে করছে বল। আমরা শুনতে চাই। কী তাই তো?" সুমন তুলি আর চুনির দিকে তাকায়। ওরাও মনোযোগ দিয়ে শুনছি‌ল ঈশিতার কথা। সুমন কেবল সূত্রধরের কাজটা করছিল। দুজনেই একযোগে সম্মতি‌সূচক মাথা নাড়ে। - "আচ্ছা, শোন তাহলে। মাতৃত্বেই যদি নারীত্বের সম্পূর্ণ‌তা হয় তাহলে সন্তানধারনের ক্ষেত্রে মহিলা‌দের সম্পূর্ণ না হলেও সামান‍্য ইচ্ছার‌ও মূল‍্য থাকে না কেন? অনেক মহিলা কেবল স্বামী‌র অতিরিক্ত শরীরের ক্ষুধার প্রতিবাদ না করতে পেরে অগুনতি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে‌ই অকালে ফুরিয়ে যায়। যেমন ধর খুররম আর আর্জুমান্দ বানুর কথা।"অমর প্রেমের অন্তরালে- "খুররম! আর্জুমান্দ বানু! তাঁরা আবার কে? বলে‌ই ফ‍্যালে সুমন। মুখ দেখে বোঝা যায় চুনি, তুলি‌ও জানেনা।- "মহান মূঘল সম্রাট শাহজাহান ও তাঁর  প্রিয় পত্নী মুমতাজ মহল। শাহজাহান তো একটা রাজকীয় উপাধি, মানে জগতসম্রাট, যেমন ঔরঙজেব নিয়েছিলেন, আলমগীর। যেমন জাহাঙ্গীর পত্নী ও শাহজাহানের বিমাতা অপূর্ব সুন্দরী মেহেরুন্নিসা বেগম অধিক পরিচিত ছিলেন নূরজাহান বা জগতের আলো নামে, সেই রকম।" - "ওমা তাই নাকি, এটা তো জানতাম না" বলে তুলি।ঈশু বলে, "শাহজাহানের জন্মনাম ছিল - শাহাবুদ্দীন মহম্মদ খুররম। আর মূমতাজের আর্জুমান্দ বানু। তো যা বলছিলাম, শাহজাহানের অনন‍্য পত্নীপ্রেমের নিদর্শন তাজমহল, এক অসাধারন স্মৃতি‌সৌধ, পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি, এসব‌ তো অনেকেই জানে। তবে উনিশ বছর দাম্পত্য জীবনে চতুর্দশতম সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে বুরহানপুর কেল্লায় তিরিশ ঘন্টা গর্ভযন্ত্রনা ভোগ করে মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে যে মুমতাজের জীবনদীপ নিভে গেল - এটা হয়তো অনেকেই জানে না।"- "এ্যাঁ, তাই নাকি?" চোখ গোল হয়ে যায় চুনি‌র। "এ তো আমি‌ও জানতাম না। সত‍্যি ইতিহাসের কত কী যে জানিনা। কিন্তু ঈশু, তুই তো ইংরেজি সাহিত‍্য নিয়ে পড়ছিস অথচ ইতিহাসেও তো তোর খুব দখল দেখছি।"ঈশু বলে, "সব পড়াশোনা‌ই তো পরীক্ষা পাশ করার জন‍্য নয়। এসব আমি পড়ি ভালো লাগে বলে। তো, যা বলছিলাম। রাজকীয় হেকিম সম্রাটকে আগাম সতর্ক করেছিলেন, মুমতাজের যা শরীরের অবস্থা পরবর্তী সন্তানের জন্ম দিতে গেলে ওনার জীবনসংশয় হতে পারে। শুনলেন সে কথা পত্নী‌প্রেমে গদগদ মহান পতি শাহজাহান? সম্রাটের নিত‍্য স্বাদবদলের জন‍্য মূঘল হারেমে বন্দিনী ছিল বহু সুন্দরী রমণী। মুমতাজ ছাড়াও তাঁর ছিল আরো চারটি বৈধ পত্নী ও বেশ কিছু উপপত্নী। তা স্বত্তেও দুর্বল, রক্তাল্পতায় ভোগা মুমতাজ‌কে মাত্রাতিরিক্ত উপভোগ ক‍রে  মাত্র সাঁইত্রিশ বছরে তার ভবলীলা সাঙ্গ করে মহান সম্রাট তাঁর অনন‍্য পত্নী‌প্রেমের ধ্বজা উড়িয়ে বেঁচে র‌ইলেন চুয়াত্তর বছর। কী আয়রনি বল তো!"- "এর নাম ভালো‌বাসা? পত্নী‌প্রেম?" তুলি রাগে গনগন করে। ঈশু বলে, "না রে, শাহজাহান কিন্তু সত‍্যি‌ই মুমতাজকে খুব ভালোবাসতেন। তাই পত্নীর মৃত্যুতে তিনি শোকে এমনই মূহ‍্যমান হয়ে যান যে রাজকার্য শিকেয় তুলে বুরহানপুর কেল্লার একটি ঘরে সাতদিন দরজা বন্ধ করে বসেছিলেন। একমাত্র খাবার দেওয়ার জন‍্য খাস খিদমৎগার ছাড়া শোকার্ত সম্রাটের কাছে যাওয়ার হিম্মত আর কারুর হয়নি। সাতদিন পর তিনি যখন সে‌ই ঘর থেকে বেরোলেন তাঁর মাথার সব চুল পেকে সাদা হয়ে গিয়েছে! সবাই হতবাক। তবে মুমতাজের যদি আর সন্তান‌ধারণে অনিচ্ছা প্রকাশের বৈধ অধিকার থাকতো তাহলে এহেন অকালমৃত্যু তাঁকে গ্ৰাস করতো না। তুলির মতে এটা ভালো‌বাসা না ছাই, নির্লজ্জ শরীরের ক্ষিধে। তুই কী বলবি জেঠু?'সুমন ম্রিয়মান কণ্ঠে বলে, "আমি কী বলবো বল? শাহজাহানের প্রতিনিধি না হলেও, স্রেফ পুরুষসমাজের একজন হয়ে‌ও তো এসব শুনে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। তুলির কথা তো ফেলে দেওয়ার নয়। রাজবৈদ‍্যর নিষেধ সত্ত্বেও এমন অবিবেচনা‌র কাজ করেন কী করে উনি? আর তুই যখন বললি সে ক্ষিধে মেটানোর আরো নানা উপায় ছিল তখন রুগ্ন মুমতাজকে রেহাই দিলেন না কেন সম্রাট? মুমতাজের প্রতি তাঁর যে কিংবদন্তী‌প্রায় প্রেমের কথা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচারিত হয় এতো দেখা যাছে তা মূলতঃ ইন্দ্রিয়াসক্তি। কতজন শিক্ষিত মানুষ এসব জানে জানি না তবে স্বীকার করছি আমি‌‌ও এ ঘটনা জানতাম না।"  ঈশু বলে, "ঠিক আছে, সাড়ে তিনশো বছর আগে শাহজাহানের অসংবেদনশীল‌তার জন‍্য তোর লজ্জিত হ‌ওয়ার  কোনো কারণ নেই। তাছাড়া, তখন অনেক মন্ত্রী, রাজকর্মচারী বা প্রজাদের‌ও মনে হয়েছিল  এটা শাহজাহানের চূড়ান্ত স্বার্থপর‌তার নিদর্শন। তিনি কেবল নিজেকে ভালোবাসেন। কিন্তু কেউ ভয়ে তাঁর সামনে মুখ খুলতে পারেনি।" চিতার দৌলতে টি ব্রেকজল খেতে থামে ঈশিতা। একটু আগে এসেছিল চিতা। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনে কপট বিষ্ময়ে বলে, "ওরে বাবা, তোরা তো হেব্বি সব টপিক নিয়ে কথা বলছিস! ওসব আমার মাথায় ঢুকবে না ভাই। আমি বরং তাস‌‌ই খেলি গিয়ে। তবে তোদের জন‍্য বলাইদাকে একটু চা বলে আসি। এ্যাতো গেরেমভারি আলোচনা কী চা ছাড়া জমে?" এই হচ্ছে টিপিক্যাল চিতা-সুলভ আচরণ। বন্ধুদের জন‍্য ওর মমতা অকৃত্রিম। কার কী দরকার সেসবের প্রতি তীক্ষ্ম নজর। চিতাকে বাদ দিয়ে তাই আউটিং জমে না। একটু বাদে চিতার বলে আসা চা কেটলি করে নিয়ে আসে বাবলু।ঈশিতা সুন্দর কথা বলছে। শুনলেই বোঝা যায় ওর অনেক পড়াশোনা। চিন্তার স্বচ্ছতা, বক্তব্যের সাবলীল‌তা‌ও প্রশংসনীয়। যেন ও এক অধ‍্যাপিকা আর ওরা ওর গুণমুগ্ধ ছাত্রছাত্রী। এমনি‌তে ইয়ারকী ফাজলামি মারলেও এরকম সঙ্গী পেলে সিরিয়াস আলোচনাতেও সুমনের দারুণ উৎসাহ। কোনো বিষয়-ভিত্তিক আলোচনা‌য় নিজের জানাটুকু অন‍্যের কাছে সুষ্ঠুভাবে প্রকাশ করতে পারলে নিজের ধারণা আরো পরিষ্কার হয়। যা জানা নেই তা অন‍্যের কাছ থেকে জানা যায়। এভাবে‌‌ই জীবনে চলতে ফিরতে‌ও অনেক কিছু জানা যায়। শুধু জানার ইচ্ছা, বোঝার চেষ্টা, বিষয়ে‌র গভীরে গিয়ে ভাবনা চিন্তা করার আগ্ৰহটুকু থাকা চাই। চায়ের পর সিগারেট ছাড়া চলে না। ঈশুকে একটা সিগারেট বাড়িয়ে সুমন বলে, "দিদিমণি, নাউ ইউ ডিজার্ভ ইট"। ঈশু ওর সুন্দর মুখে মুক্তোর মতো দন্তশোভার ঝিলিক তুলে লাজুক হাসে। বিরল উপহার। একটু আগে শাহজাহান-মুমতাজ কিসসা বলার সময় আবেগতাড়িত হয়ে ওকে একটু উত্তেজিত দেখাচ্ছিল। এখন আবার স্বাভাবিক লাগছে।   সিগারেট‌টা ধরিয়ে ঈশু বলে, "চল না একটু পায়চারি ক‍রে আসা যাক। অনেকক্ষণ এক‌ জায়গায় বসে আছি।" চুনি‌ বলে, "ঈশু, শেষে একটু দিস, পুরো খাবো না। চা টা খুব ভালো বানিয়ে‌ছিলেন বলাইদা।"  নির্জন সন্ধ্যায় ফুটফুটে জোৎস্না‌য় ওরা ঝর্ণার দিকে হাঁটতে যায়। চাঁদ তখন পাহাড়ের রেখে ছাড়িয়ে সবে উঁকি দিয়েছে।
  • জনতার খেরোর খাতা...
    ভগবানবাবুর পুষ‍্যি - Krishnendu Talukdar | ভগবানবাবুর পুষ্যিভগবানবাবু পরম দয়ালু। প্রাণীহত্যা মহাপাপ তাই মাছ,মাংস, ডিম এমনকি গরুর কষ্ট হবে বলে দুধ টুকু ও খান না। গায়ে মশা বসলে উড়িয়ে দেন - মারেন না। প্রাণীহত্যা বন্ধ করতে পোস্টার ব্যানার ফেস্টুন হাতে তাঁকে প্রায়ই রাস্তায় দেখা যায়। করোনা কালে মাছের বাজারমুখী মানুষজনকে উনি অনেক বুঝিয়েছেন। কিন্ত কে শোনে কার কথা।এই রকম লোকের বাড়িতে বেড়াল ! আমিষগন্ধ বের হয়না এমন বাড়িতে বেড়ালের উপস্হিতি চমকে দেওয়ার মত। ভগবানবাবু না চমকালেও বেশ অবাক হলেন। দেখলেন একটা পাটকেল রঙের মেনি বেড়াল করুণ মুখে তাঁর দিকে তাকিয়ে মিউ মিউ করে চলেছে। বেড়ালটার বাচ্চা হবে খুব শিগগিরই  তা তার ফোলা পেট দেখলেই বোঝা যাচ্ছিল। খিদের চোটে বেড়ালটার সবুজ চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসছিল। বাড়িতে সেদিন গাওয়া ঘি এর লুচি হয়েছিল। ময়ান দেওয়া সেই ময়দা কিছুটা মাটিতে পড়ে গেছিলো। মজা দেখার জন্য সেটাই তুলে বেড়ালটাকে দিলেন আর আশ্চর্য্য হয়ে দেখলেন বেড়ালটা তা এক নিঃশ্বাসে খেয়ে নিল। এতটা তাড়াতাড়ি বেড়ালটা খেয়ে নিল যে এই আশ্চর্য্য ঘটনাটার ছবিও তোলা গেল না। মোবাইল নিয়ে এসে পরের বার যখন আবার ময়দার মণ্ড দেওয়া হল হতচ্ছাড়ি শুঁকেই চলে গেল। ঘটনাটা ওনাকে এতটাই ভাবালো যে উনি ফেসবুক পোস্ট দিলেন---বেড়ালেও মাছ ফেলে ময়দা খেতে শুরু করেছে। শুধু এই পেটরোগা বাঙালি জাতটাই মাছ মাংস খেয়ে খেয়ে উচ্ছন্নে গেছে।   কিন্তু বেড়ালকে কাশীবাসী দেখার স্বপ্ন ভেঙেগেল পর দিনই। পাড়া প্রতিবেশীরা শুনতে পেল ভগবানবাবু বেড়ালটা কে খুব বকাঝকা করছেন মুখে করে মাছের কাঁটা নিয়ে ওনার বাড়িতে ঢোকায়। তাড়া খেয়েও বেড়ালটা মাছ ছাড়লো না, একলাফে পাঁচিলে উঠে ভগবানবাবুর বাড়ি ছাড়লো। প্রতিদিনই উচ্ছিষ্ট নিরামিষ খাবার একটু শুঁকেই সে চলে যেত চিলেকোঠায়। চিলেকোঠার কেসটা বোঝা গেল সপ্তাহ  খানেক পর। যখন সেখান থেকে বেড়াল বাচ্চার চিৎকার শোনা গেল। একটা প্যাকিং বক্সে ভেগান খাবারের প্রচারমূলক বেশ কিছু ব্যানার রাখা ছিল। হতচ্ছাড়ী সেখানেই বাচ্চা পেড়েছে। একটা  সাদা, একটা পাটকেলে আর দুটো কালো। ব্যাপারটি ভগবানবাবুকে এতটাই বিরক্ত করলো যে রাতে দুঃস্বপ্নে দেখলেন যে গোটা বাড়ি বেড়ালে ভরে গেছে আর তারা মাছের কাঁটা, মাংসের হাড় জড়ো করছে তুলসী  মঞ্চের কাছে। এই স্বপ্নের ফল হল- বেড়াল আর ভগবানবাবুর দু’ দিন ব‍্যাপী লুকোচুরি খেলা। চিলেকোঠা থেকে তাড়া খেয়ে বেড়ালটা বাচ্চা সমেত রান্নাঘরে ঢোকে। সেখান থেকে তাড়া খেয়ে ঠাকুর ঘরে। একটা গোটা দিন তো গুদামঘরেই কাটিয়ে দিল। শেষ পর্যন্ত তাড়ার চোটে তিন তলার সিঁড়ির চাতালে বাচ্চাগুলোকে ফেলে দিয়েই বেড়ালটা পালালো। চোখ না ফোটা বাচ্চাগুলো ‘ভেগান ফুড’ লেখা একটা প‍্যাকিং বাক্সের মধ্যে থেকে ক্ষীণ স্বরে সারাদিন ধরে মা কে ডেকে যেতে থাকলো। ভগবানবাবুর কাছে লকডাউনের সেরা টাইমপাস হয়ে গেল ‘বিড়াল খেদা’। দিনের বেলা ভগবানবাবুর সঙ্গে চোরপুলিস খেলে রাতে ঠিক এক ফাঁকে সদ‍্য চোখ ফোটা বাচ্চাগুলোকে খাইয়ে যেতে লাগলো বেড়ালটা।         একদিন রাতে পেচ্ছাপ করতে ওঠে ব‍্যাপারটা আবিস্কার করলেন ভগবানবাবু। পরদিন সকাল থেকে বাড়িতে ঢোকার সব জানলা, ফাঁক ফোকর বন্ধ করার কাজ শুরু হল। কয়েকদিনের চেষ্টায় বেড়ালের নৈশ আগমনের রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হল। কিন্তু ভগবানবাবুর রাত্তিরের ঘুম উঠে গেল বেড়ালবাচ্চাদের চেল্লামেল্লিতে। সারাদিন ধরে খিদের চোটে তারা মা কে ডাকাডাকি করছে আর তিন তলার সিঁড়ির চাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছে।     কৃষ্ণের জীব তাঁর বাড়িতে অনাহারে মরলে লোক নিন্দা হবে ভেবে একটু সোয়াবীনের দুধ খেতে দিলেন ওগুলো কে। কিন্তু বাচ্চাগুলো তো চাটতেই শেখেনি। অবশ্য করোনার ভয়ে খেতে দিয়েই আর ধারে কাছে থাকেন নি উনি। পরদিন সকালে বিনোদের মা ছাদ ঝাঁট দিতে গিয়ে জানালো একটা বাচ্চা মরে কাঠ হয়ে পড়ে আছে। তার শরীর মুড়ে আছে লাল পিঁপড়ে তে। মরা বেড়াল ছানা ডাস্টবিনে ফেলার জন‍্য ফেলে দেওয়া কাগজের স্তূপ থেকে কাগজ কুড়োয় বিনোদের মা। নেগেটিভ খবর অপছন্দ বলে ইদানিং কাগজের বেশিরভাগটাই ওয়েস্ট পেপার বক্সে ফেলছেন ভগবানবাবু। “এক মাসে কর্মহীণ দেড় কোটি”, “অনাহারে মৃত তিনশো” ইত্যাদি খবর সমেত সাদা রঙের মৃত বেড়াল ছানাটা বাতিল খবর কাগজের কাফনে ডাস্টবিনে সমাধিস্হ হল।   পরদিন সকালে ছাদে ওঠার সময় ভগবানবাবু দেখলেন তিনতলার চাতাল থেকে সিঁড়িতে লাফ মারছে কালো বাচ্চাটা। যেটা সবথেকে মোটাসোটা ছিল চোখও ফুটেছিল সবথেকে আগে। লাফালো বটে বাচ্চাটা কিন্তু লাফানোর কৌশল না জানায় মাথাটা জোরের সঙ্গে ঠুকলো সিঁড়ির কোণে। আঘাতটা এতটাই জোরে ছিল যে অজ্ঞান হবার আগে সেটা পায়খানা করে ফেলল। ময়লা সাফ করতে হবে ভেবে বিরক্ত হয়ে ভগবানবাবুর চলে আসার আগে পর্যন্ত সেটা বেঁচে ছিল। রাতে কাজ করতে এসে বিনোদের মা আর একটা বাতিল খবরের কাগজে মুড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসলো বাচ্চাটা কে। নিম্নচাপের গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির ছিটে পড়ছিল সেই মোড়ানো কাগজে থাকা একটা বাচ্চা মেয়ের ছবিতে। তিন দিন ধরে দেড়শো কিলোমিটার হেঁটে নিজের গ্রামে ফিরতে চাওয়া যে বাচ্চাটা ডিহাইড্রেশনে ছবি হয়ে গিয়েছিল।  বিনোদের মা বুঝতে পারছিল – বাকি বাচ্চাদের পরিণতি ও একই হবে। তাই সেগুলো কে দোতলার সিঁড়ির নীচে রেখে দিয়ে আসলো। পরদিন বাড়ি থেকে দুধ এনে তুলোর সলতে করে বাচ্চাগুলোকে খাওয়াতে আস্তে আস্তে সেগুলো নড়াচড়ার ক্ষমতা ফিরে পেল। এভাবে তিন দিন যেতে না যেতেই সেগুলো সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা শুরু করলো। উপরের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পাটকেলে ছানাটা আগে পিছনের পা নামিয়ে পরে বাকি শরীর নামায়। রোগা কালো ছানাটা তা করতে পারে না বলে পাটকেলেটা তাকে গুঁতিয়ে নামায়। ভগবানবাবুর দয়ার শরীর। মা আর মাতৃভূমির ডাকে এগিয়ে যাওয়া কারুর রাস্তা সুগম করাই তো তাঁর কাজ। তাই সদর দরজা খুলে ছাদে জল দেওয়ার পাইপে করে জল ছেড়ে বাচ্চাগুলোকে তাড়াতে থাকলেন। ব্লিচিং পাওডারটা ফুরিয়ে গেছিলো বলে জীবণুমুক্তির খেলাটা ঠিক জমলো না বটে তবে বাচ্চাগুলো সদর দরজার চৌকাঠ পর্যন্ত পৌঁছে গেল। জলের তোড়ে আর পাটকেলেটার গুঁতোয় কালো বাচ্চাটা রাস্তায় গড়াগড়ি দিতে না দিতেই চারটে টহলদার এনফিল্ড বুলেট তাকে পরপর পিষে দিয়ে গেল। পাটকেলেটা ভয় পেয়ে মা কে ডাকতে শুরু করতেই মেনি বেড়ালটা কোথা থেকে এসে তাকে মুখে করে তুলে নিয়ে আবার ভগবানবাবুর বাড়িতে অনুপ্রবেশ ঘটালো। “শালা উইপোকা”- বলে একটা ঝুলঝাড়া হাতে বেড়ালটার পিছনে ছুটলেন তিনি। সিঁড়ি বেয়ে বেড়ালটা ছাদে উঠলো। ভগবানবাবুও উঠলেন। ঝুলঝাড়ার ছোঁচা খেয়ে পাশের বাড়ির কার্নিশ লক্ষ‍্য করে একটা মরিয়া ঝাঁপ দিল বেড়ালটা। মুখে বাচ্চা থাকায় লাফটা ঠিক মত হল না। তিনতলা থেকে রাস্তায় পড়লো ঘুরে গিয়ে। ভগবানবাবু ধীরে সুস্হে নীচে এসে বসার ঘরের জানলা খুলে দেখলেন মেনি বেড়ালটা মাঝ রাস্তায় অচেতন হয়ে পড়ে আছে আর পাটকেলে ছানাটা তার দুধ খাবে বলে তাকে ঢোঁসাচ্ছে। পুলিশের কনভয় আসছে দেখে তিনি জানলাটা বন্ধ করে দিলেন তাড়াতাড়ি। ভগবানবাবু আইন মেনে চলা শান্তিপ্রিয় মানুষ। হিংসা রক্তারক্তি  একদম দেখতে পারেন না। --------------------------------------কৃষ্ণেন্দু তালুকদার
    বকবকস  - Falguni Ghosh | গ্রীষ্মের উদাসী দুপুর মানুষকে তো খ্যাপাটে করেই ছাড়ে। চাঁদিফাটা রোদ্দুর আর বিনবিনিয়ে ঘামে তেলে মাখামাখি হয়ে প্রত্যেক মানুষের তখন বেশ রসালো অবস্থা(রস চ্যাটচ্যাটে)। কিন্তু যাই হোক প্রাণটা তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে! তাই গলায় গ্যালন গ্যালন ঠান্ডা জল আর বরফ ঢুকতে থাকে বিচিত্র রঙ, গন্ধ আর শোভায় পানীয়ের বোতলের মাধ্যমে আর আছে প্রাণজুড়ানো আইসক্রিম, কুলফি। তবে এখন এগুলো যতই সহজলভ্য হোক না, আমার কিশোরীবেলায় বেশ দুর্লভ ছিল কিছুটা প্রযুক্তিগত আর বাকিটা পিতৃগত কারণে। তাছাড়া তখন জীবনধারণের ধারণাটাও ছিল অন্যমাপের।  গ্রামে মাটির দোতলা বাড়ির দাওয়ায় বাঁধানো মেঝের টেম্পারেচারে ভিজে গামছা কাঁধে ফেলে ‘স্লীপ’ মোডে দিব্যি দিবানিদ্রা, রাত্রিনিদ্রার সুখভোগ চলত। একুশ ডিগ্রীতে হাত-পা কনকন, সতেরো ডিগ্রীতে গলা বসে যাওয়া বা এয়ারকন্ডিশন্ড ঘরে ঠান্ডা-গরমে শরীর খারাপ হওয়ার দুর্ভাবনা ছাড়াই দিন গড়িয়ে যেত।মনে পড়ে চৈত্রের গরমের সাথে সাথে পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি করতে আসত কলসী, মাটির জালা। গ্রামের হাটেও তা দু- পাঁচ টাকায় কেনাবেচা হত। মাটির উনুনের মাথার মত তিনটে ইটের মাথা বানিয়ে ভিতরে বালি দিয়ে উপরে বসানো থাকত জালা বা কলসি। উফ! কি দাঁত কনকনে ঠান্ডা জল! কিন্তু গলা ধরে যাওয়ার কোনো ভয় নেই।  সাথে ছিল কাঁচা আমের টক আর ঘরে পাতা দই। এর পাশাপাশি পান্তা বা আমানি ভাত( একদিনের বাসি ভাতকে জল দিয়ে /জল পাল্টে রেখে হালকা টকভাব এলে, তবে যেন গেঁজিয়ে না যায়)—             “পান্তা ভাত পাতে ফেলি              তাতে নুন তেল দলি              সাথে পোস্তবাঁটা ও পেঁয়াজ              আহারে লঙ্কার কি ঝাঁঝ!—( কবিগুরু যেন আমায় ক্ষমা করেন)এসবের সঙ্গে সঙ্গত করত তালশাঁস, নুন-গোলমরিচ মাখা জাম, এর-তার গাছ বা গ্রামের বাগানের রসালো মিষ্টি আম। তাই তখনকার দিনে শুধু শরীর নয়, মনটাও বেশ রসালো হয়ে থাকত (এই রস চ্যাটচ্যাটে নয়, টইটম্বুর)।এহেন আমাদের ঢিলেঢালা কিশোরীবেলায় জার্মান থেকে এক সাহেবের উদয় হয়েছিল। তা এখনকার মত দু-চারবার বিদেশ ঘুরে বিদেশীদের সঙ্গে সেলফি তুলে পোস্টানো বা বন্ধু করার মধ্যে যে স্ট্যাটাস উত্তোলনের ব্যাপারটি রয়েছে সেটা তখন দূর অস্ত। উল্টে চোখ গোল্লা গোল্লা করে কৌতুহল টাই ছিল প্রধান বিষয় ও বিবেচ্য। তাছাড়া ছ’ফুটের উপর লম্বা, সুঠাম, সাদা, সোনালি চুলে, সোনা বাঁধানো দাঁতের হাসিতে যে জৌলুস ছিটকাতো তা আমাদের দুবেলা বেঁটেখাটো, নাদুস-নুদুস, কালোকেলো দেখা শিশু কিশোর চোখে অপার বিস্ময়। সেই সাহেবটি অবশ্য নিজের কাজেই এসেছিলেন — ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশের সংস্কৃতির উপর গবেষণার কাজে।এলেন তো এলেন, এক্কেবারে গন্ডগ্রামেই এলেন। অত জার্মান ঘেঁষা ইড়িং বিড়িং ইংরাজি কে বোঝে বাপু! সুতরাং তিনি বাধ্য হলেন বর্ণপরিচয়ে হাতে খড়ি করতে। আর খুব ধৈর্য ও অধ্যবসায় সহকারে “আমি এখন ওয়ানে আছি” বলে প্রথম শ্রেণির পাঠ শুরু করলেন। এই ব্যাপারে তার সহায়তায় ছিলেন গ্রামের স্কুলের গুটিকয় শিক্ষক (আমার বাবা সেই তালিকাভুক্ত আর শিক্ষকের সন্তান হওয়ার সুবাদে আমি ও আমার ভাই)। পড়াশোনা তো চলছে তার পাশাপাশি সাহেবের উদরপূর্তিও ভালোই চলত গ্রামের বিশিষ্ট মানুষজনের বাড়ি বাড়ি। একদিন আমাদের বাড়িতে সাহেবের ডাক পড়ল। পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে মা সলজ্জ ভঙ্গীমায় পরিবেশন করলেন। কিন্তু খাবারের একটি পদে এসে সাহেবের চক্ষু স্থির — “হোয়াট ইস দিস?”-- “নাও ঠ্যালা! আর খাওয়াবে আমড়ার টক?” – বাবার গলায় বিরক্তি।নাছোড় সাহেব না বুঝে ছাড়বে না! এবার বোঝাও আমড়ার সঙ্গে আমের সম্পর্ক! আমড়া কি আমের ছোট ভাই! অবশেষে স্বাদের বর্ণনা দিয়ে কাঁচা একটি আমড়া প্রদর্শন করিয়ে ‘আমড়ার টক’ পদটি সাহেবের উপলব্ধজাত হল।  সন্তুষ্ট চিত্তে সানন্দে আহার পর্ব সমাধা করে সাহেব নিম্নরূপ মেনু তালিকাটি অন্য জায়গায় গল্প করে বেড়ালেন—   ১। রাইস   ২। স্পিনাচ   ৩। পালসেস   ৪। ফিশ   ৫। চিকেন   ৬। কার্ড   ৭। সুইটঅ্যান্ড ডেলিসিয়াস রাউন্ড রাউন্ড আম-রার ঝোল।
    হেদুয়ার ধারে - ১২১  - Anjan Banerjee | অঞ্জলি ভেবেছিল শিবপ্রসাদের কাছে গিয়ে রাত্রির ব্যাপার স্যাপার ফাঁস করবে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনেক ভেবেচিন্তে ব্যাপারটা থেকে পিছিয়ে আসল । ভাবল, ওসব গুন্ডা টুন্ডার ব্যাপার ... কখন কি করে বসে ... কাজ কি ওসব ঝঞ্ঝাটে গিয়ে ...  নিজেরাই বুঝবে মজা ফাটা বাঁশে পড়লে ...  মরুকগে যাক আপদগুলো ... আসলে শিবুদার জন্য খারাপ লাগে তাই.... মেয়েটা তো হয়েছে একেবারে সবজান্তা মাতব্বর ... উচ্ছন্নে যেতে আর কিছু বাকি আছে  ... এদিকে দিন তো আর থেমে থাকে না । ছয় ঋতুর চাকা ঠিক নিয়ম মেনে ঘুরে চলেছে । বেশির ভাগেরই মত শীত গ্রীষ্ম আর বর্ষা ছাড়া আর কোন ঋতুর কোন অস্তিত্ব নেই।  শরত,  হেমন্ত ,বসন্ত এসবের কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই ।  শুধুই  মনগড়া কল্পনা । রাত্রি কিন্তু প্রত্যেকটি ঋতুর নিজস্ব আবেশ তার অণু পরমাণু দিয়ে অনুভব করতে পারে । ঋতুগুলোর আগমন ও নির্গমনের চলাচল তরঙ্গ তার শিরায় শিরায় অনুপম সব প্রতিধ্বনির টংকার বাজিয়ে যায় ... শরত, হেমন্ত বা বসন্তদিনের  ভিন্ন ভিন্ন রাগরাগিনী অনুভূতির  খোলা দরজা  দিয়ে আসে আর যায় নানা সুরেলা স্পন্দন তুলে । সে যাই হোক, বাঁধা নিয়মে শীত ,বসন্ত এল আর গেল । এসে গেল দগ্ধ , তাপিত বৈশাখী দিন । মাথার ওপরে বনবন করে পাখা ঘুরছে অষ্টপ্রহর ।  তবু স্বস্তি নেই  । বটতলা থানায় নিজের চেয়ারে বসে বসে হাতপাখা টেনে যাচ্ছেন কালীকিঙ্করবাবু।একপশলা বৃষ্টি না হলে স্বস্তি নেই  । প্রকাশ ঘড়াই দুটো কনস্টেবলকে নিয়ে ইন্সপেকশনে বেরিয়েছে কাছাকাছি এক জায়গায় । ফিরে এসে কি রিপোর্ট দেয় সেই অপেক্ষায় বসে আছেন কালীবাবু । ভর দুপুর এখন । দুটো বাজতে চলল । সাগর মন্ডল এর মধ্যে দুদিন এসেছিল । রঙমহলের সামনে ওই ঝামেলার ব্যাপারটা তিনি আগেই শুনেছেন । সাগরের কাজ সাগর করেছে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই । তবে স্বরূপ খাঁড়া মোটেই সুবিধের ক্যারেকটার নয় । সে অপমান হজম করার পাত্র নয় । সামনের বার ছ নম্বর ওয়ার্ডে  মিউনিসিপ্যালিটি ইলেকশানের টিকিট  পাবে বলে শোনা যাচ্ছে ।   এখন সাগরের সঙ্গে রাত্রির জীবনও ভালভাবেই জড়িয়ে গেছে ।  দুজনকেই সাবধানে থাকতে হবে । তিনি যতদিন আছেন নিশ্চয়ই প্রোটেকশান দেবেন । কিন্তু সে তো এ এরিয়ায় । অন্য কোথাও কিছু হলে তিনি সামলাবেন কি করে । নিখিল স্যারের সঙ্গে কথা বলে কালীবাবু খুব উজ্জীবিত হয়েছেন । তিনি দেশ বিদেশের প্রচুর খবর রাখেন । সে সব বলতে লাগলেন । মোদ্দা কথা তিনি এই সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন চান । সেটা কিভাবে সম্ভব, খুব সম্ভবত সে ব্যাপারে স্যার বেশ ধোঁয়াশায় আছেন । ফরাসি বিপ্লব থেকে রাশিয়ার বলশেভিক রিভলিউশান এবং তারপর হালে চীনে মাও সে তুংয়ের বিপ্লব , এইসব ব্যাপারে নানা কথা  বললেন । কিন্তু গণবিপ্লবের পরিণতির সুফল এবং কুফল নিয়ে তিনি দোনামোনায় আছেন এটা বোঝা গেল । কিন্তু একটা ব্যাপারে তিনি স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এ সমাজব্যবস্থা এবং সংসদীয় সংবিধানের বর্তমান ধারাগুলো এই চরম বৈষম্যমূলক অর্থনৈতিক কাঠামোয় অচল, যেখানে  টাকা দিয়ে সবকিছু কেনা যায় । আর্থিক বৈষম্য থেকে শিক্ষাব্যবস্থাতেও বিশাল বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে । সেটাই জাতীয় সর্বনাশের মূল । বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর কোমর ভেঙে দেওয়া হচ্ছে যাতে তারা চিরকাল ক্ষমতাভোগীদের দাসানুদাস হয়ে বেঁচে থাকে । শিক্ষা বঞ্চিত মানুষ মানবেতর প্রাণীদের সমান । তাদের সুবিধামতো পোষ মানানো যায় । সুতরাং এরকম একটা সামাজিক কাঠামোয় ভোটদানের মতো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া একটা সম্পূর্ণভাবে অকার্যকরী ব্যবস্থা ।  এ অবস্থার পরিবর্তন ঠিক কোন পদ্ধতিতে করা সম্ভব তার কোন স্পষ্ট রূপরেখা তিনি দিতে পারলেন না , তবে পরিবর্তন যে জরুরী সে ব্যাপারে তিনি তার সিদ্ধান্তে অবিচল এবং তার ধারণা সেটা অহিংস পথে সম্ভব নয় । এই  রোদজ্বলা দুপুরে জানলা দিয়ে প্রায় জনহীন রাস্তার দিকে তাকিয়ে কালীবাবু নিখিল ব্যানার্জীর কথাগুলো ভাবতে লাগলেন । ভাবতে ভাবতে তার মনে পাক দিয়ে উঠল একটা ভাবনা । ওসব বিপ্লব বিদ্রোহ তো পরের কথা । নিখিল স্যার যে  সংগঠনের কথা বলছিলেন সেটা যদি গড়ে ফেলা যায় তাহলে তো সাগর এবং রাত্রির অন্তত একটা সুরক্ষার ব্যবস্থা হতে পারে । সাগরের দলবলকেও এর সঙ্গে জুড়ে নেওয়া যেতে পারে । তা হলে সুরক্ষা বলয়টা আরও প্রসারিত হবে । কালীবাবুর মনে হল , ঠিক ঠিক ঠিক ... এটা একটা  গ্রহণযোগ্য  উপায় হতে পারে। তিনি ঠিক করলেন, আজ সন্ধ্যার দিকে তিনি নিখিল স্যারের কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে কথাবার্তা বলবেন । রাত প্রায় নটার সময় সঞ্চারী সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠছিল । এক বান্ধবীর বাড়ি গিয়ে ফিরতে দেরি হয়ে গেল । মাকে বলে গিয়েছিল অবশ্য যে ফিরতে দেরি হবে । অমল এই সময়ে নীচে নামছিল বাবার ঘুমের ওষুধ কিনতে যাবার জন্য ।  সঞ্চারীর মুখোমুখি হলেই কি জানি কেন তার মনে একটা গোপন আশার ফুল পাপড়ি মেলে । যদি কোন খবর মেলে একজনের .... এখনও সে সতৃষ্ণ নয়নে সঞ্চারীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল , ' কিরে .... এত দেরি হল ? ' ----- ' ওই এক বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম ... তার অসুস্থ মাকে দেখতে .... হ্যারিসন রোডে ... একটু দেরি হয়ে গেল ... ' ---- ' অ ... একাই গিয়েছিলি ? ' না বলে থাকতে পারল না অমল । ---- ' না না ... রাত্রি গিয়েছিল । ওই যে ... এখানে এসেছে দু একবার ... তোর মনে নেই বোধহয় ... তোর গীটার শুনল ... ' অমল বাক্যহারা হয়ে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে রইল । ভাবল, '  কি ভালই হত মনে না থাকলে ... ' ----- ' কি এত ভাবছিস ? যাই আমি ... মা বসে আছে ...'অমলের আপ্রাণ নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও কথাটা তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল --- ' ও আর আসবে না, না ? ' সঞ্চারী ওপরে উঠে যাচ্ছিল । অমলের কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেল । ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল, ' কেন ... আসবে না কেন ? এখন খুব ব্যস্ত আছে পার্সোনাল কিছু ইস্যু নিয়ে । একটু ফাঁকা হলেই আসবে ... সেদিন বলছিল ... ' অমলের বুকের ভিতর হঠাৎ দুটো চড়ুই পাখি উড়ে এসে নাচানাচি শুরু করল । সে আপনমনে বিড়বিড় করল, ' হ্যাঁ ... তা তো ঠিক কথা ... পার্সোনাল ইস্যু তো কারো থাকতেই পারে ... এর জন্যই আসতে পারছে না হয়ত ... সব কিছু তো নিজের ইচ্ছেয় হয় না ... '   সঞ্চারীর দেরি হয়ে যাচ্ছে । সে 'আমি আসছি ' বলে তরতর করে ওপরে উঠে গেল ।  অমল গেল বাবার জন্য ওষুধ কিনতে ।     রাত প্রায় এগারোটার সময়ে তার অন্ধকার ঘরে খোলা জানলার ধারে হাওয়ায়িন গীটারের ধ্বনিপুঞ্জ নিবিড় সুরে গুঞ্জরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়তে লাগল রামধন মিত্র লেনে বাতাসে ।.... আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ ... খেলে  যায় রৌদ্রছায়া বর্ষা আসে বসন্ত ...... কারা ওই  সমুখ দিয়ে আসে যায় খবর নিয়ে খুশি রই আপনমনে বাতাস বহে সুমন্দ.... সারাদিন আঁখি মেলে দুয়ারে রব একা ....শুভক্ষণ হঠাৎ এলে তখনই পাব দেখা ....ততক্ষণ ক্ষণে ক্ষণে হাসি গাই আপনমনে...ততক্ষণ রহি রহি ভেসে আসে সুগন্ধ ....       চারদিন পরে বিকেলবেলায় চাচার হোটেল যখন ম  ম করছে চপ কাটলেট ভাজাভুজির গন্ধে সাগর সেখানে গিয়ে হাজির হল । ঢুকতেই অভয়চরণের সঙ্গে দেখা । কাউন্টারে দাঁড়িয়ে খদ্দেরের হিসেব মেটাচ্ছিল মালিক জগুবাবুর কাছে । জগুবাবু সাগরকে বিলক্ষণ চেনেন । তিনি শান্তিপ্রিয় মানুষ । সাগরের দিকে তাকিয়ে একগাল হাসলেন । অমায়িক ভঙ্গীতে বললেন, ' ভাল তো ? 'তিনি ব্যাপারটা আন্দাজ করে অভয়ের দিকে ইশারা করে বললেন, ' বাইরে গিয়ে কথা বল ... '       বাইরে এসে সাগর বলল, ' কি খবর ... কোন উত্তর এসেছে ? '----- ' না এখনও কিছু আসেনি । একটু সময় তো  লাগবেই । সোজা লোক তো নয় তারা ... অনেক প্যাঁচ কষবে এই নিয়ে ... খুব ভয়ে ভয়ে থাকি দাদা ... কখন কি করে বসে ... '----- ' কিসের ভয় ? বলেছি তো আনকা কিছু নজরে  পড়লেই পটলের দোকানে খবর দিতে ... ' ----- ' হ্যাঁ, সে তো ঠিক আছে । কিন্তু রাতবিরেতে কিছু আকাম করে বসলে ... 'সাগর হেসে ফেলল । ----- ' আ ... রে,  না না ... অত হিম্মত হবে না । অত দূর থেকে এই এলাকায় এসে যদি কিছু করার ক্ষমতা থাকে করে নিক ... দেখতে চাই আমি ... করুক দেখি । তোমরা শুধু রাত বারোটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত কোনমতেই দরজা খুলবে না । ভোর পাঁচটা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত আমার ছেলেদের কেউ না কেউ ওখানে ঘুরে ফিরে নজর রাখবে । চিন্তা কোর না । আমার ইচ্ছে শালাদের হাতেনাতে ধরা । দেখি কি হয় ... ঠিক আছে , তুমি এখন কাজ কর গিয়ে ... আমি চললাম ... তোমাদের ম্যাডাম তোমাদের খোঁজ করতে বলল ... তাই  এলাম আর কি ... ' অভয়চরণ পাল আপ্লুত ভঙ্গীতে বুকের কাছে দুহাত জড়ো করে বলল, ' মা জননীকে আমার প্রণাম দেবেন দাদা ... '  সাগর গম্ভীরমুখে বলল, ' আচ্ছা দেব ... '     ( চলবে )********************************************
  • ভাট...
    commentArindam Basu | @&/, ২:২১এর ছবি যাকে বলে কোয়ান্টাম স্বপ্ন! 
    :-)
    comment&/ | সমান
    comment&/ | সেই যে গল্প ছিল না যে এক শিল্পী একটা কাগজে আঁকত আর আরেকটা সমাজ সাইজের সমান কোয়ালিটির কাগজে তুলির রঙ মুছতো? ভুল করে সেই রঙমোছার কাগজটাই প্যাক করে পাঠিয়ে দিয়েছিল কোন একটা ছবি কনটেস্টে? ঃ-)
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত