শেষকালে সঞ্জীব ত্রিপাঠিকে রেফার করলেন? :-)
এক দেশ এক আইনের প্রবক্তারা আসামে এক আইন আর বাংলায় আরেক আইন চালু করতে চাইছেন - এটাই সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার। আসলে ইস্যুটাকে জিইয়ে রাখা। যেমন ৩৭০বিলোপ হলেও তার উপধারাগুলোকে বিলোপ করা হয়নি।
ধাপে ধাপে বুঝুন।
১. ক্যা আনতে হল কেন?
আসামে এনার্সির ফলে দেখা গেল ১৯ লাখ অ-নাগরিকের মধ্যে ১২ লাখ হিন্দু। বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে ধস নামল। বাংলার তিনটে উপনির্বাচনে তারা হারল। অবস্থা বেগতিক বুঝে আনা হল ক্যা। মূলত মতুয়া ও নমঃশূদ্র ভোটারদের বিজেপির প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে (বাংলায়) এবং হিন্দুদের কোনও সমস্যা হবে না এনার্সিতে (দেশে) সেটা বোঝাতে।
কিন্তু ক্যা-তেও গণ্ডগোল। কারণ প্রথমত, তাঁদের স্বীকার করতে হবে যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় হিংসার কারণে তারা এই দেশে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করেছেন এবং তাঁরা ভারতের নাগরিকত্ব চান। এক্ষেত্রে তাঁদের সামনে সবচেয়ে বড়ো যে সমস্যা দেখা দেবে সেটা হল, এই নতুন আইনের এক খোঁচায় তাঁরা ‘নাগরিক’ থেকে ‘শরণার্থী’ হবেন।
দ্বিতীয়ত, তাঁরা যে ধর্মীয় অত্যাচারের কারণেই এ দেশে আসতে বাধ্য হয়েছেন তার প্রমাণও ‘আবেদন’-এর সঙ্গে দাখিল করতে হবে। ফলে এতদিন যে সহায়-সম্বলহীন মানুষগুলো ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড ইত্যাদি কাগজের সাহায্যে ন্যূনতম নাগরিক অধিকারটুকু পাচ্ছিলেন, এই বারে তাঁদের সেই সুযোগও যাবে। নিজভূমে পরবাসী হবেন তাঁরা, প্রত্যেকে রাতারাতি পরিগণিত হবেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে।
ফলে ক্যা-তে কারা আবেদন করবেন সেটাই স্পষ্ট নয় কারণ সাধ করে কেউ নিজের পায়ে কুড়ুল মারতে চাইবেন না।
২. এনপিআর - এখানে অতিরিক্ত প্রশ্ন হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বাবা-মায়ের জন্মস্থানের উল্লেখ। যাঁরা তা উল্লেখ করবেন না, তাঁরা সন্দেহভাজনদের তালিকায় পড়বেন। যাঁরা জন্মস্থান হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের উল্লেখ করবেন, তাঁরাও সন্দেহভাজনদের তালিকায় পড়বেন।
৩. এই সন্দেহভাজনদের জন্য এনার্সি যাতে করে দেশটাকে অনুপ্রবেশকারীমুক্ত নয়, মুসলমানমুক্ত করা যায়।
আমার বিশ্বাস কোনওটাই হবে না। হয় সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খাবে নতুবা ২৪ সালের লোকসভা ভোটের মুখ্য ইস্যু হবে এই ধর্মীয় মেরুকরণ। ততদিন সরকার তার যাবতীয় অপদার্থতা এর আড়ালে ঢাকবে।