চপার প্যারেন্টিং ঃ-)
আর প্রতিটি যুগের নিজস্ব কিছু ইভিল থাকে। আমাদের আগের যুগে রাজনীতি সমাজ সবই ছিলো বাইনারির। বাড়িতেও তাই। মারধর বা লাই দেওয়া তার বহিপ্রকাশ মাত্র।
এখন যেটা হয়, চূড়ান্ত হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং, বাচ্চাদের একটা বাবল এর মধ্যে রেখে বড় করা সেটাও আধুনিক রাজনীতি ও সমাজের এক্সটেনশন। বাপ মায়েরাও বাবল এ। বাচ্চারা তার সাবসেট।
একজনের কাছে শুনেছিলাম, 'আরে আমাকে মারধোর করলে প্রথম সুযোগেই পালিয়ে গিয়ে ডাকাত গুন্ডা মাফিয়া হয়ে যেতাম, তারপরে দলেবলে ফিরে এসে আপদগুলোর মুন্ডু ছিঁড়ে নিতাম, তারা পরমাত্মীয় হলেও কেয়ার করতাম না।"
আমার বদমাইশি নিয়ে একটা প্রচ্ছন্ন গর্ববোধ ছিল। কিন্তু আটোজ একেবারে দায়ীত্ব নিয়ে আমার অহংকারের বেলুনে পিন ফুটিয়ে দিলেন :-)
আর এই শাসন অনেক ক্ষেত্রেই ভালোর জন্য না, দুর্বলের উপরে নিজের পাওয়ার এক্সারসাইজ। যেখানে উল্টে ঘা খাবার সম্ভাবনা, সেখানে কিন্তু এই বীরেরা ল্যাজ গুটিয়ে ক্যাও ক্যাও।
সবাই দাস হয়না। অনেকে মার খেতে খেতে প্রভু হয়, পাল্টা শাসন করতে শেখে। মারধর আসলে একটা পাওয়ার বাইনারির দিকে ঠেলে দেয়।
না না আমার স্কুলিং শান্তিনিকেতনে নয় তো। আর শান্তিনিকেতনের স্কুল সেকশনে মারধোর বোধ হয় না কোনকালেই। আমি শান্তিনিকেতনে গেছি বড় হয়ে।
ক্লাস ফাইভের একটা বাচ্চাকে মেরে আধমরা করে দিয়ে ক্লাসশুদ্ধ বাচ্চাকে ভয় পাইয়ে দিয়ে তারপরে ক্লাসে গল্প বলছে---এই লোককে কোনো অর্থেই "খারাপ না" বলতে পারছি না। ভাবা যায়? বাচ্চাটা ওভাবে পড়ে আছে, অন্যরা গল্প শুনছে, সেই লোক নির্বিকারে গল্প বলছে? একে তো সেইদিনই থানা হাজতে নিয়ে আড়ং ধোলাই দেওয়া দরকার ছিল।
অতিরিক্ত শাসনে ব্যক্তিত্ব ঠিক গড়ে ওঠে না। একটা দাসসুলভ মেন্টালিটি তৈরি হয় যেটা প্রফেশনাল লাইফে একটা নেগেটিভ দিক বলেই দেখা হয়।
স্যান্ডি, আপনার হল শান্তিনিকেতনী দুষ্টুমি। "না না কুমু, গরুকে কিছু বলিস নে, চাদর খেতে ইচ্ছে করছে খাক না", এই টাইপের। ঃ-)
এই সামগ্রিক পরিবর্তনটার ব্যাপারেই বলতে চাই যে এটাই একটা আশার কথা। নইলে "মহাস্থবির জাতক"এ যেভাবে অমানুষিক মারধোরের কাহিনি বাড়িতে ও স্কুলে হচ্ছে এমন পড়ি, সেই জিনিস এই অপেক্ষাকৃত সভ্যতর যুগে অনেকটাই অপসৃয়মান। আর ঐ মারকুটে লোকটির ছেলেমেয়েরা হয়তো নিজ নিজ চরিত্রগত চেষ্টাতেই সাফল্য পেয়েছে, বাপের মারধোর ছাড়াই সেটা হতে পারত। আবার হয়তো নাও হতে পারত। হয়তো বাপের মার খেয়েই "মানুষ" হয়েছে। কিছুই বলা যায় না।
মানুষ বাংলায় বাঁদর হবে আর ইংরেজিতে হোমো। নইলে শাস্ত্র মিথ্যে হয়ে যায় :)
আচ্ছা আমি আমার যে বাঁদরামি বা বিটলেমির কথা বললাম সেগুলো কি আদৌ পাতে দেওয়ার যোগ্য?
আমি যার কথা বললাম ওঁর ছেলে মেয়ে ছিল - স্যার যখন মারা যান তখন ওরা স্কুলে, কেউ মাধ্যমিকের গণ্ডী পেরোয়নি - বাড়িতে আর কোন রোজগেরে ছিল না। ওই অবস্থা থেকে টিউশনিপত্র করে শুধু মেধা, অধ্যবসায়, ডিসিপ্লিনের জোরে সবাই সাফল্য বলতে সোজা কথায় যা বোঝায় তার শিখরে উঠেছে। বাড়িতেও উনি খুব করুণার্দ্র পিতা ছিলেন না:)। কিন্তু ছেলেমেয়েরা তাঁদের স্থির লক্ষ্যের জন্যে বাবার ট্রেনিংকে ধন্যবাদ দিত।
মারপিট ভয়ানক খারাপ, কিন্তু দেশকাল রীতি ওসবের বিচারও করা ভাল। পেটাতেন বলে ওঁরা খারাপ লোক তা ঠিক না। আজকের দিনে কেউ পেটালে তাকে খারাপ বলবো কারন এখন ওই সচেতনতা কাম্য।
না পেটালেই যে ভালো হয় তাও না, আমি বাড়ি স্কুল সর্বত্র কোন অজ্ঞাত কারনে অবাধ আস্কারা পেয়ে নিরতিশয় বাঁদর হয়েছিলাম। একটু পেটালে হয়তো মন্দ হতো না:)
অবশ্য তাই বলে নিজের সন্তানকে শাসন তর্জন করি তা না, বাঁদর হলে হবে কী আর করা ওই ভেবে পাশ ফিরে থাকি।
পিতৃতান্ত্রিক নির্দেশ সেইরকমই। যাবে কোথা? সবাই প্রজা মাত্র। ছেলেরাও। মেয়েরাও। সবাই চলেছে তার নির্দেশে। ঃ-)
ঐ বয়সে একটু আধটু এগুলো না করলে হাত পা সুড়সুড় করত :-)
স্যান্ডি, তাহলে তো একরকম আপনার ঐচ্ছিক প্রহারগ্রহণ বলা যায়। কারণ যেখানে যেখানে ভালোমানুষ সেখানে সেখানে প্রহার নেই, যেখানে যেখানে বদস্মাইশি সেখানে সেখানে প্রহার। একেবারে খাপে খাপ। ঃ-)
না বাড়িতে ঐ বয়সে খুব একটা খাপ খুলতাম না। আরো ছোট বেলায় বাড়িতেও ডোজ পড়েছে। বাবা কড়া মানুষ ছিলেন, কিন্তু মারতেন ঐ কালে ভদ্রে। আর খেলাধুলার ব্যাপারে চরম উৎসাহ আর প্রশ্রয় দিতেন বলে এসব বাড়িতে করার কোনো তাগিদ অনুভব করতাম না। মায়ের কাছে বরং ক্লাস নাইন পর্যন্ত খেয়েছি।
এইসব মারকুটে লোকেরা নিজের বাড়িতে নিজের ছেলেমেয়ের উপরে কেমন ব্যবহার করে কেজানে!
হ্যঁ উনি বিবাহিত এবং এক কন্যার পিতা। ৩-৪ বছর আগে বোলপুর স্টেশনে দেখা হয়েছিল। নাম বলতেই চিনে গেলেন।
:|:, ছোট্টো প্রেম কত্তে গিয়ে হইলেও হইতে পারিত শ্বশুরের চরম ধাওয়া খেয়ে এক ভদ্রলোক লেখক হয়ে গেলেন, যা লেখেন সবেতেই ঐ হহপা শ্বশুর থাকে! তার মেয়েটি হয় মারা যায় নয় পাগল হয়ে যায় আর তিনি হহপা জামাইয়ের কাছে এসে অনুতাপ করেন। সমস্ত কাহিনিতে এই প্যাটার্ণ!
স্যান্ডি, বাড়িতে পিটানি খেতেন না বাপের হাতে? নাকি বাড়িতে শান্ত থাকতেন?
এটা ক্লাস সিক্সের গল্প। ঐ লাইব্রেরিয়ানের ক্লাসে গল্পের বই ডিস্ট্রিবিউশন হচ্ছে আর লাইব্রেরিয়ান স্যর লগবুকে আমাদের নাম এন্ট্রি করছেন একে একে। আমাদের সুখে থাকতে ভূতে কিলায়। আমরা বেশ কয়েকজন মুখ না খুলে গলার ভিতর থেকে এক বিচিত্র আওয়াজ করতে শুরু করলাম যেটা 'বাঘ ডাকা' নামে পরিচিত ছিল। ক্লাসরুমটায় ভাল ইকো হত বলে ব্য়াপারটা বেশ খোলতাই হচ্ছিল। শেষে আমরা তিনজন (আমি, এক্স আর ওয়াই) দোষী সাব্যস্ত হয়ে চরম লাঠ্য়ৌষধ খেলাম। মার খেয়ে আমার আর এক্সের হাত ফুলে যায়, আর ওয়াই এর জ্বর আসে। পরদিন স্য়র ওয়াই কে তার বাড়ীতে দেখতে যান ফল-মিষ্টি নিয়ে। তো ঘটনার বেশ কয়েকদিন পরে যখন ওয়াই পুরো ফিট হয়ে আবার স্কুলে আসা শুরু করেছে তখন আমি আর এক্স ডাইরেক্ট লাইব্রেরিতে হানা দিয়ে স্যরের কাছে দাবি পেশ করলাম যে আমাদেরকেও ফল আর মিষ্টি কিনে দিতে হবে। কি রকমের বদ ছিলাম তাহলে ভাবুন।
থাকার কথা। মেজরিটির জীবনেরই মাইলস্টোন ইস্কুল -কলেজ- ছোট্ট প্রেম -চাকরি -ওই প্রেম থেকে বা না থেকে একটা বিয়ে -- ব্যাস , তাপ্পর ছেলে পিলে। খুব সামান্যই ব্যতিক্রম। নেক্সট উল্লেখ যোগ্য স্টেপ বৈতরণী যেটির সময় ওই ছেলেপেলেরাই ভরসা।
আচ্ছা, এই যে হুতোর স্কুলের ওই মারকুটে শিক্ষক, স্যান্ডির ঐ মারকুটে লাইব্রেরিয়ান---এরা কি বিবাহিত, সংসারী? মানে, এদের নিজেদের ছেলেমেয়ে ছিল কি? তাদের উপরে এরা কী করত?
শুভঙ্করের আদৌ কোনো ছেলেপিলে আছে কিনা তারও তো নিশ্চয়তা নেই। ঃ-)
ব্যাটাকে মাঠে টেনে নামিয়ে একপায়ে দৌড় করালে আরও চমৎকার হত।
যা: গল্পের শেষটা না জানা গেলে মনটা খারাপ হয়ে যায়।
কিন্তু আইপিএসের ছেলের নাম ভয়ঙ্কর হলো কি না?
:|:, শুভঙ্কর কোনো যোগাযোগ রাখে না, তাই ওর ছেলের নাম জানি না।