আর যারা নিরপেক্ষ থাকার ভান করে , বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা আসলে সময় নিয়ে জল মাপে। সেই বলেনা "কোন দলের নির্দল "?

 

R2H 

 

 

 

চারিদিকে রত্নের কোনো অভাব নেই!

 

ইউক্রেণ যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ বিশ্বের নির্লিপ্ততা প্রসঙ্গে আমার ইংরেজি নিবন্ধের চটজলদি অনুবাদঃ

আমি যখন বড় হয়েছি তখন ছিল জোট নিরপেক্ষতার যুগ। তারপর বার্লিনে দেয়াল ধসে পড়ল। আজ আবার বেড়া উঠছে। বিশ্বের একটা বড় অংশ আজ আবার মাঝখানে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, এটি হল পাশ্চাত্যের চরমতম ব্যর্থতা। একটি সুষ্ঠু বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে, তারা জাতির পর জাতিকে উত্যক্ত করেছে। ইউক্রেনে কী ঘটছে তা দেখে যে কেউ নিশ্চিত দুঃখিত হবেন। সাধারণ মানুষ সবদেশেই রাজায় রাজায় যুদ্ধে আমাদের মতনই উলুখাগড়া - অকারণে দলিত, নির্যাতিত, অসহায়। সবাই জানেন যে পুতিন কতটা সাংঘাতিক স্বৈরচারী হতে পারেন। তবুও অ-শ্বেতাঙ্গ বিশ্বের পক্ষে অ্যাংলো-স্যাক্সনের নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্যের সমর্থনে হন্যে দিয়ে পড়ার কোন কারণ নেই। নিজেদের ঘর সামলানোর ব্যস্ততায় পাশ্চাত্য প্রত্যক্ষ ভাবে তৃতীয়বিশ্বকে অন্তত এখন জ্বালাতে পারবে না - সেই বাঁচোয়া। অবশ্য পরোক্ষভাবে তাদের যুদ্ধের মাশুল আমাদের গুণতে হবেই। আসন্ন বৈশ্বিক মন্দার থেকে রেহাই পাবে না কেউ। আমার ৩৫ বছরের কর্মজীবনে এই বৈশ্বিক মন্দাই সম্ভতই একমাত্র শাশ্বত।

পাশ্চাত্যকে বুঝতে হবে যে যদি যে বিশ্বব্যবস্থা তারা অন্য সকলকে মেনে চলতে বলে তা যদি তারা না মেনে চলে তাহলে পশ্চাতে রেখেছ যারে, সে তোমারে পশ্চাতে টানিবে। তখন পুতিন কি দুষ্টু – নিয়ম মেনে খেলছে না বলে কি আমাদের পাবে তোমাদের পাশে? জাতিসংঘ যদি আজ কাজ না করে, পাশ্চাত্য চেয়েছিল যে এটি তাদের নয়, শুধু বাদবাকিদের তদারকি করবে। বাইডেন পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী বলবেন এবং গর্ডন ব্রাউন, যিনি ইরাকের বিরুদ্ধে কাল্পনিক মহামারণাস্ত্রের অজুহাতে আক্রমণে ব্লেয়ারের অরথমন্ত্রী ছিলেন, তিনি পুতিনের জন্য নুরেমবার্গ অনুকরণে বিচারের দিবাস্বপ্ন দেখবেন অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অপরাধী আদালতের রোম সংবিধির স্বাক্ষরিক পর্যন্ত নয়। ব্রিটেন ৪০ বছর ধরে  ইরানের ন্যায্যপ্রাপ্য ৪০ কোটি পাউণ্ড জবরদস্তি আটকে রাখতে পারে যার কোন সুরাহা নেই। ইরানের কি গত্যন্তর ছিল বেচারা নাজানীনকে জিম্মি না নিয়ে। ছোট মরিশাস প্রতিটি আন্তর্জাতিক আদালতে আইনত জিততে পারে কিন্তু আমেরিকা আর ব্রিটেন চাগোস দ্বীপপুঞ্জের উপর মরিশাসের সার্বভৌমত্ব মেনে নেবে না। তারা সেখানকার অভিবাসীদের বিতাড়িত করে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে আর মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম এশিয়ায় সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা মিডিয়ার জন্য বাকস্বাধীনতা রয়েছে কিন্তু আমরা রাশিয়া টুডে (আরটি) কি বলছে শুনতে পারবো না। রাশিয়া কিয়েভের টিভি টাওয়ারে বোমা হামলা করলে ছ্যা ছ্যা কিন্তু ন্যাটো বেলগ্রেডে ১৯৯৯ তে একই কাজ করেছে। বাকি বিশ্ব পশ্চিমী সন্ত্রাসের নগ্ন কদর্য ভয়াবহতা গত ৫০০ বছর ধরে হাড়ে হাড়ে জানে। তাই ইউক্রেণের এই ভয়ানক যুদ্ধটি হৃদয়বিদারক হলেও তাদের ভিরমি খাবার মত নয়।

এই যুদ্ধ অবশ্যই একটি নতুন যুগের সূচনা করবে যা আমাদের বিশ্বকে একত্রিত করার চেয়ে আরও বেশি বিভক্ত করবে। দেয়াল ফিরে আসবে। এক বিশ্বের স্বপ্ন, পণ্য এবং মানুষের অবাধ বিচরণ, এই সমস্ত উদারনৈতিক মূল্যবোধগুলির আপাতত জলাঞ্জলি ঘটবে। পাশ্চাত্য কে অবশ্যই বুঝতে হবে যে একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব ব্যবস্থা আনতে চাই সবার আগে সমানুভূতি, সার্বিক সাম্যতা। পাশ্চাত্য কে পরিবর্তিত হতে হবে সবার আগে।