এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • কু-ঝিক-ঝিক --ঝিক

    pi
    অন্যান্য | ০৬ মে ২০১১ | ২০৯১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Nina | 12.149.39.84 | ০৭ মে ২০১১ ০০:৩৮469373
  • রাতের বুক চিরে সাঁ সাঁ করে ছুটে চলেছে পাঞ্জাব মেল বাংলা ছাড়িয়ে বিহারের দিকে। একটি ক্যুপেতে যাচ্ছেন স্বামী-স্ত্রী --স্ত্রী কে বাপের বাড়ী রাখতে যাচ্ছেন--স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। ঠিক করেছেন দুজন ছেলে হলে বারিন, আর মেয়ে হলে নাম হবে বর্ণা--দুজনের নামের সঙ্গে মিলিয়ে।
    নিচের বার্থে স্ত্রী ঘুমে অচেতন--ছুটছে ট্রেন। হঠাৎ ক্যুপের দরজায়--
    ঠক ঠক ঠক ঠক
    কে এত রাত্রে এই চলন্ত ট্রেনের ঘুমন্ত পুরিতে তাঁদের দরজায়!
    দরজা খুলে---হতভম্ব!
    একি মা তুমি !!এতদিন পর?! কি করে? কোথাথেকে?
    তোর কাছে থাকতে এলাম রণু ।
    নীচের বর্থে এক কোণ গুটিশুটি মেরে বসলেন মা, হাতে একট কাপড়ের পুঁটলী ।
    বলেন ছেলেকে , সেই তুই আমার বাঁ পায়ের বেঁকা আঙুল দেখে কত হাসতিস, পায়ের তলায় তিল দেখে বলতিস পায়ে কেন টিপ পড়েছ মা?! এই দেখ এখনও তেমনই আছে !
    ছেলের মনের মধ্যে উথাল পাথাল --তাই তো সেই মা , মায়ের পায়ের সেই বেঁকা আঙুল, পায়ের তলায় কালো বড় তিল---
    ট্রেন ছুটছে অবিরাম, ---

    ঘুম ভেঙে গেল---ট্রেন ছুটছে --স্ত্রী ভুমে অচেতন---ট্রেনে একি স্বপ্ন দেখলেন--মা আজ ত্রিশ বছর হল চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে ---
    ট্রেনের দোলায় মন দোলে--দোলে বিশ্বাস, দোলে অবিশ্বাস--জানলার বাইরে অন্ধকার ট্রেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোটে ---নেই , উত্তর নেই!

    স্ত্রী কে তুলে দিলেন ঘুম থেকে----প্রচন্ড বাস্তববাদি মানুষটি কেমন যেন দিশেহারা--বল্লেন
    যদি আমাদের মেয়ে হয়, তার বাঁ পায়ের আঙুল যদি বেঁকা হয় আর পায়ের তলয় বড় কালো তিল থাকে , তাহলে তার নাম হবে
    মায়ের নাম নির্মলা সুন্দরী, সেইসঙ্গে বানী, রণেন মিলিয়ে নাম হবে
    নিনা!
    অঘটন আজো ঘটে! ট্রেন তার সাক্ষী।
  • kk | 71.236.36.122 | ০৭ মে ২০১১ ০০:৪৮469384
  • এই টইতে কেউ লিখছেনা,আমিই লিখি। আমার সব ট্রেনের গল্প জুড়েই শুধু ঋণ, শুধু ঋণ, ধন নেই একটুও। কোত্থাও।
    কার কাছে ঋন?
    ভালোলাগার কাছে আবার কার কাছে?
    কেন গো? সে কিরকম?
    ঐ সময় গুলোয় ভালোলাগা আমায় এতটুকুন করে ভালোলাগা ধার দিতো যে। ট্রেনের মধ্যে, ভিড়ের মধ্যে। হয়তো একটু পরে এই অসহ্য মুহুর্ত গুলো শেষ হয়ে যাবে, সেই ভেবে ভালোলাগা। এত্তটুকুন। কিপ্টের মতো দিতো,ফোঁটা মেপে মেপে ধার। ধার নেওয়া ভালো জিনিষ নয় জানো? ধার কখনো ভালো জিনিষ নয়। এতটুকু হাত ছোঁয়ালেই রক্ত বেরোয়। এতটুকু মন ছোঁয়ালেও।

    ট্রেনগুলো মানেই শুধু দূরে চলে যাওয়া। বাড়ি থেকে, বাড়ি থেকে। ভোর সওয়া পাঁচটায় সেই অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস। তখন বলতো 'বিধান'। ঘুম ছিঁড়ে দলামোচড়া করে তাইতে চেপে কলকাতা যেতে হয়। বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি কলকাতা। প্রতি বারই বুকের ভেতর খানিকটা করে গত্ত হয়ে যায়, এই ট্রেনটায়। চাকাগুলো প্রাণপণে চিৎকার, চেঁচামেচি, ভিড়,আর দূরে চলে যাওয়ার দিকে দৌড়োয়। বিচ্ছিরি, বিচ্ছিরি।বিচ্ছিরি।

    যখন আরো বছর কাটলো রোজদিনের ট্রেনের ফান্দেতে পড়িয়া গেলাম। খারাপ। যেখান থেকে ট্রেনে চড়ি, খারাপ। যেখানে গিয়ে নামি, খারাপ। কোথাও বাড়ি নেই একটুকু। রুক্ষ দিন শুধু চারপাশে ছড়ানো থাকে। তার ফাঁকে ফাঁকে বাদামের খোলা, কমলালেবুর খোসা, পানের পিক, ঝালমুড়ির ঠোঙা। মহিলা কামরায় ভিড় কম বলতো অনেকে। কমই হবে। নিজের হাত, পা আল্গা হয়ে এধার ওধার হারিয়ে যায়না, অতএব কমই। হাত পা আল্গা হয়না, সেই সময়ে ওদের ওপর ভর দেয় চাপাচাপি, অন্য লোকের ঘাম, আজকাল যে বেদেনীরা রোজ এই কামরায় উঠছে তাদের চর্মরোগ, উকুনভরা উলোঝুলো চুল। আর খালি দৌড় চারদিকটা জুড়ে। যত টুকুনি ফাঁক আছে তাতে দেখতে পেতাম শুধু অসন্তোষ ভরা। 'এই কলেজের মেয়ে গুলো এত হাসে কেন কথায় কথায় বাপু?', অসন্তোষ।'মাগো, আজকাল আবার হাতকাটা কামিজের চল হয়েছে, আমরা তো বাবা বরাবর হাতাওয়ালা ব্লাউজ পরেই কাটিয়ে গেলাম! এত যদি গরম তো ট্রেনে চড়াই কেন?', অসন্তোষ। 'ও: আপনি এত বড় ব্যাগ নিয়ে ট্রেনে ওঠেন কেন? কায়দা করে বাহারী ব্যগ না নিলে হয়না, না?', অসন্তোষ। ট্রেনের ভেতর গরম হাওয়ায় রাগ ওড়ে, ক্ষোভ ওড়ে, পরশ্রীকতরতা ওড়ে, ক্লান্তি ওড়ে। শুধু ঋণাত্মক সবকিছু। ধন নেই। কোত্থাও।

    কেন গো? ট্রেন মানে বাড়ি ফেরা, এমন কি কখনো হয়নি?

    হয়েছে বৈকি। ফিরতি অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, তখন বলতো 'বিধান'। ব্ল্যাকডায়মন্ড, কোলফিল্ড এক্সপ্রেস।

    তাহলে? ভালোলাগাও কিছু আছে বলো?

    নেই। বাড়ি ফিরতে ভালোবাসিনা আমি। বাড়ির লোকেদের কাছে যেতে ভালোবাসিনা। ভালোবাসার লোকদের কাছে গেলে শুধু ছেড়ে যাবার কষ্ট। ফিরতি ট্রেন আমায় শুধু কষ্টের দিকেই নিয়ে যায়। ভালোবাসিনা আমি। শুধু কষ্ট। ধনাত্মক নেই। কিচ্ছু।

    ট্রেনগুলো ভীষণ পাজি হয়। সব সময়।
  • Nina | 12.149.39.84 | ০৭ মে ২০১১ ০১:২৪469395
  • অপূর্ব্ব! জাস্ট অসা---
  • achintyarup | 121.241.214.38 | ০৭ মে ২০১১ ০১:৪৩469406
  • খুব সুন্দর।

    ট্রেন আমার ভীষণ ভাল লাগে, সব সময়।
  • sayan | 115.242.132.244 | ০৭ মে ২০১১ ০১:৫৯469412
  • প্রায় ছ'বছর পরে লোকাল ইএমইউ ট্রেনে চড়ে মনটা কেমন উদাস হয়ে গেল। সেই কালো মুস্কো মুস্কো ফ্যানগুলো, কাঠের চেয়ার, ধরবার হাতল, কামরায় বিজ্ঞাপন, সীটের নীচে ডাব, ওঠার মুখে বস্তা গাদা করা, ঝাঁকি-ঝুড়ি আনাজপাতি, মুড়ি-চানাচুরের গন্ধ, ধুপকাঠি আর ঝাল লজেন্স, ফর্সা-শার্ট টিপটপ যুবক, কাঠের হাতলওয়ালা ছাতা সমেত দাদু, ফড়িং ফড়িং ইস্কুলগোয়ার্স, ওভারস্মার্ট নাইকা-ইমেজ তরুণী, পাশ দিয়ে উল্টোমুখী ট্রেনের হুশ করে বেরিয়ে যাওয়া, ঘটাং ঘটাং করে ট্‌র্‌যাক-চেঞ্জের আওয়াজ, স্টেশনে ঢোকার আগে যেদিকে প্লাটফর্ম পড়বে সেদিকের দরজায় ভনভন মানুষ, কংক্রীটের ফলকে বাংলায় লেখা স্টেশনের নাম -- এখানে সময় আটকে রয়েছে এখনও।

    ছোটোবেলায় ট্রেন আঁকতাম, বড়োসড়ো ডিব্বায় চার্কোনা জানলার সারি, দু'পাশে দরজা আর নীচে চাকা। ছোট ছোট। শান্তিপুর লোকালে চড়ে যাওয়া একদিন, দেখি ট্‌র্‌যাকের ধারে বাতিল চাকার স্তুপ। ওরেদ্দাদা! ট্রেনের এমন রথের চাকার মত বিশাল বিশাল চাকা হয়! চাকার সারফেস অংশটা রূপোর মত চকচকে, আর মসৃণ। আলো পিছলে যায়। ছুঁতে লোভ হত। পুরনো এক টাকার কয়েন চিপ্টে দেখেছিলাম, মন্দিরে কালিঠাকুরের রূপোর জিভ, অবিকল সেরকম। একেবারে শুরুর স্টেশন থেকে ভোরের ট্রেনগুলো ছাড়ার সময় ইঞ্জিনের উপর ঐ ওভারহেড তারে সাঁড়াশির মত ব্যাপারটা, কনট্যাক্ট হলে কেমন চিড়িক করে বিদ্যুৎ ঝিলিক দেয়। একবার শেয়ালদায় কী একটা বিক্ষোভ চলছিল। ভাঙচুরকারীরা ইঞ্জিনে উঠে ঐ নিয়ে খেলছিল অনেকক্ষণ।
    অনেক অনেক বছর পর একলা-দোকলা সন্ধ্যেগুলো একটা স্টেশনে কাটত। সারি সারি জলের কল। তার আদ্ধেকগুলো জলহীন। প্লাটফর্মের একটা বাঁক। সেটার মাথায় দাঁড়ালে অ্যাপ্রোচিং সুপারফাস্ট ট্রেনগুলোর হেডলাইট দেখতাম। প্রথমে একটা টিমটিমে বাল্বের মত দূরে, তারপর ইয়াব্বড়ো থালা। পাশ কাটিয়ে যেত স্টেশনে পড়ে থাকা টুকরো টাকরা কাগজ এটা ওটার ঝড় তুলে। একটা রাগী দৈত্য চলেছে এত লোককে পেটে করে নিয়ে।

    যেদিন প্রথম বাড়ি থেকে বরাবরের জন্য চলে আসতে হয়, খুব কেঁদেছিলাম। শাপ শাপান্ত করেছিলাম দূরপাল্লার ট্রেনের বাবার। কিন্তু সঙ্গে বাবা। তাই মনে মনে। আমার শত্রুসম বড়োদাদা তারিয়ে তারিয়ে বলছিল - হেঁ হেঁ, বুঝলি চাকার আবিষ্কার বড়ো আবিষ্কার। ব্যাটা দুশমন! বাড়ি ছাড়ার আগে থালায় আমার প্রিয় পোস্তর বড়া, মুসুরের ডাল, ডিমের অমলেট ... ছুঁয়েও দেখিনি। মা কেমন একটা মুখ করে বারান্দার গ্রীল ধরে দাড়িয়ে ছিল। ট্যাক্সিতে ওঠার আগে ঘুরেও দেখিনি। চড়ে বসবার পরেও না। অন্ধ রাগ ফুঁসছিল। তাই প্রথম দূরপাল্লার ট্রেন ভালোবাসতে পারিনি আমি। ট্রেনও আমাকে ছেড়ে কথা বলেনি। ১৬ ঘন্টা বেশী অপেক্ষা করিয়েছিল মশার কামড় ভরা হাওড়া স্টেশনে। সেই প্রথমবার বাড়ি ফেরার আগে ট্রেনের ওপর টান জন্মায়। সমবয়স্ক গোটা চল্লিশ সমগোত্রীয় এবং বিজাতীয় ছেলে বাড়ি ফেরার আনন্দে মশগুল। 'ব্লক-বুকিং' করা ভোর ভোর হস্টেল থেকে বেরিয়ে। কাটা হয়ে গেলে হস্টেলে ফিরে উল্লাস। প্রকাশ্যে দিন গোনা। কাছের সেই স্টেশনটায় গিয়ে ট্রেনের সিগন্যালিং শিখেছিলাম, জেনেছিলাম 'হুইসেল-লিমিট' কাকে বলে, পরপর তিনটে অ্যাম্বার পেলে কেমন তিনটে সিটি বাজিয়ে থেমে যায় ট্রেন, বন্ধুর বদান্যতায় চারটে সিগুর বিনিময়ে ড্রাইভারের সঙ্গে রফা করে ইঞ্জিনে চড়ে দেখেছিলাম ইমার্জেন্সী ব্রেক, অচিন্ত্যদা-বর্ণিত ডেড-ম্যান'স-হ্যান্ডেল, এয়ার ব্রেক অ্যাপ্লাই করলে ভ্যাকুয়াম পাইপগুলো কেমন টানটান হয়, দুটো বগির মাঝে ভেস্টিবিউলটায় দাঁড়িয়ে ট্‌র্‌যাকের 'কুশনিং' উপভোগ করা। ট্রেনগুলো কেমন নিজের কাছের মনে হচ্ছিল।

    ঘাটশীলা থেকে খড়গপুর ফিরছিলাম কোনও একটা গ্যালপিং ধরে। জঙ্গলমহলের দিকে এমনিতেই দুটো স্টেশনের মাঝে অন্তহীন দায়রা। লালমাটির টিলা, শুকনো ঝোরা আর ক্রোশবিস্তৃত বন্ধুর জমি দেখে চোখে ঘোর লাগে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হিলহিল করে উত্তাপের তরঙ্গ দেখি খরা মাটি থেকে আকাশে উঠে যেতে। তারই কোনও এক স্পেসিফিক লং-ল্যাট'এর ঠিকানায় আমাদের গ্যালপিংঅএর প্রেমিকের আবাস। তো, তিনি কী সব বিগড়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমি মোটামুটি কনফি নিয়ে বসে ছিলাম, এই ছাড়ে বুঝি। কিন্তু তিনি সেই যে দাঁড়ালেন, আর নড়লেন না। এদিকে সঙ্গের গুটিকয় হাটুরে লোক যারা ছিল কখন নেমে এদিক ওদিক মিলিয়ে গেছে। অন্য ট্রেনের দেখা নাই। সূর্যের তাপ প্রখরতর হলে, কামরা আগুন হলে যখন ভেতরে বসে থাকা দায়, চারফুট নীচে জমিতে লাফিয়ে নামি। পাশে আলকুশি কাঁটা। দেখি, মোক্ষম সময়! চাকা ছুঁয়ে দেখা যাক। ওরেব্বাস! প্রায় একঘন্টা থেমে আছে কিন্তু এখনও কী গরম। কে বলে ট্রেনের প্রাণ নেই! এর রগে রগেও আমাদের মত কতজনের বাড়ি ফেরার টান দৌড়োয় কী আর তার খেয়াল রাখে! হেঁটে হেঁটে গোটা ট্রেনটার দৈর্ঘ্য বরাবর যাই। মাঝে মাঝে ফোঁস-ফাঁস আওয়াজ করে সে। এমন সময় পাশের ট্‌র্‌যাক বরাবর হৈ হৈ উল্লাস। ডাউন গীতাঞ্জলি আসছে। থামে। উঠি। রিজার্ভড কম্পার্টমেন্টের লোকজন রোশকষায়িত দৃষ্টি হানে। বিরক্তি নহী ছুপতা বাবুজী! :-)

    রাতের ট্রেনে অন্ধকার জানলা দিয়ে বাইরেটা বেশ দেখা যায়। গতি যখন বেশী, চারপাশ সাঁ সাঁ সরলরেখা। আলাদা করে কিছু বোঝা যায় না। দূরের গাছ, পাহাড়গুলো আমার সঙ্গে একই দিকে চলে। গতি কম হলে পাশে পড়ে থাকা প্রতিটা অবজেক্টে অস্পষ্ট ছবি দেখি। চাঁদিনী রাতে শালগাছের ফাঁকফোকর দিয়ে আকাশ দেখেছ কখনও? রাতের আকাশ নেগেটিভ ফিল্মের মত, মেঘগুলো সব সাদাটে, আর খোলা আকাশ গাঢ় অন্ধকার। যদি লোয়ার বার্থ পাওয়া যায়, আর কূপের শেষ রাতবাতিটি নিভতে আরও একটু বাকি থাকে, কেমন দেখি লাইনের ধারে একটা চৌকো আলোর খোপে একটা ছায়া ছুটে চলেছে। আমি ঘাড় কাত করলে সেও করে। নইলে শুধু তাকিয়ে থাকা। রাত আরও বাড়লে আস্তে আস্তে উঠে এসে হাট করে খুলে দিই দরজা। (এই দরজার ছিটকিনিগুলো বেশ মজার, দুটিতে সন্ধি করে আটকে রাখে :-) ) আর বসা যায় দরজার বাইরে পা ঝুলিয়ে। দু'পাশে দুটো গাব্দা রড, ভালো করে ধরাও যায় না। এদিকে হাওয়ার চোটে কখনও পিঠে দরজা ধাক্কা মারে। হি বিলংস দেয়ার, নট ইয়ু! সো হোয়াট, নাও ইজ দ্য টাইম। চাকার চাপে গুঁড়ো পাথরের টুকরো ঝুনঝান করে ইস্পাতের শরীরে শব্দ জাগায়। এদিকে পায়ের নীচে গড স্পীড। আচমকা লাইন পাল্টালে এক হ্যাঁচকায় মনে হয় ঠিকরে গেলাম। ঠান্ডা হাওয়ায় ঘুম চোখ জড়ালেও মনে হয় দিস কুড বি দ্য লাস্ট ওয়ান। আরেকটু সরতে থাকা রাত দেখেই নিই। গতিবেগ। আরও। আরও। আহ!

    'ব্রীজেস ক্রস ন্যাচার‌্যাল ব্যারিয়ার'

    মাটি, জন্মভূমির নীরিখে নদী নালা সবকিছু নাম ধাম গোত্র পাল্টে যায়। নদী তো শুয়ে থাকে। তারও 'বেড' আছে। অথচ সে বয়। রূপনারায়ণের উপর শর্ৎ সেতুর প্যারাল্যাল রেলব্রীজ, গমগম গমকে ভরিয়ে ব্রীজের বুক ফেঁড়ে ট্রেন নদী পার হয়। ব্রীজের কাঠামোয় ভিত্তি করে এই শব্দ পাল্টে পাল্টে যায়। পাতলা আড়াআড়ি ভি-শেপ পিলারগুলোয় শব্দ কাটার সাঁত সাঁত, একটু ঘন পিলারগুলোয় ঘনতর অনুরণন। মাথা একটু ঝুঁকিয়ে দাঁড়ালে অনেক নীচে দেখা যায় জল। বহমান। গোদাবরী স্টেশন এলে উন্মন হয়ে উঠত মন। নদীটা অবশেষে আসছে। দু'ধার দেখা যায় না। কিছু জেলেনৌকো কাগজের খেয়া হয়ে ইতিউতি ভাসে, স্থির মনে হয় সেই সব। বিজয়ওয়াড়া'র ফলের রস ভরা স্টেশনটার আগে কৃষ্ণা নদীর ঘন নীল জল আর স্রোত।
    লেভেল ক্রসিং'এ দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করাটাও বেশ মজার। কেউ জানে না কোন দিক থেকে ট্রেন আসবে। যদি একটু এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ানো যায়, কেমন থর থর কাঁপে লাইনগুলো ট্রেন আসার ঠিক আগের মুহূর্তে। কাঠের বাফারগুলো তাদের ধরে রাখে নিজেদের জায়গায়। একসময় শব্দের বিজ্ঞান বুঝিয়ে তিনি প্রবল গতিবেগে পার হন। রাজসিক দুন এক্সপ্রেস। ঝকমকে আলোর সারি তার শরীরময়। অফ শী গোজ! এরই মধ্যে ক্রসিঙের ফাটক স্বল্পস্থায়ী ঝিম সেরে আবার এক পায়ে খাড়া। বেরসিক কে বা কারা তাদের পায়ে পাথর পরিয়ে গেছে! কতো আহ্লাদ করে এদের বাচ্চাকাচ্চারা 'টয়' অবিধায় ভূষিত হয়ে পাহাড়ে পর্বতে পাকদন্ডী বেয়ে চলে। তাদের চলার পথে আমরা দুই ডানা প্রসারিত করে ক্যাটওয়াক করি। লম্বাতর পায়ের কেউ কেউ একসাথে দুই লাইন একসাথে বায়। কতো মাইলের পর মাইল লাইন পাতা কত মাটি পাথর জঙ্গল জুড়ে। শুধু ট্রেন আসার সময়টুকু। বাদবাকি তাদের শুধু অনন্ত অপেক্ষা আর নৈ:শব্দভরা ঘুম ঘুম। বর্ষায় ভিজে থাকে, শীতের রাতে হিম খেয়ে ঠান্ডা হয়, আর প্রখর গ্রীষ্মের উত্তাপ এদের একে অপরের মাঝের ফাঁকটুকু জুড়ে দেয়। ধ্বক ধ্বক ঝিমিঝিমি ঝম ঝম কু ঝিকঝিক।
  • nk | 151.141.84.114 | ০৭ মে ২০১১ ০৪:০২469413
  • সব একসাথে মিশে যাচ্ছে। আগের দশক পরের দশক গোল্লা পাকিয়ে যাচ্ছে। ঐ তো কুইলন স্টেশানে কাজুবাদাম কিনে আনলো এক মাসীমা। বিকেলবেলা। আবার দেখছি গভীর রাতে ইগ্‌ৎপুরী স্টেশানে বিরিয়ানি কিনছে বন্ধুরা। সেটা ছিলো বোম্বে যাবার পথে। এদিকে আবার মনে পড়ছে মেদিনীপুর যাবার পথে কামরায় চপ, লালশালুঢাকা চপের ঝুড়ি। রেললাইনের পাশে পানিফলে ভরা জলাশয়। আবার বিজ বললো ভাইজাগে ভালো ফলের রস পাওয়া যায়, সেখানে নামা হলো। সেটা কাভালুর থেকে ফেরার সময়।

    পুরী যাবার পথে ট্রেন একজায়গায় এসে সমুদ্রের দিকে বাঁক নেয়, কোন স্টেশান সেটা? মরমী লোকেরা সেখান থেকেই নাকি সমুদ্রের গন্ধ পেতে থাকে। আমি অবশ্য পাই নি। পুরীতে নেমে একেবারে রিকশা করে যেতে সমুদ্রের সাথে মুখোমুখি হবার পরে শক খেলাম। আমি জানি যতবার যাবো ততবার শক খাবো। বহুবার বহু সমুদ্র দেখা থাকলেও হবে, না থাকলেও হবে। ওখানে একটা ম্যাজিক আছে।

    গোল্লা পাকিয়ে যাচ্ছে সময়। বোম্বে তখনো মুম্বাই হয় নি। আমরা সেখানে যাচ্ছিলামও না। আমরা যাচ্ছিলাম পুনে। কিন্তু ট্রেন প্রথমে সোজা গিয়ে নামাবে বোম্বেতে, সেখান থেকে আরেক ট্রেনে পুনে। নামালো বোম্বেতে। মাঝরাতের শহর ঘোরা ক'জনে মিলে। উপায় তো নেই, পুনের ট্রেন সকালে। ততক্ষণ কী করা? কেউ কেউ অবশ্য বেড়ালো না, স্টেশানে বসে হাত নেড়ে চলে ফিরে বোবা শ্যারাড খেললো।
    তারপরে ফুটফুটে ভোরে সেই ট্রেন এলো। তারপরে বনপাহাড়ের ভিতর দিয়ে টানেলের ভিতর দিয়ে পুনের দিকে যাওয়া। আহা।

    ফট করে টানেলের ভিতর ঢুকে পড়ে ট্রেন, দিনেদুপুরে ঘন অন্ধকার। একেবারে মিশকালো রাত। কী হোলো? ছোট্টোবেলার প্রথম টানেলের স্মৃতি মনে পড়ে, কোন ট্রেন ছিলো সেটা? কোথায়? শিরশির করে গা, ঠিক তেমনই। প্রথমবারের মত। আবার ফট করে বেরিয়ে এসেছে ট্রেন, টানেল শেষ, আবার ফটফটে দিনের আলো।

    ২৪শে অক্টোবর ১৯৯৫। পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখতে বেরিয়ে পড়েছে দলে দলে মানুষ। সেই শেষ রাতে লোকের ভীড়ে আমাদের গোটা স্টেশন একেবারে সরগরম। এরকম ভোররাতে এতো লোক নিশ্চয় স্টেশন দেখেনি বেশী। তারপরে হাওড়া গিয়ে ফের আমাদের ধরতে হলো উলুবেরিয়ার ট্রেন। হাওড়া স্টেশন থেকেই টকটকে লাল সূর্যোদয় দেখা হয়ে গেল। চাঁদের ছায়া সূর্যথালা প্রথম ছোঁবে সাতটার পরে, সে দেরি আছে। চশমাগুলো ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে নিচ্ছে লোকেরা। মানুষ দলে দলে ছুটছে। মনে হোলো এরকম পাগল হয়ে এত মানুষ যায় কেবল কুম্ভমেলায়, যদিও নিজে কখনো কুম্ভমেলা দেখি নি। ট্রেন চলে। বীরশিবপুর পার হয়ে কুলগাছিয়া। সেখানেই দলেবলে নেমে পড়ি আমরা পাঁচজন। পূর্ণগ্রহণের গতিপথ এখান দিয়েও গেছে।

    চলন্ত ট্রেনের দোলানি রহস্যময় নাচের মতন। রাতের বুক চিরে দূরপাল্লার ট্রেন চলে আর চাকাগুলো কীজানি গান করে লাইনের সাথে সাথে, সমস্ত ট্রেনটা আশ্চর্য ছন্দে নাচে। তারায় ভরা আকাশের নিচ দিয়ে খোলা প্রান্তর চিরে চলে যাচ্ছে ট্রেন, আর কামরায় কামরায় ভরা ঘুম। কেবল ইচ্ছে করতো ট্রেনের ছাদের উপর শুয়ে দেখলে কেমন লাগে এই যাদুবাস্তব। সে আর হয়ে ওঠেনি।
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ০৭ মে ২০১১ ০৭:১১469414
  • রেলগাড়ি নিয়ে নিনা'র লেখাটি মনকাড়া।

    . এইখানে এসে আমার মাকে মনে পড়ে। আমি যখন প্রথম রেলগাড়ি চড়ি তখন আমার মা বারবার সাবধান করেছিল। বলেছিল--বাবারে, এর চেয়ে নৌকাই ভাল। আমারও তাই ধারণা।

    . আমার মেয়ে হওয়ার আগেও প্রায় রাতেই আমার বউ তার মাকে স্বপ্ন দেখত। দেখত-- তার মা এসেছে। ভাত বেড়ে দিচ্ছে। ছোট মেয়েটি হওয়ার আগে বাবাকে স্বপ্ন দেখত। বাবা বাইরে থেকে এসে জোরে জোরে বলছেন--কীরে, ভাত হইছে? ভাত হইতে দেরী ক্যান?

    .রেলগাড়ি থেকেই আমি প্রথম ছারপোকা চিনতে শিখি। সেইখান থেকেই কীটতঙ্কÄ বিষয়টি আমার কাজে লেগে যায়। খুব সহজেই তিন বছর এন্টমোলজি অধ্যায়ন সাফল্যের সঙ্গে সমাপ্ত করি। সেই ছারপোকা দেখি নিউ ইয়র্কেও ঘরে ঘরে দাপিয়ে বেড়ায়। আমার কাছে ঘেষে না।

    . এবং রেলগাড়িতেই আমি জীবনে প্রথম গণধোলাই খাওয়ার অভিজ্ঞতা লাভ করি। সেখান বুঝতে পারি--ধোলাই খাওয়ার চেয়ে দৌঁড়ানোটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সবার রেলে চড়ার আগে ছোটবেলায় স্কুলের ৫০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করা দরকার।

    . আমাদের এক কবি ছিলেন--নাম কবি আবিদ আজাদ। তিনি বোধ হয় রেলগাড়ি অথবা বৃষ্টি--এ দুটোর যে কোন একটা দেখেন নি। দেখেননি বলেই একটি কবিতা লিখেছিলেন। পুরোটা মনে নেই। মাত্র এক লাইন শুনুন--

    তোমাদের উঠোনে কি বৃষ্টি পড়ে? রেলগাড়ি থামে?
  • Manish | 59.90.135.107 | ০৭ মে ২০১১ ১০:৪১469416
  • এই টইটা ভীষন ভালো লাগছে।
  • rupankar sarkar | 117.194.231.134 | ০৭ মে ২০১১ ১৭:৩৭469374
  • কু -ঝিক-ঝিক - নিনা কী লিখলেন? ভাল-মন্দের কথা বলছিলা, এ তো পাগল করা। চলুন, যুক্তিবাদী সমিতির সম্পাদকের দরজায় বড় ক'রে সেঁটে দিয়ে আসি। আমারও নানা অভিজ্ঞতা আছে। সাহস বাড়ল।
  • Nina | 68.84.239.41 | ০৭ মে ২০১১ ২৩:৩৩469375
  • মাঝে মাঝে লেখারা যেন পেয়ে বসে আমাকে---কিছুতেই থামাতে পারিনা। আর লিখে ফেলার পর ভিষণ অস্বস্তিতে ভুগি, লজা ও করে --ছি ছি সবাই কি ভাবল----
    তাই যখন লেখাগুলো আপনাদের চোখে পড়ে --আমার বড় আনন্দ হয় ।
    রূপঙ্কর বাবু বলুন না আপনার কথাগুলিও--
    কুলদাভাই, আপনি পড়েছেন এটাই আমার অনেক বড় প্রাপ্তি ।
    এই টইটা সত্যি মনটাকে নিয়ে যায় মাঠ-ঘাট পেরিয়ে, প্রান্তর ছড়িয়ে ---কত অজানার কত অচেনার দিকে---কু ঝিক ঝিক, কি ঝিক ঝিক!
  • ps | 117.201.113.189 | ০৮ মে ২০১১ ০০:০৭469376
  • খুব সুন্দর। আমার এই journey তই খুব অলো লগে।
    গন্তব্যে পৌঁছালে মোন খারাপ হোয়ে জায়
  • nk | 151.141.84.194 | ০৮ মে ২০১১ ০০:১৭469377
  • "চাকায় চাকায় টিটাংটাং
    হাজির হলো কার্শিয়াং
    কার্শিয়াং এ সবুজ পাহাড়
    নীল আকাশে তারার বাহার
    পাহাড়ী পথ হলুদ দড়ি
    চাঁদামামা দেয়ালঘড়ি।"

    এইরকম একটা ছড়া ছিলো না? কার লেখা কারুর মনে আছে?
  • kulada roy | 74.72.54.134 | ০৮ মে ২০১১ ১০:২১469378
  • একটু অপেক্ষা করো, হাত থেকে সময় বের করে নেই। তারপর তোমাদের এখানে ঝিক ঝিক করে এসে পড়ব। দুর্দান্ত লেখা সব। সেল্যুট সবাইকে।
  • Tim | 173.163.204.9 | ০৮ মে ২০১১ ১২:৪৬469379
  • অনেকেরই ছুটির সাথে রেলগাড়ির স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আমার এমনটি ছিলোনা। আমার ছুটি ছিলো একঘেয়ে। পূজাবার্ষিকী আনন্দমেলায় কখনও সখনও ধোঁয়া ওঠা ট্রেনের ছবি দেখলে কেমন ভিন গ্রহের জিনিস মনে হতো। ট্রেন মানে আমার কাছে ছিলো লোকাল ট্রেন, কদাচিৎ যাতে চেপে দূরবর্তী আত্মীয়ের তঙ্কÄতালাশে যাওয়া হতো সদলবলে। একা বাড়িতে রেখে যাওয়া হবেনা বলে আমিও যেতাম। সেদিন বিকেলের খেলাটা মাটি হতো। কখনও খুব বিরক্তিকর, কখনও ক্লান্তিকর, একঘেয়ে যাতায়াত। বিয়েবাড়ি হলে অবিশ্যি আলাদা কথা।
    তারপর ছবিটা পাল্টালো প্রথমবার দূরপাল্লার রেলে চেপে। গীতাঞ্জলী এক্সপ্রেস সেই সময় "বম্বে" যাওয়ার সবথেকে ভালো ট্রেন ছিলো। সেই প্রথম টানেল দেখা। ট্রেনে ঘুমোবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়া। একজন দাড়িওয়ালা ফকির সারারাত জেগে বসেছিলেন, মনে আছে। কেমন যেন মনে হচ্ছিলো ওঁর পকেটে ঘুমপাড়ানি ওষুধ আছে। সবাই ঘুমিয়ে পড়লে মুখে রুমাল চাপা দিয়ে বস্তায় ভরে ফেলবেন।
    অবশ্য সেসব কিছুই হয়নি। বরং বাতাসা খেতে দিয়ে মাথায় হাত রাখলেন পরেরদিন সকালে নেমে যাওয়ার আগে।

    তারপর অনেকদিন আবার ট্রেনের সাথে সম্পর্করহিত কেটে গেল। মেদিনীপুর যাওয়া-আসার সময় আবার সূত্রপাত। এবার সময় নিয়ে, বহুদিন ধরে যে সখ্যতা গড়ে উঠলো, তা অনেক মজবুত।

    মেদিনীপুর লাইনে এক্সপ্রেস ট্রেন বেশিরভাগই খড়গপুর থেকে অন্যদিকে চলে যেত। শুধু দুটো বাদে। আরণ্যক আর রূপসী বাংলা। এমন সুন্দর ট্রেনের নাম আমি আগে শুনিনি। স্মৃতিচারণ থাক। বরং ট্রেনের কথা শুনুন। যদিও একই কথা সব, আলাদা চোখে দেখলেও আদত গল্পগুলো মিলেমিশে যাওয়া।

    ******************************
    রাতের ট্রেনে ঘুম ভেঙে উঠে বসলে জানলা দিয়ে কোনো না কোনো নামগোত্রহীন স্টেশন দেখা যাবে। যাবেই। কেউ না কেউ চা কিনছে তখন দরজায় দাঁড়িয়ে। পাশেই কেউ ঘুমজড়ানো গলায় হয়ত খবর নিচ্ছে, পাটনা এলো কিনা। মোগলসরাই নামটা আমার দারুণ লাগতো। অথচ আমার দূরপাল্লার একটা বাদে বাকিসব যাওয়াই অনেক বড়ো হয়ে, যখন মানুষ নিছক নামের জন্য কোনো জায়গাকে ভালোবেসে ফেলেনা। তবু মোগলসরাই আমার পছন্দের স্টেশনের তালিকায় থাকে, একবারও স্টেশনের বাইরে না বেরিয়েও সেই জায়গাটা কেমন চেনা চেনা লাগে।

    তারপর ধরা যাক, শোন নদীর তীরের দেহরি স্টেশন। কিংবা কাঁসাই হল্ট, যেখানে ট্রেনটা দাঁড়াবে কি দাঁড়াবেনা বুঝতেই পারেনা। দোনামনা করে একটু শ্লথ হতে না হতেই আবার দৌড়োয়।

    দৌড় দৌড় দৌড়। ধুলোয় চতুর্দিক অন্ধকার করে ছুটে চলা ট্রেন সিনেমায় যত ভালোই দেখাক, বাস্তবে অতটা ভালো কিছু না। বরং স্লিপারে চড়ে সারারাতের রেলযাত্রা অনেক ভালো, যদিনা শরীর খারাপ থাকে। ছোট থেকেই বাঙ্কে উঠলে আমার মনে হতো যেন চিলেকোঠায় এসে পড়েছি। পাশাপাশি বা উল্টোদিকের মানুষটির সাথে আলাপচারিতা জমলে ভালো, না হলে আরো ভালো।

    সব গুলিয়ে যাচ্ছে। টিকিয়াপাড়ার কাছে শতখানেক রেললাইন কাটাকুটি করে যে জ্যামিতির ক্লাস নিয়েছে, সেইটা দেখলেই একছুটে বাড়িতে চলে যাওয়ার ইচ্ছে হতো। আবার তুমুল স্পিডে মাঠ-ঘাট-পুকুর পেরিয়ে ঊর্দ্ধ্বশ্বাসে ছুটে চললে কেমন হালকা মনে হতো। ঐ দ্রুতি কেমন যেন চারিয়ে যেত পরবর্তী কিছুদিনের বেঁচে থাকার মধ্যে।

    আবার কি অদ্ভুৎ, ভাবুন। ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে ছুটে আসা ট্রেন দেখলে অসহায় লাগে। যেন এই ব্রিজ, লাইন, যা সামনে পাবে তাই গুঁড়িয়ে, পিষে ধূলিসাৎ করে এগোবে সে। এই দৃশ্যে অপু-দূর্গার রেল দেখা নেই, কাশফুল নেই, সাদা রূপসী ধোঁয়া নেই। শুধু মৃত্যু, শুধুই ধ্বংস।
    *********************

    আবার লখনৌ থেকে যখন ব্রডগেজের রেলে চাপলাম, তখন আরো অদ্ভুৎ লাগলো। সারসার চাকার কেন্নোপ্রকৃতির এক গাড়ি, তার যে এত চরিত্র, পরিবেশ পাল্টে দিয়ে ম্যাজিক করার ক্ষমতা আছে, কে জানতো?

    ট্রেনে যাওয়া আসা করতে করতেই আমি প্রথম অন্ধকারে জোনাকি দেখার মজা আবিষ্কার করি। জোরে চললে আলোর ছুটে যাওয়া দেখতে দেখতে যে ঘোর লাগে, যে প্যাটার্ন সরলরেখা হয়েও সহজ হয়ে চোখে ধরা পড়েনা, যে অন্ধকার পরতে পরতে ঘনত্ব পাল্টাতে থাকে, তা আমার চোখ খুলে দেয়। হাতের বই মুড়ে রেখে আমি আকাশ দেখি। আদিগন্ত বর্ষার আকাশ দেখি, ফসলের আসা যাওয়ার প্রস্তুতি দেখতে দেখতে এগোই।
    আসলে সব সত্যি বলা হতোনা। এসব এখন আমি দেখিনা। দেখতাম।
    **********************
    তো, সেই নষ্টালজিক রোলার কোস্টার। ভোরের স্টেশনে জিভ পুড়ে যাওয়া চা, সকালে গাড়ি লেট চললে ভ্রু কুঁচকে প্ল্যান বি ভেবে রাখা, হঠাৎ করে মাঠে বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে রেল অবরোধ। আবার দিনের দেরি রাতে উসুল করে নেওয়াও আছে। হাজার হকারের ইনোভেটিভ মার্কেটিং চটক থেকে শুরু করে সাময়িক বন্ধুতা। তাসের আসর। খোপকাটা ডিনার থালি। আবার রাত্রী..... ঘুম.... আবার ....

    টেলিগ্রাফের তার তাই পাখিটাকে পিঠে নিয়ে উল্টোমুখে চলতেই থাকে।
  • kumudini | 59.161.133.77 | ০৮ মে ২০১১ ১৪:০৯469380
  • আমার ট্রেনে যাতায়াত?দিল্লী থেকে কলি আবার ফেরা,বিয়ের পর।
    প্রথমদিকে শুধু আমরা দুজন,তারপর বড়ছেলেকে নিয়ে আমরা।দুধের বোতল,জলের বোতল,ন্যাপি,পুঁচি তোয়ালে,মুখমোছা,টিস্যু পেপার,জামা,পেন্টু,খেলনা আরও কতশত হ্যানাত্যানা।ট্রেনযাত্রার সময়টুকু মা ও বাবাকে একটানা একসঙ্গে পেয়ে যতরকম দুষ্টুমি জানা আছে সব,ইনক্লুডিং একুনি কেলনা দাও,অন্য কেলনা,কোলে নিয়ে ঘোরো,বল খ্যালো ইত্যাদি।ক্লান্ত বিধ্বস্ত দুটি মানুষ হাওড়ায় নামল,ছেলে তরতাজা,নেমেই ঘোষণা করল ঐদিকের টেরেনে করে বাড়ী ফিরে যাই চলো,এইরকম কত স্মৃতি।

    ছোট ছেলে অপেক্ষাকৃত শান্ত ছিল,উঠেই টুম্‌টুম হয়ে আমার কোলে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে পড়ত,মাঝে মাঝে উঠত,নিশ্চিন্ত হেসে আবার ঘুমিয়ে যেত।কর্ত্তা ততদিনে দূর থেকে নমষ্কার জানিয়েছেন,(তুমিই যাও না ওদের নিয়ে,উঠবে আর নামবে )।একবার বড়জন তার ছোট্ট হাত বাড়িয়ে বলেছিল,""মাম,ওকে আমার কোলে দিয়ে তুমি খেয়ে নাও""।

    ট্রেন ছিল,তাই এইসব স্মৃতিরা আছে।
    বাচ্চারা কেন বড় হয়ে যায়?
    নীনা,জানো নাকি?
  • Nina | 68.84.239.41 | ০৮ মে ২০১১ ২০:২৪469381
  • কুমু, বাচ্চারা তো বাচ্চাই থকে, তারা শুধু ভাবে তারা নাকি বড় হয়ে গেছে :-)) ( মায়ের মন তাই বলে )
    ট্রেন যখন নিয়ে চলে একের পর এক মাঠ পেরিয়ে, গাছপালা, নদী পাহাড় ডিঙ্গিয়ে ---যে যার গন্তব্যে পৌঁছুয়---এই যাত্রায় প্রত্যেকের ট্রেন চলে তার নিজস্ব ট্র্যাকে----যা নিয়ে উঠলে তার সঙ্গে যোগ হয় আরও কিছু এটা সেটা কিংবা কিছু আবার হারিয়েও যায় , চুরি যায়---চলার পথে পাশের ট্র্যাকের ট্রেনটির সঙ্গেও হঠাৎ মোলাকাৎ হয়ে যায়--সে যতক্ষণ পাশে ঝমঝমিয়ে চলে তক্ষনেরই এই যাত্রায় তার সঙ্গর টাইম বাঁধা ---সহযাত্রীরা কেউ আগে ওঠে পরে নামে ---সবার জন্য তার নিজের স্টেশন এ থামে ট্রেন---সবার ওঠা নামার মধ্যের সময়টুকু ই একটি গোটা জীবনের গাথা!
    চলার নামই জীবন, যে যার স্টেশনে ওঠে, ধার্য্য ট্র্যাকে নিয়ে চলে ট্রেন--আবার নির্দিষ্ট স্টেশনে নামিয়ে দেয়----মাঝখানের পথটুকু কে যতটা পার মনে মতন করে নাও পথিক।

  • Sourav | 117.194.199.177 | ০৯ মে ২০১১ ০৭:০৯469382
  • নিনা, আপনার লেখা দারুন | একটা প্রশ্ন, যদিও একটু ব্যক্তিগত |ব্যক্তিগতভাবে আপনি কি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন ? আমার মনে হয় এই একটি ঘটনাই এব্যাপারে বিশ্বাস আনায় যথেষ্ট | অন্তত আমার ক্ষেত্রে তাই হত |
  • Nina | 12.149.39.84 | ০৯ মে ২০১১ ২২:০৪469383
  • সৌরভ
    থ্যাঙ্কু । খুব জোর দিয়ে বলতে পারিনা বিশ্বাস করি, আবার খুব জোর দিয়ে বলতে পারিনা একদম বিশ্বাস করিনা----করি না টাই একটু কম জোর দিয়ে বলতে পারি :-) কিম্বা করতে ভাল লাগে --তাও বলতে পারেন।
  • Sourav | 117.194.207.121 | ০৯ মে ২০১১ ২২:৫৮469385
  • নিনা, যদিও আমরা বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি, আমার কিন্তু মনে হয় ঐ ঘটনাটা একটা প্রত্যক্ষ প্রমানের পর্যায়ে পড়ে | অবশ্য যদি মায়ের শারীরিক চিহ্ন গুলো সবকটাই কন্যার থেকে থাকে | আমি হয়ত একটু বেশি ব্যক্তিগত ব্যাপারে লিখলাম | সেরকম মনে করলে ক্ষমা করবেন |
  • pi | 128.231.22.150 | ১০ মে ২০১১ ০৫:০৫469386
  • এক ই জায়গায় তিল, বাঁকা আঙুল এসব তো জেনেটিক্যালি ইনহেরিটেড হয় ই !
  • Nina | 68.84.239.41 | ১০ মে ২০১১ ০৫:৪৪469387
  • আরে পাই, এক্ষাটলি তাই তো বিশ্বাস করতেও পারিনা , আবার অবিশ্বাসও করতে ও মন চায়না ---তাই তো বলি বিশ্বাস করতে ভাল লাগে --ঐটুকুই :-)
    হে হে বাবার কাছে একটু বেশি আদর পেয়ে যেতাম এই খাতিরে ;-)
  • pi | 128.231.22.150 | ১০ মে ২০১১ ০৫:৫৭469388
  • :)
  • kd | 99.38.123.8 | ১০ মে ২০১১ ১১:১৮469389
  • বয়স হ'লো তো, তাই বলি -
    বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।
  • dukhe | 117.194.237.170 | ১০ মে ২০১১ ১১:৩৮469390
  • ঐ হল । জন্মান্তরের মিলকে ইঞ্জিরিতে জেনেটিকালি ইনহেরিটেড বলা হয় । এই জিন আসলে আলাদিনের জিনের থেকে আলাদা কিছু নয় ।
  • Sourav | 117.194.208.102 | ১০ মে ২০১১ ২১:১৫469391
  • স্বপ্ন, মেয়ে হওয়া, স্বপ্নের চিহ্নগুলোর সঙ্গে মিলে যাওয়া, এগুলো তো genetics এর দোহাই দিয়ে বোঝানো যায় না | এতটা কাকতালীয় ভাবে ঘটনা ঘটে না বলে আমার ধারণা | অনেক সময় অবিশ্বাস করাটা বাতিকের পর্যায়ে চলে যায় |
  • Nina | 12.149.39.84 | ১০ মে ২০১১ ২২:৫৯469392
  • সৌরভ
    আপনার পয়েন্টগুলো ও তো ভাবায় তাই তো জোর দিয়ে বিশ্বাস করিনাও বলতে পারিনা।
    বাবারা পাঁচ ভাই দুই বোন , তাঁদের ছেলে-মেয়ে নাতিপুতি মিলিয়ে অনেক এখন---কিন্তু শুধুমাত্র আমার পাটাই পেয়েছে ঠাকুমার উত্তরাধিকার :-)) এখন পর্য্যন্ত !
    মানো তো নারায়ণশিলা
    না মানো তো পাথরের ঢেলা :-))
  • Shibanshu | 117.195.188.192 | ১১ মে ২০১১ ১৫:২১469393
  • এই টইটা সিম্পলি দুরন্ত...
  • Nina | 12.149.39.84 | ১১ মে ২০১১ ২১:২৬469394
  • আরে শিবাজি, তোমার দুটি পয়সাও দিয়ে যাও হেথায়---দুরন্ত হয়ে উঠুক দুর্দ্দান্ত :-))

  • Sourav | 117.194.207.25 | ১১ মে ২০১১ ২১:৫৫469396
  • নিনা, আমি শুধু ভাবছি সেই মুহুর্তটার কথা যখন আপনাকে আপনার বাবা প্রথম দেখলেন ও চিহ্ন গুলো খুঁজে পেলেন | আমি নিশ্চিত সেই মুহুর্তটা তাঁর জীবনে সেরা | উনি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান | মা কে হারিয়ে আবার খুঁজে পাওয়া!
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন