এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পাগলা জগাই: ছত্রিশ বছর

    Shibanshu
    অন্যান্য | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ | ৩৮২৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Shibanshu | 117.195.151.38 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৭:২৮490430
  • নাই বুঝি তার অর্থ হোক
    নাই বা বুঝুক বেবাক লোক

    .

    বেবাক লোক যা বুঝতে পারে তা কি সত্যি শিল্প হয়ে ওঠে ? বেবাক লোককে 'বোঝানো'র দায় শিল্পীর কতোটা থাকে ? অর্থাৎ সৃষ্টি করার সঙ্গে সঙ্গে তার জন্য 'মানে বই' লিখে রাখাটি কি শিল্পীর দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে ?

    প্রশ্নগুলি পুরাতন। কিন্তু চির জাগরূক। তাই একজন শিল্পী যখন তাঁর কবিতায় অষ্ট আশি বছর আগে এই প্রশ্নটি নথিবদ্ধ করেছিলেন বাঙালি পাঠকের তা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা ছিলোনা। কিন্তু যখন একজন কবি একটি মাত্র কাব্যগ্রন্থ লিখে বাংলা কবিতার সমাকীর্ণ জগতে চিরস্থায়ী স্থান করে নেন তখন ঘটনাটি খুব মামুলি থাকেনা। পরবর্তীকালে সেই কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতার প্রতিটি পংক্তি বাংলাভাষায় ইডিয়ম হয়ে স্বীকৃত হয়ে যায় তখন তারও কোনও দ্বিতীয় নজির আমরা ইতিহাসে খুঁজে পাইনা। অতএব এটা ভাবা যেতে পারে, যে লেখা 'কবিতা' হয়ে ওঠে তার কোনও মানেবই প্রয়োজন হয়না। পাঠক নিজেই নিজেকে তৈরি করে নেয়।

    হ্যাঁ, সেই কবিতা সংকলনটির নাম 'আবোলতাবোল' আর কবির নাম না হয় নাই বললাম।

    .

    সাহিত্য পাঠকের কি কোনও 'বয়স' থাকে? যেমন শিশু পাঠক, কিশোর পাঠক বা প্রাপ্তবয়স্ক পাঠক। এইধরনের মাত্রাভেদকে মাথায় রেখে কি কোনো শাশ্বত সাহিত্য সৃষ্টি করা যায়? বোধ হয় এর উত্তর হবে 'না' । যেকোনো 'প্রাপ্তবয়স্ক' পাঠক তথাকথিত কিশোর সাহিত্য থেকে যথেষ্ট মনের খোরাক পেয়ে যান। সাহিত্য পাঠকের শুধু 'মন' থাকে। অর্থাৎ সাহিত্য উপভোগ করতে হলে 'প্রাপ্তবয়স্ক' নয়, প্রাপ্তমনস্ক' হওয়া দরকার। বুদ্ধদেব বসু একবার বলেছিলেন, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বড়োদের জন্য লিখলেও পড়ে আনন্দ পায় ছোটোরা। আবার সুকুমার ছোটোদের জন্য লিখলেও তা আনন্দ দেয় বড়োদের। এই 'বড়ো' বলতে যেসব লোকজন তাঁরা মনস্কতার সূত্রে বড়ো, বয়সের গুণিতকে হয়তো 'প্রাপ্তবয়স্ক' নাও হতে পারেন। অর্থাৎ মননশীলতার পরিণতির বিচারে সুকুমার ছিলেন বেশি পরিণত। তাঁর গুরু রবীন্দ্রনাথের মতো তাঁরও বিশ্বাস ছিলো, তিনি শিশু-বুড়ো সবারই সমবয়সি। আবোল-তাবোলের অনুরাগী পাঠকের বয়স আট থেকে অষ্ট আশি সবই হয়। তাই শরীরের মৃত্যুর অষ্ট আশি বছর পরেও সুকুমার একজন প্রাসঙ্গিক 'আধুনিক' কবি, উষ্ণ, জীবন্ত ও অসম্ভব জনপ্রিয়। আজ ১০ই সেপ্টেম্বর তাঁর প্রয়াণ তিথি।
  • siki | 182.64.159.45 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৭:৩১490441
  • থ্যাঙ্কু শিবাংশুদা। খুব মন ভালো করে দেওয়া লেখা।
  • Shibanshu | 117.195.151.38 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৭:৩৪490452
  • .

    সুকুমারের বংশপরিচয় কোন ঈষৎ শিক্ষিত বাঙালির কাছে দেওয়াও বাহুল্যমাত্র। বাংলা রনেশাঁসের উড়ন্ত বীজগুলি যে সব পরিবারের কীর্তির মধ্যে দিয়ে ফলন্ত বৃক্ষ হয়ে উঠেছিলো, ময়মনসিং মসুয়ার রায় পরিবার তাদের মধ্যে এক অগ্রণী উদাহরণ। তাঁর জন্ম ১৮৮৭ সালের ৩০শে অক্টোবর। প্রেসিডেন্সি থেকে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নবিদ্যায় সাম্মানিক নিয়ে স্নাতক হয়েছিলেন ১৯০৬ সালে। ১৯০৫ থেকে তাঁর লেখালিখি প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯১১ সালে গুরুপ্রসন্ন ঘোষ বৃত্তি নিয়ে লন্ডনে যান আলোকচিত্র ও মুদ্রণশিল্প নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে। ১৯১২ সালে রয়াল ফোটোগ্র্যাফিক সোসাইটির দ্বিতীয় ভারতীয় ফেলো মনোনীত হলেন। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে Quest পত্রিকায় Spirit of Rabindranath নামে রচনা প্রকাশ করেন। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ওটিই ছিলো বিদেশে প্রকাশিত প্রথম কোনো ভারতীয়ের রচনা। Penrose Annualয়ে ফোটোগ্র্যাফি নিয়ে প্রবন্ধ প্রকাশ। ১৯১৩ সালে ম্যাঞ্চেস্টারে Printing Crafts Guild য়ের Citi & Guild পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে এক জাহাজে দেশে ফেরা ও তার দুমাস পরে বিবাহ। ১৯১৫তে 'সন্দেশ', 'শব্দকল্পদ্রুম', মন্ডা ক্লাব।১৯১৬ তে 'চলচিত্তচঞ্চরী'। ১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথকে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ থেকে সম্মানিত করা প্রসঙ্গে প্রবীণ সদস্যদের প্রবল বিরোধিতার বিরুদ্ধে নবীন ব্রাহ্মদের নেতৃত্ব দেন। এসব নেহাৎ মামুলি তথ্য, মোটামুটি সবাই জানে।

    ১৯১৮-১৯ সাল নাগাদ তাঁর স্মৃতি খুড়তুতো বোন লীলা মজুমদারের স্মৃতিকথায় পরবর্তীকালে এই ভাবে এসেছিলো।

    '... বড়দা যেখানেই যেতো একটা আনন্দের তুফান সঙ্গে সঙ্গে যেতো। বড়দা যেখানে থাকতো, অন্য কারো দিকে লোকের চোখ পড়তো না। তাই বলে বড়দার কিছু কার্তিকের মতো চেহারা ছিলোনা। তবে চেহারার মধ্যে কী একটা যেন ছিলো যার সঙ্গে মুখায়ববের কোনো সম্পর্ক ছিলোনা, কিন্তু যা তার সর্বাঙ্গ থেকে আলোর মতো ঝরে পড়তো। এখন বুঝি সেটি তার ব্যক্তিত্ব।

    লম্বা দোহারা মানুষটি, একমাথা কালো কোঁকড়া চুল, চোখ দুটি প্রায় সব সময় হাসতো, কিন্তু গম্ভীর হলে এমনি গম্ভীর হতো যে কাছে ঘেঁষতে ভয় পেতাম। বড়দা ছিলো যেমন আমুদে, তেমনি রাশভারি, অন্যায় সে কখনো সইতো না। যতোদূর মনে পড়ছে, বড়দার গালে একটা বড়ো তিল ছিলো, আমাদের সেটিকে ভারি পছন্দ ছিলো। '

    .

    ঔপনিবেশিক চিন্তায় লালিত বাঙালির একটা অভ্যেস আছে। জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে কোনও বাঙালির সার্থকতা বা সফলতাকে বিদেশি নাম দিয়ে চিণহিত করার প্রবণতা তার প্রিয় ব্যসন। যেমন বাংলার মিল্টন মধু, বাংলার স্কট বঙ্কিম, বাংলার শেলী রবি, বাংলার এলিয়ট জীবন এবং বাংলার লীয়র বা ক্যারল সুকুমার। এতো স্বতস্ফূর্ত ও স্বীকৃত প্রয়াসে এই সব খেতাব দেওয়া হয়ে থাকে যে তেমন তৎপর পাঠক না হলে এইসব ছাঁচ নীরবে ও নিশ্চিতভাবে মনের মধ্যে গৃহীত হয়ে যায়। এই আলোচনায় অন্যদের কথা বাদ দিচ্ছি। সুকুমারের ক্ষেত্রে এই ধরনের 'নামাঙ্কণ' যে কতোটা বাতুলতা তাই নিয়ে সামান্য ভাবা যাক।

    রবীন্দ্রনাথ একবার অবনীন্দ্রনাথের একটি লেখা পড়ে মন্তব্য করেছিলেন, যে এইধরনের ' বিশুদ্ধ পাগলামির কারুশিল্প' অবন ঠাকুরের পক্ষেই সম্ভব। সংস্কৃত রসশাস্ত্রে 'উদ্ভট' নামে একটি রসের উল্লেখ পাওয়া যায়। 'দুয়ে দুয়ে চার ' এই যুক্তিধারার বাইরে 'যুক্তিহীন রসবোধের' সমান্তরাল ধারা পৃথিবীর প্রায় সাহিত্যেই দেখা যায়। পন্ডিতদের মতে 'স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত যুক্তি পরম্পরা'র বাইরে মতপ্রকাশ করা 'পাগলামি'র প্রথম লক্ষণ। কিন্তু ইতিহাস বলছে, তথাকথিত মানসিকভাবে 'স্বাভাবিক' মানুষদেরও মধ্যেও সতত এইসব 'অস্বাভাবিক' রসানুভূতি ও রসগ্রাহিতা সর্বকালেই দেখা যায়। আমাদের শাস্ত্রে একেই 'উদ্ভট রস' এবং পশ্চিমে একে 'ননসেন্স' বলা হয়ে থাকে। আপাতভাবে এইধরনের লেখায় মনে হতে পারে বল্গাহীন কল্পনার ঘোড়া বাস্তবের সব বন্ধনকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলছে। কিন্তু এই 'ছিন্নভিন্ন' করার যে 'কারুশিল্প' তার মধ্যে এক প্রচ্ছন্ন কিন্তু প্রভাবশীল সৃজনশীল সিস্টেম কাজ করে চলেছে। তার নির্দিষ্ট বিন্যাস আছে, নিশ্চিত ছক আছে, আর আছে সূক্ষ্ম শিল্পবোধ। রবীন্দ্রনাথ তা বুঝেই এর নাম দিয়েছিলেন 'বিশুদ্ধ পাগলামির কারুশিল্প'।

    ধরা যাক, সুকুমারের ' হ য ব র ল'। এই লেখাটির প্রতিটি শব্দ পরবর্তীকালে প্রবাদ হয়ে গেছে। অবনীন্দ্রনাথ বা ত্রৈলোক্যনাথের কথা মনে রেখেও বলা যায়, এই লেখাটির স্তরের সূক্ষ্ম উদ্ভট রস বাংলাভাষায় এর আগে ছিলোনা এবং পরেও বিরল। এই লেখা লীয়র বা ক্যারলকে নকল করে লেখা দূরস্থান, ভাবাও যায়না। একথা সত্যি, যে যখন সুকুমার লিখতে শুরু করেন, তখন লীয়র ও ক্যারলের মুখ্য লেখাগুলি অনায়াসলব্ধ ছিলো এবং তিনি হয়তো তার সঙ্গে পরিচিতও ছিলেন। কিন্তু যাঁরা এই দুই লেখকের রচনারীতির সঙ্গে পরিচিত, তাঁরা দেখবেন, সুকুমারের লেখায় NonsenseFarce যেভাবে ওতোপ্রোতভাবে পারদর্শিতার সঙ্গে বোনা থাকে, লীয়র বা ক্যারলের মধ্যে সেই ধার আমরা দেখতে পাইনা। আমাদের দেশে উদ্ভট রসের যে চর্চা ছিলো তার কিছু নিদর্শন কবিরত্ন পূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন, উদ্ভটসাগরের সঙ্কলিত ' উদ্ভট শ্লোকমালা' নামের ১৯০৪ সালে প্রকাশিত বইটিতে পাওয়া যায়। হরিচরণের অভিধানে 'উদ্ভট' শব্দের অর্থ আছে, মহাশয়, মহাত্মা, উদার, দুর্মদ, দুর্ধর্ষ, শ্রেষ্ঠ, উৎকৃষ্ট, অদ্ভুত, অসম্ভব, বিস্ময়কর, উৎকট, অতিপ্রবল। শব্দসূত্র হচ্ছে উদ্ভূত উদ্ভট। অর্থাৎ 'ঊর্ধে ধৃত'। তবে আমার মনে হয় 'গ্রন্থবহির্ভূত লোকপ্রসিদ্ধ অজ্ঞাত কবিকর্তৃক শ্লোক' , এই পরিভাষাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গ্রন্থবহির্ভূত ও অজ্ঞাত কবি যখন লোকপ্রসিদ্ধ হয়ে ওঠেন, তখন তার পিছনে ইতরযানী সাহিত্যচর্চার একটি সূত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই সব কবিরা ডকুমেন্টেড ও এলিট সমাজের গ্রন্থিত সাহিত্যচর্চার বাইরের লোক, কিন্তু নিজগুণে লোকপ্রসিদ্ধ হয়ে উঠতে পেরেছেন। স্থান করে নিতে পেরেছেন ব্রাহ্মণ্য রীতি নিয়ন্ত্রিত শব্দসাধনার মূলস্রোতে। তাঁদের চিন্তায় বা প্রকাশভঙ্গিতে পাথুরে 'যুক্তিবোধ'এর ( যা সচরাচর এলিট নিয়ন্ত্রিত) উপরে গিয়ে নির্বাধ কল্পনার আধারে নিজস্ব বোধ বা অভিজ্ঞতাকে নথিবদ্ধ করার যে প্রয়াস, তাকেই অর্থ সম্প্রসারিত করে 'উদ্ভট' শব্দের মধ্যে ধরা হয়েছে। আমাদের লোকসাহিত্যে এর ভূরিভূরি প্রমাণ আমরা পাই।

    এতো কথা বলার উদ্দেশ্য, আমি সুকুমারের রচনার নির্মান প্রণালীর প্রতি অনেকের যে ধারণা, তা নেহাৎ শিশু বা কিশোরপাঠ্য, তার নিরসন করতে চাইছি। 'বড়ো'দের জন্য লেখা মানে সেখানে পাথরপ্রতিম যুক্তিবন্ধন করতে হবে, মেঘ ও হাওয়ার নির্বাধ গতায়াত শুধু অবোধ বালকদের মনোরঞ্জনের জন্যই প্রযোজ্য, এই যুক্তি আমাদের দেশীয় মৃত্তিকাজাত সাহিত্যসাধনার সঙ্গে অনেক সময়ই মেলেনা। এই বোধ সুকুমারের হয়েছিলো এবং এই কথাই বুদ্ধদেব বসু বলতে চেয়েছেন সুকুমারের মননশক্তির সার্থকতা প্রসঙ্গে।

  • Lama | 117.194.233.13 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৮:২৭490456
  • সাধু, শিবাংশুদা! এই আলোচনাটার অপেক্ষায় ছিলাম বহুদিন।
  • PM | 86.96.229.86 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৮:৩৯490457
  • খুব ভাল হচ্ছে। থামবেন না প্লিজ।
  • rimi | 75.76.118.96 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২০:০২490458
  • আমি লীয়র এবং ক্যারল সব পড়েছি। হ য ব র ল এর প্লট একেবারেই অ্যালিসের প্লটের অনুকরণে তৈরী। কিন্তু অ্যালিসে নানারকম ঘটনার বৈচিত্র্য আর হাস্যরসের ধার - হ য ব র লর থেকে অনেক অনেক বেশি মনে হয়েছে। অ্যালিস একটা মাস্টারপীস। তার সঙ্গে হ য ব র লর জাস্ট তুলনা চলে না।

    কিন্তু হ য ব র ল বা আবোল তাবোলের কিছু লেখা বাদ দিলে, সুকুমার রায়ের সৃষ্টির ব্যপ্তি অনেক বেশি। সুকুমার রায়ের একেবারে নিজস্ব লেখাগুলো তুলনাহীন। যেমন ছবির টানে গল্প লেখা, কিম্বা দাশু সিরিজের গল্পগুলো। সবচেয়ে বড় কথা, সুকুমার সাহিত্যসৃষ্টির বাইরেও ছোটোদের শিক্ষা নিয়েও অনেক কিছু ভেবেছিলেন। উনি ছোটোদের জন্যে যেসব প্রবন্ধগুলো লিখেছেন, বিজ্ঞান, ইতিহাস সবকিছুকে ছোটোদের কাছে পৌঁছে দেবার জন্যে, সেই ধরণের কাজ বাংলায় আর কেউ করেন নি। এত সহজ আর এত সুন্দর লেখা যে সেগুলো আমার চার বছরের ছেলেরও ভালো লাগত শুনতে। সুকুমারের অকাল মৃত্যু না হলে আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষা হয়ত কিছুটা অন্যরকম হত।

    মোটমাট, আমার বক্তব্য এই যে , ননসেন্স লেখাগুলো সুকুমারের অধিকাংশই ক্যারল আর লীয়র দ্বারা অনুপ্রাণিত। কিন্তু ননসেন্স ছাড়াও সুকুমার ছোটোদের আরো অনেক কিছু ভেবেছেন, করেছেন, লিখেছেন। লীয়র বা ক্যারল সেখানে সুকুমারের সমকক্ষ নন।

    ডি: আমার নিজস্ব মত :-))
  • aka | 75.76.118.96 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২০:৪৬490459
  • ক্লাস ওয়ানে মায়া দিদিমণি কয়েকটা ক্লাসে হ য ব র ল পড়ে শুনিয়েছিলেন। আমি অর্ধেক জিনিষ বুঝে উঠতে পারি নি। যেমন 'ছিল বেড়াল হল রুমাল' বা 'সাত দুগুনে চোদ্দর চার হাতে রইল পেনসিল'। এমনকি আবোল তাবোলও আমার বুঝতে বেশ অসুবিধা হত। 'ঠাস ঠাস দ্রুম দ্রুম শুনে লাগে খটকা - ফুল ফোটে? তাই বলো আমি ভাবি পটকা' বা 'ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হল ব্যথা' এগুলো আমি ক্লাস ফোর ফাইভের আগে ঠিক রস পাই নি। আবোল তাবোলে একমাত্র ভালো লেগেছিল খুড়োর কল - মোস্ট প্রোবাবলি ভিজুয়াল এফেক্টের জন্য। পাগলা দাশুও ভালো লেগেছিল

    সুকুমার রায়ের ননসেন্স গুলো কেমন জানি মনে হয় একটু বড়দের জন্য। অথচ ছেলের দেখলাম অ্যালিস দুর্দান্ত ভালো লেগেছে। এদিকে পাগলা দাশুও দিব্যি এনজয় করে। হ য ব র ল এখনও পড়া হয় নি। দেখতে হবে।
  • nyara | 122.172.46.241 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২১:০৫490460
  • সত্যজিৎ সুকুমার-ক্যারল তুলনায় একটা অবসার্ভেশন করেছিলেন। ক্যারলকে উদ্ভটরস আনতে নতুন শব্দের আমদানী করতে হয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে বলেছিলেন Jabberwocky-র কথা।

    `Twas brillig, and the slithy toves
    Did gyre and gimble in the wabe:
    All mimsy were the borogoves,
    And the mome raths outgrabe.


    সত্যজিৎ নিজে যেটার বাংলা করলেন (স্মৃতি থেকে) -

    জবরখাকি
    ------------

    বিল্লিগি আর শিঁথলে যত টোবে
    গালুমগিরি করছে ভেউয়ের ধারে।
    আর যত সব মিমসে বোরোগোবে
    মোমতারাদের গেবগেবিয়ে মারে।

    সুকুমার মূলত: চেনা শব্দই ব্যবহার করেছেন, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। যেমন -

    'বাদুড় বলে ওরে ও ভাই সজারু
    আজকে রাতে দেখবে একটা মজারু'।

    যদিও নিজেই মজারু শব্দ নিয়ে গল্পের ভেতরেই আপত্তি তুলেছেন।

    আরেকটা উদাহরণ -

    'তুমিও দাদা হচ্ছ ক্রমে খ্যাপাটে
    চিমনিচাটা ভোঁপসামুখো ভ্যাঁপাটে।'

    তবে গালাগাল সবসময়ে চেনা শব্দ দিয়ে বললে মানেও হয় না, সেই জোশও আসে না।
  • pi | 72.83.92.218 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২১:০৭490461
  • কেন, গোঁফচুরি ? খিচুড়ি ? ডানপিটে ছেলে ? বাবুরাম সাপুড়ে ?
    বোম্বাগড়ের রাজা ? রামগড়ুরের ছানা? আহ্লাদী ? গানের গুঁতো ?
    পাউরুটি আর ঝোলাগুড় ?
    পেঁচা কয় পেঁচানি ?
    ভয় পেয়ো না?

    আর সাথের আঁকাগুলো ? এক দু ক্লাশের ছোটোবেলায় এগুলো ভাল লাগতো না ?

    আদিম কালের চাঁদের হিম/তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম ভাল লাগতে অনেক সময় লেগেছে অবশ্য।
  • bibek | 195.37.234.132 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২১:০৮490431
  • প্রথমেই শিবাংশুবাবুকে ধন্যবাদ।

    একখান মন্তব্য, প্রাপ্তবয়স্ক হলেই যে প্রাপ্তমনস্ক হবেন তা নাও হতে পারে তবে তবে অনেক প্রাপ্তমনস্ক জিনিসের জন্যই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়াটা প্রায় পূর্বশর্ত বলা যায়।

    এই বারে সেই প্রশ্নটা করে ফেলি। জানতে ইচ্ছে গুরু ও চন্ডালের পছন্দের সুকুমার সাহিত্যের কথা। আমার প্রিয় রাজার অসুখ।
  • rimi | 75.76.118.96 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২১:২২490432
  • ক্যারল শুধু জ্যাবরওয়াকিতেই নতুন শব্দ আমদানী করেছেন। কিন্তু সাধারণ ইংরিজি শব্দ দিয়ে বানানো উদ্ভটরস ক্যারলের কিছু কম নেই।

    যেমন, মক টার্টলের দেশের অংক - আগলিফিকেশন, ডেরিশন, অ্যাম্বিশন ইত্যাদি। কিম্বা সেই সত্যিকারের দাবাখেলার ছক?

    হ্যাঁ হ্যাঁ পাই, তুই যেগুলো বল্লি সেগুলো, আর তার সঙ্গে আঁকাগুলো আমার ছোটোবেলায় কেন, এখনো ভালো লাগে রে। আর দাশু সিরিজের গল্পগুলো? সাম্পানেরও দারুণ প্রিয় সেগুলো।
  • Shibanshu | 117.195.150.214 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০০:১২490433
  • .
    বাঙালি শিশুর বই দেখে কবিতার সঙ্গে পরিচয় সম্ভবত সুকুমার থেকেই শুরু হয়। অন্তত আমাদের সময় তাই হতো। সেই সময় আবৃত্তি প্রতিযোগিতা নামে একটি ব্যাপার ছিলো, যেখানে নানা বয়সের বাঙালি শিশু-বালক-কিশোরেরা বাংলা কবিতা মুখস্ত করে প্রায়শই প্রথম স্টেজ ও মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে শিখতো। পড়ার বইয়ের বাইরে, যেখানে পাখি সব করে রব বা নাই কিরে সুখ অথবা খুব বেশি হলে আমাদের ছোটো নদী জাতীয় কবিতাই পড়ানো হতো, স্বাধীনভাবে বাংলা কবিতার প্রথম স্বাদ সুকুমারের লেখা থেকেই পাওয়া যেতো। আমার মনে আছে প্রথম স্টেজে চড়া, প্রথম মাইক্রোফোনের সামনে, চার-সাড়ে চার বছর বয়সে শুরু হয়েছিলো, 'কবি সুকুমার রায়ের সৎপাত্র...' এই উচ্চারণ থেকে। রবিকবি ব্যতীত অপর কবি হিসেবে শিশু বালকদের কাছে সুকুমারই ছিলেন অবশ্য বিকল্প। আমার মতো হয়তো কোটী বাঙালি আছেন, যাঁরা শুরু করেছিলেন, 'শুনতে পেলুম পোস্তা গিয়ে...'। আমার পিতৃদেব আবোলতাবোল শেখানোর জন্য একটি অভিনব ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি ওখান থেকে কোন একটা লাইন, যেমন হয়তো বলে উঠলেন, 'টাকের পরে পন্ডিতেরা ডাকের টিকিট মারে' বা ' গুড় গুড় গুড় গুড়িয়ে হামা' অথবা 'কিন্তু সবার চাইতে ভালো' কোন কবিতায় আছে। বলতে পারলে 'দশ নয়া' । ওফফ... সাত রাজার ধন যেন... সাত আট বছরের বয়সের মধ্যে পুরো আবোলতাবোল কণ্ঠস্থ। আমার মনে হয় মধ্যবিত্ত বাঙালির বাড়িতে বহুকাল থেকেই সঞ্চয়িতা না থাকলেও এক কপি আবোল তাবোল থাকতো, মনে হয় এখনও থাকে (তবে পরবর্তী কালে ঐ আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় জজিয়তি করতে গিয়ে দেখেছি কবিতাগুলি বাবা-মায়েরা বহুক্ষেত্রেই রোমান অক্ষরে লিখে দেন)। সুকুমারের কবিতা প্রতিষ্ঠান হতে শুরু করেছে পঞ্চাশ-ষাট বছর আগে থেকেই।

    আবোলতাবোলের ডামি যখন তৈরি হচ্ছিলো তখন রোগশয্যা থেকে সুকুমার একটা ছোট্টো ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। সেখানে লেখা হয়েছিলো, 'যাহা কিছু আজগুবি, যাহা উদ্ভট, যাহা অসম্ভব, তাহাদের লইয়াই এই পুস্তকের কারবার। ইহা খেয়াল রসের বই।' যদিও আবোলতাবোল তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত সৃষ্টি, কিন্তু তিনি নিছক খেয়াল রসের কারবারি ছিলেন না। এই খেয়াল রস বা ননসেন্স তাঁর রচনার অন্যতম লক্ষণ, সম্পূর্ণ চরিত্র নয়। যেখানে তিনি লীয়র-ক্যারল যুগলের সৃষ্টির মাত্রা থেকে আলাদা হয়ে যান। তাঁর মাত্র সতেরো-আঠেরো বছরের সৃষ্টিশীল জীবনে তিনি তৎকালীন বঙ্গসমাজের যে ব্যাপারগুলিকে অসঙ্গত বোধ করেছিলেন, সেগুলিকে নিয়ে নাট্যাকারে বাংলাসাহিত্যে কিছু চিরস্থায়ী সংযোজন করে গেছেন। করে গেছেন বালকদের মধ্যে বিজ্ঞানশিক্ষা, নীতিশিক্ষা ও নানা বিবিধ বিষয়ে সহজপাঠের আয়োজন। তাঁর মানসিক গঠনের মধ্যে য়ুরোপীয় স্মার্টনেস ছিলো, যা তাঁর রচনা থেকে আমরা বারবার দেখতে পাই। অবশ্য এই গুণটি তাঁর পরিবারের অনেক সদস্যের মধ্যেই ছিলো।

    তাঁর নাটকগুলির তথ্যপ্রসঙ্গ সমকালীন হলেও তার সৃজনশীলতার বিস্তৃতি ছিলো চিরকালীন। আমাদের ভুয়ো গুরুবাদী চিন্তার অসারতা নিয়ে 'শব্দকল্পদ্রুম', যেখানে হয়তো তাঁকে প্রাণিত করেছিলেন তাঁর গুরু হাস্যকৌতুকের শারাড জাতীয় রচনাগুলির মাধ্যমে। আবার সেই সময়ের সামন্তবাদী ও ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থাকে কটাক্ষ করে 'ঝালাপালা'। বিদেশি শাসকের অবিচারের বিরুদ্ধে নির্বিষ নির্দন্ত রাজনৈতিক প্রতিবাদ আয়োজনের ছায়া দেখতে পাই 'লক্ষ্মণের শক্তিশেল' নাটকে। ব্রাহ্মসমাজের এক অংশের বদ্ধ রক্ষনশীল চিন্তার প্রতিবাদে 'চলচিত্তচঞ্চরী'। আবার মধ্যবিত্তের সাজিয়ে তোলা চিন্তার জগতে নিছক কমন সেন্সের অভাব নিয়ে 'অবাক জলপান'। গল্প লিখতে গিয়ে তিনি যে মডেলটি অনুসরন করেছিলেন, তাঁর আগে সেরকম কিছু বাংলা গল্পে আমরা পাইনি। 'পাগলা দাশু' বাংলা সাহিত্যের একটি পর্যায়। প্রফেসর হেসোরাম হুঁসিয়ার বাংলার বিজ্ঞানচর্চা বোধের অন্ত:সার শূন্যতার এক সরস দস্তাবেজ। ননসেন্স থেকে শুরু করে বহুমুখী সেন্সিবিলিটির বৈচিত্র্যের সামনে পাঠককে দাঁড় করিয়ে দেওয়া তাঁর সিদ্ধির একটি নিদর্শন। তাঁর এইসব রচনা শতবার পড়া, দেখা, কিন্তু এখনও একবার পড়তে শুরু করলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত পড়ে যেতে হয়। মূলত হিউমারিস্ট হলেও ধারালো উইটের যোগান তাঁর রচনার মধ্যে বার বার চোখে পড়ে।

    .

    ' তার পর বড়দা অসুখে পড়লেন। শুনলাম রোগটার নাম কালাজ্বর, তার তখন কোনো ভালো চিকিৎসা ছিলোনা। চোখের সামনে একটু একটু করে বড়দার শরীর ভাঙ্গতে লাগলো। অমন দশাসই চেহারার আর কিছুই রইলো না। তার আগের বছরেই বিবাহের নয় বছর পরে, বড়ো বৌঠানের সুন্দর একটা ছেলে হয়েছিলো, ঘটা করে তার নামকরণ হয়েছিলো, আত্মীয়স্বজন খুব ভোজ খেয়েছিলো। ছেলের নাম সত্যজিৎ, ডাকনাম মানিক।' (লীলা মজুমদার)

    যখন তিনি সৃষ্টিশীলতার চড়াই ক্রমশ অতিক্রম করছিলেন, সেই সময়ই যতি চিণ্‌হ আঁকা হয়ে যায়। অল্প বয়স থেকেই আলোকচিত্রশিল্পে তাঁর দক্ষতা ছিলো। সতেরো বছর বয়সে ইংল্যান্ডের Boys Own Paper পত্রিকার ফোটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় তাঁর তোলা ছবি পুরস্কৃত হয়েছিলো। ঊনিশ বছর বয়সে তোলা রবীন্দ্রনাথের একটি প্রতিকৃতি সারাদেশে বিশেষ সমাদৃত হয়েছিলো। ফোটোগ্রাফি নিয়ে বাংলায় সম্ভবত প্রথম প্রবন্ধ তাঁরই লেখা ১৯১১ সালে প্রবাসী পত্রিকায়। পরে তো এই বিদ্যাটিকে পেশাদারি স্তরে উন্নীত করেছিলেন। ইলাস্ট্রেটর হিসেবে তিনি সেই সময় দেশের একজন অগ্রগণ্য শিল্পী ছিলেন। নিজের রচনা তো বটেই, সন্দেশের নানা লেখার সঙ্গে তাঁর আঁকা ছবিগুলি পত্রিকার সম্পদ ছিলো। আবোলতাবোলের নজিরবিহীন অলঙ্করণ তাঁর রোগশয্যায় করা।

    'অনেকদিন ভুগলেন বড়দা। মাত্র পয়ঁত্রিশ বছর বয়স, কতো ইচ্ছা, কতো আশা। বড়দার প্রথম বই আবোল-তাবোল প্রেসের জন্য তৈরি হচ্ছে। তার ছবি আঁকা হচ্ছে বিছানায় শুয়ে বালিশে ঠেস দিয়ে। ছোটো মানিক তার মধ্যে হামা দিতে শিখলো, হাঁটা শিখলো। তার এক বছর বয়স হলো, জন্মদিনে ছোটোখাটো উৎসব হলো।... কিন্তু সবাই জানতো ও বাড়ির সূর্য অস্ত যাচ্ছে। ' (তদেব)

    ১৯২৩ সালে তিনি শয্যাগত হয়ে পড়েন। তবে তার মধ্যে আবোলতাবোলের মলাট আঁকছেন, ডামি সাজাচ্ছেন, লিখছেন ' ঘনিয়ে এলো ঘুমের ঘোর'। ক্ষিতিমোহন শাস্ত্রী এসে ভক্তিগীতি শুনিয়ে যেতেন তাঁকে। ২৯শে অগস্ট তাঁর গুরু তাঁকে দেখতে যান ১০০, গড়পার রোডের বাড়িতে। তাঁর শিষ্য, ভক্ত, বন্ধু সুকুমারকে, তাঁর পিতৃদেব ডাকনাম দিয়েছিলেন 'তাতা', 'রাজর্ষি'র বালক চরিত্রটির অনুসরনে, রবীন্দ্রনাথ শোনালেন নয়খানি গান। ১০ই সেপ্টেম্বর, ১৯২৩ সাল, প্রদীপটি নিভে গেলো।

    '২৩ সালে মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে বড়দা তাঁর সাজানো সংসার ছেড়ে চলে গেলেন। মনে পড়ে মা আমাদের স্কুল থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। গড়পার রোডের সেই চেনা বাড়িতে লোকে লোকারণ্য। বড়দার ঘরে কোনো শব্দ নেই। বড়দা চোখ বুজে খাটে শুয়ে আছেন, আর বড়ো বৌঠান দু হাত জোড় করে চোখ বুজে পাশে বসে আছেন, বোজা চোখের পাতার ফাঁক দিয়ে স্রোতের মতো জল পড়ছে। বড়দার মা, আমার বিধবা জ্যাঠাইমা, যিনি আমার মাকে মানুষ করে ছিলেন, বড়দার খাটের অন্যপাশে মুখ গুঁজড়ে পড়ে আছেন। জীবনে এই প্রথম ব্যক্তিগত শোকের আঘাত বুঝলাম। এর আগ অবধি মৃত্যুও ছিলো শোনা কথা, ছবি দেখার মতো, তার যে কতো ব্যথা এবার বুঝতে পারলাম।'( আর কোনো খানে: লীলা মজুমদার)

    আজকে দাদা যাবার আগে
    বলবো যা মোর চিত্তে লাগে
    নাইবা তাহার অর্থ হোক
    নাইবা বুঝুক বেবাক লোক....

    আদিম রাতের চাঁদিম হিম
    তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম
    ঘনিয়ে এলো ঘুমের ঘোর
    গানের পালা সাঙ্গ মোর....
  • Nina | 68.45.76.170 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৫:৫৭490434
  • শিবাজি , খুব ভাল লাগল এই স্মৃতিচারণ।
    আচ্ছ উপেন্দ্র কিশোর রায় কে তো দত্তক নিয়েছিলেন হরি কিশোর রায়---উপেন্দ্র কিশোরের নিজের ভাই বোনেদের কি ট্র্যাক আছে--তাঁরাও কি এমন প্রতিভাবান ছিলেন?
  • kallol | 119.226.79.139 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৯:১০490435
  • সুকুমার, বাংলা টাইপের ফন্ট ও ফোটোগ্রাফী নিয়ে বেশ কুশলী কাজ করেছেন বলে শুনেছি। ওনার রচনাবলীর (আনন্দ) শেষ দুটো খন্ডে এসব নিয়ে কিছু লেখা আছে। সে ব্যাপারে একটু লেখ না শিবাংশু।
  • kallol | 119.226.79.139 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৯:৩১490436
  • অ্যালিস অনেক আগে পড়েছি, এখন পুরো মনে নেই। হযবরল অ্যালিস থেকে অনুপ্রাণিত সন্দেহ নেই, কিন্তু আমার কাছে হযবরল একটি অন্যতম প্রতিবাদ সাহিত্যও বটে। যে দক্ষতায় ও শ্লেষে আদালত আঁকা হয়েছে (হ্যাঁ, লেখা নয়), অনবদ্য বললে বোধহয় সেটা শতাব্দীর ""লঘুকথা"" হয়ে যাবে।
    একবার হিজবিজবিজের মোকদ্দমা সংক্রান্ত জ্ঞান প্রসঙ্গটি পড়ুন, প্রাক ও উত্তর স্বাধীনতা কালের আদালত তার শব্দ-গন্ধ-রূপ নিয়ে হাজির। এ জিনিস অ্যালিসে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। পুরো সাত দিনের ফাঁসী তিনমাসের জেল।

  • siki | 123.242.248.130 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৯:৫৪490437
  • অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড কদিন আগেই থ্রিডি ভার্সনে সিনেমাটা এসেছিল। দেখতে গেছিলাম। তাই অ্যালিসের গল্পটা এখনও স্মৃতিতে টাটকা।

    আর হযবরল? ও সেই ছোটবেলা থেকে প্রায় লাইন-বাই-লাইন মুখস্থ।

    অ্যালিস দেখতে বসলে বা পড়তে বসলে, হযবরল-র সঙ্গে একটা ক্ষীণ মিল খুঁজে পাওয়া যায় বটে, কিন্তু হযবরল-র জাত আলাদা। চন্দ্রবিন্দু নামক বেড়াল যখন ফ্যাকফ্যাক করে হাসতে হাসতে পাঁচিল টপকে পালায়, মনে অবধারিতভাবে চেশায়ার ক্যাট চলে আসে। কিন্তু তাও, তাও হযবরল-র চরিত্ররা কোথাও যেন আলাদা। অ্যালিসে টু সাম এক্সটেন্ট হলেও ক্রুয়েলটি আছে, খারাপ রাণী আছে, লাস্টে একটা যুদ্ধু যুদ্ধু খেলা আছে। কিন্তু হযবরল-তে? অনেক ভেবেও "আমার সেজোমামার আধখানা কুমীরে খেয়ে নিয়েছিল, তাই বাকি আধখানা মরে গেল' এর বেশি ক্রুয়েলটি খুঁজে পাই নি। :)

    সুকুমার রায় অন্য লেভেল। সুকুমারের তৈরি চরিত্রগুলো আমাদের যেন খুব চেনা, অথচ কোথায় যেন মজাদার রকমের অচেনা। হেশোরাম হুঁশিয়ার হোক, বা বোম্বাগড়ের রাজা। পাগলা দাশু হোক বা নিধিরাম-কালাচাঁদ।

    সুকুমার রায়ের একমাত্র খাই-খাইয়ের গুটিকয় কবিতা ছাড়া আর একটি লেখাও পড়তে গিয়ে কখনও বোর হই না। আজও।
  • dukhe | 122.160.114.85 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১০:২১490438
  • চলচ্চিত্তচঞ্চরির কথা এট্টু হবে না ?
    সুকুমারের একটা অসম্ভব বিষণ্ন মৃত্যুভারাক্রান্ত চিঠি উপেন্দ্রকিশোর-সুকুমার রচনাবলীতে পড়েছিলাম । প্রশান্ত মহলানবীশকে লেখা । কিন্তু অন্য কোথাও দেখি না ।
  • saikat | 202.54.74.119 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১১:৪৭490439
  • সিকির লেখায় ক্রুয়েলটির উল্লেখ দেখে মনে পড়ল -

    ক"দিন আগে মেয়েক "ফস্কে গেল" কবিতাটা শোনাচ্ছিলাম। ঐ যেটাতে গাছে বসে থাকা পাখীটাকে তীর দিয়ে মারবে একজন আর গাছের নীচে গোষ্ঠমামা ধামা ধরে বসে আছেন, পাখিটা পড়লে ধরবে বলে।

    তো শোনার পর, মেয়ে জিজ্ঞেস করল, পাখিটাকে তীর ছুঁড়ে মারছে কেন? আমি কী আর বলব, তা না না না করলাম !

    দু"দিন আগে শুনলাম, মায়ের সাথে মেয়ে রিক্সা করে যাওয়ার সময়ে, কবিতাটা আবৃত্তি করতে করতে যাচ্ছিল। গোষ্ঠমামার এগিয়ে গিয়ে ধামা ধরাটা অভিনয় করতে গিয়ে প্রায় রিক্সাওয়ালার গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে আর কী !
  • siki | 123.242.248.130 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১১:৫৯490440
  • আ-হা, সে ছুটকো ছাটকা ক্রুয়েলটি তো অন্য কোথাও পাবেই। আমি কেবল হযবরল-র কথা বলেছিলাম।

    ক্রুয়েলটি অনেক বড় মাত্রায় আছে উপেন্দ্রকিশোরের টুনটুনির বইতে। তবে বাচ্চাদের কাছে ক্রুয়েলটির ডেফিনিশন তৈরি হয় অনেক পরে।
  • ppn | 204.138.240.254 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১২:১১490442
  • আমার ন্যাড়ার সাতদিনের ফাঁসি আর তিনমাসের জেল এইটাও বেশ ক্রুয়েল লাগত।
  • kiki | 59.93.245.148 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৭:২১490443
  • ভাল্লাগ্লো।
  • kumu | 122.160.159.184 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৭:৪৮490444
  • আহা,বড়ো ভাল্লাগ্লো,সুকুমার রায় মানুষটি ও লেখকটি আমার বড় প্রিয়।
  • kumu | 122.160.159.184 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৫:১৬490445
  • দুখে,প্রশান্তচন্দ্রকে লেখা ঐ চিঠিটি এক্ষণ পত্রিকায় বেরিয়েছিল।সত্যজিৎ প্রকাশ করেছিলেন।
  • saikat | 202.54.74.119 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৫:২৪490446
  • এটা কি সেই ৮ পাতার চিঠিটা যেখানে "অমৃত", "আনন্দ" ইত্যাদি "মহান" বিষয়গুলো নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন আর লিখেছিলেন যে আশেপাশে তাকালে এসব কিছুই দেখা যায় না?
  • Nina | 12.149.39.84 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ ২১:০৩490447
  • একবার কোন এক বঙ্গসন্মেলনে সন্দীপ দেখিয়েছিলেন ডকু-সুকুমার রায়--খুব ভাল ডকু--তাতেও ছিল এটা।
  • kk | 107.3.242.43 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৭:০২490448
  • শিবাংশুদা'র এই লেখাটা খুব ভালো লাগলো। সুকুমার রায়ের সাহিত্য নিয়ে আরো একটু ডিটেলে আলোচনা চলুক না। অন্য সবাই আরেকটু বড় করে লিখুন না।

    ন্যাড়াদা স্মৃতি থেকে জবরখাকি যা লিখেছেন সেটা একটু সংশোধন করে দিলাম --

    বিল্লিগি আর শিঁথলে যত টোবে
    গালুমগিরি করছে ভেউ এর পরে।
    মিমসে মেরে যাচ্ছে বোরোগোবে,
    মোমতারা সব গড়বড়িয়ে মরে।
  • nyara | 203.110.238.17 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৮:৩৮490449
  • kk, তোমার ভার্সানটা আমি পড়েছি বলে মনে পড়ছে না। বাড়ি ফিরে বই দেখে কনফার্ম করব। আপাতত: নেটে একটা কপি দেখলাম, সেটা ঐ আমি যেটা লিখেছি সেটার মতন।

    http://www.milansagar.com/kobi/kobi-satyajitray.html
  • rimi | 75.76.118.96 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ ০৮:৪৩490450
  • তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম বইটে আমার কাছেই আছে, আনন্দএর ২০০৮, পঞ্চম মূদ্রণ। সেখানে এই ভার্সনটা আছে।

    বিল্লিগি আর শিঁথলে যত টোবে
    গালুমগিরি করছে ভেউএর ধারে
    আর যত সব মিমসে বোরোগোবে
    মোমতারাদের গেবগেবিয়ে মারে।
  • b | 203.199.255.110 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৩:৫২490451
  • আমার কেন জানি মনে হয়, সুকুমার খুব অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন জন টেনিয়েলের আঁকা অ্যালিসের ছবিগুলি থেকে। জ্যাবারওয়াকির সাথে ঐ 'ভয় পেয়ো না'-র দত্যিটার কিম্বা পান্তভূতের তুলনা করুন। কলমের অজস্র আঁচড়ে আলো-ছায়ার একটা এফেক্ট। কিছুটা সত্যজিৎ-এও দেখেছি সেটা।

    নীরদবাবু একটি লিট্‌ল ম্যাগজিন বার করতেন, (নাম ভুলে যাচ্ছি), সেটি তিনটি বা চারটি প্রকাশনার পরে বন্ধ হয়ে যায়, অত পাণ্ডিত্যের ধক সইতে পারে নি। সেখানে দিলীপ কুমার সান্যাল মশাই-এর অনবদ্য একটি সমালোচনা পড়েছিলাম।বু.. র আলোচনা তার কাছে লাগে না।
  • D | 89.147.0.172 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ ১৬:৪১490453
  • আমার কাছে সত্যজিতের একটি রচনা সংগ্রহতেও ঐ "বিল্লিগি আর শিঁথে্‌ল যত টোবে/ গালুমগিরি করছে ভেউ এর ধারে" ই আছে।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন