এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • নির্জন খড়ের মাঠে, পৌষ সন্ধ্যায়

    Shibanshu
    অন্যান্য | ২৬ আগস্ট ২০১১ | ৩৬১২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Shibanshu | 59.90.221.5 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ১৮:১৫491252
  • .
    সুপর্ণার যাওয়ার ছিলোনা, পরীক্ষা আছে নাকি, না আরও কিছু। কে জানে বাড়ির লোক জনকে এড়িয়ে যেতে দ্বিধা ছিলো। তবু যখন জানালাম আমি যাচ্ছি, আমাকে একটা শব্দে লিখলো 'যাবো'। কলকাতা থেকে আসবে সকালের গাড়িতে, চব্বিশে।

    আমি আর বাবলু যাবো আমাদের বুলেট বাইকে, জামশেদপুর থেকে শান্তিনিকেতন। প্রথম হল্ট পুরুলিয়া, তার পর হুড়ার নতুন রাস্তা দিয়ে সোজা বাঁকুড়া বাইপাস। সেখান থেকে দুর্গাপুর, পানাগড়, ইলামবাজার হয়ে হয়ে বোলপুর। বাবলুর ছোটো মামা আছেন শ্রীনিকেতনে, সেখানেই থাকা। মামা দারুন মজাদার লোক, গানপাগল, মজলিশি। মামি খুব ভালো গান করেন।

    তেইশে ভোর ছটায়, তখনও আলো ফোটেনি ঠিক করে, বুলেট নিয়ে আমরা রাস্তায়। আমি তো চা খাইনা, বাবলুর আবার দোকান দেখলেই চায়ের তেষ্টা পেয়ে যায়। সুবর্ণরেখা পেরিয়েই মানগো চকে এসেই তার চায়ের তেষ্টা পেলো। আমার সঙ্গে কড়ার আছে, পুরো রাস্তায় শুধু চায়ের জন্য দুবারের বেশি দাঁড়ানো যাবেনা। সিংভূমের শেষ ডিসেম্বরের শীত, হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে দেয়। তার মধ্যে বুলেটে খুব আস্তে চালালেও সত্তর-আশির নীচে নাবানো যায়না। দস্তানা, চামড়ার জ্যাকেট ফুঁড়ে শীত বাতাস আমাদের শরীরে খেলা করতে লাগলো। কখন যে রোদ উঠবে?

    পটমদার মোড় পেরোতেই রাস্তার দুদিকে বনবিভাগের নানা গাছের সারি। দূর চক্রবালে নীল দলমার মায়াবী হাতছানি। পৌষের নরম রোদ স্পর্শ করছে দুদিকের ধান খেত। মাঝে মাঝে আদিবাসীদের গ্রাম গুলিতে মানুষের ঘুম ভাঙছে, তাদের নিকোনো উঠোন, তকতকে কুঁড়েঘরে, ছুটে বেড়ানো মুর্গির দল, কম্বল জড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে মানুষেরা, মকাই কেটে সাজানো আছে আঙিনায়, চিকন ঘাসেরা রাত ভোর ভিজে আছে সতেজ শিশিরে .... সিংভূমে ভোর উঠে এলো নম্র অপ্সরার মতো।

    দ্বিতীয়বার সুবর্ণরেখা পেরোতে হবেনা এদিকে। জয়দার আগেই বাঁদিকে মোড় নিয়ে চান্ডিল রেল লাইন পেরিয়ে সোজা বরাভূম। রাস্তার দুদিকে মানভূমের অযোধ্যা পাহাড়ের রেঞ্জ শুরু হয়ে গেলো। গরুর গাড়িরা রাস্তায় নেমে পড়েছে। তার সঙ্গে গরু-ছাগল-ভেড়ার সারি বেঁধে রাখালদের দিন শুরু হয়ে গেছে। গ্রাম পেরোবার সময় সতর্ক চোখ রোদের মধ্যে রাস্তায় খেলতে থাকা শিশু বালকদের বাঁচিয়ে বাইক চালানো।

    পুরুলিয়ার আগে আর থামবো না।

  • Shibanshu | 59.90.221.5 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ১৮:১৭491263
  • .
    নডিহায় ঢোকার আগেই একটা আধোচাঁদের বাঁক আছে। একটা ছড়ানো পুকুরকে ঘিরে রাস্তাটা ঢুকছে নডিহা হয়ে পুরুলিয়া শহরে। সকাল প্রায় নটা। তখনও পুরুলিয়ায় কোনও বাইপাস ছিলোনা, শহরের মধ্যে দিয়ে যেতে হতো। বাবলুর আবার চা তেষ্টা। 'না' বলে দিতে বলে কি, চল তবে গদাইয়ের রসগোল্লা খাবো। বেশ গরম রসগোল্লা পাওয়া যাবে এখন। সক্কাল নটার সময় রসগোল্লা খাবে, কী আবদার। কিন্তু কী করা। ও তল্লাটে গদাইয়ের রসগোল্লা এক্সপোর্টেবল আইটেম। মুখটা মেরে গেলে কয়েকটা বেগুনিও তো হতেই হয়। সব হলো। বেশ খানিকটা সময় গেলো। বাবলুর মেজাজ খুশ। ঢেঁকুর তুলে বললো, দে এবার আমি চালাই।

    নো স্টপ বিফোর দুর্গাপুর।

    মানভূম আর মল্লভূমের প্রকৃতি অনেকটা এক হলেও একটু পার্থক্য আছে। মল্লভূমে সবুজের অনুপাতটা বেশি। হুড়া থেকে কাঁটাপাহাড়ি পেরোবার পর থেকেই সবুজের রংমিশেলে বৈচিত্র্য এলো। ওপার বাংলার গ্রাম আমি দেখিনি। আমার গ্রাম দর্শন তো উত্তর-দক্ষিণ রাঢ়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। উত্তরে ধুলিয়ান , দক্ষিণে ক্যানিং, পশ্চিমে মানবাজার-বান্দোয়ান আর পূর্বে বনগাঁ।

    বাঁকুড়া পেরিয়ে গেলাম বাইপাস ধরে। বেলেতোড়, বড়জোড়ার পর নদী পেরিয়ে দুর্গাপুর। এখানে বাবলুর অনুপ্রেরণা থাকেন।

    গৌরী সত্যিই গৌরী। শান্ত, শীলিত, ধারালো। কী করে যে বাবলুর সঙ্গে কম্যুনিকেট করে, এটাও একটা রহস্য। অবশ্য বাবলুর মতো মনের সম্পদ অল্পলোকের মধ্যেই থাকে। আমার কাছে সব সময় লো প্রোফাইল হয়ে থাকার মধ্যেই ওর আনন্দ। বলে, আমি তোর সাংকো পাঞ্জা। অথচ ওতো যে সে ছেলে নয়। যাকগে।

    দুর্গাপুরে ঢুকবার সময়ই আমি জিগ্যেস করলাম, তোর কতোক্ষণ লাগবে? আররে, পাঁচ মিনিট। এতোক্ষণে বেনাচিটিতে পৌঁছে গেছে নিশ্চয়। জাস্ট কাল পরশুর প্রোগ্রামটা ফাইনাল করেই বেরিয়ে যাবো, বুঝলি। আমার সময় নিয়ে বাতিকের ব্যাপারটা ও জানে। চা খাবিনা? হ্যাঁ একটু... বলে হাসলো ওর সেই হাসি। ওটা দেখলেই বোঝা যায় গৌরী কিসের টানে আসে।

    সিটি সেন্টারের সামনে ঠিক দাঁড়িয়ে আছে ক্যাসাবিয়াংকার মতো। শীতের নরম রোদে অন্যদিকে তাকিয়ে। কাঁচা হলুদ রঙের একটা কার্ডিগান আর টিয়া সবুজ শাড়ি। বাবলু কি নার্ভাস একটু। অনেকদিন পর দেখা তো। গৌরী কি আর একটু সুন্দর হয়েছে ? এবার দেখতে পেয়েছে। অল্প হেসে বললো, কী চেহারা হয়েছে...। ঠিকই তো, দুশো কিমির উপর শীতের মধ্যে বাইক চালিয়ে এলে ও রকমই দেখায়। 'তোরা কথা বল, আমি গাড়িতে একটু তেল ভরে নিয়ে আসি।' শিবাজিদা, তাড়াতাড়ি আসবে। আমরা খেতে যাবো।' আমি বলি, নাহ, আগে তোমাকে নিয়ে একটা পদ্য লিখবো, তার পর খাওয়া।
    'দাঁড়াও, পর্ণা আসছে না কাল। তোমার মজা বার করবে। কোনও দিন শুধরাবে না।' ততোক্ষণ তোমরা মজা করো। আমি উধাও।

    ভিড়িঙ্গি মোড়ের কাছে এই রেস্তোঁরাটা আমি আগে দেখিনি। নতুন হয়েছে। বাবলুকে দেখিয়ে গৌরীকে বললাম, এটাকে ওভারইটিং করিও না। আবার যেতে হবে বাইকে। শীতকালের দুপুরে চলতি বাইকে ঘুমিয়ে পড়বে।
    খাওয়াটা ভালই হলো। কিন্তু তাদের কথা তো ফুরায় না। আমি বললাম, বাবলু তুই এখানেই থাক। আমি চললুম, সব কথা কি এখনই বলে নিবি নাকি?
    গৌরী অপাঙ্গে তাকিয়ে বললো, বেশ কাল পরশু আমিও দেখবো, কার কার কথা ফুরায় না।
    আহা সখি, এখনই মান করুনি গো, এখনও তো বাঁশিটো বাজাইলামই না।

    এবার সোজা কাকসা পানাগড় হয়ে রামনাবাগান। এই জঙ্গলটা সেই সময় একেবারে আমাদের জামশেদ্‌পুরের দোমোহানি-বাঘাকুদার শালবনের মতো সুন্দর ছিলো। এখন কেমন কে জানে। বহুকাল যাইনি ঐ পথে।

    ইলামবাজার থেকে ডানদিক নিয়ে যেতে যেতে দেখি রোদ নরম হয়ে আসছে। পৌঁছে গেছি প্রায়। রাস্তার ধারে বসতি বাড়ছে, লালধুলো আর ডিজেলের ধোঁয়া ওড়ানো বাসের সংখ্যা বাড়ছে, ধূলিরঙিন জিলিপি সিঙাড়ার দোকান বাড়ছে, বাড়ছে ঘিঞ্জি রাস্তা আর সাইকেল রিক্‌শার কনভয়, দেবেন্দ্রনাথের পালকি কি এই পথেই গিয়েছিলো? ডেস্টিনেশন বোলপুর।
  • Shibanshu | 59.90.221.5 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ১৮:২০491274
  • .
    যে রাস্তাটা বোলপুর থেকে সিউড়ির দিকে যায়, শান্তিনিকেতনের পরিধির প্রান্ত ছুঁয়ে, সেটা দিয়েই যেতে হলো এই মেলার সময়, ভিড় বাঁচাতে। সুরুল কুঠির সামনে শ্রীনিকেতনের কর্মীদের যে বাড়ির সারি, সে পথেরই প্রান্তিক বাড়িটিতে বাবলুর ছোটো মামা থাকেন। প্রচুর ধুলো উড়িয়ে গম্ভীর নাদের বাইকটি যখন গেটের সামনে দাঁড়ালো, তখন সন্ধের ঝুঁঝকো আঁধার নেমে এসেছে।

    বাঙালিদের স্বাগত সম্ভাষণ যেমতি সতত উচ্চকিত ও উষ্ণ , এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নেই। শীতজর্জর পথিকদের জন্য সন্ধ্যার কুলায়। স্নানটান করে একটু থিতু হতেই মামার আদেশ, একটু বসা যাক। ওনার বৈঠকখানার গালচেতে একাধিক হারমোনিয়াম বাজার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। মামার মাথায় পৌষোৎসব চলেছে, জাগে নাথ জ্যোছনারাতে। মামি গাইলেন , আজি বিজন ঘরে। আমার গলা দিয়ে আওয়াজ বিশেষ বেরোচ্ছিলো না, তবে আদেশ পরবশ হয়ে, তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রনে।

    এবার শুতে হবে। ভোরবেলা ছাতিমতলার অনুষ্ঠান সেরে স্টেশন আর বাসস্ট্যান্ড। পর্ণা আর গৌরী আসিবেন ধন্য করিতে। আমাদের ভূমিকা চড়নদারের।

    লেপের মধ্যে ঢুকে চোখ বুজেছি কি বুজিনি, আলারামের ডাক। ভোর হলো, চোখ খোলো। বাবলুকে ঠেলি, ওঠ ওঠ , না না তুই সেরে আয় তারপর আমি যাবো। ঠান্ডায় মহর্ষি কি রবিশ্রী কিছুই আর টানেনা। কেন যে বুড়ো এতো ভোরবেলা উঠতো। নিজে উঠবি তো ওঠ, সকলকে লেপ ছাড়িয়ে 'উপাসনা' করতে টানাহ্যাঁচড়া। ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয়ই ঠিক ছিলো, বিশ্বভারতীর প্রয়োজন ছিলোনা।

    যাহ , কী আর করা। উঠে দেখি মামারা ইতোমধ্যে স্নানটান করে রেডি। কিন্তু খুব ভদ্র, আমাদের ডাকাডাকি করেননি। আমারও দিন শুরু হলো কাঁপতে কাঁপতে। চারজন মিলে বেরোলাম। মামা বললেন, অনেকটা পথ, রিক্‌শায় যাবো, নয়তো দেরি হয়ে যাবে। আমি ঐ যন্ত্রটিতে প্রাণ থাকতে চড়িনা, সেটা বাবলু জানে। ঠিক হলো আমরা হেঁটে যাবো এবং ওনাদের আগেই পৌঁছে যাবো।

    গৌরপ্রাঙ্গনে পোঁছে দেখি মোটামুটি ভালো জমায়েত। ঘাসের উপর পাতা সাদা কাপড় শিশিরে আধো ভেজা। কোনও নেতাটেতা আসেনি বলে মানুষ নিশ্চিন্ত হয়ে ঘোরাফেরা করছে। বেদমন্ত্র গান যখন শুরু হলো, তখনো রোদ ওঠেনি। সুপ্রিয় ঠাকুর উপনিষদ থেকে পাঠ করলেন। ( আশ্রমিক পার্লান্সে বলি ) মোহরদি আসতে পারেননি, তাই গোরাদা আর বাচ্চুদি গান পরিচালনা করছিলেন। আটদশজন প্রায় তরুণী আর দুচারটি ছেলে সেজেগুজে গান গাইছিলো। শান্তিনিকেতনের ছেলেদের নিয়ে কিছু বলতে পারিনা, কিন্তু মেয়েগুলিকে ভোরের আলোয় তাদের সাদা শাড়ি আর প্রচ্ছন্ন প্রসাধনে গ্রিক মিউজদের মতো লাগছিলো। যে সব 'বৈষয়িক' লোকের হৃদয় হারানোর কোনও ব্যাধি নেই, তারাও হয়তো চুপি চুপি 'আগুনের পরশমণি' গেয়ে ফেলবে ঐ নজারা দেখে ( 'জনগনমনে'র পর এই রবীন্দ্রগানটিই আপামর বাঙালি জানে। হ্যাঁ, এখন আর একটি যোগ হয়েছে ঐ লিস্টে, পুরানো সেই দিনের কথা। এই দুটো গান এখন আমাকে মেরে ফেললেও আর গাইতে পারিনা)।

    নীলিমা সেনের 'শুভ্র আসনে বিরাজো অরুণচ্ছটা মাঝে' ভোরের আলোয় ললিত যে কেমন করে ভিতরটা ধুইয়ে দিতে পারে, তার স্বাদ পেলাম সহজ সমর্পণে। আরও একটা ধারণা হলো আমার, গানের ক্ষেত্রে স্থান-কাল-পাত্রভেদ সত্যিই কতোটা জরুরি। ভালো লাগলো আরেকজন গায়িকার 'সার্থক করো সাধন'। দিনটা ভালো যেতেই হবে।

    বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় নটা। সাড়ে নটার মধ্যে বাস স্ট্যান্ডে যেতে হবে। গৌরী আসবে বাসে, দুর্গাপুর থেকে। তার পর দশটা নাগাদ পর্ণার আসার আছে ট্রেনে, 'শা নি এক্সপ্রেস'। বেরোলুম ঘোড়ায় চড়ে। বোলপুর বাসস্ট্যান্ডে মেলার জনতা দলে দলে আসতে শুরু করে দিয়েছে। দুর্গাপুরের বাস যেখানে আসে, সেখানে দাঁড়িয়ে বাবলু উত্তেজনায় একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেললো। ঠোঁটে সিগারেট ঝুলিয়ে রাখলে মেয়েরা স্মার্ট বলবে, এই ফিল্মি ধারণাটা এখনও ওর যায়নি।

    একটি মিনিবাস থেকে নেমে এলেন গৌরী, যেন ঊষার সোনার বিন্দু, কমলা রঙের সিল্ক আর খোলা চুল। প্রাণের সিন্ধুকূলে এভাবেই ঊষা নামে..... বুড়োর হাত থেকে রেহাই নেই।
    অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছো?

    হ্যাঁ, আবহমানকাল ধরে দাঁড়িয়ে আছি তোমার জন্য। ডিজেলের ধোঁয়া, পানের পিক, বিড়ির গন্ধ, খালাসির চিৎকার, এই সব যেন মায়া , শুধু তুমি আসবে সেটাই সত্য।

    ওফ, সকাল সকাল শুরু হলো আবার

    তোমার হলো শুরু, আমার হলো সারা...

    বড্ডো ক্লিশে বলছো...

    বেশ এবার তুমি ক্রিয়েটিভ কথাবার্তা শুরু করো এই চাষাটার সঙ্গে, আমি যাই স্টেশনে, খেপ মারতে।

    না, না, আমরাও যাবো পর্ণাকে আনতে....

    বাবলু মুখ খুললো এতোক্ষণে, সকাল থেকে প্রথম, শালা একা যাবে স্টেশনে, হাড্ডি হয়োনা,

    ট্রেন বললো দশ মিনিট লেট। তার পর যথারীতি লুচি আলুর দমওয়ালারা দৌড়াদৌড়ি শুরু করলো, চক্রবালে গাড়ি দেখা গেছে।
    ট্রেনের কোনদিকটায় পর্ণা থাকবে জানা নেই, তবে প্ল্যাটফর্মে আমার পাকা ঠিকানা বইয়ের দোকান, এটা সবাই জানে।

    ট্রেন তো এলেন গজেন্দ্রগামিনী। তার পরেই শুরু হলো খেলা। মনে হলো সারা কলকাতার বাঙালি যেন এই গাড়িটায় বোলপুর এসে পৌঁছোলো।

    এর মধ্যে খোঁজা বৃথা। আমি এখানেই থাকি, ঠিক খুঁজে নেবে। তবে বাংলা সিনেমায় যেমন দেখা যায়, নির্জন দীর্ঘ প্ল্যাটফর্মের এক প্রান্ত থেকে নায়িকা ললিত ভঙ্গিমায় দৌড়ে এসে নায়কের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো স্লো মোশনে, আমার কপালে সেরকম কোনও সম্ভাবনা নেই। চোখগুলো তো খুঁজছিলো পরিচিত চেহারাটি এদিকে ওদিকে ..., কিন্তু পৌঁছোতে পারছিলো না ।

    হঠাৎ পিঠে টোকা, চমকেই গিয়েছিলাম, ফিরে দেখি দাঁড়িয়ে আছে, একটু রুখু চুল, ক্রিমউঙ্কÄল ত্বক, মেরুন শাড়ি আর কালো চোখ।

    তুমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো এইখানে ? এতো ভিড়ে যদি আমি হারিয়ে যেতাম...

    বলতে চাইলাম, কোথায় আর যাবে...

    কোনও শব্দ বেরোলো না।
  • Sibu | 173.117.122.216 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ১৮:৪০491282
  • একটু রুখু চুল, ক্রিমউহ্বল ত্বক, মেরুন শাড়ি আর কালো চোখ - এই ক'টা কথা কিছু একটা মুচড়ে দিল।

    যৌবনবেদনারসে উচ্ছল আমার দিনগুলি, হে কালের অধীশ্বর অন্যমনে গিয়েছ কি ভুলি?
  • pi | 72.83.92.218 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ১৮:৫০491283
  • সুপর্ণা শীতকালেই এলো ? :)
  • achintyarup | 121.241.214.34 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ১৯:১২491284
  • আহা!
  • kumu | 122.160.159.184 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ১৯:১৬491285
  • এসেছ প্রেম,এসেছ আজ কি মহাসমারোহে-
  • kiki | 59.94.2.206 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ২২:২৮491286
  • শিবাংশুদা,
    থ্যাঙ্কু :)
  • Su | 86.160.15.140 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ০০:৩৪491287
  • 'আদিগন্ত নভোময়' কথাটা শিখেছিলাম শিবুদা -- অসাধারণ সংযত প্রেমগল্প! কাল বেলার টুকরো পাতা লাগছে- মাধবীলতা আসছে -- অনিমেষ প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে -- অপুর্ব
  • Nina | 68.45.76.170 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ০৩:৫০491253
  • আমারও মনটা গুনগুনিয়ে উঠল--কুমুর মতন
    একেলা রই অলসমন, নীরব এই ভবনকোণ
    ভাঙিলে দ্বার কোন সে ক্ষণ অপরাজিত ওহে

  • Sibu | 66.102.14.1 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ০৪:৩৩491254
  • বাংলায় ভাল প্রেমের গল্পের একটা লিস্টি পেলে হত।
  • rimi | 75.76.118.96 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ০৮:০৫491255
  • নিজেই একটা লিখে ফেল না :-))) কম তো অভিজ্ঞতা হয় নি ;-)
  • h | 116.203.156.202 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ০৮:৩৩491256
  • খড়, নির্জনতা, সন্ধ্যা,পৌষ ইত্যাদি দেখে এক কবির জীবনীর একটা চ্যাপটার মনে পড়লো। হাউ টু মেক লাভ অন হে উইদাউট মেকিং সাউন্ড। নির্জনতার সংগে আপস চলেনা।

    শিবুদা এই থিম টা ট্রাই করতে পারেন, গিভেন হাউ ইউ আর লাইকলি টু ফ্যান্সি হেমিংওয়ে ;-)
  • aka | 75.76.118.96 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ০৮:৪৬491257
  • ক্ষী টাফ।
  • Shibanshu | 59.90.221.5 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ১১:০৬491258
  • .

    স্টেশন থেকে বেরিয়ে বুলেট বাইকটি দেখেই বললো, আমার এটা দেখলে ভয় লাগে, আমি চড়বো না।
    আহা চড়োনা, পড়বেনা, গ্যারান্টি। শুধু ঠিক করে বসো।
    আরে মাঝখানে এতোটা জায়গা ছেড়ে বসলে কী করে চলবে? ঠিক করে ধরে বসো।
    ঠিক করে মানে?
    মানে আমাকে ধরে বসতে হবে।
    আমাকে নামিয়ে দাও। আমি দিনদুপুরে ওভাবে যেতে পারবো না...
    তার মানে রাত হলে পারবে, তা ব্রেশ...
    আমি মোটেই তা বলিনি...
    তা হলে...

    এই সব মূল্যবান বাক্যালাপ হতে হতে 'প্রাণের আরাম'এর গেটে পৌঁছে গেছি। পর্ণা ওর এক বন্ধুর সঙ্গে মেয়েদের হস্টেলে থাকবে।
    হস্টেলের সামনে পৌঁছে দেখি পর্ণার বন্ধু শুভা অলরেডি মৌজুদ।
    বাহ বাহ, কী দৃশ্য সকাল সকাল। একেবারে অর্জুনের সুভদ্রাহরণ লাগছে।
    এই শান্তিনিকেতনের মেয়েগুলো সারাদিন বাংলাকাব্য পড়ে পড়ে একেবারে বখে গেছে।
    ব্যাগটা নামিয়ে দিয়ে বললুম, একটু ফ্রেশ হয়ে নাও, আমি আসছি আধ ঘন্টায়।

    কালোর দোকানে গিয়ে দেখি বাবলুবাবু গৌরীসহ বসে আছেন।
    কী রে পর্ণা কই?
    এলোনা...
    মানে..?
    মানে তাই। আমাকে এবার গৌরীর সঙ্গেই ঘোরাঘুরি করতে হবে।
    বেশ তাই কর, আমি বিদায় হই।
    তা কেন, তোর তো উত্তীয়র গান শুনলে প্রাণ কাঁদতে থাকে। নরম করে চিন্ময় , ন্যায় অন্যায় জানিনে... কী কী সব। মন দিয়ে এই সব গান কর, আর আমি আর গৌরী যখন হাত ধরাধরি করে ঘুরবো তখন হাফ কিমির মধ্যে আসবি না। তোর থোবড়াটা দেখলে আমার মেজাজ চটকে যাবে। গৌরীকে নিয়ে এই মূহুর্তে আমার মাথায় অন্তত পাঁচটা পদ্য ঘুরছে।

    তোমরা কী শুরু করেছো বলোতো? নিশ্চিত আসবে বলে এলোনা, খোঁজ খবর নিতে হবেনা?

    কার খোঁজ? কেউ কথা রাখেনি বরুণা... আমি তোমাকেই তিন পহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো... যাবেনা?

    শিবাজিদা, তুমি কি সহজ করে একটা কথা বলতে পারোনা? আমার চিন্তা হচ্ছে আর তুমি কী সব আজে বাজে কথা চালিয়ে যাচ্ছো...
    - বাবলু তোর প্রেমিকা কেউ কথা রাখেনিকে আজে বাজে বললো। ওকে তুই এক্ষুনি ডিভোর্স দে।
    দিলাম...
    গৌরী, তবে তোমার আর আমার মধ্যে আজ আর কেউ নেই, আজ থেকে তুমি শুধু আমার...
    এই দুরন্ত সংলাপটা পুরো শেষ হবার আগেই চায়ের দোকানের বাচ্চাটা ঠক ঠক করে দুটো ডবল হাফ নামিয়ে দিলো টেবিলে।

    আমার দিকে তাকাতেই মাথা নাড়লাম...
    এমনিতেই চা আর আবাপ দেখলে শরীর খারাপ করে, তার ওপর এমন একটা হৃদয়ের অবস্থায়?

    ওরা দুজন চুপচাপ চা খাচ্ছিলো, অপরাধীর মতো। হঠাৎ গৌরী চিৎকার করে উঠলো,
    - ঐতো ঐতো, পর্ণা আসছে শুভার সঙ্গে...
    আবার বাইক চড়ার ভয়ে দুজনে হেঁটেই রওনা দিয়েছে মেলার দিকে।

    বাবলু আমার দিকে তাকাতেই আমার করুণ চোখ...
    - তুইই জিতলি, আমি আবার তোকেই গৌরী সম্প্রদান করে দিলুম।

    তিনজন প্রগলভ তরুণী বহুদিন পর এক জায়গায় হলে যে স্তরের সাউন্ড য়্যান্ড ফিউরি তৈরি হয়, তার কোনও অন্যথা এক্ষেত্রেও হলোনা। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। তার উপর আমাকে নিয়ে অগণন অনুযোগ দুজনেরই এবং এই ব্যাপারে তারা অদ্ভূতভাবে সহমত।

    যথেষ্ট সময় দেবার পরেও তেনাদের অভিযোগের কোনও সুরাহা হলোনা। বাবলু একটু অধৈর্য হয়ে বললো, তোমরা এই বেঞ্চি আলো করে বসে থাকো সারাদিন, আমরা একটু ঘুরে ফিরে আসি।

    - ঘুরবে আর কি, সেই তো মেয়ে দেখে বেড়াবে, চিনিনা তোমাদের...?
    (এটা অবশ্য একান্ত সত্যি কথা, ভালই চেনে আমাদের) ।

    - তবে তোমরাও চলো।
    - শুভা, তুমি কি আমার দ্বিতীয় পক্ষ হতে রাজি আছো?
    - একটাকেই সামলান আগে, তার পর দ্বিতীয় পক্ষ...
    - বেশ গুড লাক...

    পৌষোৎসবের সঙ্গে মেলার সংযোজন যখন শুরু হয়, তখন মহর্ষির মনে ধর্মীয় উদযাপনের সঙ্গে একটা অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যও ছিলো। তা হলো বোলপুর, রাইপুর, শ্রীপুর, দেবীপুর ইত্যাদি চারপাশের নানা গ্রামের গ্রামীণ পণ্য বিপণনের জন্য পৌষ মাসে একটা অস্থায়ী বাজার তৈরি করা। এই সময় গ্রামীণ মানুষের হাতে কিছু উদ্বৃত্ত অর্থ থাকে। তা দিয়ে সারা বছরের নানা গৃহস্থালীর পণ্য লোকে এই সময় কিনে রাখতো। যাতে এই টাকাটা গ্রামের স্থানীয় অর্থনীতির মধ্যেই আবর্তিত হয়, তার জন্য এই মেলার প্রাঙ্গনটি তিনি ব্যবহার করেন। জন্মশতবর্ষের পর মহর্ষির কনিষ্ঠ পুত্র ( ডিসক্লেমার: বুধেন্দ্রনাথ শৈশবেই গত হয়েছিলেন তাই রবিকেই কনিষ্ঠ বলা হতো) সত্যিকারের 'ঠাকুর'এ পরিণত হয়ে পড়েন আর বাবা তারকনাথ বাবা লোকনাথের মতো বাবা রবিনাথ হয়ে বাঙালির 'ঠাকুরঘরে' নির্বাসিত হয়ে যান। সত্তরের দশক থেকেই এই মেলাটি তার গ্রামীণ চরিত্র সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলে। পাজামা পাঞ্জাবি ঘাড়ে পাউডার টুকটুকে লিপস্টিকের বাঙালি এসে এই মেলাটিকে হাইজ্যাক করে নেয়।
    আমরা ইহাকে 'পৌষমেলা' বলিয়া থাকি।

    - চলো যাওয়া যাক, প্রথম চক্করটা দিয়ে আসি, কী কী এলো দেখি একবার।
    চারজনে উঠে পড়লাম। ভুবনডাঙ্গার লাল ধুলো জগতবিখ্যাত এবং তা কখনো মাটিতে থাকেনা। থাকে আমাদের পায়ে, গায়ে, চোখে, মাথায়। একটু পরেই দেখি চারজন থেকে দুজন হয়ে গেছি।

    - শোনো, এবার পকেটের অবস্থা বড়ই করুণ। কী যে নিই তোমার জন্য....
    - আমি কী কিছু নিতে বলেছি। আমার কিচ্ছু লাগবে না।
    - নাই বা তোমার থাকলো প্রয়োজন... কিছু দেবো বলে চায় যে আমার মন...
    - দ্যাখো, পদ্য বলে যাদের ভোলানো যায় আমি সে মেয়ে নই
    - তাহলে ভুললে কিসে...
    - যে কবি পদ্য বলেনা, তাকে দেখে...
    - শুধু দেখে ?
    একটু থেমে বললো,
    - জানিনা, আমি একটা পাগল...
    - তা জানি, নইলে শেষ পর্যন্ত আমার সঙ্গেই জোটো ।

    এবারে বেশ কয়েকটা বইয়ের দোকান এসেছে। বিশ্ববাণীর দোকানে বেশ ভালো স্টক। আমার শহরে সব আছে, নেই শুধু কোনও বাংলা বইয়ের ঠেক, তাই প্রচুর বাংলা বই এক জায়গায় দেখলেই কেমন আদেখলার মতো লাগে নিজেকে।

    - দ্যাখো, আমি এখন একটু বই দেখবো। তোমার দিকে হয়তো বেশিক্ষণ তাকাবো না, কিন্তু রেগে যেওনা, আমি তোমার, তুমি আমার...
    - তোমার ডায়ালগগুলো দিন দিন চিৎপুরি হয়ে যাচ্ছে, খুব যাত্রা দেখো না কি আজকাল?

    - যাত্রা দেখা আর বিড়ি খাওয়া দুটো ই আসেনা আমার। এই ব্যাপারে আমি একেবারে সাব অল্টার্ন নই।

    দুজনেই ডুবে যাই বইয়ের রাজ্যে। হঠাৎ দেখি ভারবির জীবনানন্দের শ্রেষ্ঠ কবিতা, বহুদিন ছাপা ছিলোনা। বইটা তুলে লিখে দিই, 'পর্ণাকে'। আমার কাছে 'এই সব দিনরাত্রি' কোথায় পাওয়া যাবে জানতে চেয়েছিলো একবার। দুজনের মিলিয়ে কয়েকটা বই হলো। দেখি হাত ব্যাগ খুলে পার্স খুঁজছে। আমি বলি, যতো সামান্যই হোক, একটা চাকরি তো পেয়েছি, বইয়ের দামটা তো দিতেই পারি।
    আবার এদিক ওদিক। দেখবে বলে করেছে পণ, দেখবে কারে জানেনা মন.... প্রেমের দেখা দেখে যখন... তার পর ? তার পর যে কী, তা কি আমরা জানি?

    গায়ে গায়ে পাঞ্জাবি, চামড়ার বাটিক, ইস্টিলের বাসনপত্র, কাঁথাশাড়ি, পেলাস্টিকের খেলনার দোকান। আবার ট্র্যাক্টর বেচতেও লোকে এখন এই মেলায় আসে, আসে ব্যাংকের কাজকম্মো নিয়ে জ্ঞান নিতে।

    পেটে কিছু পড়া দরকার। বাবলুটা যে কোথায় গেলো। নিশ্চয় খাবারের দোকানপত্রের কাছেই থাকবে। যা ভাবা তাই হয়। দেখি সিদ্ধেশ্বরী ভোজনালয়ের শামিয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে ডাকছে। পর্ণাকে বলি,

    - চলো। কবির যখন খিদে পায়, তোমাদের মতো লেসার মর্টালেরও নিশ্চয় পেয়েছে।

    বাবলু চেঁচায়, ওরে এখানে পোস্ত পাওয়া যাচ্ছে, তোর আর কিছু তো লাগবে না।

    একটা টেবিল নিয়ে মুখোমুখি বসি আমরা। আশ্চর্য, এতোক্ষণ হয়ে গেলো, এই প্রথম আমরা মুখোমুখি তাকালাম। এখন ভাবি সারা জীবনে কতোক্ষণ আর আমরা মুখোমুখি বসি, পরস্পরের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি....

    রাত এগারোটায় যখন পাশাপাশি উষ্ণতায় ঘিরে বসে শুনছিলাম বাউলগান, কে বানালে এমন ঘর, ধন্য কারিগর.... মাথাতে ঘুরছিলো সেই প্রশ্ন, কার ঘর ? কে কারিগর? ঘর কে গড়ে কেই বা ভাঙে? কার ঘর, কে থাকে?

    হঠাৎ কানে কানে প্রশ্ন এলো,
    একটা কথা বলবো, হাসবে নাতো?
    বলো...
    আমার যদি সারা জীবন এভাবে তোমার সঙ্গে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে হয়, তুমি কি না বলবে...?

    প্রশ্নের উত্তরে চুপ থাকা বোধ হয় আমার ধাতে নেই, কিছু হয়তো বলা যেতো। কিন্তু ঐ চোখ আর সারাদিনের শ্রান্তিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনও ভাষা আমার জোগালো না।
    প্রেমের দেখা দেখে যখন, চোখ ভেসে যায় চোখের জলে...
    চোখে জল ছিলো কি? কে জানে ছিলো বোধ হয়, এতোদিন পরে আর মনে নেই।
  • Shibanshu | 59.90.221.5 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ১১:১৮491259
  • .

    বাউলগান শুনে যখন উঠলাম তখনও ঘোর কাটেনি যেন। এই প্রায় মধ্যরাতের ধুলোট হিম শীতলতায় পর্ণার হাতটা কোমল, উষ্ণ, শরীরী। না, এতো উত্তাপ শুধু শরীর ধরে রাখতে পারে না। কোথায় তা লুকিয়ে ছিলো, ওর শরীরে না আমার মনে, কে জানে?
    সব কিছু তো জানা যায়না। কিছু বাকি রেখে যেতে হয় পৃথিবীতে।

    - গৌরীরা কোথায় গেলো, দেখছি না তো।

    - আমি জানি ওরা কোথায় থাকতে পারে, চলো...

    ঠিক জানি, দুজনে বসে আছে উত্তরায়ণের সিঁড়িতে, নির্জন হিমশিশিরের ছলনা উপেক্ষা করে, একই চাদর জড়িয়ে।

    বাবলুকে একবার বলেছিলাম, জানিস এই উত্তরায়ণের সিঁড়িগুলো দেখলে আমার কেমন রোমাঞ্চ হয়। কারা কারা সব হেঁটে উঠেছে এই সব সিঁড়ি দিয়ে। যেতে চেয়েছে সব পেয়েছির মানুষটির কাছে। চোখ দিয়ে, আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে এসেছে তাঁকে। পরশপাথর ছুঁয়ে এসে নিজেরা সোনা হয়ে গেছে। হয়ে গেছে অন্য সব ইতিহাসের নায়ক কোনদিন। সিঁড়িটা কি তার খবর রাখে?

    বাবলু বলে, অতো বুঝিনা, শুধু এই বুঝলুম এই সিঁড়িটার ধুলো আমাদের মতো ফালতু মানুষদেরও সোনা করে দিতে পারে।

    গৌরীকে নিয়ে যাবার জন্য এর থেকে ভালো জায়গা ওর আর কী থাকতে পারে?

    গৌরী আর পর্ণা চলে যাচ্ছে হস্টেলের দিকে। শুভার ঘরের অন্য সঙ্গী বাড়ি গেছে, ওরা তিনজন মিলে একটা ঘরেই থাকবে। আমরা দুজন যাত্রা করি সুরুলের আস্তানায়। বুলেটের গমগমে আওয়াজে নিস্তব্ধ রাতে ঘুমন্ত বিনয় ভবন পাশ ফিরে শোয়।

    - বাবলু কাল সকালে খোয়াই যাবি?
    - কখন ?
    - যতো ভোরে হয়...
    - নাহ, তুইই যা, গৌরী একটু দেরিতে আসবে বললো...
    - বেশ।

    পর্ণা আজ ভোরে খোয়াইতে সূর্য ওঠা দেখতে চেয়েছিলো। কী করে এভাবে আমার ইচ্ছেগুলো অবলীলায়, অজান্তে ধরে ফেলে, কে জানে।

    আজ বড়োদিন। ভোরবেলা যখন কালীসায়রের ধার দিয়ে বাইক নিয়ে আসছিলাম তখন কাঁপানো শীত। শিশিরের শব্দের মতো ভোর নেমে আসছিলো লালমাটির স্বর্গে। এতো সকালে কি উঠতে পারবে ? কাল অতো রাত হলো শুতে। পৌঁছে দেখি একেবারে রেডি, পুটুশফুল তুলে গুচ্ছ তৈরি করছে। থামতেই ফুলের গুচ্ছটা এগিয়ে ধরল।
    - শুভ বড়োদিন, তোমার ভালো হোক।

    হেঁটে যেতে সময় লাগে, কিন্তু ঘোড়ায় চড়ে প্রান্তিক পেরোতে আর কীই বা সময় লাগবে। ঐ অন্তস্বত্বা নীরবতায় গাড়িটার যে শব্দটা আমার খুব প্রিয়, তাকে যেন অসহ্য লাগছিলো। থামিয়ে দিলাম।
    - চলো, বাকিটা হেঁটেই যাই।

    ঐ আধো আলোতে শুকনো লাল খাত, আদিগন্ত নভোময় একপশলা ভোরের লাজুক, মায়ামদির পদধ্বনি শুনতে চেয়েছিলাম আমরা। ঐ সবুজ বাঁশবন, লাল মাটি, হলুদ নরম রোদ, নীল নির্জল আকাশ ... এখানেই হয়তো মৃত্যুর আগে মানুষ তার শেষ কথাটি সঠিক উচ্চারণ করতে পারে, জীবনের সব সজল প্রতিশ্রুতিও যেন এখান থেকেই একদিন ঝরে পড়েছিলো প্রথম শিশিরের মতো....

    - তুমি এবারে আমাকে এখনও একটাও গান শোনালে না....

    - শুনবে? বেশ, অনেকক্ষণ থেকে মাথায় আশাবরীর সঙ্গে লুকোচুরি চলেছে, তাই গাই নাহয়....

    বলে উঠলো,
    'তোর ভিতরে জাগিয়া কে যে...'
    - ঠিক
    - একটা স্কেল নিচে ধরো, আমিও গাইবো
    - বাহ, তবে তো কথাই নেই, একটু ফিলমি হবে, হোক ...

    পাখি নব প্রভাতের বাণী, দিলো কাননে কাননে আনি, ফুলে নবজীবনের আশা, কত রঙে রঙে পায় ভাষা,
    হোথা ফুরায়ে গিয়াছে রাতি, হেথা জ্বলে নিশীথের বাতি,
    তোর ভবনে ভুবনে কেন হেন হয়ে গেলো আধাআধি ? ...

    গান শেষ হবার পর কিছুক্ষণ সম্পৃক্ত নীরবতা, অর্ঘপলাশের মতো রক্তিম তার উচ্ছ্বাস ।

    - আচ্ছা বলতো, এই ভবনে ভুবনে আধাআধি কি হতেই হবে?

    - এখন আমি কোনও জ্ঞানের কথা বলবো না...
    - তোমার হাতটা দাও...
    - আরে, আংটিটা কোথায় গেলো?
    - খুলে দিয়েছি
    - কেন?
    - আমি নিজের থেকে কোনও আংটি আর পরবো না
    - তবে?
    - কেউ পরিয়ে দিলেই পরবো... বুঝিলেন

    বুঝিনু....

    রাতজাগা চোখ, কাজল পরেনি, প্যাস্টেলকোমল গরদমসৃণ ত্বক, যেন পাপড়ির মতো ফুটে আছে আলোর দিকে তাকিয়ে, তাকিয়ে আছে আমার চোখে। কোনও সর্বনাশ খুঁজছিলো কি....

    কে জানে....
  • Shibanshu | 59.90.221.5 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ১১:৩৯491260
  • খোয়াই থেকে পর্ণাকে ছেড়ে ফিরতে ফিরতে প্রায় নটা বাজলো। বাড়িতে ঢুকতেই মামি বলে উঠলেন,
    - এই ছেলেটার তো দেখা পাওয়াই যায়না। আরে, আমরাও তো আছি নাকি। কী হচ্ছে এসব ?
    মামা চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললেন,
    - আমার তেইশ বছর বয়েসে তুমি
    আমাকে কতোক্ষণের জন্য মামাবাড়ি যেতে য়্যালাও করতে? খুব বেশিদিন আগের ব্যাপার তো নয়, সবই কি ভুলে গেছো।
    মামাকে জিন্দাবাদ বলা ছাড়া আর কীই বা করা যায়।
    - তোমাদের আজকের প্রোগ্রাম কী?
    - দিনের বেলা তো মেলাতেই থাকবো ভেবেছি, সন্ধেবেলা কাঁচঘর যাবো।
    - বেশ, তৈরি হয়ে নাও তাড়াতাড়ি,

    সময় ফুরিয়ে যায় বসন্তনেশার , থাকে শুধু ধূধূ চিতা চন্দন স্মৃতির ...

    আজ পর্ণা আর গৌরী খুব সেজে এসেছে।
    বাবলুকে বলি, কেসটা কী রে?
    - জিগ্যেস কর...
    - নাহ, হাওড়া থেকে রামরাজাতলা পর্যন্ত রেললাইনের ধারে সব দেওয়ালগুলোতে দেখিসনি? পালক ব্রহ্মচারী কী বলিয়াছেন ?
    - খেয়াল করিনি...
    - খুঁচাইয়া ঘা করিবেন না।

    খুব সরলভাবে বললাম,
    - তোমাদের দুজনকেই আজ খুব সুন্দর লাগছে...
    - আর কিছু...?
    স্বরে বেশ দীপক রাগের রেশ....
    - 'আর কিছু' নয়, সব কিছু, ইয়ে, মানে কোনও লড়ার প্রোগ্রাম আছে না কি? তবে চলি টা টা...
    - ওসব হিরোগিরি এখানে চলবে না ...
    - আজ্ঞে....?
    - আজকের প্রোগ্রাম আমরা ঠিক করবো ...
    - তাই করুন...
    - অতো হাঁটাহাঁটি আর পোষাচ্ছে না, আমরা আজ বসে আড্ডা দেবো...
    - কে কার সঙ্গে বসবে?
    আমি পর্ণাকে বলি,
    - আমি গৌরীর সঙ্গে থাকি তাহলে... রোজই তো তোমার সঙ্গে থাকি... ও তো কিছু মনে করতেও পারে। কী বলো গৌরী..?

    নাহ, আমার এই মহৎ প্রস্তাবে দুজন মহিলাই আপত্তি করে সরবে ।
    তবে তাই হোক...

    আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি, একটু দূরে নির্ভাঁজ ধুতি পাঞ্জাবি শালে একজন নাতিদীর্ঘ রম্যদর্শন মানুষ একজন মহিলার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে কালোর দোকানের দিকে যাচ্ছেন। পর্ণাকে শুধাই, ওঁকে চেনো?
    - বুঝতে পারছিনা।
    - সমরেশ বসু। শুনলুম, রামকিংকরকে নিয়ে একটা বই লিখছেন, তাই প্রায়ই এখানে এসে থাকছেন।
    - তুমি চেনো ওনাকে?
    - এই আর কি..
    - চলো দেখা করে আসি...
    - তুম সহি মে বিলকুল বেওকুফ হো... লেখকরা কি চিড়িয়াখানার প্রাণী নাকি যে দেখতে যেতে হবে? কুল ডাউন..

    - তুমি বোসো, আমি দেখা করে আসি.. তুমি তো জানো ওনার লেখা আমাকে কতোটা ভাবায়..
    - ওফ, চলো.. তোরা বোস।
    বাবলু মিটিমিটি হাসছিলো। ও ব্যাপারটা কিছু জানে।

    সমরেশ ও তাঁর সঙ্গিনী চা পান করছিলেন । আমি আর পর্ণা সামনে গিয়ে বললাম, নমস্কার... সমরেশও বললেন, নমস্কার, ওনার সঙ্গিনী সপ্রশ্ন চোখে তাকিয়ে ছিলেন। আমি বলি, আমার নাম শিবাংশু, জামশেদপুরের।
    ওহো, এবার মনে পড়েছে, ঐ দাড়িটা চেনা চেনা লাগছিলো। হা হা করে হেসে উঠলেন তিনি।
    বুঝলে সোহিনী, এই ছেলেটা আমাকে প্রায় নাকাল করে ছেড়েছিলো গত বছর, যখন জামশেদপুরে গিয়েছিলুম।
    ওনার সঙ্গিনীর নাম সোহিনী, সেটা জানলাম। অসম্ভব রূপসী বছর ত্রিশের এক নারী। টিপিক্যাল কলকাতার সুন্দরীদের মতো মস্তো টিপ আর ঈষৎ বঙ্কিম লাল ওষ্ঠ তাঁর। এই সব উটকো ছেলেছোকরাদের দৌড় তিনি জানেন।

    - তোমার সঙ্গে এ কে? পরিচয় করিয়ে দেবে তো।
    - আমার নাম সুপর্ণা...
    - বাহ, তোমার প্রেমিকা মনে হচ্ছে ?
    - হ্যাঁ, ঐ রকমই কিছু...

    আগের বছর যখন সমরেশ জামশেদপুরে একটি সাহিত্যসভায় এসেছিলেন, তখন সেখানে শীলিত সজ্জন সাহিত্যপ্রেমীরা তাঁকে স্তুতিবাক্যের ভারে প্রায় শুইয়ে ফেলেছিলেন। ঐ সভাটির পরিচালক বিষ্ণুদা হঠাৎ জনতার মধ্যে আমাকে দেখে মঞ্চে আহ্বান করলেন 'শাণিতভাষী' বিশেষণসহকারে। সেখানে সদ্যপ্রকাশিত 'শিকলছেঁড়া হাতের খোঁজে'র প্রসঙ্গ এনে যুগ যুগ জীয়ে থেকে সুচাঁদের স্বদেশযাত্রা মায় বিটি রোডের ধারে, কিছুই বাদ দিইনি। সমরেশ বসুকে ছিন্নভিন্ন করতে পেরেছি এই আত্ম প্রসাদে বেশ ডগোমগো হয়ে পড়েছিলাম। বেশ কিছু শ্রোতার সরব সাধুবাদ পেয়ে মাটিতে প্রায় পা পড়েনা আর কি।
    সমরেশ কিন্তু ওস্তাদ খেলোয়াড়, শুধু টাচে খেলেন, নো ফুল বডি এনকাউন্টার।
    ওনার সব মনে আছে। কিছু এদিক ওদিক কথা হলো, অবশ্যই রামকিংকরকে নিয়ে হলো। একটু হেসে সোহিনীকে বললেন, এই ছেলেটা আমাকে খুব গালাগালি করে বটে, কিন্তু ওর জেনারেশনের কাউকে আমার লেখা এতো মন দিয়ে পড়তে বিশেষ দেখিনি।
    বলি, আজ আসি,
    - এসো, ভালো থেকো।

    একটু এগিয়ে এসে পর্ণা বলে, তুমি চিরকালের বিশ্বপাকা। সমরেশের সঙ্গে লাগো?
    - দ্যাখো, আর ঝগড়া টগড়া করোনা, ব্যাস, আজ রাত্রিটাই তো, কাল থেকে তো আবার পূর্বমেঘ উত্তরমেঘ, যক্ষের সংলাপের দিন এসে যাবে।
    চকিতে ম্লান হয়ে ওঠে স্তনিত বালিকার মুখ।
    - বার বার মনে করিও না, প্লিজ
    - তবে লক্ষ্মী হয়ে থাকো ....
  • kumu | 122.160.159.184 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ১১:৪৭491261
  • জাগরণে যায় বিভাবরী,
    আঁখি হতে ঘুম নিলো হরি,
    কে নিলো হরি,মরি মরি
    যার লাগি ফিরি একা একা
    আঁখি পিপাসিত নাহি দেখা
    তারি বাঁশি, ওগো তারি বাঁশি বাজে
    হিয়া ভরি-
    বাণী নাহি, তবু কানে কানে,
    কী যে শুনি,
    কী যে শুনি, তাহা কে বা জানে
    এই হিয়া ভরা বেদনাতে,
    বারি ছল ছলো আঁখি পাতে,
    ছায়া দোলে,
    তারি ছায়া দোলে দিবা নিশি ধরি-

    (স্মৃতি থেকে লেখা,ভুল হলে ক্ষমা চেয়ে রাখলাম)।

  • kumu | 122.160.159.184 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ১১:৫১491262
  • শিবাংশু,আপনি লিখুন,আর সাথে বাজুক গান।
  • Shibanshu | 59.90.221.5 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ১২:০৯491264
  • .

    বড্ডো অন্যমন লাগছে পর্ণাকে। কথা শুরু করছে, কিন্তু শেষ হচ্ছেনা। কিছু কি বলতে চাইছে, কিন্তু বলাও হয়ে উঠছে না। হঠাৎ বললো এতো ভিড় আর ভালো লাগছে না। কোথাও কি একটু নির্জনতা নেই?
    - বাহ, ভিড় দেখবে বলে মেলায় এলে, আর এখন আর ভালো লাগছে না?
    - নাহ, আমি ভিড় দেখতে এখানে আসিনি...
    ঐ অস্থির হরিণীর চোখ তো আমি চিনি...
    - কোথাও গিয়ে একটু বসবে?
    - হ্যাঁ, এক্ষুনি চলো

    - বাবলু, তোরা কি এখানেই থাকবি? আমরা একটু ঘুরে আসবো?
    - কোথায় যাবি?
    - দেখি.... পাগলি খেপেছে মনে হচ্ছে...

    - একটা কাজ করিস, কলাভবনের কাছাকাছি থাকিস, মেলায় আজ বড্ডো ভিড়, এদিকে আর আসবো না।

    বাইক স্টার্ট করে পর্ণাকে বললাম, সাবধানে ধরে বোসো....
    গাড়ি এগোতে না এগোতেই অনুভব করলাম আমাকে ধরে বসেছে যেমন সুচিত্রা বসেছিলো সপ্তপদীতে...
    - একী? দিনেদুপুরে কীভাবে বসছো? লোকে কী বলবে?
    - একদম চুপ করে থাকো...
    - বেশ
    শান্তিনিকেতনের চৌহদ্দির থেকে বেরিয়ে সিউড়ির রাস্তা নিলাম। একটা জায়গা আমি জানি, যেখানে অন্যসময় লোকজন থাকলেও মেলার সময় ফাঁকা থাকে। রাস্তার দুধারে ধান কাটা হয়ে গেছে, আসীমান্ত খড় শুয়ে আছে রোদ বুকে নিয়ে। দশ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম অমর কুটিরে। ওখানে মুখোমুখি বসিবার নিশ্চিন্ত আশ্রয় রহিয়াছে।

    একটা কদম গাছ ছড়িয়ে রেখেছে শান্ত ছায়ার শূশ্রূষা। ঘাসের উপর রোদের নক্‌শার জাল সাজিয়ে রেখেছে অসীম আমন্ত্রণ। দুজনে বসি সেখানে। কয়েক মূহুর্ত নীরব অন্তহীন , কিন্তু গান্ধারীর মতো প্রজয়িতা আকূতি তার প্রতি রোমে।
    - কিছু বলবে?
    - নাহ , কিচ্ছু বলবো না ...

    লালমাটির ভাসানো প্রান্তর পেরিয়ে বয়ে যাচ্ছে পৌষ দুপুরের শিরশিরে হাওয়া। এর মধ্যে কি শোনা যায় নিশ্বাসের শব্দ, কিংবা না বলা শব্দের রুদ্ধশ্বাস টান ...?

    না কোনও কান্না ছিলোনা, শুধু চোখের ক্যানভাসে থমকে ছিলো নোনা জল, বিনোদবিহারীর জলরঙে আঁকা রাজকন্যা তাকিয়ে রয়েছে অজন্তার কৃষ্ণা রাজকুমারীর মতো ।

    নিভৃত মনের বনের ছায়াটি ঘিরে/ না-দেখা ফুলের গোপন গন্ধ ফিরে/ লুকায় বেদনা অঝরা অশ্রুনীরে/ অশ্রুত বাঁশি হৃদয়গহনে বাজে, বাজে, বাজে.....

    - এখনও কিছু বলবে না?
    - না বললে কেন কিছু বুঝতে পারোনা? আমার বলতে ভীষণ কষ্ট হয়।
    - বেশ, শুনতে পেলাম তোমার না বলা কথা...
    - তবে তুমি কিছু বলো...
    - আমারও যে বলতে খুব কষ্ট হয়...

    খিলখিল করে হেসে উঠলো শত জলঝর্ণার মতো..
    - বাহ, এতো হাসি কোথা থেকে এলো...

    - তোমাকে একটু একটু বুঝতে পারছি এখন, কখনও কখনও ভাবি, তুমি একেবারে ধরাছোঁয়ার বাইরের একটা মানুষ। কী করে পৌঁছোবো তোমার কাছে?
    - দ্যাখো, এর উত্তরটা যেভাবে দিতে হয়, ফিলমে তা করলে সেন্সর বোর্ড ধরবে আর এখানে করলে মেলায় আসা লোকজন....

    - তুমি একটা যা তা...

    খ্রিষ্টোৎসবের সন্ধ্যায় কাঁচের মন্দিরে উপাসনা আমার ভালো লাগে। আমার মতো অবিশ্বাসী উৎকেন্দ্রিকের কাছে মন্ত্র আরাধনা কোনও পৃথক মাত্রা নিয়ে আসেনা কখনও, কিন্তু ঐ আবহের অলখ সংকেতগুলি উপভোগ করতে পারি কোনও পূর্বশর্ত ছাড়াই।

    সন্ধেবেলা ওখানে পৌঁছে দেখি চারদিকের অন্ধকার আধোছায়ের মধ্যে কাঁচের দেওয়ালঘেরা দ্বীপটি জ্বল জ্বল করছে। অনেক মানুষ ভিতরে বসে আছেন । বাইরেও অনেকে সিঁড়িতে, ঘাসের ঢালে বসে আছেন আলোর দ্বীপটির দিকে তাকিয়ে। আমরাও বাইরে বসলাম।
    উপাসনা শুরু হলো, পাঠ, গান, সমবেত বা একক, যা যা হবার, কোনও ত্রুটি নেই। কিন্তু বড্ডো যান্ত্রিক, সেখানে যীশুও নেই, রবিও নেই।

    অদ্যই শেষ রজনী।

    দুপুরের পর থেকে পর্ণা বেশ খোশ মেজাজে আছে। মেয়ের ভাবগতিক সত্যিই বোঝা দায়। বাবলু প্রস্তাব করেছে, আজ আমাদের ক্যাম্প ফায়ার হবে। মামা প্রস্তাব করেছেন তাঁর ছড়ানো বাগানেই যেন আমরা জড়ো হই কাঁচ ঘর থেকে ফিরে এসে। মামী গৌরীকে দেখেছেন, পর্ণাকে দেখার জন্য রীতিমতো উতলা। বাবলু আর গৌরী আগেই বাড়ি ফিরে গেছে মামীকে সাপোর্ট দিতে। আমরা কিছুক্ষণ আরও বসে রইলাম মন্দিরের কাছে। বলার মতো কথা এতো আছে যে কোনটা বলি আর কোনটা এড়িয়ে যাই ঠাওর করতে পারছিলাম না। মাঝে মাঝে যা কথা তা পর্ণাই বলছিলো। তার মধ্যে ওদের কলেজের নানা টুকরো গল্প, ভাইপোর দুরন্তপনা বা নতুন পড়া বইয়ের ভালোমন্দ, সব ছিলো। কিন্তু আমার ইনস্টিংক্ট বলে যাচ্ছিলো, হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোনখানে।

    আমরা যখন পৌঁছোলাম, ততোক্ষণে বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব এসে গেছেন মামার বাগানে। বাবলু মাঝখানে আগুন জ্বালাবার ব্যবস্থায় ব্যস্ত। পর্ণাকে নিয়ে ভিতরে মামীর কাছে নিয়ে গেলুম। গৌরী পাশে এসে চাপা গলায় আমাকে বললো , প্রেম ট্রেম আমরাও করি, কিন্তু তোমাদের মতো আদেখলা নই। আমি বলি, প্রিয়ে, তুমি আর কী শিখিলে প্রেমের ভাব। এই আমি দয়াল নিতাই হয়ে তোমার জন্য শুধু অপেক্ষাই করে গেলুম। তারে ধরি ধরি মনে করি, ধরতে গেলাম, আর পেলাম না।

    ক্যাম্প ফায়ার বেশ জমে উঠেছিলো সেইদিন। সবার মনে যা কিছু সহজভাবে আসছিলো, সবাই মিলে তা ভাগ করে নিচ্ছিলো স্বতস্ফূর্তভাবে। তা সে রবিবাবুর গান বা শক্তির কবিতা, পুরোনো স্মৃতিকথা থেকে ভালোমন্দ খাবার গল্প, যাই হোক না কেন। এক একটা সময়, পরিবেশ যেন মানুষকে তার দৈনন্দিন বিচ্ছিন্নতা, আবিলতা থেকে মুক্ত করে তুলে নিয়ে যায় একটা অন্য কোনও স্তরে , হয়তো তা মূহুর্তের পাখি, ক্ষণিক ফুলকি, কিন্তু দীর্ঘকাল তার রেশ থেকে যায় মনে। বহুদিন পরেও মানুষ গুনগুন করে গেয়ে ওঠে, আমরাও খেলা খেলেছিলেম, আমরাও গান গেয়েছি, আমরাও পাল মেলেছিলেম, আমরাও তরী বেয়েছি, হারায়নি তা হারায়নি ....। রাত বাড়ছিলো। হঠাৎ বাবলুর ঘোষণা, এবার আজকের শেষ গানটা গাইবে শিবাজি, য়্যাসিস্টেড বাই সুপর্ণা। জানতাম শেষ পর্যন্ত এই লেগ পুলিংটা ও করবে। অনেকদিন ধরে শাসাচ্ছিলো আমাকে। গানটা নাকি আমার জন্যই লেখা।
    ... কে প্রথম কাছে এসেছি... ? পর্ণা কিছুতেই গাইবে না। কিন্তু জনমত বড়ো বালাই...

    পর্ণাকে দেখে মামী রীতিমতো ইম্প্রেসড। এতো সুন্দর মেয়েটা, এতো ভালো কথা বলে, আপন করা ব্যবহার। আমাকে এসে বলেন তিনি, তোমার কপাল খুব ভালো।
    - তাই...?
    আজ্ঞে হ্যাঁ। মেয়েটাকে কখনও কষ্ট দিওনা।

    - দেখুন, কষ্ট দেওয়ার ক্ষমতাটা আমার নেই, পাবার জন্যই তো বসে আছি যে....

    - ইয়ার্কি নয়, মেয়েটা একেবারে সোনা।

    গৌরী আজ মামার বাড়িতেই থেকে যাবে। পর্ণাকে আমি ছেড়ে আসবো হস্টেলে। কাল সকালে ওর ট্রেন।
    হস্টেলে নামাবার সময় বললো, তুমি সত্যি যাচ্ছো?
    - নয়তো? সারারাত হিমের মধ্যে এই মাঠে বসে থাকবো নাকি?
    - থাকলেই না হয়....
    - তাহলে কাল সকালে সর্দি তোমাকেই ধরবে। শীর্ষেন্দুর কথাটা মনে আছে না , প্রেমের চেয়ে সর্দি অনেক বেশি প্রত্যক্ষ আর শক্তিশালী।

    কোনও উত্তর নেই। শুধু তাকিয়ে আছে।
    - কিছু বলবে...?
    - নাহ...

    - কাল সকালে আসবো, তৈরি থেকো...
    একটু হাসলো আধো আলোছায়ায়,
    - কবে থেকেই তো তৈরি হয়ে বসে আছি, তুমি কি সত্যি বোঝোনা...?
    - এই ডায়ালগটা যাত্রার নয়, রেডিও নাটকের বলা যেতে পারে...
    - আই মীন ইট...
    হাতটা বাড়িয়ে দিই, ওর ঠান্ডা গালদুটি স্পর্শ করি...

    - আই অলসো মীন ইট....
  • ........... | 122.160.159.184 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ১২:২০491265
  • তাই হোক,তবে তাই হোক--

  • Shibanshu | 59.90.221.5 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ১৫:২২491266
  • .

    রাতের ঘুমটা বড্ডো ছাড়া ছাড়া হচ্ছিলো। এপাশ ওপাশ করছিলাম। হঠাৎ বাবলুর গলা পেলাম,
    - কীরে ঘুম আসছে না?
    ও তাহলে জেগে আছে।
    বলি, ভোরবেলা উঠতে হবে, তাই। একবার চোখ লেগে গেলে দেরি হয়ে যাবে হয়তো।
    - তোর চক্করে পড়ে এমন ফাঁসলাম না, আমাকেও তুই ফিলমি প্রেমিক করে দিলি। তোরা কবি টবি করিস, তোদের এইসব পোষায়। এরকম চললে আমার কাজকম্মো মাথায় উঠবে।
    বাবলুর এক্সপ্রেশন এরকমই।
    - কেনরে ? আপাতত: গৌরীকেই মাথায় রাখ, কাজকম্মো নিজের জায়গায় ঠিকই থাকবে। ও মাথায় করে রাখার মতই মেয়ে।
    - তাতো বুঝলুম। কিন্তু, আমার এমন কিচ্ছু নেই যা আমি ওকে দিতে পারি। ওর ক্লাসটা তোদের সঙ্গে ম্যাচ করে, আমি মজদুর লোক।
    - মজদুরকে কি ভালোবাসা যায়না? আর এইসব কথা কখনও ওর সামনে বলিস না। গৌরী ভীষণ সেন্সিটিভ মেয়ে। ও তোকে ভালোবাসে, তোর ইনসিকিউরিটিকে নয়। বি ইওরসেল্ফ, তোর ভালো হবে।

    - তুই কী ঠিক করলি?
    - এখনও জানিনা। বড্ডো ভাসিয়ে দেওয়া মেয়ে। যখন বুঝতে পারবো ওকে মর্যাদা দেবার জন্য আমি তৈরি হতে পেরেছি, তখনই কিছু ঠিক করবো।
    - ও কিন্তু তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে। তুই এমন কিছু করতে পারিসনা যাতে ওর মনে কোনও কষ্ট হয়।
    অন্ধকারের মধ্যে আমার হাসি বাবলু দেখতে পেলো কি না জানিনা। পাগলকে ভালোবাসার জ্বালা তো ওকে পোয়াতে হয়না।

    অনেকক্ষণ এপাশ ওপাশ করে উঠে পড়লুম। একটু আগে গিয়েই দেখি।
    যখন হস্টেলের সামনে গিয়ে পৌঁছোলুম তখন ভোর পাঁচটাও বাজেনি। বাইকের আওয়াজ পেয়েই দেখলুম দোতলার একটা জানালা খুলে গেলো। সেও দেখি যামিনী না যেতে জেগে বসে আছে। ব্যাগটা কাঁধে করে নেমে এলো।
    - গুড মর্নিং, রাতে আর ঘুমোলে না নাকি?
    - তাতে তোমার কী দরকার?
    - আহা, সকাল সকাল এতো রাগুনি হয়ে আছো কেন?
    - আমি রাগিনি।
    - বেশ বেশ, বসো তো গাড়িতে। এখন বেশি ক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে পাহারাদারেরা নারীহরণের চার্জ নিয়ে আসবে।

    গাড়ি স্টার্ট করে উল্টোদিকে যেতেই বললো,
    - ওদিকে কোথায় যাচ্ছো?
    - আরে, চলোনা।
    বহুদিন আগে তোমার জন্য একটা গ্র্যাফিটি লিখেছিলুম এখানে, তোমায় আলাদা করে দেখানো হয়নি।
    - মানে,
    - এক্ষুনি দেখতে পাবে....

    লোহার বেড়া দিয়ে ঘেরা একটা চত্বর। এখানে যারা আসে, সবাই একবার দাঁড়ায়, মনে মনে পড়ে যায়, 'তিনি আমার প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি'।
    - এর মানে...
    - আসলে তোমাকে ভেবেই লিখেছিলুম ঐ লেখাটা, দেবেন ঠাকুর জানতে পেরে 'তুমি' কেটে 'তিনি' করে দিয়েছিলেন। আজ আমি আবার তোমাকে এটা ডেডিকেট করলুম।

    - তুমি.... তুমি না ... একটা...

    - বস করো ম্যাডাম, চলিয়ে জায়া যায়...

    বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার দাঁড়িয়েই ছিলো প্ল্যাটফর্মে। মেলা ফেরা অনেক লোকই এই গাড়িতে ফিরবে। একটা জায়গা দেখে ব্যাগটা রাখলুম।
    একেবারে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নীরবতা ভাঙার জন্য বললাম, দুদিন কোথা থেকে কেটে গেলো বোঝা গেলোনা...
    - বুঝতে চাইলে তো বুঝবে...
    - বেশ তো, তুমি কোনও দিন বুঝিয়ে দেবে তার জন্য অপেক্ষা করবো..
    - তুমি আমার সঙ্গে চলো...
    - কোথায়?
    - যতোদূর এই ট্রেনটা যাবে,
    - বেশ যাবো
    - যাবে ???!!!
    - নিশ্চয় যাবো,

    ঠিক যেমন করে সিনেমায় সবুজ পতাকা দোলে, গার্ড হুইসল দেয়, ট্রেন নড়তে থাকে, জানালায় বসা নায়িকার ধরা হাত থেকে নায়কের হাত ছেড়ে যায়, নায়ক ট্রেনের সঙ্গে দৌড়োতে থাকে..., প্রায় সবই হলো... শুধু নায়ক দৌড়োলো না, অস্ফুটে বললো, চিঠি দিও...
    নায়িকা শুনতে পেলো কি না ঠিক বোঝা গেলোনা ....
  • Manish | 59.90.135.107 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ১৭:০৭491267
  • শিবাংশু, জাষ্ট অসা। আরো একটু পড়তে চাই।
  • sumit | 68.192.169.219 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ১৮:৩৯491268
  • শিবাংশু, সাধু!
  • Sibu | 184.195.69.42 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ১৯:২৫491269
  • @h

    হোয়াই অ্যাম আই সাপোজড টু ফ্যান্সি হিমিংওয়ে? কাঁচাপাকা দাড়ির জন্যে কি? আই সার্টেনলি ডোন্ট ফ্যান্সি ওল্ড হেমিংওয়ে ;)।
  • Nina | 68.45.76.170 | ২৭ আগস্ট ২০১১ ২০:১১491270
  • শিবাজি
    সকালে উঠিয়া এ-পাঠ পড়িনু,
    দিন যাবে আজি ভাল :-)

    এবার দ্বিতীয় পর্বটা হোক---প্লিজ।
  • siki | 122.162.75.228 | ২৮ আগস্ট ২০১১ ০০:২৭491271
  • চলুক। সঙ্গে আছি।
  • kiki | 59.93.197.32 | ২৮ আগস্ট ২০১১ ১০:৪০491272
  • চলুক আবার কিহে? শেষ তো মনে হয়!

    বৌদির ফটোক দেখলে তাকেই সুপর্না মনে হবে, কিন্তু পাজি ছেলেপুলে র প্রশ্নের জবাবে শিবাংশুদা জানিয়েছিলেন তা নয়।

    সে যাকগে সবাই কবিতা গান টান লিখছে, আমিও লিখবো, লিখবোই। যে যা মনে করুক। একজনকে বলেছিলুম, তোর ব্যাথা নিয়ে আমি গপ্প লিখবো? সে কয়েছে, না! খবদ্দার! সুক্ষ জিনিসপত্র সবার দ্বারা হবার নয়।

    তবুও আমি দাদুর কবিতা টুকবো।

    পউষ প্রখর শীতে জর্জর, ঝিল্লিমুখর রাতি,
    নিদ্রিত পুরী,নির্জন ঘর,নির্বানদীপ বাতি।
    অকাতর দেহে আছিনু মগন সুখনিদ্রার ঘোরে--
    তপ্ত শয্যা প্রিয়ার মতন সোহাগে ঘিরেছে মোরে।
    হেনকালে হায় বাহির হইতে কে ডাকিল মোর নাম--
    নিদ্রা টুটিয়া সহসা চকিতে চমকিয়া বসিলাম।
    ...............................
    ................................


    নীরবে রমনী অঙ্গুলী তুলি দিল ইঙ্গিত করি--
    মন্ত্রমুগ্‌ধ অচেতন-সম চড়িনু অশ্ব' পরি।

    বিদ্যুৎবেগে ছুটে যায় ঘোড়া--বারেক চাহিনু পিছে।
    ঘরদ্বার মোর বাষ্পসমান মনে হল সব মিছে।
    কাতর রোদন জাগিয়া উঠিল সকল হৃদয় ব্যেপে,
    কন্ঠের কাছে সুকঠিন বলে কে তারে ধরিল চেপে!

    ...............................
    ................................


    অফুরান পথ,অফুরান রাতি,অজানা নূতন ঠাঁই--
    অপরূপ এক স্বপ্নসমান,অর্থ কিছুই নাই।
    কী যে দেখেছিনু মনে নাহি পড়ে, ছিল নাকো আগাগোড়া--
    লক্ষ্যবিহীন তীরের মতন ছুটিয়া চলেছে ঘোড়া।

    ...............................

    সেই মধু মুখ,সেই মৃদু হাসি,সেই সুধা ভরা আঁখি--
    চিরদিন মোরে হাসালো কাঁদালো,চিরদিন দিলো ফাঁকি!
    খেলা করিয়াছে নিশিদিন মোর সব সুখে সব দুখে,
    এ অজানা পুরে দেখা দিল পুন সেই পরিচিত মুখে!
  • Shibanshu | 59.90.221.5 | ২৯ আগস্ট ২০১১ ১৪:১৭491273
  • নিজের দাড়ি নির্মূল করে শিবু এখন অন্যের দাড়ির বিরুদ্ধে মোর্চা খুলেচে। আর্নেস্টোকে দিয়ে শুরু শেষ পর্যন্ত দাদুতে গিয়ে পৌঁছোবে। ঘোর পোতিবাদ রইলো।

    গপ্পোটার এই পব্বো এখানেই শ্যাষ হইলো।
  • haay prem | 182.253.0.98 | ২৯ আগস্ট ২০১১ ১৪:৩৩491275
  • সেই গৌরী কি বর্তমানে শিবাংশু-বৌদি????
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন