এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • ওপার বাংলার লেখালেখি কথা

    pi
    বইপত্তর | ২৩ নভেম্বর ২০১১ | ২৫৩৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • pi | 128.231.22.133 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ০০:৪৫502364
  • Name:saikatMail:Country:

    IPAddress:202.54.74.119Date:22Nov2011 -- 05:59PM

    কতিপয় আশ্চর্য উপন্যাস লিখেছিলেন মাহমুদুল হক, ঢাকা শহরে বসে , ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে। এতদিন পরে সেইগুলি আমি আবিষ্কার করি, পড়ি। সবগুলো নয়, অদ্যাবধি প্রকাশিত উপন্যাসগুলির মধ্যে চারটি উপন্যাস - অনুর পাঠশালা, জীবন আমার বোন, খেলাঘর, কালো বরফ - পড়া আমি শেষ করি। বাকী উপন্যাসগুলো হয়ত কোনদিন পড়ব। হয়ত কোনদিন উল্টেপাল্টে দেখব "প্রতিদিন একটি রুমাল" নামে গল্পগ্রন্থটিকেও।

    অথবা নাও পড়তে পারি। যে কটা পড়লাম, সেগুলৈ আবার করে পড়ব এবং লক্ষ্য করব উপন্যাসগুলোতে ছড়িয়ে থাকা অনুভূতিপুঞ্জ আর তাদের ধারণ করে থাকা ইঙ্গিতময় ভাষাশরীর।

    মাহমুদুল হকের জন্ম ১৯৪০ সালে পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে, মৃত্যু ২০০৮ সালে বাংলাদেশের ঢাকা শহরে। লেখালেখির শুরু ১৯৬০-এর দশকে, প্রথম প্রকাশিত উপন্যাসের লিখনকাল ১৯৬৭, ১৯৮২ সালের পরে লেখা থামিয়ে দেন, দু-একটা গল্প ছাড়া আর কিছু লেখেননি। ১৯৬০-এর দশক থেকেই, সঠিকভাবে বলতে গেলে ১৯৫০-এর দশক থেকেই বাংলা গল্প-উপন্যাস বদলে যাচ্ছিল। আধুনিক কবিতা যা করতে পারে, বাংলা গদ্যে সেই একই ব্যাপার ঘটিয়ে তোলার জন্য পশ্চিমবঙ্গে একাধিক লেখক চেষ্টা করছিলেন। সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, দেবেশ রায়, দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। কমলকুমার মজুমবার অথবা অরূপরতন বসু। ব্যক্তির মনোজগ্‌ৎ ও অন্তর্মনকে, তার চিন্তা-চৈতন্য আর নির্জ্ঞানকে গল্প-উপন্যাসে নিয়ে আসছিলেন তাঁরা। আয়ুধ হিসেবে ছিল ভাষা, সচেতন ভাষা ব্যবহার। তদানীন্তন পূর্ববঙ্গে হয়ত একই কাজ করছিলেন আব্দুল মান্নান সৈয়দ। প্রথম পর্বের আখতারুজ্জমান ইলিয়াসও কি নয়? "নিরুদ্দেশ যাত্রা" নামে সেই গল্পটা - যার আকর্ষণীয় প্রথম বাক্যটা ছিল "এই মনোরম মনোটনাস শহরে অনেক দিন পর আজ সুন্দর বৃষ্টি হল" - একই ধারার লেখা বলে মনে করি। মাহমুদুল হকের লেখালেখির শুরু এই সময়তেই, গদ্যের একজন তুখোড় কারিগর হিসেবে। শোনা যায় তিনি "অন্তর্জলী যাত্রা" উপন্যাসটি মুখস্থ বলতে পারতেন। গদ্যভাষার এক প্রাণবন্ত রূপের প্রতি তাঁর আত্মীয়তাটুকু স্পষ্ট !

    Name:saikatMail:Country:

    IPAddress:202.54.74.119Date:22Nov2011 -- 06:14PM

    উপন্যাসগুলি পড়ার পরে আমি ইন্টারনেট খুলে ফেলি ও মাহমুদুল হককে নিয়ে কিছু লেখা ও তাঁর একটি সাক্ষাৎকার পেয়ে যাই। সেগুলি পড়ে আমার মনে হয়েছে যে বাংলাদেশের সাহিত্যিক মহলে হয়ত এই অনুযোগ আছে যে তিনি হাসান আজিজুল হক কিংবা ইলিয়াসের মত সমাজবাস্তবতার বৃহ্‌ৎ ও মহ্‌ৎ ক্যানভাস রচনা করেননি। এটা না ঘটার বিবিধ কারণ থাকতে পারে - হয়ত সাহিত্য নিয়ে তাঁর ধারণা কিংবা তাঁর বিশেষ মনোভঙ্গী ও জীবনযাপনই বাধ্য করেছে তিনি যেভাবে লিখেছেন ঠিক সেইভাবে লিখতে।

    অথবা কারণ হয় এটাই যাকে সুমন রহমান একটি লেখায় বলেছেন "এখন পর্যন্ত তিনিই আমাদের একমাত্র ঘুমে হাঁটা মোহগ্রস্ত সাহিত্যিক"।

    এই বাক্যটা পড়ে আমি চমকে উঠি। কারণ আমিও তো ভেবেছি যে, কোন একটি ধারণা দিয়ে যদি মাহমুদুল হকের উপন্যাসের চরিত্রদের নির্ধারিত করতে চাই তাহলে সেই ধারণাটি হয় - স্বপ্ন। চারিপাশের বাস্তব থেকে বেরিয়ে গিয়ে যেন তারা স্বপ্নের মধ্যে ঢোকে, ঘুরপাক খায়, স্বপ্নের মধ্যেই চারপাশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে আর এই স্বপ্ন-বাস্তবের দোলাচল থেকেই তারা ব্যর্থ হয়ে যায় !
  • pi | 128.231.22.133 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ০০:৪৬502375
  • Name:KuladaRoyMail:[email protected]Country:UnitedStates

    IPAddress:74.72.54.134Date:22Nov2011 -- 07:12PM

    মাহমুদুল হক আমার প্রিয় লেখক। তার রচনা যতনা গল্প--তারচেয়ে অনেক বেশি কবিতা। সে সময় সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, আব্দুল মান্নান সৈয়দ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হক এই কজন বাংলাদেশের গল্পকে ঠিক বাংলা ভাষার গল্প করে তুলতে চেয়েছেন। একটি জনপদের ভাষাটিকে মর্মগাথাটিকে ছেঁকে এনে তুলতে চেয়েছেন। সে সময়টা ছিল পাকিস্তানের বাঙালি নিপীড়ন কাল। রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু করার চেষ্টা হচ্ছে উর্দু মিশেলে পাকবাংলা প্রবর্তনের কালোপর্ব। এর বিপরীতে এই লেখকদল লিখেছেন সে সময়ের মানুষের জীবন-স্বপ্ন-সংগ্রাম আর ভালোবাসার গল্পটি। এবং আশ্চর্যভাবে সেটা গড়ে উঠেছে।
    এর পরে অবশ্য সৈয়দ শামসুল হকও এসে গেছেন এদের সঙ্গে।
    মাহমুদুল হক পাঠে পূণ্য অর্জিত হয়।

    Name:muhithasanMail:[email protected]Country:Bangladesh

    IPAddress:58.97.174.212Date:22Nov2011 -- 07:42PM

    মাহমুদুল হক পেশাগতভাবে স্বর্ণ ও মণিমাণিক্যের ব্যবসায়ী ছিলেন, এর সুবাদে স্বাধীনতাপূর্ব ও পরবর্তী সময়ের বনেদি পরিবারগুলেআ খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। সাহিত্যিক সংগঠনের চাইতে সাহিত্যিক আড্ডা তাঁর বেশী পছন্দসই ছিল। তাঁর দেআকানের আলমারির ওপরে থাকতেআ বিনয় মজুমদারের "ফিরে এসেআ চাকা", কিন্তু কেআনেআ এক তরুণ কবি বইটি তুলে নিয়ে যায় চুপিচুপি একদা। জীবনের শেষ দুই দশক যেতেন নরসিংদীতে, এক পাগলা বাবার দরবারে। এর আগে পড়েছেন বেশ মনেআযেআগ দিয়ে হারামণি, ময়মনসিংহ গীতিকা এবং উত্তরবঙ্গের লেআকগীতি। উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের বাংলার বাউল ও বাউলগান, শশীভূষণ দাশগুপ্তের শ্রীরাধার ক্রমবিকাশ ইত্যাদি বই। আহমদ শরীফের বাউলঙ্কÄ বিষয়ক লেখাপত্রের দিকে আলাদা করে দৃষ্টি দিয়েছেন। তাঁর এই প্রস্তুতি দেখে বেআঝা যায়, অলে০কিকের সন্ধানে তিনি নরসিংদী যান নি। গিয়েছিলেন ব্যক্তিতে জানতে। তারও আগে জনপদ ও জনগেআষ্ঠীর অন্বেষায় গিয়েছেন বিক্রমপুরে। তাঁকে প্রথম পড়েছিলাম 'মাটির জাহাজ' দিয়ে। তারপর 'জীবন আমার বেআন' ও 'কালেআ বরফ' পড়া হয়। 'অনুর পাঠশালা' পড়েছি সর্বশেষ। এ এক রক্তের ভেতর খেলা করা অন্তর্গত বেআধের কাহিনি(বইটির শুরুতেই উদ্ধৃত হয়েছে বিনয়ের এই লাইন কয়টি : "স্বপ্নের আধার, তুমি ভেবে দ্যাখো, অধিকৃত দুজন যমজ / যদিও হুবহু এক, তবু বহুকাল ধরে সান্নিধ্যে থাকায়
    / তাদের পৃথকভাবে চেনা যায়, মানুষেরা চেনায় সক্ষম। / এই আবিস্কারবোধ পৃথিবীতে আছে বলে আজ এ-সময়ে
    তোমার নিকটে আসি, / সমাদর নেই তবু সবিস্ময়ে আসি।") । পথের পাঁচালীর ভিন্নতর ভাষ্য বলা যায় হয়তেআ। পথের পাঁচালীর যে নিস্পাপবিশ্ব, তারই বিরেআধাভাস যেন। সত্যিই মাহমুদুল হক ছিলেন পাকা জহুরি, প্রত্যেক শব্দের নিখুঁত ব্যবহার, 'শৈল্পিক ছেনিতে' কেটে কেটে সকলকে ফুটিয়ে তেআলা- এ কেবল তাঁরই দ্বারা সম্ভবপর ছিল।

    Name:KuladaRoyMail:[email protected]Country:UnitedStates

    IPAddress:74.72.54.134Date:22Nov2011 -- 08:21PM

    দিগন্ত মামা, তুমি একটা জিনিস খেয়াল করো--মাহমুদুল হকের নাম ছিল বটুক। তাদের বাড়িটা ছিল অনেক গাছপালা ঘেরা। ঘাড়ে বানর নিয়ে ঘুরতেন। কবি শহীদ কাদরী ছিলেন তাঁর বন্ধু। তার মতো করে রত্ন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই। সে সময় ঢাকাতে চলছে তীব্র গণআন্দোলন। আইয়ুব খান পড়ে যাচ্ছে। পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে বাঙালিরা। ৩০ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে। একটি দেশ স্বাধীন হয়ে যাচ্ছে। এটাতো ইতিহাস। এই ইতিহাসের মধ্যে দিয়েই মাহমুদুল হক গেছেন।

    বটুক কিন্তু এই ইতাহাসটা নিয়েই লিখেছেন। মুক্তুযুদ্ধ ছাড়া তার ভাবনা নেই। রত্নচেনার মতো করে নানা কায়দায় আলো ফেলে ফেলে মুক্তিযুদ্ধকে দেখছেন। এই দেখাটা কিন্তু সৈয়দ শামসুল হকও দেখেছেন। হুমায়ুন আহমেদও দেখেছেন। কিন্তু সৈয়দ শামসুল হকের যে স্বভাব--হাড়ে মজ্জায় ধুরন্ধর, লিখছেন বাংলা সিনেমার স্টোরী--নানাবিধ ধান্ধা নিয়ে কখনো লিখছেন সাহিত্য, তার মধ্যে দুর্নীতির ছায়াটা উঁকি দেয়--লেখাটা হতে হতে হয়ে যায় ব্যর্থ লেখা। হুমায়ূন আহমদতো যাদুকরী ক্ষমতা নিয়ে এসেছেন। তিনি বললেই বাতাসও বেঁকে যায়। আকাশও একে যায়। তিনি কিছু কাজ করছেন। তার চেয়ে তার যাদুকরী ক্ষমতা দিয়ে মুগ্‌ধপাঠক তৈরিতেই মগ্ন। একটা ছায়ার জগ্‌ৎ তৈরী করে বসে আসেন। এ কারণে হুমায়ূন আহমদের জন্য কোটি কোটি নিয়ে ঘুরছেন প্রকাশকরা। আর লেখকরা পকেটের পয়সা দিয়ে বই বের করে বটতলায় দাড়িয়ে বলছেন--আমার একটা বই কেনেন আমার একটা বই কেনেন। পকেটে খাবারের টাকা নাই।

    এদের মধ্যে ব্যতিক্রম হাসান আজিজুল হক আর মাহমুদুল হক। তারা যে জীবন যাপন করেছেন--যে বিশ্বাস নিয়ে থেকেছেন--তাকে নির্মাণ করেছেন। কোনো দুনম্বরী কিনতু তাদের ব্যক্তিগত জীবনে নেই-- লেখাতেও নেই। লেখাগুলো তাই শুধু মাহমুদুল হকের বা হাসানের থাকছে না--জনপদের হয়ে উঠছে।

  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ০১:৩১502386
  • সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পাঠ
    -----------

    কদিন খুব গরম গেল। এখন কদিন নরম। জানালা দিয়ে শীতল হাওয়া আসে। তুলসী পাতা শির শির করে।
    মনে পড়ছে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর একটি তুলসীগাছের কাহিনী গল্পটি। দেশবিভাগ নিয়ে গল্প। একদল লোক একটি ছেড়ে যাওয়া বাড়ি দখল করেছে। বাড়িটিতে আছে একটি তুলসীগাছ। এখানে কেউ সন্ধ্যাকালে গড় হয়ে প্রণাম করত। তারা নেই। গাছটি শুকিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষ 'মানুষ' বলেই তুলসীগাছটি সবুজ হয়ে উঠেছে।
    এই মানুষগুলো দরিদ্র কেরানী বটে কিন্তু সবাই ভদ্রঘরের ছেলে। এদের মধ্যে মতিনের খুব সখ বাগানের। ফুলের বাগানে বসে থাকতে চায় বেতের চেয়ারে। আর আমজাদ চায় গুড়গুড়ি টানতে। কাদের নামের লোকটির শুধু গল্প করার ইচ্ছে। আর আছে মোদাব্বের। তুলসীগাছটি যখন ওদের চোখে পড়ছে—তখন মোদাব্বের হুঙ্কার দিয়ে উঠেছে, বলছি না, উপড়ে ফেল। কারণ অতি সোজা। 'আমরা যখন এ বাড়িতে এসে উঠেছি তখন এখানে কোনো হিন্দুয়ানির চিহ্ন আর সহ্য করা হবে না'।. ওরা খারাপ।

    কিন্তু তুলসীগাছটি মূর্তিমান তাদের সামনে একটি পরিবারের অস্তিত্ব জানান দিয়ে উঠেছে। তারা সুখে দু:খে হাসি আনন্দে থেকেছে। কারো মৃত্যু এসেছে। কিন্তু তারা এ বাড়িটি ছেড়ে যায় নি। তুলসী তলায় শান্ত শীতল প্রদীপ জ্বলে উঠেছে। এই প্রদীপ জ্বলার জন্য তো দেশভাগ হয় নি। প্রদীপটি নিভে গেছে। নিভে যাওয়াই সঙ্গত মনে হয় এই সব কেরানীকুলের। তারা জানে হিন্দুদের অবিচার-অত্যাচারের অশেষ দৃষ্টান্ত। এসব আলাপ করে তাদের সান্ধ্যবাসর গরম হয়ে ওঠে। যে লোকটি মকসুদ, তিনি বামপন্থী হলেও তিনি একা। একা বলেই মোদাব্বর যখন বলে—ওরাই তো সবকিছুর মূলে, তখন কিন্তু তার প্রতিবাদটা থেমে যায়। বিশ্বাসের কাঁটাটি বাম দিক থেকে ডান দিকে হেলে থেমে যায়।

    পরিবারটির সেই শ্যামশ্রী কœÑ£টি কোথায় গেছে কারো জানা নেই। এরা কেউ কেউ কল্পনা করে-- হয়তো তারা আসানসোল, বৈদ্যবাটি, লিলুয়া বা হাওড়ায় রেলওয়ে-পট্টিতে কোন আত্মীয়ের ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। অথবা কোনো ট্রেনে চলেছে—তাদের এখনো আশ্রয় জোটে নি। তার মন পড়ে আছে এই তুলসীতলায়। দেশান্তরী। এরকম একটি বাড়ি ছেড়ে গেল। এখন তারা শেকড়হীন। এরকম বাড়ি তাদের মর্মে শুধু আছে।
    তুলসীগাছটির উপড়ে যাওয়ার কথা। কিন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি-- কেউ উপড়ে ফেলছে না। তার তলাটির আগাছাগুলো তুলে ফেলা হয়েছে। প্রতিদিন পানি দেওয়া হচ্ছে। খোলাখুলিভাবে না হলেও লুকিয়ে-লুকিয়ে তার যত্ন নিচ্ছে।

    গল্পটি আরেকটি এগুলে দেখতে পাই—রাষ্ট্র এই বাড়িটিকে দখল নিয়েছে। ওরা কজন দরিদ্র কেরানী দখলে রাখতে পারে নি। রাষ্ট্র কি সেই ছেড়ে যিওয়া মানুষদের জন্য বাড়িটিকে দখলমুক্ত করেছে এইসব দুর্বল দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে? তাদের ডেকে আনতে চায় এই পুরণো ভিটায়? না। রাষ্ট্রই মূলত দখলকারী। রাষ্ট্র মানুষের ভেতরে পুরে দিতে চায় বিভাজন রেখা। কোনো পার্থক্য আছে কি সেই ছেড়ে যাওয়া পরিবারটির সঙ্গে আর এই কয়েকদিনের জন্য বসবাসকারী মানুষদের মধ্যে? নেই। এরা সবাই শেকড়হীন।

    আর তুলসীগাছটি? আবার শুকিয়ে গেছে। তলায় ঘাস বেড়ে উড়েছে। সেই গৃহকœÑ£টির ছলছল চোখের কথা কেউ মনে করার নেই। মাত্র ছয়টি পৃষ্ঠার গল্প। নিরাভরণ বর্ণনা। ঘটনার ঘনঘটা নেই। নেই সংঘাত। একটি বাড়ি দখলের মধ্যে দিয়ে দেশত্যাগী মানুষের গল্পটি নির্মমভাবে মোচড় দিয়ে ওঠে। এই তীব্র মোচড় বলে ওঠে-- সাম্প্রদায়িকতা শেষ কথা নয়। বোঝা যায় সাতচল্লিশের এই দখলকারী মানুষগুলো বায়ান্নোতে এসে কেন ঘুরে দাঁড়াল—তার ভেতরের কারণটি। কেন একাত্তরে রুখে দাড়িয়েছে সেই অচলায়তন রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে। গল্পটির ভেতরে এসব কোনো কথা নেই। কিন্তু স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। বার্তাটি আমাদের কানে এসে লাগে।
    সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর স্বপ্ন ও বাস্তবের এক প্রদোষান্ধকারের ভাষ্য রচনা করতে ভালবাসেন। সে ভাষ্যটিতে আমাদের প্রাচীন বর্ণনা পদ্ধতির ভিয়েনটির দেখা মেলে। মনে হয়—কোন এক পুরনো মানুষ বলছেন আমার জীবন ও মৃত্যুর, ঘৃণা ও ভালবাসার, পরাজয় ও বিজয়ের পরণকথা। শুনতে শুনতে দেখতে পাই আমাদের সেই বাড়িটিকে যে বাড়িটিতে একদা মানুষজন থাকত। এখন নেই। নির্মম দেশভাগ তাদের তাড়িয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু তুলসীগাছের মায়া ছেড়ে যাওয়া মানুষের ছায়াটিকে আমাদেরকে প্রাণের মধ্যে গেঁথে দিচ্ছে। এর কোনো বিভাজন নেই।

    সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর এই গল্পটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৫ সালে ‘দুই তীর ও অন্যান্য গল্পে’. তখন আমি জন্মেছি। আর এখন ২০১০।. মাঝখানে পাঁচল্লিশটি বছর কেটে গেছে। সে সময়ে যে আখ্যান আর ভাষা নিয়ে তিনি কাজ করেছেন—সে পথে আমরা হাঁটতে পারি নি। সেই বামপন্থী মকসুদের মত দিনদিন বাম দিক থেকে আমাদের মাথাটি ক্রমশ ডানদিকে হেলে যাচ্ছে। এই কথাটিও কারো কণ্ঠে শুনতে পাই না। তাই মনে হল—এই নরম দিনটিতে তুলশীগাছটির কথা। আর তার মায়াটির কথা। আমরা তো জানি--কোথাও কিছু মায়া রহিয়া যায়।

  • Biplob Rahman | 202.164.212.14 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ১৪:১২502395
  • "ইলিয়াস নিজে অধ্যাপক হলেও, ওকে নিয়ে অধ্যাপনাসুলভ কাজ হয় বেশি কষালো হয়ে ওঠে; নয়ত বেশ টলটলে হয়ে পড়ে।অশ্রেনি সংগ্রামের দ্বিমাত্রিকতায়, ইলিয়াসের ত্রিমাত্রিক কুট্টি-খান্দান খান খান হয়ে হারিয়ে যায়।

    এই দ্বিমাত্রিক দর্পনের নিগড়ে ইলিয়াস কেন নিজেকে সপেছিল, তা আমাকে বিস্মিত করে, ব্যথিত করে।অমানে এই লেখকত সত্যেন সেনের চেয়ে অনেক, অনেক উচু মানের; এরত বিরলপ্রজ হবার বা শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিক্ষনে বিচ্চার পাবার কথা নয়।অকিন্তু ওর সাথে দুরত্ব তৈরি হয়ে যায় শামসুর রাহমানের; ওর সাথে দেখা হয় না মুস্তফা আনোয়ারের।অচিনের দেয়াল যে দুর্ভেদ্য নয় তাত হংকং, ম্যকাওয়ের পাশাপাশি অবস্থানেই বোঝা যায়।অভাগ্যিস দুর্ভেদ্য নয়।অমতবাদের হিনমন্যতায়, নিজের হারানো হৃদস্পন্দনের খোজেই কি ইলিয়াস আমাকে প্রশ্রয় দিতেন?

    বাংলাদেশের তিব্র অস্থিরতাকে ধারন করবার ক্ষমতা ছিল ইলিয়াসের।অকিন্তু নান্দনিকতায় ও বেছে নিয়েছিল বদরুদ্দিন ওমরদের নির্দেশনা।অসংস্কৃতি, অপসংস্কৃতির সিমা সরহদ্দে ও বলি দিয়েছিল নিজের প্রান স্পন্দন।অআর এখানেই ইলিয়াস নিজেকে বামন করে ফেলেছিল।"

    প্রত কথাসাহিত্যক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে নিয়ে প্রবাসী কবি চয়ন খায়রুল হাবিবের লেখা : ইলিয়াসের পাইপ: আশির দশকের স্নাইপারেরা ১ http://dhootoorafm.blogspot.com/2010/01/blog-post.html
  • Biplob Rahman | 202.164.212.14 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ১৯:২৮502396
  • হুমায়ূন আহমেদের মধ্যবিত্ত মানস
    লিখেছেন: মাসকাওয়াথ আহসান
    ........................

    হুমায়ূন আহমেদ তার এইসব দিনরাত্রিতে একটি নান্দনিক মধ্যবিত্তের ছবি এঁকেছিলেন।অএই পরিবারটি ছিল একটি যৌথ পরিবার। নাটকের চরিত্রগুলোর সাজপোষাক,সংলাপ,বাসার আসবাবপত্র সবকিছুতেই ছিল মধ্যবিত্তের পরিমিতির ছাপ।অসেই মধ্যবিত্ত রিক্সায় চড়ে,বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যায়,পার্কে যায়।অছিমছাম এই মধ্যবিত্তের মাঝে দারিদে্‌র্‌যর হাহাকার নেই, প্রাচুর্যের লোভ নেই।অসুন্দর একটা যৌথ পরিবারের এই ছবি আজো দর্শকদের মনে লেগে আছে।

    হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে দর্শকদের ছোঁ মেরে নিয়ে যায় হিন্দী সিরিয়ালগুলো। ভারতের একতা কাপুর মধ্যবিত্তের ছবি আঁকলেন পণ্যের বিজ্ঞাপনের মশলা বা মাসালা দিয়ে।

    সত্যজিত রায়ের শাখা প্রশাখার মধ্যবিত্ত তখন এলিয়েনেশনের শিকার।অমধ্যবিত্তের এলিট হবার আকাংক্ষার মাঝে একা বা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশংকা ছড়িয়ে পড়ে।

    কিন্তু দর্শক রুচিকে টালমাটাল করে দিয়ে মধ্যবিত্তের মানস অংকনে একতা কাপুরের জয় হয়।অঢাকা,কলকাতা,দিল্লী,বোম্বে,করাচী,লাহোর,ইসলামাবাদের মধ্যবিত্ত লিভিং রুমগুলো একতা কাপুরের ইচ্ছা অনুযায়ী বেড়ে ওঠে। আমাদের দর্শকরুচি হুমায়ূন আহমেদ,সত্যজিত রায়কে পরাজিত করে একতা কাপুরের স্থূলতার কাছে আত্মসমর্পণ করে।

    মধ্যবিত্তদের হাত থেকে বাজারের ব্যাগ উধাও হয়ে গিয়ে জায়গা করে নিয়েছে ট্রলি।অমুদী দোকানে না গিয়ে তারা যেতে শুরু করেছে শপিং মলে।অমধ্যবিত্তাদের এখন একতা কাপুরের মডেল সাজতে কানিজ আলমাসের কাছে স্পা নিতে যেতে হয়।অমধ্যবিত্ত হাজব্যান্ডকে এখন সাজতে হয় বৌএর ইচ্ছায় একতা কাপুরের মডেল।অবাংলাদেশের মধ্যবিত্ত তাদের লাইফস্টাইলে যে একতা বিপ্লব সাধিত করে তা দেশটির অর্থনীতিতে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা কেড়ে নেয়। শোপিস কেনা,নানান ডেতে গিফট কেনা, দামী রেস্তরায় পয়সা নষ্ট করে খাওয়া এইসবের মাঝখানে ক্রেডিট কার্ডের মানি অন হোপের মাধ্যমে ঋণ করে ঘি খাওয়া শুরু হয়।অক্লাসের বইয়ের বাইরে বাচ্চাদের বই কিনে দেবার প্রবণতা নেই বললেও চলে।

    বিজ্ঞাপনের হিংসুটে বাচ্চা তার গাড়ী থেকে বৃষ্টির মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় গাড়ী না থাকা বাচ্চাকে। বিজ্ঞাপনের বাচ্চার অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে ড্যাড গাড়ী কেনেন ব্যাংক লোন নিয়ে।অআর সুন্দর একটি সুখের নীড়ের বেছে নাও বিজ্ঞাপন দেখে লোন নিয়ে এপার্টমেন্ট কিনলে চার্বাক দর্শনের ষোলকলা পূর্ণ।অএইসব দিনরাত্রির সেই হাসিখুশী নির্মল মধ্যবিত্তের জায়গায় কতগুলো অহংকারী এবং গোমড়া মুখ। মাঝে মাঝে প্লাস্টিক দেঁতো হাসি।

    আমাদের মধ্যবিত্ত এতেও খুশী নয় তারা এখন মাইগ্রেটেড হয়ে পশ্চিমে চলে যেতে চায়। কারণ এইসব দিনরাত্রির মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবার একতা কাপুরের ষড়যন্ত্রে বিজ্ঞাপনের খন্ড পরিবার হয়ে ইতিমধ্যে শেকড় উপড়েছে। এবার উড়াল দেবার পালা।অতাতে অসুবিধার কিছু নাই।অপশ্চিমে গিয়ে বাসায় কাজের বুয়াও থাকবেনা, ড্রাইভার বা বাজার করার আব্দুলও থাকবেনা।অসুতরাং একতা কাপুরের বিজ্ঞাপনের ইলিউশন উড়ে গিয়ে আবার ধরায় ফিরে আসবে মধ্যবিত্ত।অছেলে মেয়ে আঠারো বছর বয়েসের পরে আলাদা হয়ে গেলে সেই সত্যজিত রায়ের শাখা-প্রশাখার এলিয়েনেশন বা তারেক মাসুদের অন্তর্যাত্রার মতো নি:সীম শূণ্যতা।অআবার সেই রবীন্দ্রনাথের ধ্রুপদী আত্ম-জিজ্ঞাসা কে আমি?

    মধ্যবিত্তের আত্মকেন্দ্রিকতার প্রায়শ্চিত্ত তার জীবনকালেই করতে হয়।অএইসব দিন রাত্রির যৌথ পরিবার ভেঙ্গে দিয়ে পশ্চিমের এপার্টমেন্ট কেন্দ্রিক প্রাইভেসী খুঁজতে গিয়ে একসময় একা হয়ে যেতে হবে এটা ইতিমধ্যে অনাবাসী প্রবীণ প্রজন্ম বুঝতে শুরু করেছে। ঢাকাতেও খুঁজলে অনেক বাসা পাওয়া যাবে যেখানে দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সন্তান আর নাতী নাতনীর ছবি নিয়ে বসে আছেন।

    এই যেখানে জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি সেইখানে লাইফস্টাইলে এতো ভোগবাদী ইঁদুরের দলে যোগ দিয়ে লাভ কী?দুর্নীতি প্লেগের মতো ছড়িয়ে পড়ছে সমাজে।অকারণ বিজ্ঞাপনের মতো জীবন সাজাতে অনেক টাকা লাগে।অএই দুর্নীতির প্লেগ থেকে নিজেকে দূরে রাখার লড়াইটা কষ্টকর। তবে এ লড়াইয়ে জিততে পারলে মৃত্যুর আগে শেষ হাসিটা হাসা যায় বলে আমার ধারণা।

    সেটা সত্তরোর্ধ রাজনীতিবিদদের মধ্যে যারা দুর্নীতিগ্রস্ত তাদের মৃত্যু আর যারা স্‌ৎ তাদের মৃত্যুর ধরণ ও আমজনতার সম্মান জানানোর ধরণের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।অসব মানুষের ক্ষেত্রেই এই উদাহরণ চলনসই।অতাই আমাদের ফাঁপা মধ্যবিত্ত সমাজের এখনি সচেতন হওয়া দরকার।অস্টারপ্লাস ড্রামা সিরিয়ালের ইলিউশন থেকে বেরিয়ে এসে এইসব দিনরাত্রির সেই নির্মল মধ্যবিত্ত মানসের চর্চা এই মুহূর্তে সমাজ বিপ্লবে সবচেয়ে জরুরী।

    ---
    http://www.amarblog.com/maskwaith/posts/140028
  • Mridha | 192.88.212.68 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ২০:৩৭502397
  • বিপ্লবভাই প্রাণ জুরিয়ে দিলেন....আরো লিখুন এইরকম.....
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ২৫ নভেম্বর ২০১১ ২২:১৫502398
  • শহীদুল্লাহ কায়সার ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী জামাত রাজাকার আলবদরদের হাতে শহীদ হন। তিনি সাংবাদিক ছিলেন।অরাজনৈতিকভাবে মণি সিংহের মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি করতেন।
    তাঁর সংসপ্তক ও সারেং বউ--দুটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। এই দুটি উপন্যাস পড়লে বোঝা যায় তিনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের পূর্বসূরী। এ দুটো উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র ও টিভি সিরিয়াল হয়েছে।

    শহীদুল্লাহ কায়সার
    জন্ম: ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৭ সাল, মজুপুর গ্রাম, ফেনী।
    নিখোঁজ: ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ থেকে।

    সাংবাদিক ও সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সার এর প্রকৃত নাম আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। ১৯৫২- র ভাষা আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা পালন করেন। তার এ অনমনীয় সাহসিকতার জন্য তিনি একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর তিনি অপহৃত হন এবং আর ফিরে আসেননি। বাংলা সাহিত্যে তিনি যথেষ্ট আলো ছড়িয়েছেন। উপন্যাস, কবিতা, ছোটগল্প, নাটক, ভ্রমনকাহিনীসহ সাহিত্যের বহুমুখী সৃষ্টিশীল জগতে ছিল তার সদর্প পদচারণা। ‘সারেং বউ’‘সংশপ্তক’ এবং ‘কৃষ্ণচূড়া মেঘ’‘দিগন্তে ফুলের আগুন’‘কুসুমের কান্না ‘চন্দ্রভানের কন্যা’ (গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত) ‘রাজবন্দীর রোজনামচা’‘পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ’ (ভ্রমন কাহিনী) পরিক্রমা (প্রবন্ধ সংকলন) তার উলে­খযোগ্য গ্রন্থ।

    শহীদুল্লাহ কায়সারের অনুজ প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকারও লেখক জহীর রায়হান। রাজাকার বাহিনীর হাতে অপহৃত শহীদুল্লাহ কায়সারের অনুসন্ধান গেলে তাকেও পাকিস্তানপন্থীরা একাত্তর পরবর্তী সময়ে মেরে ফেলে।

  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ০৭:৫০502399
  • প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও বাংলা একাডমীর পুরস্কারপ্রাপ্ত ফেলো রশীদ করিম আর নেই। শনিবার ভোর চারটায় নগরীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

    রশীদ করিম ১৯২৫ সালের ১৪ আগস্ট কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ত্‌ৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাদেশের কথাসাহিত্যকে যে ক’জন কৃতী পুরুষ এগিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি তাদের অন্যতম। এদেশের বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক আবু রুশদ তাঁর অগ্রজ।
    রশীদ করিমের প্রথম উপন্যাস উত্তম পুরুষ। এছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি ‘প্রসন্ন পাষাণ’, ‘আমার যত গ্লানি’, ‘প্রেম একটি লাল গোলাপ’, ‘বড়ই নি:সঙ্গ’ ইত্যাদি।
    তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমী, আদমজীসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন।
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ০৭:৫৩502400
  • সদ্য প্রত
    কথাসাহিত্যিক রশীদ করীমের সাক্ষাৎকার
    বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
    --------------------------------
    রশীদ করীম ( ১৪ আগস্ট ১৯২৫ --- ২৬ নভেম্বর ২০১১)

    বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক, গল্পকার এবং প্রবন্ধকার রশীদ করীম। দেশবরেণ্য এ লেখক ২৫ নভেম্বর দিবাগত রাত ৩টায় প্রত হয়েছেন। আমরা শোকাহত।

    রশীদ করীম জন্মগ্রহণ করেন কলকাতাতে ১৯২৫ সালের ১৪ আগস্ট। দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে তাঁরা সপরিবারে কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন।

    পঞ্চাশের দশকে রশীদ করীমের লেখালেখির সূচনা। লেখকজীবনের শুরুতে গল্পই লিখতেন তিনি।
    ১৯৬১ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম উপন্যাস `উত্তম পুরুষ` তাঁকে লেখক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়।

    বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং ১৯৮৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া ১৯৬৯ সালে লাভ করেন আদমজী পুরস্কার ।

    তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে-- প্রসন্ন পাষাণ, আমার যত গ্লানি, মায়ের কাছে যাচ্ছি, সোনার পাথরবাটি, সাধারণ লোকের কাহিনী, প্রেম একটি লাল গোলাপ, একালের রূপকথা, চিনি না, বড়ই নি:সঙ্গ, লাঞ্চবক্স ইত্যাদি। ছোটগল্পের বই : প্রথম প্রেম।

    এছাড়াও রয়েছে প্রবন্ধ-গবেষণাগ্রন্থ : আরেক দৃষ্টিকোণ, অতীত হয় নতুন পুনরায়, মনের গহনে তোমার মুরতিখানি। স্মৃতিকথা : জীবন মরণ। ১৯৯২ সালে স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে তিনি দীর্ঘদিন পক্ষাঘাতে ভুগছিলেন।

    ১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর রশীদ করিমের ধানমণ্ডির বাসভবনে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।অসাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন : শহিদুল ইসলাম মিন্টু।

    সদ্য প্রত এ কথাসাহিত্যিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি পুন:মুদ্রণ করা হলো। )

    লেখালেখির জগতে কীভাবে এলেন?

    রশীদ করীম : আমাদের বাড়িতে অনেক আগে থেকেই লেখালেখি এবং লেখাপড়ার পরিবেশ ছিল। আমার সেজো ভাই আবু রুশদ লেখালেখির সাথে জড়িত ছিলেন। ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব, আবুল হোসেন, গোলাম কুদ্দুসসহ ঐ সময়ের অনেক লেখকই আমার সেজো ভাইয়ের বন্ধু ছিলেন। এদের যাতায়াত ছিল আমাদের বাড়িতে। তাদের লিখতে দেখতাম। নিজে উৎসাহী হতাম বলা যায়।

    আমি জন্মেছি সাহিত্যের প্রতি একটা প্রবৃত্তি নিয়ে, সাহিত্য সম্পর্কে একটা অনুরাগ নিয়ে। তাছাড়া আমার দাদার অর্থাৎআব্বার ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ছিল। সেখানেও বই দেখতাম। বই দেখলেই বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। তাই আমারও বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মেছিল।...

    আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন ১৯৩৭ সাল। আমাদের ক্লাসের ছেলেরা উদ্যোগ নিল হাতে লেখা পত্রিকা বের করবে। ক্লাসের ফার্স্ট বয় বন্ধু-অরুণ ঘোষের অনুরোধে আমি সেখানে প্রথম গল্প লিখি। পরে এটি অন্য নামে শিশু সওগাতে প্রকাশিত হয়, গল্পটির নাম ছিল ‘চালাক ছেলে’ এবং এভাবেই মূলত লেখালেখির জগতে আমার প্রবেশ।

    সাহিত্যের কোন মাধ্যমে লিখতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?

    রশীদ করীম : কবিতা কখনৈ লিখিনি। যা লিখেছি তার মধ্যে বলতে পারো আগে গল্প লিখতাম, পরে উপন্যাস লিখেছি। এখন তো কলাম, প্রবন্ধ লেখা ছাড়া অন্য কিছুই করতে পারছি না।

    সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা একাডেমী থেকে আপনার দুটো প্রবন্ধ সংকলন বেরিয়েছে। আমরা লক্ষ করছি, গল্প-উপন্যাস লেখার চেয়ে আপনি ধীরে ধীরে প্রবন্ধ লেখার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। আপনার কি মনে হয়?

    রশীদ করীম : একদিক থেকে তোমার এই কথা ঠিক। আমাদের দেশে অসংখ্য দৈনিক এবং সাপ্তাহিক পত্রিকা বেরুচ্ছে। এসব পত্রিকা থেকে কলাম প্রবন্ধ লেখার অনুরোধ আসে। তাই বছর দুই থেকে নিয়মিত কলাম লিখছি এদের অনুরোধ রক্ষা করতে গিয়ে যেমন কলাম বা প্রবন্ধ লিখছি, তেমন আর্থিক কারণেও লিখছি। ...এখন উপন্যাস লেখা একেবারেই হচ্ছে না। উপন্যাস লেখবার জন্য অভিনিবেশ লাগে। সৃজনধর্মী কাজ বলো, মগজের কাজ বলো, এসব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু উপন্যাসেই মনোনিবেশ করতে হয়। কেননা উপন্যাসের ক্ষেত্রে চরিত্র গঠন আছে, ঘটনার বিশ্লেষণ আছে, পরিবেশ তৈরি করার কাজ আছে, কাজেই এটা খুব সহজ কাজ নয়। এমনিতেই আমি ধীর লয়ে লিখি। তাই কলাম-প্রবন্ধ লিখছি বলেই উপন্যাসের প্রতি নজর দিতে পারছি না।

    আমাদের দেশের কথাসাহিত্যের গতি প্রকৃতি আপনার কাছে কী রকম মনে হয়?

    রশীদ করীম : এটা বলা মুশকিল। যা কিছু গল্প উপন্যাস লেখা হচ্ছে তার সব আমার পড়া নেই। সে কারণেই এ প্রশ্নের জবাব দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। তবে এতটুকু বুঝি, একটা ধারা আছে যারা জনপ্রিয়তার জন্য লিখছেন, কিংবা যা লিখছেন তাই জনপ্রিয় হচ্ছে। এদের লেখার ধরন ছক বাঁধা। এরা যা লিখেছেন তার সবটাই বই পড়া ঘটনার পুন:বর্ণনা মাত্র। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যের এটি একটি ধারা। আবার কেউ কেউ আঞ্চলিক উপন্যাস লিখছেন। কেউ কেউ অতি প্রাচীন যুগের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়েছেন। যেমন শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন; আবার কেউ কেউ কী করছেন ঠিক বুঝতে পারছি না। যেমন মাহমুদুল হক। লেখার প্রতি যতটা একনিষ্ঠ হওয়ার কথা ছিল, ততটা তিনি হননি। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের ওপর অনেকে লিখেছেন এবং এখনো লিখছেন, এটিও একটি ধারা।

    গত দুই দশকে আমাদের কথাসাহিত্যের একটা বন্ধ্যাত্ব ভাব লক্ষ করা যায়। আপনার কী মনে হয়?

    রশীদ করীম : মূলত আশির দশকে কথাসাহিত্য বন্ধ্যাত্ব লাভ করে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, শামসুদ্দীন আবুল কালাম, শওকত ওসমান, আবু রুশ্‌দ, শাহেদ আলী, রাবেয়া খাতুন প্রমুখদের সাথে তুলনীয় লেখা ঐ দশকে হয়নি। আসলে দশক হিসেবে বিচার করা যায়ও না। পূর্বের দশকের অনেকেই এখনো লিখছেন। সে কারণে কিন্তু আমার মনে হয়, আমাদের কথাসাহিত্য গত দুই দশকে আরো পরিণত হয়েছে। আরো সমৃদ্ধ হয়েছে।

    সত্তরের দশকে আমাদের সাহিত্যে বিশেষ করে ছোটগল্পে নিরীক্ষার নামে এক ধরনের দুর্বোধ্যতা, আবদ্ধতা, অস্পষ্টতা লক্ষ করা গেল। পরবর্তী সময়ে দেখা গেল, এই নিরীক্ষাধর্মী প্রক্রিয়াটি থেকে উত্তরণের চেষ্টা না করে বরং প্রক্রিয়াটিই বন্ধ হয়ে গেল। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

    রশীদ করীম : নিরীক্ষাধর্মী ব্যাপারটা আসলে কী? নিরীক্ষার জন্য নিরীক্ষা! প্রশ্ন হলো, আমি কোনটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি? আমি একটা উপন্যাস লিখতে চাই। উপন্যাসের একটি বিষয় আছে। উপন্যাসের চরিত্রগুলো যদি উন্মাদ না হয়, তাহলে তাদের আচরণের একটি পরম্পরা আছে, সম্পৃক্ততা আছে, আমার লেখা হতে হবে সে রকম। কিন্তু নিরীক্ষার জন্য আমি যদি আমার আসল জিনিসকে, সৃজনশীলতাকে বিসর্জন দিই, সেটা তো কাম্য নয়। আমি চাচ্ছি সাহিত্য সৃষ্টি করতে, নিরীক্ষা করতে নয়। সাহিত্য সৃষ্টি করতে গিয়ে তার আসল বক্তব্য ও শৈল্পিক মানের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। ঘাড়ে নিরীক্ষা চাপিয়ে দিলে সাহিত্যের আসল জিনিসটাই নষ্ট হয়ে যাবে। নিরীক্ষাধর্মী কাজ তখনই করতে হবে, যখন মানুষের আধুনিক চিন্তা বিদঘুটে হয়ে যাবে, জীবনের ধারা অন্যরকম হয়ে যাবে। সে জীবনকে প্রকাশ করতে বিশেষ ধরনের এক ভাষা লাগবে। ঘটনার সংস্থাপন এক ধরনের হতে হবে, আঙ্গিককেও সে ধরনের হতে হবে। কিন্তু আমরা আধুনিক চিন্তা বা আচরণের সেই স্তরে না পৌঁছানোর কারণে নিরীক্ষার প্রশ্নটি অবান্তর।

    শুধু গল্পের ক্ষেত্রে নয়, আমাদের সাহিত্যের অন্যান্য ক্ষেত্রেও একটা নৈরাজ্যিক ভাব লক্ষণীয়। কেউ কেউ বলেন, এই নৈরাজ্যের কারণ সামাজিক ও রাজনৈতিক। আবার কেউ কেউ বলেন অর্থনৈতিক বিপর্যস্ততার কথা-- আপনি কি বলেন?

    রশীদ করীম : সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নৈরাজ্য এই তিনটি বিষয় একত্রিত হয়েই সাহিত্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। এগুলোতো আলাদা কোনো বিষয় নয়। এদের একটির সাথে আরেকটির সম্পর্ক বিদ্যমান। একটির প্রভাবে আরেকটি প্রভাবিত হয়।... সবখানে অস্থিরতা দেখেই মানুষের মনে অস্থিরতা জন্মলাভ করে, তুমি যাকে বলছ নৈরাজ্য। ফলে সাহিত্যে নৈরাজ্য তো আসবেই।

    আমাদের দেশের গল্প-উপন্যাস লেখকের জন্য প্রকাশনা প্রক্রিয়া একটি বিরাট বাধা। আপনার কি তাই মনে হয়?

    রশীদ করীম : হ্যাঁ, আমার তাই মনে হয়। আবার অনেক লেখকের দোরগোড়ায় প্রকাশকরা টাকা হাতে নিয়ে অপেক্ষাও করেন পাণ্ডুলিপির জন্য। আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রকাশকই সাহিত্যপ্রেমে ব্যবসায় নামেননি। নেমেছেন পয়সা রোজগারে। তারা সেসব বই-ই বেছে নেয় যেগুলোর কাটতি বেশি। যেগুলো বাজারে গরম পিঠার মতো বিক্রি হয়। ফলে সুস্থ ও রুচিবান সাহিত্যিকদের বই ছাপাতে প্রকাশকরা উৎসাহী হয় না। কেননা এদের পাঠক সীমিত অন্যদিকে উপন্যাস-গল্প যদি প্রকাশিত না হয় তাহলে সাহিত্যিকও লেখার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।

    রবীন্দ্র সাহিত্যের কোন মাধ্যম আপনার কাছে বেশি ভালো লাগে?

    রশীদ করীম : রবীন্দ্রনাথের গীতবিতান সবচেয়ে মহ্‌ৎ সৃষ্টি। যদিও এটিকে গান হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু, লেখা হয়েছে কবিতা হিসেবেই।

    গল্পকে গল্প করে তোলার জন্য কী কী বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার?

    রশীদ করীম : গল্পে থাকে মাত্র একটি ঘটনা। ঐ ঘটনা লেখকের মনে যে ধরনের অভিঘাত সৃষ্টি করে, যেভাবে তার মনে উপস্থিত হয়েছে, সেটাকে অনুসরণ করে পেছন দিক থেকে গল্প লেখা শুরু করতে হয়। পার্শ্ব পরিবেশ, প্রতিক্রিয়া হিসেবে কয়েকটি চরিত্রও সৃষ্টি করতে হয়।

    তরুণ লিখিয়েদের লেখা পড়েন কি?

    রশীদ করীম : শুধু তরুণ কেন, প্রতিষ্ঠিত অনেক লেখকের লেখাই পড়া হয়নি। বয়স হয়েছে তো, তাই পড়া সম্ভব হচ্ছে না।

    অবসর সময়ে আপনি কী করেন?

    রশীদ করীম : অবসরে গান শুনি। মাঝে মাঝে বই পড়ি। কলাম-প্রবন্ধ লিখি। চিন্তা করি। তবে ক্লাসিক বইগুলো খুব বেশি পড়ি।

    বি:দ্র :--সাক্ষাৎকারটি ‘আজকের কাগজ’ পত্রিকায় ১৯৯২ সালরে ৫ নভেম্বর প্রকাশিত হয়। এখানে হামিদ কায়সার ও পিয়াস মজিদ সম্পাদিত ‘তরুণ আলোয় রশীদ করীম` (শুদ্ধস্বর ২০১১) বই থেকে সংগৃহীত।

    http://www.banglanews24.com/news.php?nssl=70765
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ৩০ নভেম্বর ২০১১ ০৬:০৬502365
  • আমার প্রিয় লেখক আবু ইসহাক। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ। কিছু অংশ তুলে দিলাম।

    বিশ শতকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশের গ্রামগুলোর অধিকাংশই ছিল অনগ্রসর। এক্ষেত্রে খানিকটা ব্যতিক্রম ছিল নড়িয়া গ্রাম। নড়িয়ায় তখন বেশকিছু সম্পন্ন ও সংস্কৃতিমনা পরিবার ছিল। এসব পরিবারের সাথে আবু ইসহাকদের পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাজকর্ম কর্মসূচির অন্যতম সহযোগী সুধীরচন্দ্র কর ছিলেন নড়িয়া গ্রামের সন্তান। আবু ইসহাকের সহপাঠী ছিলেন সুধীরচন্দ্র করের ছোটভাই সুভাষচন্দ্র কর। সহপাঠী সুভাষের মাধ্যমে তাঁদের পারিবারিক সংগ্রহ থেকে অনেক বইপত্র পড়ার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। আবু ইসহাকের বড়ভাইয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল প্রতিবেশী জমিদার বাড়ির ছেলে ফুটবলার গোষ্ঠ পালের। গোষ্ঠ পালদের বিশাল পারিবারিক লাইব্রেরি থেকে বইপত্র ধার নেওয়ার সুযোগ পেতেন আবু ইসহাক। এছাড়া আবু ইসহাকদের স্কুলের (উপসী বিজারি তারাপ্রসন্ন উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়) লাইব্রেরিতে সমকালীন পত্রপত্রিকা ও বইপুস্তক ছিল। এখান থেকেও বইপত্র পড়ার সুযোগ পেতেন তিনি। শৈশব ও কৈশোরে পত্রপত্রিকা ও পুস্তক পাঠের এসব সুযোগ সাহিত্যিক আবু ইসহাকের মানস গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। ছোটবেলা থেকেই কবিতা ও গল্প লেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন আবু ইসহাক। ১৯৪০ সালে আবু ইসহাক যখন নবম শ্রেণির ছাত্র তখনই 'অভিশাপ' নামের একটি গল্প তিনি পাঠিয়েছিলেন কলকাতা থেকে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদনায় প্রকাশিত 'নবযুগ' পত্রিকায়। ঐ পত্রিকায় ঐ বছরের কোনো এক রবিবারে তাঁর গল্পটি ছাপা হয়। এটিই আবু ইসহাকের প্রথম প্রকাশিত রচনা। সেই গল্পটিই তাঁকে সাহিত্যিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।

    আবু ইসহাকের সাহিত্যজীবন
    পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায়ই আবু ইসহাক গল্প ও কবিতা লেখা শুরু করেন। তাঁর এসব লেখার বেশকিছু স্কুলের দেয়াল পত্রিকা 'প্রভাতি'তে ছাপা হয়েছে। স্কুলের গণ্ডির বাইরে তাঁর প্রথম মুদ্রিত লেখা নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে কলকাতা থেকে প্রকাশিত 'নবযুগ' পত্রিকায় ছাপা হয়। ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় 'সওগাত' ও 'আজাদ' পত্রিকায় তাঁর লেখা বেশ কয়েকটি গল্প ছাপা হয়। ঐ সময় কলেজ বার্ষিকীতে তাঁর অনুবাদ করা একটি কবিতাও ছাপা হয়েছিল।
    দেশের দিশেহারা, নি:স্ব, অসহায় মানুষদের নিয়ে আবু ইসহাক নারায়ণগঞ্জ থাকাকালে তাঁর প্রথম ও অন্যতম উপন্যাস 'সূর্যদীঘল বাড়ী' রচনার কাজ শুরু করেন। সেটা ছিল ১৯৪৪ সাল। দীর্ঘ চার বছর পর ১৯৪৮ সালে এটি লেখার কাজ শেষ হয়। ১৯৫০ থেকে ১৯৫১ পর্যন্ত এটি ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয় 'নওবাহার' নামক মাসিক পত্রিকায়। উপন্যাসটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় রচনার সাত বছর পর ১৯৫৫ সালে। প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় কলকাতা থেকে এবং পরে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালে।

    'সূর্যদীঘল বাড়ী'তে এমন অনেক কিছুই আছে যা দেশে ও বিদেশে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময়কে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে এ উপন্যাস। 'সূর্যদীঘল বাড়ী' উপন্যাসে আবু ইসহাক অত্যন্ত স্বত:স্ফুর্তভাবে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেছেন। এর ফলে উপন্যাসের কাহিনী ও সামাজিক প্রেক্ষাপট জীবন্ত রূপ লাভ করেছে। এছাড়া গ্রামে প্রচলিত গল্প, গান ও ছড়ার ব্যবহারও এক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। এই ভাবেই আবু ইসহাকের 'সূর্যদীঘল বাড়ী' বাংলা উপন্যাসের একটি সফলতার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

    আবু ইসহাকের দ্বিতীয় উপন্যাস 'পদ্মার পলিদ্বীপ'। আবু ইসহাক তাঁর এ লেখা সম্পর্কে জানিয়েছেন, 'পদ্মার পলিদ্বীপ' লেখা শুরু করেছিলেন ১৯৬০ সালে এবং শেষ করেন ১৯৮৫ সালে। এটি প্রথমে বাংলা একাডেমীর পত্রিকা 'উত্তরাধিকার' এ প্রকাশিত হয় 'মুখরমাটি' নামে। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময় এটির নাম রাখা হয় 'পদ্মার পলিদ্বীপ'। এ উপন্যাসের কাহিনী ও প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষ অর্থাত দেশভাগের আগের সময়কে এ উপন্যাসে ধারণ করা হয়েছে। এ উপন্যাসের বিশাল প্রেক্ষাপটের মধ্যে গোটা একটা জনপদের মানুষের চিন্তাভাবনা, উপলব্ধি, ভালবাসা, ঘৃণা, তাদের অদম্য উতসাহ, তাদের পরাজয়- সবই ধারণ করার চেষ্টা করেছেন। এর ফলে এ উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে মহাকাব্যের মতো। পদ্মার বুকে জেগে উঠা নতুন চরের দখল নিয়ে এ উপন্যাটি রচিত হয়েছে। পেশিশক্তির বলে চর দখলের ওপর ভিত্তি করে এ উপন্যাসের কাহিনী গড়ে তোলেন আবু ইসহাক।

    আবু ইসহাকের তৃতীয় ও সর্বশেষ উপন্যাস 'জাল' ১৯৮৮ সালে 'আনন্দপত্র' নামের একটি পত্রিকার ঈদসংখ্যায় প্রথম ছাপা হয়। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় এর পরের বছর। প্রকাশের দিক থেকে তৃতীয় উপন্যাস হলেও এটি লেখা হয় ১৯৫০-এর দশকে। এটি লেখার সময় পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আবু ইসহাক কয়েকটি জাল নোটের মামলার তদন্ত করছিলেন। শোনা যায়, 'সূর্যদীঘল বাড়ী' প্রকাশের জন্য প্রকাশকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতেই তিনি গোয়েন্দা কাহিনীর আদলে লিখেছিলেন 'জাল'। পরে 'সূর্যদীঘল বাড়ী' এতটাই আলোড়ন তোলে যে তিনি নিজের নামের প্রতি অবিচার হতে পারে ভেবে 'জাল'কে প্রকাশ না করে বাক্স বন্দি করে রাখেন দীর্ঘ ৩৪ বছর। এর পরে ১৯৮৯ সালে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। আবু ইসহাকের সঙ্গে সাহিত্যের পাঠকের পরিচয় হয় তাঁর গল্পের মাধ্যমে। তবে দীর্ঘ সাহিত্য জীবনের তুলনায় তাঁর গল্পের সংখ্যা খুব বেশি নয়। প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ মাত্র দুটি- 'হারেম' (১৯৬২) ও 'মহাপতঙ্গ' (১৯৬৩)। ২০০১ সালে প্রকাশিত গ্রন্থ 'স্মৃতিবিচিত্রা'কে অনেকেই গল্প সংকলন হিসেবে বিবেচনায় আনেন। 'স্মৃতিবিচিত্রা'য় আসলে তিনি নিজের জীবনের স্মৃতিই তুলে ধরেছেন নকশাধর্মী রচনার আদলে। এটিকে গল্প সংকলন না বলে স্মৃতিকথা বলাই ভালো। বিচিত্র বিষয় অবলম্বনে তিনি গল্প লিখেছেন। তাঁর গল্পে ভূমিহীন মানুষ, যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের জীবন, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবনের নানা সমস্যা বিষয়বস্তু হয়েছে। বিশ শতকের মানুষের জীবনের আত্মিক, মানবিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট তাঁর গল্পের পটভূমি। সাহিত্যের পাঠকের কাছে কিংবদন্তীর মর্যাদায় সমাদৃত আবু ইসহাকের কিছু গল্প। এসবের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তেভাগা আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত 'জোঁক', মানবিক অবক্ষয়ের জায়গা থেকে রচিত 'বর্ণচোর' এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে রচিত 'মহাপতঙ্গ'।

    আবু ইসহাক রচিত একমাত্র নাটক 'জয়ধ্বনি'। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে তিনি এটি রচনা করেন। বাংলা একাডেমীর কিশোর পত্রিকা 'ধানশালিকের দেশ'-এ এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে। নাতি-নাতনিদের আবদারে তিনি এটি রচনা করেন। মীজানুর রহমানের 'ত্রৈমাসিক পত্রিকা'-ও পক্ষী সংখ্যায় (১৯৮৮-৮৯) সালে প্রকাশিত 'একটি ময়নার আত্মকাহিনী' নামে তাঁর লেখা গল্প এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার অভিজ্ঞতার ছাপ পড়েছে এ নাটকে। আবু ইসহাকের অপ্রকাশিত রচনার সংখ্যাও খুব বেশি নয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর কিছু গল্প, একটি ইংরেজি অভিধানের পাণ্ডুলিপি, কিছু প্রবন্ধ এবং 'সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান'-এর অপ্রকাশিত অংশ- এসব মিলিয়ে অপ্রকাশিত রচনাগুলো নিয়ে মাত্র দুয়েক খণ্ডেই রচনাসমগ্র প্রকাশ করা সম্ভব।

    অভিধান প্রণেতা আবু ইসহাক
    আবু ইসহাকের প্রথম পরিচয় তিনি একজন কথা সাহিত্যিক। দ্বিতীয় পরিচয় তিনি একজন অভিধান প্রণেতা। আবু ইসহাকের এই দুই বিশিষ্টতার কোনোটিই কোনো অংশে কম নয়। অভিধান প্রণেতা হিসেবে তাঁর গুরুত্ব অনেকখানি। আবু ইসহাক 'সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান' প্রণয়ন করে বাংলা ভাষায় নতুন ধরনের এক অভিধানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কী আছে নতুন ধরনের এই অভিধানে? এ প্রসঙ্গে আবু ইসহাক খুব সহজ করে বলতে চেয়েছেন তাঁর অভিধানের শুরুতে। ধরা যাক, কোনো একটা বিশেষ স্থানের বা বিশেষ সময়ের বিশেষ 'অন্ধকার'-এর বর্ণনা দিতে হবে। স্মৃতির কোঠা হাতড়ে হয়তো 'অন্ধকার'-এর কয়েকটা বিশেষণ পাওয়া গেল। পাওয়া গেল কালো, গাঢ়, ঘন, ঘুরঘুটি, নিশ্ছ্রিদ্র, ভয়ঙ্কর, সুনিবিড়- ইত্যাকার বিশেষণ। ধরা যাক, কোনোটাই অন্ধকারের বর্ণনা দেওয়ার জন্য যথার্থ হচ্ছে না। তখন কী হবে? তখন সহায়ক হবে এই অভিধান। আবু ইসহাকের এই অভিধানে এক অন্ধকারেরই রয়েছে ১২৭টি বিশেষণ। ১৯৯৩ সালের জুনে বাংলা একাডেমী থেকে অভিধানটির প্রথম অংশ (স্বরবর্ণ) প্রকাশিত হয়। 'সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান' এর প্রথম অংশ (স্বরবর্ণ) প্রকাশের পর ইত্তেফাক গ্রুপ অব পাবলিকেশন্সের পক্ষ থেকে আবু ইসহাককে মাসিক ১০ হাজার টাকা করে এক বছরের জন্য 'মানিক মিয়া গবেষণা বৃত্তি' প্রদান করা হয়। পরে বাংলা একাডেমীর ততকালীন মহাপরিচালক অধ্যাপক হারুন-উর-রশিদের অনুরোধে আরও ছয় মাসের জন্য মাসিক ৫ হাজার টাকা হারে বৃত্তির মেয়াদ বাড়িয়ে দেন ইত্তেফাক গ্রুপের কর্ণধার ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন (তঙ্কÄ¡বধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা)।

    'সমকালীনর বাংলা ভাষার অভিধান' তথা বিশেষণে বিশেষিত শব্দের অভিধানের কাজ করতে গিয়ে শেষ দিকে এসে পুরো পরিবার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন আবু ইসহাক। অভিধানের জন্য বহু বছর ধরে অসম্ভব নিষ্ঠার সঙ্গে পুরো বাংলাসাহিত্য, বাংলা সংবাদপত্র, সাময়িকপত্র, সাহিত্যপত্র ও শতাধিক অভিধান এবং অন্যান্য রেফারেন্স চষে বেরিয়েছিলেন তিনি। আহরণ করেছিলেন দুই লাখেরও বেশি বিশেষিত শব্দ। প্রথমে তিনি বেছে নেওয়া বিশেষিত শব্দগুলো ছোট ছোট কার্ডে লিখে গুঁড়ো দুধের খালি কৌটায় রাখতেন । পরে সেগুলো বাছাই করে সুতোয় মালা গেঁথে সাজাতেন। এই মালা গাঁথার কাজ ও বিশেষিত শব্দের কার্ড গুছিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করেছেন স্ত্রী, কন্যা, পুত্র ও নাতি-নাতনিরা। প্রথম অংশ প্রকাশের আগপর্যন্ত হাতে লিখেই এ অভিধানের পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন তিনি। পরে বৃত্তির টাকায় একটি কম্পিউটার কিনে কম্পিউটারে পাণ্ডুলিপি গোছানোর কাজ শুরু করেন।

    ১৯৯৮ সালে বাংলা একাডেমী 'সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান'-এর ব্যঞ্জনবর্ণ অংশ (ক থেকে ঞ) প্রকাশ করে। বিশাল এই অভিধানের বাকি অংশ প্রকাশে উদ্যোগী ছিল বাংলা একাডেমী। আবু ইসহাকের আকস্মিক মৃত্যুতে অভিধানের কাজ মাঝপথে থেমে যায় এবং বাকি অংশগুলো প্রকাশে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। আবু ইসহাক তাঁর এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সমাপ্ত করে যেতে পারেননি। পুরো অভিধানের পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি হতো বলে ধারণা করেছিলেন আবু ইসহাক। তাঁর আকস্মিক মৃত্যু আমাদের এ রকম একটি বিশাল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করেছে।

    গ্রন্থ
    আবু ইসহাকের প্রথম উপন্যাস গ্রন্থাকারে 'সূর্যদীঘল বাড়ী' প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালে। এর পর ছোটগল্পের সংকলন 'হারেম' প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালে। পরের বছর প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় ও সর্বশেষ গল্পগ্রন্থ 'মহাপতঙ্গ'। দ্বিতীয় উপন্যাস 'পদ্মার পলিদ্বীপ' গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে। তৃতীয় ও শেষ উপন্যাস 'জাল' গ্রন্থাকারে প্রকাশ পায় ১৯৮৮ সালে। একমাত্র নাটক 'জ্বয়ধ্বনি' ২০০১ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী গ্রন্থকারে প্রকাশ করে। একই বছর প্রকাশিত হয় স্মৃতিকথা 'স্মৃতিবিচিত্রা'। বাংলা ভাষায় অভিনব অভিধান 'সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান' স্বরবর্ণ অংশ বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে। পরে ১৯৯৮ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় এটির ব্যঞ্জন বর্ণ 'ক' থেকে 'ঞ' পর্যন্ত অংশ। এই অভিধানের বাকি অংশের কাজ তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। এছাড়া 'ডিকশনারি অব ক্যুটেড অ্যান্ড ওয়েডেড ওয়ার্ডস' নামে একই ধরনের একটি ইংরেজি অভিধানের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছিলেন তিনি।

    * লেখক : ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ
  • pi | 128.231.22.133 | ৩০ নভেম্বর ২০১১ ০৬:৩৫502366
  • এটাকে তার মানে থিসেরাস বলা যাবে ?

    থিসেরাসের বাংলা কী ? পশ্চিমবঙ্গে বেরিয়েছিল, মণিমঞ্জুষা।
  • i | 124.168.168.76 | ০৪ ডিসেম্বর ২০১১ ১৪:০৭502367
  • গুণীজন বুনে চলেন নকশিকাঁথা। উপলব্ধির নিবিড় বুনোট, পারঙ্গম লেখনীর আশ্চর্য নকশা , মননের ওম। বাংলাদেশের লেখালেখি নিয়ে এই যে আলাপচারিতা ... সইকত, কুলদা, বিপ্লব, দিগন্ত।
    এ' সুতোর আশেপাশে কদিন ঘুরঘুর করেছি। ঢুকেছি, বেরিয়েছি। দ্বিধায় আছি এখনও। অনধিকার প্রবেশ হবে কি আমার?
    তারপর, রোব্বারের বিকেল। বৃষ্টি এল জোরে। জলের ছাঁট। হাওয়া মন্থর ও ভিজে। পায়ের ওপর লেপ টানলাম। লেপ বলল লিখলে না হয়... নকশিকাঁথার এক কোণে একটি দুটি অপটু ফোঁড়- চার নবীন কথাকারের গল্পগুচ্ছের পাঠপ্রতিক্রিয়া ।
    তারেক নূরুল হাসানের 'কাঠের সেনাপতি', অমিত আহমেদের ' বৃষ্টিদিন রৌদ্রসময়', মাহবুব আজাদের 'ম্যাগনাম ওপাস ও কয়েকটি গল্প' আর আনোয়ার সাদাত শিমূলের ' অথবা গল্পহীন সময়'। চারটি বইয়েরই প্রকাশক শস্যপর্ব, জিন্দাবাজার, সিলেট।
  • pi | 72.83.97.112 | ০৫ ডিসেম্বর ২০১১ ০৫:০১502368
  • নকশা তোলা হল ? টইটা তুল্লাম :)
  • i | 137.157.8.253 | ০৫ ডিসেম্বর ২০১১ ০৭:১১502369
  • সুতোয় জট পাকিয়ে একশা হল কাল। আবার চেষ্টা করব শিগ্গিরি।
  • i | 137.157.8.253 | ০৬ ডিসেম্বর ২০১১ ০৬:৫৩502370
  • নকশা তোলা নয় তো আমার, অপটু হাতের সেলাইয়ের দু এক ফোঁড়। একটি দুটি ফোঁড়ে চেষ্টা করি তারেকের 'কাঠের সেনাপতি' বইটির সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করানোর। সমালোচনা নয়, পাঠপ্রতিক্রিয়াও নয় সেই অর্থে। তারেকের লেখার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব শুধু।

    কুলদাবাবু তুলে ধরেছেন রশীদ করিমের একটি সাক্ষাৎকার।

    -গল্পকে গল্প করে তোলার জন্য কী কী বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার?
    রশীদ করিম: গল্পে থাকে একটি মাত্র ঘটনা। ঐ ঘটনা লেখকের মনে যে অভিঘাত সৃষ্টি করে, যেভাবে তার মনে উপস্থিত হয়েছে, সেটাকে অনুসরণ করে পেছন দিক দিয়ে গল্প লেখা শুরু করতে হয়। পার্শ্ব পরিবেশ, প্রতিক্রিয়া হিসাবে কয়েকটি চরিত্রও সৃষ্টি করতে হয়।

    সুতোর এই লাছিটি তুলে নিলাম আমি। যে কাঁথার বুনন শুরু করেছেন গুণীজন, সে কাঁথায় আমার সুতোর ফোঁড় মেলানো চাই তো-

    আসুন। শুরু করি। 'কাঠের সেনাপতির' পাতা উল্টাই।
  • i | 137.157.8.253 | ০৬ ডিসেম্বর ২০১১ ০৭:৪৭502371
  • রশীদ করিমের সাক্ষাৎকার অবধারিত মনে পড়ায় অমর মিত্রকে। তাঁর এক গল্প সংকলনের গোড়ায় বলেছিলেন- ' বিষয় নিয়েও তো লিখি না। লেখার পরে তা হয়তো বিষয় হয়ে যায়। লেখার আগে তা তো থাকে সামান্য বেদনার অনুভূতি। হয়তো কিছুই না। শূন্য থেকে যাত্রা। ... শূন্য থেকে বিষয়ে যেতে চাই। অবচেতনায় কী আছে তা তো টের পাই না'।

    এই সংকলনে শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করে তারেক নির্মাণ করেছেন বিষয়। অনায়াস। সংকলনের ছ ছটি গল্পেই। সেহেতু বিপুল বৈচিত্র্য। প্রতিটি গল্প আলাদা কথা বলে। একদম আলাদা একে অপরের থেকে। আরোপিত কোনো শৈলী নেই । অথচ নির্মাণে , বিষয়ে, ভাষার প্রয়োগে যথার্থ আধুনিক গল্প।
    প্রথম গল্প 'সমান্তরাল'এর কথাই ধরুন।
    একটা মারাত্মক পরিস্থিতি কি অবলীলায় গল্পে আনলেন তারেক। আধখানা বাড়তি শব্দও আসে নি অথচ। শুনুন, পড়ি।
    'অন্ধকারে দাঁড়িয়ে বুঝতে বুঝতেই দেখি বাবা বের হয়ে আসছেন হন্তদন্ত হয়ে, এপাশে আলো না থাকায় আমাকে দেখেন নি-ঘাম দেয়া শরীরে ছুটতে ছুটতে চলে গেলেন নিজের ঘরে। আমি খানিকটা এগিয়ে রান্না ঘরে উঁকি মেরে দেখলাম- আমাদের কাজের ছেলেটা উঠে বসে হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। পাশেই পড়ে থাকা লুঙিটায় চোখ মুছছে একটু পর পর। '

    পরের গল্প 'বউ'। গল্পের শেষে একটা আলতো মোচড় আছে যা আদৌ নাটকীয় নয়। অথচ সেই ম্যাজিক। শূন্য থেকে কাগজের ফুল বের করে আনে যেমন যাদুকর। 'কাঠের সেনাপতি ' গল্প পিতা পুত্রের দাবা খেলার কথা একটি আদ্যন্ত আধুনিক রাজনৈতিক গল্প। এতটুকু উচ্চকিত না হয়েই। পড়ি একটু?
    'রাশেদ দেখে আব্বা কেমন হাঁসফাঁস করে ওঠে, তখুনি হঠাৎ পর্দার ছবি বদলে যায়, এতক্ষণের প্রাণোচ্ছল ছবির লোকটাকে হঠাৎই দেখা যায় সিঁড়ির ওপর অদ্ভূত ভঙ্গিতে বসে আছে, চিরকালীন কালো ফ্রেম নেই চোখে, চোখ দুটো বোজা, চুল এলোমেলো। দেয়াল ধরে উড়তে থাকা চড়ুইগুলো কখন যেন থেমে গেছে, ছাতিমের গন্ধটা ঘরের মাঝামাঝি কোথাও মেঝে অব্দি ঝুলে আছে ছাদ থেকে। আব্বার থমথমে মুখ খেয়াল করে না রাশেদ, ও অস্থির হয়ে ওঠে, কিস্তি মাতের চাল, তবু দেখছে না কেন! ও বলে ওঠে, 'আব্বা, তোমার রাজা বাঁচাও!'
    তার পরের গল্প 'ইঁদুর' সামান্য উচ্চকিত সংকলনের বাকি গল্পের তুলনায়। কিন্তু এখানেও সেই ম্যাজিক। বাক্যবিন্যাস, শব্দ কি ফর্মের চতুরালিতে না গিয়ে শুধুমাত্র নিপুণ ঈশারায় সামাজিক অবক্ষয়ের মত বিষয়ে পৌঁছে যাওয়ার ম্যাজিক।
    পরের গল্প 'নিমন্ত্রণ'। ভূতের গল্প। এখানেও ভৌতিক পরিবেশ তৈরির জন্য এতটুকু নাটকীয়তা নেই। ছিমছাম। শিরশিরে।
    শেষ গল্পটি কথাশিল্পী। এই গল্পটি হয়তো একদম শূন্য থেকে নয় হয়তো। একটা আবছা ভাবনা থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে গল্প-পড়তে পড়তে টের পাই। এই গল্পের শেষটি নাটকীয় অথচ কথনে তার চিহ্নমাত্র নেই। নিরুত্তাপ গল্প বলেছেন তারেক। অসাধারণ ছোটো গল্প একটি।
    সংকলনটিকে যথাযথ বর্ণনা করেছেন মাহবুব আজাদ। বইটির ব্লার্বে।
    'আমাদের বাঁচিয়ে রাখা এ সময়ের সবকিছুই যেন বড় উচ্চকিত, গল্পও তার ব্যতিক্রম নয়। সশব্দ জনজীবনের নির্যাস নিয়ে লেখা অনেক চড়া তারের গল্পের ভীড়ে তারেক নূরুল হাসানের গল্পগুলি যেন নিঝুম দুপুরে পুকুড়পাড়ে চালতে খসে পড়ার মতো-অতর্কিত মৃদু বোলে যে ইঙ্গিত দেয় ঘটনার চরিত্রের। .... দৃষ্টি আকর্ষণী উন্মত্ত চিৎকার নেই, আপন ঢোল ভেবে যথেচ্ছ বাদনবিভ্রাট নেই, তার গল্পগুলি যেন সন্ধ্যায় পাঠকের দোরে কোমর করাঘাত করে ডাকে, বাড়ি আছ?'

    '- তরুণ লেখকদের লেখা পড়েন কি?
    -রশীদ করিম: শুধু তরুণ কেন, প্রতিষ্ঠিত অনেক লেখকের লেখাই পড়া হয় নি। বয়স হয়েছে তো-..'

    তারেকের কোনো লেখা পড়েছিলেন রশীদ করিম সাহেব?
  • i | 137.157.8.253 | ০৬ ডিসেম্বর ২০১১ ০৮:১৩502372
  • দময়ন্তীর বিশদ আলোচনা করেছিলেন 'কাঠের সেনাপতি' নিয়ে। সেই টইটা খুঁজে পাচ্ছিনা।কেউ খুঁজে পেলে এখানে তুলে দেবেন?
  • i | 203.158.45.40 | ০৬ ডিসেম্বর ২০১১ ১৬:৪৯502374
  • ফোঁড় দিতে যাই মাহবুব আজাদের ম্যাগনাম ওপাস ও কয়েকটি গল্প নিয়ে। ছুঁচে সূতো পরাবো। মনের মধ্যে গুনগুন করছেন রশীদ করীম সাহেব-
    'রশীদ করীম: নিরীক্ষাধর্মী ব্যাপারটা আসলে কি? নিরীক্ষার জন্য নিরীক্ষা!...আমি একটা উপন্যাস লিখতে চাই। উপন্যাসের চরিত্রগুলি যদি উন্মাদ না হয়, তাহলে তাদের আচরণের একটি পরম্পরা আছে, সম্পৃক্ততা আছে, আমার লেখা হতে হবে সেই রকম। ... আমি চাচ্ছি সাহিত্য সৃষ্টি করতে, নিরীক্ষা করতে নয়। ...'

    এতটাই কি সরলরৈখিক সব? এই সব লেখালেখি? উত্তর আধুনিক এত কিছু লেখালেখি?
    তবে কেন ওরহান পামুক তাঁর বিখ্যাত বক্তৃতা implied author তুলে আনেন উলফ গ্যাং আইজারের 'implied reader কে? এই বক্তৃতার একটি বঙ্গানুবাদ আছে হাতের কাছে-সৈয়দ সমিদুল আলম কৃত। প্রকাশ কবিতীর্থ, আশ্বিন, ১৪১৭।
    পামুক বলছেন, " আইজারের মতে , কোনও উপন্যাসের অর্থ নিহিত থাকে, না এর পাঠ্যাংশে, না এর পূর্বাপর প্রাসঙ্গিকতায়, বিশেষত যে পাঠ্যাংশ বা প্রবন্ধের পাঠ পাঠকেরা নিয়ে থাকেন। বরং এর অর্থ নিহিত থাকে , ঠিক এই দুয়ের মধ্যবর্তী কোথাও। ... আমি যখন স্বপ্নে ডুবে ছিলাম, অন্য একটি গ্রন্থের দৃশ্য, বাক্য এবং এর সমস্ত খুঁটিনাটি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল... আর সেই মুহূর্তে এই তঙ্কেÄর কথাই আমার মাথায় আসে ও তার ফলাফল হিসেবে যে ইঙ্গিত পাই তা হল: স্বপ্নে দেখা কিন্তু না লেখা প্রত্যেকটি উপন্যাস যার ছক তৈরি হয়ে আছে, তার প্রত্যেকটিরই কোনও না কোনও নিহিত পাঠকসত্তা আছে।'
  • i | 137.157.8.253 | ০৭ ডিসেম্বর ২০১১ ০৮:৩০502376
  • উপন্যাস নয়, উপন্যাসোপম বড় গল্পও( বিজ্ঞাপনের ভাষায় যেমন বলে আর কি)নয়, কেবলমাত্র ছটি ছোটো গল্প মাহবুব আজাদের সংকলনে। অথচ আমার অবস্থা হয় আমার ছোটোবেলার টিকটিকিটার মত। গরমের ছুটি ছিল তখন। দরজা জানলা বন্ধ করে খানিকটা প্রিসম সদৃশ পেপারওয়েট নিয়ে ঘরের দেওয়ালে, সিলিংয়ে আলোর একটা চাকতি তৈরি করছিলাম-রামধনু কখনও আসছিল, কখনও আসছিল না। এক টিকটিকি আকৃষ্ট হয় সে আলোর চাকতিতে। বুঝতে পেরে, আমিও তার সঙ্গে খেলায় মাতি সেই দুপুরে। লুকোচুরি খেলা। আমি আলো ফেলছি এক কোণায়, টিকটিকি সরসরিয়ে ধেয়ে আসছে, আমি সঙ্গে সঙ্গে আলো সরিয়ে নিচ্ছি অন্যখানে, টিকটিকি বেচারা কেমন বেভ্যুল হয়ে যাচ্ছে, আবার দৌড়ছে ঐ চাকতির দিকে। আমি তখন আলোটা তার ওপরে এনে সামান্য একটু ডান বাঁ করছি, সে হতভম্ব-পেয়েছি কি পায় নি বোঝেনা। সঙ্গে সঙ্গেই আমি আলোর চাকতি সরিয়ে নিচ্ছি অন্য কোথাও।
    মাহবুবের গল্প সেইরকম। এই কি উলফ গ্যাং আইজার কথিত নিহিত অর্থ?
    নিদপিশাচ আর ম্যাগনাম ওপাসকে আমি তাই বলব -যেখানে অর্থ লুকিয়ে আছে আর কোথাও-এই পাঠ্যাংশে নয়, পূর্বাপর প্রাসঙ্গিকতায় নয়, অন্য কোথাও।
    বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে এই সময়ে যে সকল গল্প লেখা হয়ে চলেছে,সে সব নিয়ে শ্রেষ্ঠ গল্পের কালেকশন করলে, ম্যাগনাম ওপাস বিবেচিত হওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়েছে। সেহেতু এই গল্পটি নিয়ে আরো কিছু বলা দরকার।
  • i | 137.157.8.253 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১১ ১০:১৩502377
  • মাহবুব আজাদের সংকলনটির শেষ গল্প ম্যাগনাম ওপাস। প্রথম গল্প -'পুরোনো বাড়ি', যেখানে একজন তাঁর পুরোনো বাসস্থান দেখতে এসেছেন। আর তাঁকে গভীর অভিনিবেশে নজর করে চলেছে সে বাড়ির বর্তমান বাসিন্দা বালকটি। বস্তুত: বালকটির চোখ দিয়েই লেখা হয়ে যায় এই গল্প-" ভীষণ ডাকাত" আগন্তুক বালকের চোখের সামনে রূপান্তরিত হয় এক নি:স্ব মানুষে যে হু হু করে কাঁদে তাদের রান্নাঘরের মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে-স্মৃতিঘাতের শোকে। পরের গল্পটি ব্যঙ্গাত্মক। গল্পের শেষ অংশটি আমার অবোধ্য রয়ে গেছে -হয়তো প্রাচীন ইতিহাস না জানার কারণেই। তার পরের গল্প 'তোমার ঘরে বাস করে কারা" অসম্ভব উপভোগ্য। প্রাণবন্ত লেখা। ক্ষুরধার ব্যঙ্গ নয়। হাস্যরসের আবরণে প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গ পরচর্চাকে। 'নিদপিশাচ' গল্পটি আপাতসহজ। প্রতিবেশী তরুণীর প্রতি অমোঘ আকর্ষণ ধাক্কা খায় তরুণীর পিতার ব্যক্তিত্বে। বিড়ম্বিত সেই তরুণের অবচেতন এগল্পের উপজীব্য। অলৌকিক মাত্রা যোগ করে গল্পটির পরিবেশন অসামান্য। নিদপিশাচ শেষ করে দ্বিতীয়বার পড়তে হয় পাঠ্যাংশের বাইরে নিহিত অর্থ খুঁজে পাবার বাসনায়। এতটাই টান এ গল্পের। 'বিলুপ্তি' গল্পটি সে তুলনায় সাদামাটা। অনুমেয় সমাপ্তি গল্পটির নির্মিত টেন্‌শনকে ধ্বস্ত করেছে কিছুটা হলেও। তারপর ম্যাগনাম ওপাস। শেষ গল্পের ভাষাটি ঈষৎ আলাদা অন্যান্য গল্পের তুলনায়। অনুবাদের ভাষার মত যেন। অন্য রকম রূপকগুলি । এক তরুণ বৈচিত্র্য খোঁজে। একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পায় সে এক চায়ের দোকানে যেখানে 'প্রতিটি টেবিলে নতুন নতুন মুখ... চায়ের কাপগুলই শুধু পুরোনো... পুরোনো তাদের ভেতরে বন্দী চায়ের স্বাদটুকুও, কিন্তু তারা যেন তুচ্ছ, যেন আড়তে গোণার বাইরে পড়ে থাকা ছোটো চালের দানার মতো...' সেই চায়ের দোকানে ছেলেটির আলাপ হয় এক লেখকের সঙ্গে যিনি বিগত কয়েক বছর স্বেচ্ছা অজ্ঞাতবাসে। লেখকের সঙ্গিনী রমার সঙ্গেও পরিচয় হয়। জানা যায়-লেখক তাঁর মহত্তম কীর্তিটি লিখে চলেছেন। রচিত হচ্ছে তাঁর ম্যাগনাম ওপাস। লেখক বলেন, প্রত্যেক গল্পকার আসলে একটি, কেবল একটি গল্প লেখার অপেক্ষায় থাকে ... গত পাঁচ বছর ধরে আমি ক্ষ্যাপার মত কেবল ঐ গল্পটার সন্ধানে আছি। লিখছি প্রতিটা দিন।... যে গল্পটা লেখার জন্য আমি জন্মেছি।' সে গল্পটি পাঠের জন্য আকুল ও ক্রমে লোভী হয় লেখক সঙ্গিনী ও এই তরুণ। লেখককে হাজার প্রলোভন, যতেক প্রতিশ্রুতি। 'বৃদ্ধ হাতির মত মাথা নাড়েন তিনি।না। গল্প তিনি পড়তে দেবেন না। ক্রমে অদ্ভূত এক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তারা। ''রমা একটা রিকশা ঠিক করে দিতে বলে, তাকে হিঁচড়ে নিয়ে যাই নিজের ঘরে। রমা রাজি হয় না আজ, কিন্তু আমার পা জুড়ে তার কূট আঙুলের দিস্তার পর দিস্তা লেখা, আমি জানি সে ক্লান্ত নয়, ব্যস্ত নয়, অরাজি নয়, অপ্রস্তুত নয়। ...রমাকে মনে হয় আমার লোভের সমান, তার দাঁত -ঠোঁট -জিভকে অগ্রাহ্য করে আমি ডুব দি তার ভেতরে।
    অন্ধকারে নিজের ভেতরে নিজেরা ফিরে আসার পর রমা হাঁপাতে হাঁপাতে প্রশ্ন করে, তোমার কি মনে হয়? আনিস কি দেবে পড়তে?
    আমি শীৎকার করি, বলি, দেবে। আজ হোক, কাল হোক, গল্পটা আমরা পড়তে পাবই। '
    এরপরে লেখকের আকস্মিক মৃত্যুতে, তাঁর এযাবৎ গোপন আস্তানার খবর পেয়ে সেখানে হাজির হয় দুজনেই। গল্পের খোঁজে।
    'ভেতরে যে দৃশ্য অপেক্ষা করছিল, তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
    কাগজ।
    হাজার হাজার পাতা। সাদা, বাদামী, হলুদ রংএর কাগজ.. ঘরে তীব্র গতিতে ঘুরে চলছে সিলিং ফ্যান, তার হাওয়ায় ছত্রাখান হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে , ঘুরে বেড়াচ্ছে কাগজ। তারা যেন কতগুলি হাজার বছর বয়সী প্রজাপতি। ... কাগজের সমস্তটা জুড়ে লেখা। সে হস্তাক্ষর পড়তে কষ্ট হয় আমার। কাগজটা উল্টে দেখি, লেখা আছে উল্টোপিঠেও।কোনো নম্বর নেই কাগজে, বোঝার উপায় নেই, এই কাগজের আগের পাতাটা কোনটি, কোনটি পরের পাতা।"
    গল্পের শেষ লাইনটি দুর্বল লেগেছে। পাঠকের ওপর ভরসা না করে কি নিহিত অর্থ বলে দিলেন মাহবুব?
    এতদসঙ্কেÄও , এ গল্পের রহস্য ফুরোয় না- ঈষৎ আড়ষ্ট ভাষা, অদ্ভূত কিছু রূপক, আর তিনজনের এই সম্পর্কটি লেখাটিকে এক অনন্য রহস্যময়তা দিয়েছে। এরকম গল্প আমি বহুকাল পড়ি নি। আলোর চাকতির মাঝে ভ্যাবলা টিকটিকি হওয়ার ভবিতব্য এই গল্পে।কোথা থেকে আসে আলো-কেউ জানে না।
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১১ ১৯:৪০502378
  • মাহবুব আজাদ হলেন আমাদের হিমু। দুর্দান্ত প্রতিভাবান এ সময়ের সেরা লেখক। তার লেখা হল দুধারওয়ালা ব্লেড।
  • i | 137.157.8.253 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১১ ০৫:৫৭502379
  • কুলদাবাবু,
    এই 'আমাদের হিমু' ব্যাপারটাই ভাঙতে চাইছি।
    কিছুকাল আগে একজন আমাকে মেইলে লিখেছিলেন-এই যে চারদিকে বাংলাভাষায় এত লেখাপত্তর, ওয়েবজিন, ব্লগ-কেমন একটা পুকুর পুকুর ভাব-নদী হয়ে উঠল না তো কই। তাঁর এই কথা মাথায় ঘোরে সর্বক্ষণ।
    বস্তুত: এই চার নবীন গল্পকারের লেখার সঙ্গে পরিচিত হতে চাইছি, পরিচয় করিয়ে দিতে চাইছি অনেকটা এই কারণেই। সেকথা পরে লিখব। অমিত আমেদ আর আনোয়ার সাদাত শিমূলের বই দুটো নিয়ে কিছু বলে নি আগে।
  • agantuk | 173.241.26.29 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১১ ০৭:৩০502380
  • @pi: সুভাষ ভট্টাচার্য লিখেছিলেন সমার্থশব্দকোষ। বইটা, যতদুর মনে পড়ে, (রবীন্দ্র?) পুরস্কার পেয়েছিল।
  • i | 124.171.13.247 | ১১ ডিসেম্বর ২০১১ ১২:২২502381
  • অমিত আহমেদের লেখা একেবারে আলাদা। ব্লার্বে যেমন বলা আছে -'চলতি পথের চিরচেনা মানুষ, ... অথবা পাশের ফ্ল্যাটের নি:সঙ্গ মানুষটির কথা অমিতের গল্পে উঠে আসে দেওয়াল ভেঙে।' ঠিক তাই । সটান গল্প বলেছেন অমিত। কোনো গল্পে ঈর্ষনীয় ডিটেইল্‌স।
    প্রথম গল্পে , দীর্ঘ বাসযাত্রায় সহযাত্রীর মুখে তাঁর প্রেমের কাহিনী শুনছেন তরুণ আধুনিক গল্পকার-কিছুটা তাচ্ছিল্য নিয়েই। গল্প ফুরোয় নি সেই যাত্রাপথে। গল্পের শেষটি জানা যায় যখন সেই আধুনিক গল্পকার সংসারে স্থিতু। সহযাত্রীর নাটকীয় প্রেমকাহিনীর পাশে , শ্রোতাটির মনোভাবের আমূল পরিবর্তন গল্পটিকে অন্য মাত্রা দেয়। পরের গল্প 'প্রত্ন তথ্য' । অতীতে নিজের চরম অন্যায়কে ঘিরে মনের অবচেতনে যে গোপন ভয় জন্ম নিয়েছিল এ গল্পের নায়কের, সেই ভয় এ গল্পে অবয়ব ধারণ করে , নায়কের সামনে আসছে বারেবারে। সমাপ্তি সাদামাটা হলেও গল্প বলার ধরণটিতে পাঠক আকর্ষিত হবেন। পরের গল্প ' পালিশ'এর সমাপ্তিতে বৃদ্ধ চর্মকারের শেষ উক্তিটি গল্পটিকে সম্পূর্ণ অন্য মাত্রা দিতে পারত- অথচ সে উক্তি বৃদ্ধের মনের যে অবস্থান থেকে বাইরে এলো, সেই অবস্থানকে বিশদ করে এ গল্পের সমাপ্তিকে ঈষৎ ধ্বস্ত করলেন অমিত। 'না বলা কথা'য় একদম প্রথম লাইন থেকেই পাঠককে হাত ধরে গল্পে ঢুকিয়ে নেন লেখক। আগাগোড়া 'মতি'র সঙ্গে তার পাশের চেয়ারেই বসে থাকে পাঠক। কথোপকথনে সঙ্গী হয়। শেষের চমকটি তাই পাঠকের কাছে অপ্রত্যাশিত। অমিত এখানে সার্থক। 'বিবর্তনের শহরে অবিবর্তিত দুজনা' শিরোনামে যেমন কিঞ্চিৎ শব্দবাহুল্য, গল্পটিতেও সেইরকমই ঈষৎ অতিকথন। 'স্বপ্নভঙ্গ' গল্পএর বিষয়বস্তু সাধারণ কিন্তু কথন আন্তরিক। পরের গল্প 'কর্পূরসম ভালোবাসা' শিরোনামটি প্রেডিকটিভ। গল্পের পরিণতির ইঙ্গিত করে গোড়া থেকেই। 'প্রতিসরণ' গল্পটি মজার। প্রবাসী এক ছাত্র আত্মহননের সিদ্ধান্ত নেয়। আত্মহত্যার পদ্ধতির প্রায় নিখুঁত পরিকল্পনা করে সে। তার চিন্তার বিস্তারে পাঠক মজা পায় এবং পরিকল্পনার অসাফল্য কামনা করতে থাকে। সমাপ্তি প্রত্যাশিতই তাই। শেষ লাইন আর সহজ আন্তরিক গল্পকথনটি মনে থেকে যায়। সর্বণাশ গল্পটি ছোটো। বাংলাদেশের রাজনীতির খুঁটিনাটি না জানা থাকায় , গল্পটি আমার অবোধ্য রয়ে গেল।
    এ' বইয়ের 'প্রারম্ভিকে' অমিত লিখেছেন, '... দেখি, অফিসে ফাইলের জঞ্জাল ফেলে আসা মানুষগুলো ফাঁকা চোখে কোনো রেস্তোরায় বসেন,.. শুকনো রুটির মোড়ক আঁকড়ে পথ চলেন বৃদ্ধা। কিংবা হাত পেতে বসে থাকা ভবঘুরের শরীরে উষ্ণতা খোঁজে হাড় জিরজিরে কুকুর। ..... আমার খুব মন খারাপ হয়। অভিমান হয় এই পৃথিবীর ওপর। ... ঠিক তখন, ঠিক সেই সময়, আমি কংক্রিটের মাঝে পথহারা কোনো রঙীন পাখি দেখি। কিংবা বাতাসে উড়ে আসে কোনো গাছের পাতা। ... বাবার হাত ধরে লাফিয়ে চলে ছোট্টো কোনো ছেলে।... আমার চারপাশের সব রঙীন হয়ে যায়। আমি খুব যত্নে , খুব আদরে আমার রঙীন পৃথিবীকে দু'হাতে মুড়ে আমার ছোট্টো ঘরে নিয়ে আসি।'
    আন্তরিক ভানহীন এই সব উচ্চারণ। অমিতের এই বোধটিই গল্পগুলিতে চারিয়ে গেছে। এই বোধ পাঠকের চেনা। এই বোধের অভিব্যক্তিও পাঠক খুব সহজে বোঝেন। সমাদৃত হয় গল্প।
  • pi | 128.231.22.133 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ ০৫:৩২502382
  • নকশার নেশা লেগে যাচ্ছে যে ! আর কই ?

    আগন্তুকদা, ধন্যবাদ। :)
  • pi | 128.231.22.133 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ ০৫:৩৩502383
  • ম্যাগনাম ওপাসের শেষ লাইন কি যেটা এখানে লিখেছ,সেটাই ? দুর্বল কেন ?
  • i | 137.157.8.253 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ ০৭:০৭502384
  • না, শেষ লাইনটা উদ্ধৃত করি নি। শেষ লাইনে গল্পের ভাবার্থ লেখা হয়েছে যেন- এমনটাই মনে হয়েছিল।

    নকশা কোথায়? দু এক লাছি সুতো বেছে নিয়ে ফোঁড় দেওয়া। আমরির ঘটনায় সুতোর লাছিও হারিয়ে ফেলেছি। তবে, শেষ করব শিগ্গিরি। কেন লিখলাম এই চারজনকে নিয়ে, তাও বলব।
  • i | 137.157.8.253 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ ০৮:৩৬502385
  • আনোয়ার সাদাত শিমূলের বইটি নিয়ে ইতিপূর্বে দময়ন্তী আলোচনা করেছেন, সে আলোচনায় আরও গুণীজনকে পেয়েছিলাম। সেই লিঙ্কটা এখানে থাক-
    http://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?font=unicode&portletId=8&porletPage=2&contentType=content&uri=content1248158245426
    প্রতিটি গল্প ধরে ধরে বিশদে যাবো না আর। পুনরাবৃত্তি করার অর্থ হয় না কোনো।
    ছটি গল্পপাঠে শিমূলের লেখার যে বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে তা অমিত আহমেদের বিপ্রতীপ। বস্তুত: বইটি খুলেই সুনীল সাইফুল্লাহর কবিতার উদ্ধৃতি -শিমূলের লেখার সুরটিও বোধ হয় এই তারেই-

    'অথচ নির্দিষ্ট কোন দু:খ নেই
    উল্লেখযোগ্য কোন স্মৃতি নেই
    শুধু মনে পড়ে
    চিলেকোঠার একটা পায়রা রোজ দুপুরে
    উড়ে এসে বসতো হাতে মাথায়
    চুলে গুঁজে দিত ঠোঁট
    বুক-পকেটে আমার তার একটি পালক।'

    অথচ তারেকের লেখার মত , শিমূল শূন্য থেকে বিষয়ে পৌঁছন না। ঘটনাকেই গল্পে সাজান। সময়কে ধরেন গল্পে।
    দময়ন্তীর আলোচনায় মার্কেজের প্রভাবের প্রসঙ্গ এসেছে। যদিও ছটি মাত্র গল্প পড়ে এই নিয়ে মন্তব্য বা আলোচনায় অপারগ আমি, তবু উপন্যাস প্রসঙ্গে মার্কেজ বলেছিলেন, একটি সফল ও ভালো উপন্যাস হবে রূঢ় বাস্তবের কাব্যিক প্রতিফলন- শিমূলের গল্প সাজানো এই কথা মনে পড়ায়।
  • i | 137.157.8.253 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ ০৮:৪৫502387
  • আর তো বেশি কিছু বলার থাকে না আমার। রশীদ করীম সাহেবের সাক্ষাৎকার থেকে সুতোর লাছি ধার নিয়ে শুরু করেছিলাম-
    যে দু চারটি ফোঁড় দিলাম, গিঁট দিলাম না সেলাইয়ের শেষে। আশা রাখি কেউ তুলে নেবেন খোলা সুতোর প্রান্ত। নকশা তুলবেন বাংলাদেশের আধুনিক সাহিত্যকর্মে ব্লগের ভূমিকা ( এই চার তরুণ গল্পকার মূলত: ব্লগ এবং ওয়েবজিনেই লেখেন)নিয়ে, অথবা প্রবাসী বাঙালীর এই অদ্ভূত আড়ম্বরহীন , ঈষৎ নতমুখী সাহিত্যচর্চার।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন