এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • দেখ্‌লাও কঁহা ভূত

    Sumit Roy
    বইপত্তর | ৩১ অক্টোবর ২০১১ | ৫৯১৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Sumit Roy | 67.242.141.24 | ৩১ অক্টোবর ২০১১ ২২:৪৬504783
  • শাস্ত্রমতে মৃতদেহ কবর না দিয়ে দাহ করিয়ে হিন্দুরা ভূতের গল্প জাঁরটির মূলোচ্ছেদ করেছে।

    অন্তত বাংলায়, তবে যেহেতু লেখালেখির ব্যাপারে বাংলা আজ যা ভাবে, ভারতবর্ষ তা ভাবে কাল, সেই সূত্র ধরে এগোলে ভারতের অন্য ভাষাতেও ফল কিছু ভালো হবে বলে মনে হয়না। যদি ভূতের উপন্যাস বা বড়ো গল্পের কথা বলেন, বাংলাতে তা পড়িনি তো বটেই, নামও শুনেছি বলে মনে পড়ছে না। অনেককাল আগে ভূতের উপদ্রব কিছু হতো বটে, 'জটাধর বকশী' মারফতž রাজশেখর বসু জানাচ্ছেন যে "বাদশা জাহাঙ্গীরের আমলে দিল্লিতে একবার প্রচণ্ড ভূতের উতžপাত হয়েছিল, আমাদের ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর তার চমতžকার বৃত্তান্ত লিখেছেন। ভবানন্দ মজুমদারের ইষ্টদেবীকে জাহাঙ্গীর ভূত বলে গাল দিয়েছিলেন। প্রভুর আশকারা পেয়ে বাদশাহী সিপাহীরা ভবানন্দকে বললে--

    আরে রে হিন্দুর পুত দেখলাও কঁহা ভূত
    নহি তুঝে করুঙ্গা দো টুক।
    ন হোয় সুন্নত দেকে কলমা পড়াঁও লেকে
    জাতি লেউঁ খেলায়কে থুক

    তখন ভবানন্দ বিপন্ন হয়ে দেবীকে ডাকলেন। ভক্তের স্তবে তুষ্ট হয়ে মহামায়া ভূতসেনা পাঠালেন, তারা দিল্লি আক্রমণ করলে--

    ডাকিনী যোগিনী শাঁখিনী পেতিনী গুহ্যক দানব দানা।
    ভৈরব রাক্ষস বোক্কস খোক্কস সমর দিলেক হানা
    লপটে ঝপটে দপটে রবটে ঝড় বহে খরতর।
    লপ লপ লম্ফে ঝপ ঝপ ঝম্ফে দিল্লি কাঁপে থরথর
    তাথৈ তাথৈ হো হো হৈ হৈ ভৈরব ভৈরবী নাচে।
    অট্ট অট্ট হাসে কট মট ভাষে মত্ত পিশাচী পিশাচে

    অবশেষে বেগতিক দেখে বাদশা ভবানন্দের শরণাপন্ন হলেন, বিস্তর ধন-দৌলত খেলাত আর রাজগির ফরমান দিয়ে তাঁকে খুশী করলেন, তখন ভূতের উতžপাত থামল।" তার পরে অবশ্য সব অন্ধকার।

    ভূতের গল্পের জাঁরটা বাড়িয়ে ভয়ের গল্প করে দিন, তাতেও কিছু লাভ হবে বলে মনে হয় না। ভয়ের ছোটো গল্প ঐ ভালোয় মন্দয় মিশিয়ে কিছু আছে, তার অধিকাংশই একেবারে কিশোরপাঠ্য, নয় অপাঠ্য। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং গোটা তিনেক ভয়ের গল্প লিখেছিলেন, তাঁর লেখনীর প্রসাদগুণে অব্‌শ্‌য়ই এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো, কিন্তু গল্পের শেষে গঞ্জিকার ইঙ্গিত দিতে ছাড়েননি। এমনকি 'ক্ষুধিত পাষাণ' পর্যন্ত। অথচ ভূতের জাতপাতের হিসেবে আমাদের ভুল হয়না-- ভূত, প্রেত, পেত্নী, ব্রহ্মদৈত্য, পিশাচ, তাল, বেতাল, একানড়ে, ডাইনী, বাইনী, শাঁকচুন্নী, যক্ষ, মামদো, গোভূত এমন আরো অনেক আছে, সব মনে পড়ছে না। ছেলেবেলায় হেমেন্দ্রকুমার রায়ের কিছু ভয়ের গল্প পড়েছি, তার দুয়েকটির মধ্যে সম্ভাবনা ছিল (যথা তন্ত্রবলে বাঁচিয়ে রাখা মৃতের কাহিনী)। তারপর অবশ্যই শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়-- তাঁর স- ও বি- বরদা, দু শ্রেণীর গল্পই কতোটা ভয় জাগায় জানিনা কিন্তু পরম উপভোগ্য তা বলতে পারি। সত্যজিতž রায়ও দুয়েকবার হাত লাগিয়েছিলেন ভূতের গল্পে। ও ভুলে যাবার আগে বলে রাখা ভালো, লীলা মজুমদার কিছু ভারী মিষ্টি ভূতের গল্প লিখেছেন, কিশোরদের জন্যই, তবে তাঁর অন্যান্য কিশোরকাহিনীর মতো বড়োদেরও পড়তে ভালো লাগে। তাঁর ভূতেরা স্নেহবুভুক্ষু, একটু স্নেহ পেলে নানা উপকার করে তার শোধ দেয়, অনেকদিন ধরে আশপাশের লোকে বুঝতে পারেনা ঠিক কী ঘটছে-- আমরা পাঠকেরা বুঝতে পারি অবশ্য। সম্প্রতি একটি বাংলা ব্লগে এক ভদ্রলোক বাংলা ভূতের কাহিনীর চমতžকার একটা মানচিত্র দিয়েছিলেন, কিন্তু লিঙ্কটা স্মরণে আনতে পারছিনা।

    সূক্ষ্ম শরীরে ভয় দেখানো যায় না। দেখেন না, শ্রাদ্ধের সময় পিণ্ডি চটকে দিতে হয়, অর্থাতž দাঁত নেই, অন্তত চিবোবার বা কামড়াবার মত দাঁত নেই। ঠ্যাঙাবার জন্য লাঠি ধরা বা দরজা-জানলা খুলে ঘরে ঢোকার উপায় তো নেইই। একটোপ্লাজম চুরি করে ভেবে চিন্তে একটা ভয়ঙ্কর মূর্তি ধারণ করলে সে আবার হাওয়ায় তছনছ হয়ে যাবার ভয় আছে। তাছাড়া ঐ সব পোটো মূর্তিতে আমাদের কিছু এসে যায় না। আমার যখন লজ্জাবোধের বয়স হয়নি তখন থেকে ঠাকুর্দা মারা যাওয়া পর্যন্ত প্রতি বছর তাঁর হাত ধরে কালী পুজোয় কেওড়াতলা শ্মশানে গিয়ে লজ্জাহীনা দশমহাবিদ্যা, বিশেষত ছিন্নমস্তা দেখে বড়ো হয়েছি (যদিও এখনো রক্ত দেখলে মূর্ছা যাই), উলটোপালটা হয়নি কিছু। আমার দাদামশায় আবার ছিলেন গৃহী তান্ত্রিক, প্রতি শনিবার আপিস হাফডের পর মির্জাপুর স্ট্রীটে গুরুদেবের বাড়ী থেকে গুরু এবং গুরুভায়েরা ব্যারাকপুরের দিকে এক দুর্গম শ্মশানে পঞ্চমুণ্ডীর সাধনায় যেতেন। সেখানে রাত জেগে নিজেরা কারণ পান করে এবং আহুত, রবাহুত এবং অনাহুত সব তাল বেতালদের কারণ সেবন করিয়ে রবিবার সকালের দিকে ফেরত আসতেন। তাঁর কাছে অনেক প্রেতকাহিনী শোনা যেতো, তবে তাতে ভয়ের কিছু থাকতো না, ব্রাহ্ম মুহূর্তে এসে প্রেতেরা সব সটকে পড়তো। তার এক নম্বর কারণ ছিলেন গুরুদেব, তাঁর শকার বকার ছিল বাঁধিয়ে রাখার মতো, অতি নির্লজ্জ ভূতেরও কান যেত লাল হয়ে। তাছাড়া কারণবারির এমন ঢালাও ব্যবস্থা কোন ভূতের বাচ্ছা নষ্ট করবে বলুন। দাদামশায় যখন তন্ত্র ছেড়ে পুরো গৃহী হলেন তখন তাঁর ভাগের পঞ্চমুণ্ডী মামার বাড়ীর তিনতলার মিটসেফে জায়গা পেয়েছিল। মোটামুটি নির্বিরোধী কিন্তু একবার ভর সন্ধ্যে রাত্রে খুব শব্দ করে উতžপাত করেছিল। তবে তারা আমাদের কাজের লোক রমেশের গায়ের চড়া সরষের তেলের গন্ধ কোথায় পেলো, সে নিয়ে একটু খোঁজ করতে গিয়ে ব্যাপারটা বোঝা গেল। আমার দাদামশায়ের শ্রাদ্ধের সময় মামারা পঞ্চমুণ্ডীরও শ্রাদ্ধ করে দেন, খেল খতম।

    আচ্ছা দাহ করার পর ভূতেদের সূক্ষ্ম শরীর হতেই পারে, সেটা মেনে নিলাম। কিন্তু অপদেবতাদের কী হোলো। তেত্রিশ কোটি যাদের দেবতা, স্ট্যাটিস্টিক্যালিও তাদের কয়েক কোটি অপদেবতা থাকার কথা, নাহয় সিক্স সিগমাই হোলো। এই যেমন ছাঁচভাঙা, কী রঙধ্যাবড়ানো, কী নরকের কীট, বা শয়তান-- এই সব আর কী, প্রোডাকশন রিজেক্ট যাদের বলে। মাঝে মধ্যে অবশ্য দেখি দুয়েকটা দলছুট আত্মা এসে অরক্ষণীয়া কুমারী বা সন্তানসম্ভবাদের ঘাড়ে ভর করে মজা মারেন, তারপর ওস্তাদ ওঝার ঝ্যাঁটার বাড়ি, লঙ্কার ধোঁয়া আর গালমন্দ খেয়ে মড়মড় করে গাছের ডাল ভেঙে বিদায় হন-- ওঝার জয়জয়কার। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি ছোট গল্প, 'গরম ভাত ও নিছক ভূতের গল্প'-- বিশ্বসাহিত্যে স্থান পাবার উপযুক্ত -- ছাড়া এই অপদেবতারা কোনো সাহিত্যকীর্তি রেখে গেছেন বলে তো মনে পড়েনা। আমাদের পুরাণে অনেক অসুর, দানব ইত্যাদি দেখা যায়, কিন্তু বেশীর ভাগ সময়েই তাঁরা দেবতাদের সঙ্গে কাজিয়া করতে ব্যস্ত, মাঝে মধ্যে কিছু ঋষিদের আশ্রমে গিয়ে উতžপাতž করতেন-- ফিচকে মানুষদের কাঠি দেবার ইচ্ছে বা সময়, দুয়েরই ভারী অভাব তাঁদের। সবচেয়ে বড়ো মুস্কিল হোলো তাঁদের আবার বধও করা যায়। যদি তরোয়াল ঘুরিয়ে বা তীর ছুঁড়েই তাদের তাড়ানো যায় তাহলে আর কেমন অপদেবতা? অনেকটা গ্রীক পুরাণের মতো ব্যাপার। আসলে আমাদের, এবং গ্রীক-রোমানদেরও, এই পাপ, নরক, অতৃপ্ত আত্মা-- এসব ব্যাপারটা খুব একটা দানা বাঁধেনি, আমাদের বেদে তো এসবের উল্লেখই নেই। পরে তান্ত্রিকরা শবসাধন-টাধন করে ভূতের গল্পের বাজার গরম করার একটা সুযোগ করে দিয়েছিলেন, কিন্তু তার সুযোগ যারা নেবে তারা হয় অমাবস্যার রাতে বলি হয়ে গেছে নচেতž কারণবারির প্রসাদে হতচৈতন্য। তারপর যিনি মড়া খেলাচ্ছেন, সেই তান্ত্রিকেরও প্রাকৃতিক প্রয়োজনাদি আছে, কোনো এক সময়ে তো অন্যকর্মে নিযুক্ত হতেই হবে। ব্যাস, ভূত ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেল।

  • Sumit Roy | 67.242.141.24 | ৩১ অক্টোবর ২০১১ ২২:৫১504794
  • --2--

    সায়েবরা কিন্তু এই মজাটা সুদে-আসলে উশুল করেছে। কবর দেওয়াটা অবশ্য আদ্যিকাল থেকেই চলে আসছে কিন্তু খ্রিষ্টধর্ম এই মড়া জাগার ব্যাপারটায় একটা নতুন মাত্রা এনে দিল। উদাহরণ হাতের কাছেই আছে, একটু ভেবে দেখতে হবে। খেয়াল রাখবেন মড়া-জাগানো বলিনি। দানবতঙ্কÄ-- ডেমনিজম-- খ্রিষ্টধর্মের এক প্রমাণ সাইজের শাখা, তাতে ডেমনদের উতžস, উদ্দেশ্য, ছাতির জোর, এমনকি লিঙ্গ নিয়েও আলোচনা আছে। দানবজ্ঞ জোহান ওয়যার ষোড়শ শতাব্দীতে তাদের আদমসুমারি করে ১৩,৩৩,১৬,৬৬৬-টির হদিশ পেয়েছিলেন। সংখ্যাটি মজার কিন্তু ব্যাখ্যা করার জায়গা নেই-- উইকি খুলে "ক্রিশ্চিয়ান ডেমনলজি" দেখে নিতে পারেন। মোদ্দা কথা হচ্ছে এঁরা অমর, হাড় বদমায়েস, ভগবানের শান্তি নষ্টে নিয়োজিতপ্রাণ। সর্বশক্তিমান নয়, কিন্তু ভয় দেখাতে ও জীবন দুর্বিষহ করতে গেলে যা যা ক্ষমতা দরকার, সব আছে। সে সব ক্ষমতা নিজেরা সরাসরি ব্যবহার করে থাকেন কিন্তু ভগবান বা যীশু সিরিয়াসলি বকুনি দিলে তা শোনেন। আর তাছাড়া ঈশ্বর তো এই সব উটকো আপদের কথা গল্পলেখককে বলতে আসছেন না। কিন্তু বেশীর ভাগ সময়টাই এঁরা মানুষের ওপর ভর করে বা মানুষের রূপ নিয়ে মানুষকে দিয়ে যত বদ কাজ করাতে থাকেন। আর জানেন তো মানুষ অতি বেয়াড়া, ধমকধামক দিয়ে তাদের কিছু রোখা যায় না। তাছাড়া ভগবান ও যীশু সন্তানদের অবনতি দেখতে পেলে তাতেই বেশী ব্যথা পান এবং বিরক্ত হন, তাতে ফর্মাও ইচ্ছেমতো বাড়ানো-কমানো যায়।

    ব্যস, জমি তৈরী, আর কী। এখন বীজ ছড়ানো আর সার দেওয়া। অষ্টম হেনরী ক্যাথলিসিজম শুধু বরবাদ করলেন তাই নয়, বেআইনীও করে দিলেন; স্প্যানিশ ইনকুইজিশন করতে গিয়ে ক্যাথলিসিজম আরেক প্রস্থ বদনাম কিনলো। অর্থাতž চার্চ, তার বদ লোকেরা, তারা আবার এই আত্মা নিয়ে কারবার করে, তাদের বদ ক্রিয়াকলাপ ইত্যাদি ব্যাপার ভয়ের গল্প লেখকদের সামনে এক নতুন রত্ন ভাণ্ডার খুলে দিল। মধ্যযুগের এলেবেলে লেখা বাদ দিন, সোজা গথিকে চলে আসুন। হোরেস ওয়ালপোল থেকে শুরু। গথিক স্থাপত্যের খোঁচা খোঁচা ছাঁদ, গুপ্তপথ, বাড়ীর পেছনের সমাধিক্ষেত্র ইত্যাদি এসব ভুতুড়ে ব্যাপারে খুব কাজে লাগে, তারপরে যখন সেসব বাড়ী ভেঙে পড়তে আরম্ভ করলো তখন তো আর কথাই নেই। সাঙ্ঘাতিক সাঙ্ঘাতিক সব বই লেখা হতে আরম্ভ করলো, যেমন মেরী শেলীর 'ফ্‌র্‌যাঙ্কেনস্টাইন'। পণ্ডিতেরা বলেন সত্যিকার গথিক হররের শুরু যদি চাও তবে এই। আমার মনে হয় এটি, এবং এর মতৈ আরো কয়েকটি, যথা ওয়াইলডের 'দি পিকচার অফ ডোরিয়ান গ্রে', বা স্টিভেনসনের 'ডক্টর জেকিল এণ্ড মিস্টার হাইড"-- এসব ভয়ের গল্প হলেও আর এক স্তর ওপরে পৌঁছতে পেরেছে। কিছু পরে ভিক্টোরিয়ান মহিলাদের সুকুমার চিত্তবৃত্তিকে উদ্বেল করার জন্য গথিক রোমান্সের এক বিস্তীর্ণ ক্ষেত্র তৈরী হচ্ছিল, গথিক হরর সেখানেও জুটলো এসে। নামকরা অনেকেই এদিক ওদিক দুয়েকটা গথিক গল্প লিখলেন, কিছু আবার গথিক লিখেই নাম করলেন, যেমন এডগার অ্যালেন পো বা শেরিডান লে ফানু।

    ১৮৯৭ সালে তুরুপের তাসটি ওড়ালেন অ্যাব্রাহাম "ব্‌র্‌যাম" স্টোকার তাঁর "ড্রাকুলা, অর দি আন-ডেড" বই ছেপে। একলাফে হরর ফিকশন মধ্যগগনে উঠে গেল, ভূতের ভবিষ্যতž পাঁচালীকারদের অন্নচিন্তা দূর করে দিয়ে। এই রক্তপায়ী, ন-মৃতদের নিয়ে আগেও কিছু লেখালেখি হচ্ছিলো, লর্ড বায়রনেরই নাকি এক অসমাপ্ত গল্প ছিলো ভ্যাম্পায়ার নিয়ে, কিন্তু স্টোকার সেই ভ্যাম্পায়ারকে এমন ভাবে ঢেলে সাজালেন যাতে যদি ভয় পেতে হয় তাহলে এমন চরিত্রের হাতেই পড়া ভালো, এনিয়ে কারুর কোনো সন্দেহ না থাকে। সবচেয়ে বড়ো কথা হোলো এর নিজের ধড়-মুণ্ডু আছে, আড়াল থেকে আঁ আঁ করে বা কোনো মূর্খের ঘাড়ে চড়ে ভয় দেখাতে হয় না। তারপর, নানা রকম অশুভ লক্ষণ আছে, নেকড়ে, প্যাঁচা, ইঁদুর আদি ঘৃণ্য জীব সব বশীভূত, মোহময়ী কুহকিনী ডাইনীদের পোষে, উড়তে পারে, গায়ে অমানুষিক শক্তি, ইত্যাদি ইত্যাদি। ন-মৃত হবার আগে ছিলেন রাজকুমার, প্রিন্স (অন্তত চল্লিশ হাজার লোককে শূল, আজ্ঞে শূল বদ্ধ করেছিলেন), সেসব আদবকায়দা জানা আছে, রাতের বেলায় যখন ধড়াচূড়া পরে দেখা দেন (বেলা লুগোসিকে মনে করুন), কামতপ্ত ভিক্টোরিয়ান রমণীরা রক্তদান করে জীবন সার্থক করার জন্য লাইন দিয়ে থাকেন। কালজয়ী অতৃপ্ত প্রেমের অল্প ফোড়নও আছে, অতএব হরর হোলো, রোমান্স হোলো, শুভ-অশুভের দ্বন্দ হোলো, আর কী চাই। প্রসঙ্গত কথা আছে যে আমাদেরও ব্রহ্মরাক্ষস ছিল, হাতে নরকপাল নিয়ে রক্তপানের উদ্দেশ্যে ঘুরতো, কিন্তু সূক্ষ্ম শরীরে মরণকামড় দিতে না পারলে আর মজা কোথায়। মোদ্দা কথা হোলো, ভয় দেখাতে গেলে স্থূলত্ব চাই, শুধু চিতাবাজিতে চলবে না।

    জনতার কাছে ভূতের কাহিনীর (এরমধ্যে এক-আধটা ওয়ারউলফ, ডপেলগ্যাঙ্গার, ঘৌল এলেও ক্ষতি নেই, ভয়ঙ্করের থেকে ভীত, থুড়ি ভীতার চরিত্রের প্রতিই জনতার নজর বেশী) চাহিদা গেল বেড়ে, চাহিদা বাড়লেই অর্থ বাড়লো, অর্থ বাড়লেই অর্থলোলুপও বাড়ল-- ভয়ের গল্প নিয়ে সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রাদি, কমিক বুক, সিনেমা, টিভি শো, এমনকী সিরিয়াল পর্যন্ত বেরিয়ে গেল। ইংল্যাণ্ডের হ্যামার ফিল্মসের কথা ভাবতে পারেন-- "বি" মার্কা হরর মুভির বন্যা বইয়ে দিলেন তাঁরা। আমার পরিচিত এক আমেরিকান ব্যায়াম করা বন্ধ করে রাত্রে হ্যামার ফিল্মসের পুনর্প্রদর্শনী দেখাতো, তাই দেখে গা শিরশির করে যা ব্যায়াম হোতো তাতেই কাজ চলে যেতো। এটা বানিয়ে বললাম। বেশীর ভাগই অর্থহীন বা বীভতžস গাগুলোনো ব্যাপার হলেও আসল মুক্তূ জালে উঠতো মাঝে মাঝে। সন্ধানীরা "ফল অফ দি হাউস অফ আশার", "দি নাইট অফ দি লিভিং ডেড", "হণ্টিং অফ হিল হাউস", "রোজমেরিস বেবি", "দি একসরসিস্ট" -- এসব উপন্যাস ও ততžসংশ্লিষ্ট চলচ্চিত্রের কথা ভাবতে পারেন। আর গড়িয়ে হাসার মতো "অ্যাডাম ফ্যামিলি" তো আছেই। তা এইভাবেই চলছিলো, ঝাঁঝ একটু কমে দুয়েকটা উপন্যাস ছাড়া নজরে আসার মতো সবই প্রায় ছোটো গল্প, এমন সময় সত্তরের দশকে কল্পবিজ্ঞান আর অন্যান্য রোমাঞ্চকর নবেলা লিখে খেতে না পেয়ে রঙ্গমঞ্চে এসে পৌঁছলেন স্টিভেন কিং। ভয়ের গল্পের জাঁরের নতুন দেবতা এলেন, আনলেন নতুন প্রাণ। স্টিভেন কিং নিজে স্বীকার গেছেন যে তাঁর ব্যক্তিগত ভূত তাঁকে ঘাড় ধরে লেখায় এবং ১৯৭৪ সালের প্রথম বই "ক্যারি" প্রকাশের পর প্রতি বছর অন্তত একটা, সময় সময় দু-তিনটে করে বই প্রকাশ করে আসছেন। গুগল করে তাঁর এ পর্যন্ত পাওয়া পঞ্চাশটি পুরস্কারের হদিশ পাওয়া যাচ্ছে, থামবার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে সবই যে ভুতুড়ে ব্যাপার তা নয়, কয়েকটি সামাজিক নবেল আছে, বেশ ভালৈ, কল্পবিজ্ঞান-রোমাঞ্চ মেশানো গোটা দুই সিরিজও আছে, কিন্তু আসল খুঁটিটা হোলো ভূতের এবং ভয়ের গল্পের। সর্বদেশেই প্রকাশনার এই নিয়ম যে লেখক যতো নামকরা হবেন, জনতা তাঁর বড়ো বড়ো বই পড়বার জন্য বড়ো বড়ো চেক কাটবেন, সেটি স্টিভেন কিঙের নজর এড়ায়নি। উনিশশো চুরাশির পর থেকে তাঁর বই সাত-সাড়ে সাতশো পাতার কম হয়না, বরাত ভালো থাকলে ১১০৪ পাতার বই "ইট"ও পেতে পারেন। অর্থাতž তাঁর ভূতেদের দমও আছে, এতোটা টেনে নিয়ে যেতে পারে, অবশ্য বেশীর ভাগ সময়েই তো ওরা অবিনশ্বর।

    স্টিভেন কিঙের নামকরা ভূতের গল্পগুলো ধরা যাক-- আমার সবচেয়ে ভালো লাগে যেটা, "পেট সেমাটারি" (PetSematary), সেটা আদ্যোপান্ত কবর-ফেরত ভূতেদের নিয়ে। আমেরিকান ইণ্ডিয়ানদের একটা সমাধিক্ষেত্রে কাউকে কবর দিলে সে আবার বেঁচে ফেরত আসে। তা এই ভদ্রলোকের ছোট্ট ছেলে ট্রাক চাপা পড়ে মারা গেল, তিনি কবর খুঁড়ে তাকে তুলে নিয়ে সেখানে গিয়ে আবার মাটি দিলেন, তারপরের কথা আর বলবো না। অবশ্য কিঙের লেখনীর প্রসাদগুণ অসাধারণ, ট্রাকচাপা পড়ার ঘটনাটাই, সম্পূর্ণ প্রাকৃত হলেও এমন লিখেছেন যে চুল খাড়া হয়ে যায়, ভূতের কথা তো বিলকুল লাজবাব। "সেলেম লট" হোলো ভ্যাম্পায়ারদের নিয়ে। "ক্যারি", "দি শাইনিং", "কুজো", "ক্রিস্টিন"-- সব পেঁচোয়-পাওয়ার ব্যাপার। প্রথম দুটোর খানদানী চিত্ররূপ দিয়েছেন দুই প্রথমশ্রেণীর পরিচালক-- যথাক্রমে ব্রায়ান ডি পামা আর স্ট্যানলি কুব্রিক। তিন নং-টি একটি কুকুর এবং চতুর্থটি একটি গাড়ী। ভেবে দেখুন ভয় দেখাবার ইচ্ছে থাকলে কী না করা যায়। অপদেবতারা স্বয়ং মঞ্চে নেমেছেন "দি স্ট্যাণ্ড", "ইট", "নীডফুল থিংস" আর "ডেস্পারেশন"-এ। আর ঝড়তি-পড়তি যা আছে, কল্পবিজ্ঞান, কিংবদন্তী আর নিছকই গাঁজা জড়িয়ে তা অনেক ডাকাবুকোর দাঁত ছরকুটে দেবার পক্ষে যথেষ্ট।
  • Sumit Roy | 67.242.141.24 | ৩১ অক্টোবর ২০১১ ২২:৫৩504805
  • --3--

    ভ্যাম্পায়ার দিয়ে যখন আরম্ভ করেছিলাম তখন অ্যান রাইসের নাম করতেই হবে। একশো মিলিয়নের বেশী বই বেচে তিনি এই জাঁরের মহারানী, তাঁকে চটালে চলবে না। ১৯৭৪ সালে "ইনটারভিউ উইথ দি ভ্যাম্পায়ার" শীর্ষে এক উপন্যাস লেখেন, সেই থেকে একটি সিরিজের শুরু, "দি ভ্যাম্পায়ার ক্রনিক"। অ্যানের ভূতেরা শিহরণ- জাগানোর মতো সুন্দর, বেজায় আবেগপ্রবণ, গান-বাজনা-নাটক ইত্যাদিতে পারদর্শী এবং কারণে-অকারণে জীবনের উদ্দেশ্য ও অনিত্যতা-আদি দার্শনিক তঙ্কÄ নিয়ে পাতার পর পাতা বাণী দেয়। ১৯৯৪ সালে প্রথম বইটি থেকে চলচ্চিত্র তৈরি হয়, খুব চলেছিল। সমালোচকেরা তার মধ্যে নব্বইয়ের দশকের যুগযন্ত্রণার-- সমকামীদের কষ্ট, এইডসের সংক্রমণ ও আতঙ্ক, সমাজে পতিত হয়ে থাকা, পরিবার লালনেচ্ছা এইসব আর কি-- দেখতে পান আর অয়্যন রাইসের বইয়ের বিক্রি বাড়াতে থাকেন। এঁর ভ্যাম্পায়ারেরা আবার সাধারণ মানুষের মনের কথা বুঝতে পারেন, কাজেই কাঁপতে কাঁপতে রামনাম করেও রক্ষা পাওয়া যায় না। অ্যান গোড়ায় নাস্তিক ছিলেন, তারপর হবি তো হ, একেবারে ঘোর ক্যাথলিক হয়ে গিয়ে ভ্যাম্পায়ারদের পথে বসিয়ে যীশু ও দেবদূতদের নিয়ে লিখতে আরম্ভ করলেন। অবশ্যই পড়তা পোষালো না, তাই অ্যান ক্যাথলিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন,; যীশুকে রেখেছেন অবশ্য। এখন কী লিখবেন তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলি, ২০১১ সালের জুন মাসে, অ্যান এই সমস্ত ব্যাপারটা নিয়ে ফেসবুকে এক প্রমাণ সাইজের বিবৃতি দিয়েছিলেন, বেশ সাড়া-জাগানো; গুগল করে পড়তে পারেন।

    মোদ্দা কথাটা তাহলে কী দাঁড়াল-- বাঙালী কেন ভয়ের গল্প লিখতে পারেনা? চিতায় চড়ানো হয়, তাই কায়াধারী হয়ে ভূতেরা আসতে পারে না। অপদেবতারা গাঁইয়া। পাপের কন্সেপ্টটা বেশ জোলো, সারা জীবনটাই শুভ-অশুভের দ্বন্দ্ব বলে যেমন পাশ্চাত্যের পণ্ডিতেরা প্রচার করেন, আমাদের শাস্ত্রে সে মতকে তেমন কলকে দেওয়া হয়না, তাই শয়তান বা আদিম ভূতদের নামিয়ে প্রলয় জাগানো যায় না। অবসরপ্রাপ্ত নৃতঙ্কÄবিদেরা এ বিষয়ে একটু গবেষণা করতে পারেন।

    আর ইতিমধ্যে আমরা কী করবো? রাজশেখর বসুর "ভূশণ্ডীর মাঠে" পড়বো। ভয়ে হৃতžস্পন্দন রুদ্ধ হয়ে মরার থেকে হাসতে হাসতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরাটা অধিকতর কাম্য হতে পারে। তারপর হয়তো বা কিং সায়েবের নজরে পড়ে হাসকুটে ভূত বলে অমর হয়ে যাবো।

    ******************
  • ranjan roy | 115.118.155.73 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ০১:২৯504812
  • সুমিত ,
    টুপি খুললাম।
  • kk | 107.3.242.43 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ০২:২৭504813
  • এই লেখাটা খুব ভালো লাগলো। সুমিতবাবু আরো বিশদে আরো বড় করে লিখলেও খুব উৎসাহ নিয়ে পড়বো।
  • Sibu | 66.102.14.1 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ০৩:১৪504814
  • চিতায় চড়ালে কায়াধারী হয়ে ভূতেরা আসতে পারবে না কেন? ঐ যে ভারতচন্দ্রের লেখাটা কোট করলেন তাতেই তো বেশ দেহধারী ভূত আছে।

    আর সব বাঙালীই (বস্তুত: বেশীরভাগ বাঙালি-ই) চিতায় কিছু চিতায় চড়ে না। তবে গোরে যাওয়া বাঙালীদের মধ্যেও ভালো ভয়ের গপ্পো খুব বেশী নেই।

    কয়েকটা অনারেবল মেনশন বাদ গেছে। তারানাথ তান্ত্রিকের গল্পগুলো, আর জাফর ইকবালের সুতোরন্তু মনে এল। আরো আছে, বাকীরা সাহায্য করলেই লিস্টি ভরে উঠবে।

    তবে আপনার লেখার হাতটি খাসা সুমিতবাবু। আরো পড়তে পারলে ভাল হয়।
  • achintyarup | 14.96.54.71 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ০৩:৪২504815
  • হ্যাঁ হ্যাঁ, আরও পড়তে চাই
  • maximin | 59.93.198.42 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ১৪:৪০504816
  • সায়েবদের কথা লিখলেন অথচ শেকসপীয়ারকেই বাদ দিলেন?
  • maximin | 59.93.198.42 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ১৫:০৩504817
  • স্টিভেন কিঙের দি শাইনিং। বইটা পড়ি নি স্ট্যান লি কুব্রিকের ছবি দেখেছি। কবরের সঙ্গে এই গল্পের কী সম্পর্ক?
  • Shibanshu | 59.93.80.181 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ১৮:২২504784
  • অসাধারণ, দারুন হয়েছে ভূতচতুর্দশী....
  • I | 14.96.62.33 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ২১:৫৩504785
  • সুমিতবাবু,
    এ কী ? ত্রৈলোক্যনাথকে কী করে বাদ দিলেন ? আর শীর্ষেন্দু ? হুমায়ুন আহমেদ?
  • Nina | 69.141.168.183 | ০২ নভেম্বর ২০১১ ০৭:১৪504786
  • সুমিতদা
    কোথায় গেলে? তুমি কি শির্ষেন্দুর ভূতের গল্প পড়েছ?
    আর একটু বল শুনি--আরও শুনতে ইচ্ছে করছে ---
  • Sumit Roy | 67.242.141.24 | ০২ নভেম্বর ২০১১ ২২:৪৪504787
  • আমার গালে-জিভ-ঠোসা প্রলাপ যে গুরু এবং গুর্বীরা পড়লেন এবং মন্তব্য করার সময় ব্যয় করলেন, আমি এতেই কৃতার্থম্মন্য। জাফর ইকবাল এবং হুমায়ুন আমেদ (ভূতের গল্প) আমি পড়িনি, অন্যদের সঙ্গে অল্পবিস্তর পরিচয় আছে।
  • siki | 132.177.233.216 | ২৩ এপ্রিল ২০১৩ ২০:১০504788
  • এই একটা ভূতের টই।
  • Blank | 180.153.65.102 | ২৩ এপ্রিল ২০১৩ ২০:২২504789
  • দারুন সুমিত বাবু। আপনি Elizabeth Kostova
    এর হিস্টোরিয়ান না পড়ে থাকলে পড়ে নিন। গথিক স্টাইল, সেই ড্রাকুলা আর বেশ ভালো লেখা।
  • nina | 79.141.168.137 | ২৪ এপ্রিল ২০১৩ ০৫:০৩504790
  • আরে বাহ! সুমিতদার এখাটা আবার পড়লাম--খুব ভাল লাগল---সুমিতদা আরও লেখ প্লিজ।
  • jhumjhumi | 127.194.242.216 | ২৪ এপ্রিল ২০১৩ ১০:২৯504791
  • শীর্ষেন্দুর ভূতেরাও তো লীলা মজুমদারের ভূতেদের মত মিষ্টি এবং মজাদার। ভালো লাগলো। তবে লেখার শেষ লাইনটি আমার বেশী পছন্দ হয়েছে, ভয়ে দমবন্ধ হওয়ার চেয়ে হাসতে হাসতে শ্বাসরুদ্ধ হওয়া ভালো। ঃ-)
  • পাই | 24.139.221.129 | ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ১১:৩৩504792
  • এও তুললাম।
  • | ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ১১:৩৯504793
  • কেন গো? কোথাও ভুত দেখা গেছে?
  • রৌহিন | ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ১৩:৪৪504795
  • লেখাটা বেশ ভালো। এখন ভুতের গল্প জঁরটা লেখক ভয়ের গল্প জঁরের সাবসেট হিসাবে দেখিয়েছেন কিন্তু আমার মতে দুটির কিছু কমন অ্যাট্রিবিউটস থাকলেও দুটো আলাদা জঁর। আমাদের বাংলা সাহিত্যে ভয়ের গল্পের (বা উপন্যাসের) সত্যিই অভাব কিন্তু ভুতের গল্প কিন্তু আছে। ভুষুন্ডির মাঠে অবশ্যই ভুতের গল্প এবং সেরা মানের - লুল্লু ভুতের গল্পও তাই। শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজ, এমনকি নন্টে ফন্টে এবং হাঁদা-ভোঁদারও ভৌতিক জঁ র এর গল্প প্রচুর। কিন্তু প্রায় অবধারিত ভাবে বাংলা সাহিত্যে ভুতের গল্প মানেই হাস্যরস প্রধান।
    অন্যদিকে ইউরোপীয় সাহিত্যে ভুতের গল্প আর ভয়ের গল্প মোটামুটি সমার্থক। কিন্তু এর উজ্জ্বল ব্যতিক্রম দেখতে পাই হ্যারি পটার সিরিজে। হ্যারি পটার ভুতের গল্প নয় ঠিকই, কিন্তু সেখানে বিভিন্ন জাতের ভুতেদের উপস্থিতি বেশ প্রচুর পরিমাণে - এবং তারা কেউই ভীতিপ্রদ নয়। কয়েকজনকে বেশ কমিকালিও দেখানো হয়েছে - যেমন নিয়ারলি হেডলেস নিক বা পিভস দ্য পোল্টারজিস্ট। বাকি ভুতেরা কমিক না হলেও আর পাঁচটা চরিত্রের মতই স্বাভাবিক - ভুত বলে কোন বাড়তি খাতির নেই। এখানে অবশ্য ইনফেরি বলে একটা কনসেপ্ট আছে - যেখানে মৃত শরীরকে ম্যাজিকের সাহায্যে চলাফেরা করানো হচ্ছে এবং তারা ভীতিপ্রদ, কিন্তু তারা যে ভুত নয় তা স্পষ্টই বলা হয়েছে। ক্লাসে ইনফেরি এবং ভুতেদের পার্থক্য কি তা পড়ানোও হচ্ছে।
    কিন্তু মোটের ওপর বাংলা সাহিত্যে ভয়ের গল্প উপন্যাস যে সেরকম নেই, সেটা অনস্বীকার্য। বাঙালী লেখকেরা ভুতেদের কোনদিন তেমন সিরিয়াসলি নিলেনই না।
  • | ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ১৬:১১504796
  • ভাল অবজার্ভেশান এইটে।
  • sm | 52.110.202.177 | ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ১৭:৪৮504797
  • অনীশ দেবের গল্প গুলো পড়ুন-ভয়ে সিঁটিয়ে যাবেন।
  • sm | 52.110.202.177 | ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ১৭:৫২504798
  • ভুতের গপ্পো বলেতো বিদেশেও বিশেষ কিছু নাই। ওখানে ভয়ের গপ্পো বলতে মূলত ড্রাকুলা ,নেকড়ে ,বিভিন্ন ধরণের পিশাচের আমদানি।
    ওগুলো ও ঠিক ভয়ের গপ্পো নয়। একটা জোর করে আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে মাত্র।
  • T | 129.74.180.59 | ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ১৮:০৬504799
  • অনীশ দেবের গল্প! ধ্যার।
  • dc | 132.178.18.108 | ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ১৮:৫২504800
  • বলেন কি, ড্রাকুলা ভয়ের গপ্প না!! আমার তো এখনো পড়তে গিয়ে ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়! আর সন্ধের পর তো কখনো পড়িনা!
  • sm | 52.110.202.177 | ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ১৯:১০504801
  • ওটা কোনো গপ্পই নয়। সবটাই অলীক কল্পনা। যেমন স্বদন্ত হোলো ছিঁড়ে খাবার জিনিস:সাক করার জন্য নয়। কারণ স্ব দন্ত থাকলে সাক করতে অসুবিধে হবে।এটা বৈজ্ঞনিক ব্যাখ্যা।
    যেমন বাঘ মাংস ছিঁড়ে খায় কিন্তু চুষে খেতে পারেনা ।
    বরঞ্চ মশার মতন কোনো নালিকা থাকলে এক্সপ্লানেশনে সুবিধে হতো।এই আর কি!
    আর বিদেশী হরর ফিল্ম দেখলে তো হা হা প গে দশা!
    এই মানুষ,এই নেকড়ে -তো এই চুনকাম করা মুখ।
    সাউন্ড এফেক্ট সলিড না হলে কমেডি ছবি বলে গণ্য হতো।
    যতো সব রাবিশ!
  • aranya | 172.118.16.5 | ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ২০:০১504802
  • এসেম, অনীশ দেব-এর ভয়ের গল্পের কিছু নাম দেবেন, সম্ভব হলে
  • রৌহিন | ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০০:২৪504803
  • হা হা প গে দশাটা কি?
  • Atoz | 161.141.85.8 | ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৪৩504804
  • হাসতে হাসতে পড়ে গেলাম
  • Rabaahuta | 132.172.148.126 | ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৪৪504806
  • হাহাপগে

  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন