এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ক্ষেতু বাগচি সিরিজ

    Ghanada
    অন্যান্য | ২৬ জানুয়ারি ২০১২ | ৯৯৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ghanada | 223.223.137.216 | ২৬ জানুয়ারি ২০১২ ১১:২৭513948
  • হিটলারী
  • Ghanada | 223.223.137.216 | ২৬ জানুয়ারি ২০১২ ১১:২৮513953
  • চেম্বারে রুগি নেই। সাধারণত, সন্ধে ৭ টার পর আর রোগী দেখে না চন্দন। আড্ডার জন্য প্রস্তুতি নেয় মানসিক ভাবে। কিছুক্ষণ পরেই সব আড্ডানোর লোকেরা এসে পড়বে। সত্য কম্পু মানে সত্য কম্পাউণ্ডারও যাব যাব করছে!
    এই সময়ে এক পৃথুলা মহিলা এসে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন!!!!!
    - আমারে একডু দেইখ্যা দেন ডাক্তার বাবু!!!!
    চন্দন জিজ্ঞেস করল:- কি হয়েছে আপনার?
    - দ্যাহেন না, রিস্কা থিক্যা পইড়া গেসি। কুমোরে দু:খু পাইসি আর কনুই ছইড়া একাক্কার। মনে হইত্যাসে, আর উঠতে পারুম না। মহিলা কঁকিয়ে কঁকিয়ে কথাগুলো বললেন।
    - ও কম্পুদা, দিদিকে একটা ভোভেরান এস আরের ষ্ট্রীপ, একটা টিটি , ছড়ে যাওয়া জায়গাটা মার্কিউরোক্রোম দিয়ে ড্রেসিং করে দিন। যান ওখানে- সত্যদা দিয়ে দেবে। ভয় নেই ব্যাথা সেরে যাবে। চন্দন বলল।
    - ও ডাক্তার বাবু আমি টিটি দিয়া কি করুম? হেয়া তো আমার পোলায় খ্যালে। হেইডা টেবিল টেনিস তো? আর শাড়ী তো পইরাই আচি। ড্রেসিং এর দরকার কিডা?
    - ওফ! এই টিটি সেই টিটি না! এটা টিটেনাস টক্সয়েড। ধনুষ্টঙ্কার বোঝেন? সেটা যাতে না হয়, তাই এই ইনজেক্‌শান। ড্রেসিং মানে ,ঐ ছড়ে যাওয়া জায়গাটা ব্যাণ্ডেজ করে দেবে। বুঝলেন তো? আর হ্যাঁ! ব্যাথা না কমলে, কালকে একটা কোমোরের এক্স- রে করিয়ে আনবেন। প্রেসক্রিপশানে লিখে দিলাম।
    মহিলা, মাথা হেলিয়ে খুব কষ্ট করে গেলেন সত্য কম্পুর কাছে। সত্যদার ইংরেজী বলার অভ্যাসের জন্য, চন্দন একটু ভয়ে ভয়ে থাকে। সত্যদার ইংরেজী শুনে সবাই থরথর করে কাঁপতে শুরু করে বলেই, নাম- সত্য কম্পু! এই মহিলাকে আবার সত্যদা ইংরেজীতে কিছু বলে না বসে!!!!!!
    ইনজেক্‌শানটা মহিলা কোমোরেই নেবেন। ওনার ধারণা, যেখানে ব্যাথা লেগেছে, সেখানে টিটি ইনজেক্‌শান নিলে তাড়াতাড়ি ব্যাথা সারবে।
    চন্দনের আশঙ্কা সত্যি করে শুনতে পেল, সত্যদা ইংরেজীতে মহিলাকে বলছে:- হাতে ইনজেক্‌শান isbetterthan কোমোরে ইনজেক্‌শান!!!!!
    মহিলা, কি বুঝলেন, কে জানে! ইনজেক্‌শান নিয়ে ভিজিট আর ওষুধের পয়সা দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে গেলেন।
    উনি বেরিয়ে যেতেই কবি বদরী সান্যালের কবিতার খাতা হাতে প্রবেশ। সত্য কম্পু বলল:- চন্দন, আমি Exit মারছি। লোকজনের Entrance হচ্চে, আমি cut মারি।
    কাট করে আবার পেষ্ট করবেন না- চন্দনের উত্তর।
    মুচকী হেসে, সত্য কম্পু বেরিয়ে গেলেন।
    চন্দনকে একা পেয়ে বদরী বললেন- একটা অনু কবিতা শুনবে? অন্যরা এসে গেলে আর চান্স পাবো না!
    শোনান, ব্যাজার মুখে উত্তর দিল, চন্দন।
    বদরীবাবু গলা ঝেড়ে শুরু করলেন:-

    হিটলার জাঁদরেল
    খায় বসে কতবেল
    ঝালনুন, লঙ্কায় ভিজিয়ে
    যুদ্ধের বাজারে
    মাছি মেরে হাজারে
    রেখে দেয় টেবিলেতে সাজিয়ে

    কিন্তু, বদরীদা, এটা আমার শোনা শোনা মনে হচ্ছে! ফেসবুকে আমার কোনো এক বন্ধু , এটা বোধহয় ষ্টেটাস মেসেজ দিয়েছিল ।
    - তোমার তো সবই শোনা মনে হয়! এটা আমি নিজে লিখেছি!
    - কি জানি, হবে হয়তো- চন্দনের উত্তর!
    হতে পারে চন্দন! অনেক জিনিসই অজানা থাকে!
    ক্ষেতুদা কখন যে ঢুকে পড়েছেন, সেটা দুজনে খেয়াল করে নি। বদরীবাবু কেমন যেন সিঁটিয়ে গেলেন। ক্ষেতুদা আজ কেমন যেন অন্যমনস্ক।
    - তোমার কবিতাটা শুনে আজ অনেক পুরোনো কথা মনে পড়ে গেল হে বদরী!!!!!!!
    চন্দন আশ্চর্য্য হয়ে প্রস্তরীভূত হয়ে গেল। ক্ষেতুদা, বদরীবাবুর কবিতা শুনে খচিতং হলেন না, এটা পৃথিবীর দশম আশ্চর্য্য।
    তারক কোথায় হে? ক্ষেতুদার প্রশ্ন।
    - তারকদা রেশন আনতে গেছেন-বদরীবাবু বললেন।
    - এই রাত সাড়ে আটটার সময় রেশন? সব দোকান তো বন্ধ!!!!!!!!
    - আহা! ঐ হুইস্কি আনতে গেছেন। রেশন টার্মটা কোড নেম।
    - হুম! ক্রিপ্টোগ্রাফি! ক্ষেতুদার গম্ভীর জবাব।
    - ওটা আবার কি?
    - তথ্যগুপ্তিবিদ্যা, বুঝলে হে! বদরীর কবিতা শুনে মনে পড়ল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই এর ব্যবহার। তবে ব্যপারটাকে তুঙ্গে নিয়ে গেছিল হিটলার। জার্মান লোরেন্‌ৎস সাইফার মেশিন দিয়ে ,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জেনারেল ষ্টাফেদের বার্তা গোপন করার জন্য ব্যবহার করা হতো। ক্ষেতুদা সিগারেট বের করলেন।

    তারক মোত্তিরও ঢুকে পড়েছেন, বগলে বোতল নিয়ে। কিঞ্চিৎ চড়িয়েও এসেছেন।
    -কি যেন বলছিলেন, ক্ষেতুদা! ঐ কি গাফি!
    - বলছি, তবে তুমি তো দেশী খাও! আজ যে হুইস্কি?
    - পরিবর্তনের জমানা, ক্ষেতুদা! সবাই বদল চাইছে! বদলাও নিচ্ছে। আমিই বা পিছিয়ে থাকি কেন?
    হুম! বদলা তো হিটলারও নিয়েছিল, তার মৃত্যুর খবর রটিয়ে দিয়ে!
    - আরি ব্যাস, বলেন কি! হিটলার তালে, ১৯৪৫ সালের ৩০ শে এপ্রিল আত্মহত্যা করে নি? চন্দন উত্তেজিত।
    - না হে! আমি নিজে সাক্ষী!
    - এ:! ক্ষেতুদা! আপনি কিন্তু, ঘনাদা মানে ঘনশ্যাম দাসকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। তারক মোত্তির মিউ মিউ করে বললেন।
    - হোয়াট ননসেন্স! ক্ষেতুদা হুংকার দিলেন!!!!!! ঘনাদা কি মিথ্যে বলতেন নাকি! ইন ফ্যাক্ট, ঘনাদা, আই মীন মি: ঘনশ্যাম দাসই তো এই অ্যাসাইনমেন্টটা আমাকে, ভায়া আয়মেরিকান গভমেন্ট দিয়েছিলেন। আর তুমি যে নিজেকে স্বদেশী বলো, তার বেলা!!!!!! এদিকে তো মাত্রো ২০০৩ সালে রিটায়ার করেছ। গ্যাঁজা মারো, খবর রাখি না নাকি? ক্ষেতুদা ভিসুভিয়াস!!!!!!
    আড্ডার মেজাজ নষ্ট হচ্ছে দেখে চন্দন বলল- আরে ক্ষেতুদা! আপনার কথা চালিয়ে যান তো! আপনার ব্যাকগ্রাউণ্ড আমি জানি! এরা তো হালে আড্ডায় এসেছে! আরে “বল হরি”, চা দিয়ে যা!!!!!!!!!!!
    জানো? হিটলারকে ক্‌ৎবেল খাওয়া কে শিখিয়েছিল?- ক্ষেতুদার প্রশ্ন!
    - কে?
    - কে আবার!!!!!! স্বয়ং মি: ঘনশ্যাম দাস! হিটলার টক খেতে ভালবাসতো তো!!!!! তাই ঘনাদা এই নুন লংকা আর ক্‌ৎবেলের রেসিপিটা “এভা”কে দিয়েছিলেন। হিটলার শেষ পাতে খেতে খেতে ইহুদি মারার ছক করতো! ঘনাদা তো সেই দু:খেই বাহাত্তর নম্বর বনমালী নস্কর লেনের মেসে টঙ্গের ঘরে স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়ে নিয়েছিলেন।
    - উরি ব্বাস! আমার কবিতা লেখা সার্থক! বদরীবাবুও উত্তেজিত।
    - সার্থক কিনা জানি না, তবে কবিতার মধ্যে সত্যিটা লুকিয়ে আছে।
    - কিরকম, কি রকম?
    -ঐ যে, মাছি মেরে হাজারে। হাজারে হাজারে ইহুদি মেরেছিল তো।
    - সত্যি, মানুষ কত নৃশংস হতে পারে, তাই না?
    - জানো? ১৯৩৩ সালে, নাগরিকদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছিল- হিটলারের জার্মানীতে।
    তখন আধুনিক কম্পিউটার যুগ শুরু হয় নি ঠিকই, তবে আদি কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে ইহুদিদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করার জন্য এগিয়ে এসেছিল,InternationalBusinessMachine বা পৃথিবী খ্যাত IBM কোম্পানী।
    কিভাবে তারা প্রতিটি ইহুদি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করত, তা এখন বহু আলোচিত।
    হিটলারের শাসন কালে, সমস্ত ইহুদিরা হয়ে উঠেছিল এক একটি নম্বর। তার পাশে লেখা থাকত নাম ঠিকানা।
    দেখা গেছে, যে অঞ্চলে, এই কাজটা ভালো ভাবে করা হয়েছিল, সেখানেই ইহুদি নিধন বেশী হয়েছিল। বলি বুঝলে কিছু????????
    - উরি ত্তারা! আয়মেরিকার কোম্পানী সাহায্য করেছিল, হিটলারকে?
    - তবে আর বলছি কি!! আর এই আয়মেরিকান সরকারই তো সাহায্য করে হিটলারকে পালিয়ে যেতে। সেখানে আমাকেই বেছে নেয় আয়মেরিকা।
    - একটু খুলে বলবেন? ঘনাদাই বা কেন আপনাকে বাছলেন ঐ কাজের জন্য? চন্দন বিনীত ভাবে প্রশ্ন করল, ক্ষেতুদাকে।
    - বলছি, বলছি! আগে চা খাই! জিভ শুকিয়ে গেছে। বনমালী নস্কর লেনে গেলে ফাউল কাটলেট খাওয়াতেন ঘনাদা! সঙ্গে কফি! কোথায় যে গেল, সেই সব দিন!!!!!!!!!!!!
    - আপনি চিকেন রোল খাবেন? আনিয়ে দিচ্ছি!
    - দাও! তবে আমার জন্য দুটো আনিও।
    কৃপা করে বললেন ক্ষেতুদা।
    খাওয়া হয়ে গেলে, ক্ষেতুদা শুরু করলেন:-
    বেশ কয়েক বছর আগে, সাংবাদিক জেরার উইলিয়ামস এসেছিল ভারতে। সঙ্গে, সমর ঐতিহাসিক সাইমন ডানস্টান।
    - কেন?
    - মূর্খের মত প্রশ্ন করো না তো তারক! কেন আবার? আমার সঙ্গে দেখা করতে!!!!
    - তাই!!!!!!! তা কি বললেন ওদের?
    - কি আর বলব? একটা সাক্ষাৎকার নিল। তারপর একটা বই ছেড়েছে মার্কেটে এদানীর! ওরা অবশ্য, আমার নামটা দেয় নি, আমারই অনুরোধে। বেশী নাম টাম পছন্দ হয় না আমার।
    - বইয়ের নাম কি?
    - গ্রে উলফ, দি এসকেপ অফ আডলফ হিটলার,বা ধূসর নেকড়ে- আডলফ হিটলারের নির্গমন ।
    - ওটা নয় পরে, পড়ে নেব আমরা, এখন একটু গপ্পোটা সংক্ষেপে বলবেন আমাদের!!!
    - গপ্পো কি হে! সত্যি ঘটনা! একেবারে জ্বলন্ত ইতিহাস। এটা কোনো ভাবেই আনেকডোটাল নয়। অনেক রিসার্চ আর আমার কাছ থেকে শুনে, কষ্ট করে লিখেছে ওরা।
    - আনেকডোটাল????????
    - হ্যাঁ! আনেকডোটাল মানে অলিখিত ইতিহাস। যেটা গাঁজাখুরি বলে মনে হতে পারে অনেকের।
    - বলুন ! বলুন! শুনছি! সমস্বরে চিৎকার করল সবাই।
    - বলবো, তবে বাধা দেবে না কিন্তু!
    - আমরা পাগোল নাকি! বলে যান!
    ক্ষেতুদা শুরু করলেন:- প্রথমেই বলি, ঘনাদাকে তখন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটা গোপন কাজে ফিরে যেতে হয়েছিল। হিটলারকে অনেক বুঝিয়েছিলেন ঘনাদা, যাতে ঐ সব জঘন্য কাজ না করে। হিটলারও কথা দিয়েছিল। আমার তখন কম বয়েস। ঘনাদা ভরসা করে, আমাকে রেখে গিয়েছিলেন হিটলারের কাছে। বয়েস কম হলেও,আমার বুদ্ধির ওপর ভরসা ছিল ঘনাদার। সাগরেদি করছি তখন ওনার।
    তখন কি আর জানি, আয়মেরিকার অত ষড়যন্ত্র! ১৯৪৫ সাল! দিনটা খুব ভাল করে মনে আছে আমার। সাতাশে এপ্রিল। একজন গেষ্টাপো এসে আমাকে একটা গোপন খবর দিল। হিটলারের দোস্ত, মুসোলীনি তার উপপত্নি ক্লারা পেত্তাচিকে সঙ্গে নিয়ে ইতালীর ছেড়ে পালানোর সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে গিয়েছে। মিলানের বিদ্রোহী দল ঐ দুজনকে খতম করে দিয়েছে। তাদের দুজনকে পায়ে পায়ে বেঁধে মাথা নীচু করে ঝুলিয়ে রেখেছে, প্রকাশ্য স্থানে। উন্মত্ত জনতা মৃতদেহ দুটির ওপর যথেচ্ছ থুতু ছেটাচ্ছে, লাঠি মারছে, পাথর ছুঁড়ে মারছে। সে এক বীব্‌হ্‌ৎস অবস্থা।
    খবরটা হিটলারের কানে তুলে দিলাম। এই প্রথম, ওকে ভয় পেতে দেখলাম। বলল:- কেতুউউ! কি হবে আমার?
    আমি সোজা বললাম:- তোমার পাপের ঘড়া ভরে গেছে। এবার নিজে মরার জন্য তৈরী হও।
    -একটা উপায় বলো না!
    - দেখ তালে, মরা কি ভয়ংকর জিনিস।
    বলে, মনে কষ্টও হচ্ছিল। সাংঘাতিক প্রতিভা ছিল লোকটার। একজন রাজনৈতিক নেতার সমর নায়ক হওয়ার ঘটনা ইওরোপে প্রথম। আমাদের নেতাজীও অবশ্য তাই ছিলেন, তবে তিনি একদম অন্যরকমের একজন মহাপুরুষ।

    আমি বুঝতে পারছি, লাল ফৌজ প্রায় পুরোটা ঘিরে ফেলেছে হিটলারকে। মায়া হল। বুদ্ধি দিলাম- তুমি প্রথমে একটা ষ্টেটমেন্ট দাও।
    - কি রকম?
    - বলো, আমি বুলেট দিয়ে আত্মহত্যা করছি, বলবে, এভাও পটাশিয়াম সাইনাইড ক্যাপসুল খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমার অনুগামীদের বলছি, আমাদের মৃতদেহটা পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দিতে। এভাকেও বিয়ে করে নাও।
    - ঠিক আছে, জবাব দিল হিটলার।
    তার আগে, ও একটা মন্তব্য করেছিল। দিনটা ছিল- ২৭ শে এপ্রিল। সাল ১৯৪৫। বলেছিল:- ‘গোটা দুনিয়া যদি আমাকে মৃত বলে ভাবে, তবেই ভবিষ্যতের আশা করতে পারে জার্মানি।” তাই বুদ্ধিটা আমার মাথায় এসেছিল।
    লোরেন্‌ৎস সাইফার মেশিন দিয়ে খবর পাঠান হল, আমেরিকার গভমেন্টকে। পিটার বমগার্ট নামে, একজন ধুরন্ধর আর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পাইলটকে আমার জানা ছিল। তাকেই পাঠাতে বললাম। ছেলেটা আমারই বয়েসী বা একটু বেশী হবে। গোপনীয়তা রাখতে জানত।
    প্লেন নিয়ে হাজির হল, পিটার বমগার্ট। চুপিসারে বেরিয়ে পড়লাম হিটলার আর এভাকে নিয়ে। পিটার তো হিটলার আর এভাকে দেখে থ। চোখ আর ফেরাতে পারছে না। আমি জোর ধমক দিলাম। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে প্লেন উড়িয়ে দিল পিটার।
    ও ও! একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। তখন হিটলারের একান্ত সচিব ছিল- মার্টিন বরমান। ১৯৪৩ সাল থেকেই এই ছকটা ওর সাথে আমার করা ছিল। হিটলারকে ইচ্ছে করেই বলিনি। ভেবেছিলাম, ও আর ইহুদিদের মারবে না। বিধির বিধান, খণ্ডাবে কে?
    যাক।
    আকাশে উড়ে ডেনমার্কের টনডরে নামলাম আমরা। তারপর ফের ফিরে গেলাম জার্মানির ট্রাভেমুণ্ডার বিমানবাহিনীর ঘাঁটি, লুফ্‌ৎওয়াফে। এই ঘোরাটা ইচ্ছে করেই প্ল্যান করেছিলাম আমি।
    পিটারকে ছেড়ে দিলাম। এবারে আর একটা প্লেনে ছদ্মবেশে উঠলাম আমরা। গিয়ে নামলাম বার্সেলোনার দক্ষিণে সামরিক ঘাঁটি রিয়সে। জেনারেল ফ্রাঙ্কোকে লোরেন্‌ৎস সাইফার মেশিন দিয়ে খবর পাঠান ছিল। ফ্রাঙ্কো আগে থেকেই আর একটা প্লেন রেডি করে রেখেছিল। আমরা গিয়ে নামলাম, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের ফুয়েরতেবেনতুরায়। ওখান থেকে ইউ বোটে চড়ে সবাই ঢুকে পড়লাম অতলান্তিক মহাসাগরের গভীরে। ইউ বোটের খাঁচাতে শুরু হল দীর্ঘ যাত্রা।
    ওদিকে, লাল ফৌজ বাঙ্কারে পৌঁছে গেলেও পাখী ফুরুৎ।
    স্পেন ছেড়ে ৫৩ দিন বাদে পৌঁছলাম, আর্জেন্তিনার উপকূলে মার ডেল প্লাতার দক্ষিণে নিকোচিয়ায়।
    - ক্ষেতুদা, একটা প্রশ্ন।
    - বল!
    - ইউ বোট কি?
    - তোমরা তো দেখছি কিস্‌সু জানো না! ওটা হলো সাবমেরিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে খুব ব্যবহার হয়েছিল।‘
    - ঠিক আছে। আপনি বলে যান।
    - তারপর আর কি! আমি তো ভারতে চলে এলাম, ঘনাদার ডাকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিতে।
    - পরে আর কোনো খবর পান নি?
    - হুঁ! পেয়েছিলাম।
    - কি? কি?
    - ঐ আনডেসের পাদদেশে এক গণ্ডগ্রামে কেটেছিল হিটলারের শেষ জীবন। দুটো মেয়েও হয়েছিল। তবে এভার সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায় ১৯৫৩ তে। শেষমেষ হিটলার মারা যায়, ১৯৬২ র ১৩ ই ফেব্রুয়ারী, বেলা ৩টের সময়। এরপর আর কি হয়েছে, আমার জানা নেই।
    ক্ষেতুদা আর একটা সিগারেট ধরালেন।
    তারক মোত্তির বললেন- একটা শেষ প্রশ্ন ক্ষেতুদা!
    - বল হে বল!
    - আপনার মনে আছে? মাসখানেক আগে, আপনি সেল ফোনের সিম কার্ডের জন্য একটা ফর্ম ভরে আমাকে দিয়েছিলেন জমা করতে!
    - হ্যাঁ! তো?
    - না! মানে ঐ ফর্মের সাথে আপনার ভোটার কার্ডের সেল্ফ আয়টেষ্টেড ফোটো কপি ছিল। ওটাতে আপনার জন্ম তারিখ ছিল, ১৯৪৫ সালের ৮ ই নভেম্বর।
    ক্ষেতুদা আগুন ঝরা চোখে তারক মোত্তিরের দিকে তাকিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন চন্দনের চেম্বার থেকে।

    ____সমাপ্ত_______

  • Jhiki | 219.83.85.197 | ২৬ জানুয়ারি ২০১২ ১৪:১৬513954
  • দারুণ লাগল, এইরকম আরো চাই।
  • Nina | 12.149.39.84 | ২৬ জানুয়ারি ২০১২ ২১:৫৩513955
  • :-)))
  • ppn | 122.252.231.10 | ২৬ জানুয়ারি ২০১২ ২২:০০513956
  • কোতায় চিলে ওস্তাদ, এতদিন কোতায় চিলে!!
  • maximin | 59.93.242.80 | ২৬ জানুয়ারি ২০১২ ২২:৪০513957
  • গল্পটা জব্বর হয়েছে। পরিমিতিবোধ লক্ষ্যনীয়। ব্রিভিটি ইজ দা সোল অফ উয়িট।
  • Shibanshu | 117.195.137.50 | ২৭ জানুয়ারি ২০১২ ০০:১০513958
  • তস্য তস্য ঘনাদা !!!
  • Ghanada | 223.223.139.92 | ২৭ জানুয়ারি ২০১২ ১৫:২২513959
  • “ঈশাক্ষীর উসুর্ব্বুদে মারা গেল মার
    নাকেতে নির্জ্জরগণ করে হাহাকার”
    হুংকার দিয়ে উঠলেন- ক্ষেতু বাগচী!
    -বল, দেখি এর মানে কি? কাব্যি চর্চা হতিসে? যত্ত সব! সবাই চমকে গেল! এ আবার কোন ভাষায় কথা বলছেন ক্ষেতুদা! হুংকারের চোটে বদরী বাবু চেয়ার থেকে ছিটকে পড়লেন, “বল হরি”র চায়ের গ্লাসে চিনি মেশানোর শব্দটা ফাটা রেকর্ডের মত হতেই লাগলো। তারক খুড়ো, নেশালু চোখ খুলে কে কে বলে চেঁচিয়ে উঠলেন! হলটা কি? উগ্রপন্থীরা কি হানা দিয়েছে না বোম ফাটালো কেউ!!!!! ক্ষেতু বাগচী আবার একটা হুংকার দিলেন- ল্যাভেণ্ডিস!!!!!!!! সবার পিলে চমকে উঠলো! কয়েকদিন আগেই ভূমিকম্পের রেশ রয়ে গেছে! আজই কি পৃথিবীর পালা কীর্ত্তন শেষ?
    কিন্তু,এই কাণ্ডকারখানার পরিপ্রেক্ষিতটা কি?। খুলেই বলা যাক!
    রোগীর ভীড় কম থাকায় সন্ধে বেলায় চন্দন ডাক্তারের চেম্বারে আড্ডা বসে। আড্ডার বিষয় টালা থেকে টালিগঞ্জ! তারক খুড়ো মানে তারক মোত্তির স্বদেশী করতেন। বয়স হলেও বেশ তরতাজা! চেহারা এবং মনেও। একটা স্কুলে বাংলা পড়িয়েছেন এককালে। এখন অবসর নিয়েছেন। সন্ধে হলেই একটু চোখটা লাল হয়। বিলিতি খান না। চিরজীবন স্বদেশী করে এসেছেন, তাই “দিশি” খান। জিজ্ঞেস করলে বলেন- হুঁ হুঁ বাবা! স্বদেশী করেছি, তাই চরিত্র ভ্রষ্ট হই নি!
    তারক মৈত্রের স্বদেশী করার কথায় সবার একটু কিন্তু কিন্তু আছে! তা সে যাক গে!
    কয়েকদিন আগে যেমন, হঠাৎ “বল হরি” জিজ্ঞেস করেছিল-
    আচ্ছা! ভগবানের হাইট কত?
    ক্ষেতু বাগচী বলেছিলেন- এক্সাট হাইট টা বলতে পারবো না! তবে তিনি গড়পড়তা মানুষের থেকে অনেক অনেক খাটো!
    -কেন? সকলেরই জিজ্ঞাসা!
    - না হলে, সবাই কেন বলবে- ভগবান!!!! মুখ তুলে চাও!!!!!
    চন্দন ডাক্তার লোকটি বেশ ভালো। ড: চন্দন ভাদুড়ি- এম.বি.বি.এস। পশার বেশ জমজমাট। অনেক গরীব লোক পয়সা দিতে না পেরে, জমির কলাটা, মূলোটা দিয়ে যায়! হাসি মুখে তাই নেয় চন্দন ডাক্তার। রাত বিরেতে লোকে ডাকলে চন্দন হাসিমুখে হাজির। এইখানে শহরতলীর গঞ্জে রিক্সা চলে। কোলকাতা শহর বাসে মাত্র ৬ টাকার দূরত্ব। বাস রাস্তার ওপরেই চেম্বার। এর পাশেই হরির চায়ের দোকান! “বল”হরি বলেই পরিচিত। গান করতে করতে হরি চা বানায়! বদরী সান্যাল প্রায়ই ওকে অন্যমনস্ক হয়ে চা বানাতে বলেন। বদরী বাবুর বক্তব্য-এতে “বল হরি”, চাটা যদি দৈবাৎ ভালো বানায়!
    আজকের আড্ডাতে বদরী সান্যালের লেখা কবিতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। কবিতাটা এরকম:-
    অনন্ত কাল ধরে, তোমারই প্রতীক্ষায়
    খুঁটে খুঁটে খাচ্ছি সময়।
    গরুর পাল হাঁচে, সেই গোধূলিবেলায়
    ছড়িয়ে যায় কত গোময়।
    তবু তুমি আসো নাকো, দেরী কেন হয়?
    এটা, বদরীবাবুর ৩২৭১ তম অণু কবিতা। পত্র পত্রিকায় পাঠান, কিন্তু তারা ছাপে না। সম্পাদকদের কবিত্ব বোধ সম্বন্ধে বিরক্ত হয়ে তিনি, তাঁর একটা কবিতা; কম্পিউটারের এ ফোর সাইজে “প্রিন্টিত”( বদরী বাবুর নিজের ভাষা) আকারে নিয়ে রাতে পাড়ার দেয়ালে দেয়ালে সেঁটেছিলেন। কুলোকে বলে চন্দন ডাক্তারের পশার বাড়ার এটা অন্যতম কারণ।
    লোকে কবিতা পড়ছে আর মৃগী রোগী হয়ে গিয়ে চন্দন ডাক্তারের কাছে ছুটছে! কবিতাটা পড়ে, লোকে এই কারণে বদরীবাবুর ঠিকানা হন্যে হয়ে খোঁজ করেছে কিছুদিন। চন্দন পরামর্শ দিয়েছিল, বদরীবাবুকে- দাদা, আপনি এক্ষুণি চিৎপুরে গিয়ে মেক আপ নিয়ে মুখটা পাল্টে নিন! না হলে কিন্তু ঘোর বিপদ আপনার!
    “বল হরি” কিন্তু বদরী বাবুর খুব ভক্ত!
    মহম্মদ রফীর গানের সুরে ওনার লেখা কবিতাগুলো চা বানাতে বানাতে গায়! বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে গানের রিয়ালিটি শোয়ে নাম দেবার কথা ওর মাথায় বদরীবাবুই ঢুকিয়েছেন। বদরীবাবুর ইচ্ছেটা অবশ্য অন্য কারণে!
    নাটু লাহিড়ী সর্দ্দির জন্য ওষুধ নিতে এসেছিলেন! ক্ষেতু বাবুর ল্যাভেণ্ডিস, শুনে মিউ মিউ করে বললেন!
    লবেঞ্চুস? ওটার কারখানায় তো ধর্মঘট!
    তারক মোত্তির বললেন- ধর্মঘট, কি সমাস?
    নাটু লাহিড়ী উত্তর দিলেন- ধর্মঘট হচ্ছে কমাস! মানে কয় মাস!!!!! ওপস! তারকদা!!!! খালি মাষ্টারী ফলান কেন? যাক! তাআআআআ ধর্মঘট- ৭ মাস হয়ে গেল!!!!
    ক্ষেতু বাগচী আবার বললেন- যাও হে! যত্ত সব ফ্যাদরা প্যাচাল! বলো ঐ দুই লাইনের মানে কি?
    নাটুবাবু দুবার ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে হেঁচে বললেন- আমি পরে আসব চন্দন! কে যেন বলল, কোথায় যেন, কটার সময় যেতে হবে! কার যেন আসার টাইম হয়ে এসেছে! আমি যাই! বলে, সুরুৎ করে কেটে পড়লেন।
    চন্দন বলল- দাঁড়ান ক্ষেতু দা! একটু দম নিতে দিন। আপনি যা ভয়ংকর হুংকার দিলেন। পিলে এক্কেরে চলকে উঠিসে। আই বাপস।
    ক্ষেতুবাবু আবার ক্ষেপে গেলেন।
    - আমি তো বসেই রয়েসি! খামাকা দাঁড়াব কেন হে? যত্তসব! ঐ বদরী যত নষ্টের গোড়া! রোজ একটা করে কবিতা শোনাবে আর আমার কোষ্ঠকাঠিন্য হবে! আজ ইসপার কি উসপার!
    বদরীবাবু অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন- আমার কবিতার সঙ্গে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্পর্ক কি?
    - তুমি কবিতার কি জানো হে ছোকরা! খালি কতক অর্থহীন শব্দ লিখে অনর্থক কর্ণ কণ্ডুয়ন করো। তাইতেই তো আমার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়!
    - যা:! বাবা !!!!আমায় ছোকরা বলছেন? আমার রিটায়ার করার ৪ বছর হয়ে গেছে! হে ভগবান!! মুখ তুলে চাও!!!!!
    - বদরী, তুমি আর ভগবানকে মুখ তুলে তোমার দিকে চাইতে বল না! ভগবানের পোনডাইটিস হবে! যা ঢাউস- ঢ্যাঙ্গা তুমি!!!!! তোমার একটাই প্লাস পয়েন্ট! গরীব রুগীরা ডায়ারিয়ায় ভুগলে আর চন্দনকে ওষুধ লিখতে হবে না! তোমার কবিতা গুলো পড়িয়ে দিলেই হবে।
    চন্দন বলল- ক্ষেতু দা ওটা স্পোণ্ডিলোসিস হবে! পোনডাইটিস নয়!
    - আরে ছাড়ো হে:!
    ইতিমধ্যে বল হরি চা নিয়ে এসেছে! ক্ষেতু বাগচী গুণগুণ করে গাইতে শুরু করলেন-
    চায়ে চর্বি

    বিড়িতে বল

    বাদবাকী যা খাবি

    সবই অম্বল!

    চা-তে সুরুৎ করে একটা চুমুক দিলেন- তারক মোত্তির! একটা বিড়ি নিয়ে কানের কাছে ধরে পাকিয়ে, দেশলাই দিয়ে বিড়িটা ধরিয়ে বললেন- ঠিক আছে ক্ষেতুদা! আপনার ঐ বিদঘুটে কথাগুলোর মানেটা বলুন।
    বিদঘুটে! তোমার গিদরিং জ্যাম করে দেব কিন্তু, তারক!
    আহা! রাগ করেন কেন, ক্ষেতুদা! তারক মোত্তির ভিসুভিয়াসের মত বিড়ির ধোঁয়া ছেড়ে বললেন।
    -মাফ করে দিন!

    বলছি- কিন্তু ফের যদি প্যাচাল পাড়িচ আর ঐ বদরী ব্যাটা কবিতা শুনিয়েছচে, তো ওরই একদিন কি আমারই একদিন। ক্ষেতু মোত্তির উত্তর দিলেন।
    না! না! কিছু বলবে না বদরীদা! আপনি প্লিজ বলুন! চন্দন ডাক্তার বলল!
    বলছি! কিন্তু বলার সময় ভজর ভজর করবে না কানের কাছে। ক্ষেতু বাগচী বললেন।
    আরে না! বলুন, বলুন!

    বেশ বলছি!

    ঈশাক্ষী মানে – মহাদেব! বুঝলে হে! উসুর্ব্বুদের মানে হল, মহাদেবের ঊর্দ্ধনয়ন থেকে রোষানল! মারা গেল মার, – এর অর্থ হলো মরে গেল কামদেব। মার হলো কামদেবের আর এক নাম! নাক হলো স্বর্গ! আর নির্জ্জর হলো যাদের জরা নেই! মানে- দেবতারা!
    তাহলে পুরো মানেটা কি দাঁড়াল ক্ষেতুদা?- চন্দন ডাক্তার জিজ্ঞেস করল!
    মহাদেবের ঊর্দ্ধনয়নের রোষানলে মদনদেব মারা গেলে স্বর্গে দেবতারা হাহাকার করতে লাগল- বুইচ হে!
    -বাবা:! আপনি কি জিনিস গুরু! ক্ষেতুদা!
    - হুঁ! হুঁ! এটা কি বদরীর ফ্যাদরা প্যাচাল নাকি! খালি, ইং তাং কিরিমিচি!

    - উফ! এই ইং তাং কিরিমিচি টা আবার কি? চন্দন বলল।
    - ওটা বদরীকে জিজ্ঞেস কর! বাঁদরের মত কবিতা লেখে ব্যাটা!
    -সে না হয় বুঝলাম- কিন্তু ল্যাভেণ্ডিস কথাটার মানে কি?
    - তুমি একটা লাওয়াঞ্জে লাওয়ারিস! ল্যাভেণ্ডিস এর মানে হচ্ছে ল্যাভেণ্ডার সাবান!
    - যা! বাবা! এ আবার কিআ ভাষা!
    - বদরী যদি প্রিন্টিত বলতে পারে তো আমি কেন ল্যাভেণ্ডিস বলবো না চন্দন!
    -হুম! কিন্তু আবার একটা কথা ব্যাবহার করলেন- লাওয়াঞ্জে লাওয়ারিস! ওটা আবার কি?
    - লাফাঙ্গা আর যার কোনো ওয়ারিস নাই!
    বদরী খেপে গেলেন।
    দেখুন, ক্ষেতুদা- একে আপনি বয়োজেষ্ঠ তার ওপর বারিন্দির! আমারই জাতভাই! তাই কিছু বলছি না! তা বলে আমাকে এ ভাবে অপমান করবেন?
    - কোথায় অপমান করলাম? আমি তোমার এই মাথামুণ্ডুহীন কবিতার প্রতিবাদ জানালাম! বুয়েচ? আর বারিন্দিরদের কথা বলো না ভায়া! প্রবাদ আছে- বারিন্দির মরে ভাসে জলে, কাক বলে এ কোন ছলে!!!!! কাকের মত ধূর্ত প্রাণীও বারিন্দিরদের মড়া ঠোকরাতে সাহস পায় না! এত প্যাঁচ বারিন্দিরদের! আমি তো খোলাখুলি বলেচি তোমায়!
    - হে! হে! ঠিক বলেছেন ক্ষেতুদা! তারক মোত্তির বললেন।
    বুঝলে বদরী! এখানে তো সবাই বারিন্দির!
    তাই পেরেকদের নিস্তার!

    কেন? গম্ভীর স্বরে বললেন বদরী!
    এই দ্যাখো! রাগ হয়েসে তো? তা পুরুষের রাগ থাকা ভালো! বারিন্দিরদের তো পেছন ভরা রাগ!
    - যাক! ঐ পেরেকের কথা কি বলছিলেন, ক্ষেতু দা! বলল, চন্দন।

    - বলব আর কি! বারিন্দিরদের মাথায় পেরেক ঢোকালে ইস্ক্রুপ হয়ে বেরোয় জানো?
    - ঠিকই তো! নাটুদার সঙ্গে গায়ে গা ঠেকলে, নাটুদা উল্টো সাত পাক ঘুরে যান! জিজ্ঞেস করলে বলেন- প্যাঁচ ছাড়াচ্ছি! এয়াতোদিনে বুঝলাম কারণটা!
    বল হরি, খালি চায়ের গেলাস গুলো নিতে এসেছিল! এই কথা গুলো শুনে হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিল।
    - ওরে কাঁদিস ক্যান রে ছোকরা!
    - কাঁদবু নি! আপনাদের সঙ্গে কত্ত যে গা ঠোকাঠুকি হইসে! এয়াহন আমার কি হইবো!
    - হবে আবার কি! তোর ঐ চোখের জলে তো আর শ্যাওলা পড়বে না! বুদ্ধি বেড়ে যাবে!
    - বুদ্ধি বাড়বো? ঠিক কইতাসেন?
    - ছ্যাঁচরামি বুদ্ধিটা বাড়বে!
    আর বেড়ে লাভ নেই! এমনিতেই ১০ টা চা খেলে ১৫ টা চায়ের পয়সা নিস! তার ওপর যদি…. থাক, আর বললাম না। বললেন- তারকখুড়ো।
    বদরীদারর কবিতা নিয়ে আলোচনা হবে না? বলল চন্দন!
    আলোচনা করে লাভ নেই, বদরীর কবিতা পাবলিক খাবে না! যত্ত সব ভাট বকা! ক্ষেতু বাগচী ফায়ার হয়ে গেলেন!!!
    ব্যাপার স্যাপার দেখে তারক মোত্তির বললেন:-
    না:! উঠি! রাত ১০ টা বাজে। এরপর বাড়ী গেলে গিন্নি ঠ্যাঙ্গাবে!
    বলে চেয়ার থেকে উঠে পড়লেন।
    তা হলে আজকের মত এখানেই আড্ডা শেষ? বলল চন্দন!
    হ্যাঁ ! হ্যাঁ ! শেষ! বেশী আড্ডা আর আলোচনা করলে আবার ভূমিকম্প হবে!
    চলো হে! বাড়ী যাই! ক্ষেতু বাগচী একটা চলন্ত রিক্সা ধরে উঠে পড়লেন।
    ……………………………সমাপ্ত!……………………………….
  • Nina | 12.149.39.84 | ২৮ জানুয়ারি ২০১২ ০২:৩৬513960
  • হা হা হা হা :-) ঘনাদা জব্বর হইসে !
    এই ভগবানের হাইটটা শুনেছিলাম আগেও----ভগবান খুব বেঁটে।

    আবার বলি তোমার বিয়ের গপ্পটা একটু হয়ে যাক---
  • Ghanada | 223.223.128.253 | ২৮ জানুয়ারি ২০১২ ১৩:৩১513949
  • যাঁরা পড়েছেন, তাঁদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ! এই ক্ষেতু বাগচী মহাশয় ( নাম আলাদা করে দিয়েছি) কিন্তু কল্পিত চরিত্র নয়।

    নীনাকে বলি, সব লিখবো বলেই তো, এই টইটা খুলেছি। আস্তে আস্তে, সব লিখবো!

  • Nina | 12.149.39.84 | ৩০ জানুয়ারি ২০১২ ২২:২৪513950
  • একেবারে চাটাই পেতে বসেছি গো ঘনাদা-----স--ব শুনব
  • Ghanada | 223.223.139.112 | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০৯:২৬513951
  • সিগারেট আজকাল আর প্যাকেট ধরে কিনি না। ঐ যখন খুব তেষ্টা পায়, ধোঁয়ার; তখন একটা দুটো কিনি।
    তা, একটা সিগারেট কিনে, ধরিয়ে; আরাম করে টেনে শেষ করে ফেলে দিলুম, তখন ড: ব্যাস্তব্যাগীশের সঙ্গে দেখা।
    বললেন- একটা সিগারেট হবে মি: ভশ্চাজ?
    আমি- আর তো নেই!
    -আজকাল কেই বা সিগারেট দিয়ে উপকার করে? নিন, আর একটা খান-বলে পকেট থেকে নতুন প্যাকেট বের করে নিজেও নিলেন আর আমাকেও একটা দিলেন।
    আমার দুম করে একটা চিনে গপ্পো মনে পড়ে গেল। এই গপ্পোটার বঙ্গীয় করণ করে ব্যাস্তব্যাগীশকে বললাম।
    -ক্ষেতু বাগচীকে চেনেন তো, ড: সাহেব?
    - বিলক্ষণ, চিনব না!!!!!!
    - তো, একদিন আমাদের বৌদিকে দাদা বললেন- পাশের বাড়ী থেকে একটা হাতুড়ী নিয়ে এসো তো!
    বৌদি গেলেন, পাশের বাড়ী। হাতুড়ী চাইলেন।
    প্রশ্ন এলো- হাতুড়ী কি হবে?
    - তোমাদের ক্ষেতুদা দেয়ালে একটা পেরেক পুঁতবে, ছবি টাঙ্গানোর জন্য।
    - আমাদের হাতুড়ী খারাপ, দেওয়া যাবে না।
    বৌদি, রেগে মেগে ক্ষেতুদাকে বললেন- দেখলে তো!! তোমার জন্য আমাকে অপমান সহ্য করতে হল!!!!!
    ক্ষেতুদার জবাব- এই হচ্ছে দুনিয়া কেউ কারো উপকার করে না! নাও আমাদের হাতুড়ীটা বের করো!!!
    ড: ব্যাস্তব্যাগীশ- তাই নাকি? বলে ব্যস্ত ভাবে হন্তদন্ত হয়ে চলে গেলেন।
  • shanku | 117.241.64.168 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০৯:৪১513952
  • দারুণ হচ্ছে ঘনাদা...
    আজকাল সময় খুব কম পাই, কিন্তু এই সুতোটা মাঝে মাঝে দেখে যেতেই হবে ।
    শুধু একটা নালিশ । '!' চিহ্নটা একটু কম ব্যবহার করা যায় না ? একটু যেন চোখে লাগছে ।
    পরের গপ্পটার অপেক্ষায় রইলাম ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন