এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • সরস্বতী পুজো-- গপ্পগাছা

    phutki
    অন্যান্য | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ | ৩৮২৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • phutki | 131.242.63.60 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৪:৪৩599043
  • সবারই তো অনকে গপ্পটপ্প থাকে এই দিনের। একই রকম হয়তো কিছুটা। আমার কাছে এই সময়টা উৎসবের সময় ছিল। খুব আনন্দের। ভরসা করে খোলা আমার প্রথম টই। লিখবেন নাকি সব?
  • phutki | 131.242.63.60 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৪:৪৯599054
  • স্কুল থেকে ফেরার পথে কোর্টের মাঠের সামনে দেখতম দুদিকে সারবাঁধা সরস্বতী ঠাকুর। দেখলেই মনে হত নিয়ে আসি। কিন্তু আমাদের বাড়ীতে সরস্বতী পুজো হত না। মামাবাড়ি তে হবে।আমি তো সকাল থেকে ওখানেই চলে যাব। আর আগেরদিন রাতে মামা যাবে বড় দেখে সুন্দর হাঁসের ওপর বসা ঠাকুর কিনতে। এই ছোটো ঠাকুরের দল শুধু মনে করিয়ে দিয়ে যায়।। শ্রী পঞ্চমী তো এসেই গেল।
  • phutki | 131.242.63.60 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৪:৫২599065
  • ছোটোবেলায় কোন ভোরবেলা লাফ মেরে উঠে পড়তাম। মা আমাকে স্নান করিয়ে দাও বলে চেঁচানি। আবার চেপে ধরে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হত। তখন হয়ত ভোর ৪টে। তারপর ৬টা নাগাদ উঠে গরম জলে স্নান। কাচা জামা পরে রেডী হতে না হতেই পাড়ার বন্ধুরা ডাকতে চলে এসেছে। ভবতারণ জেঠুর বাড়ি ঠাকুরমশাই এসে গেছে। জলদি চল। ভবতারণ জেঠুর বাড়িতেই সবার আগে পুজো হত। যাদের বাড়িতে পুজো তারাও ছুটতো সকালে অঞ্জলীটা দিয়ে আসতে। ঘরের মধ্যে ঠেলেঠুলে সামনে আমরা গুটি ছয় সাত। তারপরে বড়োরা। পুজো শুরু হয়ে যেত। মনে দিয়ে দেখতে দেখতে হঠাৎ মনে হত ,মা কই? মা কি এলো? ভিড় হয়ে থাকা ঘরের মধ্যে চোখ চালিয়ে এক্দম শেষের দিকে মা কে দেখতাম পাড়ার অন্য কাকিমাদের সাথে। শান্তি। পুজো চলে, অঞ্জলী হয়। আমার তো মন্ত্র গুলো মুখস্ত। আমার মা তো সবই জানে। শিখিয়ে দিয়েছে। আমি মিলিয়ে নি আর কেতা মেরে আওড়াই। পুজো শেষে বন্ধুদের বলি।।এ সব মন্ত্র তো আমি আগেই জানতাম। কেউ পাত্তাও দিত না। কম বেশী সবাইই তো জানতো!
  • phutki | 131.242.63.60 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৪:৫৬599076
  • এবার আমাদের বন্ধ দরজা খুলে গেল।।কুল খাওয়ার। চকচকে নিটোল সবুজ রঙের। কিন্তু তক্ষুণি খাই না। সবার বাড়ির পুজো শেষ হোক। তারপর এক সাথে খাব তো। মামাবাড়িও যেতে হবে। দিদা বানাবে কুলের চাটনী। লাল লাল টোপা কুল। যেতাম স্কুলেও। সব পার্টিশান সরিয়ে দিতেই স্কুলের একতলায় তৈরী হয়ে যেত একটা লম্বা হলঘর। কি বড় সরস্বতী ঠাকুর। কি সুন্দর সাজানো। সব মিস রাও কি সুন্দর লাগছেন। সবাই হেসে হেসে আদর করে দিচ্ছেন, মা র সাথে কথা বলছেন। বেশ নিজের নিজের লাগত। আমাদের খেলার মাঠটায় আমদের বেঞ্চ গুলো পেতেই খাওয়াদাওয়া। লুচি , আলুরদম। তদারকি করছেন শঙ্করী দিদিমণি(ইনি কালোকোলো গোলগাল, কখনাই মনে হয় কেউ এনাকে মিস বলেনি। ইনি তো দিদিমণিই চিরকাল। 'মিস' টা প্রজাপতির মত সোনালী মিস, বুলবুল মিস..এদের জন্যই তোলা ছিল) ।
    দুপুরে দিদার বাড়িতে আর কিচ্ছু খেতে পারতাম না। পেট ভর্তি। কিন্তু কোনো অসুবিধে নেই তাতে। সারা দুপুর আমরা কুচোরা হুল্লোড় করতাম মামাবাড়িতে। বড়মামার নিয়ম ছিল, মামাবাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে ঢুকলে আমাদের আর কেউ বকতে পারবে না। বিকেলেও তো মজা বাকি। আজ মাসীমণির জন্মতিথি। বিকেলে লুচি , আলুরদম আর মাসিমণি আনবে অনেক রকম মিস্টি। হুল্লোড় আর হুল্লোড়।
    রাতে তখন কাহিল আমরা। দিদার খাট হত আশ্রয়্স্থল। দেখতাম থালা সাজানো হচ্ছে খাবার দাবার দিয়ে। তিন জামাই এর ইস্পেশাল। কত্ত কিছু দিয়ে।আর আমাদের কাছে আসছে কদমা, বীরখন্ডি, দুটো কুল..এরকম টুকিটাকির স্রোত। পাশে তোলা উনুনে একইসাথে চলছে গোটা চচ্চড়ির রান্না। কাল তো শীতল ষষ্ঠী। উনুন ধরানো হবে না। গোটাসেদ্ধো, হরেকরকম ভাজা সব দিয়ে পান্তাভাত। আমি পান্তা খেতে পারি না। তাই বাবা অফিস গেলে কাল সকালে আমি আর মা মামাবাড়ি আসবো আমার জন্য গরম ভাত টিফিন কৌটোয় ভরে। এখন লিখতে লিখতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি...খাট থেকে মাথা ঝুঁকিয়ে আমরা এসব কান্ডকারখানা দেখছি আর মাঝে মাঝে ধমক খাচ্চি বাঁদরামির জন্য। এসব করতে করতেই ঘুম এসে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবছি কাল সকালে দধিকর্মা।

    আর একটু বড়বেলার গল্প তো অন্যরকম ।
  • de | 190.149.51.66 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৫:০২599087
  • বাঃ!! ফুটকি তো দারুণ লেখে! খুব সুন্দর হচ্চে- -এই বার বড়বেলার গপ্পো হোক!
  • phutki | 131.242.63.60 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৫:৪২599098
  • দে দি ... :)

    আর কারো কোনো গপ্প নেই? নষ্ট্লজিক নেই?

    কোনো এক সরস্বতী পুজোয় মনে আছে বাবা ভীষণ লোভ দেখিয়েছিলো পুজোর আগেই সিঙ্গারা খেয়ে নেওয়ার। আমি প্রায় হ্যাংলা কূল-শিরোমণি হয়ে খেয়ে ফেলবো এরকম সময় মা আমাকে উদ্ধার করে। বাবা বকা খেয়ে একা একাই সিঙ্গারা খেয়ে ফেলেছিল।
    আর একবার দূর্বা আগেরদিন দুপুরবেলায় এসে মার কাছে জানতে চেয়েছিল যে ও "ভুল করে" কুলের আচার খেয়ে ফেলেছে। দুবার অঞ্জলী দিলে কি দোষ কেটে যাবে? মা কি এব্যাপারে ওকে হেল্প করতে পারে ? মা এক সপ্তাহ দিনে দশটা অঙ্ক করার পরামর্শ দিয়েছিল ওকে। ওর অঙ্কে খুব ভয় ছিল। তবুও কষ্ট করে করেছিল। আসলে একদম ফাইনালের আগেই পুজো হত কিনা!
  • Blank | 180.153.65.102 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৬:০৬599099
  • রাত জেগে ঠাকুর সাজানো, সরু ছুরি দিয়ে থার্মোকলের কল্কা কাটা, স্টোভের আগুনে ফুটছে তুঁতে দেওয়া নীলচে আঠা। ভোর রাতে বড় বড় টব এনে, গায়ে রঙিন কাগজ মুড়ে দেওয়া। বই গুলো কে ছোট্ট পিঁড়িতে এমন করে সাজানো যাতে মা সরস্বতী সব কটা বইকেই দেখতে পায়। যেটা নীচে চাপা থাকবে, সেটাতেই নাম্বার কম উঠবে কিনা।
  • phutki | 131.242.63.60 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৬:৩৫599100
  • আস্তে আস্তে পুজোটা অন্যরকম হল ।এই ক্লাস সেভেন , এইট। স্কুল সাজতে শুরু করত দু দিন আগে থেকে। পুজোর দায়িত্বে ক্লাস নাইনের দিদিরা। তারা তো ভীষণ পাকা পাকা কায়দায় ঘুরে বেড়াত। স্কুলে সিনিয়র হলেও পাড়ায় তো এক সাথেই ওঠাবসা। শুনতাম , কোথায় ঠাকুর তৈরী করতে দিতে গেছে, কারা সব অন্য স্কুলে নেমন্তন্ন করতে গেছে। এইসব। আর ভাবতাম, আর তো কটাদিন , তারপরেই আস্ত একটা পুজো আমাদের হাতে। ক্লাস এইটে পুজোর আগে মা কে অনেক পটিয়ে পাটিয়ে একটা নতুন শাড়ির বিল পাস করানো গেল। আমি আর মা দুজনে মিলে গিয়ে শখ করে বেছে বুছে কিনলাম কমলা চওড়া পাড় ওয়ালা কালো তাঁত। কিনে দিদা কে দেখাতেই বকা। বাসন্তী ছাড়া সরস্বতী পুজো হয় নাকি? তাও এত রঙ থাকতে কিনা কালো? ভারি দুঃখ হয়েছিল বকা খেয়ে। (এই দিদার ইমোশানাল অত্যাচারেই আমার মা আজও সাদা শাড়ি কিনতে ভয় পায়)

    তখন লিস্টিতে যোগ হয়েছিল দুটো স্কুল। ছোটোবেলার স্কুল আর বড়বেলার স্কুল। ছোটোবেলার স্কুলে গিয়ে যখন সব মিসরা চিনতে পারতেন, মা-বাবার খোঁজ নিতেন, কেমন রেসাল্ট হচ্ছে জানতে চাইতেন , কি ভাল যে লাগত।

    মামাবাড়ির পুজো সাজানোর দায়িত্ব এখন আমাদের। আগের দিন রাতে গিয়ে আলপনা দিয়ে আসতাম আমি। ঠাকুরের পেছনে গ্রিলে দাদুর ধুতি কুঁচিয়ে টাঙ্গিয়ে হত ডিজাইন। শিকলি বানানো হত রঙিন কাগজ দিয়ে। পাশের বাড়িতে একবার বাঁশের প্যান্ডেল বানালো। আমাদের কি মন খারাপ। তারপর রাত করে বড়মামা স্টার কিনে এনে সুন্দর চক্চকে চাঁদোয়া বনিয়ে দিল। দিদা আমাদের জন্য দোয়াত কিনে আনত আর আমরা কার কলমটা বেশি ভাল সেটা নিয়ে মারপিট করতাম। আর ঝামেলা হত চাঁদমালা নিয়ে। প্রতিবার অবধারিত ভাবে আমাদের ৩ বোনের ৩টে আলাদা চাঁদমালা পছন্দ হত আর আমরা দশকর্মার দোকানে ঐ এক বাজার ভিড়ের মধ্যেই চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ঝগড়া করতাম। ঠাকুর বসার পিঁড়িটা বেশ মজার ছিল। টেলিফোনে ডিরেক্টরি সাজিয়ে নিয়ে ভাল করে মার্বেল পেপার দিয়ে মুড়িয়ে দিতাম। তৈরী হয়ে যেত সুন্দর রঙচঙে পিঁড়ি। পুজোর থালায় মাস্ট ছিল পলাশফুল। আর বেছে বেছে মোটা মোটা গাঁদাফুলগুলো থাকত ঠাকুরের পায়ের কাছে। ওগুলো পুজোর পরে আসবে আমাদের কাছে। সারাবছর বইএর ভাঁজে ভাঁজে থেকে ঐ ফুলই তো আমাদের বাঁচাবে পরীক্ষার সময়্গুলোতে।
  • শিবাংশু | 127.197.254.182 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৭:০৪599101
  • ফুটকি,

    খুব ভালো হচ্ছে। আপনার ক্লাস নাইন পেরোবার পর সরস্বতী পুজোর গপ্পোটা হোক।

    নষ্টলজি সবার আছে। আমাদের নষ্ট হওয়া তখন থেকেই শুরু হয়েছিলো তো। ঃ-)
  • phutki | 131.242.63.60 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৭:১০599044
  • তখন রাস্তার দুপাশে সুন্দরী দিদিদের আর একটু পিছিয়ে হাঁটতে থাকা দাদাদের ও দেখতে শিখে গেছি। চেনা মেয়েদের অচেনা বয়ফ্রেন্ডদের দেখার দিন ছিল এটা। আর ভাবতাম কি সাহস এদের। বাড়িতে জানতে পারলে যে কি হবে? (কি হবে এটার ব্যাপারে সম্যক ধারণা ছিল না। তবে ভয়ঙ্কর কিছু যে একটা হবে এটা জানতাম)। আমাদের সাথে পড়ত রিঙ্কু। বেশ কয়েক বছর ফেল করেছিল। আর মিলিয়ে মিশিয়ে বসিয়ে পড়াশুনোয় আগ্রহ বাড়ানোর নীতিতে বিশ্বাসী আমাদের স্কুলে ক্লাস এইটে রিঙ্কু এল "এ" সেকশানে আমাদের সাথে পড়্তে। সে রিঙ্কু প্রায়ই "লাভ লেটার" নিয়ে আসত । সেটা শুরু হত "আমার স্বপ্নরাণী রিঙ্কু" দিয়ে। তো আমরা অপেক্ষায়, রিঙ্কু সরস্বতী পুজোতে তার বয়ফ্রেন্ডকে দেখাবে আমাদের।

    দুপুরবেলা তুলি ছুটতে ছুটতে এল। রিঙ্কু আসছে। আমরাও স্কুলের মাঠে। মাথায় পাঁচ ফুটও ছাড়ায়নি, সবুজ একটা পাঞ্জাবী পরা, দুটো হাত অল্প ফাঁক করে মিঠুন ইস্টাইলে রিঙ্কুর সাথে হেঁটে আসছে। আমরা দূর থেকে দেখেই কেটে পড়লাম। এই ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে যদি স্কুলের মাঠেও কথা বলি আর বাড়িতে খবর যায় তো আমাদের পাঁচজনের বাড়িতেই "কী যে হবে"। পরে রিঙ্কু অনুযোগ করেছিল। ও নাকি অনেক বলে এসেছিল, ইস্কুলের বন্ধুদের আইস্ক্রীম খাওয়াতে হবে, আর "ও" নাকি রাজিও হয়ে গেছিল। আমরাই কেউ ছিলাম না। আজ এতদিন পরে রিঙ্কুর সেই "ও"র নাম টা দেখছি বিলকুল ভুলে গেছি।

    ক্লাস নাইন এলো। আমরা করব স্কুলের পুজো। আমরাই ঠাকুর বানাতে দিতে যাবো। আমরা পুজোর বাজার করব। আমরা পুজোর জোগাড় করবো। ভাবলেই আনন্দ।
    তখন আমরা কোচিং এ পড়া শুরু করেছি। আমাদের অনেক বন্ধু বান্ধব হয়েছে। আমাদের বন্ধুরাও কেউ কেউ ভললাগা খুশী চিনতে শুরু করেছে। সবারই অপেক্ষা। কিশোরবেলার সরস্বতী সঙ্গে করে অনেক কিছু আনতেন। তার সবটুকু পাওয়ার জন্য মনে হয় সেই বয়সে আর সেই মনে থাকতে হয়।
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৭:২৩599045
  • দুরন্ত হচ্ছে, সাথে আছি
  • phutki | 131.242.63.60 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৮:১৮599046
  • শিবাংশুদা, তুমি তে নেমে এসো :)

    ঐশিক, এরপর তুমি লিখবে কিন্তু তোমার সময়টাকে।
  • phutki | 131.242.63.60 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৮:২৩599047
  • বাড়িতে বলেই গেলাম, সবাই একসাথে পড়তে যাব। মাও একটু প্রশ্রয়ের হাসিই হাসলো। মায়েদেরও তো ছোটোবেলা ছিল। তারপর ছুটির পরে ঠাকুর দেখতে যাওয়া। দুটো ঠাকুর বাদ দিয়ে তৃতীয় ঠাকুর পছন্দ। "সি" সেকশানের শত্রু মৈত্রেয়ীর বাছা ঠাকুরটা এত ভাল লেগে গেল যে শত্রুতা ভুলে সেটাই "ধনী"ভোটে গ্রাহ্য হয়ে গেল। তারপর দিদিমণিদের টাটা করে বন্ধুদের দলে ভিড়ে যাওয়া। রাসমাঠের পাশে বাদামভাজার দোকান থেকে বাদাম কিনে ভট্টচার্জ্য পাড়ার ভেতর দিয়ে ৬-৭ জনের একটা দল কলকল করতে করতে পড়্তে চললো। রাতে বাড়ি ফিরে মাকে গল্প বলতে বলতে আরো একবার আড্ডাময় বিকেলটা ছুঁয়ে আসা। বহু বছর পরে একটা বিকেলবেলায় আবার সে বিকেলটায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে।
  • phutki | 131.242.63.60 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৮:২৪599048
  • এবাবা। এর আগে একটু লিখলাম তো। আবার পোস্ট করছি
  • phutki | 131.242.63.60 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৮:২৬599049
  • এলাকার ছেলেরা সবাই আসত আমাদের স্কুলে। ছোট্টো জায়গায় সব থেকে বড় মেয়েদের স্কুল। দলবেঁধে আসত ছেলেরা। কিছু গ্রুপ চেনা। হেসে কথা বলত আমাদের সাথে আর তাদের চোখ নিশ্চয়ই খুঁজতো অন্য কারোকে। পাঞ্জাবীতেই বেশির ভাগ। তবে জীন্স এর সাথে। এর মাঝেই কাউকে কাউকে দেখে বেশ চোখের আরাম। ভাল লাগলেই বন্ধুদের দেখানো আর তারপর বেশ কিছু নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে তাদের নাম জানা। ছোটো মফস্বল শহর আমাদের। ভাল লাগা চোখ, মনখুশী হাসির মালিকদের খুঁজে বার করতে মোটেও বেশি সময় লাগত না।
    কিছু ছেলেরা আসত যাদের দেখে মনে হত, মা সরস্বতীকে প্রণাম করে দূরে রাখতেই তারা বেশী স্বচ্ছন্দ। এরা প্রায় ঘন্টা তিনেক ঐ স্কুল মাঠে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে গল্প করেই যেত, করেই যেত। দুপুরবেলা স্কুলের বড় গেট বন্ধ করে দেওয়া হত। তখন ভেতরে আমাদের খাওয়াদাওয়া। তখন দারোয়ান পান্ডেজীর ঘাম ছুটে যেত এই বীণাপাণির ভক্তদের বাইরে পাঠাতে।

    নাইনে তো উঠলাম। পুজোর দিন সবাইকে পরতে হবে সাদা শাড়ি কমলা পাড়। কেনা হয়ে গেল। অনন্যা পেয়েছিল সব থেকে সুন্দর শাড়িটা। দারুণ ঢাকাই। কাকিমা ওকে ঐ দিন পরতে দেবে নতুন শাড়িটা। কিন্তু সাবধানে পরতে হবে এতটুকু কিছু হলে সেই "কী যে হবে"!
    পুজোর আগে ঠাকুর বায়না দিতে যাওয়া। রাসমাঠের কাছে পুরোনো বাজারে পোটোর বাড়ি। স্কুলে খোঁজ, আগ্রহী মেয়েরা যাদের বাড়ি রাসমাঠের দিকে তারা যোগাযোগ করো। তারাই কাল স্কুলের শেষে ঠাকুর অর্ডার দিতে যাবে। বোঝো! আমার বাড়ি ওদিকে নয় সে আমার দোষ? এত্ত স্ট্র্যাটেজিক্যালি বাড়ি হয় নাকি কারো? গ্রুপে ৩ জনের বাড়ি ঐ দিকে..বাদ থাকছি দু'জন। উপায়?
    উপায় আছে তো। কাল তো স্কুলের শেষে বাড়ি ফেরা নয়। কোচিং। যদিও সেটা স্কুলের পাশেই। কিন্তু দিদিমণিরা থোড়াই দেখতে যাচ্ছেন? আমাদের দলটা স্কুলে ঝাড়খন্ডীদের দল নামে পরিচিত ছিল। গিয়ে পটিয়ে পাটিয়ে ঠিক ম্যানেজ করে নেওয়া গেল । আমরাই যাব ঠাকুর অর্ডার দিতে। বাড়িতে বললাম , আমাদের ছাড়া পুজো চলে নাকি? দিদিমণিরাই কত্ত করে আমাদের যেতে বললেন।

    পরেরদিন সকালের ব্যাচে খবর চলে গেল অন্য স্কুলের জনগণের কাছে। রাসমাঠে যাওয়া হচ্ছে। স্কুল ফেরত একসাথে পড়তে যাওয়া হবে। নতুন নতুন হওয়া বন্ধুত্বের দিন সব। একটু বেশি আড্ডা, একটু বেশি গল্প। এদের অনেকের সাথেই ক্লাস ফোর অবধি পড়েছি। তারপরেই ছেলেদের স্কুল আর মেয়েদের স্কুল আলাদা। কোচিং ক্লাসের কল্যাণে আবার পুরোনো বন্ধুত্ত্ব নতুন করে ঝালিয়ে নেওয়া। শুধু হয়ত দেখার চোখ বদলে যেতে শুরু হয়েছে দু'পক্ষেরই।

    বাড়িতে বলেই গেলাম, সবাই একসাথে পড়তে যাব। মাও একটু প্রশ্রয়ের হাসিই হাসলো। মায়েদেরও তো ছোটোবেলা ছিল। তারপর ছুটির পরে ঠাকুর দেখতে যাওয়া। দুটো ঠাকুর বাদ দিয়ে তৃতীয় ঠাকুর পছন্দ। "সি" সেকশানের শত্রু মৈত্রেয়ীর বাছা ঠাকুরটা এত ভাল লেগে গেল যে শত্রুতা ভুলে সেটাই "ধনী"ভোটে গ্রাহ্য হয়ে গেল। তারপর দিদিমণিদের টাটা করে বন্ধুদের দলে ভিড়ে যাওয়া। রাসমাঠের পাশে বাদামভাজার দোকান থেকে বাদাম কিনে ভট্টচার্জ্য পাড়ার ভেতর দিয়ে ৬-৭ জনের একটা দল কলকল করতে করতে পড়্তে চললো। রাতে বাড়ি ফিরে মাকে গল্প বলতে বলতে আরো একবার আড্ডাময় বিকেলটা ছুঁয়ে আসা। বহু বছর পরে একটা বিকেলবেলায় আবার সে বিকেলটায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে।
  • de | 69.185.236.51 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৮:৪১599050
  • ফুটকি -- কি ভালো যে হচ্ছে-- নষ্টলজি চাগিয়ে উঠচে!
  • phutki | 131.242.63.60 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৯:০১599051
  • এরপরের ধাপ অন্য স্কুলে নেমন্তন্ন করতে যাওয়া। আবার একবার স্কুল থেকে বেরোনোর সুযোগ। এখন ভাবলে বুঝতে পারি না, অত্ত উৎসাহ কেন ছিল আমাদের। হাতিঘোড়া কোনো ব্যাপার তো না। কিন্তু এবারে আমার আর কোনো চান্সই রইল না। পরেরদিন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে একটা সিম্পোজিয়ম আছে। আমি স্কুল রিপ্রেসেন্ট করব। আমাকে পরিষ্কার ভাবে বলে দেওয়া হল, যতই বল না কেন, এই রোদ্দুরে তোমাকে বেরোতে দেওয়া হবে না। বেশি ঝামেলা কোরো না। পুজোর বাজারের দিন তোমাকে নিয়ে যাওয়া হবে। সুতরাং আমি তাকিয়ে রইলাম সেই বাজার করতে যাওয়ার দিনের দিকে।
    পুজোর আগের দিন সাজ সাজ রব। কাজটাজ গুলো দিদিমণিরাই করতেন।আমরা কেমন লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে প্রমাণ করতাম যে পুজোটা আমরাই করলাম। বছরবছর ঐ হৈ হল্লার সুযোগটুকুই দেওয়া হত ক্লাস নাইন কে। তো স্কুল সাজানোর সময় দেখা গেল আমি কাগজের ফুল দারুণ বানাতে পারছি। সারাদিন ফুল বানিয়ে কাটলো। শেষবেলায় আমি হাত চালিয়ে বানিয়ে চলেছি। আরো অনেকগুলো কাগজ তখনও বাকি। তখুনি শেষ না করলে বাজার যাব কি করে? ওটা তো আমাকে প্রমিস করা হয়েছিল। আমাঅকে নিয়ে যাবেনই ইরাদি।

    তখন সাড়ে তিনটে বাজে। কৃষ্ণকলিদি এসে জানতে চাইলেন, "কি রে আর কতক্ষণ? বাড়িতে খবর দিতে হবে? কাউকে দিয়ে খবর পাঠাবো যে দেরি হবে? " আমি বললাম "না, মা তো জানে আমি বাজারে যাব।" উত্তর এল, "বাজার? ওরা তো এই মিনিট পাঁচ বেরিয়ে গেল। তোর যাওয়ার কথা নাকি? " আমার কাগজ কাটার কাঁচি তখন হাতেই ধরা। চোখ থেকে টপটপ জল পড়বে প্রায়। আমি, যে কিনা স্কুলের সব কিছুতে সব ব্যাপারে এত্ত এত্ত ইন্ভলভ্ড, সেই আমাকে নিয়ে গেল না। পুরো পুজোতে শুধু ঠাকুর অর্ডার করা আমার কাজ? চোখ জলে ভর্তি। মুখে বাক্যি নেই। কৃষ্ণকলিদি খানিক চুপ থেকে বললেন, "ঝটপট ওঠ। বেশি দূর যায়নি ওরা। আমরা দু'জনে ঠিক ধরে নেবো।"
    লাফিয়ে উঠে ফুলের দায়িত্ব ধরালাম শান্তশিষ্ট আরেকজনকে। তারপর দু'জনে মিলে বাজার।

    আমার ছোটোবেলাটা এইসব মানুষজনেই ভর্তি। কৃষ্ণকলিদিকে কিছু বলতে হয়নি, আমার মুখ চোখ দেখেই সঙ্গে সঙ্গে শুধু আমার জন্য উনি ছুটলেন। ভালবেসে এঁরাই আমাদের সময়টাকে সুন্দর করে দিয়েছেন। আমার গরীব স্কুলটাকে তাই আজও আমি ভালবাসি।
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৯:৪৫599052
  • ফুটকি-র লেখা খুবই ভালো হচ্ছে। মাইল যাচ্ছে।
    আমার বাড়িতে পুজো হত। এইট নাইন অব্দি বোধ হয়। তারপর প্রবীর ঘোষ, ইস্পাত, জন রিড এবং বাবা মাকে চ্যালেঞ্জ। বন্ধ হয়ে গ্যালো।
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৯:৪৬599053
  • দূর, মিলে যাচ্ছে হবে।
  • sosen | 111.63.247.229 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৯:৫০599055
  • আমার সরস্বতী পুজোর কোনো স্মৃতি নেই। কোনদিন অঞ্জলি দিই নি। অবশ্য কোনো পুজোয়ই অঞ্জলি দিই নি। তবে আমার টিন-এজ বড় ধুলোট। রংচঙে এই ছোটবেলাটা দূর থেকে চিনি। ভালো লাগছে, ফুটকি।
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৯:৫৮599056
  • চিন্ময় স্যার। ইংরেজি পড়াতেন। একই সাথে পড়ালেন ইন টাইম অব দা ব্রেকিং অব দি নেশন আর ওরা কাজ করে। কোনো প্রসঙ্গে হলুদ সাংবাদিকতা-র কথা ওঠায় আমি গোএবেল্স এর নাম বলে ওঁর প্রিয় হয়ে যাই, নাইন হবে। ব্যাপক হ্যান্ডু, ফর্সা রং, নীল চোখ, দুপায়ে গলার মত শট, আমি ডিফেন্সে খেলতাম, ওনাকে আটকাতে হত আলাদা করে, তখন উনি পঞ্চান্ন হবেন।
    পুরনো হেড স্যার মহাবীর বাবু রিটায়ার করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চিন্ময় স্যার। আমরা ক্লাস ইলেভেন। সরস্বতী পুজো। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে খাবার দিতে দিতে, প্রথম ব্যাচে এক গাদা কচি কাচা বসেছে, ওয়ান টু। বন্ধুদের মেজাজ খারাপ, বাছা গুলি কাকু কাকু বলে ডাকায়। আমার অভ্যেস ছিল, মাসির নাতনি আমার চেয়ে মাত্র সাত বছরে ছোট। খিচুরী, লাবড়া চাটনি পাপড় দিয়ে যাচ্ছি। স্যার ঘুরে ঘুরে দেখছেন। ধাক্কা,এবং একহাতা খিচুরী সাদা ধবধবে লাকসতে টি শার্ট এর হাতায়। প্রচন্ড কাঁচু মাচু অবস্থায় কিছু বলতে যাচ্ছি, একগাল হেসে বললেন - বাঁচালি, বুকে গিয়ে বলতে পারব কাজ করেছি!
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২০:০০599057
  • বাঁচালি, বৌকে গিয়ে বলতে পারব কাজ করেছি!
  • sosen | 111.63.247.229 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২০:২০599058
  • কিছুদিন পাথর কাটা শিখেছিলাম। পাথর সব সময় পেতাম না, তাই ইঁটের উপর মকশ করতাম। তখন আমরা সবে রাজারহাটে এসেছি। নিউ টাউন বলে কিছু তখনও হয়নি। চতুর্দিকে ধু ধু ধানক্ষেত, ইঁটখোলা । বিকেলে তিন চার বাসস্টপ হেঁটে সবচেয়ে কাছের লাইব্রেরি যেতে পড়ত এক জংলা জায়গা, সেখানে এক পরিত্যক্ত কুয়োর গা ঘেঁষে একলা নারকেল গাছ। তার গোড়া জুড়ে আম-আদার সাম্রাজ্য। হলুদ প্রজাপতির মেলা। ছোট ছোট বেগুনি বুনো ফুল, উড়িয়ে নেওয়া হাওয়ায় শুয়ে পড়া বড় বড় ঘাস। এদিক ওদিক উঁচু হয়ে রয়েছে ইঁটের টুকরো। সেই কুয়োর পাশে বসে লাইব্রেরি যাওয়ার পথে এক শনিবারের বিকেলে অমন একখানা ইঁটের ওপর এক অতিক্ষুদ্র ছেলেমানুষী সরস্বতী খোদাই করেছিলাম। তুলতে পারিনি ইঁটটা মাটি থেকে। তার চারপাশে ফুল ফুটেছিল। বর্ষার কাদাও ম্লান করেনি তাকে, অনাদরের পূজায় খুশি ছিল সে, অনেক, অনেক দিন। লাইব্রেরি আসা যাওয়ার পথে তার দিকে তাকিয়ে এক তালিশমান বুকের ভিতরে নিয়ে হেঁটে যেতাম।
    মাধ্যমিকের সময় অনেকদিন লাইব্রেরি যেতে পারিনি। তারপর যেদিন গেলাম, দেখলাম বুলডোজার হেঁটে গেছে আমার লুকোনো সাম্রাজ্যকে গুঁড়িয়ে। আম-আদা নেই, প্রজাপতিরা ক্যামনতর দিশাহারা হয়ে এদিক ওদিক ভ্যাবলা মার্কা উড়ান দিচ্ছে।
    কষ্ট ঠিক হয়নি। ছিল, নেই, মাত্র এই। কেউ জানতই না তার কথা। মাকে একবার দেখিয়েছিলাম, মা ভুলেও গিয়েছিল।
    তবে আজও শ্বেতবর্ণা কমলাসনাকে ম্লান করে দেয় খুদতে থাকা ইঁটের লাল ধুলো।

    হয়ত অপ্রাসঙ্গিক। তাও---
  • | 24.97.117.23 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২০:২৬599059
  • এই ফুটকিসোনাটা ভারী ভাল লেখে তো!
  • Abhyu | 107.89.18.117 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২০:৩২599060
  • এই চিন্ময় স্যার। এখনো কল্যাণী গেলে দেখা করার চেষ্টা করি। বাংলা ইংরেজী পাশাপাশি পড়াতেন। নতুন স্কুল বিল্ডিং দাঁড় করানোর পিছনে ওনার পরিশ্রম ভোলার নয়। একবার ওনাকে বলা হয়েছিল পুজোর পুরোহিত হতে। বললেন কোনো অসুবিধে নেই, ব্রাহ্মণের ছেলে, পৈতেও আছে, তবে মন্ত্রটা ইংরেজীতে বলব, এই যা।
  • Abhyu | 107.89.18.117 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২০:৩৬599061
  • কৃশানু, তোরা দুপুর বারোটার সময় পান্নালাল, সেন্ট্রাল মডেল, বিধান মেমোরিয়ালে সরস্বতী পুজোর নেমন্তন্ন করতে বেরোতিস না সাইকেলে করে? ক্যারিয়ারে গার্লফ্রেণ্ডকে বসিয়ে? জয়শ্রী মিসের পার্মিশেন নিয়ে??
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২০:৪০599062
  • তা বেরোতাম বটে :-)
  • phutki | 24.96.152.16 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২১:৫১599063
  • এই । এই নেমন্তন্ন করতে যাওয়াটা আমার পুরো মিস গেছে।

    কৃশানুর সাথে আমার বেশ অনেক অভিজ্ঞতাই মিলে যায়। একটা হালকা কুম্ভমেলা কানেকশন আছে। :)

    সোসেনের হারানো সরস্বতীর জন্য দুঃখটা মন কেমন করে দিল।

    দমদি, :-)
  • phutki | 24.96.152.16 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২১:৫৩599064
  • পুজোর দিন সকাল। সকাল ছটায় ভবতারণ জেঠুর বাড়ি অঞ্জলীটা ঠিক সেরে নিয়েছি। শাড়ি টাড়ি পরে গুছিয়ে স্কুল। সঙ্গে মনে হচ্ছে পাড়ার আরেক বন্ধুও গেছিল। আনন্যা এসে গেছে। আমার জীবনের সব পর্বে এই অনন্যার উপস্থিতি মাস্ট। আজও। এমন প্রাণের বন্ধু আর দুটি পেলাম না। সবরকম মাংকি বিজনেসে আমরা সঙ্গী।

    ফল কাটতে পারিনা। তাই চন্দন বাটা, প্রদীপ সাজানো আর চূড়ান্ত রকমের ফোঁপর্দালালি চলতে লাগলো। জনা কুড়ি মেয়ে কাজ করছি। যে যাকে পারছে জ্ঞান দিয়ে নিচ্ছে। ঠাকুর্মশাই আসলেন সকাল দশটায়। পুজো আমরা করেছি, কিন্তু ঠাকুরমশাই আসার আগে অবধি আমরা জানতাম না কে তিনি। কেই বা তাঁকে ডেকেছে , কখন এ বা তিনি আসবেন, পুরো অন্ধকারে। তবুও মনে রাখতে হবে যে ক্লাস নাইনই পুজোটা করেছিল।

    কয়েক্জন স্থানীয় দিদিমণিরা এসে গেলেন। পুজোটা কিন্তু দারুণ জমকালো হল। ঘরোয়া পুজোর মত না। ধূপধুনো , শাঁখের আওয়াজ ,পরিষ্কার মন্ত্রোচ্চারণ বেশ সুন্দর আবহ তৈরী করে দিয়েছিল। পুজো শেষে মনটা খুশ হয়ে গেল। আস্তে আস্তে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। আমরা যারা সকাল থেকে এসেছিলাম তারা এবার একটু ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আরাম করছি। মাঝে রান্নার তদারক করে এলাম। স্কুলের কলের জলেই রান্না হচ্ছে। তখন আবার আর্সেনিক আর্সেনিক করে খুব রব উঠেছিল। সর্ব্বাণীদিকে গিয়ে ধরলাম। "ও দিদি, এই জলে রান্না হবে?" আসলে সব বাড়িতে আতুপুতু মেয়ের দল। সর্ব্বাণীদি খুব সিরিয়াস মুখ করে বললেন। "আগে আমি খেয়ে নেব। যদি আধঘন্টাতেও না মরি, তবে তোরা খাবি"।

    আমাদের পুরো দলটা তখন এসে গেছে। বাইরের মাঠে আড্ডা মারছি। আর "ঝারি মারছি"। এই শব্দ টব্দ গুলোর সাথে এই সময় থেকেই পরিচয়। এক এক্জনের মুগ্ধ দৃষ্টি ছুঁয়ে যাচ্ছে কাউকে, আর বাকিরা তার মজা নিচ্ছে। কেউ অপেক্ষায় আছে চেনা হাসি কখন আসবে। কেউ বারবার ঘড়ি দেখছে। আমাদের সেই পাঁচজনের দল থেকে একজন আস্তে আস্তে হেঁটে গেল একজনের দিকে। তাকে নিয়ে এগিয়ে এসে বলল, "তোদের না ওর কথা বলা হয়নি। আজ ই একেবারে আলাপ করিয়ে দিলাম।" যাঃ একটা উইকেট ডাউন। বাল্যপ্রেমে অভিশাপের ফর্মুলা মেনে এই প্রেমটিও কেঁচে যায়। তবে সেই "ও" এর সাথে আমার ভারি ভাল সখ্য গড়ে ওঠে ।আজও সেই দাদা আমার বোন হিসেবেই সবার কাছে আমার পরিচয় দিয়ে থাকে।

    বেলা বাড়ে। আমাদের বন্ধুরা আসে। মানে অনেক আসে আরকি। সবাই আসে না। দুপুরে খাওয়ার সময় হয়। পরিবেশন করি। খাই। একটু আনমনেই। ক্লান্তি লাগতে থাকে। অনন্যা রেগেমেগে বলল, "এত বার করে আসতে বলাই উচিত হয়নি। জানতাম । তুই বাড়ি যা" । একা একা ফিরি বাড়ির দিকে। হাঁটা পথ। সারাদিন বাদে কেমন ঝিমিয়ে গেছি। হঠাৎ সামনে চেনা চোখ।
    -" কি রে? হুল্লোড় শেষ?"
    -"এলি না কেন?"
    -"মেয়েদের স্কুলে যাই না। এই তো এখানে মানসের বাড়ি এসেছিলাম, ফিরে যাচ্ছি"
    -"ফিরে যাচ্ছিস তো সাইকেল দেওয়ালে হেলান দেওয়া কেন? "
    -"তোকে অত কৈফিয়ত দিতে পারবো না। বাড়ি অবধি এগিয়ে দিচ্ছি। বাড়ি যা। একা একা তো বাংলার পাঁচের মত মুখ করে হাঁটছিস।"
    বাড়ি অবধি এতোল-বেতোল বকবক আর হাঁটা।

    এটুকুই। বিকেলটা হেব্বি ফুরফুরে হয়ে গেল। আবার সেজেগুজে মামাবাড়িতে হল্লা করতে ছুটলাম।

    তারপরের অনেকগুলো বছর সরস্বতী পুজো হল। সময়ে দেখা, অসময়ে দেখা হল।সাইকেল , বাইক , চারচাকার দিন পেরোল।তবুও সেই প্রথম পুজোর একসাথে হাঁটার ম্যাজিকটা আজও অন্য রকম।

    এই সাইকেলওয়ালাকে দিয়েই কাল চেন্নাইএর বাড়িতে সরস্বতী পুজো করাবো। সে ব্যাটা আবার বামুন কিনা!
  • চান্দু মিঁঞা | 127.193.44.252 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২১:৫৫599066
  • স্কুলের মাস্টারমশাই আর দিদিমণিদের নিয়ে একটা টই খোলেন। দারুণ হিট হবে। সবার কাছেই বলার মতন গপ্পো আছে।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন