এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • ''দ্যা ব্ল্যাক অবিলিস্ক''-- এরিক মারিয়া রেমার্ক

    ওপু
    বইপত্তর | ১৬ এপ্রিল ২০১৩ | ২৫০৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ওপু | 24.96.159.97 | ১৬ এপ্রিল ২০১৩ ১৯:৫৪601663
  • দ্যা ব্ল্যাক অবিলিস্ক। অনেকেই হয়তো পড়েছেন, ১৯৫৬’তে বইটি বার হয়। যারা পড়েননি, পড়ে দেখতে পারেন, মন্দ লাগবে না। আমি বইটি ধরলাম আর শেষ করলাম কাল সারা রাত ও আজ দুপুর মিলিয়ে। এরিক মারিয়া রেমার্ক বিখ্যাত হয়েছেন বোধহয় ‘অল কোয়াইট অন দ্যা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ লিখে।
    প্রথম মহাযুদ্ধে জার্মানির পক্ষে লোড়তে যান। মহাযুদ্ধের সময় যে ভাবে দাড়ি গোঁফ না গজানো ছেলেদের ধরে ধরে যুদ্ধ ক্ষেত্রে পাঠানো হত, এরিকও সেইসব ছেলেধরাদের ফাঁদে পড়ে যুদ্ধে জড়িয়ে যান। সৈনিক হিশাবে প্রথম মহাযুদ্ধের অভিজ্ঞতা ও সাংবাদিক হিশাবে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অভিজ্ঞতা দুটিই তাঁর ছিল। দেশদ্রোহী উপাধি পান, দেশ ছাড়া হন, তার বোনের শিরচ্ছেদ হয়, হিটলারের বই শ্রাদ্ধ করা ফেসটিভালে তাঁর বইয়েরও স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটে।

    দ্যা ব্ল্যাক অবিলিস্ক’এর গল্পটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালের সময়কে ভিত্তি করে এগিয়ে যায়। যুদ্ধের পরবর্তী কালে জার্মানির উপর ভারসাই সন্ধি বা, সাধারণ নাগরিকদের উপর প্রায় প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে আকাসে উঠতে থাকা মুদ্রাস্ফীতি কি প্রাভাব ফেলেছে, তার উপর এই ফিকশান নভেলটি অনেকটা রেখাপাত করে। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড অর্থনৈতিক দুরাবস্থার সুযোগে উগ্র জাতীয়তাবাদ, ক্যাথলিকদের ধর্মীয় হিংস্রতা, যুদ্ধ ফেরত বিকলাঙ্গ সৈনিকদের মানসিক ও শারীরিক বীভৎসতা, হিটলারের উত্থান ও ইহুদী বিদ্বেষ হালকা করে ছুঁয়ে গেছে। গল্পের কেন্দ্রীয় চরত্র লাডউইগ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তার সঙ্গী জর্জের সাথে জর্জের পারিবারিক ব্যবসা কবরের উপর পাথরের স্মৃতিস্তম্ভ বা সৌধ তৈরির কাজে করে। তার দৈনন্দিন জীবনযাত্রা দিয়ে বয়ে চলে তাৎকালীন জার্মানির সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানস্তাত্মিক পরিবেশ। কমেডি ট্র্যাজেডি দুটিই বর্তমান। গল্পটি এমনভাবে এগিয়ে চলে যেন লেখক তারই জীবনী লিখে চলেছেন।
    এরিকের আর কোন বই পড়িনি, তবে দ্যা ব্ল্যাক অবিলিস্ক পড়ার পর অন্যান্য লেখা গুলির উপর সাংঘাতিক আগ্রহ জেগেছে।
  • Ishan | 214.54.36.245 | ১৬ এপ্রিল ২০১৩ ২০:২০601674
  • ব্ল্যাক অবেলিস্ক আমার পড়া রেমার্কের শ্রেষ্ঠ বই। এর পরেই আসবে ওই রেসিং কার-ড্রাইভার আর স্যানেটোরিয়াম-বাসিনীর আক্যানটি। যার নাম ভুলে গেছি। টাইম পেলে দু-পয়সা দেব।
  • kk | 78.47.250.76 | ১৬ এপ্রিল ২০১৩ ২০:২২601685
  • ঈশান কি 'থ্রী কমরেড্‌স' এর কথা বলছিস? এটা আমার খুব প্রিয় বই।
  • ওপু | 24.96.159.97 | ১৬ এপ্রিল ২০১৩ ২০:৩১601696
  • দুই কেন পাঁচ ছয় সাত আট ছাড়ুন...। গুরুতে ভয়ংকর ভয়ংকর গ্রন্থকীট আছেন, পছন্দের বই একটু রিভিউ করুন। জানি ও পড়ি।
  • Ishan | 214.54.36.245 | ১৬ এপ্রিল ২০১৩ ২০:৩৪601707
  • না থ্রি কমরেডস না। এইটাতে ছেলেটি রেসিং কার ড্রাইভার ছিল। আর তার টিবি আক্রান্ত বান্ধবী থাকত অনে হয় সুইজারল্যান্ডের স্যানেটোরিয়ামে।
  • Blank | 180.153.65.102 | ১৬ এপ্রিল ২০১৩ ২০:৩৮601718
  • হেভেন হ্যাস নো ফেভারিট
  • শঙ্খ | 118.35.9.186 | ১৬ এপ্রিল ২০১৩ ২০:৪৪601724
  • বিংগো!
  • Ishan | 202.43.65.245 | ১৬ এপ্রিল ২০১৩ ২১:০১601725
  • রাইটো।
  • Ishan | 202.43.65.245 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০০:২৩601726
  • হ্যাঁ, যা বলছিলাম, ব্ল্যাক অবেলিস্কের মতো লেখা অন্য কোনো ভাষায় অন্য কোনো সময়ে লেখা আদপেই সম্ভব ছিলনা। বিষদবিলাসী লোকজন চাঁদের উল্টোপিঠ নিয়েই যাদের কারবার, এরকম গুচ্ছের লেখক আমরা দেখেছি। আমাদের নিজেদেরই তো জীবনানন্দ ছিলেন। কিন্তু এই বিপুল ব্যাকড্রপ জীবনানন্দের ছিলনা। একদিকে মুদ্রাস্ফীতি। দু বছরের মধ্যে বোধহয় এক মার্কের মূল্য ফুলে ফেঁপে এক লক্ষ মার্কে দাঁড়ালো। তার উপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত। বোমার আতঙ্কে পাগল হয়ে যাওয়া মানুষরা। হিটলারের উত্থান। কমিউনিস্টদের সঙ্গে মারপিট। সে এক বিদঘুটে ব্যাপার। পুরোটাই বাস্তব কিন্তু আনরিয়েল। কেরানি বুড়ো সারাজীবন ফিক্সড ডিপোসিটে টাকা জমিয়ে সুদ সমেত যা টাকা হাতে পেল, তা দিয়ে একটা পাঁউরুটিও কেনা যায়না। ভদ্রলোক বুড়ো-বুড়ি কিইবা করতে পারে তখন, আত্মহত্যা ছাড়া? দরজা-জানলা বন্ধ করে তারা বাড়িতে রান্নার গ্যাস দিল ছেড়ে, সুইসাইড নোটে গ্যাস কোম্পানির কাছে করে গেল দুঃখপ্রকাশ, ফালতু অসুবিধেয় ফেলার জন্য। ওঅদিকে শ্রমিকদের মাইনে দেওয়া হত দিনে দুবার। দুপুরে খাবার জন্য একবার। পুরোটা একেবারে দেওয়া হতনা, কারণ আজকে দুপুরে মজুরির যা মূল্য, সন্ধ্যেবেলায় তা দিয়ে আর একপিস আলপিনও কেনা যাবেনা।

    এর বিদঘুটে ব্যাকড্রপে, কাহিনীর নায়ক, সে করে কবরখানার স্মৃতিস্তম্ভের ব্যবসা। লোকে মরে গেলে তাদের সেসব বিক্রি করতে হয়। আর খুব সাবধানে আদায় করতে হয় টাকা, শোকসন্তপ্ত পরিবারের কাছ থেকে টাকা মার যাবার চান্স খুবই বেশি। আছে একজন কফিন কারিগর। একজন কসাই, যে পরে নাৎসি হবে। তার প্রাণাধিক প্রিয় বৌ আবার খোলা জানলা দিয়ে ঝুমঝুমি দোলানোর আনন্দে দুলিয়ে থাকে নিজের স্তনদ্বয়। এমনিতেই রেমার্ক বহুত বহুত মর্বিড। মৃত্যুতে আচ্ছন্ন পুরো। এই ব্যাকড্রপ আর কফিনের কারবার পেয়ে এক্কেবারে খুলে খেলেছেন। পড়লে খানিকক্ষণ থ হয়ে থাকতে হয়। সংসার পৃথিবী জীবন এসবের উপর অবিশ্বাস আসে। মালুম হয়, জীবন অনিত্য।
  • Tim | 105.59.87.151 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০০:২৮601664
  • কাকে কাকে ক দেব বুঝে পাচ্ছিনা। আপাতত মামু লিখুক। তারিয়ে তারিয়ে পড়ি।
  • kc | 188.61.96.29 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০০:৪২601665
  • ভালো লাগছে।
  • উগহ্গো | 69.93.199.83 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০১:৫২601666
  • মামু গো , তুমি তিনমুল হয়েঅ ঠিক বলচো গো।
    আমি শালা কি বাই পড়ি। আজকাল কেউ লেখেনা।
  • | 126.202.96.94 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০১:৫৮601667
  • পড়তে হবে তো। থ্যাঙ্কু।
  • Ishan | 214.54.36.245 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০২:১৮601668
  • এই সেই অদ্ভুত জগৎ, যেখানে গির্জার সঙ্গে থাকে মানসিক চিকিৎসালয়। যেখানে কিছু রোগি থাকে নরকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ট্রেঞ্চ থেকে যারা বেরোতে পারেনি। মুহুর্মুহু তাদের কানের কাছে ফাটে শেল। ছিটকে আসে গ্রেনেড। আর্টিলারি কামান দাগে। আর তারা ভয়ে লুকিয়ে পড়ে ট্রেঞ্চে। অন্যদিকে থাকে মেই মেয়েটি। যার নাম ইসাবেলা। সে নায়ককে কখনও ডাকে রুডলফ কখনও র‌্যালফ। চুমু দেয়। আদর করে। প্রেম? এই মড়কের বাজারে কোনটা প্রেম কোনটা নয় কেইবা জানে। ফিরে এসে তো আবার সেই কবরের কারবার। সে বড়ো মজার বিজনেস। ব্যাঙ্ক থেকে ধার নিয়ে কেনা হয় গুচ্ছের কবর-পাথর। এক মাস পরে শোধ দেওয়া হবে দাম। একমাস পরে যত টাকা দিতে হয়, তা দিয়ে, হ্যা হ্যা একটা পোস্টকার্ডও কেনা যায়না। জালিয়াতি? হতেও পারে। এই মড়কের বাজারে কে আর ওসবের হিসেব রেখেছে।

    এক বুড়ো আসে প্রায়ই। দরদাম করে পাথরের। সেষ পর্যন্ত কেনেনা। তার স্বপ্ন হল তার শেষযাত্রায় যে মিছিল হবে তা শহরের সব শবযাত্রাকে ছাপিয়ে যাবে। সে নানা ক্লাবের সদস্য হয়ে চলে। এমনকি রাইফেল ক্লাবের অবধি। কারণ রাইফেল ক্লাবের মেম্বাররা অন্য মেম্বারদের শেষযাত্রায় বন্দুক ছুঁড়ে শোক জানায়। পাগলামি? হলেই বা কি। এই মড়কের বাজারে এইটুকু পাগলামি করতে পারবেনা লোকে?

    আছে প্রেমিকারা। তারা ফটাফট হাতবদল হয়। আংটির জন্য, মাংসের জন্য। আছে বন্ধুত্ব। যুদ্ধের বাজারে একজন আরেকজনের প্রাণ বাঁচিয়েছিল। দি্তীয়জন সে ঋণ কক্ষনো ভুলবেনা বলেছিল। প্রথমজন তাই তার রেস্তোরায় এসে ঠেক গেড়ে বসে আছে। যতদিন বাঁচবে ততদিন খাবে। রেস্তোরামালিক গজগজ করে। ব্যাটা চুষে খেল আমায়। কিন্তু ওই আরকি। এই মড়কের বাজারে প্রেম ও বন্ধুত্ব এরকমই। ছিটকে ও ছড়িয়ে থাকা। বহুতলের নিচে যেমন পড়ে থাকে ছেঁড়া কন্ডোম। সিঁড়ির নিচে থাকে বিড়ির দোকান।
  • Ishan | 202.43.65.245 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০২:৩৩601669
  • এখানে ফুর্তি আর উইট আছে প্রয়োজনের বেশি। কবিরা দলবেঁধে যায় পতিতাপল্লী। উফ সে এক মজার গপ্পো। এটা অন্য বইয়েও থাকতে পারে। কিন্তু লিখেই দিই। আটকাচ্ছে কে। যুদ্ধে যাবার আগে ইশকুল বালকরা, তারা কেউ কেউ সেদিনই প্রথম দাড়ি কেটেছে, দল বেঁধে গেল "পুরুষ" হতে। ক'পয়সা দেব? শুনে মুখের দিকে তাকায় মেয়েটি -- হ্যাঁরে তুই রলফ না? এই তো সেদিন ইশকুল পালিয়ে এখানে এসে হোম-ওয়ার্ক করতিস? গম্ভীর হয়ে রলফ বলে, তাতে কি? এখন আমি বড়ো হয়েছি? মেয়েটি আরও চাট্টি মেয়েকে ডেকে নিয়ে আসে। শোনো শোনো এ মাল বলে বড়ো হয়েছে। হ্যা হ্যা হ্যা। কই দেখা দেখি কতো বড়ো হয়েছিস?

    ওরা যুদ্ধে যায় "পুরুষ" না হলেই। অগত্যা। সাতদিনের মাথায় মারা যায় চেলেদের দঙ্গলের তিনজন। নারীর স্তন ছুঁয়ে দেখার সুযোগ তাদের আর হয়নি। সে জীবনে।

    কিন্তু এসব প্রাগৈতিহাসিক যুগের গপ্পো। যুদ্ধের আগের। শহরে ফিরে এসে ওদের এখন বেশ বন্ধুত্ব। ভাবসাব। কবিরা দলবেঁধে যায় পতিতাপাড়ায়। মর্ষকামীদের স্বপ্নসুন্দরী যে, তার নাম, কী যেন, ধরা যাক ঘোটকিনী। ঘোটকিনী নিয়ে যায় আনকোরা ছেলেটিকে। তারপর ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দেয়। বাকিরা গপ্পোসপ্পো করে। হা হা হি হি ও ফুর্তিফার্তা।

    মেয়েরা আসে। মেয়েরা যায়। নায়ক দ্বিতীয়বার লেঙ্গি খেলে পাথরের কারবারের সহকারী বলে, মেয়েদের সঙ্গে ঝগড়াঝাটিতে একেবারে ঢুকবেনা। যা বলে বলুক, কানে নেবে কিন্তু মনে না। এইরকম কিছু কথা। শুনে ছেলেটি রেগে যায়। -- মনে হচ্ছে তুমি কোনোদিন মেয়েদের সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়োনা?

    -- তা পড়ি। কিন্তু তাতে করে আমার জ্ঞানদান আটকে থাকেনা।

    শুনে হ্যাহ্যা করে হাসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকেনা। কী নাম যেন জ্ঞানদাতার। অটো? গ্রেগরি? কে জানে। সে তারপর ঝুমঝুমির মতো করে স্তন দোলানো কসাইয়ের বৌয়ের সঙ্গে মাল খেতে চলে যায়। পাড়ার রাস্তা দিয়ে মেয়ের দল, কাঁকন বাজিয়ে পায়ে রূপোর মল। এই মড়কের বাজারে এইটুকু ফুর্তি না হলে লোকে বাঁচবে কিকরে?
  • Ishan | 214.54.36.245 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০২:৪৪601670
  • গীর্জার যাজক খ্রিষ্টের উপর অটল বিশাসে বসে থাকেন। বিজ্ঞানী ডাক্তার বিজ্ঞানে অটল। প্রেমিক-প্রেমিকারা কবরের পাথরের আড়ালে শরীর করে। স্যালভেশন আর্মি তাদের উদ্ধার করতে সদলবলে এসে রাত-বিরেতে কোরাস গায়। চেলেমেয়েরা তিতিবিরক্ত হয়ে পালিয়ে যায়। কফিন কারিগর কূর্টের কপালে বান্ধবী জোটেনা। কফিন বানায় শুনেই মেয়েরা নাকি নিচু চোখে তাকায়। তার উপর সে ব্যাটার কোনো বিছানাও নেই। যখন য কফিন বানায় তার ভিতরেই শোয়। শেষমেষ জুটেছিল একজন, সে কফিনে শূয়া পছন্দই করত। কিন্তু মধ্যরাতে কফিনের ভিতর কে যেন চুল টেনে ধরল। ব্যস ভুতের ভয়ে সে ভাগলবা। আসলে ওটা ছিল কাঁচা রঙে আটকে যাবার কেস। কিন্তু কে কাকে কি বোঝায়।

    আর এসবের মধ্যেই নাৎসিরা বেড়ে ওঠে তিলতিল করে। রাস্তায় রাস্তায় খন্ডযুদ্ধ। হাইল হিটলার। যুদ্ধের ইতিহাস জাস্ট ভুলে যায় লোকে। আর বাড়তে থাকে মুদ্রাস্ফীতি। মার্ক মূল্যহীন। রোজ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে জিনিসের দাম। গাণিতিক হারে। শুধু রোব্বারে বন্ধ থাকে মুদ্রারাক্ষসের বাঁদর লাফ। সেদিন ঈশ্বরের ছুটির দিন। স্টক মার্কেট বন্ধ।
  • Ishan | 202.43.65.245 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০২:৫৫601671
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এই আখ্যানে নেই। তিনি আসছেন, তিনি আসছেন, এই ভাবটুকু আছে। তাইই কাফি। তিনি যখন সত্যিই এলেন, লেখক তথা নায়ক তথা সুইজারল্যান্ডে। যুদ্ধের গপ্পো তাই এই আখ্যানে নেই। রেমার্কের শ্রেষ্ঠ আখ্যানগুলিতে যেমন হয়। অল কোয়ায়েট ছাড়া আর বোধহয় কোথাওই সরাসরি যুদ্ধ নেই। নাঃ আরেকটাতে আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। রাশিয়ায়। সেখানে প্রেম ছিল তীব্র। কেন জানিনা। সেখানে শরীরও তীব্র। প্যাশান প্রচন্ড। যুদ্ধ ঠিক বুঝিনা। দেখিনি কখনও। যুদ্ধে বোধহয় এরকমই হয়। সব কিছু ভেসে যাচ্ছে, উল্টে যাচ্ছে পানপাত্র, পটকে যাচ্ছে শিলালিপি, মোজেসের বাণীসকল, কিসের সম্পর্ক, কীসের নমেনক্লেচার। গেলে যা এলে আয়। আর শেষমেষ আসে যদি কেউ, টিকে যায় বাই চান্স, তাকে আঁকড়ে ধরতে হয় শেষ প্যাশনবিন্দু দিয়ে। যতক্ষণ না মৃত্যু এসে সেই মুঠি আলগা করে।

    তা, এসব অবেলিস্কে নেই। যুদ্ধের সময় লেখক সুইজারল্যান্ডে। যুদ্ধের পর কী হল সেটুকু শুধু জানা যায় কয়েকটি লাইনে। কসাইয় নাৎসী হয়ে গিয়ে খুন করে বৌয়ের প্রেমিককে। গীর্জার যাজক বহু ইহুদির প্রাণ বাঁচান। আরও কী কী যেন হয়, সবই মৃত্যুর খবর। কিন্তু সবচেয়ে বড়ো খবর যেটা, সেটা হল, যে শহরে লেখকের কৈশোর আর যৌবন কেটেছে, সেখানে মাত্র কটা বছর পরে এসে, তিনি আর কিছু চিনতে পারেন না। রাস্তা হারিয়ে ফেলেন। ভাবা যায়?

    কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন শেষ হয়ে গেছে। আর যুদ্ধ সব কিছু বদলে দেয়, কে না জানে।

    (সেশ)
  • ranjan roy | 24.96.71.192 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০৩:০২601672
  • ঈশানকে ডিস্টার্ব করছি না, কিন্তু আগের বইটা "থ্রি কমরেড্স" বটে!

    তিনবন্ধু, একজনের গাড়ি মেরাম্মতের গ্যারেজে তিনবন্ধুই সময় কাটায়। নায়কের নাম রবার্ট, ডাক নাম বব। একবন্ধু সোস্যালিস্ট, নাজিদের সঙ্গে হাতাহাতিতে মারা যায়। দুই বন্ধু ঘাতককে খুঁজে বেড়ায়। ওরা অনেক গাড়ির কলকব্জা জোড়াতালি দিয়ে একটি পাওয়ারফুল ইঞ্জিন ওলা রেসিং কার বানায়। নায়িকা টিবি রোগী। ওর চিকিৎসার জন্যে অন্য বন্ধুটি ঐ প্রাণাধিক প্রিয় গাড়িটি বিক্রি করে পয়সা পাঠায়। কিন্তু মেয়েটি স্যানেটোরিয়ামে মারা যায়। আর ওদের মদের ঠেকে একজন যুদ্ধে বেঁচে ফেরা স্ন্যায়ুবিকল সাথী রোজ মদ খেতে খেতে মনে করে সেই তারিখে গত বছর কোন জায়গায় কামানের গোলা ফেটে কে মারা গেছল!
    অসাধারণ বই।
  • pi | 78.48.231.217 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০৪:০৯601673
  • 'পুরোটাই বাস্তব কিন্তু আনরিয়েল'।
  • Ishan | 60.82.180.165 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০৮:৫৪601675
  • না রঞ্জনদা ওইটা হেভেন হ্যাজ নো ফেভারিটস ই। সেখানে দুটিই প্রধান চরিত্র। একজন রেসিং কার চালক। অন্যজন তার প্রেমিকা। স্যানিটোরিয়ামবাসিনী।
  • ওপু | 24.99.186.131 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ১৪:৪৯601676
  • ঈশান বাবুকে অনেক হাত তালি দারুন লিখেছেন। বুড়ো বুড়ি গ্যাস টেনে আত্যহত্যা করেনি, যদিও তাদের উদ্দেশ্য ছিল, কিন্তু আগের দিন বিল না দেবার জন্য গ্যাস লাইন কেটে দিয়ে যায়। বাড়িতে কোন জামাকাপড়ও ছিল না, পেটের দায় সব বিক্রি করে দেয়। কাপড় মেলার দড়ি বেছে নেয় আত্যহত্যা করতে।

    চরিত্র গুলি কাল্পনিক, কিন্তু পটভূমি, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, যুদ্ধে জর্জরিত জার্মানদের জীবন যেন সম্পূর্ণ বাস্তব। আত্যগরিমা ও তেজে ভরপুর জার্মানদের ঘরে ঘরে আত্যহত্য। এই পরিস্থিতিতে হিটলারের উত্থান আটকানো প্রায় অসম্ভব। সেই, যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত সৈনিকদের পেনশান বাড়ানোর দাবিতে মিছিল। প্রথম সারিতে চলা উইলচেয়ারে পকেটে পতাকা গুঁজে চলা লোকটি যার মাথা আর ধড় ছাড়া শরীরে আর কিছু বাকি নেই। ফুটপাথ দিয়ে চলা মানুষজনের অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে চলা যাতে ঐ বিকলাঙ্গদের খতবিক্ষত শরীরের বিবরণ তাদের চোখের সামনে না আসে। নাৎসিতে সহানুভূতি মেশানো প্রলোভন। ভাবাযায়, কেরানীরা যা মাইনে পায় তা দিয়ে রুটি তো দূর কাঁচের বোতাম কেনাও সম্ভব না। ছোট ছোট কিশোরদের মনে উগ্র জাতীয়তাবাদ চরম আকার ধারন করেছে, ইহুদী বিদ্বেষ প্রতিটি জাতীয়তাবাদী কিশোরের মনে। এই পরিস্থিতির মধ্যেও কিশোর বয়সে যুদ্ধে যোগ দিয়া যৌবনে লেখকের মনে প্রেম জাগে স্বপ্ন জাগে।
    এরিকের লেখা পড়লে যুদ্ধের পর জার্মানদের প্রতি যে মনভাব জন্ম নেয়, তা অনেক খানি পাল্টে দেয়। অসম্ভব সুন্দর একটি বই। একবার ধরলে শেষ না করে রাখা যায় না।
  • সিদ্ধার্থ | 23.17.125.8 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ১৫:০১601677
  • অসাধারণ লিখেছ ঈশানদা। জাস্ট অসাধারণ।

    বইটা পড়ে কান্না পেয়েছিল। রিভিউটা পড়ে আবার পেল।

    তবে সরাসরি যুদ্ধের কথা রেমার্কের টাইম টু লাভ টাইম টু ডাই তেও আছে। সেখানেও নায়ক বাড়ি ফেরার সময় চারপাশে কিছু চিনতে পারে না।

    ঈশানদা, একটু বইপত্রের রিভিউ বেশি করে লেখো। যা যা বই পড়েছ। তুমি চাইলে টই খুলে দিচ্ছি। সেখানে শুধু তুমি লিখবে। তোমার সময় সুযোগ মতন। এই লেখাগুলোই সম্পদ!
  • কল্লোল | 125.242.139.98 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ১৫:১৮601678
  • হুঁ। আমারও মনে হয়েছিলো থ্রি কমরেডস। আসলে আমার রেমার্ক দৌড় পশ্চিম রণাঙ্গন নিশ্চুপ আর থ্রি কমরেডস পর্যন্ত।
  • san | 69.144.58.2 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ১৫:৪২601679
  • আমারও প্রথম পড়া মনে পড়ল।

    রোড ব্যাক।
  • san | 69.144.58.2 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ১৫:৪৯601680
  • বুক রিভিউএর একটা নিয়মিত বিভাগ করো না ! এই যেরকম লিখেছো, এইরকম !
  • de | 69.185.236.52 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ১৫:৫৫601681
  • মামুর রিভিউ খুব ভাল্লাগলো!
  • brc - slg | 37.125.203.11 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ১৬:০৯601682
  • http://www.pdf-archive.com/2012/08/10/the-black-obelisk/the-black-obelisk.pdf

    এই লিং থেকে " দ্যা ব্ল্যাক অবিলিস্ক " - এর বঙ্গানুবাদ ( শেখ আবদুল হাকিম, বাংলাদেশ, ২০০০ ) ডাউনলোড করা যাবে।

    Ishan-এর লেখা বেশ ভাল লাগল। আগ্রহী করে তুললেন বইটি পড়ার জন্য। ব্ল্যাক অবিলিস্ক - এর ইং অনুবাদ আপাতত যোগাড় করা যাবেনা। দেখি বঙ্গানুবাদটি কেমন লাগে।
    ওপু-কেও ধন্যবাদ ( সুতো শুরু করার জন্য)
    -------------------------

    হেভেন হ্যাজ নো ফেভরিটস্ সিনেমাটি অনেকদিন আগে দেখেছিলাম। সম্ভবত পরিচালক ছিলেন সিডনী পোলাক। অ্যাল প্যাচিনো - র
    অভিনয় অনবদ্য। নায়িকার নাম মনে পড়ছেনা --- তাঁর অভিনয়ও খুব ভাল ।
  • ওপু | 24.99.255.22 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ১৬:১৮601683
  • খবদ্দার। খাকিম সাহেবের অনুবাদ পড়বেন না প্লিজ। পুরো সেন্সার করা বই। ৭৮ পাতাতেই উপন্যাস খতম। লিসা, সমকামী, কমিউসিন্ট, কবিদের জীবন, লেখকের সাথে ইসাবেলের প্রেম-- পুরো হাপিস হাপিস আর ভ্যানিশ...। :-/
  • ওপু | 24.99.255.22 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ১৬:২০601684
  • ইংরেজিটা আছে নেটে।
  • brc - slg | 37.125.203.11 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ১৬:২৪601687
  • আরেব্বাবা .. জানতামনা ওপু। আর পড়ি !!

    কিন্ত, অন্য কোন লিং জানা আছে আপনার ? দিলে খুব ভাল হয়।
    Flipkart-এ বইটি available না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন