এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • দুর্গাপুজোর নস্টালজিয়া

    tania
    অন্যান্য | ১৫ আগস্ট ২০০৬ | ৪৩১৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • tania | 151.151.73.163 | ১৫ আগস্ট ২০০৬ ২১:৫৮631282
  • পুজো তো এসে গেল, আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ। আমাদের কেউ কেউ বাড়ি যাচ্ছে, কেউ বা যাবে বেড়াতে, আর বাকিরা হয়ত গোমড়াথেথিয়াম হয়ে ঘাড় গুঁজে কাজ করে যাবে ঐ চারদিন। সকলের জন্য রইল এই টই, এসো, এখানে আমাদের ফেলে আসা, ছেড়ে আসা পুজোর নস্টালজিয়া জড়ো করে সবার সঙ্গে শেয়ার করি।
  • Juju | 218.208.111.10 | ১৬ আগস্ট ২০০৬ ০৮:৪০631293
  • পুজোর কটা দিন আমাদের স্কুলের ঠিক সামনেই দূর্গাবাড়িতে আড্ডা, হই হুল্লোড়েই কেটে যেত। মানে সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে সন্ধে। রাতে ঠাকুর দেখতে বেরোতাম সবাই মিলে, পায়ে হেঁটেই চষে ফেলতাম বাবুবাগান থেকে যোধপুর পার্ক, মহম্মদ আলি পার্ক থেকে কলেজ স্কোয়্যার, নেবুতলা থেকে পার্কসার্কাস। আর দুগ্গা প্রতিমার সঙ্গে জ্যান্ত দুগ্গা দর্শনের আনন্দ তো ছিলই!

  • Tina | 64.12.116.5 | ১৬ আগস্ট ২০০৬ ১৯:২৬631304
  • পুজো ভাবলেই মনে আসে একরাশ শিউলি ফুল, ছোট্টো ছোট্টো নরম সাদা-কমলা ফুলগুলো গাছের তলায় বিছিয়ে থাকতো। খুব মাধবীলতা ফুটতো এইসময় দরজার পাশের গাছটাতে। ভোরে উঠে বাইরে বাগানের দিকে গেলে একটা হিমেল হাওয়া। নতুন জামা, নতুন জুতো বাড়ীতে আসার পর পরবার তর সইতো না। প্রতিদিন একবার করে খুলে দেখতাম। আর ছিলো পুজোর বই। যিনি বাড়ীতে কাগজ দিতেন তাকে বলা থাকতো। প্রথমে আসতো আনন্দমেলা। কিন্তু সেটা নিয়ে কাড়াকাড়ি করে একবার ছিঁড়ে গেলো সেই নতুন বই। পরের বছর থেকে বাবা কিশোরভারতী ও দিতে বলেছিলো। আমার খুব আকর্ষণ ছিলো দেব সাহিত্য কুটিরের সেই মোটা বাঁধানো বইগুলো, কি সব নাম ছিলো "মন্দিরা", "চন্দনা", "বলাকা", এখন আর মেলে কিনা কে জানে। ষষ্ঠীর দিন মা নতুন একটা সুতী র বা তাঁতের শাড়ী পরতো। আমরা কান পেতে থাকতাম কখন পাড়ার পুজো প্যান্ডেলে ঢাকের বাজনা শুনবো। অষ্টমী র দিন অঞ্জলি দিতাম। পুজো মানেই আরো আনন্দ যে ঐ কদিন পড়াশুনো করতে হবেনা। দশমী র দিন মা যেত ঠাকুর বরণ করতে, আর ফিরতো সারা কপালে আর চুলে একরাশ সিঁদুর নিয়ে। সকাল থেকেই সেদিন আমাদের মন খারাপ..... আবার সামনের বছর আনন্দের জন্য প্রতীক্ষা।
  • dd | 202.122.18.241 | ১৬ আগস্ট ২০০৬ ২৩:০৭631310
  • দুগ্গা পুজা নিয়ে আমার কোনো নস্টালজি না কি বলে, সেডা আমার নেই কো।

    কাশ ফুলে আমার র‌্যাশ হয়, ঢাকের আওয়াজে আমার মাইগ্রেইন হয়। ভীড় দেখলে আমার পেট ব্যাথা করে। কলকেতার জন্য মন খারাব হয় না।

    তাইলে আমি কি করবো ?
  • tan | 131.95.121.127 | ১৬ আগস্ট ২০০৬ ২৩:১৪631311
  • শিউলি ফুলে আমার র‌্যাশ হয় না, তবে গাছে শুয়াপোকা থাকে অনেক,খুব সাবধান খুব সাবধান।
    কাশফুল দূর থেকে দেকেচি, হাওয়ায় দোলে ভালোই লাগে।
    নীল আকাশ ভালো লাগে, সাদা মেঘও। আর ঢাকের বাদ্যি থামলেই মিষ্টি লাগে।
    এই নিয়ে নস্টালজির কি আছে? এতো সকলেই জানে!

  • Gaza | 69.232.72.78 | ২০ আগস্ট ২০০৬ ১১:৫২631312
  • DD বয়েস টা তোমার অল্পো তাই এই সব আবেগ তুমি বুঝবানা।বড় হইআ বুঝবা।
    চলি এখন রাত অনেক হইল।
  • Binary | 198.169.6.69 | ১৬ অক্টোবর ২০০৮ ২০:২৩631313
  • আমি এট্টু লিখি। আবাজ দিওনি যেন।

    সাউথএন্ড পার্কে, আমাদের পড়ার দুগ্গাপুজোর ক্লাব ছিলো 'রবীন্দ্র পাঠাগার'। পুজোর একমাস আগে বাঁশের খাঁচা তৈরী হতো। মর্নিং স্কুল থেকে ফেরার সময় প্যান্ডেলের সেই খাঁচা দেখলেই জিমন্যস্টিক করার জন্য হাত পা গুলো নিশ্‌পিশ করত। একমাস পরের ফুর্তির আমেজ সুরু হয়ে গেছে, বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ। তারপর সুরু হত দিন গোনার পালা। আজ বাঁশের খাঁচায় ত্রিপল উঠলো, দুদিন পরে চাদ্দিকে ত্রিপল। আবার দুদিন পরে রঙ্গিন কাপড় লাগছে। উত্তেজনার স্নোবল। গড়াচ্ছে তো গড়াচ্ছে-ই। পঞঅমীতে পুজোর ছুটি পড়লো ইস্কুলে। এক পিরিয়ড হয়ে ছুটি, ঐদিন। ঐ একদিন স্কুল ড্রেস ছেড়ে রঙ্গীন জামা পড়ে স্কুলে যাওয়ার পারমিশন। ছুটির পরে, হোসেনদা (স্কুল বাসের চালক), বাসটাকে গড়ের মাঠ, রেড রোড ঘুরিয়ে নিয়ে আসতো, বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার আগে। বাতাসে শরতের মিহি শীত শীত, মনটা নেশা নেশা। পুজো এসে গেলো। লেকের ধারে বুদ্ধ মন্দির। তার গায়ে একচিলতে গলিতে একটা কুমোরবাড়ী ছিলো। দুগ্গা প্রতিমা বানানো হতো সেখানে। মাঝে মাঝে সেখানে ঢুকে মাটি আর রংএর গন্ধ, প্রতিমার গায়ে রংএর পোঁচ পড়েছে। পুজো এসে গেলো। তেওয়ারিদা (আমাদের খবরের কাগজ দিতো), পুজো সংখ্যার 'অলিম্পিক' দিয়ে গেলো। পুজো এসে গেলো। দাদা পয়সা জমিয়ে কিনে আনল 'কিশোর ভারতী', পুজোসংখ্যা, লুকিয়ে লুকিয়ে ('শুকতারা',কিশোরভারতী' এসব পড়া গরহিত অপরাধ ছিলো)। পুজো এসে গেলো।

    ইস্কুলের বঙ্গলিপি খাতায় দুগ্গাঠাকুর আঁকা চলতো সেই একমাস আগে থেকেই। একটা গোল্লার (মাথা) নীচে একটা সরু দাগ। দাগের দুই দিকে পিঁপড়ের হাতপায়ের মতো, ৫+৫ দশটা হাত। একই রকম সিংহ, সুধু শরীরটা আড়াআড়ি ভাবে, পেছনে দুটো ঠ্যাং সামনে আরো দুটো। গোল্লা মতো মুন্ডুটায় দুচারটে কেশর। অসুরের অবস্থা তথৈবচ। সেই গোল্লা মাথা, একদাগের শরীর, দুই ঠ্যাং ছড়ানো, দুই হাত-ও। মাদুগ্গার এক হাত থেকে ত্রিশুলটা সো-ও-ও-জা বিঁধেছে অসুরের গায়ে। সেখান থেকে দুচারটে রক্তের ফোঁটা। পরে শুনেছি 'জয়বাবা ফেলুনাথে', ছোট্টো রুকুবাবুর মুখে সেই অসুরের-ই একই রকম গল্প, 'তারপর দুগ্গা ঠাকুর ক্যাচাং করে ত্রিশুলটা বিঁধিয়ে দিলো অসুরের গায়ে, আর গ্যাল গ্যাল করে রক্ত বেরুচ্চে।'

    ঠাকুর দেখার সময় আলাদা আলাদা। সষ্ঠী-র দিন বন্ধুদের সাথে পাড়ার ঠাকুর। সপ্তমীর সকালে দাদা আর বোনদের সাথে কাছের ঠাকুর। রাতে চিনিকাকু,মিস্রিকাকু আর ভাইবোন দের সাথে দুরের ঠাকুর। অস্টমীর সকালে জেঠুর সঙ্গে আরো দুরের ঠাকুর, উত্তর কোলকাতা। আলাদা আলাদা প্যান্ডেলে, আলাদা আলাদা রকমের ঠাকুর। কোনোটা 'সিনারি ঠাকুর'-এর (মঞএ কাটবোর্ডের হিমালয় পব্‌র্ত, সিংহাসনা দুগ্গাঠাকুর ছুটে আসছেন, হাতে উদ্দত ত্রিশুল, দুরে মহিষাশুর খাঁড়া হাতে ধাবমান, কাত্তিক গনেশ এদিক-ওদিক যুদ্ধরত ভংগিমায়, মানে সবমিলিয়ে একটা রেয়েলিস্টিক ছবি), 'একডালিয়া এভারগ্রীন ক্লাব' বা 'গোলপার্ক সার্বজনীন'। কোনোটা একচালার বা 'ডাকের সাজ'-এর, 'বাগবাজার ক্লাব'। কোনোটা আবার 'ফ্রি ঠাকুর' (মানে দুগ্গা ঠাকুর, কাত্তিক, গনেশ, লক্ষী, সরস্বতী সব আলাদা আলাদা সাধারন ভাবে), বেশীরভাগ ঠাকুর-ই এরকম। ঠাকুর দেখে ক্লান্ত হয়ে বাড়ী ফিরে ঘুমের মধ্যে-ও আরো আরো ঠাকুর দেখা। পড়ার বন্ধুদের 'কটা ঠাকুর দেখলি ?' -র উত্তরের জন্য সংখ্যা তত্বের প্রতুতি। বন্ধুদের হাতে ক্যাপ ফাটানো পিস্তল, (আমাদের অবশ্য ওসব খেলনা একদম বারণ ছিলো, চোখেটোখে যদি লেগে যায়), 'ঠাস-ঠাস-ঠাস-ফট-ফট-ফ্‌ট-ঠাস-ফ্‌ট'। অস্টমীর সকালে, ঠাকুমা একটা থালায় ফল-সন্দেশ-নাড়ু-তক্তি আর দুটাকার নোট সাজিয়ে, দাদাকে বলত ঠাকুরতলায় দিয়ে আয়। পরে সল্টলেকের বাড়ীতে সেই একই রকম থালা পাড়ার মন্ডপে দিয়ে আসতাম আমি, মা পাঠাত। ঠাকুমা সেই থালায় একটা ছোট্টো চিরকুটে ক্ষুদি-ক্ষুদি করে পরিবারে সকলের নাম লিখতেন, আর লিখতেন 'অলিম্বায়ন গোত্র'।

    দশমীর দিন, রবীন্দ্র পাঠাগারের ঠাকুর ব্যান্ডপার্টি আর ঢাক বাজিয়ে, পাড়াঘুরে ভাসানে চলে গেলে, আমরা সকলে যেতাম ঢাকুরিয়া ব্রিজের কাছে। পাড়া সুদ্ধু লোক ভীড় করেছে সেখানে। ক্ষুদেরা বড়দের কাঁধে, এট্টু কম ক্ষুদেরা, মানে আমরা, ঠেলেঠুলে, বড়দের পায়ের ফাঁক গলে সামনে যাওয়ার চেস্টা করছি। পেছনে বাবা-কাকুদের বকুনি, 'এই অত সামনে যাবি না, হারিয়ে যাবি !!!' ব্রীজের ওপরে , 'ভ্যাঁপোর ভ্যাঁপোর জগঝ্‌ম্প', বেসুরো তাসায় 'বোম্বাই সে আয়া মেরা দোস্ত','ইয়ে-এ-এ দোস্তি-ই-ই'। হ্যাজাক আর জেনারেটারের লাইটের চলমান গেট। বাবুবাগান ক্লাব বা যোধপুর পার্ক ক্লাবের শোভাযাত্রা চলছে। একমিটার চলছে, দুমিনিট দাঁড়াচ্ছে। দুমদাম ফাটছে চকোলেট বোম।

    তারপর এসব হাজারো মজায় সন্ধ্যে কাটিয়ে, রাত দশটায় হেঁটে হেঁটে বাড়ী। পাড়ার মুখে সেই 'রবীন্দ্র পাঠাগার'-এর শুনশান প্যান্ডেল। আলো নেই, একটা মাত্র প্রদীপ জ্বলছে। বুকটা খালি খালি লাগে ---- ছুটির পরেই অয়ানুয়াল পরীক্ষা -- আর বেশীদিন নেই।
  • shyamal | 64.47.121.98 | ১৬ অক্টোবর ২০০৮ ২১:০০631314
  • আমাদের মফস্বল শহরের পাড়াটা ছিল ভটচাজ পাড়া। ওখানকার এম এল এও ছিলেন একজন ভটচাজ। যাই হোক সেখানে পুজো হত। তখনকার দিনে স্টিরিও আসেনি। মাইক ছিল চোঙা মাইক। তার থেকে তারস্বরে গান বাজত:
    বাহারোঁ ফুল বরসাও, ঝুমকা গিরা রে, সুর্য আবার উঠল, আবার ডুবল, চার দেওয়ালের মধ্যে নানান বিশ্বকে ইত্যাদি। সেই গানের নয়েজ থেকে সিগন্যাল বের করে শব্দগুলোকে বোঝা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। ঐ মাইক থেকেই আমরা শিখতাম তখনকার জনপ্রিয় গান। তখনও বিবিধ ভারতী আসেনি।
    রিক্সা করে নতুন সিনেমার বিজ্ঞাপন দিয়ে যেত আর ফ্লায়ার বিলোত। " রাজকাপুর, বৈজয়ন্তীমালা অভিনীত সরল হিন্দি চিত্র সঙ্গম। "
    সরল বলার উদ্দেশ্য যাতে লোকে হিন্দি শুনে ভয় না পায়।
    আমার এক বন্ধু সিনেমা হলের দেওয়ালে কান লাগিয়ে গান আর ডায়ালগ শোনার ব্যর্থ চেষ্টা করত। আমাকে একবার প্রশ্ন করেছিল, আচ্ছা, সিনেমার গানগুলো কি প্রথমে হয়ে যায় আর তার পর সিনেমাটা শুরু হয়?
  • Sayantan | 160.83.72.212 | ১৬ অক্টোবর ২০০৮ ২১:৫১631315
  • খুব ভালো লিখেছো বাইনারি। অদ্ভুত ভালো। লেখাটার সাথে অনেকটাই একাত্মবোধ করলাম। বিশেষ করে ঐ বিসর্জনের পর টিমটিম করে প্রদীপের জ্বলে থাকা আর একফালি কাগজের টুকরোয় নাম-গোত্র লিখে পুরুত ঠাকুরের দিকে এগিয়ে দেওয়া।

    আরো লেখা চাই।
  • d | 117.195.33.39 | ১৭ অক্টোবর ২০০৮ ০৭:২৭631283
  • খাসা লাগল বাইনারি।
  • shrabani | 124.30.233.105 | ১৭ অক্টোবর ২০০৮ ১১:০৫631284
  • পুজো বললেই চোখ বুজলে প্রথম ভাসে দেশের বাড়ীর মা দুর্গার মুখ খানা, ঘামতেলে চকচকে, পঞ্চপ্রদীপের আলোয়, আরতির সময় যেন জীবন্ত মনে হত। আর জীবন্তই তো, সপ্তমীর দিনই তো প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছে বামুন দাদামশাই মুর্তিতে। এখন আমাদের ঠাকুরদালানের ঐ খড়মাটির দুগ্গার মধ্যে আসল দুগ্গাঠাকুর আছে! অবশ্য কিছুদিন আগেও এই থিওরীটা নিয়ে খুব সমস্যা ছিল, চারপাশে এত ঠাকুর, ভটচাজদের, অন্য রায়েদের, সার্বজনীন তলার, মা দুগ্গার একটা প্রাণ সব জায়গায় থাকেন কেমন করে? কারুর কারুর বক্তব্য ছিল মা শিফ্‌টে কাজ করে কখনো এখানে যান কখনো ওখানে। শুনে মন খারাপ হলেও ভাল করে দেখেশুনে মনে হচ্ছিল আমাদের মন্দিরেই বেশীক্ষণ থাকেন, কারন মায়ের ঐ মুখ, যার দিকে তাকিয়ে এট্টু বড় বড় যারা, মিত্তির দাদু, পাকা বাড়ীর ঠাকুমা "মা মা" করে কেঁদেই ফেলে, ঐ মুখ দেখলে তো সবসময়ই মনে হয় এক্ষুনি কথা বলে উঠবেন।
    তবে মায়ের কাছে কথাটা তুলতেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। মা দুগ্গা আসলে তো স্বর্গের দেবী, দেবী দেবতারা একইসময়ে অনেক জায়গায় উপস্থিত থাকতে পারেন। খুব ভালো বোঝা যায়না, তবে আমাদের দালান ছেড়ে যে যাননা পুজোর কদিন এটা জেনে নিশ্চিন্ত!
    আমরা দেশের বাড়ী যাই মহালয়ার দিনটিতেই। কদিন আগে থেকেই তোড়জোড় গোছানো শুরু হয়ে যায়। রাত থেকে উঠে মহালয়া শুনতে শুনতে তৈরী হতে থাকে সবাই, আমি বাদে। আমাকে সবার শেষে ঘুম থেকে ওঠানো হয় মায়ের হাতের কাজ সব শেষ হলে।আমি উঠি যখন মহালয়া শেষ, কি কষ্ট! আর আমার থেকে একটু বড় ফুলদি আর ছোড়দা যখন গর্বের সঙ্গে বুক ফুলিয়ে একটুও না ঘুমিয়ে পুরো মহালয়া শোনার কৃতিত্ব জাহির করতে থাকে তখন বাড়ীর সক্কলকে কেমন শত্রুপক্ষের ষঢ়যন্ত্রকারী মনে হয়। বেশীক্ষণ অবশ্য গোমরা মুখ থাকেনা, কারন বাবার পরের বছর ঠিক সময়ে ওঠানোর প্রতিশ্রুতি, আর বাড়ির সামনে দুধসাদা গাড়ী!
    আজ মনে হয় কোনোদিনই বোধহয় শোনা হয়নি ঐ ভোরে মহালয়া। গাড়ী বোঝাই মায়ের পনের দিনের সংসার। কত জিনিস, গাড়ীর মাথায়, ডিকিতে ভরা, মাঝে মাঝে শঙ্কা জাগে, আমি সীট পাব তো, মা কোলে বসাবেনা তো? সীট পাই তবে জানালার ধার হয়না, একটা ধার ছোড়দার বাঁধা, কারন তার গাড়ীতে গা গুলোয়, বমি হয়। ইস আমার কেন যে কিছুই হয়না, উল্টে পেট্রলের গন্ধ খুব ভাল লাগে! আর একটা জানালা নিয়ে লাঠালাঠি (মায়ের ভাষায়) এড়াতে মা বসে। সামনে ড্রাইভার কাকার পাশে বাবা।
    তবে গাড়ী শহর ছেড়ে হাইওয়েতে এলেই জানালার কষ্ট টা আর থাকেনা। কটকটে রোদ, নীল সাদা আকাশ আর বর্ষা শেষের সবুজে ভরা দুদিক, জল টলট্‌ল নালা, মাঝে মাঝে মা আমাদের মাথা দুটো টেনে জানালায় নিয়ে পদ্মফুল দেখায়। ফুলদিটা আবার একটু প্রকৃতি প্রেমিক বরাবরই। ওর আবদারে একটা ভাল জায়গা দেখে গাড়ী থামিয়ে পদ্ম ফুল তুলিয়ে নিয়ে আসে ড্রাইভারকাকা। আসলে ড্রাইভারকাকার এটা বচ্ছরকার বাঁধা যাত্রা, সেই আমার জন্মেরও আগে থেকে, মহালয়ার দিন আমাদের গ্রামের বাড়ীতে যান গাড়ী নিয়ে। এক জায়গায় গাড়ী থামানো হয় ব্রেকফাস্টের জন্য। রাস্তার ধারে দোকানে এই এলাকার বিখ্যাত আলুর চপ আর ভেজিটেবল চপ ভাজা হচ্ছে গরম গরম। বাবা ড্রাইভার কাকাকে নিয়ে যায় খেতে। আমরাও এদিক ওদিক দেখে মায়ের আনা লুচি আলুভাজা সন্দেশ ফেলে গুটিগুটি পায়ে বাবাদের পেছন পেছন যাই। বাবা সবার হাতে চপের ঠোঙা দিয়ে একটা মা কেও দিয়ে আসে।পুজোর ছুটির মজা এই, মা কিছুই বলেনা আমরা লুচি ছেড়ে চপ খেলেও না। এই কদিন সবরকম বকাবকি বাধা নিষেধ সব বন্ধ, শুধু অনাবিল আনন্দে ভেসে যাওয়া।
    হাইওয়ে ছেড়ে ভেতরের রাস্তায় গাড়ী ঢুকতে কোথাও কোথাও রাস্তার ধারে বারোয়ারি পুজোর বাঁশ খাটানো, তবে কম। ওসবদিকে তখনো বাড়ির পুজো বেশী দেখা যায়, চাঁদা তুলে বারোয়ারি পুজার সংখ্যা কমই হয়। পিচের রাস্তা ছেড়ে গ্রামের কাঁচা রাস্তায় যখন গাড়ী ঢুকছে তখন উত্তেজনায় বুকের মধ্যে ঢবঢব। ছোড়দাও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে, রাস্তায় চেনা লোকজন দেখলেই বাবা হাত নাড়ছে, ছোড়দা আমাদের রিলে করছে "ঐ খোকাদা যাচ্ছে, ঐ তো সাধন কাকা দাঁড়িয়ে জেলেপাড়ার মুখে"। আনন্দময়ী কালীবাড়ি যাওয়ার রাস্তা টার মুখে গাড়ী এলে মা কপালে দু হাত তোলে, দেখাদেখি আমরাও। ব্যস, আর একটা মোড় ঘুরলেই পঞ্চানন্দতলাকে বাঁ দিকে রেখে পচাপুকুরের পাশ দিয়ে গাড়ী ঢুকে পড়ল আমাদের রাসমন্দিরের চত্বরে। এর আগে গাড়ীর যাওয়া মানা। রাসমন্দিরের পরে পাড়ার মাঝখানে সারি সারি মন্দির, প্রথমেই দুর্গা মন্ডপ, আটচালা, তারপরে বৈঠকখানা, ব্রজরাজের মন্দির, শেতলা মন্দির। সব পেরিয়ে আমাদের বাড়ী এক কোনে, তাই নামও লোকের মুখে কোনের বাড়ী। কি করে খবর পেয়ে গাড়ীর চারপাশে লোক ভরে গেছে। বড়জেঠু ঘাড় নাড়াতে নাড়াতে একেবারে গাড়ীর সামনে, জেঠুর ওটা অসুখ, ঘাড় নড়ে সবসময়। আমার একটা ঘাড় নাড়া পুতুল আছে তার মত। অবশ্য ফুলদিকে একবার বলতেই ও মাকে বলে বকুনি খাইয়েছিল, বড়দের সম্বন্ধে কক্ষনো খারাপ কথা বলতে নেই। তবে কথাটা খারাপ কেন তা বুঝিনি!
  • shrabani | 124.30.233.105 | ১৭ অক্টোবর ২০০৮ ১২:৫৩631285
  • শুরু হয় প্রনামের ঘটা, মা বাবা করছে জেঠুকে আরও এদিক ওদিক বড়দের, আমাদেরও মা ধাক্কা দিচ্ছে মাথা নোয়াতে তবে ঠিক সাকসেসফুলি নয়, দেশে এলে মায়ের কনট্রোল টা আর ঠিকমত কাজ করেনা। আমাদের চাষী লক্ষ্মীকাকা তার ছেলে সত্যদা আর একজন লোককে নিয়ে মালপত্র নামাতে ব্যস্ত, আরও কেউ কেউ হাত লাগিয়েছে। ওরা মাল সব নিয়ে যেতে শুরু করেছে, মা বাবা তবুও নড়েনা। সবাই শুধু মুখে বলছে "ঘরে চল, ঘরে গিয়ে কথা হবে", কিন্তু আসলে কেউ নড়ছেনা। ছোড়দা বড় হওয়ার সুবাদে একটু গম্ভীর চালে স্টাইল মেরে লক্ষ্মীকাকার পেছন পেছন গটগট করে চলে যায়, কারোর দিকে না তাকিয়ে। ওর বয়সী অন্য দাদারা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ওর জুতো জামা প্যান্টের দিকে। আমাদের সবারই পোশাক আশাকে এখন আলাদা লাগছি এখানের সবার থেকে, অবশ্য মা বলে দেশে এলে দুদিনেই আমরা জংলী হয়ে উঠি। আমার চোখ তখন দুগ্গা মন্ডপের দিকে। মা দুগ্গা তার দলবল সমেত এখন পুরো সাদা, কারোরই মাথা নেই, মাথাগুলো আলাদা রাখা আছে!
    অবশেষে আমরা সবাই একটু একটু করে এগোতে থাকি বাড়ীর দিকে, সব মন্দিরে থেমে থেমে। দুগ্গাদালানের কাছে এসে বাবা বলে,
    "কি যুগলদা ঠিক ঠাক চলছে তো কাজ, খড়ি হয়ে গেছে দেখছি, রঙ কবে শুরু করবে? এবার কি ছেলেকেও এনেছ?"
    যুগল মিস্ত্রী কাজ থামিয়ে দলটাকে দেখে।
    "এই তো বৃষ্টি টা এবারে বেশী হল তাই একটু ঢিলে পড়েছে। হয়ে যাবে পঞ্চমীতক। হ্যাঁ আনলাম এবার। সব শিখাতে হবে তো, আমার পরে কে করবে।"
    আমি তাকিয়ে দেখি দালানের একদিকে শুকোতে রাখা আছে ছোট ছোট মাটির পাখি, ঘোড়া, ব্যাঙ। বলে উঠি,
    "জেঠু আমায় এবারে টিয়া দিও, সবুজ গা লাল ঠোঁট।" যুগল জেঠু হাসে, প্রতিবছর কাজের ফাঁকে সে এইসব গড়ে রাখে যাবার আগে বাড়ির বাচ্চাদের দিয়ে যায়। এটা আমার কাছে একটা দু:খের ব্যাপার পুজোর আনন্দের মধ্যে, ফুলদির সঙ্গে কথা বলে দেখেছি ও ও একমত। এই যে পুজোতে এত আনন্দ, মজা, এত খাওয়া দাওয়া লোকজন, সে সব তো যুগলজেঠু এতদিন ধরে আমাদের এখানে থেকে ঠাকুর বানালো বলেই না! অথচ তাকে প্রতিবছর ষষ্ঠীর দিনে চলে যেতে হয়, পুজোতে থাকেনা জেঠু, কেন বুঝিনা। ওর কাজ শেষ হয়ে যায় ষষ্ঠীর সকালেই, মালাকার তখন পাড়ার ছেলেদের সাথে নিয়ে মা দুগ্গাকে শোলার গয়না কাপড় পরাতে শুরু করে। আর যুগল জেঠু তার দু মাসের সংসার একটা চটের থলিতে গুটিয়ে নিয়ে এবছরের মত সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে শেষ দেখা করে। আমাদের বাড়ী এলে মা নাড়ু মুড়কি বেঁধে দেয়, বাবা একটা ধুতি আর টাকা দেয়। কখনো কখনো বাবার কাছে কাঁদে, ওদের দেশে নাকি প্রতিবছরই বন্যা হয়, এখনো জল নামেনা, নৌকো করে বাড়ি যেতে হবে। চাষবাস হয়না, সম্বচ্ছের ভাত ও হয় না, ভারী কষ্ট। আমার ছোট্ট মনে তা দাগ কাটেনা বিশেষ, শুধু মনে হয়, ইস জেঠুর কি মজা নৌকায় যাবে, আমি কোনোদিন নৌকায় চড়িনি।
    আমাদের দলটা বাড়ির দিকে এগিয়ে চলে, সব ঘরের দুয়ারে একজন দুজন করে বেরিয়ে এসেছে, কুশল প্রশ্ন উত্তর চলে। এখানে এসেই মায়ের মাথায় ঘোমটা উঠে গেছে। সব বাড়ীরই আশেপাশে ঘাস আগাছা পরিস্কার করা হয়েছে, সামনের মাঠটাও নিকোনো, ঘরে ঢুকতেই মাটির, আলকাতরার আর চুনকামের গন্ধ। প্রতিবছরেই পাই কারন প্রতিবছরই পুজোর সময় পাকা ঘরে চুনকাম হয় আর মাটির ঘরে নতুন মাটি লেপা হয়,কাঠে আলকাতরা। এই সব গন্ধ আমাদের পুজোর সঙ্গে জড়ানো। সারাবছর বাড়ী বন্ধই থাকে, তবু সবার যত্ন রক্ষনাবেক্ষনে মনেই হয়না যে এ বাড়ীতে সারাবছর কেউ থাকেনা। সিমেন্টের উঠোন শেওলামুক্ত চকচকে, লক্ষ্মীকাকা কল টিপে দেখাল বাবাকে পরিস্কার জল উঠছে। তার জন্য নাকি ওদের একদিন দিন্‌ভর কল টিপে টিপে নোংরা বালি জল বার করতে হয়েছে।

    ভাঁড়ারঘরের দরজার পাশে একগলা ঘোমটা দিয়ে কালো মোটা পাথর জেঠাই, প্রতি পুজোয় জেঠাই আমাদের বাড়ী থাকে। আমার আর ফুলদির জুতো খুলে দিল। মা ও জুতো টুতো খুলে জেঠাই কে নির্দেশ দিতে থাকল কোন ব্যাগ্‌টায় কি আছে, কোনটা ভাঁড়ারে যাবে কোনটা বাইরে দালানে। পুজোর কদিন আমাদের ভাঁড়ার কাম পুজোর ঘর মা আর জেঠাইএর দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত হয়। ছোঁয়াছুঁয়ির ভয়ে আমাদের প্রায় ও ঘরে ঢোকা বারন বললেই হয়, অথচ সব খাবার জিনিস নাড়ু মুড়কি মিষ্টি থাকে ওঘরে!

    রান্নাঘর থেকে রান্নার আওয়াজ আসে, মণি কাকা খুন্তি হাতে বেরিয়ে এসে মাকে নমস্কার করে। মণি কাকা আমাদের রাঁধুনী বামুন, প্রতিবছর পুজোর সময়কার রান্নাঘর ঐ সামলায়। বাবা খুব ভালবাসে ওকে কিন্তু প্রতিবার খেতে বসেই বাবা ওর পেছনে লাগতে শুরু করে, "মনি ডালের নুনটাও কি চচ্চড়িতে দিয়ে দিয়েছ? এটা টমেটোর চাটনি না টমেটোর পায়েস মনি"।
    খিড়কীর দরজায় আমাদের কাজের কাকীমা ময়নার মা দাঁড়িয়ে, পাশে লজ্জা লজ্জা মুখ করে রুক্ষ চুলে ছেঁড়া জামায় ময়না। মা একটু কথা বলে ওদের সঙ্গে, কাকীমা নিচু গলায় উত্তর দেয়। কাকীমার গলা আমি খুব কম শুনেছি, কথা যা বলার মায়ের সঙ্গেই বলে, তাও ফিসফিসিয়ে। ময়নাও কথা বলেনা শুধু হাসে। ও আমার থেকে ছোট। আমি জানি আমাদের এ বছরের যত ছোটো হয়ে যাওয়া জামাকাপড় সব মা এখেনে গরীবদের দেবে বলে এনেছে তার মধ্যে আমারগুলোর একটা অংশ ময়নার কাছে যাবে। কাল থেকেই ও আমার জামা পরে ঘুরে বেড়াবে। অবশ্য পুজোর ষষ্ঠীর দিন সকালে বাবা এখানের বাজারের দোকান থেকে সব কাজের লোকেদের জন্য নতুন জামাকাপড়ও আনবে। এতসব কলকাতা থেকে আনা যায়না।
    উঠোনে টিনের চেয়ার নামানো হয়, বাবা, বড়জেঠু ও আরো দু চারজন বড়রা বসে।রান্নাঘরের দুয়ারে লক্ষ্মীকাকা পাম্প দেওয়া স্টোভ ধরায়, মা একটা ব্যাগ থেকে চা চিনি বার করে দেয় জেঠাইএর হাতে। বাবা পুজোর জন্যে স্পেশাল চা নিয়ে আসে। দুবেলা সবার চায়ের আসর আমাদের বাড়ীতেই বসে। পঞ্চমীর দিন দিদি এসে যাবে বর্দ্ধমানের হোস্টেল থেকে, তখন থেকে চা বানানোর ভার তার ওপরে। মায়ের নিয়ম। আর তিনবছর পর ফুলদি চা বানাবার মত বড় হয়ে গেলে দিদির ছুটি। দিদি তখন অন্য কাজ করবে, ফুলদি বলে বিয়ে করবে।
    মা ওপরে উঠে যায় রাস্তার জামাকাপড় বদলাতে। ফুলদিও যায় মায়ের পিছু পিছু। ছোড়দা ইতিমধ্যেই জুতোটুতো খুলে খিড়কী দিয়ে বেরিয়ে গেছে পুকুরের দিকে লক্ষীকাকার নাতিকে নিয়ে। আমি গিয়ে বাবার কোলে উঠি। জেঠু আমার মাথায় হাত রাখে, আমার খুব ভাল লাগে। জেঠু আমাকে বুদিকাকী বলে ডাকে, আমার ঠাকুমার ডাকনাম ছিল বুদি। বড়রা কত কিছু কথা বলে যায়, পুজোর কথা, কিছুই বুঝিনা তবু শুনতে থাকি, বড় ভালো লাগে।শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে গেছি বাবার কোলে, ঘুম ভাঙে মায়ের ডাকে, খাবার জায়গা হয়েছে, দুয়ারে সার সার আসন পাতা, কলাপাতা পাতছে জেঠাই, একটা গামলায় ধোঁয়া ওঠা ভাত ভাত নিয়ে মনিদা পরিবেশন শুরু করেছে। ড্রাইভার কাকা খেতে বসেছে তৈরী হয়ে বাবার পাশে, ফিরে যাবে আজকেই। আবার আমাদের নিতে আসবে একাদশীর পরের দিন।

  • Blank | 203.99.212.224 | ১৭ অক্টোবর ২০০৮ ১২:৫৮631286
  • খুব ভাল্লাগছে। স্টোভে টগবগ করে ফোটা ময়দার আঠা, ছোট্ট ছোট্ট মাটির ঢেলা আর ইঁদুরের গায়ে যা ইচ্ছে রঙ বোলানো। সেই পুজো গন্ধ এখনো ...
  • shrabani | 124.30.233.105 | ১৭ অক্টোবর ২০০৮ ১৭:২১631287
  • খাবার খুব বেশী খাইনা তবে ঐ যে মেঝেতে বসে সবাই একসঙ্গে কলাপাতায় খাওয়া, এটাতে দারুন মজা পাই। মা জোর করে কাঁটা বেছে মাছ খাওয়াবে, পুকুরের মাছ খা ভাল করে। এখানে কোনো আড়াল আবডাল নেই সবই খোলামেলা। শহরে বাড়ীতে কেউ এসেছে আর তার সামনে বসে আমরা খাচ্ছি তাকে না দিয়ে এটা ভাবাই যায়না। কিন্তু এখানে অন্য রকম। খাওয়ার মাঝে মাঝেই কত জন এসে বসল গল্প করতে, এবার সব মহিলারা তাদের সাথে সাথে এক দুই করে ছোটোরাও আছে, শহরের আজব জিনিস দেখতে এসেছে। এখন আমাদের সঙ্গে তাদের দুরত্ব দেখলে বোঝাই যায়না যে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই তারাই আমাদের প্রাণের বন্ধু হবে। প্রত্যেক বছরই তাই হয়, প্রথম জড়তাটা কাটতে দুপ্‌ক্ষই একদিন সময় নেয়। এই দুপুরেই মহিলাদের ফুরসত একটু, নাহলে পুজোর বাজারে কারোর সময় আছে? খাওয়া গল্প সব একসাথে চলতে লাগল।

    সারা দুপুর বিকেল কাটে মন্দিরে যুগল মিস্ত্রীর আশেপাশে, পুকুরধারে, পঞ্চানন্দতলার মাঠে ছোড়দা ফুটবল খেলে আর কলকাতা ফুটবলের লেটেস্ট নিয়ে জ্ঞান দেয়। ভাইবোনেদের বন্ধু সার্কল সব আলাদা আলাদা কারোর সাথে কারোর দেখা নেই খাওয়া শোয়ার সময় ছাড়া। মারও নি:শ্বাস নেবার সময় নেই। কাঠের ঘর পরিস্কার করে সেখানে নাড়ু মুড়কি তৈরী হচ্ছে। গুড়ের জালের গন্ধে আর নারকোলের পাকের গন্ধে সারা ঘর ম ম করে। বড্ড ভাল লাগে, আমি চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা ঘ্রাণ নিই। নারকেল কুরে ডাঁই করে রাখা, জেঠাই একা পারেনা তার পাড়ার আর একটি বউ কে নিয়ে আসে। লক্ষ্মী কাকার মেয়ে প্রমীলাদি আসে খই ধানের বস্তা নিয়ে। অন্য বাড়ির বউএরা নিজেরাই ধান সেদ্ধ করে শুকিয়ে খই ধান বানায়। আমার মা করেনা, প্রমীলাদি সব করে নিয়ে আসে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া মিটলে জেঠাই খই ভাজতে বসে কাঠের উনুনে, আমি সে সময় উনুনের ধার থেকে নড়িনা। ঐ ফট ফট শব্দে সরু সরু ধান থেকে সাদা সাদা জুঁইফুলের মত খই বেরোয় যখন সে দৃশ্য এক! আর জেঠাইয়ের হাত ঘোরানো নারকেল কাঠির ছড়ায়, সে তো একটা শিল্প। ফুলদিটা একটু গৃহিনী টাইপের, ওর এইসব শেখায় খুব উৎসাহ, জেঠাইয়ের কাছ থেকে শিখেও নিয়েছে অনেক কিছু। নারকেলের গুড়ের পাক আর চিনির পাক দুইই মা নিজে হাতে করে। জেঠাইরা শুধু নাড়ু পাকায়। চিনির পাক করার পর ভাঁড়ার ঘরের ছোট্ট কাঁচের আলমারি টা যেটায় আমাদের সবসময় মনে হয় না জানি কত কি আছে কারণ মা ওটা চাবি দিয়ে রাখে, আমাদের হাত দিতে দেয়না, ঐ আলমারির থেকে একটা কালো কৌটো বার করে আনে। তবে এই কোটোটায় কি আছে আমরা সবাই জানি, নানা রকমের ছাঁচ, মাছ ফুল পাতা। আমি মা আর ফুলদি বসে বসে ছাঁচ সন্দেশ তুলি। মাঝে মাঝে পাড়ার বৌদিরা কাকীমারা যারা গল্প করতে আসে তারাও কাজে লাগে। সব হয়ে গেলে ঠান্ডা করে বড় বড় স্টীলের কৌটোয় ভরে সে ঐ আলমারিতে চলে যায়, কারণ ওটা স্পেশাল সন্দেশ, বাছা লোকেদের দেওয়া হয়। নাড়ু সবার জন্যে। আমাদের মুড়কিও মা আর মণিকাকা মিলে বানায়। নতুন কেনা খেজুর চাটাই পাতা হয় নীচের ঘরের মেঝেতে, তাতে খই রাখা হয়, একজন গরম গুড় ঢালে আর দুজন সঙ্গে সঙ্গে মেলাতে থাকে। আমি তখন ওখানে থাকিনা, কোথায় কি পা মাড়িয়ে দেব তাই ওসময় আমাদের ছোটদের ঘরে ঢোকা মানা থাকে। তবে সেসময়টা বাড়িময় কর্পূর আর গরম গুড়ের গন্ধ ভাসতে থাকে। এই সমস্ত গন্ধের সঙ্গে চায়ের পাতার গন্ধ আর সিগারেটের গন্ধ। কারন এসবের মাঝেই পড়ন্ত বিকেলে বাবা ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় দোলায় বসে, সামনে বেদীতে কেউ না কেউ থাকে, বেশীরভাগ দিনই লক্ষ্মীকাকা, হিসেব পত্র নিয়ে। মণিকাকা চা বসায়, আর বাবা চা খাওয়ার পর সিগারেট ধরায়।

    এমনি করে দিনগুলো যেন কিভাবে কেটে পুজো এসে পড়ে। মাঝে মাঝে এক দুই করে আত্মীয়স্বজন এসে পড়তে থাকে এ বাড়ি ও বাড়ি। মাসীরা আসে। বাড়িটা গমগম করে। রোজ সন্ধ্যায় ব্রজরাজের আরতির পরে দুগ্গামন্দিরে কলাবউএর আরতি হয়, প্রসাদ পাওয়া যায় বলে এ আরতিতে কচিকাঁচাদের ভীড় অনেক বেশী। ষষ্ঠীর আগে অবধি কলাবউএর পুজোর পালা একএকদিন একএকজনের। প্‌ঞ্‌চমীর পালা আমাদের, সেদিন সকাল থেকে কতবার যে মন্দিরে যাওয়া হয় মায়ের সাথে, বন্ধুদের সাথেও একটু দুরত্ব হয় সেদিন, আজ কলাবউ আমাদের, যে সে কথা! প্রসাদ আমার মা দেবে, মা বেছে বেছে নারকোল আর খেজুর আমাকে দ্যায়। আরতির সময় ছোট ঝাঁঝটাও আমাকে বাজাতে দেওয়া হয়, ছোড়দা ভারী ঘন্টা টা বাজায়, ফুলদি শাঁখ, মায়ের মত করে।

    ষষ্ঠীর দিনে সকালে যুগলজেঠু মায়ের চোখ আঁকে, সেসময় কাউকে দেখতে নেই, সেদিন আমরা ঠাকুরদালান ছেড়ে কোথাও যাইনা, এত কিছু ঘটনা ঘটতে থাকে আশেপাশে, মিস করা যায়না। আমগাছে নহবত বাঁধে একদল তো একদল মন্দিরের চারধারে আমপাতার মালা লাগায়। দুপুর নাগাদ জেঠুর দল লক্ষ্মী, সরস্বতী কাত্তিক গণেশ কে তুলে মা দুগ্গার পাশে যেখানে যার জায়গা মত বসিয়ে মেড় লাগিয়ে রেডি করে মালাকারদের হাতে দিয়ে দেয়। মেড় টা যে কি সুন্দর আঁকা, আমি আগেই ভাল করে দেখেনি, মাঝখানে শিব, তারপরে রাম সীতার বিয়ে কৃষ্ণ রাধার ঝুলন, কালীয়নাগ কেউ বাকী নেই, তুলে দিলে আর ভাল করে দেখা যায়না, মা দুর্গা আড়াল করে থাকে।
    এইসব এর সাথে এ বাড়ি ও বাড়ি লোক আসতে থাকে, একের পর এক রিক্সা, গাড়ী। যাদের বাড়ী আসছে তারা ছুটে চলে যাচ্ছে আগে খবর দিতে। যত দিদিরা পিসীরা আসছে শ্বশুরবাড়ী থেকে সবাই মন্দিরে দাঁড়িয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে তবে নিজেদের বাড়ীর দিকে যাচ্ছে। "কার মেয়ে এটা? ওমা কাকার ছোট মেয়ে, এত বড় হয়ে গেছে! দুগ্গাকাকীমার মত মুখখানা।" একটু লজ্জাও পেয়ে যাচ্ছি মাঝেমাঝে অতিরিক্ত আদরে আর গাল টেপায়। আমার মায়ের শ্বশুর বাড়ীর আদরের নাম দুর্গা, এও একটা কারন দুর্গাপুজোর সঙ্গে আমার এতটা আবেগ কেন! চওড়া লালপাড় শাড়ী সিঁদুরের টিপে গয়নায় আঁচলের চাবির গোছায় কখনো কখনো মন্দিরের ভেতরের মুখ আর আমার হাত ধরে বাইরে দাঁড়ানো মুখটা আমার ছোট্ট দৃষ্টিতে একাকার হয়ে যেত!

  • pipi | 141.80.168.31 | ১৭ অক্টোবর ২০০৮ ২১:৪৩631288
  • খুব ভাল লাগছে। তারপর?
  • shrabani | 59.94.97.45 | ১৮ অক্টোবর ২০০৮ ০৯:০৬631289
  • ষষ্ঠীর দিনটা যে কি মজার, আমার তো বেস্ট দিন মনে হয় পুজোর। কোথায় যাব কি করব ঠিক করতেই হিমশিম খেতাম, শুধু আমি না, রিন্টু কুমকুম বুড়ি বিজু সবার একই অবস্থা! বাড়িতে এত লোকজন নতুন জামা আসছে সেসব নিয়ে বসব না মন্দিরের কাছে এত কিছু হচ্ছে তা দেখব!
    বেল গাছের তলা আর আশেপাশে পরিস্কার করছে বিমলদারা। বাবা বলে ওরা সব ঠাকুরের জমি চাষ করে আর তাই পুজোতে কাজ করে। সেসব জানিনা তবে পুজোর কদিন এরা সব পালা করে এর ওর বাড়ীতে খায়। আজ ষষ্ঠীতে যেমন সবাই আমাদের বাড়ি খায়, বাবা আজ সব্বাইকে খাওয়ায়। লক্ষ্মীকাকার বাড়ির সব, ময়নাদের বাড়ির আর এরা তো আছেই। গানের দলও আজ আমাদের বাড়িতে খাবে।

    বাবা আমায় শিখিয়েছে আমাদের পুজোর গানকে বলে শিবায়ন গান। দুপুর থেকেই এসে গেছে গানের দল। ওরা এ কদিন স্কুল বাড়ীতে থাকে, আমার রাস্তা পেরিয়ে সেখানে যাওয়া বারণ একা একা। রিন্টু কালুরা ঘুরে এসেছে, টাটকা খবর পাওয়া গেল ওদের কাছে। দুগ্গামামা বিড়ি খাচ্ছিল ওরা দেখেছে। দুগ্গামামা মানে যে দুগ্গা সাজে, সে যে ছেলে সেটা আমরা সবাই জানি, তাই জন্যই তো তার নাম দুগ্গামামা, তবে সে বিড়ি খাচ্ছিল শুনে একটু খারাপ লাগে! এইজন্যই আমাদের বাড়ীর দিদি দাদারা সব গানের দল নিয়ে হাসাহাসি করে, কেউ গান শুনতে চায়না। কিন্তু আমার তো দারুন লাগে, আমরা সবাই সন্ধ্যে থেকে আসরের মধ্যে গিয়ে বসে থাকি। আরতির পরেই আটচালা থেকে সবাইকে তুলে দিয়ে সতরঞ্চি পাতা হয়। আমি প্রত্যেক দিনই জেঠাই কে বলি আমাকে রাতের খাবার টা গান শুরুর আগে দিয়ে দিতে, কিন্তু দেয়না। কি যে হাবিজাবি রান্না করে রাতদুপুর অবধি, অদ্ধেক তো আমি খেতেও পারিনা তবু আগে আগে দেবেনা আর প্রতিদিন আমায় দাদা বা বাবা গিয়ে আসর থেকে তুলে নিয়ে যায় খাবার জন্য, তারপরে আর যেতে দেয় না। অথচ আমি যখন ফিরে গিয়েও গান গুলো গুনগুন করি তখন বাবা বলে "বা: বেশ গাইছিস তো, আবার বল তো, ভবের ভৈরবী ভবানী বানী, বানী স্মরনে..."। কি করে পুরো গাইব, কোনোদিনই তো পুরো শোনা হলনা!
    দুগ্গামামাই একমাত্র যে শাড়ী পরে সাজে, আর সবাইতো এমনিই। শাড়ী পাউডার আলতা এসব তো বৌদি দিদিরাই দেয় দুগ্গামামাকে, তবু যখন দুগ্গামামা আসরে আসে সব হেসে গড়িয়ে পড়ে। আসরে আমাদের বাড়ীর কেউই বসেনা, আমরা ছোটোরা আর অন্য পাড়ার বুড়ো বুড়িরা। দুর দুর থেকে লন্ঠন হাতে আসে সব। গান খারাপ হলে কি আসত? আমাদের বড়রা বসবে একটু দুরে বৈঠকখানায়, তাও ছেলেরা নয় মেয়েরাই বেশী। তবে গান শোনে না হাতী, শুধু গল্প করে। পুজোয় সবাই হয় কাজ করে নয় গল্প করে। আরতির সময়, বলির সময়, বেলবরনে যে যেখানে যায় দাঁড়িয়ে গল্প করে তখন আর মা বাবাদের খাওয়া ঘুমের কথা মনে থাকেনা।
  • Du | 71.170.214.49 | ১৮ অক্টোবর ২০০৮ ২০:২২631290
  • ভীষণ ভাল লাগছে, শ্রাবণী।
  • shrabani | 59.94.97.81 | ১৯ অক্টোবর ২০০৮ ১০:৩৪631291
  • "না বুঝিয়া লোকে বলে এ এ এ
    শঙ্কর ভিখারী ই ই ই ই
    কুবের ভান্ডার যাহার লক্ষ্মী আজ্ঞাকারী......."

    বিভুতি বাবু যখন গলা তোলেন তখন আমরা মন্ত্রমুগ্‌ধ, আসরে সেই যাকে বলে ছুঁচ পড়া নিস্তব্ধতা। বিভুতি বাবু মূল গায়ক আবার শিবও সাজে। কি গমগমে গলা, এই লম্বা চওড়া, সামনে যেতেই ভয় করে। শিব সাজলেও তাকে কিন্তু কেউ শিবমামা বলেনা সবাই বিভুতিবাবু বলে, আমরা ছোটোরা জেঠু বা দাদু। তবে ওর মাথায় এক বিশাল টাক। দুগ্গামামারও টাক আছে, কিন্তু সে পরচুলো পরে। দুগ্গামামার হাতে একটা সাদা চামর থাকে। একটা পায়ের পাতা একটু তুলে তুলে আসরে ঘুরপাক খায় অন্যদের গানের সাথে সাথে আর মাঝে মাঝে অডিয়েন্সের মাথার ওপর দিয়ে চামরটা ঘুরিয়ে দেয়।
    সেই চামর আমাদের যার মাথায় পড়ে সে নিজেকে ধন্য মনে করে। অবশ্য দিদি বলে দুগ্গামামার চামর কোনোদিন পরিস্কার হয়না ওতে উকুন থাকে। পরদিন সকালে আমার চুল আঁচড়াতে গিয়ে শুধু ঠোনা মারে আর চুলগুলোকে টেনে টেনে দেখে, উকুন ঢুকেছে কিনা। লাগছে বললেও ছাড়েনা!
    ও, বলা হয়নি, পঞ্চমী থেকে আমার দাদা দিদিও এসে যায় আর ছাড়া গোরুদের (ওদের ভাষায়) শাসনের ভার তুলে নেয় নিজের নিজের মত করে। দিদি শুধুই আমাকে ধুলোভর্তি দেখে পরিস্কার করতে চায় আর সাজাতে চায় দুই চার চড় থাপ্পর সহযোগে। আর দাদা পড়তে বসতে বলে। আমার দাদা নাকি এবাড়ীর সবচেয়ে ভাল ছেলে, পড়াশোনায় দারুন। মা শুধুই বলে পড়াশোনায় দাদার মত হতে। ভালো তো ভালো তাই বলে পুজোর দিনে পড়তে বসাবে। নিজে শুধুই ওপরের টঙে উঠে মোটা মোটা বই নিয়ে খাটে উপুড় হয় বলে কি আমদেরও পুজোর সময় সব ছেড়ে ছুড়ে বই খুলে বসতে হবে! এ ব্যাপারে ফুলদি আর আমি একমত, দাদাকে দেখলেই আমরা পালাই, শুধু বাবা সামনে থাকলে থাকি। বাবার সামনে দাদা পড়ার কথা বলতেই পারবেনা, বাবা হেসে উড়িয়ে দেবে!

    যাক গানের কথা বলি। ষষ্ঠীর দিন পালা সেরকম কিছু হয়না, শুধু গান হয়, তাও আটচালায় নয় বেলতলায়, বেলবরণের আসরে। ঐদিন যে গান হয় তাকে আগমনী গান বলে আমি বড়দের কাছে জেনেছি। কি ভালই না গায় সকলে, ইস ওরম যদি গাইতে পারতাম! অনেকের চোখই ছলছল করে গান শুনে। বাবা জেঠুরা তো বা: বা: করে ওঠে তবে বিভুতিজেঠু সেসব শোনে বলে মনে হয়না। একমনে চোখ বন্ধ করে গেয়েই যায়।
    "যাও যাও গিরি আনিতে গৌরী, উমা মা আমার কাঁদিছে।
    অথবা
    এবার হর এলে পরে বলব উমা ঘরে নাই,
    ....
    শুনি নাকি পরস্পরে, জামাই আমার ভিক্ষা করে"

    আমি ভাবি কি ভালই না হয় যদি উমাকে না পাঠানো হয়, সারা বছর দুর্গাপুজা!
    সপ্তমী থেকে শুরু একের পর এক ইন্টারেস্টিং পালা, শিবের বিয়ে, কাত্তিকের জন্ম, সতীর পিতৃগৃহে যাত্রা, শাঁখা পরানো, আর শেষ দশমীতে দক্ষযজ্ঞ।
    শাঁখারী হন সেই বিভুতি জেঠুই, আসলে তো শাঁখারী ছদ্মবেশী শিবই। তবে জেঠু ঐদিন মাথায় নামাবলীটা পাগড়ি করে নেয়। ওদিন আসরে প্রথম সারিতে বসতে না পেলে সব মাটি, শাঁখা পরানো দেখাই যায়না।
    আর সতী যখন রাগ করে পিতৃগৃহে যায়, সেদিনতো একেবারে রুদ্ধশ্বাস নাটক, শিব যখন আসরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে গমগমে গলায় চিৎকার করে বলে,
    "বাপ বটে বড়লোক বল গিয়া তারে
    জঞ্জাল ঘুচাও গিয়া জনকের ঘরে।।"
    আর দুগ্গামামার পাউডার কাজল ঠোঁটের আলতা ভেদ করে জল নামে, আমরা আসরের লোকে ছেড়ে, বৈঠকখানায় বসা গল্পবাজদেরও গল্প থেমে যায়!
  • Tirthang | 128.103.186.75 | ১৯ অক্টোবর ২০০৮ ১০:৩৯631292
  • বা:!
  • sayan | 24.0.145.33 | ১৯ অক্টোবর ২০০৮ ১২:১৪631294
  • অসাধারণ, শ্রাবণী।
  • Blank | 59.93.214.119 | ১৯ অক্টোবর ২০০৮ ১২:২৩631295
  • একটা সাদা কালো পুরনো গন্ধের সিনেমা মনে হলো। দারুন শ্রাবণী দি।
  • d | 117.195.39.191 | ১৯ অক্টোবর ২০০৮ ২২:২০631296
  • দুর্দান্ত!
    যে পুজো আমি কোনোদিন দেখিনি ...... পুজো যেরকম রংরূপ নিয়ে আমার কাছে কোনোদিন ধরা দেয় নি, সেই বর্ননা পড়তে এত্ত ভাল লাগে ..... এত্ত ভাল লাগে।

  • Du | 71.170.214.49 | ১৯ অক্টোবর ২০০৮ ২২:২৮631297
  • ঠিক একথাই আমারও মনে হচ্ছিল, দ। তাই নস্টালজিয়ার বাইরে এ এক দারুন ভাল লাগা জানা।।
  • kd | 59.93.247.113 | ২০ অক্টোবর ২০০৮ ০১:২৮631298
  • এই ছাবনিটা কি পাল্লিনের কেউ হয়? একই রকম মনকাড়া লেখা। আরও আরও লেখো এমন, মা। তোমার হাতটাকে সোনায় বাঁধিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
  • kd | 59.93.247.113 | ২০ অক্টোবর ২০০৮ ০১:৩০631299
  • সরি, ভেরি সরি, শ্রাবণী। একটু ইমোশানাল হয়ে গিয়েছিলুম। ছেড়ে দাও।
  • Tim | 24.127.39.26 | ২০ অক্টোবর ২০০৮ ০৩:২০631300
  • খুব ভালো লাগলো। এরকম পুজোর কথা যতই শুনি, ততই সামনে থেকে না দেখার আপশোষ বাড়ে। থ্যাংকু শ্রাবণীদি।
  • shrabani | 124.30.233.105 | ২০ অক্টোবর ২০০৮ ১১:২০631301
  • ষষ্ঠীর দিনে যে কত কি হতে থাকে কোনটা আগে বলি কোনটা পরে! সাধে কি এই দিনটা আমার সবচেয়ে প্রিয় দিন। আমি তো অন্য দিন দেরী করে উঠি, সেই যে সবার চায়ের পাট চুকিয়ে রেডিওতে যখন স্থানীয় সংবাদ হয়, মা ওপরে ওঠে, বাসী বিছানা তুলতে আর আমাকে তুলতে। ছুটির দিনে আমি কক্ষনো ভোরে উঠিনা, কেউ ডাকেওনা। কিন্তু ষষ্ঠীর দিনটা আলাদা, সেই কাকভোরবেলা তখনও চারধার ভাল করে দেখা যায়না কুয়াশায়, বাবা এসে আমাকে আর ফুলদিকে ডাকে, "মাছ ধরা দেখবিনা, ওঠ ওঠ, জেলেরা নেমে পড়ল পুকুরে।" ব্যস, আমরাও লাফিয়ে উঠে পড়ি ঐ মাছধরা কথাটা শুনলেই। আজ আমাদের পুকুরে মাছধরা হয় কারন আজই সবচেয়ে বেশী লোক খায় বাড়িতে। পুজোর সময় রোজ ই কোনো না কোনো পুকুরে মাছ ধরা হয়, আগে থেকে লোকে জেনে নিয়ে সেখানে পৌঁছে যায় মাছ কিনতে। অন্যদিন কেনা মাছ বা লক্ষ্মীকাকার ছোটো জালে ঘাটের সামনে থেকে ধরা মাছ। কিন্তু আজ জেলেরা এসে বড় জাল দিয়ে ইয়া বড় বড় মাছ ধরবে, ব্যাপারই আলাদা!

    উঠে মুখে চোখে জল দিয়ে এক ছুট্টে দুজনে পুকুরধারে, দাদারা অলরেডি হাজির আরও অনেকে আছে, হাল্কা শীত, জেঠুদের গায়ে গরম চাদর। বাবা আমাদের হাত ধরে থাকে শক্ত করে, পুকুরপাড় বলে কথা। ছোটোপুকুর এ অঞ্চলের অন্যতম গভীর পুকুর বলে বদনাম সুনাম দুইই আছে। আমার চোখ জেলেদের দিকে, কালো কালো চেহারা, কালো জলে মিশে গেছে, পরনের কাপড় যতসম্ভব ছোট করে বাচ্চাদের মত করে পরা, মাথা গা দিয়ে জল টুপ টুপ করে পড়ছে, কখনো ঝপাং করে ডুব দিচ্ছে আবার হুশ করে দুরে ভেসে উঠছে। বড় জাল ফেলা হয়েছে, জাল দেখা যায়না শুধু জালের কালো কালো কাঠি পুকুরময়!
    দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পা ব্যাথা করে তবু উৎসাহ কম হয়না। সবাই চাপা গলায় কথা বলে, জোরে শব্দ করলে মাছ পালিয়ে যাবে। অবশেষে জেলেরা জাল তোলে, সে এক দেখার মত ব্যাপার। অর্ধেক জেলে সারি সারি এক পাড়ে, বাকি অর্ধেক আর এক পাড়ে, মুখে অদ্ভুত শব্দ করতে করতে দ্রুত গতিতে একসাথে জাল গুটিয়ে নিয়ে আসে। আমার খুব মজা লাগে দেখতে কেমন যেন দু পক্ষের খেলা দেখছি মনে হয়। ঐ বিশাল জালে কতই না মাছ বড় ছোট সব সাইজের ছটপট করতে থাকে, আমরা বাবার হাত ছাড়িয়ে ছুট দিই, জালের কাছে। বাদল জেলে জাল তুলতে তুলতেই মাঝে মাঝে মাছ ধরে আবার পুকুরে ছেড়ে দেয়, আমার রাগ হয়ে যায়, আমাদের মাছ ও ছেড়ে দিচ্ছে কেন? বাবাকে তাড়াতাড়ি গিয়ে ব্যাপারটা জানাই। বাবা হাসে, বোকা মেয়ে। তখনই জানতে পারি যে যেসব মাছ বড় হয়ে গেছে আর বড় হবেনা তাদেরই খালি ধরতে হয়। যেসব মাছ ছোটো কিন্তু আরও বড় হবে,তাদের আবার পুকুরে ফিরিয়ে দিতে হয় আর এটা খুব তাড়াতাড়ি করতে হয়, বেশীক্ষণ ডাঙায় থাকলে ওরা পুকুরে ফিরে মরে যাবে!

    মাছ ভাগ শুরু হয়, জেলেদের আর আমাদের। জেলেরা আমাদের পুকুর চাষ করে সারাবছর তাই ওরা ভাগ পায়। বড় জালে সব বড় বড় মাছ। ভাগ্যিস, আমার ছোটমাছে কাঁটা লাগে, খেতে পারিনা। যেদিন ছোটো মাছ রান্না হয় আমাকে খাওয়াতে মায়ের প্রাণ বেরিয়ে যায় (মা বলে)। আমি বড় মাছেরও শুধু পেটি খাই, অন্য কিছু দিলেই মা বা আর কাউকে কাঁটা বেছে দিতে হয়। ফুলদি আবার মাছের লেজা খেতে ভালবাসে আর বলে ল্যাজা খেলে নাকি রাজা হয়! দরকার নেই আমার রাজা হয়ে, গলায় কাঁটা ফুটলে যা কষ্ট! আমার গলায় প্রায়ই কাঁটা ফোটে আর তখন মা শুকনো ভাতের নাড়ু পাকিয়ে বলে "গিলে ফেল, না চিবিয়ে গিলে ফেল"। সে যে কি শাস্তি, চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে!

    বাবা আমাদের বলে একটা একটা মাছ বেছে নিতে, আমরা দেখেশুনে মাছ বেছে নিই। বাবা ছোড়দাকে পাঠায় মাকে জিজ্ঞেস করতে ক কেজি মাছ রাখা হবে। মা হিসেব করে বলে দিলে , জেলেকে বাবা সেইমত ওজন করতে বলে আমাদের ভাগের মাছ থেকে। লক্ষ্মীকাকার নাতি পঞআ আর ময়নার দাদা বিশু মাছ ঝোড়া তে করে ঘরে নিয়ে যায়, আমাদের মাছ দুটো তার মধ্যে থাকে। বাকি মাছ বাবা জেঠুদের বাড়ি, পাকাবাড়ী সব বাড়িতে পাঠানোর জন্যে ভাগ করতে বলে লক্ষ্মীকাকাকে। অনেকে এসে জেলেদের কাছে কিনতে থাকে মাছ, পুজোয় বাড়ীভত্তি লোকজন এসময় অল্প মাছে হয়না। পুকুরপাড়ের ভীড় আস্তে আস্তে হাল্কা হয়, ফুলদি আমার হাত ধরে টানে, আমি তবু বাড়ি যাইনা, খামারের একপাশে দুজন জেলে জাল পরিস্কার করে,সেদিকে তাকিয়ে থাকি। ছোট ছোট গেঁড়ি গুগলি মাছ পড়ে জাল ঝাড়তেই। ময়নাদের পাড়ার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দুরে দাঁড়িয়ে ছিল এতক্ষণ, জাল ঝাড়া শেষ হতেই দৌড়ে এসে পাতায় তুলে নেয় গেঁড়ি গুগলি আর ছোট মাছ।

  • shrabani | 124.30.233.105 | ২০ অক্টোবর ২০০৮ ১৩:০৩631302
  • বাড়ির উঠোনে তখন হৈ হৈ ব্যাপার, তিনটে বঁটি নিয়ে মাছ কুটতে বসেছে ময়নার মা, লক্ষ্মীকাকা নিজে আর মনিকাকা। মা জেঠাইএর চান হয়ে গেছে, মন্দিরে ষষ্ঠী পুজো, মায়ের আজ ষষ্ঠী। আমরা ব্রাশ করে উঠতে না উঠতেই, ঢ্যাং কুড় কুড় ঢ্যাং, ঢাক বেজে ওঠে, ঢাকীরা এসে গেছে। এসেই প্রথমে ওরা সব বাড়ী বাড়ী গিয়ে একটু বাজনা শুনিয়ে তারপরে মন্দিরে যায়। শেষদিনও তাই, চলে যাবার আগে সব বাড়ীতে ঢাক বাজিয়ে, পয়সা কাপড় যা দেয় লোকে, নিয়ে তবে যায়। জেঠাই তড়িঘড়ি একটা বড় ধামায় মুড়ি আর মুড়কি মেশাতে আরম্ভ করে, সব আসবে জলখাবার দিতে হবে, আর মা পুজোর কাপড়ে দরজা আগলে দাঁড়ায় যাতে আমরা হরলিক্স শেষ না করে ঢাকের পেছনে দৌড়তে না পারি!

    আমরা চোঁ চাঁ করে কিছুটা নাকে মুখে খেয়েই বিস্কিট হাতে নিয়ে বাইরে দৌড় দি, মাকে সরে যেতেই হয়, বাসী কাপড়ে ছোঁয়ার ভয়ে! ততক্ষণে পুরো পাড়ার বাচ্চারা বাইরে। সব বাড়ী তো পাশে পাশেই, ঢাকীরা এক বাড়ী শেষ করেই অন্য বাড়ীতে শুরু করছে। এই সব সময়ে আমার যা রাগ হয়না, আমাদের বাড়ীটা এক কোণে বলে সব শেষে আমাদের বাড়ী আসে!
    তবে ফুলদি বলে সে জন্যে ওরা আমাদের বাড়ীতে বেশীক্ষণ বাজায়, থাকেও বেশীক্ষণ! আমাদের বাড়ীতে ওরা ভেতরের উঠোনে এসে দাঁড়ায়। ঢাকের সঙ্গে কাঁসি বাজায় একটা এতটুকু পুঁচকে ছেলে, তার নাচের ভঙ্গি দেখলে আমার কুমকুমের রিন্টুর আমাদের সবার খুব হাসি পায়। তাও যদি ঢাক বাজাত, বাজায়তো ঐ একটুখানি কাঁসি, তার ভাবখানা দ্যাখ!
    আমরা সবাই ঢাক বাজাতে পারি। যখন আরতি বলিদান এইসবএর ফাঁকে ঢাকীরা ঢাক নামিয়ে রাখে, বাড়ির ছেলেরা বাজায়, অবিশ্যি বড় ছেলেরা, ছোড়দা সুনীলদাদের মত, কিন্তু রিন্টু কালুরাও তখন একটু বাজিয়ে নেয়। তবে ওরা ঢাকীদের মত ঢাক কাঁধে ঝুলিয়ে বাজাতে পারেনা, মাটিতে রেখে ঢাকের একদিকে বাজায়। গতবারে রিন্টু আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে, ঢাকীরা চান করতে গেছিল দশমীর দিনে, কেউ আশেপাশে ছিলনা তখন। আমি বেশ বাজালুম, বোলটা রিন্টু বলে দিয়েছিল,
    "শিবের গাজন, ভক্ত নাচন
    শিবের গাজন, ভক্ত নাচন"
    একটু অদ্ভুত লাগছিল, দুগ্গাপুজোর ঢাকে কোনো দুগ্গার বোল নেই, গাজনের বোল! রিন্টুটা ঠিক ঠাক জানে তো? তবে আর কেউ তো আমায় শেখাবেনা উল্টে ছোড়দা জানতে পারলে মা বাবাকে বলে দেবে। বাবা বকবেনা তবে বারন করবে। আর বাবা বারন করলে সেটা কিছুতেই করা যায়না।

    ঢাকীরা বাজানো শেষ করে উঠোনের ধারিতে বসে, বাবা ওপর থেকে নেমে আসে, লক্ষ্মীকাকাকে বাজারের টাকা দেয়। ছোড়দাও আজ বাজারে যাবে। দাদা বারান্দায় দোলায় বসে বাজনা শুনছিল। বাবা দাদা ওদের সঙ্গে কথা বলে, তার ফাঁকে জেঠাই ধামা নিয়ে এসে ওদের মুড়িমুড়কি আর নাড়ু দেয়, ওদের আনা ছোটো কাপড়ের থলেতে।

    এই দিনে সবসময়ই কেউ না কেউ আসতে থাকে বাড়ীতে পুজো নিতে চাঁদা নিতে, বাবার সঙ্গে দেখা করতে, চায়ের জল চড়ানই থাকে স্টোভে। কিন্তু সবচেয়ে আমার মজা লাগে ভিখারীদের দেখতে। পুজোর সময় রোজই ভিখারীরা আসতেই থাকে। অন্য সময় শুনেছি খালি রবিবারে ভিখারী আসে পাড়ায়।কিন্তু পুজোয় কোনো রেস্ট্রিকশন নেই, সবদিনেই আসতে পারে। সকালে চান করে উঠে একটা ছোটো হাঁড়িতে চাল ভরে রোজ জেঠাই দুয়ারে রাখে আর ঝুড়িতে আলু। এক বাটি চাল আর একটা আলু দেওয়া হয়। তার সাথে মুড়িমুড়কি। শুধু অষ্টমীর দিনে একটা দুটো নাড়ু।আমি থাকলে জেঠাই আমাকে চাল আলু দিতে দেয়, নিজে পিছনে পিছনে গিয়ে মুড়িমুড়কি দেয়। সবাই যা দেওয়া হয় তা নিয়ে চলে যায়, কেউ কেউ আর এক বাটি চাল চায়। জেঠাইয়ের মেজাজ ভাল থাকলে দেয় না হলে খুব বকে। জেঠাইকে সবাই ভয় করে, আমরাও কারন মা জেঠাইয়ের কথা সবার আগে শোনে।

    কেউ কেউ আবার স্পেশাল ভিখারী থাকে তারা এসে মা বাবাকে খোঁজে। মা আগের বছর কাপড় দেবার প্রমিস করে গেছিল তা মনে করিয়ে দেয়। মায়ের মনে না থাকলেও এরকম এমারজেন্সীর জন্য মায়ের পুরোনো কাপড়ের স্টক মজুত থাকে। কেউ কেউ আবার ভিক্ষা না নিয়ে খেতে চায়। যেমন শম্ভু কানা, বুড়ো মানুষ ভালো করে চলতে পারেনা, সবসময় খকখক করে কাশে, হাতে একটা একতারা। পা টেনে টেনে আমাদের দরজার সামনে এসে গান জুড়বে,
    "একবার বিদায় দে মা... খক খক খক
    ঘুরে আসি.. খক খক খক খক"

    এই একটা লাইন ই চলতে থাকে ঘুরে ফিরে।
    জেঠাই ওর গলা শুনলেই "মরন " বলে মুখভঙ্গী করে। কিন্তু বকাবকি করেও না খেতে দিলে সে কিছুতেই যায়না। যেদিনই আসুক খাওয়া তার বরাদ্দ।

    আর একজন আছে যে আমাদের পাড়ায় শুধু বড় জেঠুর বাড়ি ভিক্ষে করতে আসে। কালো মতন লোকটি ফরসা কাপড় পরনে, গলায় কন্ঠী। সে নাকি বোস্টম, ভিক্ষা করা নাকি ওর ধর্ম, নাহলে ওর জমি জায়গা সব আছে।উনি শুধু চেনা বাড়ীতে ভিক্ষে করেন। জেঠু ওদের গ্রামের স্কুলের মাস্টার ছিল। আমার খুব আফশোষ হয় আমার বাবা কেন ওদের স্কুলের মাস্টার হলনা! এই লোকটি খঞ্জনি বাজিয়ে একটিই গান গায় যা আমার দারুন ভালো লাগে, মানে না বুঝলেও,
    "আর কেন মন ভ্রমিছ বাহিরে
    চলনা আপন অন্তরে...
    আআর কেন ও ও মন ও ও ও ও "
    পুজোর সময় অনেক ভিখারীই পার্টটাইম ভিক্ষা করতে আসে। অন্যসময় তারা কাজ করে।

    ষষ্ঠীর দিন সব বাড়ি থেকে যায় দুর্গার গায়ের গিরিমাটি রং আনতে যুগল জেঠুর কাছ থেকে, আমি আনি আমাদের বাড়ির জন্য। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরে ফুলদি আর দিদি সেই মাটি গুলে দেওয়ালে দেওয়ালে আল্পনা দেয় ।আমি দেখি আর ভাবি কবে বড় হয়ে ওদের মত আমিও আল্পনা দেব।

    বেলা পড়ে বিকেল হয়, প্রথম নতুন জামাটা বেরোয়, দিদির টানাটানি সাজগোজ করাতে। রান্নাঘর কাঠের ঘর দুই জায়গায় রান্নায় ব্যস্ত মনিকাকা, জেঠাই। মা ষষ্ঠীর উপোসে কাহিল, তাও সব দেখছে শুনছে। অনেক লোকের রান্না! বাড়ীতে সবার প্রচন্ড ব্যস্ততা! আমার ভালো লাগেনা, আমি যাই এক মন্দির থেকে আর এক মন্দিরে, বেলতলায়। অন্যরাও আসে, দাদার আনা ফুলঝুরি জ্বালাই, ছোড়দা বড় বড় তুবড়ি, চকোলেট বোম।
    অনেক রাতে বেলবরনের শেষে বাড়ি ফিরি, আধোঘুমে। মা চোখে জল দিইয়ে খেতে বসায়,জেঠাই হাতে কি একটা দিয়ে চোখ খুলতে বলে,
    "চেয়ে দ্যাখ যুগল জেঠু কি দিয়ে গেছে।"
    আমি চোখ খুলি, তারপরেই ঠোঁট ফুলে যায় চোখ দিয়ে জল ঝরে ঝরঝর করে। সবাই অবাক।
    আমি বলতে পারিনা আমার লাল ঠোঁট সবুজ টিয়া হয়ে গেছে হলুদ ঠোঁট নীল রঙের নাম না জানা পাখি!
  • pipi | 141.80.168.31 | ২০ অক্টোবর ২০০৮ ১৫:০১631303
  • যৌথ পরিবারের পূজোগুলো কি আগের কালে সব একইরকম হত?? এ যেন আমারই বাড়ির পূজো। আর আমিও ছোট মাছ খেতাম না ঐ কাঁটার ভয়ে। বড় মাছ শুধু পেটি, না হলেই গলায় কাঁটা বিঁধতই আর সবাই বলত এর নিগঘাত গলার নলী সরু নয় আনমনে খায় নইলে খালি খালি ওরই গলায় বেঁধে কি করে। অথচ পাতে মাছ পড়লেই আমি এমন এক্সট্রা কশাস হয়ে খেতাম যে আন বান সব মনই ঐ মাছটুকুর উপরেই জড়ো হত তাও কাঁটার খোঁচা।
    এদেশে এসে একদিক দিয়ে খুব ভাল আছি। মাছের ল্যাঠা চুকেছে। কি আনন্দ:-)
  • R | 121.241.164.22 | ২০ অক্টোবর ২০০৮ ১৫:১৬631305
  • হুল্লাট হচ্ছে।পাগলা
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন