এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  গান

  • রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী অমিতা সেন

    Abhyu
    গান | ১৫ মে ২০১৪ | ১৪৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Abhyu | 107.81.103.243 | ১৫ মে ২০১৪ ০৭:৪০638620
  • অমিতা সেন রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী হিসেবে শ্রদ্ধার আসন দাবী করেন। আগে ভাবতাম উনিই অমর্ত্য সেনের মা, পরে জানলাম তা নয়। ওনারা আলাদা ব্যক্তি। তবে এনার ফ্যামিলিতেও যে আর কোনো বিখ্যাত লোক নেই তা নন। উনি বিনায়ক সেনের পিসিমা :)

    এ বছর ওনার জন্মশতবর্ষ।
  • Abhyu | 107.81.103.243 | ১৫ মে ২০১৪ ০৭:৪৬638631
  • ওনার গাওয়া একটা গান - চিনিলে না আমারে কি
    http://tinyurl.com/n2lsnv2
  • Abhyu | 107.81.103.243 | ১৫ মে ২০১৪ ০৭:৫৩638633
  • http://www.abasar.net/UniOld_Articles_amita.htm
    শান্তিনিকেতনে যারা পরিচিতি লাভ করেছেন অমিতা নামে সে রকম কয়েকজনই রয়েছেন। নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের মার নাম অমিতা সেন, যিনি প্রয়াত হয়েছেন ২০০৫ সালের ২২শে অগাস্ট। অজিত চক্রবর্তী ও লাবণ্যলেখার মেয়ের নামও অমিতা, দ্বিজেন্দ্রনাথের পৌত্র অজীনেন্দ্রনাথের স্ত্রী। ‘তপতী’ নাটকে অভিনয়ের পর রবীন্দ্রনাথ তাকে ডাকতেন ‘মহিষী’ নামে। বর্তমান প্রবন্ধটির রচয়িতা অমিতা সেন (ডাক নাম খুকু) জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৪ খৃষ্টাব্দে। তিনি শান্তিনিকেতনে দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে নিষ্ঠার সঙ্গে গান শিখেছেন; এর কিছুটা পরিচয় এই লেখাটিতেই পাওয়া যাবে। রবীন্দ্রসঙ্গীতে তার এতটাই দখল ছিল যে শোনা যায় তিনি পরবর্তী কালের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিক্ষক শৈলজারঞ্জন মজুমদারকেও (১৯০১ - ১৯৯২) একসময় কিছু গান শিখিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন দিনেন্দ্রনাথের পর অমিতা সেন সঙ্গীত ভবনের ভার গ্রহণ করুক; কিন্তু অমিতা কলকাতায় শিক্ষকতা করতে চলে আসেন; এখানে তিনি সুচিত্রা মিত্রকেও প্রথম দিকে গান শিখতে সাহায্য করেছিলেন বলে শোনা যায়। খ্যাতি লাভের জন্য তিনি কখনও লালায়িত ছিলেন না; একমনে নিষ্ঠা সহকারে কেবল সঙ্গীত সাধনায় মগ্ন ছিলেন। রমা মজুমদার এবং পরবর্তী কালে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত অমিতাও ছিলেন আশ্রম কন্যা। মৈত্রেয়ী দেবী তার ‘স্বর্গের কাছাকাছি’ গ্রন্থে লিখেছেন “ ।।। মায়ার খেলার গানের রিহার্সাল মনে পড়ে - অমিতা সেনের (খুকু) গান। কবি সঙ্গে গাইছেন – ‘অলি বার বার ফিরে আসে অলি বার বার ফিরে যায়, ।।।।।কলি ফুটিতে চাহে ফোটে না।’ অমিতা একবার গাইছে, কবি আবার তাকে সংশোধন করছেন। অলির মত একই গানের কলি ফিরে ফিরে আসছে - কথাটা এখানেও অন্য অর্থে সত্য হচ্ছে - গানের কলি তার পূর্ণরূপে বিকাশ হচ্ছে না - আমার অশিক্ষিত কান বুঝতেই পারছে না কোথায় পার্থক্য বা ত্রুটি হচ্ছে কিন্তু কবি সেই একটি লাইন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গাইছেন, বলছেন, - ‘কর্, আমার সঙ্গে কর্’। সেদিন আমি কবির ধৈর্য্য দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এত সহিষ্ণু শিক্ষক আমি আর দেখিনি।”
    অমিতার জন্ম ১৯১৪ খৃষ্টাব্দে, কিন্তু ১৯৪০ খৃষ্টাব্দে মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। তার গাওয়া কয়েকটি গান হল – ‘অধেক ঘুমে নয়ন চুমে’, ‘যে ছিল আমার স্বপন চারিণী’, ‘চিনিলে না আমারে কি’, ‘ওগো দখিন হাওয়া’।
    মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের বড় নাতি ও দ্বিপেন্দ্রনাথের ছেলে দিনেন্দ্রনাথের মৃত্যু হয় ১৯৩৫ খৃষ্টাব্দে। অমিতা সেন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন ১৯৪০-এ। অমিতাকে তাই খুব বেশি দিন দিনু ঠাকুরের স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হয় নি।
  • Abhyu | 107.81.103.243 | ১৫ মে ২০১৪ ০৮:২৭638634
  • অমিতা সেনের রচনা http://www.abasar.net/UniOld_Articles_amita.htm

    দিনেন্দ্রনাথ
    --------------

    শেলী একটি ছোট কবিতায় বলেছেন -

    "Music, when soft voices die,
    Vibrates in the memory,
    Odours, when sweet violets sicken
    Live within the sense they quicken."

    গুণীর গান যখন থেমে যায়, কোমল সুরের মীড়গুলি নীরব হয়ে যায়, সুরের রেশটি তখনও শ্রোতার প্রাণের মধ্যে অনুরণিত হ'তে থাকে। ফুল ঝরে যায়, সৌরভ তখনও মনকে আকুল করে।
    এই পৃথিবীর প্রাঙ্গণ বহু জনের সঙ্গেই ত আলাপ পরিচয় হয়, কিন্তু দৈবাৎ এক একটি মানুষের দেখা মেলে - যাঁদের হৃদয়ের সৌরভ, তাঁরা দূরে চ'লে গেলেও, প্রাণকে নিবিড় অনুভূতিতে পূর্ণ ক'রে রাখে।
    আমাদের দিন্দা ছিলেন এমনি একজন মানুষ। যে কেউ তাঁর কাছে গিয়েছে তিনি স্বতঃশ্রুত নিবিড় স্নেহে আপ্লুত করেছেন। ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, জ্ঞানী-গুণী অখ্যাত-অজ্ঞাতের ভেদ সে স্নেহের কাছে ছিল না। সহজে ভালবাসার এক দুর্লভ ক্ষমতা নিয়ে তিনি এসেছিলেন, যতদিন আমাদের মধ্যে ছিলেন, অকৃপণভাবে অযাচিতভাবে বিলিয়ে গিয়েছেন, তাঁর নির্ম্মল মধুর অনাবিল ভালবাসা। তাই আজ তাঁর অভাব আমাদের কাছে এত গভীর, এমন নিবিড়, এমন প্রত্যক্ষ হযে দেখা দিয়েছে।

    দিনেন্দ্রনাথের অতি নিকটে যাবার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। সঙ্গীতশিক্ষা নিয়েই এই পরিচয়ের শুরু, তারপর সেই পরিচয় তাঁর স্বাভাবিক স্নেহের আকর্ষণে অতি অল্পকালের মধ্যেই আত্মীয়তায় পরিণত হয়েছে। যদিও জানি, যতখানি তাঁর কাছে পেয়েছি তার কিছুই প্রকাশ করার শক্তি আমার নেই, তবু তাঁর সম্বন্ধে আলোচনা ক'রে তাঁর স্নেহের মধ্যে, তাঁর অতীত স্মৃতির মধ্যে নিজেকে অনুভব ক'রে নেবার একটু সান্ত্বনা, একটু তৃপ্তি আছে।
    প্রথম যখন বোলপুরে যাই, আমার বয়স তখন নয় বৎসর মাত্র। দিন্দার বিরাট শরীর দেখে, তাঁর সুগম্ভীর কণ্ঠস্বর শুনে তাঁকে একটু ভয়ে ভয়ে এড়িয়েই চলতাম। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারা গেল যে মানুষটি নিতান্তই আমাদের দলের লোক। সেই সময়ে তিনি শিশু-বিভাগের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে "বাল্মীকি-প্রতিভা" গীতাভিনয় করাচ্ছিলেন। দেখেছি তিনি শিশুর দলে শিশু হয়ে মেশে যেতেন, কোথাও বাধত না। শিশুরাও তাঁকে চিনে ফেলেছিল। আমরা ছোট ছেলেমেয়েদের দল তাঁর কোলের কাছে ব'সে গান শিখতাম, দস্যুদলের গানগুলি ছেলেরা যেমন উপভোগ করত তিনিও তেমনি মনেপ্রাণে উপভোগ করতেন, এবং অন্যের কাছেও উপভোগ্য ক'রে তুলতেন। দস্যুদলের সঙ্গে লম্ফঝম্ফ ক'রে তাদের যখন অভিনয় শেখাতেন, তখন তাঁকেও একটি বিরাট শিশু বলেই মনে হ'ত, আবার বালিকার পাঠ শেখাবার সময়ে তাঁর অপূর্ব্ব কণ্ঠস্বরে ও করুণ রসের অভিনয়ে সকলে মুগ্ধ হয়ে যেতেন। এই সময়ে আশ্রমবাসী আবাল-বৃদ্ধ প্রত্যেকেই, "শিশু-বিভাগের ঘরে দিন্দা এসেছেন", এই খবরটি কানে গেলে আর স্থির থাকতে পারতেন না, কাজ ফেলে ছুটে আসতেন। এই গীতিনাট্যটি একমাত্র তাঁরই শিক্ষার গুণে সুঅভিনীত হয়েছিল।

    এই অভিনয় হয়ে যাবার পর আমি দিনেন্দ্রনাথের কাছে নিয়মিত গান শিখতে আরম্ভ করি। আরও অনেকেই তাঁর কাছে গান শিখতে আসতেন এবং সেই সূত্রেই তাঁর সংস্পর্শে এসে তাঁর অকৃত্রিম স্নেহ লাভ করেছেন।
    গান শেখবার সময়ে দিনেন্দ্রনাথ সাধারণতঃ কোনও যন্ত্র ব্যবহার করতেন না। গান গেয়ে যেতেন, আমরা দুই-একবার শুনে পরে তাঁর সঙ্গে সঙ্গে গানটি গাইতাম। যতক্ষণ পর্যন্ত গানের সুরের প্রত্যেকটি সূক্ষতম কাজ আমাদের সম্পূর্ণ আয়ত্ত না হ'ত, ততক্ষণ কিছুতেই তিনি নিরস্ত হ'তেন না। সকল ছেলেমেয়েদের শেখবার ক্ষমতা সমান ছিল না, কিন্তু কখনও তাঁর ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটতে দেখি নি। কিছুতেই যেন তাঁর বিরক্তি হ'ত না, কেবল একটি বিষয় ছাড়া। সে আর কিছু নয়, ভুল সুর তাঁর কানে গেলে তিনি সইতে পারতেন না। যতক্ষণ সেটাকে শুধরে ঠিক সুরে গাওয়াতে না পারতেন ততক্ষণ যেন শিশুর মতই চঞ্চল হয়ে পড়তেন। গানে তাঁর ক্লান্তি কখনও দেখি নি।
    তিনি কারও সামনে নিজেকে জাহির করতে ভালবাসতেন না। অতবড় সঙ্গীতজ্ঞ হয়েও গান করতে বললে যেন কতকটা সঙ্কুচিত হয়ে পড়তেন। তাঁর মধুর গম্ভীর কণ্ঠ যে শ্রোতার পক্ষে এক অপরূপ বিস্ময় ছিল, এ কথা স্পষ্ট ক'রে বলতে গেলেই যেন অত্যন্ত সঙ্কোচবোধ করতেন। অনেক ব'লে-কয়েও যখন গান তাঁকে দিয়ে গাওয়াতে পারা যেত না, তখন একটা ওষুধ ছেলেরা বের করেছিল। রবীন্দ্রনাথের একটা গান অত্যন্ত বিকৃত ক'রে গাইতে আরম্ভ করলেই আর রক্ষা ছিল না, খানিকক্ষণ ছট্ফট্ ক'রে শেষে আর থাকতে না পেরে, "থাম্ থাম্, ও কি হচ্ছে ?" ব'লে চেঁচিয়ে উঠতেন, - তারপর গানের পালা শুরু হ'তে আর বিলম্ব ঘটতো না।
    ছল চাতুরী কপটতা তাঁকে কখনও স্পর্শ করে নাই। শিশুর স্বচ্ছতা তাঁর চোখে-মুখে জ্বল্-জ্বল্ করত, সেই চিরনবীন শৈশব নিয়েই তিনি চলে গেছেন।
    গানের ক্লাস করতে গিয়ে শুধু গানই হ'ত না। তাকে ক্লাস বললে ক্লাসের চপলতাপরিশূণ্য স্তব্ধ গাম্ভীর্য্য এবং ক্লাসের কর্ণধার-মহাশয়ের অভ্রভেদী মর্য্যাদা এবং শব্দভেদী প্রতিষ্ঠার মাহাত্ম্য নিশ্চয় ক্ষুণ্ণ হবে। গান শেখা হয়ে যাবার পর দিন্দা আমাদের গল্প করতেন; শুধু দিন্দাই নয় আমরাও তাঁর সঙ্গে গল্প করতাম। অসঙ্কোচে গল্প করতাম। কোথাও বাধা ছিল না - না বয়সের, না জ্ঞানের, না অনুশাসনের। ছোটদের সঙ্গে তিনি অমনই প্রাণ খুলে গল্প করতে ভালবাসতেন। আমি একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, "হ্যাঁ দিন্দা, আপনি ত অতবড়, তবে আমাদের মত ছোটদের সঙ্গে গল্প করতে ভালবাসেন কেন ?" হেসে বললেন, "দেখ্, ছোটদের সঙ্গেই আমার বেশী মেলে; যারা খুব প্রবীণ, খুব পাকা, তাদের কাছে গেলেই ভয়ে আমার কেমন সব ঘুলিয়ে যায়।"

    গানের ক্লাস করতে গিয়ে তাঁর কাছে অনেক বইও পড়েছি। দিনেন্দ্রনাথকে সকলে সঙ্গীতবিশারদ বলেই জানেন, কিন্তু অনেকেই হয় ত জানেন না যে তিনি নানা ভাষাবিৎ ছিলেন, নানা বিষয়ে তাঁর অভিনিবেশ ছিল। অধ্যয়ন তাঁর জীবনের একটা বিশেষ আনন্দের আশ্রয় ছিল। কয়েকটি ভাষা তিনি নিপুণভাবে আয়ত্ত করেছিলেন। তার মধ্যে ফরাসী, ইংরেজী, সংস্কৃত ও মৈথিলী ব্রজবুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। শান্তিনিকেতন ছেড়ে আসবার বছর দুই আগে প্রায় পঞ্চাশ বৎসর বয়সে তিনি ফারসী পড়তে আরম্ভ করেন এবং হাফেজ থেকে কবিতা বাংলা-কবিতায় অনুবাদ করেন। সে কবিতায় বড় চমৎকার সুর দিয়েছিলেন। দিনেন্দ্রনাথের বিশেষ উৎসাহের বিষয় ছিল নানা দেশের ইতিহাস ও ভূগোল। Geographical Magazine খুলে নানা দেশের ভূবৃত্তান্ত পড়তেন, ছবি দেখতেন আর বলতেন, " দেখ্, দেশভ্রমণ করবার বড় সখ ছিল। সে তো আর পূর্ণ হ'ল না, তাই এই সব দেখেই দুধের সাধ ঘোলে মেটাই।"

    নাট্যকলায় তাঁর দক্ষতার কথা আগেই বলা হয়েছে। "ফাল্গুনী", "বিসর্জ্জন", "রাজা" প্রভৃতি নাটকে তাঁকে রঙ্গভূমির উপরে যিনিই দেখেছেন তাঁকে আর এ বিষয়ে বলা বাহুল্য মাত্র। আবৃত্তিও যে তাঁর আশ্চর্য্য সুন্দর হবে সে ত সহজেই অনুমান করা যায়। কত কবিতা তাঁর মুখে শুনেছি। তিনি অত্যন্ত কাব্যানুরাগী ছিলেন। বই খুলে একবার বললেই হ'ল " পড়ুন না দিন্দা।" কি আশ্চর্য্য ক'রেই না তিনি আবৃত্তি করতেন। তাঁর মুখে কবিতা শুনলে সেটি আর ব্যাখ্যা ক'রে বুঝবার দরকার হ'ত না। আমরা ছিলাম যেন তাঁর মধুচক্র। নিজে তিনি কবিতাটির প্রাণের মধ্যে প্রবেশ করতেন, এবং কাব্যমঞ্জরীর অনাস্বাদিত মধুরস আহরণ ক'রে আমাদের শিশুচিত্তকোষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পরিপূর্ণ ক'রে তুলতেন সেই মধু রস।
    কেবল তাই নয়। সময়ে সময়ে তাঁর ক্লাসে রসনাতৃপ্তিকর রস-পরিবেষণেরও ব্যবস্থা হ'ত। এমন ক্লাস আর কোথাও কেউ পায় নি।
    এমনি ভাবে গানে-গল্পে হাসিতে-আমোদে পাঠে-আবৃত্তিতে সব দিক দিয়ে তিনি একটি রসচক্র রচনা ক'রে রেখেছিলেন।
    তা ব'লে কেউ যেন মনে না করেন, তাঁর ক্লাসে শুধু মজাই হ'ত বা কাজে অবহেলা ক'রে তাঁর সঙ্গে আমরা শুধু হাসিঠাট্টা করতে পেতুম। লেশমাত্র শৈথিল্য তিনি ঘটতে দিতেন না। যে-সময়ে যে-কাজটি করবার কথা, ঠিক সেই সময়ে সেই কাজ তিনি নিজে করতেন, অন্যকে দিয়েও করাতেন। দুপুরবেলা কলাভবনে একটার সময় দিন্দার রিহার্সেল নেবার কথা; আমরা সব কে কোথায় আছি একটু দিবানিদ্রার চেষ্টায়,- ঠিক সেই সময় রৌদ্রের ঝাঁঝ মাথায় ক'রে দিন্দা এসে উপস্থিত, আর এসেই হাঁকডাক শুরু ক'রে দিতেন। ভয়ে ভয়ে আমরা তাড়াতাড়ি খাতাপত্র হাতে এসে জুটলে গান শুরু হ'ত। প্রত্যেকের খাতায় গানগুলি ঠিকমত তুলে নেওয়া চাই, ফাঁকি দিয়ে কাজ ফেলে রেখে এর কাঁধের উপর দিয়ে ওর পিঠের উপর দিয়ে দেখে কোন রকমে কাজ সারলে চলবে না। পঁচিশ-ত্রিশ জনকে একসঙ্গে গান শেখাতে বসেও দিন্দার কান পড়ে আছে সুরের নিখুঁত টানের উপরে - কোন কোনায় কে এতটুকু বেসুর ক'রে ফেলল, তৎক্ষণাৎ ধরে ফেলতেন, আর, আগেই যেমন বলেছি,- ঠিক সুরটি আয়ত্ত না-করা পর্য্যন্ত কিছুতেই তার নিস্তার ছিল না। দিন্দাকে আমরা ভালবেসেছি, তাঁকে না-ভালবাসা আমাদের সম্ভব ছিল না, কিন্তু সেই ভালবাসার সুবিধা নিয়ে তাঁর প্রতি কোনো চপলতা কোন অ-সমীহতা প্রকাশ করার রাস্তা আমাদের ছিল না। বিপুল একটা সাগর-গম্ভীর ব্যক্তিত্ব তাঁর ছিল, যার সামনে এলে শ্রদ্ধায় সম্ভ্রমে মাথা আপনিই নত হয়ে যায়।

    বড় গায়ক এবং রবীন্দ্রনাথের "সকল গানের ভাণ্ডারী" বলেই দিনেন্দ্রনাথকে সকলে জানেন। কিন্তু তাঁর একটু বিশেষত্ব ছিল, সেটি স্পষ্ট উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে ব'লে মনে করি।
    সাধারণতঃ বড় গাযকরা এক-এক জন সঙ্গীতকলার এক এক বিশেষ দিকে দক্ষতা অর্জ্জন করেন। কেউ ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের এক ভাগ, কেউ অন্য ভাগ ভাল জানেন, কেউ করেন কীর্ত্তন, কেউ বা বাউল ভাটিয়ালী প্রভৃতি লোকসঙ্গীতেই মাতিয়ে দেন। বাংলা গানের মধ্যেও বৈচিত্র্য আছে, রবীন্দ্রনাথের গানের একটা বৈশিষ্ট্য, আবার সুরসিক কবি দ্বিজেন্দ্রলালের হাসির গানের আর রকমের কায়দা। এই সব বৈচিত্র্য অনুসারে গুণীদেরও শ্রেণী-বিভাগ করা যেতে পারে।
    দিনেন্দ্রনাথের বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে সব রকমের গানই তিনি অনায়াসে এবং দক্ষতার সঙ্গে গাইতে পারতেন। ক্লাসিক্যাল হিন্দী সঙ্গীতেও তিনি অল্প শিক্ষা অর্জ্জন করেন নি। বাউল ভাটিয়ালী গাইবার সময় মেঠো সুরের আদি ও অকৃত্রিম ভাবটি কেমন অনায়াসে তিনি প্রকাশ করতেন। না, আপনিই তাঁর কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসত, চেষ্টা ক'রে কিছুতেই যেন তাকে করতে হ'ত না। কীর্ত্তন তাঁর মুখে শুনলে চোখে জল আসত। আবার দ্বিজেন্দ্রলালের হাসির গান গাইবার জুড়ি তাঁর কেউ ছিল কি না আমি জানি না। এ কথা বললেই বোধ হয় অনেকের কাছে আশ্চর্য্য লাগবে যে ছেলেবেলায় দিনেন্দ্রনাথ দ্বিজেন্দ্রলালের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন এবং নিজের গানগুলি তাঁর মুখে শোনাবার জন্যে দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁকে নিয়ে বন্ধুদের বাড়ি বাড়ি ঘুরতেন।

    শুধু ভারতীয় সঙ্গীতই নয়, ইউরোপয়ীয় সঙ্গীতেও দিনেন্দ্রনাথের জ্ঞান ও দক্ষতা ছিল। বিলাতে এই সঙ্গীতের মোহে আকৃষ্ট হ'য়েই তাঁর ব্যারিষ্টার হওয়া আর ঘটে ওঠে নি। ইউরোপয়ীয় সঙ্গীতজ্ঞ যাঁরা ভারতীয় সঙ্গীতের রস আস্বাদন করতে চেয়েছেন, তাঁরা দিনেন্দ্রনাথের শিষ্যত্বলাভে নিজেদের কৃতার্থ মনে করেছেন।
    দিনেন্দ্রনাথের স্বরলিপি তাঁকে অমর ক'রে রাখবে। স্বরলিপি লিখতে তাঁকে দেখেছি চিঠি লেখার মতন; কোনো যন্ত্রের সাহায্য নিতেন না, গুন্‌-গুন্‌ করেও গাইতেন না, সুর তাঁর মাথার মধ্যে খেলা ক'রে বেড়াত, তিনি শুধু কাগজে কলমে তার প্রতিলিপি লিখে যেতেন অতি সহজে, অবলীলাক্রমে, - সেও যেন এক খেলা। খুব ছোটবেলায় লোরেটো স্কুলে পড়বার সময় তিনি স্কুলে পিয়ানোর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর এস্রাজ-বাজান যাঁরা শুনেছেন তাঁরা কখনও ভুলতে পারবেন না। এস্রাজ বাজিয়ে আপন-মনে যখন গান করতেন তখন গঙ্গাযমুনার ধারার মত যন্ত্র ও কণ্ঠনিসৃত সুরের ধারা এক হয়ে মিশে যেত।

    এইবার তাঁর একটি দিকের কথা বলব, যে-কথা তিনি ফুলের মধুগন্ধের মতন নিজের ভিতরই লুকিয়ে রেখেছিলেন,-রবীন্দ্রনাথের প্রতিভার প্রতি সম্ভ্রম ও নিজের সম্বন্ধে অত্যন্ত অতিরিক্ত সঙ্কোচবশতঃ কিছুতেই তিনি তাঁর নিজের লেখা প্রকাশ হ'তে দেন নি। তাঁর অবর্ত্তমানে, বিশেষতঃ তাঁর বিনা-অনুমতিতে, সেটি প্রকাশ ক'রে তাঁর স্মৃতির প্রতি কোনো অপরাধ করছি কি না আমি জানি না। কিন্তু এটি এমনই মধুর জিনিস যে সকলকে এর ভাগ দিতে না-পারলে তৃপ্তি হয় না, সে-জন্যে সে অপরাধ স্বীকার করেই নিলাম; জানি, তাঁর গভীর স্নেহের কাছে আমার সব চপলতা সমস্ত প্রগল্‌ভতার ক্ষমা আছে।
    তিনি একজন উঁচুদরের কবি ছিলেন। তাঁর পিতামহ স্বর্গীয় দ্বিজেন্দ্রনাথের মত তিনিও রাশি রাশি ফুল ফুটিয়ে দখিণে হাওয়ায় সব ঝরিয়ে দিতেন - কিছুই সঞ্চয় করতেন না, একটি কুঁড়িও না। কত অজস্র কবিতা তিনি লিখেছেন - আমরা তাঁর হাতবাক্স খুলে টেনে বার করেছি - তখন হয়ত প'ড়ে শুনিয়েছেন। কিছুদিন পরে জিজ্ঞাসা করলাম, "কই দিন্‌দা, আপনার সেই কবিতাটা ?" নিশ্চিন্ত মুখে বললেন, "ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছি ত।" শুনে আমরা খুব রাগ করতাম। দু-একটি কবিতা রয়ে গেছে - বাংলা কাব্যসাহিত্যে অতুলনীয়। বই ছাপতে বললে বলতেন, "দেখ, ছাপাবার মোহ একটা বড্ড নেশা, - ওর মধ্যে না যাওয়াই ভাল। ছাপিয়ে কি হয় ? এই ত, আমি পড়লুম, তুই শুনলি, বেশ হ'ল, আবার কি ?"
    নিজের রচনা সম্বন্ধে দিনেদ্রনাথের এই পরিপূর্ণ আসক্তি-হীনতায় রবীন্দ্রনাথের " হে বিরাট নদী"র কয়েকটি চমৎকার লাইন মনে করিয়ে দেয় -

    "কুড়ায়ে লও না কিছু, কর না সঞ্চয়,
    নাহি শোক নাহি ভয়,
    পথের আনন্দ বেগে অবাধে পাথেয় কর ক্ষয়
    যে মুহূর্তে পূর্ণ তুমি সে মুহূর্তে কিছু তব নাই
    তুমি তাই
    পবিত্র সদাই।"

    একদিন দেখি আলমারীতে নানা বইয়ের মধ্যে "বীণ" ব'লে ছোট্ট একখানি বই। তার ইতিহাসও একদিন শুনলাম, ছেলেবেলায় নাকি নিতান্ত দুর্ম্মতিবশতঃ ঐ কাজটি করে ফেলেছিলেন। তার পরে বোধোদয় হ'লে, একদিন শান্তিনিকেতন লাইব্রেরীতে গিয়ে যেখানে যত "বীণ" ছিল সব একসঙ্গে ক'রে আগুন ধরিয়ে দিলেন। ঐ একখানি কেমন করে লুকিয়েছিল। ভাগ্যক্রমে আমি সেটি টেনে বার করলুম এবং বলাই বাহুল্য, অধিকার করলুম। সেই "বীণ" এখনও আমার কাছে রয়ে গেছে, তার ঝঙ্কার কাব্যরসিককে মোহিত করবে।

    দিনেন্দ্রনাথের স্বরচিত গানগুলি সুরের অভিনব মাধুর্য্যে ও বৈচিত্র্যে বাংলা গানের ভাণ্ডারে এক অপরূপ দান। যে বিপুল প্রতিভা নিয়ে তিনি এসেছিলেন, যদি প্রকাশের অবসর দিতেন, তবে তাঁর সমতুল্য কবি ও সঙ্গীত-রচয়িতা বাংলাদেশে বেশী থাকত না। কিন্তি তিনি তাঁর আশ্চর্য্য প্রতিভাকে লুকিয়ে রাখলেন, সঙ্গীতচর্চ্চা ও স্বরলিপিলিখনের অন্তরালে। সারা জীবন দিয়ে রবীন্দ্র-সঙ্গীতের সাধনা ক'রে গেলেন। আজ যে রবীন্দ্রনাথের গান বাংলাদেশে এবং বাংলার বাহিরেও এত অজস্র প্রচার হয়েছে এর গৌরব দিনেন্দ্রনাথেরই, আর কারও নয়। কবিগুরু ত গান লিখে শিখিয়ে ছেড়ে দেন; মনে ক'রে রাখা বা প্রচারের দায়িত্ব তাঁর নয়। এই গানের জন্য সমস্ত বাংলাদেশ দিনেন্দ্রনাথের কাছে ঋণী। সঙ্গীতভারতীর পূজাবেদীতে নিজেকে নিঃশেষে আহুতি দিয়ে গেলেন এই ভক্ত পূজারী।
    আনন্দের উৎস ছিলেন তিনি, গানের ঝরণাতলায় খেলা ক'রে তাঁর দিন গেছে। তাঁর জীবনের সুরটি তাঁর এই একটি গানেই মূর্ত্ত হয়ে উঠেছে -

    " বল যদি নাহি হয় শেষ
    তাহে নাহি মোর দুঃখলেশ।
    খেলেছি ধরার বুকে
    এই স্মৃতি বহি সুখে
    ভাসাবো তরণী লখি' সেই অজানার দেশ।
    সুর যদি নাহি পাই খুঁজি;
    আমার বেদনা লহ বুঝি।
    নয়ন ভরিয়া দেখি
    ভাবি কি মধুর এ কী
    নিয়ে যাবো প্রাণ ভরি তোমার সুরের রেশ।"

    তিনি ছিলেন গানের রাজা। যে-দেশে গান কখনও থামে না, হাসি কখনও মলিন হয় না সেই নিষ্কলঙ্ক স্বচ্ছ আনন্দের দেশে, মধুরতর গানের রাজ্যে তিনি চলে গেছেন। শোক করব না তাঁর জন্যে। তাঁর সেই সদানন্দ হাস্যময় দীপ্যমান মুখখানি আর কখনও দেখতে পাব না। তাঁর মধুর স্নেহময় কণ্ঠস্বর আর কখনও কানে বাজবে না, তাঁর কাছে ব'সে আর কখনও গান শিখব না, এ কথা ভাবলে মন অবসন্ন হ'য়ে পড়ে। কিন্তু যতখানি পেয়েছি, এই কি কম সৌভাগ্য ? কেবলই দিয়েছেন, ঝরণার মত উচ্ছ্বলিত আনন্দের বেগে কেবলই বিলিয়ে দিয়েছেন, কিছু বাকী রাখেন নি, বিনিময়ে কিছু ফিরে চান নি। এমন একটি আশ্চর্য্য মানুষের এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে এসেছিলাম, সেই আনন্দের স্মৃতি পথের সম্বল হয়ে রইল।

    অমিতা সেন

    ( সম্পূর্ণ রচনাটি ১৩৪২ বঙ্গাদের ভাদ্র সংখ্যার "প্রবাসী"তে প্রকাশিত। )
  • b | 135.20.82.164 | ১৫ মে ২০১৪ ০৯:২০638635
  • অভ্যু,
    "নীরব বীনা" সম্পর্কে মত হল এইঃ বইটি প্রকাশের পরে শনিবারের চিঠি লেখে "খুড়া ভাইপোতে একত্র হইয়া যেভাবে বীণা বাজাইতেছেন.." ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই পড়ে রাগে দুঃখে দিনেন্দ্রনাথ বইটি পুড়িয়ে দেন।
  • Abhyu | 107.81.103.243 | ১৫ মে ২০১৪ ০৯:২৫638636
  • জানতাম না। থ্যাঙ্কু।
  • lcm | 118.91.116.131 | ১৫ মে ২০১৪ ০৯:২৭638637
  • দিন্দা! অশোক?
  • Abhyu | 138.192.7.51 | ১৬ মে ২০১৪ ০১:০৬638638
  • http://tinyurl.com/ljpo7zg
    দিনেন্দ্রনাথ
    শ্রী অমিতা সেন, বি-এ
    (ছবিটাও দেখার মতো)
  • - | 109.133.152.163 | ১৬ মে ২০১৪ ০৬:১৬638639
  • অভ্যু ৭টা তিপ্পান্ন, দুটি কোশ্নঃ
    ১। "মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের বড় নাতি ও দ্বিপেন্দ্রনাথের ছেলে দিনেন্দ্রনাথের" ইত্যাদি সম্পর্কটা কেমন যেন লাগছে। সেটা কি মাঝে টাইপো হয়ে একটা "ও" ঢুকে গেচে বলেই?
    ২। দিনেন্দ্রনাথের সঙ্গে অমিতা সেনের কি সম্পর্ক ছিল সেটা উনার লেখা থেকে পরিস্কার নয়, তাই ওঁদের ৫ বছর ব্যাবধানে মৃত্যু "স্মৃতি বয়ে" বেড়াবার যন্ত্রনা থেকে মুক্তির কথাটা কেন এল রিলেট করতে পারছি না। একটু হেল্পাবেন?
  • Abhyu | 106.32.198.107 | ২১ জুন ২০১৪ ১০:১৭638621
  • ranjan roy | 24.96.109.44 | ২১ জুন ২০১৪ ২১:০৮638622
  • অভ্যু,
    আমার যতদূর মনে পড়ছে চিত্রাংগদার " বঁধু কোন আলো লাগল চোখে" আর " এ কি আকুলতা ভুবনে" এ দুটো গানও অমিতা সেন (খুকু) অসাধারণ গেয়েছেন।
    ২৮ তারিখ সুলেখক রাঘব বন্দোপাধ্যয়ের "চর্চাপদ" পাবলিশিং হাউস অমিতা সেনের ওপর একটি বই প্রকাশ করছে (সঙ্গে সিডি)। সেই উপলক্ষে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইলিনা সেনের হাত দিয়ে বইটি রিলিজ হবে।
    আমার জিজ্ঞাসা ইলিনা সেন মানবাধিকার নেতা ডঃ বিনায়ক সেনের স্ত্রী। কিন্তু উনি কি কোন পারিবারিক সূত্রে অমিতা সেনের সঙ্গে সম্পর্কিত?
    হতেই হবে এমন নয়; জাস্ট কৌতূহল।
  • Abhyu | 107.81.97.250 | ২১ জুন ২০১৪ ২১:১৯638623
  • অমিতা সেন হলেন বিনায়্ক সেনের পিসিমা। আমি গানের টইতে লিখেছিলাম একবার, আপনি খেয়াল করেন নি। :)
  • ranjan roy | 24.96.109.44 | ২২ জুন ২০১৪ ০০:০২638624
  • সরি অভ্যু!
    মনে পড়েছে।
  • Ishani | 116.216.161.144 | ২৩ জুন ২০১৪ ১৩:৪৩638625
  • ভালো লাগল |
  • Abhyu | 81.12.53.79 | ২৮ জুন ২০১৪ ২২:৫৪638626
  • পাই, চিত্রলেখা চৌধুরী এসেছিলেন বইটার উদ্বোধন উপলক্ষ্যে (ওনার মা-ও এসেছিলেন)। ভালো গেয়েছেন। প্রমিতা মল্লিকও অসাধারণ গেয়েছেন। আর শুনলাম নবনীতা দেবসেন মনোজ্ঞ স্মৃতিচারণ করেছেন। যশোধরা বাগচীও খুব ভালো বলেছেন।
  • Abhyu | 81.12.53.79 | ২৯ জুন ২০১৪ ২১:০৯638627
  • ও না, ভুল বলেছিলাম, বিনায়ক সেনের মা এসেছিলেন। চিত্রলেখা চৌধুরীর মা গত হয়েছেন, উনি শান্তিনিকেতনে অমিতা সেনের রুমমেট ছিলেন।
  • ranjan roy | 24.96.56.251 | ০১ জুলাই ২০১৪ ১৪:১৯638628
  • অভ্যু,
    সবচেয়ে ভালো স্মৃতিচারণ করেছেন কণিকা বন্দ্যোর কাজিনঃ চিত্রশিল্পী ও সমালোচক নব্বই ছোঁয়া সোমেশ বন্দ্যোপাধ্যায়।
    নবনীতা হাঁপানির টান উঠলেও যথেষ্ট চেষ্টা করলেন। যশোধরা বাগচীও ভাল বল্লেন।
    বইটির সম্পাদক মানবাধিকার কর্মী ও অধ্যাপক ডঃ ইলিনা সেন জানালেন যে অমিতা সেনের এই লেখাগুলো , রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বিতর্কের প্রসঙ্গ ইত্যাদির হাতে লেখা পান্ডুলিপি সব শাশুড়ি অনুসুয়ার থেকে নিয়ে কিভাবে উনি সামলে রেখেছিলেন আর কোথায় কোথায় তথ্যের ক্রস-ভেরিফিকেশনের জন্যে পরিশ্রম করতে হয়েছে, কোথায় এখনো গবেষণার সম্ভাবনা রয়ে গেছে।
    সবচেয়ে ভালো ব্যাপার সেইসময়ের ৭৮ আর পি এম এর গানগুলো থেকে উন্নত ডিজিটাল টেকনলজি ব্যবহার করে যে সিডিটি বইয়ের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে তা একটি সম্পদ। সিডি সমেত বইটির দাম চারশ টাকা। গুরুর চন্ডালেরা তিনশ' টাকায় পাবেন।
    প্রমিতা মল্লিক অনায়াস পেশাদারী গলায় গাইলেন-- গানগুলি মোর শৈবালেরই দল।
    কিন্তু আশ্চর্য করলেন নব্বই ছোঁয়া ডঃ চিত্রলেখা চৌধুরি।
    আজ গলায় সে ঐশ্বর্য নেই, তারসপ্তকে কষ্ট হয়। তবু যে ওজনদার ও সুরেলা আওয়াজে গাইলেন--- " এখন আমার যাবার সময় হল", তা এককথায় অসাধারণ। মন ভরে গেল।
    নিজেকে পেছনে রেখে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে সবাইকে বেরিয়ে আসার সময় মিষ্টি হাসি দিয়ে ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন মানবাধিকার কর্মী ডঃ বিনায়ক সেন।
    বইটির প্রকাশক বন্ধুবর রাঘব বন্দ্যো জানালেন যে এই অনুষ্ঠানের সব ব্যয়ভার সেন পরিবার বহন করেছেন।
    সিঙ্গারা-সন্দেশ-চা বেশ ভাল লাগল।
    একটা অন্যরকম ভালোলাগা নিয়ে মেট্রো ধরার জন্যে রাস্তায় হাঁটতে লাগলাম।
  • সপ্তর্ষি বিশ্বাস | 183.13.156.125 | ১২ অক্টোবর ২০১৫ ০৫:২৯638629
  • আচ্ছা, ডঃ চিত্রলেখা চৌধুরি বিষয়ে আপনাদের কারো বিশদ কিছু জানা আছে কি?– আমার অতি প্রিয় এই শিল্পীজনার বিষয়ে প্রায় কিছুই জানিনা। অন্ততঃ একটি উইকি-পেজ খোলা যায় যাতে অন্য মুগ্ধ শ্রোতারাও তাঁর বিষয়ে জানতে পারেন ...
  • pi | 24.139.209.3 | ১৫ অক্টোবর ২০১৫ ০৮:২৪638630
  • স্পেসিফিক কিছু জানতে চাইলে বলবেন।
    আর উইকি পেজ খোলার জন্য ইনফো চাইলে মেইল করতে পারেন।
  • Abhyu | 47.39.151.164 | ০৯ জানুয়ারি ২০২২ ২২:৫৯735367
  • Abhyu | 47.39.151.164 | ০৯ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:১২735368
  • Abhyu | 47.39.151.164 | ০৯ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:১৩735369
  • খুকু অমিতা ১৯৪০এ মারা যান, এই সিনেমাটা বলছে ১৯৪৯ সালে রিজিজ করে - ইউটিউবের খবর ঠিক কি ভুল জানি না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন