এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • কল্লোল | 125.242.170.247 | ২৮ জুলাই ২০১৪ ২২:১৮645085
  • অনেককাল আগেকার কথা। সেবার বইমেলায় আমাদের বড়ো হৈ হৈ। সকলের তাল উঠলো কালাদার গানের ক্যাসেট বার করতে হবে। সে বোধহয় ১৯৯১ কি ৯২। কালাদা মানে কালাচাঁদ দরবেশ। তরে রাজি করানো কি চাট্টিখানি ব্যাপার! সে প্রায় এক যুদ্ধু। শেষমেশ রাজি হলে তরে নিয়ে আসা হলো কলকাতায়।দিব্যি রেকর্ডিং হলো। বইমেলার আগেই সে ক্যাসেট তৈরী।এবার বেচ হবে বইমেলা চত্বরে।
    গোটা চরেক দোতারা, একটি শ্রীখোল ও একখান গিটার এবং কালাদা স্বয়ং। খুব কষে গানবাজনা চলছে।কালাদা গাইছে, আমরা ধুয়ো ধরছি। ক্যাসেট বিক্কিরি হচ্ছে যেমন হওয়ার। তখনো তো কালাদারে এতো লোকে চেনে না।
    কালাদার গানে মানুষের কথা খুব আসে। কালাদা গায় - মানুষকে যে ভালোবাসে / বড় ভালো ভাগ্য তার / তদ্রুপ মানুষ যারে ভালোবাসে / সাধনা হৈতেছে তার.....................। তার প্রিয় গান, প্রায়ই গায় সে – আমি কোথায় পাবো তারে। আমি বলি,
    -কি খোঁজ?
    -মানুষরতন।
    -সেটি কি বস্তু?
    তাতে কালাদা যা ব্যাখান করলে, সে অপাপবিদ্ধ, অচঞ্চল, পরমশুদ্ধ এক মানুষ।
    আমি তর্ক করি,
    -ওরকম মানুষ হয় না। সকলেই দোষে-গুণে মানুষ। দোষ নেই অমন মানুষ স্বপ্নে থাকে শুধু।
    কালাদা হা হা করে হেসেছিলো।
    সেই হাসি আজ আবার পাগলা ঘন্টির মত বেজে উঠলো আমার সমস্ত চেতন জুড়ে।
    মুখবইয়ের পাতা উল্টে পাল্টে যাচ্ছিলাম অভ্যাস বশতঃ। এলেবেলে নজর ধরে টান মারে কেউ, দৃঢ়বদ্ধ নোঙ্গরের কাছির টানআছড়ে ফেলে এক বন্ধুর(সুমন মান্না) ভাগ করে নেওয়া ছবিতে। এতো সে.........! হ্যাঁ সেই তো, কিন্তু এখানে! কেন?
    https://www.facebook.com/sumanmanna13/posts/10203798345855681?comment_id=10203802017667474&offset=0&total_comments=5
    ৭১ বছর বয়সী এক হিন্দু, তিনি ভারতের কলকাতার বাসিন্দা। গত ২১ বছর ধরে রমজানের সময় রোজা রেখে চলেছেন। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বিরুদ্ধে এটা তার ব্যক্তিগত প্রতিবাদ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের মানুষ হিসেবে লজ্জা প্রকাশ।
    সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের একজন মানুষ হয়ে কিছুতেই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা মেনে নিতে পারছিলাম না তিনি। তখনই ঠিক করি আমি নিজেই প্রতিবাদ করব, বলেন সঞ্জয় মিত্র
    অথচ এমন এক পরিবারের সন্তান সঞ্জয় মিত্র, যাদের বাড়িতে ১২৫ বছর ধরে দুর্গাপূজা হয়ে আসছে।
    রমজানের এক বিকেলে মগরিবের নামাজ শুরু হওয়ার একটু আগেই বাড়ি থেকে জিনস্ আর খদ্দরের ফতুয়া গায়ে সেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম (অমিতাভ ভট্টশালী বিবিসি বাংলা, কলকাতা ) মি. মিত্রের সঙ্গে।
    কলকাতার মুসলমান প্রধান এলাকা রাজাবাজারের ঠিক যেখানে হিন্দু পাড়া শেষ হয়ে শুরু হয়েছে মুসলমান মহল্লা সেখানেই একটা মাঝারি মাপের খাবার দোকানে ঢুকতেই সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় হলো।
    একটা টেবিলে বসতে বসতে মি. মিত্র বলছিলেন, ইফতারটা বেশির ভাগ দিনই বাড়িতেই করেন। তবে মাঝে মাঝে এই দোকানেও আসেন।
    ‘এই দোকানটায় আসছি প্রায় ৫৫ বছর ধরে। অনেক পাল্টে গেছে। এখানেই প্রথম গোরুর মাংস খেয়েছিলাম মনে আছে। আর তারপর থেকে তো নিয়মিতই খাই, হাসতে হাসতে বলছিলেন মি. মিত্র।
    কথা বলতে বলতেই পাশের মসজিদে শুরু হলো মগরিবের নামাজ- আর ইফতার করে দীর্ঘদিনের চেনাপরিচিতদের সঙ্গে রোজা ভাঙ্গলেন সঞ্জয় মিত্র।
    দোকানের মালিক মুহম্মদ নঈমুদ্দিন, এক কর্মী মুহম্মদ জমিরুদ্দিনের সঙ্গে একই প্লেট থেকে কলা, পাকা পেপে, শশা, খেজুর আর তরমুজ খাচ্ছিলেন মি. মিত্র।
    এই হিন্দু বন্ধুর রোজা রাখাতে একটু অবাক নন মি. নঈমুদ্দিন। তিনি বলছিলেন, ‘প্রথম যখন শুনি যে মি. মিত্র রোজা রাখেন, শুনে খুব ভালো লেগেছিল যে, একজন মুসলমানের মতোই তিনিও রোজা রাখেন।
    এরকম তো কোনো কথা নেই যে, রোজা শুধু মুসলমানরাই রাখতে পারবে। সবাই রাখতে পারে। হিন্দুরাও তো বিভিন্ন পূজার দিনে উপোস থাকে। আর আমাদের এটা এক মাসের উপোস- ব্যাপারটা তো একই।’
    কখনো বাড়িতে ফল বা রুটি খেয়ে, কখনও বা হালিম খেয়ে গত একুশ বছর ধরে রোজা ভাঙছেন সঞ্জয় মিত্র।
    খাবারের দোকানে আসার আগে বাড়িতে বসে মি. মিত্র বলছিলেন অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর প্রতিবাদ হিসেবেই রমজান মাসে রোজা রাখতে শুরু করেন তিনি।
    ‘বাবরি মসজিদের ঘটনা ৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। তখন আমি দিল্লিতে থাকতাম। উত্তর ভারতে তো ওই ঘটনার পরের দাঙ্গা অনেক বেশি হয়েছিল, সেই সময়ে খুব অসহায় লাগছিল- হিন্দু হিসেবে।
    একজন সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের মানুষ হয়ে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। তখনই ঠিক করি যে আমি নিজেই প্রতিবাদ করব- এককভাবেই,’ বলছিলেন সঞ্জয় মিত্র।
    যদিও নিয়মিত ধর্মাচরণ করেন না মি. মিত্র। তবে মুসলমানদের ধর্মাচরণের একটা অঙ্গ- রোজা রাখা নিয়ে স্ত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাই বছরে আরও একটা মাস উপোস করেন তিনি- গ্রাম বাংলায় চৈত্র মাসের গাজনের সময়ে।
    মি. মিত্রের কথায়, ‘কয়েক বছর রোজা রাখার পর আমার স্ত্রী বলেছিলেন, তুমি মুসলমানদের মতো রোজা রাখ, কিন্তু নিজের ধর্মের জন্য তো কিছু কর না। তখন আমি বলি যে নমশূদ্র- যারা বেশির ভাগই ভূমিহীন কৃষক, চৈত্র মাসে কোনো খাবার থাকে না বলে গাজনের নামে ভিক্ষা করে সন্ধ্যায় একবারই খায়- আমি সেটা করতে পারি। ভিক্ষাটা পারব না, কিন্তু গাজনের উপোস করি নিয়মিত। আমার উপোস রমজান আর গাজনের।’
    নিয়মিত ধর্মাচরণ করেন না বলেই যেমন মন্দিরে যান না, তেমনি রমজান মাসে পাঁচবার নমাজও পড়েন না এক সময়ের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য আর মানবাধিকার কর্মী সঞ্জয় মিত্র। বছরের দুমাস উপোসের সময়ে তার সঙ্গী বই আর গান।
    বামপন্থী আন্দোলনে যখন যুক্ত ছিলেন, তখন যদিও দাঙ্গার সময়ে মুসলমান মহল্লায় গিয়ে সবাই মিলে রাত জেগে পাহারা দিয়েছেন, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠরা যখন বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলেছে, তার প্রতিবাদটা তিনি একান্তই নিজস্ব ঢঙে করে চলেছেন- কারণ সেই ছোটবেলায় হিন্দু মুসলমান দাঙ্গায় মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার স্মৃতিটাও তার একান্তই নিজের।
    সূত্র ঃ বিবিসি বাংলা
  • কল্লোল | 125.242.170.247 | ২৮ জুলাই ২০১৪ ২২:২২645096
  • এতো সঞ্জয়দা!!
    সঞ্জয়দার সাথে পরিচয় ১৯৭৩ সালে।
    ১৯৭১এ জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিন বছর খড়্গপুর আইআইটি ক্যাম্পাসের হিজলী হাই স্কুলে কাটিয়ে উচ্চমাধ্যামিক দিয়ে কলেজে ভর্তি হতে আবার কলকাতায় ফেরা। সাউথ সিটি কলেজের বন্ধু জয়ীকের সাথে এপিডিআরের দপ্তরে যাওয়া এক শ্রাবণ বিকালে। বিকেলের হুড়মুড়ে বৃষ্টিতে ইচ্ছেভেজা ভিজে ঢুকলাম কালিদাস সিংহ লেনের এক বেশ পুরনো বনেদী বাড়ির একতলার ঘরে।
    সে সময়ে আমার হুলিয়াটি ছিলো কিঞ্চিত ফ্লাওয়ার চিল্ড্রেন ঘেঁষা। প্রায় ফিকে হয়ে যাওয়া জিনস আর খসখসে খদ্দরের পাঞ্জাবী শ্রীঅঙ্গে ধারণ করে, কাঁধ ছাড়িয়ে নেমে আসা চুল আর একগাল উলুকঝুলুক দাড়ি নিয়ে যখন এপিডিআর দপ্তরে আবির্ভূত হলাম, তখন কী একটা গুরুগম্ভীর বিষয়ে মত বিনিময় চলছিলো। জয়শ্রীদি (জয়শ্রী রানা) খুব হাত-টাত নেড়ে তার মত বলছিলো। ঐ হাত তোলা অবস্থাতেই বলে উঠলো ‘যা ব্বাবা’..... আলোচনা সেদিনের মতো গুলি মারা গেলো। আমার চালচিত্তির যেমনই ঠেকুক না কেন সকলে কিন্তু হৈ হৈ করে স্বাগত জানালো। পরে জয়ীকের কাছে শুনেছি, ও এই ‘কাল্চারাল শক’টা আন্দাজ করেছিলো। তাই আগেভাগেই আমার চেহারাপত্তর ও আগমনী গেয়ে রেখেছিলো।
    সেখানেই অন্য সকলের সঙ্গে সঞ্জয়দার সাথেও আলাপ। সঞ্জয়দা তখন এপিডিআরের সহসচিব। ধীরে ধীরে এপিডিআরে আমার অংশগ্রহন বাড়ে ও পরিচয় গাঢ় হয়।
    এপিডিআর-এর সেই শুরুর সময়। নতুন লড়াই, পুরোনো এবং নতুন বন্ধুরা মিলে শিখছি। পাঠ নিচ্ছি গণআন্দোলনের ভাষার, যে ভাষা আমাদের বয়সীদের কাছে একদমই অচেনা। আমাদের রাজনীতি শুরুই হয়েছে গোপন সংগঠন, গেরিলা অ্যাকশন দিয়ে। বড়রা যাঁরা ছাত্র রাজনীতি,ট্রেড ইউনিয়ান,মহিলা সংগঠন করে এসেছেন, তাঁরা হাতে ধরে শেখাতেন গণআন্দোলনের পথ হাঁটা, মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে, পথসভায়, কর্মীসভায়, আড্ডা মারতে মারতে। সঞ্জয়দা, সুভাষদা, তারকদা ছাড়াও, অমিয়াদি (সুশীতল রায়চৌধুরীর জীবনসাথী, অবিভক্ত কমিউনিষ্ট পার্টির সময় থেকে মহিলা সেলের সংগঠক), ঝর্ণাদি (ঝর্ণা ভৌমিক – ইনিও অবিভক্ত কমিউনিষ্ট পার্টির সময় থেকেই বিভিন্ন ফ্রন্টে কাজ করেছেন), দাদু (বেহালার সুশীলবাবু। পোড়খাওয়া প্রবীন। অবিভক্ত কমিউনিষ্ট পার্টির আমল থেকে পার্টি সদস্য। পরে ছেড়ে দেন ১৯৬৩-৬৪ নাগাদ, পার্টির ভেতরে আমলাতান্ত্রিকতার বিরোধীতায়), এরকম আরও অনেকে।
    একদিনের কথা মনে আছে। বৌবাজারের মোড়ে সেদিন পথসভা। আমি একটু আগে পৌঁছেছি। যথারীতি, পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। আসলে রাষ্ট্র তখনও আমাদের মাপতে পারেনি। বোঝা যাচ্ছে এগুলো নকশাল, কিন্তু বোম-টোম মারে না। খতম-টতম বলে না। গোপন নয় যা করার প্রকাশ্যেই করে। বক্তৃতায়, প্রচারপত্রে নকশাল এমনকী সিপিএম বন্দীদেরও মুক্তি চাইছে। লিখছে, এদের রাজনীতির সঙ্গে একমত নয়। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জায়গা থেকে দাবি করছে, এদের মুক্তির। তখন অবধি রাষ্ট্রের চেনা ছকের বাইরে বলেই সাবধানতা। বলা তো যায় না!
    সে যাকগে। প্রচুর উর্দিধারী পুলিশের সাথে সাদা পোষাকের টিকটিকিরও কমতি নেই। তখন অত চিনতে পারতাম না। এক সিড়িঙ্গে মার্কা, কেরানী গোছের ভদ্রলোক হঠাৎ আমায় জিজ্ঞাসা করলেন– ভাই, এখানে কী হবে? তারকদা শিখিয়ে দিয়েছিলেন, যে যা জিজ্ঞাসা করবে ঠিকঠাক বলবে। গোপন করার কিচ্ছুটি নেই। ওনার লব্জে – এখন সব ‘ওপেন’ নো ‘গোপেন’। তাই তাকে বললাম,
    -মিটিং হবে।
    – কীসের মিটিং?
    – এপিডিআরের
    – এটা কোন পার্টি?
    – কোনো পার্টি নয়। এটা গণসংগঠন।
    – না না, গণসংগঠন তো বুঝলাম, কিন্তু কোন পার্টির গণসংগঠন?
    – কোনো পার্টির নয়।
    – তা কী করে হয়!
    এর মধ্যে সঞ্জয়দার নজরে পড়েছে ব্যাপারটা। কাছে এসে লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলো,
    – কী ব্যাপার?
    – না না, এই জিজ্ঞাসা করছিলাম কী হবে।
    – আপনি পুলিশের লোক?
    – হ্যাঁ, এসবি-র।
    – শুনুন, আপনার কাজ এখানে দাঁড়িয়ে থাকা, কে কে বক্তৃতা করছে তাদের নাম এবং বক্তব্য টুকে নেওয়া। আপনার বড় সাহেবকে গিয়ে তা রিপোর্ট করা। আপনাকে আমাদের ট্যাক্সের পয়সায় এই কারণেই পোষা হয়। তারপর আমাকে দেখিয়ে বলল – ও কেন আপনার কাজ করে দেবে? যান, নিজের কাজ করুন।
    ওমা, লোকটা কেমন কাঁচুমাচু হয়ে চলেও গেলো।
    সঞ্জয়দা আমার দিকে ফিরে লোকটাকে শুনিয়েই বলল – একদম পাত্তা দিবি না, সোজা ফুটিয়ে দিবি।
    শিখছিলাম.........রাষ্ট্রের সাথে নতুন কায়দায় মোকাবিলা।
  • কল্লোল | 125.242.170.247 | ২৮ জুলাই ২০১৪ ২২:২৬645107
  • বন্ধুদের কাছে শুনছি। ৬০এর দশকের প্রথমদিকে যাদবপুরের মেকানিকাল। কোনকালে চাকরী করলো না। ছাত্র-রাজনীতি থেকে সিপিয়াই-সিপিএম হয়ে নকশালবাড়ির রাজনীতিতে (সিপিআইএমএল নয়) সারাক্ষনের কর্মী। ওদের পার্টি সংগঠনের নাম ন্যাশেনাল লিবারেশন ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। সিপিআইএমএলের সাথে ভারতীয় বিপ্লবের পথ ও পন্থা নিয়ে ফারাক। এই তাত্ত্বিক ফারাকের বিস্তার আজ আর মানে রাখে না। তাই তার থেকে বিরত থাকলাম। সম্ভবতঃ ১৯৭০এ ধরা পড়ে সঞ্জয়দা। পুলিশের মারে একদিকের কানের শ্রবনশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। ১৯৭২এ জেল থেকে ছাড়া পেয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের প্রথম মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সারাক্ষনের সদস্য। এপিডিআরের দপ্তরটিই সঞ্জয়দার পৈত্রিক বাসস্থান। ওই ১৯৭২-৭৩ সালে রাজনৈতিক বন্দীদের (মূলতঃ নকশাল ও সিপিএম) মুক্তির দাবীতে কাজ করে যে সংগঠন, নিজের বাড়িতে তার দপ্তর খুলে বসা কতোটা দুঃসাহসের কাজ – আজ হয়তো কিছুটা বোঝানো যাবে, যখন কেউ বিরোধীতা করলেই “মাওবাদী” তকমা এঁটে যায়। তখন নকশাল মাত্রই “উগ্রপন্থী” এবং বিনা অজুহাতে গ্রেপ্তার ও পীড়ণযোগ্য। সেই সময়ে সাধ করে রাষ্ট্রের চোখে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা, সৃষ্টিছাড়া সাহসী না হলে হয় না।
    শিখেছি আরও কতোকিছু। সঞ্জয়দারাই প্রথম সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে কাজ করার ধারা শুরু করেন এপিডিআরে। একজনেরও আপত্তি থাকলে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো না। তখন (এখনও) বামপন্থী মনোভাবাপন্ন সংগঠানে সংখ্যাগুরুর মতই সংগঠনের মত। সংখ্যালঘুর মত বাজে কাগজের ঝুড়িতে। এই প্রথম আমরা দেখালাম সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে সকলের সম্মতিতে।
    -যদি কেউ একটা আপত্তি তুলে দেয় সিদ্ধান্ত বানচাল করার জন্য?
    -তাহলেও তো বুঝতে হবে সেই মানুষটির আপত্তি আছে। হয়তো সে বিরোধীতার কারনগুলো গুছিয়ে বলতে পারছে না। তার সাথে কথা চালিয়ে যেতে হবে, তার আপত্তি বোঝার চেষ্টা করতে হবে। যে কোন মূল্যে এটা করতেই হবে।
    -কিন্তু তাতে তো সময় চলে যাবে!
    -আমি বা আমরাই সব কিছু আমাদের জীবনেই করে যেতে পারবো এমনটা ভাবার কোন কারন নেই। তাই “সময় চলে” যাবার কোন ব্যাপার নেই। আজ আমরা যা করবো, আমাদের পরের প্রজন্ম যেন তার উপর নির্ভর করতে পারে। আমাদের মতো সব কিছু শূণ্য থেকে শুরু করতে না হয়।
    এভাবেই শিখেছি অন্যের মতকে শ্রদ্ধা করতে। মত মানতে না পারলে তর্ক জারি থাক, কিন্তু তাচ্ছিল্য নয়, কর্তৃত্ব ফলানো নয়, সেই মতকে পুরপুরি শ্রদ্ধার জায়গায় রেখে তর্ক করা।
    জরুরী অবস্থায় প্রেসিডেন্সী জেলে একই ওয়ার্ডে। কতো গল্প, গান, তর্ক – একসাথে কাঁধে কাঁধ দিয়ে।
    ১৯৭৭এ ছাড়া পেয়ে এপিডিআরের নেতৃত্ব তুলে দিলো নবীনদের হাতে। আমরা ভীষন আপত্তি করছি।
    -তুমি না থাকলে হবে না।
    -ঠিক, সেই জন্যই ছেড়ে যাবো। আমাদের কাজ শেষ। এখন আমি অন্য কাজে যাবো। ছবি তুলবো।
    এভাবেই চলে যায় সে। বলে যায়,
    -ডাক দিলেই পাবি। ডাক দিস।
    ডাক পড়েছিল।
  • কল্লোল | 125.242.170.247 | ২৮ জুলাই ২০১৪ ২২:২৮645118
  • একদিন হঠাৎই ডেবরার কৃষক নেতা নিতাইদা এসে হাজির। খুব জরুরী আলোচনা হবে নকশালবাড়ীতে জঙ্গলদার সাথে। কানু সান্যাল তখনো ছাড়া পান নি। আমি তো তিন লাফে খাড়া। বাড়ি থেকে বের হলাম গোটা সাতেক টাকা নিয়ে। আর বেশী নাকি লাগবে না, নিতাইদার আশ্বাস। ওদিকে দেখি হাওড়া স্টেশনে এসে পাঁশকুড়া লোকাল ধরলো। আমরা নাকি ডেবরা হয়ে যাবো নকশালবাড়ী। আমার তো কিছুই ঢুকালোনা মাথায়। নিতাইদাও কিছু বলছে না। কি জানি বাপু, কি মতলব। ডেবরা মোড় থেকে একটু ভিতরে একজনের বাসায় ওঠা হলো। আমি স্নান সেরে এসে দেখি গুনাথদা(গুণধর মূর্মূ), নিতাইদা আর কিমাআশ্চর্য! সঞ্জয়দা, হ্যাঁ, আমাদের এপিডিআরের সঞ্জয় মিত্তির। আর একজন ছিলেন বেশ বাজখাই চেহারার এক মুখ দাঁড়িওয়ালা আদিবাসী, নাম শিবু সরেন, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার একচ্ছত্র নেতা। ওদের মধ্যে কথা হচ্ছে সাঁওতালীতে। সঞ্জয়দা যে এতো ভালো সাঁওতালী বলে সে কে জানতো। পরে আমার খাতিরে তারা বাংলায় বিশদ হলো। ঝাড়খন্ড আন্দোলন নিয়ে শলা হচ্ছে। সেই সব নিইয়ে কথা বলতে যাওয়া হবে জঙ্গলদার সাথে।
    সেবার নকশালবাড়ীতে জঙ্গলদার সাথে কথাটথা বলে ফিরে এসে আবার সে চলে গেলো, বলে গেলো না।
    এরপর মাঝে মাঝে দেখা। চিন্তা পাল্টাচ্ছে, সময় পাল্টাচ্ছে। সোভিয়েত ও পূর্ব ইউরোপ ভাঙ্গছে। কথা হয়, আর আশ্চর্য হতে থাকি দুজনেই – আমাদের নানান ভাবনা কেমন করে যেন একই খাতে বয়।
    এইতো বছর দেড়েক আগেও আমার ব্যাঙ্গালরের বাসায় কাটিয়ে গেছে দু সপ্তাহ। কথায় কথায় বলেছিলো রোজা রাখার কথা। কেন, তা বলেনি একবারও। আমার মনে হয়েছিলো এককালের নিরীশ্বরবাদী মানুষাটার ঐশ্বরিক খেয়াল।
    আজ পড়ে চমকে উঠেছি আর কালাদার হাসি ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে মাথার ভিতর –
    মানুষকে যে ভালোবাসে / বড় ভালো ভাগ্য তার / তদ্রুপ মানুষ যারে ভালোবাসে / সাধনা হৈতেছে তার...............মানুষরতন।
  • pharida | 192.68.162.27 | ২৮ জুলাই ২০১৪ ২৩:৩৯645121
  • কল্লোল দা,
    ঘটনাচক্রে কাল টিভিতে "সেরা বাঙ্গালি" অনুষ্ঠান হচ্ছিল। আর সেই রাতেই ফেসবুকে পেলাম এনাকে।

    এমন মানুষরতন দুর্লভ। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, অনেক অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিলে সন্ধান মেলে তবে।

    বাজারি কাগজ বা চ্যানেলে সস্তায় কি পাওয়া যায়?
    আরো লিখো, আমরা পরশ পাই।
  • I | 24.99.154.79 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ০০:০৬645122
  • লেখো, লেখো ! শান্তিজল দাও।
  • | 183.17.193.253 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ০০:১৮645123
  • খুব ভালো লাগছে কল্লোল দা। আরো লেখো। ওকে সেই কোন আমলে দুএকবার দেখেছি।
    কালাচাঁদদা ক্যাসেট কেন জানিনা মনে হচ্ছে ৯২ এর শেষে। ৯৩ এর বইমেলায় বেরিয়েছিলো।
    অবশ্য অনেক কাল আগের কথা,ভুলও হতে পারি।
  • a x | 138.249.1.198 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ০১:৩৩645124
  • পড়ছি কল্লোলদা, এরকম আরো লিখুন।
  • Ranjan Roy | ২৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:০৩645125
  • আছে, আছে মানুষরতন।
    সেই যে "যেখানে পাইবে ছাই , উড়াইয়া দেখ ভাই"!
    মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপাল শহর।
    সেখানে শিক্ষার পেডাগগি নিয়ে কাজ করছে একটি সংস্থা-- "একলব্য"।
    এরা কাজ করছে অন্ততঃ ৩৬ থেকে চল্লিশ বছর ধরে। এরা বিকল্প কোর্স বানায়, সাপ্লিমেন্টারি বই ও। ট্রেনিং দেয় ইচ্ছুক অন্য ধরণের শিক্ষকদের। কিছু কিছু জেলায় সরকার এদের বইপত্তর বা বিকল্প কোর্সকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এরা "চকমকি" ও "জিজ্ঞাসা" নামে দুটো পত্রিকা চালায়-- ছোট বাচ্চা ও একটু বড় বাচ্চাদের জন্যে।
    যাঁরা শুরু করেছিলেন তাঁদের অনেকে আজ নেই, কালের নিয়মে ছেড়ে গেছেন, কেউ কেউ এ দুনিয়াকেও।
    বিনোদ রায়না, অনীতা রামফল ও সন্তোষ চৌবেকে হিন্দি বলয় ও দিল্লি ভালভাবে জানে।
    এখন শীর্ষে রয়েছেন ৪০-৫০ বয়সের ঘরের ছেলে মেয়েরা। পালা করে নেতৃত্ব বদলায়। শুনতাম রাজেশ খিড্রির কথা। নম্র নীচু গলায় কথা বলা রাজেশ, চোখে পেপার ওয়েটের মত চশমা ; অত্যন্ত হ্যান্ডসাম। ওর স্ত্রী টুলটুল বিশ্বাস তখন একলব্যের দায়িত্বে। স্ত্রী যেমন ছটফটে প্রাণচঞ্চল, রাজেশ তেমনি শান্ত,ধীর স্থির , হাসলে শব্দ শোনা যায় না। কিন্তু ওর মুখে এমন আজানুলম্বিত দাড়ি কেন? সুন্দর মুখের অনেকটাই যে ঢাকা পড়ে যায়! বৌ কি করে সহ্য করে কে জানে! রোজ স্নানের পর মেয়েদের চুল শুকোনোর মত চিরুণী দিয়ে আঁচড়াতে দেখি! কারণ জিগ্যেস করলে স্মিতমুখে এড়িয়ে যায়।
    কিন্তু বেসিক হিউম্যান ল্যাবের ওয়ার্কশপে ওকে যখন সবাই চেপে ধরল ( আগে " আলো-অন্ধকারে যাই" লেখাটায় এর উল্লেখ করেছি।), তখন চুপ।
    আমি বললাম-- নিঘ্ঘাৎ নিজেকে সবার থেকে আলাদা দেখাতে চায়, মেয়েদের ইম্প্রেস করতে।
    সবাই দাঁত বের করল।
    ও আমার দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকায়। এবার মুখ খোলে---
    " বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা আমি মেনে নিতে পারিনি। তাতে বড় সম্প্রদায়টির উল্লাস ও তার পরে ভোপালের দাঙ্গা আমার মনে বিবমিষার উদ্রেক করে। চারদিকে মিছিলে, দেওয়াল লিখনে "গর্ব সে বোলো হম হিন্দু হ্যায়" এর সামনে আমি এমন হিন্দু হওয়ার জন্যে লজিত বোধ করি।প্রতিবাদে এই দাড়ি রেখেছি। এই দাড়ি ambiguous। হিন্দু-শিখ-মুসলমীন-ক্রিশ্চান -- যে কেউ রাখতে পারে। আমি কোন নির্দিষ্ট ধার্মিক সম্প্রদায়ের পরিচয়ে নিজেকে বাঁধতে চাই নে। ফর্মে ধর্মের কলামে "ভারতীয়" লিখি। স্ত্রী জানেন, সমর্থন করেন।
    অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয় নি। তাই ১৫ বছর পরেও কাটতে চাই না।"
    --" কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত?"
    -- " কারো সঙ্গে নয়। তবে আমি এই লেসেজ ফেয়ার ক্যাপিটালিজমের নিও লিব্যারাল পলিসির কড়া সমালোচক।"
  • কল্লোল | 111.63.95.67 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ০৬:০৬645086
  • আমাদের ব্যাংএর পরিচিত, বনের মোষ তাড়িয়ে বেড়ায় একজন। তার কথাও মনে পরলো। সে তো আর এক সুতো।
    লেখো না সবাই। এখানে বা নতুন সুতো খুলে। যাদের চিনি কিন্তু জানি না, তাদের কথা।
    এই পূতিগন্ধময় সময়ে বৃষ্টি নামুক।
  • SJ_GW | 97.106.230.99 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ০৬:৪২645087
  • "এমন হিন্দু হওয়ার জন্যে লজিত বোধ করি........আমি কোন নির্দিষ্ট ধার্মিক সম্প্রদায়ের পরিচয়ে নিজেকে বাঁধতে চাই নে"
    -বহুত contradictory , যদুপুর এর ইঞ্জিনিয়ার এর কাছ থেকে নট এক্সপেকটেড

    তা বাওয়া , ১৯৬৪ এর দাঙ্গা,শিখ দাঙ্গা , কাশ্মির দাঙ্গা এত কিছু হল , তখন কেন উনি রোজা , গজা , মোজা রাখলেন না ?
  • কল্লোল | 111.63.95.67 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ০৭:৩৩645088
  • এসজেজিডব্লিউ।
    উনি আরও অনেক কিছুই করেন নি। ৪৭এর নোয়াখালি দাঙ্গায় যখন প্রচুর হিন্দু মারা যান, উনি তখন কিছুই করেন নি। ৬৫তে কলকাতায় ছোটখাটো দাঙ্গা হয় তখনও উনি কিছুই করেন নি। ৮৪ শিখ দাঙ্গার সময় অবশ্য ফোটোগ্রাফার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে অনশন উপবাস কিছুই করেন নি। কাশ্মীরের পন্ডিতদের নিয়ে কিছু সামান্য কাজ আছে। কাশ্মীরের সেনাবাহিনীর অত্যাচার নিয়েও আছে। তবে তার জন্যও উনি অনশন উপবাস করেন নি।
    আসলে সব ব্যাপারেই সবাইকে কিছু করতে হবে এমন মাথার দিব্যিও তো কেউ কাউকে দেয় নি। একটা বয়সে ওনার মতাদর্শের জায়গা থেকেই এগুলো করার কথা ভাবেন নি। অন্য একটা বয়সে ওনার চিন্তা পাল্টেছে, তাই এসব করার কথা ভাবলেন। এই আর কি।
    আমাদের কারুর কারুর মনে হতেই পরে উনি মানবরতন। আপনার মনে হতেই পরে উনি ঢপবাজ ভন্ড। সে তো হতেই পরে। আপনার চিন্তাও স্বাগত। আমি বা অন্য কেউ এতে দুঃখ পেতে পারি। ঐটুকুই। আপনার মত আপনার। আমাদের মত আমাদের। বহুমত সবসময়েই কাম্য।
  • সিকি | ২৯ জুলাই ২০১৪ ১৪:৩২645089
  • বাবরি মসজিদ ভাঙার পর দেশব্যাপী সম্প্রদায়িক দাঙ্গার বীভৎসতা দেখে, অন্তত ছজন হিন্দুর সন্ধান পাওয়া গেছিল, যাঁরা ইসলাম নিয়েছিলেন, স্বেচ্ছায়। এদের ইন্টারভিউ বেরিয়েছিল বোধ হয় সেই ২০০২ সালে, ৬ই ডিসেম্বরের ১০ বছর পূর্তিতে। কোন কাগজে বেরিয়েছিল, মনে নেই, কোনও রেফারেন্স জানা নেই।

    আর কেউ কি পড়েছিলেন সেই ইন্টারভিউগুলো?
  • SJ_GW | 15.104.224.34 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ১৭:০৮645090
  • এত বড় দেশ এ মাত্র ছয় জন চদু , সরি হিন্দু !!!!ঠিক বিশ্বাস হলো না !!!!
  • সিকি | ২৯ জুলাই ২০১৪ ১৮:২৮645091
  • ইয়ে, আপনাকে তো কেউ বিশ্বাস করতেও বলে নি।
  • কল্লোল | 125.242.177.208 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ২০:৪৭645092
  • এসজেজিডব্লিউ।
    নিজের বক্তব্য গালাগালি না দিয়েও প্রকাশ করা যায়। অভ্যেস করতে পারেন।
    গালাগালি দিলে নিজেকে খুব স্মার্ট মনে হতেই পারে, কিন্তু কেউ কেউ উল্টোটও ভাবে।
  • a x | 138.249.1.198 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ২১:৩৮645093
  • ট্রোলদের উত্তর দ্যান ক্যানো আপনারা? পাত্তা দেবেন না, আপ্নে কেটে পড়বে।
  • Ranjan Roy | ২৯ জুলাই ২০১৪ ২৩:১৫645094
  • লালাবাবু যখন শুনলেন-- বেলা যে যায়!
    তখনই মনে বৈরাগ্য এল।
    দাড়িদাদু বলে গেছেন--
    "প্রভাত কি রাত্রির অবসানে?
    যখনি চিত্ত জেগেছে শুনেছ বাণী, তখনই প্রভাত,
    যাও নিজ ব্রত পালনে!"

    কে কখন বাণী শুনবে সে কি অন্যে ঠিক করে দেবে? তবে অনেকের চিত্ত জাগে, বাণী ও কানে পশে, শুধু সাহস হয় না।

    অক্ষ,
    ট্রোল মানে কী?
  • a x | 138.249.1.206 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ২৩:২৮645095
  • In Internet slang, a troll (/ˈtroʊl/, /ˈtrɒl/) is a person who sows discord on the Internet by starting arguments or upsetting people,[1] by posting inflammatory,[2] extraneous, or off-topic messages in an online community (such as a newsgroup, forum, chat room, or blog) with the deliberate intent of provoking readers into an emotional response[3] or of otherwise disrupting normal on-topic discussion.

    http://en.wikipedia.org/wiki/Troll_%28Internet%29
  • Ranjan Roy | ৩০ জুলাই ২০১৪ ০০:০৩645097
  • আর একটি গল্প বলিঃ গত ১২ মে বিকেল ৫ টার সময় ফুসফুসের এক বিশেষ ধরণের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন মুকুল সিনহা।। তৎক্ষণাৎ টিভি চ্যানেলের নীচে পট্টি আসতে লাগল। দিল্লিতে, আমেদাবাদে বিশাল শোকসভা হল। আমেদাবাদে প্রায় চারহাজার মানুষ। তাতে সামিল গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। ।দি হিন্দু, ও অন্যান্য পত্রিকায় বেরলো শোক সংবাদ। সরব সাগরিকা ঘোষ, আশুতোষ ও এনডিটিভির সাংবাদিক। কিন্তু বিনায়ক সেনের মুক্তি নিয়ে সরব কোলকাতার মিডিয়া সেদিন নীরব -- কেন জানিনা। আমিও জানতাম না যে উনি বাঙালী, জানতাম না যে ওঁর কর্মভূমি গুজরাত বা দিল্লি হলেও উনি বড় হয়েছেন বিলাসপুরে, মাত্র জেনেছি। আজ ওঁর বড় দাদার সঙ্গে দেখা করে এলাম। উনি যে আমার থেকে মাত্র দশমাসের ছোট ছিলেন। কে এই মুকুল সিনহা? জানতে হলে দেখুন ওঁর তৈরি ওয়েব সাইট www. truth of gujrat"। আজও আপ ডেট হয়, পরিচালনায় ছেলে প্রতীক সিনহা।

    আমার চোখে ওনার গল্পের নাম হওয়া উচিতঃ
    " যে বাঙালী মোদীর চোখে চোখ রেখেছিল"
    ------------------------------------------
    মুকুল সিনহা। কোলকাতায় জন্মালেও বাবার রেলের চাকরির সুবাদে পড়াশুনো ছত্তিশগড়ের বিলাসপুরে। এখানকার স্থানীয় সিএমডি কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক। আই আই টি কানপুরে ফিজিক্সে এম এস সি। ফিজিক্সে ডক্টরেট।
    বাবা বিলাসপুরের রেলওয়ে ট্রেড ইউনিয়নে সক্রিয় ছিলেন এবং ১৯৭৪ এ জর্জ ফার্নান্ডেজের নেতৃত্বে দেশব্যাপী বিশাল স্ট্রাইক/ ধরপাকড়ের সময় জেলে গেছেন, কিন্তু মুকুল এই পর্যায়ে ছাত্র বা শ্রমিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন না। কিন্তু কানপুর আই আই টিতে পড়ার সময় একটু আন্দোলনের দিকে ঝুঁকে ছিলেন।
    তারপর আমেদাবাদের ফিজিক্স রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে চাকরি/গবেষণার সময় একটি বামপন্থী স্টাডি সার্কল ও শ্রমিক/কর্মচারি সংগঠন গড়ে তোলেন। সেই সময় কলিগ গুজরাতি মহিলা নির্ঝরীকে বিয়ে করেন।
    তারপর ল্যাব কর্তৃপক্ষ লেবার ইউনিয়ন গড়ার অপরাধে তাঁকে বে-আইনী ভাবে বরখাস্ত করে, উনি লেবার কোর্টে যান। সেই সময় তাঁর চোখে পড়ে লেবার কোর্টে শ্রমিক/কর্মচারীদের অবস্থা। আর অভিজ্ঞ ট্রেড ইউনিয়নিস্ট এন এন প্যাটেলের সাথে পরিচয় হয়। দুজনে একসঙ্গে ঠিক করেন যে শ্রমিকদের আইনজীবী হবেন। আইনের ডিগ্রি নিয়ে তাঁরা দুজন শুধু শ্রমিকের জন্যে সামান্য পারিশ্রমিকে কেস লড়তেন। তারপর তাঁরা দুজনে গুজরাত ফেডরেশন অফ ট্রেড ইউনিয়ন্স বানালেন। তারপর প্যাটেলের সুযোগ্য পুত্র অম্বরীশ এতে সক্রিয় ভাবে যোগ দেন। উনি আজও সক্রিয়।
    ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গা এই গোষ্ঠীটির মধ্যে তীব্র প্রভাব ফেলে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ওঁরা ক্রমাগত বিক্ষোভ ও প্রদর্শন সংগঠিত করেন-- সব বামগোষ্ঠীকে নিয়ে। হামলা , প্রাণে মারার হুমকি, পুলিশের মিথ্যে মামলা-- কিছুই আমেদাবাদ থেকে এঁদের তাড়াতে পারেনি।
    এঁরা গুজরাত দাঙ্গার তথ্য/প্রমাণ নানাবতী কমিশনের হাতে তুলে দেন। সোহরাবুদ্দিন এনকাউন্টারের মত হাই প্রোফাইল কেস হাতে নেন। তাঁদের প্রয়াস ও নিরলস পরিশ্রমের ফলেই ডঃ ও মন্ত্রী মায়া কোদবানীর আসল রূপ আদালতের সামনে উদ্ঘাটিত হয়।
    যে সমস্ত পুলিশ অফিসার কোর্টে এ'কথা বলার সাহস দেখিয়েছিলেন যে মোদিই মুসলমানদের ওপর আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁদের পক্ষে আইনী লড়াই চালিয়েছে এই গোষ্ঠীটি।
    গুজরাতের দাঙ্গা থেকে তাঁরা সেখানে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে গড়ে তুললেন " নিউ সোস্যালিস্ট মুভমেন্ট" দল। তার সঙ্গে ডেমোক্র্যাটিক আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত থাকেন। বিগত নির্বাচনের সময় মৃত্যুর সাতদিন আগেও ক্যান্সারের শেষ স্টেজে আপ ও অন্যান্য মোদিবিরোধী দল ও জার্নালিস্টদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গেলেন। মৃত্যুর পর তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী মৃতদেহ ক্যান্সার হাসপাতালে দান করা হয়েছে।
    ছেলে প্রতীক আই টি ইঞ্জিনিয়ার। চাকরির সুবাদে আমেরিকা-ভিয়েতনাম করে বেড়াত। এখন বাবার মৃত্যুর পর বাবার তৈরি www. truth of gujrat" নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছে।
    দাদাকে শেষের দিনে বলেছিলেন-- মোদীর ভারতে বাঁচতে চাই নে!
    মৃত্যুর দেবতা তাঁর কথা শুনলেন।
  • SJ_GW | 105.130.9.129 | ৩০ জুলাই ২০১৪ ০৫:৪৩645098
  • গুরু'র ইতিহাস এ এই প্রথম 'চদু ' শব্দ টির ব্যবহার এর জন্য আন্তরিক ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।
    অক্ষ,
    স্মার্ট মানে কী?
  • তাপস | 233.29.204.178 | ৩১ জুলাই ২০১৪ ১১:০৫645099
  • সঞ্জয়দার কথা ভুলে গিয়েছিলাম । কল্লোলদা, ধন্যবাদ । ভুলে যাই আজকাল । এই টইটা জ্যান্ত রাখুন । তুলতে থাকুন ।
  • তাপস | 233.29.204.178 | ৩১ জুলাই ২০১৪ ১১:৫০645102
  • অমল
  • তাপস | 233.29.204.178 | ৩১ জুলাই ২০১৪ ১১:৫০645101
  • কল্লোলদা, আমল সোম?
  • কল্লোল | 125.242.170.19 | ৩১ জুলাই ২০১৪ ১৬:৪৭645103
  • তাপস। বুঝলাম না।
    আমি তো অমল সোম নই। তিনি কিনি?
  • তাপস | 126.202.196.102 | ০১ আগস্ট ২০১৪ ২১:৪৬645104
  • কল্লোলদা, আমি ভেবেছিলাম (কেন জানি না) যে আপনি অমল সোমকে চিনবেন । অমল সোম মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতেন । মানস বলে একটি সংস্থা চালাতেন । মানস এখনো আছে । আমি একটু একটু চিনতাম । খুব ভালো মনে নেই । একটু তথ্য মনে করে আর জোগার করে লিখব তাহলে ।
  • | 183.17.193.253 | ০১ আগস্ট ২০১৪ ২১:৪৮645105
  • মানসের নিজেরই স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে গেছেঃ(
    লিখো।
  • Ranjan Roy | ০১ আগস্ট ২০১৪ ২৩:৪০645106
  • অমল সোম। আমাদের পারিবারিক বন্ধু রুশভাষার বিখ্যাত অনুবাদক অরুণ সোমের ভাই।
    ফিজিক্সে কোলকাতা ইউনিভার্সিটির স্কলার। কিন্তু
    কিন্তু সেই মাথার ব্যামো।
    নিজের অসুখকে চিন্তে পেরে "মানস" নামের মানসিক ব্যাধির পর্যবেক্ষণ, নিরাময় ও আশ্রয়ের সংস্থা তিল তিল করে গড়ে তোলা।
    আজকে উনি নেই। সংস্থায় আছেন ছোটবোন। তাঁরও সমস্যা।
    হ্যাঁ, মানসের অবস্থা ভাল নয়। পাশে দাঁড়ানোর লোকের বড়ই অভাব।
  • a x | 138.249.1.206 | ০১ আগস্ট ২০১৪ ২৩:৫৭645108
  • কেউ শুনল পুরো বক্তব্যটা? প্রচুর প্রবলেম আছে কিন্তু ঃ-)
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন