এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  গান

  • শত বর্ষের আলোয় – পূজোর গান

    Somen Dey
    গান | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ৫৪৭৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Somen Dey | 53.252.248.56 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৫:৫৩651422
  • শত বর্ষের আলোয় – পূজোর গান
    **************************
    প্রথমেই বলে রাখি সবার অলক্ষে পূজোর গানের বয়স কিন্তু গুটি গুটি একশো বছর হয়ে গেল , কারন আজ থেকে ঠিক একশো বছর আগে হিজ মাস্টার্স ভয়েস কোম্পানি তাদের সেই বিখ্যাত সারমেয়টির মগ্ন হয়ে প্রভুর গান শোনার ছবি দেওয়া লোগোটি সহ যে বিজ্ঞাপন টি সেপ্টেম্বর- ১৯১৪ তে ছেপেছিল তাতেই প্রথম সতেরোটি গানের তালিকা সহ লেখা ছিল – “শারদীয় পূজা উপলক্ষে’।
    পূজোর গানের যাত্রা সেখান থেকেই শুরু ।

    আমরা বরং শুরু করি আমাদের স্মৃতিতে যা ধরা আছে সেই সময়টাকে দিয়ে ।সে একটা সময় ছিল যখন , মাঠ ঘাট জলে টইটম্বুর করে দিয়ে বর্ষা পাততাড়ি গোটালেই বাংলা দেশের নীল আকাশে রোদ আর মেঘ মিলে আল্লারাখা-আলি আকবর স্টাইলে সওয়াল জবাবের শুরু করে দিত , শহর থেকে দূরে বর্ধিষ্ণু গ্রামের ক্ষয়িষ্ণু জমিদার বাড়ির ঠাকুরদালানের এক কোনায় যে খড়ের কাঠামো টি সারা বছর অনাদরে পড়ে থাকতো সেটির ধুলো টুলো ঝেড়ে তাতে মাটি লেপার কাজ শুরু হত , নদী নালার ধারে হটাৎ করে অমল মহিমা নিয়ে এক রাশ কাশ ফুল এসে হাজির হত আর শহরে ‘পূজোয় চাই নুতন জুতো’ , বাটা কোম্পানির এই এক পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন টি কাগজে বেরোনো মাত্র ছেলে পুলেদের বুকে এক অনির্বচনীয় আনন্দের স্নো-বল এফেক্ট শুরু হয়ে যেত ।
    ঠিক সেই সময়টায় আরো একটা ব্যাপার ঘটতো , আপামর বাঙালি সে সময়টায় শনি আর রবিবারের দুপুরে কান পেতে বসে থাকতো রেডিওর অনুরোধের আসরে , পূজোর গান শোনার আশায় । সেই গান শোনার আগ্রহ এবং আবেগ আজকের দিনে কোনো তূলনা দিয়ে বোঝানো যাবেনা ।বেতার জগত নামের পত্রিকাতে যে গানের শিল্পীদের ছবি বেরোতো সে গুলি ব্লেড দিয়ে কেটে অনেকেই তাদের ‘বিরাট সম্বল’ করে সযত্নে সংরহে রেখে দিতেন অনেকেই ।
    বাঙ্গালির ডি এন এ তে একটা গানের খিদে চিরকালই আছে । যে মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়িতে একটি কন্যা সন্তান বড় হচ্ছে সে বাড়িতে খাটের তলায় একটা হারমোনিয়াম থাকবে এটাই স্বাভাবিক । সকাল সন্ধে তার গলা সাধার আওয়াজ শুনে প্রতিবেশীরা কিছুটা অতিষ্ঠ হবেন , অন্তত যতদিন তার বিয়ে থা না হয়ে যায় , এটাও স্বাভাবিক ছিল।কোনো বঙ্গসন্তান কলঘরে চান করতে ঢুকে সুরে বেসুরে যদি গান গাইতে আরম্ভ না করে তাহলে বাঙালিত্ব নিয়ে সন্দেহ হতে দেখা দিতে পারে । বাঙ্গালির এই গান বাতিকের উৎস সন্ধান করে দেখা যেতে পারে ।
    বাঙ্গালির হয়তো ব্যাবসা বুদ্ধি নেই , ক্ষমতাবান হওয়ার আকাঙ্খা নেই , ধনবান হবার উচ্চাশা নেই । কিন্তু চিরকাল বাঙ্গালির প্রাণে গান ছিল এবং আছে । দুঃখে শোকে , উৎসবে , ব্যাসনে , জন্ম মৃত্যু বিবাহে বাঙালি গান রচনা করেছে ,সুর দিয়েছে , গেয়েছে । সে গান বৈশিষ্টের বিরাটত্বে পৃথিবীর যে কোনো দেশের গানের ঐতিহ্যকে লজ্জা দিতে পারে ।
    আমাদের দেশজ গান শুধু প্রেম আর ভক্তিরস নিয়েই সীমাবদ্ধ নয় , সেখানে ছিল ধান কাটার গান ,ধান কোটার গান , নৌকা বাওয়ার গান , মাছ ধরার গান , ডাক হরকরার গান , ছাত পেটার গান, পাল্কি বওয়ার গান , বিয়ের গান , দোলের গান , গাজনের গান , - আরো কত রকমের গান , যা এই বাংলার মানুষ জনের চলমান জীবনের প্রত্যেক পদক্ষেপের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতো । এই গানের টান টা ঠিক কি কারনে তা বলা মুস্কিল । হতে পারে এটা বাংলার প্রকৃতির এই নমনীয় স্নিগ্ধতার জন্যে , ছটি ঋতুর প্রভাবে প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যময় রুপবদলের জন্যে ,অথবা হতে পারে বাঙ্গালির রক্তে বিবিধ জাতির মিশ্রনের ফলে বিভিন্ন সংস্কৃতির মিশে যাওয়ার জন্যে ।

    গৌরবজ্বল বীরত্বের ইতিহাসের অভাব থাকলেও বাঙ্গালির আছে গর্ব করবার মত বাংলা গানের বিশাল বৈচিত্রে সম্বৃদ্ধ ভান্ডার । কীর্তন , চর্জাগীতি ,নাট্যগীতি , বৈষ্ঞব পদাবলী , শ্যামাসংগীত , কবিগান , পাঁচালি গান , ভাটিয়ালি ভাওয়াইয়া , জারি সারি , ঝুমুর , মুর্শিদি , দেহতত্ব , আউল বাউল , ভাদু গান টুশু গান আরও কত রকমের গান । এই সব লোক গানের কিছু কিছু লোকেদের মুখে মুখেই ফিরে বেঁচে আছে কিন্তু কত যে হারিয়ে গেছে কালের অতল গর্ভে তা কে জানে | মুখে মুখে ফিরে যে টুকু আমাদের সময়ে এসে পৌঁছেচে , তা শুনে আমরা বুঝতে পারি আমরা যে গানের রতনহার গুলি হারিয়ে ফেলেছি তা কত দামী ছিল । সে সব গান সংরক্ষণ করা যায়নি কারন আমাদের না ছিল তেমন সাধন , না ছিল তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান , না ছিল সে সব নাম না জানা সঙ্গীতকারদের তাদের গাঙ্কে কোনো স্বরলিপিবদ্ধ করার মত জ্ঞান , গ্রামে গঞ্জে না ছিল তাদের গানের বানি বা স্বরলিপি ছাপার মত কোনো ছাপাখানা । আমাদের গান ছিল স্মৃতি ও শ্রুতি বাহিত পরম্পরা | কাজেই আমরা উত্তরাধিকার সুত্রে আজ যে সব পুরোনো গান আমরা পেয়েছি , তার কিছু কিছু হয়তো বিকৃতি ঘটতে ঘটতে সাত নকলে আসল খাস্তা হয়ে গেছে| তবু যা আছে তা পেয়েই আমরা ধন্য ।

    তাবলে আমাদের পুরনো গান বলতে যে সবই লোকায়ত, গ্রাম বাংলার গান তা নয় , আমাদের শহর পত্তনের সেখানেও সঙ্গে সঙ্গে অন্য রকমের গানের চর্চাও হতে থেকেছে । অষ্টাদশ শতাব্দীতে কৃষ্ণনগরে, ঢাকায় , শান্তিপুরে চুঁচুড়া , চন্দননগর এবং কোলকাতায় ভালোরকম গানের চর্চা ছিল । আর বিষ্ণুপুরের ‘সেনী’ ঘরানার ধ্রুপদী গান তো ছিলই ।
    আঠারো শতকের শেষ ভাগ থেকে উনিশ শতক অবধি বহু ধরনের গান বহু ধরনের গান রচিত হয়ে ছিল । সাতাত্তরের মন্বন্তরে এ বাংলায় লক্ষাধিক মানুষ মারা গেলেও বাঙ্গালির গান চর্চায় ভাটা পড়েনি । সে সময়ের গান ছিল – শাক্ত গীতি , টপ্পা গান , আখড়াই, হাফ আখড়াই গান, ঢপ কীর্তন , ‘পক্ষী’ গীতি , কবি গান পাঁচালি গান , যাত্রা গান ইত্যাদি । এ সব গানই আসরে লাইভ গাওয়া হত জমিদার বা ধনি নাগরিক দের পৃষ্ঠপোষকতায় ।
    (প্রথম পর্ব )
  • b | 24.139.196.8 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৯:০৮651433
  • সৌমেনবাবু, আরো লিখুন। বেড়ে হচ্ছে।

    কিছু টাইপো আছে।
  • jhiki | 128.136.69.135 | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৭:১৫651444
  • বাহঃ
  • Somen Dey | 53.252.250.5 | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৬:৩৩651453
  • সায়েবরা এদেশে বনিকের মানদন্ড নিয়ে মুলত তাদের ব্যাবসা বাড়াবার জন্যেই এসেছিল সে কথা আমরা সবাই জানি । তবে তারা তাদের এই ব্যাবসা বাড়াতে গিয়ে জেনে বা না জেনে আমাদের বেশ কিছু উপকারও করে ফেলেছেন ।
    ১৯০২ সালে এক ইংরেজ বনিক কোলকাতায় এলেন তাঁর গ্রামাফোন এন্ড টাইপরাইটার কোম্পানি লিমিটেডের শাখা খুলতে । তাঁর নাম ছিল - ওয়াটসান হড ।হড সাহেব ছিলেন বিচক্ষন ব্যাবসায়ী । তিনি এ দেশে এসেই বুঝলেন এ দেশে গানের বাজার তৈরির একটা বিপুল সম্ভাবনা আছে । তিনি বিলেত থেকে ডেকে নিলেন ফ্রেড গেইসবার্গ এক রেকর্ডিংয়ের কারিগর কে । অবশ্য হড সাহেবদের আগেও এ দেশে রেকরডিং শুরু হয়েছিল । তা শুরু করেছিল থিয়েটারের অমরেন্দ্র দত্ত আর বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বোস । কিন্তু সে রেকরডিংএর তারা বানিজ্যকরন করেননি ।হড সাহেবরা তাই ফাঁকা মাঠ পেয়ে গেলেন। সে কালে শহরের বাবুরা গান শুনতে যেতেন হয় কোনো আসরে , থেটারে আর নয় বাইজি বাড়িতে । বাবুদের ঘরে বসে গান শোনার কোনো উপায় ছিল না । অবশ্য বিশম্ভর চৌধুরী দের মত যাদের বাড়িতে জলসাঘর থাকতো তাদের কথা আলাদা , তারা আর কজন !

    সুখী গৃহকোন শোভে গ্রামাফোন
    ******************

    হড আর গেইসবার্গ বুঝলেন এ দেশে খিদে আছে খাদ্য নেই । তাঁরা ব্যাবসার দৃষ্টি দিয়ে তাক করলেন এই অবস্থাকে । তাঁরা বিলেত থেকে এমন প্রযুক্তি নিয়ে এলেন যা দিয়ে গান গালার চাকতিতে রেকর্ড করে বাবুদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া যায় । বাইজী বাড়িতে গিয়ে গান শোনার চেয়ে নিজের বাড়িতে ফরাস পেতে সুগন্ধী তামাক সেবন করতে করতে নিজের সুবিধা ও পছন্দ মত গান শোনাটা বাবুদের বেশ পছন্দ হল । সে সময় অনেক সম্পন্ন বাঙ্গালি বাবুদের ঘরে ঢুকলো একটি নতুন আসবাব- গ্রামাফোন | নতুন গ্রামাফোন কোম্পানির স্লোগান হোলো – ‘সুখী গৃহকোন – শোভে গ্রামাফোন’ । জব্বর ক্যাচলাইন ।

    বাঙ্গালি সুখী গৃহকোনের মাপকাঠি হিসাবে গ্রামাফোন কে সত্যি সত্যিই দেখতে আরম্ভ করলো । ক্রমে তা বড়লোক থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যেও গ্রামাফোনের চাহিদা বাড়প্তে থাকলো ।একবার এক গৃহস্থের ঘরে একটি গ্রামাফোনে ঢুকিয়ে দেওয়া মানেই সে ঘরে ডিস্ক রেকর্ডের স্থায়ী চাহিদা তৈরি করে দেওয়া এ টা সাহেব দের বুঝতে অসুবিধা হল না । সুতরাং ডিস্ক সঙ্গীতের চাহিদা ক্রমে বাড়তে লাগলো । এই নতুন পন্য টি বাঙ্গালির জীবন শৈলীকে কে অনেক খানি পাল্টে দিল । গোড়ার দিকে গান রেকর্ড করার জন্যে যাদের পাওয়া গেল তারা সবাই পেশাদার শিল্পী । সে সময় শহরে গান কে পেশা হিসেবে নেওয়ার ব্যাপারে বেশ কিছু সামাজিক ট্যাবু ছিল । তাই যারা রেকর্ডে গান গাইতে এলেন তারা মুলত বাইজী শ্রেনীর । যেমন গওহর জান , ইন্দুবালা , আঙ্গুরবালা , কৃষ্ণভামিনী ইত্যাদি ।যে কোনো সামাজিক ট্যাবু চিরকাল থাকেনা । সময় একটু একটু করে তা ভেঙ্গে দেয় । এ ক্ষেত্রেও তাই হল । গ্রামাফোন কোম্পানি সচেষ্ট হলেন ভদ্র সমাজ থেকে শিল্পী খুঁজে বের করে আনার । এক দু জন করে আসতেও লাগালেন ।
    কিন্তু প্রাথমিক সংস্কার কাটানোর জন্যে তারা যে পেশাদার নয় সেটা বোঝাবার জন্যে রেকরডের লেভেলে তাদের নামের পাশে ব্র্যাকেটে ‘এমেচার’ শব্দটি লিখে দেওয়া হত । হায় বাঙ্গালির সংস্কার , গানকে পেশা হিসাবে কখনো নিতে নেই মনুসংহিতায় নাকি এ রকম বিধান দেওয়া আছে । তবে মনুর অনেক বিধানের মত এ বিধান টিকেও সময় বাতিল করে দিল । এমন কি অভিজাত পরিবার থেকেও কেও কেও এগিয়ে এলেন রেকর্ডে গান গাইবার জন্যে । যেমন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের ভগ্নী অমলা দাশ এলেন ‘মিস দাস (এমেচার )’ নাম নিয়ে । চোঙ্গা ওয়ালা গ্রামাফোনে দম দিয়ে কালো চাকতির ডিস্ক গ্রামাফোনে চাপিয়ে ইজি চেয়ারে বসে গান শুনে অবসর বিনোদন বাঙ্গালির সংস্কৃতিতে ঢুকে পড়লো । গ্রামাফোন কোম্পানির ব্যাবসা হু হু করে বাড়তে লাগলো ।রেকর্ডে গান আসার ফলে বাঙালি সমাজে তিনটে পরিবর্তন ঘটলো ।এক নম্বর, গান , সে যে কোনো ধরনের গানই হোক চন্ডীমন্ডপ , থিয়েটার , বাইজীবাড়ি আর জলসাঘর থেকে বাঙ্গালির অন্দর মহলে প্রবেশ করলো । রেকর্ডের গান শুনতে শুনতে গৃহস্থ বাড়ির মহিলারাও রান্না করতে করতে গুন গুন করে দু কলি গান গাইতে আরম্ভ করলেন ।

    দু নম্বর হল , গান সঠিক ভাবে সংরক্ষনের একটা উপায় বেরোলো । দীর্ঘ কালের স্মৃতি ও শ্রুতিবাহিত পরম্পরায় গানের যে বিকৃতি ঘটে যেত তা থেকে মুক্তি পাওয়া গেল ।

    তিন নম্বর হল গানের গুনাগু্ন বোঝার একটা মাপকাঠি তৈরি হল ।রাম প্রসাদ ,ভোলা ময়রা , নিধুবাবু , যদুভট্ট , গোপাল উড়ে এঁরা কেমন গান গাইতেন তা বোঝার কোনো উপায় নেই । কিন্তু গওহর জান থেকে লোপামুদ্রা মিত্রের গানের ডকুমেন্টেশন আমদের কাছে রয়ে যাবে চিরদিন ।

    সে সময় সাধারনত রেকর্ডের গানগুলি বেরোতো সেপটেম্বর অক্টোবর মাসে । হয়তো শারদোৎসবের কথা মাথায় রেখেই । কিন্তু ঠিক ‘পূজোর গান’ বলে কিছু ছিলো না । কোম্পানির মাথায় ফন্দী এলো , এমনিতে গাঁয়ে গঞ্জে তো বাঙালি আগমনী গান গেয়েই থাকে এই সময় টায়, তাই শহরের বাঙ্গালির উৎসবের মুডের সঙ্গে যদি রেকর্ডের গান টাকে যদি জুড়ে দেওয়া তা হলে বেশ ব্যাবসার সম্ভাবনা আছে ।
    ১৯১৪ সালে তারা নেমে পড়লেন ‘পুজোর গান’ এর মারকেটিং স্ট্রাটেজী তে ।
    সে বছর তারা ১৭ টি রেকর্ড বের করে বিজ্ঞাপনে লিখলেন – ‘শারদীয়া পূজা উপলক্ষে’
    বিজ্ঞাপনের পোস্টারটি ছিল অভিনব । একটি নবীনা সে কালের মত করে সাড়ি পরে পরে নত মস্তকে নম্র নেত্রে বাড়িয়ে দেওয়া দুহাতে পদ্ম ফুল নিয়ে অঞ্জলীর ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে আছে এক পুষ্করিণীর ধারে , এক পাশে দেখা যাচ্ছে কাশ ফুল , অন্য পাশে পাহাড়ের ফাঁকে সূর্যোদয় বুঝিয়ে দিচ্ছে সময় টা সকাল বেলা । ইনলে তে লেখা ‘শারদীয়া পূজা উপহার’ September 1914 . নুতন ১০ ইঞ্চি ডবল সাইডেড ভাওলেট (ধুমল বর্ণ ) – বাঙ্গালা গ্রামফোন রেকর্ড ।’
    শিল্পীদের তালিকা এ রকম – মানদা সুন্দরী দাসী ,নারায়ন চন্দ্র মুখারজী, কে মল্লিক , কৃষ্ণ ভামিনী , সরলা বাঈ , চন্ডীচরন বন্দোপাধ্যায় , শশী ভুষন দে , বেদানা দাসী ইত্যাদি । সে বছর শ্রীমতি অমলা দাশ দুটি রবি বাবুর গান ও গেয়েছিলেন – হে মোর দেবতা আর প্রতিদিন আমি হে জীবনস্বামী ।
    এ খান থেকেই ‘পুজোর গান’ শুরু করলো তার রঁদেভু ।
    আজি শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গল গাও .........
    *********************

    এর মধ্যে কে মল্লিক পরবর্তী কালে খুব জনপ্রিয় হয়েছিলেন | এঁর আসল নাম ছিল মহম্মদ কাসেম | মুসলমানের মুখে শ্যামাসঙ্গীত গ্রহনীয় হবে কিনা সে ব্যাপারে গ্রামাফোন কোম্পানির যথেষ্ট সংশয়ে ছি্ল | তাই তারা কোনো ঝুঁকি নেয়নি | তখন কে জানতো তার কিছুদিন পরেই আর এক ঝাঁকড়া চুলের দুরন্ত প্রাণ মুসললমান যুবক নিজেই অনবদ্য শ্যামাসঙ্গীত রচনা করে মাতিয়ে দেবে বাঙ্গালিকে | তাঁকে নাম গোপন করতে হয়নি - নজরুল ইসলামের ধর্ম নিয়ে অন্তত হিন্দুরা কোনো প্রশ্ন তোলেনি ।

    এর পর আমাদের দুর্গোৎসবের সঙ্গে গ্রামাফোন ডিস্কের গানের একটা হাত-দস্তানার সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল এবং সেটা ক্রমশ গভীর হতে লাগলো । বাঙ্গালির পূজোর বাজেটে ধুতি সাড়ি কামিজ সেমিজ ফ্রকের সঙ্গে পছন্দের শিল্পীদের দু একটা রেকর্ড কেনাও ও ঢুকে পড়লো ।
    এ দিকে নতুন নতুন নানা গুণী সঙ্গীত শিল্পীরা রেকর্ড করতে আসতে আরম্ভ করলেন । শিল্পীদের গান গেয়ে অর্থ উপার্জনের একটা রাস্তা খুলে গেল । বিশ শতকের প্রথম দশকে এলেন গওহর জান , লালচাঁদ বড়াল , গোপেশ্বর বন্দোপাধ্যায়ের মত প্রবাদ প্রতীম শিল্পীরা। সেই সঙ্গে এলেন কয়েক জন নুতন শিল্পী , যেমন বিনোদিনী , কুমুদিনী , ভুবনেশ্বরী ইত্যাদি ।
    উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের যা ঘটলো সেটাকে বলা যেতে পারে বাংলা গানের জগতের এক রেনেঁসা । কেন বলছি সেটা নাম গুলি শুনলেই বোঝা যাবে কেন এ সময় টাকে নবজাগরন বলা হয়েছিল - আশ্চর্যময়ী দাসী , এম এন ঘোষ , ইন্দু বালা , কৃষ্ণ চন্দ্র দে , পঙ্কজ কুমার মল্লিক , কমলা ঝরিয়া , ধীরেন্দ্র নাথ দাস , দিলীপ কুমার রায় প্রমুখ | এরা বাংলা গানকে এক ধাপে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গেলেন তাঁদের অনির্বচনীয় কন্ঠের সম্পদ নিয়ে।

    কৃষ্ণ চন্দ্র দে ১৯১৭তে পুজোর গান করলেন ‘মা তার মুখ দেখে কি’ । সেকালে সুপার হিট । এ ছাড়া তাঁর কন্ঠে যে সব পুজোর গান পরবর্তী কালে জনপ্রিয় হয়েছিল সে গুলি = স্বপন দেখিছে রাধারানি , আমি চন্দন হইয়ে , সখী লোকে বলে কালো ইত্যাদি । ১৯২২ শে আঙ্গুর বালা গাইলেন –কত আশা করে তোমারি দুয়ারে । ১৯২৩ শে ইন্দুবালা গাইলেন তুমি এসো হে তুমি এসো হে , ওরে মাঝি ।
    ১৯২৫ সালে দিলীপ কুমার রায় পুজোতে রেকর্ড করলেন - তিনি গাইলেন দুটি দুটি গান- ছিল বসি সে কুসুম কাননে , রাঙ্গাজবা কে দিল তোর পায়ে ।
    ১৯২৫শে সাহানা দেবী গেয়েছিলেন দুটি অতুল প্রসাদের গান – কত গান তো হল গাওয়া , শুধু দু দিনেরি খেলা ।
    সম্ভবত কাজি নজরুলের গানের প্রথম রেকর্ডটি বেরোয় ১৯২৫ সালের পুজোয় - হরেন্দ্র নাথ দত্তের কন্ঠে - , তার পরে নজরুলের গান করেন ইন্দু বালা , ধীরেন্দ্র নাথ দাস , হরিমতী , মৃনাল কান্তি দাস ,যুথিকা রায় , জ্ঞানেন্দ্র নাথ গোস্বামী প্রমুখ |
    কমলা ঝরিয়া ১৯৩০ সালে পুজোতে প্রথম রেকর্ড করলেন –প্রিয় প্রেম ভুলোনা , নিঠুর দয়াবান কেন হানো । ১৯৩১ শে ধীরেন্দ্রনাথ দাস গাইলেন সেই বিখ্যাত গান যা আজো গাওয়া হয়ে থাকে – শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গল গাও । কনক দাস ১৯৩১ সালে দুটি অতুল প্রসাদের গান গাইলেন – কী আর চাহিব বল , তব চরন তলে সদা রাখিও । তিনি ১৯৩৬ শের পুজোতে গেয়েছিলেন দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত – কাছে থেকে দূর রচিল , সে দিন দুজনে ।

    এতদিন পর্যন্ত বাংলা আধুনিক গান বলে তখনো কোনো গান কে চিহ্নিত করা হয়নি । এই আধুনিক গানের তকমাটি কখন থেকে লাগলো এ নিয়ে কিছু মতভেদ আছে । একটি মত বলছে ১৯৩০ সালে ২৭ শে এপ্রিল কলকাতা বেতারে শ্রী হৃদয় রঞ্জন রায় নামক এক গায়কের অনুষ্ঠান প্রচারের সময় আধুনিক গান শব্দ টি ব্যাবহার করেন । তার কিছুদিন পর থেকেই এই নামটি বাঙালি গ্রহন করে নেয় । অবশ্য রবি ঠাকুর তার অনেক আগেই ইন্দিরা দেবী লিখিত একটি চিঠিতে তাঁর নিজের গান কে আধুনিক গান বলে উল্লেখ করে ছিলেন ।

    ১৯৩০ সালে বাংলা চলচ্চিত্র সবাক হল | বাংলা সিনেমায় দর্শক মনোরঞ্জনের জন্যে প্রচুর গান ব্যাবহার করার প্রয়োজন হল | নতুন সুরকার গীতিকার গায়কদের দরকার হয়ে পড়লো | একটা নতুন দিগন্ত খুলে গেল | ডিস্ক কোম্পানি গুলিরও ব্যাবসা বাড়তে লাগলো | একদিকে চলচ্চিত্রের গান অন্যদিকে বেসিক বালা গান , দু রকম রেকর্ড বের হতে থাকলো । বেসিক বাংলা গান গুলি বেশির ভাগই আধুনিক গান | ক্রমশ পুজোর সময় প্রকাশিত বেসিক বাংলা গানের সংখ্যা বাড়তে লাগলো | প্রতি মাসে গানের রেকর্ড না বের করে পূজোর সময়েই সব সুরকার গায়করা তাদের শ্রেষ্ঠ গান গুলি প্রকাশ করতে শুরু করলেন । সিনেমায় তখন স্টার প্রথা শুরু হয়নি হয়নি কিন্তু বাংলা গানে অনেক উজ্বল তারকা আলোকিত করলেন বাংলাগানের আকাশ ।

    আকাশ জুড়ে স্বপ্ন মায়া ......
    ***************
    চল্লিশের দশক থেকেই শ্রোতাদের কাছে পূজোর গানের জন্য একটা উন্মাদনা তৈরী হওয়ার শুরু হল | পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে এই উন্মাদনা একেবারে তুঙ্গে উঠলো। বাংলা আধুনিক গানের ‘স্বর্নযুগ’ শুরু হল পঞ্চাশের দশকে। যেমন সব স্বর্ন কন্ঠের গায়ক গায়িকারা এলেন , তেমনি এলেন অসামান্য সুরকাররা আর সেই সঙ্গে এলেন অসাধারন গুনী গান লিখিয়েরা।

    শুধু এই চল্লিশ থেকে ষাট দশকের সময় সীমায় যা সব যুগান্তকারী পুজোর গান বেরিয়েছে তা নিয়ে লেখা এই সল্প পরিসরে সম্ভব হবেনা | তাই কয়েকটি মাত্র মাইলস্টোন গানের কথাই উল্লেখ করছি |
    ১৯৩৭ এ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের আত্নপ্রকাশ ঘটলো – জানিতে যদি গো তুমি আর বল গো বল এই দুটি গান গেয়ে। তার পর যে কী করে বাঙ্গালির সব ঋতুই হেমন্ত কাল হয়ে উঠল সে এক অন্য ইতিহাস । প্রথমে কিছুটা পঙ্কজ মল্লিক ধাঁচে আরম্ভ করলেও অচিরেই নিজের এক ঋজু , মেঘমন্দ্রিত কন্ঠের স্বকীয় স্টাইল তৈরি করলেন এবং পঞ্চাশ ষাট ও সত্তর দশক জুড়ে তাঁর গাঁয়ের বধু , রাণার , দুরন্ত ঘূর্ণি , ধিতাং ধিতাং বোলে , আমায় প্রশ্ন করে , শোনো কোনো এক দিন –পূজোর এই সব সলিল-হেমন্তর সম্মেলনের গানগুলি বাংলা গানের ইতিহাসে একটি আলাদা অধ্যায় দাবী করবে । সলিল চৌধুরি ছাড়াও পূজোতে গাওয়া কিছু মৃত্যুহীন গান - নচিকেতা ঘোষের সুরে ‘কোন পাখী ধরা দিতে চায়’ ‘যদি জানতে চাও’ সতিনাথ মুখোপাধায়ের সুরে ‘তোমার আমার কারো মুখে কথা নেই’ নিজের সুরে ‘অলির কথা শুনে’ ‘আমি দূর হতে তোমারে দেখেছি’ ইত্যাদি ।

    ১৯৪২ সালে আর একটি সুললিত রোমান্টিক কন্ঠ পেল , যার নাম জগন্ময় মিত্র । তার গাওয়া ‘চিঠি’ গান টি তো হইচই ফেলে দিয়েছিল ।নিবিড় প্রেম সঙ্গীতের একটি নিজস্ব স্টাইলে হিন্দিতে জগমোহন এবং বাংলাতে জগন্ময় নামে তিনিও অনেক কাল আধিপত্য করেছেন ।
    শচীন দেব বর্মন কন্ঠে ছিল লোক গানের ভঙ্গির সঙ্গে এক নেশা ধরানো অননুকরণীয় স্টাইলেজেশনের মিশ্রন । ১৯৪৪ সে তিনি বোম্বাই পাড়ি দিলেন হিন্দি ফিল্মে সুরকার হওয়ার জন্য এবং সেখানে গিয়ে সাড়া ফেলে দিলেন । কিন্তু মাঝে মাঝেই পুজোর গান করে যাচ্ছেন কখনো হিমাংশু দত্তের সুরে কখনো নিজের সুরে | ১৯৩৬ সালের পূজোয় গাইলেন ‘মম মন্দিরে’ ১৯৩৮ সালে –তুমি যে গিয়াছ বকুল বিছানো পথে আর ১৯৫৬ সালে সেই চির নবীন গান – ‘মন দিলোনা বঁধু’ ইত্যাদি।

    চল্লিশের দশক ছাড়িয়ে পঞ্চাশের দশক পড়তেই একে একে পুজোর গান করতে আসতে লাগলেন একেক জন সব দিক পাল গায়ক গায়িকারা |
    ১৯৫৩ সালে পুজোয় প্রথম বাংলা আধুনিক বেসিক রেকর্ড করলেন মান্না দে | নিজের সুরে তিনি দুটি গান গাইলেন - হায় হায় গো আর কত দূরে আর ।বোম্বের বাসিন্দা হয়েও পরবর্তী কালে প্রধানত পুলক বন্দোপাধ্যায়ের কথায় কখনো নিজের সুরে কখনো নচিকেতা ঘোষের সুরে তিনিও পঞ্চাশ , ষাট ও সত্তরের দশকে গেয়ে গেছেন অসংখ্য পূজোর গান ।
    ১৯৫৩ তে গীতা দত্ত গাইলেন কানু ঘোষের সুরে – ওই সুর ভরা দূর নিলীমায় আয় আয় আয় রে ছুটে আয় । তিনিও বোম্বের সিনেমার জগত প্লাবিত করলেন তাঁর মায়াবী কন্ঠে কিন্তু পূজোয় বাংলা গান গাওয়া ছাড়েন নি ।

    ১৯৫২ সালের পুজোয় শ্যামল মিত্র সুধীর লাল চক্রবর্তীর সুরে গাইলেন – স্মৃতি তুমি বেদনা । বাংলা গানের চল্লিশ দশকের ন্যাজাল স্টাইলে পরিবেশনের তিনিই সম্ভবত শেষ প্রতিনিধি । আজীবন তিনি সেই স্টাইল টি বজায় রেখেছিলেন ।

    ১৯৫৩ তে পুজোয় পান্নালাল ভট্টাচার্য সেই বিখ্যাত শ্যামাসঙ্গীত বেরোলো যা নিতান্ত নাস্তিক প্রানেও ভক্তি রস সঞ্চার করতে পারে – মায়ের পায়ে জবা হয়ে ।
    ১৯৫০ সে পুজোতে সন্ধা মুখার্জী গাইলেন – ওগো মোর গীতিময় যা আজও আমাদের হৃদয় দ্রবিত করে । তিনি পরবর্তী কালে সিনেমায় সুচিত্রা সেনের লিপে তাঁর গান গুলি এক যুগ ধরে একচেটিয়া রাজত্ব করেছে । কিন্তু সেই সঙ্গে পূজোতে গেয়ে গেছেন এমন অনবদ্য সব গান যা শুধু তাঁর পক্ষেই গাওয়া সম্ভব ।
    ১৯৫৭ তে মানবেন্দ্র মুখার্জী গাইলেন সেই ভাসিয়ে দেওয়া অতীন্দ্রীয় রোমান্টিক গান –আমি এতো যে তোমায় ভালোবেসেছি । কন্ঠে ধ্রুপদী অলঙ্করণ নিয়েও তিনি গেয়েছেন অসাধারন রোমান্টিক সব গান ।
    ১৯৫৮ তে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় ভরাট গলায় গাইলেন - সাতনরী হার দেবো ফুলেরি বাহার দেবো । সত্যিকারের ব্যারিটোন কন্ঠে গাওয়া তাঁর গান গুলি কিছুটা রবীন্দ্রসঙ্গীতের আদল ছিল আবার কিছুটা আলাদা একটা ধরন ছিল ।
    ১৯৫২ তে সতিনাথ মুখোপাধ্যায় মরমীয়া কন্ঠে গাইলেন – পাষানের বুকে লিখো না আমার নাম । তাঁর গানে এক ধরনের বিষণ্ণতা থাকতো যা তাঁকে আলাদা করে রাখতো ।
    ১৯৫২ তে তালাত মামুদ এক অদ্ভুত ট্রিমেলো দেওয়া স্টাইলাইজড কন্ঠে গাইলেন –চাঁদের এতো আলো তবু সে আমায় ডাকে । তিনি অবাঙ্গালী এবং মুলত হিন্দি সিনেমার গানের শিল্পী হয়েও প্রায় প্রতি বছরে পূজোর গান গেয়ে গেছেন প্রতি বছর ।
    ১৯৫৮ তে প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় মধুক্ষরা কন্ঠে গাইলেন। – মেঘলা ভাঙ্গা রোদ উঠেছে ।
    টার পরে অজস্র হিট গান গেয়েছেন ।
    ১৯৫৩র পুজোয় উৎপলা সেন ঈষৎ হাস্কি গলায় গাইলেন সলিল চৌধুরির সুরে একটি অনবদ্য সলিল-ঘরানার গান- , মেঠো সুরের গান আমার ।
    ১৯৫৮ তে লতা মঙ্গেস্কর গাইলেন হেমন্তের সুরে একটি শান্ত ছায়াচ্ছন্ন গান - প্রেম একবারই এসেছিল জীবনে ।
    আশা ভোঁসলে ১৯৫৯ র পুজোয় রেকর্ড করলেন মান্না দের সুরে হৃদয়ে দোলা দিয়ে যাবার মতই গান - আমায় তুমি যে ভালো বেসেছো জীবনে যে তাই দোলা লাগলো ।

    এই দুই কিংবদন্তী বোন তার পর চার দশক ধরে আমাদের গানের ভান্ডার কে সম্বৃদ্ধ করেছেন তার বিবরন স এক আলাদা অধ্যায় দাবী করে ।

    ১৯৫৮ তে আলপনা বন্দোপাধ্যায় গাইলেন – ও আমার ছোট্টো পাখি চন্দনা , গায়ত্রী বসূ গাইলেন –আমার সন্ধাপ্রদীপ , ১৯৫৯ এ বম্বে থেকে মহঃ রফি সাহেব এসে গাইলেন – কথা ছিল দেখা হলে দু জনে ।

    ষাটের দশকেও পুজোতে এই সব গায় গায়িকারা তো মাতিয়ে রাখলেনই প্রত্যেক বছর পুজোর গানের সম্ভার । সেই সঙ্গে বাঙালি পেল আরো অসাধারন কিছু শিল্পীদের - ইলা বসু , মাধুরী চট্টোপাধ্যায় , আল্পনা বন্দোপাদ্ধায় , সবিতা চৌধুরি , গায়ত্রী বসু ,নির্মলা মিশ্র ,আরতি মুখোপাধ্য়ায় , সুবীর সেন , ভুপেন হাজারিকা , পিন্টু ভট্টাচার্য , নির্মলেন্দু চৌধুরি , দ্বিজেন মুখোপাধ্য়ায় ,অখিল বন্ধু ঘোষ , মৃনাল চক্রবর্তী এবং আরও অনেকে |
    (দ্বিতীয় পূর্ব)
  • PT | 213.110.246.23 | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৭:১৪651454
  • দুটো নাম পেলাম না - নাকি স্ক্রীনে পড়তে গিয়ে নিজেই ভুল করলাম!
    একজন গৌরীকেদার ভট্টাচার্যঃ
    From 1940 onwards, Gouri Kedar entered into a special contract to sing for version records of HMV.


    আর একজন সত্য চৌধুরী- ১৯৪৫-এ "পৃথিবী আমারে চায়"-এর গায়ক।


    এঁরা পূজোর গান করেননি?
  • Abhyu | 109.172.117.178 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৮:৪৮651455
  • পিটিদা দমুদি বলল এই গানটা হবে আপনার কাছে?

    কে দেখবি ছুটে আয়
    আজ গিরির ভবন আনন্দের তরঙ্গে ভেসে যায়
    ...
    কান্ত কয় ভাই নগরবাসী, তোদের সপ্তমীতে পূর্ণশশী
    দশমীতে অমাবস্যা তোদের পঞ্জিকায়।
  • Abhyu | 109.172.117.178 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৯:৫৮651456
  • সোমেন বাবু, খুব ভালো লাগল আপনার লেখা
  • PT | 213.110.246.25 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১১:০৪651457
  • নাঃ নেই। শুনিওনি কখনো।
  • Abhyu | 109.172.117.178 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১১:১২651458
  • আমি শুনেছিলাম আকাশবাণী কলকাতায়। সুর কিছুটা কেউ নয়ন মুদে দেখে আলো কেউ দেখে আঁধার-এর মতো।
  • Abhyu | 109.172.117.178 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১১:১৮651424
  • না সরি একই গান, ফেসবুকে পুরোটা ছিল না http://www.onushilon.org.bd/corpus/rks/rgs99.htm
  • Somen dey | 53.252.248.105 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৬:৩৭651425
  • শত বর্ষের আলোয় – পূজোর গান (শেষ পর্ব )
    **************************

    আর ষাটের দশক মেলডির যাদুতে মাতিয়ে দিলেন সুরকার সলিল চৌধুরি , নচিকেতা ঘোষ , সুধীন দাশগুপ্ত , রতু মুখোপাধ্যায় , অনল চট্টোপাধ্যায় , অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায়রা । এ সময়ে অসংখ্য সাড়া জাগানোর গান হয়েছে । হেমন্ত মুখপাধ্যায় , মান্না দে , লতা মঙ্গেশকর এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র , মানবেন্দ্র এঁরা তো এই সময়ে গেয়েছেন অবিস্মরণীয় সব গান । তার সব উল্লেখ করলে তালিকা অনেক দীর্ঘায়িত হয়ে যাবে ।বরং অন্য কিছু শিল্পীর কয়েকটি জনপ্রিয় গানের উল্লেখ করছি । অখিল বন্ধু ঘোষ -ও দয়াল বিচার কর ১৯৬২, মৃনাল বন্দ্যোপাধ্যায় – কেন জানিনা শুধুই তোমার কথা মনে পড়ে (১৯৬৫) , শৈলেন মুখোপাধায়ের – ঝর্ণা ঝর্ণা সুন্দরী ঝর্ণা (১৯৬৫) , ইলা বসু- শুধু একটি দিনের চেনা (১৯৬৫ ) পিন্টু ভট্টাচার্যের – চলো না দীঘার সৈকত ছেড়ে (১৯৬৮ ) , সুমন কল্যানপুরের – বাদলের মাদল বাজে (১৯৬৮ ) , মাধুরী চট্টোপাধ্যায়ের –ওই যে সবুজ বন বিথীকা , মুকেশের –মন মাতাল সাঁঝ সকাল কেন (১৯৬৮ ) , সুবীর সেনের –সারাদিন তোমায় ভেবে (১৯৬৭ ) , নির্মলা মিশ্রের কাগজের ফুল বলে (১৯৭৪ ) , অনুপ ঘোষালের – এমনি চিরদিন তো কারো যায় না ,বনশ্রী সেনগুপ্তের আজ বিকেলের ডাকে (১৯৭৩ ) ইত্যাদি ।

    ১৯৬৭ তে হৈচৈ মাতিয়ে পুজোর গানের জগতে প্রবেশ করলেন কুমার রাহুল দেব বর্মণ । কিশোরকুমার, যিনি এতকাল কোনো অজানা কারনে পুজোর গান গাওয়া থেকে বিরত ছিলেন , তাঁকে কে দিয়ে গাওয়ালেন – এক দিন পাখী উড়ে যাবে যে আকাশে । আর তিনি নিজেই গাইলেন পরের বছর ১৯৬৮ এ গাইলেন – মনে পড়ে রুবি রায় ।
    এই দুটি গান দিয়ে বাংলা গানে এক নতুন যুগের শুরু হল । বলা যেতে পারে বাংলা গান চিরাচরিত ধুতি সাড়ি ছেড়ে জীন্স পরা শুরু করলো এখান থেকেই।
    অরকেশট্রেশন , রিদম , শব্দ পরিক্ষেপন এ সব কিছুর মধ্যে একটা তাজা হাওয়া নিয়ে এলেন তিনি । এর পরে একের পর এক আশা ভোঁশলে কে দিয়ে গাওয়ালেন অনবদ্য সব গান । সেই আরডির বদলে দেওয়া স্টাইলের প্রভাব আজও চলছে ।
    ( চলবে )

    একশো বছরে বাঙালি সমাজ যেমন অনেক পাল্টেছে তেমনি বাংলা গানেরও স্বভাব চরিত্র অনেকটা পাল্টেছে । বিশ তিরিশ শতকের পুজোর বাংলা গান যে স্টাইলে গাওয়া হত তা শুনলে আজকের যুবক যুবতীদের হয়তো হাসি পাবে ।সে সময়ের পূজোর গানে রেকরডিং এর গুনমান তো দুর্বল ছিলই । সেই সঙ্গে উচ্চারনে কিছুটা কালোয়াতি ধরন , একটু বেশি রকমের গলার কাজ (গিটকিরি) দেখানোর প্রবনতা , একটু বেশি রকমের অনুনাসিকতা আর মন্দ্র সপ্তক এড়িয়ে তার সপ্তকে কণ্ঠ নিয়ে যাওয়ার প্রবনতা , এই সব মিলে সে সময়ের গান গুলিকে এই সময়ের গানকে থেকে আলাদা করে রেখেছে পরবর্তী সময়ের গান থেকে । এ ছাড়া গানে অরকেস্ট্রেশন করার নানারকম যান্ত্রিক অসুবিধা থাকার ফলে ইন্টালিউড প্রিলিউড বাজনা প্রায় থাকতোই না । সে সময়ের শিল্পীদের নানা আসরে খালি গলায় গান গাইতে হত বলে এঁরা সব সময়েই ফুল থ্রোট ভয়েসে গান গাইতেন । তাতে গানের বানীকে ব্যাক্ত করার জন্যে পেলবতা দরকার হত সেটা এই সব গানে পাওয়া যেতো না । আসলে গানের বানীকে ততটা পাত্তাই দেওয়া হোতো না । রবীন্দ্রনাথ খুব সচেতন ভাবে নিজের গান থেকে কালোয়াতি প্রবনতা কে দূরে রাখার চেষ্টা করে গেছেন । কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গান থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা সে সময়ের সঙ্গীতকারেরা নেন নি। সেটা আরম্ভ হয় চল্লিশের দশকে । তবু এই সময়ের গানগুলি আজও শুনতে ইচ্ছে করে গায়ক গায়িকাদের কণ্ঠসম্পদের জন্যে । দিলীপকুমার রায়ের ‘সমস্ত সুর হন্ত দন্ত ’ করা গান , কৃষ্ণ চন্দ্র দের কীর্তনাঙ্গের গানের আর্তির মধ্যেও ধ্রুপদ সঙ্গীতের অনায়াস নৈপুণ্য , যুথিকা রায়ের কন্ঠে জুঁই ফুলের সৌরভের সঙ্গে সুক্ষ অলঙ্করন , এ সবই আমাদের পরম ঐশ্বর্য হয়ে আছে এবং থাকবে ।
    চল্লিশের দশকে এমন সব সুরকারেরা এলেন যারা ধ্রুপদ এবং দেশজ গানের মধ্যে আবদ্ধ না থেকে পশ্চিমের জানলা খুলে দিলেন । এলো একটা বদলের হাওয়া ।বাংলা গান শুধু মাত্র রাগনির্ভর সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে থেকে অনেকটা মেলডি নির্ভর হয়ে উঠলো । গানের বানী কে যথেষ্ট মর্যাদা দেওয়া হল ।রেকর্ডিং ব্যাবস্থার উন্নতি হওয়ার ফলে একাধিক বাদ্যযন্ত্র গানের সঙ্গে বাজিয়ে রেকরড করার ব্যাবস্থা হল ।শুধুমাত্র এস্রাজ সারেঙ্গী বেহালা আড় বাঁশি এই অল্পসংখ্যক বাদ্য যন্ত্রের ব্যাবহারের মধ্যে আটকে না থেকে কিছু বিদেশী বাদ্যযন্ত্র যেমন পিয়ানো একোরডিয়ান , গীটার , অরগান , ম্যান্ডলিন এসবের ব্যাবহার প্রচলিত হল । সব মিলে পূজোর গানের একটা নতুন চেহারা দেখা গেল । রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুল ইসলাম এই দুই মহান সুরকারের প্রভাব পড়লো বাংলা আধুনিক গানে ।সেই সঙ্গে কিছু পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ও প্রভাব পড়ল। নুতন সুরের ডালি নিয়ে এলেন কমল দাশগুপ্ত , হিমাংশু দত্ত , সুবল দাশগুপ্ত , রবীন চট্টোপাধ্যায় , শৈলেশ দত্তগুপ্তরা ।

    পরে তাদের কাছ থেকে রিলে রেসের ব্যাটন নিয়ে শুরু করলেন রতু মুখোপাধ্যায় , সলিল চৌধুরি , নচিকেতা ঘোষ , সুধীন দাশগুপ্ত , অনল চট্টোপাধায় ,সুধীরলাল চক্রবর্তী , ভুপেন হাজারিকা, ,অভিজিৎ বন্দোপাধাইয়ের মত সুরকারেরা । এ ছাড়া একত্রে গায়ক-সুরকার হয়ে এলেন হেমন্ত মুখারজী , মান্না দে , সতিনাথ মুখোপাধায় , শ্যামল মিত্র , মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের, জটিলেনেশ্বর মুখোপাধায় মত শিল্পী রা ।
    আর গানের লিরিক্স এও ঘটলো অনেক পরিবর্তন । অজয় ভট্টাচারজ , প্রণব রায় , মোহিনী চৌধুরি , শ্যামল গুপ্ত ,প্রবীর রায় , গৌ্রীপ্রসন্ন মজুমদার , পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় , মুকুল দত্ত এঁরা বাংলা গানের লিরিক্স কে নতুন চেহারা দিলেন । এ ছাড়া সলিল চৌধুরি তো একাই একশ । তিনি গানের কথায় অনেকটা আধুনিকতা নিয়ে এলেন । বিশের দশক থেকে ষাটের দশক অবধি চলল পূজোর গানের ডিস্কের জয়যাত্রা । এই সময়ের ডিস্কে প্রকাশিত পূজোর গান নিয়ে একটি আলাদা করে ইতিহাস রচিত হলে সেই সব গুনী মানুষদের প্রতি কিছুটা সম্মান জানান হত । কিন্তু বাঙ্গালিরতো নিজেদের ইতিহাস রচনায় ভয়ানক অনীহা । হয়ত কোনো এক সাহেব এসে এই কাজটায় হাত দেবে কোনোদিন ।

    সত্তরের দশকে প্রযুক্তির কল্যানে এক ধাপ এগিয়ে গেল শব্দ রেকর্ডিয়ের জগত। স্টিরিও রেকরডিং এলো । তার কিছুদিন পরেই সেই গালার বড় বড় চাকতি কে সরিয়ে চলে এল অডিও ক্যাসেটের যুগ । গান রেকর্ডিং করা অনেক সহজ হয়ে গেল । আর একটি ক্যাসেট দশ থেকে বারোটি গান অনায়াসে ধরি্যে যাওয়ার ব্যাবস্থা হয়ে গেল ।
    আর ডিস্ক নয় এবার বেরোতে লাগলো এলবাম ।

    ভিনাইল রেকরডিং করা বেশ খরচা সাপেক্ষ ছিল বলে রেকর্ড কোম্পানি গুলি খুব সাবধানে পুজোর গান বাছাই করতেন । যার ফলে অনেক শিল্পী কে বহুদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে পুজোর গান পাবার জন্যে । মৃনাল চক্রবর্তী , আরতি মুখোপাধ্যায়ের মতন শিল্পীদের বিখ্যাত হয়ে যাবার পরেও পুজোর গান গাইবার সুযোগ পাওয়ার জন্যে অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে । এই রকম একটা নিয়ন্ত্রণ থাকার ফলে পূজোর গানের একটা মান বরাবরই বজায় ছিল । প্রত্যেক গায়ক গায়িকা সুরকার গীতিকাররা চেষ্টা করতেন পূজোর গানে তাদের সেরা কাজটি উপহার দেওয়ার । এই সুস্থ প্রতিযোগিতাই জন্ম দিয়েছে শত শত কালজয়ী গান।

    ক্যাসেট যুগ আসার পর সে সব নিয়ন্ত্রন একটু করে ঘুচে গেল । এ ছাড়া ডিজিটাল রেকর্ডিং , ট্র্যাক রেকরডিং এ খন্ড খন্ড করে একটি গান কে রেকর্ড করার ব্যাবস্থা , আরো বহু রকমের বৈত্যুতিন প্রযুক্তির ব্যবহার করার সুবিধা চলে এলো । সুসাধ্যতা যেমন জীবনযাত্রায় অনেক নতুন সুবিধা যেমন এনে দেয় তেমনি তা মানুষের সৃষ্টিশীলতার উপরও কিছুটা আক্রমন চালায় । ব্যাং এর ছাতার মতন ক্যাসেট কোম্পানি বাজারে চলে এল । তারা নানা শিল্পীদের খুঁজে এনে তাদের লঞ্চ করতে লাগালেন । প্রচার এবং প্যাকেজিং করে গান কে হিট করিয়ে দিতে পারলে তারা দু পয়সা কামাতে পারবেন । তাতে গান ভাল হল বা নাই হল কি আর আসে যায় ।

    এন্তার বেনোজল ঢুকে পড়লো গানের জগতে । সারা বছর ধরে অনেক এলবাম বেরোতে শুরু হল ।Quality আর Quantity র বিরোধ অন্য কোথাও থাক বা না থাক শিল্পের জগতে অবশ্যই আছে । তাই গানের মান ক্রমশ পড়তে লাগালো । তার মানে এই নয় যে বাংলা গানের জগতের সর্বনাশ হয়ে গেল । তার পরেও অনেক ভালো গান তৈরি হয়েছে , অনেক গুনী শিল্পীরা এসেছে । সুমন চট্টোপাধ্যায়ের মতন বাংলা গানের জগতের game changer দের আবির্ভাব তো এই ক্যাসেটে এলবাম বার করেই হয়েছে । নচিকেতা-অঞ্জনের মত নুতন ধারার শিল্পীরা ভুমি-চন্দ্রবিন্দুর মত গানের দলেরা তো এই ক্যাসেট-যুগেই এসেছেন এবং অনেক দিন ধরে ধরে রেখেছেন তাদের জনপ্রিয়তা ।

    তবে বাঙ্গালির সেই পুজোর গানের জন্যে সারা বছর অধীর অপেক্ষার দিন আর রইল না , তাদের পূজোর গান শোনার আবেগও ক্রমশ স্তিমিত হয়ে আসতে লাগল । আরো কিছুদিন পরে এলো কম্প্যাক্ট ডিস্ক , যা আর উন্নত প্রজুক্তি । এলো এম পি থ্রি । একটি ছোট্ট রুপালি চাকতিতে হেমন্ত মুখোপাধ্যা এর মত শিল্পীদের সারা জীবনের সাধনার ফসল কয়েক অনায়াসে ধরিয়ে দেওয়া যায় । এবং তা যখন তখন কপি করে বিশ পঁচিশ টাকায় বিক্রি করা যায় ।ভয় হয় এই কারিগরীর কেরামতি এক ধরনের ফ্র্যাঙ্কেন্সটাইনের ছদ্মবেশ নয় তো ? বাংলা বেসিক পুজোর গানের বকুল বিছানো পথের যাত্রা নেই নেই করে যে টুকু বাকি ছিল তাও হল শেষ হল ডিজিটাল রেকরডিং আসার পর ।

    আজও হয়তো পুজোর গান নাম দিয়ে কিছু এলবাম সি ডি আকারে বেরোয় | কিন্তু কেও ওগুলোর জন্যে হা পিত্যেস করে বসে থাকেনা। তেমন করে খবরও রাখে না । সারা বছর শয়ে শয়ে নুতন গান শ্রাবনের ধারার মত ঝরে পড়ে । বিক্রিও হয় , অতি আধুনিক হাই ফাই মিউজিক সিস্টেম কোথাও কোথাও বাজে কিছুদিন | ইউটিউবে আপলোড করা হয় । শ্রোতারা শুনে লাইক দেন । সেই লাইকের সংখ্যা দেখে গান কতটা হিট হল বোঝা যায় । তার পর স্মৃতি থেকে কোথায় যে তারা হারিয়ে যায় কে জানে ।

    অনুরোধের আসরের মৃত্যু ঘটেছে কবেই । পূজো প্যান্ডেলে পূজোর গান বাজানো এখন ধুসর স্মৃতি । যে নুতন প্রজন্ম হাজার খানেক গান আইপড-মোবাইলে ভরে কানে ইয়ারপ্লাগ গুঁজে পথ চলতে চলতে শোনে তাদের কাছে একটি ৭৮ আর পি এমের গালার চাকতি তে ধরা দুটি মাত্র গান যে কতখানি মুল্যবান হতে পারে তা বোঝানোর চেষ্টা করা বৃথা ।

    একশো বছর আগে শুরু হওয়া পূজোর গানের যুগটাকে ধাবমান কাল জড়িয়ে ধরে নিয়ে চলে গেছে অনেক দূরে ।আকাশ পারে ঈথার তরঙ্গে কিছু গান আজও ছড়িয়ে আছে হয়ত । কিছু গান পেয়েছে অমরত্বের শিরোপা , কিছু স্থান পেয়েছে কিছু মানুষের হৃদয়ের ভল্টে । আর কিছু গান হয়তো বা নীল কাগজে কাঁপা কাঁপা হাতে-লেখা প্রেম পত্রের মত , টেলিগ্রাফের তারে বসা লেজ-ঝোলা পাখির মত , সদ্য যুবতী নারীর ব্রীড়িত চোখের চাউনির মত হারিয়ে গেছে আধুনিক অতি-উজ্বলতার অন্ধকারে ।
  • Abhyu | 85.137.10.215 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৯:২০651426
  • কমলা ঝরিয়া

    দিলীপ কুমার রায়

    ধীরেন্দ্রনাথ দাস
  • Abhyu | 85.137.10.215 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৯:২৩651427
  • হেমন্ত

    <
  • Abhyu | 85.137.10.215 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৯:২৪651428
  • হেমন্ত

  • Abhyu | 85.137.10.215 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৯:২৬651429
  • শচীনদেব বর্মণ

  • Abhyu | 85.137.10.215 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৯:২৭651430
  • maannaa de

  • Abhyu | 85.137.10.215 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৯:২৯651431
  • গীতা দত্ত

  • Abhyu | 85.137.10.215 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৯:৩০651432
  • শ্যামল মিত্র
  • Abhyu | 85.137.10.215 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৯:৩৯651434
  • পান্নালাল

    সন্ধ্যা

    মানবেন্দ্র

    দ্বিজেন

    সতীনাথ

    তালাত মাহমুদ

    প্রতিমা

    উৎপলা সেন

    লতা

    আশা

    আলপনা

    গায়ত্রী বসু

    রফি সাহেব
  • Abhyu | 85.137.10.215 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৯:৪৯651435
  • সুমন কল্যাণপুর

    শৈলেন মুখোপাধ্যায়

    মাধুরী চট্টোপাধ্যায়

    অনুপ ঘোষাল
  • কল্লোল | 111.59.24.71 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৩:৪২651436
  • একজনের কথা না বললেই নয়। মলয় (সম্ভবতঃ) মুখার্জি। আমদের যাদের বাড়িতে গ্রামাফোন ছিলো না, তারা পূজর ছুটি পড়লেই সকাল থেকে ভিড় করতাম রাসবিহারী মোড়ের মেলোডির সামনে। তখন রেকর্ড বাজিয়ে শুনে কেনার রেওয়াজ ছিলো। উদ্দেশ্য রেকর্ড কাটা না হয়। আর হয়তো গান পছন্দ করে কেনা। অমরা মেলোডির বাইরে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে গান শুনতাম। অনেক উৎসাহী সেখানেই খাতা নিয়ে গানের কথা টুকতে শুরু করতেন।
    সেভাবেই শুনি মলয়ের প্রথম রেকর্ড করা গান - শ্রীমতি যে কাঁদে / কাঁদে তারই আশা / সে কি এসে ফিরে গেলো / কাঁদে ভালোবাসা
    উল্টো পিঠের গানটা মনে নেই।
    কেউ কি দেবে?
  • সে | 203.108.233.65 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৩:৪৬651437
  • কল্লোলদা, এইটে কি?

  • সে | 203.108.233.65 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৩:৪৮651438
  • কল্লোল | 125.240.12.93 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৫:৪৩651439
  • সে। হ্যাঁ ঠিক এই দুটোই।
    তোমায় যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো।
    ফিরে যাচ্ছি প্রথম কৈশোরে।
    তখন বলা হচ্ছিলো আরেক মান্না এসে গেলো। কিন্তু সে তো থাকলোই না।
    পরে আর একজনও খুব ভালো গাইতো স্বরাজ রায়। সেও হারিয়ে গেলো।
  • সে | 203.108.233.65 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৫:৪৮651440
  • কল্লোলদা,
    এদুটো ইউটিউবে মলয় মুখোপাধ্যায় সার্চ দিতেই বেরিয়ে এলো; ১৯৬৭র পুজোর গান মনে হয়। আমার কোনো ক্রেডিট নেই।
  • কল্লোল | 125.240.12.93 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৬:০৬651441
  • শৈলেন মুখোপধ্যায়ের সুর দুটো গানই, কথা কার আজ আর মনে নেই। এই রেকর্ড করার পরপরই পথ দুর্ঘটনায় মারা যান মলয়।
    ওঁর সম্পর্কে গল্প শুনেছি, সত্যি মিথ্যে জানি না।
    কোন এক অনুষ্ঠনে মলয় গেয়েছেন। তখন উনি মূলতঃ মান্না দের গানই গাইতেন। পরে মান্না দের গান গাওয়ার কথা। মান্না দে নাকি স্টেজে উঠেই বলেছিলেন যে মলয় ওনার গানগুলি ওনার চেয়েও ভালো গেয়েছেন, তাই উনি ঐ গানগুলি বাদ দিয়েই গাইবেন।
    এসব শুনতাম গান গাওয়া দাদাদের আড্ডায়। তাদের মধ্যে একজন ছিলো স্বরাজ রায়, যার কথা আগের পোস্টে লিখলাম। এরা ছিলো মানবেন্দ্রবাবুর কাকা সিদ্ধেশ্বর মুখপাধ্যায়ের ছাত্র। মলয়কে নিয়ে এদের একটা অন্যরকম আবেগ ছিলো। পরে মলয়ের ভাই কল্যান, মলয়ের গান গেয়ে কিছু নাম করেছিলো, তবে ওর মলয়ের মতো গলা ছিলো না।
    স্বরাজ ছিলো খুবই প্রতিভাশালী। একদম মান্না দে হুবহু নামাতো। খুব ভালো ইয়ুডলিং করতে পারতো। কিন্তু নাম করতে পারলো না।
  • সে | 203.108.233.65 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৬:০৯651442
  • তখন এইচেমভি পুজোর গানের/রেকর্ডের বই বের করত, তাতে অনেক গানের লিরিক পুরোটা লেখা থাকত। এইচেমভি ছাড়াও আরেকটা রেকর্ড কোম্পানীর রেকর্ডও আমাদের বাড়ীতে আসতে দেখেছি - নাম মনে পড়ছে না। ইয়েমাই কি? পুজোর গানগুলো পুজোর কিছু আগে বেরোতো। এগুলো কোনোটাই কিন্তু সিনেমার গান নয়। সেই টাইমটা মনে পড়ে যাচ্ছে। সেই গানগুলোও। ফিয়েস্তার সেই ছোট্টো রেকর্ড প্লেয়ার। সেই গাম্বাট বিরাট এভারেডির লাল ব্যাটারী।
    মনে পড়ছে "ললিতা গো ওকে আজ চলে যেতে বল না"। এটাও তো সেই পুজোর গান। কিংবা "মনে পড়ে রুবি রায়"। ছোটোবেলা পুরোনো এইচেমভির পুজোর রেকর্ডের সেই বইগুলোয় এই লিরিক দেখেছি। এই বইগুলো আবিষ্কার হতো পুরোনো পত্রিকার স্তুপের মধ্যে থকে। ধূলো মাখা। সেগুলো খুলে পড়তে থাকা। কেমন এক নিষিদ্ধ টাইপের রোমাঞ্চ আনন্দ হতো।
  • কল্লোল | 111.59.28.81 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৬:৪১651443
  • পূজোর গানের বই HMV থেকে বের হতো। রেকর্ড কিনলে তার সাথে পাওয়া যেতো না আলাদা কিনতে হতো মনে নেই। তাতে গানের লিরিক, সুরকার-গীতিকারের নাম, গায়কের ছবি আর রেকর্ডটির কিছু টেকনিকাল তথ্য থাকতো।
    সে সবও দেখতে পেতাম ঐ গানগাওয়া দাদাদের আড্ডায়। ওখানে মুন্নাদাও আসতো, মুন্নাদা তখন ট্রিংকাজ-এ রফির গান গায়। পরে বোম্বে গেছিলো, নামও করেছিলো - মহম্মদ আজিজ। আসতো কচিদা। ওর ভালো নাম ভুলে গেছি। মুকেশ আর শ্যামল মিত্রের গান গাইতো।
    আমাদের পাশের পাড়ায় থাকতো বুলাদি। আমাদের লতা-আশা।
    পূজোর ঠিক আগেই এদের সেবারের পূজোর গান তোলা শুরু হতো। আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনতাম সে সব গানের বিশ্লেষন। কোথায় কিনি কিভাবে মীড় টেনেছেন, মুড়কির কাজ দিয়েছেন বা কোথায়ই বা অক্টেভ বদলে যাচ্ছে প্রতি অন্তরায়। মজা হলো, কেউ শচীনকত্তার গান গাইতো না, কিন্তু শিখে নিতো। এরপরের কোন হিন্দি সিনেমার গান হিসাবে এসে যাবে সেটি কিশোর কি রফি কি মান্না কি মুকেশের গলায়। সেটা অবশ্য সলিল ও রাহুলের গানেও হতো। রাহুলের সুরে কিশোরের গাওয়া প্রথম র‌্যাপ - বম বম মাকু, বা প্রথম বাংলা গানে ইয়ুডলিং - একদিন পাখী উড়ে যাবে যে আকাশে...........।
    আজ পঞ্চমী। মন ভালো হয়ে গেলো।
  • Somen Dey | 53.252.249.37 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৭:৪৬651445
  • ABHYU ও সে কে অনেক ধন্যবাদ দুর্লভ গান গুলি এই পাতায় upload করার জন্য । স্মৃতির জাবর কেটে কাটানো যাবে পুজোর কদিন ।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন