এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অন্য মৌনতা

    kk
    অন্যান্য | ১৬ এপ্রিল ২০১৫ | ২৫৯৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • kk | 182.56.20.127 | ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ১৯:৪৬674207
  • গল্পটা দেবার আগে তিনটে ডিসক্লেমার দেবো।

    ১। এ গপের কোনো চরিত্রই কাল্পনিক নয়। দুটো কেন্দ্রীয় চরিত্রই আমার খুব কাছের,অত্যন্ত প্রিয়জন। গল্পটাও গল্প নয়,আদ্যন্ত সত্যি।

    ২।এ লেখার স্টাইল আমার একেবারে পছন্দ হয়নি। স্টাইলের গুষ্টির তুষ্টি ঘটেছে বললেই ঠিক হয়। তার জন্য সম্ভবত ঐ প্রথম ডিসক্লেমারটা দায়ী।খুব কাছের মানুষদের নিয়ে লিখতে গেলে বারবার ইমোশন টেক ওভার করে। স্টাইল ফাইল চুলোয় যায়। টা একটু ক্ষমাঘেন্না করে নেন যদি।

    ৩।গল্পটা এখনো পুরো লেখা হয়নি। যতটুকু হয়েছে দিলাম। আবার যেমন্যেমন হবে,দেবো।
  • kk | 182.56.20.127 | ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ১৯:৫০674218
  • ১।
    একটা রূপকথার গল্প বলি কেমন? একটু অন্যরকম রূপকথাই নয় হলো? যেমন যেমনটি আপনি এদ্দিন পড়েছেন সেরকম নয়। তাতে ক্ষতি কিবা?

    তো,এক রাজ্যে ছিলেন এক রাজপুত্র। রাজপুত্রের শাঁখের মতন সাদা বরণ, রোদ্দুরের মতন চুল, চোখ ঠিক সমুদ্দুরের মাঝখানটির মতন নীল। আলোর সঙ্গে সঙ্গে সে চোখের রং বদলায়। কখনো মনে হয় জলকন্যাদের রাজ্য, কখনো মনে হয় বৃষ্টির ঠিক আগেটির আকাশের মতন। অদ্ভুত না? ভারী অদ্ভুত।জাদু চোখ।

    আরেক রাজ্যে ছিলেন এক, না রাজকন্যা নয়, ধরে নিন কেন এক মন্ত্রীপুত্র। কিম্বা কোটাল বা সওদাগর হলেও হয়। কিবা যায় আসে? তাঁর গায়ের রং সোনার মতন, চুল,চোখ অন্ধকার বিদিশার নিশা। কোনোকালে তাঁর আদিপুরুষ এসেছিলেন সেই দূর জলপাইয়ের দেশ থেকে। মন্ত্রীপুত্রের সর্বাঙ্গে তার ছাপ আঁকা।

    দুই রাজ্য স্রোতা নদীটির দুই পাড়ে। রাজপুত্র,মন্ত্রীপুত্র কেউ কাউকে চেনেননা। দিন যায়। দুই দুই রাজ্যে বড় হয়ে উঠতে থাকেন রাজপুত্র,মন্ত্রীপুত্র। পড়েন,লেখেন,কেউ ছবি আঁকেন,কেউ বাঁশি বাজান।

    নদীর দখিনে মন্ত্রীপুত্রের রাজ্য। সেথায় মন্দিরের কড়া নিয়ম। জলপাইয়ের দেশের বংশ, ক্যাথোলিক বলে তাঁদের গর্বের শেষ নেই। মন্দির ঠিক করে দেয় তাঁরা কি করবেন, কি ভাববেন, কি বলবেন, কি শুনবেন। নদীর উত্তরে রজপুত্রের দেশ। মন্দির এখানে অতখানি বিশাল নয় হয়তো। তবু রাজা বড় ভক্ত মানুষ। পুরোহিত তাঁর দেবসমান।

    শিশুবেলা নানারকমে শেষ হয়ে আসে। যখন ঘাসে শীষ ধরে আসছে, ফুলের কুঁড়ির সবে গোলালো আকার নিতে শুরু করছে রাজপুত্র নিজেকে নিয়ে ধাঁধার জালে জড়িয়ে পড়েন। খেলার সময় বন্ধুদের হঠাৎ কোনো ছোঁয়া, জ্ঞাতিভাইয়ের অন্যরকম একটুখানি খেলা, রাজপুত্রের শরীরে নতুন একরকম অনুরনণ তোলে। তাঁর গোলাপফুল ঠোঁটে আরো গোলাপী রং ধরে, শাঁখের মত হাতেপায়ে একশো ফুল ফুটে ওঠে।

    আর মন্ত্রীপুত্রের কি হয়? সূর্য্যদেবের মত,অ্যাপোলোর মত চেহারা নিয়ে বেড়ে উঠতে উঠতে মন্ত্রীপুত্র বারদরজায় বসন্তের টোকা শুনতে গিয়ে হঠাৎ নিজেকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। অ্যাপোলোরই মতন তার ভালোলাগা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। এক ঝলক নারী তাঁর বুকে কাঁপন তোলে, এক দমক পুরুষ তাঁর রক্তে ফুলকি ধরায়। এদিক,না ওদিক? জেফার না ড্যাফনী? কার প্রতি তাঁর আকর্ষণ? দিনরাত প্রশ্নের তুফান ঝাপ্টার পর ঝাপ্টা মেরে যায়। কিন্তু কোথাও কোনো উত্তর নেই। কোথাওই কোনো দিশা মেলেনা।

    আর মন্দির? মন্দির সবসময় বলে রাখে "মনে রেখো ভাইসব, ভগবান নারীকে বানিয়েছেন পুরুষের জন্য, পুরুষকে নারীর। অন্যথা হলেই মহা সর্বনাশ! মহাপাপ। ছি ছি,মহা মহাপাপ!!" এ'কথার ওপর প্রশ্ন তোলো? তুমি নরকে যাবে। ভগবানের বিরুদ্ধে অপরাধ করছো? তুমি জ্বলেপুড়ে মরবে।

    ভক্ত রাজা, ভক্ত মন্ত্রী মন্দিরে জপ করেন। ভক্ত রাণী, মন্ত্রীপত্নী প্রাণ ঢেলে ভজন গান। যে গানে সব পাপশব্দ চাপা পড়ে যায়। যে জপের মন্ত্রে সদ্যজাগা প্রশ্ন, ধাঁধা, দিক হাতড়ে বেড়ানোর ভয়্পাওয়া কান্না সব সব সব ডুবে যায়।
  • kk | 182.56.20.127 | ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ১৯:৫৪674229
  • ২।
    আরো দিন যায়। মন্ত্রীমশাই একদিন স্ত্রী-পুত্র-পরিবার নিয়ে আনন্দোৎসবে যান। সেথা বিশাল বাড়ি, নানা হইচই, আত্মীয়স্বজনের শেষ নেই। মন্ত্রীপুত্র, দ্বিধাবিভক্ত কিশোর অ্যাপোলো নিজেকে সবার থেকে আড়াল করে লুকিয়ে থাকতে চান। কিন্তু চাইলেই কিছু সব পাওয়া যায়না। রূপক্থার গল্পেও না। মন্ত্রীমশাইয়ের জ্ঞাতিভাই, যাঁর চোখের রং ঈগলপাখির পালকের মত এসে চওড়া হাতখান রাখেন ঐ লুকোতে চাওয়া কাঁধে।

    "কি রে? এত লজ্জা কিসের তোর? এ তো তোর নিজেরই বাড়ি। আচ্ছা আয়, আমার সঙ্গে আয় এ মহলে.... ভারী সুন্দর বেড়ে উঠছিস তো রে তুই? দেখি? বাঃ, কী চমৎকার গড়ন! কী চমৎকার ..... আরে আমাকে লজ্জা কিসের? আমি তোকে কত ভালোবাসি বল তো?"

    মন্ত্রীপুত্রের বুকের ভেতর একশোখানা ঢাক বাজতে থাকে। ভয়? কৌতুহল? শিহরণ? তাহলে এই এইবারে সে প্রশ্নের উত্তর মিলবে? সত্যি মিলবে?

    ঈগলপাখির পালকের নীচে অনেককিছু চাপা পড়ে যায়, অনেক ভয়, অনেক কৌতুহল,অনেক শিহরণ।

    ঈগল পাখি আজ আসে। কাল আসে। পরশু আসে। "ভয় কিসের তোর? লজ্জা কিসের? আমি তোকে কত ভালোবাসি বলতো?"

    দিনেদিনে মন্ত্রীপুত্রের বুকে ভয়ের পাল্লা ভারী হয়ে ওঠে, ব্যথার পাল্লা, কষ্ট কষ্ট। কাউকে কিছু বলার হুকুম নেই। ভক্তিমান বাড়ি, মন্দির ঠিক করে দিয়েছে কী করতে হবে, কী বলতে হবে, কী ভাবতে হবে।

    একদিন ঈগল আসে। সঙ্গে তার শিকরে বাজ, আর চিল। মস্ত মস্ত ডানায় সব ঢেকে নিতে থাকে। বাঁকানো ঠোঁট লোভীর মত ছোঁ মারে,বারবার। মন্ত্রীপুত্র যন্ত্রনায় অন্ধ হয়ে ছুটে বেড়ান। মন্ত্রীমশাইয়ের দরজায় আছড়ে পড়েন। সেথায় বন্ধ দরজার ওপাশে কী হয় জানা যায়না। দিনের শেষে মন্ত্রীপুত্র শুধু এটুকুই বোঝেন যে সব দোষ তাঁর।
    "পাপী! লোভ দেখিয়ে ভালো মানুষের ভেতরে শয়তান জাগিয়ে তুলিস? শয়তান তোরই ভেতরে। মরে যা, মরে যা। পাপ বিদায় হোক!"
    মন্ত্রীপুত্র বন্ধ হয়ে যান,নিজের ভেতরে নিজে। একা একা। রক্তাক্ত, ব্যথার্ত, ছেঁড়াখোঁড়া।
  • kk | 182.56.20.127 | ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ১৯:৫৬674240
  • ৩।
    আর রাজপুত্র? রাজপুত্র যান গুরুর বাড়ি পড়তে লিখতে। নিষ্পাপ,কোমল, ফুলের মত মন, ফুলের মত শরীর। ঝোপের মধ্যে দস্যিছেলের দল, ভোমরা,ভিমরুলের দল রোজদিন তাঁর পাপড়িতে হুল ফোটায়। "কে মিশবে রে তোর সাথে তুলতুলে খোকা! তুই এমন কেন রে? সবার থেকে অন্যরকম? ছি ছি, অন্যরকম।" তারা শব্দ দিয়ে তৈরী পাথর ছোঁড়ে, শব্দ দিয়ে তৈরী আঁকশি দিয়ে নিত্যিদিন খোঁচা মারতে থাকে, যতক্ষণ না রক্তেরক্তে সব লাল হয়ে ওঠে।

    রাজপুত্র একলা ঘরে রাত্রে কাঁদেন। রক্তাক্ত,ব্যথার্ত ক্ষতবিক্ষত। দিনের বেলা বুকে সাহস এনে বলতে চেষ্টা করেন 'অন্যরকম হওয়া পাপ আমি জানি। আমি পাপ করবো কেন? আমি মন্দিরে যাই জানোনা? '
    রাজপুত্র মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করেন - "ঠাকুর, আমার রক্তে কাঁকড়ার বাসা বানিয়ে দাও। তাহলে হয়তো এরা আমায় অন্যভাবে দেখবে।"

    রাজার কানে খবর যায়। রাজা ছেলেকে তীক্ষ্ণ তিরষ্কার করেন। ' দোষ তোরই, আর কারু নয়। কেন তুই অন্যরকম?' তিরষ্কারে মন ওঠেনা। রাজা নৌবিহারের দাঁড় দিয়ে সাধ মিটিয়ে ছেলেকে পেটান। এত মারেও কী পাপীটার শরীর থেকে শয়তান বিদায় নেবেনা?
  • sosen | 212.142.121.82 | ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ২০:০৬674251
  • পড়ছি
  • kk | 182.56.20.127 | ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ২০:১৯674255
  • ৪।
    আরো দিন যায়। সময়ের সমুদ্দুরে অনেক ঢেউ ওঠে,পড়ে। অনেক দ্বিধা, অনেক না জানানো ব্যথা, অনেক চোখরাঙানি, ওঠে,পড়ে। মন্ত্রীপুত্র ভাবেন এর চেয়ে বরং নিজের মধ্যেকার অন্য নিজেটাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখাই বেশ। বংশমর্যাদা, গুরুজনের সন্মান এরই জন্য জীবন কাটালে ক্ষতি কি? তাতেই যদি আর সবাই খুশি হয়?
    মন্ত্রীপুত্র নিজের আরেক নিজেকে কড়া পাহারায় বন্দী করে রাখেন। জেফারের মুখের পানে চোখও তোলেননা। ড্যাফনীকে দু'হাত বাড়িয়ে কাছে ডেকে নিতে চান।

    ওদিকে, রাজপুত্র ভাবেন 'অনেক হয়েছে,আর নয়। যে যা ভাবে ভাবুক,যে যা বলে বলুক। মিথ্যে জীবন চাইনা।চাইনা চাইনা।' বাড়ি ছেড়ে, রাজ্য ছেড়ে,আপনজন ছেড়ে রাজপুত্র পাড়ি দেন অন্য নদীর পাড়ে। যেখানে তাঁর মত মানুষদের লোকে সহজ-আপন মনে করতে দ্বিধা করেনা। সেখানে বন্ধু পান, যারা তাঁকে 'অন্য রকম' মনে করেনা। সেখানে অনেক আরো 'অন্য রকম' প্রাণ একসাথে মিলেমিশে স্বাভাবিক দুনিয়া তৈরী করে।

    রাজপুত্রের মন থেকে এতদিনকার লালকালো রং মুছে যেতে থাকে। কাটাছেঁড়া মনের ভেতর পলির প্রলেপ পড়ে পড়ে আস্তে আস্তে স্বপ্নের কুঁড়ি ধরে। ধীর পায়ে, ফিসফিসিয়ে রাজপুত্রের জীবনে ভালোবাসা এসে ধরা দেয়। ভালোবাসা দুহাত দিয়ে তাঁকে নিজের দিকে টেনে নেয়। ভালোবাসার মার্বেল বুকে রাজপুত্র পরম নির্ভরতায় মাথা রাখ্নে। তাঁর জাদুচোখের ওপরে পাতারা নেমে আসে, নিশ্চিন্ততায়।

    আর দখিণ রাজ্যে? মন্ত্রীপুত্রের জীবনে? যৌবন বড় অমোঘ। কে আর এড়াতে পারে? মন্ত্রীপুত্র ইজেলে নতুন ক্যানভাস চাপান। যৌবনের চোখ দিয়ে নতুন করে জীবনকে দেখতে শুরু করেন। সেই ক্যানভাসে তুলির আঁচড়ে সোনালী-সবুজ-নীল-কমলা আঁকা হতে থাকে। একটা শিকারী পাখির পালকের সব রং রং ভুলে গিয়ে মন্ত্রীপুত্র মনের সবটুকু দিয়ে কাউকে ভালোবাসেন। না, জেফার নয়, হায়াসিন্থ নয়। শুধু ড্যাফনী। সুন্দরী,সুললিতা, সুস্মিতা ড্যাফনী। তার দুহাতের বেড়ের মধ্যে হারিয়ে যেতে যেতে মন্ত্রীপুত্রের মনে হয় এতদিন যা ঘটেছে সেসব হয়তো শুধু একটা খারাপ স্বপ্ন ছিলো। মন্ত্রীপুত্র শরীর, মন, আত্মা সবকিছু নিঃশর্তে ড্যাফনীর পায়ের কাছে নামিয়ে রাখেন।
  • kk | 182.56.20.127 | ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ২০:৩৫674256
  • ৫।

    তারপর,গেলো অনেকদিন,নাকি অল্পদিন? নাঃ,অনেকদিন আর কোথায়? অল্পদিনই। ভালোবাসা একদিন রাজপুত্রের দুকাঁধে হাত রেখে বললে "সোনা,সেনাপতির হুকুম এসেছে।দূরদেশে যুদ্ধ বেধেছে। কালই নোঙর তুলে ভেসে পড়তে হবে। আজকের রাতটা বিফলে যেতে দিসনা,দোহাই তোর।"

    -- "ভেসে পড়তে হবে? আমাকে কোনদিন বলোনি তো আগে? আজকের রাত?আমি তো জানতাম না। আমি তো তৈরী ছিলামনা। আমার কাছে তো রক্ষাকবচ নেই।"

    -- "রক্ষাকবচ? এমন সময়েও সেটাই বড় হলো তোর কাছে?তুই আমাকে বিশ্বাস করিসনা? এই আমাকে?"

    রাজপুত্র চোখ বন্ধ করেন। স্বপ্নরা বন্ধ চোখের পাতার তলায় ডানা ঝাপ্টাতে থাকে, কোনো কোনোটা গলে গিয়ে জলের ফোঁটা হয়ে নামে পাতার তলা দিয়ে,গাল বেয়ে।

    -- "হ্যাঁ বিশ্বাস করি। ভালোবাসা,তোমাকে আমার সবদিয়ে বিশ্বাস করি।"

    রাজপুত্র সব দ্বিধা বিশ্বাসের হাতের তুলে দেন।রাত্রি ঘন হয়ে আসে। আদিম রাত্রি। শরীরী, গরম, উন্মত্ত।

    ঠিক এইরকমই আরেক রাত্রি হয়তো অন্যদিকেও ছিলো।অসহ্য ভালোলাগা আর শীৎকারের রাত্রি। অ্যাপোলো আর ড্যাফনীর।
    উন্মত্ততা শেষ হলে নিজের নগ্ন বুকের ওপর অ্যাপোলোর মাথায় হাত রাখে ড্যাফনী।কালো আঙুরের মত চুল,থোলো থোলো। এক গোছা নিজের ফর্সা লীলায়িত আঙুলে জড়াতে জড়াতে বলে -- "সোনা, আমি চমৎকার এক কাজ পেয়েছি। মোনালিসার দেশে।পরশুদিনের দিন যাওয়া। কেমন?"

    বুকের মধ্যিখানে ছ্যাঁকা খাবার মত মন্ত্রীপুত্র উঠে বসেন --'মোনালিসার দেশে? এত দূরে? পরশু দিনের দিন? তুমি আমাকে কোনদিন বলোনি তো আগে! কবে ফিরবে ড্যাফনী?"

    -- "এই তো বললাম। আমার কতদিনের স্বপ্ন ছিলো! কিন্তু কী মিষ্টি বোকা তুমি। যাবার আগেই ফেরার কথা ভাবে কেউ? কত সুযোগ ওখানে! "

    -- "আর আমি? আমরা?"

    -- " ঐ 'আমরা' কথাটার কিন্তু সত্যিই কোনো মানে নেই সোনা। তুমি আমার থেকে পাঁচ বছরের ছোট, এখনও পড়াশোনা শেষ হয়নি। ফাঁকা সময়ে দোকানে কাজ করো। এমন মানুষের সাথে কতদিন থাকবো বলো? তাছাড়া ...."

    -- "তাছাড়া?"

    -- "তুমি তো ঠিক সুস্থ্য নও, সে তো তুমি নিজেই আমাকে বলেছো। তোমার সাথে স্থায়ী সম্পর্ক করা আমার পক্ষে এমনিতেই সম্ভব হতোনা। এইই তো বেশ।"

    মন্ত্রীপুত্র চোখের সামনে দেখতে পান তাঁর স্বর্গের বাগিচা প্যারাডাইস মাটির থেকেও অনেক নীচে হারিয়ে যাচ্ছে। 'তুমি তো ঠিক সুস্থ্য নও।' 'সব দোষ তোরই'। ' ভগবানের নিয়মের উল্টোদিকে যেতে চাও? তুমি নরকে যাবে'।

    নরক? অ্যাপোলো হাসতে শুরু করেন। না থামা হাসি। উঁচুতারের, পাগলাটে হাসি। নরক? শয়তান,কোথায় তুমি? আজ থেকে সব কিছু তোমার নামে। দিল-জান কবুল,দেখে নিও। আমার জন্য তোমার নরকের মধ্যিখানটায় একটুকু জায়গা রেখো। শয়তান।
  • san | 113.245.14.48 | ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ২০:৫৬674257
  • লেখো , পড়তে থাকি।
  • | ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ২২:৫১674258
  • আহ!
    পড়ছি ............
  • kk | 182.56.20.4 | ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ২৩:২৯674208
  • ৬।
    দিন কারুর জন্য বসে থাকেনা।আপনমনে এগিয়েই চলে,নিজের মত। তাড়াতাড়ি,কিম্বা ধীরে। কেউকেউ চলে যায়,একেবারেই। ভালোবাসার মত।

    রাজপুত্রের একাএকা দিন, সেও চলতেই থাকে। রাজপুত্র কাজের মধ্যে হারিয়ে যেতে চান। বসে থাকেনা,কিন্তু অন্যরকম হয়ে যেতে পারে ওরা। দিনেরা। একেবারেই অন্যরকম। আজকাল ওরা সবসময় ক্লান্ত হয়ে থাকে। ঘুম ভেঙে উঠে বসতে ওদের ইচ্ছে করেনা। আর কী ঠান্ডা, কী ঠান্ডা! মাঝগ্রীষ্মেও ঠান্ডা যেন আর মুছতে চায়না দিনগুলোর শরীর থেকে। ঠান্ডা সবসময় জড়িয়ে থাকে রাজপুত্রকে। ঠান্ডা ঝিল্লি থেকে গলায় নামে, তারপরে ফুসফুসে। সবকটা অ্যালভিওলার বেলুনে বাসা কায়েমী করে।ঠান্ডা। ক্লান্তি। বন্ধুরা ভয় পায়। এভাবে কী করে চলবে? কতদিন চলবে? বৈদ্য বলেন "রেখে যেতে হবে ওকে এখানে। অন্তত কয়েক সপ্তাহ। অনেক পরীক্ষা দরকার। অনেক চিকিৎসার দরকার।"

    অনেকবার ছুঁচ ঢোকে শাঁখের মত সাদা হাতে। নানান পরীক্ষা। নানান ওষুধ। দিনগুলো ঘোরের মধ্যে থাকে সবসময়। অদ্ভুত ছায়াছায়া সবকিছু। ভালো মত ঠাহর হয়না কী হচ্ছে, কী হয়নি, কে চলে গেছে, কে আসেনি।

    ঘোর ভালো জিনিষই,যদ্দিন না বাজ পড়ার প্রচন্ড আওয়াজে সব ধোঁয়ার মত উবে যায়। এইখানে আমার কলমটার একটু দিশেহারা লাগছে। বরং হুবহু উদ্ধৃতি তুলে দিই -- and I'll never forget the day when the doctor came and told me "Well,we have a news I can't say I'm happy about.You have HIV son.Yeah,the report says positive"!
  • kiki | 53.230.133.154 | ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ১৪:৫৪674209
  • ঃ(
  • kumu | 11.39.33.129 | ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ১৫:০৭674210
  • ঃ-(ঃ-(
  • Nina | 83.193.157.237 | ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ১৯:১৩674211
  • কি বলি ঃ-(
  • kk | 182.56.20.97 | ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ২১:০০674212
  • ৭।
    অনেক দূরের,অন্য রাজ্যে তখন আরেকজন মানুষ নরকের গভীরতম ঠিকানায় যাবার কসম খেয়েছেন।একটা একুশ বছরের শরীর, একটা হাজার টুকরো হওয়া হৃত্পিন্ড, একটা দ্বিবিভক্ত সত্বা, একটা দিক হারানো মন,এইসব নিয়ে মন্ত্রীপুত্র ধোঁয়াটে পাহাড়ের কিনারা থেকে ঝাঁপ দেন, অন্ধকারের রাজ্যে। অন্ধকারকে পান করেন আকন্ঠ, দিনরাতের বিভেদ ভুলে গিয়ে। অন্ধকারকে ছুঁচ দিয়ে ঢুকিয়ে দেন নিজের শিরা ধমনী ফুঁড়ে ফুঁড়ে।অন্ধকারকে সাদা গুঁড়ো বানিয়ে নাক দিয়ে টেনে বুকের ভেতরে ভরে নেন। অন্ধকারকে উন্মত্ত বিছানার মধ্যে নিজের শরীরে মিশিয়ে নিতে চান। জেফার না ড্যাফনী? আর পরোয়া করেন না তিনি। যে আসতে চাও এসো। অনেক জেফার,হায়াসিন্থ, হাইমেনিয়স, আরো অনেক্জন ড্যাফনী .... অ্যাপোলোর শরীর তোমাদের সব্বার জন্য, যে যখন চাও।

    অন্ধকার তাঁকে টেনে নিতে থাকে। পড়াশোনা? অর্ধেক দিন যাওয়া হয়না। মন্ত্রীপুত্র নেশায় আচ্ছন্ন থাকেন। ছবি আঁকা? যে হাতের আঙুলগুলো সবসময় থিরথিরিয়ে কাঁপে সেই হাতে কি ছবি নামে?তুলিগুলোতে ধুলো জমে, ক্যানভাসে মাকড়সা নিশ্চিন্তে বাসা বানায়। ভাইবোন? পরিবার? পরিবারের সব্বাইকে মন্ত্রীমশাই কড়া হুকুম দেন-- বংশের নামে কালি ঢালছে।কুলাঙ্গারটার সাথে কেউ কোনো সম্পর্ক রাখার কথাও যেন না ভাবে। মন্ত্রীমশাই বিতৃষ্ণার সবটুকু তেতোরস প্রতিটা শব্দে ঢেলে ছেলেকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন -- 'তোমাকে নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিতে আমার লজ্জা করে। আজ থেকে ভুলে যেও কোনোদিন আমরা এ ওকে চিনতাম।

    "চাইনা। তোমাদের কারুকে চাইনা। আমার সবকিছু শুধু শয়তানের জন্য।" মন্ত্রীপুত্র হাসতে শুরু করেন। না থামা হাসি।উঁচুতারের,পাগলাটে হাসি।

    শয়তান পরম যত্নে তাঁর অতল কালো চোখদুটোর নীচে কালি দিয়ে আঁচড় এঁকে দিতে থাকে।তাঁর সুন্দর ঠোঁটে আস্তেআস্তে গাঢ় রঙের ছোপ ধরায়। শয়তান তাঁর হাত ধরে একদিন বলে "আয়,আজ তোর ইচ্ছেপূরণের দিন।" নিজের লম্বা সরু রক্তহীণ আঙুল মন্ত্রীপুত্রের বুকে রেখে শয়তান বলে "যাঃ, আজ তোর ইচ্ছেপূরণেরই দিন।"

    আবার কলম কথা হারাচ্ছে। বরং আবার হুবহু উদ্ধৃতি তুলে দিই -- " One night I was too drunk and dazed and my guy friends took to me some place.Ah, I don't know quite what was happening.... they forced me into a gang bang....I was so tired and someone was hurting me....I tried to struggle out. And one guy,the sadist one, pulled out a dagger and stabbed me, I don't know how many times.The next thing I remember is waking up in the hospital with a lot of blood loss and excruciating pain.Still my family didn't come. I so wanted to die,everyday.But God didn't grant me death!Neither did Devil."
  • | ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ২১:০৭674213
  • Tim | 101.185.30.47 | ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ২১:২২674214
  • ঃ-(
  • kk | 182.56.20.93 | ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ২৩:৩৮674215
  • ৮।
    বলেছিলাম আগেই। দিন কারুর জন্য বসে থাকেনা। কেউ কষ্টের তলায় চাপা পড়ে যাক, কারুর চোখের জল সব শেষ হয়ে যাক, কেউ সব হারাতে হারাতে হারানোর বোধটুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলুক,দিন ঠিকই চলে যায়, নিজের মত, নিজের মনে।

    রাজপুত্র দিনের পর দিন বিছানায় বন্দী হয়ে থাকেন। ওজন কমতে কমতে বিপজ্জনক দাগে এসে দাঁড়ায়। ঠোঁট থেকে গোলাপী রং চলে গিয়ে নীলচে ফ্যাকাশে রংকে জায়গা ছেড়ে দেয়। নীল শিরাগুলোতে রক্তের থেকে ওষুধ বয় বেশি জোরে। তবু দিন চলে যায়, নিজের হিসেব মত।

    সব চলে যাওয়াই খারাপ বলতে পারিনা অবশ্য। চলে যাওয়া সময়ের ক্ষমতা কম নয়। অনেক দিন কেটে গেলে পরে ...দাঁড়ান, অনেক দিন নাকি অনেক মাস? নাকি বছর? কী জানি! হিসেব্নিকেশ ব্যাপারটাই খুব কঠিন। যাহোক, ঐ অনেক দিন বা মাস বা বছর কেটে গেলে পরে দেখা যায় সময় তার অনেক ক্ষমতার থেকে কয়েক আঁজলা ঢেলে দিয়ে গেছে, মমতা ভরে।

    একদিন আরো একখানা কাগজ হাতে নিয়ে বৈদ্যমশাই ঘরে ঢোকেন। রাজপুত্রের কপালে হাত রেখে বলেন -- 'আজকে আমার থেকে খুশি তুমি দুনিয়াতে কাউকে দেখতে পাবেনা। এইখানে দেখো কী লেখা আছে। আনডিটেক্টেব্‌ল্‌।'

    রাজপুত্রের জাদুচোখের রং বদলায়, গাঢ় ছাই, ধূসর ছাই, গাঢ় নীল, সমুদ্র নীল। আনডিটেক্টেব্‌ল্‌। তবু ভুলে যেওনা। ওরা কিন্তু আছে। থাকবে তোমার সাথে। সারা জীবন। ঘাপ্টি মেরে থাকলেও, ওরা আছে।
    অজ্ঞাতবাসে যাবার আগে এইচ আই ভি কিছু উল্কি এঁকে দিয়ে যায় তাঁর শরীরে। মনে। সময়ের তুমুল ক্ষমতাও সেই দাগ মেটাতে গিয়ে হার মেনে পিছু হঠে আসে। কিছু কিছু দাগ এমন থাকে, যা মেটানোর ক্ষমতা দুনিয়াতে কারুর নেই। হয়তো দুনিয়ার বাইরেও নয়।
  • Atoz | 161.141.84.175 | ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪৯674216
  • কেকে ওহ কেকে , পড়ছি, রুদ্ধশ্বাসে।
    মন্ত্রীপুত্রের কী হলো?
  • kk | 182.56.20.93 | ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১৪674217
  • ৯।
    বিছানায় বন্দী থাকার কথা হচ্ছিলো। মন্ত্রীপুত্রও বন্দি থাকেন বিছানায়।যেখানে ডানার কুঁড়ি থাকে,ঠিক সেইখানে মস্ত এক গভীর ক্ষত নিয়ে। অনেকগুলো সেলাই। বালিশে মুখ গুঁজে থাকেন মন্ত্রীপুত্র সবসময়। বালিশের ভেতরে ফিসফিস করে বলেন "শয়তান, ঠকালে আমাকে? তুমিও?"

    যেদিন বন্দিদশার শেষ হয় সেদিন তাঁর মনের সব ঝড় থেমে গেছে। সেখানে শুধু নিস্তরঙ্গ মৌনতা। তাঁর অতল কালো চোখে কোনো ঢেউ ওঠেনা। সবুজ শিরাগুলোতে রক্তের থেকে বিষ বয় বেশি।সাদা জোব্বা পরা মানুষটি সদয় কন্ঠে বলেন "এমন করে শেষের দিকে ছুটে চলছো কেন বাছা? অন্যদিকটাও তো আছে। যাবে? রিহ্যাবে?" মন্ত্রীপুত্র মাথা হেলান। যাবেন। যে যা করতে বলে তিনি তাই করবেন। নিজের ইচ্ছে বলে তাঁর আর কিছু বাকি নেই। সেখানে শুধু নিস্তরঙ্গ মৌনতা।

    আরেক জীবন শুরু হয় খুব ধীরপায়ে। রিহ্যাব জীবন। আস্তে আস্তে অন্ধকার কাটার জীবন। রক্ত থেকে বিষ ছেঁকে তোলার জীবন। মন্ত্রীপুত্র ধীরে ধীরে আরেক নেশায় তলিয়ে যেতে থাকেন। পড়ার নেশা। আরো বই দাও।আরো আরো। আর কিচ্ছু চাইনা আমার।কারুকে চাইনা। তাঁর জীবনে কোনো কথা নেই, শুধু অক্ষর। অক্ষর কাউকে ঠকায়না। অক্ষর আমাকে কোনোদিন ছেড়ে যাবেনা।

    সদয় কন্ঠ বলে "পড়াশোনা শেষ করবে? পড়তে এত ভালোবাসো।" মন্ত্রীপুত্র মাথা হেলান। সময় তার নৌকো বেয়ে চলে যাচ্ছিলো। নৌকোর পেছনে ঢেউয়ের মধ্যে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে, অনেক অক্ষর। চুপ হয়ে যাওয়া একটা মানুষের নতুন নেশা। নৌকো এগিয়ে চলে। মন্ত্রীপুত্রের তাকে ডিগ্রী জমা হয়। একটা, দুটো, তিনটে। অক্ষর কাউকে ঠকায়না।

    ঠকায়না। শয়তানও। শয়তান সব মনে রাখে। লম্বা সাদা রক্তহীণ আঙুলের কড় গুনে গুনে শয়তান আপনমনে সবকিছুর হিসেব করে।
  • Nina | 83.193.157.237 | ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৮674219
  • উফ স্তব্ধ আমি
  • Atoz | 161.141.84.175 | ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৮674220
  • ওহ, কেকে, মিনিট গুনে যাচ্ছি, কতক্ষণে পরেরটুকু আসবে।
    কখন দেখা হবে ওদের?
  • Atoz | 161.141.84.175 | ১৯ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৯674221
  • কেকে, আছো?
  • kk | 218.54.70.171 | ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৪২674222
  • ১০।
    আকাশের রং অনেকভাবে বদলায়।দিনের রং।গাছের রং।গাছ প্রথমে থাকে সাদা-গোলাপী।তারপরে সবুজ।তারপরে লাল-কমলা।তারওপরে গাছের রং থাকেনা কোনো।শুধু পাতাছুটি,সরুসরু আঁকিবুকি ডাল। বারবার। রাজপুত্র মনপ্রাণ দিয়ে তাঁর দিনের রং বদলাতে চান।হাসেন,কথা বলেন,কাজের মধ্যে,দিনের মধ্যে অনেক রং ভরে নিতে চান।ভুলে যেতে চান যে জীবনে শুধু সেই সেই জিনিষটাই আছে,যার কোনো রং হয়না কোনো।চোখের জল।তাঁকে দেখে সবাই ভাবে "বাঃ রে,ভারী হাসিখুশি মিষ্টি ছেলেটা তো"। রাজপুত্র ভালো থাকতে চান।বেশ কথা। কিন্তু মুশকিল হলো যে রাজপুত্র ভালোবাসতে চান।তাঁর বুকের ভেতরে একটা স্ফটিকের পাত্রে ভালোবাসা কানায়্কানায় ভরে থাকে,টলমল করে। অনেকে এগিয়ে আসে।তাঁর সৌন্দর্য্য, তাঁর স্বভাব অনেককে ডেকে আনে। কিন্তু রাজপুত্রের নীতি বড় পরিষ্কার। কারুর কাছে তিনি কোনদিন লুকোবেননা তাঁর রক্তের ভেতরে কারা চুপচাপ চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে রয়েছে।

    তাদের কথা শুনেই ওরা চোখ মিটমিট করে।যারা কাছে এসেছিলো। রোদ্দুর পড়া শিকারী বেড়ালের চোখের মণির মত। ওদের এগোনো নখগুলো থাবার মধ্যে ঢুকে যায়। ওরা বলে "এখনো ঠিক স্থায়ী সম্পর্কে যাবার জন্য আমি তৈরী নই। ব্নধুত্বও নয় রইলো শুধু। কেমন?" শুনে রাজপুত্র হাসেন। তিনি সবসময় শুধু হাসেন। হাসি তাঁর ঠোঁট থেকে মোছেনা। মনের মধ্যে নোনাজলে হাজার ঢেউ উঠলে পড়লেও না। ভীষণ একলা রাত্রে বুকের ভেতর ফোঁটাফোঁটা রক্তে ভিজে গেলেওনা। ওষুধের তালিকায় একে একে লেক্সাপ্রো,অ্যাডেরাল,ট্রাজোডোন যোগ হলেও না। তিনি শুধু হাসেন। বুকের ভেতরে একটা স্ফটিকের পাত্র নিয়ে।তাতে ভালোবাসা কানায়্কানায় ভরা।টলমল করে। একাএকা।

    আর মন্ত্রীপুত্র? মন্ত্রীপুত্র আমূল বদলে গেছেন।আগে যাঁরা তাঁকে দেখেছে তারা আর চিনতে পারেনা।শয়তান যত কালিকালো আঁকিবুকি উপহার দিয়েছিলো সেসব মুছে গেছে চোখের তলা থেকে,ঠোঁট থেকে। কালো আঙুরের থোকার মত চুল তিনি ছোট করে কেটে ফেলেছেন। লোকে কখনো কখনো ভাবে দেখে ভাবে সোনার রঙের এইই কি অ্যাপোলোর মানুষরূপ? কিন্তু বড় নীরব,বড় শান্ত। সারাদিনে হয়তো দুটো কথা বলেন তিনি। কি তিনটে। মন্ত্রীপুত্রের মনের চারপাশে নিশ্ছিদ্র একখানা দেওয়াল। তার ওপাশে কী আছে, হাসি না কান্না, ভালোথাকা না খারাপলাগা, ভালোবাসা না ঘৃনা,কেউ জানেনা। অনেকে কাছে আসতে চায়। প্রজাপতি, পশ্চিমদিকের হাওয়া,চেরীফুলের পাপড়ি।অনেকে তাঁর কাঁধে মাথা রাখতে চায়।বুকে। মন্ত্রীপুত্রের মনের চাবি খোলেনা। শরীর চাও? নিতে পারো। যদি খুশি হও নিষ্প্রাণ শরীর নিয়ে। তোমরা খুশি হও,খুশি থাকো। আমার কিছুই চাইনা।আমার কিচ্ছু নেবার নেই।দেবারও না।

    কিন্তু দেবার অন্য কারুর ছিলো। হয়তো নেবারও। সে শয়তান। বলেছিলাম না শয়তান কোনদিন হিসেবনিকেশে ভুল করেনা? শয়তান তার নীল ঠোঁটে,রূপোলী দাঁতে হেসে বলে 'কী হে? একদিন তো দিল-জান কবুল করেছিলে। এখন ভুলে গেলে চলবে?"
  • Atoz | 161.141.84.175 | ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৮674223
  • তারপর?
  • kk | 218.54.70.171 | ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৯674224
  • ১১।
    মন্ত্রীপুত্র মাঝেমাঝেই চোখে ঝাপসা দেখেন। মাঝেমাঝে হাতপা অবশ হয়ে আসে। মনে হয় সেই অন্ধকার দিনগুলোর মত চারদিক যেন ঘুরে উঠছে, দুলছে। কখনো কখনো শিউরে উঠে সব মুছে যায় সামনে থেকে। মন্ত্রীপুত্র কারুকে কিছু জানতে দেন না। ভাবেন হয়তো গতজন্মের অত্যাচারের ছাপ। কিম্বা হয়তো কিছুই ভাবেন না।তিনি যে আদৌ কোনকিছুই ভাবেন কিনা সে কেউ জানেনা।

    না জানাও সবসময় স্থায়ী হয়না এই দুনিয়াতে।অন্য সবকিছুরই মত। সে যে যতই চাক না কেন। কাজের সময়ে তুমি যদি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ো, কাকে গোপন করবে বলো? কী করে গোপন করবে? আর যদি একাধিকবার তা হয় তাহলে? মনের ভেতর দেওয়াল কেউ ভেদ করতে না পারুক, বন্ধ দরজার চাবি কেউ খুঁজে পাক বা না পাক। এ'রকম ঘটনার পরে অন্তত হাসপাতালের যন্ত্রগুলো চুপ করে বসে থাকেনা। ওরা অনেক কিছুর মধ্যে দিয়েই দেখতে পায়। তুমি চাও বা না চাও।

    সাদা পোশাক পরা মানুষ্টি নরম গলায় বলেন --' একটা দলা রয়েছে,তোমার মাথার ভেতরে। আরো কিছুদিন আগে জানতে পারলে ভালো হতো।"
  • Atoz | 161.141.84.175 | ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৮:০৬674225
  • কেকে, খুব উৎকন্ঠায় আছি। এরপরে কী ?
  • kk | 218.54.70.175 | ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ২০:২৬674226
  • ১২।
    --' একটা দলা রয়েছে,তোমার মাথার ভেতরে। আরো কিছুদিন আগে জানতে পারলে ভালো হতো।"

    -- "আর"?

    -- "দেখো।আমরা চেষ্টা করতে পারি ওটা বার করে দেবার।'চেষ্টা' করতে পারি"।

    -- "আর?"

    -- "সেই চেষ্টা সফল হবার সম্ভাবনা ধরো ৫০ শতাংশ। আচ্ছা চল্লিশই ধরো।"

    -- "আর?"

    -- "যদি তা না চাও,তাহলে কী কী হতে পারে তাও জেনে নেওয়াই ভালো। টেম্পোরারি অর পার্মানেন্ট ব্লাইন্ডনেস, প্যারালিসিস -পার্শিয়াল অর মোর ,ডিজওরিয়েন্টেশন,হিয়ারিং লস এবং শেষ অব্দি টার্মিনাল কোমা।"

    --" একটু সময় দেবেন আমাকে?শুধু একটুখানি?"

    -- "সময় যে কত বাকি আছে তা বলাই মুশকিল।দু তিনমাসের বেশি পাবে বলে মনে হয়না। যদি চেষ্টা করতেই হয়,দেরী করে লাভ কী?"

    দেরী করে কী লাভ তা মন্ত্রীপুত্র মুখে ফুটে বলতে পারেননা।পারেননি এতদিনে কারুর কাছে। পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো আত্মা জানতে পারেনি কখন সবার অলক্ষ্যে তাঁর বুকের ভেতরের নিশ্ছিদ্র দেওয়ালটা আস্তে আস্তে গলে যেতে শুরু করেছিলো।নিস্তরঙ্গ চুপকথার মধ্যিখানটায় ঠিক কবে থেকে একটা ছবি অতি যত্নে,অতি স্পষ্টতায় আঁকা হয়ে রয়ে গেছিলো। ছবিটা আজকাল তাঁর হৃৎপিন্ডের সঙ্গেসঙ্গে ওঠেপড়ে, প্রত্যেকটা ধমণীতে সারাক্ষণ বয়ে বেড়ায়। ছবির মানুষটা তাঁরদিকে দুটো হাত বাড়িয়ে সবসময় কাছে ডাকে। সেই হাতদুটো ঠিক শাঁখের মত সাদা।
  • | ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ২০:৫৫674227
  • পড়ছি ...............................
  • kk | 218.54.70.175 | ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ২১:৪৪674228
  • ১৩।
    কোথায়,কবে,ঠিক কোন তিথি নক্ষত্রে ওঁদের দেখা হয়েছিলো, আলাপ হয়েছিলো,বন্ধুত্ব হয়েছিলো তা বিশদে বলবোনা। ধরে নিন এই দুনিয়াতেই কোথায় কোনো একটা জাদুজগৎ আছে।সেইখানে। জাদু ছাড়া অন্য কোনোভাবেই এটা সম্ভব হতোনা। রাজপুত্র আস্তে আস্তে দুটো অতল কালো চোখের মধ্যে ডুবে যাচ্ছিলেন। তাঁর স্ফটিকপাত্রের সবটুকু উজাড় হয়ে যাচ্ছিলো।অনেক চেষ্টা,অনেক যত্ন সত্বেও। চুপচাপ মানুষটাকে স্পষ্ট করে বলে ওঠা খুব কঠিন লাগতো ওঁর কাছে। মনে হতো ওর সবকিছু ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু রাজপুত্র কিছুতেই না-দেখা করতে পারেননা যে ঐ গভীর চোখদুটো সময়ে অসময়ে ওঁর দিকে তাকিয়ে থাকে। একটা সোনালী চওড়া হাত মাঝেমাঝে ওঁর হাতের ওপরে অসাবধানে একটা আঙুল ছুঁইয়ে ফেলেই নিজেকে টেনে নেয়। ওঁর মনে হতো, স্তব্ধতা কিছু বলতে চায়। খুব নরম স্বরে,খুব ফিসফিসে কোনো কথা। অ্যাপোলো, কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছো আমাকে? নিজেকে?

    একেকটা রাত্রি এমনি থাকে যখন পৃথিবী হঠাৎ তার ঘুর্ণনপথ বদলে অন্য ছন্দে পা মেলায়। আগেও কখনো বলেছিলাম, সেইসব রাত্রে সায়ান রঙের একটা সুর অদ্ভুত কোনো তরঙ্গদৈর্ঘ্য নিয়ে বাজতে থাকে। সবাই শুনতে পায়না। যারা পায় তাদের মনের ভেতর হলদে পাখির পাখার ঝাপ্টা লেগে যায়। সেই হলদে পাখী,যার গলার স্বর নেই কোনো। সেইরকম রাত্রি পৃথিবীতে নামে,খুব চুপিচুপি পায়ে।সবার জন্য নয়। সেই রকম রাত্রিতে মন্ত্রীপুত্র হঠাৎ একসময় শুনতে পান কোথাও সবকিছু ঝনঝন করে ভেঙে পড়ছে।সব আগল,সব চুপথাকা,সব বাঁধ।

    --"তোকে আগে বলিনি। আমাকে যেতে হবে। এক জায়গায়। খুব শিগ্গিরই। সব দড়ি কাটতে হবে।"

    -- "আমি জানি। আমি বুঝতে পারি।"

    -- "বুঝতে পারিস?!!"

    --"হ্যাঁ। আমি নিজে ওর খুব কাছাকাছি গেছিলাম একবার। তোর চোখের মণির মধ্যে ঐ রেখাগুলো আমি চিনি।ওর একটাই মানে হয়। কত সময় দিয়্ছে ওরা? কতভাগ আশার কথা বলেছে? না,শোন,চুলোয় যাক সব। আমি পরোয়া করিনা। আমাকে তোর হাতটা ধরতে দে জোনাক।"

    --"তোকে ডুবতে দিতে পারিনা।আমি তোকে কিছুতেই ব্যথা পেতে দেবোনা মৌটুশ।"

    জোনাক? মৌটুশ? কেউ কোনদিন এইনামে ডাকেননি এ ওকে। কিন্তু একেকটা রাত্রি থাকে ঐরকম। যখন সবকিছু বদলে যায়। আমূল।
  • Atoz | 161.141.84.175 | ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ২১:৫১674230
  • ওহ্হ্হ। বিশুদ্ধ ম্যাজিক। একেবারে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে বসে আছি, একটুকু নিঃশ্বাসের কাঁপনে যদি যাদু ম্যাজিক ভেঙে যায়!
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন