এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বহু যুগের ওপার হতে…

    Subhasish Das লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২২ মে ২০১৫ | ২০০৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Subhasish Das | ২২ মে ২০১৫ ১২:৩৬675166
  • আবার সেই বিচ্ছিরি হাঁপলাগা ভাব। ধপাস করে একটা বেঞ্চে বসে পড়লেন সুখেন্দু শেখর। অবসর পরবর্তী বদ্ধ জীবনে এই মর্নিংওয়াকটুকুই একমাত্র ঘুলঘুলি। মাথার দু’পাশের রগের ভেতর প্রবল দাপটে হাতুড়ি পেটার মতো ঢিপ ঢিপ করে সে জানান দিচ্ছে, এখনও সে চলছে। থামতে কতক্ষণ! অনিল বাবুও চোখ বুজলেন গেল মাসের পঁচিশ।
    বেঞ্চের সামনে দিয়ে এক সদ্যযুবা ছুটে গেল, পাথর বসানো রাস্তায় ঝড় তুলে। কাল রাতেও বেশ ঝড়বৃষ্টি হয়েছিলো। শেষ রাতে শীত শীত করছিলো। বিছানায় পায়ের কাছে চাদরটা ভাঁজ করে রাখা ছিলো। এপাশ ওপাশ এলোপাথাড়ি পা চালিয়েও তার সন্ধান মেলেনি। লেকের জলটা বেজায় শান্ত, নিস্তরঙ্গ। ইতস্তত বিক্ষিপ্ত সাঁতারুদের আনাগোনা। তবু বড় শান্ত, একঘেঁয়ে। সুখেন্দু শেখরের একেকটা দিনের মতো। হৃদপিণ্ডের দাপাদাপি খানিকটা কমেছে। এবার উঠতে হবে, অনেক আরাম হলো। আজ সেলুন যাবার দিন। রোববার; বেলা বাড়লে, আবার মেলা ভিড় হয়ে যাবে। এখন যা অবস্থা, বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়াতেও সাহস সঞ্চয় করতে হবে। তারপর আবার খোকা’র সেলুন পর্যন্ত, অন্ততঃপক্ষে পৌনে এক কিলোমিটার তো হবেই। সুখেন্দু শেখর বিড়বিড়িয়ে উঠলেন, ‘ওঠো সুখেন্দু শেখর ওঠো, এ লড়াই বাঁচার লড়াই এ লড়াই লড়তে হবে।’
    পাথর আর ঘাসের পথ পেরিয়ে সবে মাত্র পিচের রাস্তায় পা পড়েছে; গায়ের কাছে ঘ্যাঁচ করে একটা স্কুটার এসে থামলো। সুখেন্দু শেখর ভাল করে তাকিয়ে দেখলেন, এটা স্কুটি; স্কুটারের স্ত্রীলিঙ্গ। চালিকার চেনা মুখ। মধ্যতিরিশের এই কন্যার সাথে প্রায় রোজই সাক্ষাৎ হয় লেকে। কথা বিনিময় খুব একটা হয়না, সৌজন্য হাসি চালাচালি হয়। তার মুখে আজ একগাল হাসি। নিস্তব্ধতার বাঁধ সেই ভাঙলো, ‘আসুন আপনাকে ছেড়ে দিই।’
    সুখেন্দু শেখর যথারীতি আপত্তি জানালেন, আপত্তি যথারীতি গ্রাহ্য হলনা।
    দ্বিচক্রযানের ব্যাকসীট। যুগ পাল্টাচ্ছে, ব্যাকসীটের সমীকরণও তালমিলিয়ে পাল্টাচ্ছে। বৃষ্টিভেজা শহরের যখন ঘুম ভাঙে, তার মধ্যে কেমন যেন একটা নরম আদুরে ভাব থাকে। সুখেন্দু শেখরের শহর আড়মোড়া ভেঙে চোখ মেলছে, এই সবে। সেই আদুরে খোকাখুকুদের মতো যেন মা’র গলা জড়িয়ে আরেকটু ঘুমোনোর আবদার। সুখেন্দু শেখরের ঘামে ভেজা টিশার্ট ছুঁয়ে যাচ্ছে বৃষ্টিভেজা স্যাঁতস্যাঁতে হাওয়া। চালিকার প্রশ্ন উড়ে এলো, ‘আপনি লেকভিউ-তে থাকেন তো?’
    -‘হ্যাঁ’
    -‘তাহলে আপনাকে তালপুকুর রোডের মুখে নামিয়ে দেবো?’
    -‘না না অদ্দূর যেতে হবেনা, তুমি আমাকে বরং নিউকাট সেলুনের সামনেটায় নামিয়ে দিও।’
    আবার মিনিটখানেকের কথা বিরতি। হাওয়ার দাপটে, সুখেন্দু শেখরের নাকেমুখে কুচোকুচো চুলের ঝাপটা লাগছে।
    -‘আচ্ছা, আপনাকে কী বলে ডাকা যায় বলুনতো?’
    কাকু, মেসোমশাই, আঙ্কল সুখেন্দু শেখর মনের মধ্যে হাতড়ে চলেন, জুতসই একটা ডাক কিছুতেই খুঁজে পাননা।
    -‘আপনার নামটা জানতে পারি?’
    -‘সুখেন্দু শেখর দত্ত।’
    -‘ওরেব্বাস! অতো বড় নাম চলবেনা। আমি বরং শেখর বলেই ডাকবো। ক্যামন?’
    আর ক্যামন, সুখেন্দুশেখরের হতভাগা হৃদপিণ্ড আবার জানান দিচ্ছে সে চলমান। ঢিপ ঢিপ থেকে প্রায় ধড়াস ধড়াস।
    নিউকাট সেলুনের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছলো স্কুটি। খোকার এখনও বউনি হয়নি। দোকানের সামনের বেঞ্চে একভাঁড় চা নিয়ে বসে। স্কুটি থেকে নামলেন সুখেন্দু শেখর। হাত নেড়ে চালিকাকে বিদায় জানাতে যাবেন। আচমকা সে প্রশ্ন ছুঁড়লো, ‘কাল আসবেন তো লেকে?’
    কিঞ্চিৎ বোকা বোকা ঢঙেই ঘাড় কাত করে সম্মতি জানালেন সুখেন্দু শেখর। দ্বিচক্রযান ধোঁয়া উড়িয়ে চোখের আড়াল হলো। সুখেন্দু শেখর সেলুনে ঢুকে চেয়ারে গা-টা এলিয়ে দিলেন। খোকা চায়ের ভাঁড়টা ফেলে দোকানের ফ্যানটা চালিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
    ‘খুচরো হবে তো কাকা?’
    সুখেন্দু শেখর আয়নায় এতোবছরের পুরোনো মুখখানা এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে দেখে বললেন,
    ‘চুলটা কলপ করে দিস তো খোকা..’
    খোকা ততক্ষণে এফ এম রেডিওর নব ঘুরিয়ে সুরেলা আওয়াজ বের করতে বদ্ধপরিকর। অভ্যাসবশে জিজ্ঞেস করলো,
    ‘গোদরেজ না গান্নিয়ার?’
    এফ এম রেডিওটার মধ্যে থেকে জর্জ বিশ্বাস, দৃঢ় বিশ্বাসে ঘোষণা করলেন,
    “বহু যুগের ওপার হতে আষাঢ় এল আমার মনে…”
  • kumu | 11.39.33.106 | ২২ মে ২০১৫ ১৫:১৪675167
  • তারপর?
  • শুভাশিস | 117.167.107.160 | ২২ মে ২০১৫ ১৫:৪৬675168
  • তার আর পর নেই..
  • শুভাশিস | 117.167.107.160 | ২২ মে ২০১৫ ১৫:৫৭675169
  • অবিশ্যি 'ব্রহ্মা জানেন' ও বলা যায়...;)
  • aranya | 154.160.226.93 | ২৩ মে ২০১৫ ০০:১৯675170
  • বেশ
  • Jayita Basu | ০৭ জুন ২০১৫ ১৭:৩০675171
  • সুন্দর
  • শঙ্খ | 213.132.214.155 | ০৮ জুন ২০১৫ ১৫:০১675172
  • মোক্ষম!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন