এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ফিফটিন সেন্টিমিটার

    T
    অন্যান্য | ১০ জুলাই ২০১৫ | ১২৬২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • T | 24.139.128.21 | ১০ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৮680773
  • ১. কত বাতাস

    প্রজেক্ট, প্রজেক্ট স্টাফ, প্রজেক্ট ইনভেস্টিগেটর বা পি আই দের নিয়ে কতই না গল্প ছড়িয়ে আছে। মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ, দুদিকের তরফেই। সামান্য, অতিসামান্য, কখনও অসামান্য সব ব্যাপার স্যাপার। সবাই জানে সেসব, কিন্তু দুহাজার বারো সালের মার্চ মাসের এক কাঠফাটা রোদ্দুরে, এয়ারফিল্ডে দাঁড়িয়ে আমি অন্য কিছু ভাবছিলাম।

    মাসের শুরুর দিকের ব্যাপারই হবে। ঠিক কোন দিন তা অত মনে নেই। থাকার কথাও নয়। কন্ডথ হরিকুমারেরও মনে নেই। হয়তো ও কোনো সাদা জামা পরে ছিল, অথবা লাল টি শার্ট। কী যায় আসে! আমরা দুজনে হাওয়ার গতিবেগ মাপছিলাম। হাতে ছোট্ট হ্যান্ড হেল্ড অ্যানিমোমিটার। তড়িঘড়ি বেরোনোর সময় চটজলদি ওটাই হাতের সামনে ছিল। এদিকে ভুলভাল সমস্ত রিডীং। কখনো পাঁচ, কখনো দুই, কখনো ফোর পয়েন্ট সিক্স। কমছে বাড়ছে, ক্রমাগত।

    মিটার পার সেকেন্ড। কিন্তু ওটা ফুট পার সেকেন্ডও হতে পারে। সস্তা চাইনিজ জিনিসের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। কোনো মার্কিং নেই। শুধু কিছু নাম্বার ফুটে উঠছে, আনসার্টেনটির একশেষ। আমরা হাসাহাসি করছিলাম বোধহয়। অর্থহীন এক্সপেরিমেন্ট। এইখানে হাওয়ার ভেলসিটি মেপে কি হবে! দশমিটার উঁচুতে কত ভেলসিটি কি করে জানব? কুড়ি মিটার উঁচুতে? তিরিশ, চল্লিশ কি ষাট? অনর্থক। কে জানে। রোড্ডাম নরসিমার একটা পেপার আছে অবশ্য। উনিশশো চুরাশির কাজ। টাইপরাইটারে টাইপ করা। ইকোয়েশনগুলো হাতে লেখা মতন। ঐ পেপারটাই তো।

    হাওয়ার গতিবেগ মাপা দিয়ে শুরু করে তিনবছর ধরে যত ব্যাপার স্যাপার ঘটে গ্যাছে এ লেখা তার একটা বিবরণ হতে পারে। নিধিরাম সর্দারের গল্পও হতে পারে। অ্যামন বিবরণ বা গল্প পৃথিবীর অন্যত্রও পাওয়া যায়, নতুন কিছু না। ইহা মহৎ সাহিত্যকীর্তি ফীর্তি এইসমস্ত কিস্যু নয়, মহাকালের চ্যালেঞ্জ উতরে যাবার ইচ্ছে নিয়েও ইহা লিখিত হইতেছে না, বস্তুতঃ সে গুড়ে স্যান্ড। এটা আসলে আর কিছু নয়, ঐ যে আছে না, দুটো লোক জানল, চারটে লোক জানল, ছটা লোক জানল, দশটা কি কুড়িটা লোক জানল, মন একটুস হালকা হ’ল। এবং তারপর ‘দোষ কারো নয় গো মা’ থিয়োরী একটু গ্রহণযোগ্যতা পেল। কিছু সহানুভুতি। ওতে মনে কিছু শান্তিপ্রাপ্তিও ঘটল, কিছু বাংলা লেখাও প্র্যাকটিসও হ’ল। এইসব ভেবেই লিপিবদ্ধ করণ। তবে কারণটা সোজা কথায় খামোখা হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।

    -- আরে ঐ যে পাটিল, সেই যে পুণের মেয়েটা। এই অশ্বিনটা অ্যাত শয়তান! অ্যামন বেদোমি করল যে আমাকে ফেসবুকে ব্লক করে দিল।

    হরিকুমার কিঞ্চিত দুঃখিত। একটি পোটেনশিয়াল প্রেম হাতছাড়া হয়েছে। সে অ্যানিমোমিটারটা ধরে আছে। মাথার উপরে সূর্য। সামান্য তোতলা। আগে টিসিএসে চাকরী করত। চাকরী ছেড়ে পিএইচডি স্টুডেন্ট। খুব সরল সাদাসিধে, উজ্জ্বল। সূর্য নয়, কন্ডথ হরিকুমারের কথা বলছি। আমার মতই, প্রফেসরের আরেক সন্তান। বিগ্‌ল বয়েজের অন্যতম মেম্বার।

    এই জাগতিক এক্সপেরিমেন্ট, মানে এই হাওয়ার খামখেয়ালীপনা মাপার পিছনে গূঢ় উদ্দেশ্যটা পরে জানা যাবে, যেমন এও পরে জানা যাবে যে, তিরিশ, চল্লিশ কি ষাট মিটার উঁচুর ব্যাপার স্যাপার নিয়ে আমরা চিন্তিত ছিলাম কেন। যেমন এও প্রকাশ পাবে যে, গতিবেগ ছাড়াও ডিরেকশন মাপাটা আমাদের কাছে জরুরী ছিল। এবং সেইসময় এয়ারফিল্ডে দাঁড়ানো, হাস্যকর সমস্ত আলোচনা রত এই দুই ছোকরা ক্যানো এই ডিরেকশন মাপার ব্যাপারটা মাথায় রাখে নি। এই রুকি মিস্টেক নিয়েও পরে বিস্তারিত হবে। আপাতত ঐ মার্চ মাসের সূর্যের উপর কিছুটা দায়ভার চাপানো যাক, কারণ আমাদের কাছে ছাতা ছিল না।

    কিন্তু আমি সেইসময় কন্ডথ হরিকুমারের প্রেম নিয়ে চিন্তিত ছিলাম না। আমি খাতায় রিডিং নোট করছিলাম, নির্দিষ্ট সময় অন্তর। মাঝখানের সময়টুকুতে টুকটাক প্রত্যুত্তর দিতে হচ্ছিল। এছাড়া আমি ভাবছিলাম গোপালদার কথা। ও পরে মধ্যপ্রদেশে কাজ পেয়ে চলে যায়। কাঠমিস্ত্রী ছিল। খুব দক্ষ হাত। ক্লাস সিক্সের গরমের ছুটির অনন্ত দুপুরগুলো জুড়ে আমি ওর পাশে বসে র্যাঁ দা চালানো শিখতাম। টি জয়েন্ট। তুরপুন। সেসময় গোপালদা আমাদের নতুন হব হব বাড়ির দরজা জানলাগুলো বানাচ্ছিল। সেগুন কাঠের উপর নিঁখুত দক্ষতায় করাত চালাতো। নিঁখুত ভাবে চিজেল দিয়ে কাঠের পিন বানাত, তারপর সেগুলো হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে ঠুকে আরো নিঁখুত ভাবে গুঁজে দিত গর্তে। নিঁখুত মাপের প্যানেল, তাতে মসৃণ পেলব জয়েন্ট, ফেভিকল মেশানো কাঠগুঁড়োর গন্ধ, গোপালদার কানে গোঁজা পেনসিল, প্রতিটি খাপে খাপ সিচ্যুয়েশন একেবারে সেই আরেইচেস ইজ ইকোয়াল টু এলেইচেসের মতো মিলে যাচ্ছে, স্কোয়ার রুট টু র মতো ইরাশন্যাল একটি সংখ্যাকে স্রেফ ফেভিকল ও কাঠগুঁড়োর লেই দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া যাচ্ছে, এসব দেখে আমি উত্তেজিত হয়ে পড়তাম। গোপালদাও একজন নির্ভরযোগ্য শিক্ষানবিশ পেয়ে খুব দরদ দিয়ে আমাকে জানলার ফ্রেম বানাতে শেখাত। গোপালদাই ছিল আমার যাকে বলে রামকিঙ্কর বেজ।

    হঠাত করে কেন আমি গোপালদার কথা ভাবছিলাম সেসবের অবশ্য কারণ আছে, সেও প্রকাশ হবে ক্রমশঃ। আপাতত হাতেখড়ি চলছে। হরিকুমার বকর বকর করে চলেছে। বলেছি কি যে সে সামান্য তোতলা? ফলে কথাগুলো চট করে বুঝতে অসুবিধে হয়। তাতে কোনো সমস্যা নেই। ঠিক সময় মতন হাসলেই হ’লো।

    যদ্দুর মনে পড়ছে সেসময় এয়ারফিল্ডের রানওয়ের স্ট্রিপের পাশে ছিল অগোছালো গাছ গাছড়ার জঙ্গল। আমি ওসব দেখে ওবেলিক্সের মতই বিরক্ত হতাম। কোনো সিস্টেম নেই। যেখানে সেখানে গাছ লাগিয়েছে। কিন্তু এই জঙ্গলের রেফারেন্সটা এখানে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কারণ, মাক্কালী বলছি, এই গাছগুলো আমাকে প্রচুরবার বাঁচিয়ে দিয়েছে। সেকথাও ক্রমশঃ হবে। আপাতত ফিরে যাওয়া যাক সেই দুই ছোকরার কাছে, যারা ঘন্টাখানেক ধরে উইন্ড ভেলসিটির রিডীং নিয়ে গ্রাফ টাফ প্লট করে তাদের প্রফেসরের ঘরের বন্ধ দরজার কাছে অপেক্ষা করছিল। এই বন্ধ দরজার কথাটাও আলাদাভাবে উল্লেখ করা দরকার কারণ এই বন্ধ দরজাটা আমাদের প্রায়শই মুক্তির বাতাস এনে দিত। মেলোড্রামাটিক শুনতে লাগলেও ব্যাপারটা শ্রমিকপক্ষের লোকজনের মনে ধরতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। দরজাটাকে বন্ধ ও তালা ঝোলানো অবস্থায় দেখতে আমাদের ভালৈ লাগত, এবং যদ্দুর মনে পড়ছে আমরা এ ব্যাপারে একটা ছবিও তুলেছিলাম।

    হরিকুমারের হাতে ধরা খাতার ভিতর চাট্টি কাগজ। ভেলসিটি রিডিং এর গ্রাফ ইত্যাদি। এ ছবি যিনি দেখবেন তাঁর জুতোর মচর মচর আমরা খুব ভালো করেই চিনি। অভ্যাসমাফিক যিনি দরজার তালা খুলে আমাদের বসতে বলবেন। তারপর ফ্যান চলতে শুরু করবে। কম্পিউটারে আলো জ্বলবে। আমরা চুপচাপ টেবিলে রাখা ছড়ানো ছিটোনো কাগজ পত্র দেখব। উনি রুমাল দিয়ে চোখে মুখের ঘাম মুছবেন। তারপর জলের বোতল থেকে একটু জল খাবেন। একটু হাঁচবেন। পেপারওয়েটটা সরাবেন। মাউসে ক্লিক করে পাসওয়ার্ড টাইপ করবেন। ক্যাস্পারস্কি ওয়ার্নিংটা ইগনোর করবেন। ঘড়িতে সময় দেখবেন। বুকপকেট থেকে লাল, সবুজ ও নীল এই তিনরকম জেল পেন বার করে টেবিলে রাখবেন। তারপর ডানহাতে সামান্য ঘুরে টেলিফোনে টুকটুক নাম্বার ডায়াল হবে। পেয়ারের দোস্তকে টেলিফোন। হ্যাঁ, পাঁচটার সময় হাঁটতে বেরোবো। আমাকে ঘর থেকে ডেকে নিস। তারপর আমাদের দিকে ঘুরে বলবেন হ্যাঁ, এবার বলো। কই কি রিডীং নিয়েছ দেকি।

    -- এই যে স্যার, ভেলসিটির রিডিং, প্রতি পাঁচ মিনিটে। টোটাল একঘন্টা ধরে।

    চশমা চোখো গম্ভীর মুখ এরপরে গ্রাফ দেখতে শুরু করবে। ছেলে দুটো বসে থাকবে কিছুক্ষণ। থাকুক। ইত্যবসরে আমরা গল্পের আদিঅন্ত কী বৃত্তান্ত সেসব ব্যাপার দেখে আসতেই পারি।

    কিন্তু এটা স্রেফ ভেলসিটির রিডিং এর গল্প নয়। গল্পের শেষ এখানে নয়। শুরুও এখানে নয়। ইন ফ্যাক্ট কোথায় যে শুরু সে রহস্য পর্দা ভেদ করা অত সহজ নয়, তবে খেই হিসেবে স্রেফ বলা যেতে পারে ইন্দো টিবেটান বর্ডারের কথা। নভেম্বরের শেষাশেষি যেখানে ভারতীয় সৈনিকরা বেশ কিছু সন্দেহজনক বস্তুকে উড়ে বেড়াতে দেখেছিল। রেডারের পর্দায় তারা ধরা পড়েনি। ইউএফো নয়, কারণ এগুলো কাউকে খায় নি। স্রেফ উড়ে বেরিয়েছে। দৌড়োদৌড়ি করেছে। ল্যান্সনায়েক, সুবেদার, হাবিলদার, মেজর, জেনারেল ইত্যকার যাবতীয় অবলুপ্ত অথবা আসল পদের মালিকরা সেসব কিছুই বুঝতে পারে নি। খবর ছুটেছে দিল্লীতে। সরকারের তরফ থেকে দুঁদে লোকজনকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েও এ গল্পের শুরু হওয়া আটকানো যায় নি। ভবিতব্যে তখনই ঢেঁড়া পড়ে গেছিল।
  • ফরিদা | 11.39.33.225 | ১০ জুলাই ২০১৫ ০৬:৫২680784
  • তারপর?
  • sinfaut | 11.39.62.228 | ১০ জুলাই ২০১৫ ০৯:২৮680795
  • জ্জিও। পড়ছি। আর যে গল্পগুলো পরে হবে বলে আশা দেওয়া হয়েছে সেগুলো সবই যেন হয়।
  • | ১০ জুলাই ২০১৫ ১০:১৯680801
  • আহ একেবারে তৈরী হাত।
    বেশী দেরী হয় না যেন।
  • | ১০ জুলাই ২০১৫ ১০:১৯680800
  • আহ একেবারে তৈরী হাত।
    বেশী দেরী হয় না যেন।
  • Ekak | 113.6.157.185 | ১০ জুলাই ২০১৫ ১১:৪৭680802
  • "হরিকুমারের হাতে ধরা খাতার ভিতর চাট্টি কাগজ। ভেলসিটি রিডিং এর গ্রাফ ইত্যাদি। এ ছবি যিনি দেখবেন তাঁর জুতোর মচর মচর আমরা খুব ভালো করেই চিনি। অভ্যাসমাফিক যিনি দরজার তালা খুলে আমাদের বসতে বলবেন। তারপর ফ্যান চলতে শুরু করবে। কম্পিউটারে আলো জ্বলবে। আমরা চুপচাপ টেবিলে রাখা ছড়ানো ছিটোনো কাগজ পত্র দেখব। উনি রুমাল দিয়ে চোখে মুখের ঘাম মুছবেন। তারপর জলের বোতল থেকে একটু জল খাবেন। একটু হাঁচবেন। পেপারওয়েটটা সরাবেন। মাউসে ক্লিক করে পাসওয়ার্ড টাইপ করবেন। ক্যাস্পারস্কি ওয়ার্নিংটা ইগনোর করবেন। ঘড়িতে সময় দেখবেন। বুকপকেট থেকে লাল, সবুজ ও নীল এই তিনরকম জেল পেন বার করে টেবিলে রাখবেন। তারপর ডানহাতে সামান্য ঘুরে টেলিফোনে টুকটুক নাম্বার ডায়াল হবে। পেয়ারের দোস্তকে টেলিফোন। হ্যাঁ, পাঁচটার সময় হাঁটতে বেরোবো। আমাকে ঘর থেকে ডেকে নিস। তারপর আমাদের দিকে ঘুরে বলবেন হ্যাঁ, এবার বলো। কই কি রিডীং নিয়েছ দেকি।"

    টি যেমন লেখো , খুবই চিত্রনাট্যসুলভ বন্ননা ভালই লাগছে পড়তে :)

    একটা হালকা খটকা । এই উইন্ড ভেলসিটির রীডিং নেওয়া -গ্রাফ এসব ম্যানুয়ালি করতে হয় কেন ? অলরেডি বাজারে একাধিক এপস আছে , এপল স্টোর এও আছে । উড়ুক্কু দ্রোন এর সাহায্যে ঘিপ্ঘাপ রীডিং নিয়ে যতরকম চাইবে উইন্ড ভেলোসিটি গ্রাফ দেখাবে । বিপুল ডেটা ওয়েব সার্ভারে সেভ করে রাখতে পারবে । তাহলে হাতে করে রিডিং টোকা , আবার গ্রাফ আঁকা , হাতে কাগজ নিয়ে দাঁড়ানো ...........সব কিছু কেমন পুরনো সিনেমার প্লট এর মত লাগছে :( এনিওয়ে , ইভেন ইন দ্যাট সিচুএশন খাসা বন্ননা !
  • T | 24.139.128.21 | ১০ জুলাই ২০১৫ ২২:৩২680803
  • একক, ড্রোন ছিল না যে! কেনবার অনুমতিও ছিল না। কেন, সে সব ক্রমশঃ প্রকাশ্য।
  • T | 24.139.128.21 | ১০ জুলাই ২০১৫ ২২:৩৮680804
  • ২. কত ছোট

    মেজর জেনারেল সুন্দরম বেঁটেখাটো চেহারার মানুষ। গড়পড়তা আর্মি জেনারেলদের চেহারা সম্পর্কে যেমতি ধারণা মার্কেটে প্রচলিত, ঠিক তার উলটোটাই। উৎসাহ উত্তেজনায় ভরপুর একজন মানুষ। সর্বক্ষণ ছুটে বেড়াচ্ছেন। ওঁকে দেখে কখনই সেইসব সাংঘাতিক যুদ্ধের প্রাচীন ইতিহাস, রক্তের ঝনঝনানি ও তলোয়ারের ঠংঠং, এসব কিছুই টের পাওয়া যায় না। আমি জানি না উনি কোন যুদ্ধে লড়েছেন। একাত্তর নাকি পঁয়ষট্টি, নাকি হাল আমলের কার্গিল? পোস্টিং ছিলেন কোথায়? দ্রাস? বাটালিক? দ্রাস? উরি সেক্টর হয়তো। বহুবার মৃত্যু দেখেছেন বোধহয় কাছ থেকে। কোনো একটা পাহাড় জয় করার সময় ওঁর ব্যাটেলিয়ন হয়তো ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছিল প্রতিপক্ষকে। উনি অবশ্য সেসবের তুলনায় গম্ভীর নন। তবে ঝকমকে উর্দি, বুকের অজস্র ব্যাজ ইত্যাদি দেখে যা যা সব মনে হওয়া স্বাভাবিক, সেসমস্ত কল্পনা করে নিতে অসুবিধে হয় না। অথচ ভদ্রলোক খুবই মাই ডিয়ার লোক। আর্মি জেনারেলের খোলস সরিয়ে রেখে মেশেন। দেখা হলেই হাসিমুখ, খবরাখবর, কাজকম্ম ঠিকঠাক চলছে তো বাবা। প্রায় গোটা দেশ দৌড়ে বেড়াচ্চি তোমাদের জন্য। দেখো, হতাশ কোরো না যেন।

    মেজর জেনারেল সুন্দরমের কথা এখানে আসছে, কারণ মেজর জেনারেল সুন্দরমের সাথে ঐ আগের অধ্যায়ের শেষে টুক করে ছুঁড়ে দেওয়া ইন্দো টিবেটান বর্ডারের ঘটনাটির কিছু যোগাযোগ থাকলেও থাকতে পারে। নভেম্বরের শেষবেলায় যে চাইনিজ ল্যান্টার্ন দের হঠাত ওড়াউড়ি সরকার বাহাদুরকে দুম করে ভাবিত করে তুলেছিল, সেই কথাই বলছি আর কি। স্বভাবতই গভরমেন্ট এইবারে কোনো ঝুঁকি নেয় নি। মার্শাল ভদি, কমরেড সরখেল, নুনুকামান, এবং জোয়ারদার সংক্রান্ত ঘটনাগুলো ঘটে যাওয়ার পর ফের অজানা চাকতির ওড়াউড়ি দেখে প্যানিক বাটনে হাতই পড়ে গেছিল বোধহয়। দ্রুতই বিশেষজ্ঞ টিম পোঁছেছে ঘটনাস্থলে। কিন্তু সেখানে যেহেতু লেখক হাজির ছিল না তাই এইবারে কিছুটা কল্পনার আশ্রয় নিতেই হচ্চে।

    বিশেষজ্ঞ টিমে কতগুলো চরিত্র থাকবে? আচ্ছা একজন অভিজ্ঞ আমলাকে রাখা যাক, যিনি ইন্দো টিবেটান রিলেশনস সম্পর্কে বেশ ওয়াকিবহাল। সেই দলাই লামার ভারতে পালিয়ে আসার সময় থেকেই। আমলা থাকলে তাঁর পিএ ড্রাইভার ইত্যাদি নিয়ে আরো বেশ কয়েকজন। কিন্তু এরা সব সেকেন্ড টিয়ারের জনতা। টিমে একজন গবেষককে রাখা যাক, যিনি তিব্বতি কালচর নিয়ে গবেষণা করছেন এবং সম্পর্কে এই আমলাটির শালা বিশেষ। একজন প্রফেসরকে না রাখলে ভালো দেখায় না। ইনি আসছেন কাছাকাছি কোনো আই আই টি থেকে। এরোস্পেস না ইলেক্ট্রিক্যাল কোন ডিপ হবে? আচ্ছা এরোস্পেসই হোক। একজন সায়েন্টিস্ট এ বি সি ডি ই এফ জি মানে ডিফেন্স রিসার্চের জনতাও থাকুক। যথারীতি এঁরও বশংবদ কিছু অ্যাডিশনাল ইত্যাদি। আর কাকে রাখব? অবশ্যই ল্যান্সনায়েক, হাবিলদার, কর্ণেল, মেজর ইত্যাদিরাও থাকবেন। স্বভাবতই এঁরা কিছুটা ভয়ার্ত। ইউএফও হলে সর্বাগ্রে এদেরকেই আগে ধরবে। ডিফেন্স রিসার্চের জনতাটি রেডার ইত্যাদি নিয়ে বহুকাল লড়েছেন। মাথার চুল প্রায় সব সাদা। চোখে চশমা, ভারিক্কী চোখমুখ।

    টিবেটান বর্ডারের কাছে নিশ্চয়ই ব্যাটলস্টেশন এদিক সেদিক ছড়ানো। থাকতেই হবে। অমন স্পর্শকাতর এলাকা। চতুর্দিকে থাকা উচিত বিভিন্ন রকম সাইনপোস্ট ও নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত ল্যান্ডমার্ক। আর্মির ভারী ভারী ট্রাক। সতর্ক জওয়ান। আউটপোস্ট। আমি যাই নি কখনো, কিন্তু এরকমই হবে নিশ্চয়ই। একটা পিচঢালা রাস্তাও থাকা উচিত যেটা হেডয়াপিসের সামনে এসে থামছে। দুদিকে বাগান।

    বিরাট এসইউভিটা ওই বাগানের পাশের রাস্তা দিয়ে হেলেদুলে ঢুকে তেরছা ভাবে দাঁড়িয়ে গেল। সকাল দশটা ধরে নেওয়া যাক। কাছাকাছি কোনো লেক নিশ্চয়ই থাকবে। সেখান থেকে ভেসে আসা আলগা বাতাস, গাড়ী থেকে নামা প্রথমজনের চুল অল্প উড়িয়ে চলে যাবে। ভদ্রলোক নিজের চশমাটা একটু মুছে নেবেন। মামুলি কথাবার্তা। এদের পেছু পেছু হেডঅফিসে ঢুকে পড়া যাক।

    টিনের শেডের একটা অস্থায়ী কাজঘর বিশেষ। ভেতরে মসমস করে জুতোয় হুল্লোড় তুলে লোকজন এদিক সেদিক করছে। সামান্য টেবিল, কম্পিউটার, রাইটিং প্যাড, টেলিফোন। ঘন ঘন বেজে উঠছে। ফোনের উল্টোদিকের লোকেদের কল্পনা করার দরকার নেই। বাইরে এসিউভি একটু জিরিয়ে নিচ্ছে। ড্রাইভারের হাতে সেদিনের খবরের কাগজ। আলতো করে ধরা।

    ছবিগুলো একটু অস্পষ্ট। কখনো আউট অব ফোকাস। কোথাও মোশন ব্লার ঘটেছে। কিন্তু প্রতিটি ছবিতেই দিব্যি বোঝা যাচ্চে একটা উড়ুক্কু যানের অবয়ব। কোশ্চেন হ’লো, এগুলো কি ইউএফও। তাহলে এরা লেকের ধারে কি করছে? তিব্বতকেই বা বেছে নেওয়ার কারণ কি? আমলা এবং তাঁর শালার অবশ্য এদিকে খুব একটা মনোযোগ নেই। দেশোয়ালি একজনকে পেয়ে একটু খোশগল্প চলছে। চা, কফি, প্লেটে বিস্কুট।

    রেডার সাহেব মনোযোগ দিয়ে স্ক্যাটার প্লট দেখছেন। ক্লিন সিগনেচার। তারমানে এগুলো মেটালিক অবজেক্ট নয়। মেটালিক হলেও ডিটেকশন রেঞ্জে ধরা পড়ত কি না কে জানে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতামত অনুযায়ী সন্ধ্যের দিকেই এদের বেশী দেখা গ্যাচে, কখনো বা খুব ভোরের বেলা। একজন ছোকরা মতন অফিসার দূর্বোধ্য ম্যাপ খুলে লোকেশনগুলো দেখিয়ে দিল। লেকের পাশে সামান্য উপত্যকা মতন অংশেই এদের দেখা গ্যাছে বেশী। কাছাকাছি চাইনিজ আউটপোস্ট গুলো ম্যাপে জ্বলজ্বল করছে।

    প্রফেসর আই আই টি প্রথমে ভাবছিলেন, এ বোধহয় ঐ ফানুস টানুস কিছু হবে। চিনে তো, কিছুই বলা যায় না। কিন্তু ছবিগুলো ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে উড়ুক্কু যানগুলো চেহারাখানা যাকে বলে বেশ স্লেন্ডার বডি। ফানুস কি অ্যামন হয়। উঁহু সে প্রায় অসম্ভবই বটে। সায়েন্টিস্ট জি র মতও তাই। এ ফানুস ঐ ল্যান্টার্ন টাইপ কিছু হতে পারে না। কিন্তু ল্যান্টার্ন অর নো ল্যান্টার্ন ইন্টারেস্টিং ব্যাপার যেটা সেটা হ’লো এর সাইজ। লেকের ধারে মাটি থেকে বেশ উঁচুতে উড়ন্ত অবস্থায় যে ছবি তোলা হয়েছে, তাতে এদের সাইজ যে প্রায় পাখির মতো তা বেশ মালুম হচ্ছে। অবশ্য উচ্চতাটা সঠিক মালুম হচ্ছে না, কিন্তু ব্যাপারটা খুবই খটকাজনক।

    মোশন ব্লারের ছবিটাও বেশ ইন্টারেস্টিং। কে তুলেছে এই ছবি। এক মিলিটারী গোঁপ এগিয়ে এল। গুঞ্জিত ধিংড়া। শক্ত সমর্থ ফৌজি চেহারা। চন্ডীগড়ে বাড়ী। বাড়িতে দুটো অ্যালসেশিয়ান কুত্তা রয়েছে। গুড পয়েন্ট হচ্ছে যে পরাঠা এবং মাখখন ইত্যাদির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল নয়।

    কি ক্যামেরা গুঞ্জিত। গুঞ্জিত দা পুত্তর জানালেন সেটি অতি সাধারণ কোডাক। শাটার স্পীড ও মোশন ব্লার দেখে শুনে যা আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছে তাতে উড়ুক্কু অবজেক্টগুলো বেশ দ্রুতই ছুটছিল মনে হয়। আট ন মিটার পার সেকেন্ড তো হবেই। প্রফেসর আই আই টি ক্রমশঃই এব্যাপারে নিশ্চিত হচ্ছিলেন। অ্যাত ছোট ইউএফও হতে পারে না। টিকটিকি সাইজের এলিয়েন নাকি! কিন্তু তা যদি না হয় তো তাহলে এগুলো কী? এরোপ্লেন? তাও যদি হয় তো বেশ ছোট মতনই হবে কিন্তু কত ছোট তা এই ছবি দেখে মালুম পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ধারণা করা যাচ্ছে অবশ্যই। যদিও সাধারণ এরোপ্লেনের সাথে চেহারায় কিস্যুই মিল নেই। মোস্ট প্রবাবলি ব্লেন্ডেড উইং বডি। কিন্তু কনফার্ম কিচ্ছু নয়। অ্যাত ছোট!

    গুঞ্জিত ধিংড়ার কাছে অবশ্য এছাড়া আর কোনো তথ্য নেই। ছবি গুলো ক্যামেরা সমেত কোনো ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে। আমলাটি এবার একজন অফিসার মতন লোককে ধরে হেঁ হেঁ করচেন। ওঁর শালা ছবি তুলতে গ্যাচে এদিক সেদিক। কাঁচের শার্সির মধ্যে দিয়ে দূরের দিকে তাকালে ওকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। একটা ট্রাক আসছে। শালাবাবু রাস্তা পেরোলেন।

    -- প্রফেসর ঘোষ, বারটা পনেরোয় লাঞ্চ থাকবে। সামনের লনে। আশা করি আপনাদের কোনো অসুবিধে হবে না। গুঞ্জিত আপনাদের সাথে থাকবে।

    একটা আতস কাঁচ মতো জোগাড় হয়েছে। এটা ওইধরণের হেডকোয়ার্টারে থাকতেই পারে। জোর করে কল্পনা করার কিছু নেই। সিনিয়র রংবাহারী ব্যাচওলা কোনো অফিসারের ডেস্কের ড্রয়ারে স্যুইস নাইফের পাশে এ জিনিস থাকতে কোনো অসুবিধে নেই। যদিও খুব কিছু বোঝার উপায় নেই। নাকি আছে? ভালো করে দেখা যাক।

    প্রফেসর ঘোষ খুঁটিয়ে দেখছিলেন ছবিগুলো। পাহাড়ের ব্যাকগ্রাউন্ডে খুব কিছু বোঝার উপায় নেই। একটা ছবিতে লেকের কাছাকাছি লাল রঙের ব্লব। এ ছবিতে পটভূমি কিছুটা পরিষ্কার। রো বাই রো, পিক্সেল বাই পিক্সেল। প্রফেসর আই আই টির চোখ একটা বিশেষ ফিচারের দিকে আটকে গেল। উড়ুক্কুযানের স্লেন্ডার বডীর সামনে প্রায় গায়ে লাগানো এটা কি? আতসকাচের ম্যাগনিফিকেশনে যা প্রায় আবছায়া একটা লাইন হিসেবে ধরা পড়ছে। বেশিক্ষণ চোখ কুঁচকে তাকিয়ে থাকা যায় না। ঘোষসাহেব, সায়েন্টিস্ট জি এর দিকে ছবিটা বাড়িয়ে দিলেন।

    -- দেখো তো।

    আতসকাঁচের উচ্চতা ক্রমশঃ ওঠা নামা করছে। চশমা পাশে খোলা।

    -- প্রপেলার ডিস্ক!

    -- ইয়েস, কারেক্ট। প্রপেলার ডিস্ক। দিজ আর ম্যাভস। ওঃ গড! ম্যাভস। টেকনোলজি দেখেছ। কোথায় লাগি আমরা।

    যেসময় এই সমস্ত কান্ডগুলো ঘটছিল, সেসময় দুহাজার কিলোমিটার দূরে বসে আমি পেন্সিল চিবোচ্ছিলাম। এটা কল্পনা নয়, কারণ বাস্তবিকই সেসময় আমার কিছুই করার ছিল না, এক ওই নিস্তেজ সময় উপভোগ করা ছাড়া। ক্লাইন এবং রোতার জিওমেট্রিক প্রব্যাবিলিটি মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল, কেননা কোনো কালেই কম্বিনেটরিক্স আমার মাথায় ঢোকে না। আমি হয়তো বা ঘুমিয়েই পড়েছিলাম আর জেনারেল সুন্দরম নির্ঘাত ওঁর সুন্দর সাজানো গোছানো বাড়িতে বসে লাঞ্চ করছিলেন। অলস রোদে ঝলমল করছিল বারান্দা এবং আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম যে পৃথিবীর বাদবাকি লোকেরা যে যাঁর স্ব স্ব কাজে ব্যস্ত। এক্সেপ্ট কন্ডথ হরিকুমার। ব্যর্থ প্রেমের আগুনে জল ঢালতে দিনদুপুরে সে একটার পর একটা মালয়ালম মুভি দেখে যাচ্ছিল।
  • | 183.17.193.253 | ১০ জুলাই ২০১৫ ২২:৩৯680805
  • তারপর?
  • kumu | 11.39.32.44 | ১১ জুলাই ২০১৫ ০০:৩০680774
  • taalaabandh darajaa Je kee shaantikalyaaN ene dit,aahaahaa.
  • pi | 132.177.57.237 | ১১ জুলাই ২০১৫ ০২:১৬680775
  • গোপালদার স্কোয়ার রুট টু র মতো ইরাশন্যাল একটি সংখ্যাকে স্রেফ ফেভিকল ও কাঠগুঁড়োর লেই দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়ার কথাতেই আটকে গেলাম। নাঃ, তাড়া দেবোনা। তারিয়ে তারিয়ে পড়বো।
  • Abhyu | 118.85.88.75 | ১১ জুলাই ২০১৫ ০২:২১680776
  • অগোছালো গাছ গাছড়ার জঙ্গল। আমি ওসব দেখে ওবেলিক্সের মতই বিরক্ত হতাম।
    - খাসা!
  • byaang | 132.167.211.118 | ১২ জুলাই ২০১৫ ০৮:৪৩680777
  • দুর্দান্ত হচ্ছে লেখাটা। এতই ভালো লেগে গেল যে একটু তাড়া না দিয়ে পারছি না। প্লিজ প্লিজ ,পরের কিস্তিটা?
  • | 24.96.41.195 | ১২ জুলাই ২০১৫ ০৯:০৯680778
  • বাংলায় যাকে বলে অসাম!

    জমে গেছে।
  • T | 24.139.128.21 | ১২ জুলাই ২০১৫ ১৯:০৯680779
  • ৩. ইতিহাস

    এক তরুণ ফাইটার পাইলটের বদলির হুকুম সম্বলিত চিঠিটা ১৯৪১ এর সামারে মেজর অ্যাডলফ গ্যালান্ডের ডেস্কের উপর যত্ন করে শোয়ানো ছিল। ফাইটার গ্রুপ জেজি টোয়েন্টি সিক্সের ওয়াল্টার হর্টেন। অন্যতম নির্ভরযোগ্য পাইলট, যার নেতৃত্বে জেজি টোয়েন্টি সিক্স ব্যাটল অব ব্রিটেন লড়ে যাচ্ছে। ছোকরা একসময় হিটলার ইয়ুথের মেম্বার ছিল। ছোটভাই রেইমার হর্টেন ওয়াসারকুপের এক এয়ারক্রাফট ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটে কাজ করে। মেজর গ্যালান্ড এই দুজনকেই চেনেন তাদের ছেলেবেলা থেকেই যখন ওরা ওয়াসারকুপের ফ্লাইং কম্পিটিশনে নানারকম চমকদার গ্লাইডার বানিয়ে নিয়ে আসত। বুদ্ধিমান, কাজকর্মে দক্ষ, ফলে পছন্দ না করে উপায় নেই।
    -- ডেস্ক জবের অফার! তাও বার্লিনে! কি ব্যাপার ওয়াল্টার?
    -- আমি রেইমারকে হেল্প করতে চাই। অল উইং এয়ারক্রাফটের ব্যাপারে।
    -- ওফ্‌, সেই বাতিল আইডীয়া! এনিমিকে হাজার মিটার দূর থেকে শ্যুট করার মতই। ওয়াল্টার, এখন ল্যুফতওয়াফের তোমাকে দরকার।
    -- ল্যুফতওয়াফের আমাকের দরকার নেই, দরকার অ্যামন এয়ারক্রাফট যে ব্রিটিশ স্পিটফায়ারের সাথে পাল্লা দিতে পারবে। এভরি অ্যাসপেক্টে আমাদের মেসারমিট স্পিটফায়ারের থেকে...
    -- বেরোও এখান থেকে! বেরোও, বেরোও বলছি।
    দরজার পাল্লা আলতো শব্দে বন্ধ হ’ল। আর্দালি সামান্য অস্বস্তিতে। বড়কত্তা চট করে অ্যাত রেগে যান না। ছফুট দুইঞ্চির ওয়াল্টার হর্টেন কোনো কথা না বাড়িয়ে, নিঃশব্দে স্যালুট ঠুকে বেরিয়ে গেছে। জানলার একটুখানি ফাঁক দিয়ে হুড়মুড়িয়ে ঢুকছে সাইরেনের শব্দ। রানওয়েতে নেমে আসছে একের পর এক মেসারমিট একশো নয়। রিপ্লেসমেন্ট স্কোয়াড্রন। হিটলার ইয়ুথ থেকে নতুন রিক্রুট। মেজর অ্যাডলফ গ্যালান্ডের কাঠের চেয়ার সামান্য ক্যাঁচকোঁচ শব্দ করে আগুপিছু দুলতে লাগল। আর্দালি এখনো অস্বস্তিতে। বদলির হুকুম সম্বলিত চিঠিটা কাঠের ফ্লোরের একপাশে পড়ে আছে।

    সেই রাতেই বিশেষ বিমানে ওয়াল্টার হর্টেন পৌঁছবে বার্লিন। সেখান একপ্রস্থ ব্রিফিং এর পর ফের বিশেষ বিমানে ফ্রাঙ্কফুর্ট। সেখানে অপেক্ষা করবেন একজন টেকনিক্যাল অফিসার। রেইমারের সাথে মোলাকাত হতে হতে পরের দিন দুপুর। ওয়াল্টার ক্লান্ত নয়। সে জানে, ওয়াসারকুপ নয়, আসল গন্তব্য হল গটিংজেন। আরো নির্দিষ্ট করে বললে শহরের একপ্রান্তে এক নির্জন ভিলার পেছনে এক গোপন আস্তানায় অপেক্ষারত এক যুবকের সামনের তাড়া তাড়া কাগজপত্রে বোঝাই টেবিলখানা। টেবিলের একধারে এক রাশ ব্লু প্রিন্টের উপর হাত পা ছড়িয়ে পড়ে থাকা একটা আয়েশ মাখা হোঁৎকা বেড়াল। এবং তার মালিক স্বয়ং এফ ডাব্লু স্মিৎজ।

    এফ ডাব্লু স্মিৎজ হচ্ছে সেই সমস্ত বনেদী লোকেদের একজন যারা পারিবারিক সূত্রে প্রচুর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী। তৎসহকারে উপার্জনের দায় বিহীন একজন নিতান্ত কৌতুহলী মানুষ। হর্টেন ব্রাদারসদের সঙ্গে তার মাখামাখির সূত্রপাত ছোটোবেলা থেকেই। সেও ওয়াসারকুপের ফ্লাইং কম্পিটিশনে বাবার কাঁধে চেপে গ্লাইডারদের নেমে আসা দেখতে যেত। একটু বড় হতে হর্টেনদের গ্লাইডারের উপর সে বাজিও লাগিয়েছে বেশ কয়েকবার। কোনোবারই হতাশ হতে হয়নি।

    রেইমার এবং ওয়াল্টারের সাথে স্মিৎজের দেখা করাটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ অল উইং এয়ারক্রাফটের উইন্ড টানেল টেস্টের যাবতীয় দায়িত্ব ঐ স্মিৎজের উপরেই ন্যস্ত। এটা আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ কারণ, জার্মানীর ভাগ্যই একপ্রকার বলতে গেলে ঐ টেস্টের উপর নির্ভর করে আছে। টানেল টেস্টের রেজাল্ট ক্যালকুলেশনের সাথে মিলে গেলে হিটলারের জার্মানী পেতে চলেছে বিশ্বের সর্বপ্রথম স্টেলথ বম্বার এয়ারক্রাফট হর্টেন টু টু নাইন। ডোভার ও ক্যালে বন্দরের কাছাকাছি অবস্থিত মিত্রপক্ষের রেডারগুলো যাকে কখনোই খুঁজে পাবে না। ব্রিটেনকে গুঁড়িয়ে দেওয়া তখন দাঁড়াবে শুধু সময়ের অপেক্ষা। স্মিৎজ উত্তেজিত সঙ্গত কারণেই। ওয়াল্টার ও রেইমার হর্টেনও তাই, কেবল বেড়ালটাই যা অলস হয়ে চিতপাত হয়ে পড়ে আছে।
    -- একহাজার মিটার পার সেকেন্ড। পিনেমুন্ডে তে ওরা কি করেছে জান? লিক্যুইড প্রপেল্ড এয়ারক্রাফট। আলেকজান্ডার লিপ্পিশ অনেক এগিয়ে গেছে আমাদের থেকে। ওয়াল্টারকে শুধোও, ও নিজের চোখে দেখেছে ব্যাপারটা।
    বেড়ালটা বিরক্ত হয়ে রেইমারের দিকে তাকিয়ে রইল। লোকটা অনর্থক চিল্লোচ্ছে। লিপ্পিশের সাথে কম্পিটিশনে যাওয়া কাজের কথা নয়।
    -- বব, আমাদের উদ্দেশ্য স্পিটফায়ারের সাথে টক্কর দেওয়া, সাউন্ড বেরিয়ার বিট করা নয়।
    ঠিক কথা, বেড়ালটা একমত।
    -- ওয়াল্টার, কেউ আমাদের আগে এটা করে ফেলবে এটা আমি চাই না। বি এম ডাব্লু জিরো জিরো থ্রীর পাওয়ার কার্ভ আমি পেয়ে গেছি। এই দ্যাখো। এই রিপোর্টটা দ্যাখো, ওরা পাঠিয়েছে। আর এই হচ্চে, ক্লাইম্বিং রেটের ক্যালকুলেশন।
    বেড়ালটা ঝুঁকে পড়ে রিপোর্টে চোখ বোলাতে লাগল। ঘরটা ক্যামন একটু স্যাঁতস্যেঁতে। সূর্যের আলো পড়ে না প্রায় কখনোই।
    -- কই, স্মিৎজ। তোমার টানেল টেস্টের রিপোর্ট? বার কর সেসব।
    এফ ডাব্লু স্মিৎজ একটা সিগার ধরাল। তারপর ড্রয়ারের ভেতর থেকে দিস্তে খানেক কাগজ বার করে ছুঁড়ে দিল ওয়াল্টারের দিকে। ঘরের মাঝখানে একটা গোল টেবিল। চেয়ার টেনে নিয়ে দুই ভাই উত্তেজিত হয়ে টানেল টেস্টের রিপোর্টে চোখ বোলাতে লাগল। ব্যাপার দেখে বেড়ালটাও একটা চেয়ার খুঁজে পেতে নিয়ে বসে পড়েছে। এফ ডাব্লু স্মিৎজের চোখ বন্ধ। সিগার পুড়ছে। ঠ্যাঙ নড়ছে অল্প অল্প।

    ঘন্টা খানেক পর হর্টেন ব্রাদারস এইব্যাপারে একমত হ’ল যে টানেল টেস্টের রেজাল্ট যদি ঠিক হয় তবে ডাচ রোল মোডকে স্টেবল করার জন্য একটা ভার্টিকাল ফিন দরকার। আদারওয়াইজ এয়ারক্রাফট থেকে মেশিনগান ফায়ারিং এর সময় পাইলট তার লক্ষ্য স্থির রাখতে পারবে না। ল্যুফতওয়াফের নতুন পাইলটরা স্বাভাবিক ভাবেই অভিজ্ঞ নয়। তারা এ জাতীয় এয়ারক্রাফট পছন্দ করবে না। হেরম্যান গোয়েরিং সেক্ষেত্রে লিপ্পিশকে গ্রীন সিগন্যাল দিয়ে দেবেন। ভার্টিক্যাল ফিন একটা ভালো অপশন।

    বেড়ালটা প্রতিবাদ করল। ভার্টিকাল ফিন সরাসরি পড়ে যাবে টার্বোজেট ইঞ্জিনের ওয়েকের মধ্যে। ঐ গরম এক্সহস্ট পুড়িয়ে দিতে পারে কাঠের স্কিন। দরকার আরো মজবুত স্ট্রাকচার। সেক্ষেত্রে এয়ারক্রাফটের সেন্টার অব গ্র্যাভিটি আরো পিছনের দিকে চলে যাবে। প্লেন উড়বে অনেক বেশী অ্যাঙ্গেল অব অ্যাটাকে। রেডার ক্রসসেকশন হয়ে যেতে পারে সাবস্ট্যানশিয়াল।

    বেড়ালটার কথায় যুক্তি আছে। ওয়াল্টার ওর হলুদ চোখের দিকে একদৃষ্টে চেয়েছিল। স্মিৎজ এখনো চোখ বোজা। বোঝাই যাচ্ছে ওর উপর দিয়ে খুব খাটাখাটনি যাচ্ছে। ওয়াল্টার গলা খাঁকরি দিয়ে উঠল—
    -- কী হে কিছু ব’লো। কী করা যায় এক্ষেত্রে—

    স্মিৎজ সিগারটা ছুঁড়ে ফেলল অ্যাশট্রেতে।
    -- এই টেস্ট রেজাল্টগুলো দ্যাখো।
    -- এগুলো কি স্মিৎজ?
    -- হঠাৎ কি খেয়াল হতে লো রেইনল্ডস নাম্বা্রে টেস্টিং করছিলাম। এন সিক্সটির সিপি কার্ভটা দেখো। দ্যাখো কতটা ফ্ল্যাট।
    -- আশ্চর্য! ফ্ল্যাট তো হওয়ার কথা নয়।
    এ কিন্তু এক্সপেরিমেন্টাল এরর নয়। বেড়ালটা বলে উঠল। এটা কেবলমাত্র সিক্সটি থাউসেন্ড রেইনল্ডস নাম্বারের জন্যই হচ্ছে।
    -- আশ্চর্য! কিন্তু কারণটা কি?
    দ্যাখো আমি স্মোক টানেল টেস্টও করেছিলাম। ছবিগুলো দ্যাখো। দেখছ কি যে লিডীং এজের কাছ থেকে ক্যামন ফ্লো সেপারেশন ঘটছে। হাই রেইনল্ডসের জন্য হচ্ছে না। সুতরাং তোমাদের হর্টেন টু টু নাইন নিয়ে নিশ্চিত থাকতে পার।
    -- সে নাহয় হ’ল। কিন্তু--

    ওয়াল্টার, আমি যা দেখলাম সেটা হ’ল এই উটকো ধরণের ফ্লো প্যাটার্ণ কেবলমাত্র লো রেইনল্ডস নাম্বার এরোডায়নামিক্সের ক্ষেত্রেই খাটছে। প্রথমে এরোফয়েলের লিডিং এজের কাছাকাছি অ্যাডভার্স প্রেসার গ্রেডিয়েন্টের কারণে ফ্লো সেপারেশন ঘটছে। এটাকে ল্যামিনার সেপারেশন বলতে পারো। তারপর আবার এরোফয়েলের মাঝামাঝি জায়গায় ফ্লো রিঅ্যাটাচমেন্ট ঘটছে। এরফলে ঐ মাঝখানের জায়গা জুড়ে একটা বাব্‌ল মতো তৈরী হচ্ছে, বুঝছ কি! ল্যামিনার সেপারেশন বাব্‌ল। স্মল সেপারেশন বাব্‌লও বলতে পারো। ড্র্যাগ বেড়ে যাচ্ছে অনেকটা। গ্লাইড রেশিও কমে আসছে। কিন্তু থিন এয়ারফয়েলের জন্য এটা খাটছে না। থিন এয়ারফয়েলের ক্ষেত্রে লিডীং এজের কাছটাতে ফ্লো বাউন্ডারী লেয়ার খুব দ্রুত ল্যামিনার থেকে টার্বুলেন্টে ট্রান্সফর্ম করে যাচ্ছে।

    -- তো!

    এতে সুবিধেটা এই যে, অ্যাডভার্স প্রেসার গ্রেডিয়েন্ট সামলাবার মতো এনার্জি দিব্যি বহাল থাকছে সুতরাং নো বাবল ড্র্যাগ। ফ্লো রেইনল্ডস নাম্বার বেশ কম হলে এয়ারক্রাফটের উইং হিসেবে কোনো থিন এয়ারফলের সিলেকশন প্রায় ডিফল্ট চয়েস হয়ে দাঁড়াবে। থিক নয়।

    -- আর কাকে বলেছ এই রেজাল্টের কথা?
    -- কেউ নয়, এই তোমরাই জানলে।
    -- কাউকে বলার দরকার নেই, আমি কাল বার্লিন যাচ্ছি। ল্যুফতওয়াফের জন্য একটা ড্রাফটে সব ডিটেলসগুলো লেখো। এটা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। রেইমার--

    বেড়ালটা হাই তুলল। ওর খাবার সময় হয়েছে। অলস সময় যত্তসব। চেয়ার থেকে লাফিয়ে নামল এক ঝটকায়। শরীরটা টানটান করে একটু গা মোচড়ানী দিল। তারপর ঘরময় ছড়ানো ছেটানো বই পত্রের স্তুপ দেখে শুনে লাফিয়ে সদর দরজা পেরিয়ে গেল এক ঝটকায়।

    এফ ডাব্লু স্মিৎজ, বেড়ালটার পিছু পিছু ঘর থেকে বেরিয়ে এল। উজ্জ্বল রৌদ্রকিরণ। ঘাসজমি পেরিয়ে ঘোড়াদের আস্তাবল। ঘোড়াগুলো অবশ্য বেচে দেওয়া হয়েছে কোনকালে। সেখানে এখন দস্তুরমতো উইন্ড টানেল ফেসিলিটি। বড় বড় ব্লোয়ার, ফ্যান, যন্ত্রপাতি, ঘড়ঘড় শব্দ। এফ ডাব্লু স্মিৎজ, টানেলের টেস্ট সেকশনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। সে লক্ষ্য করল এক অচেনা যুবককে, যে নিবিষ্ট মনে দেখে চলেছে নির্দিষ্ট ধরণের স্মোক প্যাটার্ণ। এই যুবককে আমরা চিনি, যদিও স্মিৎজের কাছে সে অপরিচিতই। স্মিৎজ মৃদু হাসল, তারপর এগিয়ে এসে সেই যুবকের মধ্যে সটান ঢুকে পড়ল। সে জানে প্রায় সত্তর বছর ধরে এরকম আরো কত যুবক অপেক্ষা করে থাকবে উইন্ড টানেলের সামনে, ঐ একই স্মোক প্যাটার্ণ দেখার জন্য। অন্য অন্য দেশে, অন্য অন্য সময়ে।

    এই চ্যাপ্টারে এই টুকুই শুধু লেখা হ’ল। ডট গুলো পরে ক্রমশঃ কানেক্ট হবে। কোনোভাবে। কেবল দুটোমাত্র অ্যাডিশনাল ইনফরমেশন দেওয়ার আছে। এক, অ্যালায়েড বম্বিং এর জেরে হর্টেন টু টু নাইনের কারখানা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দুই, বার্লিন-শার্লটনবার্গ থেকে ১৯৪২ এ প্রকাশ হয়েছিল স্মিৎজের রেজাল্ট। জার্মানীর পতনের পর কালক্রমে যা হাত ঘুরে এসে পড়েছিল আমেরিকানদের কাছে।
  • Div0 | 132.172.238.21 | ১২ জুলাই ২০১৫ ২২:১০680780
  • উল্লাট হচ্ছে T, হর্টেন ২২৯ এর ডিজাইন চুরি করে B2 স্টেল্‌থ বানিয়েছে নাকি!
    আর বিলাইটার ইনক্লুশন ন্যারেটিভে এক অন্য মাত্রা নিয়ে এলো :)
  • শ্রী সদা | 24.99.209.25 | ১২ জুলাই ২০১৫ ২২:১১680781
  • অসা হচ্ছে। চলুক, চলুক।
  • সিকি | ১২ জুলাই ২০১৫ ২২:৫৪680782
  • জাস্ট নোংরা হচ্ছে। অসাম ইসে।

    চলুক।
  • rabaahuta | 215.174.22.27 | ১৩ জুলাই ২০১৫ ২১:০৭680783
  • এইটা রবিবার পড়ার জন্যে রেখে দিয়েছিলাম। ব্যাপক।
  • sosen | 177.96.24.84 | ১৪ জুলাই ২০১৫ ২৩:১৪680785
  • বাহ বাহ। প্রচুর মন খারাপের মাঝে জোর করে বাংলা পড়িয়ে নিল। লেখ লেখ
  • T | 165.69.177.119 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৩:৫৩680786
  • Div0, না মনে হয়। সমসাময়িক সময়ে নর্থ্রপ এর নিজেদের ডিজাইনই ছিল তবে ম্যানুফ্যাকচার হয়েছে কিছু পরে। কিন্তু কিছুই বলা যায় না। তবে নাই মনে হয়।
  • T | 165.69.177.119 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৩:৫৫680787
  • ৪. লাইব্রেরী

    হ্যাঁ, তো, গত তিনটে অধ্যায়ে যা যা সমস্ত বলা হয়েছে, সেগুলো যে কী গুষ্টির পিন্ডি হচ্চে সেটা মালুম করার আগে একবার সেন্ট্রাল লাইব্রেরীটা ঘুরে আসা যাক। সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর একতলায়, রিডিং রুমের পিছনের দিকে একটা নির্জন টেবিল চেয়ার আমার বেশ পছন্দের ছিল। ওখানে আলো একটু কম। একটু কম বাতাস। খুব স্বাভাবিক ভাবেই চতুর্দিকে বইয়ের আলমারীর একটা ঘেরাটোপ। ধুলোপড়া কবেকার পুরোনো র্যা ক। সারি সারি অ্যালফাবেটিক্যাল অর্ডারে সাজানো বই, টেকনিক্যাল রিপোর্ট। ফ্যান নেই, নিস্তেজ সময় হাঁটে খুব ধীরে। আশে পাশের আলমারিতে রাখা বইয়ের খোঁজে কেউ বড় একটা আসে না। সারাদিন ঝক্কিবিহীন। পাশ দিয়ে ঘুরপাক খেয়ে উঠে যাওয়া লোহার সিঁড়ি। দিন গড়ালে টুক করে মৃদু সিএফএল ল্যাম্প। বন্ধ জানলার ওপাশে কখনো-সখনো সাইকেলের ঘন্টি। ধেত্তেরি।

    আমি ওখানে বসে বিভিন্ন ধরণের উড়োজাহাজের ছবি দেওয়া বইগুলোর পাতা ওল্টাতাম। প্যাসেঞ্জার বা মিলিটারী দুধরণের বিমানেরই ছবি। কখনো বা আর্টিস্টস ইম্প্রেশন। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সময়ের বিমান। এছাড়াও রকেট, স্পেসক্রাফট ইত্যাদি। বিভিন্ন সময়ের গল্প। কী ইন্টারেস্টিং! গুপ্তচর বিমান ইউ টু, কিংবা নাসার রিসার্চ এয়ারক্রাফট, ওজনের হিসেবে যার দাম সোনার চেয়েও বেশী কিংবা ভবিষ্যতের উড়োজাহাজের ছবি। অ্যাপোলো লুনার মডিউল। জাইগান্টিক স্যাটার্ন রকেট। মিগ মিগ মিগ টোয়েন্ট নাইন। কোবরা ম্যানুওভার। ফার্স্ট গালফ ওয়ারে প্রতিটি প্যাট্রিয়ট মিসাইল যখন ফেল করে গেছিল।

    স্মিৎজ শুয়ে থাকত সবচেয়ে শেষ আলমারীটার একদম নীচের র্যায়কটার কোণার দিকে। সবদিন দেখা হ’ত না, তবে দেখা হলেই লক্ষ্য করতাম ও একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়ে চলেছে। আর ওর বেড়ালটার, মানে লেজের দিকে কিছু একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ছিল। হোঁৎকা বেড়ালটা বসে থাকত ঠিক উপরের তাকটাতেই। বসে থাকত মানে বসে বসে ঝিমোত শুধু। এবং ওর ল্যাজটা সারাক্ষণ স্মিৎজের নাকের সামনে সরল দোলগতিতে দুলেই চলত। একসময় স্মিৎজের সিগারেটের ধোঁয়ায় বেড়ালটা ক্রমশঃই ঝাপসা হয়ে যেত, কিন্তু এদের এই অদ্ভুত প্রভু পুষ্যির সম্পর্ককে কোনোরকম গুরুত্ব না দিয়েই আমি বইয়ের পাতা উল্টে যেতাম। কারণ সে ব্যাপারটা অনেক ইম্পর্ট্যান্ট আর টু বি ভেরি অনেস্ট, শালা, যে যা পারে করুক গে যাক আমার তাতে কি।

    কিন্তু স্মিৎজের সাথে আলাপ হওয়াটা ভবিতব্য ছিল।

    উচ্চতা গড়পড়তা জার্মানদের মতই। টকটকে ফর্সা রঙ ঠিক না, খানিক লালচে ভাব রয়েছে, ওই দুধে আলতা মতন আর কি। চুলগুলো সোনালি, চোখের ভ্রুও তাই। হাসলে, ওর চোখের কোণার চামড়াগুলো কুঁচকে চার পাঁচটা ভাঁজ পরে যেত। বুড়োদের যেমন হয়, সেরকম। আর কাদের হয়? খুব বুদ্ধি যাদের? ইহুদি? মারা যাওয়ার পর থেকে সময়ের সাথে সাথে চেহারার জৌলুস ফিকে হয়েছে অবশ্য। কেউ কচ্চিৎ কদাচিত মনে করলে ফ্যাকাশে ভাবটা কিছুটা কাটে। পারিপার্শ্বিক ব্যাপারে একান্তই উদাসীন। কিভাবে মারা গিয়েছিল সেটা অবশ্য আমাকে কখনো বলে নি।

    স্মিৎজ কথা বলত কিছুটা দাঁত চেপে। এটা বোধহয় জার্মান অভ্যাস। কিন্তু তারচেয়েও বড় ব্যাপার হ’ল ও আমাকে সময়ের উল্টোদিকে হাঁটতে শিখিয়েছিল। এটা আমরা করতাম খুব সহজেই। গোপনীয়তার খাতিরে পুরো পদ্ধতিটা বলা যাবে না তবে মোটামুটি বলা যেতে পারে যে প্রথমেই আমরা ত্রিমাত্রিক স্থান থেকে সরে পড়তাম। পড়ে থাকত খুব সরু একটা টাইম অ্যাক্সিস। এরপর ঐ বরাবর উল্টোদিকে হাঁটা। আমরা নিজেদের প্রতিচ্ছবিগুলোকে যত্ন করে সরিয়ে রেখে এগিয়ে যেতাম। রেখাটা যেহেতু খুব সরু, সেকারণে খুব সাবধানে হাঁটতে হ’ত। কখনো বা আমরা রেখার উপর দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতাম। প্রতিচ্ছবিগুলো যে যার মতো এগিয়ে আসত। স্মিৎজ ওর নিজস্ব সময়ের সাথে একটা ট্যাগ লাগিয়ে রেখেছিল, চেনার সুবিধের জন্য। ঠিক যেমন বইয়ের পাতায় আমরা পেজমার্ক দিয়ে রাখি, অনেকটাই সেরকম।

    স্মিৎজ মাঝে মাঝে ওর বন্ধুবান্ধবদেরও ডেকে নিয়ে আসত। এরা খুব হুল্লোড়বাজ। কেউ মারা গেছে যুদ্ধে, ট্রেঞ্চের ভেতর, কেউ রাশিয়ায়, গুলাগে। কখনও সাথে করে এক পাদ্রীকেও ধরে আনত। উনি ছিলেন ইতালিয়ান। কিছু বলতেন না, চুপ করে বসে খবরের কাগজ পড়তেন। একই সময়ের কাগজ। একই ঘটনা। প্রতিবার।

    এন সিক্সটি এয়ারফয়েলের সিপি কার্ভটা নিয়ে স্মিৎজ অনেক কিছু বলত। ওর টানেল ফেসিলিটির ভেতর চতুর্দিকে ছড়ানো ছেটানো কাগজপত্র, ফাইল নোটবুক, যন্ত্রপাতি বই, নাৎসি পত্র পত্রিকা, বাটিতে গরম স্যুপ। হোঁৎকা বেড়ালটা প্রতিবার চড়ে বসত একটা মাঝারি গোছের কাঠের আলমারীর মাথায়। মোস্ট প্রবাবলি ও পাদ্রীকে পছন্দ করত না, অথবা ব্যাপারটা স্রেফ আলমারীর মধ্যে রাখা হর্টেন টু টু নাইনের নকশা পাহারা দেওয়ার জন্যও হতে পারে। ওতে নকশা ছাড়াও জার্মান গুপ্তচরদের কাছ থেকে পাওয়া চুরি করা ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার্ফোসের বিভিন্ন এয়ারক্রাফটের খুঁটিনাটি নকশা ইত্যাদি ছিল। এটা আমি জানতাম কারণ সেসব নিয়ে স্মিৎজ মাঝে মাঝেই প্রচুর মতামত দিত। কিন্তু এন সিক্সটির ব্যাপারটা ছিল যেহেতু সব দিক থেকেই আলাদা, সেজন্য আমরা ঘুরে ফিরে আবার ওতেই ফিরে আসতাম। বহু যত্ন সহকারে স্মিৎজ দেখাত কিভাবে সে এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে গেছে। ফলাফল পরীক্ষা করে দেখেছে বারংবার। আরো সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছে এরোডায়নামিক এফেক্টসগুলো বোঝার জন্য। লিফটকার্ভের হিস্টেরিসিস, ক্ষণিকের বাউন্ডারী লেয়ার সেপারেশন। খানিকটা রিংএর মতো চক্রাকার বাতাসের পাক। আমার এক এক সময় মনে হ’ত ও নিশ্চয়ই চোখে হাওয়া বাতাস দেখতে পায়। বোমায় দুটুকরো হয়ে যাওয়া স্মিৎজের এক বন্ধুও অবশ্য তাই মনে করত। এফ ডাব্লু স্মিৎজ, এক নির্জন প্রতিভাধর এঞ্জিনিয়ার।

    -- কি মনে হয় তোমার? এই ফ্লো সেপারেশনের কোনো থিওরি বলতে পারো?
    -- আম্‌, ইয়ে, না না, নোওপ।

    স্মিৎজ ওর টানেলের দেওয়ালের গায়ে কান পাতত। যেন হার্টবিট মাপছে। টুকিটাকি এটাসেটা বিবিধ পোটেনশিওমিটার। বিভিন্ন স্যুইচ, যান্ত্রিক লিভার হাতল, ইত্যাদির নড়াচড়া। নোটিসের মত লটকানো টেস্ট সেকশনের প্যারামিটার। সন তারিখ ধরে ধরে প্রতিবার ক্যালিব্রেশনের হিসেব। জার্মানরা খুঁতখুঁতে তো বটেই।

    -- আমি হাই রেনল্ডস জোনে পরীক্ষা করে দেখেছি। সেখানে এই ফেনোমেনা নেই। এটা একান্তই লো রেইনল্ডস নাম্বার জোনে ঘটছে। হর্টেন টু টু নাইন জাতীয় এয়ারক্রাফটের ক্ষেত্রে খাটবে না।
    -- আচ্ছা!
    -- আচ্ছা নয়, এটা আরো কোনো সূক্ষ্ম কিছু থেকে ট্রিগারড হচ্ছে। তোমাদের সময়ে তো আরো অনেক কিছু আবিষ্কার হয়েছে। এটা নিয়ে কেউ কিছু করে দেখেনি?
    -- উঁ...দেখেছে মানে, ইলিনয় ইউনিভার্সিটি। প্রফেসর সেলিগ। এই ধরো বছর দশেক আগের কথা বলছি। একটা পেপারে এপলার সিরিজের কিছু এয়ারফয়েলের জন্য অ্যামনই ঘটনা ঘটছে সেটা দেখিয়ে ছিলেন। দাঁড়াও, নট জাস্ট এপলার, নাকা সিরিজও ছিল। এক্ষেত্রেও সেই লিডিং এজের কাছ থেকে ফ্লো সেপারেশন। কিন্তু কি থেকে এটা ট্রিগ্রারড হচ্ছে সেটা জানা যায় নি। মে বি সারফেস ইরেগুলারিটি।
    -- আমেরিকান্‌স! কি ধরণের উইন্ড টানেল ইউজ করে ওরা এখন? ওপেন সার্কিট? ক্লোজ সার্কিট। ব্যালেন্সের ব্যাপারে কিছু জান? এক্সটার্নাল ব্যালেন্স? গাস্ট ভেন রয়েছে? প্রি কন্ডিশনিং করা নিশ্চয়ই। ক্যালিব্রেশনের জন্য কি এয়ারফয়েল ইউজ করেছে? নাকা জিরো জিরো ওয়ানটু?
    -- আম্‌, ইয়ে, ওপেন সার্কিট।
    -- টার্ব্যুলেন্স লেভেল?
    -- আচ্ছা, অ্যাঁ, হ্যাঁ, ইয়ে, টু পার্সেন্ট।
    -- হুম্‌। এইও! লেজটা সরাও মুখের সামনে থেকে!

    শেষ কথাটা অবশ্যই হোঁৎকাটার প্রতি। সবেতেই যার নাক গলানো অভ্যেস। সে অবশ্য কিছুমাত্র গুরুত্ব না দিয়ে আলমারিতে রাখা অন্য একটা ফাইলের দিকে ইশারা করে থাবা চাটতে লাগল।

    -- হ্যাঁ, দেখো, এগুলো অ্যালায়েড বম্বিং এর সময় নষ্ট হয়ে যাওয়া কাগজপত্র। বহু পরে রেইমার কিছু কিছু উদ্ধার করেছিল। উনিশশো বিয়াল্লিশে ওরা এইসব আমার কাছ থেকে নিয়ে যায়। প্রকাশিতও হয়। তোমাকে দিচ্ছি, দেখো পড়ে, যদি কিছু কাজে লাগতে পারে।
    পার্চমেন্ট পেপারের মত সে ফাইল আমার হাতে। খুব সাবধানে পাতা ওল্টাতে হয়। বিভিন্ন অপারেটিং কন্ডিশনে এরোডায়নামিক লিফট ড্র্যাগ মোমেন্টের কার্ভ। আঁকিবুকি। বিভিন্ন এয়ারফয়েলের জন্য। মার্জিনের কাছে স্মিৎজের মতামত। প্রায় পুরোটাই পেন্সিল ও জার্মানে লেখা। হয়তো কখনো কাজে লেগে যাবে ভেবে সে ফাইল আমি যত্ন করে ঢুকিয়ে নিয়েছি ব্যাগে। পাদ্রী সাহেবের হাতে ধরা সেদিনের কাগজ। লা ক্যাপিতাল। সম্পাদক কৈফিয়ত দিচ্ছেন কেন সে কাগজে কখনো মুসোলিনীর স্বপক্ষে কিছু লেখা হয় নি। বিকেলের রোদ পড়ে আসছে। বেড়ালটা ঝাপসা হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে নিল।

    স্মিৎজ বিদায় জানাল। আশা করি বাকি রাস্তাটা তুমি একাই ফেরত যেতে পারবে। হ্যাঁ অবশ্যই পারব স্মিৎজ। ফিরতি পথও তো একই। ফ্রেম বাই ফ্রেম সযত্নে ছবিগুলো সরিয়ে রেখে পথ চলা। সরু টাইম অ্যাক্সিস। নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে তারপর পূর্ব নির্ধারিত ত্রিমাত্রিক স্থানে ঢুকে পড়া। এই ডেস্টিনেশন আমাদের পরিচিত সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর একতলা। রিডিং রুমের পিছনের দিককার সেই নির্জন টেবিল চেয়ার। সেই যে কমে আসা আলো, কমে আসা বাতাস। আলমারীর ঘেরাটোপ। বলেছি কি ধুলোপড়া কবেকার পুরোনো র্যা্ক। সারি সারি অ্যালফাবেটিক্যাল অর্ডারে সাজানো বই, টেকনিক্যাল রিপোর্ট। বলেছি কি সারাদিন ঝক্কিবিহীন। পাশ দিয়ে ঘুরপাক খেয়ে উঠে যাওয়া লোহার সিঁড়ি। দিন গড়ালে টুক করে মৃদু সিএফএল ল্যাম্প। বন্ধ টেবিল চেয়ার দরজা জানালা লোহার রেলিং বেয়ে নেমে আসা অশরীরী ঘুম। ধেত্তেরি।

    থিন। থিন এয়ারফয়েল। এফ ডাব্লু স্মিৎজের নিদান। লো স্পিড ফিক্সড উইং এয়ারক্রাফটের জন্য এরোডায়নামিক্যালি মোস্ট এফিশিয়েন্ট এয়ারফয়েল ক্যাটেগরি। ফিক্সড উইং মাইক্রো এয়ার ভেহিকল বা ম্যাভ বা মতান্তরে ড্রোন ইত্যাদির ডিজাইনের জন্য যেটা হয়ে দাঁড়াবে একপ্রকার নেসেসারি। যে এয়ারফয়েল ক্লাস আমাকে বাঁচিয়ে দেবে অনন্ত ট্রায়াল এন্ড এরর প্রসিডিওর থেকে। স্মিৎজের দেখানো ফ্লো সেপারেশন ড্র্যাগ হয়ে দাঁড়াবে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ এলিমেন্ট। বাঁচিয়ে দেবে বহু গুরুত্বপূর্ণ সময়, যেটুকু সময় ধরে আমি এক একরত্তি আঙুল ধরে শূন্যদিকে হেঁটে যাবো। সেই একরত্তি আঙুলের মালকিন আর তার মচমচানি জুতো, তার লাল জামা, তার খরগোশ আঁকা সোয়েটার, তার সাইকেল কলেজ ইশকুল, সবকিছুর জন্যই সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর ওই একতলার পিছনের দিককার ব্যাপারস্যাপার ও হোঁৎকা ল্যাজ...হে ঈশ্বর, প্রতিবার ওখান থেকেই জন্ম নিয়ো।
  • TB | 118.171.131.187 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:৩৪680788
  • জেনে সুখি হলাম এই টইটা বেভুলে অস্ত যায় নি। দূর নির্জনে এটার কথা কিছু কিছু পাঠকের স্মরণে আসে।
  • sosen | 184.64.4.97 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১১:৪৮680789
  • হিংসে, হিংসে
  • d | 144.159.168.72 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১২:০০680790
  • হুমম

    এই ব্যারালগুলো কেন যে সর্বঘটে কাঁঠা৯কলা হয়ে বসে থাকে!
  • T | 165.69.172.111 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১২:০৯680791
  • 'ব্যারাল' নয়। ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিন। বেড়াল। ওটা থাকবেই, মাস্ট। লেজ সমেত। কিন্তু হিংসা কিঁউ...অ্যাঁ!
  • de | 24.139.119.173 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১২:২৫680792
  • বাঃ - এইটই তো আগে দেখি নাই - পড়ুম 'অনে!
  • de | 69.185.236.51 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৪:৩৯680793
  • দারুণ হচ্ছে কিন্তু!
  • Ekak | 113.6.157.186 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৪:৪৫680794
  • হুমম , মাথা ঘামানোর লোকজন আছে আর আশেপাশে বেড়াল নেই এ হতেই পারেনা । চলুক !
  • Sahana | 74.233.173.198 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৬:৩৩680796
  • দারুন। ওই ত্রিমাত্রিক অবস্থান আর পড়ে থাকা আক্সিস আর নিজেদের প্রতিচ্ছবি সরিয়ে হাটতে থাকা। দারুন।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন