এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • নাকছাবিটি হারিয়ে গেছে

    অকার
    অন্যান্য | ১৮ জুন ২০১৫ | ১৫০৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • অকার | 192.66.30.174 | ১৮ জুন ২০১৫ ২০:৪৮682212
  • আমার কিশোরীবেলায় ফেসবুক ছিল না৷
    আজকের দিনে কী অবিশ্বাস্য শোনায় কথাটা, তাই না? তা যতই অবিশ্বাস্য শোনাক, ঘটনাটা কিন্তু ষোলোআনা সত্যি৷ শুধু ফেসবুক কেন, আরও অনেক কিছুই তো ছিল না৷ মোবাইল ছিল না, এসএমএস ছিল না, এফএম ছিল না৷ মায় টিভি পর্যন্ত ছিল না৷ সে তার সাদাকালো ছায়াছায়া ভুতুড়ে চেহারা নিয়ে এল আমার মাধ্যমিকের আগের বছর৷ তাও আমাদের বাড়িতে আসে নি৷ ওই কর্মনাশা যন্ত্রের নেশা ধরলে নাকি সকলের কাজকর্ম সব গোল্লায় যাবে, আমার পড়াশোনা লাটে উঠবে, পরীক্ষা খারাপ হবে ইত্যাদি ইত্যাদি নানাবিধ আশংকার কারণে৷ মাধ্যমিকের ফার্স্ট ব্যাচ ছিলাম আমরা৷ সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগে মেয়েদের জিনস পরা ছিল না, রাস্তার আলো জ্বলে গেলে বাড়ির বাইরে থাকা ছিল না, গেটে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করা ছিল না৷ কত কী-ই যে ছিল না৷
    আবার ছিলও যে কতকিছু৷
    আমাদের ছিল বিবিধ ভারতী, রেডিয়ো সিলোন, বিনাকা গীতমালা৷ ছিল শুক্রবার রাত আটটার বাংলা নাটক, অনুরোধের আসর, ছায়াছবির গান৷ হেমন্ত মুখার্জি, মান্না দে৷ আমাদের ছিল কিশোরী হৃদয়ে আলোড়ন তোলা রাজেশ খান্না, আমাদের ছিল রাহুল দেব বর্মণ, কিশোর কুমার৷ আমাদের ছিল দুপুর একটায় কলকাতা খ, মিউজিক্যাল ব্যাণ্ডবক্স৷ ক্লিফ রিচার্ডস, হ্যারি বেলাফণ্টে, নীল ডায়মণ্ড৷ আহা৷
    আমাদের আরও ছিল ইন্দ্রজাল কমিকস, অরণ্যদেব, ম্যানড্রেক, লোথার৷
    আসলে আমার জীবনে সবথেকে বেশি করে ছিল বই৷
    অক্ষর পরিচয়ের সঙ্গে সঙ্গেই বইয়ের সঙ্গে যে বন্ধু্ত্ব জন্মেছিল দিনে দিনে তা শুধুই বেড়েছে, কমে নি আদৌ৷
    বই ঘাঁটতে ঘাঁটতেই জেনেছিলাম যে নতুন বইয়ের গন্ধ আর পুরোনো বইয়ের গন্ধ দুটো পুরোপুরি আলাদা রকমের৷ এ অনুভব কবে হয়েছিল জানি না, কিন্তু এখনও হাতে বই এলে অভ্যাসে আগেই গন্ধটা শুঁকি৷
    জন্মেছিলাম কলকাতায়৷ পড়তে শিখেছিলাম কলকাতায়৷ স্কুলে ভরতিও হয়েছিলাম কলকাতাতেই৷ যখন বরাবরের মত কলকাতা ছেড়ে চলে গেলাম তখন আমার বয়স নয় দশের মাঝামাঝি৷ ক্লাস থ্রি থেকে ফোরে উঠেছি সদ্য৷ কিন্তু ফোরের ক্লাস শুরু করলাম জন্ম থেকে চেনা একটা অভ্যস্ত পরিবেশ ছেড়ে সম্পূর্ণ নতুন একটা জায়গায়৷ নতুন পাড়া, নতুন স্কুল, নতুন সঙ্গীসাথী৷ ওই বয়েসে একবার শেকড় ওপড়ালে নতুন মাটিতে আবার মানিয়ে নিতে সময় লাগে৷ অন্তত আমার লেগেছিল৷ ওই যাই-যাই শৈশব আর কৈশোরের হাতছানির মাঝামাঝি সময়ে সত্তরের দশকের উত্তাল শিল্পনগরী তার জঙ্গী ব্যক্তিত্বের উগ্র প্রকাশে আমাকে খুব অবাক করে দিয়েছিল৷ চির ঘরকুনো স্বভাবের আমি ওই সাংঘাতিক মিলিট্যাণ্ট সময়ের সঙ্গে নিজেকে কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম না৷
    স্কুলেও বন্ধু তৈরি করতে অসুবিধে হচ্ছিল৷ কলকাতা থেকে এসে ভর্তি হলাম ক্লাস ফোর, কো-এডুকেশন। সেখানে মেয়েরা সাংসারিক এবং শারীরিক ব্যাপারস্যাপারে আমার থেকে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। এবং ফোরেই তাদের বেশির ভাগেরই একটা করে প্রেম চালু হয়ে গিয়েছিল। আমি হাঁদার মত তাদের বিতরিত জ্ঞান শুনতাম। ছেলেরা বেশির ভাগই মারকুটে, এবং আমার মত নেকু পিতপিতেকে পাত্তা দিতে একেবারেই নারাজ।
    অতএব বই৷ কিনে, চেয়ে, ভিক্ষে করে৷ বাংলা, ইংরেজি যা পাওয়া যায়৷ সত্যি বলতে কলকাতা ছাড়ার আগে ইংরেজি বই তেমন করে পড়ি নি৷ যদিও বাবার দৌলতে বাড়িতে প্রচুর ইংরেজি বই ছিল৷ উঁচু দরের সাহিত্য থেকে বাজার চলতি বেস্টসেলার, সবই৷ কী যেন অনীহায় আমি ছুঁয়েও দেখতাম না৷ অনুবাদে অজস্র পড়েছিলাম অবশ্য৷ বাবা সব সময়েই বলতেন, আসলটা পড়ে দেখো, আরও অনেক ভালো লাগবে৷ কী জানি কেন একটা ইংরেজি ভীতি ছিল তখন, সাহস পেতাম না৷ একদিন গরমের ছুটির দুপুরে বোর হতে হতে আর না পেরে বইয়ের আলমারি থেকে একখানা ইংরেজি বই টান দিয়ে বার করেই ফেললাম৷ ভাবখানা অনেকটা, দেখিই না চেষ্টা করে বুঝতে পারি কি না৷ ব্যস, সর্বনাশের আর একটা দরজা খুলে গেল৷
    বারো থেকে পনেরো বছর বয়েসের মধ্যে আমি একদিকে পড়ছি ইনিড ব্লাইটন, অন্যদিকে গুলে খাচ্ছি অ্যাগাথা ক্রিস্টি৷ ডিকেন্সের ইংরেজি পুরোটা না বুঝলেও গল্প আমায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে পাতার পর পাতায়৷ ইংরেজিতে হাঁপিয়ে পড়লে আবার ফিরে আসছি বাংলায়৷ পাঁজি থেকে বঙ্কিম রচনাবলী, সবই আমার খাদ্য৷ আট বছর বয়েসেই বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর অপূর্ব সংস্কৃতঘেঁষা বাংলা দিয়ে আমায় মোহিত করে ফেলেছিলেন, যদিও দুর্গেশনন্দিনী পড়তে গিয়ে তৈজসপত্রের মানে তখন নিজের বুদ্ধিতে বার করেছিলাম তেজপাতা, কারণ সুন্দরী বিমলা এবং বিদ্যাদিগগজের কাণ্ডকারখানা ছেড়ে অভিধান দেখতে ওঠার ইচ্ছে সেই সময় আদৌ ছিল না৷ কৈশোরে এসে আবার তাই নতুন করে পড়ছি দুর্গেশনন্দিনী, রাজসিংহ, এবং যেহেতু তখনও প্রাপ্তবয়স্ক সমালোচকের মন তৈরি হয় নি, তাই ভীষণ ভালো লাগছে যুগলাঙ্গুরীয়, ভীষণ ভালো লাগছে রাধারাণী৷ ততদিনে মুখস্থ হয়ে গেছে রাণুর কথামালা, প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় ভাগ৷ পুজোয় গোগ্রাসে গিলছি দেব সাহিত্য কুটির থেকে প্রকাশিত ছোটদের অসামান্য সব পূজাবার্ষিকী, আবার বড়দের পত্রিকাগুলোতে তখন রোমাণ্টিক আভাস ছড়িয়ে ধীরে ধীরে ক্রমশ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে ফুটে উঠছেন বুদ্ধদেব গুহ, শীর্ষেন্দু, সুনীল৷ পুরনো বাঁধানো দেশ পত্রিকায় বুঝে না বুঝে পড়ে যাচ্ছি বনপলাশীর পদাবলী, পড়ছি জল পড়ে পাতা নড়ে৷ পড়লাম বরফসাহেবের মেয়ে৷ রমাপদ চৌধুরি, গৌরকিশোর ঘোষ. বিমল কর, এই সব নামগুলো তখন মনে গেঁথে গেঁথে যাচ্ছে৷ প্রতিভা বসুর মিষ্টি মিষ্টি প্রেমের গল্পগুলো পড়তে কী যে ভালো লাগছে৷ সমুদ্র হৃদয় পড়ে চোখের জল আর আটকাতে পারি না৷ ইস, ভালোবাসা এমন হয়? এত কষ্টের? মার বিয়েতে পাওয়া বইগুলো তো কবেই মলাট থেকে মলাট পর্যন্ত পড়া হয়ে গেছে, এমন কী গীতগোবিন্দের অনুবাদ অবধি৷ কিচ্ছু বুঝি নি, স্বাভাবিকভাবেই, কিন্তু মূল সংস্কৃতটা কানে অদ্ভুত ঝংকার দিত৷
    তখন রোজ নিজের মধ্যে নতুন নতুন বদল টের পাচ্ছি, বাইরেও, ভেতরেও৷ আশ্চর্য রকম মুড সুইংস হচ্ছে৷ এই মন ভাল, এই ভীষণ খারাপ৷ আমার এই হরমোন তাড়িত মুডের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে অন্যরা হয়রান৷ একা থাকতে যে এত ভালো লাগে সে কথা আগে জানতাম না৷ ডায়রিতে কবিতা লিখছি এলোমেলো, টীন এজ কনফিউশনে ভরতি সে গুলো৷ কিছু গদ্য লেখারও চেষ্টা করছি কিন্তু নিজেই বুঝতে পারছি কিচ্ছু হচ্ছে না৷ যদিও একটা স্বপ্ন মনের মধ্যে তখনই ডানা মুড়ে বসে পড়েছিল৷ ওখান থেকেই হররোজ জোরে জোরে পাখা ঝাপটাত৷ কানে কানে শুধু ফিসফিস করত, হবে, হবে, চালিয়ে যাও৷ একদিন নামী পত্রিকায় তোমার লেখা বেরোবে৷ বেরোবেই৷ খুব যে বিশ্বাস করতাম স্বপ্নটাকে তা নয়৷ তবে ততদিনে বই পড়ার মত লেখাটাও বেঁচে থাকার অংশ হয়ে গিয়েছিল৷ পাতে দেওয়ার মত হোক আর না-ই হোক, অন্তত ডায়রির পাতা ভরাতেও কিছু ছাইভস্ম রোজই লেখা হত৷ কাউকে দেখাতাম না যদিও৷ কী যে এক প্রবল লজ্জা ছিল নিজের লেখার কথা অন্যকে জানাতে৷ কেউ দেখতে চাইলে ছুটে পালিয়ে আসতাম৷ লুকিয়ে পড়তাম একেবারে শোওয়ার ঘরে৷ অথচ না লিখেও থাকতে পারতাম না৷
    লেখার বিষয়ের অভাব তো ছিল না৷ তখন তো সব কিছুই খুব চড়া রঙে আঁকা৷ যেটা কালো সেটা কুচকুচে কালো, সেটা সাদা সেটা একেবারে দাগহীন সাদা৷ কোনো মাঝামাঝি ধূসরের অবকাশ ওই বয়েসে ছিল না৷ বড়রা তখন একধার থেকে সবাই নির্ভেজাল শত্র্রুপক্ষ, কেউ আমাকে বোঝে না৷ অভিমান আর অভিযোগের স্তূপ নিত্যই মনে জমে জমে পাহাড় হয়, সেগুলোর বেরোবার পথ একটাই৷ কলমের ডগা আর ডায়রির পাতা৷
    এরই মধ্যে আস্তে আস্তে শরীরের আকার আকৃতি পালটে যাচ্ছিল৷ সেই সঙ্গে পালটে যাচ্ছিল বিপরীত লিঙ্গের হাবভাব৷ এটা আবার সম্পর্ক অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন৷ যেমন, গুরুজনরা ক্রমশ আরও বেশি অনুশাসনের মধ্যে বেঁধে ফেলতে চেষ্টা করছিলেন৷ হাঁটু দেখানো ফ্রক পরা চলবে না, জামার ফিট যথেষ্ট ঢিলেঢালা হতে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি৷ আবার সমবয়সী বা সামান্য একটু বড়দের চোখে কেমন একটা অন্য রকমের চাউনি, যেটা একটা না বোঝা ভালো লাগা অবশ্যই এনে দিত, কিন্তু একই সঙ্গে একটু ভয় ভয়ও করত৷ সব চেনা চেনা ছেলেগুলো কেমন যেন বদলে যাচ্ছিল৷ সব সময় সেটা খুব একটা ভালো লাগত না৷ তবে সবথেকে মুশকিল করত অজানা অচেনা তখনকার আমার বয়েসের তুলনায় আধবুড়ো বা বুড়োদের দল৷ ওরাই আমায় শিখিয়েছিল সিনেমা হলে মা বাবার সঙ্গে গেলেও শরীরের কোনো অংশে হঠাৎ অপরিচিত কনুই ঘষে যেতেই পারে, সজোর সুযোগসন্ধানী চিমটি পড়তেই পারে নরম কিশোরী মাংসে৷ এমন কি প্রণাম করে উঠে দাঁড়াতে গেলেও আশীর্বাদী হাত পিঠ থেকে পিছলে অন্য কোথাও ছুঁয়ে যেতেই পারে৷
    এও একরকমের বই পড়া৷ সে বই জীবনের ছাপাখানায় হাতে গরম ছাপা৷ নিজে নিজে পড়ে বুঝে নিতে হয়৷ বুঝে নিচ্ছিলাম৷ কাগজের বইয়ে পাওয়া শিক্ষার তুলনায় এই শিক্ষা অনেক সহজবোধ্য ও তাৎক্ষণিক৷ শৈশবের তলানিটুকুকে ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিতে এর তুলনা পাওয়া ভার৷ চারদিক থেকে সবাই বুঝিয়ে দিচ্ছিল- ‘মেয়ে, মেয়ে, তুমি শুদ্ধু একটা মেয়ে, তোমার শরীরটাই তোমার পরিচয়’৷ ভাষাগুলো আলাদা আলাদা, ওই যেমন বললাম আগেই৷ বাড়ির বড়রা একটু গলা ভারি করছেন, ‘তুমি এখন বড় হয়ে গেছ, আর কতবার বলতে হবে?’ আসলে আমি তো বড় হই নি, বেড়ে উঠেছে আমার শরীর৷ কিন্তু মেয়েদের যে ওই দুটো সমার্থক৷ রাস্তায় মায়ের সঙ্গে মাথা নিচু করে, কাঁধ উঁচু করে, কুঁজো হয়ে হাঁটতে হাঁটতে ঠিক কানে এসে ঢুকছে অকথ্য অশ্রাব্য টিপ্পনী৷ সব যে অক্ষরে অক্ষরে বুঝছি তা নয়, কিন্ত যতটুকু বুঝছি তাই যথেষ্ট৷ কান লাল হয়ে যেতে যেতেও ভাবছি, মা শোনেন নি নিশ্চয়ই, শুনলেও বুঝতে পারেন নি৷ হায় রে পোড়া মেয়েকপাল, তখন কি আর জানতাম যে মাকেও এককালে পেরিয়ে আসতে হয়েছে এই একই কাঁটা বেছানো অগ্নিসরণি?
    ইংরেজিতে টীন বা অ্যাডোলেসেণ্ট বললে শুনতেও বেশ কানভরা লাগে, বেশ একটা গোছানো সময়ের হিসেবও পাওয়া যায়৷ আমাদের এই কৈশোরটা যেন একটা কীরকম ধোঁয়াটে ব্যাপার৷ বাল্যকাল ও যৌবনের মধ্যবর্তী সময়৷ বাল্যকাল না হয় তাও কিছুটা বোঝা গেল, কিন্তু যৌবন বস্তুটিকে কি আজ পর্যন্ত কেউ ঠিকঠাক ধরতে পেরেছে? কবে যে সে আসে? কোথায়ই বা আসে? সে কি শরীরের না মনের? না কি সে শুধুই বয়েস বাড়ার আরেক নাম? কবে যে বালিকাবেলা গিয়ে কিশোরীকাল শুরু হয় আর কবেই যে কিশোরী পরিণত হয় লোভনীয় যুবতীতে মেয়ে নিজে কি বোঝে?
    মে মাসের শেষে মাধ্যমিক পরীক্ষার পাট চুকল৷ জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা৷ আমার কোনো টেনশন নেই৷ বাবা সঙ্গে নতুন গল্পের বই নিয়ে যেতেন, দুটো পেপারের মাঝখানে টিফিন ব্রেকে পড়তে পড়তে খেতাম৷ বন্ধুদের চোখ কপালে৷ তাদের মা বাবাদের তো আরও৷ দুটো পরীক্ষার মাঝখানে লম্বা গ্যাপ ছিল, আমি আর বাবা গিয়ে চিত্রালয়ে শোলে দেখে এলাম৷ কাঁহাতক অত পড়া যায়? মনে মনে তখনও বালিকাই ছিলাম বোধহয়৷ যদিও বয়েসের গুনতিতে পূর্ণ কিশোরী৷ বললাম না, হিসেবটা বড্ড গোলমেলে৷
    পরীক্ষা শেষ হতেই বাড়িতে একটা বিয়ের ধুম লাগল৷ আমাদের প্রজন্মের প্রথম বিয়ে৷ দশ দিন ধরে তুমুল হই চই৷ যত তুতো ভাই বোন সব এক সঙ্গে ৷ রোজ সারা দিন শাড়ি পরে থাকা৷ সাজের চূড়ান্ত৷ এবং সেই সাজের এফেক্ট আড় চোখে যাচিয়ে নেওয়া৷ কিশোরীবেলা ফুরিয়ে আসছিল, আমি টের না পেলেও৷
    দশ দিন পরে বাড়ি ফিরে যখন শাড়ি ছেড়ে আবার পুরোনো স্কার্ট ব্লাউজ পরলাম, পা দুটো মনে হল যেন বড্ড ঢ্যাঙা লম্বা, বড্ড ফ্যাটফেটে সাদা৷ কী বিচ্ছিরি৷ আমার নিজেরই চোখে লাগছিল৷ তাড়াতাড়ি স্কার্ট খুলে আবার শাড়ি৷ মা কে বললাম, ‘আমি আর ফ্রক পরব না মা৷ এখন থেকে বাড়িতেও শাড়িই পরব৷’ মা একটু অবাক হলেন সম্ভবত৷ এত তাড়াতাড়ি বাড়িতে শাড়ি ধরার কী দরকার, এরকম কিছু একটা হয়তো বলেওছিলেন৷ আমার বয়েস তখন ষোল, আর কদিন পরেই সতেরো হবে৷
    অজান্তে আমার কিশোরীবেলা বোধহয় সেদিনই শেষ হয়ে গিয়েছিল৷
  • শঙ্খ | 127.194.255.115 | ১৮ জুন ২০১৫ ২২:৩৮682223
  • বাঃ!

    আরেকটু হোক না, বড্ড তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল যেন?
  • | ১৮ জুন ২০১৫ ২২:৪৬682240
  • বাহ।
    আপনার সাথে আমার ছোটবেলার কিছু কিছু মিল আছে দেখছি।
  • | ১৮ জুন ২০১৫ ২২:৪৬682234
  • বাহ।
    আপনার সাথে আমার ছোটবেলার কিছু কিছু মিল আছে দেখছি।
  • ranjan roy | 132.162.173.207 | ১৮ জুন ২০১৫ ২২:৫১682241
  • পড়ছি, বেশ লাগছে।
  • অকার | 192.66.18.179 | ১৯ জুন ২০১৫ ১০:৩৫682242
  • আমরা ছোটোবেলায় ইংরেজি পড়তাম বাংলায়। ইয়ার্কি, না সত্যি। গ্রামার বইয়ে শুধু সংজ্ঞাগুলো দেওয়া থাকতো ইংরেজিতে, আর পুরোটা বোঝানো হত বাংলায়। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রও হত বাংলা ইংরেজি মেশানো। ক্লাসে দিদিরা বোঝাতেনও বাংলায়। হ্যাঁ, দিদিই বলতাম আমরা শিক্ষিকাদের, ও সব ম্যাম, মিস শুনিই নি কোনো দিন।

    আমাদের ইংরেজি উচ্চারণও তাই ছিল বাংলার মত।

    ইংলিশ মিডিয়াম বলে যে একটা বস্তু হয় তাই তো জানতাম না। সবাই ইস্কুলে যায়, পড়াশোনা করে, নিশ্চয়ই একই বই পড়ে। তার যে আবার ভাগাভাগি আছে কেউ তো বলে দেয় নি। যাই হোক, সে অন্য কথা।

    ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত এমনি চলল। সিক্সে প্রাইমারি স্কুল ছেড়ে সবাই গিয়ে পড়লাম হাই স্কুলে। ক্লাসে মেয়ের সংখ্যা অনেক বেশি, কেউ চেনা, কেউ কেউ অচেনা, অন্যান্য শাখা থেকে এসেছে। কারো সাথে ভাব হল, কারো সাথে শুধু পরিচয়। নতুন নতুন দিদিরা এলেন সব, আমাদের মা-দেরই মতন। একটু ঢিলেঢালা, একটু স্ট্রিক্ট মেলানো মেশানো। আমরা মনের আনন্দে ক্লাসে চ্যাঁচাই, টেবিল পিটিয়ে কোরাসে গান গাই, দিদিরা ক্লাসে এসে তিন চার বার বলার পর চুপ করি, যদিও পিছনের বেঞ্চগুলোতে একটা গুনগুন চলতেই থাকে।

    যেদিন প্রথম অনুভাদি আমাদের ইংরেজি গ্রামার পড়াতে এলেন, আক্ষরিক অর্থেই আমরা সবাই হাঁ। ওই বয়সী এ রকম স্মার্ট কোনো মহিলাকে আমরা কেউ তার আগে দেখি নি। লম্বা পাতলা কালো ইষৎ রুক্ষ চেহারা, টান করে খোঁপা বাঁধা, পাট পাট করে প্লিট দিয়ে পরা শাড়ি, আর উঃ কী স্টাইল কী স্টাইল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। শুনলাম দেরাদুনের প্রবাসী বাঙালী, কনভেণ্ট শিক্ষিতা, বিয়ে হয়ে এসে পড়েছিলেন আমাদের আদ্যোপান্ত মধ্যবিত্ত টাউনশিপটিতে। কনভেণ্ট ব্যাপারটা বাড়ি গিয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করে বুঝতে হয়েছিল অবশ্য।

    ব্যক্তিত্ব দেখেই তো মুগ্ধ, তার সঙ্গে যোগ হল ওঁর ইংরেজি উচ্চারণ। ইংরেজি যে ওইভাবে বলতে হয়, বলা যায় তা অনুভাদিকে না পেলে আমি বোধহয় আদৌ জানতাম না। অবশ্য প্রথমটায় উনি ক্লাসে এসে যে কী বলতেন কেউ তার বিন্দুবিসর্গ বুঝতাম না। হাঁ করে তাকিয়ে থাকতাম সবাই। ওই উচ্চারণ শুনিই কোনোদিন। প্রথম প্রথম সবার সে কী ফিসফাস,- “অনুভাদি না, এ-কে আ বলেন”। টিচারকে উইশ করা উনি আমাদের শিখিয়েছিলেন। বাংলা মাধ্যমে কে আর অত কেতা শেখায়! দিদিমণি ক্লাসে ঢুকলে হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়ানোই যথেষ্ট। আর স্কুলের বাইরে? আমার ক্ষেত্রে বলতে পারি, পাশের বাড়ির মিসেস গুপ্তা একবার আমার জন্মদিন জেনে বলেছিলেন “মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্য ডে”, তার প্রতিক্রিয়ায় আমি মায়ের শাড়ির আঁচল পাকাতে পাকাতে নিরুত্তরে মা-র পেছনে লুকিয়েছিলাম।

    অদ্ভুত ব্যক্তিত্ব ছিল। খুব যে শাসন করতেন তা নয়, কিন্তু সবাই যমের মত ভয় পেত। অন্য দিদিরা ক্লাসে এসে চারবার টেবিলে ডাস্টার ঠুকেও যে আমাদের কব্জা করতে পারতেন না, সেখানে ইংরেজি ক্লাসে পিন পড়লে শোনা যাবে। আগের দিদি ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন, অনুভাদি হয়তো করিডরে, এখনও ঢোকেন নি, ক্লাসে কিন্তু টুঁ শব্দটি নেই।

    ইংরেজিতে খারাপ ছিলাম না, কিন্তু অনুভাদিকে পেয়ে বিষয়টাকে ভালোবেসে ফেললাম। অবশ্য প্রথমে সেটা অনুভাদিকে ভালোবাসা দিয়েই শুরু হয়েছিল। সদ্য কৈশোর তখন, নকল করার জন্য সামনে একজন আইডলের ভীষণ দরকার। অনুভাদি তাঁর ব্যক্তিত্ব, সাজপোশাক, কথা বলার ধরন, সব মিলিয়ে সেই আইডলটা হয়ে উঠেছিলেন। আমার তখন সব কথায় সব কিছুতে উদাহরণ শুধু অনুভাদি। আমার আড়াই বছরের বড় ইংলিশ মিডিয়াম জেঠতুতো দিদি গম্ভীর ভাবে বিশেষজ্ঞের মতামত দিল-ওকে বলে ক্রাশ! কে জানে হবেও বা। ক্রাশ কাকে বলে তা-ই জানি না, তবে ও তো বড়, ইংলিশ মিডিয়াম, নিশ্চয়ই যা বলেছে ঠিকই বলেছে।
    অনুভাদিও আমাকে একটা অদ্ভুত ভালোবাসতেন। খুব উৎসাহ দিতেন। অনেক আশা ছিল আমার ওপরে ওঁর। যার জন্য একটু ভুল করলেও ক্ষমা করতে পারতেন না। আমিও চেষ্টা করতাম প্রাণপণে ওঁকে খুশি করার। আজ এই বয়সে এসে ভাবি, অন্য কিছু বিষয়ে দিদিরা যদি এর সিকির সিকি উৎসাহটুকুও দিতেন, তাহলে হয়তো অংক বা ফিজিক্সের রেজাল্ট আমার অত খারাপ হত না।

    অংকের দিদি ক্লাসে শুধু অংক করিয়ে দিয়ে চলে যেতেন, অংকের ভেতরের মজাটা কোনোদিন স্কুলে থাকতে আমি বুঝলামই না। শুধু শুধু একটা আতংক তৈরি হয়ে গেল। আর ফিজিক্সের কথা তো যত কম বলা যায় ততই ভালো। আমরা পড়তাম ভৌত বিজ্ঞান বলে। ভৌতিকই ছিল আমার কাছে। দিদির নিজের জ্ঞানের বহর দেখানোর ক্লাস। দিনের পর দিন শুধু পড়া না পেরে দাঁড়িয়ে থেকেছি। পরের দিকে জেদ করে পড়া তৈরিই করতাম না। কী হবে করে, উনি তো ভালো বলবেন না। যেখানে আটকাচ্ছে সেটা সহজ করে বুঝিয়েও দেবেন না।- ‘শুধু ইংরেজিতে ভালো হলেই হবে, ভালো মেয়ের এই তো অবস্থা’- বলে বিদ্রূপ করবেন। তার চেয়ে দাঁড়িয়েই থাকি! এটা যে নিজেরই পায়ে কুড়ুল মারা হচ্ছে সেটা বোঝার মত বুদ্ধি ওই বয়সে ছিল না।

    আরো একটা জিনিস হত, টিচারে টিচারে রেষারেষির ফলটা এসে পড়ত বেচারা ছাত্রীদের ওপর। অনুভাদি এমনিতেই ওই আদ্যন্ত বাঙালী স্টাফরুমে একটু বেমানানই ছিলেন। হয়তো কেউ কেউ একটু ঈর্ষাও করতেন, জানি না। কিন্তু একটা প্রতিযোগিতা হত, সেটা আবছা আবছা বুঝতাম। ব্যপারটা অনেকটা এই রকম, -‘ও আচ্ছা, অনুভা তোমায় ভালো ছাত্রী বলেছে বুঝি, দেখব কেমন ভালো তুমি। কাঁদিয়ে না ছেড়েছি তো আমি অমুক নই।‘ এটা যে কতখানি অস্বাস্থ্যকর ছিল সেটা এখন বুঝি। তখন অসহায় রাগ আর কান্না ছাড়া রাস্তা জানা ছিল না। আমি ইংরেজির দিদিমণির প্রিয় তো আরেকজন অংকের দিদিমণির প্রিয়। এবার এই দুজনকে নিয়ে চলত দিদিমণিদের কম্পিটিশন।

    আমার নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা ছিল ইংরেজি ক্লাস। অনেকের ইংরেজির নামেই আতংক ছিল, কিন্তু আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচতাম। জানতাম, এখানে আমার ভুল হবে না, হলেও কেউ ব্যঙ্গ করবে না, ভুলটা শুধরে বুঝিয়ে দেবে। চিরকালের বইপোকা আমি আস্তে আস্তে বাংলা বইয়ের সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি উপন্যাসের জগতে ঢুকছিলাম। পড়ে ইংরেজি বুঝলেও শোনার জায়গাটা তখনও নড়বড়ে ছিল। আমাদের সেই ছোট্ট শহরে প্রতি রবিবার সকালে নটার শোয়ে ইংরেজি সিনেমা দেখানো হত হলে। বাচ্চাদের সিনেমা এলে আমাকে নিয়ে যাওয়া হত। সংলাপ একবর্ণ বুঝতাম না। পাশের লোকের হাসি দেখে আমিও মুখে বোকা বোকা একটা নকল হাসি ঝুলিয়ে নিতাম, পাছে সবাই ধরে ফ্যালে যে আমি কিছুই বুঝছি না। আস্তে আস্তে দেখলাম কথাগুলো ধরতে পারছি। অনুভাদি যে ভাবে উচ্চারণ করেন সেই ভাবেই তো এরাও কথা বলছে। আগ্রহটা বেড়ে গেল।

    অনুভাদির খোলাখুলি উৎসাহ, আমার ওপর ওঁর ভরসা, আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে যেত। আর আস্তে আস্তে একটা জেদও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এটা আমার সাবজেক্ট, এখানে আমি কাউকে কাছেধারে ঘেঁষতে দেব না। আমি অনুভাদি হব।

    ক্লাস সিক্স থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত টানা পড়েছি ওঁর কাছে। খুব আশা ছিল অনুভাদির, আমি ইংরেজিতে লেটার পাব। পাই নি। স্কুলের মধ্যে, স্টিল প্ল্যাণ্টের পরিচালনাধীন সব গুলো স্কুলের মধ্যে ইংরেজিতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম, কিন্তু লেটার পাই নি।বাচ্চাদের মত কাঁদতে দেখেছিলাম আমাদের কঠিন কঠোর অনুভাদিকে সেদিন। লেটার আমি পেতাম না। কোনোদিনও কাউকে বলি নি যে কথাটা, আজ বলছি। একটা ষোল নম্বরের প্রশ্ন আমি ভুল লিখে এসেছিলাম। দুটি চরিত্রের নাম আমি উলটো পালটা করে ফেলেছিলাম। লেটার পাওয়া সম্ভব নয় পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি এসেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম। বই খুলে দেখেই আমার বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠেছিল, কিন্তু তখন আর কিছু করার ছিল না। অনুভাদিকে বলার সাহস পাই নি।

    আর একদিনই শুধু অনুভাদির চোখে জল দেখেছিলাম। যেদিন ইংরেজি অনার্সের রেজাল্ট নিয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম শুধু ওঁকে দেখাতে। প্রণাম করে উঠে হাতে মার্কশীটটা দিয়েছিলাম। “দিদি, সেদিন পারি নি, এবার পেরেছি।“ মাথায় হাত রেখে ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলেছিলেন।

    জানি না, বেঁচে আছেন কি না অনুভাদি। আশির এদিক ওদিক হবেন এখন, যদি থাকেন। আন্দাজ। সঠিক বয়স তো জানতাম না। শেষ দেখা হয়েছিল সেও বত্রিশ বছর হল। উনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন আমি ইংরেজি নিয়ে কাজ করব, হয়তো লেখালেখিও করব। দিদি, লেখালেখিটা বাংলাতেই করি, কিন্তু পেশা বলে যাকে গ্রহণ করেছি, সেই অনুবাদের জগতে আপনার শিক্ষা, আপনার আশীর্বাদই আমার পুঁজি। আপনি ছিলেন বলেই আজ আমি, এই আমি হয়েছি। প্রণাম নেবেন, ভালো থাকবেন,দিদি।
  • সিকি | ১৯ জুন ২০১৫ ১০:৪৯682243
  • পড়ছি।
  • kumu | 132.161.17.180 | ১৯ জুন ২০১৫ ১৩:৩৭682244
  • আপনি অত্যন্ত ভাগ্যবান যে একজন অনুভাদির দেখা পেয়েছিলেন।
  • AS | 125.187.57.89 | ১৯ জুন ২০১৫ ১৪:৫৪682245
  • এ যে একদম আমার ই কথা আরো লিখুন
  • ঋজু গাঙ্গুলি | 127.198.61.52 | ১৯ জুন ২০১৫ ১৮:৪১682213
  • ভেসে চলুক এই নৌকো| অপেক্ষায় রইলাম|
  • অকার | 192.66.27.112 | ১৯ জুন ২০১৫ ২০:৪৯682214
  • প্রত্যাশার চাপ বড্ড ভারি। আমি নিতে পারি নি কোনোদিন।
    পারিবারিক জটিল রাজনীতির শিকার হয়েছিলেন আমার বাবা, কিছু একটা প্রমাণ করে দেখানোর তাড়না তাঁকে আজীবন ছুটিয়ে মেরেছিল। পেরেওছিলেন অনেকটাই, যদিও সে গল্প এটা নয়।
    আমি ছিলাম তাঁর সাগর ছেঁচা ধন, অন্তরের অন্তরাত্মা। কিন্তু। যারা তাঁকে এককালে উপহাস করেছিল, তাদের মুখে ঝামা ঘষে দেওযার উপযুক্ত এক্সপেরিমেণ্ট তিনি আমাকেই মনে করেছিলেন। এবং আশাহত হয়েছিলেন। বার বার।
    বড় আদরে বেড়ে উঠেছিলাম। কত ব্যঙ্গ শুনতে হয়েছে তার জন্য। আমাকেও, বাবাকেও। মেয়েকে শুধু বই কিনে দিলেই হবে, সংসারের কাজ শেখাতে হবে না? সারাদিন বই মুখে বসে থাকলে চোখ খারাপ হয়ে যাবে তো, তখন চশমা পরা মেয়ের বর জুটবে? আরো কত কী। কান করি নি আমি, পাত্তাও দেন নি বাবা। কিন্তু স্বপ্ন দেখতেন, আমি একদিন তাঁর মুখ ঊজ্জ্বল করে এইসব মুখগুলোকে থামিয়ে দেব। পারি নি।
    স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাগুলোয় আমি কখনো প্রথম হই নি। হাফইয়ার্লিতে হয়তো হয়ে যেতাম কখনো সখনো। ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল তারপর আদাজল খেয়ে লাগত। অ্যাানুয়্যালে যথারীতি সেই ফার্স্ট। আমার কোনো মাথাব্যথাই ছিল না। মুখস্থবিদ্যার বাহাদুরিকে নম্বর দিয়ে মাপার অর্থ আমি তখনো বুঝতাম না, আজও বুঝি না। দিদিরা বলতেন আমার মধ্যে কম্পিটিটিভ স্পিরিটের অভাব। কে জানে সেটা কী বস্তু, খায় না মাথায় মাখে।
    ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে উঠতে রিপোর্ট কার্ডে পোজিশন লেখা টুয়েণ্টি-সিক্সথ। নাচতে নাচতে বাড়ি নিয়ে এলাম। এক আর ছাব্বিশের তফাৎ আমি কী জানি! বাড়িতে প্রচুর আত্মীয়স্বজন, সেখানে সেই তাঁদের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। সবাই উদগ্রীব বাবার মেয়ের রেজাল্ট জানতে। আমি একগাল হেসে ছাব্বিশতম স্থানপ্রাপ্তির কথা ঘোষণা করলাম। রিপোর্ট কার্ড দেখে বাবার মুখ পাথরের মত হয়ে গেল। আমার সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ।
    আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করলাম আমার ভালো রেজাল্ট করাটাই সব নয়, বাবার কাছে সাংঘাতিক জরুরি আমার ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া। সবার আগে থাকা। সত্যি বলছি, আমি কোনোদিনও চেষ্টাই করি নি। প্রতি বছর রেজাল্ট বেরোনোর দিন তুমুল অশান্তি হত বাড়িতে। তবুও পরের বছর তা আমাকে ভালো থেকে আরো ভালোর দিকে নিয়ে যায় নি। শুধু মনের মধ্যে পুঞ্জীভূত অ্যাডোলেসেণ্ট অভিমান আমাকে দিয়ে ভরিয়ে নিত ডায়রির পাতার পর পাতা।
    মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশন হল, কিন্তু লেটার নেই, স্টার নেই, নম্বরও বিরাট কিছু নয়। বাবা মাটিতে মুখ ঘষে গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদেছিলেন। আমার সামনে নয়, কিন্তু পরে আমি জেনেছিলাম। ভীষণ ইচ্ছে ছিল আমি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের পরীক্ষায় বসি, আমি রাজি হই নি। আমার ক্ষমতা, বা অক্ষমতা আমি খুব ভালো করে জানতাম। আমার কমজোরি কাঁধ প্রত্যাশার ওজনই বইতে পারে না, আমলাগিরির দায়িত্ব সামলানো তো তার সাধ্যের অতীত।
    অনার্সের রেজাল্ট হয়তো কিছুটা হলেও বাবাকে খুশি করতে পেরেছিল।
    আমাদের বাড়িটা ছিল একটা দ্বীপের মত। যা হবে পরিবারের সবাই একসঙ্গে, নইলে হবেই না। সব সিনেমা দেখতাম আমরা, সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শীতের সার্কাস, কালীপুজোর পরে সাতদিনব্যাপী যাত্রানুষ্ঠান, সব-সব। কিন্তু বাড়ির সবাই মিলে। একা আমি কিচ্ছু করতে পারতাম না, অনুমতি ছিল না। বন্ধুদের বাড়ি যাওয়া বারণ, বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখা বারণ, স্কুল থেকে এক্সকার্শনে যাওয়া বারণ। কলেজে ভর্তির সময় আমায় পই পই করে বলা হয়েছিল সিনেমা না যেতে, উইকএণ্ডে হস্টেল থেকে বাড়ি এলেই তো সেই সিনেমাগুলো আমরা একসঙ্গেই দেখতে পারি।
    মুশকিল হল, বাঁধন বেশি শক্ত হলেই সেটা ছেঁড়ার ইচ্ছে পেয়ে বসে। বাবা ভাবতেই পারেন নি আমি তাঁর কথার অবাধ্য হতে পারি। কিন্তু হয়েছিলাম। প্রত্যাশার ভার আমি বইতে পারি নি।
    সবথেকে বড় আশাভঙ্গ হল বোধহয় আমার বিয়ের পর। বিয়ের বছর ঘোরার কিছুদিন আগে বুঝলাম, সন্তানসম্ভাবনা। সবাই অসম্ভব উত্তেজিত। কত রকম পরিকল্পনা হয়ে যাচ্ছে চারদিকে। কিন্তু বাংলা গল্প-উপন্যাসের নিয়তি বোধহয় তখনও অলক্ষ্যে হেসেছিলেন।দেড় মাসের মাথায় প্রচণ্ড পেটব্যথা ও তারপরে যমে মানুষে টানাটানির পর জানা গেল গর্ভটি সঞ্চারিত হয়েছিল ফ্যালোপিয়ান টিউবে। একটি টিউব ও একটি বৃহদাকার ফাইব্রয়েড বাদ দিয়ে হিমোগ্লোবিন চার বানিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
    বাবা ভীষণ ভালো রোগীর সেবা করতেন। আমাকে তো তুলোয় মুড়ে বরাবরই রেখেছিলেন, এখন একেবারে বুকে করে সারিয়ে তুললেন। আশা ছিল, এবার যা হয়েছে হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যে একটি নাতি বা নাতনি নিশ্চয়ই আসবে। আমরা নিজেরা খুব একটা চিন্তিত ছিলাম না, হলে হবে না হলে নেই গোছের মানসিকতা। কিন্তু চারদিকের চাপে একটা সময়ে ডাক্তার না দেখিয়ে আর পারা গেল না, এবং জানা গেল যে প্রথম বারের টিউব্যাল প্রেগন্যান্সির দরুণ ঘটিত সংক্রমণ আমার সবেধন নীলমণি অবশিষ্ট টিউবটিকেও বেশ গুছিয়ে আটকে দিয়েছে। যে সময়ের কথা বলছি তখন মাইক্রোসার্জারি এত উন্নত ছিল না। এবং যে বিপুল পরিমাণ অর্থ সেই চেষ্টায় ব্যয় হত তার ছিটেফোঁটাও আমাদের কাছে ছিল না। অ্যাাডপশনের অনুমতি শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া গেল না। অতএব।
    এই খবরটা বাবাকে অদ্ভুতভাবে পালটে দিল। আমার সেই প্রচণ্ড জীবনীশক্তিতে ভরপুর হইহুল্লোড়ে বাবা দিনেদিনে কেমন চুপচাপ হয়ে গেলেন। বেঁচে থাকার আকর্ষণ বা উৎসাহ সবই যেন চলে গেল। শেষ প্রত্যাশা বোধহয় আমার কাছ থেকে এটাই ছিল।
    মাত্র সাতষট্টি বছর বয়েসে বাবা যখন কাউকে এতটুকু বুঝতে না দিয়ে, একটু সুযোগ না দিয়ে চলে গেলেন, কী জানি নিজের ভেতরে কতখানি তাঁর প্রত্যাশাপূরণ হয়েছিল, আর কতটা ছিল হতাশায় ভরা। আমি শুধু আজও হারিয়ে যাওয়া নাকছাবিটাই খুঁজে বেড়াই হলুদ বনে বনে।
  • কল্লোল | 111.63.72.249 | ১৯ জুন ২০১৫ ২০:৫৪682215
  • অকার। আমার সেলাম নেবেন।
    অমি জানি টেস্ট টিউব হতে কেমন লাগে।
  • avi | 113.24.86.20 | ১৯ জুন ২০১৫ ২১:০৭682216
  • খুব ভালো লাগলো।
  • dd | 113.227.96.147 | ১৯ জুন ২০১৫ ২১:৩৩682217
  • খুব তীব্র ইমোশনাল ডায়ারী কিন্তু ভাষার দাপানি নেই, বা পার্সোনাল কোনো তিক্ততা। এ ভাবে লেখা খুব কঠিন।

    খুব ভালো লাগছে বা বলি খুব ইমপ্যাক্ট করছে।
  • সিকি | ১৯ জুন ২০১৫ ২১:৫৪682218
  • চুপ করে রইলাম। এভাবেও ছোটবেলা লেখা যায়।

    অকার, আরও লিখুন।
  • kk | 182.56.21.125 | ১৯ জুন ২০১৫ ২২:০৩682219
  • ভারী ভালো লাগলো অকার। আরো লিখুন,প্লিজ।
  • | 183.17.193.253 | ১৯ জুন ২০১৫ ২২:৩৫682220
  • বেশ
  • Div0 | 132.166.181.73 | ১৯ জুন ২০১৫ ২২:৪৪682221
  • অকার, একটানে পড়লাম গোটাটা। কেমন পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা যন্ত্রণারা, জীবনের বিভিন্ন সময়ে এক এক রূপে। কিছুটা হলেও একাত্মবোধ করলাম। সাতষট্টি বছর বয়সের একটা মানুষ এখন পাশের ঘরে ঘুমোচ্ছে। তাকে চিনি, তার দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণাগুলো সমেত। আমরা নিজেরাও ওই সময়ের পাশ কাটিয়ে যাবো একদিন। সেদিনের জন্য এত কষ্ট তুলে রাখতে চাই না। যেভাবে আপনি তুলে রেখেছিলেন।

    আরও লিখুন। হলুদ বনে সবাইই যে কিছু না কিছু হারিয়েছি।
  • কান্তি | 113.57.239.44 | ১৯ জুন ২০১৫ ২৩:০৬682222
  • যেখানে তোমার বড় হওয়ার বেলা শুরু সেখানে আমি বহুকালের বাসিন্দা। তাই তোমার লেখায় খুব চেনা গন্ধ পাচ্ছি।খুব ভাল লাগছে।
    আরো লেখো। আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছি।
  • সে | ২০ জুন ২০১৫ ০১:০১682224
  • অদ্ভুত রকমের ভালো লেখা। বারবার পড়লাম।
  • Bratin | 122.79.39.239 | ২০ জুন ২০১৫ ০১:১৭682225
  • খুব ভালো লাগলো।

    আপনার আরো লেখা পড়তে পারলে ভালো লাগবে। আরো লিখুন।ল
  • Nina | 83.193.157.237 | ২০ জুন ২০১৫ ০৩:৩৪682226
  • অদ্ভুত ভাল একটি লেখা---পড়ে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে ছিলাম--ঠিক কি বলব জানিনা----
  • অকার | 120.227.183.184 | ২০ জুন ২০১৫ ০৭:৩৭682227
  • যাঁরা পড়লেন, যাঁরা মন্তব্য করলেন, সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
  • কুমু | 11.39.40.29 | ২০ জুন ২০১৫ ১০:০৫682228
  • অকার -এই নিকে আগে কোন লেখা পড়িনি।তাই নতুন বলে ধরে নিলাম।অত্যন্ত সুন্দর লেখা।অনেক কঠিন বাস্তবকে তুলে ধরা হয়েছে অনায়াস নিরপেক্ষতায়।টিচারদের মধ্যে রেষারেষি একটি শিশুর জীবন কিভাবে নষ্ট করে তা জানি বলে লেখাটির সাথে নিজেকে য়ুক্ত করা সহজ হল।আরও লিখুন।

    আর একটি কথা-গুরুতে নতুনদের লেখায় যথাযথ সাড়া পাওয়া যায় না বলে একটি অভিযোগ শোনা গিয়েছিল।এই লেখাটি ও তার পাঠপ্রতিক্রিয়া পড়লে সেই ধারণা কিছুটা দূর হওয়ার কথা-অবশ্যই ব্যক্তিগত মত।
  • সিকি | ২০ জুন ২০১৫ ১০:২৮682229
  • ক।
  • byaang | 132.167.113.44 | ২০ জুন ২০১৫ ১২:৩১682230
  • অকার, খুবই ভালো লাগল লেখাটা। আরো লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম। এত সুন্দর ঝরঝরে লেখা, কোথাও হোঁচট খেতে হয় না, এরকম লেখা কমই পড়েছি।
  • Binary | ২২ জুন ২০১৫ ২৩:৩৫682231
  • সময় , ভাষা , ছবি সব নিয়ে-ই খুব কাছাকাছি , যেন ছুঁয়ে দ্যাখা যায়
  • 00 | 181.64.40.102 | ২৩ জুন ২০১৫ ০০:১০682232
  • মন খারাপ করা ভালো লেখা
  • ranjan roy | 132.180.170.196 | ২৩ জুন ২০১৫ ০৯:১৭682233
  • অকার,
    আমার কুর্নিশ!
    যদি সম্ভব হয় আপনার অনুবাদ করা বই পড়তে দেবেন। আমার পড়া বইয়েরও অনুবাদ পড়তে ভীষণ ভাল লাগে।
  • Paallin | 102.233.71.50 | ২৩ জুন ২০১৫ ১৩:৫৫682235
  • বাইনারি বলেই দিয়েছে। সময় ও ছবি সব ছুঁয়ে ছু`য়ে দেখতে পেলুম , অনন্য একখানি লেখা ! অকারের আরো লেখা পড়ার আশায় রইলাম।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন