এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ঝিঙাফুল আকুড়তাকুড়, বড় বৌ লক্ষ্মীঠাকুর

    Titir
    অন্যান্য | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ | ২৬৮০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • cm | 127.247.98.175 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৯:০৫686654
  • এটি একটি অণুপদ্য।
  • cm | 127.247.98.175 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৯:১২686665
  • যারা ভাবসম্প্রসারণে পাকা তাদের কেরামতি দেখার জন্য কেউ দিয়ে থাকতে পারে।
  • i | 134.171.13.42 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৬:১৯686676
  • তিতির তো এখানে আগেও লিখেছেন। গ্রাম বাংলার ঋতুপরিবর্তন, পুজো পার্বণ, অনুষ্ঠান। এই টই এর শিরোনামে সেরকম লেখাই আসছে মনে হয়। সি এম, একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন না।
  • | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৭:০৭686687
  • হুঁ তিতির ভারী সুন্দর লিখেছিলেন।

    লিখুন তিতির।
  • Titir | 138.210.206.145 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৭:৫২686691
  • ছোটাই ও দ,
    অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি একটু আটকে গেছি ছবির জন্য। লেখাটার সঙ্গে ছবি যোগ করতে চাই। কাল অনেক চেষ্টা করে ও ছেড়ে দিয়েছি। প্লীজ কেউ একটু বুঝিয়ে দেবেন।
  • Titir | 138.210.206.145 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৯:১৩686692
  • কবে কোথায় এই কথাগুলো শুনেছিলাম, তা আর মনে নেই। তবে ছোটবেলায় বেড়ার গায়ে ঝিঙেফুল ফুটে উঠতে দেখলে এই কথাগুলো ই মনে পড়ত। এখনো পড়ে। না হলে আর ঐ কথাগুলো লিখব কেন?

    ঝিঙেফুল ফোটে ঠিক সন্ধ্যে হবার আগে আগে।এই বিদেশের লম্বা গোধুলিতে বড্ড মায়াময় লাগে। হলুদ হলুদ ফুলগুলি। রাতের পসরা সাজিয়ে বসে। আর ভোর হবার আগে ভাগেই পাঁপড়ি গুটিয়ে ফেলে। অভিসারের ফসল ফলে নির্দিষ্ট সময়ে। এক হাতের ও বেশী লম্বা লম্বা। ঝুলতে থাকে মাচায়। উদরপুর্তি করেও অনেক জমে থাকে। বিলি হয় পাড়া প্রতিবেশীর দরজায়।

    ঝিঙের পাশেই আছে সুন্দর বেগুনী রঙের সীমফুল। এক ডাঁটিতে ফুটে থাকে অনেক অনেক ফুল। ফল হয় গুচ্ছে গুচ্ছে। শীমের প্রতিবেশী বরবটী। সেখানেও থোকায় থোকায় সাদা আর বেগুনী মেশানো ফুল। ফল আসে জোড়ায় জোড়ায়।


    পরের জন শান্ত শীতল শশা। মেয়াদ খুব কম সময়ের জন্য। তবে ফলন হয় অনেক। তবে এ আমাদের আদি অকৃত্রিম দেশী শশা।। ছাল ছাড়িয়ে অল্প বীট নুন আর গুঁড়ো লঙ্কা মাখিয়ে দিলে মুখের ভিতরে যাওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকে না। এই দেশের ভাষায় এইগুলিকে প্রিকল কিউকাম্বার বলে। ইংলিশগুলি লম্বা লম্বা। বড্ড জোলো লাগে। তাই করা হয় না। আর এই সবের মাচার নীচে অনেক আগে ফলন হয়ে গেছে আলু ও পেঁয়াজের। এ বছর মনখানিক আলু আর আধমন পেঁয়াজ এসেছে বাগান থেকে। চাষ শুরু হয়েছিল সেই এপ্রিলের গোড়ায় ঠান্ডা থাকতে থাকতে। এই আলু লাল । গোল, গোল চোট্ট ছোট্ট। দম খেতে দারুণ। এখনো বাড়িতে অতিথি এলেই কচুরী বা লুচির সঙ্গে সঙ্গত করে সে।


    পুবে আছে নধর লাউ। মাচা ছাড়িয়ে হু হু করে বেড়ে চলেছে। বেড়া ডিঙিয়ে উপছে পড়ছে বাইরে। প্রথম প্রথম ফলন ছিল না। হাতে গোনা কয়েকটি স্ত্রী আর পুরুষফুল। বড় যত্নে পরাগমিলন করিয়ে দিতে হত। এখন সে স্বয়ংসম্পুর্ণ। আট দশখানা কচি লাউ অবিরত ঝুলতে থাকে মাচায়। চিংড়ি দিয়ে বা ধনেপাতা বড়ি দিয়ে সদ্‌গতি। খোসাগুলি কোনকোন সময় উদ্ধার হয়। আবার কোন কোন সময় বায়োকম্পোষ্টের ঝুড়িতে চলে যায়।

    বাড়ির দেওয়ালের গা ঘেষে আছে উচ্চে আর করলা। সে গুলি হচ্ছে অনেক। তুলতে একটু দেরী হলেই পেকে হলুদ। তারপর পেট ফেটে বেরিয়ে আসবে লাল লাল বীজ। অদ্ভুতভাবে ঝুলতে থাক্বে মাচা থেকে। একবার বন্ধুকে বাইপোষ্ট করে পাঠিয়েছি সবুজ সবুজ উচ্ছে। পৌঁছাতে লেগে যায় তিনদিন। প্যাকেট খুলে দেখে এক হলুদ পাকা ফল, লাল বীজ নিয়ে অপেক্ষা করছে। সে তো ভেবেই পায় না, এটা কি সব্জী। কি ভাগ্যি, মাসিমা সেই সময় মেয়ের কাছে বেড়াতে এসেছিলেন। তিনিই মুস্কিল আসান করে দিলেন।
    এদের পাশে ছিল জুকিনি। তারা প্রথম দিকে হুড়্মুড়িয়ে ফলন দিয়ে কোটা শেষ করেছে অনেকদিন আগে। কচি কচি জুকিনি, খেতে খাশা। কিন্তু বড় হলেই ভীমের-গদার বড়ভাই।


    এবার আসি সমতলে। উচ্ছে মাচার পাশেই আছে কলমী।আগাছা পরিষ্কার ছাড়া খুব একটা যত্ন আত্তি করতে হয় না। ঢলে ঢলে বাড়তে থাকে। শুকনো ডাঙায়। মাঝের সমতলে আছে বেগুন আর টমাটো। অর্ধেক অর্ধেক। টমাটো ডুবিয়েছে এই বছর। অনাদরে অবহেলায় ফলে থাকত অগুন্তি। অনাদরের শাস্তি মিলিছে হাতেনাতে। না হলে এই বছর টমাটো কিনে খেতে হয়! অন্যান্য বছর কি ভোগান্তি টমাটো নিয়ে। চাটনী, আচার, সস, সালসা বানিয়েও কুল পেতাম না। এই বছর হা হুতাশ। তবে এই হুতাশ পুষিয়ে দিয়েছে বেগুন বাহার। কি ফলন, কি ফলন! এমনিতে আমেরিকার মিড- ওয়েষ্টে ঢ্যাঁড়শ আর বেগুন খুব তাপমাত্রা সচেতন গাছ। একটু কমলেই মুখ ভার। হলুদ কার্ড থুড়ি পাতা দেখিয়ে অভিমানী মুখ করে বসে থাকে। এই বছর ব্যতিক্রম দেখিয়েছে বেগুন। ফলেছে অঢেল। রাশি রাশি। চিন্তা এতগুলি বেগুন লইয়া কি করিব।

    চলে যাই পাশের সারিতে। সেখানে আছে ক্যাপসিকাম আর ঢ্যাঁড়শ। ঢ্যাঁড়শ, যা বললাম আগে ভাগে। সেই অভিমানী মুখ। ফলন একটি দুটি। কিন্তু ক্যাপসিকাম ঝুড়ি ঝুড়ি। একি বৃন্তে তিন চারটি। হাড্ডাহাডি লড়াই। কে কাকে হঠিয়ে যায়গা নেবে। হলুদ, লাল আর সবুজ, এই তিন রঙে।
    এর পরে শুধু পুইঁ। বাড়ে লকলকিয়ে । তবে খুব বেশী লম্বা হয় না দীর্ঘ রোদের জন্য।সকাল ছটা থেকে রাত্রি নটা রোদ পোহালে যা হয়। একটু মোটা আর বেঁটে বেঁটে। শাখা তৈরী হয়ে যায় গোড়া থেকে।


    পুইঁএর পাশে ওলকপি আর বীট। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়। তবে বীট অনেকদিন থাকলেও ওলকপির মেয়াদ খুব কম দিন। নরম থাকতে থাকতে খেয়ে ফেলতে হয়। না হলে বুড়ো হয়ে শক্ত জাল জাল। খায় কার সাধ্যি।

    এর পরে মহার্ঘ্য লালশাক। বড় যত্ন করতে হয় এর জন্য। যত বীজ তত গাছ বেরোয় না। বেশ ভেবেচিন্তে আগাম তাপমান দেখে লাগানো। তবে একফসলি। একবার কেটে নিলে সেই বছরের কোটা শেষ।


    আর আছে ঝাল ঝাল লঙ্কা, সবুজ আর গাড় বেগুনী রঙের। সেই যে ছোটোবৌয়ের মরিচ গুঁড়োতে গিয়ে হাঁচতে হাঁচতে দফ রফা হয়েছিল, তেমনি দশা ঘটল চিলি চিকেনের চিলি কাটতে গিয়ে। কি ঝাঁঝ। হাতে গ্লাভস পরে কাটা তারপরে বীজগুলি ফেলে দিয়ে ধুয়ে রান্না করা। তবু ও তার দম্ভ যায় না। হুস হাস করে খেতে হবে চিলি চিকেন।

    সবুজ ধনেপাতা হল দুইবার। একবার বাগানের শুরুতে। আর একবার বাগান শেষ হবার মুখে। আর আছে কলাবতী, কারিপাতা, সজনে গাছ। টবে। শীতকালে তারা চলে যায় বাড়ির ভেতর। সেখানে অতিরিক্ত তাপ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয় তাদের। এই সজনে এককালে প্রচুর ফুল আর দুই তিনটি ডাঁটা উপহার দিয়েছে। বাজনার চেয়ে খাজনা বেশী। এই বাহানায় এই বছর ফেলার তালিকায় ছিল। তাই তাকে মার্চের হীম শীতল দিনে রেখে দেওয়া হয়েছিল বাইরে। তিনি সবাইকে অবাক করে জানান দিলেন প্রাণের। সবুজ পাতা বুঝিয়ে দিল, আমি আছি, আমি থাকব। এখন আবার তাতে ফুল এসেছে।
    আছে মিষ্টি কুমড়ো। দু চারটি ছোট ছোট কুমড়ো ধরেছে। কোলেস্টেরলের জন্য নো কুমড়ো ফুলের বড়া। ফুলগুলি অন্যরা নিয়ে যায়।


    ফুলের ঝুড়িতে আছে গাঁদা, জিনিয়া, গোলাপ, লিলি। প্রথম দুটি বছর বছর নতুন করে লাগাতে হয়। পুরোফুল লেগে যায় আমাদের ছোট্ট দুর্গাপূজার কাজে। আর রজনীগন্ধা, বেলী ও গন্ধরাজ আছে টবে। ফুটেছে অজস্র। যতফুল তত সুগন্ধ।



    দিনের দৈঘ্য কমতে শুরু করেছে। বাতাসে হীমের গন্ধ। ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসছে সাড়ে আটটা বাজতে না বাজতে।তার পর একদিন সেই শনেশনে বাতাস বয়ে যাবে স্বার্থপর দৈত্যের বাগানে।
    আমার কথাটি ফুরালো, নড়ে গাছটি মুড়ালো।
  • ranjan roy | 132.162.250.17 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২০:৪৬686693
  • খুব ভালো লাগলো তিতির। অন্য ধরণের লেখা। আরো হোক।
  • mumu | 216.201.224.118 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২০:৫৯686694
  • বাহ!
  • সে | 204.230.159.211 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২১:১৮686695
  • মন ভাল করে দেয়
  • I | 233.231.56.48 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২১:৫২686655
  • বাহ! কী ফসল ফলিয়েছেন গো!
  • | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২২:১৪686656
  • এই এতকিছু আপনার বাগানে ফলে!! :-O
    পুরো বাগানের একটা ছবি দিন না।
  • kk | 182.56.13.226 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২২:২২686657
  • তিতিরের লেখা আমার খুব ভালো লাগে। তিতিরের বাগানও। ছবিগুলি দেখে মনও ভালো হলো, খিদেও পেয়ে গেলো !!
  • AS | 192.66.89.50 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২৩:০৩686658
  • বা বেশ লাগল
  • byaang | 132.172.110.111 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২৩:১৯686659
  • তিতির! ভারি অন্যরকম লেখাটা। ভালো লাগল। কিন্তু এই এত বড় বাগান আপনার! অনেকখানি সময় ও শ্রম যায় নিশ্চয়ই এর পরিচর্যায়! আরো ছবি দিন প্লিজ।
  • sosen | 177.96.88.150 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৪৭686660
  • কি ভালো!!!
  • Tim | 140.126.225.237 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:০৮686661
  • কি সুন্দর বাগান!! এই লেখাটা আরো চলুক।
  • Blank | 24.96.60.73 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৪২686662
  • ভাল্লাগলো পড়ে। কিন্তু এত ভেজ কেন !! বাগানে একটু নন ভেজ চাষ করুন না ।
  • byaang | 233.227.50.41 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৮:২১686663
  • তিতিরের লেখাটার রেশ রয়ে গেছে। আজ ঘুম থেকে উঠলাম তিতিরের বাগানের ছবি মনে করে। যদি কখনও সামনে থেকে দেখার সুযোগ পেতাম! যাক যা হওয়ার নয়, তা ভেবে লাভ নেই। কিন্তু এ কোন অলোকপুরী যেখানে সকাল ছটা থেকে রাত দশটা অব্দি রোদ্দুর থাকে? কোন শহর, কোন দেশ? এরকম রোদঝলমলে বাগানে যদি একটু থাকতে পেতুম
  • Byaang | 233.227.50.41 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৮:২৩686664
  • সরি, রাত নটা ।
  • nina | 83.193.157.237 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৯:০১686666
  • খুব খুব ভাল লাগল গো তিতির-----অনেক দিন পর তোমার লেখা পেলাম --একবার যেতেই হবে তোমার বাগানে -----ঃ-)
  • de | 24.139.119.174 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১১:৪১686667
  • কি সুন্দর বাগান করেছেন তিতির!! ছবিগুলো বাড়ি গেলে আমার বাবাকে দেখাতে হবে!
  • I | 233.231.48.79 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৫:২৪686668
  • গাছপালার সান্নিধ্য খুব মনোমুগ্ধকর।কিছুকাল এরকম সব্জিসঙ্গ করলে বড় মায়া জন্মে যাবে; আর ওদের ওপর অত্যেচার করতে মন চাইবে না। খালি মুর্গিমটন খেতে ইচ্ছে করবে।
  • শিবাংশু | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৫:২৯686669
  • সাহেবরা বলে ঈর্ষার রং সবুজ। কিন্তু তিতির শেখায় ভালোবাসাই আসল সবুজ।

    টিপিক্যাল তিতির।

    জীয়ো....
  • kumu | 11.39.33.136 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৭:৪২686670
  • তিতির আপনার বাগান অনন্যসুন্দর।
    আপনি বিদেশে বসে এইসব গাছের বীজ কোথায় পান?আর এত গাছের যত্ন কে করে?এতো অনেক সময়ের ব্যাপার।
    মালঞ্চ ও মালিনীর আরো ছবি হোক।
  • kumu | 69.178.150.252 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৭:৫৪686671
  • ঝিঙেফুল
    কাজী নজরুল ইসলাম

    ঝিঙেফুল! ঝিঙেফুল!
    সবুজ পাতার দেশে ফিরোজিয়া ঝিঙে কুল-
    ঝিঙেফুল।

    গুল্মে পর্ণে
    লতিকার কর্ণে
    ঢল ঢল স্বর্ণে
    ঝলমল দোলে দুল-
    ঝিঙেফুল।

    পাতার দেশের পাখি বাঁধা হিয়া বোঁটাতে,
    গান তব শুনি সাঁঝে তব ফুটে ওঠাতে।
    পউষের বেলা শেষ
    পরি জাফরানের বেশ
    করে তোল মশগুল-
    ঝিঙেফুল।

    শ্যামলী মায়ের কোলে সোনামুখ খুখু রে
    আলুথালু ঘুমু যাও রোদে-গলা দুকুরে।
    প্রজাপতি ডেকে যায়-
    ‘বোঁটা ছিঁড়ে চলে আয়।’
    আসমানে তারা চায়-
    ‘চলে আয় এ অকুল!’
    ঝিঙেফুল।

    তুমি বল- ‘আমি হায়
    ভালোবাসি মাটি-মায়,
    চাই না এ অলকায়-
    ভালো এই পথ-ভুল।’

    ঝিঙেফুল।
  • তিতির | 138.210.206.145 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২১:২৯686672
  • এই গাছগাছালির শুরুর আগের একটু গল্প বলি । এই শহরে এসেছি প্রায় আঠারো বছর আগে । ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে আস্তানা । সময়টা ছিল অক্টোবর মাস । ঠান্ডা জমিয়ে পড়ে গেছে । একদিন ক্যাম্পাসের বাড়ি ঘর ছাড়িয়ে একটু পার্কের দিকে গেছি। তখন দেখি কিছুলোক চাষের বাগান পরিষ্কার করছে । খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ইউনিভার্সিটি প্রতি বছর মার্চের শেষে জমি দেয় চাষ করার জন্য । প্লট পিছু পঁচিশ বা পঞ্চাশ ডলার করে নেয়। মার্চের শেষ বা এপ্রিলের প্রথমে জমি ভাগ করে দেয়। যার যতটা দরকার সেই মত নিতে পারে । জলের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপলাইন বসানো আছে । শুধু নিজেদের আর একটা পাইপ কিনে কল খুলে জল দিতে হবে। মাটিটা, প্রথম লাঙল করে দেয় ওরা ।

    পরের বছরের জন্য হা পিত্যেশ করে বসে থাকলাম। যথাসময়ে জমি মিলে গেল । এদিকে চাষের বীজ নেই । ও হ্যাঁ একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। আমরা দুজনেই যে পরিবার থেকে উঠে এসেছি, সেখানে ধান, গম, সরষে, তিল, ডাল, পাট এই সব বাড়ির জমিতে হত। । তবে তা করত মজুররা। আমরা শখের দু চারটে ফুলের গাছ লাগাতাম ।
    বীজের জন্য এক বাঙালী বন্ধুর শরণাপন্ন হলাম । তিনি কটি বীজ দিলেন। এখানে টমাটো, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লঙ্কা এই সবের গাছ কিনতে পাওয়া যায় । কিন্তু আমারা চেয়েছিলাম, সেই সব সব্জীর চাষ করতে, লাউ, কুমড়ো, ঝিঙে, সীম, পুইঁ যেগুলো পাশের রাজ্য ইলিনয়ের শিকাগো শহরে মেলে। সে প্রায় দু আড়াই ঘন্টার ড্রাইভ ।

    প্রথম বছর খুব একটা ভালো ফলন হয় নি । তারপর দিনে দিনে অভিজ্ঞতা বেড়েছে । তবে আমরা অনেককিছু শিখেছি চৈনিকদের কাছ থেকে । ওরাও খুব বাগান করে । আর এতো সুন্দর করে মাচা বানায়, দড়ি ব্যবহার করে না। পুরানো কাপড় কেটে কেটে ধৈয্য ধরে যে মাচা বানায় দেখলে অবাক হয়ে যাই । লতানে গাছ ওঠার আগে ভাগেই মাচা তৈরী। আর সারাক্ষণ গাছের গোড়ার মাটি খুঁড়ে দিয়ে জল দিয়ে রাখে । গাছ বাড়ে হু হু করে ।ওদের সব সব্জী আমাদের মত । সঙ্গে শুধু কিছু চাইনীজ শাক থাকে ।

    এখন বাগান নিজেদের বাড়ির পিছনে । যাকে বলে কিচেন গার্ডেন । মোটামুটি গরম আর শীতের সব সব্জী ফলে। এইগুলো আগে পরে চাষ করি। সময় এপ্রিলের শেষের দিক বা মে এর প্রথমে। তাপমাত্রা দেখে ঠিক করতে হয় । আমাদের সব গাছ বীজ থেকে তৈরী। তাই সময় একটু বেশী লাগে ।খাটাখাটনী একটু বেশী হয় । কিন্তু আমাদের খুব ভালো লাগে । নিজেদের কাজকর্ম সেরে, বাচ্চাদের দেখভাল করে, বাগানের পরিচর্য্যা করি । ছোট্ট ছোট্ট গাছগুলো যখন আস্তে আস্তে একটা দুটো পাতা মেলে, তখন সব পরিশ্রম সার্থক হয়ে যায়।

    কত পাখী, প্রজাপতি, কাঠবেড়ালী আসে বাগানে। এমনকি খরগোশের ও উপদ্রপ ঘটে। তার জন্য বেড়া লাগাতে হয়েছে। না হলে কুচি কুচি করে কেটে দেয় গাছের গোড়া। হরিণ আসে পাড়ার পাশের জঙ্গলে। লোকজেনের ভয়ে ঢুকতে সাহস পায় না। এই বছর আবার হামিং বার্ড ও এসেছিল। কাজ থেকে ফিরে রান্নাঘরে কাজ করছি। মেয়ে বলে "মা দেখ হামিং বার্ড এসেছে বাগানে"। ওমা দেখি ছোট্ট দুটো হামিংবার্ড। তুড়ুক তুড়ুক করে বসছে ফুলের উপর। পাখীগুলো আসে জোড়ায় জোড়ায়। লাল রঙের কার্ডিনাল, হলুদ আর কালো মেশানো একটা পাখী আর নাম না জানা অনেকপাখী । তাদের কিচির মিচির, খুনসুটি দেখতে দেখতে জীবনে কি পাবোনা সব হিসেব নিকেশ উধাও হয়ে যায়।

    ব্যাঙ, আমি থাকি ইন্ডিয়ানাতে। এখানে গরমের সময় রাত্রি নটা কেন আরো বেশী সময় সূর্যের আলো থাকে। আর জীবনে আসা হবে না কেন? এসো না আমাদের কাছে। আমরা লোকজন খুব ভালোবাসি। রেঁধে খাওয়াবো যা খেতে চাও।
    লেখার হাত তোমার অসাধারণ!
    ব্লাঙ্ক,ভেজের চাষ করি আর ননভেজরা বেড়াতে আসে আমার বাগানে।
    দে, বাবার জন্য আরো কিছু ছবি লাগিয়ে দিলাম।






    কেকে, তুমি তো এখন অনেক কাছাকাছি এসে গেছে। একবার এসো না সময় করে।
    দ, প্রথম ছবিটা একদিকের বাগান। পুরো ছবি তোলা বেশ কষ্টকর। দেখি যদি তোলা যায় উপর থেকে।
    নিনিয়া, তোমাকে তো কবে থেকে বলে আসছি। একবার এসো।
    আর কুমুদিদি, অনেক অনেক থ্যাঙ্কু। কিন্তু আমার ঝিঙে ফুলের রঙ তো হলুদ। তবে কবি কেন "ফিরোজিয়া" বলেছেন? আমি তো কস্মিনকালেও ঐ রঙ দেখি নি।
    সে, রঞ্জনদা, AS, I, Tim, শিবাংশুদা অনেক অনেক ধন্যবাদ।
    যদি কেউ এদিকপানে আসেন, শাকান্নের নিমন্ত্রণ রইল।
  • pipi | 77.175.190.90 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২২:১৪686673
  • তিতির, আমিও ইন্ডিয়ানাতেই।। এখানকার কোন ইউনিভার্সিটি চাষের জন্য জমি লিজ দেয় একটু বলবেন? অবশ্যই যদি অসুবিধা না থাকে।
    আর, আপনার বাগান সত্যি খুব সুন্দর। আর তার পিছনে যে পরিশ্রম আর ভালবাসা রয়েছে তাকে কুর্নিশ।
  • Tim | 140.126.225.237 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২২:২৯686674
  • মিডওয়েস্টের যেকোনো জায়গা থেকেই শিকাগোল্যান্ড দু আড়াই ঘন্টা। আজব কল বানাইছে কিন্তু! ঃ-)
  • তিতির | 138.210.206.145 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২৩:০৮686675
  • পিপি,
    অসুবিধা কিচ্ছু নাই। আমি হলাম সেই জন যে গন্ধারাজের চারা কোথায় পাওয়া যায় তার লিঙ্ক পাঠিয়েছিল। যদি ও সেই লিঙ্ক, আমি এই গুরুর পাতা থেকে পেয়েছিলাম।
    পার্ডু ইউনিভার্সিটি দেয়। অনেক বছর ধরে দিচ্ছে। পুরো সীজনের চাষের জন্য। এ ছাড়া আমাদের বাড়ির কাছে একটা কম্যুনিটি গার্ডেন আছে। সে জন্য সিটির কাছে পার্মিশান নিতে হয়।
  • nita | 34.248.74.254 | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:১৯686677
  • তিতির,
    গাছে পোকা লাগে না? কি করো পোকা মারতে?
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন