এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • তিন পাতার বই

    achintyarup
    অন্যান্য | ২০ জানুয়ারি ২০১৬ | ৪৭০১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • achintyarup | 125.111.242.141 | ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ১৯:৫৪692748
  • নাকি বইয়ের মতো একটা মানুষ। একটা একটা পাতা উল্টে এক এক দিন নতুন ভাবে তাকে দেখা, চেনা। সব লোকের বুঝি তেমনি হয়? তিনটে পাতা পেরোতেই কারো বই শেষ। পেছনের মলাটটা উলটে আসে। ছেঁড়াখোড়া, রেক্সিন ওঠা, অসাবধানে পড়ে যাওয়া ঝোলের দাগ লাগা। আমার মুসলমান মাস্টারমশাই বলতেন, শুরো। হলদেটে ঝোলের দাগ লেগে গেলে বলতেন, একটু শুরো পড়ে গেছে। শুরুয়ার অপভ্রংশ হবে বোধ করি। মাঝের তিন খানা পাতায় হলদে হয়ে আসা কয়েক খানা স্কেচ মতো। গভীর কিছু নয়। টু-ডি। ঝাপসা হয়ে গেছে কোথাও। আর সে ছবিও যে কোথা থেকে কোথায় যায়, তার ঠিক ঠিকানা নেই। দামও নেই কোনো। তাও টুকরো টাকরা রাখলুম এখেনে।
  • achintyarup | 125.111.242.141 | ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ১৯:৫৮692759
  • ওই সাইকোঅ্যানালিস্টের কাছে যখন গিয়েছিলাম, ভদ্দরলোক আমাকে বললেন, ছোটোবেলার সব চেয়ে পুরোনো কোন্‌ ঘটনা বা ছবি বা কথা আপনার মনে আছে ভেবে বলুন দেখি। ভাবি, ভাবি... তারপর মনে পড়ে এক খঞ্জনী-বাজানো ভিখিরির কথা। আমার বিশ্বাস, সে আকাশী-নীল মতো পাঞ্জাবী পরেছিল, আর খঞ্জনী বাজিয়ে গান গাইছিল, নাকতলা বাড়ির বারান্দার গেটের কাছে সিঁড়িতে বসে। কী গাইছিল? ছোটবেলায় মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে তা তা থৈ থৈ শুনলেই ওই ভিখিরির ছবিটা মনে আসত, এখনও আসে। আমার তাই ছেলেবেলায় ধারণা ছিল ওই গানটাই সে গাইছিল নিশ্চয়ই। এখন ধারণাটা পাল্টে গেছে। ওরকম খঞ্জনী-বাজানো লোক ভিক্ষে চাইতে এসে মম চিত্তে গাইছিল বলে এখন আর বিশ্বাস হয় না। অন্য কোনও ভাবে হয়ত স্মৃতির ওই ছবির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে ওই গান। এমনকি লোকটার জামাটাও ওইরকম ছিল না হয়ত, মুখে বসন্তের দাগও হয়ত ছিল না। অন্য কোনও মুখ সেই ভিখিরির চেহারাকে সরিয়ে দিয়ে সে জায়গা দখল করে বসেছে।

    স্মৃতির সঙ্গে গন্ধের সম্পর্কের কথা কেউ বলেছিল, হঠাৎ একটা গন্ধ কেমন ঝপ করে বিশ তিরিশ বছর আগেকার ছবি চোখের সামনে নিয়ে চলে আসে। কোনো কোনো গান কিম্বা সুর শুনলেও অমনি হয় আমার। শরৎ কালের জন্যে লেখা একটা রবি ঠাকুরের গান শুনলে কেমন যেন একটা লাগে,যেন মনের সিন্দুকের মধ্যে কেউ হাতড়াচ্ছে, আর বেরিয়ে আসছে একটা দুটো আবছায়া ছবি, পুরো স্পষ্ট নয়, মনেও পড়ে না ঠিক কোথায় দেখেছি,পরে ভেবেচিন্তে বের করতে হয়, সেই রকম এক খানা ছবিও আমার সবচেয়ে পুরোনো স্মৃতির একটা টুকরো। তাতে দেখা যায় লালচে রঙের সরু মাটির পথ, দু ধারে ঝুপসি গাছপালা, ডানদিকে পুকুরের ঘাট... আর মনে পড়ে না। সেই ছবির সঙ্গে পরে মিলিয়ে দেখি নাকতলার বাড়ির সামনের রাস্তা, মিলে যায়। সে রাস্তার চেহারা এখন এক্কেবারে পাল্টে গেছে। পুকুরের প্রায় সবটুকু জুড়ে ফ্ল্যাটবাড়ি। কিন্তু সে তো বড়বেলার কথা।

    অর্থাৎ কিনা, যতদূর মনে করতে পারি, আমার সবচেয়ে পুরোনো স্মৃতি নাকতলার বাড়ির। যেখানে থেকেছি খুবই সামান্য সময়। এই সময়টা নিশ্চয়ই সত্তর সাল হবে, যখন বাড়ির সামনে রাস্তা দিয়ে সিআরপি মার্চ করে যায়। সে সময়টায় বাবার স্মৃতি আমার আদৌ নেই। থাকার কথাও নয়। কারণ বাবা তখন দমদমে থাকত, একটা উঁচু পাঁচিল ঘেরা বাড়িতে। তবে সে সব আমি বেশ বড় হয়ে জেনেছি। মা যেত বাবার সঙ্গে দেখা করতে, বাসে করে,ট্রেনে করে, বোধ করি হপ্তায় এক দিন। সব দিন দেখা করতে দিতও না। শিশুপুত্রের কথা বোধ হয় খুব মনে হত বাবার, তাই আমার একটা ছবি চেয়েছিল। স্টুডিওতে নিয়ে গিয়ে তোলানো এক-বছুরে বাচ্চার সেই ছবিটা এখনও আছে, চোখে কাজল, কপালে কাজলের টিপ, হ্যা হ্যা করে হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে নেমে চলে আসছি, সেই ছবি।

    সে সময়কার গল্প যদি শোনার আগ্রহ থাকে, তাহলে লিখব, কিন্তু সে সবই আমার শোনা গল্প। স্মৃতি থেকে আসা কিছু না।
  • ranjan roy | 24.99.104.180 | ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ২০:০৬692770
  • অ্যাই চিন্টু, কী ইয়ার্কি হচ্ছে?
    লেখ বলছি। এ গল্প কে না শুনতে চায়! আবার তোর জবানিতে!
  • I | 192.66.29.144 | ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ২১:২০692781
  • কতদিন পরে লিখলে! লেখো,লেখো। অন্তত আমার জন্য লেখো। তুমি লিখলে আমার ভালো লাগে।
  • | ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:০৯692792
  • আরেকটা টই .....
  • Byaang | 132.171.126.227 | ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:১৮692794
  • লেখাটা প্লিজ চলতে থাকুক। খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ছি।
  • Rito | 126.202.200.235 | ২১ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:৪২692795
  • অচিন্ত্য দা লেখাটা শেষ করো।।।
  • সে | 198.155.168.109 | ২১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৫692796
  • পড়ছি
  • Abhyu | 138.192.7.51 | ২১ জানুয়ারি ২০১৬ ২৩:৫২692797
  • পড়ে ফেলেছি।
  • achintyarup | 125.187.37.112 | ২১ জানুয়ারি ২০১৬ ২৩:৫৫692749
  • কথা বলতে বলতে অবাক হয়ে যাই। মনে মনে ভেবে দেখি, ছোটবেলায় ঘরভর্তি নানা রকম বইয়ের মধ্যে কবিতার বই বেশি দেখিনি তো। সত্যিই তো, আমার ছেলেবেলার কবিতা পড়া বেশিরভাগই হরেক রকম বাতিল-করা পাঠ্য বই থেকেই। মনে করতে চেষ্টা করি, কী কী কবিতার বই ছিল বাড়িতে? সঞ্চয়িতা অবশ্যই, যদিও বাঁধাতে দেওয়ার সময় তার থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল গোটা তিরিশ পাতা। তা ছাড়া? আবছায়া মনে পড়ে, প্রমথ চৌধুরীর সনেট পঞ্চাশৎ, সবুজ রঙের বাঁধানো সত্যেন দত্তের কবিতাসংগ্রহ একটা। তা ছাড়া? পড়ার ক্ষিধেতে বাবার আলমারির কাঠে-ঢাকা নিচের তাক খুলে পুরোনো কাগজপত্র হাতড়ে পাওয়া ওমর খৈয়াম, আর মধুসূদন। আর? আর তো কিছু মনে পড়ে না। অথচ আমার ছোটবেলার দিনে রাতে অনেকটা ভরে থাকত কবিতা যে! রবীন্দ্রনাথই বেশি-- পড়ত না, আবৃত্তি করত বাবা, মা। তা ছাড়াও জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র (এই নামটাই কেন আগে মনে পড়ে?), জীবনানন্দ, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে, সুধীন দত্তর কবিতাও শুনতাম যে! এখনও শুনি তো। আলো নেবানো ঘর থেকে অনর্গল কবিতা ভেসে আসতে থাকলেই বুঝি বাবার জ্বর আসছে। জ্বর হলেই কবিতা বলতে থাকে তো বাবা। আর এমনি করে না পড়ে পড়েও কবিতারা খানিক ঢুকে গিয়েছিল মাথার ভেতর?

    রঞ্জনদার লেখা বাঙালবাড়ির কিসসার সবগুলো খুঁজে পেলুম না। সেখানে পার্ক সার্কাস বাড়ির গল্পে আমার বাবাকে যখন ইন্ট্রোডিউস করছে, তখন লিখেছিল, যদ্দূর মনে পড়ছে, বাড়িতে ইলিশ মাছ এসেছে, আর স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়া ছোট ছেলে একটা বই বগলে ইলিশ উৎসব আবৃত্তি করতে করতে দরজা দিয়ে ঢুকহ্হে। ঠিক এই রকম কিছু হয়ত সত্যি সত্যিই ঘটেনি, তবে ঘটতেই পারত তো। বড়দাদা রঞ্জনকে যদি আমার জেনারেশন ধরি, তাহলে চোদ্দ ভাইবোনের সকলের ছোট আমার বাবা ছিল তার আগের প্রজন্মের সঙ্গে আমাদের জেনারেশনের সেতুবন্ধ। বাবার হাত ধরে বাড়িতে ঢুকল আধুনিক কবিতা আর অতিবাম রাজনীতি। তারপরে সে সব রোগ আস্তে আস্তে ছড়িয়ে গেল পরের জেনারেশনে। কলেজ ইউনিভার্সিটিতে বাংলা সাহিত্য পড়া আমার বাবা বহু কবিতা ঝরঝর করে বলে যেত। কিন্তু বুদ্ধদেব বসু কখনও বলতে বা পড়তে শুনিনি। ছোটবেলায় মনে আছে, সুনীল-শক্তিতেও বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। তারা বোধ করি সমাজের পচে যাওয়া অংশের কবি ছিল। পরে, আমি চাকরি বাকরি করতে শুরু করার পর মুগ্ধ হয়ে শক্তির কবিতা পড়তে দেখেছি বাবাকে। সুনীলও। আশ্চর্য হয়ে গেছি, যখন আমাকে জয় গোস্বামীর বইও এনে দিতে হয়েছে।

    বাবা আর বাবার ছোটবেলার বন্ধু অরুণকাকুর নাকি কলেজে পড়ার সময় একটা খেলা ছিল, দু বার পড়ে একটা গোটা কবিতা মুখস্থ করার প্রতিযোগিতা। তাতে লাভ হয়েছিল আমার, ছোটবেলায়।

    তাহলে কবিতার বইরা কি ছিলই না বাড়িতে? যদি থাকে, আমার ছোটবেলায় তারা গিয়েছিল কোথায়? কেন? অন্য লোকেদের বাড়িতে। সে আমি চোখেও দেখিনি। বাবা যখন দমদম জেলে, তখন রাশি রাশি বই উধাও হয়ে গিয়েছিল বাড়ি থেকে। এমনকি আমার ঠাকুর্দার ঠাকুর্দার আমলের হাতে লেখা গীতগোবিন্দও। আর কিছু মূল্যবান বই, ধরা পড়ার আশঙ্কায় বাবা যেগুলো এক শুভানুধ্যায়ীর কাছে রেখে দিয়েছিল, পুলিশের ভয়ে সেগুলোকে সেই শুভানুধ্যায়ী ইঁট বেঁধে পুকুরের জলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। শুধু রাজনীতির বই নয়, তার মধ্যে নিরীহ বইও কিছু ছিল। পরে আর নতুন করে সে সব কেনার সামর্থ্য ছিল না।

    আমি যখন ক্লাস ফাইভে, তখন ইস্কুলে পড়াতে এল চন্দ্রনাথ কাকু। সদ্য পাশ করে বেরোনো ফিজিক্সের ছাত্র, সব ব্যাপারে টগবগে উৎসাহ, আইডল তার দু জন -- আইনস্টাইন আর রবীন্দ্রনাথ। তার আড্ডা যথারীতি আমাদের বাড়িতেই। তার আগে অমনি দেখিনি, বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও অমনি চমৎকার বাংলা লেখা, আর ভারি বেসুরো গলায় একটানা কবিতা পড়ে যেতে অমনি উৎসাহ। হস্টেলের একটা ঘরে চন্দ্রনাথকাকু থাকত। একদিন হঠাৎ প্ল্যান করল, বাচ্চাদের জন্য একটা ক্লাব করতে হবে। ক্লাব চালু হল, তার নাম শিশুতীর্থ। প্রতিদিন ইস্কুলের পরে বসত ক্লাব। তার নিয়ম ছিল, প্রতিদিন প্রত্যেককে ডায়েরি লিখতে হবে। আর মাঝে মাঝে লিখতে হবে কবিতা কিম্বা গল্প। নানা গাছের ফুল-পাতা সংগ্রহ করে হার্বেরিয়াম বানাতে হবে, আর লাঠিখেলা শিখতে হবে। বেশ চলল কয়েক মাস। কিন্তু অত ঔজ্জ্বল্য সহ্য হল না, গাঁয়ের ইস্কুলের। অন্য কোনও মাস্টারমশাই পিছনে লেগে ক্লাস এইটের ছাত্রদের দিয়ে বিশ্রীভাবে অপমান করাল চন্দ্রনাথকাকুকে। তাতে তার শাপে বর হল। সায়েন্টিস্ট হয়ে চলে গেল সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের ফরেন্সিক ডিপার্টমেন্টে। পরে কেম্ব্রিজে গিয়ে গোলাগুলি নিয়ে গবেষণা করল। লম্বা লম্বা চিঠি লিখত, চমৎকার। তো, সেই কেলাবেও এক রকম হল কবিতার পাঠ। সে সব খাতাপত্তর কোথায় আছে, জিগ্যেস কোরো না।

    তারপর জাহাঙ্গীরকাকুর কথা একটু বলি। শেখ জাহাঙ্গীর। কাজী সব্যসাচীর কাছে আবৃত্তি শিখত, আর সব্যসাচীর মেয়ে খিলখিল কাজীর প্রেমে ডুবে থাকত। সে মেয়ে অবশ্য তাকে পাত্তা ফাত্তা দিত না। রেডিওতেও বোধ করি টুকটাক কাজ করত কিছু। ঘাড় অবধি ঢেউ খেলানো চুল, টেরিকটের পাঞ্জাবী আর কোঁচা লুটোনো ধুতি পরনে, জাহাঙ্গীরকাকু লম্বা লম্বা সিগারেট খেত। আর কয়েক টান মেরেই সেগুলো ছুঁড়ে দিত ঘরের কোনায়। প্রচুর কবিতা আবৃত্তি করতে পারত একটানা। প্রায় সবই নজরুল। তা ছাড়া কিছু শামসুর রাহমান শুনেছি মনে আছে। আমার কাছে রেকর্ড করাও ছিল-- স্বাধীনতা তুমি রবি ঠাকুরের অমর কবিতা অবিনাশী গান। কী করে তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছিল মনে নেই। কে নিয়ে এসেছিল আমাদের বাড়ি। তারপর থেকে সময়ে-অসময়ে হঠাৎ হঠাৎ এসে উদয় হত। তাদের মুসলমান বাড়িতে খুব ঘটা করে কালীপুজো হত, সেই গল্প বলত। ভর দুপুরে এসে বলত, বৌদি, ভাত বসান। তারপর যেমনি হঠাৎ করে এসেছিল, তেমনি করেই চলে গেল একদিন। ভর দুপুরে বোম্বে রোডে লরির চাকার নিচে।
  • aranya | 154.160.130.94 | ২২ জানুয়ারি ২০১৬ ০৫:৪৭692750
  • কি ভাল যে লেখে
  • RITO | 190.215.88.116 | ২২ জানুয়ারি ২০১৬ ১৮:২৫692751
  • খুব ভালো লাগছে। খুবই ভালো লাগছে অচিন্ত্যদা। পরের কিস্তি কবে? ও হ্যাঁ, তোমার একজন নাতুন পাঠক হয়েছেন। তিনি কম্পুটার জানেন না। এ বার থেকে তাঁকে নিয়ম করে ল্যাপটপ খুলে দিতে হবে। আমি না থাকলে আমার স্ত্রীর দায়িত্ব। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত পড়ে যেতে চান। সাতের দশকের ছাত্র তিনি । সুতরাং...
  • achintyarup | 125.187.37.112 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০৩692752
  • মন খারাপ থাকলে আমার গাঁয়ের কথা মনে হয়। এমনি সাধারণ গল্প সব। যেমন ধরো গাছেদের কথা। কিম্বা বাঁশঝাড়ের আলোছায়ায় কাঠি দিয়ে পাখি-ধরা ফাঁদ বসানোর চেষ্টার কথা। ভাবলে ভারি ভালো লাগে অনেক সময়। গাছ পোষার গল্প বলি। লালচে খোয়ার রাস্তার দক্ষিণ দিকে আমাদের কোয়ার্টারটা ছিল তো। আরও বেশ কয়েকটা কোয়ার্টার ছিল। রাস্তার ডাইনে-বাঁয়ে। পাড়াটাকে তাই মাস্টারপাড়া বলত লোকে। রাস্তার ডানদিকে খানিকটা জায়গা ছেড়ে দুটো কোয়ার্টারের একটা ব্লক আমাদের। ওমনি ব্লক দুটো ছিল। আমাদের ব্লকটায় একই ছাদের নিচে দুই ঘরের কোয়ার্টার হেডমাস্টারমশাইয়ের, আর দুই ঘরের কোয়ার্টার আমাদের। রাস্তা বরাবর আরও খানিকটা এগিয়ে আরেকটা ওই রকম ব্লক। সেটায় নির্মলবাবু আর সমীরবাবুদের কোয়ার্টার। দুটো ব্লকের মাঝখানেও খনিকটা খালি-- গলি মতো জায়্গা। আর রাস্তা থেকে আর দুটো ব্লককে আলাদা করে রেখেছে টানা একটা লম্বা ঘাসজমি। ওইখানে আমরা ক্রিকেট খেলতাম। নারকেলগাছের পাতার গোড়াটা ব্যাটের মতো করে কেটে নিয়ে ব্যাট বানিয়ে নেওয়া হতো। বেশ পোক্তই হত। আর ক্যাম্বিসের বল। নারকেলপাতার ওই বোঁটাটাকে বলতো নারকেল বাগলো। অমনি তাল বাগলোও হয়। নারকেল পাতার আরও দারুণ সব কার্যকারিতা ছিল। আমার যেটা সবচেয়ে ভালো লাগতো, সেটা হল, পাতার গাড়ি। পাতাটার ওপর একজন বসবে, আর দু-তিনজন পাতার বোঁটাটা ধরে টেনে নিয়ে যাবে। ঝরঝর ঝরঝর আওয়াজ করতে করতে যাওয়া যায় বেশ।

    একবার বনমহোৎসব হল। বর্ষাকাল। বর্ষাতেই তো হবে। সহজে গাছ বাঁচানো যায় তখন। পঞ্চায়েত থেকে গাছের চারা বিলি করল। নানা রকম গাছ। অর্ধেক তার সেই প্রথম চোখে দেখলাম। নানা দেশের নানা জাতের গাছ ওই রকম ভাবে এসে মিশে গেল গাঁয়ের গাছগাছালির সঙ্গে। যেমন ধরো, একটা চারা পেলুম, তার ঝুরু ঝুরু পাতাগুলি দেখেই আমি বুঝলুম, সে হল কৃষ্ণচূড়া। ভারি আমোদ হল। বাড়ির কাছাকাছি একটাও কৃষ্ণচূড়া গাছ নেই, তাই কোয়ার্টারের ওই দুই ব্লকের মাঝখানে লাগিয়ে দিলুম সেটিকে। বড় হলে কেমন সুন্দর ছাতার মতো ডালপালা মেলবে, শীতের শেষ থেকে শুরু করে কী সুন্দর লাল ফুল হয়ে থাকবে, কল্পনায় স্পষ্ট দেখতে পেলুম। যত্ন করে শাবল দিয়ে আধ-হাত খানেক গর্ত করলুম। সেখানে মাটি মিহি করে বসিয়ে দিলুম সেই গাছ। ফুট দেড়েক উঁচু। সকাল বিকেল দুবেলা দেখি। একদিন বিকেলে ইস্কুল থেকে ফিরে দেখি গাছের ডাঁটিটুকু শুধু পড়ে আছে। বাকিটা মুড়িয়ে খেয়ে গেছে ছাগলে। আর কে না জানে, ছাগলে খেলে সে গাছ আর বাড়ে না। কৃষ্ণচূড়ার শোক বড্ড বাজল বুকে। কান্নাকাটি তখন করতুম না। সে সব বড় হয়ে শেখা। তবে মন খারাপ হল খুব। এর মধ্যে আবার কে এসে বলল, ওটা কৃষ্ণচূড়া গাছই নয় মোটে। ওর নাম নাকি সুবাবুল। বাবলা গাছের মতই নাকি, শুধু কাঁটা হয় না। ভালো কাঠ হয়, আর ওর পাতা খেলে গরু-ছাগলে ভালো দুধ দেয়। পুরোপুরি বিশ্বাস করিনি অবশ্য তার কথা। ছাগলে খাওয়া গাছের চারদিকে আমার সাধ্যমতো গোল করে বেড়া বাঁধলুম একটা। জল দিতে লাগলুম রোজ। আস্তে আস্তে ফের পাতা গজালো তাতে। নজর রাখি তার ওপর। একটু সরষের খোল গুঁড়ো করে দিই গোড়ায়। গরু ছাগল ধারের কাছে এলে তাড়া করি। রোগা গাছ আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করে। যত বড় হয়, দেখি সত্যিই পাতগুলি কৃষ্ণচূড়ার মতো অমনি ঘন সবুজ না। অত ঠাসা পাতাও নয়। তা হোক, সে আমার আদরে বড়ো করা গাছ। ছোট্ট ছোট্ট লোম লোম ঘিয়ে মতো রঙের ফুল হয় তাতে। আমার ভালো লাগে।

    আরেকটা গাছ এল, সেই প্রথম দেখলুম তাকেও। নাম বলল, সোনাঝুরি। নাকি অস্ট্রেলিয়ান অ্যাকাশিয়া। বাংলা নামটা রবীন্দ্রনাথ দিয়েছেন, কে একটা বলল। সব ভাল জিনিসেরই নাম দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। তেজস্ক্রিয়তা, আকাশবাণী, সোনাঝুরি। শান্তিনিকেতনে নাকি ওই গাছ আছে। সে গাছ লাগালুম একটা বাড়ির ঠিক সামনে। সিঁড়ি দিয়ে নেমে রাস্তায় ওঠার মুখটাতে। সেটা অনেক বড় হয়েছিল পরে। ঝুরি ঝুরি ফুলের গুঁড়ো বিছিয়ে থাকত গাছের নিচে। খুব হালকা একটা গন্ধ ছিল। ভাল লাগত।

    আরও একটা গাছ, তার গুণাগুণ জানিনে, বসিয়েছিলুম বারান্দার পাশে। নাম বলল থ্যাসথেসিয়া। গাঁয়ের লোক,কি শুনতে কি শোনে, ওই রকমই বলে। আসল নাম নিশ্চয়ই কাছাকাছি কিছু একটা। খানিক অশথ পাতার মতো দেখতে পাতা তার। খুব বড় হতে দেওয়া হয়নি গাছটাকে। কেটে ফেলা হয়েছিল। বাবা একবার বলল ওইরকম গাছ আরেকটা কোথায় দেখেছে। কাণ্ডটা নাকি সবুজ। আমি অবশ্য তার আগে বা পরে ওই গাছ আর কোথাও দেখিনি।

    আর এল প্রচুর ইউক্যালিপটাস। খুশি হয়েছিলুম। বর্ধমান-মেদিনিপুরে গিয়ে খালি দেখেছি ওই গাছ। কি সুন্দর পাতা ঘষলে তেজালো গন্ধ বেরোয়। সর্দি হলে সেরে যায়। লম্বা সোজা গাছ হয়। বেশ ভালো। আর কোন বইয়ে পড়েছিলুম না, সাজানো বাংলোর সামনে ইউক্যালিপটাসে ঘেরা রাস্তা, আর সে বাড়ির নাম, দ্য ইউক্যালিপটা? অনেক এল এই গাছের চারা। ঘাসজমির পারে রাস্তা বরাবর এক সরি লাগিয়ে দিলাম। নিয়মিত নজর রাখা হত। সেই গাছগুলোও পরে অনেক উঁচু হয়েছিল। লোকে খুব নিন্দে করত ওই গাছের। নাকি মাটি থেকে সব রস শুষে নেয়। মাটিটাকে বালি বালি করে দেয়। কিন্তু দেখতে কত ভালো লাগে বলো? তারপর লম্বা লম্বা গাছগুলো থেকে যখন বাকল ঝরে পড়ে, গাছের গা-টা কেমন চকচকে রুপোলি হয়ে থাকে। আর কোনো গাছে দেখাও দেখি ওরকম। অমনি ভাবতাম তখন। দু-তিন তলা উঁচু হয়ে গেল গাছগুলি। তারপর, একদিন ঝড়ের দিনে গোটা দুয়েক গাছ উপড়ে এসে পড়ল ইলেকট্রিকের তারের ওপর। ব্যাস। তিন দিন আলো-পাখা বন্ধ। শিকড়গুলি দেখি,খুব গভীরে ঢোকে না, ওপর দিয়েই ছড়িয়ে থাকে। গাছ খুব লম্বা হয়ে গেলে তাই ভরকেন্দ্র যত মাথার দিকে উঠতে থাকে, অল্প হাওয়াতেই দুলতে থাকে কাণ্ডগুলো, মচ মচ করে আওয়াজ হয়। আর বেশি হাওয়া দিলে ছড়ানো শিকড় উপড়ে নিয়ে এসে পড়ে ইলেকট্রিকের তারের ওপর।
  • achintyarup | 125.111.248.134 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ ১৬:৩৯692753
  • দীপ্তেনদার লেখা আমার ৭০ যখন পড়ি, তখন একটা ঘটনার বর্ণনায় এসে চোখটা একেবারে আটকে গিয়েছিল। প্রায় হুবহু এই গল্প তো আমি বহুবার শুনেছি ছোটবেলা থেকে, মায়ের কাছে। আমার যে রকম বয়সের কথা আগে লিখেছিলুম, তার কাছাকাছিই কোনো সময়ের কথা হবে। বাঘাযতীনের কাছে লায়েলকায় বাস থেকে নেমে নাকতলায় আমাদের বাড়িতে যেতে হত। মানে, ওটা ছিল একটা রুট। অন্য দিক দিয়েও যাওয়া যেত। মা আমাকে নিয়ে কোথাও থেকে বাড়ি ফিরছিল। দুপুরের দিকে হবে, লায়েলকায় পৌঁছে দেখে সব শুনশান, অস্বাভাবিক রকমের নিস্তব্ধ। দোকান-টোকান সব বন্ধ, রাস্তায় লোকজন প্রায় নেই, একটা কেবল ৪১ নম্বর বাস দাঁড়িয়ে। সেইদিকে চোখ পড়তেই হঠাৎ দেখে, বাসের নিচ থেকে দুটো বন্দুকের নল বেরিয়ে আছে। বাচ্চা সঙ্গে নিয়ে আমার ২৩ বছরের মা খানিক দিশেহারা বোধ করছিল নিশ্চয়ই, এমন সময় বন্দুকধারীদেরই একজন বোধহয় বলল, দিদি, আপনি চলে যান,কোনো ভয় নেই। মা নাকি এক হাতে আমাকে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে কোনোরকমে দৌড়ে বাড়ি পৌঁছয়। এ সব ঘটনা আমার মনে থাকার কথা নয়। মনে নেইও। ওই রকমই ছিল ওসব এলাকা তখন।
    মাকে তখন বেরুতে হত প্রায় রোজই। জ্যাঠামণি বা পিসিমণি নিয়ে যেত কোথাও কোথাও, কোথাও আবার একাই যেতে হত। এবং যাতায়াত বা অন্যান্য খরচ-খরচার জন্য নিজের একটা পয়সাও ছিল না। লিটারালি। আমার ভারি শান্তশিষ্ট নিরীহ স্বভাবের মা পরে বলেছে, কী করে যে একা একা ওই সব দৌড়াদৌড়ি করতাম এখন বুঝতেই পারি না। আসলে সব লাজলজ্জা-ভয়-সঙ্কোচ লোপ পেয়ে গিয়েছিল। উকিলদের কাছে যেতে হত, পার্টির বিভিন্ন নেতাদের কাছে যেতে হত, দমদমে যাওয়া তো ছিলই, তা ছাড়া বিভিন্ন অফিসারদের কাছেও যেতে হত। হাওড়ার ডিএম তখন ছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত-প্রেমী আইএএস দীপক রুদ্র। পরে ওঁর গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবামও বেরিয়েছে। মাকে দূর-দূর করে বের করে দিয়েছিলেন ঘর থেকে। বলেছিলেন, লজ্জা করে না আপনার? কার হয়ে কথা বলতে এসেছেন জানেন? কত বড় ক্রিমিনালের সঙ্গে ঘর করেছেন আপনি জানেন না?
    খুব অপমানিত হয়েছিল মা। কিন্তু সে সব তখন গায়ে লাগেনি। অনেক পরে বলেছে, কী আর করবেন, উনি যেমন ইনফরমেশন পেয়েছিলেন সেই অনুযায়ীই কাজ করেছেন।
    মজার ব্যাপর হল, দীপক রুদ্রর ছেলে পরে আমার সহকর্মী ছিল। ওর সঙ্গে অবশ্য এসব বিষয়ে কোনোদিনই কথা হয়নি।
    মা যখন বাড়িতে থাকত না, তখন নাকি আমি মায়ের একটা শাড়ি বুকের কাছে পোঁটলা করে নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াতাম, আর ওইটা নিয়েই ঘুমুতে যেতাম। বলা বাহুল্য, এ সবই শোনা গল্প।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ ১৭:০৩692754
  • অনেক বাচ্চাই এটা করে। খুব কমন জিনিস। মায়ের গায়ের গন্ধ খোঁজে।
  • I | 192.66.87.221 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ ১৯:৩০692755
  • হাওয়ায় হাওয়ায় মায়ের গন্ধ থাকে।
  • RITO | 125.111.248.134 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ ২০:৩১692756
  • বেশ ভালো এগচ্ছে। পর্ব থেকে পর্বান্তর বেশ সুন্দর। যেমন চলছে চলুক।
  • achintyarup | 125.111.248.6 | ২৫ জানুয়ারি ২০১৬ ১৯:১২692757
  • শুকদেববাবুর কথা ভাবছিলাম ।

    ছোট্টোখাট্টো টাকমাথা মানুষ, ধুতি আর ঘিয়ে রঙের পাঞ্জাবী পরনে, ঘ্যাঁষ করে সাইকেলটা আমাদের বারান্দার থামের পাশে দাঁড় করিয়ে ছোটো একটা লাফ দিয়ে নেমে পড়তেন । কোলবালিশের ওয়াড়ের মতো ফুল ফুল ছাপ ছাপ ওয়াড়ের মধ্যে এস্রাজটা বাঁধা থাকত সাইকেলের রডে। সব সময় এক গাল হাসি। সরু, প্রায় মেয়েলি গলায় কথা কইতেন। চিত্তকাকু বলত, ওনাকে শাড়ি পরিয়ে দিলে যাত্রায় কোনো মহিলার ভূমিকায় দিব্বি মানিয়ে যাবে । আমাদের মনে হত, একটু মেকআপ দিয়ে দিলে সন্তোষ দত্তের সঙ্গে কোনো তপাৎ থাকবে না । ভারি ভালো নির্বিরোধ স্বভাবের মানুষ ছিলেন। মাকে বাজনা শেখাতে আসতেন ।

    আমি তখন ক্লাস এইট নাইন বোধ করি। তার আগে ওঁকে দেখিনি কখনো । বাবা-ই কোনো পরিচিতের সূত্রে নিয়ে এসেছিল । আমরা বলতাম জ্যেঠু । তার আগে অত রকমের বাদ্যযন্ত্রে পারঙ্গম কাউকে দেখিনি । বাজনা শেখাতে এসে গপ্পে মজে যেতেন, বাদামভাজা মুড়ি খেতেন, চোখ বুজে বাজাতে বাজাতে বিপজ্জনকভাবে ডাইনে বাঁয়ে সামনে পেছনে দুলতেন, পেছনের দিকে একেকবার এত হেলে যেতেন, আমাদের মনে হত দেয়াল না থাকলে পড়েই যেতেন বুঝি । কিন্তু ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীত ধৈর্য ধরে বসে সেই আমার প্রথম শোনা । কম্পুটার, টিভি, টেপ রেকর্ডার, রেকর্ড প্লেয়ার ইত্যাদি না থাকার কারণে অন্য কোনো ডিস্ট্র্যাকশন ছিল না । সন্ধেবেলা পড়াশুনো শুরু হওয়ার আগে, এমনকি পড়তে পড়তেও বাজনা কানে ঢুকতো । ঝিম-ধরা গাঁয়ের জোনাকি-জ্বলা সন্ধ্যায় সেই ছিল আমাদের নিজেদের ডোভার লেন। ভালো লাগত ।

    মা যে যন্তরটা বাজাতো, তার নাম দিলরুবা । এস্রাজের মতোই ধরন ধারন, কিন্তু সাইজে বেশ খানিকটা বড়ো । অনেকটা ভারি। তরবের তার, অর্থাৎ ওপরের মূল তারগুলির নিচে, যন্ত্রের গা ঘেঁষে যে তারগুলি ছিল, যেগুলি অন্য তারের আওয়াজে কাঁপত এবং অনুরণনে ভারি মিষ্টি শব্দ বের হত, সেই তারের সংখ্যাও এস্রাজের তুলনায় অনেক বেশি। পাতলা চামড়ায় ঢাকা খোলটা বড়। খোলের চেহারাও অন্য রকম। এস্রাজের চেয়ে আরেকটু গম্ভীর আওয়াজ । বাঁ পা হাঁটু থেকে মুড়ে তুলে বসে, দু পায়ের পাতার মধ্যে খোলটা সেট করে ছড় দিয়ে বাজাতে হত । কাঠের ছড়, তাতে ঘোড়ার লেজের এক গোছা চুল টানটান করে বাঁধা । সে চুলে তেলা হাত লেগে গেলে চলবে না । তারে আওয়াজই উঠবে না । নিয়মিত তাই রজন দিয়ে ঘষতে হত । ফলে সেই প্রথম রজন চোখে দেখলুম । ভেঙ্গে পড়া রজনের ছোট্ট কুচি মুখে পুরে চিবোতে ভাল্লাগতো । পরবর্তীকালে সেই রজন স্পিরিটের সঙ্গে মিশিয়ে চেয়ার টেবিল বার্নিশ করার চেষ্টাও করেছি । সে যাগ্গে । ছড় ধরার কায়দা ছিল । তা দিয়ে কতটা চাপ তারের ওপর দিতে হবে তা অভ্যাস করে যন্তর থেকে সুর বের করতে খানিক সময় লেগেছিল আমার । কিন্তু ওই আওয়াজ বের করা পর্যন্তই । সুরশিক্ষা আমার হয়নি ।

    মা-কে প্রথম শিখিয়েছিলেন, যদ্দূর মনে পড়ে, ইমন । তারপর, ঠিক এই রকম অর্ডারে কিনা মনে নেই, দেশ শিখিয়েছিলেন, মেঘ, মল্হার, শিবরঞ্জনী, কলাবতী, বাগেশ্রী... কিছু কিছু রাগ শুনে চেনা গানের কথা মনে হত, কিছু রাগের গানের কথা বলেও দিতেন শুকদেববাবু, বাজিয়েও শোনাতেন । আমি মাঝে মাঝে মায়ের খাতা সামনে রেখে বাজাতে চেষ্টা করতুম । বিশেষ সুবিধে করতে পারিনি বলাই বাহুল্য । এত কিছু শিখিয়েছিলেন, কিন্তু এত দিন পরে ভদ্দরলোকের কথা মনে হলেই সব কিছু ছাপিয়ে কেন জানি না আমার দেশ রাগের কথা মনে হয় । নোটেশনগুলি আবছায়া মনে আসে, মাকে বলি খাতাটা দাও, দেখি মা খাতা খুঁজে পায় না । কিন্তু আমার মনে লেগে থাকে, রে পা মা মা রে গা নি সা/ মা রে মা পা রে ণি ধা পা/ নি নি নি সা রে/ নি সা সা ণিধা পাধা/ ম ণি ণি ধা ধা পা/ মা গা রে গা সা, আর তার পরেই ভেজা বকুল ফুল ছড়িয়ে যায় আমার মুখে মাথায় ঘর জুড়ে । তার পরেই আমি শুনতে পাই, বকুলমুকুল রেখেছে গাঁথিয়া/ বাজিছে অঙ্গনে মিলনবাঁশরি/ আনো সাথে তোমার মন্দিরা,/ চঞ্চল নৃত্যের বাজিবে ছন্দে সে/ বাজিবে কঙ্কণ, বাজিবে কিঙ্কিণী, তারপর ধাক্কা দিয়ে দিয়ে ঝং- কা- রি- বে- মঞ্জীর রুণু রুণু । আমি বাড়িতে, ট্রেনে, বাসে, ট্যাক্সিতে যেখানেই থাকি না কেন, বাইরে তখন প্রচণ্ড শীত হোক বা অসহ্য গ্রীষ্ম, আমার চারপাশ ঘিরে বৃষ্টি পড়তে থাকে ।

    আমি অধিকারী নই, সঙ্গীত-শিক্ষিতরা মাপ করবেন, স্মৃতি থেকে আন্দাজে কিছু নোটেশন লিখে দেওয়ার জন্য ।

    কিন্তু দেশ রাগ শেখাতে গিয়ে এই গানটার কথা কখনো বলেননি তো শুকদেববাবু । তাই তোমার আনন্দ আমার পর বাজিয়ে শুনিয়েছিলেন । রবীন্দ্রনাথের বহু বর্ষার গান দেশ রাগে ভর করে, সে কথা বলেছিলেন, কিন্তু এই গানটার কথা বলেননি । অথচ স্বরগুলো ওখানে পর পর এমনি ভাবে এসে লাগে, যে তারপর ওই কথাগুলোই মনে চলে আসে আমার । যেমন মেঘ রাগ যখন শিখিয়েছিলেন, পা ণি পা/ নি নি নি সা-- আমি হৃদয়ে মন্দ্রিল পষ্ট শুনতে পেতুম । মল্হারে, কলাবতী, শিবরঞ্জনীতেও কোনো না কোনো গানের টুকরো চিনতে পারতুম । তবে ওই পর্যন্তই । বলেছি না, সুরশিক্ষা আমার হয়ে ওঠেনি ।

    শুকদেববাবু কার কাছে বাজনা শিখেছিলেন জানি না । কোন যন্ত্রে সব চেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন, তাও জিগ্যেস করিনি কখনো । আমাদের এখানে বাজাতেন দিলরুবা, এস্রাজ সঙ্গে আনতেন, কখনো আনতেন বেহালা । তা ছাড়াও সেতার এবং বাঁশি বাজাতে শুনেছি ওঁকে । সময়ের হুঁশজ্ঞান ভুলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাজিয়ে যেতেন । ওঁর কাছেই প্রথম তারসানাই যন্ত্রের কথা শুনি আমি । অকৃতদার ছিলেন, সারা দিন রাত বাজনা নিয়েই থাকতেন । বাড়িতে যাইনি কখনো, কিন্তু শুনেছি একটাই বড়ো ঘর ছিল সেই একতলা বাড়িতে (সম্ভবত ভাড়া বাড়ি), ঘরে কোনো আসবাব ছিল না, মেঝেতে তোষক পাতা, এবং নানা বাদ্যযন্ত্র সে ঘরের মেঝেতে, দেওয়ালে । এ বর্ণনা আমি ওঁর কাছে শুনেছিলাম, না কল্পনা করে নিয়েছিলাম, এতদিন পরে তা আর বলতে পারব না ।

    শুধু দেশ রাগ নয়, শুকদেবাবুর কথা মনে এলে একটা গপ্পোও মনে আসে আমার । আড্ডাবাজ মানুষ ছিলেন, গানবাজনার ফাঁকে প্রচুর গল্প করতেন । একদিন কী কারণে মনে নেই, ভাষা নিয়ে কথা হচ্ছিল, বলছিলেন, শুধু দেশ ভেদে কি জেলা ভেদেই নয়, অঞ্চল ভেদেও পাল্টে পাল্টে যায় মুখের ভাষার ধরন । বললেন, কদিন আগেই নাকি অন্য কোনও গ্রামে গিয়েছিলেন, রাস্তার ধারে এক জায়গায় চাটাই পাতা, তার ওপর একটি শিশু। আর এক মহিলা আর একজনকে চেঁচিয়ে বলছে, ওরে ও পোড়ারমুখি ! তোর বেট্টা চেট্টাইয়ে হেগ্গেচ্চে ! সে অদ্ভুত সুরে একটু টেনে টেনে বলা অদ্ভুত কথাটা আমার কানে লেগে আছে ।

    আমার ভাই তখন ছোট । তার নাম সন্দীপন । বাজনা শেখার সময় মাঝে মাঝে মাকে বিরক্ত করত । তখন এস্রাজে বা বেহালায় ছড় টেনে ওর নাম ধরে ডাকতেন শুকদেববাবু । যন্তর বলছে, সন্দীপন, ও সন্দীপন ! এদিকে এসো । তাই শুনে ভাই ভারি মজা পেত । আমিও ।

    ইস্কুলের কোয়ার্টারে জায়গা বেশি ছিল না । আমার মাধ্যমিক এগিয়ে আসছিল । পড়াশুনোর সময় বাড়ছিল । সন্ধে বেলা লম্বা সময় ধরে বাজনা চললে বিরক্ত হচ্ছিল বাবা । মা দিলরুবা শেখা ছেড়ে দিল । শুকদেববাবুর আসা বন্ধ হয়ে গেল । ওঁর বাড়ি খুব একটা কাছে ছিল না । ফলে দেখাও আর হত না বিশেষ । কোনো কারণে যদি আমাদের গাঁয়ের দিকে আসতেন কালেভদ্রে, তখন একবার ঢুঁ মারতেন । সেও হয়তো বছরে এক বার । তারপর তা-ও না । বেশ কয়েক বছর দেখাই হয়নি আর । অমি তখনও গ্রামেই কি? নাকি শহরে চলে এসেছি? একদিন শোনা গেল, মণ্ডলা পুকুরের পাশের সেই এক ঘরের বাড়ির ভেতর মরে পড়ে আছেন শুকদেববাবু । বোধ করি হপ্তা খানেক পরে, বাজনার আওয়াজ আর কানে আসে না দেখে দরজা ভাঙ্গে প্রতিবেশীরা ।
  • 0 | ২৫ জানুয়ারি ২০১৬ ১৯:৩৫692758
  • কেমনি ক'রে এতো সুন্দর লেখেন!
    যাই হোক আশা করি এ'লেখার নটবরত্ব ঘটবে না এবং একসময় শেষ হয়ে বই বা গুরুর্চটি হয়ে বেরুবে :-)
  • R | 125.111.248.6 | ২৫ জানুয়ারি ২০১৬ ১৯:৪৬692760
  • এই লেখা শুধু 'ভালো' বলা খুব কঠিন গো। হৃদয় খুঁড়ে উঠে আসছে তো। একটি গ্রাম এবং মফসসল শহরের সঙ্গে এখনও বেশ যোগাযোগ। বেশ কয়েকজন 'শুকদেববাবু' গল্প বাবার কাছে শুনেছি। কারোকে দেখেওছি। তাঁদের মুখগুলো ভেসে উঠল। পরের কিস্তির অপেক্ষায় রইলাম।
  • R | 125.111.248.6 | ২৫ জানুয়ারি ২০১৬ ১৯:৫২692761
  • *'শুকদেববাবু'র
  • সে | 198.155.168.109 | ২৫ জানুয়ারি ২০১৬ ২৩:৩৩692762
  • অনেক কিছুর সংগে রিলেট করতে পারছি।
    রজনের গন্ধ এখনো মনে পড়ে।
  • i | 134.168.158.206 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:১০692763
  • এই পর্বটা অসম্ভব সুন্দর।
  • Atoz | 161.141.84.176 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:৩৫692764
  • আহ, খুব খুব খুব ভালো লাগছে।
  • I | 192.66.86.189 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৬ ১০:৫০692765
  • দিলরুবা শেখাটা খুব সিলেবাসের বাইরে।আমার ছোটবেলা মানে রাশি রাশি হারমোনিয়াম, রবিঠাকুর আর মোমের পুতুল নজরুল।সেখানে দিলরুবার নামই শোনেনি হয়তো কেউ, শেখা তো দূরস্থান।
  • | ২৬ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:১৩692766
  • হুঁ আমারও প্রায় তাই। আমার বাবা সেতার শিখতেন ও বাজাতেন। তা বাদে সব রবীন্দ্রসংগীত। নজরুলও নেইই প্রায়।
  • san | 113.245.14.101 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৬ ১৩:৪৬692767
  • খুব সুন্দর , খুবই সুন্দর -
  • ranjan roy | 24.96.87.126 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৬ ২০:৪৬692768
  • যথারীতি ভালো টই ডোবানোর অভ্যেসে বলি---!
    দিলরুবাটি কিনেছিলেন অচিন্ত্যর সেজজ্যেঠু-- আমার মেজকা।
    কিনেছিলেন সেই সময়ের নামকরা কোন বাদ্যযন্ত্রের দোকান থেকে, সম্ভবতঃ রসা রোডের। বাবাকাকাদের মধ্যে ওঁরই গলায় সুর খেলত।
    তিনি সংযুক্ত পরিবারের থেকে স্বতন্ত্র সংসার পাতার পরও অধিকারবোধ ফলান নি। ফলে ওতে আমার মেজদা ও ন'কাকা , অচিন্ত্যর ন'জ্যেঠু পর্যন্ত হাত পাকানোর চেষ্টা করতে সাহ্স করেছিলেন।
    মনে পড়ে পার্কসার্কাসের সংযুক্ত পরিবারের ভাড়াবাড়ির সামনে একটি বড় বাড়ির মেজোনাইন ফ্লোরের , আমরা বলতুম নয়াবাড়ি, ব্যাচেলার ডেনে পার্থবাবু বলে একজন কাকাকে নিয়মিত শেখাতে আসতেন।
    কিন্তু ধ্রুপদী সংগীতশিক্ষার প্যাশনে কিছু কম পড়ায় সেটা খুব বেশি এগোয় নি।
    পরে অচিন্ত্যর পিতৃদেবের হাত ধরে সেটা পৌঁছল আমতা থানার অন্তর্গত জগৎবল্লভপুর গাঁয়ে। ততদিনে ওটার বারোটা বেজে গিয়েছিল। উনি সারিয়ে নিলেন। কিন্তু গায়ে লাগানো মরক্কো লেদারের আবরণটি হাওয়া হয়ে দেশি লেদার এসে গেল।
    শেষে অচিন্ত্যদের উঁচু ক্লাশের পড়াশুনো নষ্ট হবার ভয়ে কাকিমা সংগীত শিক্ষা থেকে অবসর নিয়ে ঘরের দেখাশোনায় নিরত হলেন।ফলে দিলরুবাটি শীঘ্রই তার আইনি অধিকারীর কাছে ফিরে গেল।
    আর আজ সেই দিলরুবা কেউ বাজায় না, কদর করে না।
    অবহেলায় ছেঁড়াতার নিয়ে ছড় ও রজনবিহীন হয়ে সেটি কোন ঘুপচিতে বসে গঙ্গাযাত্রার দিন গুণছে।
  • সে | 198.155.168.109 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৬ ২০:৫২692769
  • কেন ওটা সারিয়ে সুরিয়ে নেন না?
  • achintyarup | 125.111.242.12 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৬ ১৭:২০692771
  • কোন ভুলে এল ভুলি তোমার পুরানো আখরগুলি...
    কোন ভুলে-যাওয়া খেয়ালের তলায় চাপা পড়ে থাকে কোন পুরানো আখর, আর কোন ভুলেই বা তা উল্টে পাল্টে আড়মোড়া ভেঙ্গে সোঁদা গন্ধ মাখা ঝরা পাতার চাদর দু হাতে সরিয়ে উঠে বসে, তা বলতে পারিনে। শুধু জানি, এক এক দিন, হঠাৎ এক একটা ঘটনায় যখন পাল্টে যায় সব কিছুর মানে,যখন বিকালটা হঠাৎ করে মিষ্টি আলোর ঘোমটা টেনে নববধূর মত সেজে বসে, তখন মনের তলার থেকে উঠে আসে কোনো গান কি কবিতা, কিম্বা এক টুকরো ছবিই বা। ওপর থেকে দেখলে কিছুই বুঝিনে তার মানে, শুধু দেখি মাধবীশাখায় উঠিতেছে দুলি দুলি সেই পুরানো আখরগুলি, অথবা ঝাপসা হতে থাকা সেই ছবির টুকরোখানা...

    খুব পষ্ট করে প্রত্যেকটা ঋতুর চেহারা বুঝতে পারতুম জানো, যখন গাঁয়ে থাকতুম। শীতের শেষ দিক থেকেই আমার পায়ের কাছে দক্ষিণের জানালা দিয়ে এক ঝলক বাতাস এসে জানিয়ে দিয়ে যেত বদলাবার সময় এসে গেছে। জানালার ঠিক বাইরে ছোট্ট ডুমুরগাছ, চারাই বলা যেতে পারে, তাকে বাড়তে দেওয়া হত না বেশি, তার ডালে এসে চিড়িক-পিড়িক করে ডাক দিত টুনটুনি পাখি আর তার বৌ। ভারি মিষ্টি তারা দুজন। কোত্থেকে গাছের আঁশ, পাটের ফেঁসো কুড়িয়ে এনে লম্বা ঠোঁটে গুটি তিন ডুমুরপাতা সেলাই করে কেমন ঘর বানিয়ে ফেলত তারা, অবাক হয়ে দেখতুম। একেবারে আমার হাতের নাগালের মধ্যে। জানালার গরাদে নাক ঠেকিয়ে দেখতুম, নড়াচড়া করলেই চিড়িক করে উড়ে পালাত তারা। ঘর তাদের বানানো হয়ে যেত দু দিনের মধ্যেই। বেশ শক্তপোক্ত হত সেই বাসা। তারপর তার ভেতরে গদি বসানো হত। সে যা গদি, কী বলব। খুব যত্ন করে বানানো হত গদি। গাছের শুকনো আঁশ, একেবারে ফুরফুরে পাতলা, শিমুল তুলোর কুচি আর তুলতুলে পালক দিয়ে গোলালো গদি তৈরি হয়ে যেত এক-দেড় দিনে। কাপের মতো সেই গদির আকার। ধারের দিকগুলো পাতলা হয়ে মিশে গেছে ডুমুর পাতার দেওয়ালে, আর মাঝখানটা প্রায় ইঞ্চি দুয়েক পুরু আর ভারি নরম। পাতার ওপর রোদ এসে পড়ত, আর কেমন সুন্দর সবজে আলোয় ভরে যেত সেই টুনিঘর, অবাক হয়ে দেখতুম। বেশিক্ষণ কিন্তু দেখা যেত না একটানা। তাহলে আর আসবেই না টুনি আর টুনিবৌ। মাঝে মাঝে, একটু সময় দেখা যেত, আর বাকি সময়টা তাদের প্রাইভেসির কথা মাথায় রেখে জানালা থেকে দূরেই থাকতুম আমি। আমার সেই দক্ষিণ খোলা জানালা।

    তারপর দেখা যেত সবজে-ধূসর ছোট্ট মাথা আর লম্বা ঠোঁটওয়ালা টুনি কি টুনিগিন্নী গম্ভীর হয়ে বসে আছে বাসার ভেতর, গদিয়ান হয়ে। আর অন্যজন এখানে সেখানে খুঁজে পেতে পোকাটা-মাকড়টা নিয়ে উড়ে উড়ে আসছে মাঝে মাঝে। দুজনের কেউই বাসায় থাকত না, এরকম খুব কমই হত, কিন্তু হত তা-ও। তখন চুপি চুপি জানালার গরাদের ফাঁক দিয়ে হাত বাড়িয়ে একটা দুটো আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেখতুম তাদের বাসার ভেতরটা কেমন। দেখতুম খুদে খুদে তিন-চারখানা ডিম রাখা রয়েছে তুলতুলে নরম-গরম গদির ওপর। তারপর হাত সরিয়ে নিতুম। মানুষের গায়ের গন্ধ পেয়ে টুনটুনি পাখিরা যদি ওদের ত্যাজ্য-ডিম করে দেয়! হপ্তাখানেক কি তারও পর ডিম ফুটে ছানা বেরুতো। পালক-টালকের বালাই নেই তাদের, পাতলা চামড়া দিয়ে তখনও চোখ ঢাকা। সেই চোখ ফুটতে লাগত আরও দিন কয়েক। ততদিনে রোঁয়ার মত পালকও বেরুতে শুরু করত। কিন্তু তারপর কবে যে তারা সত্যিকারের পাখি হয়ে উঠত, কবে যে উড়তে শিখত, আর কবে যে বাসাখানি ফেলে ফুড়ুৎ করে কোথায়-কে-জানে চলে যেত, সে আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারিনি। ভারি ইনট্রিগিং।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন