এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • গড়িয়াহাট... আর একটা সাদামাটা বেড়ে ওঠার গল্প

    Kanchan Sanyal লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ২৩৬১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kanchan Sanyal | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১৭:১৫704053
  • গড়িয়াহাট... আর একটা সাদামাটা বেড়ে ওঠার গল্প

    তার বড় হযে ওঠার সময় টা অনেকটাই ছিলো গড়িয়াহাট কে ঘিরে । বলা যেতে পারে, যেন গড়িয়াহাট এর ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা ! বালীগঞ্জ এর পুরনো পাড়ায় পৈত্রিক বাড়ি, যেখান থেকে মিনিট পনেরোর হাঁটা বা সাইকেল পথ পেরলেই পৌছে যাওয়া যেত, যখন তখন। কাজে কাজেই কোনো একটা ছুতো পেলেই ... চলো গড়িয়াহাট !

    সেই কোন ছোটবেলায় দিদির সাথে , বাবার হাত ধরে ক্লাবে সাঁতার শিখতে যাওয়া গড়িয়াহাট পেরিযে...সেই থেকে সুরু। মা সাবধান করে দিতেন , গড়িয়াহাট এর মোড়ে খুব ভিড় , অনেক গাড়ী বাস , বাবার হাত ছাড়বে না কক্ষনো...সেও শক্ত করে বাবার হাত ধরে ভযে ভযে পেরিয়ে যেত জায়গাটা, বাপ রে ! একবার গোল পার্ক পৌঁছে গেলে যেন নিশ্চিন্ত !

    তারপর ধীরে ধীরে সে বুঝতে শিখলো যে গড়িয়াহাট টা বেশ একটা মজার জায়গা ! স্কুল এ নোতুন ক্লাস এর বই কেনা থেকে শুরু করে পূজো , নোতুন বছরের জামা কাপড় , মায় রোজকার বাজার হাট, সবকিছুই যাকে বলে 'ইয়াহ পে উপলব্ধ '!

    তখন আবার গড়িয়াহাট এ গেলেই একটু পরেই কেমন খিদে পেয়ে যেতো, অপেক্ষা কোরে থাকতো কখোন বাবা জিজ্ঞাসা কোরবেন, 'কী , খিদে পেয়েছে ? কিছু খাবে তোমরা ?' ব্যাস ! কিছু খাবে মানে ! কোনটা ছেড়ে কোনটা খাবে ? এদিকে 'দাশ কেবিনের' ফিস ফ্রাই তো ওদিকে 'ফার্ন হোটেল' এর চিকেন কবিরাজী ; ‘ সোনালীর' মশলা দোসা নাকী 'হাতার্রী' তে চাইনিস ! ওহ, পুরো কন্ফুসন ! বেরোবার আগে ছাতে দিদির সাথে বোসে রীতিমতোন প্ল্যান করা হতো যে আজকে কোথায় খেতে যাওয়া হবে!

    এটা অবশ্য অনেকটা আগের কথা. ইতিমধ্যে আরো খানিকটা বড় হযেছে সে, সময় টা স্কুল এর শেষের দিক, ভালো সাঁতারু বোলে একটু আধটু পরিচিতি বাড়ছে আশে পাশে...ঠিক এই রকম একটা সময় থেকে ধীরে ধীরে নোতুন একটা , কেমন যেন গা শীর শীর করা অনুভূতি, নেশার মতো চারিয়ে যেতে থাকলো, এক নতুন উপলব্ধি !
    তারা তো ছিলোই শুরু থেকেই আশে পাশে, অনেকের সাথেই তো এক সাথে বড় হযে ওঠা, কিন্তূ হটাথ যেন কোথাও একটা বদল শুরু হলো। তাদের আড় চোখের চাউনি , দেখেও না দেখার ভান, অকারণে যখন তখন হেসে ওঠা, কথায় কথায় মাথার ওপর হাত তুলে চুল গোছানো, অদ্ভূত একটা অ্যাঙ্গেল এ ঘাড় বেঁকিয়ে তাকানো, আর পূজোর সময় শাড়ি পড়ে হটাথ কেমন যেন তুমুল বদলে যাওয়া...সেই প্রথম মনে হলো ক্যাবলা হতেও এত ভালো লাগে !
    এর শুরুটাও কিন্তু সেই গড়িয়াহাট এই। বিকেল বেলা চারটে সাড়ে চারটের সময় থেকে ঠিক যেন ঢল নাবত... পাঠ ভবন , সাউথ পয়েন্ট থেকে শুরু করে মুরলিধর, বাসন্তী দেবী , মডার্ন হাই, ভোর বেলায় ক্লাব এ যাওয়ার পথে কারমেল , উমেশ চন্দ্র; কাকে ছেড়ে কার দিকে তাকাবে, সেই বয়সে সকল কেই মনে হত ডানাকাটা পরী !
    এর পরেও ছিলো চৈত্র সেল এর ভিড় আলো কোরে আসা 'বৌদিরা' ! এই বৌদিদের কথা না বললে গড়িয়াহাট এর সব বর্ণনাই যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। দক্ষিণ হরতলীর না না প্রান্ত থেকে এনারা আসতেন সকাল সকাল বাচ্ছাদের সাথে নিয়ে । কাছাকাছি স্কুল গুলোতে বাচ্ছা গুলোকে ঢুকিয়ে দিয়ে সারাদিন এদিক ওদিক সময় কাটিয়ে বিকেল বেলায় ঘরে ফেরার পালা, ঠিক যেন দৈনিক 'পরিযায়ী পাখি' ! এদিকে একডালিয়া, কর্নফিল্ড রোড থেকে সুরু কোরে ওপাশে ডোভার লেন , হিদুস্তান পার্ক, কাছাকাছি সব রাস্তার ধারের বাড়িগুলোর একতলার ঘর গুলো ছিল এনাদের সমোইক আস্তানা। এই সব বাড়ির মালিক দের কাছেও এটা ছিলো একটু বেশী রোজগারের বেশ একটা সহজ রাস্তা , সাথে না না বয়সের সুন্দরী দের কল কাকলী তো ছিলো উপরি পাওনা; সবার জন্যেই বেশ একটা 'উইন উইন প্রোপসাল ' !
    একটু রোদ টা পড়লে এরা বেড়িয়ে পড়তেন দল বেঁধে গড়িয়াহাট এর এদিক ওদিকে। বেশীর ভাগ টাই যাকে বলে উইন্ডো শপিং, কিন্তু তাতেও মন্দ কেনা বেচা হতো না। পরবর্তী কালে সে বুঝতে শিখেছিলো যে গড়িয়াহাট ও তার আশে পাশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিলেন এই বৌদিরা।
    তখন অবশ্য সে বা তার বন্ধুরা কেউই এত কিছু ভাবত না। সেই সব পড়ন্ত বিকেলে , ওই সুন্দরী বৌদি দের আশে পাশে ঘুরে বেড়ানোর একটা অন্য ধরনের মাদকতা ছিল...তাদের হাঁটা, চলতে চলতে হটাথ দাঁড়িয়ে পড়ে কোনো দোকানী কে অযথা ধমকে দিয়েই আবার হেসে গড়িয়ে পড়া , তাদের ঘরমাক্ত পিঠ , নাকের ওপর বিন্দু বিন্দু মুক্তোর মতো ঘাম, বার বার কোরে বাঁধা আর খুলে ফেলা আলগা হাত খোঁপা , আর সযত্ন উদাসীনতায় অল্প সরে যাওয়া বুকের আঁচল ...সে এক অদ্ভূত আকর্ষণ, যত না চোখে ধরা পড়ত , কল্পনায় ছিলো তার থেকে অনেক গুন বেশী। প্রশ্রয় ও যেন থাকত কিছুটা, আর এক অবাক করা ভালো লাগার রেশ রেখে দিয়ে তারা ফিরে যেত শেষ বেলায়, ঘোর কাটিয়ে ছেলে গুলোও হাঁটা দিতো বাড়ীর পথে , মনে আশা ,আবার দেখা হবে কাল বিকেলে...সেই গড়িয়াহাট এর মোড়ে ।
  • | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ২২:১৪704059
  • পড়লাম।
  • b | 24.139.196.6 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ২২:৪৭704060
  • বৌদিবাজীর মহারণ্য। সব্বাই রবীন্দ্রনাথ।
  • Div0 | 132.178.234.204 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ২৩:৩৪704061
  • মোড়ে কোথায়, ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলিতে? :p
  • sosen | 177.96.30.48 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৮704062
  • আমি জেবনে ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি আর আনন্দলোক এই দুটো দোকানে ঢুকে উঠতে পারলুম না। খালি অ্যাডই দেখে গেলাম।
  • Atoz | 161.141.84.176 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪২704063
  • দোকানো আছে আনন্দলোক নামে? ঃ-)
  • Tim | 140.126.225.237 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৬704064
  • লোক না মেলা? আমি তো বিষ্টি হলেই ছাতা না থাকলে ঢুকে এটাসেটা দেখতাম। ইলেক্ট্রনিক্সের দোকান সর্বদাই মনোরম।
  • sosen | 177.96.90.125 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৯704065
  • ল্লে আবার কন্ফিউজিয়ে দিলো। লোক নয়?
  • sosen | 177.96.90.125 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫১704054
  • না, মেলা। দেখেছো!
  • Kanchan Sanyal | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১২:১৬704055
  • ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলির সামনেটায় সেই সময় খুব ভিড় হত, আমরা আড্ডা মারতাম হয় এক্ডালিয়ার মোড়ে, নাহলে গোল পার্ক
  • Div0 | 132.167.243.133 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ২০:৩৩704056
  • কতযুগ সুনির্মলদার মাছের দোকান যাইনি... হায় লেক মার্কেট!
  • Manish | 127.200.89.23 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১১:৪৫704057
  • আমি হেরম্ব তে পড়্তাম, সেই সুজগে গড়িয়াহাটে আড্ডাটা তো ছিলই।
  • ranjan roy | 24.99.88.6 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৫:১৩704058
  • ১৯৬৭-৬৮র দুটো শীতকাল। গড়িয়াহাটের মোড় থেকে রাসবিহারীর ক্রসিং। ট্রেডার্স অ্যাসেমব্লির উল্টো দিকের ফুটপাথ ধরে এ মোড় থেকে ও মোড় পর্য্যন্ত নানা ছোট ছোট গ্রুপে আড্ডা। তখন ফুটপাথ ঢেকে এত হকার ছিল না। গড়িয়াহাট ফ্লাই ওভার ছিল না। যশোদা ভবনের থেকে উঁচু কোন বাড়ি ছিল না।
    আর তরুণীরা কালিদাসের কাল থেকে আজ অবদি সবাই সুন্দরী। এ নিয়ে কোন কথা হবে না।
    কিন্তু সে দিন গিয়াছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন