এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • গল্পকথা-২ ঃ জনৈক কাপুরুষের কিস্‌সা ----------------------------

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ৬৯১০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Ranjan Roy | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২৪718303
  • জনৈক কাপুরুষের কিস্‌সা
    ----------------------------
    ১)
    শনিবারের বারবেলা। দেবাংশু এসব মানে না। কিন্তু বৌ-মেয়ে ই মানে। তাই ঘর থেকে বেরোনোর সময় চেপে গেল।
    এই দক্ষিণ দিল্লির আস্তানা থেকে কোথাও একচক্কর ঘুরে আসতে গেলে শত বাধানিষেধ। মেয়ে আর বৌয়ের রে-রে করে যুগলবন্দী শুরু হয়ে যাবে।
    --তুমি একা বেরোবে না। তুমি অন্যমনস্ক থাক। রাস্তা পেরোনোর সময় তোমার মাথায় ভাবের ঘুঘু ডাকতে থাকে। কোন দিন অ্যাকসিডেন্ট হতে পারে।একা একা কোত্থাও ঘুরবে না। এটা তোমার কোলকাতা না।
    --শনিবার বেরোবে। আমাদের সঙ্গে, ড্রাইভার নিয়ে। অটো বা মেট্রো নয়। হাঁটু নিয়ে সমস্যা হতে কতক্ষণ? বয়েসের হিসেবে চল।
    বিরক্ত হয়ে ও চুপ করে যায়।
    -- দেখ বাবা, আমরা তোমার ভালর জন্যেই বলছি।
    -- বটেই তো!
    -- সারাজীবন নিজের ইচ্ছেমত চলে আমাদের অনেক জ্বালিয়েছ, এখন মেয়ের অফিসে টেনশন চলছে। তুমি আর নতুন করে কিছু--।
    --না না; ঠিক আছে। শনিবার রোববার ছাড়া বেরোব না আর তোদের সঙ্গেই বেরোব। ঠিক আছে?
    -- বাবা , মনখারাপ কর না। তোমার জন্যে অ্যামাজন এ নতুন দুটো বই আনতে দিয়েছি। আর শনিবার একটা মলে যাব। ওখানে তোমার জন্যে এইচ অ্যান্ড এম থেকে তোমার কিছু জামাকাপড় কিনে দেব। এগুলো সব পুরনো আর জ্যালজেলে হয়ে গিয়েছে। আর বিগ চিল বলে একটা রেস্তোরাঁয় দারুণ লাঞ্চ খাইয়ে দেব। খুব এনজয় করবে, দেখে নিও।
    বেরোতে বেরোতে দেরি হয়ে গেল।
    দেবাংশু অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়ে মেয়ের ঘরে বইয়ের তাক হাটকাচ্ছিল। হটাৎ চোখে পড়ল বেণীমাধব শীলের হাফ পঞ্জিকা, নতুন এডিশন।
    --এ আবার কী? তোকে এইবয়সেই এসব রোগে ধরেছে?
    --বাজে বোকো না তো! ঠাম্মি এইটা খুব মানত। অসুস্থ অবস্থায়ও আমাকে বলেগেছে যে আমি যেন প্রতিবছর এটা কিনে ঘরে রাখি। আর বাড়ি-টাড়ি কেনার সময় যেন দিনক্ষণ দেখে নেই। তাই গাড়িটা কেনার সময় দেখে নিয়েছিলাম। তিনবছর হল একবারও অ্যাকসিডেন্ট হয় নি, গাড়িতে একটা মাইনর স্ক্র্যাচও লাগে নি। আর ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রির সময়ও দিন দেখেই গেছলাম। ঠাম্মির সবকথা হালকা ভাবে উড়িয়ে দিও না।
    তখনই কৌতুহলের বশে আজকের দিনের সময় দেখতে গিয়ে দেখল দ্বিপ্রহর আড়াই ঘটিকা হইতে সাড়ে চার ঘটিকা পর্য্যন্ত বারবেলা। শনিগ্রহের অবস্থান হেতু এই সময় বিদেশ যাত্রা নববস্ত্রপরিধান , মৎস্য, মাংস ,অলাবু, বার্তাকু ও স্ত্রীসম্ভোগ নিষিদ্ধ।
    খেয়েছে! ও তো কোলকাতার বাসিন্দে। ওর কাছে তো গোটা দিল্লিই বিদেশ। আর মেয়েটা এত মাছ-মাংস খেতে ভালবাসে, এখন এইসব পঞ্জিকা থেকে পড়ে শোনালে ওর আনন্দ মাটি হবে ,। চাই কি, দেবাংশুর ঘর থেকে বেরোনো রদ হয়ে যেতে পারে। একেবারে হাতে হ্যারিকেন কেস।

    ড্রাইভার নামিয়ে দিয়ে পার্কিং প্লেসে চলে গেছে। দেবাংশুর চোখ আটকে যায় বড় একটি রেস্তোরাঁর সাইনবোর্ডে-- লেবানীজ অ্যান্ড অ্যারবিয়ান কুইজিন।
    -- আঃ বাবা! অমন হাঁ করে দাঁড়িয়ে থেকো না। পেছনে অটো হর্ন দিচ্ছে। চল, আমার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তাটা পেরোও।
    আচ্ছা, আমি ব্যাগ চেক করিয়ে আসছি। তুমি মেল চেকিং এর দিক দিয়ে ঢুকে যাও।
    এবার ওরা কোস্টা কফির সুন্দর খাবার জায়গা পেরিয়ে চলমান সিঁড়ির কাছে যায়। এখনও দেবাংশু প্রথম স্টেপ ফেলার আগে একটু ইতস্ততঃ করে। মেয়ে-বৌ দু'ধাপ ওপরে উঠে যাচ্ছে।
    ওপরে গিয়ে দেবাংশুর মনে হল যেন কোন অচেনা দুনিয়ায় ঢুকে পড়েছে। চারদিকে এত আকর্ষক পণ্যসম্ভার। পোষাক, জুয়েলারি, জুতো, ঘর সাজানোর জিনিস, ইলেক্ট্রনিক্স-- খুব চমৎকার সাজানো। আর খাবার জিনিস কতরকম।
    -- বাবা, তোমার কি পছন্দ বল? আজ মা'র কথা শুনবো না। উইক এন্ডে আমার কথামত চলবে তোমরা। এখন বিগ চিল এ নম্বর লাগিয়ে আমরা জামাকাপড় কিনতে এইচ এন্ড এম এ ঢুকবো। তারপর খেয়েদেয়ে বাকি মার্কেটিং করে নীচে কফি খেয়ে তবে বাড়ি ফিরবো। কী পছন্দ হল?
    -- আরে একদম পয়সা উশুল!
    ওর স্ত্রী মুখ বাঁকায়, মেয়ে হেসে ওঠে।
    জামাকাপড়ের দোকানে ও হতভম্ব হয়ে যায়। কার সঙ্গে কী ম্যাচিং হবে সেটা নিয়ে এত কথা? ওর নীরস লাগে। মেয়ে যা ওকে ট্রায়াল দিতে বলে সেটাকেই ও হ্যাঁ করে। কিন্তু ট্রায়াল রুমে গিয়ে দেখে ট্রাউজারগুলো বড় ঢলঢলে। একটু কাটিয়ে নিতে হবে।
    এমন সময় মেয়ের মোবাইল বেজে ওঠে। একটু কথা বলেই ও বলে-- চল, চল। টেবিল খালি হয়ে গেছে। খেয়ে দেয়ে এসে তারপর এই কেনাকাটা গুলো ফাইনাল করব।
    ওরা বেরিয়ে আবার চলমান সিঁড়ি ধরে আর একটা ফ্লোরে ওঠে।
    দেবাংশুর একটু হাঁফ ধরেছে। মা মেয়ে এগিয়ে গেছে টেবিল দখল করতে । ও ধীরে সুস্থে হাঁটতে থাকে। ওর চোখ যায় এক স্বর্ণকেশী বিদেশিনী ও তার সঙ্গীর দিকে। হাঁটুর নীচে অবধি ঢোলা প্যান্ট ও চোখে চশমা পুরুষটির মাথায় টাক। কিন্তু স্বর্ণকেশীকে দেখতে একেবারে মোনিকা বেলুচ্চি। ওর পাশ দিয়ে একটি অল্পবয়েসি মেয়ে মোবাইলে চোখ রেখে আঙ্গুল চালাতে চালাতে হাঁটছে। ও সরে গিয়ে মেয়েটিকে এগিয়ে যেতে দিল। ওর মেয়ে বিগ চিলের দরজায় পৌঁছে গেছে, স্ত্রী ওকে ইশারায় তাড়াতাড়ি করতে বলে মেয়ের পেছন পেছন ঢুকে গেল। ও আবার দেখছে মোনিকা বেলুচ্চিকে। ওরা ব্যালকনির রেলিং এর পাশে দাঁড়িয়ে পরে নিজেদের মধ্যে হাত-পা নেড়ে কথা বলছে।
    দেবাংশু দাঁড়িয়ে পরে। কী ভাষায় বলছে ওরা? ইতালিয়ান ? ও কান পাতে। না, ও ইতালিয়ান জানে না। তবু দেখতে চায় ওরা ইংরেজি না বলে অন্য কিছু বলছে কি না। মনে মনে বাজি ধরে। এরা নিশ্চয়ই ইংরেজ বা আমেরিকান হবে না।
    ও একটু ওদের দিকে এগিয়ে যায়।
    এমন সময় ওর পেছন থেকে কেউ ওর হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মারে। ভয়ানক চমকে উঠে পেছন ফিরতেই দেখে সেই মোবাইলে চোখ রেখে চলা অল্পবয়েসি মেয়েটি।
    -- ইডিয়েট! হাউ ডেয়ার ইউ?
    ও যারপরনাই অবাক হয়।
    --হোয়াট?
    -- আর য়ু ড্রাংক অর হোয়াট? হাউ কুড য়ু?
    -- এইসা কিঁউ বোল রহে আপ? ম্যায়নে ক্যা কিয়া?
    --- শর্ম আনা চাহিয়ে আপ কো! উম্র কো দেখিয়ে। আমি আপনার মেয়ের বয়েসি হব। আপনার একটুও লজ্জা করেনি? কী রকম নোংরা বুড়ো আপনি?
    দেখতে দেখতে ভিড় জমে যায়।
    -- ক্যা হুয়া রে রেশমি? হোয়াট হ্যাপেন্ড?
    -- সী! দিস ওল্ড হ্যাগার্ড! দিস স্টাফড মাংকি অফ অ ম্যান টাচড্ মি! টাচড্ মি ইন অ্যান অফুল ওয়ে!
    দেবাংশুর হাত পায়ে জোর নেই। ও ব্যালকনির রেলিং ধরে ফেলে। এক লহমায় দেখে যে মোনিকা বেলুচ্চিরা ওর দিকে কৌতুহলের চোখে তাকিয়ে আছে।
    ও ভাঙা ভাঙা আওয়াজে বলার চেষ্টা করে যে এরকম কিছুই হয় নি।
    একটি যুবক তেড়ে ওঠে!
    -- ক্যা রেশমি ঝুঠ বোল রহীঁ হ্যাঁয়? তরিকে সে বাত কর বুডঢে! নহীঁ তো দুঁ ক্যা--?
    একজন সিকিউরিটির লোক এগিয়ে আসে। মেয়েটির উত্তেজিত কথা শুনে ও শান্ত নির্বিকার মুখে দেবাংশুর কাঁধের কাছটা খিমচে ধরে।
    এবার মরিয়া দেবাংশু উঁচু গলায় বলে--শুনিয়ে! জরুর কুছ গলতি হুই। ম্যায় তো আপকে আগে আগে জা রহা থা। আপ তো মোবাইল দেখাতে দেখতে চল রহী থী।
    সবাই মেয়েটার বয়ান শুনতে চায়। মেয়েটি জানায় যে ও মোবাইলে ওর বন্ধুকে টেক্স্ট করতে করতে হাঁটছিল। সেই সময়ে হটাৎ ও ওর ডানদিকে বাম এ একটা পিঞ্চিং টের পায়। চমকে ঘুরে দাঁড়ায়। ওর পাশে এই বুড়োটা ভালমানুষের মত মুখ করে অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়েছিল।
    --দেখুন, ও নিজেই বলল যে আমাকে মোবাইলে টেক্স্ট করতে ও খেয়াল করেছে। তার মানে ও অনেকক্ষণ ধরে আমাকে স্টক করছিল। তারপরে কাছে এসে সুযোগ নিয়েছে। ও বোধহয় হ্যাবিচুয়াল স্টকার না ভিড়ের মধ্যে হাত চালানো পাবলিক।
    দেবাংশু শুধু ছানাবড়া চোখে এর ওর ও মেয়েটির মুখের দিকে পালা করে দেখতে থাকে।
    এবার ওর কাঁধের উপর সিকিউরিটির চাপ বাড়ে।
    --চলিয়ে আংকল। নীচে ম্যানেজমেন্টকে অফিস মেঁ। আপ ভী আইয়ে ম্যাডাম। আপকো কম্প্লেইন মেঁ সাইন করনা হোগা।
    ভীড় থেকে একটা সমর্থনসূচক চাপা উল্লাস বেরিয়ে আসে।
    --এক মিনিট।ম্যাডাম, আপ জব ইন কো দেখে তব ইয়ে আপ কে কিস তরফ খড়ে থে? টু ইয়োর লেফ্ট অর রাইট?
    একটা মেয়েলি কিন্তু ভারী আওয়াজ শুনে সবাই ঘুরে তাকায়।
    -- টু মাই রাইট, ইয়েস।
    --আর য়ু শিওর?
    --ইয়েস, আ অ্যাম। নো ডাউট অ্যাবাউট ইট।
    -- দিদ ওল্ড ম্যান ইজ ক্যারিয়িং ওয়ান আমব্রেলা -- এ ফোল্ডেড ওয়ান ইন হিজ লেফ্ট হ্যান্ড।
    -- ইয়েস , হি ইজ।
    --ওয়জ হি হোল্ডিং দ্য সেম আমব্রেলা অ্যাট দ্যাট টাইম? ডু ইউ রিমেম্বার? অর ওয়জ হি সাম আদার পারসন?
    -- নো নো; দ্য সেম, স্টিল হোল্ডিং দ্য সেম পিংক রিডিকুলাস লেডিস আমব্রেলা।
    -- প্লীজ ম্যডাম, যদি ও বাঁহাতে ছাতা ধরে ছিল তো কী করে আপনার ডান বামে হাত দিল।
    -- কেন? ডান হাত দিয়ে!
    -- ভেবে দেখুন; ও আপনার ডান দিকে ছিল। তাহলে ওর বাঁ হাত আপনার দিকে ছিল। সেখানে আপনার ডান বামে ও কী করে ডান হাত দিয়ে ছোঁবে?
    একটা চাপা গুজগুজ ফুসফুস আওয়াজ ভিড় থেকে শোনা গেল।
    এবার প্রশ্নকর্ত্রী মেয়েটি নিজের ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে মেয়েটিকে বলে-- আমি প্রফেশনাল অ্যাডভোকেট। এতে আমার ফোন নম্বর আছে। বলছি-- আপনার কোন মিস্টেক হচ্ছে। যে হাত চালিয়েছে। সে সম্ভবতঃ বাঁ দিক থেকে ডান হাত চালিয়ে কেটে পড়েছে। এইসব লোকগুলো খুব ধূর্ত হয়।
    এই বুড়ো ভদ্রলোক আমার পড়শি। ইনি একটু ভ্যাবলা গোছের। কিন্তু এসব করতেই পারেন না।
    আমি এঁকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি। আপনি যদি এর বিরুদ্ধে পুলিশে কপ্লেইন করতে চান তবে একবার আমাকে ফোনে কন্ট্যাক্ট করে নেবেন। আগে আমার কথাগুলো ভাল করে ভেবে দেখুন।
    তারপর মেয়েটি সিকিউরিটির কবল থেকে দেবাংশুকে ছাড়িয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে নীচু গলায় বলে-- বাবা, আমরা এখন সোজা বাড়ি যাচ্ছি।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২১:৪৮718314
  • বারবেলা জিনিসটা কি শনিবারেও হয়? বৃহস্পতিবার হয় শুনেছি।
    গল্প পড়ছি।
  • | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২২:২৫718325
  • মনে পড়ে গেল সেই রেডিওর 'হাতুড়ীমার্কা ফিনাইল এক্সের শনিবারের বারবেলা'
  • | 213.132.214.86 | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১১:৩৬718330
  • ইয়েস শনি বারের বারবেলা।

    ও ই সময় হয়ে গেল। এই সময় টাই তো ডিভাইন কেমিক্যালের হাতুড়ি মার্কা ফিনাইল এক্স র শনিবারের বারবেলা।

    ক্যাঁচ করে একটা দরজা খোলার শব্দ!!

    আপনারা শুনছেন "শনিবারের বারবেলা"..

    আমাদের ছোটবেলার অনেক টা জুড়ে "বোরলীনের সংসার","ওয়েসিস" আর এই সব অনুষ্ঠান..
    সেই

    "মাথা র ঘন চুল যখন মরুভুমি হয়ে যায়
    ওয়েসিস নিয়ে আসে মরুদ্যান
    *** ছায়ায় ছায়ায়।
    ওয়েসিস উকুন ও মারে
    ওয়েসিস মাথাকে ঠান্ডা রাখে
    ******
    "
    ওয়েসিস ট্রিপল অ্যাকশ হেয়ার ভাইটিলাইজার!! ঃ))
  • Ranjan Roy | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৭:৪২718331
  • ২)
    সারা রাস্তা কেউ কোন কথা বলছিল না।
    দেবাংশু ড্রাইভারের পাশে উসখুশ করছিল। ড্রাইভার একবার আড়চোখে দেখে বাঁহাত বাড়িয়ে সীটবেল্টটা ঠিক করে লাগিয়ে দিল।
    তখন ও মুখ খুলল-- মিনু, ভাগ্যিস তুই সাথে ছিলি। আমাদের কোলকাতা হলে এরকম হত না। কী করে যে আমার নামে এমন--।
    ওর কথা সম্পূর্ণ হবার আগেই পেছনের সীট থেকে সী-শার্পে মেয়ের গলা-- প্লীজ, এ নিয়ে গাড়িতে আলোচনা না করাই ভাল।
    দেবাংশু যেন আচমকা একটা থাবড়া খেল।
    বাড়ি ফিরে ও ঘরে ঢুকে সোফায় বসে ঢকঢক করে অনেকটা জল খেল। মেয়ে একটু পরে ড্রাইভারের থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে দরজা লক করল। দেবাংশু একটু অবাক। এখন তো মাত্র বিকেল গড়িয়েছে। আর লাঞ্চ হয় নি। যা ঝক্কি গেল!
    এখন এই অ্যাপার্টমেন্টের চার দেওয়ালের মধ্যে অনেক নিশ্চিন্ত লাগছে। তাই খিদেটাও অনেকটা চাগিয়ে উঠেছে।
    --বিগ চিলে খাওয়া তো হল না। ঘরে ওবেলার জন্যে যা আছে তাই এখন খেয়ে নিই? অবেলায় বেশি খাওয়া যাবে না। রাত্তিরে হালকা খেলেই হবে। কী বলিস মিনু?
    মিনু উত্তর না দিয়ে এই ডুপ্লে অ্যাপার্টমেন্টের দোতলায় নিজের কামরায় যেতে যেতে মায়ের উদ্দেশে বলে-- তোমরা খেয়ে নাও মা; আমি খাব না। ইচ্ছে করছে না।
    --সে কী রে! শরীর খারাপ লাগছে? ডঃ জ্বর জ্বর করছে নাকি?
    মেয়ে কোন উত্তর না দিয়ে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
    স্ত্রী চুপচাপ কিচেন থেকে দুটো প্লেট নিয়ে এসে ঢাকা খাবার খুলে বেড়ে দেয়।
    দেবাংশু টিভি চালু করে রিমোট নিয়ে অন্যমনস্ক ভাবে চ্যানেল পাল্টাতে থাকে। স্ত্রী ঘন্টাদুই পরে এসে বলে -- আজ আর আমার কিছু রাঁধতে ইচ্ছে করছে না। রান্নার মেয়েটি অনেকটা মাশরুম স্যুপ বানিয়ে গেছে। তাই খানিকটা করে খেয়ে নিয়ে শুয়ে পর।
    --মিনু যে দুপুর থেকে না খেয়ে রয়েছে?
    -- সে তোমায় ভাবতে হবে না।
    বৌয়ের গলার আওয়াজটা কি একটু বেশি চড়া? না কানের ভুল?

    ঘুম ভেঙে গেছে। তলপেটে প্রস্রাবের তীব্র চাপ। দেবাংশু তাড়াতাড়ি লাইট জ্বালিয়ে বাথরুমে ঢুকল।
    ইদানীং এই হয়েছে এক জ্বালা! সব পরীক্ষা-টরিক্ষা করে ডাক্তার বলেছেন এটা নাকি প্রস্ট্রেট গ্রন্থি বেড়ে যাবার সমস্যা। এই বয়সে অনেকেরই হয়।
    দেবাংশু ঘাবড়ে গেছল। ও প্রস্ট্রেটের ব্যাপার্রটা জেনেছিল তসলিমার নাসরিনের লেখা পড়ে।উনি তো ডাক্তার।বলেছেন এটা বেড়ে গেলে পুরুষাঙ্গের আপাত দৃঢ়তা ও উৎত্থান নাকি অনেকের মত কিছু বুড়ো মৌলবীদের মনেও দ্বিতীয় যৌবনের ভ্রান্তি এনে দেয়। অনেকে এই অকালযৌবন বেদনায় অস্থির হয়ে নাতনীসমা মেয়েদের বিয়ে করে বসেন। তারপর এই বসন্তের মরীচিকা অল্পদিনেই হটাৎ বিনা নোটিসে পাতা না ঝরিয়েই গায়েব হয়ে যায়। তখন নবপরিণীতাটির দুর্দশার একশেষ।
    ওর মনে পড়ে যেত স্কুলবয়েসে ওদের নেতাজীনগর পাড়ায় এক পন্ডিতমশাইয়ের ওই ভাবে নকল কোকিলের কুহুডাকে উতলা হয়ে বিড়ম্বনা ডেকে আনার ছ্যাবলা গল্পটি।
  • Ranjan Roy | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৮:২০718332
  • না;, ও জানে যে ওর অমনটি হবে না। ও মরীচিকার পেছনে ছুটে বেড়ানোয় বিশ্বাস করে না। তাই বিএসসি পাশ করে একটি ব্যাংকের পরীক্ষা দিয়ে ক্যাশিয়ার হয়ে কর্মজীবন শুরু করেছিল। ইঞ্জিনিয়ারি`ডাক্তারি এসব পড়ার কথা ভাবেই নি। কোন টিউটোরিয়ালে ভর্তি হয় নি। আলাদা করে কোথাও কম্পিউটারও শেখার চেষ্টা করে নি। ইউনিয়নে চাঁদা দিয়েছে। স্ট্রাইকের সময় সবাই যোগ দিলে নিজেও যোগ দিয়েছে, কিন্তু মিছিলে না হেঁটে বাড়ি চলে গেছে।
    কোনদিন বদলি হওয়া নিয়ে কোথাও আবেদন নিবেদন করেনি। বিয়ে হলে বৌকে একবার পুরী নিয়ে গেছল। ব্যাংকের হলিডে হোম এ ছিল, ব্যস্।
    ভালভাবেই জীবন কেটেছে, মেয়ে হওয়ার বছরে প্রমোশন পেয়ে হেড ক্যাশিয়ার হয়েছিল। পয়মন্ত মেয়ে। তবে মায়ের ধাত পেয়েছে। জেদী, অ্যামবিশাস। মেয়েটার পাঁচবছর ন্যাশনাল ল' ইউনিভার্সিটিতে পড়ার খরচা শুনে ও আঁতকে উঠে বলেছিল --কী করে হবে?
    মেয়ে খিল খিল করে হেসে উঠেছিল,-- ড্যাড্, এত ভয় পাও কেন? এডুকেশন লোন নেবে?
    -- লোন সাত লাখ? আমায় কেদ দেবে?
    বৌ ঝাঁঝিয়ে উঠেছিল,-- তোমার ব্যাংক দেবে! সবাইকে দিচ্ছে তোমায় দেবে না? কী লোক তুমি?
    ---- কে শোধ দেবে?
    --- আমি শোধ দেব বাবা। কোন চিন্তা কর না। পাশ করার একবছরের মধ্যে একটা ঝিনচ্যাক চাকরি জোগাড় করব, কোন বড় ল' ফার্মে। দিল্লি-মুম্বাই বা লুরুতে।
    ---কেন কোলকাতা কী দোষ করল? এখানে বাড়িভাড়া যাতায়াত কত শস্তা।
    -- উঃ বাবা! কোলকাতায় সব শস্তা কারণ এখানে খুব কম লোকের হাতে পয়সা আছে। এখানে মাইনেও কম, কাজও কম।
    বৌ খুব রেগে গেছল। রাগলে ওকে বেশ সুন্দর লাগে দেবাংশুর। তাই ও বৌকে শান্ত করার খুব একটা চেষ্টা করে না।
    --শোন, কোলকাতা হল রিটায়ার্ড লোকেদের জন্যে আদর্শ শহর। করও কোন তাড়া নেই। সব ব্যাটাছেলে দুপুরে মাছভাত খেয়ে দোকান বন্ধ করে ঘুমোয়। তুমি তখন কোলকাতায় থেকো। মেয়ে আমার আজকালকার , ওকে দিল্লি-পুণে- মুম্বাই যেতে দিও। পাছু ডেক না। ওর জীবন, ও ঠিক করবে।
    দেবাংশু পেছনে হটে । ও ঠিকই জানে আসলে কে ঠিক করবে।
    ঘরে ফিরে আলো নেভাতে যাবার আগে ও জলের বোতল আনতে খাবার ঘরে গিয়ে ফ্রিজ খুলল।
    অবাক কান্ড! ওপরে মেয়ের ঘরে কথা বলার আওয়াজ। প্রায় ভেজানো দরজার ফাঁক দিয়ে আলোর আভাস। ভাবল, বোধহয় কোন বন্ধু বা কলিগের সঙ্গে ফোনালাপ চলছে। এদের কখন যে দিন হয় আর কখন রাত, তা ঈশ্বরই জানেন।
    কিন্তু অন্য স্বরটি যে ওর স্ত্রীর। আজকে তো মিতালি ঘুমোতেই আসেনি। এত রাত অব্দি ওরা জেগে? মেয়েটা খেয়েছে তো? বোধহয় ওকে ওর মা ওর বিছানাতেই খাইয়ে দিচ্ছে। এসব নিয়ে কথা বলে লাভ নেই। কিন্তু ঘরে ফিরে আসতে গিয়ে ওর পা মাটিতে সেঁটে যাচ্ছে যে! মা-মেয়ের চাপাগলায় উত্তেজিত কথা বার্তা শান্ত রাতে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।
  • Ranjan Roy | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৮:৫৯718333
  • --তুই বিশ্বাস করিস না যে মেয়েটি মিথ্যে কথা বলছে? তোর বাবা অমন লোক নয়। এতদিন ধরে তো দেখছি।
    -- মা, ও বাবাকে চেনে না। ওর বাবার সঙ্গে কোন ইস্যু নেই, কেন মিথ্যে কথা বলবে? ওর কী লাভ?
    -- হয়ত অন্য কারও লাভ। কেউ হয়ত ওকে লাগিয়েছে, হয়ত পয়সা দিয়েছে। মেয়েটাকে দেখেছিস্‌? কেমন বেহায়ার ময় একটা ছেঁড়া জিনের হাফ বা কোয়ার্টার প্যান্ট পরে হাজারো লোকজনের সামনে মলে ঘুরে বেড়াচ্ছে!
    -- মা, তুমি থামবে? কী সব বলছ?
    এক, এই দিল্লিতে বাবাকে কেউ চেনে না। বাবা একজন সাধারণ লোক। ভীড়ের মধ্যে একজন।পেছনে লাগতে কার বয়ে গেছে? আর ওটা ছেঁড়া খাটো প্যান্ট নয়, ওটাকে বলে--
    --তুই আর ওসব ফ্যাশনের ব্যাপার শেখাতে আসিস না। প্যান্ট ইচ্ছে করে ছিঁড়ে ফ্যাশন হচ্ছে!
    --- আমাকে বলতে দাও।
    দুই, মেয়েটা মিথ্যে কথা বলেনি।
    -- সেকি? তুই যে তখন বললি?
    -- মা , ও ভুল বলেছে। মিস্টেক।
    তিন, মিথ্যে আর ভুলের মধ্যে তফাৎ আছে। একটা হল জেনে শুনে অসত্য স্টেটমেন্ট দেওয়া--অ্যাক্ট অফ ইনটেনশন অ্যান্ড ভলিশন।
    এখানে মেয়েটা যা বলেছে সেটা ও সত্যি বলে বিশ্বাস করে, তাই বলেছে।
    ---- তাঁর মানে তুই মনে করিস ওর অভিযোগটা ফ্যাক্ট।
    -- ওইটুকু , অর্থা`ৎ কেউ ওর বাটকে পিঞ্চ করেছে। কোন ভিড়ের মধ্যে হাত চালানো পাবলিক।
    মিতালির গলা উত্তেজনায় চড়ে যায়।
    --- আর তুই এটাও বিশ্বাস করিস যে ঐ ভিড়ের -মধ্যে -হাত-- চালানো পাবলিকটি তোর বাবা?
    --- মা, আমি বিশ্বাস করতে চাই যে ওই পারভার্ট লোকটি আমার বাবা নয়, অন্য কেউ।
    -- বিশ্বাস করতে চাই? এটা আবার কী বললি?
    এক মিনিট কেউ কিছু বলে না।
    তারপর মিনু বলে-- মা, টেকনিক্যালি দেখলে সেখানে ওই মেয়েটির কাছে আর কাউকে দেখা যায় নি তো!
    ---- তবে তুই যে তখন বললি? ওইসব কোন হাতে ছাতা না কি যেন ছাতার মাথা যুক্তি? সেগুলো সত্যি নয়!
    --- আমি তা বলছি না। আসল সত্যিটা কী সেতো আমরা কেউ জানিনা। আর দেখ, বাটক পিঞ্চিং এমন ব্যাপার যে তখনি মেয়েটি চমকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আর বাবা ছাড়া কাউকে দেখতে পায় নি। সারকামস্ট্যান্শিয়াল এভিডেন্স দেখলে-- আদালত কিন্তু মেয়েটির অভিযোগকেই সত্যি বলে মেনে নেবে।
    আমি যা বলেছি সেটা কোর্টরুম প্র্যাকটিসের অভিজ্ঞ্তা থেকে। দরকার হলে কোর্টেও তাই বলব।
    -- বলছিস কী মিনু? এটা কোর্টে উঠতে পারে?
    --কেন নয়? ওই মেয়েটি আমি হলে আমিই কোর্টে যেতাম, বুড়ো মানুষ বলে রেয়াৎ করতাম না। আগেকার দিন গেছে।
    মিতালির গলার স্বর বদলে যায়।
    --তুই মেয়ে হয়ে বাবাকে কাঠগড়ায় তুলবি? এই তোর বুদ্ধি? এই তোর শিক্ষা? তাই মেয়েটাকে কার্ড দিয়ে এলি? ওর হয়ে বাবার বিরুদ্ধে তুই--!
    --- আঃ মা! এবার থাম। ভয়ের চোটে মাথাটা গেছে। আমি তো ওকে ধমকে এলাম। চাইবে এ নিয়েআর কোথাও যেন কোন কথা না ওঠে। আমার একটা সম্মান একটা পরিচিতি আছে না? বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
    --তোর ক্ষতি/ আর তো বাবার?
    --ছাড় তো! তুমি আমার মুখে কথা বসাচ্ছ।
    --- শোন, একটা আইডিয়া এসেছে। ওখানে সিসিটিভি আছে। ওর ফুটেজ দেখলেই বোঝা যাবে তোর বাবা নির্দোষ। এও দেখা যাবে কে দোষী বা আদৌ কিছু হয়েছিল কি না। হতে পারে সবটা মেয়েটার কল্পনা, তুই তো বড় ফার্মের অ্যাডভোকেট। চেনাজানা আছে। একটু চেষ্টা করে দেখ না , যদি সেই সময়ের প্রিন্ট পাওয়া যায়!

    --মা, এটা আমাকে হ্যান্ডল করতে দাও। প্রিণ্টে কী দেখা যাবে আমরা কেউই জানি না। তাই এসব দোধারি তলওয়ার নিয়ে নাড়াচাড়া না করাই ভাল।

    দেবাংশুর হাত থেকে জলের বোতল শব্দ করে পড়ে যায়।
    --- কে? কে ওখানে?
    মিতালি সিঁড়ির বাঁকে এসে দাঁড়ায়, তারপর চমকে ওঠে।
    --তুমি? কেন উঠে এসেছ? রাত একটা বাজে। যাও জল খেয়ে শুয়ে পড়।
    মিনুর ঘরের বাতি নিভে যায়।
  • Abhyu | 113.218.236.215 | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২১:০১718334
  • বাঙালি মা-মেয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় "দোধারি তলওয়ার" বলবে?
  • সিকি | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২১:১৪718335
  • বলে। হিন্দিল্যান্ডে দীর্ঘদিন থাকা বা বড় হওয়া বাঙালি মা মেয়ে এই সব ফ্রেজ ব্যবহার করে।
  • | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২১:২০718304
  • হ্যাঁ বলে। হিন্দীবেল্টে বড় হওয়া কিম্বা মা হয়ত হিন্দীবেল্টে বড় হওয়া, সেক্ষেত্রে এরকমই বলে
  • Ranjan Roy | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৮:২৩718305
  • ৩)
    কয়েক দিন গড়িয়ে গেছে। দেবাংশু অনেকটা নিশ্চিন্ত। রোজ তন্ন তন্ন করে স্থানীয় পত্রিকার পাতা উল্টেছে। কোথাও কোন মলে কোন মেয়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের খবর নেই।
    কিন্তু মেয়ের ব্যবহারে কোন পরিবর্তন নেই। কেন নেই? একটা ঘটনা ঘটেছিল, বড় জোর দুর্ঘটনা। তাতে ওর কোন হাত নেই। তবু মেয়ের রাগ পড়েনি। এটা কি বাড়াবাড়ি না? মায়ের আশকারায় মেয়েটা মাথায় চড়েছে। তক্ষুণি ওর মনে পড়ল । আরে সেদিন মলে এইচ অ্যান্ড এম এ'র শপে ওর গোটা তিনেক প্যান্ট পছন্দ করে ফিটিং এর জন্যে ছেড়ে আসা হয়েছিল। কথা ছিল বিগ চিল এ লাঞ্চ করে তুলে নেবে। তারপর যা ঘটেছিল!
    ওরা তো সোজা বাড়ি ফিরে এল। প্যান্টগুলো? নতুন আর বেশ পছন্দের । শিনো না কি যেন ! অন্য রকম কাটিং, অন্য রকম কাপড়ের টেক্সচার। কিন্তু সেগুলোর কী হল?
    আজ মেয়ে অফিসে যাওয়ার সময় ও জিগ্যেস করেই ফেললঃ হ্যাঁরে মিনু! সেদিনের প্যান্টগুলো ? নিতে যাবি না?
    মেয়ে জবাব না দিয়ে ল্যাপটপের ব্যাগ তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেল।
    এবার সত্যি অপমান লাগছে। কেন মরতে বলতে গেল? ও নেবে না ওইসব কেতাদুরস্ত পোষাক। কোলকাতায় ফিরে গিয়ে পাড়ার দর্জিকে দিয়ে বানিয়ে নেবে মাপমত। কিনে নেবে কাটপিস, যেমন এতদিন করেছে।
    ও বেরিয়ে যেতেই মিতালী চায়ের কাপ এনে সোফায় বসল। খবরের কাগজ খুলে মুখের সামনে মেলে ধরে বিড়বিড় করে বলল-- ওসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। মেয়ে ফোন করে ওগুলো ক্যানসেল করে দিয়েছে।
    যাচ্চলে! যতই রাগ হোক, বেশ পছন্দ হয়েছিল তো! তারপর ভাবল আপদ গেছে। ওই মলে আর কোনদিন পা রাখবে না। আর দিল্লির মেয়েগুলো যেন কি!
    সত্যি সেদিন কী হয়েছিল? দেবাংশু নিজের মনে ঘটনাটি রি-ওয়াইন্ড করে স্লো -মোশনে চালিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল।
    প্যান্ট পছন্দ করে ট্রায়াল দিয়ে লেংথ দেড় ইঞ্চি কম করতে দিয়েছে কি খাবার জায়গা থেকে টেবিল খালি হওয়ার খবর এল। ওরা হুড়মুড় করে বেরিয়ে চলমান সিঁড়ি ধরে একটা তলা উঠল। দেবাংশু পিছিয়ে পড়েছিল। বৌ-মেয়ে প্রায় রেস্তোরাঁর দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। কিন্তু ও হাঁ করে এক স্বর্ণকেশী বিদেশিনি ও তার সঙ্গীকে দেখছিল। অনেকটা মোনিকা বেলুচ্চির মত দেখতে। কিন্তু মেয়েটা তখন কোথায় ছিল?
    ওর খেয়াল নেই। শুধু এইটুকু মনে পড়ছে যে একটু আগে মোবাইল চোখ এবং কানে হেডফোন মেয়েটিকে ও সাইড ছেড়ে এগুতে দিয়েছিল। তাহলে কি মেয়েটি এগিয়ে যায় নি? কথা বলতে বা টেক্স্ট করতে করতে দাঁড়িয়ে পড়েছিল? তা নাহলে ওর সঙ্গে বডি-কনট্যাক্ট
    হল কী করে? বডি-কনট্যাক্ট? কন্যাসম মেয়েটির সঙ্গে? কী বিচ্ছিরি শব্দ? ওর মনে এল কেন? না, আসতেই পারে। এটাই তো অভিযোগ। বাটক পিঞ্চিং! একরকমের বডি কনট্যাক্ট তো বটেই, তবে স্বেচ্ছাকৃত।
    উঁহু; সেসব কিছু হয় নি। কোন ধাক্কা বা বডি কনট্যাক্টই হয় নি। হলে ওর মনে পড়ত। আর চিমটি কাটা? জীবনে কোন মেয়েকে করেনি, নিজের বৌকেও না; আর আজ!
    মনে পড়ে গেল; ও করে নি। কিন্তু বৌয়ের খেমচানো চিমটি কাটা এসব অভ্যেস ছিল। বিয়ের প্রথম দিকে, মানে মিতালি সদ্য কলেজ থেকে বেরিয়েছে তখন। কোন কিছু জোর দিয়ে বলতে গেলেই ও দেবাংশুকে চিমটি কাটত। জবলপুরে বড় হওয়া প্রবাসী বাঙালী মেয়ে, হিন্দি শব্দটাই বলত, চিকোটি কাটনা।
    শব্দ করে হেসে ফেলল দেবাংশু।
    হাসির শব্দে সামনে থেকে কাগজ সরিয়ে বিরক্ত মুখে তাকাল মিতালি-- এত হাসির কী হল?
    -- না, মানে এমনিই।
    --এমনিই? সব কিছু তোমার এমনিই হয়ে যায়?
    -- কী বলতে চাইছ?
    -- ঠিকই বুঝেছ কী বলছি। মলে কয়েকশ' লোক। তার মধ্যে মেয়েটি বেছে বেছে এমনিই তোমার নামে কম্প্লেন করল?
    -- আমি কি করে জানব কেন করল?
    -- এমনিই। তোমাকে টাইটেলও দিয়ে দিল-- "ভীড়ের মধ্যে-হাত-চালানো-পাবলিক"! এমনিই।
    --- উঃ! সব কিছুরই একটা সীমা আছে। ওটা একটা দুর্ঘটনা। রাস্তায় গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগার মত। অন্যের দোষেও হয়। আমি নিজেই বুঝতে পারছি না যে কেন এমন হল। সেদিন মেয়ে নিজেই ওকে বলেছিল যে ওর ভুল হচ্ছে।আসল অপরাধী ভীড়ের মধ্যে লুকিয়ে পড়েছে।
    মানছি; ও তখন স্ট্যান্ড না নিলে আমাকে হয়ত থানায় যেতে হত। তারপরও তোমরা মা মেয়ে আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করছ যেন--! আর আমিও একটা মানুষ। সব কিছুরই একটা সীমা আছে। প্লীজ, ওই টাইটেল-ফাইটেল আর বলবে না। ভাল লাগছে না।
    --আমাদের ভাল লাগছে? ওই মুখরোচক টাইটেলটি যে এখন অনেকের ছ্যাবলা কমেন্টের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
    --- মানে?
    -- শোন। সেদিনের ঘটনাটা সেদিন কেউ মোবাইলে তুলে নিয়েছিল। তারপর ফেসবুকে আপলোড করে দেয়।
    দেবাংশুর হাত থেকে খানিকটা চা চলকে টেবিলে পড়ে । মিতালি বলতে থাকে।
  • mila | 22.5.49.74 | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২০:৫৬718306
  • পড়ছি
  • nabanita | 162.79.255.200 | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২২:০৮718307
  • তারপর? এত টেনশানে রাখতে নেই মানুষকে, এতে ভগবান পাপ দেন।
  • paps | 125.187.50.200 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১১:১৩718308
  • রন্জন বাবু,
    ভালো হচ্ছে লেখা। আপনার লেখা অবশ্য সব্সময়ই ভালো হয়। কোনো তাড়াহুড়ো নয়, সময় নিয়ে লিখুন। আমরা ওয়েইট করছি।
  • Ranjan Roy | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৩:১২718309
  • ---- ওই ক্লিপটি এখন ভাইরাল হয়ে গেছে। প্রথমে যে পোস্ট করেছিল তাতে বলেছিল কেমন করে আজকের প্রজন্মের একটি মেয়ে এক বুড়ো ভদ্রলোককে গ্রেফতার হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়।আ ব্রেভ গার্ল , আ মডার্ন পোর্শিয়া!
    একগাদা লাইক পড়ে। অনেকেই বলে আজকালকার বুড়ো শকুন উকিলেরা যখন গরীব ক্লায়েন্টের পচামাংসে ঠোকরায় তখন এই ব্যতিক্রমী অ্যাডভোকেট মেয়েটি আমাদের ভরসা ।
    কিন্তু এর পরে অনেকের সুর বদলায়। কথা ওঠে --ওই কানে হেডফোন মেয়েটি তিলকে তাল করছে। একটু ছোঁয়া লাগলেই কম্প্লেইন? অমন ছুঁতমার্গ তো ঘরে বসে থাকলেই পারে। কেউ বললে অনেক মেয়ে আজকাল বড্ড অ্যাটেনশন সিকিং, আর আইনগুলো একতরফা, মেয়ে ঘেঁষা।
    ব্যস্‌, জেন্ডার-ইস্যু শুরু হয়ে গেল। মোবাইল আর হেডফোনের অতি-ব্যবহারের ফলে কত অ্যাকসিডেন্ট হয় তার ডেটা আর লিংক এসে গেল।
    কিছু মেয়ে বলল-- ভদ্রলোক কে আদৌ ধোয়া তুলসীপাতা মনে হচ্ছে না। কারও মোবাইলে ধরা পড়েছে এমন ছবি যাতে মনে হয় বুড়োটা স্টকার। একাগ্র হয়ে এক বিদেশিনি জোড়াকে হ্যাংলার মত দেখছে। কেউ কেউ বলল--মেয়েটির উচিত মহিলা থানায় কম্প্লেইন করা। তাহলে পুলিশি তদন্তে সত্যিটা ঠিক বেরিয়ে পরবে। পাল্টা এল-- সেই জন্যেই তো করছে না, করলে শেষে মিথ্যে অভিযোগের জন্যে ভদ্রলোকের হাতে মোটা টাকা গুঁজে দিতে হবে, তাই।
    দেবাংশু উত্তেজিত।
    -- একদম ঠিক।করুক, কম্প্লেইন। আমি তৈরি। ও না করলে আমিই করব। তুমি মেয়ের সঙ্গে কথা বল। ডিফেমেশন ফাইল করে মোটা টাকার কমপেন্সেশন চাইব। আজকে রাত্তিরে ফিরে আসুক, আজকেই কথা বল। আমি রাজি। কোথায় যেতে হবে? তিসহাজারি কোর্টে?
    ---ছটফট কর না তো! মেয়ে রাজি নয়। হয়েছে কি, ওর অফিসে কেউ কেউ ক্লিপিং এর মধ্যে তোমাকে চিনে ফেলেছে। ওর বন্ধুরা! বলেছে-- আরে, ইয়ে তো আংকল জ্যায়সা দিখ রহা হ্যায়।
    ওরা প্রশ্ন তুলেছে যে তাহলে মিনু কেন বলছে ভদ্রলোক আমার চেনা, প্রতিবেশী? কেন পিতৃপরিচয় গোপন করল? তবে কি ও অভিযোগটি নিয়ে নিঃসন্দেহ নয়?
    কাজের জায়গায় দলাদলি, জেলাসি থাকেই। কেউ কেউ ওই "'ভীড়ের মধ্য হাতচালানো পাবলিক" টাইটেল নিয়ে ন্যাকা সেজে নানান অছিলায় ওর কানের পাশে কথা ছুঁড়ে দিচ্ছে। ওর এখানে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে, মাথার ঠিক নেই।
    তুমি এটা যে কী করলে?
    --- আমি করলাম? এ'কথা তুমি বলতে পারলে? এত বছর একসঙ্গে থেকে আমাকে এই চিনেছ? পঁয়তিরিশ বছর! কোনদিন এতটুকু বাজে কথা উঠেছে? সুযোগ দিয়েছি? এমনকি তোমার দুইবোনকে নিয়েও কখনও কোন শালী-জামাইবাবু গোছের ইয়ার্কি করিনি। সুবোধদার বৌ আমার সমবয়সী; একই ব্যাচে এইচ এস পাশ করেছি। এত ঘনিষ্ঠতা, দু-বাড়িতেই। তবু বৌদি বলেই ডেকেছি। আর সম্পর্কের সম্মান বজায় রেখেই মেলামেশা করেছি। সব তুমি দেখেছ, তবু বলছ-- হাত চালানো পাবলিক?
    একদমে এতগুলি কথা বলে দেবাংশু হাঁফাতে থাকে। মিতালি তীক্ষ্ণ চোখে ওকে দেখতে থাকে। ফুলে উঠছে নাকের পাটা, চোখের তারা বড় বড়, চোখের কোণায় লালচে ভাব। ও উঠে যায়, ভেতর থেকে একটা প্রেশারের ট্যাব্লেট ও একগ্লাস জল এনে দিয়ে বলে-- মাথাগরম করে লাভ নেই।আমি যা সবাই বলছে তাই বলেছি, নতুন কিছু বলিনি।
    তারপর ভেতরে চলে যায়।
    দেবাংশু বাথরুমে ঢুকে অনেকক্ষণ শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর বেরিয়ে এসে অন্যমনস্ক ভাবে আগের দিনের গেঞ্জি ও পাজামা পরে ফেলে।
    খেতে বসে চুপচাপ খায় আর ভাবে --এর শেষ কোথায়?
    মিতালির চোখে ধরা পরে গেছে ওর বাসিকাপড়। একসেট ধোয়া কাপড় বিছানায় রেখে দিয়ে প্রায় আদেশের সুরে বলে-- খেয়ে উঠে কাপড় বদলে নিও। আর ছাড়া কাপড়গুলো বাস্কেটে ফেলে দিও।
    দেবাংশু জানে যে আজ ও কী করবে।
    খাবার পর ও ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে । তারপর জামাকাপড় না বদলে একটি পূজোসংখ্যা হাতে নিয়ে বিছানায় লম্বা হয়। পাতা উল্টে যায়, কিন্তু কোন লেখাই মনে ধরে না। এভাবে কখন ঘুমিয়ে পড়ে সেটা ও নিজেও জানে না।
  • de | 24.139.119.171 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৪:১৪718310
  • খুব ভালো !
  • Ranjan Roy | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:২৬718311
  • ৪)
    আজ মাসের প্রথম রোববার। দুপুরের খাবার পর একটু গড়িয়ে নিয়ে মা-মেয়ে মাসের বাজার করতে রিল্যান্সের একটি দোকানে যাবে। ফিরতে বেশ দেরি হবে। এই কয়েক ঘন্টা দেবাংশু বাড়িতে একাই থাকবে।
    তাতে কোন অসুবিধে নেই। পূজো সংখ্যা আছে গোটা তিন। এছাড়া রিও অলিম্পিকের কিছু খেলা। সময় টের পাওয়া যাবে না। আর বিকেলে রান্নার মেয়েটি এসে রাত্তিরের রুটি-তরকারি করার আগে আংকলকে চা করে দেবে, নিজেও খেয়ে নেবে।
    কিন্তু বেরোনোর সময় মিতালি বলল-- দুকাপ চা করে ফ্লাস্কে রেখে গেলাম। সময়মত খেয়ে নিও। দরকার হলে মাইক্রোওয়েভে গরম করে নিও।
    -- খামোকা কষ্ট করলে কেন? বিকেলে সন্ধ্যা আসবে তো, ওই বানিয়ে দিত।
    --না, ও আজ আর ওবেলায় আসবে না। মিনু বলে দিয়েছে আজ বিকেলে না আসতে। আমরা বেরোচ্ছি তো!
    -- তোমরা বেরোচ্ছ, আমি তো থাকছি।
    কথাটা এবার দেবাংশুর কানেই কেমন বেখাপ্পা লাগল। মিতালি কিছু না বলে বাজারের লিস্ট আর পার্স তুলে নিল।

    সন্ধ্যের মুখে মিতালির ফোন এল যে ওরা আসছে , আর পনের মিনিটের দূরত্বে আছে।
    জোরে বেল বেজে উঠল। কে এল আবার? কাজের মেয়ে তো এত জোরে কখনও বাজায় না। আর মিতালি কখনো এমন করে না।
    দরজা খুলে দেখল অনামিকা। মিনুর কলিগ ও বন্ধু। ও একগাল হেসে বলল--গুড ইভনিং, অন্দর আও বেটি।
    কিন্তু বরাবরের হাসিখুশি মেয়েটির আজ কী হল?
    অন্যান্য দিনের মত হেসে 'নমস্তে আংকল' না বলে সোজা জিগ্যেস করল মিনু ঘরে আছে কি না! ফেরেনি? এক্ষুণি আসবে? ঠিক আছে , আমি ফোন করে একটু পরে আসছি।
    এত কিসের তাড়াহুড়ো? আজ আবার অফিসে নতুন কিছু হল নাকি?
  • Ranjan Roy | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২৩:১৯718312
  • খানিকক্ষণ পরে দরজা ঠেলে ঢুকল মিনু, অনামিকা । ওরা দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে সোজা মিনুর ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করল। একটু পরে হাঁফাতে হাঁফাতে উঠে এল মিতালি, পেছনে বাজারের তিনটে ভারি ব্যাগ নিয়ে ড্রাইভার ছেলেটি।
    মিতালি সব দরজা জানলার কবাট টানা আছে কি না দেখে নিয়ে এসি অন করল।
    -- বড্ড হিউমিড ক্লাইমেট। গরম কমেছে, কিন্তু উমস্‌ বেড়ে গেছে।
    দেবাংশু এক গ্লাস জল এনে দেয়। মিতালি বাজারের জিনিসপত্র নামিয়ে লিস্টির সঙ্গে মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
    --- চা খাবে? ফ্লাস্কে কিছুটা আছে, গরম করে দিই?
    --ব্যস্ত হয়ো না। সে আমি করে নেব। একটু জিরিয়ে নিই আগে।
    একটু সময় কেউ কোন কথা বলে না। শেষে দেবাংশু একটু কিন্তু কিন্তু করে বলে-- কী হয়েছে বল দেখি? অনামিকা ঘরে না ঢুকে চলে গেল। তারপর মিনুর সঙ্গে এসে হুড়মুড়িয়ে সোজা ওপরে। আগে কখনও হয় নি। সিরিয়াস কিছু? তুমি টের পেলে?
    মিতালি খানিকক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর রিলায়েন্সের দোকান থেকে আনা একটা সুগন্ধি মুখশুদ্ধির শিশি খুলে গোটা কয়েক দানা মুখে পোরে।
    --- ও দিল্লি ছাড়ছে।
    --কে?
    --আমাদের মেয়ে, মিনু।
    --অ্যাঁ? কী ব্যাপার?
    --আর ব্যাপার! সেই ভাইরাল মোবাইল ক্লিপিং! এ নিয়ে অফিসে একজন সিনিয়রের সঙ্গে মিনুর জোর একরাউন্ড হয়ে গেছে। শেষে ও রাগের মাথায় রেজিগনেশন লিখে দেয়। ল' ফার্মের পার্টনার ওকে অনেক বোঝান, কিন্তু ও গোঁ ধরে থাকে। ওকে তো জান।
    শেষে একটা রফা হয়েছে। আপাততঃ ওকে ওদের পুণে অফিসে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। দু'বছরের জন্যে। ফার্ম চাইছে ওকে ধরে রাখতে। আশা করছে দিল্লি থেকে কিছুদিন সরে থাকলে ওর মন পাল্টাবে।
    অনামিকা মেয়েটি সেই জন্যেই এসেছে।
    -- কী জন্যে?
    -- মিনুকে দশদিনের মধ্যে পুণে অফিস জয়েন করতে হবে। ততদিন ছুটিতে থাকতে পারে। সেই সব দরকারি চিঠিপত্র, প্লেনের টিকিট--ও নিয়ে এসেছে।
    -- আমরাও পুণে যাচ্ছি?
    --- না, আমরা পরশু সকালের ফ্লাইটে কোলকাতা যাচ্ছি।
    --ঠিক কথা; আগে ও পুণেতে গিয়ে থিতু হয়ে বসুক, তারপর আমরা যাব। দিল্লি পচে গেছে। এখানে আর কিছু দেখার নেই। পুণে গেলে লোনাবালা, খান্ডালা, পঞ্চগনি, মহাবালেশ্বর --সব ঘুরে দেখব।
    -- না। মেয়ে বলে দিয়েছে একবছর যেন আমরা পুণে না যাই। ওর একটু সময় চাই-- এতবড় ধাক্কাটা সামলে উঠতে হবে তো, অন্ততঃ একটা বছর।
    -- অনামিকা কি আমাদের টিকিটও নিয়ে এসেছে?
    --হ্যাঁ; অফিস থেকেই করে দিয়েছে।
    -- তাহলে আমি যখন দরজা খুললাম কিছু বল না তো?
    --বলবে না। ওই ক্লিপিংটা ও দেখেছে যে!
    দেবাংশুর মাথা ঘুরে ওঠে। গোটা ঘর দুলতে থাকে। ও সোফা থেকে উঠতে গিয়ে আবার বসে পড়ে।
    --আরে কী হল?
    --কিছু না; মাথাটা একটু ঘুরছিল। এখন ঠিক হয়ে গেছে। না, কোন ওষুধের দরকার নেই
    বৌ হ্যান্ডব্যাগ থেকে ওকে একটা ক্যপসুল বের করে দেয়। ও হাত নেড়ে বারণ করে। ওর ভেতরে একটা চন্ডাল রাগ গরম কালের আঁধির মত পাক খেয়ে উঠছে।
  • Bratin | 11.39.38.88 | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২৩:৩১718313
  • এখানেও লিখে দি।

    ইনফো টা পেয়েছি রঞ্জন দা। এক বার কল করবেন প্লিজ।
  • Ranjan Roy | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১৪718315
  • -- কী হল?
    -- মেয়েকে বল টিকিটি ক্যানসেল করতে। আমি ওদের অফিসের টিকিটে যাব না। নিজের পয়সায় রাজধানী এক্সপ্রেসের টিকিট কাটব, নয়াদিল্লি-শেয়ালদা।
    --- এ আবার কি?
    --শোন, আমি কবে যাব, কোথায় যাব, কীভাবে যাব--এটা অন্য কেউ ডিক্টেট করতে পারে না।
    --- আচ্ছা পাগল! কে ডিক্টেট করছে? ওকে এখান থেকে সব গুছিয়ে গাছিয়ে পুণে যেতে হবে, বাড়ি খুঁজতে হবে। তার সাত-সতের নানান ফ্যাকড়া। আমাদের আগে কোলকাতায় শিফ্ট না করে ও এসব কাজ--!
    -- একটা কথা জিগ্যেস করি? তুমিও কি আমাকে দোষী ভাব? বা একটু-আধটু সন্দেহ?
    মিতালি চুপ করে থাকে।
    দেবাংশু এগিয়ে গিয়ে ওর দু'কাঁধ ধরে ঝাঁকাতে থাকে।
    -- স্পষ্ট করে বল? হ্যাঁ কি না? আমায় অবিশ্বাস কর--হ্যাঁ কি না!
    -- হ্যাঁ, তোমায় বিশ্বাস করি। জানি তুমি নির্দোষ।
    -- তাহলে কোলকাতা যাবার আগে একটা কাজ করতে হবে। কাল তুমি আমার সঙ্গে চল।
    --কোথায়?
    --ওই মলে। তুমি আর আমি। কাউকে বলার দরকার নেই। কারও অনুমতি চাই না। গিয়ে সেই এইচ অ্যান্ড এম শপে যাব। পছন্দের তিনটে প্যান্ট কিনব। আমার ডেবিট কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করব।
    সেদিনের সেই সিকিউরিটির লোক বা ম্যানেজমেন্টের লোক যদি কিছু বলে তো ডিমান্ড করব সিসিটিভি'র প্রিন্ট আউট বের করে দেখে তবে কথা বলুক।
    অনেক সহ্য করেছি, আর চুপ করে থাকব না।
    কী হল? চুপ করে আছ যে?
    -- শুনছি। একটু চা গরম করে নিয়ে আসি। যা আছে দুজনে ভাগ করে নেব।
    চা খেতে খেতে মিনিট পাঁচ ওরা চুপ করে থাকে। দেবাংশু ব্যগ্র হয়ে বৌয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে। একজন ওকে বিশ্বাস করে। একজন অন্ততঃ ওর সঙ্গে আছে।
    -- এবার বল? কাল যাবে আমার সঙ্গে? প্যান্ট কিনতে?
    -- বলছি; তোমার হয়ত ভাল লাগবে না।
    বললাম না যে তোমাকে বিশ্বাস করি। কারণ আমি জানি অমন কাজ তুমি করতে পার না।
    (দেবাংশুর মুখে হাজার ওয়াটের হ্যলোজেন।)
    কেন? তুমি হচ্ছ ভীতুর ডিম। আসলে ওইরকম অসভ্যতা করতেও একধরণের সাহস লাগে। ধরা পড়ার, মার খাওয়ার, অপদস্থ হওয়ার। ওইরকম জোখিম নেওয়ার লোক তুমি নও। তুমি সারাজীবন সেফ সাইডে খেলেছ।
    ( দেবাংশুর ফিউজ উড়ে গেছে!)
    কাজেই আর হিরো হতে যেও না। ইউ আর নট কাট ফর দ্যাট।
    তুমি নিজে কখনও কোন ডিসিশন নাও নি। ভর্তি হতে চাইতে গভর্মেন্ট আর্ট কলেজে, বাবার ধ্যাতানি খেয়ে গেলে পাড়ার কলেজে বিএসসি পড়তে। পাশের বাড়ির মন্দিরা চেয়েছিক তুমি যেন ওর বাবাকে গিয়ে বল। তুমি পারলে না।
    বিয়ের পর শ্বাশুড়ির অন্যায় সব হুকুম ও নজরদারি দেখেও দেখ নি। বললে এড়িয়ে গেছ, বলেছ নিজেরা মিটিয়ে নাও।
    এখন শেষ বয়সে আর নতুন করে নিজেকে বদলাতে পারবে না।
    তাই মেয়ের কথা মেনে কোলকাতা ফিরে চল। সেখানে আমরা নিজেদের চেনা সার্কেলে নিরাপদে থাকব।
    (সমাপ্ত)
  • 4z | 86.68.59.157 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:৩৪718316
  • সরি রঞ্জনদা, এটাও হল না। সেই শেষে গিয়ে ছড়িয়ে গেল।
  • b | 24.139.196.6 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৯:২০718317
  • হ্যঁ। আপনি এতো তাড়াহুড়ো করেন ক্যান?
  • Ranjan Roy | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২০:০৬718318
  • 4Z ও b,
    হ্যাঁ, এইটুকুই ইমপ্রুভমেন্ট যে এবার নিজে বুঝতে পারলাম --শেষটা একেবারে আলুনি! ঃ)))))
    দাঁড়ান, আগামী সপ্তাহে আর একটা অন্য গল্প ট্রাই মারছি।
  • | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২০:৩১718319
  • শেষে সবসময় চমক থাকতেই হবে এমনটা আমি মনে করি না। কিন্তু এখানে চরিত্রগুলো বিশ্বাসযোগ্য হল না তো। মানে এই কাপুরুষ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া, সেটা মেনে নিয়ে নিভে যাওয়া --- এগুলো খুবই বাস্তব, কিন্তু এখানে একেবারেই দানা বাঁধে নি।
  • 4z | 86.68.59.157 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২০:৩৬718320
  • দানা বাঁধার আগেই তো রঞ্জনদা শেষ করে দিলেন।
  • Du | 81.170.5.44 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২০:৪১718321
  • প্রোটাগনিস্ট কে নিজের থেকে আলাদা করে দিন। হয়তো সুবিধে হবে।
  • Ekak | 53.224.129.43 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২৩:১৪718322
  • রঞ্জনদাকে একটা টই তে একজন পরামর্শ দিয়েছিলেন ওটা কিন্তু বেশ কাজের কথা : আপনি গপ্পো লেখার আগে একটা লম্বা প্রবন্ধ লিখে নেবেন । বেশ জমিয়ে মনের যা কথা বক্তব্য ইত্যদি আছে সেথায় উগরে দেবেন । তারপর হাঁপিয়ে টপিয়ে জল খেয়ে এবার গপ্পো টা লিখতে বসবেন । দেখবেন যে হোগা দুরুস্ত হোগা :)
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২৩:৪২718323
  • সমাপ্তির পর।

    পরদিন সকালে চা খাবার পর দেবাংশু বাথরুমে যায়। দুদিন দাড়ি কামানো হয়নি। কাঁচাপাকা খোঁচাখোঁচা দাড়ি এখন কামিয়ে না ফেললে চেহারাটা অসুস্থ অসুস্থ দেখাবে। গালে সাবান লাগিয়ে রেজার হাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখদুটো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। মিতালি ডাকল একবার সম্ভবত। ব্রেকফাস্ট রেডি বা ঐধরণের কিছু বলছে, ঠিকমতো শুনতে পায়নি দেবাংশু কিন্তু সম্বিৎ ফিরে পায়। দাড়ি কামিয়ে বেরিয়ে উঁকি মেরে দেখে টোস্টেড ব্রাউন ব্রেড, ফল, রোজকার ওষুধ রাখা রয়েছে খাবার টেবিলে। মিতালি মনে হয় আবার ঢুকে গেছে কিচেনে। মিনুর কোনো সাড়াশব্দ পায় না। বেডরুমে গিয়ে সে বাইরের পোশাক পরে নেয়, রিস্টওয়াচ গলিয়ে নেয় হাতে, চুল আঁচড়ানো হয়না, যদিও আঁচড়ানোর মতো তেমন চুল অবশিষ্ট নেই মাথায়। বেডরুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে ফের ফিরে যায় সেখানে। ওয়ালেটটা ভুলে গেছল নিতে। এবার পায়ে জুতো গলিয়ে মোবাইলটা নেবে কি নেবেনা দুবার ভেবে নিয়েই নেয় সঙ্গে। দরজা খুলে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে পড়ে সে।
    ঘন্টাখানেক পরে তাকে দেখা যায় শপিং মলটার বাইরে। মল সবে খুলছে। চেকিং পেরিয়ে সে ঢুকে যায় ভেতরে। না। কেউ তাকে কিছু বলেনি। কেউ বাধা দেয়নি। চিনেও ফেলেনি। এইচ অ্যান্ড এমের দোকানে ঢুকে সে খুঁজতে থাকে সেদিনের পছন্দ করা ট্রাউজার্সগুলো। একটা ছিলো কালো রঙের, আরেকটা খাকি। তিননম্বরটা গ্রে রঙের কিন্তু ওর সাইজেরটা পাওয়া যায় না। আজ আর ট্রায়ালরুমে গিয়ে পরে দেখবার দরকার নেই। একটা কটনের কালো টিশার্ট পছন্দ হয় কলারওয়ালা। মাপ দেখে মনে হচ্ছে গায়ে হয়ে যাবে। ক্যাশে গিয়ে ডেবিট কার্ড দিয়ে দুটো প্যান্ট আর একটা টিশার্টের দাম মিটিয়ে দেয় সে। একটু ঘোরে মলের ভেতরে। সকাল সকাল বলে এখনো সেরকম ভিড় নেই। একটা কাফেটেরিয়াতে বসে এক কাপ কাপুচিনো খায় সে। চিনি দিয়ে। আজ সকালে শুগারের ওষুধ প্রেশারের ওষুধ আরো গোচা দুয়েক ওষুধ খাওয়া হয় নি।
    নতুন কেনা শার্টপ্যান্টের প্যাকেট সঙ্গে করে মল থেকে বেরোনোর পরে সে বাইরে একদণ্ড দাঁড়ায়। এবার খেয়াল হয় পকেটে মোবাইলটা বাজল যেন। বের করে দেখে চারটে মিসড কল। চারটেই মিতালির। মোবাইলের ভলিউম কমানো ছিল তাই শুনতে পায় নি সে। এই কলটাও সে রিসিভ করবার আগেই কেটে গেছে। ফোনে চার্জ খুব কম। চব্বিশ পার্সেন্ট। কাল রাতে চার্জে বসিয়ে রাখতে ভুলে গেছল কি? ফোনে দেখাচ্ছে কিছু ভয়েস মেসেজ রয়েছে।
    মিতালিকে কল ব্যাক করে দেবাংশু।
    -- কী ব্যাপার? তুমি ব্রেকফাস্ট না খেয়ে কোথায় বেরিয়ে গেছো? আমরা বারবার কল করছি, ধরছিলে না কেন ফোন?
    -- শুনতে পাই নি, ভলিউম কমানো ছিল।
    --কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই তোমার? অত ইম্পালসিভ হলে চলে? চলে এলো বাড়ি। মিনু এমনিতেই টেনশনে রয়েছে। আর টেনশন বাড়িও না।
    দেবাংশু চুপ করে থাকে। কোনো কথা বলে না। মিতালির সবকটা কথা তার কানে গেছে বলেও মনে হয় না।
    --কী হলো? হ্যালো, হ্যালো। তুমি কোথায় এখন? শুনতে পাচ্ছ?
    --হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি।
    --তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসো।
    দেবাংশু ফোন কেটে দেয়। সে এখন ফিরবে না। অটো হোক কি ট্যাক্সি, সে এখন নিউদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনের দিকে যাবে। সেখান থেকে ট্রেনের টিকিট কেটে যাবে কোথাও একটা কাছে পিঠে হোক কি দূরে। মোবাইলের চার্জার তার সঙ্গে নেই। আস্তে আস্তে মোবাইলটা বন্ধ হয়ে যাবে। বাড়িতে জানাতে পারে না, গুছিয়ে বলবার মত ভাষা তার নেই। দুটো প্যান্ট একটা টিশার্ট এবং ওয়ালেটে সঙ্গে করে কাপুরুষ দেবাংশু রেলওয়ে স্টেশনের দিকে যেতে থাকে।
  • Bratin | 11.39.37.179 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০718324
  • আমারো কেমন যেন মনে হচ্ছে গল্প টার আরো সম্ভাবনা ছিল।

    ইয়ে মানে রঞ্জন দার গল্প ভালো লাগে অর রঞ্জন দা কে কাছের মানুষ ভাবি সেই দাবিতেই লিখলাম
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:১৯718326
  • রঞ্জনদা রাগ করেন নি তো? আমি জাস্ট ইয়ার্কি মেরে ওটা লিখেছি কিন্তু।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন