এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দঃখিত

    কল্লোল
    অন্যান্য | ০৯ অক্টোবর ২০১৬ | ২১৭৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • কল্লোল | 116.206.136.225 | ০৯ অক্টোবর ২০১৬ ১৩:১৫720957
  • আমরা যারা ৬০এর সন্তান , ৯০এ এসে নির্মোহ হতে গিয়ে চূড়ান্ত ব্যর্থ, তিরিশ শেষ করে সেই ভয়ংকর চল্লিশের জলদাগ পার হচ্ছি, তাদের কাছে ৯০ গেরস্ত যন্ত্রনার সাথে আপোষে পথ চলা, অভ্যাস বশতঃ ফুটবল খেলতে গিয়ে দমে ও পায়ের পেশীতে মারাত্মক টান, ট্রামে বাসে ঝুলে যাওয়ার স্পর্ধা ট্যাক্সির পিছনের সিটে মুহ্যমান ব্যাঙ।
    এহেন দারুন সময়ে কারা যেন স্বপ্ন দেখেছিলো তার হদিস পাওয়ার কথা ছিলো না পাইওনি। সেই সব স্বপ্নগুলো তাদের রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে হাত ধরে নিয়ে গেলো এক অচেনা মায়াবী রাস্তায় যার বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে থাকে অপার রহস্যময় সব ল্যাম্পপোস্ট, তার গায়ে হেলিয়ে রাখা সাইকেল দাঁড়িয়ে আছে অনন্ত প্রতিক্ষায়।
    অথচ আশ্চর্য, শাক্যর ৯০এর পরতে পরতে জড়িয়ে থাকে ৬০ ও ৭০এর মিথকতা। বেওয়ারিশ লাশ সাঁতারে যায় আদিগঙ্গার জলে, ঝিলের তলার করাল কালী আগলে রাখে কাপালিক সন্তানদের প্রেত।
    এইসব পার হয়ে শাক্য আমায় নিয়ে যায় মমতা কুলকার্নির শরীরি ভাঁজে। আমার প্রথম রেতঃস্খলন স্বপ্নে। আমরা বলতুম স্বপ্নদোষ। কাকে স্বপ্নে দেখেছিলাম বিস্মৃতি ঢেকে দিয়েছে তাকে। পরে কবি সুনীল জানিয়েছিলেন, নীরাকে দেখেছিলেন বাসস্ট্যান্ডে অনেকক্ষন, স্বপ্নে তিন মিনিট।
    আর মুনমুন সেন। মুনমুন লাট্টু ছিলো অভিজিৎদার ক্যারিস্মাতে। সেটা যাদবপুরের সদ্য খোলা তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগ। তখন বুদ্ধদেব বসু-নরশ গুহের আমল। সেই অভিজিৎদা প্রথম আলাপে মুনমুনের মাকে বলেছিলো যে, সে সিনেমা দেখে বই দেখে না। সে তো বলবেই, কারন সে কাঁটা ছাড়া হাতঘড়ি পড়তো সময়ের দাসত্বকে অবহেলে। সেই মুনমুন পানুর বিষয় – এ এক অনাবিস্কৃত বিস্ময়। মুনমুন কি এতো সম্মানের যোগ্য ছিলো! নিশ্চই ছিলো, নইলে শাক্য তারে পবে কোথায়!
    আমাকে ভীষণভাবে ছুঁয়ে গেছে বাবাকে না পাঠানো চিঠি। সে তো হওয়ারই ছিলো। এ লেখার প্রতিটি অক্ষরে ৬০-৭০ প্রেথিত। আমরা বেড়ে উঠেছি ঋত্বিকিয় মন্ত্রোচ্চারণের আবহে “ভাবা প্র্যাকটিশ করুন”। ৯০এ সেই ভাবনায় পচন প্রতক্ষ্য করেছে শাক্য। আমার কাছে এ এক নতুন কোন। কারন ৯০এ আমার এতোকালের আশ্রয় “না” হয়ে গেছিলো বার্লিন দেওয়াল ও সোভিয়েৎএর সাথে। পচন-টচন নয়, স্রেফ না হয়ে যাওয়া।
    আশ্রয়হীন আমি তখন আমি রাস্তায়। ঘর হারানোর কথা শুনেছি কতোবার বাবা, ঠাকুমা, দিদিমা-এঁদের মুখে। সেই কবে ছেড়ে এসেছিলেন ওঁরা পদ্মাপাড়ের ঘর। কখনো চোখের জলে, কখনো বুক বাজানো গর্বে শুনেছি সে সব। সেই সব চোখের জলেরা, বুক বাজানোরা আমায় পেলো। অসম্ভব যন্ত্রণায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি আমার ভগ্নস্তূপ বাড়ি সামনে, আর পাগলের মতো সেই ভেঙ্গে পড়া ইট কাঠ দিয়ে আশ্রয়ের সর্ন্ধন করি ব্যর্থ নির্মানে। ক্লান্তির বর্শাফলকে বিদ্ধ হতে হতে যখন নিহত হচ্ছি প্রতিদিন, তখন ভাবনা এসে দাঁড়ালো আমার সামনে। আমি আবাক হয়ে দেখলাম ভাবনা আমার বদলাচ্ছে। আগেকার সেই ঝকঝকে বুদ্ধিদীপ্ত আর চনমনে চেহারা পাল্টে গেছে। একমাঠ ধূলোমাখা পায়ে সে দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে আশ্চর্য প্রশান্তি নিয়ে। আমার চোখে ঠোঁট ছুঁইয়ে সে বললো চরৈবেতি

    এতোদিন আমার সব রাস্তাই ছিলো ঘরে ফেরার উপায় মাত্র। আমার আশ্রিত মন পথ হাঁটতো পোক্ত এবং নিশ্চিত আশ্রয়ের সন্ধানে। পথ ছিলো ঘরের সাথে বাঁধা। ভাবানার পিছু পিছু পথ হাঁটতে গিয়ে দেখি পথের মুক্তি ঘটেছে ঘরের গন্তব্য থেকে। এখন আর নির্মানে বা আশ্রয়ে নেই। আমি হাঁটি আরও হাঁটে অনেক মানুষ পুরোনো বন্ধু অনেকেই। আর হাঁটে এক মায়াবী অনিশ্চয়তা।

    শাক্যর হাত ধরে ৯০এর অনাস্বাদিত রাস্তায় পথ চলা এক সুখময় অভিজ্ঞতা । শাক্যর লেখা নিয়ে বলার কিছু নেই, এরকম অনায়স ও সৎ গদ্য ওর কাছে আশাই করা যায়। আশা করি আরও আরও লিখবে শাক্য এইভাবেই।
  • ranjan roy | 120.227.159.229 | ০৯ অক্টোবর ২০১৬ ১৯:৫৪720968
  • বাঃ কল্লোল; আমাদের প্রজন্মের স্বপ্নভঙ্গ ও পথচলার ক্লান্তি ও পিঠসোজা করার গল্পটা সুন্দর বল্লে।
    কোলকাতায় ফিরে শাক্যর বই কিনে তবে কথা!
  • h | 11.39.39.21 | ০৯ অক্টোবর ২০১৬ ২১:৫১720979
  • কল্লোল দার এই পোস্ট অনেক লোককেই ভাবা বে।
  • কল্লোল | 116.206.155.65 | ১০ অক্টোবর ২০১৬ ০৯:২২720990
  • ধন্যবাদ রঞ্জন আর হনুকে।
  • Robu | 11.39.57.33 | ১০ অক্টোবর ২০১৬ ১১:১৩721001
  • শাক্য-র বইয়ের পরের এডিশনে এটাকে ফোরোয়ার্ড করার কথা ভাবা যেতে পারে।
    কল্লোলদা - এখন কেমন আছেন?
  • কল্লোল | 116.216.137.54 | ১০ অক্টোবর ২০১৬ ১১:২২721007
  • ধন্য়্বাদ রবু। এখন বেশ ভালো।
  • কল্লোল | 116.216.137.54 | ১০ অক্টোবর ২০১৬ ১১:২৭721008
  • ধন্যবাদ রবু।
  • h | 11.39.57.66 | ১০ অক্টোবর ২০১৬ ২০:০৩721009
  • অনেকগুলো পোলিটিকাল ইনক্লুডিঙ্গ জেন্ডার ও কালচারাল মেমোয়ার হয়েছে। এক সঙ্গেও করা যেতে পারে মোটা কইরা সময় বা এলাকা অনুযায়ী সাজিয়ে। এমনিতেই ইন্টারনেট আসার কারণে একটা বেবি বুমার্স গোছের জেনারেশন হয়েছে। তার আগে পরে মিলিয়ে তো বেশ কয়েক্টাই হয়েছে।;-)) কল্লোল দার এই পোস্ট টা মূল্যবান হয়ে থাকবে এনি ওয়ে। সুস্থ আছে দেখে এত খুশি হয়েছিল।
  • h | 11.39.57.66 | ১০ অক্টোবর ২০১৬ ২০:০৫721010
  • অবশ্য বছর তিরিশ পরে নইলে লোকে কি বলবে এতো বাচ্চা ছেলে মেয়েরা মেমোয়ার লিখলে;-))))
  • cb | 208.147.160.75 | ১০ অক্টোবর ২০১৬ ২০:১৪720958
  • কল্লোলদা সুস্থ হয়ে উঠছেন খুব ভাল লাগলো।
  • পাঠকের প্রতিক্রিয়া | 11.39.20.94 | ১১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৩৮720959
  • সুলগ্না পাল লিখেছেনঃ

    "বহুদিন পর বোধহয় এত গোগ্রাসে একটা বই পড়লাম।হ্যাঁ শাক্য র অনুষ্ঠান প্রচারে......।খুব হিংসে হচ্ছিল পড়তে পড়তে,কি সুন্দর রঙ্গীন শৈশব,কৈশোর,যৌবন সব এত স্বল্প কথায় লিপিবদ্ধ করেছে।শুধুমাত্র এই কারণেই আজ অবধি এরকম কিছু লিখে উঠতে পারলাম না।কারণ এত অল্প কথায় নিজেকে লেখা আমার কম্ম নয়।বাবাকে লেখা চিঠি টার সঙ্গে নিজেকে রিলেট করতে পারলাম না কারণ আমি ঘোরতর অসিপিএম।কিন্তু আমার সিপিএম সমর্থক বাবা বেঁচে থাকলে লেখাটা পড়ে বোধহয় দারুণভাবে রিলেট করতে পারতেন।আর হ্যাঁ ওই লেখাটার সাথে অসম্ভব মিল "শেকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে" এর স্ক্রিপ্টের। শাক্যজিৎ পারলে নাটকটা দেখো।এক কথায় বইটা ভীষণ মায়াময়।
  • পাঠকের প্রতিক্রিয়া | 11.39.20.94 | ১১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৩৮720960
  • "নব্বইটা আসলে একটা জার্নি, কিংবা একটা বড়সড় জার্নির একটা অংশমাত্র। তাই যেভাবেই বা যে জায়গা থেকেই দেখি না কেন, জানলা দিয়ে বাইরের দৃশ্যপটের বদলে যাওয়াটা যে যাত্রীর চোখে পড়তে বাধ্য। জার্নিটা টেলিভিশনের মালগুড়ি ডে'জ থেকে কিউ কি শাস ভি কভি বহু থি তে পৌছনোই হোক কিংবা বাংলা সাহিত্য বা সিনেমা থেকে নিম্নবিত্তের ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকা। সব মিলিয়ে একটা ফিল গুড ঘেটোর মধ্যে আত্মসর্বস্বতার সাথে সহবাস কারন ইতিমধ্যে ঘোষণা হয়ে গেছে ইতিহাসের অবসান হয়েছে। আর কোনো প্রশ্ন নেই, বদলে দেওয়ার স্বপ্ন নেই আছে শুধু নিশ্চিন্ত যাপন। তবু, তবু বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার বাইরে ভিড় করা মরা চোখের বাচ্চাগুলো ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে। সব কিছুই থেকে যায়, কোথাও কোথাও ঠিক বেঁচে থাকে।
    আসলে পান্ডুলিপি যেমন পোড়ে না, স্বপ্নগুলোও মরে না, কারোর না কারোর মধ্যে ঠিক বেঁচে থাকে।
    বদলে যাওয়া সময়ের ডকুমেন্টেেশন হয়ে বেঁচে থাকুক অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত ।
  • পাঠকের প্রতিক্রিয়া | 11.39.20.94 | ১১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৪৯720961
  • সুমিত গংগোপাধ্যায় লিখেছেনঃ

    "বইটা আজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে কিনলাম। প্রথম ক্রেতা আমি। এবার কিছু কথা বই নিয়ে।

    বইটা এইমাত্র শেষ হল। মনে হল আমি বেহালার শেষ প্রান্তের টালিগঞ্জের লাগোয়া কলাবাগান বি এল সাহা রোডের পাড়া থেকে আমার বাবার যুগ থেকে হাঁটা শুরু করে হাজরা মোড়ে এলাম। দেখতে দেখতে কেটে গেল নয়া-উদারবাদ প্রতিষ্ঠা, উদারীকরণ আর নব্বই-এর গোটা দশকের আকর্ষণ।

    শুকিয়ে যাওয়া পাতা ইতিহাস হয়ে গেল। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে যে অঞ্চল শ্রমিকের পায়ের ধুলোয় লাল হয়ে যেত তা আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বেসরকারি), ব্যবসার অংগ।

    ৯০ কাটল বেহালায়। এল ২০০৪। কলেজ ইউনিভার্সিটি কাটাল ২০১০। চলে গেল বামফ্রন্ট।

    লাল পতাকা ধরে চলা মানুষেরা আজ অন্যরকম। কিন্তু এই বই মরে যাওয়া সময়ের উদ্ভ্রান্ত অসহায় স্মৃতি-মেদুরতা ফিরিয়ে আনল।

    বেহালা থেকে হাজরা। নয়া উদারবাদ আর ফ্যাকাশে হারবার্টীয় স্মৃতির পঁচিশ বছর..."
  • পাঠকের প্রতিক্রিয়া | 11.39.20.94 | ১১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫০720962
  • প্রতিভা সরকার লিখেছেনঃ

    "সদ্য বেরিয়েছে গুরুচণ্ডালী থেকে শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের বই "অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত। " তার প্রথম লেখাটি পড়ে আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া ---
    আজ শুধু 'মায়া রহিয়া গেল' কে নিয়ে লেখা।পর পর লিখবো অন্য খণ্ডাংশ গুলো নিয়ে। কারণ লেখাগুলো এক হয়েও আলাদা, বিনিসুতোর মালার মতো। এত সুখপাঠ্য, অথচ ভাবনার রেশ হারাতে দেয় না।
    একটা দশক, যার সে অর্থে চাল নেই চুলোও না। বেশিটাই ভাঙনের শব্দে ভর্তি। আর যেমন তেমন ভাঙন নয়, একেবারে শেকড় ওপড়ানো প্রলয় টান। সুনামির মত প্রলয়ঙ্কর আর অনিবার্য। স্বপ্নের মৃত্যু আর সুপার্ণোভার বিস্ফারণ, একই রকম তাদের প্রভাব। কেবল অন্তর্গত আর বহিরঙ্গের তোলপাড়কে এক করে দেখা যায় যদি। এইরকম একটি দ্বিচারী, আপাতশান্ত, এই ভূখন্ডে চমকহীন একটি দশকে এক বালকের কিশোর এবং তরুণ হয়ে ওঠার গল্প ঠারেঠোরে এতরকম ইশারা করে যে পাঠকের মনে হবেই এ দশক বড় মায়াময়।
    মোদ্দাকথা, চেনা নব্বইকে নতুন করে দেখতে শেখাল এই বই। ফিরে দেখতে বা ভাবতে বাধ্য করল ঘাড়ে মোচড় মেরে।
    অথচ' শুধু মায়া রহিয়া গেল 'নাকি খালি কিছু দৃশ্যের জন্ম দিয়েছে ! দিয়েছে তো বটেই, তবে খালি নয়। চেনা অথচ আশ্চর্য দৃশ্যকল্পের মধ্যেই গেঁথে দিয়েছে অই "সময়ের চারণচিনহ"।
    বাবরি মসজিদ ভাঙা, যা দিয়ে চেনা যায় এদেশে rise of right বা লুকিয়ে থাকা দক্ষিণপন্থার মুখব্যাদানকে, সেই আখ্যান এল কত অনায়াসে, বড়মামার আতঙ্কিত চিৎকারে "পসেনজিত শতাব্দীর ছবি" দেখার সময়। সারাদিন শুধু ক্রিকেটের হলেও বালকটির চোখ এড়ায় না শান্তিরক্ষা কমিটির টহল। রুখে তো দেওয়া গিয়েছিল রক্তক্ষয়, কোথাও তো শুধু ধর্মের কারণে অশান্ত হয়ে ওঠেনি সাধারণ জীবন। যে পাগল পাঁক মাখিয়ে এল শনি মন্দিরে তার মতো সত্যদ্রষ্টা আর কে! কত রক্তঘাটা পাঁকে পা ডুবিয়ে হাঁটতে হবে দশকের পর দশক এ কথা তার চাইতে আর বেশি বুঝেছিল কে ! শনির কোপে বা নিছকই দুর্ঘটনা, সে ডুবে মরেছে ভালোই হয়েছে। আমাদের অনেক পথ বাকি।
    এইরকম অজস্র দৃশ্যকল্প আর ছড়ানো প্রতীকী ব্যঞ্জনা শাক্যজিতের লেখাকে সাজিয়েছে দুর্ধর্ষ ইঙ্গিতময়তায়। যেমন সুমনের আবির্ভাব। এই দশকের আর এক দিকচিনহ। বাঙালীর গানের কথা, সুর, শোনবার কান অব্দি পালটে দিয়ে সে এক তুমুল তছনছ। অদ্ভুত সুরেলা তবুও। কিশোর দেখে পুরুত পান্নালালের বদলে সুমন গাইছে ! পোদ্দার জেঠু এ গান শুনে নিস্পন্দ। এদের মধ্য দিয়ে প্রথম পাওয়া বলে পরে সে লিখতে পারে, " তাই আমার সুমন আসলে বিদ্রোহের সুমন নয়, গোপন ভালবেসে কষ্ট পাওয়ার সুমন। "
    ইংরেজি রাখা না রাখার মতো কড়া ব্যাপার, যা অনেকের বামফ্রন্ট বিরোধিতার মূল সূত্র, সে প্রসঙ্গ এলে বিপ্লব আসে, অন্তত তার গন্ধ নিয়ে এসে পড়েন দেবুদা। তারপরই ঐতিহাসিক ভুল এবং বঞ্চনাকাতর বাঙালী। টুকরো টুকরো কথায় লেখা বাড়ে, লেখকও বড় হতে থাকেন, যেমন সবাই হয়। পেয়ারাবাগানের রেখাদি থেকে মমতা কুলকার্নি অব্দি যাত্রাপথ তো জিনে খোদাই করা। রাজনীতি, যৌনতা, সঙ্গীত, নেশা আর ডেভেলপারের আঙুলের ফাঁকে উস্কানো জীবন আর তাই নিয়ে এই লেখা মায়া ছড়াতেই থাকে।
    কিন্তু সে "কল্পনার চারণভূমিতে" রবীন্দ্রনাথ একেবারে নেই দেখে আমি একটু ঘাবড়াই। ঐ পরিপ্রেক্ষিত, আর ঐ সংবেদী বালক ! তিনি সত্যি ছিলেন কিনা জানতে ইচ্ছে যায়। আর মায়া বাড়ে।"
  • পাঠকের প্রতিক্রিয়া | 11.39.60.152 | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ১১:৪০720963
  • সোহম ভট্টাচার্য্য লিখেছেনঃ

    "শাক্যজিত ভট্টাচার্যের নতুন বইঃ 'অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত' পড়লাম। গুরুচণ্ডালীর চটি সিরিজের বই।
    বিষয় নব্বই এর একটা মফস্বল। তার ম্যাজিক। তার পাগল। তার প্রেম আর তার বড় হয়ে ওঠা।

    কিন্তু এর তলায় তলায় একটা রাজনৈতিক ভাষ্য চলছে। গিলে ফেলার আগে, ভ্যানিশ হয়ে যাওয়ার আগে মধ্যবিত্তের মফস্বলকে মনে করিয়ে দেওয়ার রাজনীতি। চপের দোকানে গুঁড়ো চপ দিয়ে মুড়ি খাওয়া লোকগুলো, সিরিটি শশ্মানে ব'সে থাকা 'শীতের মানুষ', এক সময়ের ডিডি বাংলা আর তার চিত্রনাট্যে থেকে যাওয়া চরিত্র, নব্বইয়ের এই সমস্তই বারবার বলছে লোডশেডিং আর সাউথ সিটির মাঝখানে একটা দশক আছে। যে দশকের প'রে হুড়মুড় ক'রে 'মাম্মি-ড্যাডি-বেটা', র‍্যাংলার আর সিসিডি আসবে, তার প্রস্তুতির কথা বলেছে এই আখ্যান।

    পুজোয় এবার লাইন দিয়ে প্রাইজ পাওয়া ঠাকুর দেখা হয়নি। নব্বইতে এই লাইন আর প্রাইজের, এই বেনিয়া হয়ে যাওয়া 'খুটি' পুজো ছিল না। নব্বইতে একটা পাড়া ছিল। রিফিউজি প্রজন্মের শীতাতপ ছিল মফস্বলের লোডশেডিং। দক্ষিণের যেখানটাতে টেনেটুনে কলকাতা বলা যেত, সেখানটায় পুকুর ছিল, খুন হয়ে যাওয়া নকশালের ভূত আর লক-আউট হয়ে যাওয়া তালার সামনে ব'সে থাকত পাড়ার পুরোহিত, তারপর হারিয়ে যেত কোনদিন।

    'আগ-মার্কা' নকশাল ছেলের সিপিএম বাবাকে লেখা চিঠি আছে। এক সময়ের বিড়ি খাওয়া কমরেডদের দোতলা বাড়ির কথা আর একটা গোটা মফস্বলের মশালের আলোয় ধীরে ধীরে 'পচে যাওয়া' স্লোগানের কথা আছে।
    পুজোয় পড়লাম ব'লেই হয়তো এই বইটা থেকে যাবে অনেকদিন ম'নে। আমার পাড়ার পুজোয় এবার ডিজে এসেছে। এরপর থিম। তারপর সেরা অসুরের জন্য স্পন্সর। তারপর সার্বজনীন স'রে গিয়ে...

    এই বই পড়া দরকার। পিছিয়ে পড়ার ভয় ঢোকার আগে দিনগুলো কেমন ছিল জানার জন্য পড়া দরকার। একটা আন্সমারট দশক কীভাবে ছিপছিপে ক্রেডিট কার্ডের দিকে এগিয়ে গেল...আর ডিভানের নীচে জ'মে রইল তার লিটিল ম্যাগের তরুণ বয়স...

    শুধু এইটুকুর জন্যই পড়া দরকার।"
  • রোবু | 213.132.214.83 | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ১১:৫৫720964
  • ওপরের রিভিউটাও দুর্দান্ত হয়েছে।
  • রোবু | 213.132.214.83 | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ১১:৫৬720965
  • শাক্যর এই বইটা আসলে আমারই লেখা। না পড়েই বুঝতে পারছি।
  • পাঠকের প্রতিক্রিয়া | 11.39.60.19 | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ২৩:৫২720966
  • পারমিতা দত্ত লিখেছেনঃ

    "গুরুচন্ডালি থেকে প্রকাশিত চটি বই " অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত " বইটা পড়তে পড়তে নব্বই দশক মাথায় রেখেও আশির দশকে ঢুকে পড়ছিলাম বারে বারে...এক দশক থেকে আর এক দশক শুরুর সময় সব ভেঙে যাচ্ছে. একদিন কলেজ স্ট্রিট থেকে ফেরার সময় সান্ধ্য কাগজে খবর সোভিয়েত ভেঙে গেল, কি মনে হয়েছিল আজ আর সঠিক মনে নেই....কিন্তু অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম এক জায়গায়.
    ডিভানের মধ্যে রাখা বই অনেকদিন পর বার করে যে অনুভূতি সেটা লেখাটার পরতে পরতে উপোভোগ করেছি....মুনমুন সেনকে নিয়ে লেখাটাও কেমন নষ্টালজিক করে দেয়.... আস্তে আস্তে সব বদলে গেল ... বদল দরকার বলে বিশ্বাস করি.
    শাক্যজিতকে অনেক ধন্যবাদ বদলানোর এই ডকুমেন্টেশান করার জন্য ... পরবর্তী বই এর অপেক্ষায় থাকলাম "
  • পাঠকের প্রতিক্রিয়া | 233.223.143.253 | ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ১৯:৪৩720967
  • অগ্নিভ মুখার্জি লিখেছেন-

    "বইটা পড়লাম...এবং বেশ ভালো লাগল। বস্তুত, স্মৃতিমেদুরতায় আচ্ছাদিত লেখালেখি যে কোনও মানুষের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়, আর সেই মেদুরতা যখন পাঠকের হৃদয়কেও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে তখন তো আর কথাই নেই। আমরা যারা নব্বইয়ের সঙ্গে নাড়ির অমোঘ টানে আকৃষ্ট তাদের গ্রীষ্মের শুকিয়ে আসা খালে যে বারিধারার সঞ্চার করল এইসব নস্টালজিয়া একথা বলাই বাহুল্য। সঙ্গে নব্বইয়ের জিনগত পূর্বসূরি হিসেবে সত্তর এসেছে দস্তুরমত যা বইয়ের এক উল্লেখযোগ্য দিক। আসলে কাল তো বিচ্ছিন্ন কিছু ব্যক্তি-সত্তা-স্মৃতির সমষ্টি নয় - সমস্ত যুগ সমস্ত কালই মহাকালের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই সাতচল্লিশের উত্তরসূরিরূপে এসেছে সত্তরের নকশাল আন্দোলন আর তারপর নব্বই। প্রকৃতপক্ষে সত্তর তো এক নতুন যুগেরই সুচনা করেনি, সুচনা করেছিল এক নয়া দৃষ্টিভঙ্গির এক নতুন জীবনবোধের। আর কয়েকটা কথা বলা উচিত শেষ করার আগে। বেহালার নকশাল আন্দোলনের প্রসঙ্গ উঠলে নীলের কথা উঠবেই এবং নীলকে যে কীভাবে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছিল তা প্রায় সকলেরই জানা। তবে নীলের ভালনাম যে অনিল মুখার্জি তা জানা ছিল না, লেখককে ধন্যবাদ জানানোর জন্য। তবে একটা দ্বিমত থেকে গেল, আমরা জানতাম নীলকে পুলিশ খুন করেছিল - কিন্তু বইতে ৪১ পৃষ্ঠায় লেখা আছে কংগ্রেসিদের হাতে খুন হয়েছিল নীল আর ৬৪ পৃষ্ঠায় পুলিশের হাতে। পুলিশ ও কংগ্রেসিরা একই মুদ্রার ভিন্ন দুই পিঠ হলেও একক হিসেবে তো আলাদা ছিল। তাই এ ব্যাপারে দ্বিমতটা না থাকলেই ভালো হত। যাইহোক, লেখককে আরেকবার ধন্যবাদ নব্বইকে একবিংশ শতাব্দীর কঠিন বুকে এনে ফেলার জন্য।"
  • পাঠকের প্রতিক্রিয়া | 233.223.137.121 | ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ১১:০২720969
  • অরিজিত গুহ লিখেছেনঃ

    "বাবাকে না পাঠানো চিঠিটা পড়ছিলাম।এতটা মিল খুৃঁজে পাবো আমার সাথে এটা unexpected ছিল।মার্ক্সবাদের প্রথম পাঠ আমারো বাবার হাত ধরেই।পুজোর সময় আমারো ঘন্টার পর ঘন্টা কাটত পার্ক সার্কাসে পার্টির বুক স্টলে।শেষদিনের প্রাপ্তি ছিল রাদুগা প্রকাশনের একটা বই।বাদশা কাকু খুব আসত আমাদের বাড়িতে।অনেক দিন ঘন্টার পর ঘন্টা বাবার সাথে আড্ডা মিটিং দুটোই হত আমাদের বাড়িতে।এখনো বাবার সাথে চায়ের দোকানে মাঝে মাঝে আড্ডা মারে,তবে সেখানে তর্কাতর্কিটাই বেশি হয়।এখনো বিজেপিই করছে বাদশা কাকু।তবে বাবা এখনো বলে 'ও পার্টিতে থাকলে অনেক ওপরে উঠতে পারত'।ভোটের দিনগুলোর যা বিবরণ দিয়েছে একেবারে মিলে গেছে।নব্বইতে বামপন্থী বাড়িতে ভোটের দিন মানে উতসবের দিন।সারাদিনের ব্যাস্ততা আর সন্ধ্যে হলেই নিজেদের মত করে স্ক্রুটিনি কটা সিটে জিতবে। ১১ র রেজাল্ট বেরোনোর সময় বাবার সামনে থাকতে পারিনি।কারন ওই দৃশ্যটা দেখতে পারব না।যদিও বাবা পার্টি অফিসেই ছিল।বাবার বয়স বেড়ে যাচ্ছে।খুব কষ্ট হয় দেখে।বইয়ের প্রশ্নগুলো তো আমারো প্রশ্ন।সব কটা প্রশ্নের সামনে টেনে দাঁড় করিয়ে দিতে ইচ্ছে করে একেকসময় বাবাকে,কিন্তু পারি না।দিনের শেষে চোখের সামনে এক অপরাধী পিতা মনে হয় তার সন্তানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।বইটা এভাবেই বারেবারে আমাদের নব্বইকে আমাদের সামনে এনে ফেলেছে।সে wwf এর কার্ডই হোক বা চিত্রহার বা সুপারহিট মুকাবলা।এই wwf এর কার্ড নিয়েই এক বন্ধুর সাথে গল্প করছিলাম।ওই সময়টায় আমরা অনেক অল্পে খুশি হতাম।সেই অল্পে খুশির সময়টা ফেলে এসেছি নব্বইতে।এখনকার জেনারেশনের হয়ত অনেক আছে,কিন্তু অল্পে খুশি হওয়ার মজাটা তারা বুঝতে পারে না।স্কুল থেকে ফেরার পথে লেক হোক বা ম্যাডক্স স্কোয়ারে ঢু মেরে যাওয়া আর শীতকালের হিম হিম সন্ধ্যেগুলো ক্যারাম বোর্ডের সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে থাকা সবকিছু নতুন ভাবে পাওয়া হল।আর লোডশেডিং।এক ভুলে যাওয়া অতীত।সময়গুলো যে কি ছিল বলে বোঝানো যাবে না।লোডশেডিং হলেই পাড়া থেকে সমস্বরে একটা চিৎকার উঠত হোওওওও করে,তারপর পরই সবাই বেরিয়ে পরতাম।খেলা বা আড্ডা মারার একটা অভাবনীয় সুযোগ।লটারি লেগে গেলে যেমন হয় আর কি।সব কিছু নিয়েই বেঁচে থাক আমার নব্বই আমার স্মৃতির মণিকোঠায়।"
  • h | 212.142.105.179 | ২২ অক্টোবর ২০১৬ ১২:১০720970
  • ভাবতে খারাপ লাগে না, বুড়ো হয়ে বলতে পারবো, আই হ্যাভ সীন আ ফিউ পিপল 'অ্যাট ওয়ার্ক'। এই বই তার মধ্যে অবশ্যই পড়বে। প্রথমে আমি উপস্থাপনা নিয়ে বলছি, তার পরে অন্য কথা।
  • h | 212.142.105.179 | ২২ অক্টোবর ২০১৬ ১৮:৫৫720971
  • প্রথম দিকে গুরুচন্ডালির চটি বইয়ে, বা কাগুজে গুরুতে, হয়তো অভিজ্ঞতা কম থাকায়, লোকবলের অভাবে, একটা ছাপার অযত্ন চলে আসতো, সেটা ক্রমশঃ কমছে, এবং এই প্রসেস টা অব্যাহত এই বইয়ে। সেটা আমি লক্ষ্য করেছি এবং ভালো লেগেছে। কোনদিন কাউকে সাহায্য করি না এবং করব না, কিন্তু বাতেলা করে থাকি, এই কালেকটিভে আমার বিসেস ভূমিকা নাই, খুঁতখুঁতে পাঠক হিসেবে, একটা যত্ন দেখতে ভালো লাগে, এই বইতে সেই যত্ন আমি দেখেছি, টাইপো বেশ কম, তবে আছে, একবার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নির্ভুল বই বেরোনো শুরু হয়ে গেলে, তারপরে সেটাই স্ট্যান্ডার্ড হয়ে যাবে। চটি সিরিজে একটা নতুন ভালো লেখা মানুষের হাতে অল্প দামে দেওয়ার একটা ঘোষিত উদ্দেশ্য আছে সেটার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত না হলেও, দিস ইজ আ লেবার অফ লাভ। সেটা ভালো লাগে। উদ্ধৃতি চিহ্ন র ব্যবহারে ইনকনসিস্টেন্সি আছে, সেটা পরের সংস্করণে মিটে যাবে আশা করি। ইলাসট্রেশন ভালো লাগে নি। অপ্রয়োজনীয় মনে হয় নি, কিন্তু ভালো ও লাগে নি। সমস্যা হল , ভলান্টারিজম এর একটা সমস্যা আছে, যাঁরা ভালোবেসে বই করতে সাহায্য করেন, তাঁরা এই নিন্দে শুনলে খচে যেতে পারেন, কিন্তু এটা একজন ছবি না বোঝা লোকের বক্তব্য, এটুই বলতে পারি, জাস্ট ভালো লাগে নি, তাতে অবশ্য বাল। এই বইয়ের কন্টেন্ট ই তার আসল জোর, অন্তত পড়তে অসুবিধে হয় নি। বইপত্র ভীষণ সুন্দর করে ছাপা অসহ্য বোগাস মাল এ তো কম দেখলাম না। আর ভীষণ এক নং পাবলিশার ডিস্ট্রিবিউটর এর অযত্নে ছাপা বোগাস মাল ও কম দেখলাম না। অতএব যত্ন বাড়িয়ে যাওয়া ছাড়া রাস্তা নেই।
  • h | 212.142.105.179 | ২২ অক্টোবর ২০১৬ ২১:৪৮720972
  • বরাবরই সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় এবং বিনা প্ররোচনায় আমার বড় বড় কথা বলা অভ্যাস। তো সেরকম ভাবেই কন্টেন্টের কথা বলবো।
    যে কারণে গুরুচন্ডালি র কয়েকজনের সঙ্গে বন্ধুত্ত্ব হয়েছিল, এবং রয়ে গেছে, অসংখ্য পুজো পুজো গন্ধ এবং শারদীয় আনন্দমেলা কিংবা প্রথিতযশা প্রতিভা যা এখনো বিনষ্ট করতে পারে নি, সেই স্বল্প পঠিত বইয়ের জন্য একটা প্রায় অন্ধ ভালোবাসা য় ভরা একটা আস্ত চ্যাপটার উপহার দেওয়ার জন্য শাক্য কে ধন্যবাদ। এই বইতে শুধু এই একটা চ্যাপটার হলেও বইটা সম্পূর্ণ হত এ কথা বলবো না, তবে এই অংশটাই সবচেয়ে ভালো লেগেছে। বোরহেস বুয়েনাস এয়ারেস এর আন্ডারগ্রাউন্ড লাইব্রেরী তে আট বছর লাইব্রেরিয়ান ছিলেন, পেরন যুগল এর শাসনের আমল সম্ভবত, শেষ দিকে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যান, বোরহেস কে আর যাই হোক বামপন্থী বলা যায় না, সেই বইয়ের স্তূপের মধ্যে বসেই কালজয়ী সব লেখা। কল্পিত কেতাব ও রয়েছে তার মধ্যে, কল্পিত বইয়ের কল্পিত লেখক কে নিয়ে কাহিনী ফাঁদা। আমাদের বিস্মৃতি এত শক্তিশালী আর এত সর্বভূক, 'গাঙ্গেয়' বা বারেন্দ্র অনেক পত্র পত্রিকা কেই আমরা আন্ডারগ্রাউন্ডে পাঠিয়েছি এবং এখনো পাঠাচ্ছি। পেরন রাও সংখ্যায় কম পড়েছেন তা নাঃ-) এই অংশটার জন্য, কয়েক প্রজন্মের বইয়ের ভালোবাসা কে আমাদের মধ্যে নতুন করে এনে দেওয়ার জন্য শাক্য কে বিশেষ ধন্যবাদ।
  • h | 212.142.105.179 | ২২ অক্টোবর ২০১৬ ২১:৫৯720973
  • অন্য চ্যাপটার গুলো কি আমার অপছন্দ হয়েছে? একেবারেই না, কিন্তু প্রিয় চ্যাপটার ওটাই। অমিতাভ মালাকার চমৎকার ভূমিকা লিখে দিয়েছেন, অসম্ভব শরীর খারাপ ছিল মাঝে তার মধ্যে লিখে দিয়েছেন কিনা জানি না, যদি দিয়ে থাকনে, একটু বিশেষ ধন্যবাদ।

    এই যে অনেক কিছু বদলাচ্ছে তার একটা অনুভূতি, বদলে নিয়ন্ত্রন তো ছেড়ে দিন, সে বদল অভিপ্রেত কিনা তাই বুঝতে পারছি না, এই যখন অবস্থা, তখন ডকুমেন্টেশনের একটা উদ্বেগ প্রচেষ্টা সংবেদনশীল মানুষের আসবে। তো শাক্য র ও সেটা এসেছে। এক পাগলের কথা জানতাম, বম্বের সমস্ত বই য়ের দোকান আর লাইব্রেরী থেকে সে বই চুরি করে একটা অ্যাবানডন্ড ফিলমের পোস্টার ছাপার কারখানায় সে জমাত, তার ধারণা ছিল, শপিং মল, চওড়া রাস্তা, ফ্ল্যাট এবং বিস্মৃতির র হাত থেকে পুস্তককুল কে রক্ষা করার এইটেই একমাত্র পন্থা। শোনা যায় মৃত্যুর পরেও সে অভ্যাস সে ত্যাগ করে নি, লাইব্রেরিয়ান রা বই হারিয়ে গেলে, গোপনে লোক ও নেশা সামগ্রী ঘুষ পাঠিয়ে পরিচিত, বিশ্বস্ত ও পুস্তক প্রেমী চোরের গুদোম থেকে বই উদ্ধার করতেন বলেও শোনা যায় ঃ-))) তো এই সব কিছু হারিয়ে যাচ্ছে বা যাবে সেইটেই ভবিতব্য তার মধ্যে যা পারি লিখে ফেলি, এই অদম্য বাসনা থেকেই হয়তো এই বই। তাই কলকাতা বা শহর বা শহরতলী আমার কাচ্ছে অপরিচিত হলেও, এই বাসনাকে মূল্য না দেওয়ার কোন কারণ দেখি না।
  • h | 212.142.105.179 | ২২ অক্টোবর ২০১৬ ২২:২৫720974
  • কলকাতা সম্পর্কে আমার সমস্যা হল, বাদশা কাকু দের আত্মজীবনী নাই, টারজান ও শহরে সুর্যোদয়ের সঙ্গেই সঙ্গেই বিদেয় নিয়েছে, আর বাদবাকি সীমিত এই শহর / নগর/ শহরতলী হ্যাজ বিন রিটেন অ্যান্ড ওভারসোল্ড, একটাই বাঁচোয়া , সম্ভবত বিশ্বমানের সাহিত্য, বাংলায় স্বল্পপঠিত সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, বিজ্ঞান ইত্যাদি র সঙ্গে সম্যক পরিচয় থাকা লেখক, অন্তত আমি--শহরতলী,-শীর্ণকায়-চাকুরি পাওয়া কিন্তু নিরাপত্তা সত্ত্বেও হাইপোকন্ড্রিয়াক-তদুপরি-প্রতিভাবান এই রোগ থেকে মুক্ত। সরাসরি বলছি, এই রোগ এই জয় বা স্বপ্নময় রা এত বেচেছেন আমি ক্লান্ত খানিকটা, বাংলা ছোটো পত্রিকা অনেকেই এই রোগ মুক্ত না। একই মিলিউ থেকে এলেও, সবাই উন্মন বাদ্যকর না, সবাই কে ভগবান ঐ লালন আর জয়েসের সিক্রেট লাভ চাইল্ডের মন আর হাত দেন নি।
    একটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন অবশ্য শাক্য, একটা অসামান্য সিনেমার মত প্যারাগ্রাফের পরে, আবেগে ন্যুব্জ হয়ে বলেছেন, 'এর থিয়োরী হয় না', এটা সামাজিক ইতিহাস, সমালোচোনা তত্ত্ব, দর্শন পড়া লোকের পক্ষে খুব ই অন্যায় হয়েছে। এই টেই এই বইয়ের অপ্রস্তুত ইজাকুলেশন মোমেন্ট ;-) কেন রাগ করছি, সেটা পুরোটা পরে কখনো বলা যাবে, তবে এটুকু বলতে পারি, এই বই কে , 'ওপেন টি বায়োস্কোপ' বা 'গান্ডু' দু ধরণের সিনেমা হয়ে ওঠা থেকে রক্ষা করতে পারার মত মেটেরিয়াল প্রচুর থাকা সত্ত্বেও, শুধু এই লাইঅন্টার জন্য, ভবিষ্যৎ হয়তো এই মেনস্ট্রীম নস্টালজিয়ায় এই বইকে একটা সময় ব্যবহার করবে এই ভয় আমার থেকে যাচ্ছে। যে দুটোর নাম করলাম, সেই দুটো ওয়ার্ক অফ আর্ট কে শ্রদ্ধা জানিয়েই বলছি, এই বই কে শুধু মেমোয়ার হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য সামাজিক ইতিহাসের একটা চোখ আছে, তার ঐ স্খলন, আমার প্রাণে সয় নি।
  • h | 212.142.105.179 | ২২ অক্টোবর ২০১৬ ২৩:১৫720975
  • আলোচনার দৈর্ঘ্য লেখার দৈর্ঘ্যের থেকে বেশি হওয়ার একটা বিপদ থাকা সত্ত্বো আর দুখান কথা বলতেই হয়। কথাটা সত্যি কার ভুলে গেছি, সত্যি আদৌ বলেছিলেন কিনা তাও ভুলে গেছি, আমার শোনা গল্পে ফরাসী আনালিস্ট ঐতিহাসিক মার্ক ব্লখ এর কথা সম্ভবত, মধ্যযুগীয় ফ্রান্সের ইতিহাসে আকর/সূত্র কি হবে তাই নিয়ে বিতর্ক আছে, শুধু চার্চ রেকর্ড বা রাজসভার দস্তাবেজ, নাকি ভ্যাটিকান আর রাজাদের ক্ষমতার লড়াই, নাকি ব্যবসায়ী গিল্ড গুলোর নথি, বেশি অথেন্টিক সোর্স কি সে নিয়ে কোন বিতর্ক তে ভদ্রলোক নাকি বলেছিলেন, ইতিহাসে সুত্র নিয়ে বাছ বিচার ভালো না, মাঠ ঘাট আস্তানা যা আছে সব ই ইতিহাসের সুত্রে, শুধু গাঁথার কাজ টা করে যেতে হবে। তো আমাদের ইতিহাস কথায় দূরদর্শন থেকে হ্যাচাকের আলো, খৈনী পেটা সুমন শোনা পুরুত বা শ্মশান বা মরা গঙ্গা সব কিছুকেই নিয়ে এসেছে শাক্য, এইটে খুব ই দক্ষ কাজ হয়েছে। আর্বান হিস্টরিয়ান রা প্রায় কিছুই বাদ দিতে চান না আজকাল, কালচারাল হিস্টরিয়ান দের লেখায় একটা সজীবতা পাওয়া যায় যেটা আমরা যে ভাবে ইতিহাস পড়তে স্কুলে শিখেছি তার চেয়ে আলাদা। এই কাজটা ভালো কাজ করেছেন শাক্য। পর্থম যখন জানতে পারি, ১৯৩০-৪০ এর দশকে মান্তোর লেখা রেডিও নাটক গুলোর সব কটার হদিশ আর দিল্লীর রেডিও স্টেশনে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন প্রচন্ড মন খারাপ হয়ে গেছিল, পরে শুনেছি একজন কষ্ট করে তার ট্রান্সস্ক্রিপ্ট কিচুহ সীমিত আকারে উদ্ধার করেছেন। ডিভানের ভেতরে রাখা গোপন বই খুঁজে পাওয়ার আনন্দ হয়েছিল সেদিন, যদিও পড়ি নি এখনো। একটা ওভারহেল্মিং সেন্স অফ লস যাদের তাড়িয়ে বেড়ায়, অথচ যারা বোঝে সময় বদলাবে, শুধু অ্যাম্নেসিয়া কে আটকাতেই হবে, নইলে সভয়তার সত্য সন্ধান বার বার আক্রন্ত হবে। একথা শাক্য বুজেছে।
    তবে একটা সাবধানতা অবলম্বন করার অযাচিত অনুরোধ করবো। দ্যাখা যাচ্ছে শাক্য মোমেন্ট খুঁজে বেড়াচ্ছে, সিগনেচার মোমেন্ট গোটা নব্বই এর দশক জুড়ে। প্রথমত বুঝতে হবে এই টে এই জার্মানীর দেওয়াল পড়ার সময় থেকে হয়েছে, নাকি উডস্টকের আমল থেকেই হয়েছে, নাকি ফোটোজার্নালিজম আর ডকুমেন্টারি ইডিয়ম টার জন্য হয়েছে জানি না, লোকের একটা সিগনেচার মুহুর্ত খোঁহা অভ্যেস হয়েছে। এখন এটা খারাপ না। কিন্তু অসম্ভব গুরুত্ত্বপূর্ণ ইতিহাস কিন্তু একেবারে অনাটকীয় হতে পারে। এইটে কিন্তু খেয়াল রাখা দরকার। ইতিহাস পর্যালোচনায় মানুষকে আকৃষ্ট করতে গিয়ে , শুধু মুহুর্ত খুঁজলে কিন্তু চলবে না, প্রতিটা দিন ই যে একটু একটু করে সময়টা বদলাচ্ছে , কখনো ইচ্ছায়, কখনো বিপ্লবে, কখনো প্রতিক্রিয়ায়, কখনো অনিচ্ছায়, কখনো দোহা ট্রেড টক রাউন্ডে, এই টা বুঝতে হবে, যারা স্টেবিলিটি স্টেতাস কুয়োর কথা বলে এক ধরণের রাজনীতি র কথা বলে, তাদের কে এই অস্ত্রেই ঘায়েল করা দরকার, যে সুবিধে মত বদল কে অপরিবর্তনীয় চিরকালীন বোলো না বাপু। এই লড়াই টা ইতিহাস সচেতন লেখক কেও লড়তে হবে, শহিদুল জহির একটা টেকনিক ইউজ করেন, সেটা হল, একটা নাটকীয় মুহুর্তকে ফিরিয়ে আনেন, ধুয়োর মত করে এই টা একটু খেয়াল রাখতে হতে পারে, অবশ্যই সেটা দিনের শেষে লেখকের ইচ্ছা। বোঝাতে পারলাম কিনা জানি না।
  • h | 212.142.105.179 | ২২ অক্টোবর ২০১৬ ২৩:৪৭720976
  • সেন্ট অগাস্টিনের কনফেসন ই বলুন, জয়েসের অল্পবয়সী আর্টিস্টের পোর্ট্রেট ই বলুন বা রডি ডয়েল এর প্যাডি ক্লার্ক হা হা হা নামক বইটাই বলুন, কেরুয়াক, পল অস্টার যাই বলুন পশ্চিমে যৌনতাবোধ এর উন্মেষ, অভ্যাস ও অবসাদ সব কিছুই খুব বেশি পরিমাণে এসেছে। তো শাক্যর লেখাতেও সেটা আছে। মাস্টারবেশন এর বর্ণনা কে এক সময় বলা হত সাহিত্যের শেষ ট্যাবু তো ক্লান্তি, একাকীত্ত্ব, অবসাদ, যৌনতার উন্মেষ অনেক ধরণের একাকী মুহুর্তেই এখন এর বর্ণনা চলে এসেছে। চিলে কোঠার সেপাই দের ও এর থেকে মুক্তি নাই, তবে এর সঙ্গে নতুন ধরণের ভিসুয়াল কালচার এর অভিজ্ঞতা কে জুড়ে দেওয়া য় শাক্য একটা মুন্সীয়ানা দেখিয়েছে।
    যৌনতা সম্পর্কে আমার একটা প্রাক ষাট দশকীয় কুন্ঠা রয়ে গেছে, কারণ পিতা বা পিতৃসমগণ বা একটি মৃত পার্টি সমস্ত ইনসোলেন্সের বদলা হয়তো এই অভিশাপেই রেখে গেছেন ঃ-) তবে এটা বোঝা দরকার, বইটি সরু হলেও কনফেসন থেকে ইন্টারেস্টিং টাইম্স এর দিকে যে অনেকটাই এগিয়েছে, তাতে মমতা কুলকার্নির ভূমিকা সীমিত ;-)

    সত্তরে বাল্য/শৈশব, আশিতে কৈশোর ও যৌবনের সময়ের কারণে, এবং নানা বিটারনেসের কারণে আমার স্বপ্ন তৈরী হওয়ার আগেই হয়তো কিছুটা মৃত ছিল। তাই বুঝতে পারলেও, পার্টি ও বাবাকে লেখা চিঠি ইত্যাদি নিয়ে আমার বক্তব্য বিশেষ নাই, ষাট সত্তরের ইউথ কাল্ট আমাকে কিছুটা ক্লান্ত করে, কারণ পিতৃসমদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এবং সমর সেন দের কুমন্ত্রনায় আমি হয়তো স্মৃতিও চুরি করতে শিখেছিলাম, মেমোয়ার লিখন ও পাঠের এর রোগটি পরিচিত ও পুরোনো, বামপন্থী ঘরানায়। তবে একটা মজা দিয়ে শেষ করবো। ছোটো থেকে বুল্গানিন ক্রুশ্চেভ দের কলকাতা আগমনের সময়ে কিভাতে দুই রাশান, কাঁচড়াপাড়ার রিফিউজি ছেলেটির দিকেই বিশেষ করে লেনিনের বার্তা নিয়েই যেন তাকিয়ে ছিলেন, এসপ্ল্যানেডের মোড়ে, সেই গল্প শুনে কান পচে যাওয়ার বদলা আমি একদিন ই নিতে পেরেছিলাম, যেদিন বলতে পেরেছিলাম, আমি ম্যান্ডেলা কে দেখেছি। মিথ্যার আশ্রয় একটু নিতে হয়েছিল, বলতে হয়েছিল, মাদিবাও আমায় দেখেছেন, চিনি যেন চোখ টি নিয়ে, তো ইতিহাসের প্রগতির প্রয়োজনের কাছে, এসব মিথ্যাশ্রয় তেমন অপরাধ না, বাবাদের না হারালে প্র্যাকটিকালি কিসু এগোবেও না, কারণ স্মৃতি ও মনে রাখবেন, একটা প্রতিযোগিতা ভিন্ন কিসু না ;-)))

    ওভারল খুব ভালো লেগেছে বইটা শাক্য। নিজেকে নিংড়ে লিখেছ হয়তো, বিশ্রাম নাও, তবে থেমো না, চটি তে সন্তুষ্ট নই, পাম শু চাই। অদূর ভবিষ্যতে।
  • h | 212.142.105.179 | ২৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৭:৩২720977
  • একটা কথা বলতে ভুলে গেছি এখানে, কিন্তু সেদিন ফোনে ইপ্সিতা কে বলেছি, তার শরীর খারাপের মধ্যে এবং যথারীতি অকারণে গায়ে পড়ে।
    এই নিয়ে অনেক গুলো স্মৃতিকথা গোছের বই/লেখা হয়ে গেল এই চটি সিরিজে বা গুরু র সাইটে। এগুলো কে ডিকেড ধরে বা থীম ধরে এক জায়গায় আনা যেতে পারে একজায়্গায় ভবিষ্যতে। মেয়েদের লেখা গুলো, বা অন্তত নারীবাদী লেখা গুলো আলাদা করা যেতে পারে যেমন।

    যদিও একটা কথা বলতেই হবে, আমি ঠিক জানিনা, সাংস্কৃতিক ইতিহাসে ঠিক কারা, ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা, না ডিসাইনার/আর্কিটেক্ট রা, না ফোটো জার্নালিস্ট রা, না মিউজিক হিস্টরিয়ান রা কারা এই দশক ভাগে সংস্কৃতিকে দেখতে শুরু করছেন বিংশ শতকে। এটা অনেক সময়েই গোলমেলে ক্যাটিগোরি, এই ধর এই যে এত ৭০ ইত্যাদি, এখানে, এ মানে তো ৬৭ তে শুরু হয়ে ৭১ এ ফিনিশ তারপরে দিল অগর বড়া হুয়া তো ৭৫-৭৭। ৮০ র দশক বলতে তো ৮৪ র ইন্দিরা হত্যা বা ৮৯ এর মন্ডল কমিশন/তিয়েন আন মেন/বার্লিন ওয়াল, ৯০ এ যাই ঘটে থাকুক, ৯২ এর ৬ ডিসেম্বর এর থেকে বেশি গুরুত্ত্বপূর্ণ কিসু না। তো এই সমস্যা আছে। তবু ঐ ধরণের একটু বড় কালেকশন প্রকাশক রা ভাবতে পারেন।
  • পাঠকের প্রতিক্রিয়া | 11.39.60.114 | ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ১৫:৪৬720978
  • বাবুরাম সাপুড়ে নামক জনৈক পাঠকের প্রতিক্রিয়াঃ

    "মাননীয় শাক্যজিত ভট্টাচার্য বাবুর অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত বইটি বেশ মন দিয়েই পড়লাম। সামাজিক গণমাধ্যমে প্রভূত প্রচার বইটার প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়েছিল সন্দেহ নেই কিন্তু অতীব সুখপাঠ্য হলেও এই লেখা শেষ পর্যন্ত বিকর্ষণেরই জন্ম দিল।
    একটু বিস্তারিত লিখি তাহলে, প্রথমত বইটির সাহিত্যগুন অথবা শাক্য বাবুর লেখনীর শক্তি বিচার করার ধৃষ্টতা আমার নেই, এ লেখাও সেজন্য না। বরং প্রতিটি সাহিত্যর জন্ম হয় কোন না কোন রাজনীতি থেকে এই আজন্মলালিত বিশ্বাস থেকেই এ লেখার অবতারনা।

    একটি সংবাদপত্র থেকে জানতে পারলাম শাক্যবাবু পেশায় রাশিবিজ্ঞানী। অর্থাৎ উচ্চ-মধ্যবিত্ত। এবং সেই উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে লেখার পড়তে পড়তে। নব্বই নিয়ে লেখা হলেও নয়া-উদারনীতির ফলশ্রুতিতে এ শতাব্দীতে জন্মানো উচ্চ-মধ্যবিত্তসুলভ এলিটিজম খুঁজতে হয় না এ লেখায়। অভ্যস্ত চোখে ধরা পড়ে প্রায়শই। প্রথমেই বলে রাখি নব্বইয়ের এ বিশ্লেষণে সংখ্যালঘু সমাজ অনুপস্থিত, সে থাকতেই পারে। মধ্যবিত্ত জীবন যাপনে অন্যরকম মানুষের প্রবেশাধিকার তো বিশেষ থাকে না। কিন্তু লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়ে ওঠে সেখানে, যেখানে সংখ্যাগুরু মধ্যবিত্ত নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষা বাহিনী এলাকার শান্তি রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে, যেন নানা ধর্মের মানুষের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনে নয়, এলিটদের শুভবুদ্ধির ওপরই সম্প্রীতি নির্ভরশীল। এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তো এভাবেই ভাবতে শেখায়। এবং এই ভাবনাই অত্যন্ত সাবলীলভাবে হাজির হয় পাঠকের সামনে। কোথাও এতটুকু অস্বাভাবিক মনে হয় না।
    মান্টোর লেখার ভবঘুরে কবির প্রশ্ন করত অবিরাম, প্রশ্ন করত ব্যবস্থাকে, প্রশ্ন করত শাসককে। শাক্য বাবুর লেখার পাগল কিন্তু পুকুরে ডুবে মারা যায়, কোন প্রশ্নই সে তুলে যেতে পারেনা। প্রশ্নের অবসান হয়, দ্বন্দেরও। আর ঐ একটা লাইনের পরে আর কোথাও সেই পাগলটা আর ফিরে আসে না। ফিলগুড হাল্কা নস্টালজিয়া জড়ানো পৃথিবীতে ও স্রেফ একটা পাগল হয়েই থেকে যায়। একটা অতিরিক্ত চরিত্র মাত্র। ঠিক যেরকম এ লেখার হাটুরে বা ভবঘুরেদের মধ্যে ৬০-৭০ এর আগুন অনুপস্থিত। তারা শুধুই চুইয়ে পড়া অর্থনীতির অনুগ্রহ প্রত্যাশী। তারা শুধু অপেক্ষায় থাকে কখন একটা ভাঙ্গা আলুর চপের টুকরো জুটে যায়।

    বার্লিনের ভাঙ্গা প্রাচীরের যে আপাত সুন্দর রঙিন একমেরু পৃথিবীর গল্প শুনিয়েছিল, তা আজ ধূসর। তাই হয়তো ৯০ কে গ্লোরিফাই করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। প্রয়োজন হয়ে পড়ে নস্টালজিয়ার রূপচর্চায় মুখের বলিরেখাগুলোকে ঢেকে দেওয়ার। তবে যে মোড়কেই ঢাকা হোক অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের লড়াইয়ের কথা বলে না, এ স্রেফ ভাল থাকা উচ্চ-মধ্যবিত্তের নস্টালজিয়া বিলাসিতার আখ্যান।"
  • ARJUN DASGUPTA | 68.68.98.58 | ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ১১:৪৫720980
  • পড়লাম । অসাধারণ । মেয়েকে পরে শোনালাম সেই দিনগুলোর কথা যা তার বাবা পেরিয়ে এসেছে আর সে প্রবেশ করছে।সাথে নিজের জীবন থেকে বেশ কিছু গল্প শোনালাম। বিশেষ করে সেই লেক মার্কেটের পাশে বন্ধুদের সাথে বান্ধবীকে প্রেমপত্র দিতে যাবার গল্পটা ।মেয়ে শুনে হেসে গড়াগড়ি দিলো। সন্ধ্যা বন্ধুদের মদের আড্ডায় পরে শোনালাম। নিজেরা অনেক পুরোনো নিজেদের স্মৃতি রোমন্থন করলাম । অনেক দিন আগের সেই নিজেকে একটু হলেও খুঁজে পেলাম। বড়ো ভালো লাগলো ।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন