এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • নাগরিকতা , এন আর সি, ক্যাব ইত্যাদি।

    রঞ্জন
    অন্যান্য | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ | ১৯৩৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • রঞ্জন | 236712.158.455612.60 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৭:২২729060
  • [ চারদিকে এত শব্দদূষণ যে সব গুলিয়ে যাচ্ছে। কার নাম দুন্দুভি্‌ কাকে বলে অরণি? কর্তারা বলছেন লোকজনকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। আসলে নাকি এন আর সি, আসাম চুক্তি, ক্যাব -- এসব আলাদা। গুলিয়ে ফেললে হবা? তাই ওনারা ক্লাস নেবেন। ১০০০ বিদ্বজনও বলছেন -- এতে কাউকে বারণ করা হয় নাই। কোটাল বলছেন -- ভয় নাহি রে ভয় নাহি।
    আমি ভাবলাম হোমটাস্ক করে ক্লাসে যাই, নইলে বেঞ্চিতে উঠে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু একার সাধ্যি নেই, সবাই হাত লাগান। আমার ভুল শুধরে দিন। নতুন তথ্য, দৃষ্টিকোণ থেকে আলো ফেলবেন এই আশায়।
    জয় গুরু!]
  • রঞ্জন | 236712.158.455612.60 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৭:২৭729071
  • ভাগ-১ (প্রশ্নোত্তরে সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট)

    প্রশ্নঃ ভারতের নাগরিকত্ব আইন কবে তৈরি হল? তাতে কী কী পদ্ধতিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার কথা বলা হয়েছে, একটু ঝেড়ে কাশো দিকি।

    উত্তরঃ প্রথমে বলা দরকার যে ভারতে নাগরিকত্ব ‘রক্ত সম্পর্কের অধিকার’ নীতি (জাস স্যাঙ্গুইনিস) মেনে তৈরি, ‘জন্মস্থানের অধিকার’ (জাস সলি) নীতি মেনে নয়। উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। আমেরিকার নাগরিকত্বের ধারণার ভিত্তি হল ‘জন্মস্থানের অধিকার’ (জাস সলি) নীতি, অর্থাৎ যেকোন দেশের অধিবাসী বা ভিন দেশের নাগরিকের কোন সন্তান যদি আমেরিকায় জন্মায় তাহলে বাচ্চাটি স্বতঃ আমেরিকান নাগরিক হবে, তার বাবা-মা’র নাগরিকতা এখানে বিচারণীয় নয়। কিন্তু ভারতবর্ষের নাগরিকতা মূলতঃ ভারতবর্ষীয় মূলের লোকজনের জন্যে। অর্থাৎ বাপ-মা যদি ভারতীয় উপমহাদেশের লোক বা স্বাধীনতার আগের বৃটিশ ভারতের লোক হয় তবেই সন্তান ভারতের নাগরিকতা পেতে পারে। এমনকি সে ভারতের বাইরে জন্মালেও বিশেষ শর্তের মোতাবিক। বিদেশি নাগরিকের সন্তান ভারতের নাগরিকত্ব পেতে হলে তাকে দীর্ঘকাল এদেশে নিয়মিত বাস করতে হবে এবং অন্যদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করে আবেদন করতে হবে। ভারত একাধিক দেশের নাগরিকত্ব স্বীকার করে না।

    ইন্ডিয়ান সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট ১৯৫৫ অনুযায়ী চারভাবে এদেশের নাগরিক হওয়া যায়; জন্মসূত্রে বা ভারতে জন্মালে, ভারতীয় নাগরিকের বংশজ হওয়ার সূত্রে, পঞ্জীকরণের সূত্রে এবং ন্যাচারালাইজেশন বা দীর্ঘকাল ভারতে বসবাসের সূত্রে।

    ধারা-৩ জন্মসূত্রে।

    (ক) (ভারতীয় মূলের) কেউ যদি ২৬শে জানুয়ারি, ১৯৫০ বা তার পরে এবং ১লা জুলাই, ১৯৮৭ পর্য্যন্ত ভারতে জন্মেছে তবে তাকে ভারতের নাগরিক বলে গণ্য করা হবে।
    (খ) পরে সংশোধিত হয়ে (ভারতীয় মূলের) যারা ১লা জুলাই, ১৯৮৭ থেকে নাগরিকতা সংশোধন আইন, ২০০৩ অনুযায়ী ৩রা ডিসেম্বর, ২০০৪ পর্য্যন্ত ভারতে জন্মেছে তারাও ভারতের নাগরিক বলে গণ্য হবে যদি তাদের মাতা-পিতার মধ্যে কোন একজন ভারতের নাগরিক হয়ে থাকে।

    (গ) নাগরিকতা সংশোধন আইন, ২০০৩ অনুযায়ী যারা ৩রা ডিসেম্বর, ২০০৪ এর পরে জন্মেছে তারা গণ্য হবে যদি বাবা-মা’র দুজনই ভারতীয় নাগরিক হয় বা একজন ভারতীয় নাগরিক এবং অন্যজন বেআইনি অনুপ্রবেশকারী না হয়।

    টীকা-১ : খেয়াল করুন, পাকিস্তানের নাগরিকও মূলতঃ আদি ভারতীয় উপমহাদেশের লোক; সে ধর্মে ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ এবং ক্রিশ্চান — সবই হতে পারে।

    টীকা-২ : তাহলে বে-আইনি অনুপ্রবেশকারী কে ?
    উত্তরঃ কোন বিদেশি যে যাতায়াতের বৈধ দস্তাবেজ, যেমন পাসপোর্ট-ভিসা, ছাড়া এ দেশে ঢুকেছে।
    অথবা, যে বৈধ কাগজ পত্র নিয়ে এলেও অনুমোদিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় এদেশে রয়েছে।

    ধারা-৪ বংশসূত্রেঃ

    যে লোকটি ভারতের বাইরে জন্মেছে এবং জন্মের সময় তার বাবা-মার অন্ততঃ একজন ভারতীয় নাগরিক ছিল; সে যদি জন্মের ১ বছরের মধ্যে নিকটস্থ ভারতীয় দুতাবাসে পঞ্জীকরণ করিয়ে থাকে তাহলে আবেদন করে এই ধারা অনুযায়ী নাগরিকত্ব পেতে পারে ।

    ধারা-৫ পঞ্জীকরণ সূত্রেঃ

    এটা তাদের জন্যে প্রযোজ্য যারা বিয়ে বা পারিবারিক সূত্রে কোন ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে যুক্ত।

    ধারা-৬ ন্যাচারালাইজেশন বা দীর্ঘকালীন বসবাসের সূত্রেঃ

    নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ এর ধারা ৬ বলছে আবেদককে প্রাকৃতিকবিধির অধীন নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র দেওয়া যেতে পারে যদি সে ক) বে-আইনি অনুপ্রবেশকারী নয়, খ) আবেদনের ঠিক আগে লাগাতার ১২ মাস ভারতে বসবাস করেছে, গ) ওই ১২ মাসের আগের ১৪ বছরে অন্ততঃ ১১ বছর ভারতে বাস করেছে। ঘ) নতুন সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট, ২০১৯ বা ক্যাব এ ওই ১১ বছর কমিয়ে ৫ বছর করে দেওয়া হয়েছে।
    ব্যতিক্রমঃ ভারত সরকার যদি মনে করে যে আবেদক বিজ্ঞান, দর্শন, কলা, সাহিত্য বা বিশ্ব শান্তির ব্যাপারে বিশেষ অবদান রেখেছে তাহলে ওপরের সবকটি শর্ত সরিয়ে দিয়ে তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করতে পারে। তিব্বতি ধর্মগুরু দলাইলামা এবং পাকিস্তানি গায়ক আদনান সামী এই নিয়মের অধীন ভারতের নাগরিক হয়েছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিখ্যাত বৃটিশ বায়োলজিস্ট এবং স্ট্যাটিস্টিশিয়ান যে জে বি এস হ্যালডেন প্রশান্ত মহলানবিশের অনুরোধে কোলকাতায় নবগঠিত ইন্ডিয়ান স্ট্যাস্টিস্টিক্যাল ইন্সটিট্যুটে যোগদান করেন। পরে তিনি বৃটিশ নাগরিকত্ব ছেড়ে ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন — এই ধারায়।

    মিত্তিরমশায় একটু গলেছেন। নরম সুরে বললেন—তাহলে ভায়া আমরা কোন ধারায় পড়ব, আর কেউ এসে ক্যাঁক করে চেপে ধরলে কী কাগজপত্তর দেখিয়ে বলব – হিন্দু হ্যায় হম, বতন হ্যায় হিন্দোস্তাঁ হমারা।
    হালদার লাফিয়ে উঠেছেন — ধীরে ধীরে রজনী, ধীরে। অত উতলা হবেন না। ইকবালের লেখা ওই গানটার লাইনটি হল ‘হিন্দি হ্যায় হম’, হিন্দু-টিন্দু নেহি। ইকবাল ধর্মে মুসলমান ছিলেন।
    নবীন দেশপ্রেমিক মিনমিন করে বললেন — কিন্তু আমি যে সংস্কারভারতীর শাখায় ‘হিন্দু হ্যায় হম’ গাইতে শুনেছি।
    প্রফেসর মুচকি হাসলেন। -- ওরা ইতিহাস থেকে শুরু করে অনেককিছুই নিজেদের সুবিধেমত পালটে নিচ্ছে। ‘বন্দে মাতরম’ গানটিও গায় ‘কোটি কোটি কন্ঠ কলকলনিনাদকরালে, কোটি কোটি ভুজইধৃতখরকরবালে’। কারণ ‘সপ্তকোটি’ কন্ঠ গাইলে ধরা পড়ে যাবে বঙ্কিম গানটি আদৌ গোটা দেশের কথা ভেবে লেখেননি, ওঁর সময়ের অবিভক্ত বাংলার জনসংখ্যার কথা ভেবে লিখেছিলেন। ক্রস চেক করুন, দাড়িদাদুর ‘সাতকোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী’।
    মিত্তির ফের খচে গেলেন - কাজের কতা হোক, আমার প্রশ্নের জবাব পেলুম নাকো।
    -- চিন্তা করবেন না। আমরা এখানে যারা গুলতানি করছি তারা সবাই ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ এর পরে এবং ১লা জুলাই, ১৯৮৭ তারিখের আগে জন্মেছি। কাজেই আমরা সবাই জন্মসূত্রে ভারতের নাগরিক — ইন্ডিয়ান সিটিজেনশিপ, অ্যাক্ট, ১৯৫৫এর ধারা ৩ (১) (ক) অনুযায়ী। প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড, ভোটার আইডি, পাসপোর্ট এর যেকোন একটাই যথেষ্ট; কিন্তু আধার ও পাসপোর্টের ওজন বেশি। অধিকন্তু ন দোষায়। তবে দেখে নেবেন — নামের বানানটান যেন ইউনিফর্ম থাকে। মুখার্জি বা মুখোপাধ্যায়, যাই পছন্দ করুন সবজায়গায় একরকম হতে হবে। মোহম্মদ, মুহম্মদ বা মোঃ – কোন একটা সব কাগজে হওয়া চাই। সংশোধনের পদ্ধতি আছে , অনলাইনেও হয়। এটা একটু দেখে নেবেন।
    সরকার খুশি হয়ে বললেন — ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো ভায়া। চা আনাও, আমি পয়সা দেব। কিন্তু ছেলেমেয়েরা? সবাই ভারতে জন্মেছে কিন্তু।
    -- যদি ১ জুলাই, ১৯৮৭র পরে না জন্মে থাকে তবে আপনার মতই – ধারা ৩(১)ক। যদি ১ জুলাই, ১৯৮৭ থেকে ৩রা ডিসেম্বর, ২০০৪এর মধ্যে জন্মে থাকে তাহলে ধারা ৩(১)খ। মানে ওর জন্মের সার্টিফিকেট এবং আপনার বা গিন্নির (বাবা-মা) আধার কার্ড যথেষ্ট। আর আপনার নাতি-নাতনী? যদি ৩রা ডিসেম্বর, ২০০৪ এর পরে ভারতে জন্মে থাকে, অর্ত্থাৎ ধারা ৩(১)গ, তাহলে ওদের বার্থ সার্টিফিকেট এবং আপনার ছেলে ও ছেলেবৌ –দুজনেরই আধার ও ভোটারকার্ড লাগিয়ে দেবেন। আবার বলি, এসব ক্ষেত্রে অধিকন্তু ন দোষায়।
    সবার মুখে হাসি ফুটেছে। কিন্তু অধ্যাপক মাথা চুলকোচ্ছেন। হল কী?
    -- এই সব লেকচার আমার কোন কাজে লাগবে না। কারণ আমি জন্মেছি ৭ই জানুয়ারি, ১৯৫০। আমার কী হবে?
    সবাই চুপ।
    ঊনি বিড়বিড় করতে থাকেনঃ সংবিধান জন্ম নিল ২৬শে জানুয়ারি, ১৯৫০ আর আমি জন্মালাম ১৯ দিন আগে। ক্যান? আর উন্নিশদিন পরে জন্মাইলে কি হইত? কেডা মাথার দিব্যি দিছল?
    মিত্তির গুণগুণ করেন — ব্রহ্মান্ড ছিল না যখন মুন্ডমালা কোথায় পেলি? সত্যিই তো, ভারত স্বাধীন হল, দেশভাগ হল। কিন্তু যারা সংবিধান হওয়ার আগে মাউন্টব্যাটেন জমানায় জন্মালো তাদের জন্যে আম্বেদকর কোন ব্যবস্থা করেননি? একি অনাসৃষ্টি!
    নবীন দেশপ্রেমিক জোরগলায় বলেন সেইসব ভুল, অব্যবস্থা দূর করতেই তো মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী “ক্যাব” সংশোধন এনেছেন। যারা পাকিস্তান থেকে এসে সত্তর বছর ধরে নাগরিকতা পায়নি তারা এবার পাবে।
    একটা ঝগড়া শুরু হয় আর কি ! আমি প্রায় রায়ট পুলিশের মত ঝাঁপিয়ে পড়ি।
    -- আপনারা থামবেন? ওঁরা এত বোকা ছিলেন না । একবার সংবিধান সভার ডিবেটগুলো পড়বেন। ওগুলো ইন্টেলেকচুয়াল অ্যাসেট।

    যাকগে, সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের বিষয় হল নাগরিকত্ব -- আর্টিকল ৫ থেকে আর্টিকল ১১ পর্য্যন্ত।

    আর্টিকল ৫(ক) বলছে সংবিধান পাশ হওয়ার সময় যারা ভারতের ভুখন্ডে জন্মেছে এবং ভারতে স্থায়ী ভাবে বসবাস করেছে তারা সবাই ভারতের নাগরিক। আপনি তো জন্মের পর থেকে ভারতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, পড়াশুনো, চাকরি সব এখানে। ভোটার কার্ড, আধার সবই হয়েছে, কোথাও আটকায়নি?
    -- না; এমনকি পাসপোর্ট বানিয়ে আটালান্টাতে ছেলের কাছে গিয়ে নাতির মুখেভাত করিয়ে এসেছি।
    -- দেখলেন তো ? আপনি আর্টিকল ৫(ক) হিসেবে নাগরিক। নইলে পাসপোর্ট দিত? আরও দেখুন। আর্টিকল ৬ অনুযায়ী যাদের বাবা-কাকারা ১৯শে জুলাই, ১৯৪৮ এর আগে পাকিস্তান থেকে ভারতে এসেছেন তারা সবাই ভারতের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবে।
    এবার হালদারের অবাক হওয়ার পালা। আমার বাবা তো জানুয়ারি ১৯৪৯ সালে খুলনা থেকে কোলকাতায় এলেন। কিন্তু ওঁর ভোটার কার্ড হয়েছিল। সেটা কি বে-আইনি?
    --আদৌ নয় । উনি নিশ্চয়ই আসার ছ’মাস পরে নিয়মমাফিক ভারত সরকারের অধিকৃত অফিসারের কাছে নিয়মমাফিক আবেদন করেছিলেন, তাই রেজিস্টারে নাম উঠেছিল। (আর্টিকল ৬(খ)(১) (২)।
    -- আচ্ছা, আমার নাতি তো আমেরিকার আটালান্টায় জন্মেছে? ওর জন্যে কী করতে হবে?
    -- কিচ্ছু করতে হবে না। আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী ও জন্মসূত্রে (জাস সোলি) ওদেশের নাগরিক। বাকিটা ওর বাবা-মাকে ভাবতে দিন। আপনার কিসে ইল্লি হচ্ছে? কমরেডের নাতি সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার নাগরিক? ধুত্তেরি! সে রামও নেই, সে অযোধ্যাও নেই ।
    -- এবার এন আর সি, ক্যাব এবং আসাম নিয়ে দু’পহা হোক।
    -- কালকে; আজ গলা শুকিয়ে গেছে।
  • রঞ্জন | 236712.158.455612.60 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৭:২৯729082
  • ভাগ-২
    নাগরিক পঞ্জী, ক্যাব এবং আসাম সমঝোতা ১৯৮৫
    ভারতে প্রথম ১৯৫১ সালে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী বা ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন (এন আর সি) শুরু হয় । তারপর কোন সরকারই ওই পঞ্জী বা রেজিস্টার আপডেট করার প্রয়োজন অনুভব করেনি।
    কিন্তু নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ বেশ কয়েকবার সংশোধিত হয়েছে। যেমন, ১৯৮৬, ১৯৯২, ২০০৩। ওই ২০০৩ এর সংশোধন সরকারকে এন আর সি ম্যান্ডেটরি বলে নির্দেশ দিল। কেন ? এ না হলে আসাম সমঝোতা ১৯৮৫ অনুযায়ী ‘বিদেশি’চিহ্নিত করা যাচ্ছিল না ।
    তাহলে আগে আসাম সমঝোতা ১৯৮৫ নিয়ে কথা বলা দরকার। এটি পূর্ব পাকিস্তান/বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের (পড়ুন মুখ্যতঃ বাঙালী হিন্দু) বে-আইনি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ছ’বছর গণ আন্দোলনের ফসল। এই সমঝোতায় ১৫ অগাস্ট, ১৯৮৫ তারিখে ভারত সরকার, আসাম রাজ্য সরকার, অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন এবং আসাম গণ সংগ্রাম পরিষদ দস্তখত করে ।
    আপনাদের খারাপ লাগতে পারে কিন্তু দার্জিলিং এর গোর্খাদের মত আসামীদেরও ভয় যে বাঙালীরা( হিন্দু বা মুসলিম), বিশেষ করে যারা বাংলাদেশ থেকে জীবিকার বা আশ্রয়ের খোঁজে আসামে প্রবেশ করছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেলে খোদ আসামীদের জীবিকা , সংস্কৃতি এবং স্বতন্ত্র পহচান বিপন্ন হবে।
    আসাম সমঝোতা ১৯৮৫ এবং নাগরিকতার রাষ্ট্রীয় পঞ্জীকরণ (এন আর সি)
    ।১ ওই সমঝোতার ফলে আসামের জন্যে নাগরিকত্বের কাট -অফ ডেট হল ১লা জানুয়ারি ১৯৮৭ না হয়ে ২৪ মার্চ, ১৯৭১। কারণ, ১৯৭১এ স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনের সময় তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান থেকে দলে দলে হিন্দু (বাঙালী) শরণার্থী আসামে ঢোকে ।স্থানীয় অভিবাসীদের ভয় এরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেলে বাঙালী সংস্কৃতির আগ্রাসনে অহোমিয়াদের পরম্পরাগত ভাষা ও সংস্কৃতির অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। তাই ২৪ মার্চ ১৯৭১ এর পরে বাইরে থেকে যাঁরা আসামে এসেছেন তাঁদের আসামে বে-আইনি অনুপ্রবেশকারী ‘বিদেশি’ বলে গণ্য করা হবে।
    ২ আসামের জন্যে এন অ্যার সি বা নাগরিকত্বের রাষ্ট্রীয় পঞ্জীকরণের তারিখটিও ওই ২৪ মার্চ ১৯৭১। এর মানে যাঁরা আসামে বসবাস করছেন কিন্তু এখানকার স্থানীয় বাসিন্দে নন , তাঁদের দস্তাবেজী প্রমাণ দিতে হবে যে তাঁরা ২৪ মার্চ ১৯৭১ বা তার আগে থেকেই আসামে এসেছিলেন বৈধ নাগরিক হিসেবে বা উপযুক্ত কাগজপত্র নিয়ে ।
    নইলে তাঁদের অনুপ্রবেশকারী ধরে নিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে পুরে দেওয়া হবে। তার আগে এইসব চিহ্নিত মানুষজনদের ফরেন ট্রাইব্যুনালের কাছে আপিল করে নিজেদের বৈধ অধিবাসী বলে প্রমাণ করার সুযোগ দেওয়া হবে।
    আসাম সমঝোতার ধারা ৫।৮ অনুযায়ী ২৫শে মার্চ , ১৯৭১ বা তার পরে আসামে অনুপ্রবেশ করা বিদেশিদের চিহ্নিত করে ভোটার লিস্ট এবং নাগরিক পঞ্জী থেকে তাদের নাম কেটে দেওয়া হবে এবং শেষে তাদের রাজ্য থেকে বের করে দেওয়ার বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
    বিদেশি চিহ্নিতকরণের পদ্ধতিটি বে-আইনি অনুপ্রবেশকারী( ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে) আইন,১৯৮৩তে বর্ণিত রয়েছে, তবে এটা শুধু আসামের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এই আইনটি ২০০৫ সালে সুপ্রীম কোর্ট সংবিধানের পরিপন্থী বলে খারিজ করে দেয় । আবেদক সর্বানন্দ সোনওয়াল (বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী) তখন বলেছিলেন যে এর ধারাগুলো এমন কড়া যে বাস্তবে এর সাহায্যে বে-আইনি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিতকরণ এবং নির্বাসন প্রায় অসম্ভব।
    ২০১৩ সালে ‘আসাম পাবলিক ওয়ার্কস” নামে একটি এনজিও’র আবেদনে রায় দিয়ে সুপ্রীম কোর্টের খবরদারিতে আসামে এই কাজ শুরু হয় । শেষ হলে দেখা গেল ৩ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ১৯ লক্ষ চিহ্নিত হলেন অনাগরিক হিসেবে। ফলে ১০০ কোটি টাকা বাজেটে বরাদ্দ করিয়ে নতুন করে অনেক ডিটেনশন ক্যাম্প বানানো হচ্ছে। বিজেপির মুসলিম অনুপ্রবেশের সমস্ত গল্পকে ভুল প্রমাণ করে দেখা গেল এদের মধ্যে বেশিরভাগই বাঙালী হিন্দু। অসমিয়ারা চান ওই ১৯ লক্ষ ‘বিদেশি’দের আসাম থেকে গলাধাক্কা দিতে ; আপাততঃ সব নাগরিক সুবিধে থেকে বঞ্চিত করে ডিটেনশন ক্যাম্পে। কিন্তু বিজেপি যে বাঙালি হিন্দুদের ‘ তোমাদের কিচ্ছু হবে না ‘ প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নিয়েছিল!
    হতাশ বিজেপি নেতৃত্ব বললেন এই সার্ভে ভুল। আবার নতুন করে হোক। সুপ্রীম কোর্ট রাজি নয় । তখন দ্রুত এল আরেকটি সংশোধন—সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল বা ক্যাব, যা ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে রাষ্ট্রপতির মোহর লেগে আইন হয়ে গেছে। এর সঙ্গে আসাম সমঝোতা, ১৯৮৫র এবং আসামে বর্তমান ক্যাব বিরোধী আন্দোলনের সম্পর্ক নিয়ে এরপরে বলছি ।
    ক্যাব বা নাগরিকত্ব সংশোধন বিল, ২০১৯
    এই সংশোধন অনুযায়ী প্রতিবেশী নির্দিষ্ট তিনটি রাষ্ট্র, যথা পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ এবং তার আগে ধর্মীয় উৎপীড়নের ফলে আগত হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, পার্সি এবং ক্রিশ্চানদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এতে মুসলিমরা বাদ।
    বলা ভাল যে ভারতে বেআইনি শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া বা শরণার্থী বলে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে কোন রাষ্ট্রীয় নীতি ছিল না । স্বরাষ্ট্র দপ্তর রিফিউজি বলে দাবি করা বিদেশের নাগরিকদের ব্যাপারে কেস-টু-কেস ভিত্তিতে বিচার করে হয় ওয়ার্ক পারমিট(তিব্বতি রিফিউজি, চাকমা শরণার্থী) বা দীর্ঘকালীন ভিসা দিত (তসলিমা নাসরিন)। লক্ষণীয় যে ভারতের নাগরিকত্ব আইনে (১৯৫৫) অল্পসংখ্যক বা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কোন ধারা ছিল না । বর্তমান সংশোধনে সেই অভাব দূর হল; কিন্তু নাগরিকতা প্রদান করার ভিত্তি হল ধর্মীয় পরিচয় যা সংবিধানের মূল ভাবনার পরিপন্থী। তবে ভারতের সংবিধানের আর্টিকল ৬ অনুযায়ী প্রাক্তন পশ্চিম( বর্তমানে শুধু পাকিস্তান) ও পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) থেকে জুলাই, ১৯৪৮এর আগে ভারতে আগত শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে তাতে শরণার্থীদের মধ্যে ভাষা বা ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে কোন বিভেদ করা হয়নি।
    এই প্রথম এবিষয়ে একটি আইন করা হল। কিন্তু মুসলিমরা বাদ কেন ?
    কারণ হিসেবে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে ওই তিনটি রাষ্ট্র ঘোষিত ভাবে ইস্লামিক দেশ। ফলে সেখানে মুসলিমদের ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হবার প্রশ্ন ওঠে না । এবং এই তিনটি দেশে মুসলিমরা সংখ্যালঘু হতে পারে না । সত্যিই কি তাই?
    লক্ষণীয়, পাকিস্তানে আহমদিয়া সম্প্রদায়কে দ্বিতীয় সংবিধান সংশোধন আইনে মুসলিম বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না । ওদের পক্ষে পাকিস্তানে নিজেদের মুসলিম ঘোষণা করা দণ্ডনীয় অপরাধ। ওদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানে ইসলামের সুন্নী শাখাকে একমাত্র খাঁটি ইসলাম বলে রাষ্ট্রীয় ধর্মের স্বীকৃতি দেওয়ায় অল্পসংখ্যক শিয়া শাখার অনুগামীরাও উৎপীড়নের শিকার হয়ে থাকেন। আফগানিস্তানে হাজিরাদের উপর অত্যাচার নিয়ে ‘কাইট রানার’ উপন্যাস এবং সিনেমা এখন গোটা বিশ্বের নজরে। আর বর্তমান বাংলাদেশে নাস্তিকতার কারণে উগ্র ইসলামিক সংগঠন যাদের হত্যা করেছে তাদের মধ্যে হিন্দু এবং মুসলিম দুইই আছেন। প্রশ্ন ওঠে , আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ তো বন্ধু রাষ্ট্র। তাদের সরকারের কাছে আমরা সংখ্যালঘুদের নির্যাতন নিয়ে কিছু বলেছি কিনা।
    বাদ যাওয়া অন্য প্রতিবেশি দেশগুলো
    বাদ গেছ শ্রীলংকা , মায়ানমার এবং চিনের নামও।
    চিনে উইঘুর উপজাতি মুসলিমদের উপর অত্যাচারের কথা কয়েক দশক ধরে প্রকাশ্যে আসছে। ইদানীং বিখ্যাত জার্মান ফুটবলার মেসুট ওজিল এ নিয়ে প্রতিবাদ করে হইচই ফেলে দিয়েছেন।
    ২০১৬ সালে আমেরিকার কমিশন ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের উল্লংঘনের দায়ে টিয়ের-১ দেশ বোলে চিহ্নিত করেছে। এই কমিশনই আবার ডিসেম্বর ২০১৯শে ভারতের ক্যাবকে ডিস্ক্রিমিনেটরি বলে সমালোচনা করেছে। অগাস্ট ২০১৯শে ইউ এস, ইউকে এবং কানাডা চিন ও পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর উৎপীড়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গিয়া মুসলিমদের উপর অত্যাচার নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা চলছে। শ্রীলংকায় তামিলদের উপর অত্যাচারএর ইতিহাস তো কয়েক দশকের। ইদানীং মুসলিমদের উপরও শুরু হয়েছে। শ্রীলংকা এবং ভূটানের স্টেট রিলিজিয়ন হল বৌদ্ধধর্ম। অমিত শাহের যুক্তি তাতে কি , ইসলাম তো নয় ।
    তাহলে একমাত্র ইসলামিক দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হয় ?
    অমিত শাহ সংসদে জোর গলায় তিনটে কথা বলেছেন।
    এক, কোন রোহিঙ্গিয়া মুসলিম শরণার্থীকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া হবে না ।
    দুই, ভারতের সমস্ত রাজ্যতে এন আর সি করিয়ে সমস্ত অনুপ্রবেশকারী ঘুণপোকাদের ঝেঁটিয়ে বিদেয় করা হবে।
    তিন, ভারতের নাগরিক মুসলমানদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই ।
    দ্বিতীয় এবং তৃতীয় উক্তি গুলিকে আমরা একটু খুঁটিয়ে দেখব।
    লক্ষণীয় যে মুখে যাই বলা হোক, মূল আইনের টেক্সটে ‘ধর্মীয়’ না বলে কেবল ‘উৎপীড়িত সংখ্যালঘু’ বলা হয়েছে।
    প্রশ্নঃ বর্তমান ভারতে অনুপ্রবেশকারী কে ও কারা? কারা সেই ঘুণপোকা?
    প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন পাকিস্তান-বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে আসা লক্ষ কোটি অমুসলিম শরণার্থী এদেশে ‘রাষ্ট্রহীন’ পরিচয়ে চিহ্নিত হয়ে নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে হীন জীবন যাপন করছেন। এই সংশোধনের ফলে তাদের নাগরিকত্ব দিয়ে মানবিক দায়িত্ব পালন করা হবে। বেশ কথা । কিন্তু সরকারের চোখে এই শরণার্থীদের বাস্তব সংখ্যাটি কত? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে ২০১৬ সংসদে জানানো হয়েছিল যে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ পর্য্যন্ত এই সংখ্যাটি হল ২,৮৯,৩৯৪। এর মধ্যে সব ধর্মের লোকই আছে ।
    রাষ্ট্র শরণার্থী
    বাংলাদেশ ১,০৩,৮১৭
    শ্রীলংকা ১,০২,৪৬৭
    তিব্বত ৫৮, ১৫৫
    ম্যানমার ১২, ৪৩৪
    পাকিস্তান ৮,৭৯৯
    আফগানিস্তান ৩,৪৬৯
    অন্যান্য ২৫৩
    ==========
    মোট ২,৮৯,৩৯৪
    (সূত্রঃ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, পৃ-১৬)।
    দেখুন, শ্রীলংকা এবং মিয়ানমার বাদ! তাহলে আসল ব্যাপারটা কী ?
    প্রশ্নঃ এই আইন কি ভারতের সব রাজ্যে সমান ভাবে প্রভাবশীল হবে?
    উত্তরঃ না ; বাদ যাবে সিকিম ( আর্টিকল ৩৭১এর উপধারায় বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত রাজ্য), এবংত্রিপুরা, মিজোরাম, মেঘালয় এবং আসামের চিহ্নিত আদিবাসী অঞ্চলটুকু ( সংবিধানের ষষ্ঠ তালিকায় আছে বলে) । এছাড়া বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশন ১৮৭৩ এর অধীন ইনার লাইন পারমিট (যাতে বাইরের লোকের এলাকায় ঢুকতে বেরোতে স্পেশাল পারমিট নিতে হয়) ব্যবস্থার ফলে প্রায় সম্পূর্ণ নাগাল্যান্ড, মিজোরাম এবং অরুণাচল প্রদেশ এই আইনের আওতার বাইরে থাকবে।
    প্রশ্নঃ এই আইনে কাদের লাভ? কাদের লোকসান?
    উত্তরঃ আফগানিস্থান, পাকিস্থান এবং বাংলাদেশ থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালের আগে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্শি এবং ক্রিশ্চান সম্প্রদায়ের লোকজন যদি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালের আগে ভারতে প্রবেশ করে নাগরিকত্বের জন্যে আবেদন করে তবে তাদের কোনরকম দস্তাবেজি প্রমাণ ( কোন তারিখে ভারতে প্রবেশ করেছে এবং ধর্মীয় কারণে প্রতাড়িত হয়েছে তার প্রমাণ?)ছাড়াই চটপট নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া হবে।
    ইদানীং আসামে যে এন আর সি হয়েছে তাতে দস্তাবেজি প্রমাণের অভাবে যে ১৯ লক্ষ লোককে ‘বিদেশি’ দেগে দিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে ফেলে রাখা হয়েছে তাদের বৃহৎ অংশটিই হিন্দু। তারা এই নতুন সংশোধনের ফলে মুক্ত হয়ে কোন দস্তাবেজ ছাড়াই নাগরিক হয়ে যাবে । তাদের আবেদনে খালি বলতে হবে যে তারা ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে অমুক দেশ ( ওই তিনটির কোন একটি) থেকে পালিয়ে এসেছে।
    কিন্তু দেগে দেওয়া মুসলিমরা এই সুযোগ পাবে না । ফলে তাদের বন্দী হয়ে থাকতে হবে নইলে অন্য কোন দেশে ঠেলে দেওয়া হবে। কে নিতে চায়?
    প্রশ্নঃ আসামের লোকজনের ,বিশেষ করে বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা দলগুলির এই আইন নিয়ে রাগারাগির কারণ কী ?
    উত্তরঃ দেখুন , শাসক দলের মন্ত্রীরা বলছেন এন আর সি এবং এই ক্যাব বা সংশোধনী আইন আলাদা। কিন্তু আসামের লোকজন সেটা মানছে না । বলছে ওদের দাবিতে এইমাত্র এন আর সি হল। আসাম সমঝোতা অনুযায়ী ১৯ লক্ষ অনাবাসীদের চিহ্নিত করা গেল, এবার বের করে দেওয়া যাবে। এ’ব্যাপারে ওদের হিন্দু-মুসলিম নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই । অনাবাসী বাঙালীদের বের করতে হবে। কিন্তু এই সংশোধনী আইনের ফলে হিন্দু বাঙালীরা, মানে ১৯ লক্ষের সিংহভাগ লোকজন নাগরিকত্ব পেয়ে আসামে মৌরসীপাট্টা গেড়ে বসবে। এ তো আসাম সমঝোতা ১৯৮৫র মূল ভাবনার পায়ে কুড়ুল মারা! এ তো বলতে গেলে বিশ্বাসঘাতকতা!
    প্রশ্নঃ ভারতের মুসলিমদের আদৌ ভয় পাওয়ার কোন কারণ আছে?
    উত্তরঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বারংবার বলছেন—ভয় নাহি, ভয় নাহি, রে ভয় নাহি! এই সংশোধনের উদ্দেশ্য কাউকে দেশ থেকে বের করা নয়, বরং কিছু সহায়সম্বলহীন শরণার্থীদের সসম্মানে নাগরিকের স্বীকৃতি দেওয়া। এতে মুসলমানদের ক্যান ইল্লি হচ্ছে?
    ঠিক কথা , এই আইনে আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মুসলমানের বিরুদ্ধে একটিও শব্দ নেই ; তবে ?
    কিন্তু উপরের আসামের উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট যে এন আর সি হয়ে দস্তাবেজের অভাবে ডিটেনশন ক্যাম্পে যাওয়া মুসলমানদের জন্যে এই সংশোধনে কোন গাছের ছায়া নেই । এবং অমিত শাহ সমানে হুঙ্কার দিচ্ছেন যে আসামের পর সমস্ত রাজ্যে ওভাবেই এন আর সি হবে আর বে-আইনি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে দেশের বাইরে বের করে দেওয়া হবে।অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে অশিক্ষিত গরীব খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে ঠিকমত কাগজপত্র সামলে রাখা এবং অফিসারের সামনে পেশ করা বেশ কঠিন। তাই ওই ১৯ লক্ষের মধ্যে ওরাই বেশি। ভবিষ্যৎ এন আর সিতেও এই গরীবগুর্বো চাষাভুষো কুলিমজুরের দলই বেশি করে সন্দেহভাজনের তালিকায় উঠবে। তাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম-শিখ-ইসাই সবাই থাকবে কমবেশি। কিন্তু নতুন সংশোধনীর সুযোগে রেহাই পাবে অন্য সবাই। আটকে যাবে মুসলিমরা। ওরা কোথায় যাবে ? পাকিস্তানে? বাংলাদেশে?
    সবচেয়ে বড় কথা , এই আইন মুসলিমদের বুঝিয়ে দিচ্ছে যে তোমরা বাকি সবার থেকে আলাদা। তোমাদের অস্তিত্বকে আমরা ভুলে যাই বা কোনরকমে সহ্য করি ।

    সন্নাটা! সন্নাটা!
    গলা খাঁকারি দিয়ে হালদার বললেন—একটা কথা । আমার ছেলে কাল আটালান্টা থেকে ফোনে বলল যে এই আইনে নাকি ‘ও সি আর’ কার্ড হোল্ডারদের সুবিধে দেওয়া হয়েছে যে তারা বিনা ঝামেলায় ভারতে আসা যাওয়া ,পড়াশুনো বা কোন প্রজেক্টে কাজ করতে পারবে?
    --অ , তাহলে আপনার পার্টির ডাকা প্রতিবাদ মিছিলে যাচ্ছেন না ?
    -- কি যে বলেন মিত্তিরদা!
    [ শর্টকার্টে মারতে গিয়ে কোথাও কোথাও অতিসরলীকরণ হয়ে গেছে। এবার অন্যেরা শুধরে দিন।]
  • Arin | 8990012.41.893423.99 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:২৪729091
  • অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং মূল্যবান লেখা। OCI দের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াবে? ধরুন যারা মুসলমান এবং যাদের OCI আছে?
    আবার ধরা যাক NRC অনুযায়ী নাগরিকত্ব হল না, অথচ পাসপোর্ট করিয়ে বিদেশে গেছে ও কাজ উপলক্ষে থাকে, অন্য দেশে পারমানেন্ট রেসিডেনসি করায় নি, সে ভারতের নাগরিক ছিল, যেদিন থেকে সে থাকবে না,এবার তার কি স্ট্যাটাস? পারলে সে কোথায় যাবে? কোন উপায়ে সে অন্য দেশে প্রবেশ করবে? বা ধরুন এই আইন মোতাবেক কোন লোক, যার OCI আছে, অথচ যে NRC অনুযায়ী নাগরিক হবার যোগ্য নয়, তার OCI privilege কি বাতিল হয়ে যাবে?
    নাগরিক অনাগরিক নির্ণয় করার সঙ্গে সঙ্গে চিরস্থায়ী বাসিন্দা শনাক্তকরণের একটা প্রক্রিয়া অন্তত থাকা উচিত ।
  • sm | 236712.158.895612.176 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:২২729092
  • অরিন,সঠিক প্রশ্ন করেছেন।আমার একটা ছোট প্রশ্ন আছে,আইন মোতাবেক তো প্রায় সবার ই নাগরিকত্ব পাওয়ার কথা।তো অসমে সতেরো ল লোকের নাম বাদ গেলো কেন?
    তাদের নিশ্চয় ভোটার কার্ড,অধার কার্ড ছিল।
  • PT | 236712.158.455612.60 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:৩৯729093
  • পড়লাম এবং অনেক কিছু জানলাম। এবারে যে পুলিশটা ট্রাক দাঁড় করিয়ে পয়সা খায় সে কলারটি ধরে নাগরিকত্বের প্রমাণ চাইল। তাইলে কি করতে হবে?

    আমার মায়ের ৯২ বছর বয়স। ১৯৪৭-এর ধারে কাছে এপারে চলে আসে। বাড়ি-জমির কোন দলিল নেই। আসলে হিন্দু ছিল কিনা তার কোন প্রমাণ নেই আর আদৌ ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে এদেশে এসেছিল কিনা তারো কোন প্রমাণ নেই কেননা আদ্দেক পরিবার এখনো ওপারে।

    তো তাকে কোন লাইনে দাঁড় করাবো?
  • রঞ্জন | 236712.158.9005612.51 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:৫০729094
  • ১ অরিন,
    ও সি আইয়ের ব্যাপারে আমার সত্য্যিই কিছু জানা নেই ; জানতে চাই। তাই আপনাদের শরণাপন্ন।

    ২ এস এম,
    আসামের সমস্যাটা একটু আলাদা। ১৯৫১ সালে প্রথম এন আর সি শুধু আসামেই হয়েছিল। তখন অনুপ্রবেশ, সিলেট এই সবনিয়ে ব্যাপারটা একটু ঘেঁটে ছিল । ১৯৮৫ সালের আসাম সমঝোতার ফলে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের কাট অফ ডেট ১লা জানুয়ারি ১৯৮৭ না হয়ে ২৪ মার্চ, ১৯৭১। তাহলে দেখুন, যে শিশু ১৯৮৪ সালে আসামে জন্মেছে তার বাবা-মা নিশ্চিন্ত ছিল যে ভারতীয় মূলের এই শিশুটি ধারা ৩ ক অনুযায়ী ভারতের নাগরিক। হাসপাতালের বার্থ সার্টিফিকেট ছাড়া অন্য কিছু কাগজের দরকার নেই । এখন ২০১৩তে সরকার বলছে তুমি ত কাট অফ ডেটের ১৩ বছর পরে জন্মেছ , কাজেই তুমি স্বতঃ জন্মসূত্রে নাগরিক নও, তুমি সন্দেহের তালিকায়। তোমার বাবা-মা'র নাগরিকত্বের প্রমাণ চাই । দ্যাখা গেল বাবা -মা এসেছে ১৯৭২ সালে। বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় । ব্যস, আধার-ভোটার সব অমান্য। তুমি বাপু ১৯৮৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী যেখান থেকে এসেছ সেখানে ফিরে যাও। নইলে ডিটেনশন ক্যাম্পে যাও।
    এখন ভোগান্তি পোয়ানো লোকটি যদি হিন্দু হয় তাহলে (ক্যাব অনুযায়ী) তাকে একটা এফিডেভিট করে বলতে হবে (সত্যি মিথ্যে যাই হোক ) যে সে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪র আগে ধর্মীয় কারণে প্রতাড়িত হয়ে বাংলাদেশ থেকে আসামে এসেছে। মুসলিম হলে ডিটেনশন ক্যাম্প, কারণ ক্যাবে মুসলমানদের জন্যে কোন ব্যবস্থা নেই । হিন্দু হলে শরণার্থী, মুসলিম হলে অনুপ্রবেশকারী।
    পেটের ধান্দায় কাজ পেয়ে আসামে ঢুকেছে বললে হবে না । আর্থিক কারণ নয় , ধার্মিক কারণ।
    এটা সরল উদাহরণ।
  • অরিন | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:৫৯729095
  • @PT, আপনার মায়ের মতন সমস্যা বহু লোকের পক্ষে এখনই বেশ জটিল, এর পরে কি হবে কে জানে!

    আমাদের এখানে (ক্রাইস্টচার্চে) আমাদের পরিচিত এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ভদ্রমহিলা আছেন, একজন Academic, তাঁর জন্ম অবিভক্ত ভারতের লাহোরে। তাঁর খুব ছোট বয়সে তাঁর বাবা-মা তাঁকে নিয়ে ভারতে চলে আসেন, তিনি কলকাতায় বড় হয়েছেন, পরে তিনি নিউজিল্যাণ্ডে চলে আসেন, তিনি এখানকার নাগরিক।

    এই ভদ্রমহিলা মুসলমান নন (হিন্দুও নন), এনার ভিসা পাওয়া নিয়ে যে কি ঝামেলা কি বলব, আমি প্রত্যক্ষ জানি কারণ প্রতিবার ভারতে অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের কনফারেন্সে আসার সময় এনাকে দু-তিন মাস আগে থেকে ভারতের ভিসার apply করতে হয়।যেহেতু এনার লাহোরে জন্ম, সেইজন্য ইনি OCI card পান নি, আমি গত দুতিন বছর এনার হয়ে মুচলেকা দিয়েছি, মানে ইন্ডিয়ান এমব্যাসীতে ফোন/ইমেল করে আমি যে এনাকে চিনি, বলতে হয়েছে, তখন ইনি ভিসা পেয়েছেন।

    এই যদি এখনকার অবস্থা হয়, এই সব জটিল আইন পাস হবার পর যে এর কি অসদব্যবহার হবে, ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। এক ভয়ঙ্কর বিষবৃক্ষের রোপন হচ্ছে।
  • রঞ্জন | 124512.101.89900.231 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৩:২১729096
  • বড় সমস্যা হয়েছে গ্রাউন্ডলেভেলে। এই প্রক্রিয়ায় শনাক্তকরণের দায়িত্ব আগে ছিল প্রশাসনিক বা ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে। পরে নিয়ম বদলে ডেলিগেট করে দেওয়া হল স্কুল টিচার এবং সমকক্ষ লোকজনের কাছে। এঁদের এই কাজের জন্যে অতিরিক্ত ভাতা মাত্র মাসিক হাজারটাকার মত । কার্যস্থল গৃহনগর থেকে অনেক দূরে। যাতায়াতের বাসভাড়াতেই ভাতার টাকা প্রায় শেষ , মনোবল বুঝতেই পারছেন।
    এদিকে এই কাজএর ভ্যালুয়েশনে একটি পয়েন্ট হল--ক'জন অনাগরিককে শনাক্ত করলে?
    আর অন্যদিকে যাদের নোটিস পাঠানো হয়েছে তাদের যেতে হবে অনেক দূরে এক-দুশো কিলোমিটার , কাগজপত্র নিয়ে । বেশিরভাগ জানেন না কি কি চাই । দলবেঁধে ট্রাক ভাড়া করে যাচ্ছেন, নইলে ক্যাম্পে গতি।
    এদের ক্ষেত্রে এখন তৈরি আধার/ভোটার কার্ডের কোন ভ্যালু নেই । বাংলাদেশ থেকে ১৯৭১ এর পরে আসলে গৃহনগর থেকে কাগজ প্রমাণিত করিয়ে আনতে হবে। যাঁরা খেটে খান, যাঁদের নাম লেখা ছাড়া শিক্ষা হয়নি তাঁদের জন্য বরাদ্দ অচলায়তন নাটকের দর্ভক দলের গান " ও অকুলের কুল, ও অগতির গতি, ও অনাথের নাথ, ও পতিতের পতি"। অনেকে জেলে যাওয়া ঠেকাতে জমি বেচেছেন। ইদানীং একজন নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বেরিয়ে দেখলেন ঘর উজড়ে গেছে।
    অংগ-বংগ-কলিংগের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা-- যেমন প্রথম ভাগে লিখলাম।

    @পিটি,
    আপনার মা বয়েস অনুযায়ী মনে হয় ২৬ জানুয়ারী ১৯৫০এর আগে থেকেই এপারে আছেন। জমিবাড়ি না থাক, ভোটার লিস্টে নাম নিশ্চয়ই ১৯৫২-৫৭-৬২-৬৭ থেকে আছে । রাজ্য নির্বাচন অফিসে ভেরিফাই করে (তখন ভোটার কার্ড ছিল না ) সার্টিফিকেট ইস্যু করছে, সেই যথেষ্ট। আর যদি আধার কার্ড করিয়ে থাকেন তো সোনায় সোহাগা।
    আমার অনুমান সঠিক হলে উনি সংবিধানের আর্টিকল ৬ অনুযায়ী নাগরিক। সেটা ভেরিফাই করেই ভোটার লিস্টে নাম উঠেছিল।
  • সে | 236712.158.015612.63 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৪:১৬729061
  • ওসিআই সম্পর্কে আমার দুপয়সা।
    শুধু ওসিআই/পিআইবি কার্ড নয়, যত্ন করে রেখে দিতে হবে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেবার মূল কাগজটি সম্ভবত ৫ জেনারেশন অবধি। এটি ভারতীয় দূতাবাসে পইপই করে বলে দেয়া হয়েছিল যে ঐ কাগজটি যেন ফেলে না দিই। শুধু রক্তের সম্পর্কই নয়, পালিত সন্তান এবং তার বংশোদ্ভূতরাও এই আইনের আওতায়। এবং ভারতীয় নাগরিকত্ব একবার ফিরিয়ে দেবার পরে আবারও গ্রহন করা যায়, কিন্তু দ্বিতীয়বারও ফিরিয়ে দিলে আর তাকে ওসিআই দেওয়ার রীতি নেই।
  • সে | 236712.158.015612.63 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৪:১৮729062
  • renunciation of citizenship
  • সে | 236712.158.015612.63 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৪:২৫729063
  • রঞ্জনদাকে ধন্যবাদ এই তথ্যপূর্ণ লেখাটির জন্য।

    এছাড়া ওসিআই/পিআইবি দের জন্য বা তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নতুরলিঅতিওন এর পদ্ধতিতে ধর্মের কোনও স্থান নেই, অন্তত বছর দশেক বা পাঁচেক আগে ছিল না, ধর্মের কোনও উল্লেখই নেই। কিন্তু যেটুকু জানি বার্থ সার্টিফিকেট জরুরী। কারন বার্থ সার্টিফিকেটে দুটি দরকারি জিনিস থাকে, জন্মের তারিখ এবং জন্মস্থান। এই দুইয়ের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব নির্ধারিত হয়। এই নিয়ে অনেক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে যা হয়ত এখানে অপ্রাসঙ্গিক।
  • PT | 236712.158.9005612.87 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৪:২৭729064
  • @রঞ্জন
    আমার বহুদিনের পরিচিত ড্রাইভার আখতার জানাল যে তাদের প্রচুর টাকা খরচা করে ("১০০০০-২০০০০") কাগজ বের করতে হচ্ছে। তারা অন্ততঃ তিন পুরুষ ধরে এই চত্বরে আছে।
  • সে | 236712.158.015612.63 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৪:২৮729065
  • সব দেশের ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকরা ওসিআই পায় না। তাদের জন্য আছে পিআইবি (person of Indian origin ) কার্ড। পিআইবি দের সংখ্যা তুলনায় ওসিআইদের চেয়ে অনেক বেশি। ওসিআই চালু হয়েছে বছর চোদ্দ পনের আগে, তার আগে সবই পিআইবি ছিল।
  • সে | 236712.158.015612.63 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৪:৩১729066
  • বার্থ সার্টিফিকেট বের করা যে কী যন্ত্রণাদায়ক সে নিয়ে একটা টই ছিল (24H নামে)।
  • Arin | 8990012.41.893423.111 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:৪১729068
  • PIO কার্ড 2015 সাল থেকে উঠে গেছে এখন শুধুই OCI কার্ড। এখন CAA পরবর্তী সময়ে OCI এর কি স্টেটাস হয় সেটাই দেখার। এখন অবধি পুরনো বাতিল পাসপোর্টের ডিজিটাল কপি বা নাগরিকত্ব প্রত্যর্পণ সার্টিফিকেট এর কপি চায়। আমি এর আগে কোথাও শুনিনি যে সার্টিফিকেটটা রেখে দেওয়ার কথা। কোন চিঠিও পাইনি ঐ মর্মে।
  • Arin | 8990012.41.893423.111 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:৪১729067
  • PIO কার্ড 2015 সাল থেকে উঠে গেছে এখন শুধুই OCI কার্ড। এখন CAA পরবর্তী সময়ে OCI এর কি স্টেটাস হয় সেটাই দেখার। এখন অবধি পুরনো বাতিল পাসপোর্টের ডিজিটাল কপি বা নাগরিকত্ব প্রত্যর্পণ সার্টিফিকেট এর কপি চায়। আমি এর আগে কোথাও শুনিনি যে সার্টিফিকেটটা রেখে দেওয়ার কথা। কোন চিঠিও পাইনি ঐ মর্মে।
  • :( | 236712.158.780112.186 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:০৪729069
  • ডিএনএ টেস্ট করলেই তো পারে।
  • :( | 236712.158.670112.137 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:০৪729070
  • ডিএনএ টেস্ট করলেই তো পারে।
  • sm | 236712.158.895612.224 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৮:০১729072
  • ইউকে র নিয়ম হলো,পাঁচ বছর হাই স্কিল জব করলে,পার্মানেন্ট ভিসা।তার এক বছর পর সিটিজেন শিপ।
    দশ বছর লিগ্যাল উপায়ে থাকলে সিটিজেন শিপ।
    চৌদ্দ বছর বে আইনী ভাবে থাকলেও, নাগরিকত্ব প্রদান।
    তো,ভারতে কতো বছর বে আইনী ভাবে থাকলে, নাগরিকত্ব মিলবেক?
  • গবু | 236712.158.676712.186 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:৪৩729073
  • ভালো করে পড়তে হবে, রঞ্জনদা খুব প্রাঞ্জলভাবে লিখেছেন, অনেক ধন্যবাদ!

    @sm, সব আধার কার্ডে পরিষ্কার লেখা আছে উহা শুধু identity প্রুফ, নাগরিকত্বের নহে। আধার একটি ডাটা ঝাড়ার ধান্দায় পর্যবসিত বর্তমানে।
  • এলেবেলে | 236712.158.9005612.87 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:৩২729075
  • রঞ্জনবাবু খুব গুছিয়ে লিখেছেন, উপস্থাপন ভঙ্গিটিও অনবদ্য। এখানে আমার সামান্য দু'পয়সা।

    ১. অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চালু করতে গিয়ে সেই ফাঁদে আটকে পড়েছেন প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষ, যাঁদের মধ্যে ১২ লক্ষ মানুষ ধর্মাচরণে হিন্দু। এই বিশাল সংখ্যক হিন্দুদের ‘নাগরিকত্ব’ ফিরিয়ে দেওয়ার ‘মহান ব্রত’ নিয়ে অতঃপর অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সদ্য পাশ হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন।

    ২. আদতে এই আইন প্রণয়নের মুখ্য উদ্দেশ্য যে ধর্মীয় বিভাজন ঘটিয়ে এক বিশাল সংখ্যক মুসলমানকে অ-নাগরিক করার চক্রান্ত, শরণার্থী হিসেবে মাত্র তিনটি দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের উল্লেখ দেখেই সেটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত অখণ্ড ভারতবর্ষের মানচিত্রে বিরাজমান মায়ানমার (বার্মা) এই আইনের আওতায় আসেনি। কারণ, মায়ানমারে আক্রান্ত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা মুসলমান। একই ভাবে বাদ পড়েছে নেপাল, ভুটান আর শ্রীলঙ্কার নামও। নেপাল বা ভুটান থেকে শরণার্থী হিসেবে যাঁরা এদেশে এসেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আক্রমণকারী হিসেবে মুসলমানদের দেখানোর উপায় নেই। একই কারণে বাদ গিয়েছেন শ্রীলঙ্কা থেকে নিপীড়িত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া তামিল উদ্বাস্তুরাও। সুতরাং, এই আইনে বিশেষ কয়েকটি প্রতিবেশী দেশ এবং বিশেষ কয়েকটি সম্প্রদায়কে বেছে নেওয়ার একটাই উদ্দেশ্য — দেশটাকে মুসলমানশূন্য করা।

    ৩. বলা বাহুল্য, আইন পাশ হওয়া মাত্রই বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মের উদ্বাস্তুরা ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন না। তাঁরা আপাতত শরণার্থী হিসেবে ভারতে থাকার আইনি সুরক্ষাটুকু পাবেন। কিন্তু এ দেশের নাগরিক হতে গেলে তাঁদের দুটো শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রথমত, তাঁদের স্বীকার করতে হবে যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় হিংসার কারণে তারা এই দেশে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করেছেন এবং তাঁরা ভারতের নাগরিকত্ব চান। এক্ষেত্রে তাঁদের সামনে সবচেয়ে বড়ো যে সমস্যা দেখা দেবে সেটা হল, এই নতুন আইনের এক খোঁচায় তাঁরা ‘নাগরিক’ থেকে ‘শরণার্থী’ হবেন। এই দেশে এত দিন বাস করার সুবাদে বাড়ি-গাড়ি, জমি-জমা, চাকরি-বাকরি, টাকাপয়সা যা যা জমিয়েছিলেন, তার সবটাই সরকার বাজেয়াপ্ত করবে।

    দ্বিতীয়ত, তাঁরা যে ধর্মীয় অত্যাচারের কারণেই এ দেশে আসতে বাধ্য হয়েছেন তার প্রমাণও ‘আবেদন’-এর সঙ্গে দাখিল করতে হবে। কিন্তু কোনও হিন্দু যিনি হয়তো প্রকৃতই প্রতিবেশী দেশ থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে এ দেশে এসেছেন, তাঁর পক্ষে আবার সেই দেশ থেকে সন্ত্রাসের প্রমাণ আনা একপ্রকার অসম্ভব। সর্বোপরি, এই গরিব প্রান্তিক মানুষগুলোর অন্য দেশে গিয়ে কাগজপত্র জোগাড় করার অর্থনৈতিক ক্ষমতাও নেই। ফলে এতদিন যে সহায়-সম্বলহীন মানুষগুলো ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড ইত্যাদি কাগজের সাহায্যে ন্যূনতম নাগরিক অধিকারটুকু পাচ্ছিলেন, এই বারে নিজভূমে পরবাসী হবেন তাঁরা, প্রত্যেকে রাতারাতি পরিগণিত হবেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে।

    ৪. এত কিছুর পরে সত্যিকারের নাগরিকত্ব পাবেন ওই তিন দেশের মাত্র ৩১ হাজার ৩১৩ জন। এ বিষয়ে এই বছরের ৭ জানুয়ারি যৌথ সংসদীয় কমিটি নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল বিষয়ক যে রিপোর্ট সংসদে পেশ করেছেন, তাতে তাঁরা জানিয়েছেন — “In response, the Intelligence Bureau (IB) informed as follows: “As per our records, there are 31,313 persons belonging to minority communities (Hindus - 25447, Sikhs - 5807, Christians - 55, Buddhists - 2 and Parsis - 2) who have been given Long Term Visa on the basis of their claim of religious persecution in their respective countries and want Indian Citizenship. Hence, these persons will be immediate beneficiaries” [Report of the Joint Committee on the Citizenship (Amendment) Bill, 2016, p. 39]। পাশাপাশি, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তথ্যের অধিকার আইন অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’দের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা লিখিত ভাবে জানিয়েছে যে, এ বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য বা সংখ্যা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নেই।

    সদ্য অমিত শাহ জানিয়েছেন এতদিন যা কিছু নাগরিকত্বের পরিচয়জ্ঞাপক হিসেবে ধরা হচ্ছিল, তার সবকিছুই মানে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড ইত্যাদি বিলকুল বাদ।

    তার মানে হাতে রয়েছে পেন্সিল আর পাতে রয়েছে নাগপুরের জুমলা!
  • এলেবেলে | 236712.158.9005612.87 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:৩৫729076
  • বিষয়টা পরিষ্কার হবে এই ছবিটা দেখলে।

  • Apu | 236712.158.676712.146 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ২২:২৮729077
  • রন্জন দা দারুন দারুন ।
    গুড জব ডুড। অনেক অজানা তথ্য জানলাম।

    অরিণ দা, এস এম দা, সে দি র লেখা থেকে ও ঋদ্ধ হলাম।

    সবাই কে অনেক ধন্যবাদ
  • রঞ্জন | 236712.158.9005612.75 | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:২৭729078
  • এলেবেলে'র দুটো প্যারাগ্রাফঃ
    "বলা বাহুল্য, আইন পাশ হওয়া মাত্রই বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মের উদ্বাস্তুরা ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন না। তাঁরা আপাতত শরণার্থী হিসেবে ভারতে থাকার আইনি সুরক্ষাটুকু পাবেন। কিন্তু এ দেশের নাগরিক হতে গেলে তাঁদের দুটো শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রথমত, তাঁদের স্বীকার করতে হবে যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় হিংসার কারণে তারা এই দেশে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করেছেন এবং তাঁরা ভারতের নাগরিকত্ব চান। এক্ষেত্রে তাঁদের সামনে সবচেয়ে বড়ো যে সমস্যা দেখা দেবে সেটা হল, এই নতুন আইনের এক খোঁচায় তাঁরা ‘নাগরিক’ থেকে ‘শরণার্থী’ হবেন। এই দেশে এত দিন বাস করার সুবাদে বাড়ি-গাড়ি, জমি-জমা, চাকরি-বাকরি, টাকাপয়সা যা যা জমিয়েছিলেন, তার সবটাই সরকার বাজেয়াপ্ত করবে।

    দ্বিতীয়ত, তাঁরা যে ধর্মীয় অত্যাচারের কারণেই এ দেশে আসতে বাধ্য হয়েছেন তার প্রমাণও ‘আবেদন’-এর সঙ্গে দাখিল করতে হবে। কিন্তু কোনও হিন্দু যিনি হয়তো প্রকৃতই প্রতিবেশী দেশ থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে এ দেশে এসেছেন, তাঁর পক্ষে আবার সেই দেশ থেকে সন্ত্রাসের প্রমাণ আনা একপ্রকার অসম্ভব। সর্বোপরি, এই গরিব প্রান্তিক মানুষগুলোর অন্য দেশে গিয়ে কাগজপত্র জোগাড় করার অর্থনৈতিক ক্ষমতাও নেই। ফলে এতদিন যে সহায়-সম্বলহীন মানুষগুলো ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড ইত্যাদি কাগজের সাহায্যে ন্যূনতম নাগরিক অধিকারটুকু পাচ্ছিলেন, এই বারে নিজভূমে পরবাসী হবেন তাঁরা, প্রত্যেকে রাতারাতি পরিগণিত হবেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে।"
    --- এই দুটো বাস্তবিক সমস্যাই আতঙ্কের কারণ। এর জোরেই আসামে বহুলোক আজ 'পরবাসী'।
    এটার জন্যে হিন্দু ব্যাকল্যাশের ফলেই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে এসেছে 'ক্যাব'। বলা হচ্ছে হিন্দু 'শরণার্থী' দের থেকে 'ঘোষণা' যথেষ্ট, 'প্রমাণ' চাওয়া হবে না । যদি তাই হয়ও 'শরণার্থী' থেকে 'নাগরিক' হওয়ার যে প্রক্রিয়া( যত তাড়াতাড়িই হোক ) তার মধ্যবর্তী অবস্থায় সে ত নিজভূমে পরবাসী, অধিকারবিহীন মানুষ।
    তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অপারেট করা যাবে না । সরকারি চাকরি থেকে ছুটি নিতে হবে ইত্যাদি।
    কিন্তু একইসঙ্গে বলছি আসামে যা হয়েছিল তা ঠিক বাংলায় হবে না ; কারণ ১৯৮৭র সীমা এবং আসামে রণনৈতিক লক্ষ্য ছিল বাঙালীদের কম দেখানো, যেটা এখানে হবে না ।
    কিন্তু বিজেপির যে আসল এজেন্ডা --মুসলমানদের 'নিজভুমে পরবাসী' করা -- তা আসামে আংশিক সফল, তাই লক্ষ্য বাঙলা।
  • Amit | 236712.158.23.203 | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:৫৫729079
  • এই নরসি, CAA রাজ্য সভায় যদি সব কটা বিরোধী দল এক কাট্টা হয়ে ভোট দিতে পারতো, তাহলে বিলটা আটকে ও যেতে পারতো , কিন্তু ওখানেও পুরো অপসিশন ছত্রকার। তৃণমূলের কয়েকটা MP তখন ভোট ই দেয়নি।, নাকি শুটিং এ ব্যস্ত। এ রকম একটা ইস্যুতে দল থেকে ইনজুনক্শন দিতে পারে না- ? সব হয়ে যাওয়ার পরে রাস্তায় নেমে ময়দানি স্টাইল এ চেঁচালে হবে ? সব লড়াই মাঠে হয়না, আইনের বা ডিপ্লোমেটিক পথেও প্যারালাল লড়াই করতে হয়।

    বিহারে নীতিশ কুমার বা শিবসেনা তখন পক্ষে ভোট দিয়ে এখন বলছে ওদের রাজ্যে করতে দেবে না। কি ফালতু নাটক চলছে সব জায়গায়।

    বিজেপি কে সরাসরি ওদের মাঠে নেমে না খেললে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। ২০১৯ এ একটা জিনিস প্রমান হয়ে গেছে, বিজেপি পুরোপুরি US মডেল এ প্রেসিডেনশিয়াল স্টাইল এ নির্বাচন চাইছে, আর সেখানে এদের বিরাট অ্যাডভান্টেজ। মোদী ভার্সেস কে ? বিরোধীরা যতক্ষণ না একটা মোদির বিরুদ্ধে এক কাট্টা হয়ে একটা পাল্টা ক্রেডিবল প্রাইম মিনিস্টার ক্যান্ডিডেট কে তুলে ধরতে পারছে, ততো দিন যাবতীয় বাঁদরামি, উৎপাত, নোংরামি সত্ত্বেও ষ্টীল এডভ্যান্টেজ মোদী & বিজেপি। লোকে মিলিজুলি সরকার চাইছে না আধপেটা খেয়েও।

    রাহুল গান্ধী কে দিয়ে জাস্ট হবে না, এটা দেশ শুদ্ধ লোক বুঝলেও কংগ্রেসি দের মাথায় হাতুড়ি মেরেও ঢুকছে না। যতদিন ওকে জোর করে নেতা বানানোর চেষ্টা হবে, ততদিন কংগ্রেস আরো ডুবে যাবে। ও যতদিন PM ক্যান্ডিটেডট হিসেবে প্রজেক্টেড হবে, ততদিন বিজেপির সোনায় সোহাগা। কষ্ট করার দরকারই নেই, এমনিই জিতে যাবে।
  • রঞ্জন | 236712.158.9005612.87 | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:৫৮729080
  • কিছু তথ্যঃ
    কালকে রামলীলা ময়দানে বিশাল জনসভায় মোদীজি বলেছেনঃ
    হেরে যাওয়া বিপক্ষ এবং আরবান নকশালরা লোককে ভুল বোঝাচ্ছে। সত্যিটা হল--
    ১ ক্যাব মুসলমানদের বিরুদ্ধে নয় । নতুন শরণার্থীদের জন্যে ক্যাব নয় ।
    ২ এন আর সি নিয়ে মুসলমানদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই । ভারতীয় মুসলমানদের কিছু হবে না ।
    ৩ এখনই এন আর সি হচ্ছে না । এর নিয়মকানুনও তৈরি হয়নি। খামোখা লোক ক্ষ্যাপানো হচ্ছে।
    ৪ ভারতে কোন ডিটেনশন সেন্টার নেই ।

    -- আগে তিননম্বর।
    ২০ শে জুন নতুন মন্ত্রীসভা গঠনের পর সংসদের সংযুক্ত অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির অভিভাষণ যা কাউন্সিল অফ মিনিস্টারস মুসাবিদা করে দেয় তাতে মহামহিম রামনাথ কোবিন্দ বলেন -- এন আরসি গোটা দেশে হবে , এটা এই সরকারের কমিটমেন্ট।
    ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের গোড়ায় ক্যাব বিতর্কে হোম মিনিস্টার অমিত শাহ বললেন আসামের পর একইভাবে গোটা দেশে এন আর সি হবে। এর জন্যে কোন 'ব্যাকগ্রাউন্ড' তৈরির দরকার নেই , প্রস্তুতি হয়ে গেছে।
    -- কার কথা বিশ্বাস করব?
    এবার চার নম্বর।
    -- তাহলে ১৯ লক্ষ 'চিহ্নিত অনাগরিক' দের ঘর থেকে নিয়ে গিয়ে কোথায় রাখা হচ্ছে? ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে কাদের জন্যে ব্যারাক বানানো হচ্ছে?
    হর্ষ মন্দর (প্রাক্তন আই এ এস, বর্তমানে নাগরিক অধিকারের আন্দোলনকারী) যে ওখানে গিয়ে 'আঁখো দেখা হাল' লিখেছেন সব ভুয়ো?

    একনম্বর।
    সত্যিই ত , ক্যাব মুসলমানদের জন্যে নয় । ওদের নামটুকুও উচ্চারণ করা হয়নি। এটাই ত আপত্তি। এরা প্রোটেকশন পাবেন না । এরা ব্রাত্য, এরা মন্ত্রহীন। আর ক্যাব নতুন শরণার্থীদের জন্যে নয় ? কাদের জন্যে ? এতে ত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ অব্দি আসা শরণার্থীদের কথা বলা হয়েছে। কে যে কাকে ভুল বোঝাচ্ছে বোঝা দায়!
    দু'নম্বর।
    ভারতীয় মুসলমানদের ভয় পাওয়ার দরকার নেই । আমরা কি আফ্রিকান মুসলমানদের কথা আলোচনা করছি? আরে কে ভারতীয় কে নয় --সেটাই ত ইস্যু। " কে কবি কবে কে মোরে"?

    কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর ১৯ তারিখে বলেছেন -- আধার কার্ড যথেষ্ট প্রমাণ।
  • Amit | 236712.158.23.203 | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৭:১০729081
  • রঞ্জন দা , এসব নরসি, CAA সমস্তই এদের ভাল প্লানেড ডাইভারশন। লোককে ড্রাগ দিয়ে দিয়ে বুঁদ করে রাখা, যেমন বালাকোট ছিল ভোটের সময়। ইকোনমি তো পুরো ডুবে গেছে পুরো ডিমনি আর জিস্ট এর জঘন্য ইমপ্লিমেন্ট করে, ওঠার চান্স ও নেই, এমনিতেই গ্লোবাল স্লো-ডাউন আসতে চলেছে। এসব দিয়ে লোকে এখন নিজেরা মারামারি কাটা কাটি করে মরুক। এদিকে এয়ার ইন্ডিয়া, বিপিসিল বেচা হোক আম্বানি দের। কেও খেয়াল ও করবে না।
  • রঞ্জন | 236712.158.455612.60 | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৭:২০729083
  • খবরে প্রকাশ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রীসভার কাছে জনগণনা ২০২১ এর জন্যে ৮৭৫৪ কোটি এবং ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার আপডেট করার জন্যে ৩৯৪১ কোটি টাকা অনুমোদন চেয়েছেন। সম্ভবতঃ ২৪ তারিখে অনুমোদন পেয়ে যাবেন।
    এটাও শোনা গেছে যে এবার গত সেন্সাসের ১৫ বিন্দু তথ্যের বদলে ২১ বিন্দু তথ্য চাওয়া হবে যাতে জুড়বে বাবা-মার জন্মস্থান ও তারিখ, শেষ আবাসের ঠিকানা, প্যান, আধার নম্বর, ভোটার আইডি নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর, মোবাইল নম্বর।

    পিটি,
    এখন ড্রাইভার আখতারের ঘটনা ব্যতিক্রম নয় , এটাই দস্তুর। একশ্রেণীর লোক ফুলে ফেঁপে উঠবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের কালোবাজারীদের মত ।

    সারাভারতের মুসলিম কমিউনিটি এখন প্রাণপণে ডকুমেন্ট জোগাড় করছে।
    হায়দ্রাবাদের ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি(নালসার) এর উপাচার্য ফরজান মুস্তাফা ( সাংবিধানিক আইনের খুব বড় পন্ডিত) গাইড করেছেন মাথা ঠান্ডা করে কাগজপত্র জোগাড় করতে উনি অক্টোবর থেকে আপিল করছেন যাতে বিভিন্ন পুজো কমিটি মাদ্রাসা কমিটি এনজিও'র অফিস এ ব্যাপারে হেল্প সেন্টার হিসেবে কাজ করে।
    একটা ব্যাপার দেখুন। আসামে মুসলমানেরা এসেছিল প্রধানতঃ ১৯১১ থেকে, কাজের জীবিকার খোঁজে। তাই ওখানে ওদের কাগজপত্র অপেক্ষাকৃত ভাবে ঠিকঠাক ছিল । হিন্দু শরণার্থীদের ঢল নামল ১৯৭১ নাগাদ, মুক্তিযুদ্ধের সময়।
    এরা নতুন এনআরসি নিয়ে স্বপ্নেও ভাবেনি , তাই ঝাড় খেল।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন