এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • যৎকিঞ্চিত...(2)

    Rana Alam লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৪ অক্টোবর ২০১৩ | ৯৩৬ বার পঠিত
  • তখন সদ্য চাকরি পেয়েছি,তাও খোদ ইস্কুল মাস্টারের চাকরি,যা মধ্যবিত্তের কাছে অতি লোভনীয়।চাকরি পাওয়ার আগে আমার কোন মূল্য না থাকলেও চাকরি পাওয়া মাত্রেই পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি’র স্থূলকায় ছেলেটার বিয়ের বাজারে বেশ দাম হয়ে উঠেছে। আর বাড়িতে বাবা অষ্টপ্রহর পিছনে পড়ে রয়েছেন।আমার বাবা রিটায়ার করার পর ঝিলিক ক্যানো মা খুঁজে পেলোনা,তা নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন এবং প্রত্যেক পর্বের পর তার চিন্তা বেড়ে যেত।আত্মীয়দের অনুযোগে তিনি ছেলের জন্য পাত্রী দেখা শুরু করলেন এবং খাওয়ার টেবিলে বসে আমাকে হুমকি দিতেন যে অমুক মাস অব্দি দেখবে,তারপর যাকে পাবেন তাকে ধরে আমার বিয়ে দেবেন।আমার বাবা এককালে রাজনৈতিক নেতা ছিলেন,সুতরাং তার হুমকিতে খুব একটা পাত্তা দিতাম না।কিন্তু ধীরে ধীরে বাবার উৎপাত বেড়ে যেতেই লাগলো।ছেলের বিয়ে দেওয়া বাবার একমাত্র কর্তব্য এবং সে মহান কর্তব্য পালনে আমি তাকে বাঁধা দিচ্ছি,তাই তার জান্নাতের রিজার্ভেশনটা কনফার্ম হচ্ছেনা গোছের অবান্তর কথা বার্তায় আমার কান পাকিয়ে দিচ্ছিলেন।শেষে থাকতে না পেরে আমি একদিন খাওয়ার টেবিলে বসে বাবা’কে জিজ্ঞেস করলাম,
    “আচ্ছা বাবা,বিয়ে করাটা কি তুমি খুব ভালো কাজ মনে করো?”
    বাবা তো হাতে প্রায় চাঁদ পেয়েছেন তখন,যেন ক্রেমলিনের মহাফেজ খানার চাবি ওবামার হাতে যেচে তুলে দিতে চাইছেন ভ্লাদিমির পুতিন।আর আমার বাবা খুব ভালো করে বোঝাতে পারেন,কেউ না বুঝতে চাইলেও বাবা বোঝাতে পারেন।এবং বাবা চাইলে কাকার সেলুনের গোবিন্দদা’কে থিওরি অব রিলেটিভিটি বুঝিয়ে দিতে পারেন এই আশঙ্কটা আমার সবাই করে থাকি।বাবা পরের পাঁচ মিনিটে গীতা থেকে সোস্যাল কন্ট্রাক্ট অব্দি ঝেড়ে ক্যানো বিয়ে করা আমার জন্য আবশ্যিক এবং আমি বিয়ে করছিনা বলে পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণের মত কত গুরুত্বপূর্ন কাজ আটকে আছে,তা বুঝিয়ে ছাড়লেন।
    আমি শেষপাতের ভাতটা নাড়াচাড়া করতে করতে বললাম,
    “তাহলে বলছো যে আমার জন্য বিয়ে করাটা খুব ভালো এবং জরুরী কাজ,তাই তো?”
    বাবা একখানা আগমার্কা স্মাইল দিলেন,ইন্দিরা গান্ধী ক্যাবিনেট মিটিং এর শেষে মন্ত্রীসভার বাকি অপগন্ড সদস্যদের প্রতি যেমন তাকাতেন।আমি নিরীহ স্বরে জিজ্ঞেস করলাম,
    “তুমি কবে বিয়ে করেছিলে যেন?”
    মা এতক্ষণ রান্নাঘরে বাসন পত্র গোছাচ্ছিলেন।আমি প্রশ্নটা করা মাত্রই সে শব্দ থেমে গেল। বাবা এ প্রশ্নটা আশা করেন নি।একটু হোঁচট খেয়ে বললেন,
    “ওইতো ১৯৮০ তে।কিন্তু ক্যানো?”
    আমি ঠান্ডা গলায় বললাম
    “আচ্ছা বাবা,একটা কথা ভেবে দ্যাখোতো,বিয়েটা যদি এতই ভালো জিনিস হবে,তাহলে সেও ১৯৮০ তে প্রথম বিয়ে করার পর তুমি আর একটাও করলে না ক্যানো?একটা করেই ক্ষান্তি দিয়েছো যখন তাহলে বুঝতে হবে যে বিয়েটা মোটেই ভালো জিনিস নয়”
    আমার মায়ের হাতের তাক ভালো নয় ভাগ্যিস,ডালের হাতাটা জাস্ট কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেল।

    কলকাতায় একটা কাজে আমি আর বাবা গেছি।সেখানে আমার স্কুলের সহপাঠিনী এবং অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু আসমা পারভিন,পেশায় চিকিৎসক,শেয়ালদা স্টেশনে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল। আসমা বিদূষী এবং চোখে পড়ার মত সুন্দরী।আমাদের ট্রেন ছাড়লো।প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো আসমা’র চেহারাটা আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল।আমি জানালার দিকে তাকিয়ে আছি।বাবা আচমকা বলে উঠলেন,
    “ইয়ে,মেয়েটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে”।
    আমার মাথাটা দুম করে গরম হল।ইশারাটা খুব স্পষ্ট।ঠান্ডা গলায় বললাম,
    “ইসস...তুমি কদিন আগে বলতে পারলে না”
    “ক্যানো?”,বাবা সন্দিগ্ধ হলেন,”কদিন আগে বলতে পারলে কি হত?”
    আমি হাই তুলে বললাম
    “না,তাহলে আসমাকে বলে দিতাম যে তুমি ওকে পছন্দ কর,তাহলে ও আর ইকবাল কে বিয়ের জন্য হ্যাঁ করতো না”।
    বাবা সেই যে চুপ করল,বেলডাঙ্গা আসার আগে আমার সাথে কথাই বলল না।
    এর কিছুদিন পরের কথা।তদ্দিনে সায়ন্তিকা’র মাথাটা পুরো খারাপ হয়ে গেছিল নিশ্চয়,নাহলে আমাকে বিয়ে করার কথা ভাববে ক্যানো? তা ভেবেই যখন ফেলেছে,তখন তো আমার ভাবনাটা বেড়ে গেল।এবার বাড়িতে কি করে বিয়ের কথা বলি? সায়ন্তিকা এক বিকেলে আমাদের বাড়ি এসেছিল একটা বই নিতে।বাবা-মা তখন ডাইনিং এ বসে টিভি দেখছেন।বেরোবার সময় বাবা-মায়ের সাথে আলাপ করিয়ে দিলাম।বিভিন্ন কাজে এমনিতেই আমার কাছে অনেক লোক আসে।বাবা মা তাই সবার সাথে যেমন কথা বলেন,সেভাবেই বললেন।সায়ন্তিকা চলে যাওয়ার পর খানিক গলা খাঁকরি দিয়ে আসল কথাটা বললাম।বাবা গুছিয়ে উঠে বসে বললেন,
    “ইসসস...আগে বললিনা ক্যানো?মেয়েটাকে আরেকটু ভালো করে দেখতাম”।
    আমার মা এমনিতে বেশ রাশভারি মহিলা।বাবার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বললেন,
    “বলি,বিয়েটা কে করবে,তুমি না তোমার ছেলে?”
    বাবা আমতা আমতা করে বললেন,
    “ক্যানো,রাণাই করবে...”
    মায়ের কড়া গলায় জবাব এলো,
    “তাহলে ওকেই দেখতে দাও,তোমার না দেখলেও চলবে”।

    প্রসঙ্গত বলে রাখি,আমার বাবা অত্যন্ত সুরসিক এবং আমি খুব ভাগ্যবান যে বাড়িতে বরাবর সেই স্বাভাবিক পরিবেশটা পেয়ে এসেছি,যেখানে আমরা একে অপরকে র্যাবনডম ইয়ার্কি মেরে যেতে পারি।আমি,আমার ভাই,বাবা-মা যখনই একত্র হই,কথার জাগলারিতে পাল্লা চলে একে অপরের সাথে।দুসপ্তাহ হল বাবা প্রবাসে গেছেন,সবকাজ সেরে ফিরতে আরো মাসখানেক।সদা হাস্যময়,প্রাণবন্ত,সুরসিক মানুষটিকে খুব মিস করছি।
    আজকের বকবকানিটা ওনার জন্যই রইলো।
    LOVE YOU DAD AND MISSING YOU MOST…
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৪ অক্টোবর ২০১৩ | ৯৩৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • raatri | 24.96.85.150 (*) | ০৫ অক্টোবর ২০১৩ ০৩:০৮46578
  • ঝরঝরে।আরো চাই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন