এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • আপনাকে। তিরোধান দিনে।

    Anuradha Kunda লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ৩০ মে ২০১৯ | ১৩৭৮ বার পঠিত
  • আপনাকে কিছু কথা বলার আছে।

    এটা সেই সময় যখন "গণশত্রু" পাঁচবার দেখা হয়ে গেছে। কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে দেখে। হাঁসফাঁস লাগছে। সত্যজিত তখন স্বাস্থ্যজনিত কারনে আউটডোর শুটিং বন্ধ করে দিয়েছেন। বাড়িতে অতিথি আসামাত্র ডাক্তার গৃহিণী বলছেন, "আপনি চা খাবেন তো?" অতিথি তখনও দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। খবরের কাগজের সম্পাদককে আনন্দিত চিত্তে বলছেন, "আমার মেয়ে একটা স্কুলে চাকরি করে। রমেশের সঙ্গে বিয়েটা হয়ে গেলে অবশ্য চাকরিটা ছেড়ে দেবে।" এতে কারুর কোনো ভাবান্তর দেখা যাচ্ছে না। ডাক্তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করছেন "আচ্ছা তোমার কখনো মন্দিরে যেতে ইচ্ছে হয় না?"

    স্ত্রী নম্র সুরে বলছেন হয়। কিন্তু তিনি তো তাঁর ইচ্ছে স্বামীর ইচ্ছের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। আলাদা অস্তিত্ব কিছু নেই আর! সদ্য তরুণী ছটফট করছি। একদিকে আছে সত্যজিতের ছবির প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা, অন্যদিকে মনে হচ্ছে এই কি সেই পরিচালক যাঁর "কাঞ্চনজংঘা" তার ফিল্মের বাইবেল? "মহানগরের" আরতি কে মনে পড়ছে! কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে তো সত্যজিতের ছবিতে মেয়েরা শুধুই কল্যাণী গৃহবধূ। স্নিগ্ধ। কোথাও যেন নাটকে বিবেকের মতো কাজ করেন তারা। ব্যতিক্রম ঐ "কাঞ্চনজংঘা"। রায় বাহাদুর গৃহিণীর ম্লান মুখচ্ছবি। এ পরবাসে কে রবে হায়। আহা! তবে কি নারীর জন্য কেবল পরবাস বরাদ্দ? কোথাও তার পায়ের তলায় মাটি নেই? অপর্ণার "পরমা" দেখেছি। বা, "থার্টি সিক্স চৌরঙ্গী লেন"। ন্যারেটিভ পাচ্ছি। নারীর ন্যারেটিভ। কিন্তু মন চাইছে আরো অন্য কিছু। নতুন নারী দেখছি তখন। ভালো লাগছে তাদের। যেমন মহেশ ভাটের "অর্থ" ছবিতে পূজা। প্রতিবাদী মেয়ে। জীবনের ওঠাপড়া দেখছি চারদিকে। একটা পূজোবার্ষিকী তে "দহন" পড়েছি। মেয়েরা যে কেবল দুঃখ পেয়ে ভালবাসে আর ভালবেসে দুঃখ পায়, তার নমুনা দেখছি এদিক ওদিক।

    ওমনি একদিন। সিনে ক্লাব ডাকলো। ছবি হবে রবিবার সকালে। "উনিশে এপ্রিল"। পরিচালক নতুন। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। স্পষ্ট মনে আছে। মা তরকারি কাটছিলেন। আমি বেরোলাম।অনসূয়া আর আমি। এই প্রথম মনে হল, সামান্য কয়েকটি ছবি ছাড়া অপর্ণা সেনকে বড় তীক্ষ্ম ভাবে কাজে লাগানো হল। মৃণালিনী অপর্ণাই করতে পারেন। যে মেয়ে স্বামীর ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ঘা লাগছে বলে নাচ ছেড়ে দেয়। আর তারপর বুঝতে পারে যে সাধনা ছেড়ে সংসারী হলেও স্বামীর মন পাওয়া যাবে না। আবার সে মঞ্চে ফেরে। মেয়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে। মেয়ে কিন্তু নিজের ডাক্তারি কেরিয়ার ছেড়ে দিতে রাজি একটি ভোগী পুরুষের ঘরবন্দি হবার জন্য।

    ঋতুপর্ণ। আপনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন যে এই সংসারে সমস্ত শর্ত আরোপ করে পুরুষ। নারীর কোনো শর্ত নেই। তার শুধু মেনে নেওয়া আছে। এই দেখাশোনা বড় জরুরি ছিল বাংলা ছবিতে। যেখানে মেয়েদের রক্ত মাংসহীন কাঠপুতুলের ভূমিকায় দেখতে দেখতে দর্শক হেজেমজে গেছে।

    "হীরের আংটি"। প্রথম মুনমুন সেনকে কোন ছবিতে দেখে বিবমিষা হল না। মানে অমন এনআরআই গৃহিণীপনাতে ন্যাকামি ঝ্যাকামি আপনি মিলিয়ে দিলেন।

    আর তারপর দেখলাম "দহন"। ঝিনুক আর রমিতার গল্পে আপনি নিয়ে এলেন ঝিনুকের ঠাকুমাকে। সুচিত্রা মিত্র। কী পরিশীলিত অভিনয়। "মনের মতো কি কেউ হয় রে দিদি! তুই নিজেই কি সবটা তোর মনের মতো?"

    যে ঝিনুক লাফিয়ে পড়ে এলোপাথারি হাত পা ছুঁড়ে রমিতার সম্ভ্রম বাঁচায়, সে কেমন করে ধূর্ত প্রেমিকের আশ্লেষে আর চুম্বনে পিষ্ট হয়ে যেতে যেতে প্রতিবাদের ভাষা ভুলতে বাধ্য হয়, আপনি দেখালেন। আপনিই দেখালেন কেমন করে একজন ধর্ষককে বিয়ে করতে বাধ্য হয় একটি মেরুদণ্ড সম্বলিত কন্যা। স্রেফ অভিভাবকদের চাপে। এসব আগে কেউ দেখায়নি বাংলা ছবিতে, জানেন। যেমন পঞ্চাশ ষাঠবার আপনার ছবি দেখেছি, খুঁজে খুঁজে ডিভিডি কিনেছি সব! সেকি শুধু আপনার অসামান্য অন্দরসজ্জা দেখার জন্য! যদিও আপনার সেটের পর্দা থেকে শুরু করে পিরিচ পর্যন্ত হাঁ করে খেলেছি, কনসেনট্রেট করেছি আপনার ছবির মেয়েদের যন্ত্রণাতে। "দহনে" প্রথম বোধহয় মুখ দেখালেন শিবপ্রসাদ। ঝিনুকের ভাই। যে দিদিকে জোয়ান অব আর্ক মনে করে। আর জোয়ানের মতো আগুনে পুড়ে যায় ঝিনুক। প্রেমিকের বিছানাতে। রমিতা কিন্তু মুক্তির কথা ভাবে। বিবাহের বাইরে মুক্তি। আপনি চিঠি লেখেন।

    শিবপ্রসাদ আবার অমন একটি ভ্রাতৃতুল্য চরিত্রে এলেন "বাড়িওয়ালী" ছবিতে। যে পুরুষ মেয়েদের বোঝে। অকারণ হাসি, কারণের কান্না ও বোঝে। কী আশ্চর্য অসাধারণ স্বপ্নদৃশ্যে একটি নারীর যৌনতাকে এক্সপ্লোর করলেন আপনি। একদিকে পরিচারিকার উত্তাল বাঁধনছেঁড়া যৌবন, দ্বিধাহীন শরীরী সম্পর্ক। অন্যদিকে যবন অতিক্রান্ত লগ্নভ্রষ্টা অনূঢ়া নারীর অবচেতনে সূক্ষ্ম সাদা লেসের কাজ করা রাতপোশাক। দুগ্ধফেননিভ কাঁথা সরে যায় নির্লিপ্ত পুরুষের অঙুলি সন্চালনে। সে কিন্তু প্রেমিক নয়। শুধুই পরিচালক। তবু নারী আশ্লেষে কেঁপে ওঠে। রাঙা আলতা পরা পায়ে যৌনইচ্ছা আড়মোড়া ভাঙে। সে যত্ন করে প্রিয় পুরুষের জন্মদিনে পায়েস রাঁধে আর প্রতিদ্বন্দ্বী নারী যাতে সেদিন পুরুষের কাছে না যেতে পারে, সেইজন্য গেটে অনেক তালা দেবার পরে ই জিজ্ঞেস করে "আজ তো ওঁর জন্মদিন। আপনি গেলেন না?"

    মেয়েরা ওমনি প্রেমে পড়ে। পড়তো। বা হয়তো আজো পড়ে। ছেলেরাও পড়ে। হিসেবনিকেশ করে তো আর প্রেম হয় না। বিবাহ হয়। তাই বনলতা কাঁদে। প্রেমে পড়বে আর চোখের জল পড়বে না, তাই হয় নাকি! নির্লিপ্ত পুরুষ স্ত্রী, প্রেমিকা, সহকর্মিণী, সবাইকেই উপেক্ষা করতে পারে। তার কাজ আছে! আসলে আপনার ছবি মেয়েদের নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। মেয়েদের ও তো থাকতে পারে একটা কাজের দুনিয়া? "সব চরিত্র কাল্পনিক"? সে মেয়ে বুঝি শুধু স্বার্থপর? যে অফিস থেকে ভিজে ফিরে দেখে বন্ধুদের নিয়ে গুলতানি করছে কবি স্বামীটি? যখন বাবার স্ট্রোক হয়েছে খবর পেয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে সে, স্বামীটি তখন ক্রিকেট জ্বরে ছয় হাঁকাচ্ছে। সে কবি।সহৃদয়। পরিচারিকাকে কবিতা শোনায়। গোপনে হাতিয়ে নেয় স্ত্রীর লিখন। পুরস্কৃত কবি সে। তবু তল পায় না সঙ্গিনীর মনের। সে স্বাধীনচেতা মেয়ে। প্রেমিক ও ছেড়ে যায় সমাজের দোহাই দিয়ে। থাকে নন্দুর মা।

    ঋতুপর্ণ। আপনি মেয়েদের মনকে যেমন বাদলা আকাশের মতো বৃষ্টিধারাতে ঝরে পড়তে দেখিয়েছেন, তেমনি দেখিয়েছেন ভগিণীহুড।

    বেলা। নন্দুর মা। এঁরা জীবন্ত। আশ্রয়। বাংলা ছবিতে শুধু পরিচারক দেখানো হয়েছে। যারা যন্ত্রবৎ এসে চা দিয়ে চলে যায়। বা কমিক ইফেক্ট দেবার নামে ভাঁড়ামি করানো হয় যাঁদের দিয়ে। আপনার ছোঁয়ায় তারা প্রাণ পেয়েছে। আপনি ডিসেন্টারড করেছেন সিস্টেমকে। তারাই একটা ছবির ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ইউ হ্যাভ ডান দিস। সরলরৈখিক প্রভু ভৃত্য ছক চুরমার করে আপনি দেখিয়েছেন কত শক্তিশালী আশ্রয় ঐ গৃহীকর্মসহায়িকা। মেয়েরা মেয়েদের না বুঝলে কে বুঝবে?

    না। আমি "চোখের বালি" আর "নৌকাডুবি" নিয়ে কিচ্ছু দেখবো না। তারা যত না আপনার, তার চেয়ে অনেক বেশি রবীন্দ্রনাথের। লিখতে গেলে আলাদা করে লিখতে হবে। আজ থাক।
    বরং "খেলা"র কথা বলি? সেই কাজপাগল বর আর মনখারাপ করা বউ। বাচ্চা কিডন্যাপ করার মতো একটা আজগুবি বিষয় আপনি ভুলিয়ে দিলেন ফিল্ম তৈরির মোড়কে! তবু এ ছবিতে মনখারাপ করা বউই আশ্রয় হয়ে উঠলো। পুরো সত্যজিতের ছবির মতো। পিতৃতন্ত্রের মনের মতো। কিন্তু "দোসর"?

    যে মেয়ে পরকীয়া করতো তাকে সবাই দুষেছে। আমিও। কিন্তু তার স্বামী যখন বেশ্যাগমন করে, একটি সঙ্গমদৃশ্যে আপনি বুঝিয়ে দেন তার পরকীয়ার অনিবার্য কারণ। বেশ্যা হিসহিস করে ওঠে "শালা যেন ঘোড়া। "সপাটে চড় মারে। বিবাহ নামক নির্মাণ অ্যাক্সিডেন্টে চুরমার হওয়াএ গাড়ির মতোই ভঙ্গুর। বেশ্যার প্রতিবাদ করার অধিকার থাকে। স্ত্রীর থাকে না। তাই সব অপমান সাবানের ফেনাতে ধুয়ে কাবেরী অনিচ্ছুক দেহ এগিয়ে দেয় ব্যভিচারী অভিমানী স্বামীর দিকে। "আমার ঠোঁট তোমার ঠোঁট ছুঁলো" পাঠ হয় দাম্পত্যের নবনির্মাণে। যেখানে মেয়ে দুঃখ পেয়েও ভালবাসে। সমাজ নির্ধারিত নিয়মে চুম্বন করে। আহা! এর অধিক বেচারা কিছু আছে!

    আপনার "চিত্রাঙ্গদা" আমার প্রিয়। বাবা মা ছেলে। খাবার টেবিল। ছেলে বলছে তার নারীসত্ত্বার কথা। কতো সযত্নে নিপুণ আলোতে উদ্ভাসিত দৃশ্যাবলী। অস্ত্রোপচারের কাহিনী জুড়েছেন অকপট নান্দনিকতায়। আপনি কনিজিয়র। তবু বলি। "চিত্রাঙ্গদা" তে আপনি যতটা নারী, তার চেয়ে ঢের বেশি নারী আপনি "আবহমান" ছবিতে।

    আবহমান। আপনার। ক্রাউনিং গ্লোরি। শ্রেষ্ঠ নির্মাণ। বিনোদিনী-শিখা-শ্রীমতি। যেন দূরদৃষ্টি আর দিব্যদৃষ্টি দিয়ে আপনি পরতে পরতে মেলে ধরেছেন অস্তিত্বের সংকট। পুরুষ নারীকে নির্মাণ করতে চায়। আগেও। এখনো। নারী যেন কাঁচা মাটি গো! তাকে পড়লেই হল মনের মতো করে। তা সে গিরিশ ঘোষ হোন বা অনিকেত। অভিমানী স্ত্রী। শুধু বলতে পারেন "সফিস্টিকেটেড। হোক বা আনসফিস্টিকেটেড। দুটোর মধ্যে একটাকে বেছে নিতে হয়।" পুরুষ বলে, কেন ? দুটো নিয়ে চলা যায় না? আহারে মেয়ে! কেন একমুখী প্রেম আশা করো তুমি! এ ছবির লেয়ারের অন্ত নেই। স্পেস আর টাইমে অতুলনীয় মেলবন্ধন করেছেন নিমেষে নিমেষে আর আমরা শিখা না বিনোদিনী না শ্রীমতি ভাবতে ভাবতে কুয়াশাতে হারিয়ে গেছি।

    যদি কোনো নির্জন স্থানে শুধু আপনার ছবি সঙ্গে থাকে, সে নির্জনবাস দীর্ঘস্থায়ী হোক।

    জীবনের ওঠা পড়া গায়ে মেখেই তো আপনার ছবির উৎসব। অমল ধবল পালে মন্দ মধুর হাওয়ায় ভাসিয়েছেন। ভেসেছেন। ওমনি তরী বাইতে বাইতে চলেও গেলেন। যেমন যেতে হয়। বৃদ্ধ হয়ে রোগশয্যায় যাওয়া আপনাকে মানাতো না। সত্যি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ৩০ মে ২০১৯ | ১৩৭৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • স্বাতী রায় | 781212.194.8934.47 (*) | ৩০ মে ২০১৯ ০২:৩১48529
  • তিতলি আমার ভারী পছন্দের ছবি - মনে হয়েছিল ওই রকম ভাবে মা আর মেয়ের সম্পর্কের রসায়ন বোধহয় আর কেউ বুনতে পারবে না। আর যদিও অফিসিয়ালি ঋতুপর্ণর করা না, তবু আরেকটি প্রেমের গল্প আমি কোনদিন ভুলতে পারব না ।
  • স্বাতী রায় | 781212.194.8934.47 (*) | ৩০ মে ২০১৯ ০২:৩২48530
  • আর বলা হল না যে লেখাটা ভারী ভালো লাগল,
  • K | 3478.223.4567.61 (*) | ৩০ মে ২০১৯ ০২:৫২48531
  • Bhalo laglo. utsab r titli r ullekh nei dekhe ektu surprised holam
  • pi | 2345.110.894512.153 (*) | ৩০ মে ২০১৯ ০৩:৪৬48532
  • ভাল লাগল, এই আংগেল থেকে ভাবনা উস্কে দেওয়ার জন্য।
    কিন্তু কিছু প্রশ্ন থেকে গেল।

    ১."সত্যজিতের ছবিতে মেয়েরা শুধুই কল্যাণী গৃহবধূ।স্নিগ্ধ।"
    মনে করে দেখার চেষ্টা করছিলাম, বেশ কিছু ব্যতিক্রম ও আছেন। নায়কের নায়িকা তো সাংবাদিক, চিড়িয়াখানায় বনলক্ষ্মী? চারুলতা বা বিমলাকেও কি ঠিক ' কল্যাণী স্নিগ্ধ গৃহবধূ' র ক্যাটেগরিতে ফেলা যাবে? তিনকন্যাকে?
    সীমাবদ্ধর নায়িকাও তুতুল, তুতুলের দিদি না। আর তুতুলও কি দিদির মত, ভাল মনে নেই, কিন্তু ওই ক্যাটেগরিতে পড়ার পাত্রী কি ছিল?
    আগন্তুকে মমতা শনকর কিছু করতেন কিনা ভুলে গেছি, তবে ভেবে দেখলাম, না করলে, ৯০ এর দিকেও এসে এরকম চরিত্র, হ্যাঁ এখন দেখলে কিছুটা অস্বস্তি দিতে পারে।
    কিন্তু ভেবে দেখলাম, সত্যজিত রায়ের ছবিতে মেয়েরা কেন বেরয়নি, কাজ করেনি, এমন অভিযোগ সেভাবে মাথায়ই আসেনি, আসার জায়গা কারণ কিছুই পায়নি, বোধহয় মাথায় মহানগর ছেয়ে থাকত বলে। অনেক না থাকা এই একে পুষিয়ে যাওয়ার মত। ওই ট্রান্সজিশন্টাকে তো ধরেছে!

    পরের প্রশ্নে পরে আসছি, কারণ পোস্ট না করলে এটুকু উড়ে যাওয়ার ভয় আছে!
  • pi | 2345.110.894512.153 (*) | ৩০ মে ২০১৯ ০৪:২৮48533
  • পরের খটকা এই জায়গায়,
    "আপনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন যে এই সংসারে সমস্ত শর্ত আরোপ করে পুরুষ।নারীর কোনো শর্ত নেই।তার শুধু মেনে নেওয়া আছে।এই দেখাশোনা বড় জরুরি ছিল বাংলা ছবিতে ।যেখানে মেয়েদের রক্ত মাংসহীন কাঠপুতুলের ভূমিকায় দেখতে দেখতে দর্শক হেজেমজে গেছে।"

    নারীর কোন শর্ত নেই, শুধু মেনে নেওয়া আছে, এভাবে নারীকে দেখানো তো একরকম করে নারীকে কাঠপুতুল দেখানোই হল! তফাত তাহলে কোথায়?

    আর সেভাবে দেখতে গেলে প্রি-ঋতুপর্ণ, শুধু সত্যজিত কেন, এম্নকি প্যায়ালাল সিনেমার অন্য উদাঃ ছাড়লেও, মেইন্সট্রিমে এরকম দেখানো হয়নি? ৷ ও হ্যাঁ, মেইন্সট্রিম ছবির কথা, অন্য আরো অনেক ছবির কথা উপরের পোস্টে ১ নং পয়েন্ট প্রসংেএও আসত।

    ৩.দোসর প্রসংগেও বলা হল, "যেখানে মেয়ে দুঃখ পেয়েও ভালবাসে।সমাজ নির্ধারিত নিয়মে চুম্বন করে।আহা!এর অধিক বেচারা কিছু আছে!"৷ মেয়েদের এভাবে চিত্রণও কি ঋতুপর্ণই প্রথম দেখালেন? এরকম চরিত্রে তো পুরানো মেইনস্ট্রিম ও ভর্তি!

    তবে একেবারে মেয়েদের পাওয়া না পাওয়া দেওয়া থোয়ার কথাই আসে, তো অন্দরমহল, উতসব, রেইনকোট, শুভ মুহরত আসবেনা? অবশ্য এগুলো প্রিয় সিনেমার মধ্যে পড়ে বলেও উল্লেখ আশা করছিলাম হয়ত।
  • chamotkaar | 450112.129.4590012.60 (*) | ৩০ মে ২০১৯ ০৫:১৫48534
  • লেখাটা ভাল লেগেছে, তাই আশা বেড়ে গেছে। একটা সেকন পার্ট হউক।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন