এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • একটি ভূতের গল্প

    Muradul islam লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৮ জুন ২০১৭ | ১৬৮২ বার পঠিত
  • অন্ধকার রাতে পাঁচিল টপকে কারো বাসায় অনধিকার প্রবেশ ভালো কথা নয়। হীন কোন উদ্দেশ্য থাকলে তো নয়ই। জয়ন্তবাবুর উদ্দেশ্যটা কী, তা বলা যাচ্ছে না, এমনকী তার নিজেরও এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোন ধারণা নেই। যে তীব্র মনোবেদনা, অভিমান, লাঞ্ছনা গঞ্জনার সার তার হৃদয়ের গহীনে জমে আছে পলির মত, সেগুলোই যে তাকে এখানে টেনে এনেছে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কিন্তু তিনি কী উদ্দেশ্যে এসেছেন, কী করবেন বা করতে যাচ্ছেন তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। স্মৃতিশক্তি যতদূর যায়, যতদূর স্মৃতির দূরবীনে চোখ রেখে ফেলে আসা দিনগুলিকে দেখা যায়, তার মধ্যে কারো উপকার বই অপকার কিছু করেছেন, জয়ন্তবাবু দেখতে পান না। সেই চিত্রপটের সমস্ত অংশ জুড়ে তিনি নিজেকে যেরকম দেখতে পান তা হল গোবেচারা ভোলাভালা লোক, যার ভিতরে লেখক হবার প্রচণ্ড ইচ্ছা। যেকোন ধরনের লেখক নয়, ভূতের গল্পের লেখক।

    ভূতের গল্প লেখার এবং তার দ্বারা মানুষকে ভয় পাওয়ানোর নেশাটা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় কোথা থেকে পেয়েছিলেন তা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তার যতদূর মনে পড়ে এতে অবদান আছে সাধন ফকির নামে একটা লোকের। জয়ন্তবাবু জন্মেছিলেন একটি ক্ষয়িষ্ণু সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তার পূর্বপুরুষেরা তাদের অঞ্চলে একসময় দাপটের সাথে প্রায় রাজত্বই করে গেছেন। কিন্তু রাজত্বের চরিত্র হল তা হাত বদলায়, চেহারা বদলায়। ফলে একসময় এই পরিবারের অর্থ বিত্ত যশ খ্যাতি ও ক্ষমতা কমতে থাকে। জয়ন্তবাবুর যখন জন্ম হয় তখন আর তেমন কিছুই ছিল না, ইতিহাস ছাড়া। তখনো তার পিতামহ হরিলাল চট্টোপাধ্যায় জীবিত ছিলেন। তাদের ছিল ক্ষয়ে যাওয়া একটি লাল ইটের দালান। এর প্রতিটি ইঁট একই সাথে দুইটি জিনিস প্রকাশ করে যেত। এক, এককালে তাদের প্রবল প্রতাপ ছিল। দুই, এখন তাদের সেই প্রতাপ প্রতিপত্তির আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

    বাড়িটির পাশ বেয়ে উঠেছিল কিছু লতানো উদ্ভিদ। বাড়ির শ্রী বলতে যা বোঝায় তা আর কিছু ছিল না, তবে মাঝে মাঝে এইসব লতানো গাছগুলিতে হলুদ হলুদ ফুল ফুটত। সম্ভবত এরা পড়ন্ত বাড়িটির সৌন্দর্যবৃদ্ধির একটা চেষ্টা করে যেত। কিন্তু তাতে লাভ কিছু হত এমন বলা যায় না।

    জয়ন্তবাবুর পিতামহ হরিলালের কাছে মাঝে মাঝে আসত এক অদ্ভুত লোক। তার নামই সাধন ফকির। বয়স কোনভাবেই চল্লিশের নিচে হবে না। এর উপরে পঁয়ষট্টিও হতে পারে বার পঞ্চান্নও হতে পারে। গাল ভাঙ্গা, কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে এমন দুই চোখ, দেহ অস্থিচর্ম সার। মাথায় খসখসে রুক্ষ একরাশ চুল আর কাঁধে ঝোলানো বহু দিনের পুরোনো রঙ উঠে যাওয়া একটি কাপড়ের ব্যাগ।

    হরিলালের সাথে তার তেমন কোন বৈষয়িক সম্পর্ক ছিল এমন না। সাধন ফকির ছিল কবিরাজ মানুষ। সে বনেজঙ্গলে ঘুরে ঘুরে লতা পাতা সংগ্রহ করত এবং তা দিয়ে ওষুধ তৈরি করত। অনেক আগে, যুবক বয়েসে হরিলালের সাথে তার একটা ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়। তাই ভেষজ লতা পাতা সংগ্রহের কাজে এদিকে আসলে সে হরিলালকে দেখে যেত। গল্পগুজব করে যেত।

    জয়ন্তবাবুর বয়স যখন খুব বেশি হলে নয় দশ, তখন একদিন সাধন ফকিরের সাথে তার কথা হয়। ঐ একবারই সাধন ফকিরের সাথে তার কথা হয়েছিল। সেই কথোপকথনের কথা জয়ন্তবাবুর স্পষ্ট মনে আছে এখনো।

    “কী খোকা, কেমন আছো?”

    “ভালো আছি।”

    “তোমার দাদু আছেন?”

    “না, তিনি বাজারে গেছেন।”

    “তাহলে তো বড় মুশকিল হল। আসবেন কখন?”

    “তা বলতে পারব না।”

    সাধন ফকির তখন ব্যাগ এক পাশে রেখে বসে পড়ল। তাদের বাড়ির সামনে বড় জটাধারী বট গাছ ছিল। এর নিচের দিকটাতে বসার জন্য জায়গা করে রাখা। সেখানে বসে সাধন ফকির উদাস ভঙ্গিতে বলেছিল, “খোকা, মানুষের ভেতরে যেসব কথা মজুত থাকে তা সব বলে ফেলতে না থাকলে আত্মা শান্তি পায় না। তাই মাঝে মাঝে আসি, তোমার দাদুর সাথে গল্প করি। আজ তো তিনি নেই। তুমি কি আমার গল্প শুনবে?”

    জয়ন্তবাবু উত্তর দিয়েছিলেন, “কী গল্প?”

    লোকটি বলল, “তোমাকে ভূতের গল্প বলা যায়। অন্য গল্প বললে তুমি মজা পাবে না।”

    এরপর বসে বসে লোকটি তিনটি ভূতের গল্প বলল। একটিও জয়ন্তবাবুর কাছে ভয়ের মনে হয়নি। গল্প বলে লোকটি চলে গেল।

    সেদিন মধ্যরাতে নানা ধরনের স্বপ্ন দেখতে লাগলেন জয়ন্তবাবু। অদ্ভুত অদ্ভুত সব ভয়ংকর স্বপ্ন। ভয়ে কাঁপুনি দিয়ে তার জ্বর এল। সেই জ্বর স্থায়ী হয়েছিল তিন সপ্তাহ।

    কিন্তু এই ঘটনাই যে তার মধ্যে ভূতের গল্প লেখার নেশা ধরিয়ে দিয়েছিল তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এরপর তিনি বড় হন, বিএ পাশ করেন, চাকরি করেন, বিয়ে করেন, দুই সন্তানের পিতা হন। কিন্তু কখনো তার ভূতের গল্প লেখার কথা মনে হয়নি।

    একদিন হঠাৎ করেই তার ভূতের গল্প লেখার ইচ্ছে হল। লিখে ফেললেনও। বউকে ডেকে বললেন, “তোমাকে একটা জিনিস দেখাব। পড়লে ভয় পাবে।”

    তার স্ত্রী বললেন,”কই দেখি তো!”

    জয়ন্তবাবু গল্প লেখা কাগজগুলি তার স্ত্রীর হাতে তুলে দিলেন। ভদ্রমহিলা পড়লেন। পড়তে পড়তে বিরক্তিতে তার কপালে ভাঁজের সংখ্যা বাড়তে লাগল একের পর এক। এরপর এক পর্যায়ে বলেই ফেললেন, “কী লিখেছ এসব ছাইপাঁশ! ভূতের গল্প কখনো এমন হয়? আর তোমার মাথায় হঠাৎ লেখার ভূত চাপল কী করে?”

    জয়ন্তবাবু সেদিন যেরকম অপমানিত বোধ করেছিলেন ওইরকম আর জীবনে কখনো হয়নি। কিন্তু তিনি মুখে কিছু বললেন না। অন্তরে দুঃখ পেলেন। ভাবলেন আর কখনো কিছুই লিখবেন না।

    কিন্তু মাত্র দশ মিনিট পর তার মাথায় আরেকটি ভূতের গল্পের প্লট চলে এলো। গল্প এসে যেন তার মাথার ভিতরে লাফাতে শুরু করল ত্যবড় ব্যাঙের মত। একে বের না করে দিলে নিস্তার নেই। জয়ন্তবাবু লিখতে বসে পড়লেন এবং ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে লিখে ফেললেন। তার শান্তি লাগল। আর বিস্ময়ের সাথে তিনি লক্ষ করলেন তার স্ত্রীর করা অপমানের ব্যথা উধাও হয়ে গেছে। ঐ অপমানকে এখন তার বড় কিছু বলে মনে হচ্ছে না। তার মনে হচ্ছে এসব তো হয়ই, যেমন রাস্তার একজনের সাথে আরেকজনের ধাক্কা লাগলে তেতো কন্ঠ শোনা যায়, কী ভাই, দেখে চলতে পারেন না নাকি?

    জয়ন্তবাবুর ইচ্ছে হল আবার স্ত্রীকে এই গল্পটি দেখান। অপমানে এখন তার আর কোন ভয় নেই। কিন্তু তার স্ত্রী রাগী মহিলা। পুনরায় ভূতের গল্প পাঠের আমন্ত্রণ তাকে রাগিয়ে তুলতে পারে। জয়ন্তবাবু ভাবলেন এই ঝুঁকি নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাছাড়া, বউকে গল্প পাঠ করিয়ে কি কোন লাভ আছে? বউ কি এ পর্যন্ত কোন লেখককে স্বীকৃতি দিয়েছে? আসল পাঠক থাকে ঘরের বাইরে। এই চিন্তা মাথায় আসার পরই জয়ন্তবাবু তার গল্প দুটি নিয়ে রাস্তায় বের হলেন।

    তার প্রথমে মনে হয়েছিল বন্ধুদের কাছে যাবেন। কিন্তু ওরা খুব ব্যস্ত। হাতে লেখা গল্প নিয়ে গেলে পড়বে বলে মনে হয়। বই নিয়ে গেলে উলটে পালটে পড়ে দেখতে পারে।

    অনেক বিচার বিবেচনার পর তিনি তার এক বন্ধুকে ফোন করলেন। কলেজে একসাথে পড়ার সময় তিনি দেখেছিলেন এই বন্ধুটির সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি ঝোঁক ছিল।

    জয়ন্তবাবু ফোনে বললেন, “আশফাক, একটা দরকারে ফোন করেছি। বড় দরকার।”

    “কী দরকার?”

    “ইয়ে... আমি কিছু গল্প লিখেছিলাম। ভূতের গল্প। কিন্তু এ লাইনে তো আমার জানাশোনা নাই। এখন কী করব?”

    “ভূতের গল্প লিখেছিস তুই?”

    “হ্যাঁ।”

    “কীরকম গল্প?”

    “গল্প, এই পাঁচ ছয় পৃষ্ঠার মত।”

    “কয়টা?”

    “দুইটা আপাতত। কিন্তু মাথায় আরো আইডিয়া আসছে।”

    “ঠিক আছে। আমি একটা মোবাইল নাম্বার মেসেজ করে দিচ্ছি। ওরা একটা সাহিত্য আড্ডা করে। ওখানে গিয়ে আমার নাম বললেই ওরা খাতির করবে। সেখান থেকে কোন প্রকাশকের ঠিকানা নিয়ে তার কাছে চলে যাবি। গল্প দশ বারোটা হলে বই করা যাবে।”

    বন্ধুর কথা শুনে জয়ন্তবাবুর চোখ উত্তেজনায় ও আনন্দে জ্বলজ্বল করে উঠল। তিনি তার কথামত কাজ করলেন। ঐ সাহিত্য আড্ডায় গেলেন। তারা প্রথম প্রথম খুব খাতির করল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় জয়ন্তবাবুর ভূতের গল্প শুনে সবাই হাসত। কেউ ভয় পেত না। তাদের হাসি দেখে, তীর্যক কৌতুকপূর্ণ বক্তব্য শুনে জয়ন্তবাবু তীব্র অপমানিত বোধ করতেন। তার মনে হত, তাকে ভরদুপুরে রাস্তায়, প্রকাশ্য জনতার সামনে জুতাপেটা করা হলেও এমন অপমান বোধ করতেন না। কিন্তু তবুও তিনি ওদের সাথে লেগে ছিলেন। কারণ ওরা তাদের কিছু কাগজে জয়ন্তবাবুর গল্প ছেপেছিল, শত অনুরোধের পর।

    গল্পগুলিও সাড়া ফেলেনি। কেউ তার গল্প পড়ে ভয় পেত না।

    আর এদিকে প্রতিদিন নিত্য নতুন ভূতের গল্পের প্লট এসে ভর করত জয়ন্তবাবুর মাথায়। প্লট এসে তার মাথার মধ্যে যেন লাফাত। আর সাথে সাথেই তিনি কাগজ কলম নিয়ে লিখতে বসে যেতেন।

    দিনে পাঁচটা ছয়টা গল্প লিখে ফেলতেন তিনি। নানা পত্রিকায় পাঠাতেন, প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রকাশকের বাসায় যেতেন গল্প নিয়ে। কিন্তু তার গল্প পড়ে কেউই ভয় পেত না। ভ্রু কুঁচকে তীর্যক মন্তব্য করতেন কেউ, হাসতে হাসতে “বেশ হয়েছে!” বলে ফিরিয়ে দিতেন কেউ। কেউ ভয় পেলে বা তার মনে অল্প ভয়ের আভাস এলে তা তার চোখ দেখে ধরা যায়। জয়ন্তবাবু অধীর আগ্রহে তার পাঠকের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। কিন্তু যেই আশা নিয়ে তিনি তাকিয়ে থাকতেন তা কোনদিন সফল হয়নি। তিনি হতাশ হতেন।

    ভূতের গল্প লেখায় এবং গল্প সংশ্লিষ্ট আনুষাঙ্গিক কাজে তার যা সময় ব্যয় হত, তাতে তার অন্য কাজ আর করা হয়ে উঠত না। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তার চাকরিটা চলে যায়।

    ভূতের গল্প লেখার উৎপাতে দুই সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে যান। এ নিয়ে গ্যাঞ্জাম কম হয়নি। কিন্তু সেসব এখানে আর উল্লেখ না করি। ঐসব জাগতিক বা বৈবাহিক ঝামেলা এবং চারিদিকে নিদারুণ সব প্রত্যাখানের চাপে জয়ন্তবাবু মুষড়ে পড়েছিলেন।

    এইসময় একদিন তিনি রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন। রাত তখন দু’টার মত। রাস্তা অনেকটা শুনশান। ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলো কেমন যেন মনমরা আলো ছড়িয়ে চলেছে। জয়ন্তবাবু নিজের ভাগ্যের কথা ভাবছিলেন আর হাঁটছিলেন। কেন একটা লোক, মাত্র একটা লোকও তার ভয়ের গল্পগুলি পড়ে ভয় পায় না। এটা কোন কথা হল? তিনি নিজে যখন লেখেন, নিজে যখন ভাবেন, তখন প্রায়ই ভয়ে শিউরে ওঠেন।

    একমনে হেঁটে যাচ্ছিলেন জয়ন্তবাবু। পিছন থেকে একটা কন্ঠস্বর শোনা গেল।

    “কই যান স্যার?”

    জয়ন্তবাবু মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখলেন খাকি পোশাক পরা এক লোক। এক হাতে চার ব্যাটারির টর্চ লাইট। কাঁধে সম্ভবত মেটে রঙ্গের একটি কাপড়ের ব্যাগ। লোকটির মাথায় দারোয়ানের মাথায় যেমন টুপি থাকে এরকম টুপি। তার মুখে গোঁফ আছে, আর লেগে আছে নির্মল কিন্তু রহস্যময় এক হাসি।

    জয়ন্তবাবু বললেন, “বাসায় যাই।”

    বলে তিনি মুখ ফিরিয়ে আবার হাঁটতে লাগলেন। ভাবলেন দারোয়ানের সাথে কথা বলার সময় নেই। নিজের চিন্তায় ফিরে যাওয়া উত্তম।

    কিন্তু খাকি পোশাক পরা লোকটি তার পাশাপাশি হাঁটতে লাগল।

    সে বলল, “স্যারের কি মন খারাপ?”

    “হুঁ।”

    “মন খারাপ কইরেন না স্যার। মন খারাপ কইরা কী হবে। দুই দিনের দুনিয়া।”

    “হুঁ।”

    “স্যার আমারে চিনতে পারছেন?”

    বিরক্ত মুখে আবার লোকটির মুখের দিকে একবার তাকিয়ে জয়ন্তবাবু বললেন, “না। কে তুমি?”

    “স্যার আমি রানার।”

    “রানার কী?”

    “রানার ছুটেছে রানার, ঐ রানার স্যার।”

    জয়ন্তবাবু কিছুই বুঝতে পারলেন না। তার বিরক্ত লাগল। পুনরায় তিনি ভাবলেন এর সাথে কথা না বলে হাঁটাই ভাল।

    কিছুক্ষণ চুপ থেকে লোকটি বলল, “স্যার কিছু মনে না করলে একটা কথা বলব?”

    জয়ন্তবাবু কোন উত্তর দিলেন না।

    লোকটি নীরবতা সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে বলল, “স্যার, দুঃখ দূর করার উপায় আমার জানা আছে। আপনে অনুমতি দিলে বলতে পারি।”

    কেন যেন লোকটির এই কথায় জয়ন্তবাবুর আগ্রহ হল। হয়ত তিনি তার দুঃখ ও বিষাদে এতই পূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন যে এর থেকে মুক্তির একটা উপায় তার দরকার ছিল যেকোন উপায়ে।

    জয়ন্তবাবু কৌতূহলী মুখে জিজ্ঞেস করলেন, “কী উপায়?”

    লোকটির চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল এই প্রশ্ন শুনে। সে বলল, “দাঁড়ান স্যার।”

    সে তার কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে একটি কাচের বোতল বের করল। বোতলে কালো কী একটা তরল ভর্তি আছে।

    লোকটি বলল, “এই নেন স্যার।”

    জয়ন্তবাবু জিজ্ঞেস করলেন, “কী এটা?”

    লোকটি বলল, “তবারক, স্যার।”

    “তবারক?”

    “জি স্যার। গড়দুয়ারা চিনেন স্যার? ওইখানে শাবানুর মাজার। সেইখানে মিলে এই তবারক। এই শহরে তবারক সাপ্লাইয়ার একমাত্র আমি। খাঁটি অরিজিনাল জিনিস। খাইয়া কোন অসুবিধা হইলে, দুঃখ বেদনা না গেলে, আমার গাল আর আপনের জুতা।”

    গড়দুয়ারা এবং শাবানুর মাজার শব্দদ্বয় কোথায় আগে শুনেছেন জয়ন্তবাবু মনে করতে পারলেন না। কিন্তু তার নিশ্চিত মনে হতে থাকল শব্দদুটি তার পরিচিত। তিনি হাত বাড়িয়ে বোতলটি নিয়ে কিছুটা অবিশ্বাসের সাথে এর দিকে তাকিয়ে ছিলেন।

    লোকটি ফিসফিসিয়ে বলল, “চাইয়া দেখেন কী স্যার? একটানে খাইয়া ফেলেন। দেখবেন দুঃখ তিষ্ণা সব নাই। আর কাইল থেকে আপনারে আমি নিজেই পৌছায়া দিমু তবারক। কোন চিন্তা রাখবেন না।”

    জয়ন্তবাবু লোকটির কথা মত বোতলের ছিপি খুলে ঢকঢক খেয়ে ফেলেছিলেন সে তরল। খেতে মন্দ নয়। খাওয়ার পরপরই যেন তার ফুরফুরে লাগতে শুরু করল। দুঃখ হতাশা দূরে থাক, এরপর কী হয়েছিল তার আর কিছুই মনে নেই। পরদিন সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখতে পান নিজের বিছানাতেই শুয়ে আছেন। অনেকদিন পর এমন ঘুম তিনি ঘুমালেন।

    এইদিনের পর থেকে ভূতের গল্প লেখার মত এই আরেকটা জিনিস তবারকও তার প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে উঠল। প্রকাশক, সম্পাদক ও নানা লেখকদের প্রত্যাখ্যান ও অপমানের সাথে সাথে। প্রতিদিন রাতে সেই অদ্ভুত লোকটি তার কাছে তবারক সরবরাহ করত।

    এভাবেই চলছিল জয়ন্তবাবুর। কিন্তু ধীরে ধীরে তার শরীর ভেঙে পড়তে শুরু করল। এটি অতিরিক্ত ভূতের গল্প লেখা, অতিরিক্ত প্রত্যাখানের অপমান না অদ্ভুত সেই তবারকের প্রতিক্রিয়ায় তা জয়ন্তবাবু কখনো জানতেও চাননি।

    এখন তিনি দাঁড়িয়ে আছেন প্রকাশক সালাম সাহেবের ডাইনিং রুমে। হাতে একটি ভাঙা কাচের বোতল। এটা কী করে তার হাতে এল, কেন তিনি এটা নিয়ে এসেছেন জয়ন্তবাবু কিছুই বুঝতে পারছেন না নিজেও।

    সালাম সাহেব বিখ্যাত “সম্মোহন” প্রকাশনীর মালিক ও প্রকাশক। ভূতের গল্প লেখা শুরু করার সময় থেকে কয়দিন পর পরই এই ভদ্রলোকের অফিসে এবং বাসায় এসেছেন জয়ন্তবাবু। অপমানিত হয়েছেন, পেয়েছেন তিরস্কার। তার চেয়ে বড় কথা হল এরা কেউই তার ভয়ের গল্পগুলি পড়ে একটুও ভয় পায়নি।

    ডাইনিং রুমে বড় টেবিলটার পাশে একটা ফ্রিজ, তার পাশে আলমারি। হাতে ভাঙা বোতল হাতে জয়ন্তবাবু এর পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। তার মনে হচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রকাশক সালাম সাহেব তার বেডরুমের দরজা খুলে এই টেবিলের পাশে আসবেন পানি খেতে। টেবিলে পানির জগ এবং কাচের গ্লাসগুলি রাখা আছে।

    একটু আগে অবশ্য জয়ন্তবাবু সালাম সাহেবের বেডরুমে গিয়ে উঁকি মেরেছিলেন। সেখানে সালাম সাহেব ও তার স্ত্রী ছিলেন। তারা যে বিশেষ কর্মের শেষদিকে ছিলেন তা ভাবতেই জয়ন্তবাবুর মুখে হাসি ফুটে উঠল। আবার একটু অপরাধবোধও হল তার। অন্যদের এমন কাজ উঁকি মেরে দেখা কোন ভদ্রলোকের কাজ না। তাই তিনি সরে এসে এখানে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন।

    জয়ন্তবাবু যা ধারণা করেছিলেন তা ঠিকই। অল্প সময় পরে দেখা গেল হেলেদুলে আসছেন সালাম সাহেব। তিনি এসে টেবিলের পাশে দাঁড়ালেন। জগ থেকে পানি ঢাললেন গ্লাসে। গ্লাস হাতে নিলেন মুখে দেবার জন্য। তখনো তিনি জয়ন্তবাবুকে দেখেননি।

    গ্লাস তিনি যখন মুখে লাগিয়েছেন তখন তার চোখ গেল জয়ন্তবাবুর দিকে। তার সাথে সাথেই জয়ন্তবাবু বলে উঠলেন, “নতুন একটি ভূতের গল্প লিখেছি সালাম সাহেব। এটা পড়ে দেখুন দয়া করে। ভয় পাবেন।”

    সালাম সাহেবের হাত থেকে পানিভর্তি গ্লাস পড়ে গেল। তার এক ভয়ানক আর্তচিৎকারে কেঁপে উঠল পুরো বাড়ি। তিনি পালাতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। “ভূত! ভূত! ভূত!” বলতে বলতে তার মুখ দিয়ে ফেনা বেরোতে লাগল ভয়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে জয়ন্তবাবু দৌড়ে পালালেন। তার ভূতের গল্প না পড়েই প্রকাশকের এই অবস্থা হবে তিনি কস্মিনকালেও ভাবেননি।

    তিনি পাঁচিল টপকে মূল রাস্তায় এসে দৌড়াচ্ছেন আর হাঁপাচ্ছেন যখন, তখন এক পর্যায়ে তার হাতের দিকে চোখ গেল। দেখলেন ভাঙা বোতলটি এখনো তার হাতে। একচোট দৌড়ে বিশ্রামের জন্য দাঁড়িয়ে বোতলটি ছুঁড়ে ফেলে দিলেন তিনি।

    রাস্তার পাশে ফুটপাতে অনেক মানুষ শুয়ে থাকে। তাদের কোন ঘরবাড়ি থাকে না। এরকম একটা লোক শুয়ে ছিল চাদরে নিজেকে আপাদমস্তক ঢেকে। তার পায়ের কাছে গিয়ে পড়ল ভাঙা বোতলটি।

    জয়ন্তবাবু দেখলেন লোকটি উঠে বসেছে। ভাঙা বোতলটি হাতে নিয়ে সে চারিদিকে তাকিয়ে জয়ন্তবাবুকে দেখতে পেল। চোখে চোখ পড়ায় জয়ন্তবাবু লোকটিকে চিনতে পারলেন। সেই তবারকওয়ালা।

    কোন কারণ ছাড়াই তিনি লোকটির কাছে এগিয়ে গেলেন। যেন এক অদৃশ্য আকর্ষণ কাজ করছিল, এবং সেই আকর্ষণ তাকে টেনে নিয়ে গেল লোকটির কাছে।

    লোকটি হেসে বলল, “স্যার, আইজও দৌড়াইছেন নাকি? তেষ্টা পাইছে মনে লয়? দিমু নাকি তবারক?”

    জয়ন্তবাবু বললেন, “দাও।”

    লোকটি এক বোতল তবারক বের করে দিল। জয়ন্তবাবু এর ছিপি খুলে কয়েক ঢোক গলায় ঢাললেন। এই তরল যেন সব ভুলিয়ে দেয়। অনেকদূরের স্মৃতি জয়ন্তবাবুর মনে আছে কিন্তু এখন তিনি কী করছেন, কোথায় থাকেন, কালই বা কী করেছেন কিছুই তার মনে নেই। এই তরল যেন সব শুষে নেয়। সব জরাজীর্ণতা, সব দুঃখ বেদনা।

    কয়েক ঢোক গিলে জয়ন্তবাবু অপরাধী কন্ঠে লোকটিকে বললেন, “তোমার তবারকের দাম দিতে পারছি না। স্যরি। আমার ইদানীং কী হয়েছে জানি না। কিছুই মনে থাকে না। আজ হাত দিয়ে দেখি পকেট নেই।”

    লোকটি হেসে বলল, “দরকার নাই স্যার। আপনার জন্য শাবানুর মাজার থেকে স্পেশাল তবারক আসে। ফ্রী। আমাদের রেগুলার কাস্টমারেরা এই পর্যায়ে চলে আসলে মাজার থেকে ফ্রী মাল আসে তাদের জন্য। আমার কাজ ডেলি তাদের কাছে মাল সাপ্লাই দেয়া।”

    জয়ন্তবাবু লোকটির কথা পুরোপুরি বুঝলেন না। তিনি উঠে পড়লেন। লোকটি আবার নিজেকে আপাদমস্তক চাদরে ঢেকে শুয়ে পড়ল।

    বোতলের কালো তরল বস্তু গলায় ঢালতে ঢালতে জয়ন্তবাবু হাঁটতে লাগলেন শহরের রাস্তায়। একা তিনি, তাকে ঘিরে ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলি থেকে ছুটে আসা মন খারাপ করা আলো। উপরে বৃদ্ধ পিতার দুখী দুখী মলিন মুখের মত আকাশ। রাস্তার দু’পাশে নিশ্চুপ নানা ধরনের ও বয়েসের গাছ। জয়ন্তবাবু হেঁটে যাচ্ছেন। তার গায়ে কোন কাপড় নেই। হাতে কাচের বোতল, তাতে অদ্ভুত এক তরল।

    (পরবাস-৬৬, মার্চ ২০১৭)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৮ জুন ২০১৭ | ১৬৮২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    হেলেন - Muradul islam
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • i | 134.169.137.38 (*) | ০৮ জুন ২০১৭ ০১:০৫60364
  • অসম্ভব ভালো।
  • Du | 182.58.110.226 (*) | ০৮ জুন ২০১৭ ০৫:৫৯60365
  • ঊরেব্বাবা
  • | 116.193.154.58 (*) | ০৯ জুন ২০১৭ ০২:২২60366
  • :-)
    বেশ বেশ
  • শঙ্খ | 113.242.197.164 (*) | ০৯ জুন ২০১৭ ০৪:৫০60367
  • বাহ, এইটা ভালো লাগল। কিছুটা কুটু মিয়াঁর ছোঁয়া আছে, কিন্তু অল্প পরিসরে ব্যাপারটা ভালো ফুটেছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন