এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • নির্বাচন তামসা...

    Muhammad Sadequzzaman Sharif লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৪ নভেম্বর ২০১৮ | ২২৭৮ বার পঠিত
  • বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। এবার হচ্ছে একাদশ তম জাতীয় নির্বাচন। আমি ভোট দিচ্ছি নবম জাতীয় নির্বাচন থেকে। জাতীয় নির্বাচন ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেখার সুযোগ পেয়েছি বেশ কয়েকবার। আমার দেখা নির্বাচন গুলোর মাঝে সবচেয়ে মজার নির্বাচন দেখতে পেয়েছি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। গ্রামের মানুষ তাদের প্রতিনিধি বাছাই করতে গিয়ে যা করে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কষ্টকর। চা আর বিড়ি ফ্রি চলে পুরো প্রচারণার সময় জুড়ে। চায়ের রহস্য যখন ভেদ করলাম তখন আমার চোখ কপাল পার হয়ে যায় প্রায়। সারা দিন এত এত কাপ চা খাওয়াতে হয়, একজন মেম্বার পদপ্রার্থীর জন্য খরচ কুলানো বেশ মুশকিল। প্রার্থীরা এক অদ্ভুত উপায় খুঁজে বের করেছে এই সমস্যা সমাধানে। ধানের খড় পানিতে গরম করছে, লাল হয়ে যাচ্ছে পানি, সেই পানি গুড় দিয়ে সবাই কে খাওয়াচ্ছে!! কারো দেখার সময় নাই, লাল মিষ্টি গরম পানি কাপে করে আসছে, পান করছে, ছুটছে আবার ক্যানভাসে। বিশ্বাস করা কঠিন, নিজের চোখে না দেখলে আমিও হয়ত কোন দিন বিশ্বাস করতাম না।কিন্তু ঘটনা সত্য।

    এদিক দিয়ে শহরের ভোট বা নির্বাচন অনেক ভদ্র চেহারার। অন্তত খড় জ্বাল দেওয়া পানি খাওয়ায় না। হুট কর কিছু অলস, আকামা লোকজন যখন প্রচুর ব্যস্ত হয়ে পরে শহরে, বুঝা যায় যে নির্বাচন এসে গেছে। প্রচুর মোটরসাইকেলের মহড়া দেখা যায়। মিছিলে মিছিলে একাকার। মিছিলের স্লোগানে বৈচিত্র্য মিছিলের প্রাণ হয় উঠে। দুই একটা উদাহরণ দেওয়ার আগে বিএনপির এক মিছিলের কথা বলি। বিশাল বড় মিছিল চলছে, সমস্যা হচ্ছে বিএনপির মার্কা ধানের শিষ বলে মিছিলের লোকজন আমার পাচ্ছে না। উপজেলা শহরের মানুষ, ধানের শিষ কয়জন বলে? ধানের শিষ দিয়ে শুরু হলেও কিছুক্ষণ পরে পরিবর্তন হয়ে শোনা যেতে থাকল, হিছা….হিছা..!! হিছা হচ্ছে আঞ্চলিক ভাষায় ধানের শিষ। তাই তারা নিজেদের সুবিধা মত হিছা দিয়ে মিছিল করে যাচ্ছিল। সবার হাতে ধানের শিষ আর মুখে হিছা!!
    আঞ্চলিক ভাষায় স্লোগান শুনে থ মেরে গেছিলাম চট্টগ্রামের ভাষার স্লোগান শুনে। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মাইক দিয়ে প্রচার চালানোর সময় শোনা যায় - ‘নদীর ফানি ঘরত আসে/হান্ডি-ফাতিল ফানিত ভাসে/এই ফানি আর নঅ চাই/হাতি মার্কায় ভোট চাই’। আরেকটা - ‘ভোট দিবা ভাই ফাল মারি/ মার্কা আঁরার আলমারি’।
    অমুক ভাই কিন্তু গরিবের বন্ধু, মা বোন কে বলে যাই, অমুক মার্কায় ভোট চাই কিংবা দিকে দিকে একি শুনি, অমুক ভাইয়ের জয়ধ্বনি এই ধরনের স্লোগান খুব কমন কিন্তু বেশ জোস আসে শ্লোগানে। মিছিলের ছন্দে একজন একটা শব্দ বা বাক্য বলে বাকিরা বাকিটুকু বলে। যেমন - ‘যাবে এবার’, ‘গেছে এবার’ এগুলা একজন বলবে বাকিরা বলবে তার মার্কার নাম।

    নির্বাচনের আরেক মজা হচ্ছে প্রার্থী। নির্বাচন আসলে কিছু মানুষের মাথায় শর্টসার্কিট হয়ে যায়। বারবার নির্বাচনে হেরে আবার দাঁড়ানোর জন্য কোথা থেকে জানি অদম্য মনোবল এসে যায় এদের। জমি বেচে, ধারদেনা করে নির্বাচন করে এবং জামানতের টাকা হারায় এবং পরের বার আবার হাসি মুখে ভোট চাইতে এসে পরে। কিভাবে পারে আল্লাই জানে। তিন ভোট পেয়ে প্রার্থী বাড়ি ফেরার পর এসে দেখে স্ত্রী ঝাঁটা হাতে দণ্ডায়মান, তিন নাম্বার ভোটটা কে দিল তার সঠিক উত্তর আশা করছেন তিনি প্রার্থীর কাছে! এই কৌতুক তো আর এমনে এমনেই তৈরি হয়নি!

    ভোটের দিনের মজা সম্ভবত সব কিছু ছাপিয়ে যায়। মজা মানে থ্রিল, কি হয় কি হয় একটা ভাব। ৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে আমাদের স্কুলে কেন্দ্র ছিল ভোটের। তখন এত কড়াকড়ি ছিল না। আমার দিব্যি মনে আছে স্কুলের পিছন দিয়ে গিয়ে জানলা ধরে মানুষের গোপন ভোট দেওয়া দেখছিলাম। পরে কারো ধমক খেয়ে চলে আসি। পরবর্তীতে ভোটের দিনের উৎসব উৎসব ভাবকে অনেক বেশি উপভোগ করতাম। কিছু ভোট হওয়ার পর কোথা থেকে যেন খবর আসত, অমুক মার্কা এগিয়ে! তথ্যের কোন ভিত্তি নাই কিন্তু মানুষ খুব গম্ভীর ভাবে এই সব তথ্য কে মূল্যায়ন করত। এই হাস্যকর কারবার আবিষ্কার করার পর আমরা বন্ধুরা ইচ্ছামত খবর ছড়াতাম এবং বিমলানদ পেতাম। ভোটের দিনের একটা কৌতুক আর আরেকটা রিয়েল লাইফ ঘটনা বলে শেষ করি। প্রথমে কৌতুক -

    ভোটকেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুই ভোটার—সলিম আর জব্বার।
    সলিম: জব্বার, দোস্ত দেখ, তুই কলা মার্কায় ভোট দিবি। আর আমি মুরগি মার্কায়। দুজনের ভোট কাটাকাটি হইয়া গেল। কেউ আগাইল না, পিছাইলও না। তাইলে আমাগো ভোট দিয়া কী লাভ?
    জব্বার: ঠিকই তো কইলি। তাইলে আর লাইনে দাঁড়ায়া কী হইব? চল, যাইগা।
    দুজন লাইন থেকে বেরিয়ে এল।
    পেছন থেকে এক বৃদ্ধ সলিমকে বললেন, ‘দুজন মিলে ভালোই তো চুক্তি করলা।’
    ‘হ চাচা, সকাল থেকে পাঁচজনের সঙ্গে এই চুক্তি করছি।’ সলিমের জবাব।

    এবার ২০০৮ সালের পত্রিকার স্ক্রিনশট দিলাম। আমারদের সময় পত্রিকাকে সিরিয়াসলি না নিলেও চলে, তবে মজা নিতে দোষ কী?


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৪ নভেম্বর ২০১৮ | ২২৭৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 230123.142.01900.43 (*) | ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০৫63038
  • ফ‍্যানটাস্টিক।
  • b | 562312.20.2389.164 (*) | ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৫63039
  • এগুলো কি মিউনিসিপ্যাল/পঞ্চায়েত নির্বাচন? তা'লে আমরো দুটো গল্প আছে। প্রথমটা দেখা, দ্বিতীয়টি শোনা।
    আশির দশকের শেষাশেষি, একজন প্রার্থীকে কংগ্রেস টিকিট দেয় নি। যথারীতি সে গোঁজ হয়ে দাঁড়ায় । এবার তাকে সাপোর্ট করে বিজেপি। তখন সে নিজেকে বিজেপি-সমর্থিত-নির্দল-কংগ্রেস এরকম একটা রাজনৈতিক স্থানাংক দেয়।
    দ্বিতীয়টা সাদেকের অনুরূপ, তবে উল্টো কেস। এক নির্দল প্রার্থী মোট ৫ টা ভোট পায়। এদিকে তার ঘর থেকে ভোট পড়েছে ৬ টা। কে এমন ঘরশত্রু বিভীষণ, সেই ইস্যুতে রোজ বাড়িতে ঝগড়া লাগতো।
  • Tim | 89900.228.90056.67 (*) | ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:৩৬63040
  • পড়লাম। হেব্বি মজার ঃ-)
  • de | 90056.185.673423.54 (*) | ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:০৯63041
  • :)))))))
  • দীপেন ভট্টাচার্য | 237812.118.0123.115 (*) | ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ১০:১২63042
  • বাহ, বেশ লাগল!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন