এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কূটকচালি

  • টোরাণ্টোর রঙ্গ বোঙ্গো - প্রথম কিস্তি

    সুমিত রায় লেখকের গ্রাহক হোন
    কূটকচালি | ১৭ জুলাই ২০১৩ | ২৪৩৭ বার পঠিত
  • জুলাই ৫, ৬, ৭ ক্যানাডার টোরাণ্টো শহরে এ বছরের বঙ্গ সম্মেলন হোলো, আমাদের ছেলেমেয়েরা যাকে বলে বোঙ্গো, চলিত ভাষায় 33rd North American Bengali Conference(NABC) কুট্টি গাড়োয়ানের মতে ইংরেজীতে "তেত্রিশতম উত্তর আমেরিকা বঙ্গ সম্মেলন"। পাঁচ-দশ হাজার লোক নিয়ে এক বিরাট ব্যাপার, টোরাণ্টোর "প্রবাসী বেঙ্গলি কালচারাল এ্যাসোসিয়েশনের" সভ্যরা তাঁদের বন্ধুবর্গের সঙ্গে মিলে এই সম্মেলনটি নামিয়েছেন, খুবই প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা। আমি মাঝে মাঝে "বোঙ্গো"তে গিয়ে থাকি, এবারেও এসেছি এবং ভারী মজা পেয়েছি। "যে কে মোরে দিয়েছ সুখ দিয়েছ তাঁরি পরিচয়", সেকারণে "সবারে আমি নমি", উদ্যোক্তাগোষ্ঠী এবং শিল্পীরা তো বটেই। সেই সম্মেলনের কিছু খণ্ডচিত্র দেওয়া গেলো।

    যাঁরা এই NABC বা উত্তর আমেরিকার বঙ্গ সম্মেলনের ব্যাপারটা জানেন না, তাঁদের জন্য ছোটো করে বলি: সেই আদিকালে যখন আমরা ট্যাঁকে দশ ডলার, বুকের একটি বোম্বাই এক্স্‌রে আর পকেটে কলেজের প্রবেশপত্র নিয়ে এদেশে আসতাম তখন আমরা শীতে হীহী করে কাঁপতে কাঁপতে ছবি টাঙিয়ে সরস্বতী পুজো দিয়ে শুরু করেছিলাম। তারপর সত্তরের দশকে অভিবাসন আইনের এক ধাক্কায় অনেক বেনো জল ঢুকে গেলো, সেই থেকে আর থামাথামি নেই। দুর্গাপুজো, আমরাই রাঁধি, আমরাই খাই, মাংসাশীদের জন্য কালীপুজো, তা থেকে কালীবাড়ী, সৌখীন মন্দির, সেখানে বাস্তু আর গাড়ী থেকে রটন্তী কালী -- সব রকমের পুজো পাওয়া যায়। এর মধ্যে আবার পেশাদার মন্দিরওয়ালারাও এসে গেছেন, যথা আদ্যাপীঠ, ভারত সেবাশ্রম ইত্যাদি। এদিকে কিছু বিজ্ঞ লোক দেখলেন পুজোআচ্চা হচ্ছে, সে তো ভালোই, কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি যে গোল্লায় যাচ্ছে। আমরা ঝটিতি বানালাম বঙ্গ সংস্কৃতি সঙ্ঘ। তাঁরাই একদিন, বেশ কিছুদিন আগে, তা প্রায় বছর পঁয়ত্রিশ হতে চললো, প্রথম এক উত্তর আমেরিকা বঙ্গ সম্মেলন করলেন। শদুই সুধীজন এসেছিলেন বোধহয়, সেই সাফল্যে উদ্বেল হয়ে সঙ্ঘ প্রতিশ্রুত হলেন যে বছর বছর আবার একে ফিরিয়ে আনা হবে, গ্যারাজে রাখা দুর্গাপ্রতিমার মতো ধুলোটুলো ঝেড়ে। তা সেই প্রতিশ্রুতি এঁরা রেখেছেন, কোনো বছর ফাঁক পড়েছে বলে মনে পড়ে না। ব্যাপারটা এই রকম-- প্রতি বছর উত্তর আমেরিকার একটা বড়ো শহরের বাঙালীদের কোনো ক্লাব চৌঠা জুলাইয়ের (বা তার কাছাকাছি) ছুটিতে সম্মেলন করেন, টাকা তোলা, খরচ করা, সম্মেলন চালানো এবং অচল করার সব ঝক্কি তাঁদের। বঙ্গ সংস্কৃতি সঙ্ঘের প্রথম কাজ বছর বছর খুঁজে পেতে, ভালো করে যাচিয়ে বাজিয়ে যথাস্থানে এই বংশটি ন্যস্ত করা, তারপর স্থানীয় কর্মকর্তাদের উপদেশ দেওয়া এবং আসল কাজের কালে যথারীতি গণ্ডগোলের সময় উইংসে দাঁড়িয়ে মজা দেখা। সেই শদুই সম্মিলিত এখন গোকুলে বেড়ে পাঁচ থেকে পনেরো হাজারে দাঁড়িয়েছে, খরচের অঙ্কের কখনোই সঠিক সন্ধান পাওয়া যায় না, এক-দু মিলিয়ন ডলারের কথা শোনা যায়। তবে এসব সংখ্যা একটু নুন দিয়ে খেতে হয়, আমাদের ভারতবাসীদের একটু বাড়িয়ে বলার স্বভাব সে তো সবাই জানেন, না জানলে মহাভারত খুলে দেখুন। টাকার খামতি পড়ার কথা বরাবরই শুনি, কিন্তু আমার অভিজ্ঞতায় দ্বিতীয়বার উপুড়হস্ত হতে হয়েছে একবারই, তার থেকে আন্দাজ করা যায় যে লোকসানের কথাটা হয় নিছক গাঁজা অথবা উদ্যোক্তারা নিজেরাই কিল হজম করে ফেলেন।

    রজত বসু হলেন এক বহুদর্শী সদানন্দ ফিজিসিস্ট, বঙ্গ সম্মেলনের পোকা, মঙ্গল গ্রহের সম্মেলনটিতে যাবার দিন গুণছেন। রজত বললেন এই সম্মেলনের আর্থিক দিকটাও একটু তলিয়ে দেখা দরকার। মাত্র একশো ষাট ডলারে একটি দম্পতীর তিনদিন ধরে এতো ফূর্তির দাঁও আর কোথায় পাবেন। ব্রডওয়ের দিকে তাকাবার দরকার নেই, তারা দিনে ডাকাতি করে, কিন্তু একটা মুভি দেখতেই দুজনের খরচা গড়ে ষোলো ডলার, অর্থাত্ এই টাকাতে গুটি দশেক মাত্র মুভি দেখতে পারবেন, তা ধরুন বিশ ঘণ্টার কাছাকাছি। এদিকে সম্মেলনে দেখুন তিনদিনে চৌত্রিশ ঘণ্টার প্রোগ্রাম। দুটো মঞ্চ, তাই দুই দিয়ে গুণ করুন, আটষট্টি ঘণ্টা-- টানা তিনদিনের নিরন্ধ্র ধামাকা। তা এ তো মাত্র নাচগানের কথা, যাকে বলে পারফর্মিং আর্টস্, এর সঙ্গে যোগ দিন সাহিত্য সভা, বিজনেস সেমিনার, রিইউনিয়ন, ফিলিম ফেস্টিভাল, হেল্‌থ্ সেমিনার এমনকী গেঁড়ি গুগলিদের জন্য ইউথ সেমিনার বা ওই ধরণের কিছু। সিঙাড়া আর মাছের ঝোল খাবার ব্যবস্থা আছে আর চূড়োর ওপর ময়ূরপাখা, ঢালাও শপিঙের ব্যবস্থা। সেখানে গিন্নিরা শাড়ী-গয়না পাবেন আর কর্তারা নিভৃত অবকাশের জন্য পাবেন পাওলি দামের ডিভিডি। আর কী চাই। যদি ভেবে থাকেন প্রোগ্রামে কেবল ডি ক্লাস আর্টিস্ট এনে আর "লোকাল ভোকাল" শুনিয়ে ঠকাবে, তাহলে ছাপা প্রোগ্রামটা আরেকবার খুলে দেখবেন। শ্রেয়া ঘোষাল, লোপামুদ্রা মিত্র, মনোময় ভট্টাচার্য, কৌশিকী চক্রবর্তী, মেঘনাদ ভট্টাচার্য, তনুশ্রীশঙ্কর, ইত্যাদি ইত্যাদি-- তারকাখচিত বলে খচিত! ভদ্রলোক ফিজিক্স বেচে খান, তাঁর তথ্যে আর যুক্তিতে কি ভুল পাওয়া যেতে পারে? তবে হ্যাঁ, এর সঙ্গে ওই ফিজিক্সেরই আর এক আইন মনে রাখতে হবে-- সেটি হোলো প্রতি রূপোলী পাড়ের পেছনে কিন্তু কিছু কালো মেঘ থাকবেই থাকবে। এইটা যাঁরা ভুলে যান তাঁদের ব্লগ লিখে হাহুতাশ করা ছাড়া আর গতি থাকেনা। ফেসব্বুকে NABC 2013 পাতাটি খুলে দেখে নিতে পারেন।

    সুরলোকে তরজার মতো হাটে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত একেবারেই বেমানান। এইটা খেয়ালে না রেখে কৌশিকী চক্রবর্তীর গান শুনতে প্রেক্ষাগৃহেঢুকে পড়েছিলাম। সেখানে ধুন্ধুমার ব্যাপার। ধরুন হাজার দুয়েক উপস্থিতদের মধ্যে কম করে সাতশোটি বিভিন্ন কিন্তু অত্যন্ত জরুরী বিষয় নিয়ে তর্ক এবং আলোচনা চলেছে। শব্দব্রহ্ম! কৌশিকী বয়সে তরুণী কিন্তু শাস্ত্রীয় গান গাইবার অভিজ্ঞতা আছে, তিনি মিষ্টি হেসে মধুর কথাবার্তা বলে দর্শকদের সঙ্গে হৃদ্যতা স্থাপনের চেষ্টা করলেন, "ভালো লাগলে হাততালি দেবেন, হাততালি আমার ভালো লাগে" বলে শ্রোতাদের জড়িয়ে আনতে চাইলেন, কিন্তু কা কস্য পরিবেদনা। তারপর নরম করে সন্ধ্যার নরম যোগ রাগ ধরলেন, শৃঙ্গাররস, আলাপের পরেও যখন জনকল্লোলে রাগিণীর খাবি খাওয়া বন্ধ হোলো না তখন বিস্তার-টিস্তার মাথয় তুলে রাগ শেষ করে ধরলেন বেগম আখতারের প্রবাদপ্রতিম গান -- "পিয়া ভোল অভিমান"। প্রেক্ষাগৃহের পিয়াদের বয়ে গেছে তাতে, তাঁরা যত্‍‌পরোনাস্তি গোলমাল করে যেতে লাগলেন। শেষে যখন বড়ে গোলামের বন্দিশ সেবন করিয়েও কাজ হোলো না তখন পরাস্ত কৌশিকী মিষ্টি হেসে বিদায় নিলেন। অথচ আরেকটি মঞ্চ ছিলো, প্রোগ্রামের একটু রদবদল হলেই কৌশিকীর শ্রোতারা সেখানে শান্তিতে গান শুনতে পারতেন, আর এখানেও আম জনতার গোলমাল করাতে কেউ বাধা দিতো না। তবে একশো ষাট টাকা দিলে ওই হাটুরে প্রোগ্রামই দেখতে হবে, এটি হোলো ওই রূপোলী পাড়সংলগ্ন আরেকটি কালো মেঘ। আমাদের ছোটোবেলায় টালিগঞ্জ ব্রিজ থেকে নেমে আদি গঙ্গার পাশের এক ছবিঘরের কথা মনে পড়লো, সেখানে দশ পয়সায় চলচ্চিত্র দেখা যেতো। অবশ্য সেসব ছবির নায়িকা হতেন ফিয়ারলেস নাদিয়া। সেখানে আবার জোয়ারের সময় মেজেতে জল আসতো, চেয়ারে পা তুলে বসতে হোতো দুয়েকটি ইঁদুর কোলে নিয়ে। দশ পয়সায় আর কী চান? এইরকম ব্যাপার আর কী। প্রসঙ্গত, কৌশিকীর পরিচয়লিপিতে (এবং স্টেজের পরিচিতি) পিতা অজয় চক্রবর্তীর নাম দেখা গেলো না। তার যাই কারণ থাকুক, ব্যাপারটা দুঃখের।

    বিক্কলেজের রিউনিয়ন ছিলো সকাল এগারোটায়। জ্যোতিদা সঞ্চালক, ইমেলের বন্যা বইয়ে প্রিরেজিস্ট্রেশন করিয়ে রেখেছেন। এগারোটা বেজে এক মিনিটে পৌঁছে দেখি প্রচুর লোক, সইসাবুদ কমপ্লিট, নিমকি-সিঙাড়ার সদ্‌গতি হচ্ছে। পরিবেশন করছেন বিক্কলেজ-গিন্নিরা, অনেকদিন পর্যন্ত তাঁদের অনরারি প্রাক্তনী করে নেওয়া হোতো। সাড়ে এগারোটায় গলাখাঁকারি দিয়ে সভা শুরু, পাওয়ারপয়েণ্ট স্লাইড আর নানান তথ্যে ছয়লাপ। ঠিক সাড়ে বারোটায় জ্যোতিদা বক্তার হাত থেকে মাইক কেড়ে নিলেন, তারপর বক্স লাঞ্চ, তার জন্য আগেই দশ টাকা দিতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে পড়লো। ছাপান্ন সালে সবে কলেজে ঢুকেছি, সেন্টিনারীর চাঁদা তুলতে পাঠানো হয়েছে প্রাক্তন ছাত্রের বাড়ীতে। আটটাকায় ভোজের ব্যবস্থা, দাদা বললেন, বলি আটটাকা তো নিচ্ছ, বতল-ফতল চলব্যা। তখনও চলেনি, এখনও চললো না। বাক্স খুলে পেলাম রাধাবল্লভী, দুটি চপ, আলুর দম, বাটিতে ছোলার ডাল, তাতে নারকেল কুচি উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে এবং অমরাবতীভোগ্য ক্ষীরকদম্ব আর দরবেশ। ক্ষণিক হলেও স্বর্গবাস তো বটেই, জ্যোতিদা শতজীবী হোন। ভালো কথা, এর মধ্যেই ব্যাচ ব্যাচ করে ছবি তোলা হচ্ছে, তাদের ক্যাপশন যাতে ঠিক ঠিক পড়ে তার এক অভিনব ব্যবস্থাও আছে। সব একেবারে তেলানো মেশিনের মতো।

    প্রেসিডেন্সি কলেজের রিইউনিয়ন বেলা একটায়, হাঁপাতে হাঁপাতে পৌঁছে দেখি চারিদিক সুন্‌সান, কেবল এক মহিলা প্রোষিত্ভর্তৃকার মতো শুকনো মুখে বসে আছেন আর ল্যাপটপে এক পুরনো স্লাইড শো ঘুরেই চলেছে। তিনি সঞ্চালিকা। দশ মিনিট পরে গলা খাঁকারি দিয়ে সাড়া পাওয়া গেলো: এই তো সবে দশ মিনিট হয়েছে, অতো ব্যস্ত হচ্ছেন কেন। ডেড্ডা-ফেড্ডা নাগাদ সব এসে যাবে। প্রেসিডেন্সির রিইউনিয়নে আমি নেহাত্ই চণ্ডাল, আইএস্সি পাস করেছি মাত্র, কিন্তু আমার জীবনে এই কলেজের প্রভাব বিশাল। প্রায় ছয় যুগ আগে ভবানীপুরের অতি ঘরোয়া বাঙালী মিত্র ইস্কুল থেকে প্রেসিডেন্সিতে এসে দাঁত খুলে যাবার উপক্রম। সেই বিশ্ববিখ্যাত সিঁড়ি আছে, সেখানে আজও সুভাষচন্দ্রের জুতোর ভূত ঘুরে বেড়ায়, ধুরন্ধর সব প্রফেসাররাও আছেন তো বটেই, কিন্তু এখানেই সিগারেট খেতে শিখেছি, শিখেছি কান-লাল-করা বহু বাংলা চারঅক্ষরী, প্রক্সি দেওয়া-নেওয়ার ব্যবসা, আর থার্ড ইয়ার ও তার ওপরের কলহংসীদের সতৃষ্ণ নয়নে দেখে একলাফে কৈশোর থেকে যৌবনে পৌঁছে গেছি। একসময়ে দেখি ছোট্টো ঘর মোটামুটি ভরে গেছে। সবাই উঠে তাঁদের কাহিনী বললেন, বললেন ডাকসাইটে সব মাস্টারমশায়দের কথা। আমি বললাম যে আমাদের কালে প্রতি ইয়ারে একটি করে মক্ষীরানী থাকতেন, তাঁরা এলেই কলেজ আলো হয়ে যেতো। লিখিত কিছু ছিলো না, হোতো না কোনো কলেজরানী প্রতিযোগিতা, কিন্তু সবার অজ্ঞাতেই তাঁরা একদিন বৃতা হয়ে যেতেন আর সারা কলেজ হাঁ করে তাঁদের পথ চেয়ে থাকতো, সুনীল গাঙুলীর নীরার জন্য যেমন অবস্থা হোতো কোলকাতা শহরের। ফোর্থ ইয়ারে ছিলেন প্রার্থনাদি, প্রার্থনা বোস, থার্ড ইয়ারে দীপ্তি ব্যানার্জি, আমরা তাঁকে জানতাম টুসটুসি বলে। আমার কালের সেকেণ্ড ইয়ার পরে এই মক্ষীরানী পুলে দান করেছিলো কমলা নায়ার আর আমরা দিয়েছিলাম সান্ত্বনা পাল। গায়ত্রী চক্রবর্তী ছিলেন কাছাকাছিই। তাঁরা এতোদিনে নিশ্চয় ঠাম্মা-দিম্মা হয়ে কারো না কারো ঘর আলো করে আছেন, আমি চোখ বুজলেই সেই চারুহাসিনীদের দেখতে পাই। এ শুনে রিইউনিয়নে কিছু চোখ বাষ্পাচ্ছন্ন হোলো, সে আমি নিজে চোখে দেখলাম। তারপর গান হোলো, অমিয়দা তো গাইলেনই, খালি গলায় চম্পা চমত্‍‌কার এক রবীন্দ্র-টপ্পা গাইলো, তারপর সামান্য নোটিসে বিশাখা কোমরে আঁচল গুঁজে ওই ছোট্টো ঘরে চমত্‍‌কার নাচ দেখালেন। তারপর মিটিং শেষ। ছবি তোলা নেই, চাও নেই।

    আমি বিষণ্ণ হয়ে ফিরলাম, সারাজীবন ভুল পথেই চলার কথা ভেবে। এই যে চার বচ্ছর ঘাড়ে টিস্কোয়যার বয়ে, মেসের অখাদ্য খেয়ে, ছারপোকাদের রক্তদান করে ইঞ্জিনিয়ার হলাম তার বদলে কি পেলাম। শৃঙ্খলা মানা মিটিং, দুটো রাধাবল্লভী আর সিমেণ্টে একটু ভেজাল দেবার ঘুষের দুটো পয়সা। আর প্রেসিডেন্সিওয়ালারা নাচলেন, গাইলেন, মন্ত্রী হলেন, আমলা হলেন, আমাদের মতো ইঞ্জিনিয়ারদের চরালেন, কোটি কোটি টাকা তছরুপ করলেন, তার কিছু ঘরেও এলো। ঠিক আছে পরের জন্মে দেখা যাবে, কিন্তু তখনও কি দেখা-না-দেখায় মেশা মক্ষীরানীরা কলেজের চত্বর আলো করে বেড়াবেন?

    প্রোগ্রামে 100 years of Gitanjali অনুষ্ঠানের খবর পেয়ে প্রেক্ষাগৃহের দিকে যাচ্ছি, এমন সময় ধাক্কা লেগে গেলো পোনুর সঙ্গে। পোনু আবার কে জিজ্ঞাসা করবেন না, এখানে পোনুকে না চিনলেও চলবে। দেখি ছোকরা অত্যন্ত উত্তেজিত, সেটি রোজকার ব্যাপার, কিন্তু নাক ভয়ানক ভাবে কুঁচকে আছে। বললে, স্যার ওদিকে যাবেন না, ওদিক থেকে একটু পচা গন্ধ আসছে, একবালতি দুধে একফোঁটা গোচোনা পড়ার গন্ধ। পোনুর ওই স্বভাব, হেঁয়ালিতে কথা বলা। চেপে ধরাতে বললে গাইয়ে-বাজিয়ের দল একেবারে টপ ক্লাস, চোনাটি হলেন এই প্রোগ্রামের দুই ভাষ্যকারের একজন, ন্যারেটর যাকে বলে। এই ভদ্রলোককে দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে জড়িয়ে প্রোগ্রাম করানো আর শেয়াল দিয়ে মুর্গীর খাঁচা পাহারা দেওয়ানো-- ও একই ব্যাপার। আর একটু ঝেড়ে কাশো। এই ইনি হলেন পশ্চিম বঙ্গের একজন খ্যাতিমান লেখক,নাম করলে লোকে এক ডাকে চিনবে, বটতলার আশে পাশে ঘোরাফেরা করেন। সম্প্রতি পথ ভুলে সরাসরি বটতলায় ঢুকে এক.নায়ক আবিষ্কার করেছেন, নাম রবীন্দ্রনাথ, তাঁর তো কীর্তির আর অন্ত নেই, এবং সে কারণে এই লেখকের অপ্রকাশিত চটিতে লাগাবার পক্ষে আদর্শ। গল্পের নায়কের সঙ্গে এই রবিবাবুর চরিত্র একেবারে খাপে খাপে মিশে যায়, শুধু খ্যাঁদা-পেঁচী নামগুলি বদলে দেওয়া -- রবীন্দ্রনাথ, কাদম্বরী, রাণু, ... সব ভালো ভালো নাম। আমাদের লেখক অবশ্যই তাই করেছেন, এরকম দাঁও কি ছাড়া যায়। যদিও পরিষ্কার করে লিখে দিয়েছেন যে এই যে সুইসাইড নোট তা গল্পের নায়িকা কাদম্বরী দেবী সত্যি সত্যি লিখে যাননি, তবে যদি লিখতেন তাহলে এমনটি লিখতে পারতেন, কিন্তু বাঙালী পাঠক তা শুনবে কেন। তারা বড়ো ঘরের কেচ্ছার খবর পেয়েছে, তারা কাছা খুলে সেই সব বই কিনছে আর ইনি লাল হয়ে যাচ্ছেন। আমি বললাম, তা উনি তো আর সেই চটি থেকে কিছু পাঠ করে শোনাচ্ছেন না, তাহলে পালাচ্ছো কেন। বললে, না স্যার ইনি যে গীতাঞ্জলির সূত্র ধরে রবীন্দ্রনাথের অর্শের গল্প শোনাবেন না তার গ্যারাণ্টি দিতে পারবেন, য়যাঁ? পারবো না জানি, তাই পোনুকে বাংলাদেশী সিঙাড়া আর চা খাওয়াতে নিয়ে যেতে হোলো, প্রোগ্রাম আর দেখা হোলোনা।

    পোনুকে যাঁরা চেনেন তাঁরা জানবেন যে তার কথা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয় তাই আমাদের এই বটতলার লেখকই সেদিন স্টেজে রবীন্দ্রনাথের দাড়ি কামিয়ে দিচ্ছিলেন কিনা জানার জন্য (কোনো কাগজে ন্যারেটরের নাম পেলাম না) সম্মেলনের মাঝারি মাপের এক কর্তাকে ফোন করলাম। করে পোনুর কথার যাথার্থ্য সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হওয়া গেলো, কিন্তু অকারণে ভীষণ তিরস্কৃত হয়ে গেলাম। এ ভদ্রলোক নাছোড়বান্দা, কেন আমি এ খবর চাই সেটা তাঁকে জানাতেই হবে। শেয়ালের গল্পটা বলাম, ভীষণ রেগে গেলেন। প্রথমে বললেন শোটা তো চমত্‍‌কার হয়েছে, শতকরা নিরানব্বই ভাগ দর্শকের তাই মত । এই স্ট্যাটিস্‌টিক্‌স্ কোথায় পেলেন সেটা জানতে চাইলে আরো রেগে গেলেন, বললেন ওঁর কাছে যদি একশো জন এসে এই শোয়ের কথা বলেন তার মধ্যে নিরানব্বই জনই শোয়ের সাধুবাদ দেবেন এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম যে আমাকে এতো বকছেন কেন, আমি তো শো খারাপ হয়েছে তা বলিনি। তখন বললেন যে আমি এই লেখক সম্বন্ধে ভালো ধারণা পোষণ করি না, এটা ভালো নয়। যদিও আমি তাও বলিনি ওঁকে, কিন্তু এটা জানলাম যে মেজবাবু এই লেখকের সাহিত্যকৃতি নিয়ে খুব একটা ঘাঁটাঘাঁটি করেননি। এখন হোলো কী, মুর্গী খাওয়া শেয়ালের জাতধর্ম, সে কারণে তার ওপর রাগ করা সাজে না কিন্তু তাকে যাঁরা পাহারাদার নিযুক্ত করলেন তাঁদের একটু দায়বোধ থাকা উচিত ছিলো। সস্তায় টিকিট কেটে কিছু বাসি তেলেভাজা খাওয়াটা মেনে নেওয়া যায় -- যেমন জয়তী চক্রবর্তীর স্বরচিত রবীন্দ্রসঙ্গীত-- কিন্তু একেবারে সেঁকো বিষ, এটা কি ঠিক হোলো?

    বঙ্গ সম্মেলনের তেত্রিশ বছরের ইতিহাস দেখলে আমাদের এখানকার অভিবাসী জীবন বিবর্তনের একটা চলচ্চিত্র পাওয়া যাবে, যেমন হওয়া উচিত। আমাদের সমাজ বেড়েছে, সমাজের সঙ্গতি বেড়েছে, সম্মেলনও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। গোড়ার দিকের বোল ছিলো আমাদের সংস্কৃতির ধারা এখানে বহমান রাখা, তা সে আমরা নিজেরাই করতাম, দেশ থেকে গুণীদের এনে করবার রেস্ত ছিল না। মধ্যে ধুয়ো উঠলো আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মকে এই সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী করে যেতে হবে। সে ভবীরা এসব ছেঁদো কথায ভোলবার নয়, তারা এ সম্মেলনের ধারে কাছেও ঘেঁষলো না। তবে আমরাও হতাশ হবার পাত্র নয়, আমরা আস্তে আস্তে দেশ থেকে নামকরা শিল্পীদের আনতে আরম্ভ করলাম, প্রথমে রবীন্দ্রসঙ্গীত, তারপর নাটকের দল, আধুনিক গাইয়ে-- তারপর আস্তে আস্তে বাউল, পল্লীগীতি এমনকী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতও ঢুকে গেলো কখন ফুড়ুত্ করে। বছর দশেক বা পনেরো আগে থেকে আমাদের সমাজে অনেক নতুন ধরণের মানুষ আসতে শুরু করলেন আর সম্মেলনের আর্থিক ব্যাপারটাতেও বেশ ঘোরতর পরিবর্তন এলো। সেটা কী, তা নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করা যাবে, কিন্তু ফলং আমরা ওই দ্বিতীয় প্রজন্ম-টজন্মের ছেঁদো কথা বাদ দিলাম, সম্মেলন হোলো "সন্মেলন" (এই সম্মেলনের ছাপা নির্ঘণ্ট পশ্য) আর সংস্কৃতির ফোকর দিয়ে বলিউডি নাচগানধামাকা ঢুকে গেলো। আমজনতা ভারি খুশি, এবং এই সব মেলার সেইটেই আসল কথা।

    (আগামী কিস্তিতে সমাপ্য)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কূটকচালি | ১৭ জুলাই ২০১৩ | ২৪৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • সে | 203.108.233.65 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৩ ০৯:৩৪77597
  • এই বঙ্গসম্মেলনে যাবার পথেই কি ঋতুপর্ণাকে হেনস্থা করেছিল অভিবাসন?
  • 4z | 209.7.156.131 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৩ ১০:০৪77598
  • এবারে নিজের পাড়ায় ছিল কিন্তু যাওয়া হল না, তবে খুব একটা কিছু মিস করেছি বলে তো মনে হচ্ছে না।
  • Lama | 127.194.253.104 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৩ ১১:৪৯77599
  • ঐ বটতলার স্যরের লেখা একখানা স্যুসাইড নোট আমি কিঞ্চিৎ কৌতূহলবশতঃ কিনে পড়তে গিয়ে পয়সাটা জলে দিলাম
  • Lama | 127.194.253.104 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৩ ১১:৫২77600
  • এদিকে বিক্কলেজের রিইউনিয়নে দেখাবে বলে এক বন্ধু আমার বানানো একপিস অ্যানিমেশন চেয়ে নিয়েছিল। ভুলে গিয়েছিলাম, এই লেখাটা দেখে মনে পড়ে গেল।

    জানিনা দেখাতে পারল কিনা
  • siki | 132.177.225.63 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৩ ০১:৩১77601
  • অসাম ইয়ে ...
  • sumit roy | 79.207.12.5 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৩ ০১:৫১77602
  • @লামা: স্যারের ইমারতের আর একটা ইঁটের জোগাড় হোলো কিন্তু। একটা স্লাইডশো চালানো হচ্ছিলো, কিন্তু সবই তো ইনঅ্যানিমেট বোধ হোলো।
  • parul gayen | 214.28.113.180 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৩ ০৪:৩৮77608
  • এতো জ্বালা হলে না গেলেই হয়। যাবো আবার বিক্ষুব্দ কমরেডের মতো ...... গোটা ব্যাপারটা ওরিজিনাল ও প্যারডি কোনোটাতেই ইন্টারেস পেলাম ন।
  • Lama | 127.194.253.104 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৩ ০৫:১১77603
  • এই রে! উহা তো স্লাইড শো ছিল না, বেশ গান টান দিয়ে একটা ইসে ব্যাপার ছিল।

    বটতলা স্যরের বই আর কিনব না, পড়তে ইচ্ছে হলে নিজেই লিখে নিজেই পড়ে নেব। অন্য লোককে তো পড়াতে যাচ্ছি না, মার খাবার ভয় নেই
  • Lama | 127.194.253.104 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৩ ০৫:১৮77604
  • কিন্তু লেখাটা দুশমনের মতো দুর্ধর্ষ হচ্ছে। আগামী কিস্তির অপেক্ষায় রইলাম।

    সুমিতদা, আপনাদের প্রথম বর্ষে, মানে ছাপ্পান্ন সালে একশো বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বেশ জাঁকজমক হয়েছিল শুনেছি (যদিও আমি বা ফেকু পাঁড়ে কেহই তখনো জন্মেন নাই)- বিশাল গেট টেট ইত্যাদি। সময়, সুযোগ পেলে তথা মুড হলে একটু স্মৃতিচারণের আগাম অনুরোধ রইল। বিক্কলেজের কথা যুগে যুগে অমৃতসমান। যদিও এই থ্রেডটা তার জন্য নয়।
  • সে | 203.108.233.65 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৩ ০৫:৩৭77605
  • বটতলা=রব?
  • Lama | 127.194.253.104 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৩ ০৫:৪২77606
  • ধরেছেন্ঠিক
  • santanu | 176.137.191.19 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৩ ০৫:৪৫77609
  • যেমন খাজা সম্মেলন, তেমনি তার খাজা রিভিউ।
  • debu | 180.213.132.253 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৩ ০৭:৪৮77610
  • রিভিউ টা "খাজা" কেনো বল্লি?
  • Nina | 78.34.162.175 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৩ ১১:৫৪77611
  • সুমিতদা
    এগিয়ে চল--একসঙ্গে বসে চা সিঙাড়া র মতনই উপাদেয় ঃ-)
  • rabish`Mkara bala | 127.218.7.6 (*) | ১৮ জুলাই ২০১৩ ১২:০০77607
  • অমাকে নিয়ে খিল্লি। ছিঃ

    রবিশঙ্কর বল
  • nobyo noksi | 131.241.218.132 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৩ ০১:০২77622
  • "আমি যখন এসেছিলেম পকেটে দশ ডলার নিয়ে পা দিয়েছিলাম, আর আমার পরে যারা পরে মাইগ্রেট করেছেন তারা বেনো জল... " - এই কথা এতবার শুনে শুনে এখন হাসি পায় ।
  • siki | 132.177.177.5 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৩ ০১:২৭77612
  • জম্পেশ হয়েছে লেখাটা। পরের কিস্তির অপেক্ষায় ...
  • sumit roy | 79.207.12.5 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৩ ০২:১৭77623
  • "বেনো জল"-টি শব্দের অতি অপপ্রয়োগ, "বাঁধভাঙা বন্যার জলস্রোত" বলতে চেয়েছিলাম। আমার ভুল হয়েছে, আমাকে মার্জনা করবেন।

    গুরু-শিষ্য পরম্পরা ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ধারার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কৌশিকী চক্রবর্তীর পরিচিতিতে তাঁর গুরু হিসাবে তাঁর মায়ের নাম দেখলাম, জ্ঞানবাবু, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের নাম দেখলাম, কিন্তু অজয় চক্রবর্তীর নাম দেখলাম না। বিশ্বাস করুন, কেন দেখলাম না তার কারণ খোঁজা বা ভালোমন্দের বিচারে বসা-- এসবের কোনোই উদ্দেশ্য ছিলো না, শুধু এটি যে ঘটেছে তা দেখে মনটি বিষণ্ণ হয়ে গেলো, এই মাত্র।
  • bb | 24.99.160.27 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৩ ০২:২৩77613
  • লেখাটা আমার ও ভালো লাগে নি। একটা উন্নাসিক ভাব আছে, উদোক্তাদের প্রতি বিরুপতা প্রকট - দায়িত্ব নিয়ে ছড়ানো তবু সাধুবাদ যোগ্য এই সব সবজান্তাদের চেয়ে, যারা কোন কিছুরই ভালো দেখতে পান না।
    আমিও আরেক পাঠকের মত বলে যাই , ভাল না লাগলে না গেলেই হয়। এই সস্তা হাততালির সমালোচনায় আত্মপ্রসাদ লাভ ছাড়া কিছু হয় না।
  • nina | 22.149.39.84 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৩ ০২:২৭77624
  • সুমিতদা
    খুব খুব সরি--আমার ডাহা ভুল হয়েছে----তোমার উক্তিটি আমি দিব্যি তোমার পিতৃস্নেহ-জনিত ভেবে বসেছিলাম---ক্ষমা করে দিও।
  • a x | 86.31.217.192 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৩ ০২:৫১77625
  • কৌশিকীর তালিম একদম ছোট থেকে তার মায়ের কাছে। অনেকেই হয়ত জানেন না চন্দনা চক্রবর্তী অত্যন্ত দক্ষ একজন শিল্পী। তারপরে জ্ঞান ঘোষের কাছে তালিম। জ্ঞান ঘোষ অজয় চক্রবর্তীরও গুরু। কাজেই গুরু হিসেবে অজয় চক্রবর্তীর নাম করতে হবে কেন? গুরু হিসেবে চন্দনার নাম না দেখলেও কী একইরকম খারাপ লাগা হত?
  • pi | 118.12.169.134 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৩ ০৩:০৭77626
  • কিন্তু অজয় চক্রবর্তীও কি কৌশিকীর গুরু নন ?
    "My relationship with baba (dad) has always been centred around music. Baba has always been more of a guru (teacher) and less a father for me," Kaushiki Chakrabarty told The Times of India in 2000....After beginning more formal study at the age of ten, under her father's guru Gnan Prakash Ghosh, Kaushiki eventually switched to training with her father at his Shrutinandan school of music in Kolkata (formerly Calcutta). .' http://www.bbc.co.uk/radio3/world/awards2005/profile_kaushikichakrabarty.shtml
  • sosen | 218.107.178.181 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৩ ০৩:০৮77627
  • যদ্দুর মনে পড়ছে শুনেছিলাম ছোট্ট কৌশিকী জ্ঞান ঘোষের কাছেই নাড়া বেঁধেছিলেন। খুব যে শিখেছেন তাঁর কাছে এমন হয়ত নয়, কিন্তু শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে গুরু তো ওই নাড়া বাঁধিয়ে দের-ই বলা হয়, নাকি? আর তার আগে চন্দনার কাছে তো বটেই। এতে ভুল কিছু নেই তো।
  • Born Free | 24.99.203.96 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৩ ০৩:১১77614
  • "উদোক্তাদের প্রতি বিরুপতা প্রকট"।।।আমার মনে হয় নি।
    "ভাল না লাগলে না গেলেই হয়।" এটা কোনো কথা হলো? তাহলে তো একই ভাবে বলা যাই "ভালো না লাগলে না পড়লে-ই হলো।"
  • Nina | 22.149.39.84 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৩ ০৩:১৬77628
  • At Sangeet Research Academy, her birth place, she grew up amidst the greatest stalwarts of music. Her musical talent was noticed even before she was a toddler, as she could reproduce any musical note which she was asked to sing. Her mother Smt. Chandana Chakrabarty an accomplished singer herself, took up the task of training Kaushiki in the initial stages, thus being her first Guru. Since music was in her genes, the task of further enhancement of her musical understanding and knowledge was taken over by none other than her illustrious father Pandit Ajoy Chakrabarty. Following the age old tradition Pandit Ajoy Chakrabarty took Kaushiki to his mentor and guide, Guru Jnan Prakash Ghosh, who accepted her as a “ Ganda Bandh Shagird” (Formal Disciple).

    নাড়া বোধহয় মায়ের কাছেও বাঁধেন নি।
  • sosen | 218.107.178.181 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৩ ০৩:১৯77629
  • বেঁধেছিলেন বলে পড়েছিলাম, নীনাদি । তবে স্মৃতি বিশ্বাসঘাতক। খুঁজে বের করব খন কিছুদিন পর।
  • nina | 22.149.39.84 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৩ ০৩:২১77630
  • বেশ তো ঃ-)
  • lcm | 118.91.116.131 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৩ ০৩:৩০77615
  • সুমিতবাবুর বাংলা এবং লেখার স্টাইল ভালো লাগল। বিশেষ করে রিইউনিয়নের গপ্পো ভারি উপভোগ্য।

    তবে কন্টেন্ট তো ইয়ে মানে... বেসিক্যালি দীর্ঘদিন আমেরিকায় থাকা প্রবাসী বাঙালীর জেনারেল মানসিকতা, চিন্তাভাবনার প্রতিফলন, একটু জেনারেশন গ্যাপ...
    কোনো কিছুই কি সেভেন্টিস-এর মতন আছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই বা থাকবে কি করে।
    দেশ থেকে কোনো শিল্পী না এনে এখানকার প্রবাসী বাঙালীরা নিজেরা গানবাজনা করলেন, তাই দিয়েই সম্মেলন হল - সে তো হরদম হচ্ছেই , দুগ্গোপুজো, সরস্বতী, রবীন্দ্রজয়ন্তী... বেশীর ভাগ সময়ই সাংঘাতিক যন্ত্রণাদায়ক ব্যাপার। বিশেষ করে এই কেব্‌ল টিভি/ইন্টারেন্টের যুগে, যখন হাতের নাগালের মধ্যে টাটকা অনুষ্ঠান, গান, সিনেমা...

    কৌশিকি-র পরিচয়পত্রে ওর বাবার কথা না থাকাই তো ভালো, ওর পরিচয় তো ওর গানে।

    আমি যখন এসেছিলেম পকেটে দশ ডলার নিয়ে পা দিয়েছিলাম, আর আমার পরে যারা পরে মাইগ্রেট করেছেন তারা বেনো জল... - এরকম কমেন্ট তো হামেশাই শোনা যায়, বেসিক্যালি কমন সিন্ড্রোম - আমাদের যৌবনে কি সব জিনিস ছিল আহা আহা, আর এখন কি হাল হয়েছে উহুঁ উহুঁ।

    কিন্তু, সুমিতবাবু কিছু কথা তো ঠিকই বলেছেন। সময় বিশেষে অব্যব্স্থার চূড়ান্ত, এবং সেটা সিম্পলি ব্যাড ম্যানেজমেন্ট। স্টার শিল্পী মঞ্চে ওঠার আগে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে লোকজনের মঞ্চে আগমন - এসব বিরক্তি উৎপাদন করে বই কি।

    তবে কি, এসবও কালচার - এসব না হলে ঠিকঠাক প্রতিফলন হয় না। আর, এটা বোধহয় ঠিক রিভিউ নয়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং মতামত প্রদর্শন। একথা ঠিক যে ভালো না লাগলে উনি নাই যেতে পারেন, তেমনি আবার এ কথাও ঠিক যে এই লেখাটাও ভালো না লাগলে পড়ারই বা দরকার কি ঃ) মানে ঐ আর কি...
  • MR | 81.252.196.173 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৩ ০৪:০৭77631
  • গতকাল ঋদ্ধি বন্দোপাধ্যায় তারা চ্যানেলে এসে NABC তে ওর গান শুনে সবার চোখ দিয়ে জল বেরোচ্ছিল তা প্রতি দুটো গানের পরপরই বলছিল। আবার সামনে আম্রিকা আসবে এও শুনলাম। এতো NRI দের সাথে হবনবিংএর ফলেই বোধহয়, কলকাতার দুটো জেনুইন কলকে বিশ্রী ভাবে নিল। একজন তো বেশ বয়স্ক ব্যাক্তি ছিলেন।
  • debu | 180.213.132.253 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৩ ০৮:৩৯77632
  • এক্জন আমাদের কে (softwareএর জনগন "বেনো জল" না বলে "ঝালাই পার্টি" বলে ছিলো ,কারন ওনারা এই দেশ এ সব বানিয়েছে আর আমরা হচ্ছি "মিস্ত্রি"
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন