এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • অমিয়ভূষণঃ এক বিরল প্রজাতির লেখক

    বিপুল দাস লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৯ মার্চ ২০১৮ | ৫৯৩৬ বার পঠিত
  • অমিয়ভূষণ মজুমদারের জন্ম ১৯১৮ সালের ২২শে মার্চ। এ বছর তাঁর জন্মের শতবর্ষ পূর্ণ হতে চলেছে। কিন্তু এ কথাও আমাদের জানা এই বিরল প্রজাতির লেখকের জন্মশতবর্ষ সাহিত্যসংস্কৃতি জগতের প্রখর আলোর নীচে আসবে না। বিপণন কৌশলের অন্যতম শর্ত হয় সাধারণ্যে গ্রহণযোগ্যতা। প্রতিষ্ঠান তাই চায়। জনচিত্তজয়ী লেখমালা, চলচ্চিত্র, ক্রীড়া ও অন্যান্য বিনোদনের জন্য প্রচারের পাদপ্রদীপের আলো আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তাকে আরও মহিমা দান করে কৌশলী প্রতিষ্ঠান। ব্যতিক্রমী স্রষ্টার জন্য থাকে কিছু মননশীল পাঠক, ব্যতিক্রমী সৃষ্টির গৌরবকে তাঁরা অনুধাবন করতে পারে, সেই রচনাকে তাঁরা কুর্নিশ জানায়। এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে নগণ্য। কিন্তু কালোত্তীর্ণ মহৎ সৃষ্টির তাতে কিছু আসে যায় না। সেখানেই অমিয়ভূষণ সৃষ্টি আলাদা হয়ে গেছে চলাচলের নিরাপদ পথ থেকে। আর এক মজুমদার, কমলকুমারের মতই তাকেও বিদগ্ধ পাঠক এবং সমালোচক ‘লেখকদের লেখক’ হিসেবে গণ্য করেছেন।

    বাংলাভাষায় যারা ছোটগল্প এবং উপন্যাস লিখছেন বা গত ত্রিশ/চল্লিশ বছরে যা লেখা হয়েছে, সামান্য কয়েকজনকে বাদ দিলে যা পড়ে থাকছে, সেগুলো পড়ে মনে হতেই পারে চলাচলের নিরাপদ, প্রথাগত পথকেই তারা বেছে নিয়েছেন। ব্যক্তিবিশেষের গল্প বলার ভঙ্গিতে একটু উনিশবিশ হচ্ছে, কিন্তু তুলনামূলক ভাবে অপ্রচলিত কোনও লিখনশৈলী, যার ব্যতিক্রমী প্রকরণ আন্দোলিত করতে পারত সনাতন কাঠামো, গল্পবলার প্রথাগত প্রকরণকে আক্রমণ করে খুঁজে আনতে পারত নতুন কৌশল – তেমন বারুদগন্ধী বিপজ্জনক পথে প্রায় কেউ নেই। হাতে গোণা দুচারজনের লেখায় সেই দুঃসাহসের ইশারাটুকু কখনও ঝিলিক দিয়ে যায়। কিন্তু পাঠকের কাছে পৌঁছবার জন্য একটা আকুতি বোধহয় লেখার সময় গোপনে কোথাও কাজ করে। লেখক-পাঠক communication- এর দায়, সেতুবন্ধনের গোপন প্রবৃত্তি পরোক্ষে কাজ করে। সেই দায় গল্প বলার দুঃসাহসী নতুন পথের খোঁজ না করে সহজভাবে শেষ পর্যন্ত পাঠককে একটা গল্প শোনাতে চায়। তখন সমঝোতার প্রশ্ন আসে। কেমন হবে আমার বলার ভঙ্গি, কাদের জন্য আমি গল্প লিখছি, সমাজের কোন শ্রেণীর মানুষের কাছে আমি আমার বার্তাটুকু পৌঁছে দিতে চাই, emotional factor, নাকি cerebral factor – কাকে বেশি প্রাধান্য দেব।

    তখন যে প্রশ্নটা অবধারিতভাবে উঠে আসে, তা হল – সাহিত্য কি একধরণের বিনোদনের উপকরণ, নাকি আমাদের জীবনযাপনে অবিরত যে সংশয়, যে সংকট আমাদের বেঁচে থাকাকে বিপদগ্রস্ত করে রাখে, তাকে উন্মোচিত করা। আমাদের বেঁচে থাকার গ্রাফ তো কখনওই সরলরেখা নয়। অজস্র উঁচুনিচু রেখা। বিচিত্র, রহস্যময়। প্রেম, অপ্রেম, ঘৃণা, ভালোবাসা, পেটের খিদে এবং যৌনতা, কাম ও ঘাম, অশ্রু এবং রক্ত – এসব কিছুই একজন লেখকের কালির সঙ্গে মিশে থাকে। এর ভেতর কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ – সেটা নির্দেশ করার দায় লেখকের নয়। সে দায় সমাজসংস্কারকদের, সমাজসেবীর, গুরুদেবের, আচার্যদের, যুগাবতার মহাপুরুষদের। লেখক শুধু সত্ত্ব এবং তমঃ, আলো এবং আঁধারকে শিল্পসম্মতভাবে চিহ্ণিত করেন। যদি বিনোদন হয়, তবে সে লেখায় cerebral factor –এর কোনও প্রয়োজন পড়ে না। সেখানে বাণিজ্যমুখিনতাই প্রধান বিচার্য বিষয়। পাঠকের ইচ্ছাপূরণের জন্য গল্প চাই। পাঠকের কাছে খুব সহজে পৌঁছে যাওয়ার কয়েকটা সমীকরণ থাকে। সে সব পড়ার পর একটা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হয় শুধু। কিন্তু যে রসায়নে অমিয়ভূষণ মজুমদারের ‘অ্যাভলনের সরাই’ বা ‘সাইমিয়া ক্যাসিয়া’ চিরকালের জন্য সিরিয়াস পাঠকের মনে আসন পেতে বসে, সে রসায়ন এসব বাণিজ্যমুখী গল্পে থাকে না। সাহিত্যের একটি ধারা বিষয়, লিখনশৈলী ও বর্ণনকৌশলে জনমনোরঞ্জনের পথ অনুসরণ করে। পাঠকের মনে সাময়িক তৃপ্তি দেয়। এসব লেখায় লেখকের সবসময় একটা দায় থাকে পাঠকের সঙ্গে communicate করার। লেখকের চিন্তার স্বাধীনতা থাকলেও মনে হয় তিনি কোনও শর্তাধীন হয়ে লিখছেন। পাঠকের চাহিদার সঙ্গে সমঝোতার লক্ষণ সে সব লেখায় স্পষ্টই বুঝতে পারা যায়। বেশির ভাগই সাধারণ মানুষের তীব্র, অপূর্ণ বাসনাপূরণের গল্প। এ সব কাহিনী দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু এই জনপ্রিয়তা খুব সাময়িক। দু’দশ বছর গড়িয়ে গেলে সে লেখা সময়ের মহাঝঞ্ঝায় শুকনো, বিবর্ণ পাতার মত কোথায় উড়ে যায় – ভবিষ্যতের পাঠক বা সমালোচক তার কোনও হদিশ পায় না। কালগর্ভে লীন হয়ে যায় সেই সাহিত্যকর্ম। অমিয়ভূষণ খুব সচেতন ভাবেই সে পথে কোনও দিন হাঁটেননি।

    লেখককে তো ইতিহাসসচেতন হতেই হয়। না হলে কীভাবে তিনি এই সভ্যতার, মানুষের মানুষ হয়ে ওঠার কথা লিখবেন। মানুষ কত দীর্ঘপথ দিল। কত ধর্মযুদ্ধের নামে অন্যায় যুদ্ধ, এখনও ডাইনির মাংসপোড়া গন্ধে উল্লাস শোনা যায়, কত সাম্রাজ্যের উত্থানপতন হল। এসব কিছু মন্থন করে জীবনের রহস্যময়তার কথা, কোনও এক সার সত্যের সন্ধান করে যান লেখক। পুরাণের নতুন পাঠ, মঙ্গলপাঠের নবনির্মাণ, যে পাশ্চাত্য লেখনরীতিকে মডেল করে একসময় আধুনিকতার সংজ্ঞা ঠিক করা হয়েছিল, তাকে অতিক্রম করে দেশজ পাঁচালি, ব্রতকথা, পুরাণ, মঙ্গলকাব্যের বিনির্মানের মধ্য দিয়ে,আমাদের লোককথা, উপকথাকে নতুন আঙ্গিকে লিখছেন অনেকেই। অমিয়ভূষণমনস্ক পাঠক অবশ্যই লক্ষ করে দেখেছেন ধূসর অতীত নয়, অমিয়ভূষণের লেখায় এসেছে অনতিঅতীত। গড় শ্রীখণ্ড, রাজনগর, মধু সাধুখাঁ উপন্যাসের পটভূমি মানবসভ্যতার সুদূর অতীত নয়, চাঁদ বেনে ব্যতিক্রম, কিন্তু সেখানেও অতীত এবং সমকাল পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে।

    বাংলা সাহিত্যের তিন ব্যতিক্রমী গদ্যকার হিসেবে ধরা হয় কমলকুমার মজুমদার, জগদীশ গুপ্ত এবং অমিয়ভূষণ মজুমদারকে। লেখকদের লেখক হিসেবে অনেক সমালোচক তাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন। পরবর্তী কালে নবারুণ ভট্টাচার্য, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, রবিশঙ্কর বল এবং আরও দু’একজনের লেখায় আমরা সেই লিখনের ব্যতিক্রমী শৈলী দেখেছি। জনমনোরঞ্জনের জন্য এরা কোনও দিনই লেখেননি। বাংলা সাহিত্যের সাধারণ পাঠকদের অনেকে এই লেখকদের নামও হয়তো শোনেননি। অমিয়ভূষণ এদের মধ্যে নিজস্ব মেজাজে অনন্য হয়ে উঠেছেন। সেটা তাঁর বিচিত্র বিষয় নির্বাচনের জন্য হতে পারে। হতে পারে তাঁর অননুকরণীয় লিখনশৈলীর জন্য। এবং অবশ্যই তাঁর লিখন সম্পর্কে নিজস্ব দর্শনের জন্য। তার নিজের কথাতেই ‘ হায়ার ফিজিক্স যেমন সর্বজনগ্রাহ্য করা যায় না, সাহিত্যকেও তেমনই সর্বগ্রাহ্য করা যায় না’। এই একটি কথাতেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি যা বলতে চান, সেটি বুঝে নেবার দায় পাঠকের। যে কোনও বিষয়ের গভীরে যাওয়ার জন্য বিশেষ অভিনিবেশ এবং মননশীলতার যদি প্রয়োজন হতে পারে, তবে সাহিত্যকর্মটির অন্তরালে যে রসের সৃষ্টি লেখক তৈরি করলেন, তাকে বুঝে নেবার জনই বা পাঠকের বিশেষ ধীশক্তির প্রয়োজন কেন থাকবে না। এই যুক্তি থেকে অমিয়ভূষণ কোনও দিন সরে আসেননি। তাই, এ বঙ্গে অমিয়ভূষণের পাঠককুল সর্বার্থে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।

    এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তাঁর সৃষ্টির সঙ্গে লেখক কি পাঠকের সঙ্গে communication চাননি ? একজন স্রষ্টা অবশই চাইবেন। কিন্তু সাহিত্যের ইতিহাসে কিছু বিরল প্রজাতির লেখক থাকেন, তাঁরা তাঁদের উচ্চ অবস্থানেই থেকে যান অভিজাত একটা অহংবোধ বা দাপট নিয়ে। সেখান থেকে নীচে নেমে এসে জনচিত্তজয়ী বিনোদনমূলক লেখার প্রতি কোনও দিন মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েন না। অমিয়ভূষণ আপোষহীন ছিলেন নিজের লেখা নিয়ে।

    আসলে সত্যকথন এবং সেই কথনভঙ্গী কেমন হবে, সেই রীতি একেবারেই লেখকের নিজস্ব দর্শনসঞ্জাত। অমিয়ভূষণের লিখনভঙ্গী এখনও অননুকরনীয় থেকে গেছে। তাঁর Text এবং Discourse নিয়ে চিন্তা করলে দেখা যায় Text হয়তো এমন কিছু অভিনব নয়, কিন্তু সেই Text-কে বয়ে নিয়ে যাওয়ার মত, চলন এবং বর্ণনকৌশলে রয়েছে Discourse-এর ম্যাজিক। বিশেষ করে Text-প্রেক্ষিতে conversation, subject, object, statement-এর মাঝে যে semiotic ব্যঞ্জনা তিনি প্রয়োগ করেছেন, তার ফলে তাঁর গদ্য বিদগ্ধ পাঠকের কাছে প্রচলিত শব্দের আড়ালে অন্য চিত্রকল্প তৈরি করেছে। ব্যতিক্রমী গদ্যকার হিসেবে চিহ্নিত হ’ন অমিয়ভূষণ মজুমদার। চিন্তাভাবনায় ক্ল্যাসিকপন্থী, কখনও মনে হয় দাম্ভিক, অথচ ‘অতি বিরল প্রজাতি’র মত অতি আধুনিক, দুঃসাহসিক লেখাও তিনি লিখেছেন। এমন কথাও শোনা যায়, ব্যক্তিগত যাপনে রক্ষণশীল, সামন্ততান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন, অথচ তাঁর প্রচুর লেখায় পাচ্ছি প্রান্তিক মানুষের জীবনচর্যার কথা। তাঁদের সুখদুঃখের কথা, এমন কী কখনও তাঁদেরই Dialect-এ নিখুঁত ভাবে উঠে এসেছে।

    অমিয়ভূষণের পরে যাঁরা লিখতে এসেছেন, তাঁদের বাদ দিলে বাংলা সাহিত্যের তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে যাঁর লেখায় আমরা প্রথম বৌদ্ধিক চলন খুঁজে পেলাম, তিনি অমিয়ভূষণ মজুমদার। এবং যা হয়, এ ধরণের লেখা, cerebral factor যার প্রধান লক্ষণ, সে লেখা কখনই বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের আনুকূল্য পায় না। গড় শ্রীখণ্ড, রাজনগর, মহিষকুড়ার উপকথা, মধু সাধুখাঁ, ফ্রাই ডে আইল্যান্ড, নরমাংসভক্ষণ এবং তাহার পর, চাঁদবেনে – বাংলা সাহিত্যের এ সব অসাধারণ সম্পদ প্রকাশিত হয়েছে অবাণিজ্যিক ছোট পত্রিকায়। কোনও বড় কাগজে নয়। কিন্তু নিরপেক্ষ সমালোচক এবং বুদ্ধিদীপ্ত পাঠকের নজর এড়ায়নি, ক্ষমতাশালী লেখককে চিনে নিতে দেরি হয়নি।

    ইংরেজি সাহিত্য ছিল প্রবল পছন্দের বিষয়। বাংলা সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্র ছাড়া অন্য কোনও লেখকের দিকে তাঁর উদার দৃষ্টি ছিল না। বিতর্কিত ছিলেন নানা কারণে। রবীন্দ্রনাথের ব্রাহ্মোপাসনা, নিরাকার ঈশ্বরের কল্পনা অথচ তাঁকে সাকার হিসেবে কখনও স্বীকার করে উপস্থাপন করার ব্যাপারেও তাঁর ঈষৎ বঙ্কিম আপত্তি ছিল। সমসময়ের কোনও লেখাই তাঁকে আকৃষ্ট বা প্রভাবিত করতে পারেনি। শেক্সপিয়র, স্কট, ডিকেন্স, মান, টলস্টয়ে আগ্রহ ছিল অনেক বেশি। কখনও মনে হয় ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততান্ত্রিক সমাজের ওপর বোধ হয় তাঁর বেদনা এবং দুর্বলতা রয়েছে। অথচ তাঁর সমগ্র রচনা পাঠে এই প্রতীতিও জন্মায় সমাজের অবহেলিত, নিপীড়িত, চিরকালের বঞ্চিত মানুষদের কথাই হয়তো চিরকাল বলতে চেয়েছেন। কিন্তু সে বলার ধরণই আলাদা। মানুষের মনের দুর্গম রহস্যকে ছুঁয়ে দেখা, ইতিহাস এবং সমকালকে জুড়ে দেবার magic discourse, কথাবুননের আশ্চর্য কুশলতা এবং ভাষার সেই অনিবার্য দার্ঢ্য তাঁকে আলাদা করে দেয়। তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না, ব্যক্তি অমিয়ভূষণ নয়, লেখকস্বত্তা এখানে ব্যক্তিকে অতিক্রম করে। নির্মোহ লেখক, ঘটনা থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সব কিছু দেখেন। তারপর শুরু হয় মেধামন্থন। লেখা হয় গড় শ্রী খণ্ডের মত মহতী উপন্যাস। তাঁর সাইমিয়া ক্যাসিয়া থেকে এক টুকরো গদ্য তুলে আনছি। ‘ ...সামনে, যাকে স্কাইলাইন বলে, সেখানে একটা পাহাড়ের কাঁধ। ঠিক এখানেই কালো পাটকিলে পাহাড়টার গায়ে বেশ খানিকটা জায়গা শাদা, না জানা থাকলে ধস নামার চিহ্ন বলে মনে হবে। পেমার বাড়ি থেকে অন্য রকম দেখতে পাওয়া যায়। কিম্বা দেখতে পাওয়া যায় কথাটা ঠিক হলো না। পেমা জানে বলেই বলতে পারে তার বাড়ির বাইরের দিকের বারান্দা থেকে সোজা পথে দু’ফার্লং আর ঘোরা উৎরায়ের পথে হেঁটে দু’মাইল গেলে ওখানে একটা কোয়ার্টজ্‌ জাতীয় পাহাড়ের গুহা আছে। সোজা কথায় বলতে হবে ধূমল রঙের একটা চমরী বাছুরের শাদা কপাল, পাঁশুটে শাদা জিভ; জিভের সরু হয়ে আসা ডগাটা নিচের পথটার ধারে নেমে এসেছে। শহর থেকে পনেরো-ষোলো মাইল দূরের এই নির্জন পাহাড়টাকে বাচ্চা-চমরী বলা হ’য়ে থাকে’।

    এই যে একটা পাহাড়কে বিশেষ লক্ষণ দিয়ে পরিচিত করানো, এই উপমার জন্য শব্দের অপ্রচলিত Diction, স্থান-কাল-পাত্রের অভিনবত্ব – এই গল্পেই চরিত্রগুলো হচ্ছে পেমা, থেন্ডুপ, শাও চি, রিম্পোচে, গিয়াৎসো; এসেছে লালফৌজ, অতীশ দীপংকর, এসেছে গল্পের মেজাজের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষায় স্থানীয় প্রবাদ ( উত্তুরে কুকুর যখন চিল্লানী শূকরীকে মাতৃত্ব দেবে, তখন অমিতাভ আর থাকবে না পৃথিবীতে), সাধারণ বাঙালি পাঠকের কাছে এই প্রেক্ষিত নতুন। আর গল্প বলার ভঙ্গিমা একেবারেই স্বতন্ত্র। চমক লাগে বই কী। অন্য লেখদের থেকে তিনি মুহূর্তেই আলাদা হয়ে যান শৈলীর স্বাতন্ত্র্যে। তাঁর অদ্ভুত বিষয় এবং Narrative-এ রয়েছে চতুর Diction. ফলে অনেক সময়েই মনে হয় গল্প বলার ঔপনিবেশিক ধারাটি তিনি গ্রহণ করেছেন। বিশেষ কোনও Imagery গঠনের জন্য তাঁর উপমাগুলি বাংলা সাহিত্যে নতুন প্রয়োগ। এই গল্পেই দেখুন পাহাড়ের বর্ণনায় তিনি লিখেছেন -- ধূমল রঙের একটা চমরী বাছুরের শাদা কপাল, পাঁশুটে শাদা জিভ; জিভের সরু হয়ে আসা ডগাটা নিচের পথটার ধারে নেমে এসেছে। শহর থেকে পনেরো-ষোলো মাইল দূরের এই নির্জন পাহাড়টাকে বাচ্চা-চমরী বলা হ’য়ে থাকে’। হঠাৎ মনে হয় কোনও বিদেশি গল্পের অনুবাদ পড়ছি। এই ধারা তিনি দ্বিধা না করেই তাঁর লেখায় এনেছেন।

    আর একটি বিষয় নিয়ে সম্ভবত তাঁর তীব্র প্যাশন ছিল। অনেক লেখাতেই ব্যাপারটা ঘুরে ফিরে এসেছে। সেটা হ’ল সংকরায়ণ। তাঁর জীবন কেটেছে বাংলা সাহিত্যসংস্কৃতির কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে পরিধি অঞ্চলে। এক সময়ের কোচ রাজাদের করদ রাজ্য, মহারাজার শহর কোচবিহারের ভারতভুক্তি হয় ১৯৪৯-এ। আজীবন এই শহরে বাস করে সাহিত্যসৃষ্টির কাজে মগ্ন থেকেছেন অমিয়ভূষণ। এ অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাসের বৃত্তান্ত তাঁর লেখায় এসেছে। এসেছে ডুয়ার্সের গাঢ় সবুজ অরণ্যের কথা, এসেছে মেচ-কোচ-খেন-রাভাদের কথা। এসেছে পাহাড়ের মানুষদের কথা। মহিষকুড়ার উপকথা তাঁর এক অসাধারণ উপন্যাস। দু’টি ভিন্ন প্রজাতির সংকরায়ণ এবং তার ফলে উন্নত বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জাতির কথা অদ্ভুত এক Metaphor-এর প্রয়োগে এই উপন্যাসকে ধ্রুপদী করে তুলেছে। অরণ্যসংলগ্ন গ্রামে কবে যেন এসেছিল বাইসন( Indian gaur), বুনো সেই প্রাণীর সঙ্গে মিলন হয়েছিল গ্রামের কোনও গৃহপালিত গাভীর। এই ইশারাটুকু নিয়ে উপন্যাসটি শুরু হয়। আবার সাইমিয়া ক্যাসিয়া, উরুণ্ডি বা অ্যাভলনের সরাই গল্পেও ভিন্ন দেশ, ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষদের মধ্যে সংকরায়ণের কথা রয়েছে। কৌমের শুদ্ধতা রক্ষা, আবার এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে আন্তর্মিলনের কথা তাঁর বিষয় ছিল। সাইমিয়া ক্যাসিয়া গল্পেও দেখি হান্‌ একজন লালফৌজের মেজর এবং অন্য গোষ্ঠীর যুবতী পেমার মধ্যে যৌন সংসর্গের আভাস। যুদ্ধের সময় যারা বাস্তুহারা হয়েছিল, তাদের অনেক পরিবারকেই পুনর্গঠিত ইয়োরোপের এ-নগরে ও-নগরে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছিল। সেই রকম একদল উদ্বাস্তুদের নিয়ে গল্প ‘অ্যাভলনের সরাই’। দলে কত রকমের মানুষ একসঙ্গে কতদিন ধরে হেঁটে চলেছে অ্যাভলের সরাই-এর খোঁজে। সেখানে পৌঁছতে পারলেই আর কোনও কষ্ট থাকবে না। দলে রয়েছে মুখোশ পরা সাইমন, গল্পের একদম শেষে জানা যায় যুদ্ধ তার নাক উড়িয়ে দিয়েছে। সেখানে ভয়ঙ্কর দু’টি শূন্য গহ্বর। দলে ছিল নিনা, এক সুন্দরী যুবতী। শহরে পলিটেকনিকের ছাত্ররা ছিল তার শরীরের খরিদ্দার। সেই নিনার সঙ্গে সাইমনের সম্পর্কের ইশারা রয়েছে। এদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ছিল সরাই আর মাত্র বেয়াল্লিশ কিলোমিটার। শেষ পর্যন্ত ওরা একটা খাদের কিনারে এসে পোয়ঁছেছিল, যেটা একটা দড়ি ধরে পার হতে হয়। মুখোশ খুলে দড়ি ধরে প্রথম লাফ দিয়েছিল সাইমন। তখনই নিনা দেখেছিল সাইমনের নাকের ফুটোর জায়গায় অতল গহ্বর, নিনা পাগল হয়ে গিয়েছিল। আর বংশে যাতে সংকরায়ণ না ঘটে, রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য পুত্রবধূ এবং শ্বশুরের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে দুঃসাহসিক লেখাটিও এক অতি বিরল উপন্যাস।

    সাহিত্য সম্পর্কে তাঁর সোজাসাপটা বক্তব্য ছিল – ‘দর্শনের জন্য দর্শন, বিজ্ঞানের জন্য বিজ্ঞান, তেমনি সাহিত্যের জন্যই সাহিত্য। শিল্পের জন্মটাই আসল কথা। এই শিল্পের ভেতরেই সব কিছু থাকতে পারে। মানুষের কান্নাঘামরক্ত, পৃথিবীর ইতিহাস, মানুষের প্রেম, ঘৃণা। তাঁর এই ‘সাহিত্যের জন্য সাহিত্য’ ধারণার জন্য তাঁর কিছু বামপন্থী লেখকবন্ধু তাঁর অনেক বিরূপ সমালোচনা করেছেন। তাঁর প্রবন্ধ সংকলন ‘লিখনে কী ঘটে’ বইতে তিনি লিখেছেন –‘ আমি কেন জন্মালাম ? পৃথিবীর চূড়ান্ত সুখ, চূড়ান্ত শান্তি থেকে বঞ্চিত হলাম। এইভাবেই ফ্রাস্ট্রেশন আসে। সাব্‌কনশাসে ঢুকে যায়। সাব্‌কনশাসে ঢুকে ভাবে এর থেকে বাইরে যাবার পথ কই। শিল্প সাহিত্য সঙ্গীত সেই মুক্তির পথ খোঁজে’।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৯ মার্চ ২০১৮ | ৫৯৩৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • এলেবেলে | 212.142.80.18 (*) | ২৫ মার্চ ২০১৮ ০১:০৮84884
  • অমিয়ভূষণ এক প্রতিষ্ঠান এখন। যেমন অসীম রায়। নামজাদা প্রকাশন সংস্থা থেকে তাঁদের ঢাউস ঢাউস গ্রন্থ বেরোয়। অমিয়ভূষণ সম্পর্কিত লেখালেখিতে ভরা লিটল ম্যাগাজিনের দাম হয় চারশো টাকা। প্রতিষ্ঠান বুঝতে পারে আজ এঁদের নিয়ে ব্যবসা হতে পারে। লাভের লোভে তাদের চোখ চকচকে হয়ে ওঠে। অমিয়ভূষণ বা অসীম রায় শুধু সে ধূর্ত, লোভী চোখ দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।

    রাজনগরের পর অমিয়ভূষণ নিজেই বলেছিলেন 'আমার যা লেখা আছে তা দিয়ে চারটে বই হয়ে যায়। ... আমি লেখা ছাড়িনি এখন কেউ যদি না ছাপে আমি কী করব?' অন্যদিকে অসীম রায় জার্নালে লিখছেন তাঁর বই বিক্রি বাবদ রয়্যালটির কথা এবং সিদ্ধান্তে আসছেন কুড়ি বছর ব্যাপী সাহিত্যিক পরিশ্রম = একমাসের স্টেটসম্যানে সাংবাদিক পরিশ্রম। জানাচ্ছেন সের দরে গোপাল দেব বিক্রি হওয়ার কথাও।

    'বাংলা সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্র ছাড়া অন্য কোনও লেখকের দিকে তাঁর উদার দৃষ্টি ছিল না' - তাই কি? পুতুল নাচ, ঢোঁড়াই এবং চতুরঙ্গ সম্বন্ধে তিনি কিন্তু শ্রদ্ধাবানই ছিলেন। তবে জগদীশ গুপ্ত সম্পর্কে ছিল না, ছিল না কমলকুমার সম্পর্কেও। জগদীশ গুপ্ত সম্পর্কে তাঁর অভিমত ছিল ফর্ম দিয়ে সাহিত্য হয় না, কমলকুমার সম্পর্কে অভিযোগ ছিল কনটেন্ট নিয়ে।
  • h | 212.142.93.59 (*) | ২৫ মার্চ ২০১৮ ০১:৪৪84885
  • অমিয় ভূষণ কেন কনরাড কে পসন্দ করতেন সেটা মাইরি আমি বুঝি নি, তবে এটা বুঝি যে উনি তো আর চিনুয়া আচেবের কনরাড নিন্দার প্রবন্ধ পড়ার পরে কনরাড পড়েন নি, তাই আমাদের যে হাইন্ডসাইটের মজা আছে ওনার তা নেই, কিন্তু কনরাড কে ভালো লাগার কি আছে, মাইরি আমি বুঝি নি, অ্যাপার্ট ফ্রম, একটা পোলিশ লোকের হঠাৎ ইংরেজি তে লেখার ক্ষমতা গজানো ছাড়া।
  • -- | 127.194.206.80 (*) | ২৫ মার্চ ২০১৮ ০৩:১৪84886
  • অমিয়ভূষণ এক প্রতিষ্ঠান এখন। যেমন অসীম রায়। নামজাদা প্রকাশন সংস্থা থেকে তাঁদের ঢাউস ঢাউস গ্রন্থ বেরোয়। অমিয়ভূষণ সম্পর্কিত লেখালেখিতে ভরা লিটল ম্যাগাজিনের দাম হয় চারশো টাকা।
    --- ঠিক নয়। সে বললে তো সুবিমল মিশ্রও প্রতিষ্ঠান হয়ে গেলেন। দেবর্ষি সারগীও। তাইই কি? দে'জ ছাড়া অমিয়ভূষণের বই বের করেছে কে? দে'জ এর থেকে বের হওয়া সমগ্র অমিয়ভূষণ-এর সন্তানের সাথে প্রতিষ্ঠানের চুক্তি। কিন্তু অনৈতিক দাম বলে মনে হয় নি। তাতেও অমিয়ভূষণ প্রতিষ্ঠান হয়ে গেলেন বলা যায় কি? গাঙচিল, এবং মুশায়েরা - এরা এবং এরকম গুটিকতক প্রকাশক বইয়ের প্রোডাকশন কোয়ালিটির এক্সেলেন্স এর দোহাই দিয়ে প্রোডাকশন কস্ট এর তিনগুণের বেশি দাম রাখেন বইয়ের। এদেরকে সিরিয়াস পাঠকরা নিশ্চয় চিহ্নিত করেই ফেলেছেন। সমস্যা হচ্ছে যাদের বই ছাপানো হচ্ছে তারা, সেঅর্থে লেখক ও তাদের উত্তরসূরীরা, এদের ভালো দৃষ্টিনন্দন প্রোডাকশন, ছাপা, পাতার কোয়ালিটি, প্রচ্ছদ, বাঁধাইয়ের টোপটা গিলছেন। দামটা লেখক বা লেখকের উত্তরসূরীদের কনসার্ন নয়। এরাও সেই সুযোগে দাম ফেলছেন তিনগুণ যাতে বইটা প্রথমেই একটা বাড়তি সম্ভ্রমের জায়গা পায়, সাধারণ পাঠলের হাতের বাইরে চলে যায়। লিটিল ম্যাগাজিনের পাঠক অ্যালিয়েনেটেড ফিল করে, দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাওয়ার জন্য লেখককেই দায়ী করে এবং লেখককে নিয়ে নিজস্ব চর্চার এতাবৎকালীন ধারাটিকে ডিসকন্টিনিউ করে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রকাশনার দায়িত্ব বহন করতেও ক্রমশ অপারগ ও অনিচ্ছুক হতে থাকে। কিন্তু বলার কথা এতে কি আদৌ অমিয়ভূষণকে প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা গেছে? তাঁকে নিয়ে চর্চা করছে কি মেইনস্ট্রীম আদৌ? প্রকাশনার মডেল নিয়ে আলোচনার জন্য দু;খিত, অমিয়ভূষণ চর্চা জারি থাক।
  • এলেবেলে | 212.142.96.114 (*) | ২৫ মার্চ ২০১৮ ০৫:২৯84887
  • ধন্যবাদ। সুবিমল মিশ্র লিখেও মুছে দিয়েছিলাম। বাণীশিল্প থেকে বেরিয়েছিল অ্যান্টি-উপন্যাস। তিনিও গাঙচিলের কব্জায়। অমিয়ভূষণ দে'জ বার করছে এতদিনে, যে শংকরও বেচে। আমি তাঁর উপন্যাস পড়েছি বারোমাস পত্রিকায়। অসীম রায়ও বের করেছে দে'জ, যে অবধূত বেচে। শংকর বা অবধূত নিয়ে আমার তাচ্ছিল্য নেই কিন্তু যে লেখকের চারটে বই না ছাপা অবস্থায় পড়ে থাকে সে লেখকের ১১ খণ্ডের রচনাবলী তাঁকে প্রতিষ্ঠান হতে সাহায্য করে। তিনি পরিণত হতে না চাইলেও। যেমন সন্দীপন, যাঁকে আজকাল গিলে নেয় হাঙরের মতো। মেনস্ট্রিম চর্চা না করলে এগুলো হয় কিনা বলতে পারেন? কারা কেনেন এই মহার্ঘ গ্রন্থাবলী?
  • b | 24.139.196.6 (*) | ২৫ মার্চ ২০১৮ ০৫:৫০84888
  • কেন, এই যে, আমি কিনি।
    লিটল ম্যাগ পড়ার সুযোগ নেই, কলকাতার বাইরে থাকি বলে। শহরের বইয়ের দোকানে এনাদের নতুন বই পেলে কিনি।
    পাবলিশার নিয়ে মাথা ঘামাই না। মিলস অ্যান্ড বুন থেকে পাবলিশ করলেও কিনতাম।
  • -- | 127.194.206.80 (*) | ২৫ মার্চ ২০১৮ ০৭:০৩84889
  • বাসুদেব দাশগুপ্ত, সুভাষ ঘোষ, নিমসাহিত্য, ও ঢুকে গেল তো গাঙচিলে।
    রামমোহন রায় ফাউন্ডেশন এর দাক্ষিণ্যে ৩০০ কপি বই নেয় রাজ্যের লাইব্রেরি। ১০-১৫ কপি যায় বিভিন্ন কাগজ, শ্রদ্ধেয় প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক (যাঁদের বিরূপ করা চলে না) ও সমালোচনা লিখেয়েদের কাছে। ৫-১০ কপি লেখকের। ৫০০ কপি ছাপার বাকি বিক্রি হতে কয়েক বছর বা দশক। তাতে কিছু আসে যায় না, কারন বইয়ের প্রোডাকশন কস্ট ওই লাইব্রেরি কপি বিক্রি করেই উঠে যায়। প্রোডাকশনটা প্রেস্টিজিয়াস হল, পরের লেখক তাঁর বই করতে দেবেন, বাজারে নাম ছড়াবে, আর অবহেলিত সাহিত্যিকের সমগ্র ছাপানোর গৌরব তো রইলই। দে'জ বোধহয় এই বাজারে একমাত্র অন্ধের দেশে কানা বলা চলে - তবু বিক্রি করে, তবু বিজ্ঞাপন করে, তবু রিপ্রিন্ট করে। ওদের ক্যাটালগের যা রেঞ্জ তাতে কোন নামই অস্পৃশ্য মনে হয় না, কিন্তু তবু অযত্ন বা একনিষ্ঠ পাঠকের থেকে দামের পাঁচিলের পিছনে লেখককে ছিনিয়ে আনার অসৎ ব্যবসা করতে দেখি না। দে'জ এর কাউন্টারে গেলে যে কোনো সাধারণ পাঠককেও ২৫% ছেড়ে দিতে কুন্ঠা দেখি না। যারা ঘর সাজানোর জন্যে কেনে আর যাঁরা বিত্তবান, এটুকু অর্থসম্মান প্রিয় লেখকের জন্য প্রণামী দিতে পেছপা নন, তাদের দুই শ্রেণীকে বাদ দিলে নিরুপায় একান্ত অনোন্যোপায় তন্নিষ্ঠ কিছু পাঠকই কেনে। নতুন পাঠকের কাছে পৌঁছতে পারেন না লেখক আর। ফলে ক্রমশ আরো নীশ আরো অবস্কিওর আরো অচর্চাসম্ভব ঘেরাটোপের মধ্যে ঢুকতে থাকেন, যা দুষ্প্রাপ্যতার কারণে আর নয়, কারণে বাজারে প্রাপ্য রচনাবলী। হ্যাঁ মেনস্ট্রীমের কাজ সহজতর হয়, কারণ এটা সহজেই প্রমাণ করা যায় যে দ্যাখ কেউ কিন্তু আদতে কেনেনা এর বই। সুতরাং এর লেখার মধ্যেই রয়েছে কোনো খামতি। ফেলুদা সমগ্রের বিক্রির পাশে কমলকুমার প্রবন্ধ সমগ্রর বিক্রি তুলনা করলে সহজেই বোঝা যায়, কে 'ভালো' লেখক। ছোটো প্রকাশনার ৩০০ কপি ছাপায় পড়ার লোক যদি থেকে থাকে ২৫০ জন, যাঁরা পড়ে সেই লেখা নিয়ে চর্চা করবেন, বড় প্রকাশনা থেকে সেই লেখকের ৫০০ কপির প্রকৃত পাঠক এভাবেই নেমে আসে ১০-২০-৫০ জনায়।
    সন্দীপন আজকালের কাছে তো শুধু উপন্যাসে। তারা তো সত্যিই প্রতি পুজোসংখ্যাতে উপন্যাস ছেপেছে সন্দীপনের। ছোটো গল্পে তো মিত্র ও ঘোষ, গদ্যে তো প্রতিভাস। গদ্যে অদ্রীশ বিশ্বাসের কৃপায় তিনি সামগ্রিক লেখালেখির আদ্দেক নিয়েই সমগ্রীভূত। বাকি আদ্দেক হারিয়ে যাবে। যেমন দীপেন্দ্রনাথের তিন চতুর্থাংশ রিপোর্তাজ হারিয়ে যাবে, সমগ্র হিসেবে অতি সামান্য গ্রন্থিত হওয়ায়। উদয়ন ঘোষ প্রায় পুরোটাই হারিয়ে যাবেন ১০% লেখাও বই হয়নি বলে। সেদিক থেকে অন্তত অমিয়ভূষণের, কমলকুমারের, হারিয়ে যাওয়া লেখালেখি কম। এবং মুশায়েরা র পত্রিকাও লাইব্রেরি সেট ধরে কিনে নিয়ে যায়। ফলে অ্যাকাডেমিক লেখালেখি, অধ্যাপকদের দিয়ে, ছাত্রদের জন্য, পাতা ভরায়। প্রকৃত চর্চা হয় কি? গতে বাঁধা প্রত্যাশিত বাক্যসম্ভারের গোনাগাঁথায় নিবিড় পাঠসঞ্জাত উপলব্ধির অনন্যতার বিদ্যুৎচমক পাওয়া যায় কি? আমার কিন্তু মনে হয় না নামী প্রকাশনা ছাপছে বলে এই লেখকেরা আদৌ বৃহত্তর মেইনস্ট্রীম পাঠকদের পাঠাভ্যাসে, চর্চায় ঢুকছেন।
  • অর্জুন অভিষেক | 113.219.47.29 (*) | ২৫ মার্চ ২০১৮ ০৭:৫৬84890
  • খুব তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। অনেক কিছু জানতে পারলাম।

    অমিয়ভূষণ মজুমদারের মত লেখকদের নিয়ে আরো আলোচনা হোক।
  • | 116.210.206.40 (*) | ২৫ মার্চ ২০১৮ ০৯:২৬84882
  • অমিয়ভূষণ সত্যিই এক বিরল প্রজাতীর লেখক। কেন তেমন জনপ্রিয় নন, সেটা একটু অবাকই লাগত। কারণ 'গড় শ্রীখন্ড' বা 'রাজনগর' ত খুবই সুখপাঠ্য।

    আমি এই প্রথম বোধহয় আস্ত একটা লেখা পড়লাম অমিয়ভূষণের উপর। অনেক ধন্যবাদ লেখককে।
  • সৈকত | 116.203.145.110 (*) | ২৫ মার্চ ২০১৮ ১০:১৭84883
  • অসীম রায়ের ডায়েরীতে এন্ট্রি ছিল, ষাটের দশকের গোড়ার দিকের - কোচবিহারের সাহিত্য সভা থেকে ফিরে এসে - যে অমিয়ভূষণ লেখালেখি নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন। কথাবার্তায় সেরকমই মনে হয়েছিল অসীম রায়ের।

    কিন্তুন লক্ষ্য করে দেখি, শুধু উপন্যাসগুলোয়, ঔপন্যাসিকের মন, অমিয়ভূষনের মন, সেই গড় শ্রীখণ্ড থেকে শেষ উপন্যাস, অতি বিরল প্রজাতি অবধি, অতীত, অনতিঅতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের মধ্যে ঘুরে বেরিয়েছে। ইতিহাস আর ভূগোল সমেত। অভিজাত, জমিদার আর গরীব মানুষদের নিয়ে।

    সাতিশয় হারামজাদা মধু সাঁধুখা ষোড়শ শতকের, আঠারো শতকের দোম আন্ন্তোনিয়ো, আবার অনেক পিছিয়ে গিয়ে চাঁদ বেনে।

    ভবিষ্যতের নিউ ক্যালকাটা।

    পঞ্চাশের দশকে দুখিয়ার কুঠি - একটা রাস্তা যা হিলহিলিয়ে সাপের মত একটা জনপদে ঢুকে আসছে, মানুষের অনিবার্য সম্মুখগতিতে বেদনা লুকিয়ে থাকতে পারে, তার আখ্যান। হয়ত উত্তরবঙ্গ, কিন্তু ভৌগলিক স্থান অনির্দিষ্ট !

    সত্তর দশকে, এক্ষণ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা, ফ্রাইডে আইল্যাণ্ড অথবা নরমাংসভক্ষণ নিয়ে। সে গল্প, এদেশেরই নয়। রৌদ্রজ্জ্বল জামাইকায় !!

    আরও পরে। মহিষকুড়ার উপকথা, হলং মানসাই কথা, মাকচক হরিণ - উত্তরবঙ্গ, প্রান্তিক মানুষ, শুধু খিদের গল্প নয়, বেদনার গল্প।

    আশির দশকে কোন এক সময়ে বিশ্ব মিত্তিরের পৃথিবী, বাবা-মেয়ের ইন্সেসচুয়াস সম্পর্ক। আশি আর নব্বই দশক জুড়ে বার তিনেক নতুন করে লেখা তাসিলার মেয়র। পাহাড়ী শহর, ফরেস্ট আর খাদ আর রিজ আর জীবন অরণ্যপথ।

    আর এতসব ইতিহাস-ভূগোল ইত্যাদি, এসব তো একটা ফ্রেম। আসল লক্ষ্য তো তার গল্প বলা যার নাম - জীবন মহাশয়। যে দিনের বেলা উজ্জ্বল, রাতের বেলা গর্জাচ্ছে আর নাকানি-চোবানি খাওয়াচ্ছে সবাইকে।

    হতাশ যে হননি সেটা বোঝাই যায়। ইম্যাজিনেটিভ, আর্টিস্টের এক বিশেষ ধাঁচ। লিখনে কী ঘটে, তার প্রমাণ !
  • h | 212.142.105.203 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৩84891
  • অমিয়ভুষণের 'লিখনে কি ঘটে' আনন্দ র একটা রিটেল স্টোর থেকে কিনেছিলাম, কিন্তু আনন্দ র পেপার ব্যাক না প্যাপিরাস এর , সেটা ভুলে গেছি।

    বইয়ের দাম আর তার জেনেরাল অ্যাকসেস আর রেয়ার লেখক দের আরো রেয়ার হয়ে যাওয়া এই সব নিয়ে বক্তব্য মোটামুটি সঠিক কিন্তু দুশ্চিন্তা করে কি করব। বাংলা আকাদেমি দায়িত্ত্ব না নিলে ডেফিনিটিভ কিন্তু সস্তার এডিশন সম্ভব না। সেটা সবার জন্য জীবনেও হবে না।

    আনন্দমেলা , সত্যজিত রায় আর শীর্ষেন্দু আর দেশ পত্রিকা যে দেশে এবং ভাষায় কয়েকটা প্রজন্মের আপামর পাঠকের নিয়মিত বাংলা পড়ার শেষ স্মৃতি, সে দেশে নিজের ভাষার পাঠাভ্যাস কমে গেলে অন্তত হারানোর বিশেষ কিসু নাই ঃ-)))) এর পরে হয়তো লোকে স্মরণজিতের জন্য হা হুতাশ করবে, করে বলবে, আহা আমাদের আমলে যে সব লেখার কোয়ালিটি বেরিয়েছে এখন আর দেখি না, দিস ইজ অলসো অ্যাবাউট পিপল অ্যান্ড দেয়ার মেমরিজ অফ ইউথ। কিসু করার নেই।

    তবে একটা দুটা কথা আছে। সারা পৃথিবী তে মুদ্রিত সংস্কৃতিতে একট হারাই হারাই ভাব আছে, থাকবে, উচ্চ শিক্ষিত লোকের সংখ্যা যেখানে খুব বেশি, সার্কিটের বাইরে যে কেউ যে কোন লোকের বই ফস করে তুলে পড়তে পারে সেখানে ও এই সব হা হুতাশ আছে। কি আর করা যাবে। সবটাই আকাডেমি, বা দায়িত্ত্বশীল পাবলিশার বা লেখকের স্মৃতিতে গড়ে ওঠা ট্রাস্ট , সরকারী অনুদান ইত্যাদি দিয়ে ম্যানেজ হবে না, শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়া , প্রচুর বাড়া এবং শিক্ষা মানেই কেবল চাকরির জন্য শিক্ষা নয়, এই ধারণা ই তো মৃত প্রায় এ বিশেষ ভাইবা লাভ নাই। এখন বাংলা ছোটো পত্রিকা চলে, বাংলা হনার্স বা সোশিওলোজি হনার্স এর একটি ভালো ছাত্র দের উত্তর লেখার সাহায্য করার জন্য, আমি সেটাকেই আপাতত চর্চা বলে ধরে নেবো কি করব টা কি। এদিকে লাইব্রেরি অ্যাকসেস না থাকায়, একেবারে ছোটো বাড়িতে স্থান সংকুলান না হওয়ায়, ঘটি বাটি পরিবার সব ই তো বানের জলে ভাসার উপক্রম হচ্ছে কি আর করবো। তাই বলে কি যা বেরুচ্ছে পড়ব না?
  • এলেবেলে | 212.142.119.56 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৮ ০৩:৫৩84894
  • @--

    চমৎকার লিখেছেন। প্রকাশনার এমত গলিঘুঁজির হিসেব সত্যিই জানা ছিল না। রামমোহন ফাউন্ডেশনের দাক্ষিণ্যে যদি বাংলা বই এবং ম্যাগাজিনের ব্যবসা নির্ভরশীল হয় তবে তাই হোক। আসলে জলার্ক যেমন একদা সতীনাথ, মানিক, তারাশঙ্কর বা জগদীশ গুপ্তকে নিয়ে কাজকম্মো করেছিল তা বিলুপ্তপ্রায়। অনুষ্টুপের সমর সেন সংখ্যা কিনেছিলাম বোধহয় আশি টাকায়, সে বই কেন সাতশো হয় কে জানে। লিটল ম্যাগাজিনের সন্দীপ দত্ত আর পেরে ওঠেন না, আরেকটা সন্দীপ দত্ত বা অনেক সন্দীপ দত্ত আর হওয়ারও নয় বোধহয়। পিডিএফ-এর দৌলতে ছাপা বই কেনা ক্রমশ কমছে। বাড়ছে লেখকের মৃত্যুর পর তাঁদের নিয়ে ব্যবসা। জীবনানন্দ, অমিয়ভূষণ, অসীম রায় সবার ক্ষেত্রেই সেটা প্রযোজ্য।

    সন্দীপনকে আজকাল শুধু গিলে নেয়নি, চন্দ্রিলের ভাষায় 'বছরবিয়োনি' করে ছেড়েছিল। তাঁর বোলবোলাও শুরু হচ্ছে তাঁর মৃত্যুর পর। প্রতিভাসের দু'খণ্ড গদ্যসমগ্রতেও আজকাল!
  • h | 213.99.211.132 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৮ ০৬:২৪84892
  • এনরিক ভিয়া-মাতা (Enrique Vila-Matas), রোবারটো বোলানো, কারলো রুই জুফো স্প্যানিশ ভাষার সাহিত্যে বোরহেস পরবর্তী যুগের বিবলিওফিলিয়া এবং তৎঅসংক্রান্ত অনাচার , ব্যাভিচার কিংবা শুধুই সুখকল্পনা র সংক্রান্ত লেখা পত্তরের বড় নাম। শুধু শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বেশি হওয়ায়, অনুবাদের ব্যবস্থা থাকায় এবং পৃথিবীব্যাপী ডিসট্রিবিউশনের ব্যবস্থা থাকায় , বইয়ের প্রোডাকশনের সঙ্গে জড়িত ব্যবস্থা পেশাদারী হওয়ায়, খুব কম দামী বই না হওয়া সত্ত্বেও হাজার হাজার কপি বিক্রি হয়। এবং এর ইতিহাস হল, ৬০ সত্তরের দশকে তৈরী হওয়া স্প্যানিশ ভাষা সাহিত্য সম্পর্কে ইংরেজি পাঠক দুনিয়ার আগ্রহ, আর ফিকশনের জগতে ইউরোপের ভাষার সেন্ট্রালিটি। তো সেন্ট্রালিটি না থাকা সত্ত্বেও জাপানি সাহিত্যে এসব হচ্ছে, আপাতত যা অবস্থা, বাংলায় পারলে বাংলাদেশ পারবে। পশ্চিম বঙ্গে পেঙ্গুইন গাঁতিয়ে অনুবাদ করছে না তা না, তবে সেখানেও মেনস্ট্রীম পপুলারের প্রতিফলন। সাহিত্য আকাদেমি এদিক ওদিক যা করে, তার পরে ডিসট্রিবিউশনের কলে সব কুপোকাত। অতি শিক্ষিত রা বিকল্পে বড় সংখ্যায় আগ্রহী না হলে খুব কিসু করা মুশকিল।
  • -- | 127.194.203.255 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৮ ০৬:৩৭84895
  • সন্দীপ দত্ত যেদিন থেকে র‍্যাকে তাকে জমানো লিম্যার স্তুপকে পুঁজি বুঝেছেন, খ্যাতি গুরত্ব ও উপার্জনের সিঁড়ি বুঝেছেন সেইদিন তিনি মারা গেছেন। প্রেতাত্মার সগর্জন বাতকর্মচর্চায় উতসাহী নই।

    পিডিএফ এর দৌলতে ছাপা বই কেনা কমছে -- এটি একটি আদ্যন্ত মিথ যা মতলববাজ বইঘুঘু (দুষ্প্রাপ্য বইয়ের সংগ্রহ পুঁজি করে যাদের রিপ্রিন্ট, সটীক রিপ্রিন্ট, সম্পাদিত সংগ্রহ ও গুরুত্ব অর্জনের ব্যবসা), অসত প্রকাশক, ননটেকস্যাভি পুরাতনপন্থী কানপাতলা আন্দাজী-আপ্তবাক্যউচ্চারী পাঠক আর অকর্মা লাইব্রেরিফিলিক অ্যাকাডেমিশিয়ানদের স্বকপোলকল্পিত জুজুভীতির উতপাদন। গত দশ বছর ধরে এই তর্ক করে আসছি। এবাক্য প্রমাণ করতে পারলে বার্বিকিউ নেশনে দ্বিপ্রাহরিক আকন্ঠভোজ বাজি রইল।

    শুধু অমিয়ভূষণের ১১খন্ড পিডিএফ করে যদি প্রকৃত সদ্দিচ্ছায় বিনিমূল্যে বিলিবন্দোবস্ত শুরু করতে পারেন, এক বছরের মধ্যে দে'জ কে পরের সংস্করণ ছাপতে হবে।আরেক বছরের মাথায়
  • -- | 127.194.203.255 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৮ ০৬:৩৭84896
  • সন্দীপ দত্ত যেদিন থেকে র‍্যাকে তাকে জমানো লিম্যার স্তুপকে পুঁজি বুঝেছেন, খ্যাতি গুরত্ব ও উপার্জনের সিঁড়ি বুঝেছেন সেইদিন তিনি মারা গেছেন। প্রেতাত্মার সগর্জন বাতকর্মচর্চায় উতসাহী নই।

    পিডিএফ এর দৌলতে ছাপা বই কেনা কমছে -- এটি একটি আদ্যন্ত মিথ যা মতলববাজ বইঘুঘু (দুষ্প্রাপ্য বইয়ের সংগ্রহ পুঁজি করে যাদের রিপ্রিন্ট, সটীক রিপ্রিন্ট, সম্পাদিত সংগ্রহ ও গুরুত্ব অর্জনের ব্যবসা), অসত প্রকাশক, ননটেকস্যাভি পুরাতনপন্থী কানপাতলা আন্দাজী-আপ্তবাক্যউচ্চারী পাঠক আর অকর্মা লাইব্রেরিফিলিক অ্যাকাডেমিশিয়ানদের স্বকপোলকল্পিত জুজুভীতির উতপাদন। গত দশ বছর ধরে এই তর্ক করে আসছি। এবাক্য প্রমাণ করতে পারলে বার্বিকিউ নেশনে দ্বিপ্রাহরিক আকন্ঠভোজ বাজি রইল।

    শুধু অমিয়ভূষণের ১১খন্ড পিডিএফ করে যদি প্রকৃত সদ্দিচ্ছায় বিনিমূল্যে বিলিবন্দোবস্ত শুরু করতে পারেন, এক বছরের মধ্যে দে'জ কে পরের সংস্করণ ছাপতে হবে।আরেক বছরের মাথায়
  • -- | 127.194.203.255 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৮ ০৬:৩৯84897
  • তৃতীয়।
  • h | 213.99.211.132 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৮ ০৭:১৫84893
  • আরেকটা যেটা বলা হল না, বিবলিও ফিলিয়া নিয়ে ফিকশন দরকার, খালি আলোচনায় স্বল্প পঠিত সাহিত্যের পপুলারিটি বাড়বে না।
  • অর্জুন অভিষেক | 37.131.213.189 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৮ ০৮:২২84898
  • লেখাটা আবার পড়লাম। দ্বিতীয়বার বেশী ভাল লাগল।

    "কিন্তু তুলনামূলক ভাবে অপ্রচলিত কোনও লিখনশৈলী, যার ব্যতিক্রমী প্রকরণ আন্দোলিত করতে পারত সনাতন কাঠামো, গল্পবলার প্রথাগত প্রকরণকে আক্রমণ করে খুঁজে আনতে পারত নতুন কৌশল – তেমন বারুদগন্ধী বিপজ্জনক পথে প্রায় কেউ নেই।"

    এই ট্রেন্ডটা কি বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে বেশী লক্ষ করা যায় ? বিশ্বসাহিত্যে (বিশ্বসাহিত্যই বললাম কারণ ইংরেজি সাহিত্যের অনেক হীরকখণ্ডই অন্য ভাষাভাষী সাহিত্যের অনুবাদ) কিন্তু অপ্রচলিত ধারাটি সমাদৃত হয় বেশী। জানিনা ভুল বললাম কিনা।

    অমিয়ভূষণের লেখার কিছু উদ্ধৃতি মারকোয়েজের লেখা মনে করিয়ে দেয়।
  • শঙ্খ | 52.110.151.22 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৮ ০১:৪০84905
  • অমিয়ভূষণ পড়া হয়নি,পড়তে হবে। এই বইমেলায় তো যাওয়াই হলনা, আগের বারে গিয়ে খোঁজ করেও পাইনি, কেননা পাবলিশার জানতাম না। আর নেটে বোধহয় একটাই পিডিএফ পাওয়া যায়, সেটাও হাতের কাছে নেই।
  • h | 213.99.211.18 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৮ ০২:১২84906
  • একটা সোজা মেথড আছে।

    ১। দেজ এ যান
    ২। ভীড় ঠেলে, বলুন , অমিয়্হ ভূষণ এর যা আছে দিন।
    ৩। অনেকক্ষণ হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকুন আর দেখুন, লোকে অন্য বই কিনছে।
    ৪। অ্যাবাউট তিরিশবার দৃষ্টি আকরষণ করুন সেই লোকটির যিনি আপনার ৬ ইঞ্চি দূরে দাঁড়িয়ে।
    ৫। মানুষের আপনাকে অ্যাভয়েড করার আশ্চর্য্য ক্ষমতাকে অ্যাপ্রিসিয়েট করুন।
    ৭। পেছন থেকে কেউ, খ্খীরে সন্কো কত্তদিন দেকিনি তোখে কেউ বলে উঠলেও, কিছুতেই কাউন্টার ছেড়ে যাওয়ার প্রলোভন সংবরণ করুন।
    ৬। বই কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে গেলে, হাসিমুখে বই নিন ও টাকা দিন।
    ৭। ঘামতে ঘাঅমতে বেরিয়ে এসে প্যারামাউন্টে শরবৎ খান।
    ৮। পরের দিন যে বইটি প্রথমে পড়তে চেয়েছিলেন, সেটার জন্য আরেকবার যান ও এক থেকে ছয় ফলো করে বইটা এবারে পেয়ে যান।
    ৯। ৭ ফলো করুন।
    ১০। একমাস পরে থরো থরো বুকে তিনটে পোবোন্দো পোসব করুন।
    ১১। পাই কে পাঠান।
    ১২। যাঁরা পড়বেন, নিশ্চিত থাকুন তাঁরাও ১- ১১ ফলো করবেন। আপনি পরের লেখক ধরুন।
  • h | 213.99.211.18 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৮ ০২:১২84907
  • একটা সোজা মেথড আছে।

    ১। দেজ এ যান
    ২। ভীড় ঠেলে, বলুন , অমিয়্হ ভূষণ এর যা আছে দিন।
    ৩। অনেকক্ষণ হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকুন আর দেখুন, লোকে অন্য বই কিনছে।
    ৪। অ্যাবাউট তিরিশবার দৃষ্টি আকরষণ করুন সেই লোকটির যিনি আপনার ৬ ইঞ্চি দূরে দাঁড়িয়ে।
    ৫। মানুষের আপনাকে অ্যাভয়েড করার আশ্চর্য্য ক্ষমতাকে অ্যাপ্রিসিয়েট করুন।
    ৭। পেছন থেকে কেউ, খ্খীরে সন্কো কত্তদিন দেকিনি তোখে কেউ বলে উঠলেও, কিছুতেই কাউন্টার ছেড়ে যাওয়ার প্রলোভন সংবরণ করুন।
    ৬। বই কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে গেলে, হাসিমুখে বই নিন ও টাকা দিন।
    ৭। ঘামতে ঘাঅমতে বেরিয়ে এসে প্যারামাউন্টে শরবৎ খান।
    ৮। পরের দিন যে বইটি প্রথমে পড়তে চেয়েছিলেন, সেটার জন্য আরেকবার যান ও এক থেকে ছয় ফলো করে বইটা এবারে পেয়ে যান।
    ৯। ৭ ফলো করুন।
    ১০। একমাস পরে থরো থরো বুকে তিনটে পোবোন্দো পোসব করুন।
    ১১। পাই কে পাঠান।
    ১২। যাঁরা পড়বেন, নিশ্চিত থাকুন তাঁরাও ১- ১১ ফলো করবেন। আপনি পরের লেখক ধরুন।
  • h | 213.99.211.18 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৮ ০২:১৮84908
  • ১৩। মনে রাখবেন, বাংলাদেশে যাঁরা বই পড়তে চেয়েছেন, তাঁরা বনগা লোকাল ট্রেনে কনফিডেন্স বিল্ডিং কোর্স করে এসছেন। পরিশ্রমের বিকল্প কিংবা বিকল্পের পরিশ্রম ইত্যাদি সম্পর্কে যা যা মনে রাখা দরকার সেগুলো ঝালিয়ে নিন। ফুসু ফুসু বইপ্রেমী হলে টিকিট কেটে নিউ ইয়র্ক গিয়ে সেখানে বাংলা বই অনুবাদ করে , সেল্ফ পাবলিকেশন করে ছেপে, সুখে অয়মাজনে বেচার ব্যবস্থা করে প্রথম কপিটি কিনুন।
  • T | 129.74.180.59 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৩84909
  • কেবল বলে হোঃ হোঃ হোঃ শীর্ষেন্দুর পিসি,
    লিখত খালি কুমড়ো কচু নিবন্ধ কম বেশী,
    ডিমগুলো সব লম্বা মতন কুমড়ো কেন বেঁকা,
    বাঁদিপোতায় ঘোতন কোথায় ইত্যাদিও লেখা!

    অষ্টপ্রহর ভাবত পিসি আওয়াজ করে মিহি,
    বনগাঁলোকাল দ্বন্দ্ব কীরূপ সমাস বহুব্রীহি।

    অ্যালার্ম বেজেই কুটুত করে চিমটি কাটে ঘাড়ে,
    খাগের শাদা কলম দিয়ে খোঁচায় পাঁজর হাড়ে,
    লিখলে তুমি প্রবন্ধ সে হেসেই লুটোপুটি,
    যতক্ষণ না লিখচ তোমার কিচ্ছুতে নেই ছুটি।
  • h | 212.142.105.203 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৮ ০৩:০২84900
  • আজে বাজে কথা বলতে গিয়ে যেটা বলা হয় নি, সেটা হল, এই প্রবন্ধটার জন্য বিপুল দাস মহাশয় কে অনেক ধন্যবাদ। অমিয় ভূষণ আমার প্রিয়তম লেখক দের মধ্যে নন, কিন্তু ওনার ভিসন টা আমার ভালো লাগে, দার্শনিক অবস্থান গ্রহণ করাটা আমার ভালো লাগে। ছোটো করে হলেও একটা পোয়েটিক্স এর অ্যাটেম্প্ট উনি করেছেন, আধুনিকতার এর চেয়ে বড় পরিচয় আর হয় না। আমার শুধু কনরাড মুগ্ধতা টা বোরিং লেগেছিল, হার্ট অফ ডার্কনেস এর মত ওভার হাইপড বোকা বোকা লেখা আমি সত্যি ই কম পড়েছি। এতটাই ওভার হাইপড, এমনকি সার্ত্র র উপন্যাস গুলো ও আ ডিস্টাঅন্ট সেকন্ড ;-) বিপুল বাবুর এই প্রবন্ধটা আমার এতটাই ভালো লেগেছে, গড় শ্রীখন্ডে আমি কেন খানিকটা নিরাশ হয়েছিলাম, হয়তো লিখে ফেলার চেষ্টা করব। তবে আমার ধারণা সেটা হয়তো আমারি সীমাবদ্ধতা।
  • এলেবেলে | 212.142.96.93 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৮ ০৩:১৭84910
  • @--
    একটু যেন তাল কাটল এবার।

    সন্দীপ দত্ত যে বহুদিনই বড্ড প্রোফেশনাল হয়ে গেছেন সেটা যাঁরা ওখানে নিয়মিত যান বা যেতেন তাঁরা তো জানেনই, যাঁরা মাঝেমধ্যে ঢুঁ মারেন তাঁরাও জানেন। কিন্তু কথাটা ছিল কেন আমরা আরেকটা সন্দীপ দত্ত বা অনেকগুলো সন্দীপ দত্ত করলাম না বা নিজেরা হতে চাইলাম না? সহজ উত্তর, আমরা সবাই কাটো খাসি ভাগে আছি-র দলে।

    'পিডিএফ এর দৌলতে ছাপা বই কেনা কমছে' এই 'মিথ' সশব্দে ভাঙতে গিয়ে 'কানপাতলা আন্দাজী-আপ্তবাক্যউচ্চারী পাঠক' এবং তা 'প্রমাণ করতে পারলে বার্বিকিউ নেশনে দ্বিপ্রাহরিক আকন্ঠভোজ বাজি' রাখার ব্যাপারটা বড্ড দৃষ্টিকটু ঠেকল। দেখুন তো পাঠক পয়সা খরচ করে সন্দীপন কেনেন কিনা যদি তিনি এটার নাগাল পান -
    http://boibilas.blogspot.in/2017/08/blog-post_5.html
  • রিভু | 117.0.228.218 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৮ ০৩:৫৩84911
  • সব পাঠকের কথা বলতে পারবোনা নিশ্চই, কিন্তু আমি পিডিএফ/ কিন্ডল এ পড়তে রীতিমতো বিরক্তি বোধ করি। বাংলা বই তেমন কেনা হয়না কারণ বহুদিন বাইরে। ইংরিজি বইই কিনি।

    "কানপাতলা আন্দাজী-আপ্তবাক্যউচ্চারী পাঠক' এবং তা 'প্রমাণ করতে পারলে বার্বিকিউ নেশনে দ্বিপ্রাহরিক আকন্ঠভোজ বাজি' রাখার ব্যাপারটা বড্ড দৃষ্টিকটু ঠেকল" । একমত। মানে এক্সপ্রেশন এ আমার আপত্তি আছে । এবং এ নিয়ে কোনো প্রামাণ্য স্টাডি আছে বলেও জানিনা।
  • অর্জুন অভিষেক | 149.5.231.76 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৮ ০৬:১৪84901
  • আমি অমিয়ভূষণ মজুমদারের লেখার সঙ্গে একেবারেই পরিচিত নই। এই লেখাটি পড়ে অনেক তথ্য পেলাম।

    এই লেখায় লেখক অমিয়ভূষণের যে লেখাটি উদ্ধৃত করেছেন তাতে তাঁর প্রকৃতির প্রতি রোম্যান্টিক বোধ ও ডিটেল মার্কোয়েজের কথা মনে করাল। তবে লেখক উল্লেখ করেছেন অমিয়ভূষণের ন্যারেটিভ স্টাইল ঔপনিবেশিক। এটা লেখাটা পড়ে মনে হওয়া।

    অমিয়ভূষণের লেখা না পড়ে স্পষ্ট ভাবে বলতে পারছিনা।

    জোসেফ কনর‍্যাড আমার খুব প্রিয়। 'হার্ট অব ডার্কনেস' অনার্সের সময়ে টেক্সট ছিল। তখন ইংলিশ অনার্সের সিলেবাসে ব্রিটিশ অথারদের ঠাসাঠাসিতে কনর‍্যাড ছিলেন একজন রিফ্রেশিং চেঞ্জ।

    Conrad is a very important author of his time.
  • -- | 127.194.203.147 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৮ ০৬:৩৫84912
  • আপনি নিজের কথাই বলুন। পিডিএফ তো পেয়েছেন। হার্ড কপি বই আর নিশ্চয়ই কেনেন নি। তাই কি?
    যদি তা না হয়, অন্যদের সম্পর্কে এই ধারণ করছেন কেন? আন্দাজে? না কেউ বলেছে, ওই তো নেট এ পিডিএফ আছে, তাই কেউ কেনে না? এই পিডিএফ নামিয়ে গোগ্রাসে পড়েছে, সন্দীপনকে, তার ভাষা বাক্য বিন্যাসকে ভালো বেসেছে, অথচ পরে সুবিধে পেয়েও বইগুলো আর কেনেনি এমন একজনকেও ব্যক্তিগত ভাবে আপনি নিজে চেনেন কি?

    না, আরেকজন সন্দীপ দত্ত হয়ে লাভের লাভ কিছু হত না, কারণ একজন সন্দীপ দত্ত হয়েও লাভের লাভ কিছু হয় নি। সুবিমল মিশ্রও তো শুনেছিলাম ১২০০০ লিটিল ম্যাগাজিন সংগ্রহে রেখেছিলেন। কী হয়েছে? লরি করে আবার কলেজ স্ট্রীটের এজেন্টের কাছে সব বিক্রি হয়ে গেছে। সন্দীপ দত্ত খাসি কেটেছেন? বটে, তা আপনি কোনো ভাগ পেয়েছেন কি? আমি তো পাইনি। ফলে কেউ কাটতে গেলেও তার থেকে ভাগ পাবার আশা করিনা। জেলায় জেলায় শহরে শহরে অমন সংগ্রাহক ছড়িয়ে আছে। অশোক রায় (অলোক রায়ের ভাই, শিবনারায়ণ রায়ের বংশের) সম্পর্কে জানেন নিশ্চয়ই। কেউ কেউ প্রতিষ্ঠান করেছেন, কেউ কেউ করেন নি। আর প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে গিয়ে সন্দীপবাবু যা যা করেছেন, সেসব করার প্রবৃত্তি সকলের না থাকাই বাঞ্ছনীয়।

    ফিজিকাল লাইব্রেরির কনসেপ্ট শেষ হয়ে গেছে। লাইব্রেরি আর আর্কাইভিং এর অনলাইন ভার্সানই ভবিষ্যৎ। এই শেষ কথা বলে, অমিয়ভূষনের সুতোয় অনর্থক নর্দমা ঘাঁটা বন্ধ করলাম।

    সমস্ত সংগ্রাহক ও লিটিল ম্যাগাজিন প্রকাশকেরা এক ছাতার তলায় আসবেই একদিন না একদিন। ধুলোখেলা-য় এ কাজের শুরু হয়েছে, আরো কিছু মোষ তাড়ানো স্বেচ্ছাসেবক জোটার দেরি। তারপরে আর বেশি দিন লাগবে না।
  • h | 52.110.137.130 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৮ ০৭:১৫84902
  • ইপসিতা খ্যাল রেখো কনরাডের উপরে একটি পোবোন্দো আমরা এইখান থিকা জানি পাই
  • h | 52.110.137.130 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৮ ০৭:১৫84903
  • ইপসিতা খ্যাল রেখো কনরাডের উপরে একটি পোবোন্দো আমরা এইখান থিকা জানি পাই
  • জু.স.লো | 132.167.136.228 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৮ ০৭:৪২84913
  • সার্কিটগুলি অগ্নিপ্রতিরোধ করুক ড্রোনগুলি প্রজাপতির মত উড্ডীন ও ভিমরুলের মত হুলবান হোক।
    মর্মপীড়ের জয়গান।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন