এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো

  • দেশ বিদেশের উপকথা

    মিঠুন ভৌমিক লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ১৪ নভেম্বর ২০১১ | ১৭০৪ বার পঠিত
  • জাপানের আইনো সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত উপকথা

    ঈশ্বর যখন পৃথিবী সৃষ্টি করলেন, তখন সবাইকে দিলেন জলে-স্থলে-আকাশে বিচরণের সমান ক্ষমতা। যে কেউ যেকোনো রূপ ধরতে পারত। সবাই মিলেমিশে বেশ শান্তিতেই ছিলো। সমস্ত জন্তুজানোয়ারের মধ্যে মানুষেরাই চটপট এগিয়ে যাচ্ছিলো উন্নতির সিঁড়ি বেয়ে। তারা দারুন সব খাবার বানাতে শিখে গেছে ততদিনে, তাদের রসদও প্রচুর। একবার হল কি, দুই ধূর্ত শেয়াল মিলে ফন্দি আঁটল, কি করে ফাঁকি দিয়ে মানুষের খাবার চুরি করা যায়। দুজন মিলে গাছের লতাপাতা দিয়ে কিছু গয়নাগাঁটি বানিয়ে, রবারের ভুয়ো কেক তৈরী করে, মানুষের রূপ ধরে রওনা দিলো। উদ্দেশ্য, পথে প্রথমেই যে গ্রাম পড়বে, সেখানকার লোকদের ঠকানো।

    এখন, ঐ পাজী শেয়ালদের ওপর লুকিয়ে নজর রেখেছিলেন খোদ ঈশ্বর। তিনি করলেন কি, নিজে এক বৃদ্ধ বণিকের রূপ ধরে শেয়ালদের চলার পথে একটা নকল গ্রাম বানিয়ে অপেক্ষায় রইলেন। আসেপাশের যত পাখপাখালি, তাদের জড়ো করে সব্বাইকে মানুষের রূপ দিলেন তারপর ছদ্মবেশী সেই বণিক। রাতারাতি নকল গ্রাম লোকসমাগমে মুখর হল।

    যথাসময় শেয়ালদ্বয় পৌঁছে গেল সেই গ্রামে। তারপর তাদের যা অভ্যর্থনাটাই হল। জিভে জল আনা ফল আর মিষ্টি দিয়ে তাদের পেট ভরে খাওয়ানো হল। তারপর রাতে আগুন ঘিরে মানুষের ছদ্মবেশী পাখিদের ছন্দময় নাচ দেখিয়ে তাদের মনোরঞ্জন করা হল। ঠগ দুজন তো দারুণ খুশি। পরেরদিন বিদায় নেওয়ার সময়েই ওরা ঠিক করে ফেলল, আবার আসতে হবে।

    দুদিন পরেই আবার তারা ফিরে এল সেই গ্রামে। এবার তারা তৈরী হয়েই এসেছিলো, যাতে অনেক খাবার সাথে নিয়ে যেতে পারে। বুড়ো বণিকের বাড়িতে অনেক মূল্যবান রত্ন ছিলো, সেসবও তাদের চোখ এড়ায় নি। কিন্তু এবার গ্রামটা কেমন চুপচাপ, কোন লোকও দেখা যাচ্ছে না। আই হোক, ইতিউতি চেয়ে ওরা যেই না বাড়ির মধ্যে ঢুকেছে, অমনি দড়াম করে সদর দরজা বন্ধ হয়ে গেল।

    তারপর সেই বৃদ্ধ দেখা দিলেন। শেয়ালেরা অবাক হয়ে দেখল, ধীরে ধীরে তাঁর রূপ পাল্টে যাচ্ছে। অবশেষে স্বমূর্তিতে ঈশ্বর দেখা দিলেন। তারপর চলল তিরস্কারের পালা। বেশ করে বকুনি দিয়ে ঈশ্বর বললেন,"" এই প্রথমবার বলে কোন কঠিন শাস্তি দিলাম না তোদের। কিন্তু এরপর আবার কাউকে ঠকানোর চেষ্টা করলে যথোচিত ফল ভোগ করতে হবে, বলে রাখলাম। আর, এখন থেকে সবার জাদুক্ষমতাও আমি কেড়ে নিলাম। যে যার নিজের রূপে, নিজের জায়গায় আবদ্ধ থাকবে।

    শেয়ালদের এমনিতেই ভয়ে বুক শুকিয়ে গেছিলো। বারবার ঘাড় নেড়ে তারা গভীর জঙ্গলের দিকে দিলো দৌড়। আর কখনো তারা চালাকি করার চেষ্টা করেনি।



    সু-উপকথা (সুপকথা নয় কিন্তুক, সু একটি উপজাতির নাম, ইংরেজিতে sioux)

    এক গল্পদাদু সময় কাটাবার জন্যে সবাইকে জড়ো করে গল্প বলছিলেন .....

    "" ভোটের নিয়ম কানুন তোমরা জানো? আমরা ইন্ডিয়ানরা ভোট নিয়ে মোটেই ভাবি না। কারণযেই জিতুক না কেন, হারতে আমাদেরই হয়। কিন্তু ভোট নিয়ে একটা ছোট্ট গল্প তোমাদের শোনাই।অনেকদিন আগেকার কথা। কুকুরদের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হচ্ছিল। তার জন্যে আয়োজিত " বৃহত্তর সারমেয় সম্মেলনে " একজন উঠে দাঁড়িয়ে বলল, " পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে বুল্ডগকে সুপারিশ করছি। তিনি শক্তিমান আর দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। "

    " কিন্তু তিনি মোটেই ভাল দৌড়োতে পারেন না "

    চেঁচিয়ে উঠল আরেকজন-- "তাড়া করতে না পারলে ভাল যোদ্ধা হয়ে লাভ কি? আমি গ্রে হাউন্ড কে সমর্থন ও সুপারিশ করছি "।

    এই কথা শোনামাত্রই বেশ কিছু কুকুর তারস্বরে বলে উঠল, "মানছিনা মানবোনা! উনি জোরে দৌড়োন সেকথা ঠিক, কিন্তু কারুর কাছে ঠ্যাঙানি খেলে সেই দৌড় কোন কাজে লাগবে? ঐ দৌড় খালি পালিয়ে বেড়াবার জন্যেই। এমন নেতা আমরা চাইনা।"

    তখন এক কুৎসিত বদখত কুকুর উঠে দাঁড়িয়ে বজ্রকন্ঠে ঘোষনা করল- " কুকুরদের পরিচয় তাদের ঘ্রাণশক্তিতে। তাই যে ভাল গন্ধবিচার করতে পারে সেই হবে রাষ্ট্রপতি।" একথা বলামাত্রই আরো একজন একই গোত্রের কুকুর লেজ আছড়ে তাকে সমর্থন করল।

    সুতরাং এটাই স্থির হল যে রাষ্ট্রপতি হতে গেলে ঘ্রাণশক্তি ভাল হতে হবে। তখন একটা ভারি গোলমাল শুরু হল। সবাই একে অন্যের গা শুঁকে বোঝাতে চাইল যে সে-ই যোগ্যতর। ""

    এই পর্যন্ত বলে বুড়ো একটু হেসে যোগ করলেন, "" তাই আজো যদি কখনো রাস্তায় কুকুর দেখতে পাও, দেখবে তারা পরষ্পরের গা শোঁকাশুঁকি করছে। যোগ্য রাষ্ট্রপতি ওরা আজো পায়নি।''

    ইনুইট উপকথা

    দাঁড়কাক আর পেঁচা দারুণ বন্ধু। একদিন কাক পেঁচার জন্যে একটা পোশাক বানালো, তার সারা গায়ে সাদা কালো ফুটকি। বদলে পেল একজোড়া জুতো।

    এরপর একদিন পেঁচা কাকের জন্য একটা সাদা জামা বানাতে শুরু করল। কিন্তু জামাটা কাককে পরাতে গেলেই সে বড্ড লাফাত। এমনই একদিন কাককে জামাটা পরিয়ে দেখা হচ্চিল ফিট করেছে কিনা। যথারীতি কাক লাফাচ্ছিল। কাকের এই তিড়িং বিড়িং পেঁচার মোটেই পছন্দ ছিলনা। তাই সে চোখ পাকিয়ে বলল, "খবরদার! আমি কিন্তু লম্ফ হাতে উড়ছি। লাফাস না!"

    কিন্তু কে শোনে কার কথা। কাক লাফিয়েই চলল। তখন রেগেমেগে পেঁচা তার সেই কুপির সমস্ত কালিঝুলি ঢেলে দিল কাকের জামায়। কাক খুউব কাঁদল। কিন্তু তখন যা হবার হয়ে গেছে। সেই থেকে কাক এমন কালো।



    ফ্ল্যাটহেড (রেড ইন্ডিয়ান উপজাতি) লোককথা

    মুখিয়ার মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে। তাই তিনি সব জোয়ানদের জড়ো করে ঘোষণা করলেন, " যার পা সব থেকে শক্তিশালী, তার সাথে বে দেব আমার মেয়ের।"

    (বোঝাই যাচ্ছে যে অর্ধেক রাজত্বও তার)

    এই শুনে সবার আগে এল এক নেকড়ে। তার দাবী তার ঢ্যাঙা পায়ে সে জোরে দৌড়োতেও পারে, আবার শক্তপোক্ত হওয়ায় সহজে ক্লান্ত ও হয়না। তাই সেই উপযুক্ত পাত্র। তখন এক ভালুক এগিয়ে এসে কয়েকটা ডন-বৈঠক দিয়ে বলল, " আমার পায়ের পেশী লোহার মত শক্ত। তাই আমার সাথেই বিয়ে হওয়া উচিত"। সত্যি বলতে কি কারুর এ বিষয়ে খুব একটা সন্দেহ ছিলনা। কিন্তু মুখিয়ার মিষ্টি মেয়েটাকে ভালুকের পাশে কিছুতেই মানাবেনা, সেই কথা ভেবেই তারা চুপ করে এ ওকে ইশারা করতে লাগল। ভিড়ের মধ্যে ছিল এক নীলাম্বর পাখি। এইসব গোলমালে সে টুক করে জঙ্গলে গিয়ে পায়ে কিছু শুকনো আগাছা বেঁধে নিল। তারপর সদর্পে সবার সামনে এসে বলল, " আমার মত শক্ত পা কারো নেই। এই পায়ে আমি ঝড় ঠেলে উড়ে বেড়াই, বাতাস কেটে ছুটি।" মুখিয়াও সঙ্গে সঙ্গে তার সাথে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিল। ( বুড়ো ভারি চালাক, এই সুযোগে ভালুককেও এড়ানো গেল, সে বেচারা ততক্ষণে মহুয়া খেয়ে বেহুঁশ)। যাই হোক, বিয়ের পর রীতি অনুযায়ী পাখি তার বউকে পিঠে করে নদী পার হয়ে নতুন তাঁবুতে নিয়ে যাবে, এটাই ঠিক ছিল। কিন্তু নদী পার হতে গিয়েই বিপত্তি। জলে ভিজে পাখির পায়ে বাঁধা আগাছা গেল খুলে। তখন তার সরু ঠ্যাং দেখে কারুরি বুঝতে বাকি রইলনা যে পাখি যা বলেছে সব ধাপ্পা। কিন্তু তখন আর কিছু করার ছিলোনা বলে সবাই বুদ্ধিমানের মত খুব একচোট হেসে নিয়ে যে যার বাড়ির পথ ধরল। (শুধু ভালুক সেদিন বেশি নেশা করেছিল কিনা জানা যায়নি।)

    চিত্রাঙ্কন: পট্ট (বয়স নয়)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • গপ্পো | ১৪ নভেম্বর ২০১১ | ১৭০৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন