এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • নতুন সরকারঃ কিছু প্রস্তাব -- খসড়া দুই

    admin লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৩ জুন ২০১১ | ৯২২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • আগের খসড়াটি পেয়ে অনেকেই নানা মতামত দিয়েছেন। তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ। কিছু মতামতের ভিত্তিতে দ্বিতীয় খসড়াটিও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে যথাস্থানে। সেটিই হুবহু আকারে এবার প্রকাশ করা হল বুলবুলভাজায়।
    সময়ের চাপে এবারও খসড়াটি ঠিক দানা বাঁধেনি। খসড়াটি আজ প্রকাশিত হলেও যেহেতু এটি পাঠানো হয়েছে যথেষ্ট আগেই, তাই সমস্ত মতামতগুলি নিয়ে এখানে আলোচনাও করা যায়নি। পরবর্তী খসড়ায় অতি অবশ্যই বাকি মতামতগুলিকে স্থান দেওয়া হবে। সে কারণেই এইটি নিয়েও আলোচনা আহ্বান করা হচ্ছে।

    i§ÏjL¡
    ¬l¦Q™¡Ïml fr ®b®L ea¤e plL¡®ll L¡®R ®hn ÏLR¤ ÏQ¿¹¡i¡he¡ Mps¡ BL¡®l ®fn Ll¡ qmz H¬Ïm M¤h AÏieh Hje euz pÇf§ZÑ HLÏV e£Ïaj¡m¡ q®u JW¡l c¡ÏhJ Hl ®eCz ÏL¿º p£Ïja p¡j®bÉÑl j®dÉ ®b®LJ ®hn ÏLR¤ L¡S HLÏV AÂl¡®SÉl plL¡®ll f®r L®l JW¡ pñh h®m j®e L®l®Re ®hn ÏLR¤ j¡e¤oz HÏV ®pC ÏQ¿¹¡lC HLÏV ÏmÏMa l©f®lM¡z

    fËÙ¹¡h ¬Ïm Bm¡c¡ L®l qu®a¡ M¤h ea¤e Hje euz ÏL¿º Hl AÏiehaÄ c¤ÏV S¡uN¡®az

    fËbjax
    “সীমিত সামর্থ্য”কে দুর্বলতা না ভেবে সেটাকেই শক্তিতে পরিণত করার একটা বিকল্প দার্শনিক স্থান এই খসড়ায় উঠে এসেছে। যেহেতু এটি একটি কার্যকরী প্রস্তাব এবং খসড়া, তাই দর্শন সংক্রান্ত জায়গাটি সরাসরি নেই। কিন্তু খসড়াটিকে তার সামগ্রিকতায় বিচার করলে, অন্ত:সলিলা দর্শনটিকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

    দ্বিতীয়ত: এমন কিছু মানুষ এটি লিখেছেন, যাঁরা সরাসরি রাজনীতি বা প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁরা নিজেদের মতো করে নিজের সামর্থ্যের বাইরে বেরিয়ে এসেই এই প্রকল্পটিতে হাত দিয়েছেন। এবং এটি সরকারের কাছে পৌঁছে দেবার চেষ্টা করেছেন। প্রথাগত গণ্ডীকাটা সীমানার বাইরে বেরিয়ে এসে কিছু করার যে আকুতি, সেটিও ঐ একই দর্শনগত জায়গা থেকেই। যে, সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও কিছু করে দেখানো সম্ভব।

    এবং সেই কারণেই এটি শুধু একটি তাঙ্কিÄক রচনা নয়। হাতেকলমে কিছু করে দেখানোর চেষ্টার প্রথম ধাপ। সম্পূর্ণতার দাবী এর নেই। খসড়াটিতে সব বিষয়ে সমস্ত মতামত দিয়ে দেওয়া হয় নি, বা যায় নি, সেটা সম্ভবও নয়। কাজ এবং আলোচনার মাধ্যমেই এই প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। সেটা করার চেষ্টাও করা হবে। এই খসড়ায় যাঁরা মতামত দিয়েছেন, তাঁরা অনেকেই নানা ক্ষেত্রে নানাপ্রকার পেশাদারি বা অপেশাদারি দক্ষতার অধিকারি। এই খসড়াটি কার্যকর করার চেষ্টা হলে তাঁদের অনেকেই যে সেই কাজে এবং একই সঙ্গে খসড়াটিকে সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে হাত বাড়িয়ে দেবেন, তাতেও সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

    ফলে সামগ্রিকভাবে বলা যায় যে, এই খসড়ার লক্ষ্য হল একটি বিকল্প চিন্তাভাবনার পদ্ধতির একটি রূপরেখা তৈরি। বিকল্প চিন্তাভাবনার সেই রূপরেখার লক্ষ্য একটিই। সামগ্রিকভাবে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে থেকেও একটি সরকার তার তথাকথিত সীমাবদ্ধতাগুলিকে কিভাবে তার শক্তিতে পরিণত করতে পারে, তার একটি চিত্র তৈরি করা।



    এক। পূর্বশর্ত

    নানা বিষয়ে নতুন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নীতি কী হবে, বা হওয়া উচিত সে নিয়ে আলোচনার অনেক অবকাশ আছে বা থাকবে। কিন্তু যে কোনো নীতিরই কিছু পূর্বশর্ত থাকে। নীতি ভালো হোক বা মন্দ, পূর্বশর্তগুলিকে ঠিকঠাক না বুঝে নিলে যে কোনো নীতিই মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। এই পূর্বশর্তগুলি নির্মিত হয় কঠিন বাস্তব দিয়ে। সরকারি নীতি স্থির করার আগে এই পুর্বশর্তগুলিকে ভালো করে দেখে নেওয়া দরকার:

    এক। সরকারের ঘাড়ে এই মুহূর্তে দুই লক্ষ কোটি টাকার দেনা। সরকারের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি এবং ঋণ নিতে নিতে ক্রেডিট লিমিটের বিপদসীমা ইতিমধ্যেই অতিক্রম করে ফেলেছে বা ফেলতে চলেছে। উন্নয়নের কাজে কোনোরকম টাকা ঢালা খুব কঠিন।

    দুই। সরকারি ব্যবস্থা একটি জগদ্দল পাথরের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা চূড়ান্ত অদক্ষ। সরকারি আয়ের বেশিরভাগ অংশটাই যায় কর্মচারিদের মাইনে দিতে, কিন্তু এই বিপুল আমলাতন্ত্র কোনো কাজে লাগেনা। বরং যেটুকু টাকা উন্নয়নে ঢালা হয়, তার বেশিরভাগ অংশটাই চলে যায় বিভিন্ন হাতে। যথাস্থানে পৌঁছয়না।

    যেকোনো নীতি প্রণয়নের আগেই, তাই, এই দুটি পূর্বশর্ত বা বাস্তব পরিস্থিতির মোকাবিলা করা প্রয়োজন। বিভিন্ন মিডিয়ায় এই নিয়ে, বিশেষ করে, অর্থের সমস্যাটিকে নিয়ে নানা প্রকার আলোচনা চলছে। তার যথার্থ কারণও আছে। কারণ, নীতি যাই হোক না কেন, হাতে টাকার যোগান না থাকলে যেকোনো রকম প্রকল্পে হাত দেওয়াই কঠিন। সমস্ত সদিচ্ছা সঙ্কেÄও টাকার যোগাড়ের এবং/ অথবা (অপ)ব্যয়সংকোচের ব্যবস্থা না করা গেলে কোনো জনহিতকর প্রকল্পেই হাত দেওয়া অসম্ভব। ফলে মিডিয়ায় মূলত: অর্থের সংস্থান নিয়ে আলোচনা চলছে। কেন্দ্রীয় সরকার বা অন্য কোনো জায়গা থেকে কীভাবে টাকা যোগাড় করা যায় সে সবই এই আলোচনার মূল।

    অর্থের যোগানের যে প্রয়োজন আছে, সে নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। এই আলোচনাগুলিরও যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে। কিন্তু এই প্রস্তাবে আমরা কেবলমাত্র টাকা যোগাড় করার লক্ষ্যের বাইরে অন্য দিকে তাকাব। একটি বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে পুরো ব্যাপারটিকে দেখব। আমাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের অভাবকে আমরা এতদিন আমাদের দুর্বলতা বলে ভেবেছি। এই প্রস্তাবে আমরা তাকে আমাদের শক্তিতে পরিণত করার কথা ভাবব।

    অর্থের এবং অন্যান্য রিসোর্সের অভাব পৃথিবীতে অনেক উদ্ভাবনের জননী। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পানীয় জলের অভাব জন্ম দিয়েছে জল সঞ্চয়ের নানা অভিনব পদ্ধতির। একই ভাবে সেচের জলের অভাব পৃথিবীতে জন্ম দিয়েছে নানাপ্রকার জলসেচের এবং জলসঞ্চয়ের পদ্ধতির। জ্বালানি তেলের ক্রমাগত দামবৃদ্ধি অন্যতর জ্বালানির দিকে আমাদের নজর ফিরিয়েছে। এই দৃষ্টান্তগুলিকে খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে, রিসোর্সের বা তথাকথিতভাবে সামর্থ্যের অভাব, ঐতিহাসিক এবং সামাজিকভাবে আমাদের দুটি জিনিস শিখিয়েছে এবং শেখায়। এক, রিসোর্সের বা সামর্থ্যের দক্ষতর ব্যবহার। দুই, অপব্যয় রোধ।

    এই ঐতিহাসিক এবং সামাজিক শিক্ষাকে যদি আমরা আমাদের বর্তমান পটভূমিতে ব্যবহার করি, তাহলে দেখব, যে, অর্থের যোগানের ব্যবস্থা করার সঙ্গে সঙ্গে অর্থের দক্ষতর ব্যবহার এবং অপব্যয় রোধও একান্ত প্রয়োজন। আর্থিক সামর্থ্যের অভাব আমাদের সামনে সুযোগ এনে দিয়েছে, অর্থের দক্ষতর ব্যবহার এবং অপচয় রোধে উদ্যোগী হবার জন্য নতুন কিছু পদ্ধতি উদ্ভাবনের। কারণ অর্থের ব্যবহারের কাঠামো (অর্থাৎ সরকারি প্রশাসন) কে যদি সহজতর এবং দক্ষ না করা যায়, তবে হাতে টাকা থাকলেও এবং তা ব্যয় করলেও অন্বিষ্ট ফলের সামান্য এক ভগ্নাংশই হয়তো পাওয়া যাবে। বিপুল ব্যয়ের বিনিময়ে কিছু অসাধু মানুষের টাকা রোজগারের নানা উপায় খুলে দেওয়া হবে, সঙ্গে উপরি পাওনা হবে জনতার ক্ষোভ। উল্টোদিকে যদি ব্যবস্থাকে দক্ষ করা যায়, তাহলে তা ব্যয়সংকোচেও সহায়ক হতে পারে। আগে একশো টাকা খরচা করে যে ফল লাভ করা যাচ্ছিল, এখন হয়তো পঁচিশ টাকার বিনিময়েই সেখানে পৌঁছানো সম্ভব।

    এই কারণেই কারণেই অর্থের যোগাড় করার চেয়েও বেশি জরুরি হল, সফল ভাবে অর্থ ব্যবহার করা, মানুষকে পরিষেবা দেবার যথাযোগ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা। গুরুত্বের বিচারে সরকারি ব্যবস্থাকে দক্ষ করে তোলা তাই এই প্রস্তাবের এক নম্বর স্থানেই থাকবে। অর্থনৈতিক সামর্থ্যের অভাব আমাদের সামনে এই নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে বাধ্য করছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমরা কিকরে প্রশাসনকে আরও দক্ষতর করে তুলতে পারি এবং আমাদের আর্থিক সামর্থ্যের অভাবকেও কিঞ্চিৎ প্রশমিত করতে পারি, তারই একটি খসড়া চিত্র এখানে দেবার চেষ্টা করা হল।

    দক্ষতর প্রশাসনের লক্ষ্যে:

    এক। নজরদারি। সরকারি কর্মীবাহিনী বিপুল। তার একাংশের যথাযথ ব্যবহারেই বিপুল কর্মযজ্ঞ নিখুঁতভাবে সমাধা করা সম্ভব। এই রাজ্যেই তার সাম্প্রতিকতম সফল উদাহরণ হল নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনা। এই তথাকথিত অদক্ষ প্রশাসনকে ব্যবহার করেই নির্বাচন প্রায়-নিখুঁতভাবে পরিচালিত হল। সাধারণ মানুষের ভোট-পরিষেবা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। রাজনৈতিক দলগুলিরও নেই। সরকারি কর্মকাণ্ডের পরিচালনার একটি সফল মডেল হতে পারে এটি।
    লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, নির্বাচন কমিশন একটি মাত্র যাদুমন্ত্রবলে প্রশাসনের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয়েছিল। সেই মন্ত্রটি হল নজরদারি। এর দুটি অংশ। এক, আমলাতন্ত্রের প্রতিটি অংশকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব প্রদান। দুই, দিনশেষে ফলাফল বুঝে নেওয়া।

    এই নজরদারির নানারকম উপকরণ থাকতে পারে। সরাসরি সব অফিসে নির্বাচন কমিশনের মতো ওয়েবক্যাম বসানো যেতে পারে। বা না-ও যেতে পারে। তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। কিন্তু একটি স্বচ্ছ এবং স্বশাসিত কমিশন করা যেতে পারে, যারা সমস্ত বিভাগেই এই নজরদারির কাজটি করবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাজের দায়িত্ব বিভাগের। কিন্তু স্বশাসিত কমিশন কাজটি জানবে ও তার উপর নজর রাখবে। এবং প্রোমোশন বা ডিমোশন বা বেতনবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেবে (অবশ্যই বিভাগের সঙ্গে আলোচনার পর, কিন্তু স্বাধীনভাবে)। একটা উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, যে, ধরা যাক, ঝাড়গ্রামের কোনো করণিক কী কী কাজ করবেন, সেটা কমিশন ঠিক করে দেবে না। কিন্তু তিনি কোনো কাজে গাফিলতি করছেন কিনা, বা বিধি ভাঙছেন কিনা, টেন্ডারে জালিয়াতি করছেন কিনা, সেটা কমিশন দেখবে।

    দুই। ই-গভর্নেন্স। প্রশ্ন হল, কমিশন জানবে কী করে, যে, ঝাড়গ্রামের করণিকের কী কী কাজ আছে। বা তিনি সেই কাজ ফেলে রেখেছেন কিনা। নির্বাচন কমিশনের মতো সমস্ত সরকারি দপ্তরে ওয়েব-ক্যাম নিশ্চয়ই বসানো যায়, কিন্তু তাতেও কাউকে তাহলে সর্বক্ষণ নজর রাখতে হবে। নজরদারির সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হল ই-গভর্নেন্স। ধাপে ধাপে সমস্ত সরকারি ফাইলকেই ইলেকট্রনিক আকারে পরিণত করে ফেলা। এবং হাতে-হাতে ফাইল চালাচালি একেবারে না করা। এতে করে কোন ফাইল, কোন দপ্তরে কতক্ষণ বা কতদিন আটকে থাকল, সেটা খুব সহজে জানা যাবে। কমিশন চাইলেই সহজেই তা জানতে পারে। এবং প্রয়োজনানুসারে ব্যবস্থা নিতে পারে।

    আপাত: দৃষ্টিতে মনে হতে পারে, এটি একটি বহু হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। আদতে তা নয়। এবং সে ব্যাপারেও বিপুল ব্যয় সংকোচ করা সম্ভব। প্রথমত: দামী সফটওয়্যার প্রযুক্তির পরিবর্তে কেবলমাত্র “ওপেন সোর্স” সফটওয়্যার ব্যবহার করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত: প্রাথমিক ভাবে জটিল প্রযুক্তিগত সিস্টেম না বানিয়ে কাজ চালানোর মতো ফ্ল্যাট ফাইল চালাচালি করেও কাজ সম্পন্ন করা যায়। মোট কথা হল, যে, প্রযুক্তির দাস না হয়ে প্রযুক্তির প্রভু হতে পারলে, অকারণে অপচয় না করেও একটি সহজ কিন্তু কার্যকরী ই-গভর্ন্যন্স ব্যবস্থা তৈরি করা যায়।

    তিন।আভিযোগ সেল। এই পুরো প্রক্রিয়াটি শুধু প্রশাসনিক নয়। এতে গ্রহীতা বা মানুষের অংশগ্রহণও জরুরি। সে কারণে কমিশনের অধীনেই একটি পুরোদস্তুর অভিযোগের সেল থাকবে। যারা মানুষের বক্তব্য টেলিফোনে শুনবে। ব্যবস্থা নেবে। এবং অভিযোগকারীকে লিখিত বা মৌখিক ভাবে ফলাফল জানাবে। ই-গভর্নেন্স চালু হলে, এটা খুব সহজেই করা সম্ভব। সেই একই সিস্টেমকে ব্যবহার করে কোনো আবেদনের বর্তমান অবস্থা, দেরি হবার কারণ, সবই যে কোনো গ্রাহককে জানিয়ে দেওয়া সম্ভব। কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা সোজাসুজি ইন্টারনেট ব্যবহার করেও এই সিস্টেম ব্যবহার করতে পারবেন। আর গ্রামে-গঞ্জে যে বিপুল সংখ্যক ইন্টারনেটহীন মানুষ আছেন তাঁরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই এই পরিষেবা ব্যবহার করতে পারবেন। মোবাইল ফোনের ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার অনুপাতে কম হলেও এক বিপুল জনগোষ্ঠী মোবাইল ব্যবহার করেন।

    চার। নজরদারির উপর নজরদারি। সামাজিক নজরদারি। নজরদারি শুধুমাত্র একটি আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। সেরকম হলে ব্যবস্থাটি অতি-আমলাতান্ত্রিকতায় ভেঙে পড়তে বাধ্য। কেবলমাত্র সরকারি অতি-নিয়ন্ত্রণ দুর্নীতি রুখতে সমর্থ হয় না। বরং ছোটো সংস্থাগুলিই আমলাতান্ত্রিকতার শিকার হয়। একটি প্রামাণ্য পেপারে দেখা যাচ্ছে:
    Over-regulationisyetanotherproblem.Smallentrepreneursarethetypicalvictimsofcorruptfactoryinspectors;giventhenarrowmarginsonwhichtheyoperate, thebribescansignificantlyreducetheirprospectsofsucceeding.Theprospectthataninspectorcouldcomeandshutthemdownsoonaftertheyspendtheirhard-earnedmoneytobuyasmallmachine, makesthemreluctanttoinvestinthefirstplace.
    Oneconsequenceofthefearoftheregulatoristhatsmallfirmsdonotregisterthemselves, makingthemineligibleforformalloansandotherpubliclysuppliedinputs (suchaspowersupply).
    সূত্র: http://econ-

    তাই সাধারণ মানুষের ভূমিকা শুধু অভিযোগ জানানোতেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। বরং নজরদারির প্রক্রিয়াটির উপর নজর রাখতে সামগ্রিকভাবে সাধারণ মানুষকে অংশীদার করা একান্ত প্রয়োজন। এর জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:

    ক। যথাযথ অর্থনৈতিক অডিট, এবং তার ফলাফল জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা। বহু টাকা আমলাতান্ত্রিক গাফিলতিতে ব্যবহৃত হয়না, বা ভুল কাজে ব্যবহার করা হয়। যথাযথ অডিট করলে দুর্নীতি ধরা পড়ে, কিন্তু দুর্নীতি ধরা পড়লেও পরবর্তী পদক্ষেপে অনেক সময় খামতি থেকে যায়। টাকা ব্যবহার না করার অদক্ষতা তো সাধারণভাবে চোখ এড়িয়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। সামাজিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকলে এগুলি কারো না কারো চোখে পড়বেই। এবং সে নিয়ে চাপ তৈরি হবে।

    খ। একই ভাবে কী কী অভিযোগ লিপিবদ্ধ হল, এবং তার পর কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, সেগুলিও সামাজিকভাবে প্রকাশ করা প্রয়োজন। অভিযোগ-গ্রহণকারী সেল নিজেই যেন আমলাতন্ত্রের শিকার না হয়, সেটা দেখার জন্যও এটা প্রয়োজন।

    গ। ই-গভর্নেন্সের জন্য যে তথ্যাদি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে চালাফেরা করবে, একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে তার বেশিরভাগ অংশ (যা গোপনীয় নয়), জনতার জন্য উন্মুক্ত করা হোক। মোবাইল ফোনেও এই একই পরিষেবা দেওয়া হোক। সেখানেও মতামত নেবার ব্যবস্থা করা হোক। কোনো পুকুর চুরি নজরদারি এড়িয়ে গেলে অন্য কারো না কারো নজরে পড়বেই। একই ভাবে যে কোনও দপ্তরের সামগ্রিক দক্ষতাও জনতার নজরদারির মধ্যে থাকবে।

    ঘ। ইন্টারনেট এবং বিশেষ করে সোসাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করা। প্রতিটি সরকারি দপ্তর এবং সম্ভব হলে প্রতিটি জনপ্রতিনিধি ইন্টারনেট ব্যবহার করুক। এবং মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুক। যে যোগাযোগ দ্বিমুখী। এটা নতুন কিছু নয়। উদাহরণস্বরূপ: এক, দিল্লি পুলিশ, এমসিডি এরা নিজেদের নামে ফেসবুক খুলে দিয়েছে। মানুষ সেখানে নিজেদের গল্প জানাচ্ছে। রাস্তায় কোথায় আবর্জনা সাফ হয় নি, কোথায় কোন পুলিশ হেলমেট না পরেই স্কুটার চালাচ্ছে, কোন পুলিশের বাইকের নাম্বারপ্লেট নেই, লোকে ফটো তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে দিচ্ছে। সব কিছুর যে তাতে সমাধান হচ্ছে তা নয়, কিন্তু পাবলিক ভিজিলেন্সে কিছু দোষী পুলিশ শাস্তি পাচ্ছে, দোষী এমসিডির অফিসার শোকজড হচ্ছে।

    দুই, বিহারে একটি অসাধারণ ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। যা একই সংগে তথ্য সংগ্রহের আকর, এবং জনতার দরবার। লিংক: http://cm.bih.nic.in

    এই ব্যবস্থাটিই আরও বড়ো আকারে এবং সুসংহত ভাবে ব্যবহার করা হোক। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের অসীম ক্ষমতা আজকের দিনে। এতে করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তরুণ প্রজন্মের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে।

    ঙ। প্রশাসন-জনসাধারণের মধ্যে দ্বিমুখী যোগাযোগ স্থাপন। সামগ্রিকভাবে জনতার অংশগ্রহণকে সুনিশ্চিত করতে গেলে সব মিলিয়ে এই দ্বিমুখী যোগাযোগ স্থাপনের ব্যাপারে উদ্যোগ নিতেই হবে।
    প্রয়োজন, সরকার, প্রশাসন ও জনগণকে ‘মুখোমুখি’ এনে দেবার প্ল্যাটফর্ম বানানোর, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে। ভোটের আগে যেমন নেতা, মন্ত্রীদের ‘মুখোমুখি’ লাইভ অনুষ্ঠানে আনা হয়, এধরণের অনুষ্ঠান নিয়মিত করা হোক, সরকারি, বেসরকারি সব মিডিয়াতে। টিভিতে , রেডিওতে, ইন্টারনেটে। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী, নেতা, আমলা, পুলিশ অফিসার সবাই আসবেন, উত্তর দেবেন, শুধু উপস্থাপকের প্রশ্নেরই না, লাইভ ফোন কল নেওয়া হবে। লোকে আগে থেকে মেইল করেও প্রশ্ন জানাতে পারেন, তার উত্তর ও দিতে হবে। টিভি চ্যানেলগুলি অতি অবশ্যই এই ব্যাপারে উৎসাহ দেখাবে। আর ইন্টানেট ফোরামে হলে ব্যাপারটি আর সহজ। পুরো জিনিসটিই একটি আবশ্যিক সরকারি কর্তব্য হিসেবে পালন করা হোক। এবং নিয়মিতভাবে।

    শুধু মিডিয়াই না, স্থানীয় স্তরে জনতার দরবার জাতীয় কার্যক্রমগুলিকেও একই রকম উদ্যোগ নিয়ে চালু করা হোক।

    চ। লোক আয়ুক্তকে পুনরুজ্জীবিত করা হোক। দুহাজার দশ সালের একটি সংবাদপত্রের রিপোর্টে পাওয়া যাচ্ছে:

    কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গে ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই আইন কার্যকর কর। রাজ্যের প্রথম লোকায়ুক্ত হিসাবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়োগ করা হয়। প্রথমে লোকায়ুক্তের কাজ শুরু হয় ঐ বিচারপতির বাড়িতে। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে ভবানী ভবনে লোকায়ুক্তের অফিস তৈরি হয়। অফিস তৈরি হলেও তাতে কখনও পর্যাপ্ত কর্মী ছিল না। তবুও কাজ চলছিল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি অবসর নেন। এর পর আর কোনও বিচারপতি নিয়োগ না হওয়ায় প্রায় দু’বছর লোকায়ুক্তের কাজকর্ম বন্ধ।

    জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিচারের জন্য লোক আয়ুক্তে জোর দেওয়া হোক। এতে করে জনপ্রতিনিধিদের উপর জনতার নজরদারি থাকবে।

    পাঁচ। রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। প্রশাসনের উপর সরাসরি রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ করা প্রয়োজন। এটি একটি রাজনৈতিক কর্তব্য। কিন্তু অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো রাজনৈতিক নেতা যেন দলবল নিয়ে পুলিশের উপর চাপ না তৈরি করতে পারেন, সরকারি আধিকারিকদের উপর প্রভাব না ফেলতে পারেন, সেটা দেখা অবশ্যকর্তব্য।

    এই ব্যবস্থাগুলিকে একই সঙ্গে চালাতে পারলে অবশ্যই খুব তাড়াতাড়ি প্রশাসন দক্ষতর হয়ে উঠবে। নির্বাচন কমিশনের যেমন এই একই প্রশাসনকে খুব তাড়াতাড়ি দক্ষ করে তুলতে খুব বেশি সময় লাগে নি।

    অপব্যয় সংকোচ এবং সরকারের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে:

    দক্ষতর প্রশাসন কিভাবে আর্থিক সংকটে র মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারে দেখা যাক:

    এক। দক্ষতর প্রশাসন: প্রশাসন যদি দক্ষতর হয়, তবে ব্যয়সংকোচ সহজেই হবে। নজরদারি থাকলে দুর্নীতি কম হবে। দুর্নীতি এবং চুরি কমলে প্রকল্পের খরচ কমবে। পরিষেবাও মানুষের কাছে সহজে পৌঁছবে। যে কাজে আগে একশ টাকা খরচা হচ্ছিল, আজ পঁচিশ বা পঞ্চাশ টাকাতেই তা সম্ভব হবে। মূল্যবান সরকারি অর্থের সাশ্রয় হবে।

    দুই। সমান্তরাল অর্থনীতির ধ্বংসসাধন: এটাও একটি লম্বা এবং বড়ো প্রক্রিয়া, যা সরকারি প্রশাসনকে দক্ষ করে না তুলতে পারলে সম্ভব নয়। এবং একই সঙ্গে রাজনৈতিক সদিচ্ছারও একান্ত প্রয়োজন এই কাজে। এই প্রক্রিয়ার একদিকে আছে বড়ো বড়ো শিল্পপতি নামধারী ফড়েরা, যারা এতদিন শ্রমিকের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং সরকারের টাকা মেরে কালোটাকার সমান্তরাল অর্থনীতির সাম্রাজ্য বানিয়ে ফেলেছে, তাদের ঘাড় ধরে টাকা আদায়। প্রশাসন শক্ত হলেই এটা সম্ভব। অন্যদিকে আবার আছে রাজনৈতিক / প্রশাসনিক পতাকার তলায় যারা খুব ছোটো স্কেলে “বিকল্প” অর্থনীতির রাজ্য বানিয়েছে, তাদের ধ্বংসসাধন। যেমন, ফুটপাথে যে লোকগুলি হকারি করতে বসেন, তাঁরা প্রত্যেকে ঐ জায়গাটির জন্য কাউকে না কাউকে “ভাড়া” দেন। সেই “ভাড়া” আসলে সরকারের প্রাপ্য। তার বিনিময়ে সরকার তাঁদের কিঞ্চিৎ পরিষেবাও দিতে পারে। একই ভাবে যাঁরা অটো চালান, তাঁরাও ইউনিয়নের কাছ থেকে ছাড়পত্র নেন। এই ছাড়পত্র আসলে দেবার কথা সরকারের। এবং বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করার কথা। ছোটো থেকে বড়ো, বিভিন্ন আকার ও মাত্রায় গোটা রাজ্য জুড়ে নানা “বিকল্প” অর্থনীতির চাষবাষ চলছে। কোনো রকম উচ্ছেদ ছাড়াই সরকার ন্যায়সঙ্গত ভাবেই এই অর্থনীতিকে ভেঙে দিয়ে নিজের হাতে এঁদের পরিষেবাও দিতে পারে এবং উপার্জনও করতে পারে। প্রাইভেট টিউশন, চিকিৎসায় প্রাইভেট প্‌র্‌যাকটিস – এগুলিকেও এর আওতায় আনা যায়। এঁদের থেকে কর আদায় করাটাও প্রয়োজন। অবশ্যই, এরও পূর্বশর্ত হল, দক্ষ এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন।

    তিন। সরকারি কাজে আমলাতান্ত্রিক পুনরাবৃত্তি কমানো: প্রতিটি দপ্তরে একজন করে বিষয় বিশেষজ্ঞ এবং সিস্টেম অ্যানালিস্ট বা প্রসেস কমসালট্যান্ট নিয়োগ করা। যারা একই সঙ্গে পদ্ধতিরও সরলীকরণ করবে, আবার ই-গভর্নেন্সেও কাজে লাগবে। ই-গভর্নেন্স চালু হলে এমনিতেই কিছু পরিমাণ সরকারি খরচ কমবে (স্টেশনারি, ফাইল রাখার জায়গা বাবদ)। পদ্ধতির সরলীকরণ করলে আরও কিছু কমবে। উদ্বৃত্ত কর্মীবাহিনীকে অন্য কোনো কাজে বহাল করা হবে (যেমন নজরদারির কাজে বা উন্নত পরিষেবার কাজে, যেমন দুটোর জায়গায় চারটে কাউন্টার খোলা ইত্যাদি।)।

    চার। ব্যয়সংকোচ এবং আয়ের বিকল্প সংস্থান।

    এ ব্যাপারে চিন্তায় অভিনবত্ব দেখানো প্রয়োজন। উদাহরণ স্বরূপ:

    ক। ঋণ পুনর্নবীকরণ। অসমর্থিত সূত্রের খবরে জানা যায়, যে, সরকার চড়া সুদে বহু ঋণ গ্রহণ করেছে, যার সুদ এখনও গুণে চলতে হচ্ছে। এখন নানা ক্ষেত্রে কম সুদে ঋণ পাওয়া সম্ভব। চড়া সুদের ঋণগুলি শোধ করার জন্য একই মূল্যের অল্প সুদের ঋণ নেয়া যেতে পারে।

    খ। প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিং। লাক্সারি রিসর্ট, হাই এন্ড রেস্তোরাঁ , ক্যাফে, মাল্টিপ্লেক্স, শপিং মলে ট্যাক্স বাড়ানো হোক।

    গ। ট্‌র্‌যাফিক আইন আরো শক্ত করা হোক ও তার নিয়মিত ও সঠিক প্রয়োগ করা হোক। নিয়মভঙ্গ করলে জরিমানা আদায় করা হোক। জরিমানার বদলে পুলিশের ঘুষ খাওয়া বন্ধ করতে ট্‌র্‌যাফিক পুলিশের সাথে মোবাইল ক্যামেরার বন্দোবস্ত করা হোক, যাতে ঘটনাটি পুরো রেকর্ডেড থাকে। নিয়ম বানানো হোক, যে ক্যামেরায় রেকর্ড করা না হলে গাড়ি থামানো যাবে না, আর থামানো থেকে শুরু করে ফাইন দেওয়া , পুরো অংশ ই-রেকর্ডেড হয়ে থাকবে। একটি শস্তার ডিজিট্যাল ক্যামেরার দাম একদিনের সংগৃহীত ফাইনেই উঠে আসা সম্ভব।

    এ গুলি উদাহরণ মাত্র। কিন্তু সমস্ত স্তরে এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন।

    সব মিলিয়ে এই পদক্ষেপগুলি এ যেকোনো নীতি প্রয়োগেরই আবশ্যিক পূর্বশর্ত। দক্ষ প্রশাসন এবং দক্ষতর উপায়ে অর্থ ব্যবহার, না থাকলে যে কোনো নীতিই মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। এর পরে বিভিন্ন নীতির প্রশ্নে আরও নানাপ্রকার নির্দিষ্ট উপায় আসতে পারে, যা প্রশাসনকে দক্ষতর করে তুলবে, অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের দ্বার খুলে দেবে।



    দুই। গুরুত্বপূর্ণ নীতিসমূহ।

    সরকারকে নানা বিষয়ে নানা নীতি গ্রহণ করতে হবে। সমস্ত বিষয়ে এই স্বল্প পরিসরে মতামত প্রকাশ অসম্ভব। এখানে দেওয়া হল অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কয়েকটি নীতি, সম্পর্কে কিছু প্রস্তাব।

    শিল্প ও কর্মসংস্থান

    ১। ল্যান্ড ইউজ ম্যাপ থেকে পতিত , অনাবাদী জমি চিহ্নিতকরণ করা হোক।

    ২। এই অনুযায়ী সারা রাজ্যকে কৃষি, শিল্প, মাইনিং, ফিশারি, ফরেস্ট্রি, যেখানে যা অগ্রাধিকার পাবে, তার ভিত্তিতে বিভিন্ন জোনে ভাগ করা। এলাকাগুলিতে সার্ভে করে মানুষের সাথে কথা বলে কৃষি, শিল্প নিয়ে তাঁদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, দাবি-দাওয়া, পরামর্শ শোনা ও সেগুলিকে লিপিবদ্ধ করা হোক। এই রিপোর্টগুলিকে জনতার নজরদারির আওতায় (publicdomain) রাখা বাঞ্ছনীয়।

    ৩। ল্যান্ড ইউজ ম্যাপ থেকে পতিত, অনাবাদী জমিকে শিল্পের জন্য চিহ্নিতকরণ, যদি স্থানীয় মানুষ তাতে রাজি থাকেন। শিল্পের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের (পঞ্চায়েত ইত্যাদি) অনুমতি বাধ্যতামূলক হোক। ঐ অঞ্চলে রাস্তা, পরিবহন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ইত্যাদি পরিকাঠামো গঠন করা হোক। প্রয়োজনে প্রাইভেট কোম্পানীর সাথে পার্টনারশিপে।

    ৪। ভারি শিল্প হলে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে হোক। শিল্পপতিকে বিশাল মাত্রায় কর ছাড় ও ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ হোক। সরকারের সাথে এই ডিলগুলি প্রথম থেকে পাবলিক করা হোক। পূর্বশর্ত হিসেবে আরোপ করে লোকাল এমপ্লয়মেন্ট সুনিশ্চিত করা হোক। জমি নেওয়ার পর থেকে শিল্পস্থাপনের অগ্রগতি মাপা হোক। সন্তোষজনক না হলে (জমি নিয়ে ফেলে রাখলে), একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর জমি নিয়ে নেওয়া হোক, এবং লাইসেন্স বাতিল করা হোক।

    ৫। বন্ধ কারখানাগুলি নিয়ে শীঘ্র কাজ শুরু হোক। যেখানে খোলা সম্ভব, উদ্যোগ নেওয়া হোক। নতুবা ঐ জমিতে নতুন শিল্পস্থাপন হোক। শিল্পের জন্য নতুন জমি অধিগ্রহণ না করেও বর্তমান অবস্থাতেই অনেক শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।

    ৬। শিল্পপতিদের জন্য অবশ্যই সিঙ্গল উইন্ডো ব্যবস্থা চালু করা হোক, যাতে তাঁদের অকারণে লাল ফিতের ফাঁসে পড়তে না হয়। কিন্তু এই ব্যবস্থা যেন বিশেষ করে বিশেষ কিছু বড়ো শিল্পপতির জন্য না হয়। সাধারণ ব্যবস্থা হিসেবে যে আমলাতান্ত্রিকতা কমানোর প্রস্তাব ইতিপূর্বেই দেওয়া হয়েছে, এটি যেন সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আসে। নতুবা বিশেষ সুবিধাভোগী একটি শিল্পপতি শ্রেণী তৈরি হবে, যারা রাজনৈতিক এবং সামাজিক ভাবে সাধু-অসাধু নানা সুবিধা ভোগ করবে, আর বাকি জনসাধারণের মধ্যে তৈরি হবে ক্ষোভ। যা মোটেই কাম্য নয়।

    ৭। এই সমস্ত শিল্পের ক্ষেত্রে, এবং সামগ্রিক ভাবে গোটা কর্মসংস্থানের প্রশ্নে, নূন্যতম মজুরির আইন এবং অন্যান্য শ্রম আইনকে কড়া হাতে পালন করা হোক। বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, যে, নূন্যতম মজুরির বিধিকে লাগু করার প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষের মধ্যে একেবারে পিছনের সারিতে। এই গাফিলতি দূর করা হোক। একই ভাবে দীর্ঘদিন ধরে অসাধু ব্যবসায়ীরা শ্রমিক কর্মচারিদের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অন্যান্য দেয় চুরি করেছে বলে শোনা যায়। এই প্রবণতাকেও কড়া হাতে দমন করা হোক। শিল্প হোক। শিল্পপতিরা নিয়ম মেনে, সমস্ত সুযোগ সুবিধা নিয়েই শিল্প করুন, কিন্তু শ্রমিকের অধিকারও একই সঙ্গে রক্ষিত হোক।

    ৮। প্রতিটা শিল্পের সাথে সম্ভাব্য পরিবেশ দুষণের সম্ভাবনা আগে থেকে খতিয়ে দেখা, পরিবেশবিদদের কমিটি গঠন করে তাঁদের সাথে আলোচনা করে তারপর এগোনো।

    ৯। শিল্পগুলি করার সময় কলকাতা থেকে দূরে অন্যত্র বিকেন্দ্রীকরণের কথা ভাবা হোক।

    ১০। ভারি শিল্পের বদলে শ্রমনিবিড় শিল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।

    এ বিষয়ে দুটি রিসার্চ পেপারের উল্লেখ করা যেতে পারে যেখানে ভারত ও প:বঙ্গের পক্ষে উপযোগী শ্রম নিবিড় শিল্পগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

    ক। পেপার এক: http://www.icrier.org/pdf/WorkingPaper237.pdf

    রিপোর্ট অনুযায়ী চর্মজাত দ্রব্য, বস্ত্র, জুয়েলারী, স্পোর্টস সামগ্রী তৈরি, বাইসাইকেল তৈরি, এগুলোকে লেবার ইন্টেন্সিভ শিল্প বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, এবং এগুলিতে ভাল এমপ্লয়মেন্ট গ্রোথের ট্রেন্ড ও সম্ভাবনা আছে বলে জানানো হয়েছে। প:বঙ্গে এই শিল্পগুলির বিকাশের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা উচিত।

    উক্ত পেপারে তিরুপুর আপারেল পার্কের মডেল অনুসরণ করে সরকারকে আরো পার্ক বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে কাপড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা (smallgarmentmanufacturer) নিজেদের সমবায় গঠন করেছেন, বড় বড় garmentexporter রা এই সমবায়কে ব্যবসা আউটসোর্স করছে। যেখানে এই রিপোর্টে কোলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দুটি শ্রমনিবিড় শিল্পের ‘হাব’এ এধরণের পার্ক তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, চর্মজ শিল্প ও জুয়েলারী শিল্প।

    এ ব্যাপারে পেপারে বলা হচ্ছে:

    TheApparelParkinTirupurisfullyfunctionalandisassistingmanufacturersexportersinmeetingtheburgeoningdemandforapparels.Weobservedthatlargeexportersareoutsourcingorderstosmallmanufacturerswhooperateoutofthispark.Thelargefirmscanworkcloselywithunitslocatedintheparkintermsofproductspecificationsandquality.Werecommendthatthegovernmentshouldexplorethepossibilityofsettingupsuchparksinthosedistrictsofthestateswhichare‘hubs’oflabourintensiveexportsinleather, textiles, sportsgoods, bicycles, andgemsandjewellerysectorswithprivateinitiative (fromnon-residentIndiansandmultinationalcorporations).Inthecaseofsportsgoods, districtsnearJalandharandMeerutshouldbelookedatforsettingupofsportsgoodsparksand;forgemsandjewellery, districtsnearChennaiandKolkatacouldbelookedatforsettingupgoldjewelleryparks.

    Similarly, districtsborderingLudhianaandleathergoodsproductionhubslikeChennai, Agra, Kanpur, Kolkata, andNCRtoocouldbelookedat.Thiswouldnotonlyprovideemploymenttoworkersneartheirhomestherebydoingawaywithpotentialmigrationforemploymentopportunitiesbutitwouldalsogeneraterevenueatthedistrictlevel.

    খ। পেপার দুই। http://econ-
    এখানে বলা হচ্ছে, চাহিদা অনুয়ায়ী ছোট শিল্প বানানো উচিত, যেমন শস্তায় এসি মেশিন, ইলেক্ট্রনিক চিপ, ঘড়ি, গৃহসরঞ্জাম, খেলনাপাতি (এগুলি সবই শ্রমনিবিড় শিল্প)। স্বল্প শিক্ষা, মূলধন ও দক্ষতা নিয়ে ও প্রফেশানাল ম্যানেজমেন্ট ছাড়াও এই শিল্পগুলিতে উচ্চ উৎপাদনশীলতা আনা সম্ভব, যেটা প:বঙ্গের জন্য আদর্শ।

    এই রিপোর্ট অনুযায়ী, প:বঙ্গে smallscaleindustry স্থাপনের উপর বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘চাইনিজ’ মডেলে এই শিল্প কীভাবে করা যেতে পারে, তাই নিয়ে রিপোর্টের কিছু অংশ কোট করা হল:

    ThereisabigmarketpotentialforWestBengalsmall-scaleunitsinthesupplyofcheaptoys, stereos, watchesandhouseholdimplementstotherestofIndia.ThisiswhatChinasuppliestotherestoftheworld, andhasformedthebasisoftheirphenomenalindustrialsuccessinthepasttwodecades.Onecanaddtothelistofhighpotentialconsumerproductsthefollowingaswell:garments, leather, foodprocessing, sparepartsandmetal-working, industriesallofwhichhavehadalongtraditioninWestBengal.

    TheChinesestrategyisparticularlyattractiveinbeinglabour-intensiveandbroad-based.Underwhatissometimeshalfironicallyreferredtoaspeople’scapitalism, alotofChina’soutputisproducedinrelativelysmallfirmslocatedinsmalltownsandvillages.Thereasonisthattheproductshavebeensochosenthatanentrepreneurwithlimitededucation, littlecapital, semi-skilledworkersandnoprofessionalmanagementcanstillachieveahighlevelofproductivity.OnealsoobservessimilarpatternsemerginginPunjab, thoughwithadifferentproductmix.IndeedWestBengalalsohasalongtraditionofsuccessfulsmall-scaleenterprises.TheengineeringworkshopsofHowrahwereoncefamousalloverIndia, andevennowthesmallgarmentproducersinMetiaburujandelsewhereinsouthBengalhaveasubstantialpresenceingarmentretailstoresalloverIndia.Moreover, WestBengalisnowflushwithsavingswaitingtobeinvested.IthasahigherrateofsmallsavingsnetcollectionpercapitathanricherstateslikeMaharashtra, Gujarat, KarnatakaandAndhraPradesh.Thisisnodoubtinpartaresultofagriculturalprosperityinthestate.Alotofthesesavingsarepresumablyinsmalltownsandruralareas, wherelabourisespeciallycheap.Thediversificationofagriculturalproductionintoavarietyofnon-foodcropsalsoprovidespromiseforthedevelopmentofagroprocessingindustries.

    ১১। কৃষি অনুসারী শিল্পে গুরুত্ব দেওয়া। উদাহরণ স্বরূপ:

    ক। আলু: আলু থেকে শিল্পের কথা ভাবা যেতে পারে। বিশ্বের মধ্যে ভারত ও ভারতের মধ্যে প:বঙ্গ আলু উৎপাদনে প্রথম সারিতে। এই আলু থেকে নানা রকম শিল্পের (পটেটো চিপ্স, পটেটো ফ্লেক্স, মেশ, ড্রায়েড ক্যানড পটেটো) বিশাল মার্কেট রয়েছে, দেশে ও বিদেশে। প:বঙ্গে এর বিপুল সম্ভাবনার কথা ইদানিং কালে বেশ কিছু পেপার ও কনফারেন্সে উঠে এসেছে। অথচ এই আলুর অতিফলন একটি সমস্যা, এরই জেরে একের পর এক কৃষক আত্মহত্যা করছেন। হিমঘরগুলির সংখ্যা বাড়িয়ে, তাদের আধুনিকীকরণ করে অতিরিক্ত আলু সংরক্ষণ করা ও নিকটবর্তী অঞ্চলে আলুর শিল্প স্থাপন করলে চাষীদের সমস্যাও মিটবে, শিল্পের মাধ্যমেও কর্মসংস্থান হবে। এই শিল্পের জন্য ভারি শিল্পের মত প্রচুর জায়গা জমির প্রয়োজন নেই। কৃষিজমির কাছাকাছি ফাঁকা জায়গাতে করা সম্ভব। সিঙ্গুরে অধিগৃহীত জমি, যা আর চাষযোগ্য অবস্থায় নেই, সেখানে এই শিল্পের কথা ভাবা যেতে পারে।
    খ। মালদা মুর্শিদাবাদের আম: বিশাল বড় শিল্পসম্ভাবনা আছে লোকাল এবং ন্যাশনাল মার্কেটে।

    গ। চা শিল্প: চা বাগানগুলি একের পর এক বন্ধ হচ্ছে। অথচ দেশে বিদেশে চায়ের চাহিদা কিছুই কমেনি। ইন্টারন্যাশানাল বাজারে চীনের নানারকম ফ্লেভারের হারবাল টি-র রমরমা। এধরণের ব্যবসা দেশেও শুরু করার কথা ভাবা যেতে পারে।

    ঘ। পাটজাত শিল্প, নানা ধরণের স্ন্যাক্স, আচার, পাঁপড় জাতীয় খাদ্যশিল্প। এগুলি সমবায় প্রথায় মহিলা গ্রামোদ্যোগ সমিতি গঠন করে করা যায়। এগুলির চাহিদা কিন্তু বিদেশেও বিপুল। সেই চাহিদাকে ব্যবহার করা যায়।

    ঙ। সারা পশ্চিমবঙ্গের মিষ্টি। আরো প্রচুর কুটির শিল্প। রাজস্থান তাদের কটেজ ইন্ডাস্ট্রির প্রডাক্ট নিয়েই এক্সেল করে যাচ্ছে। পাঁপড় আচার কাচের চুড়ি পাপেট। গুজরাত করছে। আমূল এক ভালো কেস স্টাডি। এই রকমের কিছু আমাদের রাজ্যেও ভাবা যেতে পারে।

    এই সব রকম শিল্পের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ সংস্থা চালু করা ও তার মাধ্যমে কর্মসংস্থান।

    ১২। কর্মসংস্থানের, প্রশিক্ষণের প্রশ্নের সঙ্গে অতি অবশ্যই একশো দিনের কাজের প্রকল্পকে যোগ করা হোক। একথা সর্বজনবিদিত, যে, পশ্চিমবঙ্গ একশো দিনের কাজ রূপায়ণের প্রশ্নে একেবারে নিচের সারিতে। বহু টাকা বহু জেলা থেকে অব্যবহৃত হয়ে ফেরত চলে যায়। কিন্তু এর সঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন অনেক সময়ে নজর এড়িয়ে যায়। টাকা খরচ করতে হবেই বলে, বহু সময়েই যেন-তেন-প্রকারেণ কোনো একটি কাজ করিয়ে টাকা খরচ করে ফেলার চেষ্টা করা হয়। ফলে যেখানে পুকুরের প্রয়োজন নেই, সেখানে পুকুর খনন হয়। নলকূপ খনন অর্ধেক হয়ে পড়ে থাকে। ইত্যাদি।

    এই অ্যাড-হক এবং পরিকল্পনাহীন খরচের বিপরীতে নিয়ে আসা হোক পরিকল্পনাকে। প্রয়োজনীয় কাজগুলিকে খতিয়ে দেখা হোক, এবং নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে কাজে নামা হোক। উদাহরণস্বরূপ, শিল্পের জন্য প্রশিক্ষণও একটি কাজ। আচার থেকে শুরু করে পাটজাত দ্রব্য বানানো, সবই উৎপাদক কাজ। এই কাজগুলির সঙ্গে সরকারি বা বেসরকারি এজেন্সিগুলির (যথা তন্তুজ বা তন্তুশ্রী) সংযোগ স্থাপন করতে পারলে তাদের কাজও কম খরচে হবে, আবার সংশ্লিষ্ট মানুষরাও ন্যূনতম মজুরির চেয়ে বেশি উপার্জন করতে পারবেন।

    তন্তুজ বা তন্তুশ্রী এখানে উদাহরণ মাত্র। কিন্তু আসল কথা হল যথাযথ পরিকল্পনা এবং তার সঙ্গে নানাবিধ প্রকল্প, যথা একশদিনের কাজের প্রকল্পকে জুড়ে নেওয়া।

    কৃষি
    যথারীতি, কৃষি বিষয়েও যা দেওয়া হল, তা কোনো স্বয়ং সম্পূর্ণ নীতিমালা নয়। বরং কিছু পয়েন্ট।
    ১। বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে, যে, ইদানিং চাষে যা টাকা লগ্নী করতে হয় আর যা টাকা উঠে আসে তাতে লাভ খুব কম থাকে।অযা লগ্নী করতে হয় তার মধ্যে দুটো বড় জিনিস হল – সার ও বীজ, আর মজুর।অপ্রথমটার দাম এত বেশি যে মাঝারি-বড়ো ও বড়ো চাষি ছাড়া এই খরচ দেওয়া সম্ভব নয়। বর্গাদারদের পক্ষে এত খরচ চালিয়ে চাষ করা সম্ভব না হওয়ায় অনেক বর্গাদারই মালিকদের জমি ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এই জমি কোনো চক্রান্ত করে মালিকরা নিয়ে নিচ্ছে এমন একদমই নয়, বরং বর্গাদার নিজেই শান্তিপূর্ণভাবে ফিরিয়ে দিচ্ছে। গত এক দেড় দশকে পশ্চিমবঙ্গে এরকম এক ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে। একে ভূমি সংস্কারের উলটোরথ বলা যায়। ২০০৪-এর মানব উন্নয়ন রিপোর্ট এই বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিল। প্রান্তিক চাষিদের সুবিধে না দিলে তারা জমি ধরে রাখতে পারে না। সুবিধে কী ভাবে দেওয়া যায়? এই মুহুর্তে দুটি পদ্ধতি সম্ভব বলে আমাদের মনে হচ্ছে; এক - রাজ্য সরকার শস্তায় ঋণের ব্যবস্থা করতে পারে। কেন্দ্রের কাছে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে।অদুই - কাঁচামাল যেমন সার, বীজ ইত্যাদিতে ভর্তুকি দেওয়া। এই সুবিধের প্রসঙ্গেই রয়েছে সমবায়ের প্রশ্ন। ছোট চাষির যেহেতু সামর্থ্য কম তাই বাজারে সরাসরি মাল নিয়ে বেচতে পারে না। শুধু ছোট না, মধ্যকৃষকরাও দালাল, ফড়েদের শিকার হয়। চাষিদের জন্য সমবায় দরকার, বিশেষত বিপণন সমবায়। একগাদা কায়েমি স্বার্থ আছে। মিল মালিক, কোল্ড স্টোরেজ মালিক, শহরের বড় ব্যবসায়ির দালাল, ইত্যাদি। এরা যথেষ্ট ক্ষমতা ধরে।
    বারবারা হ্যারিস হোয়াইট লিখেছেন, কংগ্রেস সিপিএম নির্বিশেষে সবাই এই শ্রেণীর বশংবদ। পঞ্চায়েতে যেই আসুক না কেন, এদের স্বার্থে কেউ হাত দেয় না। অথচ এই মধ্যস্বঙ্কÄভোগীরা চাষি আর ক্রেতার মাঝখানের অনেকটা মার্জিন ম্যানিপুলেট খেয়ে নেয়। ভূমি সংস্কারের বড় একটা ফায়দা যা চাষির হাতে পৌঁছোতে পারত, এরা আত্মসাৎ করেছে।
    ২। দ্বিতীয় ব্যাপার হল সেচের জল।অপশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান, বীরভুম সহ অনেক জেলাতেই সেচের জল আসে মূলত শ্যালো টিউবওয়েল থেকে। চাষের মরশুমে অত্যধিক হারে শ্যালো টিউবওয়েল দিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তুলে নেওয়ার ফলে এই সব জেলায় ভূগর্ভস্থ জলস্তর ব্যাপক হারে নেমে গেছে। বৃষ্টির জল চুঁইয়ে ভূগর্ভস্থ জলস্তরে গিয়ে পৌঁছাতে ও জলস্তরকে আগের মত বাড়াতে হাজার হাজার বছর সময় লাগে, ফলে এই ভাবে সেচের কাজে ভূগর্ভস্থ জলের অত্যধিক ব্যবহার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং এই পদ্ধতি, আনসাসটেইনেবল। এভাবে চললে সময়ের সাথে সাথে সেচের খরচ ও অসুবিধা বাড়তেই থাকবে এবং একটা সময় পানীয় জল ও সেচের জল দুইই অমিল হবে। ভুগর্ভস্থ জলস্তর নামলে আর্সেনিক, ফ্লোরাইড-জাতীয় দূষণও বেশি ছড়ায়।অএই সমস্যার সহজ সমাধান হল সেচের কাজে নদী, হ্রদ, ও ভূপৃষ্ঠের জল ব্যবহার করা। আর তার জন্য প্রয়োজন নদী সংস্কার।অসমস্যার আশু সমাধানের জন্য আমরা আপাতত নিচের কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করেছি।
    ক) পশ্চিমবঙ্গের সেচযোগ্য সমস্ত জমির ম্যাপ তৈরী করে বিভিন্ন শস্যের জন্য হেক্টরপ্রতি কত জল লাগে, তা হিসেব করে একট জল-বাজেট তৈরী করা। এই জল-বাজেট-এর নিম্নতম ইউনিট জেলাস্তর বা ব্লক স্তরের হওয়া দরকার।
    খ) এই জলের কতখানি জল সারফেস ওয়াটার থেকে পাওয়া যায়, তার হিসেব করা দরকার। এই জন্য দরকার বিভিন্ন নদীতে (যেসব নদী থেকে এই জল আসবে) বছরের নানা সময়ে কত জল থাকে তার একটা হিসেব। তা খুব সহজেই পাওয়া যায় নদীগুলিতে নিয়মিত ব্যবধানে গেজিং স্টেশন বসিয়ে।
    গ) পুকুর খাল বিলকেও এই জল-বাজেটের অন্তর্ভূক্ত করা দরকার।
    ঘ) সমস্ত নদীতে ছোট ছোট পাম্প-ইউনিট বসিয়ে জল তুলে সেচের ব্যবস্থা করা দরকার।অতার ইলেকট্রিসিটি ও কর ইত্যাদি কে দেবে - সরকার কতটা দেবে, আর চাষিরা কতটা দেবে সেটা নিয়ে একটি নির্দিষ্ট পলিসি প্রয়োজন। আমাদের মতে সরকারের দিক থেকে ছোট চাষিদের বিশেষ ছাড় দেওয়া উচিত।
    ঙ) যত দ্রুত সম্ভব বিকল্প সেচ ব্যবস্থা চালু করে শ্যালো টিউবওয়েলকে ফেজ-আউট করা ৩-৫ বছরের মধ্যে।
    ৩। রাজ্যে ফসল উঠলে সেটা বিক্রির কোনো সুবন্দোবস্ত নেই। অনেক ক্ষেত্রে পাইকার এসে জমি থেকেই ফসল তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু যদি কেউ পুরোটা বিক্রি করতে না চায়, কোল্ডস্টোরেজে রাখতে চায় তাহলে এটা একটা দু:স্বপ্ন। বণ্ড যোগাড় করা, ট্রাক ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া, দামের জন্য অপেক্ষা করা, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাভজনক দাম না উঠলে কোল্ড স্টোরেজ মাল বাইরে বার করে দেবে, পচে যাবে, তখন আবার সেটা অন্য কোথাও রাখার জন্য দৌড়োদৌড়ি করা - ভয়ংকর যন্ত্রণা।অএই খান থেকেই প্রক্রিয়ায় ফড়েরা ঢুকে পড়ে। এবং মাঠ থেকে শুরু করে সমস্ত স্তরে ফড়ের সংখ্যা, ক্ষমতা ও লাভ বেড়েই চলে। এই জায়গাটা সংস্কার হওয়া এক্ষুনি দরকার। আরও দরকার কোল্ড স্টোরেজের পরিকাঠামো বৃদ্ধি; বিদ্যুত সরবরাহের পরিকাঠামো ও যোগান শুধরানো। বাংলার একটা সুবিধে মাটি আর্দ্র -- সবজি, তরিতরকারির জন্য অনুকূল। আলু মাছ উৎপাদনে দেশে এক নম্বর। কিন্তু এধরনের শস্য সহজে নষ্ট হয়ে যায়। কোল্ড স্টোরেজের ঠিকঠাক পরিকাঠামো থাকলে এই বিপত্তি হয় না। পরিকাঠামো সরকারি মালিকানায় হলে ভাল, নইলে অসাধু ব্যবসায়ীদের শোষণের প্রশ্ন আসে। সাথে আসে সময়মত সরকারি procurement, atremunerativeprices. আবার ভর্তুকির প্রশ্ন আসছে। কিন্তু মনে হয় আমাদের দেশ কৃষিপণ্যের একটা অস্থির দামের সময়ের দিকে এগোচ্ছে। কেননা যেহারে আয় বাড়ছে, চাহিদা বাড়ছে -- সেই হারে যোগান বাড়ছে না। এই অবস্থায় ফসলের সময়ে, যখন দাম কম থাকে, শস্য কিনে, পরে বেশি দামের সময়ে বেচলে সরকারের আদৌ ক্ষতি হবে না। এর সাথে যুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থার প্রশ্ন: ফসলে কিনে কী করবে, বাজারে ছাড়তে তো হবে। দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলো কেন্দ্রের মুখে চেয়ে না থেকে নিজেরা universalPDS চালু করে দিয়েছে। ফল যথেষ্ট ভাল পেয়েছে। বাংলাতে এই মুহূর্তে না হলেও নিকট ভবিষ্যতে universalPDS-এর কথা বিবেচনা করা উচিত।
    ৪। যখন সরকার সহায়ক মূল্য দিয়ে ফসল কেনে চাষির কাছে, পুরোটাই নেতা-ফড়ে-কমপ্লেক্সের পকেটে ঢোকে। ফলে, একটা মেকানিজম চাই যাতে সরকারের সঙ্গে চাষির সরাসরি লেনদেন হবে।অসরকারি procurement-এ চাষিদের থেকে সরাসরি শস্য কেনা। সব রাজ্যে সরকার কম বেশি শস্য procure করে। উত্তর-পশ্চিম ভারতে সরকারের নিযুক্ত এজেন্ট থাকে, তারা procure করে চাষির থেকে। অন্য রাজ্যগুলোতে সরকার কেনে মিল মালিকদের থেকে, যাকে বলে লেভি। দ্বিতীয় ব্যবস্থাটি প্রথমটির তুলনায় অদক্ষ।
    ৫। স্থানীয় স্তরে যা ফসল হল তার বাজার তৈরি করা।অএটা খুব দরকার।অবর্তমানে স্থানীয়স্তরে (যেখানে উৎপাদন হয়) চাহিদার অতিরিক্ত বস্তার পর বস্তা পটল, কুঁদরি, ঝিঙে, করলা পচে নষ্ট হয় ও ফেলে দেওয়া হয়।অআরেকটা জিনিসও বোঝা দরকার, সব চাষির কিন্তু কোল্ডস্টোরেজে ফসল রাখার পয়সা নেই। তার জন্য ভাড়া লাগে, জায়গা পাওয়ার প্রতিযোগিতাও থাকে। এর সমাধান উৎপাদিত শস্যের জোনভিত্তিক ব্লক ও জেলা-স্তরে খাদ্য-প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের মাধ্যমে সহজেই সম্ভব।অযদি কৃষির উদ্বৃত্ত মানবসম্পদকে ব্যবহার করতে হয় তাহলে ছোট মাপের, শ্রমনিবিড়, কৃষিভিত্তিক শিল্পের ওপর জোর দিতে হবে।
    ৬। এই সমস্ত প্রক্রিয়ায় গ্রামসভা ও পঞ্চায়েতকে জড়িয়ে নেওয়া।অপরিকল্পনাটা গণতান্ত্রিকভাবে গ্রামের মানুষই করুক না।অতাঁরা ভুল সিদ্ধান্ত নিলে না হয় সরকার তাদের বোঝাবে, স্পেশালিস্টরা তাদের বোঝাবে।
    ৭। পঞ্চায়েত স্তর থেকে ব্লক-স্তর হয়ে জেলাস্তর অবধি কৃষি ও সেচের প্রপার প্ল্যানিং।অযেখানে সাধারণ মানুষ তাঁদের চাহিদা বলতে পারবেন, ও নিজেদের মত করে প্ল্যানিং করতে পারবেন। এই বিষয়ে সেচ দপ্তর, কৃষিদপ্তর সাহায্য করুক কিন্তু মানুষকে প্ল্যানিং প্রসেসে অংশ নিতে উৎসাহিত করা মূল উদ্যোগ হোক সরকারের। অতীতের সরকার এই জায়গায় - গ্‌ণতান্ত্রিকভাবে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে উন্নয়ন-পরিকল্পনা তৈরি করাতে - সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল।
    ৮। চাকুরিজীবি মানুষের তুলনায় চাষির রোজগার কিন্তু গত কয়েক বছরে কিছুই বাড়ে নি।অবরং চাষে খরচা বেড়েছে, ফসলের দাম বাড়লেও লাভের মাত্রা কমেছে। ফলে যাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা জানেন গ্রামাঞ্চলে জীবন কতটা কঠিন হয়ে উঠেছে।অএই বৈষম্যের কোনো কারণ নেই এবং ওপরে উল্লিখিত কিছু জিনিসে শক্ত হলেই অনেকটা রিলিফ দেওয়া সম্ভব হবে।অসবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের মতে গ্রামের মানুষের সমস্যার কথা, দাবীদাওয়া গ্রামের মানুষের কাছেই শোনা।
    সরকারে “কম বলা, বেশী শোনার” নীতির বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

    স্বাস্থ্য

    স্বাস্থ্য নিয়েও এই খসড়ার প্রস্তাবগুলি অসম্পূর্ণ। মূলত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যগুলির স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আমরা খতিয়ে দেখেছি। রাজ্যগুলির তুলনামূলক নানাপ্রকার আলোচনা খতিয়ে দেখে (অবশ্যই দেখার প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ নয়), যে ফলাফল পাওয়া গেছে, তাতে আমরা দেখছি, একই কাঠামোর মধ্যে থেকেও ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী এবং উন্নত জনস্বাস্থ্য (অবশ্যই তর্কসাপেক্ষে) ব্যবস্থা হল তামিলনাড়ুর। এই তামিলনাড়ুকে কেন্দ্র করেই আমরা এই খসড়ায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এতাব্‌ৎকালের কয়েকটি অনুল্লিখিত দিক তুলে ধরছি ও আনুষঙ্গিক প্রস্তাবগুলো পেশ করছি। যেহেতু একই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যেই তামিলনাড়ু অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে, তাই আমাদের “সীমিত সামর্থ্য”এর মধ্যে সাফল্যের যথাযোগ্য মডেল হতে পারে তামিলনাড়ুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা।

    এখানে তামিলনাড়ুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি ব্যতিক্রমী ও উন্নত অথচ আলোচিত না হওয়া দিকের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। সেটি হল জনস্বাস্থ্য বিভাগ। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক থেকে প্রকাশিত ড: মোনিকা দাশগুপ্ত ও আরো কয়েকজন গবেষকের সাম্প্রতিক দুই পেপারে (http://www-wds.worldbank.org/servlet/WDSContentServer/WDSP/IB/2009/10/13/000158349_20091013150143/Rendered/PDF/WPS5073.pdf এবং http://papers.ssrn.com/sol3/Delivery.cfm/5140.pdf?abstractid=1517012&mirid=1) তামিলনাড়ুর ভাল ফল করার জন্য মূলত এই রাজ্যের ‘অন্যরকম’ এবং অন্যদের থেকে অনেকাংশে ভাল জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। মূলত এই অন্যরকম জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঘিরেই এই প্রস্তাবনার বিভিন্ন পয়েন্টগুলি সাজানো হয়েছে।

    জনস্বাস্থ্য কী ?
    স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূলত তিনটি উপাদান, যার মধ্যে প্রথম দুটির সাথেই আমরা মূলত পরিচিত।
    ১। মেডিক্যাল সার্ভিস যেমন, অসুখ বা দুর্ঘটনার চিকিৎসা
    ২। ক্লিনিক্যাল প্রিভেন্টিভ সার্ভিস, যেমন, জনপ্রতি ভ্যাক্সিনেশন
    ৩। পপুলেশন ওয়াইড প্রিভেন্টিভ সার্ভিস(এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সার্ভিস) - জলনিকাশি ব্যবস্থা, পানীয় জল ও খাদ্যের গুণাগুণ বিচার, solidandliquidwastemanagement, স্যনিটারি ও হেল্‌থ রেগুলেশন ও জনগণকে এই সংক্রান্ত সচেতনতা শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে রোগ, মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঠেকানো, সাধারণ ভাবে জনসাধারণের basichealth এর উন্নতি সাধন।

    শেষ দুটি বিভাগ নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিভাগ গঠিত হলেও আমরা এই প্রস্তাবনায় তৃতীয়টির দিকেই মূলত ফোকাস করব।

    জনস্বাস্থ্য(ই) কেন ?

    ১। পশ্চিমবঙ্গ সহ প্রায় সারা দেশেই এটি সর্বাধিক উপেক্ষিত।
    ২। এটির উপেক্ষিত হবার সাথে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অন্যান্য বিভাগেরও সার্বিক অবনতি সরাসরি জড়িত।
    ৩। এই উপেক্ষা দূর করার মাধ্যমে লক্ষ্যণীয় উন্নতি সম্ভব, যার প্রমাণ, তামিলনাড়ু।

    স্বাস্থ্য বিভাগের মূল সমস্যা হিসেবে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সের অপ্রতুল পরিষেবা, যন্ত্রপাতি, ওষুধের অভাবকে অর্থাৎ মেডিক্যাল সার্ভিসের সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করা হয়। বহু উপেক্ষিত জনস্বাস্থ্য, বিশেষত: এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সার্ভিসজনিত ও তার সঙ্গে জড়িত সমস্যাগুলি কিন্তু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আলোচনা বা সমালোচনাতেও লক্ষ্যণীয়ভাবে উপেক্ষিত।

    এই বিভাগটির কাজ আপাতদৃষ্টিতে প্রথম দুটির মত গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। পশ্চিমবঙ্গ সহ প্রায় সারা ভারতেই এই শেষোক্ত বিভাগ খুবই উপেক্ষিত। অথচ এটি অন্যান্য দুটি বিভাগের সাফল্যের জন্য অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ, WHOর ২০০৯ এর রিপোর্ট থেকে পালস পোলিও টীকাকরণের উদাহরণ নেওয়া যায়। খারাপ স্যানিটেশনের জন্য আন্ত্রিকের প্রকোপ এত বেশি ছিল যে, শিশুদের মধ্যে সফল টীকাকরণ সঙ্কেÄও তাদের শরীরে ভ্যাক্সিন শোষিত হতে পারেনি। বিহার, উত্তরপ্রদেশে এর ফলে প্রোগ্রামটি বহুল মাত্রায় ব্যর্থ হয়।

    তিন সপ্তাহ আগে পশ্চিমবঙ্গে একটি পোলিওর কেস ধরা পড়ে, ২০১১তে ভারতে এই প্রথম কেস। পোলিও টীকাকরণের সর্বাত্মক সাফল্য না আসার কারণ হিসেবে, UNICEFWestBengal এর ফিল্ড অফিসের চিফ লোরি কালভো জানাচ্ছেন, “riskfactorssuchaspoorsanitationconditions, lackofhandwashingwithsoap, lackofexclusivebreastfeedinginchildrenunder6monthsofage, andtheregularincidenceofdiarrheaallcontributetochildren’sreducedimmunity, makingthemmoresusceptibletothepoliovirus”.
    (http://www.businesseconomics.in/?p=1550)

    শুধু তাই নয়, এটির যথাযথ functioning স্বাস্থ্যব্যবস্থার সার্বিক উন্নতিতে বড় অবদান রাখতে পারে। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের একটি সাম্প্রতিক পেপারে (http://www-wds.worldbank.org/servlet/WDSContentServer/WDSP/IB/2009/10/13/000158349_20091013150143/Rendered/PDF/WPS5073.pdf) শ্রীলঙ্কা ও তামিলনাড়ুর উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। এই দুটি জায়গার বৈশিষ্ট্য হল, এদের স্বাস্থ্য সূচক ভাল, অথচ জনপ্রতি জিডিপির হিসেবে স্বাস্থ্যের জন্য ব্যয় অন্য অনেক খারাপ সূচকসম্পন্ন স্থানের সমতুল্য।

    এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, এই দুই জায়গায় জনস্বাস্থ্য বিভাগের স্বতন্ত্র, ব্যতিক্রমী কার্যক্রম।

    যেহেতু, পশ্চিমবঙ্গ সহ প্রায় সারা ভারতেই এই শেষোক্ত বিভাগ খুবই উপেক্ষিত, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের দুটি সাম্প্রতিক পেপারের গবেষণা এর মূল কারণগুলি নির্ধারণ করেছে ও ত্রুটিগুলি দূর করার ব্যাপারেও ‘তামিলনাড়ু মডেল’ অনুসরণ করা সহ নানা পরামর্শ দিয়েছে। সেগুলির উল্লেখ ও পশ্চিমবঙ্গে সেগুলি প্রয়োগের feasibility নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল:

    (জনস্বাস্থ্য উন্নত করতে )কী করিতে হইবে:

    ১। নজরদারি: ‘publichealthact’ লাগু করা

    এটি কী ?

    APublicHealthActenablesproactivemeasurestoavertthreatstothepublichealthbeforeanemergencyoccurs.

    Firstly, itspecifiesthelegalandadministrativestructuresunderwhichapublichealthsystemfunctions, assignsresponsibilitiesandpowerstodifferentlevelsofgovernmentandagencies, andspecifiestheirsourceoffundingfordischargingtheseduties (HamlinandSheard1998).

    Secondly, itsetsoutpowersfortakingactionforprotectingthepublichealth, includingpowersofregulationandofinspection?andtheresponsibilitytousethesepowerstomonitoranysituationsoractivities (“publichealthnuisances”) thatcouldpotentiallythreatenpublichealth, andseektoredressthemifneeded.

    Thirdly, publichealthlawssetstandards, suchasthoseforfoodhygiene, slaughterhouseandmarkethygiene, waterquality, andlocalgovernmentactivitiesforsanitationandenvironmentalhealth.Theyalsospecifywhoisresponsibleforassuringthatthesestandardsaremet, aswellastheproceduresforensuringthattheyaremet.

    (http://papers.ssrn.com/sol3/Delivery.cfm/5140.pdf?abstractid=1517012&mirid=1)

    nationalruralhealthmission এর ড্রাফট করা ন্যাশানাল হেলথ বিল ২০০৯এ ,রাজ্যগুলিকে এই ব্যাপারে উদ্যোগী হতে বলা হচ্ছে। তামিলনাড়ুতে এটি ইতিমধ্যেই লাগু রয়েছে। গুজরাত ও কর্ণাটক এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। যেহেতু এটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া রাজ্যের হাতে, এ দিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে।

    ২। জনস্বাস্থ্য বিভাগকে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আলাদা করা:

    স্বাধীনতার পর ভারতে এই বিভাগটিকে স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে মিলিয়ে দেওয়া হয়। এর ফল ভাল হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যে মেডিক্যাল সার্ভিস সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশি গুরুত্ব পাওয়ার ফলে এই বিভাগটি ধীরে ধীরে তার গৌরব, গুরুত্ব হারাতে বসে। স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে আরও একটি বিভাগ হয়ে থাকার কারণে এই বিভাগের জন্য ডাক্তার থেকে শুরু করে কর্মীদের আলাদা যে স্পেশালাইজেশন স্কিল দরকার, সেটা কখনো বিচার্য ও প্রয়োজনীয় ক্রাইটেরিয়া হয়ে ওঠেনি।

    “Gradually, publichealthservicesfellofftheradarscreenoftheHealthMinistryandofmoststatehealthdepartments, andtheircapacityforpublichealthpolicyandplanningwasweakened“

    (http://papers.ssrn.com/sol3/Delivery.cfm/5140.pdf?abstractid=1517012&mirid=1)

    এই প্রসঙ্গে পূর্বোক্ত শ্রীলঙ্কা ও তামিলনাড়ুর উদাহরণ প্রণিধানযোগ্য। বিশেষত: তামিলনাড়ু।

    ভারতের মধ্যে কেবল তামিলনাড়ুতে এই জনস্বাস্থ্য বিভাগ অন্যভাবে কাজ করে এবং গবেষণা দেখাচ্ছে, জিডিপির অনেক কম ব্যয় করেও স্বাস্থ্য সূচক ও অন্যান্য ভিত্তিতে তামিলনাড়ুর অবস্থান প্রথম সারিতে।

    ইদানীং পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি দেখাতে গিয়ে চাইল্ড mortality, sexratio, ইত্যাদি দু’তিন খানি সূচকের উল্লেখ করা হয়, এগুলিতে পশ্চিমবঙ্গের স্থান উপরের সারিতে। কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ চিত্র এর থেকে পাওয়া যায় না। এমনকি এই বিশেষ শিশু ও মাতার স্বাস্থ্য বিভাগটির সম্পূর্ণ assessmentএর জন্যও আরো অনেক সূচকের প্রয়োজন।

    এই পেপারে (http://www-wds.worldbank.org/servlet/WDSContentServer/WDSP/IB/2009/10/13/000158349_20091013150143/Rendered/PDF/WPS5073.pdf) এরকম কিছু সূচক নেওয়া হয়েছে, Motherswhohadatleast3antenatalcarevisitsfortheirlastbirth, Children12-23monthsfullyimmunized (BCG, measles, and3doseseachofpolio/DPT), Motherswhoreceivedpostnatalcarefromadoctor/nurse/LHV/ANM/otherhealthpersonnelwithin2daysofdeliveryfortheirlastbirth। এই সূচকগুলির ভিত্তিতে তামিলনাড়ুর স্থান ভারতের গড়ের থেকে অনেক এগিয়ে।

    আমরা এই সূচকগুলির ভিত্তিতে NHFS এর সমীক্ষা তথ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গ (http://www.nfhsindia.org/pdf/West%20Bengal.pdf) ও তামিলনাড়ুর (http://hetv.org/india/nfhs/nfhs3/NFHS-3-Key-Indicators-Tamil%20Nadu.pdf) তুলনা করে পাই, পশ্চিমবঙ্গ অনেক পিছিয়ে। এই তিনটি সূচকে পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ুর হিসাব যথাক্রমে:
    ৬২.৪, ৯৬.;
    ৬৪.৩, ৮০.;
    ৩৯.১, ৮৯.

    এই তথ্যগুলো খুব স্পষ্টভাবে আমাদের রাজ্যের পশ্চাদ্‌পরতাকে ও তার জন্য আশু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে।

    তামিলনাড়ুর উন্নতির মূল কারণ হিসেবে তামিলনাড়ুর জনস্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রমকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেখানে সারা দেশে, এই বিভাগটি স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যে আরেকটি বিভাগ মাত্র, এই রাজ্যে সেটি স্বতন্ত্র বিভাগ, যেখানে আলাদাভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনস্বাস্থ্য ম্যানেজাররা প্রোগ্রামটি নিয়ন্ত্রণ করেন। (http://www.tnhealth.org/healthdirectorates.htm)

    তামিলনাড়ুর মডেলটি এইরকম:
    Thestate
    (a) separatesthemedicalofficersintothepublichealthandmedicaltracks,
    (b) requiresthoseinthepublichealthtracktoobtainapublichealthqualificationinadditiontotheirmedicaldegree, and
    (c)orientstheirworktowardsmanagingpopulation-widehealthservicesandprimaryhealthcare?whilethoseinthemedicaltrackobtainadditionalclinicalqualificationsandareorientedtowardsprovidinghospitalcare.Thisimprovestheefficiencyofboththepublichealthandthemedicalservices.

    CoordinationbetweentheseservicesisfacilitatedbythefactthatallthreeDirectorates (ofPublicHealth, MedicalServices, andMedicalEducation) reporttotheHealthSecretary…

    ..TamilNaduoffersamodelofstrongpublichealthadministration, inwhichawiderangeofactorsfromthepublichealthmanagersandtechnicalstaffsuchasentomologists, tolaborerswhodosprayingandcollectrats’fleas?worktogetherasmembersofateamdedicatedtopublichealthprotection.Throughtheirteamwork, theycometolearnmuchaboutthefunctioningofthewholesystem, beyondtheirownspecifictasks?andthisisinturnfurtherstrengthenstheteam’sabilitytofunctioneffectively

    এই গবেষণাপত্রে দেখান হয়েছে যে, এই মডেলটি অন্যান্য রাজ্য সহজেই অনুসরণ করতে পারে। এটি ব্যয়সাপেক্ষও নয়।

    Theadditionalinvestmentrequiredtotrainacadreofpublichealthmanagersisnotonerous, becausethenumbersinvolvedareverysmall.Thiscadreconstituteslessthan1percentofTamilNadu’stotalgovernmentdoctors.Ofthe10,882governmentdoctorsinTamilNaduin2006-07, around28percentservedundertheDirectorateofPublicHealth?ofwhicharound100belongedtothecadreofpublichealthmanagers, whiletheremainderserveasmedicaldoctorsinthePrimaryHealthCentres.

    Thismeansthatotherstatesseekingtoestablishapublichealthmanagerialcadrewouldneedtotrainonlyatinyfractionoftheirmedicalofficersforthispurpose.

    রাজ্যগুলিকে তামিলনাড়ু মডেল অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন DrP.Padmanaban, ( DirectorofPublicHealth, TamilNadu, retired)

    অর্থাৎ মডেলটি শস্তায় পুষ্টিকর।

    এটির প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দৃষ্টি বিশেষভাবে আকর্ষণ করা হল। পুনামাল্লীর InstituteofPublicHealth এর মডেলে রাজ্যের Allindiainstituteofhygieneandpublichealth এর পুনর্নির্মাণ করার কথা ভাবা যেতে পারে।

    এ ব্যাপারে উল্লেখ্য হল, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০০৪ সালে publichealthadministrativecadre চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিল। এদের কাজ মেডিক্যাল ফেসিলিটি দেখা ও ভ্যাকসিনেশনের উদ্যোগ সুপারভাইস করা। এর জন্য কিন্তু পাবলিক হেলথ ম্যানেজমেন্টে ট্রেনিং এর কোন দরকার হয় না। কিন্তু সেটা ছাড়া এধরণের উদ্যোগের কোন মানে নেই।

    মডেল অনুসরণ করা নিয়ে সতর্ক বার্তা:

    তামিলনাড়ুর মডেল সফল ও অন্যদের তুলনায় অনেক ভাল হলেও ত্রুটিমুক্ত নয়। এই পেপারে সেগুলির উল্লেখ করা আছে।
    ১)সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তামিলনাড়ু পাবলিক হেলথ কনফারেন্সেও আরও নানা রেকমেন্ডেশন উঠে এসেছে।

    http://www.hindu.com/2010/04/14/stories/2010041451330300.htm

    তাই মডেলকে অন্ধ অনুকরণ না করে ত্রুটি দূরীকরণের পরামর্শগুলিকেও অনুসরণ করলে ভাল হয়।

    ২) জনস্বাস্থ্য প্রোগ্রামগুলি সিঙ্গল ইস্যু ভিত্তিক হওয়া সার্বিক জনস্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।

    যেমন, ম্যালেরিয়া বা পোলিও ভ্যাকসিনেশন এজেণ্ডায় মূল লক্ষ্য হলে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো সাইডলাইনে চলে যায়।

    এ ব্যাপারে পেপারের এই অংশটি উল্লেখ্য:

    moststatehealthdepartmentshavecometofocustheirpublichealthworklargelyonimplementingthesingle-issueprograms, whichincludeprogramstocontrolspecificdiseases, diseasesurveillance, familyplanning, andmaternalandchildhealth.
    2Theyde-prioritizedtheirpublichealthsystems, andtheiradministrativeandworkforcecapacitydeliveringbroaderpublichealthserviceserodedatboththemanagerialandgrassrootslevels.Thishasresultedinanunnecessarilyhightollofmorbidityforpeopleofallagesandsocio-economicstrata, andelevatedchildmortality.Healthresourcesaredeployedtotreatpeoplewhoshouldneverhavebeenexposedtodiseaseinthefirstplace.

    আর ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামের সাফল্যও বেশিরভাগ সময়ই complexmanagementofdiseaseenvironment এর উপর নির্ভর করে। জনস্বাস্থ্য বিভাগ দুর্বল হলে সেটি ব্যর্থ হয়, পূর্বোক্ত পোলিওর উদাহরণের মতন।

    উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে ম্যালেরিয়া নিয়েও। ম্যালেরিয়া দূরীকরণ নিয়ে প্রোগ্রাম বহুদিন ধরে চলে আসা সঙ্কেÄও আমাদের রাজ্য ম্যালেরিয়ার কেস ও মৃতের সংখ্যার নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে। নক্সালবাড়ির ম্যালেরিয়া অধ্যুষিত এলাকায় সাম্প্রতিক এক গবেষণা (http://www.malariajournal.com/content/8/1/288 জানাচ্ছে, এই অঞ্চলে ম্যালেরিয়া এপিডেমিক হয়ে থাকার একটা মূল কারণ, পশ্চিমবঙ্গ ডিডিটি স্প্রে করার কভারেজে WHO নির্দেশিত সীমার অনেক নিচে (কোথাও কোথাও ১০%-রও তলায়)।

    পরিত্যক্ত কুয়োগুলিতে ম্যালেরিয়ার মশা জন্মাচ্ছে। কীটনাশক দেওয়া মশারিগুলির ব্যবহার ঠিকমত হচ্ছে না। এই সবক’টি ত্রুটিই কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিভাগ, বা আরো বিশেষ ভাবে বললে environmentalhealthscienceএর ত্রুটি। শুধুমাত্র ওষুধ দিয়ে মহামারী ঠেকানো সম্ভব না, পাশাপাশি এগুলি কার্যকর হওয়া বিশেষভাবে প্রয়োজন।

    আর, সাথে সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিংগল ইস্যু প্রোগ্রামগুলির রাজ্যে নেবার ব্যাপারে সচেতনতা দরকার।
    নিম্নলিখিত পয়েন্টটির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে:

    Single-issuepublichealthprogramsdonotmakeforefficientpublichealthfinancing.Thisapproachisatoddswiththeneedforcontinuityinpolicyandprogrammingforpublichealthservices.Thehallmarksofeffectivepublichealthservicedeliveryareplanningandactiontoavertpotentialoutbreaks, andcontinuingvigilancetoensurenon-recurrenceofdiseaseaslongasthepotentialthreatremains?regardlessofhowlongithasbeensincethediseaselastmanifesteditself.Thisrequiresunwaveringattentiontoabroadrangeofactivities, andisverydifferentinnaturefromcampaignstoaddressaspecificdisease, ortocontainaspecificoutbreak.

    Theseprogramscancrowdoutotherpublichealthprioritiesofthestates, bothbecauseofthelargebudgetarydemandsaftertheinitialperiod, andbecausethestatesarerequiredtosendregularprogressreportsontheseprogramstothecenter.Theseprogramsthereforebecomehighpriorityactivitiesforthestates.Intheprocess, statesaretemptedtofocustheirpublichealthresourcesontheseprogramsandneglectotheressentialaspectsofpopulation-widehealthservices.

    (http://papers.ssrn.com/sol3/Delivery.cfm/5140.pdf?abstractid=1517012&mirid=1)

    তাই কেবল মাত্র ভ্যাকসিনেশন বা জন্মনিয়ন্ত্রণ আয়োজনে ফোকাস না করে, বাকি সব কিছুর দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া দরকার। এর মধ্যে, বিশুদ্ধ পানীয় জল ও স্যানিটারি পরিকাঠামো বানানোর উপর নজরদারি বিশেষভাবে উল্লেখ্য।

    ৩) পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনীয়ারিং বিভাগটির সাথে স্বাস্থ্য বিভাগের কো-অর্ডিনেশন:

    পশ্চিমবঙ্গ সহ অনেক রাজ্যেই এই বিভাগটি স্বাস্থ্য দপ্তরের আওতায় নেই। এর ফলে managingsubsoilwaterdrainage, vectorbreedingcontrol, safedisposalofsolidwaste এর মত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি পরিকাঠামো থাকা সঙ্কেÄও পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনীয়ারিং বিভাগ করে না। এই নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা যেতে পারে।

    ৪) তৃণমূল স্তরে স্বাস্থ্যকর্মীদের জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত কাজে প্রশিক্ষণ:

    এ ব্যাপারে হিমাচল প্রদেশে সম্প্রতি স্থাপিত HealthSafetyandRegulationএ ভাল কাজ হচ্ছে। এ নিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

    এই সব কিছুর জন্যই একটি বিশেষজন কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।

    দেশে পাবলিক হেলথ ফাউণ্ডেশনের উদ্যোগে সম্প্রতি কিছু ট্রেনিং স্কুল খোলা হচ্ছে। এগুলির সাথে সরকার কাজ করার কথা ভাবতে পারে। পাবলিক হেলথ ফাউণ্ডেশন অব ইন্ডিয়া () এর পাবলিক হেলথ পলিসি অ্যানালিস্টদের সাথে কনসাল্ট করার কথাও ভাবা যেতে পারে।

    সর্বোপরি, বলে নেওয়া উচিত, যে, আগেই বলা হয়েছে, এই প্রস্তাবগুলিতে জনস্বাস্থ্যের নিম্নলিখিত অংশগুলিকে এই প্রস্তাবে ফোকাসে আনা হয়নি।
    ১। মেডিক্যাল সার্ভিস যেমন, অসুখ বা দুর্ঘটনার চিকিৎসা
    ২। ক্লিনিক্যাল প্রিভেন্টিভ সার্ভিস, যেমন, জনপ্রতি ভ্যাক্সিনেশন
    এগুলিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ নিয়ে আরও বিশদে চিন্তাভাবনা হওয়া প্রয়োজন।

    শিক্ষা
    এই বিষয়ক প্রস্তাবগুলি নিয়ে এই খসড়ার প্রস্তাবকদের মধ্যে যথেষ্ট আলোচনা হয়নি। প্রকৃত প্রস্তাবে, এই বিষয়ক প্রস্তাবগুলিও ঠিক ভাবে দানা বাঁধেনি। তবুও, এ পর্যন্ত যেটুকু চিন্তাভাবনা করা হয়েছে, সেগুলিকে এখানে দেওয়া হল। বাকিদের মতো এরাও সামগ্রিক কোনো নীতিমালার অংশ নয়। একই সঙ্গে প্রস্তাবগুলি নিজেরাও যথাযথভাবে দানা বাঁধেনি।

    প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা

    ১। প্রাথমিক শিক্ষা বা OpenBasicEducation-এর ক্ষেত্রে NCERT নির্দেশিত পথ সম্পূর্ণত অনুসরণ করতে হবে। এতদিন NCERTকে কার্যত অচল করে রাখা হয়েছিল। একে চাঙ্গা করতে হবে। NCERT পাঠ্যপুস্তকের বঙ্গানুবাদ নেই। শিক্ষকদের নির্দেশনার (“EducatetheEducators”) কোনো বন্দোবস্ত নেই। যেটা আছে তা নেহাৎই রিচুয়াল! ফলে শিক্ষকদের প্রকৃত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চাই। মনে রাখতে হবে, NCERT, NewEducationPolicy ও যশপাল কমিটির সুপারিশের কথা। এই সুপারিশগুলি কার্যকর করা দরকার।

    ২। সরকারি নিয়ম মোতাবেক (মানে NCERT) যে কটি বই ইস্কুলে পড়ানোর কথা, তার অতিরিক্ত বই পড়ানো চলবে না। প্রকাশক - ইস্কুলের অশুভ আঁতাতের দরুন অপাঠ্য-পুস্তক বাচ্চাদের গেলানো হয়।

    ৩। বিদ্যুতের জোগানের সঙ্গে আদ্যন্ত জড়িত এই শিক্ষাব্যবস্থা সরকারি বিনে পয়সার চ্যানেল 'জ্ঞান দর্শন' কেবল লাইনে অজ্ঞাত কারণে পাওয়া যায় না। এখানে ক্লাস করা জরুরি। এখানে 'শিল্পপতিদেরও' সহযোগিতা লাগবে। উদাহরণস্বরূপ Tatasky এর প্যাকেজে WizkidsTopper-এ ০ থেকে ১২ ক্লাস অব্দি সুন্দর পড়াশোনার বন্দোবস্ত আছে। ইন্টারনেটে যেমন বিনে পয়সায় খান অ্যাকাডেমির ক্লাস করা যায়, তেমনি বেসরকারি ওয়েবসাইটেও পয়সার বিনিময়ে ক্লাস করায়। ছাত্রছাত্রীকে খালি ARC চশমা ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ TVInternet এর মাধ্যমে audio-visual পড়াশোনা। এ ব্যাপারে UNESCO -র পোষিত সংস্থা 'প্রথম'-এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

    ৪। মুশকিল হলো এ সবই ইংরেজি অথবা হিন্দি ভাষায় লভ্য। পশ্চিমবঙ্গে শুধু বঙ্গভাষীরাই থাকেন না। নেপালি, রাভা, হড়, খেড়িয়াদের মাতৃভাষায় শিক্ষার কী বন্দোবস্ত হবে তা ভাবা দরকার। এঁদের জন্য UNO প্রবর্তিত LinguisticHumanRights-এর কথা খেয়াল রেখেই শিক্ষার সুবন্দোবস্ত করা চাই। এর জন্য অধ্যাপক রমাকান্ত অগ্নিহোত্রী ও অধ্যাপক বি রামকৃষ্ণ রেড্ডীর পরামর্শ নেওয়া হোক। MultilingualClassroom এর ব্যাপারে এঁদের সুনির্দিষ্ট অবদান আছে। NCERT এজন্য communityschools এর বন্দোবস্ত করেছেন।

    ৫। সরকারি নিয়ম মোতাবেক অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকছে না। যেটা আছে, তা হল ContinuousComprehensiveCompetencyTest। এটা কী বস্তু তা অধিকাংশ শিক্ষক জানেন না; এটাকে তাঁরা তাই পরীক্ষা রিচুয়ালে পরিণত করে বাচ্চাদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলছেন। এটা এমন এক দুর্ঘটনা যে ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী কিশোর-কিশোরী আত্মহত্যায় পশ্চিমবঙ্গের স্থান দীর্ঘদিন ধরে এক নম্বরে। এবং এসব আত্মহত্যার কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইস্কুল-ঘটিত।

    ৬। যদি সম্ভব হয়, নবম-দশম শ্রেণীর পরীক্ষার ক্ষেত্রে OpenBookSystem চালু হোক। এই ব্যবস্থা সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত চলুক। মুখস্থ নয় কেবল, ধারণা-নির্মাণের ওপর জোর দেওয়া হোক।

    উচ্চশিক্ষা

    ৮। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাচর্চার বাইরেও একাধিক সমান্তরাল আকাদেমিক্স আছে। যেমন, বাংলা লিটল ম্যাগাজিনের পরিসর। এর মধ্যে এমন অনেকগুলো ম্যাগাজিন আছে, যার ভেতরে বিদেশি জার্নালকে টেক্কা দেবার সামর্থ্য আছে। এই পরিসরে তো আমরা পরম দার্ঢ্যে বলতেই পারি, “এখানে আমরা নূতন দেখার আশা জাগাবো, সাহেবরা ইচ্ছে করলে তা পড়ে নিতে পারেন”। কিন্তু, এখন অব্দি আকণ্ঠ কলোনিয়াল জ্ঞানে নিমজ্জিত আমরা সে কাজ করতে পারিনি। পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ, ত্রিপুরা, আসামের সহযোগিতায় আমরা এমন কাজ করতেই পারি। ২৮ কোটি জনসংখ্যার বাঙালি এটা করতে পারবে না? আগে লিটল ম্যাগাজিন দলের সহযোগিতা পেয়েছিল, এখন সরকারের সহযোগিতা পাক।

    ৯। প্রশ্ন হল, উচ্চশিক্ষা সংকুচিত হলে, এত মানুষ করবেটা কি? এজন্য যে যার অভিরুচি মোতাবেক (aptitude অনুযায়ী) মাধ্যমিক স্তর থেকে vocationaltraining -এ যেতে পারেন। সরকারি অর্থ সাহায্য এক্ষেত্রে আছে। শুধুই যা করে ওঠা হয় নি।

    ১০। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পদ যাঁরা নেন (আকাদেমিক আমলা), তাঁরা স্বেচ্ছায়ই নেন। এক্ষেত্রে যোগ্যতার থেকে বেশী গুরুত্ব পেত দলীয় সম্পর্ক। আগে বিদ্বানদের ক্ষেত্রে মিটিং মিছিলে যাওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। আশা করি এখন তা ঘটবে না।

    ১১। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষক নিয়োগের একমাত্র মাপকাঠি হোক শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পড়ানো – গবেষণার অভিজ্ঞতা। শুধুমাত্র কিছু এলিট কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে নজর দিলেই আমাদের রাজ্যে শিক্ষার হাল শোধরানো সম্ভব হবে না। প্রতিটি কলেজেই শিক্ষকতা, পঠন-পাঠন ও গবেষণার মান উন্নত করার দিকে নজর দিতে হবে। এই দিকে নজর দিলে শুধুমাত্র বড় শহর নয়, মফস্‌সল, জেলা, গ্রামের কলেজ থেকেও বিশ্বমানের গবেষণা ও পাঠদান সম্ভব হবে বলে আমাদের ধারণা।

    ১২। সমস্ত কলেজে চালু হোক ছাত্রদের দিয়ে অধ্যাপকদের মূল্যায়ন। আমাদের রাজ্যে অনেকে এটা শুনে অবাক হলেও, এই ব্যবস্থা এই মুহূর্তে দেশের কিছু খুবই নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও গবেষণাকেন্দ্রে (উদা: আইআইটি কানপুর, টি আই এফ আর) চালু রয়েছে। আমেরিকার সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রতি সেমেস্টারে কোর্স শেষ হলেছাত্র-ছাত্রীরা অধ্যাপকদের মূল্যায়ন করে। এতে শিক্ষার গুণগত মান বাড়ে, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের আদান-প্রদান বাড়ে ও ছাত্র-শিক্ষক ক্ষমতা-সম্পর্কের বৈষম্য কিছুটা হলেও কমানো যায়; উভয় পক্ষেই এর থেকে পজিটিভ কিছু পায়। পরীক্ষামূলকভাবে এই ব্যবস্থা স্কুলস্তরেও চালু করার কথা ভাবা যেতে পারে।

    ১৩। আজকের বিশেষ অর্থনৈতিক অবস্থায় সারা পৃথিবীতেই শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয়সংকোচ সরকারগুলির মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে এই মুহূর্তে এই পথ নেওয়ার অর্থ হল শিক্ষাক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া – যা আমাদের পক্ষে ভয়ংকর ক্ষতিকর হবে। আমরা চাই আমাদের সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির ড্রাইভিং ফোর্স কোনোভাবেই যেন প্রফিট-মোটিভ না হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষাদানকারী ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক যেন কোনোভাবেই ব্যবসায়িক না হয়ে যায়।

    ১৪। সাধারণভাবে উচ্চশিক্ষার সিলেবাস, পড়ানোর পদ্ধতি, গবেষণাগার ইত্যাদির আধুনিকীকরণ প্রয়োজন। শহরের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে তো বটেই, সমস্ত মফস্‌সল-জেলা-গ্রামের কলেজেও এটা করা হোক। এইগুলি বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের করা প্রয়োজন।

    ১৫। যে সমস্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য মৌলিক কাজ করেছেন (উদাহরণ: প্রতীচী ট্রাস্ট), তথ্য সংগ্রহ, পরিকল্পনা গ্রহণ ও পরিকল্পনা রূপায়নের জন্য তাঁদের সাহায্য নেওয়া হোক।

    ১৬। “অলাভজনক”– এই অজুহাতে হিউম্যানিটিস ডিপার্টমেন্ট ও রিসার্চ সেন্টারগুলি তুলে দেওয়া নিজের পায়ে কুড়ুল মারার সামিল হবে। এই সব প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারি অর্থসাহায্য বজায় থাকুক। ডাক্তারি ও ইঞ্জিনীয়ারিংয়ের পাশাপাশি বেসিক সায়েন্সের পঠন-পাঠন ও গবেষণা একই গুরুত্বের সঙ্গে করা দরকার। দু:খের বিষয় হল আমরা আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় বেসিক সায়েন্সের গবেষণায় পিছিয়ে। অন্যান্য রাজ্যে যা দেরিতে হলেও শুরু হয়েছে, রিভার্স ব্রেন ড্রেন, বিদেশে পি এইচ ডি করা ছাত্রছাত্রীদের, গবেষকদের, শিক্ষক-অধ্যাপকদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনা দরকার।

    ১৭। সাধারণভাবে, বেসরকারি ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজগুলির সম্বন্ধে আমাদের পর্যবেক্ষণ হল – অধিকাংশ কলেজেই ইঞ্জিনীয়ারিং পড়ানোর উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। কলকাতার বাইরের কলেজগুলো তো বটেই, খোদ কলকাতা আর পাশাপাশি অনেক কলেজেই ল্যাব এখনও তেমনভাবে তৈরি না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের যথাযথ শিক্ষাদান সম্ভবপর নয়। অনেক কলেজের ল্যাব বলতে যেটা বোঝানো হয়, সেটা আসলে খান-কুড়ি কম্পিউটার ঠাসা একটা এয়ার কণ্ডিশন্ড ঘর। বেশিরভাগ কলেজগুলোতেই এখন পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার ভীষণ অভাব এবং তাদের উপস্থিতিও অনিয়মিত, ফলে অনেকসময়েই নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্লাস হয় না, যার ফল ভোগ করে ছাত্র-ছাত্রীরা। অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকার উপযুক্ত যোগ্যতারও অভাব আছে বলে ছাত্র-ছাত্রীরা হামেশাই অভিযোগ করে থাকে। প্রচুর কলেজে সদ্য বি ই পাস করা শিক্ষকরা ক্লাস নেন, এবং কিছুদিন পরে অন্য কোনও চাকরি জুটে গেলে সেটা ছেড়ে চলে যান। একই সেমেস্টারে তিন-চারজন শিক্ষক বদল হয়েছে, এ রকম ঘটনাও আছে। স্বাভাবিকভাবেই এই বদলগুলোর মাঝে বেশ কিছুদিন ক্লাস হয় না। এই সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির নতুন করে মূল্যায়ন করে তাদের দেশের আইন অনুযায়ী পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করতে ও শিক্ষাপদ্ধতি মেনে চলতে বাধ্য করা হোক।


    পরিশিষ্ট: বিভিন্ন দফায় বেশ কিছু মানুষের মতামতকে মোটামুটি একত্রিত করে এই প্রাথমিক একটি খসড়া বানানো হল। মতামত দিয়েছেন সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌরভ ভট্টাচার্য, শমীক মুখোপাধ্যায়,ঈপ্সিতা পালভৌমিক,পিনাকী মিত্র, সোমনাথ রায়, অরূপ চক্রবর্তী, রঞ্জন রায়, অনির্বাণ বসু ,চিরন্তন কুণ্ডু, কল্লোল দাশগুপ্ত,সৈকত চট্টোপাধ্যায়, দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। সংকলন করেছেন সৈকত, অনির্বান ও ঈপ্সিতা। আরও অজস্র মানুষের সঙ্গে কথোপকথনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সকলের মতামত পেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, ইত্যাদি আরও নানা বিষয়ে বিশদ এবং বহুমুখী কিছু প্রস্তাব পেশ করা যাবে।

    এই খসড়াটি অত্যন্ত তাড়াহুড়োয় লেখা। কিছু বানান ভুল, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বাদ পড়ে যাওয়া, এসব নি:সন্দেহেই থেকে গেল। আশা করা যাচ্ছে, এটি একটি দীর্ঘতর কথোপকথন হতে চলেছে। অতএব, পরবর্তী খসড়ায় এই ত্রুটিগুলি থেকে বেরিয়ে আসা যাবে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৩ জুন ২০১১ | ৯২২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • S | 2405:8100:8000:5ca1::d:d24f | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:৩০97567
  • ১৮। বছর দশেকের মধ্যে রাজ্যে বিজেপিকে প্রধান রাজনৈতীক দল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সবরকম সহযোগীতার ব্যবস্থা করা।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন