এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  অপর বাংলা

  • করোনাকালীন

    Anuradha Kunda লেখকের গ্রাহক হোন
    অপর বাংলা | ০৩ আগস্ট ২০২০ | ১৮২৩ বার পঠিত
  • #করোনাকালীন
    টিকটিকি দেখলো ।মেয়েটা ল্যাপটপের সামনে।ওর দিকে তাকাচ্ছে না একবারও।অভিমান হল টিকটিকির।মানুষ বড় স্বার্থপর।ভেবে নিল।
    ডে ওয়ান ।সকাল।
    উওলগ্যাংগ প্যাটেরসনের ছবি।আউটব্রেক।মেডিক্যাল থ্রিলার।জাস্টিন হফম্যান।মর্গান ফ্রিম্যান।রেঁনে রুশো।ইবোলার ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে আফ্রিকার কোনো অন্চলে আর তারপর ইউ এস এর একটি ছোটো শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সেটা।উনিশশো পঁচানব্বুই।
    ও দেখতে দেখতে টানটান হয়ে বসলো।তবে তো মানুষ ভেবেছে। ইন ফ্যাক্ট অ্যান্টিসিপেশন আছে। এতদিন আগে মানুষ ভাইরাসের এই বিধ্বংসী আচরণের কথা ভেবেছিল তবে?
    ডে ওয়ান।রাত।
    রাতে খেয়েছে অল্প ভাত। আলুসেদ্ধ।ঘি। অনেকদিন বাদে এরকম খাওয়া । মা অবাক হয়ে গেছে।মায়ের চোখের নিচে কালি। বোধহয় ঘুমোতে পারছে না রাতে।মা' কে খুব বেচারা মনে হচ্ছে।একটা প্যাটার্ন অব লাইফ ফলো করে তো।সেটা এমনিতেই লকডাউনে বারোটা বেজে গেছে। তারপর দিদুনের হসপিটালাইজেশন। দেখতে পর্যন্ত যেতে পারছে না। মা খুব পার্টকুলার এসব ব্যাপারে ঠাম্মি যখন নার্সিংহোমে ছিল, তখন গুছিয়ে বাড়ির কাজ, স্কুলের কাজ সেরে, নিজে হাতে ঠাম্মির খাবার নিয়ে বিকেলে নার্সিংহোমে চলে যেত।একেবারে খাইয়ে ফিরত।
    দিদুনের বেলা এইসব কিছু করতে পারছে না।কান পেতে আছে কখন ফোন আসবে। কিছু জানতে পারবে।
    রাতের ফিল্ম।
    টুয়েন্টি এইটা ডেজ লেটার।হঠাৎ একটি সংক্রামক ভাইরাস সভ্যতাকে ধ্বংস করার জন্য সক্রিয় হয়ে
    উঠেছে।দু হাজারদুই।
    চোখ জ্বলছে। কী ধ্বংসচিত্র ।
    ডে টু। আজ দুপুরের ফিল্ম। একের পর এক ছবি।
    আই অ্যাম লেজেন্ড।উইল স্মিথ।দু হাজার সাত।আর্মি ভাইরোলজিস্ট উপশম খুঁজছেন ধ্বংসের।মানবসভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে।যারা বেঁচে আছে তারা দানবপ্রায়।শুকনো, অনুর্বর শূন্য পৃথিবীতে তারাই বেঁচে আছে , যারা মানুষ নয়।
    এই পৃথিবীতে প্রকৃত মানুষ ক'জন?
    লাঞ্চ আজ রুটি সবজি দিয়ে ।মা হ্যাজ সাইলেন্সড হারসেল্ফ।রান্না মায়ের প্যাশন। চুপ করে গেছে। খাচ্ছে না তেমন।
    ডে টু। রাতের ছবি।
    ব্লাইন্ডনেস।সারামাগোর অমর অনন্ত উপন্যাস অবলম্বনে ছবি।জুলিয়ান মোরে।মার্ডক রাফালো।ব্যাক্তি অসুখ প্রসারিত হচ্ছে পারিপার্শ্বিকে।হঠাৎ শহরে আসছে এক অদ্ভূত অসুখ।সবাই অন্ধ হয়ে যাচ্ছে।ডাক্তার, তাঁর সঙ্গে জড়িত এক দল লোক।সবাই।অন্ধত্ব ছড়াচ্ছে চারদিকে। সরকার চেষ্টা করছে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার। কিন্তু বারবার ব্যর্থ।খাদ্যাভাব। সৈনিকদের রাগ বাড়ছে ।আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে অসুখ।মিলিটারি টেক ওভার।সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে ধ্বংস, ধর্ষণ।একটা অসুখ একটা দেশকে কোয়ারেন্টাইন্ড করে রাখছে। অ্যাসাইলামগুলো নোংরা।কদর্য পরিবেশ।নীতিবিহীন।চেনা লাগছে খুব।
    সারামাগো অবশ্যই আশার আলো দিচ্ছেন।ডাক্তার আর তাঁর সদ্য গঠিত নতুন পরিবার, যার অনেকেই রক্ত সম্পর্কিত নয়, তাঁরা সরকারী পরিমণ্ডল থেকে পালিয়ে তৈরি করছেন এক নতুন কাঠামো।নতুন করে বাঁচা।ডাক্তার পত্নী একমাত্র,যিনি চোখে দেখতে পান।তাঁকে কেন্দ্র করে তৈরি হচ্ছে এক নতুন পরিবার।
    আজ ভোর থেকে ছবি দেখা।বাড়িতে চাপা টেনশন দিদুন ইজ ইন ভেন্টিলেশন। মা জানে না এখনো।ত্রিদিব মেয়েকে বলেছেন । মালবিকা জানলে ভয়ানক পাগলামি করবে যাবার জন্য।এখন কিছু বলা যাবে না।
    ইট ইজ অবভিয়াস দিদুন ইজ ডিটিরিওরেটিং।
    ডে থ্রি ।দুপুর। দিদুন ভালো নেই।সে ডিসটার্বড। দিদুন তেল মাখাতো।ঘুম পাড়িয়ে দিত মা স্কুলে গেলে। মা কে জানানো দরকার।নইলে আচমকা শক নিতে পারবে না।শী ইজ ভেরি টেন্ডার।
    ছবিতে নিজেকে ডুবিয়ে রাখা ছাড়া কোনো রাস্তা নেই।ভুলে থাকতে হবে।ভুলে থাকতে হয়।ভুলে থাকতে হয় শাড়ির আঁচলের ঘ্রাণ। চুলের তেলের গন্ধ।
    রাত বারোটা । কুকুরগুলোও ডাকে না এখন আর।
    ক্লান্ত।
    ডুমসডে।দু হাজার আট।ভবিষ্যতের স্কটল্যান্ড কোয়ারেন্টাইন্ড।কারন একটি ক্ষুদ্র ভাইরাস।মানুষের প্রাণঘাতী ভাইরাস স্তব্ধ করে দিয়েছে জীবনযাত্রা।
    আজ সকালটা গুমোট।
    ডে ফোর।মাথা ব্যথা।চোখ জ্বালা।খুব বেশি ছবি দেখছে ও।এরকমই দেখে।এখন থামবে না । ও টের পাচ্ছে।দিদুন চলে যাচ্ছে।ভেন্টিলেশনে আছে। একা। হসপিটালে গিয়ে কারুর বসে থাকার উপায়টা পর্যন্ত নেই। বসে থাকলে কিছু হয়না।সবাই জানে।কিন্তু তবু।ঐ।শান্তি।একটু কাছে থাকা।

    কেরিয়ার্স।দু হাজার নয়।ক্রিস পাইন।এমিলি ভ্যানক্যাম্প।চার বন্ধু পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এক ভয়ংকর ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচবার জন্য।

    ডে ফোর ।রাত।ডিনারে রুটি।ডাল।আলুভাজা।
    এত সংক্ষেপে ডিনার হয় না এ বাড়িতে ।মা ইজ গ্লুমি। এখন বোধহয় আন্দাজ করছে কিছু। যে দিদুন হয়তো আর পারবে না। ফিরবে না।
    কোণের ঘরটা ফাঁকা থাকবে।বড় খাট? যেখানে ও আর দাদা জড়াজড়ি করে দিদুনের কোলে।
    দাদাকে ফোনে পাচ্ছে না।টেক্সট করছে।খুব ব্যস্ত ল্যাবে।মা নিডস দাদা।
    ওয়ার্ল্ড ওয়ার জেড।দু হাজার তেরো।ব্র্যাড পিট।ভয়ংকর প্লেগ আক্রান্ত পৃথিবী ।কারন ভাইরাস।চিরাচরিত হলিউডি মেইনস্ট্রিম অবশ্য এখানে জোম্বি বা ভারতীয়দের রাক্ষস বানিয়ে ছেড়েছে।তবু শেষমেষ ভ্যাকসিন আসছে ।আসছে পরিত্রাণ।

    শিট
    ভ্যাকসিন অত সহজে আসবে না।মেডিসিন ইজ বেটার দ্যান ভ্যাকসিন।ভ্যাকসিন আজ বেরোবে।কাল বলবে এতে কিডনি ফেইল করবে। হু উইল রিস্ক?

    ম্যাগি।
    দু হাজার পনেরো।আর্নল্ড শোয়ারজেনেগর।ভাইরাল প্যানডেমিক।আবারো ।শেষে উজ্জ্বল উদ্ধার।
    এসব সিনেমাতে হয়।ক্লান্ত লাগছে রাত জেগে। ও বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার খুলে দিল। সাড়ে তিনটে। ভোর বলো না রাত? দিদুন এই সময় উঠে পড়তো।কুটকুট করে এটা ওটা কাজ। পুজোর ফুল তোলা। পেছনের বাগানে একটা টগর গাছ।একটা দোপাটি।বাগান মানে একফালি মাটি।গাঁদাও।
    দিদুনের এটা ভোর। আজ ভোরে দিদুনের কী জ্ঞান আছে? না অচেতন হয়ে পড়ে আছে একা?
    দাদা।দাদা।উই ব্যাডলি নিড ইউ রে। তুই অনেক কুল। অনেক শান্ত। তোর ধৈর্য বেশি।আমার অত ধৈর্য্য নেই। মায়ের জন্য।
    ডোন্ট পুট দ্য ফোন ইন ফ্লাইট মোড।
    পিক ইট আপ।
    দিদুন চলে যাচ্ছে। মা ইজ ভেকান্ট।
    মানুষ কল্পবিজ্ঞান বানিয়েছে।ছবি বানিয়েছে।এমন ছবি যেখানে লম্বা কালো ওভারকোট পরা কোনো মানুষের পকেটে থাকে প্রাণঘাতী ভাইরাস সমন্বিত একটা ছোট্ট টিউব।তারপর পরিত্রাতাদের সঙ্গে শুরু হয় লড়াই ।ছবি বানিয়েরা শুভ অশুভের চেনা ছকে ফেলে একটা দি এন্ড টেনে দিয়েছেন।সবখানে কোনো " মাই বাপ" থাকে , সেই সর্বশক্তিমান মহাপরাক্রমশালী পরিত্রাতা যিনি ভাইরাসটি ধ্বংস করে ফেলেন।আসলে জ্ঞানপাপী মানুষের মনে ভাইরাসের ভয় ঢুকে গেছে অনেক অনেকদিন আগে। পৃথিবী নিংড়ে মানুষ একা তাণ্ডব চালিয়েছে যবে থেকে, তবে থেকে তার ভয়।সে একা নয় ।আরো কোনো শক্তিশালী প্রাণ আছে অথবা তার নিজের তৈরি ফ্রাঙ্কেনস্টাইন যে তাকে ধ্বংস করে , গিলে নেবে তার অস্তিত্ব ।
    মানুষ কি জানত না? জানতো।স্কাইস্ক্রেপার আর শপিংমল দেখে ভয় লাগেনি কখনো? খোদকিরি করতে করতে এমন জায়গাতে এসে পৌঁছানোর তো কথা ছিল যেখানে সবার গায়ে কীটনাশক স্প্রে করা হয়।প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে । টিকটিকি দেখে মানুষ প্লাস্টিক চাটে। ফর্সা হবার ক্রিম মাখে।প্ল্যাস্টিক সার্জারি করে পৃথিবীর ভোল পাল্টে দেয়।বর্ণবৈষম্যের পৃথিবী, ঘৃণার দুনিয়া তৈরি করে ঘরে কপাট দিয়ে ভাবে সে নিরাপদ।
    সেফ জোন।
    স্টে হোম।স্টে সেফ।
    টিকটিকি দেখল ল্যাপটপে মাথা গুঁজে ঘুমিয়ে আছে সে।মোবাইলটা বেজে চলেছে।বেজেই চলেছে।
    শুনতে পাচ্ছে না ও।

    সাদাটে একটা আলো ঘুরছিল। গোল করে ঘুরতে ঘুরতে মিলিয়ে যাচ্ছে।কোথা থেকে শুরু কোথা থেকে শেষ, কিছুই বোঝা যায় না। তীব্রতা মাঝেমাঝেই বেড়ে যাচ্ছে ।আবার খুব কমে যাচ্ছে।একটা ঝিঁঝির ডাকের মত যেন।সামনে কী ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।মাঝেমাঝে বিদ্যুতের চমক যেন।চিড়িক দিচ্ছে মাথার ভিতর। সঙ্গে সঙ্গে চোখে যন্ত্রণা ।হাত পায়ে জোর নেই কোনো। পাশ ফেরার ক্ষমতাহীন।সামনে দরজাতে একটা গ্লাস পেইন্টিং।কার মুখ? ফ্রিডা কাহালো?ভানুমতী? প্রায় অবশ হাত পায়ে পিঁপড়ের চলাচল।ব্যালকনিতে গাছ আছে কিছু।একটা সবুজ আভা দেখা যায় ।
    কেউ মাথায় হাত দিল।কপালে।গালে।গলায় ।ঠিক এইভাবেই তো মা দেখতো।মা দেখতো বাবুর জ্বর আছে কিনা।বাবু কষ্ট হচ্ছে বাবা? মা গোলাপি সালোয়ার কুর্তা পরে ঘরের মধ্যে যেন।অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
    গলা শুকিয়ে আছে।জল।অল্প কাশি। মাথা তুলে ধরে কে জল খাইয়ে দিল। গন্ধটা চেনা।গলায় জল পড়েছে। মুখিয়ে দিচ্ছে।একটা ফোনের শব্দ। কেটে দিল ফোনটা কেউ।
    খাবি কিছু? স্যুপ ? একটু উঠে বোস।
    হাতের মধ্যে হাত।অদিতি। ঘোর এসেছে একটা।ও আবার ঘুমিয়ে পড়লো।পরম নির্ভরতায়। ।অদিতি আছে।
    আরো একদিন বাদে সে উঠে বসতে পারে।বিছানার মধ্যেই ।অদিতি পেছনে বেশ কয়েকটা বালিশ কুশন দিয়ে ওকে হেলান দিয়ে বসিয়েছে।চাদর দিয়ে দিয়েছে গায়ে। একটা সুজনি টাইপের চাদর।ভোপাল থেকে অদিতিই নিয়ে এসেছিল।পিচ রঙা। সাদা ফুটি কাটা।এটা গায়ে দিলে খুব নরম, কোজি একটা ফিলিং হয়।
    অদিতি খানিকক্ষণ আগে ওর মাথা ধুয়ে দিয়েছে।গা স্পঞ্জ করে ফ্রেশ শর্টস আর টি শার্ট পরিয়েছে।কারণ এখন ওর নড়াচড়ার তেমন হুঁশ নেই। বাথরুমে অদিতি ধরে ধরে নিয়ে যায় ।
    হাল্কা একটা রোদ উঠেছে ন 'টা সাড়ে ন' টার দিকে। ভোররাতে বৃষ্টি হয়েছিল।অদিতি টোস্টারে পাঁউরুটি দিয়েছে । ঘটঘট করে হরলিক্স গুলছে গ্লাসে। তিনদিন বাদে জ্বর নেমেছে।উঠে বসতে পারছে ।যদিও ভীষণ দুর্বল।
    হরলিক্স মানে শৈশবের গন্ধ ।
    - কেন ফালতু হরলিক্স গুলছিস? আমি খাবো না।
    - খেতে হবে বাবু।
    - হরলিক্সে কিছু নেই। ছাতু ইজ মাচ বেটার।
    - এই লকডাউনে হোয়ার শ্যাল আই গেট ছাতু ডার্লিং?
    - পাঁউরুটি খাবো না।
    - খাবি। দুপুরে ডিম। চুপচাপ যা দেব তাই খাবি।মারবো এক গাট্টা।
    পুনের এই অভিজাত বহুতলের প্ল্যাস্টিক পেইন্ট করা ফ্ল্যাটে বসে কোভিডের আঁচ টের পাওয়া যায় না।দুটো চড়াই বারান্দায় লাফালাফি করছে।
    - প্লিজ ঐ সিডি টা চালিয়ে দে। ঐ গানটা।একটা চড়াই আপনমনে এক্কা দোক্কা খেলছে ।
    - আগেইন! ইওর সুমন চ্যাটার্জি?
    - কবীর সুমন।
    - ওল দ্য সেইম। ইউটিউব দেব?
    - না।সিডি।
    ও স্টিরিওফোনিক সাউন্ড চাইছে এখন।গমগম করবে ঘর জুড়ে । কোভিড নাইন্টিন । সুইসাইড। মাইগ্রান্ট লেবার।আপাতত নয়। আপাতত শুশ্রূষা ।কমপ্লিট হিলিং অব দ্য বডি অ্যান্ড মাইন্ড।আটমোস্ট নেসেসিটি। এখন ও নিজের আবর্ত চায়।আর পাঁচজনের মত।
    ভারবোধ কম। ভালো লাগছে ওর।নির্মাল্য সামন্ত এখন অতীত। মাত্র তিনদিনে একটা মানুষ অতীত হয়ে যেতে পারে না।কিন্তু এই তুমুল জ্বর।প্রায় অচেতন হয়ে তিনদিন একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে থাকা। এইসবকিছু ওকে অনেকটাই।অনেকটাই ইনট্রোস্পেকটিভ করে তুলেছে।লেইড ব্যাক হয়ে দেখছে আজ। এবং অদিতির উপস্থিতি । ওর একটা ফুলফিলিং ব্যাপার আছে।সবকিছু ভরিয়ে রাখে।মায়ের মত।
    হরলিক্সে চুমুক দিয়ে দেবরূপ হেসে ফেললো।অদিতিকে এটা বলা যাবে না।সে নিজেও কী নাইন্টি পার্সেন্ট ভারতীয় পুরুষের মত প্রেমিকার মধ্যে মা' কে খুঁজছে? সিলি।ড্যাম সিলি। এবং অদিতি একটুও মালবিকার মতো ওকে ন্যাম্বি প্যাম্বি করে রাখে না।শী ইজ প্রেটি স্ট্রংগ। কখনো বেশ কঠিন।বাট নট কমপ্লেক্স। গোলাপি সাদা চেক শার্টে অদিতির বাদামি স্কিন মোলায়েম লাগছে। চিক বোন একটু উঁচু। কোঁকড়ানো চুলে কিছু একটা দিয়েছে। চকচক করছে। অদিতি লম্বা। স্ট্রংগ লিম্বড।পেটানো স্বাস্থ্য । শি হ্যাজ নো ন্যাকামি অ্যারাউন্ড হার। মালবিকা অন্যরকম। দেবরূপের সামান্য জ্বর মানে মায়ের সি এল।মা বাড়িতে।
    অদিতি কাজ থেকে ছুটি নেবে না। দেবরূপের জন্য যা যা করার করেছে সকাল থেকে। যখন জ্বরে অচেতন ছিল, ছুটি নিয়েছে। প্রয়োজনে বেরিয়েছে শুধু।এখন কাজে বেরিয়ে যাবে।ঠিক দুটোতে ঢুকে যাবে লাঞ্চ দিতে। ওকে এখন থাকতে বলে লাভ নেই।শুনবে না।
    - শোন।গাছগুলোতে জল দিয়েছিল?
    অদিতি ফ্লাস্কে গরম জল ভরতে ভরতে তাকাল।
    - ইয়েস। অ্যান্ড কোভিড টেস্ট ডান ফর ইউ।ফর মি ওলসো।
    দুর্বল শরীরে ছিলার মত টানটান হয়ে উঠে বসে।
    - অ্যান্ড?
    - অ্যান্ড হোয়াট?
    - কবে করালি টেস্ট?
    - অন দ্য ভেরি ফার্স্ট ডে। জ্বরে মেঝের ওপর পড়ে ছিলি। আমার ফোন রিং হয়ে যাচ্ছিল।আই গট গোভিন্দ অ্যালংগ উইদ মি টু গেট দ্য টেস্ট ডান।
    - পজিটিভ?
    - ইয়া।বাট নো নিড টু ওরি। তোর ব্রিদিং ট্রাবল নেই।তুই যখন ঘুমোতিস, আমি তোর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।জ্বর ছিল।বাট ইউ স্লেপ্ট ওয়েল।
    আর শোন।তুই পজিটিভ এটা আমি কাউকে বলছি না। নিশান্ত তোকে দেখে যাচ্ছে দুবেলা।হি ইজ আ ট্রাস্টওয়ার্থি ডক। অসুবিধে বুঝলে তোকে হাসপাতালে শিফ্ট করে দেবে।আদারওয়াইজ ইউ আর ফাইন হিয়ার। জানাজানি হলে লোকে খামখা প্যানিক করবে।ঝামেলা হো যায়েগা। দ্যাট ইজ নট নিডেড।তোর হোম আইসোলেশন হয়ে যাচ্ছে।
    এক নিঃশ্বাসে কথা বলে গেল মেয়েটা।

    নিশান্ত ডাক্তার । সহ্যাদ্রি হসপিটালে রয়েছে। কাজেই নিশ্চিন্ত হওয়া যেতে পারে।

    শান্ত হয়ে গেল দেবরূপ।বারান্দায় মাথা নাড়ল এরিকা পাম। পাখিগুলো নেই।
    বুক ধক করে উঠল।
    - এই শোন।বাড়ি? মা তো রোজ দুবেলা ফোন করে তুই ফোন ধরেছিস নাকি?
    অদিতি শিবরামণ মিষ্টি হাসলো। ব্যাগ তুলছে পিঠে।
    - নো। রোজ রাত দশটা আর সকাল আটটা। আমি ফোন ধরলে ভালো হত?
    - দেন? মা ভীষণ চিন্তা করবে।
    - করবে না মায়ের খোকা। আই হ্যাভ টেক্সটেড ইওর মম।অন বিহাফ অব ইউ। বাবু হয়ে টেক্সট করেছি। " বিজি ইন সিরাম ল্যাব ফর আ ফিউ ডেজ। ফোন কল নট অ্যালাউড।ওনলি টেক্সট। লাভ।বাবু।
    পড়ে দ্যাখ।ঠিক আছে?
    - এত রিস্ক নিলি? যদি আমার কিছু হয়ে যেত? সব দোষ তোর ঘাড়ে ।
    অদিতি গভীর দৃষ্টিতে ওকে দেখল খানিকক্ষণ । এগিয়ে ঝপ করে চুমু খেল কপালে। কন্টামিনেশনের ভয় জানলা দিয়ে উড়ে গেছে।
    - ইন লাভ রিস্ক ইজ কম্পালশন। আদারওয়াইজ ইট ইজ নট লাভ।যাস্ট কম্প্রোমাইজ।
    এই মুহূর্তে ও প্রকৃত রিল্যাক্সড ।কোনো যন্ত্রণা নেই। চিন্তা নেই।অদিতির স্পর্শ আছে।তবু যৌনকাতরতা নেই। একেই কী অনাবিল বলে?
    অদিতি হাত নেড়ে দরজা টেনে বেরোচ্ছে।
    - আর তোর রিপোর্ট?
    - ফর নাউ নেগেটিভ। বাট হু নোজ। কাল পজিটিভ হতেই পারে।কোভিড নাইন্টিন ইজ আনপ্রেডক্টিবল লাইক মারিয়া।বাই।
    দরজা বন্ধ হল ক্লিক শব্দ করে।
    পাঁচ সেকেন্ডে খুলে গেল আবার।শুধু মাথাটা উঁকি দিল।
    - হেই! কল ইওর মম। শী সিমস টু বি ভেরি আপসেট। প্লিজ কল হার।

    সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বসেছিলেন অনিল। পিস্তা কালারের রঙ দেওয়ালে।সাদা সিলিং।হাল্কা করে ফ্যান ঘুরছে। অনিলের প্রিয় রঙ সাদা। তাঁর বাড়িটিতে সাদা রঙের প্রাধান্য ।সাদার সঙ্গে মানানসই দু একটি রঙ । আউটহাউসে খুব শখ করে কাঠের কাজ করিয়েছেন। উডেন কালার। সাবাই ঘাসের ফ্লোর স্প্রেড।টিক উড ফার্ণিচার। একেবারে খাশ টিক।এক্সপোর্টেড ফ্রম ঘানা।কাঠের হাতিদুটি পলি খুব শখ করে তৈরি করিয়েছেন। একগাদা পুরোনো পত্রিকা।জার্নাল জমে আছে। অনিলের হাত দিয়ে ছুঁয়েও দেখতে ইচ্ছে করছে না। তাঁকে তাড়া করে বেড়ায় ভয়ঙ্কর এক দুশ্চিন্তা যা অতিমারীর চেয়েও ভয়াবহ। ক্যানসারের সম্ভাবনা অনিলকে তীব্র দুশ্চিন্তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে । গত রাত থেকে তাঁর মাথার মধ্যে ঘুরছে, বেঁচে থেকে কি লাভ হবে।যদি ক্যানসারই হয়, দীর্ঘদিন ভুগতে হবে।অনিল দেখতে পাচ্ছেন পলি এক ক্লিনিক থেকে অন্য ক্লিনিক, এক হসপিটাল থেকে অন্য হসপিটাল দৌড়ে বেড়াচ্ছে।রোদে ও দুশ্চিন্তায় পুড়ে গেছে ওর কোমলতা।বাচ্চাদের শুকনো মুখ।পড়াশোনা হচ্ছে না ঠিকমত।এই কোভিড সিচুয়েশনে কোথাও যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।নাহলে অনিল মুম্বাইতে চলে যেতেন।অন্তত টেস্টগুলো করে নেওয়া যেত। নাউ ইট ইজ ইম্পসিবল।কোনোখানে এতটুকু জায়গা পাওয়া যাবে না।
    চেঙ্গালা এই সময়ে বেশ গরম।বৃষ্টি হলে আলাদা ।কিন্তু অনিল ঘামছেন। সাধারণত ট্যুর থেকে ফিরে ওঁরা কোথাও একটু ঘুরে আসেন কাছাকাছি।এবার পলির ইচ্ছে ছিল মুন্নার যাবেন। অনিল একটা শ্বাস ফেললেন। কত কী ভাবা ছিল।মাতুপেতি ড্যামের কাছে পিকনিক করবেন।ছেলেমেয়েদের ঘুরিয়ে দেখাবেন ইরাভিকুলম ন্যাশনাল পার্ক।সারাদিনের প্ল্যান।হৈচৈ।এইসময়টাতেই বিদেশ থেকে ফেরেন তিনি প্রতিবার।বাড়িতে খুশির ঢেউ।
    কিচ্ছু হল না।কিচ্ছু না।হয়তো কোনোদিন হবেও না আর। ভেঙে যাচ্ছেন ভেতরে ভেতরে।দেবরূপকে বলেছিলেন। যদি নর্মাল সময় হত , দেবরূপ পুনে থেকে মুম্বাইতে চলে যেত।টাটা ক্যান্সার হসপিটালে ।দেবরূপের মত কেউ সঙ্গে থাকলে অনিল অনেকটা জোর পেতেন মনে।এখন হাত পা বাঁধা।তাঁর কেবলি মনে হচ্ছে সামনে কেবল অন্ধকার।স্পর্শ নেই।রসাস্বাদন নেই। গন্ধ নেই।
    না।গন্ধ আছে।গন্ধ আছে তো।গন্ধ পাচ্ছেন অনিল।
    কিসের গন্ধ আসছে? চাঁপা ফুল? হ্যাঁ ।এইসময়গুলো চাঁপার।বিয়েতে চাঁপাফুলের ক্রাউন পরেছিলেন পলি। বাদামি গায়ের রঙে কী চমৎকার মানিয়েছিল তাঁকে। ওয়েনাডে মধুচন্দ্রিমা ।উত্তর কেরালার সেই বড় বড় স্ট্রাকচারগুলি।প্রাচীন।কালো পাথর ।যুগ যুগান্তরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।ইতিহাস গেঁথে রেখেছে একটা যুগকে।বিশাল।গম্ভীর । মীনামুত্তি জলপ্রপাতের সামনে তাঁদের যুগল ছবি।পলি হাসছেন।হাসলে পলির বাঁ গালে ঈষৎ টোল।টেনশন এবং হতাশা অনিলের যাবতীয় অনুভূতি কেড়ে নিয়েছে ।তবু।তবু হঠাৎ একধরনের উত্তেজনা বোধ করলেন অনিল ।অনেকদিন বাদে। জীবন থেকে বিচ্ছিন্নতা তাহলে তাঁকে একেবারে মেরে ফেলেনি!সামান্য কিছু সময়ের জন্য উল্লাস ফিরে এলো।ফিরো এলো আকাঙ্খা ।তারপর আবার তলিয়ে যাওয়া ।যেন খাবি খাচ্ছেন জলে।

    ক্রমশ উত্তেজনা থিতিয়ে গেলে আবার একটি অগাধ লিম্বো। ফোন বা এস এম এস বা হোয়াটস অ্যাপে যতটুকু জনসংযোগ হয় , বা মেইলের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা, তাতে আর আশ্বস্ত হতে পারছেন না অনিল।একটি ঘড়ির অবোধ টিকটিক শব্দ তাঁকে অনন্ত বিবমিষার দিকে ঠেলে,ঠেলে, ঠেলে, ঠেলে...

    মরে যাওয়াই ভাল। এই টেনশন আর সহ্য করতে পারছেন না অনিল।অনেকগুলো লাইফ ইনস্যুরেনস করা আছে। পলি সেই সমস্ত দিয়ে আর কিছু কাজকম্ম করে বাচ্চাদের মানুষ করে ফেলতে পারবে ঠিক।এইটাই অনিলের প্রধানতম কনসার্ন ।যেভাবে হোক।বাচ্চারা যেন অসুবিধে বোধ না করে।কতজনের তো বাবা থাকে না।তারাও তো মানুষ হয়।মানি অ্যান্ড গাইডেন্স আর ইম্পরট্যান্ট।
    মাথা ব্যথা করছে অনিলের।গলা একেবারে শুকনো। নিউজ ফিড নিতে পারছেন না।ইতালিতে মৃত্যু মিছিল। ইংল্যান্ড ।ফ্রান্স।জার্মানী।সব মদমত্ত জাতি মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধে গোহারা হেরে যাচ্ছে।বিশপ কাঁদছেন গির্জার পালপিটে। ডাক্তার হাহাকার করে কাঁদছে হাসপাতালের করিডোরে। মন্ত্রী পদত্যাগ করছেন।সামলাতে পারছেন না কোভিডের তান্ডব।এত মৃত্যু ।এত মৃত মুখ।কোনো প্রার্থনা নেই।মৃত্যুর কোনো শিষ্টতা নেই। কেবল শ্বাসরোধকারী এক ভাইরাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ।সারা পৃথিবী কাঁপছে ভয়ে। কোম্পানির কাজ গুটিয়ে এসেছে।মিডল ইস্ট পুরো ষাট ডাউন।
    অনিল তাঁর ফুসফুসের ঐ স্পটটি নিয়ে কোথায় যাবেন এখন? কোথাও কোনো ত্রাণের আশা নেই। এই মুহূর্তে মরে যাওয়া সবচেয়ে ভালো।ফ্যানের দিকে তাকিয়ে উর্ধমুখে। ওখানেই কি নিজেকে শেষ করে দেবেন অনিল? একটা শাড়ি বা শক্তপোক্ত ওড়না চাই শুধু। আর একবার ছেলেমেয়েদের কাছে পাওয়া ।যাস্ট একবার। তারপর আর কিছু বাকি নেই।ওদের কপালে, গালে চুমু। সব টেনশন শেষ। অনিল মনস্থির করে ফেলেছেন।আজ রাতেই।সব শেষ হোক।স্লিপিং পিলস এখন পাওয়া সম্ভব নয়। তাহলে খুব শান্ত মৃত্যু হত। শিরা কাটতে অনিল পারবেন না ।তাহলে একমাত্র উপায় টু হ্যাংগ হিমসেল্ফ।
    দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে টিকটিক শব্দে।
    একটা অচেনা পাখি ডাকছে কোথাও। রোদ পড়ে ক্রোটনগুলি অসম্ভব বর্ণময়। পুলের পাশে ব্যাঙটা চুপ করে বসে।ফড়িং টড়িং ধরার আশায়।অনিল কেমন ঘোরের মধ্যে ব্যাঙটার দিকে চেয়ে রইলেন।

    দূর থেকে একটা অস্পষ্ট চিৎকার।কে ডাকে।
    দোতলার প্রশস্ত ব্যালকনিতে দুটো কচি মুখ।পাপাআআআ। হাত নড়ছে চারখানা ।

    আর মাত্র কয়েকটা দিন।হোম আইসোলেশন শেষ।বাড়িতে ঢুকবেন অনিল। চকোলেট কেকের গন্ধে ভরে যাবে পলিজ নেস্ট। বাচ্চাদের আনন্দের শেষ নেই।পাপা উইল বি ব্যাক হোম অ্যাটলাস্ট।অনিল একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। দুজোড়া চোখ চকচক করছে। কী মিষ্টি চাঁপা ফুলের গন্ধ!

    হাত নাড়ছে বাচ্চারা।দিন গুনছে।ট্রু হোমকামিং হয়নি তো।এবার হবে।কোয়ারেন্টাইন শেষ হলেই।
    মেয়ের মাথায় একটা গোলাপি হেয়ারব্যান্ড। হলুদ জামা।এখনো কত রঙ চারদিকে। কত আকাঙ্খা ।
    এইসব ছেড়ে কী এত সহজে যাওয়া যায়?
    যদি ক্যান্সার না হয়! বুকের মধ্যে দপ করে হাজার ওয়াটের বাতি জ্বলে উঠলো। কেন শুধু নেগেটিভ ভাবছেন তিনি। কত প্রশস্ত পথ তো অপেক্ষা করে থাকতে পারে! সামান্য চিকিৎসাতে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন তো।পারেন! দেয়ারজ ওলওয়েজ আ চান্স।মেয়ের চুলের গন্ধ ভেসে এলো মনে।প্রথম সন্তান।

    একটি পরিপূর্ণ গৃহচিত্র। লম্বা হলটির একপাশে ডাইনিং টেবলে পলি রাওয়া ধোসা নামিয়ে রাখছেন। কফি পার্কোলেটরে কফি। গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।নতুন খবরের কাগজ এসে পড়েছে ব্যালকনিতে ।তার ওপর রোদের আঁকিবুকি।বাচ্চারা বাড়িময় দৌড়ে বেড়াচ্ছে। এইরকম বিজ্ঞাপনের ছবি হয়।অথবা ছবির বিজ্ঞাপন ।সে যাই হোক না কেন....
    টমাস অনিল আত্মহত্যার চিন্তা মুলতুবি রাখলেন।
    আপাতত।


    প্রথমদিকে কোনো ওষুধের দোকানেই মাস্ক পাওয়া যাচ্ছিল না।যা ছিল, সাপ্লাই আসছিল, সব চেঁছেপুঁছে মানুষ কিনে নিয়েছে।গ্লাভসও নেই হয়ে গেছিল।স্যানিটাইজারের আকাল। তারপর সব কোম্পানিগুলো স্যানিটাইজার বানাতে শুরু করল।ঘরে ঘরে ইউ টিউব দেখে স্যানিটাইজার । মাস্ক এসেছে দোকানে।এন নাইন্টিফাইভ। ঐ নাকি ঠিকঠাক মাস্ক। হেভি ডিমান্ড। তাই বলে হরপ্রীত কাউরের মাস্ক বানানো বন্ধ হয়নি।কাপড়ের।ডাবল লেয়ার। খুব খাটতে পারে ঐ মেয়ে ।যেমন বাইরে, তেমন ঘরে। এখন আর শ্যামার বাড়ি যাবার গল্প নেই।ছোটি মালকিনকে ধরে একটা সেলাই মেশিন জোগাড় করেছে। ঐ বিশাল বাড়িতেই পড়েছিল। খাটের নিচে। অব্যবহৃত বহুকাল।সিঙ্গার সেলাই মেশিন।বড় মালকিন চালাত শুনেছে।দেখেনি কখনো।মেশিনটি এখন হরপ্রীতের ।তেল টেল দিয়ে একেবারে চলনসই করে ।ঘরর ঘরর করে মেশিন চলে।মাস্ক তৈরি হচ্ছে সারারাত।হরপ্রীতের ব্যবসাবুদ্ধি তুখোড় ।ছোটি মালকিনের সঙ্গে থেকে থেকে অনেক কিছু শিখেছে।প্রথমে প্লেন কাপড়ের মাস্ক বানাচ্ছিল।বস্তিতে বস্তিতে সাপ্লাই।এখন ছিটের কাপড় ধরেছে। ম্যাচিং সব।ইক্কত। সম্বলপুরী।বাটিক। ছোটিমালকিনের অনেক ব্লাউজপিস পড়ে থাকে।শাড়ি আর পরে কোথায় । সেইসব অগণিত ব্লাউজপিসের অনেকটাই হরপ্রীত মাস্ক বানিয়েছে।ডিজাইনার মাস্ক।মেয়েরা পছন্দ করছে খুব।হরপ্রীত অর্ডার পাচ্ছে।শ্যামা থাকলে সুবিধা হত এখন খুব।
    দশটার মধ্যে বাড়ির কামকাজ সেরে , ছোটিমালকিনের হোমডেলিভারি নিয়ে বেরিয়ে যায় হরপ্রীত।সাইকেলে ঘোরে বাড়ি বাড়ি ।নিজের ডিজাইনার মাস্ক বিক্রি করে। ডেলিভারিতে বেশির ভাগ শ্যাম্পু, হেয়ার কালার, কন্ডিশনার, সাবান, সার্ফ, বিস্কুট, ম্যাগি এইসব যায় ।সিগারেটও যায় । শ্যামার ছেলেটা শান্ত। ঝামেলা নেই। ওকে ফ্যানাভাত করে খাইয়ে রেখে যায় ।ফিরতে ফিরতে বেলা তিনটে। খাওয়া দাওয়া সেরে মেশিন নিয়ে বসে হরপ্রীত ।ছেলেটাকেও ডেকে নেয়। আজা বেটা। এ বাবলুয়া। চল, আ যা কাম কর। বাবলু হরপ্রীতের হাতে হাতে কাজ করে। সারা সকাল সে এই বিশাল বাড়ির বাগানের আনাচে কানাচে ঘুরেছে। মায়ের জন্য তার কান্না পায় খুব। ঠাকুমার জন্যেও।বাবার ওপর রাগ হয়।বাবা এলেই মা সেন্টার থেকে চলে আসবে, এটাই ভাবে সে।
    ব্যবসায়ী মাড়োয়ারি পরিবারটি বাড়ির মধ্যেই থাকে। কচিৎ বেরোলে গাড়ি বা বাইক। অন্দরমহলের দিকে যাওয়া নিষেধ বাবলুর।সে যায়ও না। যতক্ষণ হরপ্রীতমাসি থাকে, সে খুব নিশ্চিন্তে থাকে। দুপুরবেলাটা সে একটু বই নাড়াচাড়া করে কিন্তু মন বসে না। মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। দুবেলাই। মাসির ফোনে। তাও কান্না পায় ।নিজেদের বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করে।কবে ছেড়ে দেবে মাকে?কী যে অসুখ তাও বোঝে না।তবে হরপ্রীতের সঙ্গে মাস্ক বানাতে খুব ভালো লাগে ওর। মাসি যখন কাঁচি দিয়ে কাপড় কাটে, বাবলু টেনে ধরে। ভাঁজ করে।ফিতে কাটে। এখন তো রঙ মেলাতেও শিখে গেছে।বলে, মাসি ,খয়েরির সঙ্গে হলুদ দাও।ভালো লাগবে।বিকেলে হরপ্রীত চালভাজা মাখে।লঙ্কা । চানাচুর।শসাকুচি । আদাকুচি।
    বাবার কি মনেও পড়ে না তাকে? বাবলু ভাবে।মা ঠিক কতদূরে আছে তাও জানে না।নিজেদের বস্তি, ছোট খুপরি দুটো ঘর, পাশের পেয়ারা গাছ, কলতলা, সবকিছুর জন্যে খুব মন ছটফট করে।বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদে।একদিন মাসি টের পেয়ে গেল।
    অন্ধকারে জেগে উঠে বসে থাকল দুজনে। বাগানের পাশে হরপ্রীতের ঘর। হরপ্রীত বলে
    - দেখ, তু ঘর ছোড়কে আয়া।ম্যায়ভি পঞ্জাবমে মেরি ঘর ছোড়কে আয়ি।ম্যায় ক্যা রো রহি হুঁ? বাচ্চা হ্যায় ক্যা আভিভি?রো মত। দেখ মুঝে।হিম্মতসে কাম লেনে কা হ্যায়।হ্যায় না বেটা?

    বাবলু কান্না থামায়। বাপ নেই।ঠাকুমা মরে গেল।মা নেই।ইস্কুল নেই।মাস্টার নেই। খেলা নেই।পাড়া নেই।বাড়ি নেই। সব লে লি করোনা।সব কুছ লে লিয়া।ফুঁপিয়ে কাঁদে আবার।
    সারাদিনের ক্লান্তি হরপ্রীতের ।আর পারে না।পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে।কী করা। কপালে রোনা আছে তো রো লে বেটা। কোই ক্যা করেগা!
    একচিলতে ঘর। বাবলু নেমে জানলার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। ঠাকুমা পুজো করত। মা পুজো করত। বাপ ফুল ছোঁয়াত কপালে।হরপ্রীতের ঘরে বাবাসাবের ছবি।হনুমানজির ছবি।
    বাবলু একমনে ডাকতে থাকে, মা চলে আসুক ভগবান।একবার শুধু মা চলে আসুক। আর কিছু লাগবে না পুজোর সময়ে । কেডস জুতো আর চাইবে না সে।
    হরপ্রীত কাউর বিছানার পড়ে আর ঘুমায় । আম্বালাতে শালের দোকান ছিল তাদের। কার্পেট ভাগেয়রা। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। লম্বা হিলহিলে চেহারা। টাইট করে একটা বেণী বাঁধলেও চুল কোমর ছাপানো। তীক্ষ্ম নাক। দোকান থেকে শাল সাপ্লাই নিতে আসতো কলকাতার ছেলে। মানব কুমার। শ্যামলা। গাঁট্টাগোট্টা । হরপ্রীত দেখতে যতটা তীক্ষ্ম, স্বভাবে তত নয়। মানব কুমারের সঙ্গে ঘর ছাড়তে ছ' মাস সময় মোটে। মানবের বাপ মা মোটে খুশি হয়নি হরপ্রীতকে সংসারে ঢোকানোতে। আবার দুর যা 'ও করেনি। একটা ঘরে সংসার করেছিল হরপ্রীত ।প্রায় দেড় বছর। মানবকুমার দুম করে অ্যাক্সিডেন্টে মরে গেল। হরপ্রীতের আর শ্বশুরঘর করা পোষায়নি। হরেকরকম কাজ জানা মেয়ে ।দু চার জায়গাতে ঠোক্কর খেয়ে এই বাড়িতে কাজ জুটিয়ে নিয়েছে।জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব পারে।এরা খাটায় খুব কিন্তু পয়সা ভালো দেয়।হরপ্রীতের কাছে দু চারটে ইশকের হাতছানি আসে না তাও নয়। হরপ্রীত ঐ দিক আর মাড়ায় না।মানব কুমার মরে যেতে সে ভেবেছিল, ভাগ্যিস ছেলেপুলে হয়নি। আন্ডাবাচ্চা নিয়ে কাজকাম পাওয়া খুব মুশকিল। সাবরেওয়াল পরিবারের বিশাল বাড়ির চত্বরে একটি খুপরি ঘর, দিনভর কাজ, কিছুটা নিজস্ব সময় এবং আত্মরতি - অতিরিক্ত চাহিদা হরপ্রীত রাখে না।তাই সে বিছানায় পড়ে আর ঘুমায় ।
    বাবলুর ওপর তার একটি টান আছে।তাই বলে সে কখনোই ঐ ছেলের বিকল্প মা হয়ে উঠতে চায় না। সে প্রখর বাস্তববাদী। আবেগকে পকেটে রাখে।
    আজকে তার দিল খুশ আছে। স্যানিটাইজার বানানো ট্রেনিং শুরু হবে কাল থেকে।তিন দিনের ট্রেনিং ।ছোটি মালকিন বলেছে, এখন স্যানিটাইজারের বহুত ডিমান্ড। সময়টাকে কাজে লাগানো চাই।টাইম ওয়েস্ট নহি করনা চাহিয়ে। টাইমকো আপনা বনাও। ফায়দা উঠাও। এটাই হরপ্রীতের পলিসি।
    খবর শুনেছে হরপ্রীত। এ বাড়ির বড় হলঘরে মার্বেলের মেঝেতে আলো পিছলে পড়ে।এককোণে বড় একটা টেলিভিশন হরওয়ক্ত চলতেই থাকে। বুড়ি আম্মি বসে বসে মালা জপে বড় একটা ঝুলাতে। কখনো কখনো সিরিয়াল দেখে।কখনো দেখে না।
    হরপ্রীত ফাঁক বুঝে খবরটা ঠিক শুনে নেয়।খবরে বলেছে শ্রমিক ট্রেন আসছে। তার মানে দলে দলে লেবার আসতে থাকবে এখন কলকাতাতে। শস্তার মাস্ক আর স্যানিটাইজার বানাতে পারলে আর কথা নেই।হরপ্রীতের বিজনেস চড়চড় করে উঠবে। টাকা কামানো দরকার এখন।বহোত সারি পয়সা।দু একজন হেল্পার চাই শুধু ।শ্যামা বেরোক সেন্টার থেকে।বাবলু ভি কাম আ সাকতা হ্যয়।স্কুল তো বন্ধ হ্যয় আভি।বাস। ওয়াক্তকা ফায়দা উঠানা চাহিয়ে।

    এবার বৃষ্টি খুব বেশি ।কথায় কথায় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামছে। নাগপুরে এসে ট্রাক যখন দলটাকে নামিয়ে দিল, তখন সুখনলালের পেট ব্যথা কমেছে।কিন্তু শরীর আর চলে না।মনে হয়, ট্রাক যেখানে নামালো সেখানেই শুয়ে পড়ে।এখানেও আবার ক্যামেরার ভিড়। ক্লিক।ক্লিক।দিখাও।আপনা পায়ের দিখাও।কাঁহাসে আ রহে হো। কিতনে দিন সে চলতে হো।অগুনতি প্রশ্ন।
    এখানে স্বেচ্ছাসেবির দল খুব সক্রিয় । গুঁড়ো দুধ, চিঁড়ে, গুড় , জল নিয়ে আসছে তারা।
    সুখনলালের শরীরে যদি তাগত থাকতো , তাহলে পায়ের ছবির জন্য এখন সে পয়সা চাইতো। দলের মেয়েদের হাল আরো খারাপ ।বৃষ্টিতে পোশাক ভিজে গেলেও ছাড়াছাড়ির ব্যাপার নেই।সেই সালোয়ার কামিজ আর রাবারের স্যান্ডাল পায়ে।কোলে বাচ্চা। পিঠে বোঁচকা। সঙ্গে আরো দুটো তিনটে বাচ্চা হেঁটে চলেছে।দলের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষটি নারী।আটান্ন বছর বয়স। বীরোত্তমা সুরেন্দ্রনাথ শুক্লা।সেলাইয়ের দক্ষ হাত। কাজ করতো বান্দ্রা ওয়েস্টে সুহানি মার্কেটে। শহরের
    সামান্য দূরে বসে আছে ওরা। এখন অভ্যেস হয়ে গেছে ।জানা হয়ে গেছে।কখন পালাতে হবে পুলিশের লাঠির গুঁতোর ভয়ে।কখনো পুলিশের গাড়িই এগিয়ে দেবে খানিকটা। পুলিশ হো ইয়া মালিক। দুনিয়ার সব লোক সমান হবে না।মেয়েরা তাই বেশি কিছু আশাও করে না।কোলের বাচ্চাগুলো বাঁচলেই হল। সিরাম্মা রাস্তার ওপরেই বসে পড়ে বাচ্চাদের জন্য ছাতু মাখে। সুখনলালকেও দেয় একদলা। গলা শুকিয়ে কাঠে একেবারে।
    ঘনিরাম এসে পাশে বসে।
    - আগর ভাসাইসে টেরেইন পকড় লেতে তো আচ্ছা হোতা।
    - কিঁউ ভাই।
    ঘনিরাম থুতু গিলে গলা ভেজায়।
    - হামলোগ খুদ নিকল আয়ে না। ইস্টিশনমে উওহি লোগ টেরেইনমে উঠনে বনায়েঙ্গে, যিনকো সরকারনে লায়া। সরকারি ছাপ্পা জরুরি হ্যায় টেরেইনমে চড়নেকে লিয়ে।
    - হামকো নেই দেঙ্গে? কাগজের?
    ওপাশ থেকে লক্ষণ বলে ছটফট করে।
    - মুম্বাইমে সোনু সুদ সব লেবারকো আপনে খরচেসে ঘর ভেজ রহে হ্যায় ।
    সুখনলাল সোনু সুদকে হাতজোড় করে নমস্কার করে মনে মনে ।দেওতা আদমি আছে।নাহলে সিনিমাস্টার আদমি নিজের পয়সা দিয়ে লেবারদের ঘরে ফেরত পাঠাবে কেউ? কোনো নেতা মন্ত্রী করেছে?
    শুধু ছাতু খেয়ে খেয়ে অম্বল হয়ে যাচ্ছে।ক্লান্তি ছাড়া শরীরে কোনো বোধ নেই।খুব আশা করে এসেছিল যে নাগপুরে টেরেইন পাবে। শান্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।শরীরে তাগৎ কম। হাঁপ ধরছে।
    ঘনিরামের কথাতে বেকুব হয়ে গেল দলটা।বীরোত্তমা সুরেন্দ্রনাথ শুক্লা হাঁপাচ্ছে। ন্যুব্জ শরীর।বয়স অনুপাতে অনেকটাই বেশি বুড়িয়ে যাওয়া । ক্রমাগত চোখের কাজ করতে করতে চোখের আসে পাশে অজস্র বলিরেখা।সবচেয়ে কাহিল হয়েছে। হেঁটে এসেছে এতটা পথ।প্রায় না খেয়ে ।পাঁজরসর্বস্ব শরীর নেতানো।রাস্তার ওপর।হঠাৎ করে এক পশলা বৃষ্টি এসে পড়ে ভিজিয়ে দিচ্ছিল সবাইকে।
    এই বৃষ্টিতে ভেজার আলাদা এক জমানা ছিল।শ্যামাকে নিয়ে কত যে ভিজেছে সুখন।একদম হিন্দি সিনিমার হিরো হিরোইন বনে যেত দুজনে।কী সাংঘাতিক জোশ তখন দিল আর দিমাগে।বাঁধনছেঁড়া উল্লাস। টিপটিপ বরসা পানি। সুখন অক্ষয়, শ্যামা রবিনা। হেড মিস্ত্রির সেদিন কাজে যেতে লেট।সেইসব গতজন্মের উথালপাথাল দিন সুখন আর মনে করে না।টেরেইন তাদের নেবে না।এই চিন্তা বজ্রাঘাতের মত নেমে এসে তাকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে রেখেছে যেন।
    এখন বৃষ্টির শব্দে ভয় লাগছে। পায়ের তলা ঠান্ডা। হিমশীতল হয়ে পড়ে আছে বীরোত্তমার শরীর। বেঁকে বেঁকে যাচ্ছে। মায়ের পেটে ভ্রূণের মত হাঁটু দুটো চিবুকের দিকে উঠে যাচ্ছে আবার নেমে আসছে। ল্যাম্প পোস্টের সামনে বাঁধানো রেলিং দেওয়া তিনকোণা পার্ক। ঠিক তার সামনে হেঁচকি তুলে মরে গেল বীরোত্তমা। সুবেদার হরিনাথ শুক্লার নাতনি। ভারত চীন যুদ্ধ থেকে ফিরে হরিনাথ বড় নাতনির নাম রেখেছিল বীরোত্তমা।বাড়ি বিহার। কাঁচাপাকা চুল। পরনে নীল সালোয়ার কামিজ ।আর হাঁটার প্রয়োজন নেই তার।
    বীরোত্তমা কাৎ হয়ে পড়ে আছে নাগপুর শহরে ঢোকার মুখে হাইওয়েতে।মুখ একটু হাঁ হয়ে আছে। চোখের কোণা দিয়ে গড়িয়ে পড়েছে জল। দীর্ঘদিন সেলাই করা ক্ষতবিক্ষত আঙুলগুলি শক্ত করে ধরে আছে একটা প্ল্যাস্টিক। যার মধ্যে আছে বীরোত্তমা সুরেন্দ্রনাথ শুক্লার আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড।( চলছে)


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • অপর বাংলা | ০৩ আগস্ট ২০২০ | ১৮২৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন