এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অদ্বিতীয় পুরষ্কার 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ নভেম্বর ২০২০ | ৯৪৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • এ এখন কারও অজানা নয়, যে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আজ  পর্যন্ত প্রাপ্ত ভোটের ইতিহাসে পয়লা নম্বরে আছেন জো বাইডেন। অর্থাৎ, এর আগে এত ভোট কেউ পাননি। কিন্তু যেটা নিয়ে তেমন কথা হচ্ছেনা, সেটা হল দুই নম্বরে কে। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, যে, প্রাপ্ত ভোটের হিসেবে দুই নম্বর আলো করে আছেন শ্রীযুক্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাইডেনকে বাদ দিলে এত ভোট আর কেউ কখনও পাননি। এইটা কেন বলা হচ্ছে? কারণ একটাই। এইটুকু খালি বলা, যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনসমর্থন কিন্তু কিচ্ছু কমেনি। বরং আগের থেকে বেড়েছে। এবং ২০২০ ছাড়া অন্য যেকোনো নির্বাচনে এইরকম সমর্থন পেলে ট্রাম্প হইহই করে জিততেন। সেটা এবার হয়নি, দেখাই যাচ্ছে, এবং তার কৃতিত্বটাও অনেকেই ট্রাম্পকেই দিচ্ছেন। অর্থাৎ সামনে ট্রাম্প না থাকলে এত লোক রেকর্ড পরিমানে ভোট বাইডেনকে দিতে মোটেই যেতনা। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কলাগাছ দাঁড় করিয়ে দিলেও ট্রাম্প বিরোধীরা দলে দলে গিয়ে তাকেই ভোট দিয়ে আসতেন। আর বাইডেন তো কলাগাছ নন, আস্ত একজন মানুষ। 


    ফলে, ভোটটা হয়েছে ট্রাম্প বনাম ট্রাম্প। বাইডেন ফাঁকতালে প্রথম পুরষ্কার পেয়ে গেলে কী হবে, ট্রাম্প একাই দুখানা পুরষ্কার পেয়ে গেছেন। দ্বিতীয় এবং অদ্বিতীয়। অদ্বিতীয় এই কারণে, যে, গোটা আমেরিকাকে এত তীব্রভাবে দুইভাগে ভেঙে দিতে আর কোনো রাষ্ট্রপতি সফল হননি। "ট্রাম্প আবার জেতা মানেই সর্বনাশ" এই ধারণা এক শ্রেণীর মানুষের  মধ্যে প্রোথিত করে দিতে সক্ষম হয়েছেন ট্রাম্প নিজেই। আবার "ট্রাম্প জিতলেই সর্বনাশ, সোশালিস্টরা সব দখল করে নেবে" এইটাও আরেকদল মানুষের মধ্যে গেঁথে দিতে পেরেছেন ট্রাম্পই। স্রেফ এই কারণেই ট্রাম্প ইতিহাসে নাম তুলে ফেলতে পারবেন। ডন কিহোতে কাল্পনিক চরিত্র হয়েও পেরেছেন, ট্রাম্প তো জলজ্যান্ত মানুষ।  ফলে না পারার কোনো কারণ নেই।  নইলে নীতির প্রশ্নে ট্রাম্পের চেয়ে খারাপ রাষ্ট্রপতি আমেরিকা ঢের দেখেছে। নিক্সন বা রেগন বাদ থাক, এই হাল আমলে জর্জ বুশ স্রেফ গুল দিয়ে একটা যুদ্ধ করে ফেলেছিলেন, যার ফল এখনও পৃথিবী ভুগছে, আর কতদিন ভুগবে কেউ জানেনা, তাঁর বিরুদ্ধেও আন্দোলন হয়েছে ঢের। বস্তুত বেশিই হয়েছে। কিন্তু এই পক্ষে-বিপক্ষের এই মরীয়াপনা এভাবে দেখা যায়নি। বুশের দ্বিতীয়দফার নির্বাচনে এইরকম  দেখতে পেলে আমি ব্যক্তিগতভাবে বেজায় খুশি হতাম, কিন্তু সে হয়নি আর কী করা যাবে। তখন তো বাজারে ট্রাম্প ছিলেননা। 


    অবশ্য পুরোটাই ব্যক্তিগতভাবে দেখা ঠিক না। সবকিছুর পিছনেই খেলাধুলো থাকে। উপর উপর দেখে এটা ধ্রুপদী পুঁজি বনাম অর্বাচীন পুঁজির ভাগ-বাঁটোয়ারার লড়াইই মনে হচ্ছে, আপাতত। ধ্রুপদী পুঁজি হল তেল, কয়লা, খানিক উৎপাদন, খানিক কন্ট্রাকটারি। তারা এইসব করেই খায়, ফলে পরিবেশ-টেশের ধার ধারলে চলেনা। অত ভাবলে তো তেল তোলাই যাবেনা। গাড়িও বেচা যাবেনা। এরা একটা সময় গোটা দুনিয়ায় মুক্তবাজারের পক্ষে ছিল, নিজেরাও প্রচুর আউটসোর্স করেছে, মুনাফার জন্য, কিন্তু এখন চিনের আধিপত্যের কারণে দরজা হাল্কা করে বন্ধ করে দেবার পক্ষে। এরা পলিটিকাল কারেক্টনেসের ধার ধারেনা। নিক্সন বা বুশের আমলে যেভাবে চলেছে, সেই ভাবেই চালাব বেশ করব, এইরকম একটু ধ্যান ধারণা। 


    উল্টোদিকে আছে অর্বাচীন পুঁজি। যাদের বলে বিগ টেক। ধূমকেতুর মতো উত্থান এই বস্তুটির। এখন এরা আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের দৈত্যের মতো ফুলে ঢোল। এরা বুদ্ধিমান, উৎপাদন টুৎপাদন চিনের হাতেই ছেড়ে দিয়েছে, এদের মূল এলাকাটাই হল পরিষেবা (অবশ্য কে এদের খদ্দের সে বোঝা ভারি কঠিন)। সেজন্য চিনকে নিয়ে এদের কোনো সমস্যা নেই। পরিবেশ রক্ষার জন্য এদের অবস্থান বেশ জোরালো। এবং এরা বুদ্ধিমান। নিক্সন-বুশ জমানা কক্ষনো ফেরত আনতে চায়না। আধিপত্যের ব্যাপারে সূক্ষ্ণ। সেই জন্যই তো এদের নাম বিগ টেক। স্টিমুলেশন, অর্থাৎ উদ্দীপনা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ ব্যাপারটায় এরা ভীষণভাবে হাত পাকিয়েছে। সেই কারণেই লিবারেশনের কিছু নতুন ধারণা প্রায় সর্বজনস্বীকৃত ভাবে নির্মান কর ফেলেছে। যাকে এক কথায় বলে আইডেন্টিটি পলিটিক্স। যা লিঙ্গ, যৌনতা এবং জাতি কেন্দ্রিক। এগুলিকেই মুক্তির মূল বিষয় বলে তুলে ধরেছে।  পুঁজির বিপুল শোষণ, আধিপত্য, সাম্রাজ্য বিস্তারের ইচ্ছা ক্ষমতা এবং দক্ষতা চলে গেছে পিছনে। 


    আপাতত এই নির্বাচন এই দুই শক্তির লড়াই। আপাতত অর্বাচীন পুঁজি জিতেছে। কিন্তু লড়াই মেটেনি। হয়তো কয়েক দশক চলবে। কিন্তু প্রবণতা যা, তাতে পুরোনো পুঁজিকে একটা সময় রাস্তা ছাড়তেই হবে। আজ বা কাল।  কিন্তু দেখে যা মনে হচ্ছে, অবশেষে একবিংশ শতাব্দীতে নতুন শিল্পবিপ্লব তার নতুন বিজয়ী শ্রেণীকে খুঁজে  পেয়েছে। এবার নতুন সাম্রাজ্য বিস্তারের পদ্ধতি, নতুন আধিপত্যের প্রকরণ। তত্ত্ব রচনার পক্ষে হয়তো একটু তাড়াতাড়িই হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দেখে শুনে এরকমই লাগছে। কিংবা কে জানে, হয়তো এই তত্ত্ব রচনার এইটাই সময়। 


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রমিত | 202.8.114.199 | ০৯ নভেম্বর ২০২০ ১২:১৫99796
  • একটা প্ৰশ্ন রাশিয়া আগের ইলেকশনে আদৌ কতটা প্রভাব ফেলেছিল ? যদি ফেলে থাকে, তাহলে এবার বিফল কেন ?

  • dc | 103.195.203.86 | ০৯ নভেম্বর ২০২০ ১৯:৩২99812
  • এই কথাটাই লিখব বলে এসেছিলাম। লিবেড়াল মিডিয়ার এতো চেষ্টার পরেও তো ট্রাম্প সেকেন্ড হায়েস্ট ভোট পেয়েছে! আর আচমকা কোভিড না হলে ট্রাম্প ১০০% সেকেন্ড টার্ম পেতো, কারন ইকোনমি বেশ ভালো পারফর্ম করছিল। 

  • S | 2001:920:198c:83c:6368:537d:f8b4:5555 | ০৯ নভেম্বর ২০২০ ২১:৩০99816
  • ট্রাম্পের ভোট বেড়েছে কারণ ফ্লোরিডা আর টেক্সাসে প্রচুর হিস্পানিকদের ভোট পেয়েছে। তাছাড়া থার্ড পার্টিগুলোর ভোট অনেকটা ট্রাম্প পেয়েছে। বাইডেনও কিছুটা পেয়েছে। যেমন আগের ইলেকশানে লিবারেটেরিয়ান ক্যান্ডিডেট পেয়েছিল প্রায় ৪৫ লাখ ভোট, এবারে এখনও অবধি ১৭ লাখ।

  • S | 2405:8100:8000:5ca1::95:bdb2 | ০৯ নভেম্বর ২০২০ ২৩:৫৪99828
  • ট্রাম্প নাকি আরো সভা করবে। 

  • বিপ্লব রহমান | ১০ নভেম্বর ২০২০ ০৯:৫৮99844
  • পপকর্ন নিয়ে গ্যালারিতে বসে দেখার মতো শো, অভাবে মুড়ি! :ডি 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন