অফিস থেকে প্রতিদিনের মতোই বাড়ি ফিরছি। হাঁটছি এলগিন রোড ধরে। রাস্তার পাশের চায়ের দোকানের হ্যান্ডসাম চা ওয়ালাটা দোকান বন্ধ করার জন্য তৈরি হচ্ছে। ফুটপাতে থাকা হোটেলের কাকিমাটা অবশিষ্ট ভাত একটা বড় গামলায় ভরছে। পাশে তরকারি গুলো এলো করে রাখা। পথের দুটো কুকুর সেদিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে। বুঝতে পারলাম না কাকিমা তাদের ভাতে একটুকরো মাছ বা মাংস মাখিয়ে দেবে নাকি সবটাই নিয়ে চলে যাবে বাড়ি।
হঠাৎ করেই একটা বিল্ডিং এর জানলার দিকে চোখ গেল। জানালাটা খোলা ছিল, ভিতরের আসবাবপত্র কিছুটা দেখা যাচ্ছিল। ছয় তলা বিল্ডিং এর ওটা সম্ভবত তিন তলা হবে। দেখলাম একটা বছর ছয়-সাতের মেয়ে বাইরে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বসে আছে। ওঁকে দেখে বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠলো। ওঁর নিষ্পাপ চাওনি বুকে একপ্রকার হাতুড়ি পেটা শুরু করল। দেখলাম আমার দিকে তাকালো মেয়েটি। আমি একটুকরো মুচকি হাসি দিলাম। সবে তার করুন মুখটা হাসিতে বদলাবে এমন সময় দেখলাম মেয়েটা পিছনের দিকে হেলে পড়ে গেল। থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম।
আমার থেকে পাঁচ ছয় হাত দূরে ওদের বিল্ডিং এর গেট। মনে হল দৌড়ে গিয়ে একবার দেখে আসি। কি হল ওঁর। কিন্তু সাহস হলনা। একেই কোভিড তার উপর এলগিন এর মত এলাকা। একটা সাইড নিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা হলোনা।
মিনিট দুই পর একজন ভদ্রমহিলাকে দেখলাম জানলার ধারে। বুঝলাম তিনি মেয়েটিকে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে তুলছেন আর কিছু একটা বলছেন। যেটা আমার পক্ষে শোনা অসম্ভব ছিল।
মেয়েটা আবার পুনরায় নিজের জায়গায় বসে পড়ল। একই ভাবে। ঠিক যেরকমটি আগে বসেছিল। পাশের পান-বিড়ির দোকানের দাদাটা আমাকে দেখে বলল " ভাইয়া ও পঙ্গু হ্যায়। বড়া আদমিকা বেটি হ্যায়। ভগবান রুপয় বহত দিয়া লেকিন বেটি অ্যায়সা দিয়া। কিসিকা বদদুয়া লাগা হোগা।"
বুঝলাম না, ঠিক কতটা পরিমান "বদদুয়া" লাগলে এরকম একটা নিষ্পাপ শিশুর এই অবস্থা হয়। কিন্তু বুঝলাম মানুষের মন আজও এই "দুয়া আর বদদুয়া"র ঘেরাটোপ থেকে বেরোতে পারেনি।
কিছু ভালো হলে "দুয়া" আর খারাপ হলে "বদদুয়া"। এটাই ভাবনা , এটাই নাকি সত্যি।
এগিয়ে যাব বলে মুখটা জানলা থেকে সরিয়ে দু-পা এগিয়ে আবার একবার জানলার দিকে তাকালাম।দেখলাম মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল। আমি মনে মনে ওকে অনেক আশীর্বাদ করলাম। প্রার্থনা করলাম। যদি আমার "দুয়া" কাজে লেগে ও ঠিক হয়ে যায়।
রাজকুমার মাহাতো