#পুস্তকালোচনা — #খোঁড়া_ভৈরবীর_মাঠ — #অভীক_সরকার
বই = খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ (Horror গল্প সঙ্কলন)
লেখক = অভীক সরকার
প্রকাশক = পত্রভারতী
পৃষ্ঠা সংখ্যা = ১০৪
মুদ্রিত মূল্য = ১৫০ টাকা (তৃতীয় মুদ্রণ)
ক) কালিয়া মাসান —— দেড়শো বছরের আগে সাঁওতাল বিদ্রোহের সময় এক বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টার অলৌকিক বড় গল্প।
এই কাহিনীটি কখনো প্রথম পুরুষে আবার কখনো নৈর্ব্যক্তিক ভাবে চলেছে, ফলে রসভঙ্গ হয়েছে।
গল্পে লেখা আছে যে তিনজনের গলা কেটে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, আবার তার পরেই লেখা আছে যে যারা গলা কেটেছিলো তারা দেহগুলো "গ্রামের জাহের থানে" ফেলে যায়। গলা কেটে ভাসিয়ে দেওয়ার পর তারা আবার সেই দেহ তুলে আনতে যাবে না, গ্রামবাসীরা সেই কাজ করলেও করতে পারতো।
গল্পানুযায়ী, অভিশাপের বাহক প্রথমদিন তার একজন শিকারের খোঁজ পেলেও পরের বার তার কাছে দুই জনকে শিকার করার সুযোগ ছিলো, তারপরেও মাত্র একজনকেই আক্রমণের কোনো ব্যাখ্যা অনুপস্থিত।
অভিশাপের জন্য বাহকের চোখের মণি ব্যবহারের কথা গল্পে উল্লেখিত এবং গল্পের একদম শেষে তার "অন্ধ চোখ" - এর কথাও উল্লেখ করা আছে, কিন্তু তার সাথে বাকি গল্পে সেটার সামঞ্জস্য থাকলে আরো ভালো হতো।
সবমিলিয়ে গল্পটি একটি নির্দিষ্ট কথকের দ্বারা বর্ণিত হলে মাঝারিমানের জায়গায় ভালো হয়ে উঠতো।
খ) খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ —— একটি কালীমূর্তির খুঁত দূর করতে গিয়ে পরবর্তীকালে গ্রামের সব মানুষের জন্য সঙ্কট তৈরী এবং তার থেকে দৈবিক উপায়ে মুক্তিলাভের অলৌকিক গল্প।
যেখানে একটা ঘটনায় গ্রামের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার মতো সঙ্কট তৈরী হয়েছে, এখানে তার সমাধানটা সবার জানার কথা এবং বংশানুক্রমে সেই কাহিনী বিশদে জানার কথা। কিন্তু গল্পে অদ্ভুতভাবে তার উল্টোটা ঘটেছে।
আর, নির্মলা গ্রামেরই মেয়ে এবং আগের ঘটনাটি তার কমপক্ষে একশতবার যেখানে শোনা বলে কাহিনীতে উল্লেখিত, সেখানে সেই ঘটনাটি যে আগে তেমনভাবে শোনেনি এমন কেউ শুনতে চাইলে ভালো হতো।
অলৌকিক শক্তির আক্রমণের পর একটি বাদে বাকি সব চরিত্রের পরিণতি জানা যায়, ফলে অলৌকিক শক্তিটি কার উপর প্রভাব ফেলতে পারে সেটা এই ইঙ্গিত থেকে বোঝা সম্ভব। এইভাবে ইঙ্গিত দেওয়া আমার ভালো লেগেছে (আপনার ভালো লাগতে পারে, নাও পারে)।
গল্প অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের শিক্ষক দামু সপ্তাহের শেষে দ্বিতীয়াতে তালদিঘিতে ফিরেছে। কাজেই সেই দিনটি রবিবার হওয়াই স্বাভাবিক। কাজেই তার দুই দিন আগে পূর্ণিমা, অর্থাৎ শুক্রবারে। কাজেই ২৯ দিনের চান্দ্রমাস হলে পরের পূর্ণিমাটি শনিবার আর ৩০ দিনের চান্দ্রমাস হলে পরের পূর্ণিমাটি রবিবার হবে। কিন্তু গল্পে পরের পূর্ণিমাটি বৃহস্পতিবার বলে রাখহরির কাছে জানা গেছে, সেটি ভুল। আবার রাখহরি যেহেতু ধর্মীয় আচার-আচরণ নিষ্ঠাভরে পালন করে বলে গল্পে জানানো হয়েছে, তাই এই ভুলটিকে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসেবেও ধরা যায় না।
গল্প অনুযায়ী, বাসন্তী মুখুজ্জে পূর্ণিমার রাতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়ে আহত হন, তারপরে ডাক্তার আসেন, এবং সেই রাতেই সেই ডাক্তারের উপর আক্রমণ হয়। তার পরের রাতে মালতির উপর আক্রমণ হয় এবং তার পরের রাতে দনুর উপর আক্রমণ হয়। পঞ্চমীর রাতে মনসুর মিঞা ও তার ছয়জন যাত্রীদের উপর আক্রমণ হয়। আবার পরে গল্পে উল্লেখ করা হয়েছে যে দশদিনে মনসুর মিঞা সহ নয়জন মৃত। এবার যেভাবে যাত্রীদের উপর আক্রমণ হয়েছে তাতে তাদের কেউ বেঁচে থাকলে তার পরের দিনই মনসুর মিঞার মৃত্যুর খবর গ্রামবাসীদের জানার কথা। আবার যদি কেউ বেঁচে না থাকে তাহলে সেই ছয়জন মৃত এবং তাছাড়া আরো তিনজন মৃত বলে অর্থাৎ মোট নয়জনের মৃত্যু হচ্ছে অর্থাৎ মনসুরকে নিয়ে দশজন হচ্ছে। কাজেই, দুই দিক থেকে এই হিসেবটা গল্পে গুলিয়ে গেছে।
বাকি গল্পটা ভালোই হয়েছে। বেশ কয়েকটা সূত্র দিয়ে পরে মেলানো হয়েছে, একটু খুঁটিয়ে পড়লে খেয়াল করতে পারবেন (একটা আগেই লিখেছি)।
সবমিলিয়ে বইটি মোটামুটি ভালো।