এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • যাপন_৬

    Jaydip Jana লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৬ এপ্রিল ২০২১ | ১২৩৪ বার পঠিত
  • সৌরদীপ কাজের প্রয়োজনে যেহেতু অন্য শহরে থাকে তাই বিভিন্ন কাজকর্ম কিংবা ছবি তোলার জন্য সপ্তাহান্তে ওকে কোলকাতা আসতেই হয়। একটা সময় ছিল, কোলকাতা এলে ঋজুর বাসায় রাত্তিরটুকু থেকে নিজের কাজকর্ম , ছবি তোলার পাট চুকিয়ে আবার পরেরদিন নিজের কর্মস্থলে ফেরত যেত ও। ঋজুটা কোলকাতা ছেড়ে চলে যাওয়ায় কোলকাতায় থাকার ঠেকটা নড়বড়ে হয়ে গেছে সৌরর। কখনও কোনও বন্ধুর মেস, নয়তো অন্য কারও বাড়ি। তাতে যদিও নিজের স্বাচ্ছন্দ্য নেই। অরিজিতও এটা বোঝে। ব্যাপারটা অরিজিতের মনঃপুত হয়না কিছুতেই । তবুও মানিয়ে নিতে হয়। কিন্তু রাত হয়ে গেলে দূরের শহরে ফেরাটা চাপের তাই সৌর আজকাল কোলকাতায় কম আসে। এদিকে কোলকাতা শহরে কমিউনিটি বেসড ইভেন্ট গুলো পুজোর পর থেকেই শুরু হয় বেশিরভাগ সময়। এলজিবিটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হয় বেশ কয়েকদিন ধরেই নভেম্বরে। অনেকদিন কোলকাতা আসেনি সৌরদীপ।আজকাল তাই অরিজিতের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত কম হয়। আর তাই অরিজিতের আব্দার মেটাতে সৌর রাজী হয় সে বছর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সময় কোলকাতা আসতে। কিন্তু কোলকাতায় এলে রাতে থাকবে কোথায়! সৌরটা যা নাক উঁচু সবার সাথে তো ওর আবার পটে না। ওদিকে অরিজিত পুরো উল্টো। সকলেই ওকে ভালোবাসে। ও চাইলেই বন্ধুরা সবাই দৌড়ে আসে।

    ওদের দুজনের কমন বন্ধু রনি আর সুর্যের একটা দুকামরার বাসা ভাড়া নেওয়া আছে দক্ষিণ কোলকাতায়।বাড়ীর লোকের চোখ এড়িয়ে মাঝে মাঝেই সপ্তাহান্তে দুজনে থাকে সেখানে। বন্ধু বান্ধবরা মিলে আড্ডাও দেয় সেখানে মাঝে মাঝেই। কখনও পিকনিকের মুডে সকলে সারারাত হইচই করে। আসলে নিজেদের বাড়ীতে রণি আর সুর্য তখনও কামআউট করেনি, নিজেদের ব্যাপারে। তবে এ বাসায় ওদের সব বনধুদেরই ওরা খোলা আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছে । অরিজিত বেশ কয়েকবার গেলেও সৌরদীপ কখনও সেখানে যায়নি। সৌরর পরামর্শে অরিজিত স্মরণাপন্ন হয় রণির । ঠিক হয় ফেস্টিভ্যালের সময় সৌর কোলকাতা এলে ওরা আরও কয়েকজন বন্ধু মিলে রণিদের কাছেই রাতে থাকবে।

    সৌর আর অরিজিতের সম্পর্কটা বেশ অন্যরকম। বাকীদের মত খোপে ফেলা সম্পর্ক না। ওদেরকাছে বন্ধুত্বটাই সব। খুব বেশি হলে একটা বিয়ার হাগ। তাও সকলের চোখ এড়িয়ে। সকলের সামনে নিজেদের নিয়ে ওরা একদমই স্বচ্ছন্দ্য নয়। নিজেরাও বোধহয় নিজেদের নিয়ে এখনও ভেবে উঠতে পারেনি সম্পর্কের সমীকরণটা মিলবে কিনা। তাই সবার মাঝে আলাদাকরে একসাথে থাকবে ভাবতেই পারেনা ওরা কেউই। রাতের বেলা বন্ধুরা মিলে আড্ডা শেষে সৌর বলে আমার একা থাকার অভ্যাসে আমি একা শুতে চাই। পাশের ঘরে রনি ব্যবস্থাও করে দেয় ওকে। রনি অরিজিত আর বাকীরা আড্ডা দিতে দিতে একসাথেই ঘুমিয়েও পড়েছিল সেদিন ।

    ছেলেবেলা থেকেই অরিজিতের খুব ভোরে ওঠার অভ্যেস। ও জানে সৌরদীপও ভোরেই ওঠে। খুব ভেঙে কফির কাপ নিয়ে যখন সৌরকে ডাকতে যায় ঘুমের ঘোরে পাশ ফিরতে গিয়ে খাটের প্লাইউড টা মচ করে ওঠে। আসলে ওই খাটটা খুব একটা ব্যবহার হয়না। বাসার মালিকের থেকে ভাড়া নেওয়ার পর থেকে ও ঘরে কেউ শোয়নি তাই জানত না কেউই ওটা ঘুন ধরা। ঘটনার আকস্মিকতায় দুজনেই হতভম্ব হয়ে তারপর হো হো করে হেসে ওঠে। তারপর কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে আড্ডায় মেতে ওঠে। বাকীদের যখন ঘুম ভাঙে ওরা তখন নিজেদের আড্ডায় মশগুল। ওরা যখন বেলায় রণিকে খাটের প্লাইউডটার মচমচে হওয়ার কথা জানায়, রণি তখন ইঙ্গিতপূর্ণ স্বরে বলে,"খাটটা তো ভালোই ছিল, তোমরা ভোরবেলা সকলের নজর এড়িয়ে কি করেছো কে জানে বাপু।" অরিজিত আর সৌর দুজনের গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন