এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • লিফট

    Parikshit Manna লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ জুন ২০২১ | ১০৯২ বার পঠিত
  • ক্ষয়াটে চেহারার হরু মুখুজ্জে পেশাদার পুরুত। আজকাল নিজের গাঁ, পাশের গাঁ পেরিয়ে শহরের দিকেও যজমান ধরছেন এজেন্ট লাগিয়ে। কমিশন বাদ দিয়ে আয় মন্দ হয় না। এবার আবার নতুন যজমান, রাজারহাটের। তাই সেই কাকভোরে রওনা দিয়েছেন ছোট ছেলে পটাইকে নিয়ে। 


    বছর দশেকের পটাই শহর দেখেনি। বেশ উৎসাহ নিয়েই বাপের সাথে পাড়ি জমালো সে। কাজ বলতে, ঐ মালপত্তর বওয়া আর কি। অনেকটা গাধার মতোই। তা হোক। নতুন কতো কি দেখবে সে! এ আর কম কি! এরমধ্যেই বেশকিছু প্রশ্নে জেরবার হয়েছেন হরুঠাকুর। নিজের মতো করে ক'টার উত্তরও দিয়েছেন। কিন্তু রাজারহাটে কবে, কোথায় "রাজার হাট" বসে, সে হাট রবিঠাকুরের কবিতার মতো কি না -- এ সব প্রশ্নের উত্তর তো জানা নেই। অতএব ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে রাখা ছাড়া আর উপায় কি? ঠিক ওই নেতাদের মতো। হয় এড়িয়ে যাও, নয় চমকে, ধমকে থামিয়ে দাও। পটাই এসব বোঝে না। বুঝতে চায়-ও না। ও বাসের জানলায় মুখ রেখে 'বিগবেন' দেখে, ভিখিরি দেখে, সিভিক পুলিশের গাড়ি ধরা দেখে, আর দেখে ব্রিজ। দেখে, আর ভাবে - এ্যতো পোক্ত ব্রিজও ভেঙে পড়ে ভূমিকম্প ছাড়াই? 


    রাজারহাটের গগনচুম্বী আবাসনের একটাতে থামে ওদের টোটো। এক, দুই করে গুনতে গুনতে প্রায় ধরাশায়ী হওয়ার যোগাড়! বাপ বললো, "ছাব্বিশ তলা"। বাপ্ রে! ওরা যাবে সতেরোয়। লোহার গেটের বাঁ-দিকে একটা ধানের গোলার সাইজে খুপরি ঘর করা আছে। তার মধ্যে একটা পুলিশের মতো পোশাক পরা লোক। ঠিক পুলিশ নয়, সিভিকও নয়। এ নাকি গার্ড। রেলের গার্ড নয়, সে তো কালো কোট পরে! গার্ডটা একটা হিসেবের খাতা বাড়িয়ে দিয়ে বলে, "আপনার নাম, ঠিকানা, কার কাছে যাবেন, কেন যাবেন, কখন ঢুকছেন, সাথে ক'জন আছে, তাদের ডিটেইল - সব এন্ট্রি করুন এখানে।" 


    বাবা সব লিখল। শেষে সই করল। গার্ডটা কাকে একটা ফোন করল। ফিরে এসে পটাইদের একটা করে মালার মতো পরিয়ে দিল। লকেটটা একটা চৌকো মতো কার্ড। পটাই ক্লাস ফাইভে উঠে ইংরাজীটা মোটামুটি রপ্ত করেছে। ভি আই এস আই টি ও আর। আচ্ছা - ভিজিটর! গাঁয়ে গিয়ে বলতে হবে - 


    এই শহরের গার্ড দে / য় ভিজিটর কার্ড


    ফিতের মালা সফট / তার লকেটটা হার্ড!


    "এটা কী, বাবা?"


    "এটা লিফট।"


    পটাই দেখল, দেওয়াল সরে যাচ্ছে। ভেতরে একটা ঘর। ঘরের সামনে উুঁচু টুলে আরেকজন গার্ড বসে। বাবা আর পটাই সে ঘরে ঢুকতেই নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে গেল দরজা! বাবা 'সতেরো' বলতেই গার্ডটা একটা বোতাম টিপে দিল। আলোও জ্বললো! কি আশ্চর্য! পটাইরা উঠে যাচ্ছে ওপরে! সিঁড়ি চড়তে হোলো না! আপনিই উঠে যাচ্ছে! কী সহজে ওপরে ওঠা যায় এই শহরে! ভাবে পটাই। কত্তো নতুন জিনিস দেখার আছে এখানে। বাবা বলেছে এরপর একদিন পাতাল রেল চড়াবে। ওখানে চলমান সিঁড়ি আছে। কত সহজে শহরে সবাই ওপরে ওঠে!


    'যজমান' কথাটা শহরে বিশেষ চলে না। এজেন্ট ছোকরাটা বলে দিয়েছিল, 'ক্লায়েন্ট' এরা। পটাই শুনেছে। হরুঠাকুর পুজোয় বসেছেন। পটাইয়ের মন উশখুশ করছে বারান্দায় যাওয়ার জন্য। পুজো তো অনেকক্ষণ চলবে। একটু ঘুরে এলে হয় না! মনকে আর না অপেক্ষায় রেখে বাইরে এলো পটাই। দেওয়ালে দরজা। পাশে সুইজ। টিপলেই আলো! চিচিং ফাঁক বলার আগেই হাঁ হয়ে গেল লিফট! কত সহজে ওপরে ওঠা যায় এ শহরে! ভেতরে সেঁধিয়ে গেল পটাই। টুল তো ফাঁকা। গার্ড কই? যাকগে! ও তো জানে, বোতাম টিপলে আলো জ্বলে। ওপরে ওঠা যায়। দরজা বন্ধ হতেই তাই একটা বোতাম টিপলো পটাই। লিফট চালু হোলো। কিন্তু এ কী! শরীরটা এমন হাল্কা লাগছে কেন? লিফটটা চলছে। কিন্তু মনে হচ্ছে যেন ওপরে নয়, নীচের দিকে যাচ্ছে! এত সহজে নীচেও নামা যায় এ শহরে? 'জি' লেখা বোতামটার নীচে আরও কয়েকটা বোতাম। বিয়োগ চিহ্ন দিয়ে এক, দুই, তিন লেখা! এটা তো আগের বার লক্ষ্য করেনি? তবে সে কোথায় চলেছে? আরও নীচে? এতটা নীচে নামা যায় এ শহরে? ঘামছে পটাই। বাবা, বাবা বলে চীৎকার করেও লাভ নেই। কী করবে পটাই এখন? অনেকটা নীচে নেমে গেছে যে!


    অনেক খোঁজাখুঁজির পর আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্লোরের মেঝেয় পটাইয়ের অচৈতন্য দেহ উদ্ধার হল। দৈত্যাকার আবাসনের মেইন গেটে দাঁড়িয়ে হরু বাউন। প্রচুর নৈবেদ্য আর পকেটে অনেকগুলো টাকা গুঁজে দিয়েছে শহুরে ক্লায়েন্ট। দেয়নি ডাক্তারের সেবা। গার্ড একটা ট্যাক্সি ডেকে দিয়ে ঝামেলা মেটালো। জ্ঞান ফিরছে পটাইয়ের। জানলার বাইরে তখন গেরুয়া আকাশে কালো পাখির ঝাঁক। মাঝে মাঝেই চাপা পড়ছে কালো কালো ইমারতের পর্দায়। দূরে ও কীসের শব্দ? ব্রিজ ভেঙে পড়ছে? নাকি হাজার বছরের পুরোনো শহুরে সভ্যতা? ঘোর ভাঙলে বুঝল, ব্রিজ নয়, স্বপ্ন ভাঙছে - উত্তরণের।


    ✍️পরীক্ষিৎ


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন