এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পায়ে পায়ে সুগস্পিৎজে (তৃতীয়/শেষ পর্ব)

    Ajay Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৫ জুলাই ২০২১ | ৭৮৮ বার পঠিত
  • ভোর পাঁচটায় ফোনের অ্যালার্ম দেওয়া ছিল, অ্যালার্ম বাজার আগেই সাড়ে চারটের সময় ঘুম ভেঙে গেলো। ঘরের মধ্যে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না খালি পাশ থেকে, নিচ থেকে কতকগুলো শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। শব্দগুলো কিসের সেটা বুজতে দেরি হলো না। এই সব শব্দের মধ্যেও কিভাবে এতক্ষন ঘুমোলাম, ভেবে একটু অবাক হয়ে গেলাম। ঘুম যখন একবার ভেঙেই গেছে তখন যে আর ঘুম হবে না এটা নিশ্চিত জেনে, ভাবলাম ফাঁকা থাকতে থাকতে টয়লেটের কাজকম্মো সেরে নি। মোবাইল ফোন এর আলো জ্বালিয়ে আস্তে আস্তে বাঙ্ক এর ওপর থেকে নিচে নামলাম।

    দরজা খুলে বাইরে লবি তে বেরিয়ে দেখলাম সেখানেও অন্ধকার। হুটের পুরোটাই প্রায় কাঠ দিয়ে ঢাকা, ঠান্ডা আটকাবার জন্য এইভাবে ইন্সুলেশন করা থাকে। লবির মেঝে কাঠের তাই একটু হাঁটাচলা করলেই বেশ আওয়াজ হয়। এতো সকালে কারোর ঘুম না ভেঙে যায় তাই আস্তে আস্তে, খুব সন্তর্পনে পা ফেলে ফেলে সিঁড়ির দিকে এগোচ্ছিলাম। দূর থেকে আবছা আলোয় মনে হলো সিড়ির ওপরের ধাপে কেউ বসে আছেন, সামনে এসে দেখলাম এক ভদ্রমহিলা, মনে হলো ওনাকে গতকাল আমাদের ডর্মিটরিতেই দেখেছি। পায়ের শব্দে উনি ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে দেখলেন, একটু হাসলেন। আমি গুড মর্নিং বললাম, প্রত্যুত্তরে উনিও আমায় মর্নিং বললেন। আমি ওনাকে জিগ্গেস করলাম রাতে ঘুম হয়েছে তো? উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে একটু দেখলেন, তারপর আবার হাসলেন, ঘাড় নেড়ে আমায় বোঝালেন না, ঘুম হয় নি। হাসিটা একটু অন্যরকম লাগলো, তাই আর কথা না বাড়িয়ে আস্তে আস্তে নিচে নেমে গেলাম।



    নিচে একদিকে বড়ো ডাইনিং হল, অন্যদিকে রান্নাঘর, সামনে রিসেপশন আর একদম পিছন দিকে অনেকগুলো বাথরুম। পুরুষ আর মহিলাদের আলাদা টয়লেট আর স্নান করার জায়গা। রান্নাঘরে দেখলাম, কাজ শুরু হয়ে গেছে, সকালের ব্রেকফাস্ট, কফি বানানোর তোড়জোড় চলছে। বাথরুমে ঢুকতেই গতকালের ডাইনিং হলে পরিচিত ভদ্রলোক মিস্টার ভাদেরের সাথে দেখা। উনি বললেন ঠিক সময় উঠে পড়েছেন, দিনের আলো ফোটার সাথে সাথে বেরিয়ে পড়বেন, তাহলে হাতে অনেকটা সময় পাবেন। বাথরুম থেকে বেরিয়ে ওপরে ওঠার পথে দেখলাম ভদ্রমহিলা আগের জায়গাতেই বসে আছেন।

    ঘরে ঢুকে দেখলাম মুন্নি আর সান্ত্বনা উঠে পড়েছে, অগ্নিকে ওঠানোর তোড়জোড় চলছে। ঘড়িতে তখন ঠিক পাঁচটা, আমরা সবাই রেডি হয়ে নিচে নেমে এলাম। নামার সময় ভদ্রমহিলাকে সিঁড়িতে দেখলাম না। নিচে নেমে দেখলাম ডাইনিং রুমে আলো জ্বলছে, কিন্তু রিসেপশন এ কেউ নেই। আমাদের ব্রেকফাস্ট অর্ডার করা ছিল, প্যাকেট করে দেবার কথা। রিসেপশন এ কাউকে না পেয়ে মুন্নি কিচেনে গেলো ব্রেকফাস্ট প্যাকেট কালেক্ট করতে কিন্তু কিছুক্ষন পরে খালি হাতে ফিরে এলো। সকাল ৬ টার আগে ব্রেকফাস্ট পাওয়া যাবে না, আর ৬ টা বাজতে তখনো প্রায় এক ঘন্টা বাকি। একঘন্টা সময় আমাদের কাছে খুব মূল্যবান তাই আমাদের সাথে বেশ কিছু ড্রাই ফুড ছিল সেগুলো দিয়েই রাস্তায় ব্রেকফাস্ট সারা হবে এই ভেবে আমরা হুটে থেকে বেরোনোর সিদ্ধান্ত নিলাম।

    বেরোনোর সময় আবার মিস্টার ভাদেরের সাথে দেখা হলো, উনি বললেন এখন তো বাইরে বেশ অন্ধকার, আর এক ঘন্টা অপেক্ষা করে আলো ফুটলে ব্রেকফাস্ট করে বেরোতে পারতেন। আমি ওনাকে বললাম বাকি রাস্তাটা ট্রেকিং করা আমার স্ত্রীর জন্য বেশ শক্ত তাই আমরা সময় নষ্ট করতে চাই না। মানুষটা এতো ভালো, বললেন বেশ আপনারা এগোন কিন্তু খুব সাবধান, অন্ধকারে পথ ভুল করে বসবেন না আর আপনাদের ব্রেকফাস্ট প্যাকেট আমি নিয়ে আসবো, আশা করি রাস্তায় খুব তাড়াতাড়ি আমাদের দেখা হবে।
    হুটের বাইরে বেরিয়ে বুজতে পারলাম ঠান্ডাটা বেশ জমিয়ে পড়েছে, তার ওপর হওয়ার গতি বেশ জোরে ছিল, যদিও আমরা ঠান্ডার সব পোশাক পরেই বেরিয়েছিলাম তাই ঠান্ডার জন্য বিশেষ কোনও সমস্যা হচ্ছিলো না। আকাশ পরিষ্কার, বৃষ্টির কোনো পূর্ভাবাস ছিল না। অন্ধকারে রাস্তা দেখা যাচ্ছিলো না, তাই সামনের দিকে এগোনো সম্ভব হচ্ছিলো না, চারটে মোবাইল টর্চের আলো জ্বালিয়েও সামনে এগোতে পারছিলাম না। রাস্তা বলে কিছু নেই, শুধু নুড়ি আর বড়ো বড়ো পাথর, আমি হুটেতে ফিরে যেতে চাইলেও বাকিরা চাইলো না। অগত্যা সামনের দিকে এগোনো ছাড়া গতি নেই।

    পাথরের সাথে প্রথম ধাক্কাটা খেলাম আমিই, একটা নুড়ি পাথরে হোঁচট খেয়ে ব্যালান্স রাখতে না পেরে সামনের বড়ো পাথরে মাথাটা গেলো ঠুকে, সঙ্গে সঙ্গে কপাল ফুলে ঢোল। মাথায় Monkey Cap ছিল বলে বড়োসড়ো বিপদ না হলেও, কপালে বেশ যন্ত্রনা হচ্ছিলো। পথে, আলোর অভাবে আমরা বিভিন্ন ছোটোখাটো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম, যদিও বড়ো কোনো বিপদ ঘটেনি। রাত্রির অন্ধকারে এই পথে ট্রেকিং করা উচিত নয় আর যদি বেরোতেই হয় তাহলে অন্তত প্রত্যেকের মাথায় অবশ্যই হেডল্যাম্প থাকা জরুরি, পর্যাপ্ত আলো ছাড়া এই রুটে হাঁটা উচিত নয়।

    যেহেতু নির্দিষ্ট কোনো রাস্তা নেই তাই আমরা আস্তে আস্তে DAV র (Deutscher Alpenverein) পথনির্দেশক সাইন দেখে এগোনোর চেষ্টা করছিলাম। প্রতি ৫০০ মিটার ছাড়া ছাড়া এই পথনির্দেশক সাইন আছে। যারা এই পথে নতুন তাদের অবশই এই সাইন ফলো করতে হবে, যদি বেশ কিছটা যাবার পর এই সাইন না খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে বুজতে হবে ভুল পথে যাওয়া হচ্ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে ঠিক রাস্তা খুঁজে বার করতে হবে। যে রাস্তায় অনেকগুলো আলাদা আলাদা ট্রেকিং রুট আছে সেখানে এই সাইন গুলো এক একটা রুটের জন্য এক এক রকম দেখতে হয়, নিজের রুটের সাইন টা জেনে নিয়ে সেইটা খুব ভালো ভাবে ফলো করে এগোতে হবে নাহলে এই রুটে যারা প্রথম আসছেন তাদের পথ ভুল হওয়া অবসম্ভাবি।

    অন্ধকারে আমরা রুট সাইন ফলো করতে পারছিলাম না, বার বার মিস করছিলাম, তাই খুব একটা এগোতে পারছিলাম না। বিপদ এড়াতে পারলেও সময়ের সদ্ব্যবহার করা যায় নি, প্রায় দেড় ঘন্টা হেঁটে আমরা মাত্র এক কিলোমিটার এগোতে পেরেছিলাম। মোবাইল এর ডাটা কানেকশন নেটওয়ার্ক ডাউন ছিল, তাই স্যাটেলাইট নেভিগেশন কাজ করছিলো না, আর ফোনের নেটওয়ার্ক ও ডাউন ছিল, তাই টেলিফোন ও কাজ করছিলো না। এই জন্যই হুটে গুলোতে দেখেছিলাম নিচে শহরের সাথে যোগাযোগের জন্য স্যাটেলাইট ফোন আর ওয়াকি-টোকি ব্যবহার করা হচ্ছিলো।

    বেশ কিছুক্ষন ধরে একটা শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম, যত এগোচ্ছিলাম শব্দটা কাছে আসছিলো, মনে হচ্ছিলো জলের শব্দ কিন্তু খুব গম্ভীর, পাহাড়ি খরস্রোতা নদী যখন খুব ওপর থেকে নিচের দিকে বয়ে চলে তখন এই ধরণের শব্দ শুনেছি কিন্তু এই রুটের ম্যাপে সেরকম কোনো নদী ছিল না বলে শব্দ টা কিসের হতে পারে বুঝতে পারছিলাম না, একটু ভয় ও করছিলো।

    প্রায় দেড় ঘন্টা এভাবে এলোপাথাড়ি ঢিল মেরে চলার পর প্রায় হঠাৎ করেই একঝলক আলো জ্বেলে সূর্যমামা আন্তপ্রকাশ করলেন, আর তারপর চোখের সামনে যা দেখলাম তা অনেক চেষ্টার পরও ভাষায় পুরোপুরি বর্ণনা করে উঠতে পারছি না বলে পাঠকগণ আমায় ক্ষমা করবেন। আমাদের সামনে প্রকৃতি এক নিরাভরণ, অনাবৃত রূপ উন্মোচিত করে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের সামনে চারিদিকে ঘিরে অনেকগুলো খোলা পাহাড় যাদের কেউ সবুজ আবার কেউ একদম পাথুরে, রুক্ষ, আর মাঝখানে একটা বিস্তীর্ণ মালভূমি মতন উপত্যকায় আমরা দাঁড়িয়ে। একটা সবুজ পাহাড়ের ওপর থেকে জলপ্রপাতের জল একদম নিচে পড়ছে আর তাতেই ওই গুরুগম্ভীর শব্দ তৈরি হচ্ছে। প্রকৃতির একই অঙ্গে এতো রূপ, আগে কখনো দেখিনি। প্রকৃতিও যেন বলছে, আমি যখন নিজেকে নিজে সাজাই, দেখ তখন কেমন লাগে।

    সামনে বিস্তীর্ণ খোলা জায়গাটা অনেক দূরে একটা পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়েছে। সাইন দেখে মনে হচ্ছে ওই পাহাড় পর্যন্ত আমাদের যেতে হবে। ভাবলাম ওই পর্যন্ত গেলে নিশ্চই বাকি রাস্তাটা বার করতে পারবো। আস্তে আস্তে আলো বাড়ছে, সামনের সব কিছুই এখন বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, পথ হারাবার আর পাথরে ঠোকা-ঠুকি হবার ভয়টা আর নেই, তাই অনেকটাই নিশ্চিন্ত।

    হাঁটতে হাঁটতে আমরা কথা বলছিলাম, কথা প্রসঙ্গে গতকাল রাত্রির কথা উঠলো, মুন্নি বললো বাবা তুমি জাস্ট বেড এ শোবার পর ই তোমার নাক থেকে এমন শব্দ বেরোচ্ছিল যে পাশের বাঙ্কে যে দুই ভদ্রমহিলা তখনও গল্প করছিলেন তারা একদম চুপ হয়ে গেছিলেন, কিছুক্ষন পরে রুম এর আরো তিন জন তোমার সাথে যোগ দিলে যে ভয়ঙ্কর একটা শব্দময় পরিবেশ তৈরি হয়েছিল তা সহ্য করতে না পেরে একজন ভদ্রমহিলা সেই যে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছিলেন তিনি নাকি সারা রাত্রি আর ঘরে ফেরেন নি। মুন্নি বললো উনি নিশ্চই অন্য ঘরে জায়গা করে শুয়ে ঘুমিয়েছিলেন।

    এবার আমার বুজতে অসুবিধা হলো না যে সিঁড়িতে বসা ভদ্রমহিলা কেন ওইভাবে আমার দিকে চেয়ে হেসেছিলেন। উনি যে সারা রাত্রি না ঘুমিয়ে সিঁড়িতে বসেছিলেন সেই কথাটা কেন জানি না আমি একদম চেপে গেলাম।
    পরিশ্রম বেশি হলে, ক্লান্ত থাকলে, রাত্রিতে ঘুমোবার সময় আমার এই সমস্যাটা হয়। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হলো, আগে জানলে অন্তত একবার ওনাকে সরি বলতে পারতাম। কিন্তু সেই সুযোগটা যে একটু পরেই হঠাৎ চলে আসবে সেটা তখন জানতাম না।

    বেশ কিছুটা হেঁটে আমরা পাহাড়ের পাদদেশে হাজির হলাম কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও এর পরে এগোনোর রাস্তা কিছুতেই খুঁজে বার করতে পারলাম না। চারজনে চারদিক তন্নতন্ন করে খুঁজেও সামনে এগোনোর কোনো সাইন দেখতে পেলাম না। এরকম পরিস্থিতিরই কথা একদম ভাবিনি। টেনশানে চারজনেরই অবস্থা শোচনীয়, যে রাস্তায় এসেছিলাম সেই রাস্তায় ফিরে যাবো ভাবছি এমন সময় অনেক দূরে একটা মানুষের মতো কিছু চোখে পড়লো, দুরুত্ব একটু কমলে বুজলাম হাঁ একজন মানুষই আমাদের দিকে আসছেন। সিদ্ধান্ত নিলাম উনি আসা অব্দি অপেখ্যা করবো।

    আমি সবাইকে হালকা কিছু খেয়ে নিতে বললাম যাতে সময়টার সদ্ব্যবহার করা যায় কিন্তু টেনশনে কেউ খেতে চাইলো না। প্রায় পনেরো মিনিট পরে এগিয়ে আসা মানুষটিকে ঠিক করে দেখতে পেলাম, তিনি আর অন্য কেউ নন, সিঁড়িতে বসা সেই ভদ্রমহিলা। উনি সামনে এসে আমাদের দেখে হাসলেন, হ্যালো বললেন। মুন্নি ওনাকে সামনের রাস্তার কথা জিগ্গেস করলো। উনি আবার একটু হাসলেন, বললেন "আগে এই পাহাড়টা টপকাতে হবে তারপর আবার DAV এর সাইন দেখে এগোতে হবে"।

    পাহাড়টা টপকাতে হবে শুনে আমরা মুখ চাওয়া-চায়ি করছিলাম, উনি বুজতে পেরে বললেন, "এরকম আরও ছোট পাহাড় রাস্তায় পড়বে যেগুলো পেরিয়ে আমাদের যেতে হবে কিন্তু ভয়ের কিছু নেই, হাতে অনেক সময় আছে, আপনারা আস্তে আস্তে হাঁটুন, দেখবেন সময়মত ঠিক সামিট এ পৌঁছে যাবেন"। এই বলে উনি আমাদের বিদায় জানিয়ে এগিয়ে গেলেন।

    আমার কিছু জানার আছে এই বলে আমি ওনার পাশে পাশে হাঁটতে থাকলাম, বললাম আমি খুবই দুঃখিত, আমার জন্য আপনার রাত্রিতে ঘুম হয় নি। উনি হেসে বললেন "আপনার দুঃখিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, সমস্যা টা আমার কারণ শব্দ হলে আমি ঘুমাতে পারি না আর ডরমিটরি তে সবার সাথে থাকলে শব্দ তো হতেই পারে। তাছাড়া আপনি এক নন, অন্য আরো কয়েকজনের একই সমস্যা ছিল তাই শব্দটা খুব জোর হচ্ছিলো।"। উনি হেসে বললেন "সাবধানে আসুন, আমি এগোলাম, বিদায়"।

    সামনের পথ যে অনেক কষ্টের সেটা আমরা জানতাম কিন্তু একদম পাহাড় টপকে যেতে হবে এটা আগে জানতাম না, কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা মানসিকভাবে তৈরি হয়ে পাহাড়ে চড়া শুরু করলাম। সামনের পাহাড়টা প্রায় একদম খাড়া কিন্তু খুব বেশি উঁচু না। প্রায় দুই ঘন্টা হাঁটার পর আমরা পাহাড়ের একদম ওপরে পৌঁছলাম। যে জলপ্রপাত টা নিচে থেকে একটা শীর্ণ রেখার মতো দেখা যাচ্ছিলো সেটা এখন একদম চোখের সামনে পাশের একটা পাহাড়ে স্বমহিমায় দৃশ্যমান। আমরা একটা বড়ো পাথরের ওপর বসে জলপ্রপাতের অসাধারণ দৃশ্য দেখতে দেখতে সঙ্গে থাকা মুসলি, বাদাম আর কলা দিয়ে প্রাতঃরাশ সারলাম।

    প্রায় আধঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে আবার শুরু হলো আমাদের পথ চলা। এখন আবার সাইন দেখে দেখে এগোচ্ছিলাম। রাস্তার ধরণটা পুরোপুরি পাল্টে গেছে, এখন সামনে শুধুই রুক্ষ পাথুরে মালভূমির মতো জায়গা, গাছপালা প্রায় নেই বললেই চলে।

    এইভাবে পাথর পেরিয়ে আরো এক ঘন্টা চলার পর আমাদের সকলের অবস্থা বেশ কাহিল তার ওপর সূর্যের আলোর তেজ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সকালে হুটে থেকে বেরোনোর সময় যে সব জ্যাকেট, টুপি। হ্যান্ডগ্লাভস পরে বেরিয়েছিলাম সেগুলো সবই খুলে রুকসাক এ রাখতে হয়েছে। আমাদের সবার হাঁটার গতি বেশ কমে গেছে, বিশেষ করে সান্ত্বনার। পথে যেতে যেতে বেশ কিছু উঁচু পাথরের ওপর চড়ে উঠতে হচ্ছিলো, এই সব জায়গায় সান্ত্বনাকে অগ্নি সাহায্য করছিলো, দরকার পড়লে আমিও নেমে এসে ওদের দুজনকে সাপোর্ট দিছিলাম। মুন্নি সবার আগে তারপর আমি, আমার পেছনে সান্ত্বনা আর অগ্নি এইভাবে আমরা এগোচ্ছিলাম, আগে পরে থাকলেও আমরা কিন্তু একে অপরকে দেখতে পাচ্ছিলাম।



    এইভাবে আরও খানিকটা যাবার পর আমাদের সামনে পরের পাহাড়টা এসে পড়লো। এই পাহাড়টা পুরোটাই পাথুরে, গাছ পালার কোনো চিহ্ন মাত্র নেই। ঠিক করলাম পাহাড়ে চড়ার আগে আমরা ১৫ মিনিট বিশ্রাম নেবো। পাহাড়ের গায়ে একটা বড়ো পাথরের তলায় আমরা একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলাম, এমন সময় মানুষের গলার আওয়াজ কানে এল। একটু পরেই দেখলাম ২০-২৫ জনের একটা ট্রেকিং গ্রুপ আমাদের সামনে এসে পড়লো, এদের সবাইকে আমরা গতকালের হুটে তে দেখেছি। একটু হেসে আমাদের হ্যালো বলে ওরা আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো। এর কিছুক্ষন বাদেই দেখলাম ৫-৬ জনের আর একটা গ্রুপ আসছে, যার মধ্যে দেখলাম মিস্টার ভাদের ও আছেন। আমাদের দেখে উনি বললেন "কি বলেছিলাম না খুব তাড়াতাড়ি রাস্তায় দেখা হবে”, এই বলে উনি ওনার রুকসাক থেকে চারটে প্যাকেট বার করে আমায় দিয়ে বললেন আপনাদের ব্রেকফাস্ট, হুটে থেকে প্যাক করে নিয়ে এসেছি, রাখুন, পথে খেয়ে নেবেন। ভাবতে খুব ভালো লাগছিলো যে এমন মানুষ ও পাওয়া যায়, মাত্র একদিনের পরিচয় কিন্তু কতটা আপন করে নিলে মানুষ এতটা ভাবতে পারে। মিস্টার ভাদের কে জিজাস করে জানতে পারলাম কনরহুটে পৌঁছাতে আর ও প্রায় দুই কিলোমিটার পথ যেতে হবে, এই পথটা পুরোটাই একদম চড়াই ভেঙে উঠতে হবে। উনি আমাদের অনেক সাহস দিলেন, বললেন আস্তে আস্তে আসুন, সময় আছে, কনরহুটে তে আবার দেখা হবে।

    দুটো গ্রুপে অনেক মানুষকে দেখে আমাদের মনোবল ফিরে এলো, মনে সাহস এলো। সান্ত্বনাকে বললাম এতো দূর যখন আমরা আস্তে পেরেছি তখন কনরহুটে পর্যন্ত নিশ্চই পৌঁছতে পারবো। কনরহুটে পৌঁছে সিদ্ধান্ত নেবো আজই আমরা সামিট করবো না রাত্রিটা হুটেতে থেকে কাল সকালে সামিট এর দিকে রওয়ানা হবো। আমার কথা শুনে সান্ত্বনা বেশ আস্বস্ত হলো কারণ ওর মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন শুধু ঘুরপাক খাচ্ছিলো যদি আজ বিকাল ৪ টের মধ্যে চূড়োয় পৌঁছতে না পারি তাহলে কোথায় রাত্রি কাটাবো?
    আর দেরি না করে তল্পি-তল্পা গুটিয়ে আমরা উঠে পড়লাম, এখন গন্তব্যস্থল কনরহুটে। আমাদের সামনে দুটো গ্রুপে প্রায় ২৫ জন ছিল, আস্তে আস্তে দেখতে দেখতে আরও অনেকগুলো দল পর পর চলে এলো।

    সান্ত্বনা যেহেতু আস্তে আস্তে চলছিল তাই আমিও বেশি এগোতে পারছিলাম না, আর অগ্নি তো ওর সাথেই চলছিল, কিন্তু মুন্নি দেখতে দেখতে বেশ খানিকটা এগিয়ে চলে গেছিলো যদিও তখনও আমি ওকে দেখতে পাচ্ছিলাম। তাড়াতাড়ি পৌঁছোবার জন্য আমরা একটা শর্টকাট নিয়েছিলাম, শর্টকাট নেওয়াটা যে কতবড় ভুল ছিল, আর তার জন্য যে কত মাসুল গুনতে হবে সেটা তখন জানা ছিল না। শর্টকাট নেওয়া রুটে শুধু বড়ো বড়ো পাথরে ভর্তি, এগোতে গেলে পাথর গুলোর ওপর চড়ে উঠে এগোতে হবে যেটা সান্ত্বনার জন্য খুব শক্ত ছিল। তবুও ও অনেক কষ্ট করে অগ্নির সাহায্য নিয়ে আস্তে আস্তে আসছিলো কিন্তু একটা খাঁড়া বড়ো পাথরের সামনে এসে অগ্নিকে বললো, ও আর উঠতে পারবে না। অগ্নি স্টপ বলতে আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম, বুজতে পারলাম ওরা সমস্যায় পড়েছে, আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে আমার রুকসাক রেখে ওদের হেল্প করার জন্য নিচের দিকে নামতে থাকলাম। এমন সময় খেয়াল হলো মুন্নিকে স্টপ বলা হয় নি। মুন্নি ততক্ষনে অনেকটা এগিয়ে গেছিলো, দূর থেকে ওকে খুব ছোট দেখা যাচ্ছিলো। আমি অনেক চিৎকার করে ওকে ডাকলাম কিন্তু মুন্নি আমার ডাক শুনতে পেলো না।

    একটা জিনিস আমার খুব অবাক লাগলো মুন্নি একবার ও পেছনে তাকিয়ে দেখলো না যে ওর আর আমাদের মধ্যে কতটা ডিসটেন্স তৈরি হয়ে গেছে। ফোন করে ওকে কল করার চেষ্টা করলাম কিন্তু কোনো কল যাচ্ছিলো না। একটা ছোট গ্রুপ তখন আমায় পেরিয়ে যাচ্ছিলো, দূর থেকে মুন্নি কে দেখিয়ে ওদের কে রিকোয়েস্ট করলাম ওরা যদি মুন্নি কে ওভারটেক করে যায় তাহলে যেন ওকে আমাদের জন্য অপেখ্যা করতে বলে। নিচে নেমে আমি আর অগ্নি অনেক চেষ্টা করে সান্ত্বনাকে ধরে বড়ো পাথরের ওপর টেনে তুললাম কিন্তু ততক্ষনে অনেকটা সময় চলে গেছে, মুন্নি কে আর দেখতে পাওয়া যাচ্ছিলো না।

    ট্রেকিং এর শুরু থেকে আজ কিছুক্ষন আগে পর্যন্ত আমরা একসাথে ছিলাম, একটু আগে পরে থাকলেও আমরা কখনোই একে ওপরের চোখের বাইরে চলে যাই নি। এই প্রথম মুন্নি একদম আমাদের দৃষ্টির বাইরে চলে গেলো, কিন্তু একটা কথা আমি তখনো কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না যে মুন্নি কেন একবারও আমাদের খুঁজলো না, একবারও কেন পেছন ফিরে দেখলো না আমরা কতদূরে আছি। মুন্নির কোনো বিপদ হয় নি তো, মনের মধ্যে একটা তোলপাড় চলছিল। সান্ত্বনা মুন্নির কথা জিগ্যেস করাতে বললাম ও অনেকটা আগে চলে গেছে কিন্তু ভয়ের কিছু নেই রুটে আজ অনেক লোকজন আছে, ও নিশ্চই কিছুটা আগে অপেখ্যা করছে আর না হলে কনরহুটে পৌঁছে অপেক্ষা করবে।

    আমরা যেখানে ছিলাম সেখান থেকে কনরহুটে পৌঁছতে গেলে আরও প্রায় দুই কিলোমিটার হাঁটতে হবে। মরীয়া হয়ে বার বার মুন্নিকে ফোন করছিলাম যদি একবার ফোন টা লাগে। অনেকবার চেষ্টা করার পর সত্যি সত্যিই রিং হলো। মুন্নি ফোন ধরেই বললো বাবা তোমরা কোথায়? আমি অনেক্ষন ধরে তোমাদের খুঁজছি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না, আমরা তখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলাম তার একটু বর্ণনা দিলাম কিন্তু ও বুজতে পারলো না। মুন্নি বললো মনে হচ্ছে আমি অনেকটা এগিয়ে এসেছি। আমি বললাম, তুমি আমাদের জন্য পথে অপেখ্যা না করে কনরহুটে পৌঁছে যাও, ওখানে অপেখ্যা করো। এই অব্দি কথা বলে আমি ফোন টা সান্ত্বনা কে দিলাম, ও কথা বলতে চাইছিলো কিন্তু লাইন টা হঠাৎ ডিসকানেক্ট হয়ে গেলো। তারপর বহুবার চেষ্টা করেও আর মুন্নির সাথে কানেক্ট করতে পারলাম না।

    অনেক চড়াই উৎরাই ভেঙে আরও প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে যখন দূর থেকে কনরহুটের মাথাটা দেখতে পেলাম তখন নিরাশার সব জাল সরিয়ে মনের মধ্যে আবার আশার আলো জ্বলে উঠলো। আর সবচেয়ে আনন্দ হচ্ছিলো এই কথা ভেবে যে মুন্নির সাথে ওখানে দেখা হবে, আবার আমরা চারজন একসাথে বাকি রাস্তা ট্রেক করবো। ও যে ওখানে অপেখ্যা করছে এটা আমরা নিশ্চিত ছিলাম।

    কনরহুটে পর্যন্ত পৌঁছাতে শেষ ৫০০ মিটার রাস্তা আর কিছুতেই শেষ হচ্ছিলো না, শরীরের অবস্থা এতটাই কাহিল ছিল যে ওই রাস্তাটা যেতে প্রায় আরো ৩০ মিনিট লেগে গেলো, ঘড়িতে তখন ঠিক দুপুর ১২ টা আমরা কনরহুটে পৌঁছলাম। কনরহুটের উচ্চতা প্রায় ২১০০ মিটার। অন্য গুলোর মতো এই হুটেটিও খুব সুন্দর ভাবে সাজানো। হুটের চারিদিক গোল করে ঘিরে আছে আল্পস পাহাড়ের সারি, হুটের সামনে বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে একটা টেরেস, এখানে অনেক টেবিল-চেয়ার পাতা। সত্যি কথা বলতে গেলে বলতে হয়, যারা পাহাড় ভালোবাসেন তাদের জন্য এর থেকে ভালো জায়গা আর হয় না, শুধু টেরেসে বসেই আলপাইন সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সারাদিন কাটিয়ে দেওয়া যায়। হুটে তে পৌঁছে দেখলাম রাস্তায় আমাদের টপকে যারা এসেছেন প্রায় সবাই এখানে তখনও বিশ্রাম করছেন। অনেকের সাথেই মৌখিক পরিচয় হয়েছিল, তাই চাওয়া-চায়ি হলে হাই, হ্যালো বলতে হচ্ছিলো।

    আমরা তখন হন্যে হয়ে মুন্নিকে খুঁজছিলাম, কিন্তু হুটের বাইরে সব জায়গা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও মুন্নিকে দেখতে পেলাম না। বাধ্য হয়ে হুটের ক্যান্টিনে যারা খাবার সার্ভ করছিলেন তাদেরকে মুন্নির ছবি দেখালাম কিন্তু কেউই কোনও খবর দিতে পারলো না। আমার হাত পা প্রায় ঠান্ডা হবার উপক্রম হয়েছিল কিন্তু নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করলাম। একটু দূরে মিস্টার ভাদের কে দেখলাম তৈরি হচ্ছেন বাকি পথে রওনা দেবেন বলে, ওনার কাছে গিয়ে জিগ্যেস করলাম উনি মুন্নিকে দেখেছেন কিনা। উনি ঘাড় নেড়ে না বললেন, কিন্তু শুনে অবাক হয়ে গেলেন যে আমরা রাস্তায় একে ওপরের থেকে আলাদা হয়ে গেছি। ওনার গ্রুপ রওনা দিচ্ছিলো তাই উনি আর অপেখ্যা করতে পারলেন না কিন্তু যাবার আগে আমায় DAV র জরুরি পরিষেবার টেলিফোন নম্বর দিলেন, বললেন ইমিডিয়েট যোগাযোগ করতে। আর ওনার পার্সোনাল টেলিফোন নম্বর দিয়ে বললেন যদি হোটেলে ফিরে ওনাকে একবার ফোন করি তাহলে খুব আনন্দ পাবেন। ওনাকে, চেষ্টা করবো বলে আমি হুটের একদম নিচে রাস্তায় যেখানে সান্ত্বনা আর অগ্নি মুন্নির জন্য অপেক্ষায় ছিল সেখানে পৌঁছলাম। আমি DAV র এমার্জেন্সি নম্বরে ফোন করে পুরো ব্যাপারটা রিপোর্ট করলাম, ওরা মুন্নির টেলিফোন নম্বর নিয়ে নিলো আর আমাদের হুটেতে অপেখ্যা করতে বললো।

    এর মধ্যে সান্ত্বনা আর অগ্নিও টেলিফোন করে অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছিলো মুন্নির সাথে কন্টাক্ট করতে। এরকম চেষ্টা করতে করতেই একবার কানেক্ট হয়ে গেলো। মুন্নি কথা বলতে পারছিলো না, বুজতে পারছিলাম অনেক ভয় পেয়ে গেছে, তাই কথা না বাড়িয়ে আমি শুধু ওর লোকেশন জানার চেষ্টা করছিলাম। হটাৎ এক ভদ্রলোকের গলা কানে এলো, উনি বললেন আপনার মেয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলো, একটু টেন্সড আছে তাই ভালো করে কথা বলতে পারছে না, আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না আমি ওর সাথে আছি। আমরা কনরহুটে তে আসছি, আশা করছি ৩০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবো।

    ভদ্রলোকের সাথে কথা হবার পর সঙ্গে সঙ্গে DAV র নম্বরে আবার কন্টাক্ট করে ওদের ইনফরমেশন টা দিলাম। ওরা আমার থেকে ভদ্রলোকের টেলিফোন নাম্বার টা চেয়ে নিলো। এরপর আমরা চাতক পাখির মতো হুটে আসার রাস্তাটায় দূরের দিকে তাকিয়ে অপেখ্যা করছিলাম। হুটের সামনে বেশ খানিকটা জায়গা একদম ফাঁকা তাই অনেকটা দূরেও যারা হুটের দিকে আসছিলেন তাদের দেখা যাচ্ছিলো। প্রায় ১৫ মিনিট বাদে একটা হেলিকপ্টারের বেশ কিছুক্ষন চক্কর কাটার শব্দ শুনতে পেলাম।

    এরপর আমার কাছে DAV র কাছ থেকে একটা ফোন এলো, ওরা আমাকে আস্বস্ত করলো যে চিন্তার কোনো কারণ নেই। মুন্নি, ড্যানিয়েল পোলানস্কি নামের এক ভদ্রলোকের সাথে কনরহুটের দিকে আসছে। প্রায় ৪৫ মিনিট অপেখ্যা করার পর বেশ দূরে দুটো মানুষকে হুটের দিকে আসতে দেখলাম। কিছুটা আসার পর মুন্নি কে যখন মার্ক করতে পারলাম তখন মনের মধ্যে যে একটা ভয় আর টেনশন চেপে বসেছিল সেটা দূর হলো।

    মুন্নি বেশ কিছুক্ষন বিশ্রাম নেবার পর আমরা পুরো ব্যাপারটা জানলাম। যে রাস্তা থেকে আমরা শর্টকাট নিয়েছিলাম সেই জায়গা থেকেই মুন্নি আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিলো। মুন্নি যেহেতু আমাদের থেকে কিছুটা আগে ছিল তাই ও দেখতে পায়নি যে আমরা শর্টকাট নিয়ে সম্পূর্ণ অন্য রাস্তায় চলে গেছিলাম। আর আমি সামনে সম্পূর্ণ অন্য একজন ট্রেকারকে মুন্নি ভেবে আস্বস্ত হয়েছিলাম যে মুন্নি আমাদের রাস্তাতেই আগে আগে চলছিল।

    প্রায় ৩০ মিনিট চলার পর মুন্নি ফোনে আমার সাথে কথা বলে, তারপর সামনে-পেছনে কাউকে দেখতে না পেয়ে ও প্রথম বুজতে পারে যে ও আমাদের থেকে অনেকটা দূরে চলে গেছে। আমি যদিও ওকে ফোনে বলেছিলাম যে, তুই যেখানেই থাকিস আমাদের জন্য অপেখ্যা না করে সোজা হুটের দিকে চলে যাবি। কিন্তু ও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নিচে আমাদের কাছে ফিরে আসার আর এই সিদ্ধান্ত টাই কাল হয়েছিল। ফিরে আসতে গিয়ে মুন্নি রাস্তা ভুল করে, বেশ কিছুক্ষন আশে-পাশে কোনো ট্রেকার না দেখতে পেয়ে টেনশনে পড়ে গেছিলো। ভুল রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে একটা নোম্যান্স ল্যান্ড এ গিয়ে পড়ে যেখানে আশে-পাশে DAV র কোনো পথ নির্দেশক সাইন ছিল না। বার বার চেষ্টা করেও ফোনে কাউকে কন্টাক্ট করতে পারছিলো না, গরমে প্রচুর ঘাম হওয়ার ফলে অনেক তেষ্টা পেয়েছিলো কিন্তু সঙ্গে থাকা জল প্রায় শেষ হয়ে গেছিলো। টেনশন টা ভয়ে পরিণত হয়েছিল যখন এমার্জেন্সি নম্বর ১০০ আর ১১২ তে কল করে কানেক্ট করতে পারছিলো না। অবশেষে সঙ্গে থাকা স্লিপিং ব্যাগ, রুকসাক, ট্রেকিং স্টিক সব কিছু ফেলে দিয়ে ও মাথা ঠান্ডা করে যে রাস্তায় এসেছিলো সেটা খুঁজে বার করেছিল কিন্তু কিছুদূর আসার পর এতটাই ক্লান্ত আর তৃষ্নার্ত হয়ে পড়েছিল ওই পরিস্থিতিতে আর আগে না এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, রাস্তার ওপর একটা পাথরের পাশে বসে অন্য ট্রেকিং কোনো গ্রুপ এর জন্য অপেখ্যা করছিলো।

    সিদ্ধান্ত ওর ঠিক ছিল কিন্তু ট্রেকারদের বেশিরভাগ ই শর্টকাট রাস্তা নেওয়ায় এই রাস্তায় তেমন কেউ আসেন নি আর যারা এসেছিলেন তারা অনেক আগেই এই জায়গা পেরিয়ে গেছিলেন। বেশ কিছুক্ষন এই ভাবে বসে থাকার পর মুন্নি ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলো তাই হেল্প হেল্প বলে চিৎকার শুরু করেছিল আর ওটাই ওকে ওই যাত্রায় বাঁচিয়ে দিয়েছিল। সামনে বিস্তীর্ণ জায়গা শুধু পাহাড় আর ফাঁকা স্থান থাকার জন্য ওর চিৎকার অনেক দূরে ড্যানিয়েল এর কানে পৌঁছেছিল। তারপর অনেক রাস্তা ঘুরে ড্যানিয়েল মুন্নিকে খুঁজে বার করেছিল।

    কনরহুটে ওরা পৌঁছনোর পর ড্যানিয়েল এর সাথে পরিচয় করে ওকে অনেক ধ্যন্যবাদ জানালাম। মানুষটা খুব অমায়িক, একটু হেঁসে আমায় বললো এতবড়ো একটা বিপদের মধ্যেও আপনার মেয়ে যেভাবে নিজের মাথা ঠিক রেখে কাজ করেছে তার জন্য ধ্যন্যবাদ টা ওর প্রাপ্য। আমাদের সবার ভাগ্য আজ খুব ভালো ছিল তাই আপনার মেয়ের চিৎকার আমার কানে পৌঁছেছিল, আমি অনেকটা দূরে সম্পূর্ণ অন্য একটা রাস্তায় ছিলাম। আগে অনেকবার এই রাস্তায় আসার ফলে আমি ওকে খুঁজে বার করতে পেরেছিলাম। যখন আমি ওর কাছে পৌঁছেছিলাম ও খুব নার্ভাস ছিল তার ওপর ওর খুব তেষ্টা পেয়েছিলো। ঠিক সেই সময় আপনারা ফোন করেছিলেন তাই ও কথা বলতে পারছিলো না। জল খাবার বেশ কিছুক্ষন পর ও আস্তে আস্তে একটু সুস্থ হলে আমরা হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কিছুটা রাস্তা আসার পর আমার কাছে DAV এর এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দপ্তরের কল এসেছিলো, আমার সাথে কথা বলতে বলতে বেশ কিছুটা রাস্তা ওরা আমাদেরকে হেলিকপ্টার থেকে মার্ক করছিলো। তারপর আমার পরিচয় পেলে আমাকে ধ্যন্যবাদ জানিয়ে ওরা চলে গেছিলো।

    ভ্রমণ কাহিনীর মধ্যে এই রাস্তা হারানো আর তার ইমপ্যাক্ট এই ব্যাপারটা লিখে হয়তো পাঠকগণকে বিরক্ত করলাম কিন্তু আমার মনে হলো এই পুরো ব্যাপারটা যেহেতু রাস্তায় ঘটেছে এবং এটা একটা দুর্ঘটনা তাই এটা আমার লেখা দরকার। আর তাছাড়া ট্রেকিং রুটে এমন ঘটনা যে কোনসময় ঘটতে পারে তাই ঘটলে কি করতে হবে সেটাও সবার জানা দরকার। বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। যে রুটে ট্রেকিং এ যাচ্ছেন সেখানে বিপদে পড়লে কোথায় যোগাযোগ করবেন সেই সব টেলিফোন নম্বর সকলের কাছে থাকা উচিত। আর গ্রুপ ট্রেকিংএ সবসময় একসাথে থাকা উচিত, একটু এগিয়ে গেলে পেছনের মেম্বারদের জন্য অপেখ্যা করা উচিত। নিজের রুকসাক শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো রাখা উচিত যার মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমান পানিও বা জল থাকা উচিত।

    হুটে তে কিছুক্ষন বিশ্রাম নেবার পর দেখলাম প্রায় দুপুর দেড় টা বাজে। মুন্নির ওপর দিয়ে বেশ খানিকটা ধকল গেছিলো আর অনেকটা দেরিও হয়ে গেছিলো তাই ভাবছিলাম রাত্রিতে হুটেতে থেকে পরের দিন বাকি রাস্তায় রওনা দেব কিন্তু অগ্নি আর মুন্নি দুজনেই থাকতে রাজি হলো না, ওদের মনের কথা বুজতে পেরেছিলাম তাই তখনই বাকি পথের উদেশ্যে রওনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমাদের প্রায় আরও চার কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে, প্রায় আরও ৮০০ মিটার চড়াই ভেঙে ওপরে পিক এ পৌঁছতে হবে বিকাল সাড়ে চারটের আগে। হাতে সময় মাত্র তিন ঘন্টা আমাদের জন্য যা যথেষ্ট ছিল না কিন্তু ভাবার অবকাশও ছিল না। ব্যাপারটা একদমই সহজ ছিল না, ভোর পাঁচটা থেকে হাঁটা শুরু করেছিলাম, শারীরিক ভাবে সকলেই প্রায় বিধস্ত ছিলাম, তারপর পথে অতবড় একটা দুর্ঘটনা মানসিক ভাবেও আমাদের কিছুটা দুর্বল করে দিয়েছিলো কিন্তু কি করে জানি না হটাৎ করে আমাদের সবার মধ্যে একটা নতুন শক্তি, নতুন এনার্জি এলো, আমরা একসাথে সিদ্ধান্ত নিলাম সাড়ে চারটে নয় সাড়ে তিনটের মধ্যে আমরা পিক এ পৌঁছাবো। শুরু হলো নতুন উদ্যমে আবার পথ চলা।

    দুপুরে যখন হুটেতে অপেখ্যা করছিলাম তখনই আমরা এই অঞ্চলের অসাধারণ সৌন্দর্য উপলব্ধি করেছিলাম। এই উচ্চতায় প্রায় কোনও গাছপালা ছিল না, তবে চলার রাস্তায় প্রচুর ভেড়া চোখে পড়েছিল আর এই পথের হাঁটা আগের পথের থেকে অনেক মনোরম ও সহজ ছিল।

    এই ধরণের পাথুরে ভূখণ্ডে হাঁটতে হাঁটতে পাথরে লেগে হোঁচট যাতে না লাগে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। এই রাস্তায় সবচেয়ে বড়ো বিপদ হলো পাশের পাহাড়ের ওপর থেকে অনেক সময় পাথর গড়িয়ে নিচে পড়তে পারে তাই হাঁটার সময় অবশ্যই খুব নিশ্চিত এবং যত্নবান হতে হবে। উপর থেকে কিছু গড়িয়ে নিচে আসছে কিনা সে সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। আপনার সামনে লোকের সাথে ভাল দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

    প্রায় দুই ঘন্টা হেঁটে সাড়ে তিনটের সময় আমরা পিক এর শেষ ধাপে পৌঁছলাম। হাঁটার রাস্তা এখানেই শেষ ছিল, বাকি চড়াইটা শুধুই আরোহন করার ছিল। দিনটি অনেক সুন্দর ছিল, তাই ট্রেকারদের ভিড়ও ছিল, শেষ চড়াইটা আরোহণে তাই প্রচুর ভিড় ছিল। লম্বা লাইনে ধরে পর পর, পাহাড়ের সংকীর্ণ খাঁড়াই ধাপ ধরে ওপরে উঠতে উঠতে অবশেষে অনেক ঘাম ঝরিয়ে চারটে বেজে ১০ মিনিটে আমরা সামিট এ পৌঁছলাম। ওপরে তখন হাজার হাজার লোকের মেলা যারা সেখানে ক্যাবলকারে এসেছিলেন তবে আমরা ট্রেকিং আর ক্লাইম্বিং করে যেহেতু ওপরে পৌঁছেছিলাম তাই নিজেরা বেশ গর্ববোধ করছিলাম।

    ওপরে বেশ কিছক্ষণ প্যানোরোমা লবিতে বসে গরম গরম ক্যাপুচিনোতে চুমুক দিতে দিতে আমরা চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা আল্পস পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করেছিলাম। আমরা যে রাস্তা দিয়ে ট্রেক করে এসেছিলাম সেই রাস্তাটাও ওপর থেকে খুব ছোট হলেও দেখা যাচ্ছিলো, ওই দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে আমরা ফেলে আসা পথের আর পথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর কথা ভাবছিলাম।

    পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেশি থাকায় ওই দিন ক্যাবলকার বিকাল সাড়ে পাঁচটা অব্দি চলেছিল। বিকাল পাঁচটার ক্যাবলকারে করে আমরা নিচে অসাধারণ সুন্দরী লেক আইব-সী পর্যন্ত পৌঁছলাম। আইব-সী র সৌন্দর্যের কথা আমি ভ্রমণ সংখ্যার প্রথম পাঠে লিখেছিলাম।

    আমাদের গাড়ি অলিম্পিয়া-স্কি-স্টেডিয়ামে পার্ক করা ছিল। গাড়ি আন্তে গেলে আমাদের আইব-সী থেকে ট্রেনে প্রায় চশ্লিশ মিনিট জার্নি করে গারমিশ্চ-পারটেনকিরছেন শহরে পৌঁছতে হবে তারপর আরও প্রায় আধঘন্টা হাঁটলে পার্কিং স্লট এ পৌঁছন যাবে। সান্ত্বনার পক্ষে আর হাঁটা সম্ভব ছিল না আর আমি যেহেতু লেক আইব-সী খুব পছন্দ করি তাই মুন্নি আর অগ্নি গাড়ি আনতে যাবে এই সিদ্ধান্ত হলো।

    আমি আর সান্ত্বনা লেকের পাশে এক মনোরম পরিবেশে বসলাম, মুন্নি আর অগ্নি গাড়ি আনার জন্য আইব-সী ট্রেন স্টেশনের দিকে রওনা দিলো। গাড়ি নিয়ে প্রায় দেড় ঘন্টা পরে ওরা আইব-সী ফিরলো। তারপর প্রায় আরো একঘন্টা লেকের পাশে একসাথে কাটিয়ে আমরা হোটেলের দিকে রওনা দিলাম।

    জানি না, এই পথে আবার কবে আসবো, কিভাবে আসবো কিন্তু যতবারই আসবো, যেভাবেই আসবো ভালো লাগাটা ঠিক এবারের মতোই থাকবে, একটুও কমবে না।
    রাত্রিতে হোটেলে ফিরে মিস্টার ভাদেরকে টেলিফোন করতে কিন্তু ভুলি নি।

    অজয় মিত্র
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন