এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হাতিবাগান রহস্য - ৫ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ৪৩০ বার পঠিত
  • কলতান দুটো খবরই পেল ঋজুর কাছ থেকে। মোবাইল লোকেশান ট্র্যাক করে জানা গেছে শ্রুতি টালীগঞ্জ এলাকায় ছিল। আর, সৌভাগ্য ভান্ডার ইরাবানেরই দোকান। কিন্তু গত তিনদিন ধরে বন্ধ আছে। অর্থাৎ কাল দোকানে থাকার কথাটা ডাহা মিথ্যে কথা।

    কলতান এটাই ভাবছিল। কোথায়  ছিল জানতে গেলে কালকের মোবাইল কল ট্র্যাক করতে হবে।
    কলতান ভাবল, এরা সকলেই দেখছি হ্যাবিচুয়াল লায়ার। কেউই মানসিকভাবে সুস্থির নয়।

    এনআরএস হাসপাতালের মর্গ থেকে নীলাম্বরবাবুর মরদেহ ছেড়ে দেওয়া হল এবং নিমতলাঘাটের শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হল। ইরাবান মুখাগ্নি করল সব নিয়ম কানুন মেনে। এমনকি কাছা এবং কাপড়ও পড়ল। নীলাম্বরবাবুর দুই ভাই শ্মশানে উপস্থিত ছিলেন। কলতান অবশ্য শ্মশানে যায় নি। তবে ঋজু ছিল, যেহেতু পুলিশ স্বতপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে। 
    রাত্রে কলতান ঋজুকে ফোনে ধরল।
    — ‘ শ্মশানবন্ধু হয়ে কেমন লাগল ?’
    — ‘ স্মুথলি হয়ে গেছে সব কিছু। কোন প্রবলেম হয়নি। ইরাবান মুখাগ্নি করেছে। সত্রাজিৎ এবং তার বাবাও হাজির ছিল। ’
    — ‘ শ্রুতি ছিল ?’
    — ‘ হ্যাঁ শ্রুতি ছিল। নীলাম্বরবাবুর এক ভাইও ছিলেন যিনি শোভাবাজারে থাকেন। দেখে তো নিপাট ভালমানুষ মনে হল’, ঋজু জানায়।
    — ‘ ওদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেবার জন্য ফরেনসিক এক্সপার্ট যাবে ওদের বাড়িতে সেটা ওরা জানে ?’
    — ‘ হ্যাঁ ভার্বালি জানিয়েছি। প্রত্যেকের মোবাইলে মেসেজ যাবে ইন্ডিভিজুয়ালি, পরশু বেলা বারোটা থেকে দুটো পর্যন্ত বাড়িতে থাকার জন্য।’
    — ‘ আচ্ছা আচ্ছা .... আমি অবশ্যই থাকব সেদিন। আমাকে থাকতেই হবে যেহেতু আমি একটা দায়িত্ব নিয়েছি। আর হ্যাঁ.... আর একটা ফেভার চাইছি তোর থেকে। আমি মোবাইলের কল লিস্ট  থেকে ইরাবানকে কাল বিকেলে যে কলটা দিয়েছিলা ম— সেটা ফরোয়ার্ড করছি। ইরাবানের মোবাইল লোকেশানটা ট্র্যাক করে দিতে হবে.... প্লিজ ....’
    — ‘ আরে .... এতে প্লিজ বলার কি আছে ! এটা তো আমার অফিশিয়াল ডিউটির মধ্যে পড়ে। আমিও তো এই কেসে ইনভলভড আছি .... অ্যাপার্ট ফ্রম আওয়ার ফ্রেন্ডশিপ। সো .....’
    — ‘ ওকে ওকে .... পরশু দেখা হবে তালে ওদের বাড়িতে।’

    কলতান ভেবে দেখল কাল দুপুরে যদি মনীষা মৈত্রের সঙ্গে কথা বলতে যেতে হয় একা না গিয়ে কুলচাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ভাল কারণ ওই সময়ে মনীষা বাড়িতে একা থাকবেন। এভাবে যাওয়াটা ঠিক হবে না। এরা কেউই মেন্টালি স্টেবল নয়। সকলেই মানসিকভাবে বিশৃঙ্খল। কখন কি করে বসে ....।

    কুলচা জানাল, ‘ সরি ... তানমামা আজ যেতে পারব না। আজ প্রায় আড়াই ঘন্টার প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস আছে। মিস করলে প্রবলেম আছে। কাল হলে যেতে পারি।’
    কলতান জানাল, ‘ আচ্ছা ঠিক আছে। ক্লাস মিস করার দরকার নেই। দেখছি আমি .... দরকার হলে কাল তোকে ফোন করব। ’
    — ‘ ওকে ... ওকে তানমামা ... ’

    মনীষা মৈত্রকে ফোন করল কলতান — ‘ হ্যালো .... ম্যাডাম, আমি একটা জরুরী কাজে আটকে গেছি। আজ আর যেতে পারছি না। কাল তো দেখা হবেই, তখন নয়.... আপনি এখন 
    ঠিক আছেন তো? কাল তো দাহকার্য হয়ে গেল।’
    — ‘ হ্যাঁ ... আছি একরকম। এই অবস্থায় যেমন থাকা যায় আর কি ... পোস্ট মর্টেমে শুনছি কি সব উল্টোপাল্টা ব্যাপার ধরা পড়েছে। সেই নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। যাক, যা সত্যি তা প্রকাশিত হোক। আর কি বলব। কি জানি কেন জানি না বড্ড ভয় লাগে। এক এক সময়ে মনে হয় বিষাক্ত সাপের খাঁচার মধ্যে বাস করছি। কখন ছোবল খাব কে জানে। একটু দেখবেন আপনি। মিস্টার মৈত্র তো আপনার ভরসাতেই ছিলেন। কিন্তু তাকে বাঁচাতে পারলাম না শেষ পর্যন্ত। জানি না আমার কপালে কি আছে ....’
    মনীষাদেবী একটানা বলে যেতে লাগলেন। একটু ফাঁক পেয়ে কলতান একটা গৎবাঁধা কথা বলল, ‘কিচ্ছু চিন্তা করবেন না ..... সব ঠিক হয়ে যাবে।’
    — ‘ হ্যাঁ .... সেই আশাতেই আছি। কিন্তু কি করে যে ঠিক হবে কিছুই বুঝতে পারছি না। আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না ....’ , মনীষা মৈত্রের গলা ভীষণ বিষাদভারাক্রান্ত এবং উৎকন্ঠাপীড়িত শোনাচ্ছে। মনীষার এরকম আকস্মিক পরিবর্তন দেখে কলতানের বেশ  খটকা লাগল। নীলাম্বরবাবুর মৃত্যুর দিনও তো উনি বেশ স্বাভাবিক ছিলেন। নতুন কোন ঘটনার আগমনবার্তা কি এগুলো ! কলতানের গোয়েন্দা মন কোন একটা দুর্বিপাকের গন্ধ পেল।
    সে বলল, ‘আপনি হঠাৎ এত আপসেট হয়ে পড়লেন কেন। আপনি তো মেন্টালি বেশ স্টেডি ছিলেন এ কদিন।’
    — ‘ কি আর বলব আপসেট কি আর এমনি হচ্ছি .... ওই যে কাঁকুড়গাছিতে ....’
    হঠাৎ গলার স্বর নেমে গেল মনীষাদেবীর। ফিসফিস করে বললেন, ‘ ..... আচ্ছা ... এখন ওসব থাক। ঘরে কে একটা আসছে। পরে কথা হবে’খন ....’
    বলে ঝট করে ফোন কেটে দিলেন।
    কলতানের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। মাথার মধ্যে ঘুরতে লাগল কাঁকুড়গাছি ..... কাঁকুড়গাছি .....
    আর্মচেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজে গভীর চিন্তায় ডুবে গেল কলতান।

    তার চিন্তার সূতো কেটে গেল মোবাইলের বাজনায়। কলতান ফোন ওঠাল।
    — ‘ কলতান গুপ্ত বলছি ’
    — ‘ হ্যাঁ নমস্কার স্যার। আমাকে আপনি চিনবেন না। আমার নাম আশুতোষ মৈত্র। শোভাবাজারে থাকি। সম্পর্কে নীলাম্বর মৈত্রের বড়ভাই। আপনার নাম্বারটা মিস্টার ঋজু চ্যাটার্জির কাছ থেকে পেয়েছি .... কাল ওই নিমতলাঘাট শ্মশানে। যদি অনুমতি করেন, আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল। ’
    — ‘ ঋজু আমার নাম্বারটা দিয়েছে আপনাকে। ’
    — ‘ আজ্ঞে হ্যাঁ ..... তার বদলে মোবাইলে আমার ছবি তুলে রেখেছেন এবং আধার কার্ডের জেরক্স জমা রেখেছেন ....’
    — ‘ আপনার সঙ্গে আধার কার্ড ছিল? ’
    — ‘ আজ্ঞে আমি সব জায়গায় আধার কার্ড নিয়ে যাই। আজকাল কোথায় কখন যে আধার কার্ডের দরকার পড়ে কিচ্ছু বলা যায় না। আপনি মিস্টার চ্যাটার্জিকে ফোন করে দেখতে পারেন।’
    — ‘ না না ঠিক আছে, তার দরকার নেই। আপনি বলুন ... কি বলতে চান। ’
    — ‘ আজ্ঞে কিছু মনে করবেন না, এসব কথা ঠিক ফোনে বলা যাবে না .... সামনাসামনি বলতে পারলে ভাল হয়। আপনি যদি অনুমতি করেন কাল সকালের দিকে আপনার বাড়ি যেতে পারি। ডিরেকশান মোটামুটি জেনে নিয়েছি ওনার কাছে। অসুবিধে হবে না।’
    — ‘ আচ্ছা ঠিক আছে চলে আসুন সকাল সাড়ে নটা থেকে দশটার মধ্যে। ’
    — ‘ ধন্যবাদ ধন্যবাদ ..... অনেক ধন্যবাদ। এখন রাখছি তালে। ওই কথাই রইল .....’

    ব্যাপারটা রীতিমতো রহস্যময় কিন্তু উদ্দীপক মনে হল কলতানের কাছে। সে ভাবল, ঋজু তো তাকে এসব কিছু বলে নি। শুধু বলল, ওনাকে নিপাট ভালমানুষ মনে হল। যাক, ওটা পরে জেনে নেওয়া যাবে। এখন আশুতোষবাবুর প্রতীক্ষা করা যাক।

    ঠিক এইসময়ে আবার ফোন বাজল কলতানের। ঋজুর ফোন।
    — ‘ হ্যাঁ বল ঋজু ....  কি ... কি বললি ....কালকের ইরাবানের মোবাইল ট্র্যাকিং লোকেশান কাঁকুড়গাছি ? স্ট্রেঞ্জ ! ও তো বলল হাতিবাগানে দোকানে আছে। আচ্ছা ঠিক আছে .... থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।’

    কলতান ফোন ছেড়ে দিল। মাথায় ঘুরতে লাগল কাঁকুড়গাছি ..... 

    ( ক্রমশ : )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন